অর্ধাঙ্গিনীঃ8,9,10,11শেষ পর্ব

অর্ধাঙ্গিনী

অর্ধাঙ্গিনী সকল পর্ব👈

অর্ধাঙ্গিনী

৮ম পর্বঃ
মোর্শেদা খাতুন।
♦♦♦♦♦
.
জারা কোনো জবাব দিলোনা।এমন সময় বাচ্চাটা কেঁদে ঊঠল।জারা ঝুঁকে বাচ্চাকে কোলে নিল।ভদ্রমহিলা তাকিয়ে দেখছেন জারাকে।তারপর হেসে বলে উঠলেন-“এটাতো পুরোনো সত্য যে, ধনী ঘরের ছেলেদের পেছনে লেগে কিছু মেয়ে বিভিন্ন কায়দার তাদের হাত করে থাকে,তোমরা দুবোনই দেখছি সেই ক্যাটাগরির।
জারা মহিলার দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল-“আপনি আমাকে ভুল বুঝেছেন”!
-“চুপ করো! তোমার মত মেয়েদের আমার চেনা আছে! তোমরা…..”কথা শেষ করার আগেই মোবাইল বেজে উঠল।মহিলা কড়া চোখে জারার দিকে তাকিয়ে ফোন রিসিভ করলেন,প্রায় সাথে সাথেই তাঁর চেহারার কঠিন ভাঁজগুলো সহজ হয়ে এল।আফনান ফোন করেছে।তিনি একজায়গাতেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থেকে ফোনে কথা বলতে লাগলেন-“হ্যাঁ,রে আব্বু,আমি হঠাৎ করেই চলে এসেছি।বলতে পারিস,তোদের সারপ্রাইজ করতে চেয়েছি।হ্যাঁ…হ্যাঁ…আরে বউয়ের সাথে দেখা হয়েছে।ওর সাথেই তো কথা বলছি।তুই আস্তে ধীরে আয় তাড়াহুড়োর কিছু নেই।আরে না না বাবা,তুই কাজ শেষ করে আয়।হ্যাঁ… পছন্দ হয়েছে,আরে বাবা,তোর পছন্দ হয়েছে এখানে আমার কি বলার আছে!”
ফোন রেখে জারার দিকে তাকালেন-“আমার ছেলেরা আমার প্রাণ,আমার সবচে দুর্বল স্থান।বিশেষ করে আমার বড়ছেলে আফনান,ওর জন্য আমি সব পারি।ওর প্রতি আমার ফিলিংস বাকি সব কিছু থেকে আলাদা,তুমি আমার সবচে দুর্বল স্থানটাতে আঘাত করেছো।
-“দেখুন,আমি তো ওনাকে বিয়ে করার জন্য কোনরকম জোর করিনি বরং উনি নিজেই…..!”
-“থাক্…ধমক দিয়ে জারাকে থামিয়ে দিলেন আফনানের মা।ওসব কায়দা কানুন আমার জানা আছে।তুমি ইচ্ছে করোনি আর অমনি অমনি বিয়ে হয়ে গেল?”(বলে সাবিহা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন-)”
-আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছে ছিলো বোনের মেয়েটাকে আমার ফিনের বউ করে আনবো কিন্তু তা আর হোলোনা।আমি হাল ছেড়ে দেবো ভেবেছো?এর শেষ আমি দেখে ছাড়বো।”
বলে আফনানের মা সাবিহা চৌধুরী চলে যাবার জন্য পা বাড়িয়ে আবার ফিরে এলেন-“তুমি যদি ভেবে থাকো যে সব কথা আফনানকে বলে তাকে আমার বিরুদ্ধে বিষিয়ে তুলবে তাহলে তোমার সে আশার গুড়ে বালি।ফিন কখোনোই তোমার কথা বিশ্বাস করবেনা।চেষ্টা করে দেখতে পারো।”
জারার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি হেসে গটগট করে হেঁটে চলে গেলেন সাবিহা।জারা নিরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাটের এককোণে বসে পড়ল।তার চোখ থেকে পানি পড়ছে।

সন্ধ্যের পরপরই আফনান ফিরলো।কমলার মুখে সে সংবাদ আগেই পেয়েছে জারা।কিন্তু এক ঘন্টা পার হয়ে যাবার পরও আফনানের দেখা মেলেনি।
এদিকে মায়ের ঘরে বসে আছে আফনান।সাবিহা খুক খুক করে কাশছেন,বারবার বুকে হাত রাখছেন।আফনান মায়ের হাত ধরে বলল-“আম্মু,বেশী খারাপ লাগছে?”
-“না রে সোনা।তুই ঘরে যা বিশ্রাম নে”!
-“যাবো,তুমি হঠাৎ এতোটা অসুস্থ হলে কি করে?”
-” আরে বাবা,লং জার্ণি,ওয়ার্ম ওয়েদার এসব মিলিয়ে একটু ফ্লু মত হয়েছে।তুই এত অস্থির হোসনা তো!”
-“আমি নাহয় জারাকে নিয়ে আসি, ও তোমার কাছে কিছুক্ষণ থাকুক!”
-“আরে না রে পাগল,মেয়েটা আমাকে দেখবে না বাচ্চা সামলাবে?”
-“কমলা তো আছেই! ওকে এখানে পাঠিয়ে দেই! কিছুক্ষণ থাকুক,তোমার যখন ভালো লাগবে তখনই নাহয় ও চলে আসবে!সাবিহা বাধা দেবার মত করলেন কিন্তু আফনান মায়ের বাধা শুনলোনা,”আরে তুমি বসো তো,জারা আসুক,কিছুক্ষণ তোমার কাছে থাক্!”
তোর অসুবিধে হবেনা তো! “দুর্বল কন্ঠে বললেন সাবিহা।আফনান তাকে আশ্বস্ত করলো।সে তার মায়ের জন্য চিন্তিত।মা সেজানের এই অবস্থা হয়ত সহ্য করতে পারছেনা তাই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে।
সেজানের শরীরের একপাশ প্যারালাইজিডের মত হয়ে গেছে।তার রেগুলার চিকিৎসা চলছে।
আফনান উঠে নিজের ঘরে চলে এল।জারার বাবুকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল।আফনানকে দেখেই হেসে সালাম দিল! আফনান সালামের জবাব দিয়ে জারার পাশে বসে পড়ল।জারা উঠে দাঁড়ালো-“বসুন,আপনার জন্য শরবত নিয়ে আসি!”
আফনান জারার হাত ধরে বারন করলো!-“আরে না,কিছু লাগবেনা,তুমি বসো তো!!আম্মুর সাথে দেখা হয়েছে তোমার!জারা হালকা হেসে মাথা নাড়ল-“জ্বী”!
-“কেমন লাগলো আম্মুকে?”আফনান হঠাৎ জারার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।জারা দরজার দিকে তাকিয়ে আফনানকে হালকা ঠেলে দিয়ে বলল-“আরে,কেউ এসে পড়বে তো,আম্মুই যদি এসে পড়ে?”
আফনান কিছুটা মলিন মুখে বলল-“আর বোলোনা,আম্মু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে।বলছে বুকটা ব্যথা।
জারা সাথেসাথেই বলে উঠল-“সে কি?”
আফনান উঠে বসল-“হ্যাঁ,সেখানেই বসে ছিলাম এতক্ষণ।মনটা উড়ে উড়ে তোমার কাছে বারবার চলে আসছিল কিন্তু…..আম্মুকে অসুস্থ মনে হলো।কি করে আসি বলো!আম্মুকে বিশ্রাম নিতে বলে এসেছি আর বলেছি, তুমি তার কাছে কিছুক্ষণ থাকবে তার যদি প্রয়োজন হয়! তুমি কি বলো?আম্মুর পাশে আমাদের থাকা তো আমাদের উচিত, তাই না?”
জারা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে উঠে দাঁড়াল-“জ্বী, তা তো অবশ্যই,আপনি বাবুকে একটু খেয়াল রাখুন,ও তো ঘুমাচ্ছে।আমি আম্মুর ঘরে যাচ্ছি!”

জারা ধীর পায়ে সাবিহার কক্ষের সামনে এসে দরোজাতে নক করলে সাবিহা আস্তে করে বললেন-“ভেতরে এসো”!
জারা ঢুকে সালাম দিয়ে ধীর পায়ে সাবিহার কাছে গিয়ে বলল-” আপনার নাকি হঠাৎ শরীরটা খারাপ করেছে ?আফনান বলল…!”
-“তাই দেখতে এলে সত্যি বলেছি না মিথ্যা?”সাবিহা জারার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিলেন!”
জারা কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল-“আপনি আগাগোড়াই আমাকে ভুল বুঝেছেন আ..আম্মু।হ্যা্ঁ,এটা সত্য যে,আপনাদের পারিবারিক বিপর্যয়ে কিছুটা হলেও আমার ছোট বোনটি জড়িত ছিল।আমি সেজন্য লজ্জিত অনুতপ্ত।আপনার কাছে সব কিছুর জন্য ক্ষমা চাচ্ছি!আমি জানি সব মা’ই তার সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে।আফনান আপনার সুসসন্তান।আর ঘটনাচক্রে আমি তার স্ত্রী।আপনি দয়া করে আমার উপর রাগ করবেন না,আমি আপনার মনে নতুন করে দুঃখ দিতে চাইনা।যদি আপনি চান আফনান আপনার পছন্দের পাত্রীকে নিয়ে জীবন কাটাক।আফনানও যদি তাতে সম্মত থাকে আমি কখনোই আপনাদের পথের বাঁধা হবোনা।তবু আপনি সুস্থ থাকুন,ভালো থাকুন !”
সাবিহা কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললেন-” তোমার কথা শুনে ভালো লাগল।যদি তেমন হয় তবে তোমার আর বাচ্চার খরচ তুমি পেয়ে যাবে!আমি অত পাষাণ নই।তোমাদের দুজনের যা খরচ হয় তা আমি দেবো।তুমি নিজেই চলে যাবে!”
জারা হালকা স্বরে বলল-” আমি নিজে থেকে চলে গেলে জটিলতা বাড়বে, উনি এটা কিছুতেই মেনে নেবেন না,আমাকে খুঁজে বের করবেন,নানা প্রশ্ন করবেন,আর আমি মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত নই।তারচে বরং আপনার ছেলেকে আপনিই বলুন আমার যাবার ব্যবস্থা করে দিতে!আমি কখোনোই আপনার পথের বাধা হবোনা!!””
-“খুব যে ত্ত্ত্বকথা বলছো,আফনানের উপর এতটাই কনফিডেন্ট তোমার?”
-“আমাকে মাফ করবেন মা,বড়দের সাথে মুখের উপর কথা বলা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ। আমিতো কেবল আপনার ভুল ভাঙাতে চেয়েছি।”
-“ঢাকায় তোমার আত্মীয় স্বজন কে কে আছেন?”
-“আমার ঘনিষ্ট তেমন কোন আত্মীয় নেই।খুব ছোটবেলায় মা মারা গেছেন।এক ফুপির কাছে মানুষ হয়েছি।
-“ফুপি কোথায় থাকে? “
-“সিলেটে!”
-“সিলেটে তার বাড়ী?”
-“জ্বীনা……ফুপি তো বিধবা মানুষ তিনি আমাদের দুবোনকে নিয়ে ঢাকাতেই ছিলেন।”
কথা বলতেই জারা লক্ষ্য করল সাবিহা দুআঙ্গুল দিয়ে মাথা টিপে ধরেছেন।জারা তার কাছে গিয়ে বলল-“আমি মাথাটা ম্যাসাজ করে দেই,ভালো লাগবে!”
-“না,দরকার নেই। তুমি যেতে পারো!”
যেন শোনেইনি এমনভাবে জারা শ্বাশুড়ীর কাছে গিয়ে তার হাত কপাল থেকে সরিয়ে কোমল হাতে টিপে দিতে লাগল।
সাবিহা বাধা দেবার জন্য কিছু বলতে গেলে জারা বলতে উঠল-“আমি তো চলেই যাবো কদিন পর,যেমনটি আপনি চেয়েছেন।যে কদিন আছি সেকদিন অন্তত আমাকে আপনার মেয়ে হয়ে থাকতে দিন,পুত্রবধু হিসেবে নাহয় নাই মানলেন।”
সাবিহার আরামে ঘুম পেয়ে যাচ্ছিলো।কি বলবেন কথা হাতড়াতে লাগলেন।জারা মৃদুশব্দে বলল-“কাল আপনার নাস্তা আমি তৈরী করবো।সকালে কি খেতে পছন্দ করেন মা?”
-দরকার নেই,বাবুর্চি করবে “!ঘুম ঘুম চোখে বললেন সাবিহা।
-“বাবুর্চির হাতে তো সবসময়ই খান,একবার মেয়ের হাতে খেয়ে দেখুন।আমার মা থাকলে তাকে আমি মজা করে রেধে খাওয়াতাম কিন্তু সেই ভাগ্য আমার হয়নি।চলে গেলে তো আর আপনাকে রেধে খাওয়াবার সুযোগ পাবোনা।করবো মা?”
-“হুঁ,ঠিকআছে।আচ্ছা,তোমার নাম যেন কি?”
-“জারা”!
-“জারা,আমার বালিশটা ঠিক করে দাও তো!খুব ঘুম এসে যাচ্ছে।”সাবিহা আরাম করে কাত হয়ে শুলেন।জারা তার চুলগুলো সরিয়ে সরিয়ে ম্যাসাজ করতে লাগল।”
একসময় তার নাক ডাকার শব্দ শোনা গেল।জারা তার গায়ে পাতলা চাদর দিয়ে ঢেকে দিয়ে আস্তে করে উঠে গেল।
ঘরে ঢুকতেই আফনান বলল-“কি রে ভাই,শ্বাশুড়ীকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলে দেখি!”
-“স্যরি,আপনি কি খাবেন এখন,হালকা কিছু নাস্তা দিতে বলি?”
-“দাও,আম্মু কি করে?”
জারা মুখ টিপে হাসল-“ঘুমিয়ে পড়েছে।”
-“সেকি এত তাড়াতাড়ি?”
-“থাক্,ঘুমাক,জার্নি করে এসেছে। একটু বিশ্রাম দরকার।রাতে আমি ডেকে খাইয়ে দেবো”!
আফনান জারার দিকে তাকিয়ে থেকে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললল-এই অধমের দিকেও একটু তাকিয়ো,না খেতে পেয়ে শুকিয়ে যাবো তো!”
জারা লজ্জা পেয়ে ঊঠে দাঁড়াল-“আমি আসছি!”
যেতে যেতে ভাবল জারা,মা কাছে যেতে দিতে চায়না আর ছেলে খালি কাছে আসার বাহানা খোঁজে।কি এক বিচিত্র জীবন জারার।।
পরদিন সকালে বাবুর্চির কাছে জেনে নিয়ে নিজে নাস্তা বানালো জারা।শ্বাশুড়ী খেয়ে শুধু বলল-“আরেকটু দাও।”তার মুখ দেখে বোঝা গেল তার পছন্দ হয়েছে।এরপর থেকে জারাকে বেশীর ভাগ সময়ই শ্বাশুড়ীর সাথে কাটাতে দেখা গেল।বাবুকে দেখাশোনা করে যেটুকু সময় পায় ততটুকু সসময় কমলাকে বাবুর পাশে বসিয়ে সাবিহাকে সময় দেয় জারা।

কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল,জারাকে ছাড়া সাবিহা হিমশিম খেতে লাগলেন,হাতের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিসটা খুঁজে পাননা।আফনান নিজেও কিছুটা হতাশ।জারা তারচে বেশী মা’র প্রতি বেশী মনোযোগ দিচ্ছে।
সেদিনও জারা ঘোমটা মাথায় দিয়ে রান্নাঘরে কাজ করছিল।আফনান ওকে খুঁজতে রান্নাঘরে উঁকি দিল।দেখল লম্বা ঘোমটার জন্য জারার চেহারা দেখা যাচ্ছেনা কেবল বামপাশ থেকে জারার টিকালো নাকের উপর জ্বলজ্বল করতে থাকা নাকফুলটা আলোর ঝিলিক ছড়াচ্ছে।আফনান সেদিকে চেয়ে রইল।কি বলতে এসেছে ভুলে গেছে।হঠাৎ জারা মুখ তুলে তাকাল-“আপনি এখানে?”
-“আমার কথা মনে আছে তোমার? বলতো আমি কে?”
জারা হেসে ফেলল।হাসলে ওকে দেখতে আরো বেশী সুন্দর লাগে।আফনান রান্নাঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিল।জারার ভয়ে মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
আফনান ওর কাছে এসে ওর কোমড় পেঁচিয়ে ধরল-“কি পেয়েছো কি তুমি?আমাকে পাত্তাই দিচ্ছোনা?”
-“ইয়াল্লাহ,তাড়াতাড়ি খুলুন,প্লিজ।কেউ টের পেলে লজ্জায় মরে যাবো আমি।”
-“দাবী আদায়ে আমি সোচ্চার। হয় তুমি আমাকে কথা দিবে নয়তো আমি আমার হক আদায় করে নেবো!”আফনান ওকে আরো শক্ত করে ধরল।জারা কাকুতি মিনতি করতে লাগল-“আচ্ছা,যা বলবেন,সব মেনে নেবো।এখন প্লিজ দরজাটা খুলুন প্লিজ।”
-“প্রমিজ?”আফনান জারাকে মৃদু ঝাঁকি দিয়ে বলল।
জারা কয়েক সেকেন্ড ইতস্তত করে মুখ নামাল-“প্ প্রমিজ”!
-“ওকে,ডান”!”
বলে জারাকে ছেড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল আফনান।
রাতে খেতে বসে আফনানকে বললেন সাবিহা –” কাল কিছু গেষ্ট আসবে,তুই তাড়াতাড়ি চলে আসিস।জারার দিকে তাকিয়ে বললেন-“বাবুর্চির সাথে আলাপ করে মেন্যুটা তুমি ঠিক করে দিও।”
-“জ্বী,আম্মু!”
-“আমাকে একটু আদা চা করে দিতে পারবে?”
-“হ্যাঁ,মা, আপনি খেয়ে ঘরে যান। আমি আনছি।”
জারা চা নিয়ে যাবার সময় দেখল আফনান গাল ফুলিয়ে বসে আছে ঘরে।জারা দুআঙ্গুল দেখিয়ে ইশারা করল-“একটু প্লিজ,চা টা দিয়েই আসছি।
কিন্তু বেচারী চা দিতে গিয়ে শ্বাশুড়ীর রুমে আটকা পড়ে গেল।আফনান অপেক্ষা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে টেরই পেলনা।হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ছুটে গেল।
…….

WordPress Course
WordPress Course

অর্ধাঙ্গিনী

৯ম পর্বঃ
★মোর্শেদা খাতুন★
:::::::::::::::::::::::::::::::
আফনান তাকিয়ে দেখল জারা উদ্বিগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে।আফনান কিছু না বলে পাশ ফিরে শুলো।জারা ওর কাধে হাত রেখে বলল-“রাগ করেছেন?”কিছুক্ষণ চুপ থেকে আফনান বলল
-“না”!
-“তাহলে, খাননি কেন?না খেয়েই শুয়ে পড়েছেন?”
-“আমার ক্ষিধে নেই!আমাকে ঘুমুতে দাও! “
জারা হতবিহ্বল হয়ে বসে রইল।ওর শ্বাশুড়ীর দিকে দেখতে গিয়ে আফনানের যে চুড়ান্ত অযত্ন হচ্ছে তা জারা খেয়ালই করেনি।শ্বাশুড়ীর মন পেতে ও যেন জীবন বাজি লাগিয়ে দিয়েছে অথচ এদিকে অতি আপন স্বামীকেই অবহেলা করে ফেলছে ও।আফনান চুপ করে পড়ে আছে,একবারো এদিকে তাকাচ্ছে না।জারা আস্তে করে ডান হাত দিয়ে আফনানের পা ছুঁলো-“আমাকে মাফ করে দিন না প্লিজ,আর এরকম হবেনা।
আফনান প্রায় লাফ দিয়ে উঠল-“আরে আরে,কি করছো?”তাকিয়ে দেখলো জারা কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে।আফনান ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল-“উফ্,তুমি দেখছি ভীষণ ছেলেমানুষ!এতে কান্নার কি হলো?”
জারা মুখ নামিয়ে বসে থাকল।আফনান বিছানা থেকে নামল।-“চলো খেতে দেবে!”!
জারা চোখ মুছে উঠে পড়ল।কমলাকে ডেকে বাবুর কাছে বসিয়ে ওরা দুজন খেতে এলো।আফনান ঘন ঘন হাই তুলছে,জারা ওকে হাতমুখ ধুয়ে আসতে বলল।খেতে বসে জারা জানতে চাইল-“কাল অনেক মেহমান আসবে শুনলাম।পুরুষ কেউ হলে আমি সামনে যেতে চাইনা,আম্মুকে এটা বুঝিয়ে বলে দেবেন,প্লিজ”!
-“হুঁ,বলে দেবো!” আফনান নিঃশব্দে খেতে খেতে বলল।খাবার শেষে শুতে যাবার সময় জারা বলল-“মাথায় হাত বুলিয়ে দেই?”
-“দাও…আর কি?দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাই।”
-“মানে?”
-“মানে আবার কি? এতো কিছু বোঝো আর এটা বোঝোনা আমি কি চাই?” জারার চেহারায় রক্ত জমা হলো।
-“হয়েছে আর লাল নীল হতে হবেনা।সকালে ডেকে দিও”!
…..
পরদিন শ্বাশুড়ী খোঁজ নিলেন আয়োজন ঠিকমতো হচ্ছে কিনা।জারা বাচ্চাকে ঘুম পাড়াচ্ছিল।তখন শ্বাশুড়ী সাবিহা চৌধুরী এলেন-“শোনো,রাতে আমার ছোটবোন ওর ছেলে মেয়ে ছেলে বৌ সবাই আসবে,আমার এক ননদও আসবে।তুমি একটু সেজেগুজে তৈরী থেকো!বাচ্চাকে ওখানে নেবার দরকার নেই,কমলাকে দিয়ে ঘরেই রেখো।ও,হ্যাঁ,আফনান ফোন করেছির,তুমি নাকি বাইরের লোকদের সামনে যাও না?”
-“জ্বী,আম্মু।”
-“কেন ইসলামে কি নিষেধ আছে,যে আত্মীস্বজনের সামনে যাওয়া যাবেনা?”
-“বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া গায়ের মাহরামের সামনে না যাওয়াই উত্তম,এটা তাকওয়ার অন্তর্ভূক্ত।”
-” কি জানি বাবা,এতো বুঝিনা,ফিনের খালু মুরুব্বী মানুষ যেয়ে সালাম দিয়ে আসবে”!
জারা মাথা কাত করলো! পরপুরুষের সামনে যেতে কিছুটা খারাপ লাগলেও একটা জিনিস ভেবে জারার কাছে খুব ভালো লাগছে,তা হলো ওর শ্বাশুড়ী যদি ওকে বউ হিসেবে ততটুকু না মানতেন তাহলে তাদের সামনে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য পীড়াপীড়ি করতেন না।

মাগরিবের নামাজ পড়ে বাবুকে খাইয়ে নিজে তৈরী হতে বসল জারা।বেছে বেছে আফনানের কিনে দেয়া একটা শাড়ী বের করল জারা।শাড়ীটাতে খুব সুন্দর মালটি কালারের কারুকাজ করা,জায়গায় জায়গায় রূপা আর কুন্দনের হালকা কাজ করা।শাড়ীর সাথে ফুলহাতা ব্লাউজ পড়লো জারা।চোখে হালকা করে কাজল দিলো, ঠোঁটে সামান্য ন্যাচারাল কালারের লিপস্টিক।
মেহমান এলে ওর শ্বাশুড়ী ওকে ডেকে পাঠালেন।যথাসম্ভব ঢেকেঢুকে ঘর থেকে বেরুলো জারা।শ্বাশুড়ী বেরিয়ে ওর ঘরের দিকেই আসছিলেন,জারাকে দেখে থমকে দাঁড়ালেন,তাঁর মনে হচ্ছিল আকাশ থেকে যেন কেউ নেমে এসেছে।উনাকে দেখে জারা ইতস্তত করে বলল-“ভেতরে যাবো আম্মু?”
সাবিহা সম্বিত ফিরে পেলেন-“উুঁ…বলে ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলেন।তারপর কি চিন্তা করে বললেন-“না,থাক,ড্রইংরুমে যেতে হবেনা তোমাকে,ওদের আমি আমার রুমমে পাঠিয়ে দিচ্ছি, ওরা তোমার সাথে ওখানেই বসুক,এখানে ফিনের খালু,খালাত ভাইরা আছে।ওদের সামনে যেতে হবেনা তোমাকে।”
জারা মনে মনে আল্লাহর শোকর করল।খুব দোয়া করছিল যেন ওকে লোকদের সামনে যেতে না হয়,শ্বাশুড়ীর মন যে বদলে যাবে জারা ভাবতেই পারেনি!আসলে মানুষের মন যেকোন সময় বদলে দেবার ক্ষমতা যিনি রাখেন তাঁর কাছেই আমাদের নিজেদের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর সমস্যা তুলে ধরা উচিত।

সাবিহার ঘরে মেয়েরা সবাই জড়ো হলো।জারা সালাম দিয়ে ওদের সামনে যেয়ে বসলো।সাবিহা গর্বিত ভঙ্গিতে সবার দিকে তাকালেন-“ছোটোখালামনি উঠে এসে জারারাকে জড়িয়ে ধরলেন-“ভারী মিষ্টি মেয়ে”বলে।বাকীরা হা করে বারবার জারাকে দেখতে লাগল।ছোটখালামণির মেয়ে ইরিণা তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো জারার দিকে,ওর মুখে হাসি নেই।ওকে দেখখলে যে কেউ বুঝে ফেলবে যে ও ঈর্ষার আগুনে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে।প্রথমত জারার চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য্য,দ্বিতীয়ত জারা ওর জায়গাটা দখল করেছে বলে।নইলে এতদিনে আফনানের সাথে ওর বিয়ে হয়ে যেতো।বড়খালামনি নিজে ওকে পুত্রবধু বানাতে আগ্রহী ছিলেন! রাগে কষ্টে ইরিনার চোখ দুটো জ্বালা করে উঠল।
মেহমানদের খাবারের আগ দিয়ে আফনান আসল।সবার সাথে হাত মেলাল,কুশল বিনিময় করলেও ওর চোখ এক কাঙ্খিত জনকেই খুঁজে ফিরছিল।ওর যৌবন সরসী নীরে মিলনের শতদল জারা।ইরিনা বিষয়টা লক্ষ্য করল এবং বেশ বুঝতে পারল সে জারা নামের ঐ গাইয়াটাকেই খুঁজছে।সে এগিয়ে গিয়ে খুব কায়দা করে ঠোঁট বাকিয়ে বুক পর্যন্ত হাত সালাম দিল।
-“স্লামালিকুম ফিন ভাই”!
আফনান ঘুরে তাকিয়ে হেসে বলল-“আরে তুমি ইরিনা না?ভালো আছো?”
-“আমি কিন্তু সালাম দিয়েছি ফিন ভাই”!আদুরে গলায় বলল ইরিনা।আফনান শুধরে দিল-“উঁহুঁ,তুমি যেটা দিয়েছো সেটা একচুয়েলি সালাম হলো না,সঠিক সালাম হবে আসসালামুআলাইকুম”যার অর্থ,আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।তোমার ভাবির কাছ থেকে শিখেছি..হাহাহা…!”প্রানখোলা হাসি দিল আফনান।ইরিনার বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠল।আফনান ওর জীবনের প্রথম ক্রাশ।ওকে দেখলে আজো ইরিনার বুকের ভেতর কেমন করে উঠে।আফনানের মত টল ডার্ক,ম্যানলি ছেলে সে খুব কমই দেখেছে।প্রচুর টাকা তো আছেই কিন্তু তার পাশাপাশি আফনান খুব ভদ্র আর সংযমী একটা ছেলে।মেয়েদের প্রতি আগ্রহ কম,একটু ধার্মিক প্রকৃতিরও।ইরিনার কাছে ওর এই গুনগুলো ইউনিক লাগে।সে নিজে যদিও ধার্মিকতার ধারেকাছে নেই তবু আফনানের গাম্ভীর্য, ব্যক্তিত্ব আর ওর দাড়ী সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত পারসোনালিটি।ইরিনা দাড়ি পছন্দ করেনা কেবল আফনানের দাড়িটাই ওর চরম ভালো লাগে।ওকে দাঁড়িতে হেব্বি মানায়।হঠাৎ ভাবনার জ্বাল ছিন্ন হলে ইরিনা চারপাশে আফনানকে খুঁজল,গেল কোথায়??

জারাকে খুঁজতে রান্নাঘরে চলে এল আফনান।জারা বুয়াদের কে খাবারের ব্যপারে কি যেন বুঝাচ্ছে হাত নেড়ে নেড়ে।আফনানকে দেখে বুয়ারা ত্রস্তে সরে গেল।জারা হেসে বলল-“আরে আপনি? কখন ফিরলেন?”
কিন্তু আজ জারার হাসিতে মন গললোনা আফনানেরর।সে জবাব না দিয়ে দাঁতে দাঁতত চেপেপে তাকিয়ে রইল।তারপর বলল-“দুমিনিটের জন্য ঘরে এসো!”বলে চলে গেল।
জারা ধীর পায়ে ঘরে এলো,ঘরে ঢুকতেই আফনান ওকে হেঁচকা টানে নিজের বুকের ওপর টেনে নিল।জারা টাল সামলাতে না পেরে প্রায় পড়েই যাচ্ছিল।আফনান ওকে জড়িয়ে ধরে কোনরকম রকম বোঝার অবকাশ না দিয়ে ওকে সেই প্রথম দিনের মত চেপে ধরল।জারা ছটফটিয়ে সরে যেতে চেষ্টা করল,পারলোনা।কয়েক মিনিট পর আফনান তার বাধন ঢিল করল। জারা অস্থির হয়ে বলল-“বাড়ী ভর্তি মেহমান আর আপনি…!”
-“মাথা খারাপ হলে আমি কি করবো?”
জারা নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।-“আমাকে ছেলেমানুষ বলেন আর আপনি নিজে কি?”
..
ইরিনা আফনানকে খুঁজতে খুঁজতে ওর ঘরের কাছে চলে এল।দুজন নরনারীর ফিসফিসানী ইরানীকে কৌতুহলি করে তুলল।সে কান পাততেই আফনানকে কিছুটা ক্ষোভের সাথে বলতে শুনলো-“ছেলেমানুষী তাই না?আমি যে দিনের পর দিন ধৈর্য্য ধরে আছি সেটার কি? শুনলে কেউ বিশ্বাস করবে যে আমাদের এতদিন ধরে বিয়ে হয়েছে অথচ আমাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্ক নেই??তুমি কি আমার উপর অবিচার করছো না?বলো,আজ বলতেই হবে!”
উত্তেজনার আবেগে ইরিনার চোখ গোল হয়ে গেল।ডান হাতটা আপনা হতেই উঠে এল হা করা মুখে।তাতে ওর হাতের ধাতব ব্রেসলেট পরস্পর বাড়ি খেয়ে রিনঝিন শব্দ করে উঠল।আফনান চুপ হয়ে গেল-“কিসের শব্দ এটা ?”সে উঠে এসে বাইরে তাকাল।কেউ নেই।কিন্ততুআফনান নিশ্চিত একটু আগেই এখানে কেউ দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছিল।পারফিউমের একটা গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে,এবার আফনানের মনে হলো গন্ধটা তার চেনা!
.
মেহমান বিদায় নিতে নিতেই রাত একটা বেজে গেছে।জারা ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে ঘুমাতে এসে দেখে আফনান ঘুমিয়ে পড়েছে।কোনরকম কাপড় বদলে ঝিমুতে ঝিমুতে বাবুটাকে ফিডার খাওয়ালো তারপর নিজেও একপাশে শুয়ে পড়ল।
..♠…
পরদিন সকালে সাবিহা হন্তদন্ত হয়ে জারার দরজা নক করলেন।জারা উঠে দ্রত দরোজা খুলে দিয়ে বলল-“কি হয়েছে আম্মু?”
-“জারা ফিনকে ডাকো তো,তাড়াতাড়ি!”
-“ওকে আমার রুমে পাঠাও!”সাবিহাকে কিছুটা অস্থির মনে হলো।জারা মনে মনে আল্লাহর কাছে দুআ চাইল সব কিছুর অকল্যান থেকে।
আস্তে করে আফনানকে ডাকল-“এই যে উঠবেন?”
আফনানের একটা ভালো অভ্যাস হলো একবার ডাকলেই ঘুম ছুটে যায়।বেশি ডাকাডাকি করতে হয় না।
সে উঠে ফ্রেশ হয়ে মায়ের রুমে আসে।-“কি হয়েছে মা?”

জারার বুকটা অকারনেই ধুকপুক করছে।কেন যেন মনে হচ্ছে কি একটা ঘটতে চলেছে।সে মনে মনে তার সদা সহায়ক রবের দ্বারস্থ হলো।অকল্যান থেকে পানাহ চাইল।আধাঘন্টা পর আফনান ঘরে ঢুকল।ওর চোখে মুখে পেরেশানীর চিহ্ন স্পষ্ট।জারা সহসাই প্রশ্ন না করে অপেক্ষা করল,হয়ত আফনান নিজেই বলবে!
আফনান ধপ করে খাটে বসে দুহাতের আঙ্গুলগুলো চুলে চালিয়ে দিলো।জারা ভয়ে ভয়ে বললল-“কি হয়েছে?”
আফনান কিছুক্ষণ চুপ করে রইল তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-“জারা আমাকে আজ অথবা কালই দেশের বাইরে যেতে হবে।সেজানের ওখানে।ওর অবস্থা খারাপের দিকে।ওকে যার দায়িত্বে রেখে আসা হয়েছে সে খবর পাঠিয়েছে।ইটস আর্জেন্ট।
জারার বুকের ভেতরের বাতাস যেন থেমে গেল।তবু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-“কদিনের জন্য যেতে হবে?”
আফনান ওর দিকে তাকিয়ে বলল-“তোমাকে বাবুকে একা রেখে যেতে মন চাইছেনা কিন্তু কোনো উপায়ওতো দেখছিনা।আম্মু বয়স্ক মানুষ তার উপর অসুস্থ।তার পক্ষে হুট করে এভাবে রওনা দেয়াটা অসম্ভব প্রায়।আমাকেই যেতে হবে,কিছু ক্রিটিক্যাল বিষয়ে ডিসিসান নিতে হতে পারে।
আফনান এবার কাতর চোখে তাকালো জারার দিকে-“কটা দিন থাকতে পারবেনা?আম্মুর সাথে তো তোমার ভাবও হয়েছে আজকাল।পারবেনা? “বলতে গিয়ে আফনান নিজেই আবেগাপ্লুত হয়ে গেল।জারার মাথাটা টেনে বুকে লাগালো।।-“শিগগিরই ফিরবো সোনা! আমার জন্য দুআ করো তুমি।”
জারা প্রবল চেষ্টা করেও কান্না দমাতে পারলোনা।নিজেকে মনে মনে ধিক্কার দিলো।কাছে পেয়েও তাকে আপন করতে পারলিনা এবার তো সে বহুদুরে চলে যাচ্ছে। এখন কি দিয়ে বাঁধবি??

পরিচিত লোক থাকাতে আজ রাতেরই টিকিটের ব্যবস্থা হয়ে গেল।জারা নিরব কান্নায় ভাসতে ভাসতে আফনানের লাগেজ গুছিয়ে দিল।যাবার সময় আফনান শুধু ওর গালে হাত রেখে বলল-“নিজের দিকে খেয়াল রেখো।”
জারা ছোট্ট করে মাথা ঝাঁকালো।-“আপনিও”!
-“পৌঁছে ফোন দিবো”!
রাত একটার ফ্লাইটে আফনান কানাডার উদ্দেশ্যে উড়াল দিল।
..♠..
জারার মনে হলো দিনগুলো যেন একেকটা বছর আর রাতগুলোও সুদীর্ঘ হয়ে গেছে।রাতে খুব কমই ঘুমায় জারা।তাহাজ্জুদের পাটিতে ওর রাতের একটা বড় সময় কাটে।কেঁদে কেঁদে প্রিয় মিলনের ফরিয়াদ জানায়।
.
আফনান যাবার দিন থেকেই ইরিনের আনাগোনা বেড়ে গেছে।সারাক্ষণই সাবিহার রুমে।জারা ঢুকলেই চুপ করে থাকে।দুদিন হয়ে এল আফনানের কোনো ফোন মেল কিছুই পাচ্ছেনা জারা।আম্মুকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল সে পৌঁছেছে।তবে জারাকে ফোন না দেয়ায় সে কিছুটা হতাশ হলেও দুয়া জারী রাখল।
.
আজ অনেকদিন পর ফুপির কথা মনে পড়ল।চোখ মুছে ফোন দিল ফুপিকে।অনেক কথা বলল।ফুপি ওর বন্ধুর মত, সব শুনে তিনি জারাকে বললেন-“একবার সিলেটে বেড়িয়ে যা”!
-“না,ফুপি ও না আসা পর্যন্ত কোথাও যাবোনা! তাছাড়া আম্মু এদিকে একা!”
-সাবিহাও আজকাল চুপ চাপ থাকেন,কিছুটা অসুস্থও হয়ে পড়েছেন।মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলেন,তারপর শুয়ে বসেই থাকেন।জারা পীড়াপীড়ি করে তাকে খাওয়ায়।
.
আজ আম্মু ডাক্তারের কাছে গেছেন।জারা বাড়ীতে একাই বলতে গেলে।কাজের লোকেরা ভেতরে কম আসে কেবল কমলা ছাড়া।জারা বাবুকে খাইয়েছে এমন সময় ফোন বাজল।ধরার কেউ নেই বলে জারা নিজেই সালাম দিয়ে রিসিভ করলো!”
কোনোরকম সম্ভাষণ না বলেই কেউ একজন খসখসে গলায় বলল-“মন দিয়ে শুনুন,ও বাড়ীতে যদি থাকেন তো আজ রাতেই খুন হয়ে যাবেন আপনি অথবা আপনার বাচ্চা।ভালো চান তো পালান।যদি বেশি বুঝে কাউকে জানাতে যান তো বিপদ বাড়বে!
-“জ্বী,আ..আপনি কে?”কে আমাকে বা আমার বাচ্চাকে মারবে??”
-“ও বাড়ীতে আপনার শত্রুতো একজনি,সাবিহা চৌধুরী!”
-“কিন্তু আপনি কে?”
-“আফনানের শুভাকাঙ্খী।”বলে লাইনটা কট করে কেটে দিল।

জারার পা যেন চলতে চাইছেনা।মাথাটা ঠিকমতো কাজ করছেনা।এমন সময় কমলা এসে চারপাশ তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল-“মামী,মামার ঐ বোইনটা না ফুনের মধ্যে আপনের নামে মন্দ কথা কইতাছিল কার লগে জানি”!
জারা জীবনে এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি তাই মাথা ঠান্ডা করে কিছু ভাবতেও পারছেনা।হঠাৎ মনে পড়ায় ফুপিকে ফোন দিল।দ্রুত হাতে ব্যাগ গুছালো, যা হবে পরে দেখা যাবে।একটা চিরকুট লিখলো কাঁপা হাতে, কমলার হাতে দিয়ে বলল-“কেবল মামা ফিরলে তার হাতে দিবি আর কারো হাতেনা”!
-“যাতো মা,ড্রাইভার চাচাকে ডেকে আনতো!”
জারা অসুস্থ বোধ করছে।ড্রাইভার চাচা এত ভেতরে কখনো আসেননি,তিনি সসংককোচে বাইরে থেকে বললেন-“আম্মা,ডেকেছেন?””
জারা বোরকা নিকাব পড়ে তৈরী।ঘর থেকে বেরিয়ে কাতর স্বরে বলল-“আমার খুব বিপদ চাচা,আমাকে কোনোভাবে সিলেট শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারবেন?”
চাচা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে মিনিট খানেক ভেবে বললেন-“আপনি আসেন আম্মা”!
জারার গাড়ী বেরোনোর পরপরই ইরিনের গাড়ী ঢুকল।
জারা এখন সিলেটের পথে।
একা.!অসহায়!

Passive Income
Passive Income

♥অর্ধাঙ্গিনী

♥১০ম পর্বঃ♥
♥লেখাঃ-মোর্শেদা হোসেন রুবি
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥

জারা সারাটা পথই কাঁদছিলো আর মনে মনে রবের কাছে দুআ করছিল।ওর হাতপা এখনো কাঁপছে।ওর বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে,আম্মু ওদের বাড়ী থেকে বের করার জন্য এতবড় ক্ষতি করতে পারে।আজ ও মর্মে মর্মে বুঝতে পারলো আফনান ওর কতখানি!সে না থাকাতে ওর ওপর বিপদ একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে!
ড্রাইভার চাচা বলেছেন-“কাঁদবেন না আম্মা।আমার দেহে জান থাকতে আপনার কোন ক্ষতি হতে দিবোনা।আপনি স্থির হয়ে বসুন।কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবেন,আমি ব্যবস্থা করবো।মানীর মান আল্লাহ রাখে।আপনি তো আল্লাহ ভীরু মানুষ।আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।

জারা যখন বাড়ী থেকে বেরিয়েছে তখন ছিলো বেলা সাড়ে দশটা।এখন দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে।টানা দুই ঘন্টা জার্ণি করেছে সে।পথে একবার গাড়ী থামিয়ে জারার কিছু লাগবেনা কিনা জানতে চাইলে এক বোতল পানি চাইল জারা।সারাটা পথে সে কিছুই মুখে তুললো না!
অবশেষে প্রায় পৌনে ছটার দিকে জারা সিলেট শহরে পৌঁছুল।সেখানে পৌছে ড্রাইভার চাচার মোবাইল থেকে ফুপুকে ফোন দিল জারা।ফুপু লোক পাঠাননি,বরং নিজেই এসে দাঁড়িয়েছিলেন।ওদের দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি বাবুকে কোলে নিলেন!জারা ড্রাইভার চাচাকে বিনয়ের সাথে চলে যাবার জন্য অনুরোধ করল।জারার সাথে কোনো টাকা নেই বলে চাচাকে দিতে পারলোনা তাই বারবার ক্ষমা চাইলো জারা।চাচা সাথে সাথে প্রতিবাদ করে উঠলেন-“আরে না না আম্মা, এটাতো আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে!তিনি জারা কে তার গন্তব্যে নামিয়ে দিতে চাইলেন।
-“আম্মা,কোথায় যাবেন,চলেন নামিয়ে দিয়ে আসি।”
♠…♠

সাবিহা ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ীর দিকে রওনা দিলেন।ইচ্ছে ছিল ছোটবোনের ওখানে গিয়ে একটু মনটাকে হালকা করবেন কিন্তু ওদিকে বাসায় জারা একা।ওর কথা ভেবেই তিনি সিদ্ধান্ত বদলালেন।দিন দিন মেয়েটার উপর মায়া পড়ে যাচ্ছে যেমন ভদ্র তেমন বিনয়ী আর ‘মা’ বলে এমনভাবে ডাকে যেন তার পেটের মেয়ে।
আল্লাহ আল্লাহ করে আফনানটা ফিরলে একটা গ্র্যান্ড রিসেপশন দিয়ে ওদের বিয়ের অনুষ্ঠান করবেন।অনেক হয়েছে,মেয়ে যে ভালো এতে কোন সন্দেহ নেই।আর এত ঝামেলা ভালো লাগেনা।ওকেই বউ বলে মেনে নিতে এখন আর তার আপত্তি নেই।গাড়ীতে বসে নানান কথা ভাবছিলেন সাবিহা।এমন সময় মোবাইল বেজে উঠল।ইরিনার ফোন।
-“হ্যালো?”
-“আন্টি সর্বনাশ হয়ে গেছে।ঐ জারা মেয়েটা বাচ্চা সহ টাকাপয়সা গহনাপত্র সব নিয়ে চুরি করে পালিয়েছে।আপনি তাড়াতাড়ি আসেন।
সাবিহার মনে হলো তিনি কানে কিছু ঠিকমতো শুনতে পাননি।বুকটা ধড়াস ধড়াস করছে।কি শুনলেন এটা?উফ্,এটাও কি বিশ্বাসযোগ্য??তিনি আর কিছু ভাবতে পারছেন না!
.♠

ড্রইং রুমে ইরিনা,ওর ছোট ভাইটা আর সাবিহার ছোট বোন,বোন জামাই বসে আছে।সাবিহা দিশেহারার মতো ওদের মুখের দিকে তাকালেন।-“কি হয়েছে?তোমরা সবাই এখানে?
ইরিনাই সবার আগে কথা বলে উঠল-“খালামনি, তুমি আগে কিছুই টের পাওনি?”
-“কি টের পাইনি?কি হয়েছে পরিস্কার করে বলতো!”সাবিহা পুনরায় কথাটা শুনতে চান কারন তার মনে হচ্ছে হয় তিনি ভুল শুনেছেন নতুবা ওরা ভুল করছে।
-“তোমার সুন্দরী বউ ‘জারা’ বেগম টাকাপয়সা গহনা নিয়ে ভেগেছে।ইরিনা বিদ্রুপ মাখানো সুরে বলল।
সাবিহা ধমকের সুরে বললেন-“”কি যা তা বলছিস,ও তো এমন মেয়েই না, এটা কখনোই হতে পারেনা।”
ইরিনা বলল-“খালামনি, তুমি আসলেই বেশী সহজ সরল।মেয়েটা দুদিন তোমাকে কি খাতির যত্ন করেছে আর তাতেই তুমি ভুলে গেলে।এদের আমার চেনা আছে, এরা ভদ্রতার মুখোশ পড়ে বড়লোকের ছেলেদের ফাসায় তারপর টাকাপয়সা নিয়ে কেটে পড়ে।ধর্মটা ওর মুখোশ,বুঝলে?
-“জারা এখন কোথায়?”ক্লান্ত সুরে বললেন সাবিহা।তার খুব খারাপ লাগছে।জারার ব্যপারে এই কথাটা মেনে নিতে তার মন চাইছে না কিন্তু সত্যি তো তার সামনে।ইরিনা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব বর্ণনা দিচ্ছে।সাবিহা সোফায় হাত পা এলিয়ে বসে তা শুনছেন।
-“আমি তো আফনান যাবার পর প্রায় প্রতিদিনই আসি,খালামনিকে দেখে যাই।ওরা দুভাই বাসায় নেই,বাইরের একটা মেয়ের উপর কি ভরসা।আজো তাই ভাবলাম,যাই খালামনিকে দেখে আসি।ওমা!এসে দেখি, ঘর দের সব ফাঁকা পড়ে আছে,আলমারী হাট করে খোলা ভেতরে শাড়ী গহনা কিচ্ছু নেই।”
সাবিহা কি বলবেন ভেবে পেলেন না।চিতকার করে দারোয়ান ড্রাইভার বুয়া সবাইকে ডাকলেন।তারা বলল-“তারা কিছু জানেনা,তারা ভাবিসাহেবাকে বেরোতেই দেখেনি।সাবিহা রাগে চেঁচিয়ে উঠলেন-“তোমাদের বেতন দিয়ে পুষি কি আড্ডা মারার জন্য? একটা জলজ্যান্ত মানুষ বাড়ী থেকে চলে গেল আর তোমরা কিছুই জানো না?তোমাদের সব কটাকে আমি পুলিশে দেবো!”
-“খালামনি শান্ত হও তো ,এই তোমরা যাও।”সবাইকে বের করে দিয়ে ইরিনা কাছে এসে বসল-” উত্তেজিত হয়ে লাভ নেই খালামনি,যে গেছে সে গেছে,বেশী লোক জানাজানি হলে তোমার বাড়িরই বদনাম। আম্মু তুমি খালামনিকে নিয়ে ঘরে যাও,ওনার বিশ্রাম দরকার।”
সাবিহার ছোট বোন উঠে এলেন-“হ্যাঁ, চলো আপা।অস্থির হয়োনা, আরো বেশী শরীর খারাপ করবে। “
ইরিনার বাবা চলে যাবার আগ মুহূর্তে বললেন-“এটা নিয়ে হৈ চৈ না করাই ভাল,যত লোক জানাজানি হবে ততই কথাটার ডালপালা গজাবে”!
সাবিহা শুধু শুনে যাচ্ছিলেন কোন জবাব দিচ্ছিলেন না।সবাই বেরিয়ে গেলে ইরিনা তার ছোট ভাই এর দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো, তারপর দুজনই হেসে উঠল।
ইরিনা চাপা গলায় হেসে বলল-“খ্যাতটা এমন ভীতুর ডিম,এক ধমকেই বাড়ী থেকে পালিয়েছে।কোনো কষ্টই করতে হয়নি!”তারপর ফিসফিসিয়ে বলল-“অই, ফোনে থ্রেড দিসে কে, তুই না রকি?”
-“রকি! জানইতো মাইনষেরে ফাঁপর দিতে ও ওস্তাদ! আপু আমাদের চাইনিজ খাওয়ার টাকা দিতে হইবো,তোমার রোড ক্লিয়ার করে দিসি আমি”!
-“আরে দিবো দিবো।”

সাবিহা অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন।আজ কয়েকটা দিন হয়ে গেলো জারার কোনো খবরই নেই।মনে মনে আশাবাদী ছিলেন,কোথাও থেকে কোনো খবর আসবে আর তিনি শুনবেন যে, এতদিন যা জেনেছেন সব ভুল।মনে মনে তিনি জারার জন্য উদ্বিগ্নও,এমন সুন্দর একটা মেয়ে একা বাচ্চা নিয়ে কোথায় গেল?কোনো বিপদ হলো কিনা কে জানে?” ভাবতে গেলে সাবিহার মাথা ধরে আসে।

এরই মধ্যে একদিন আফনানের ফোন এলো।তারা আগামি সপ্তাহেই বাড়ী ফিরবে।সেজান আগের তুলনায় অনেকটা সুস্থ।সে এখন ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাটতে পারে।ওকে নিয়েই ফিরবে।
সাবিহা বাড়ীর কোনো খবর দিলেন না।আফনান জানতে চেয়েছিল -“জারা কেমন আছে?”
সাবিহা কোনমতে বললেন-“ভালো” বলে রেখে দিলেন!
তিনি ভেবে পাচ্ছেননা আফনান ফিরলে কি বলবেন,ওকে?”
….
অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে জারার দিন কাটছে।সে ফুপুর সাথে ফুপুর বান্ধবীর বাড়িতেই উঠেছে।ফুপু এখানে একটা রুম ভাড়া নিয়ে থাকেন।ফুপু এক দুঃসম্পর্কের ভাই আছেন তিনিই ফুপুর খরচপত্র বহন করেন।
ও বাড়ীতে কি হচ্ছে তা ভেবে জারা মাঝে মধ্যে অস্থির হয়ে ওঠে।অপেক্ষার প্রহর যেন কাটতেই চায়না জারার।

আজ আফনান ফিরেছে।সাথে সেজানকে নিয়ে।আজ সাবিহার সুখের দিন।কিন্তু তিনি যেন খুশি হতে পারছেননা।আফনান বাড়ী ঢুকে সেজারকে ড্রইংরুমে বসিয়ে নিজের ঘরের দিকে ছুটে গেল।মিনিট পাচেক পর ফিরে এসে বলল-“আম্মু, জারা বাবু ওরা কোথায়?কাউকে দেখছিনা যে?”
সাবিহা মুখ নিচু করে কাঁদছেন।আফনান বোকার মত তাকিয়ে আছে।প্রশ্ন করার সাহস হারিয়ে ফেলেছে।
অবশেষে ইরিনার বাবাইই মুখ খুললেন।গলাখাকারী দিয়ে তিনি ঘটনাটা খুলে বললেন।তাঁর মুল বক্তব্য ছিলো জারা পালিয়েছে।
তাঁ কথা শেষ হবার আগেই আফনানের কন্ঠস্বর যেন চাবুকের মত আছড়ে পড়ল-“এবসার্ড! অসম্ভব।”
সবাই চুপ করে আছে।ইরিনা চুপ করে আছে।আফনানের এই রুদ্রমুর্তির সামনে ও কথা বলার সাহসই পাচ্ছেনা।অথচ একদিন সমানে বলে বেড়িয়েছে জারার সাতকাহন।
..
সাবিহা বড়ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন-“বিশ্বাস তো আমারো হয়নাই কিন্তু ও আমাকে না জানিয়ে একা বাসা থেকে বেরোরোলো কেন,এই উত্তরটাই তো খুঁজে পাচ্ছিনা।আফনান দুহাতে মুখ ঢেকে বসে আছে।সেজান চুপ করে বসে ভাইকে দেখছে।এই কদিন জারার ব্যপারে ভাইয়ের সাথে বিভিন্ন কথা হয়েছে সেজানের।আমোদ ফুর্তিতে দিনকাটানো সেজান কখনো কোনো মেয়েকে মূল্যায়ন করেনি।আজ এতগুলো মাস ক্লিনিকে পড়ে থাকতে থাকতে উপলদ্ধি করতে পারছে জীবনটা কত কঠিন।সে আজ ভালভাবে হাঁটতে পারেনা।ক্রাচই তার নিত্যসঙ্গী।আফনানের কাছেই শুনেছে জারা তার সন্তানকে মানুষ করছে।কিন্তু বাড়ী ফিরে এসব দেখে সে নিজেও বিভ্রান্ত।
…..
আফনান তখনি সব কাজের লোককে ডেকে পাঠালো।তারা সবাই বলছে তারা কিছু জানেনা,ভাবিসাহেবাকে বেরিয়ে যেতে দেখেনি।কমলাকে ধমকালো-“তুই কোথায় ছিলি”!
সে কাঁদোকাঁদো স্বরে বলল-“বাতরুমে মামা।”
আফনান দিশেহারা বোধ করছে।সবাই একযোগে মানা করলেও আফনান নিশ্চিত কেউ একজন মিথ্যা বলছে।
ইরিনাকে কর্কশ কন্ঠে জেরা করল আফনান।ইরিনা কাচুমাচু হয়ে জবাব দিলো।আফনান ধমক দিয়ে কাজের লোকদের ফেরত পাঠালো-“যান আপনারা।আমি যদি জানতে পারি,আপনারা আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছেন তো ফলাফল ভালো হবেনা!”

আফনান দুপুরে কিছুই খেলোনা।সাবিহা কয়েকবার সাধলেন।
-“এতো লম্বা জার্নি করে এসেছিস কিছু তো মুখে দে!”
-“না,আম্মু! জারা আর ছোটবাচ্চাটা কোথায় আছে কিভাবে আছে না জানা পর্যন্ত আমি স্বস্তি পাবোনা।জারা এ যুগের মেয়েদের মত চালু মেয়ে না।ও খুব সহজ সরল মেয়ে।যে যাই বলুক,ওকে আমার চে বেশী কেউ জানেনা।ও যদি না বলে চলে গেছে তো এর পেছনে কোন বড় কারন তো অবশ্যই আছে।
সাবিহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন-“কত কটু কথা বলেছি ওকে, কত রাগ করেছি,তখন গেলোনা!
আর আজ যখন ওকে ভালোবাসতে শুরু করেছি তখন….বলে সাবিহা চোখ মুছলেন।আফনান অবাক হয়ে বললেন-“কই, তুমি ওকে আবার কবে এসব বললে? ও তো আমাকে কিছু বলেনি!”
সাবিহা কোন জবাব দিলেন না।আফনান দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে মাটির দিকে চেয়ে ভাবতে লাগল।
পরেরদিন ইরিনা এলো ওর মা’কে নিয়ে।ইরিনা বারকয়েক খোঁচা দেবার পর ছোটখালা ইনিয়ে বিনিয়ে ইরিনা আর আফনানের বিয়ের প্রস্তাব দিলেন।সাবিহা শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন।বললেন-“আফনান কি রাজী হবে?”
ছোটখালা বললেন-“ওকে রাজী করাতে হবে আপা।তুমি তো এও জানোনা যে ওরা নামেই স্বামী স্ত্রী। ওদের মধ্য কোন সম্পর্ক নেই।ইরি নিজ কানে শুনেছে।এমন সংসারে আমাদের ফিন কি কোনোদিন সুখী হতে পারবে?ঐ রূপ ধুয়ে কি পানি খাবে?”
মেয়েটাতো ফিনকেও ঠকিয়েছে”!
সাবিহা চিন্তিত স্বরে বললেন-“দুটো দিন যাক,তারপর কথা বলবো,এখন তো এসব বলাই যাবেনা”!

সন্ধ্যে নামছে।আফনানের মনের আকাশে রাত নেমেছে আরো আগেই।চোখে সব অন্ধকার দেখছে।জারাবিহীন জীবনের কথা ভাবতে পারছেনা আফনান।সে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে আকাশ পাতাল ভাবছির।এমন সময় কমলা ভীরু পায়ে ঢুকল।-“ম্ মামা?””
আফনান চমকে উঠে বসল-“মামা, এই কাগজটা মামি যাওনের সুময় আমারে দিয়া কইছে খালি যেন আপনার হাতে দেই। এজন্য তহন সবার সামনে কই নাই!আমারে মাপ কইরা দেন মামা।”আফনান যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল।দ্রুত কাগজটা খুলে পড়ল।পড়তে পড়তে দাঁড়িয়ে গেল।দুবার পড়লো কাগজটা।তারপর কমলাকে ডেকে বলল-“ড্রাইভার চাচাকে ডাক্ তো”!
ড্রাইভার চাচা ভীতভাবে এসে দাঁড়ালেন-“জ্বী,সাহেব”!
আফনান তার দিকে ফিরে শান্তভাবে বললেন-“চাচা,আপনি মুরুব্বী মানুষ,আপনাকে আমি শ্রদ্ধা করি।কি ঘটেছে আমাকে সব সত্য করে বলুন তো”!
ড্রাইভার চাচা ধীরে ধীরে জারার চলে যাওয়ার সমস্ত কথা বললেন।আফনান চুপ করে সব শুনল।চাচা ক্ষমা চেয়ে বললেন-“আমাকে মাফ করুন বাবা।ছোটআম্মা এত ভয় পেয়েছেন,কাকুতি মিনতি করছিলেন, আমি মানা করতে পারিনি।
আফনান কপালের ঘাম মুছে বললো-“গাড়ী বের করুন,আমি এখনি সিলেট যাবো।”

BIONARRATIVE
BIONARRATIVE

অর্ধাঙ্গিনী

♥১১ পর্বঃ
লেখাঃ-মোর্শেদা হোসেন রুবি

আফনান দ্রুত হাতে তার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো গুছিয়ে নিচ্ছিল।ওর মাথায় নানান ধরনের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।এমন সময় সাবিহা চৌধুরী ঘরে প্রবেশ করে হতবাক হলেন।বিছানার উপর আফনানের কাপড় চোপড় এলোমেলো পড়ে আছে।পাশেই একটা ব্যাগ তাতে কিছু কাপড় উঁকি দিচ্ছে।সাবিহা অবাক হয়ে বললেন-“তুই কি করছিস এসব?ব্যাগ গুছাচ্ছিস কেন?
-“ওহ্,আম্মু তুমি এসেছো,আমি একটু সিলেট যাচ্ছি,এই আধা ঘন্টার মধ্যেই রওয়ানা দেবো।বাই রোড।”
-“তুই কি পাগল হলি নাকি? হ্যাভ ইউ গন ম্যাড? এই রাতের বেলা তোর সিলেট যাবার কি দরকার পড়লো,তাও বাই রোডে?”
আফনান ঘুরে মা’র দিকে তাকাল।হাত ধরে বলল-“আমাকে একটু সময় দাও।আমি তোমাকে সব বলবো,আগে তোমার বৌমাকে নিয়ে আসি তারপর তুমি সবই জানবে!”
সাবিহা বিস্মিত হলেন-“বৌমা সিলেটে?”
-“হমম…”
-“তুই কিভাবে জানলি?”
-“ওহ্,মা…..প্লিজ আমাকে কোনো প্রশ্ন কোরোনা আর এদিকেও সবাইকে আপাতত কিছু বোলোনা। আমি এসে নেই তারপর কথা হবে।”
সাবিহা বুঝতে পারছেন,ছেলে জারার কাছে যাবার জন্য উতলা হয়ে আছে।তবু বললেন-“বাই রোডে যেতে তো অনেক সময় লাগবে,রিস্কিও।বাই এয়ারে যা!”
-“না,আমি রোডেই যাবো,তুমি ভেবোনা,পৌঁছে তোমাকে জানাবো।বাট নাউ স্পিকটি নট,ওকে?”
আফনান দুহাতে হিপ পকেট চেক করল।তারপর মাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে ছেড়ে দিয়ে সোজা বেরিয়ে গেল।সাবিহা চিন্তিত মুখে ওর পেছন পেছন গেলেন।

গাড়ী মসৃন গতিতে চলতে লাগল।আফনান মাথাটা পেছনে হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে পড়ে আছে।ক্লান্তি দুশ্চিন্তা অস্থিরতা ওকে একেবারে কাবু করে ফেলেছে।মাঝরাতে ড্রাইভার গাড়ী থামিয়ে জানতে চাইল আফনান খাবে কিনা বা অন্যকিছু নেবে কিনা??আফনান খাবেনা বলে ড্রাইভারকে যেয়ে খেয়ে আসতে বলল।শেষ রাতের আলো ফোটার আগে আগে ওরা সিলেট পৌঁছালো।
আফনান জিজ্ঞেস করলো-“আপনি চেনেন বাসাটা?”
-“জ্বী, সাহেব।”
-“তাহলে…নিয়ে চলুন সেখানে!”
-“একটা ফোন করে বলে দিবো আমাদের আসার কথা?”
-“ফোন নম্বর আছে আপনার কাছে?”
-“জ্বী।”
আফনান একটু ভেবে বলল-“আপনি এক কাজ করুন।আমাকে ঐ বাসায় নামিয়ে দিয়ে আপনি হোটেলে চলে যান।আমার জন্য রুম বুক করুন তারপর আমাদের নিতে এখানে চলে আসবেন।”
-“জ্বী,আচ্ছা।”
..
যখন ভোরের আলো ফুটে গেছে তখন আফনানের গাড়ী একটা ছোট দোতলা বাড়ীর সামনে পৌঁছুল।সে নেমে গাড়ী ছেড়ে দিল।বুকের ভেতর অস্থির হ্রদয় যেন চিৎকার করে বলছে- “ভালবাসি,ভালবাসি”!

কিছুটা দ্বিধা করে ডোরবেল টিপল আফনান।ভেতর থেকে কোনো শব্দ এলোনা।আরেকবার বাজাতেই জারার ফুপি দরোজা খুলে দিলেন!”
তারপর আফনানকে দেখে ওনার চোখ বিস্ফোরিত হবার যোগাড়।বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠলেন প্রায়-“,বাবা,আপনি?”
-“মাফ করবেন,সকালবেলা বিরক্ত করে ফেললাম’”!
-“আরে না না,আসুন বসুন”!
ফুপি আফনানকে বসতে বলে প্রায় দৌড়ে ভেতরে গেলেন!
.
আফনান একটা সোফায় বসতে যাবে তখনি জারা প্রবেশ করল-“আপনি এসেছেন?
আফনান না বসে দাঁড়িয়ে গেল।অপলক চোখে জারার দিকে তাকিয়ে রইল।যেন কত বছর পর দেখছে।জারার চোখে পানি ভরে গেল।সে প্রায় ছুটে এসে আফনানকে জড়িয়ে ধরল।আফনানও স্থান কাল পাত্র ভুলে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তারপর ওর মাথার ঠিক মাঝখানে চুমু খেয়ে বলল-“যাও,দশ মিনিটে চটপট তৈরী হয়ে এসো।আমার সাথে যাবে।”
ভেজা চোখ তুলে আফনানের দিকে তাকিয়ে বলল-“কোথায় যাবো?”
আফনান সেই ভেজা চোখের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইল।তারপর বলল-“আমার যেখানে খুশি নিয়ে যাবো,আপত্তি আছে?”
জারা মাথা নেড়ে আফনানের বুকে মাথা রাখল।আফনান ওকে মৃদু ঠেলা দিয়ে বলল-“যাও যাও,তৈরী হও,আমি কিন্তু সারারাত ঘুমাইনি,কিছু খাইওনি।”
-“সে কি? আমি নাস্তা তৈরী করে নিয়ে আসি”?
-“উহুঁ…উহুঁ…আপনি রেডি হন।বেরুবো।””
-“বাবুকে তৈরী করতে একটু সময় লাগবে যে,ও তো ঘুমে!”
-“বাবু আপাতত এখানে ফুপির কাছেই থাকুক।আমরা দুপুরের আগে এসে বাবুকে নিয়ে যাবো,ফুপি সহ “!
জারা কিছু বলতে যাবে তখন ফুপি একটা ট্রে হাতে ঢুকলেন।তাতে শরবত আর কিছু ফল।
আফনান লজ্জা পেল কিছুটা-“ফুপিকে সকাল সকাল বিরক্ত করার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।আপনি ব্যস্ত হবেননা ফুপি,বসুন আপনার সাথে একটু কথা বলি।”ফুপি বসলেন।আফনান শান্তস্বরে বলল-“আপনার কোন অসুবিধা না থাকলে আমি একটু ওকে নিয়ে যাচ্ছি…!”
ফুপি বোকার মত তাকিয়ে রইলেন।আফনান জারাকে তাগাদা দিল-“তুমি তৈরী হয়ে এসো আমি ফুপির সাথে কথা বলছি”! আধাঘন্টার মধ্যেই জারাকে নিয়ে বেরিয়ে এল আফনান।ফুপি হাসি মুখে ওদের গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন।
ড্রাইভার চাচা গাড়ীর গেট খুলে দেবার সময় জারাকে সালাম দিলে জারা জিজ্ঞেস করল-“ভালো আছেন চাচা?”
-“জ্বী,আলহামদুলিল্লাহ”!
গাড়ীতে আফনান কোনো কথা বলল না কেবল বাম হাত দিয়ে জারার ডান হাত ধরে রাখল যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে”!
জারা একটু ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করল-“রাগ করেছেন?”
আফনান জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল-“খুব”!
জারা আর কিছু বলল না।গাড়ী থামলে জারা নেমেই চিনতে পারল এটা সেই হোটেল যেখানে জারার বিয়ে হয়েছিল।লিফট দিয়ে ওঠার সময়ও আফনান চুপ করে থাকল।তবে ওর হাত একমুহূর্তের জন্য ছাড়েনি।জারা লজ্জায় দুএকবার ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করেছিল আফনান মৃদু ধমক দিয়েছে-“কি শুরু করেছো?”
জারা ক্ষান্ত দিলো।
রুমে ঢুকে সাথে সাথেই বেলবয়কে নাস্তার অর্ডার দিয়ে দিলোআফনান।জারাকে বলল-“আমার জামা কাপড়গুলো একটু বের করতো,এগুলো পাল্টাবো।”আফনান খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই কথাগুলো বলে বাথরুমে চলে গেলল।জারা বোরকা খুলে আফনানের জিনিসগুলো গুছালো।ওর পড়ার মত হালকা পোষাক বের করে সামনে রাখল।
আফনান কোমড়ে টাওয়েল পেঁচিয়ে বেরিয়ে এল।ওর লোমশ ভেজা বুক পানিতে চকচক করছে।জারা ওর দিক থেকে চোখ নামিয়ে নিল।আফনান ওর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নিজের গা মুছল।জারা মুখ নামিয়ে রাখল।আফনান ওকে জিজ্ঞেস করল-“কি হয়েছে?”
-“কোথায় কি হয়েছে?”
-“নিচের দিকে তাকিয়ে কি দেখছো?”
জারা জবাব দিলোনা।গেট নক হলে জারা উঠে ভেতরের দিকে চলে গেলো।আফনান ততক্ষনে ঘরোয়া পোষাক পড়ে ফেলেছে।বেলবয় নাস্তা সাজিয়ে দিয়ে চলে গেল।আফনান জারাকে ডাকল-“কই কোথায় গেলে?”
জারা এসে সামনে বসতে গেলে আফনান ওর হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসালো।তারপর বলল-“নাও শুরু করো “!
জারা ওর দিকে তাকাল-“আপনি কিছু বলছেন না যে?
কোনো প্রশ্নও করলেন না! কেন আমি এভাবে না বলে চলে এলাম’”!
আফনান চুপ থেকে বলল-“জারা,আমি গতকাল দুপুরে কানাডা থেকে এসেছি।৪৮ ঘন্টার প্লেন জার্নি,ট্রানজিট সব মিলিয়ে আরো কয়েক ঘন্টা। দেশে ফিরে দেখি বাসার এই পরিস্থিতি।রাতেই রওনা দিলাম।আর সকাল থেকে তো যা হচ্ছে তুমি দেখতেই পাচ্ছো।নিরিবিলিতে কথা বলার জন্যই তো এখানে এলাম।অবশ্য এমনিতেও রুম নিতে হতো,আমি আজই ঢাকা ব্যাক করতে চাইনি, কারন পরপর দুটো জার্নিতে এমনিতেই ভীষন টায়ার্ড লাগছে।ফুপির ওখানে কথা বলার মত পরিস্থিতি নেই,ফুপুকে এসবই বুঝিয়ে বললাম।তারপর তোমাকে এখানে নিয়ে এলাম।গত পরশু রাতে প্লেনে বলতে গেলে ঘুমাইনি।গতরাতেও গাড়ীতে।দুরাতের ঘুম নষ্ট।কাল দুপুরেও কিছু খাইনি,রাতেও তেমন কিছু খাওয়া পরেনি।এখন বাজে সকাল আটটা।জারা দ্রুত একটা প্লেটে নাস্তা নিয়ে আফনানের হাতে দিল।আফনান প্লেট থেকে একটুকরো নিয়ে জারার মুখে দিয়েই সাথে সাথে বলল-“এই দাঁড়াও দাঁড়াও খেওনা।”
জারা ভাবল খাবারে কিছু আছে কিনা।সে ওভাবেই থেমে গেল,আফনান চট করে ওর মুখে মুখ লাগিয়ে খাবারটা নিজের মুখে যেন শুষে নিল।জারা ভীষন লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নিল।আফনান হেসে ‘স্যরি’ বলে আরেকবার ওর মুখে খাবার তুলে দিল।নাস্তা পর্ব শেষে আফনান বললো,চলো বারান্দায় বসে কথা বলি।
চায়ের কাপ হাতে ওরা দুজনই বারান্দায় এসে বসল।তারপর আফনান চয়ে চুমুক দিয়ে বলল-“এবার বলো তো, কি হয়েছিলো সেদিন?কোনো কিছুই বাদ দেবেনা”!
জারা একটু চুপ থেকে বলতে শুরু করল।আফনানের বিদেশ চলে যাওয়া,ইরিনার ঘনঘন এ বাড়ীতে আসা,তারপর হঠাৎ ফোন কল,খুন হবার ভয় দেখানো,আম্মু্ সম্পর্কে সন্দেহ তৈরী করা।তারপর ড্রাইভার চাচাকে ধরে সেই দিনই সিলেট চলে আসা পর্যন্ত সবই বলল জারা।
আফনান চুপ করে গম্ভীর মুখে সব শুনল।
জারা জিজ্ঞেস করল-“আম্মু্ কেমন আছে?”
-তুমি চলে আসায় যথেষ্ট মুষড়ে পড়েছে।”
আফনান চিন্তিত মুখে পিরিচের ওপর কাপ ঘুরাতে লাগল।জারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রশ্ন করল-“কে করেছে এসব?”
-“একজনকে সাসপেক্ট করছি কিন্তু নিশ্চিত না হয়ে নাম বলতে চাচ্ছিনা।”আফনান ধীরে ধীরে বলল।তারপর জারার দিকে তাকিয়ে বলল-“আম্মু যে তোমাকে ওসব বলেছে তুমি তো আমার সাথে শেয়ার করতে পারতে”!
-“ছিঃ কেন! উনি আপনার মা।ওনার ছেলেকে হুট করে এভাবে কেউ দখল করে ফেললো,ওনার তো খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক।সবার প্রকাশ ভঙ্গি তো আর একরকম হয়না।”
-“ইরিনার সাথে তোমার কথা হতো?”
-“না,ওনাকে ঠিক। বুঝতে পারিনা।
-“ইরিনা বাড়ীতে বলে বেড়াচ্ছে তুমি পালিয়েছো।”!
জারা চমকে ঠোঁটের ওপর হাত রাখল-“ইন্না লিল্লাহ”!
আফনান টাকাপয়সা চুরির কথাটা চেপে গেল।বলতে রুচিতে বাঁধছে।কেবল বলল-“ওকে একটা শিক্ষা দিতে চাই।”
জারা কিছুক্ষণের জন্য চুপ মেরে গেল।তারপর ধীরে আফনানের কাঁধে মাথা রেখে বলল-“আপনি আমাকে ভুল বুঝেননি এটাই আমার জন্য যথেষ্ট।কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।ওর জায়গাটা আমি নিয়ে নিয়েছি ওর খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক।ও হয়তো আপনাকে ভালোবাসে…”!
আফনান জারার দিকে ফিরে তাকালো।আস্তে করে জিজ্ঞেস করল–“”আর তুমি? তুমি বাসোনা?”সে জারার দিকে তাকিয়ে রইল।জারা প্রবল আবেগে আফনানকে জড়িয়ে ধরল।ওর লোমশ বুকে মুখ ঘষে বলল-“বাসি,খুব ভালবাসি”!
আফনান উঠে দাঁড়িয়ে ওকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিল।জারা নিজে আফনানকে শক্ত করে ধরে রেখেছে।
আফনান ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল-“সেদিন কিন্তু তুমি প্রমিজ করেছিলে”!
জারা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাল।আফনান ওর নাকে আলতো কামড় দিয়ে বলল-“যেদিন খালামনিরা সবাই দাওয়াত খেতে এসেছিল”!
জারা নিঃশব্দে হাসল।আফনান ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল-“প্রমিজ পুরো করার সময় এসেছে।”!
জারা ভীরু চোখে তাকাল আফনানের দিকে।-“আপনি ক্লান্ত, আপনার বিশ্রাম প্রয়োজন।
-“হমম,চলো দুজনেই বিশ্রাম নেবো”!

আকাশ মেঘলা হয়ে এসেছে।শ্রাবনের বারিধারা নেমে আসতে পারে যে কোন সময়।এমন সময় আফনানের মোবাইল বেজে উঠল।জারা সেটা ধরতে বললে আফনান বালিশ ছুঁড়ে মারল মোবাইলের ওপর।বালিশের নিচে চাপা পড়ে গেল সেটা।
♥♥♥♥♥♥♥

plant lover
plant lover

সংগ্রহ:-https://www.facebook.com/golpo.bhandar72/

অর্ধাঙ্গিনী সকল পর্ব👈 

carnation e book

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *