একই বন্ধনে বাঁধা দুজনে 1

একই বন্ধনে বাঁধা দুজনে
৭ বছর পর দেশে ফিরলো রোহান। কিন্তু বাড়ির কাউকে জানায়নি। সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে তাই আর কাউকে কিছু বলেনি। চোখ ভর্তি স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছেড়ে পারি দিয়েছিলো সুদূর দেশে। এখন সে একজন সাফল্য ব্যক্তি। বিদেশে ভালো জব ও আছে। বড় ভাই এর বিয়ের উপলক্ষে দেশে আসছে। রোহানের বাবা একজন বিজনেস ম্যান তবে আগে ওর দাদারা জমিদার ছিলো। গ্রামে বাড়িতে সেই জমিদার ভবন টি আজো রয়েছে। হাজার ও স্মৃতি আছে সবগুলো আফছা আফছা। রোহানের বড় ভাই রওনক তার বাবার সাথে বিজনেস দেখাশুনা করে। আর রোহানের ছোট বোন ও আছে নাম স্মৃতি। কতদিন পর সে তার মা বাবা ভাই বোন কে দেখতে পারবে সেই খুশি যেনো ধরছে না। রোহানের গাড়ি টি তাদের গেইট পেরিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। গাড়ির জানালা দিয়ে বাড়ি টির দিকে তাকালো বাড়ি টি অনেক সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। গাড়ি থেকে নেমে লাগেজ হাতে নিয়ে বাড়ির মেইন ডোর এর সামনে এসে দাঁড়ালো তারপর কলিং বেল এ চাপ দিলো।
কলিং বেল এর শব্দ পেয়ে বসা থেকে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এক কন্যা। মুখে তার মিষ্টি হাসি। দরজার কাছে এসে দরজার নব টা ঘুরিয়ে দরজা টা খুলে দিতে রোহন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমণীর দিকে। কি সুন্দর তার গা এর রং দুধে আলতা। লম্বা কেশ। গালে একটা ছোট তিল। কি সুন্দর মুখের হাসি। হাসলে গালে টোল পড়ে। সামনে একটা গজ দাঁত। মেয়েটির পরনে সাদা নীল কম্বিনেশনে একটা জামা। রিনিরিনি কন্ঠে মেয়েটি সুধালো কে আপনি?
মেয়েটির কন্ঠ এতো মধূর যে রোহানের কানে তা বার বার বাজতে থাকে।
রোহান একটা বড়সড় ঢোঁক গিলে কিঞ্চিৎ পরিমান জিহ্বা বের করে শুকিয়ে আসা ঠোঁট গুলো ভিজিয়ে বললো,, আমি রোহান আহাম্মেদ। এই বাড়ির ছোট ছেলে।
মেয়েটি নিজের মাথায় নিজেই একটা গাট্টা মেরে বললো,, ওহ্ ভাইয়া আসুন।
রোহান ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো তুমি কে তোমাকে তো চিনলাম না??
আমি আমি কুহু।
কুহু নাম টা শুনতেই রোহানের বুকের ভিতর টা ধক্ করে উঠলো। স্মৃতির পেক্ষাপটে ভেসে উঠলো কিছু স্মৃতি। রোহান বিস্ময় নিয়ে বললো তুই সুলতানা খালার মেয়ে।
কুহু উপর নিচ মাথা নাড়ালো। রোহান হেসে কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। আজ বাড়ির সবাই কই?
বাড়ির সবাই শপিং মলে গেছে।
তুই যাসনি??
না আমি যাইনি। আমার এতো হৈচৈ ভালো লাগে না আর শপিং মলে যা ভিড় আমার বিরক্ত লাগে। আপনি আসবেন কাউকে জানাননি??
না সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছিলাম কিন্তু এখন নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম।
কিছু খাবেন??
না কিছু খাবো না। আমি রুমে যাচ্ছি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুম দিবো।
কুহু মাথা নেড়ে আচ্ছা বুঝালো।
রোহান লাগেজ টা নিয়ে উপরে তার রুমে গেলো। রুমে ঢুকে সে তো পুরো অবাক। কি সুন্দর ক্লিন করা দেখে মনে হচ্ছে প্রতিদিন ক্লিন করা হয়। রোহান লাগেজ থেকে এক সেট জামা বের করে সেই জামা আর কাঁধে টাওয়েল টা নিয়ে ওয়াশরুমে যায় বেশ কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে বের হয় রোহান। বের হয়ে ভেজা জামা কাপড় বেলকনিতে মেলে দেয়।
তারপর কিছু একটা ভেবে ডাক দেয় কুহুকে।
কুহু রোহানের ডাক শুনে ওর রুমে এসে জিজ্ঞেস করে,, কিছু বলবেন ভাইয়া?
হুম,,
আমার জামা কাপড় গুলো একটু গুঁছিয়ে দেও তো। কুহু বাধ্য মেয়ের মতো রোহানের জামাকাপড় গুলো সুন্দর করে বের করে একটা পর একটা আলমারিতে গুঁছিয়ে রাখছে।
গালে হাত দিয়ে কুহুকে দেখে চলেছে রোহান। কুহুর কাজ শেষ হলে বললো,,, ভাইয়া আর কিছু লাগবে?
না আর কিছু লাগবে না। তুই কিসে পড়িস?
ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।
কোন বিভাগ??
মানবিক।
ওহ্ যা।
কুহু আর কাজ নেই তাই কুহু তার নিজের রুমে এসে বিছানা টা গুঁছিয়ে। বেলকনিতে চলে যায় তার এই ঠান্ডা টা বেশ ভালো লাগে সন্ধ্যার ঠান্ডা টা মন টা ছুঁয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে অতীতে হারিয়ে যায়,, কুহু।
কুহুর পুরো নাম তাবাসসুম কুহু। আর একটা এক্সিডেন্ট এ তার বাবা মা-রা যায়। তারপর তার চাচারা তাদের কে জোড় করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মা আর মেয়ের আশ্রয় হয় নানার বাড়ি। বেশ কিছুদিন ভালো ই ছিলো কিন্তু হঠাৎ করে ওদের জীবনের সুর টা পাল্টে যায়। ওর মার অন্য জায়গায় বিয়ে দেয়ে। ছোট কুহু টা পরে থাকে মামার বাড়ি। মামা বাড়ি থেকে বড় হওয়া সব। মামীর লাঠি-সোঁটা খেয়ে ম্যাট্রিক পর্যন্ত লেখাপড়া করে। তারপর ওর বড় খালা সালমা আহাম্মেদ ওকে নিয়ে আসেন ওনার কাছে। এইখানে যে তাকে সবাই খুব পছন্দ করে তাও না তবে গাল মন্দ করে না । এইসব ভাবতে ই চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। ওর ভাবনার মাঝে একটা গাড়ি ওদের বাড়ির ভিতরে ঢুকে কুহু বুঝতে পারে বাড়ির সকলে এসেছে।
কুহু ওদের দেখে নিচে নেমে মেইন দরজা টা খুলে দিতে ওরা ভিতরে ঢুকে সোফায় বসে পড়লো। ওদের সবাইকে বসতে দেখে কুহু পানি গ্লাস গুলো তে পানি ভরে সবাই কে দিলো। সবাই পানির গ্লাস টা নিয়ে পানি খেয়ে গ্লাস গুলো রেখে দিতে কুহু এই গ্লাস গুলো রেখে দিলো টেবিলের উপর। কুহু খালু নয়ন আহাম্মেদ বললো,, কুহু এক কাপ চা বানাতো।
কুহু বললো,, ঠিক আছে। তারপর বললো,, ছোট ভাইয়া এসেছে।
সালমা আহাম্মেদ বললো,,, কে এসেছে আমার রোহান এসেছে?
হুম রোহান ভাইয়া এসেছে।
কোথায় ও?
ওনি ঘুমাচ্ছেন।
আমি আমার ছেলের জন্য রান্না করবো বলেই তিনি ওনার রুমে গেলো ফ্রেশ হতে। একটু পর ফ্রেশ হয়ে আসতেই তিনি কুহুকে নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো।
ওনি রোহানের পছন্দের সব রান্না বসাছেন। আর হাতে হাতে সব এগিয়ে দিচ্ছে কুহু।
একই বন্ধনে বাঁধা দুজনে
সূচনা পর্ব
#একই_বন্ধনে_বাঁধা_দুজনে
পর্বঃ-০২
রাত ১০ টা রোহান গা এ জ্যাকেট জড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে সিঁড়ি বেয়ে নেমে লিভিং রুমে এসে বসলো। সবাই তখন আড্ডা দিচ্ছিলো এমন সময় রোহান কে দেখে তো সবাই খুব খুশি হয়। আর স্মৃতি স্মৃতি তো দৌড়ে গিয়ে রোহান কে জড়িয়ে ধরে বললো,,, ভাইয়া তুমি এসেছো?
হুম এসেছি।
কেমন আছো তুমি??
আলহামদুলিল্লাহ তুই কেমন আছিস??
আলহামদুলিল্লাহ।
রওনকের পাশে বসতে বসতে বললো,,, তা ভাইয়া অবশেষে তোমার ব্যাচেলার লাইফের ইতি ঘটতে যাচ্ছে।
রোহানের বাবা শরীফ আহাম্মেদ বললো,,, তা কত দিন ছুটি পেলে??
রোহান ভ্রুঁ কুঁচকে তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো কেনো মিস্টার আহাম্মেদ আমি এসে কি আপনার ক্ষতি করলাম না কি আমার আসা টা আপনার পছন্দ না?
রোহান ভুলে যেওনা আমি তোমার বাবা বিদেশ থেকে এই শিক্ষা নিয়ে এসেছো। বাবার সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় জানোনা??
আপনি কি আদোও বাবা হওয়ার যোগ্য মিস্টার আহাম্মেদ? আপনার করা একটি ভুল আমার জীবন টা বরবাদ করে দিয়েছে। সেই কৈফিয়ত কি আমি চেয়েছি না চাইনি। তবে এইবার আমার টা আমি বুঝে নিবো কাউকে আর নাক গলাতে দিবো না।
রওনক বুঝতে পারলো এই বাপ ব্যাডার যুদ্ধ এতো তাড়াতাড়ি শেষ হবে তাই তো সে বললো,,, হয়েছে হয়েছে থাম। এখন বলতো বিদেশে এতো কি কি করেছিস না কি বিদেশে আদোও কোন সংসার পেতে বসেছিস যে এতো দিন দেশে আসতে চাসনি।
রোহন রওনক এর দিকে তাকিয়ে বললো,,, বউ টা আমার এখনো বড় হয়নি বড় হোক তারপর সংসার বাঁধবো।
রান্না ঘরে থেকে কুহু আর রোহানের মা সালমা আহম্মেদ সব টা শুনতে পারছে। বসার ঘর থেকে রোহানের চাচা রাকিব আহম্মেদ কুহু কে ডেকে উঠলো,, এই কুহু কোথায় তুই এই দিকে আয় তো?
রান্না ঘর থেকে কুহু জবাব নিয়ে বললো,,, আসতেছি কাক্কু। ওড়নাতে হাতটা মুছতে মুছতে রান্না ঘর থেকে বের হলো কুহু। রোহান তাকে গভীর চোখে দেখছে। এই ঠান্ডা তেও তার শরীরে কোন গরম জামা নেই। চুলগুলো বাঁধা। দু পাশ থেকে ছুট ছুট কাট চুল বের হয়ে আছে কতটা স্নিগ্ধ লাগছে।
কুহু রাকিব আহম্মেদ এর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,, কাক্কু কিছু কি লাগবে?
রান্না কত দূর?
এতো প্রায় হয়ে গেছে।
এক কাজ কয়েটা বিস্কুট আর সবার জন্য কফি নিয়ে তাড়াতাড়ি।
আচ্ছা।
কুহুর সাথে কথা বলার ধরন টা ওর ভালো লাগেনি। রোহান উঠে চলে যেতে নিলে রোহানের বাবা শরীফ আহাম্মেদ বললো,, কোথায় যাচ্ছো?
মার কাছে বলে ধুপধাপ পা ফেলে সে তার মা এর কাছে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো মা তুমি কি এখনো রেগে আছো?
আমি কে?? আমার কথার কি কোন দাম আছে?
মা আমি তো এসেছি তাহলে এমন করছো কেনো?
কোথায় আর এলি তুই সে তো আবার চলে যাবি।
আচ্ছা ওটা পরে দেখা যাবে। এখন একটু হাসো তো।
তিনি ছেলের দিকে ফিরে মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললেন পা”গ”ল ছেলে আমার।
কুহু চুপচাপ শুনছে আর কফি বানাছে। কফি বানানো হলে কফির মগ এ ঢেলে দিয়ে বিস্কুট এর বৈয়াম খুলে একটা পিরিচ এ কয়টা বিস্কুট দিয়ে তারপর সেইগুলো নিয়ে যেতে যাচ্ছিলো এর মধ্যে রোহান বলে উঠলো,, দাঁড়া আমি নিয়ে যাচ্ছি তুই এইখানে থাক কথা টা বলে কুহুর হাত থেকে ঈগল পাখির মতো ছোঁ মেরে ট্রে টা নিয়ে চলে গেলো।
খালামনি..?
হুম বল শুনছি।
কাল একটু কলেজ যেতে হবে এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। এক ঘন্টা লাগবে।
ঠিক আছে তাড়াতাড়ি এসে পড়বি। কাল সব মেহমানরা আসবে হাতে হাতে কাজ টা না করে দিলে সামলাতে পারবো না।
সমস্যা নেই আমি করে দিবো।
হুম
খাবার গুলো সব টেবিলের উপর একে একে এনে রাখছে। সবাই চেয়ার টেনে বসে পড়লো। কুহু খাবার গুলো সবার প্লেটে সার্ভ করে দিচ্ছে। স্মৃতি কুহুকে বললো,, আপুমনি এসো আমাদের সাথে বসে খাবার খাও। কুহু স্মৃতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো আমি পরে খাবো খালামনির সাথে তুমি খেয়ে নেও।
রোহান খাবার টেবিলে বসে চেঁচিয়ে তার মা কে ডাকতে লাগলো,,,মা ওমা তাড়াতাড়ি এসো।
রোহানের ডাকে তার মা ছুটে এসে বললো কি হয়েছে বাবা আমায় বল?
তুমি আর কুহু এখনি আমার সাথে বসে খাবার খাবে রাইট নাও। আমি কোন এক্সকোয়েজ শুনবো না।
ওর কথাতে বাধ্য হয়ে ওদের সাথে বসে খাবার টা খেয়ে নিলো। খাবার শেষে সব কিছু গুঁছিয়ে রুমে যেতে রাত ১ টা বেজে গেলো।
কুহু না ঘুমিয়ে রাত ২ টা পর্যন্ত এসাইনমেন্ট করে তারপর ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু রোহানের মা না ঘুমিয়ে রোহানের রুমে গিয়ে দেখলো তার ছেলে বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। বাবা কি করছিস?
এইতো মেইল চ্যাক করিছ কিছু বলবে?
না এমনি দেখতে এলাম কি করছিস?
মা বসো।
তিনি বসলেন। রোহান মা এর কোলে মাথা টা রাখতেই রোহানে মা চুল গুলো টেনে দিচ্ছে।
মা,,
হুম,,
আমার আমানত ভালো নেই তোমরা তার খেয়াল রাখতে পারছোস না। এইটা তো কথা ছিলো না।
ওনার চোখ ছলছল করে উঠলো। ওনি বললো,, আমি,,স্মৃতি,,রওনক ওকে কখনো আলাদা করি নি।
কিন্তু রক্ষা করতেও পারোনি। ও এই বাড়িতে কাজের মেয়ের মতো আছে মা।
তুই তো এসে গেছিস সব ঠিক করে নে। এইবার সবাইকে সবটা জানিয়ে দে।
সময় হোক তারপর।
তিনি বললেন অনেক রাত হলো ঘুমিয়ে পড়।
তুমি ও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
তিনি আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন। রোহানও ল্যাপটপ রেখে লাইট টা অফ করে ঘুমিয়ে গেলো।

 

 

 

পরের দিন সকালে খুব দ্রুত ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে কিচেন রুমে চলে গেলো তারপর সকালে ব্রেকফাস্ট বানানোর জন্য সব কিছু গুছিয়ে নিলো। কাল রাতে সবাই দেরিতে ঘুমাতে এখন পর্যন্ত কেউ উঠে নি। কি আর করার অগ্যত কুহুকেই একা হাতে সব নাস্তা বানাতে হচ্ছে। সবার জন্য রুটি বানিয়ে নিলো তারপর স্মৃতির জন্য আলাদা নাস্তা বানালো। রোহান সকালে কি খায় তা তো কুহু জানানেই তাই রুটিই বানিয়ে নিলো। রুটি গুলো তাড়াতাড়ি তাওয়াতে দিয়ে ছ্যাকে নিচ্ছে। সব গলো রুটি ছ্যাকা হয়ে গেলে ডিম ভাজি করে নিলো। ফ্রিজ থেকে কিছু ফল বের করে সেইগুলো কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখলো। ডিম ভাজি করে এইগুলো সব ডাকা দিয়ে রেখে দিলো। তারপর স্মৃতির জন্য লুডুলস এর স্যুপ টা বসিয়ে দিয়ে সে তার রুমে গিয়ে কলেজের ব্যাগ পত্র গুঁছিয়ে নিয়ে। কলেজের ড্রেস টা আইরোন করে বিছানার উপর রেখে দিলো। তারপর আবার নিচে এসে কিচেন রুমে ঢুকে তারাতাড়ি স্যুপ টা রেডি করে একটা হটপটে ঢেলে টেবিলের উপর রেখে দিলো। ফল গুলো ধুয়ে ফলের ঝুড়িতে রেখে দিয়ে। সে তার জন্য বরাদ্দ করে রাখা খাবার খাতে গেলো। একটা প্লেটে পান্তা ভাত পিঁয়াজ আর কাঁচা মরিচ নিয়ে খেতে শুরু করলো ওর খাওয়া হয়ে গেলে সে তারাতাড়ি রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো কলেজের উদ্দেশ্য। কিন্তু একজোড়া চোখ তার দিকে ছিলো সেইটা যদি কুহু জানতো।
হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো রোহান। আর বিরবির করে বলতে লাগলো সব কিছুর ফল পাবেন। আপনার জন্য আমার কলিজা যতটা না কষ্ট পাচ্ছে তার থেকে দ্বিগুণ কষ্ট আমি দিবো। আপনার শাস্তির পালা শুরু হচ্ছে। এক এক করে সব কিছুর হিসাব আমি রোহান আহম্মেদ আপনার থেকে নিয়ে ই ছাড়বো। কেউ রেহাই পাবে না।
কুহু বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর ই সবাই ঘুম থেকে উঠলো। খাবার টেবিলে এসে সবাই অবাক। খাবার টেবিলে গরম-গরম খাবার রাখা।
মিসেস সালমা আহাম্মেদ বললো,, কুহুর কাজ অবাক হওযার কিছু নেই। নাস্তা বানিয়ে কলেজে গেছে।
রাকিব আহম্মেদ বলে উঠলো পরের মেয়ে আর কতদিন রাখবে আমাদের কাছে বড় হয়েছে তো বিয়ে দিয়ে দেও।
রোহান এসে চেয়ার টেনে বসে বললো,,, পরের মেয়েকে নিয়ে না ভেবে তোমার মেয়ের কথা ও তো ভাবতে পারো চাচ্চু। তা চাচির আর তোমার মেয়ের কি বেড়ানোর শেষ হয়নি এইবার আসতে বলো চারদিন পর বিয়ে আজ থেকে তো সব আত্মীয় স্বজনরা আসতে থাকবে সব কাজের চাপ মা আর কুহুর উপর যাবে কুহু তো ছোট তাও তো কত বুঝদার। তোমাদের জন্য কত করে তাও তোমরা ওর জন্য সকালের খাবার টা কি রেখেছো পান্তা ভাত পিঁয়াজ আর কাঁচা মরিচ। মেয়েটার মা বাবা নেই মানে এই মেয়েটার উপর তোমরা অত্যাচার করবে। মনে রেখো সবকিছুর ই কিন্তু শেষ আছে।
রোহানের মুখে পান্তা ভাতের কথা টা শুনে ওরা সবাই থতমত খেয়ে গেলো। স্মৃতি রওনক আর সালমা আহাম্মেদ বেশ খুশি হলো। ওরা এতো তর্ক করে এই কাজ গুলো করতে পারেনি কিন্তু আজ সেই কাজ গুলো রোহান করে দেখাবে এইবার হয়তো কুহুর জীবনে সুখ পাবে। কমতো আর কষ্ট করেনি।
চলবে,,,

একই বন্ধনে বাঁধা দুজনে

পর্বঃ-০৩
কুহু কলেজ থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে কোমরে ওড়না গুঁজে কাজে লেগে পড়লো। ডেকোরেশন এর লোকেরা বাড়ির বাহিরে কাজ করছে। এতো মানুষের রান্না তো আর বাড়িতে করা সম্ভব না তাই ওরা বাবুচি ঠিক করেছে। রোহান তার বন্ধুদের বলে তিনটে কাজের লোক আনিয়েছে। তবে রোহানের অর্ডার কুহু যেনো রোহানের ঘরটা সুন্দর করে ঝাড়পোঁছ করে দেয় অন্য কেউ যেনো না করে। কুহু বাধ্য মেয়ের মতো রোহানের রুম টা পরিষ্কার করে দিচ্ছে। রোহানদের বাড়ি টা বেশ বড়। ডুপ্লেক্স বাড়ি। আউট সাইডে ও সুন্দর একতালা দিয়ে বাড়ি বানানো আছে। বাড়ির পিছন সাইডে বিশাল বড়ো একটা সুইমিং পুল।
রোহান বেডের উপর বসে বসে কুহুর সব কাজ মনযোগ দিয়ে দেখছে। কুহুর কাজ শেষ হতে কুহু বলে উঠলো,,, ভাইয়া আমার কাজ শেষ।
এই মেয়ে আমি তোমার কোন জন্মের ভাই?
আপনি আমার খালাতো ভাই।
থাপ্পড়িয়ে সব কয়টা দাঁত ফেলে দিবো আমি কে হই এইটা জানার পর তোর মাথা টা ঘুরে যাবে। যা ঘরে যা আর বেশি এইদিক সে দিক যেনো না যেতে দেখি বাড়িতে অনেক বাহিরে মানুষ আসবে। নিজের রুমে গিয়ে বসে থাক। বাড়ি তে তিন তিন টে কাজের লোক আছে। তোর এতো গিন্নিপানা করতে হবে না।
কুহু মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ভাবছে সে কখন গিন্নিপানা করলো। কিন্তু মুখে কথা টা বলার সাহস নেই। সাহস হবে ও না কারন কুহু যে প্রচন্ড ভয় পায় রোহান কে। কিন্তু কেন ভয় পায় তা জানা নেয়। ওর তো মনে ও নেই কবে দেখেছিলো রোহান কে।
রোহন চোখ পাকিয়ে বললো কি রে কথা শুনতে পাচ্ছিস না যা এখান থেকে সোজা রুমে।
কুহু মাথা নাড়িয়ে রুমে থেকে বের হয়ে গেলো যতদূর দেখা যায় ততদূর পর্যন্ত তাকিয়ে আছে রোহান৷ যখন ও চোখের অড়াল হলো তখন রোহান চোখ টা সড়িয়ে বিছানায় গা টা এলিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলো সেই দিনের কথা যেই সময়টাতে কুহু তার মামার বাড়ি থাকতো। কুহুর প্রতি মাত্রাধিক আসক্ত হয়ে পড়ে রোহান। প্রায়ই ছুটি পেলে ছুটে যেতো রোহান তার মামার বাড়ি কারন একটাই কুহু। যখন ওকে বিদেশে পাঠাবে বলে সবাই জড়াজড়ি করছিলো ঠিক সেই সময় সে আবদার করে বসে কুহুর সাথে বিয়ে দিলেই সে বিদেশে যাবে নয়তো যাবে না। কিন্তু কুহুর বাবা মানতে নারাজ। কিন্তু রোহানের কুহুকেই লাগবে। সবশেষে ওর মা আর ভাই মিলে লুকিয়ে চুপিসারে মসজিদের এক হুজুর কে দিয়ে ধর্মিয় মতে বিয়ে দেন। কুহু তখনো ছুটো। পুতুল বিয়ে নাম করে বিয়ে দেওয়া হয়। ওদের বিয়ের ব্যপার টা শুধু রওনক,, স্মৃতি আর ও মা জানেন। স্মৃতি কে সবটা জানানো হয়েছে আর স্মৃতি থেকে সব খবর নিতো। তীব্র রিংটোন এর শব্দে ভাবনা থেকে বের হলো রোহান ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে ওর বন্ধু সোহেল এর ফোন রোহান ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতে ই সোহেল বলে উঠলো যার খুঁজ করছিলি তাকে পেয়ে গেছি কি করবো??
রোহান বাঁকা হেসে বললো,, চোখে চোখে রাখ। আর এ টু জেড আমাকে জানাবি।
ওকে।
ফোনটা কেটে দিলো রোহান। টেবিলের উপর সিগারেট এর প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে বারান্দায় গিয়ে সেই সিগারেট টা জ্বালিয়ে মুখে পুরে নিলো। সে যে জীবনে কত চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হয়েছে তার কোন হিসাব নেই। সে খুব চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করে। তার জীবনের অনেক কিছুই তার পরিবারের কাছে অজানা সে চাওনা এখন কেউ জানুক সময় হলে সব টা জানাবে। এখন শুধু কিস্তিমাত করার জন্য গুটি সাজাছে। হঠাৎ গাড়ির শব্দ পেতে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো গাড়ি থেকে নামছে সুলতানা সিকদার চোখে মুখে আভিজাত্য ছোঁয়া। রোহান ভেবে পায়না এইটুকু ছোট একটা মেয়ে রেখে কিভাবে তিনি বিয়ের পীড়িতে বসতে পাড়লেন একবার ও কি মায়া হলো না তার ছোট মেয়েটির কথা। রোহান বুকে হাত দিয়ে বলে উঠলো ইশ্ কতই না কষ্ট হয়েছে আমার ছোট পাখিটার। আচ্ছা আজ যখন কুহু তার মার সম্মুখে হবে তখন কতটা নাই কষ্ট পাবে। আচ্ছা কুহু কি কাঁদবে?? ইয়া রব কুহু কী কাঁদবে? কুহু কাঁদবে কথা টা মনে হলেই রোহানের বুকের ভিতর টা কেঁপে উঠলো। ইশ্ সে তো তার ছোট পাখিটার চোখের কান্না সহ্য করতে পারবে না। সমস্যা নেই কুহু আমি ঠিক সামলে নিবো তুই কষ্ট পাস না। আমি রোহান আহাম্মেদ থাকতে তোকে কষ্ট স্পর্শ করতে দিবো না। সব কষ্ট আমি বুক পেতে নিয়ে নিবো। ভয় পাস আমি আছি।
রোহান রুম থেকে বের হয়ে কুহুর রুমের কাছে গিয়ে দেখলো কুহু রুমেই আছে তার মানে এখন আপাত্ত সেই মহিলার মুখোমুখি হতে হবে না। আপাত্ত নিশ্চিন্ত সে।
নিচে নেমে দেখে কুহুর মা আর ওনার হাসবেন্ড সোফাতে বসে আছে আর তার মা এর সাথে কথা বলছে। রোহান কিছু না বলে চুপচাপ তার মতো করে সোফার এক সাইডে বসে পড়ে। রোহান কে দেখে কুহুর মা সুলতানা সিকদার বলে উঠলো কেমন আছিস তুই??
আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
আমি ও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
হুম ভালো থাকা টা কি স্বাভাবিক না ভালো থাকার জন্য ই তো নিজের একটা অংশ ফেলে রেখে আরেকটা সংসার পেতেছেন। আপনার সেই অংশটার প্রতি কোন দায়িত্ব নেই কিছু নেই। একটি বার খুঁজ ও নেননি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে কেমন মা আপনি? আপনাকে আমার খালামনি বলতেই ঘৃনা লাগে। সন্তান জন্ম দিলেই মা হওয়ার যায় না মা হওয়ার জন্য যোগ্য তা লাগে যেইটা আপনার নেই।
রোহান ভুলে যেওনা আমি তোমার খালামনি।
আমি ভুলিনি।
তুমি কিছু জানোনা।
আমি সব জানি। কোন কিছু ই আমার অজানা নয় শুধু রেডি থাকুন সব ফল পাবেন আপনারা। আপনাদের খারাপ সময় শুরু হয়ে গেছে।
রোহানের মা বললো,, রোহান এইটা কি ধরনের বেয়াদবি? সরি বলো।
আমি ভুল করি নি সো সরি বলার প্রশ্নই ওঠে না। আমি উঠছি বলে চলে গেলো। এইদিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে আছে সুলতানা সিকদার আর শাহিন সিকদার।
মিসেস সালমা আহাম্মেদ কি আর করবেন,, তিনি একটু মেকি হেঁসে বললেন,, অনেক দূর থেকে এসেছিস যা তো ফ্রেশ হয়ে নে আর বাকি সবাই কোথায়?
ওরা আসবে একটু পরে।
ওহ্ আচ্ছা এতোটা পথ জার্নি করে এসে নিশ্চয় ক্লান্ত হয়ে গেছিস যা রুমে যা। উপরের ডান সাইডের তিন নাম্বার রুম টা তোদের যা।
ওনারা ব্যাগ হাতে নিয়ে রুমে চলে গেলো।
ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাঃস ফেললো সালমা আহাম্মেদ।
একে একে সকল মানুষ আসতে শুরু করলো। রওনক এর ফ্রেন্ড সার্কেল আসলো তারপর রোহানের চাচি আর তার মেয়ে মৌ ও মামা বাড়ি থেকে এসে পড়লো। রোহানের ফুফু ও তার দুই ছেলে এক মেয়ে একজনের নাম সজীব,, রাজীব আর মেয়ের নাম মুনা। সজীব এইবার অর্নাসের শেষ বর্ষের স্টুডেন্ট আর রাজীব সে তার বাবার সাথে ব্যবসা দেখে। বাড়ি টা জমজমাট পরিবেশ। এতো মানুষ দেখে রোহান বিরক্ত কারন তার মনে একটাই ভয় তার পরীটার উপর না কারও নজর পড়ে যায়। এতো ছেলে মানুষের আসার কি আছে মনে মনে ভাবতে লাগলো। এই দিকে স্মৃতির তো আনন্দের শেষ নেই। কখনো এই খানে তো কখনো ওখানে ঘুরে বেড়াছে। এরই মধ্যে রোহানের চাচি শায়েলা আহম্মেদ বলতে লাগলো,,, সালমা বু কুহু কোথায় গো ওকে তো দেখছি না ওকে বলোতো সবার জন্য কিছু নাস্তা বানিয়ে আনতে। এই কথাটাই যথেষ্ট ছিলো রোহান কে রাগিয়ে তুলার জন্য।
রোহান ক্ষিপ্ত মেজাজ এ বললো,, কেনো চাচি কুহু কে কি দরকার তোমার? নিজের হাত নেই নিজে বানিয়ে খেতে পারো না। এই কয়দিন তো দিব্যি বাপের বাড়িতে ঘুরে এসেছো এইবার একটু গতর টা খাটাও। বাচ্চা মেয়ে এতো জনের নাস্তা কি বানাতে পারবে না কি? বাড়িতে তিন তিন টা কাজের লোক কি এমনি এমনি নিয়ে আসছি কাজ করানোর জন্য মায়ের উপর এবং কুহুর উপর কোন কিছুর জন্য তোমরা কেউ কোন প্রকার জোড় খাটাবে না। এম আই ক্লিয়ার।
রোহানের ফুফু রাজিয়া হাওলাদার বলে উঠলো,, বাড়িতে থাকে একটু কাজ করলে ক্ষতি কি?
লাইক সিরিয়াসলি ফুফু এইটা কেমন কথা তোমার ভাইয়ের অঢেল টাকা এই টাকা নিয়ে কি তিনি ক”ব”রে যাবেন। তার থেকে ভালো একটা সওয়াবের কাজ করুক এই এতিম মেয়েটার পিছনে খরচ করুক তাতে যদি ওনার পাপ টা কমে।
রোওহান তুই কুহুকে এতিম বলছিস তাও ওর মায়ের সামনে।
তাই না কি ফুফু মনি কেমন মা? যে মা নাকি ওকে অবহেলায় অনাদরে ফেলে রেখেছিলো সেই মা। এই মা থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। একটা পা”গ”ল”নী”ও নিজের সন্তান কে নিজের থেকে আলাদা করতে চায় না আর ওনি কি সুন্দর অবলীলায় ওনি মেয়ে টা কে ছেড়ে দিলো। পাষণ্ড মহিলা। আমি ঘৃণা করি। আমি কুহুকে কখনোই ওনার সংস্পর্শে আসতে দিবো না।
তুই না দেওয়ার কে?
সেই কৈফিয়ত তোমাদের দিতে বাধ্য নই আমি।
কুহু রুমে শুয়ে আছে। শুয়ে আছে বললে ভুল হবে ঘুমিয়ে আছে। প্রচন্ড জ্বর এসেছে হঠাৎ। মনে হয় কালকে অবেলায় শাওয়ার নেওয়াতে ওর জ্বর এলো। কম্বল মুড়িয়ে ঘাপটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। স্মৃতি কে আলাদা ডেকে স্মৃতির কাছ থেকে কুহুর রুমের এক্সটা চাবি নিয়ে এসেছে রোহান। রোহান চাবিটা দিয়ে লকটা খুলে নব টা ঘুরিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখলো দিনের বেলাতেও অন্ধকার করে রেখে শুয়ে আছে। কুহুর পাশে আস্তে করে বশে পড়লো। তারপর কুহুর অগোছালো লম্বা কেশে হাতে নিয়ে বললো আমার কেশবতী কন্যা। তারপর আস্তে করে হাতটা কুহুর কপালে ছোঁয়াতেই রোহান চমকে উঠে হাত টা সড়িয়ে নিলো প্রচন্ড জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে মেয়ে টা। ইশ্ এখন কতই না কষ্ট পেতে হচ্ছে। রোহান আবার নিচে গেলো সবার অগোচরে সে কিচেন থেকে খাবার এনে কুহু কে উঠিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলো। কুহুপাখি একটু খেয়ে নে চিকেন স্যুপ এনেছি একটু না খেলে ওষুধ খাওয়াতে পারবো না। অচেতন কুহু কি আদোও শুনতে পেলো রোহানের এই ছটফটানির কণ্ঠ স্বর। শুয়া অবস্থাই কুহুকে কয়েক চামচ স্যুপ খাইয়ে দিয়ে ড্রয়ার খুলে জ্বরের মেডিসিন টা নিয়ে কুহু কে খাইয়ে দিয়ে তারপর ওয়াশরুম থেকে মগ টা নিয়ে সেইটাতে তার রুমাল টা ভিজিয়ে কুহুর কপাল তে রাখলো।
অন্ধকার রুম। শুধু ড্রিম লাইট জ্বলছে। স্মৃতি রওনক আর রোহান বসে আছে কুহুর রুমে। কুহুর জ্বর টা এখন কমলো কিছুটা তবে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। সালমা আহাম্মেদ মাঝে মাঝে এসে দেখে যাচ্ছে কুহুকে। সন্ধ্যা হয়ে হলো চারোদিকে মাগরিব এর আজানের ধ্বনি শুনা যাচ্ছে। রোহান রওনক কে বললো তুমি যাও আমি আর স্মৃতি আছি।
স্মৃতি যাবে না আমার সাথে?
না যাওয়ার দরকার নেই ওখানে সব ছেলে মানুষ থাকবে ওদের মাঝে গিয়ে লাভ নেই বরং ও আমার কাছে ই থাক।
সেই কি ভাই এর ব্যাচেলার পর্টিতে বোন দুটো থাকবে না।
না থাকবে না। কুহু সুস্থ থাকলে ও আমি ওকে এতোগুল ছেলের মাঝে যেতে দিতাম না। যাও তুমি রেডি হয়ে ক্লাবে চলে যাও।
তুই ও যাবি না? ওখানে তো তোর হবু ভাবী আসবে।
ভাই তোমার কি বুদ্ধি সুদ্ধী লোপ পেয়েছে কি বলছো তুমি আমার অসুস্থ বউ টা কে রেখে আমি এখন তোমার সাথে ক্লাবে গিয়ে ধেই ধেই করে নেচে বেড়াবো।
ওর কথার ধরন শুনে স্মৃতি হেঁসে দিলো। রওনক তার মাথায় হাত দিয়ে বললো,,, তুই এমন কেনো?
জানিনা যা তো।
রওনক উঠে চলে গেলো। কুহু ঘুমের ঘরে পানি পানি করে উঠলো।
রোহান স্মৃতি কে বললো,, এই স্মৃতি যা তো ফ্ল্যাক্স থেকে গরম পানি মিশেয়ে এই বাটিতে পানি নিয়ে আয়। রোহানের কথা মতো স্মৃতি এই বাটিতে গরম পানি আর ঠান্ডা পানি মিক্স করে এনে দেয় তারপর রোহান একটা চামচের সাহায্য একটু একটু করে পানিটা মুখে দেয়। ঘুমের ঘোরে পানি টা খেয়ে নেয়। রোহান স্মৃতি কে বললো,, এই স্মৃতি ওর শরীর টা একটু মুছে দে আমি বাহিরে ওয়েট করছি। আর শুন ড্রেস চেঞ্জ করে তার উপর শীতের জামা পড়িয়ে দিবি বুঝলি।
স্মৃতি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে দিতেই রোহান বাহিরে চলে গেলো। আর স্মৃতি একটা বড়ো গামছা টা ভিজিয়ে এনে আস্তে করে কুহু কে টেনে বসিয়ে দিয়ে তারপর শরীর টা সুন্দর করে মুছিয়ে দিয়ে জামা-কাপড় পড়িয়ে দিয়ে তারউপর সুন্দর একটা জ্যাকেট পড়িয়ে দিলো। স্মৃতির ডাকে রোহান রুমে ঢুকে। তাদের দুই ভাই বোনের প্ল্যান আজ সারা রাত কুহুর কাজেই থাকবে। ওর পাশে এখন কাউকে দরকার। কাল মেহেদীর অনুষ্ঠান তার আগে কুহুকে সুস্থ করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে এই দুই ভাই বোন।
রোহান স্মৃতি কে বললো,, কাল তো মেহেদীর অনুষ্ঠান কুহুর জন্য কিছু কিনা হয়েছে।
হয়েছে তবে দামি না কমদামি। আর রং টা ও ভালো না আমার পছন্দ হয়নি। মা বোধহয় আলাদা করে কিছু কিনে রেখেছে।
ওহ্ আচ্ছা নে আমার ফোন টা দেখে তোদের দুজনের জন্য ভালো দেখে কিছু ড্রেস এর অর্ডার দে। ওদের দেওয়া কোন কিছু ই কুহুকে পড়তে হবে না।
রোহানের কথা মতো স্মৃতি বেশ কিছু ড্রেস আর কসমেটিক আর দুইজনের জন্য গোল্ড এর চ্যাইন,, কানের ঝুমকো আর আংটি অর্ডার দিলো। তারপর আবার মনে হলো তার আপুমনির কোন ভালো জুতা নেই সে ওর আপুমনির জন্য বেশ কয়েকটা জুতা অর্ডার দিলো।
রোহানের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিতে রোহান সবকিছুর লিস্ট টা দেখে নিয়ে বললো,, বাহ্ ভালোই তো টাকা খরচ করার শিখে গেছিস।
তুই তোর আপুমনি কে কেনো শিখাস না?
আপুমনিকে মা আর ভাইয়া ই শুধু হাত খরচ দেয় আর কেউ দেয় না আর আপুমনি তিন চারটা টিউশনি করে।
রোহান শুধু শ্বাঃস ফেললো।
রোহান ফোনটা হাতে নিয়ে বললো দে খাবার অর্ডার দে। কুহুর জন্য স্যুপ আর তোর আর আমার জন্য যা ইচ্ছে অর্ডার কর।
স্মৃতি তাই করলো,, কুহুর জন্য,, স্যুপ আর ওদের জন্য বাঙালি কিছু খাবার অর্ডার করলো।
২ ঘন্টার পর সব অর্ডার গুলো আসলো। কলিং বেল বাজাতে মিসেস সালমা আহাম্মেদ দরজা টা খুলে দেখলো দুটো লোক। একজনের হাতে কিছু শপিং ব্যাগ আরেক জনের হাতে খাবারের প্যাকেট।
রোহান ধীরে পায়ে সামনে এসে বললো মা আমি অর্ডার করেছিলাম বলে সবার কাছ থেকে সব কিছু নিয়ে নিলো আর বললো প্লেমেন্ট টা চ্যাক করে নিবেন অনলাইনে দিয়ে দিছি বলে দুহাত ভর্তি ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো রুমে। সবাই ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।
রোহান রুমে এসে সব কিছু বিছানার উপর রেখে খাবারের বক্স খুলতে খুলতে বললো দুটো প্লেট নিয়ে আয় তো।
এই রুমেই প্লেট আছে দুটো। অনেক সময় আমি আর আপুমনি এক সাথে মুভি দেখতে দেখতে খাই।
ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে রোহান বললো,, ফোন কোথায় পেলি তোরা??
ওমা আপুমনি টাকা জমিয়ে ফোন কিনেছে।
ওহ্.. কোথায় সেই ফোন?
জানিনা আপুমনি বলতে পারবে।
স্মৃতি ড্রয়ার খুলে দুটো প্লেট নিয়ে ওয়াশরুম এর ভেতর এ গিয়ে ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিলো। তারপর খাবার গুলো সার্ভ করে খাওয়া শুরু করলো। ওরা খাওয়া শেষ করে সবকিছু গুঁছিয়ে রেখে রোহান স্যুপের বাটি টা তে স্যুপ নিয়ে ঘুমানোর অবস্থায় কুহুকে খাইয়ে দিলো। তারপর অল্প একটু পানিতে জ্বরের মেডিসিন টা গুলিয়ে কুহু খাইয়ে দিয়ে লাইটগুলো বন্ধ করে শুধু টেবিল ল্যম্প টা জ্বালিয়ে রেখে স্মৃতি কে বললো কুহুর পাশে শুয়ে পড়তে।
তুমি কোথায় শুবে ভাইয়া?
আমি এই সোফাটাতে আছি সমস্যা নেই।
তোমার কষ্ট হবে না।
না হবে না অভ্যাস আছে নে ঘুমা।
————-
চারোদিকে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করলো। মধ্যরাতে কুহুর জ্বর টা কমে গেছে। গোটা একটা দিন কুহু শুধু ঘুমিয়ে পাড় করলো ভাবা যায়। কি ভয়ংকর একটা কাহিনী। আড়মোড়া দিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসতেই সোফার মধ্যে রোহান কে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায় কুহু তারপর পাশে তাকিয়ে দেখে স্মৃতি ও তার রুমে। বিছানার কাছে ধীরে পায়ে নেমে রোহান কে ডাকতে নিলেই রোহান আচমকা চোখটা খুলে ফেললো। কুহু থতমত খেয়ে গেলো। এই প্রথম এতো কাছ থেকে রোহান কে দেখছে কুহু। রোহানের চোখ দুটো স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে সদ্য ঘুম থেকে উঠা তার মায়াবিনীর দিকে। এলোমেলো চুল। মুখে এখনো ঘুম ঘুম ভাব। বেশ লাগছে তাকে। হঠাৎ ই রোহান কুহুর কোমর জড়িয়ে ধরে রোহানের কাছে নিয়ে এসে বললো,,, যাক জ্বর কমেছে তাহলে আপনার। এইদিকে আমি তো মহা টেনশনে পরে গেছিলাম সেইটা যদি কেউ জানত তাহলে তো হতো ই।
কুহু এখন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে কি করবে কুহু জীবনের প্রথম কোন এক নর এর স্পর্শে তার শরীরে লোম কূপ দাঁড়িয়ে গেলো। হৃদপিণ্ড টা ও কেমন কেঁপে কেঁপে উঠছে। ভয়ে নেত্রজোড়া টা বন্ধ করে নিলো। কুহুর এই রকম অবস্থা দেখে রোহান ঠোঁট কামড়িয়ে হেঁসে দিয়ে কুহুকে ছেড়ে দিলো। কুহু ছাড়া পেতে নেত্রজোড়া গুলো খুলে ফেললো।
রোহান পরিস্থিতি টা স্বাভাবিক করার জন্য বললো,,, ভালো করে ফ্রেশ হয়ে নে। কাল গোটা একটা দিন তুই ঘুমিয়ে কাটিয়েছিস। আজ তো ভাই এর মেহেদী। মেহেদী সন্ধ্যাতে সুন্দর করে সেজেগুজে আসবি। ওই যে দেখ টেবিল ভর্তি শপিং ব্যাগ সেই গুলোতে তোর জন্য বাড়িতে পড়া ভালো কিছু ড্রেস আর ভাইয়ার বিয়েতে পড়ার জন্য কিছু ড্রেস আছে তোর পছন্দের মতো পড়ে নিস আর শুন এখন তুই দুর্বল রুম থেকে বের হওয়ার দরকার নেই। রুমে ই খাবার নিয়ে আসবো। রুমেই খাবি।
কিন্তু..?
হুঁশশ..! কোন কিন্তু নয় কেউ কিছু বলবে না কেউ কিছু বললে আমি আছি তো।
কুহু আর কথা বাড়ালো না আলমারি থেকে এক সেট জামা নিয়ে ওয়াশরুম এ গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসেই দেখে রোহান খাবার নিয়ে হাজির। কুহু কে চোখের ইশারায় খেতে বললো,,, কুহু কোন কথা না বলে চুপচাপ খাবার টা নিয়ে খাওয়া শুরু করে।
কুহুর খাওয়া হয়ে গেলে রোহান প্লেট গুলো নিয়ে নিচে রেখে এসে তারপর কুহুকে বলে সে তার রুমে চলে যায়। আজ সারাটা বেলা কুহুর খুব বিরক্ত লেগেছে কারন রোহান,, স্মৃতি আর রওনক কেউ তাকে ঘর থেকে বের হতে দেয়নি।
দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো একটু পরে মেহেদী অনুষ্ঠান শুরু হবে। কুহু একটা কলাপাতা রঙ এর শাড়ি লেহেঙ্গা পড়ে নেয়। তারপর খুব সিম্পল ভাবে সেজে নেয়। চোখে কাজল,,, চোখে হাল্কা আইসেডো আর আইলেনার দিলো,, ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক দেওয়া আর হাত ভর্তি চুড়ি ব্যাস এইটুকু তে যথেষ্ট লাগছে। মেহেদীর অনুষ্ঠান টা ছাঁদের উপর করা হয়েছে। কুহু ছাঁদের উপর যেতে একজোড়া তৃপ্তি নয়নে তাকিয়ে আছে তার পানে। চোখ জোড়ে কেবলই মুগ্ধতা বিরাজ করছে। কিন্তু ছাঁদে এসেই মনে খারাপ হয় কুহু আঁখি পল্লবে ভিড় করে মেঘ যেইকোন মূহুর্তে টুপ করে গড়িয়ে পড়বে। সব মুরুব্বিদের সাথে বসে গল্প করছে তার মা। তাকে দেখেও না দেখার ভান করে আছে। খুব কষ্ট হচ্ছে কুহুর। রোহান কুহুর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,, পৃথিবীর সবাই আপন হয় না। পৃথিবীতে কিছু মা নিষ্ঠুর ও হয় জেনে রাখো তুমি।
❝ যদি কখনো একা একা পথ চলতে গিয়ে
ক্লান্ত হয়ে পড়ো তাহলে ছুটে এসো আমার পানে
আমার বাহুডোরে বেঁধে নিবো তোমাকে❞
এই কথা টা কি এমন আছে জানানেই কুহুর। তবে এই কথাটা অনেক ভরসা খুঁজে পেয়েছে। রোহান কুহুকে বললো,, আয় ওখানে স্মৃতি আছে ওখানে গিয়ে বসবি।
কুহু রোহানের কথা মতো ওখানে গিয়ে বসলো। অনেক কে চিনে আবার অনেক কে চিনে না। যাদের কে চিনে তাদের সাথে বেশিরভাগ সম্পর্ক ই ভালো না। রওনক কুহুকে দেখে হেঁসে বললো,, কি রে বুড়ি এতো দেরি করে এলি কেনো?
একটু দেরি হয়ে গেছে সরি।
স্মৃতি বলে উঠলো কোন ব্যাপার না। পর্লারের এক মহিলা কে বললো কুহুকে মেহেদী পড়িয়ে দিতে। কুহু পার্লারের মহিলাকে বললো,, একদম সিম্পল একটা ডিজাইন দিবেন। কুহুর কথা মতো ই পার্লারের মহিলা তাই করলো।
কিছুক্ষণ পর রোহান আর তার দুইজন ফ্রেন্ড এসে বসলো তাদের পাশে। রোহান কে কুহুর পাশে বসে থাকতে দেখে মুন প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে তাকাছে। মেহেদীর পর্ব শেষ রোহান কে সবাই ধরলো গান গাওয়ার জন্য।
রোহান গিটার টা হাতে নিয়ে বলে উঠলো এই গান টা আমি আমার সব থেকে প্রিয় মানুষ কে ডেডিকেট করছি,,
❝অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান
যেন ভুলে যেয়ো না
এ বাঁধন খুলে যেয়ো না
অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান
যত সুর ছিল প্রাণে
সবই দিয়েছি তোমায়
বিনিময়ে তোমারে শুধু
চিরদিন যেন কাছে পাই
যত সুর ছিল প্রাণে
সবই দিয়েছি তোমায়
বিনিময়ে তোমারে শুধু
চিরদিন যেন কাছে পাই
মালা চন্দনে রাঙা এইখানে
কখনো ফেলে যেয়ো না
অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান
যেন ভুলে যেয়ো না
এ বাঁধন খুলে যেয়ো না
অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান
ওই ফুলবনে পাখি
আজ মন জুড়ে যেন গায়
এই হাত জড়ানো হাতে
চিরদিন যেন ওগো রয়
ওই ফুলবনে পাখি
আজ মন জুড়ে যেন গায়
এই হাত জড়ানো হাতে
চিরদিন যেন ওগো রয়
মধু কুমকুমে, নব মৌসুমে
কখনো দলে যেয়ো না
অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান
যেন ভুলে যেয়ো না
এ বাঁধন খুলে যেয়ো না
অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান
যেন ভুলে যেয়ো না
এ বাঁধন খুলে যেয়ো না
অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান
গান শেষ হতে হাত দিলো সবাই। কুহুর এতো হৈচৈ ভালো লাগছে না ই তাই কুহু সবাই কে বলে ছাঁদ থেকে নেমে যেতে নিলো কিন্তু ছাঁদ থেকে নেমে যেতে নিতেই বাঁধলো এক বিপত্তি হুট করে কে যেনো কুহুকে সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দেয়। বিকট একটা চিৎকার দিয়ে উঠে কুহু। কুহুর গলা শুনে রোহানের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো সব ফেলে দৌড়ে সিঁড়ি কাছে গিয়ে থমকে গেলো। রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে পড়ে আছে কুহু। এই অবস্থায় কুহুকে দেখে রোহানের দুনিয়াতে ঘুরে গেলো। মনে হচ্ছে দামি কোন জিনিস হারিয়ে ফেলছে। রোহান দৌড়ে কুহুর কাছে গিয়ে কুহুকে বুকের সাথে চেপে ধরে বললো চিন্তা করিস না আমি আছি আমি তোকে এখনি হসপিটালে নিয়ে যাবো তোর কিছু হবে না। কুহুকে কোলে তুলে নিয়ে সে খুব সাবধানে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গাড়িতে উঠে রওনা দিলো হসপিটালের দিকে। বাড়ির থেকে শুধু স্মৃতি রওনক আর সালামা আহাম্মেদ এসেছেন আর কেউ আসেন নেই। মাথায় খুব বাজে ভাবে ইনজুরি হয়েছে। রোহানের সাদা পাঞ্জাবি টা তে তরতাজা রক্তের দাগ স্পষ্ট। পাগলের মতো করছে রোহান মনে প্রাণে শুধু রবকে স্মরণ করে যাচ্ছে। ও.টি. র সামনে বসে আছে। ও.টি. র লাইটটা অফ হতে সবাই দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর ডাক্তার কে ঘিরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,, কুহু কেমন আছে?
ডক্টর হোসেন জবাবে বললেন আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছেন। তবে খুব বেশি আঘাত পেয়েছে মাথায় আমরা স্টেইচ করে দিয়েছে। একটু পরে কেবিনে দেওয়া হবে। কুহুকে বেডে সিফট করে দিলো। ডক্টর বলে গেছে ঘন্টা খানিক এর পর জ্ঞান ফিরবে। বারবার ঘড়িতে টাইম দেখেই চলেছে। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে জ্ঞান ফিরলো কুহুর। কুহুর জ্ঞান ফিরতে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলো। রোহান কুহুর পাশে বসে বললো,, খুব ব্যাথা করছে। কুহু একবার চোখ বন্ধ করছে তো আবার খুলছে তারপর বললো ভাইয়া লাইট টা অফ কেনো জ্বালিয়ে দিন।
লাইট জ্বালিয়ে দিবো কি লাইট তো জ্বলছে মুহূর্তে আতঙ্কিত হয়ে উঠলো কুহু তারপর বিচলিত হয়ে বললো আমি কিছু দেখতে পারছি না।
আচ্ছা রিল্যাক্স। আমি আছি তো। আস্তেধীরে চোখ বন্ধ করো আবার চোখ খুলো।
কুহু তাই করলো কিন্তু ফলাফল জিরো। কুহু কেঁদে উঠলো। কুহুকে দু বাহুতে আগলে নিয়ে বললো ঠিক হয়ে যাবে সমস্যা নেই। আচ্ছা এখন বলো তো কুহুপাখি তুমি পড়ে গেলে কি করে?
আমি যখন সিঁড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে নামছিলাম তখন কেউ মনে হয় ধাক্কা দিয়েছে আচ্ছা আমি আছি তো। ভাইয়া ডাক্তার ডাক তারাতাড়ি।
ডাক্তার এলো কেবিনে। কুহু পরিক্ষা করে বললো,, ওর চোখে মনিতে আঘাত পেয়েছে। সমস্যা নেই চোখের অপারেশন করতে হবে। অপারেশন করলে ঠিক হয়ে যাবে।
কুহুকে হসপিটাল এ রেখে রোহান বাসার দিকে রওনা দিলো। কাউকে কিছু না বলে বের হয়ে যাওয়াতে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লো। রোহান নিজের রুমে এসে ল্যাপটপ অন করে ছাঁদের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ টা দেখছে অবশেষে কাঙ্ক্ষিত ফুটেজ টা পেলো। ফুটেজ টা দেখে রোহানের রক্ত টগবগ করে উঠলো। রোহান আলমারি থেকে চাবুক টা বের করে রুম থেকে থেকে বের হয়ে নিচে এসে সবার সামনে থেকে মুনা কে টেনে নিয়ে সুইমিংপুল এর কাছে নিয়ে এসে এক ধাক্কায় ওকে পানিতে ফেলে দিয়ে তারপর তাকে চাবুক দিয়ে মারতে থাকে বাড়ির সকলে তাকে থামতে চাইলেও পারে না। একের পর এক চাবুক মেরেই চলেছে। তারপর চাবুক ফেলে দিয়ে সেও পানিতে নেমে মুনের মাথাটা পানিতে চেপে ধরে বলতে লাগলো,, কোন সাহসে তুই কুহুকে সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলি। আজ তোর জন্য আমার পরাণ পাখি টা চোখে দেখতে পারছে না আজ তোর জন্য ও হসপিটালের বেডে শুয়ে ব্যাথায় ছটফট করছে। তুই কোন সাহসে আমার কলিজাতে আঘত করলি আজ তোর কলিজাটা আমি ছিঁড়ে ফেলবো। বাড়ির সবাই পানি তে নেমে রোহান কে টেনে দূরে সড়ায়। মুনের অবস্থা টা ভালো। রোহান এক ভয়ংকর হাসি দিয়ে বললো,,, তুই আমার কলিজাকে হসপিটালে পাঠিয়েছিলি না আজ একই দিনে তোরে ও আমি পাঠালাম৷
রোহান সবাকে রেখে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার হসপিটাল এ রওনা দিলো। পিছনে ফেলো গেলো কিছু মানুষের দৃষ্টি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *