“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”
Part : 11
ভয়ে ভয়ে কলটা রিসিভ করে,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম আব্বু।
রফিক সাহেব : অলাইকুম আসসালাম। অর্ণব তুমি কোথায়?
অর্ণব : এই তো কলেজ মোড় থেকে একটু সামনে। বাড়িতে যাচ্ছি।
রফিক সাহেব : বাড়িতে যায়ে খেয়ে দেয়ে তাড়াতাড়ি আমার অফিসে আসো। কিছু কথা আছে।
কন্ঠ শুনে যদিও বুঝা যাচ্ছে আব্বু কিছু জানে না। কারন খুব শান্ত ও স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতেছেন। কিন্তু ডাকতেছেন কেনো? আবার অফিসে যায়ে সামনাসামনি কিছু বলবেন নাকি? আমি কিছুই নিশ্চিত হতে পারতেছিনা!
অর্ণব : আমি যাচ্ছি।
রফিক সাহেব : একটু তাড়াতাড়ি এসো।
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম।
রফিক সাহেব : অলাইকুম আসসালাম।
দেড় ঘন্টার মধ্যে আব্বুর অফিসে পৌচ্ছালাম, আব্বু একজন ব্যবসায়ী।
অফিস রুমে ঢুকে,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম আব্বু।
রফিক সাহেব : অলাইকুম আসসালাম। বসো।
অর্ণব : কি জন্য ডাকলা?
রফিক সাহেব : আমর তো বয়স হয়ে যাচ্ছে, আমি আর কদিন বাঁচব, নানা রকম অসুখ লেগেই আছে, আমি কি তোর বউ কোনদিন দেখতে পাবনা?
অর্ণব : এত তাড়াতাড়ি বিয়ে?
(যাক বাবা বাঁচা গেল! আমি তো ভাবছিলাম মারামারির কথা জানতে পারছে।)
রফিক সাহেব : কোথায় তাড়াতাড়ি? তোর সব কিছু আমি জানি। আমাকে তুই বাইরের লোক পাস নি। শুধু কলেজে ভর্তি হওয়ার কারনটা তুই বললি না। তুই বিষয়টা গোপন রাখতে বলছিস বলে আমি এই বিষয়ে কোন কথা তুলি না।
[কোন বিষয়ের কথা বলতেছে? কলেজে ভর্তি হওয়ার কারন? এটা এখন রহস্য থাক
]

অর্ণব : কিন্তু?
রফিক সাহেব : কোন কিন্তু না। তুই বিয়ে করবি এইটাই শেষ কথা। কেননা
পবিত্র কোরআনে আছে,
“তোমাদের মধ্য হতে যারা বিবাহহীন তাদের বিবাহ দিয়ে দাও এবং দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরকেও। তারা যদি নিঃস্বও হয়ে থাকেন তবে স্বয়ং আল্লাহ্ তাকে ধনী বানিয়ে দেবেন।
–(সূরা নুর। আয়াতঃ ৩২)

আর বড় কথা আমি পাপ বহন করতে পারবো না।
অর্ণব : কিসের পাপ?
রফিক সাহেব : কিসের পাপ?
হাদিসে এসেছে,
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
“যার কোনো সন্তান জন্ম লাভ করে সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে এবং তাকে উত্তম আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়। যখন সে বালেগ হয় তখন যেন তার বিবাহ দেয়। যদি সে বালেগ হয় এবং তার বিবাহ না দেয় তাহলে সে কোনো পাপ করলে, সে পাপ তার পিতার উপর বর্তাবে।”
-(বায়হাকী, মিশকাত হা/৩১৩৮)

তোর বিয়ের বয়স হয়েছে, তাই তুই যা পাপ করবি তার হিসাব আমাকে দিতে হবে। আমি তা পারবো না। তোর চরিত্র রক্ষার জন্যও বিয়ে দেওয়া জরুরি।
অর্ণব : আবার আমার চরিত্রের কি হলো? তুমি জানো আমি খারাপ কাজ করি না।
রফিক সাহেব : জানি কিন্তু বলা তো যায় না।
আল্লাহ বলেনঃ
চরিত্র রক্ষার জন্য যারা বিয়ে করবে তারা যদি অভাবি হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন।
-(সুরা নুর : ৩২)

আর তোর তো অভাবও নাই। আমি তোকে ব্যবসায় বসতেও জোড় করি না। শুধু মাঝে মাঝে আসবি।
অর্ণব : একসাথে কলেজ + ব্যবসা + বউ কিভাবে সামলাবো?
রফিক সাহেব : কলেজের কথা তো বাদ, আর ব্যবসা তো আমিই দেখতেছি আর কি বাকি থাকলো? ফালতু অযুহাত দিস না।
(চুপ করে আছি)
[কথা গুলার মাঝের রহস্যগুলা আস্তে আস্তে খুলবে
]

রফিক সাহেব : চুপ করে থাকিও না। এখানে কিছু মেয়ের ছবি আছে যাকে খুশি চয়েজ করো।
ছবি গুলা দেখলাম আর বললাম,
অর্ণব : না একটাও পছন্দ হলো না!
রফিক সাহেব : তোকে এই পর্যন্ত কতগুলা মেয়ের প্রস্তাব দিলাম আমি নিজেও জানিনা। সবগুলাকে না করে দিছিস। বুঝেছি তুই বিয়া করবি না
মনে মনে,
অর্ণব : তোমরা সারাজীবন চাইলেও আমি আর বিয়া করব না কারণ ২ মাস আগেই আমার প্রিয়তমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। যাকে আমি প্রচন্ড ভালোবাসি।
[রাগ করিয়েন না। একটু অপেক্ষা করুন। দুই মাস আগের সেই রোমাঞ্চকর সফরটি শীঘ্রই শুরু করবো
]

রফিক সাহেব:-কিরে কি ভাবছিস কিছু বলছিস না কেন,নাকি পছন্দের মেয়ে আছে তোর?
অর্ণব : সময় হলে এমনিতেই তোমার বউমা কে দেখতে পাবে।
রফিক সাহেব:-জানি সময় হবেনা, আর তুই দেখাবিও না।
অর্ণব :- বিশ্বাস করো বাবা আমি খুব তারাতারি বউ আনব!
রফিক সাহেব : তুই এবার নিয়ে কতবার বললি কথাটা? আচ্ছা তোর মাথায় কিসের ভূত চাপে আছে। বিয়ে নিয়ে কি তোর কোন চিন্তা ভাবনা নাই?
অর্ণব : আছে তো। এইজন্য তো কিছু উক্তি ফোনে সেভ করে রাখছি। বিয়ের কথা মনে পড়লে ওগুলা ভাবি।
রফিক সাহেব : হাহ! কি উক্তি?
মোবাইলটা বেড় করে উক্তি গুলা পড়ে শুনাচ্ছি,
অর্ণব : বিয়ের পরের অবস্থা সম্পর্কে অনেক জ্ঞানি গুনিরা বলেছেন,
*বিয়ের পর সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে একটু ভালোবাসা, একটু আদর, একটু কোমলতা পাওয়া– একে এক কথায় কি বলে বলতে পারেন? একে বলে আপনি ভুল বাসায় এসেছেন।
*বিষয়টি মজার যে একটি ছেলের জীবনে যখন কোন ধরনের দুশ্চিন্তা থাকে না, সে বিয়ে করে। এটা অনেকটা সুখে থাকতে ভূতে কিলানোর মত।
*বিয়ের আগে ছেলেটি যখন মেয়েটির হাত ধরে, সেটি হচ্ছে ভালোবাসা। আর বিয়ের পরে যখন ধরে, সেটি হচ্ছে আত্মরক্ষা।
* মেয়েরা সত্যিই অনিশ্চিত. বিয়ের আগে তারা একজন পুরুষকে expect করে, বিয়ের পরে তাকে suspect করে, আর তার মৃত্যুর পরে তাকে respect করে।
* বিবাহিত পুরুষেরা চিরকুমারদের চেয়ে বেশি দিন বাঁচে। মানুষ যা চায় তা কখনোই পায় না।
* একজন সফল পুরুষ সে-ই যে এত টাকা আয় করতে পারে যা তার বউ খরচ করে শেষ করতে পারে না। একজন মেয়ের ক্ষেত্রে সাফল্য হচ্ছে এরকম একজন পুরুষকে খুঁজে বের করতে পারা।
* অনেকেই আমাদের দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের রহস্য নিয়ে প্রশ্ন করে। তাদেরকে বলি, সপ্তাহে দুদিন ভালো রেস্তোঁরায় ডিনার, মৃদু আলোতে পুরোনো মিউজিক, একটুক্ষণ নাচ– এই তো। আমি যাই বুধবারে, আমার স্ত্রী সোমবারে।
* মেয়েটি তার মাকে গিয়ে বলল, ‘আমি এমন একটি ছেলেকে খুঁজে পেয়েছি যে ঠিক বাবার মত’ মা বললেন, ‘এখন তুমি আমার কাছে কি চাও? সান্ত্বনা?
* একজন নববিবাহিত যখন বলে সে সুখি, আমরা জানি, কেন। একজন ১০ বছরের বিবাহিত মানুষ যখন বলে সে সুখি, আমরা ভাবি, কেন?
* আমি আর আমার স্ত্রী জীবনের ২৫টা বছর বড়ো আনন্দে কাটিয়েছি। তারপর আমাদের পরিচয় হল।
* এটা সত্যি যে কেউ পরাধীন হয়ে জন্মায় না, কিন্তু অনেকেই বিয়ে করে ফেলে।
* পত্রিকায় একটি ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন ছাপা হল, ‘Husband Wanted’। পরদিন কয়েকশ’ মহিলা যোগাযোগ করলেন, ‘আমারটি নিতে পারেন’।
* একটি মেয়ে তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তিত থাকে যতদিন তার বিয়ে না হয়। ছেলেদের চিন্তাটা বিয়ের পরে শুরু হয়।
রফিক সাহেব : হইছে থাম থাম। হাহাহা। তুই পারিসও বটে। কিন্তু বিয়ে না করলে বৃদ্ধ বয়সে তোকে কে দেখবে? তুই শরীরের জোরে ৭০ বছর পর্যন্ত চললি। তারপর? ৮০ বছর পরে তোর খেয়াল কে রাখবে? ভূতে? আর বৃদ্ধ বয়স হলো এমন একটা বয়স যখন আমাদের অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকতে হয়। আমাদের বাচ্চারাই তখন হয়ে উঠে আমাদের সম্বল। যেমন তুই আমাদের সম্বল। আর বউ থাকা মানে একজন ভালো ও বিশ্বস্ত বন্ধু থাকা। যে তোকে খারাপ সময়ে সাহায্য করবে। পরিস্থিতি যত খারাপই হোক তোকে কখনো ছেড়ে যাবে না। এমন অনেক কথা আছে যা তোর একান্ত নিজের। যা তুই নির্ধিধায় তোর বউকে বলতে পারবি। জীবনে চলার পথে একজন সঙ্গী প্রয়োজন যে তোর চলাকে সহজ করে দিবে। সুখ-দুঃখ সব কিছু তোরা ভাগাভাগি করবি। আর জীবনে একজন ভালোবাসার মানুষ থাকা জরুরি। যার সম্পূর্ণ অস্তিত্ব জুড়ে থাকবি তুই। ওর সবকিছুর উপর সুধু তোর অধিকার থাকবে। সব চেয়ে বড় কথা তুই এখানে ঠকবি না। বুঝলি?
অর্ণব : হুম বুঝছি।
অর্ণব : না এক মাস লাগবে।
(আমার “উনি” -খুঁজে বেড় করতে কয়দিন যে লাগবে আল্লাহ জানে)
রফিক সাহেব : ১ মাস এত সময় দিতে পারবো না ১০ দিনের ভিতরে বিয়া করতে হবে, এটা আমার কথা না তোর আম্মুর কথা।
অর্ণব : ওকে ১৫ দিন সময় দেও। এবার বিয়ে করবোই ইনশাল্লাহ!
রফিক সাহেব :-এবার যেন কথার নড়াচড়া না হয়।
অর্ণব : ওকে হবেনা। আমি গেলাম আসসালাম অলাইকুম!
রফিক সাহেব : অলাইকুম আসসালাম।
বাড়ির পথে হাটতেছি আর ভাবতেছি,
বলে তো দিলাম ১৫ দিনের মধ্যে বিয়ে করবো। কিন্তু আমার “উনা” -কে ১৫ দিনের মধ্যে পাবো কোথায়। এখনতো দেখতেছি দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগাইতে হবে। ধুর পোস্টারে কি লিখবো? “উনা” -র ব্যাপারে তো আমি কিছুই জানি না। “উনা” -র মিষ্টি মুখটাই শুধু বারবার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতেছে। তবে এরকম লেখা যায়,
“হে প্রিয়তমা!
আমি তোমার অপেক্ষায় অপেক্ষমান প্রেমিক বলতেছি। এর থেকে বড় পরিচয় হলো আমি তোমার স্বামি অর্ণব। আমার রঙিন শহরে আজ কালো মেঘের ঘনঘটা। তোমার ব্যস্ত শহরে কি ভালো আছো? কিসের লুকোচুরির খেলায় মেতে আছো? কোথায় হারিয়ে গেলা? সদ্য ঘুম ভেঙ্গে ওঠা আধখোলা চোখদুটো যে তোমারই অপেক্ষায় থাকে সে তুমি বোঝো না? তুমি এত নিষ্ঠুর কেন বলতো? আকাশের অদৃশ্য ডাকপিয়নের কাছে খবর পাঠাতে পাঠাতে আমি ক্লান্ত। স্বপ্নের খামের ভাঁজে কত শত চিঠি পাঠাই। তোমার মনে কি সেগুলা পৌছায় না? প্লিজ দয়া করে চলে এসো। এদিকে…..
ইতি তোমার…”
ধুর এরকম পোস্টার লাগাইলে মানুষ পাগল বলবে। দেখা যাবে শুধু একটা পোস্টারের কারনে আমি পাবনা পাগলাগারদে। তার উপর পোস্টারগুলা কোথায় লাগাবো? রাজশাহীতে না এখানে?
এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা ভাবনা করতেছি এমন সময় আম্মু কল দিলো,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম আম্মু।
মিস রাদিয়া : তোর ছোট ভাই নাজিমকে নিয়ে আয় একটু??
অর্ণব : ওর মেডামকে বাসায় আসতে বললেই তো হয়, এখানে এসে পড়ায়া যাবে,রোজ রোজ যেতে ইচ্ছা করেনা!
মিস রাদিয়া : মেয়েটা রাজশাহী থেকে এসেছে। অচেনা জায়গা আর রাস্তাঘাটের যে অবস্থা! ওর নিরাপত্তার ব্যাপার আছে না।
অর্ণব : কিহ?!
(আমি তো অবাক!)
Islamic গল্প

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”

Part : 12
মিস রাদিয়া : মেয়েটা রাজশাহী থেকে এসেছে। অচেনা জায়গা আর রাস্তাঘাটের যে অবস্থা! ওর নিরাপত্তার ব্যাপার আছে না।
অর্ণব : কিহ?!
(আমি তো অবাক! আমি নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না।হাজারটা প্রশ্ন, হাজারটা ভাবনা, হাজার ধরনের অনুভূতি আমার মনে বিদ্যুতের মত খেলে গেল। আজকে কাটায় কাটায় দুই মাস পাঁচ দিন। সব কিছু মিলে যাচ্ছে। এটাই তাহলে আমার “উনি”। মানে আমার বউ। এবার ভুল হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না)
মিস রাদিয়া : হুম রাজশাহী থেকে। যা নাদিমকে নিয়ে আয়।
আম্মুর কথায় ভাবনা ভাঙ্গল,
অর্ণব : ওকে যাচ্ছি
মিস রাদিয়া : তাড়াতাড়ি যাস।আসসালাম অলাইকুম।
অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।
আমি কলটা কেটে ম্যাডামের বাড়ির দিকে হাটা দিলাম। হাটতে হাটতে ভাবতেছি,
যাক এবার আমার অপেক্ষাটা শেষ হলো। “উনা”-কে শেষ পর্যন্ত পেলাম। এজন্য মেয়েটাকে এত কাছের মানুষ মনে হচ্ছিল,আর কন্ঠটাও চেনা চেনা লাগতেছিলো। এবার আর তোমাকে হারাতে দিবো না প্রিয়তমা। অনেক কষ্ট করে তোমাকে পেয়েছি। কতদিন অপেক্ষা করলাম শুধু নিজের বউয়ের সাথে কথা বলবো বলে। তবে একটা জায়গায় খটকা আছে,
যেদিন আমি “উনা”-কে দ্বিতীয় দিন দেখছিলাম তখন উনার একজন বান্ধবী “তাসনিয়া” নামে কাউকে ডাকতেছিলো। কিন্তু আমি “উনা” -কে দেখতে এতোটাই মগ্ন ছিলাম যে কাকে ডাকতেছিলো আর কে উত্তর দিছিলো কিছুই দেখিনি।
আর বিয়ের সময়ও আমি এরকমই কিছু নাম শুনছিলাম। আসলে বিয়েটা হয়েছে অত্যন্ত নাটকীয়ভাবে। আমি নিজে বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না যে আমি বিয়ে করতেছি। তাও আবার “উনা” -কে। বিয়ের পিড়িতে আমি “উনা” -কে দেখাতেই ব্যস্ত ছিলাম। সব কিছু এক প্রকার ঘোরের মধ্যেই সম্পন্ন করছি। ওদের কথাবার্তা তেমন মনে নেই।
নাজিমের ম্যাডামের নাম তানহা। আর আমার লক্ষি বউয়ের নাম তো ছিলো তাসনিয়া। উফফফ! আল্লাহ বাঁচাও। এটাই যেন আমার “উনি” হয়। আর এগুলা ঝামেলা ভালো লাগে না। মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেছি এটাই যেন হয়।
দোয়া মুসলিমের জন্য অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। যা বেশির ভাগ সময় অব্যবহৃতই থেকে যায়।
এগুলা ভাবতে ভাবতে নাজিমের ম্যাডামের বাসার দিকে এগোচ্ছি। যত আগাচ্ছি তত বুকের মধ্যে ভয় লাগতেছে। আর তত বেশি পরিমানে দোয়া করতেছি। বুকের ধুকধুকানিটা ক্রমস বেড়েই যাচ্ছে।
ভাবতে ভাবতে নাজিমের মেডামের বাসায় পৌঁছে গেলাম। আজকে বাসাটা ভালো করে দেখলাম। বাসাটা ছোট। রোমান্স করার জন্য পারফেক্ট জায়গা।একাই থাকে মনে হয়।রাত্রি বেলায় বৌটার সাথে রোমান্স করতে আসতে হবে। আমার বউটার পছন্দ আছে বলতে হবে।
ডাকতেই নাজিম দরজা খুলে চলে গেলো।
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম।
তানহা : অলাইকুম আসসালাম।
অর্ণব : নাজিম পড়া শেষ হয়েছে?
(যদিও জানি আমি অনেক আগেই আসছি। আজকে সব কিছু জানতেই হবে। এতো তাড়াতাড়ি পড়া শেষ হবে না)
তানহা : এখনো তো সময় শেষ হয়নি,আরো ৩০ মিনিট পড়ে আসতেন।
( নাজিমের মেডাম)
দূর থেকেই বললাম,
অর্ণব : একটু আগেই এসে পড়লাম।
তানহা :-দয়া করে একটু অপেক্ষা করুন।
অর্ণব :- সারাজীবন তো অপেক্ষাই করলাম।
(চমকে উঠে)
তানহা:-মানে?
অর্ণব :- না কিছুনা,আপনার রুমগুলা একটু ঘুরে দেখতে পারি।
তানহা :-আমি ছোট্ট একটি বাসা ভাড়া নিয়েছি,কি দেখবেন এ বাসার।
(পিছনে না ঘুরেই কথাগুলো বললো।কালকের মতো আজকেও হিজাব পড়ছে। আজকের হিজাবটা দারুন।)
অর্ণব :- তবুও একটু দেখি!
বলেই একটা রুমে প্রবেশ করলাম। এবার আমার বিশ্বাস আরো দৃঢ় হলো। কেননা তানহার মতো মেয়ে একজন নন মাহরাম ছেলেকে কখনো নিজের রুমে ঢুকতে দিবে না। এটা আমার “উনি” না ছাড়া কেউ না।
রুমটা তার বেডরুম মনে হয়। উফফ কি সুন্দরভাবে সবকিছু সাজানো গুছানো। বিছানা তে একটা ডাইরি পেলাম। প্রথম পাতায় লেখা, “Tasniya Islam Tanhaa”
আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি নামটার দিকে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলাম। এই মূহুর্তে আমার চেয়ে বেশি খুশি সম্ভবত দুনিয়াতে কেউ নেই। আলহামদুলিল্লাহ! জি হ্যাঁ এটাই আমার উনি। আমার বউ। আমার তানহা।
বাহ! নামটা খুব সুন্দর। শেষ পর্যন্ত আমার অপেক্ষা চূড়ান্তভাবে শেষ হলো। যাকে আমি সবখানে খুজে বেড়াই, সে আমার ছোট ভাইকেই পড়ায়। এবার তোমাকে পেয়েছি প্রিয়তমা। আর কোথাও হারাতে দিবো না।
যদিও প্রচুর খুশি হয়েছি। কিন্তু খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় নি। এটা একজন মুসলমানের বৈশিষ্ট্য নয়। তারা খুশিতে আত্মহারা না হয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। আমিও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। কেননা,
হাদিসে এসেছে,
হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা বলেছিলেন,
তোমার পরবর্তীতে আমি এক উম্মত পাঠাব, কাঙ্ক্ষিত কোনো বিষয় যদি তাদের হাসিল হয় তাহলে তারা আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং শুকরিয়া আদায় করবে, আর যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু তাদের পেয়ে বসে তাহলে তারা সওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করবে।
-(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৭৫৪৫)

আবার,
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
“আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।”
-[ইবরাহীম; ১৪:৭]

এসব ভাবছি আর ডাইরি দেখছি। হাতের লেখাটাও দারুণ! আমি “উনা” -র ব্যাপারে যত জানতেছি তত মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি।
বাব্বাহ! এটাতো আমাদের বিয়ের কাহিনীটা। সম্পুর্নটা লিখে রাখছে। এটাতো পড়তেই হবে। তাহলে পুরোটা সময় ধরে উনি কি ভাবছেন তা জানতে পারবো। আবার আমার ব্যাপারে কি ভাবেন তাও জানতে পারবো।
এমন সময় “উনি” রুমে আসলেন।
তানহা : কি করছেন?
অর্ণব : এইতো ডাইরি পড়ছি তোমার!
(পিছনে না তাকিয়েই জবাবটা দিলাম)
তানহা : Are you Insane? Don’t you have manners? Don’t you know that reading someone else’s Diery is bad manners? And How dare you to call me “তুমি”?
মনে মনে,
বউটা আমার অনেক রাগী। ইংরেজিটা বুঝেও না বোঝার ভান করলাম। নিজের বউকে তুমি করেই বলতে হয়।আর তুমি করে বললে কেউ পাগল হয়না।
অর্ণব : ইংলিশ বুঝিনা, বাংলায় বলো?
তানহা : অপরিচিত জনকে আপনি বলুন?
অর্ণব : তুমি বললে কি হবে?
তানহা : কিছুনা পাগল যত্তসব! আমার ডাইরি দিন।
অর্ণব : এটা বাসায় নিয়ে গিয়ে পড়ব….তাই আজকে দিতে পারবো না তোমায়।
তানহা দৌরে আমার কাছে আসলো ডাইরি নেবার জন্য,আমি পেছন ঘুরেই আছি।
তানহা : দিন বলছি আমার ডাইরি?
(ডাইরিটা পড়লেই সব কিছু জানা পাবে। একদম দেয়া যাবে না। আর আমিও পাগলের মতো ডাইরিটা বিছানায় রাখছি।ড্রয়ারে রাখতে হইতো)
অর্ণব : না দিবনা
(তানহার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললাম)
দীর্ঘ দুইমাস পর আমরা একজন আরেকজনকে দেখলাম। কিছুক্ষণের জন্য আমরা অন্য এক জগতে চলে গেছিলাম। কয়েক সেকেন্ড আমরা কেউ পলক পর্যন্ত ফেলিনি। পরস্পরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। কি সুন্দর মিষ্টি চেহারা উনার। হিজাবটা ওর সৌন্দর্য আরো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিছে।
তানহার চেহারায় রাগ, অভিমান, বিরক্তি আর ঘটনার আকস্মিকতার মিশ্র ছাপ।
নিরবতাটা আমিই ভাঙ্গলাম,
অর্ণব : কি হল ডাইরিটা নেও, আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছো কেন।
তানহা :- কো…ই না তো…..
(মনে হচ্ছে এখান থেকে আবার ঢাকা বা রাজশাহীতে যেতে হবে।উফফ এতো চেষ্টা করলাম তাও ইনার কাছে পরিচয়টা গোপন রাখতে পারলাম না।)
অর্ণব :- তাহলে কি ভাবছ এত। আর আমায় চিনতে পারছো?
অর্ণব :- না…তো কে আপনি?
অর্ণব :- ওহহো! বিয়া করলাম ২ মাস আগে আর এত তারাতারি ভুলে গেলা?
এমন সময় একটা লোক দরজায় ডাক দিলো। তানহা দরজা খুলতে চলে গেলো।
তানহা : আসসালাম অলাইকুম।
লোকটি : তানহা মা এ মাসের ভাড়াটা দিলে আমার একটু উপকার হত।
বুঝলাম, ইনি বাড়িওয়ালা।
তানহা : চাচা আপনার ভাড়া আমি তিন – চার দিনের ভিতরই দিয়ে দিবো ইনশাল্লাহ। একটু অপেক্ষা করেন।
বাড়িওয়ালা : কথাটা যেন ঠিক থাকে। আসলে আমারো লাগবে তো। নইলে জোড় করতাম না।
তানহা : হুম বুঝছি চাচা, আমি এখানে মনে হয় আর থাকব না, মনে হয় ঢাকা চলে যাব,খালি রেজাল্টার অপেক্ষায় আছি, ইনশাল্লাহ পারলে দুই-তিন দিনের মধ্যে আপনার টাকা দিয়ে দিব।
বাড়িওয়ালা:-ওকে মা তাহলে আমি আজ আসি!
তানহা :- চাচা চা খেয়ে যান??
বাড়িওয়ালা:-না মা অন্য দিন আজ একটু তারা আছে আমার। আসসালাম অলাইকুম
তানহা :- ওকে চাচা।অলাইকুম আসসালাম।
বাড়িওয়ালা চলে গেল, তারপর যখন তানহা ভিতরে আসলো,
অর্ণব : আমার জন্যে এক কাপ কফি নিয়ে আসো।
তানহা : ইস! শখ কতো।
একটু রেগে,
অর্ণব : এই তুমি জানো না আমি তোমাকে দীর্ঘ দুইমাস ধরে পাগলের মতো খুঁজতেছিলাম। সেই যে গেলা তারপর আর কোন খোঁজখবর নাই। তোমাকে আমি কালকে এতো জোর করলাম তাও তুমি বললানা কেনো? দিনাজপুরে এসেও আমার সাথে দেখা করো নি কেনো? এতো দিন কোথায় ছিলা? তোমার কি ন্যুনতম দায়িত্ববোধ নেই? আর তুমি জানেও আমাকে বলনি কেনো তুমিই আমার “উনি”?
তানহা : এত গুলা প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারবো না।
অর্ণব : তোমাকে আজকে সব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। আরো প্রশ্ন আছে আর অনেক কথা আছে তোমার সাথে।
তানহা : জবাব না দিলে কি করবেন? দিবো না!
অর্ণব : না দিলে আর কি করার। যাও নাস্তা বানাও খেয়ে ঘুমাবো।
তানহা : আমি কিন্তু মানুষ ডাকব?
অর্ণব : ডাকলে ডাক,তুমি আমার বিয়ে করা বউ, বউয়ের কাছে থাকলে কিছু আসে যায়না, আর কেউ কিছু বলবেও না

তানহা : দেখুন আমি আপনাকে ভালোবাসিনা,আর ঐ দিন একটা দুর্ঘটনাবশত আমাদের বিয়ে হয়ছে। দয়া করে আমার সাথে এমন করবেন না।আমি শুধু রেজাল্টের অপেক্ষা করতেছি। রেজাল্টটা হয়ে গেলেই আমি চলে যাবো। আর আপনি আমার সাথে জোর করলে আমি এখনই আবার রাজশাহী চলে যাবো।
Islamic গল্প

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”

Part : 13
তানহা : দেখুন আমি আপনাকে ভালোবাসিনা,আর ঐ দিন একটা দুর্ঘটনাবশত আমাদের বিয়ে হয়ছে। দয়া করে আমার সাথে এমন করবেন না।আমি শুধু রেজাল্টের অপেক্ষা করতেছি। রেজাল্টটা হয়ে গেলেই আমি চলে যাবো। আর আপনি আমার সাথে জোর করলে আমি এখনই আবার রাজশাহী চলে যাবো।
এ কথা শুনার পর ডাইরিটা দিয়ে দিলাম।
অর্ণব : তা রেজাল্ট কবে দিবে? শুধু একটা কাজের জন্য বাসা ভাড়া নেওয়ার কি দরকার ছিলো?
তানহা : ডাইরিটা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়।
অর্ণব : বাইরে নাজিম আছে। ও এমনিতেই বাড়িতে “কবে বিয়ে করবি? আমি ভাবিকে দেখবো” এই বলে মাথা খারাপ করে দেয়। যদি শুনে মিস তানহা ওর নিজের ভাবী। তাহলে ভেজাল হয়ে যাবে।
তানহা : কেনো ভেজাল হবে? কাউকে বলে দিবে নাকি? কোনো মেয়েকে?
অর্ণব : তোমরা মেয়েরা এতো সন্দেহ করো কেনো বলতো?
তানহা : যেটা জিজ্ঞাসা করলাম সেটার উত্তর দেও।
অর্ণব : আজব! আমার কেউ নাই এটা তুমিও জানো। আর তুমি নিজে বিষয়টাকে গোপন রাখতে চাচ্ছো। তাই বললাম! নইলে আমার কোন সমস্যা নাই ওকে বলতে।
তানহা : এটাও ঠিক। ওকে বলিয়েন না প্লিজ। আর আমি তো আপনাকে ভালোবাসিনা। ওকে বলে লাভ কি?
মনে মনে,
অর্ণব : আসলে মানুষ ঠিকই বলে। ভালোবাসা প্রচুর কষ্ট দেয়। যার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে সে আমাকে মেনে নিচ্ছে না। তানহার প্রতি প্রচুর ভালোবাসা কষ্টের পরিমানটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই আমি প্রচুর খুশি ছিলাম। কিন্তু এখন ঠিক উল্টোটা! তবুও আমি ধৈর্য ধরে স্বাভাবিক কথা বলতেছি। এটা নিয়ে তানহার সাথে বাড়াবাড়ি করা যাবে আল্লাহ তায়ালা নিশ্চই আমাকে সাহায্য করবেন। কেননা ধৈর্যশীলদের আল্লাহ স্বয়ং সাহায্য করেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্য ধরো এবং আল্লাহকে ভয় করো, তবে তারা দ্রুতগতিতে তোমাদের ওপর আক্রমণ করলে তোমাদের প্রতিপালক পাঁচ হাজার চিহ্নিত ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করবেন।”
-(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১২৫)

আমার অন্তরের অবস্থা আল্লাহ তায়াল স্বয়ং ভালো জানেন। কেননা,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
আমি জানি যে আপনি তাদের কথাবর্তায় হতোদ্যম হয়ে পড়েন(অন্তরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়)। অতএব আপনি পালনকর্তার সৌন্দর্য স্মরণ করুন এবং সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যান।
-(সূরা আল-হিজর ৯৭-৯৮)

যদি তানহা আমার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ বয়ে আনে তাহলে নিশ্চই আল্লাহ তায়ালা তানহার মন আমার জন্য ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করে দিবেন।
তানহা : কি ভাবতেছেন?
(জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে৷ কিন্তু তোমার ভালোর জন্যই করতেছি। আল্লাহ আমাকে শক্ত থাকার তৌফিক দাও)
তানহার কথায় বাস্তবে আসলাম,
অর্ণব : না কিছু না। ঠিক আছে আমি নাজিমকে কিছু বলবোনা। এখন তারাতারি বলো কবে তোমার রেজাল্ট দিবে?
তানহা : কয়েকদিনের মধ্যেই দিবে।
অর্ণব : সরকারি কলেজেই?
তানহা : হুম। এতো কিছু মনে রাখছেন আমার ব্যাপারে?
অর্ণব : তোমার ব্যাপারে কাটানো প্রত্যেকটা সেকেন্ড আমার মনে আছে! ইনশাল্লাহ কখনো ভুলবো না।
তানহা : এখন আপনি যান, নাজিম বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।ওর অংক করা মনে হয় শেষ।আর দয়া করে আমায় ডিস্টার্ব করবেন না।
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম।নিজের খেয়াল রাখিয়েন।
তানহা : অলাইকুম আসসালাম।
বাইরে এসে দেখলাম নাজিম ব্যাগ গুছায় তৈরী হয়েছিলো। নাজিমকে নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।হাটতে হাটতে ভাবতেছি,
এটা কি হলো? তাহলে কি সত্যিই তানহা আমাকে ভালোবাসেনা! আমাকে চায় না? যদি সত্যিই তানহা আমাকে না চায় তাহলে তো আমি জোড় করতে পারবো না। জোড় করে কি করবো? তাহলে আমাদের সাংসারিক জীবন মোটেও সুখের হবে না। আমাদের সংসার তানহার কাছে একটা সমঝোতা ছাড়া কিছুই হবে না। তানহাকে পেলে আমি খুশি হবো, কিন্তু তানহা? তানহা তো কখনোই এই সম্পর্কে সুখী হবে না। আর এক তরফাভাবে কোন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না। যদি তানহা ম্যাটুরিটির পরিচয় দেয় তাহলে সম্পর্ক টিকে থাকবে ঠিকই কিন্তু মানসিকভাবে কেউই সুখী থাকবো না। কেননা জোর করে ভালোবাসা হয় না। জ্ঞানের দরজা খ্যাত আলী (রা) বলেছেন,
“তার পিছনে দৌড়িও না যে তোমাকে এড়িয়ে চলে।”
-[হযরত আলী (রা:)]

তাহলে কালকের কথাগুলোর মানে কি ছিলো? তানহা জানতো যে এটা আমি। তবুও কেনো বললো আমার বউ ভাগ্যবান হবে। এটাতো পরোক্ষভাবে নিজেকেই বলা হচ্ছে। আবার আমার সাথে খুব সুন্দরভাবে কথা বার্তা বললো, এমনকি মিষ্টি হাসি হেসেছিলোও, ঢুকতেও দিলো! তাহলে এগুলা কি ছিলো? শুধু কি বউ হিসেবে নিজের কর্তব্য পালন আর স্বামী হিসেবে আমার অধিকারের জন্য? যদি না ভালোবাসতো শেষে আমাকে সন্দেহ করলো কেনো? আর নেগলার সাথে যেদিন কথা বলতেছিলাম সেদিন নেগলার নাম না বলাতে রেগে গেছিলো কেনো?
এমন হাজারো প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরতেছিলো! আমি কোন কিছুতেই নিশ্চিত হতে পারতেছিলাম না। তবে উনার সাথে কথা না বলে কিছুই সিধান্ত নিতে পারবো না। কেননা,
কুরআনে আছে,
পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
-(৪২ঃ ১৩)

আমাকে এর গভীর পর্যন্ত যেতে হবে।
এমন সময় নাজিম বলে উঠলো,
নাজিম : ভাইয়া কিছু ভাবতেছিস?
অর্ণব : না কিছুনা।
নাজিম : তুই আর ম্যাডাম অতক্ষণ ধরে রুমে কি করতেছিলা?
(মারছে রে! আমি তো এই শয়তানটার কথা ভুলেই গেছিলাম। যদি বাড়িতে বলে দেয় তাহলে আব্বু-আম্মু উল্টা-পাল্টা ভাববে! এখনই বিষয়টাকে এর মাথা থেকে সরাইতে হবে)
অর্ণব : তোর পড়াশুনা কেমন চলতেছে এই ব্যাপারে কথা বলতেছিলাম।
নাজিম : আমার পড়াশুনার কথা বলতে এতক্ষণ লাগে?
(এমনি আমি একে বিচ্ছু বলি?!)
অর্ণব : হুম। তুই কেমন পড়তেছিস, আরো বেশি পড়তে হবে নাকি কম, বেশি পড়লে কতটুকু পড়তে হবে এগুলা। আবার তুই কিসে ভালো পারিস, তোর ভবিষ্যত নিয়েও কথা বলতেছিলাম। কোথায় গেলে তুই সুবিধা পাবি এগুলাই আরকি। এজন্যই দেরী হইলো।
নাজিম : হইছে পট্টি পড়াইতে হবে না। আমার ভবিষ্যত না নিজের ভবিষ্যত সেট করতেছিলা এইটা বুঝছি। আমাকে কি বাচ্চা মনে হয়?
(আমি তো নির্বাক!)
অর্ণব : কি…ই। তুই কি বলতে চাচ্ছিস।
নাজিম : ম্যাডামকে আমারো অনেক ভালো লাগে। আমাকে প্রচুর আদর করে! যদি সাহায্য লাগে আমাকে বলিস।
কথা শুনে তো আমি পুরাই হতবাক। আল্লাহ! এগুলা এ কি বলে? নাহ! আজকের যুগের বাচ্চারা অনেক দ্রুত আগাচ্ছে। আমাকে বলতেছে প্রেমে.….! ছিঃ ছিঃ। তওবা তওবা। আল্লাহ এদেরকে হেদায়েত দান করুক।
অর্ণব : তুই খুব বাড় বাড়ছিস। ইসলামে এগুলা হারাম বুঝলি। বিয়ের পূর্বে মেয়ের চেহারা দেখলেও পাপ হয়। তুই এখন নাবালক,তাই তোর কোন পাপ হবে না। কিন্তু তুই যখন সবকিছু বুঝতে শিখবি, সাবালক হবি তখন পাপ হবে।কেননা,
হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
“তিন শ্রেণীর মানুষ থেকে কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে; ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হওয়ার আগ পর্যন্ত, নাবালেগ বালেগ হওয়ার আগ পর্যন্ত ও পাগল ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত।”
-(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩০১৬)

বুঝলি?
নাজিম : বুঝছি ভাইয়া। আর হবে না।
অর্ণব : হুম এখন সোজা বাড়ি চল।
(আল্লাহ এ যেনো সবকিছু ভুলে যায়। নইলে আমি শেষ।)
বাসায় আসলাম। নাজিম কিছু বলেনি। আল্লাহ বাঁচাইছে। রাতের খাবার আর এশার নামাজ শেষ করে রুমে ঢুকবো এমন সময় বাবা কোথা থেকে এসে বললো,
রফিক সাহেব:- আমার বউ মা কোথায়?
নাহাজুল:- ১৫ দিন সময় নিয়েছি না! ইনশাল্লাহ এনে দিব।শুধু তো একদিনই হলো।
(আল্লাহ জানে কি যে হবে। আপনার বউমাকে তো পাইলাম। কিন্তু বউ হিসেবে পাবো কি না জানিনা। কত খুশি ছিলাম যে “উনা” -র অপেক্ষাটা শেষ হলো। কিন্তু আবার নতুন করে অপেক্ষা শুরু হলো। অপেক্ষাটা এবার বউ হিসেবে পাওয়ার!)
রফিক সাহেব:- ঠিক আছে। যায়ে ঘুমা।
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম।
রফিক সাহেব : অলাইকুম আসসালাম।
রুমে গিয়ে ফেসবুকে লগ ইন করলাম। দেখলাম ক্ষণিকের_মুসাফির পেজটিতে “গুণাহগার বান্দী” আইডি থেকে অনেক গুলা মেসেজ দিয়েছে।
তানহা :- আপনি কি ভাব নেন নাকি?
(“গুণাহগার বান্দী” আইডির মেয়েটার নাম তানহা।)
অর্ণব :- না ভাব নিব কেন। এমনি ব্যস্ত থাকি তাই কথা বলিনা তেমন।
তানহা :- নাম তো বলেননি আপনার , বাসা কোথায় এটাও বলবেন না নাকি?
অর্ণব :- আমার বাসা দিনাজপুর.. আপনার?
তানহা :- কি বলেন?! আমার বাসা রাজশাহীতে কিন্তু এখন দিনাজপুরেই আছি।
(এটা আমার বউ তানহার আইডি নাকি?)
অর্ণব : আপনার সম্পূর্ণ নাম বলুন তো!
তানহা :- তাসনিয়া ইসলাম তানহা। আপনার নামতো বলবেন না। আপনার গল্পগুলা সত্যিই অসাধারণ। ইসলামিক গল্পও এতো সুন্দর ও রোমাঞ্চকর হতে পারে তা না পড়লে জানতেই পারতাম না। তাই একজন ভালো বন্ধু হিসেবে বলতেছি।
(অন্য সময় হলে নিশ্চই অনেক খুশি হতাম। কিন্তু কিছুক্ষণ আগের ঘটনাগুলার জন্য আমি অনেক দুঃচিন্তায় আছি। তবে নিজের বউয়ের মুখে নিজের গল্পের প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে! মনে হচ্ছে আমার গল্প লিখা সার্থক। তবে তানহাকে আমার নাম বা পিকচার কিছু বলা যাবেনা। এটা গোপন থাকুক)
অর্ণব : এর জন্য দুঃখিত। কিন্তু আমি আমার নাম বলিনা আর কাউকে ছবিও দেইনা। নিজেকে গোপন রাখতে ভালোবাসি।
তানহা :- নাম বললে কি এমন হবে?
অর্ণব :- আপনি আমার নাম,ছবি দিয়ে আমার পেজটা নষ্ট করে দিতে পারেন।
তানহা :- আমি এমন না, আর আমি ফেসবুক সম্পর্কে কিছুই জানিনা। আপনি অযুহাত দেওয়ার আর জায়গা পান না। আর ভাইয়া আপনার ছবি কখন চাইলাম? আজব!
এইটা কি হলো? ভাইয়া বললো কেনো। এটা ঠিক না। ইসলামে স্ত্রীকে আপু বা স্বামীকে ভাইয়া বলে ডাকা নাজায়েজ করা হয়েছে। এটা কোনভাবেই করা যাবে না। এটা মাকরূহ। কেননা
হাদীস শরীফে এসেছে,
এক লোক তার স্ত্রীকে বোন বলে ডাকলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনতে পেয়ে তা অপছন্দ করেন এবং তাকে এভাবে ডাকতে নিষেধ করেছেন।
-(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২২০৪)

তানহা না জেনেশুনে পাপ করতেছে।
অর্ণব : আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবেন না দয়া করে।
তানহা : ভাইয়া ডাকলে সমস্যা কি? দেখুন আমি বিবাহিতা। আমার স্বামী আছে। ভাইয়া, আপনি যদি অন্য কিছু চিন্তা করে থাকেন তাহলে খুব খারাপ হবে। নাউজুবিল্লাহ। আমার ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে। ছিঃ
অর্ণব : দয়া করে আমাকে ভাইয়া ডাকবেন না। সমস্যা আছে। আমিও একজন বন্ধু হিসেবেই থাকতে চাই। অন্যকিছু ভাবিও নি। কিন্তু ভাইয়া ডাকিয়েন না। শেষবারের মতো বলতেছি।
(সমস্যা আছে মানে? ভাইয়া ডাকলে আবার কি সমস্যা? ইসলামে একমাত্র স্বামীকে ভাইয়া ডাকা যায় না। তাহলে কি এটা অর্ণব?! আল্লাহ! যদি এটা অর্ণব হয় তাহলে তো…! আল্লাহ মাফ করুক।)
তানহা : আপনি কে? সত্যি কথা বলবেন না হলে খুব খারাপ হবে কিন্তু

(চলবে….)
মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ
