অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার 23,24,25

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖

Part : 23

তানহা আর আমি একসাথেই মসজিদে ঢুকলাম। আমি আগে আর তানহা আমার পিছনে।

মসজিদটা খুব সাদামাটা। ভিতরে মূল কক্ষ আর বাইরে বারান্দার মতো করে কিন্তু বড় জায়গা জুড়ে নামাজ পড়ার জন্য রাখা হয়েছে, যার চারপাশ খোলা আর বেতের বেড়া দেওয়া এবং উপরে টিন। মূল কক্ষটা বিশাল বড় কিন্তু ছিটকিনি দেওয়া। বাইরে সারি সারি মাদুর বিছানো নামাজ পড়ার জন্য। একটা মৃদু ডিম লাইটের আলো জ্বলতেছে। পাশেই একটা বিশাল পুকুড়। পরিবেশটাও দারুন। পাশে একটা অনেক বড় বট গাছ। স্বস্তি পেলাম যে কোন মানুষ নেই। সামনে ছোট মাঠ আছে যার একপাশে ওযু করার জন্য রাখা হয়েছে।

তানহাকে বললাম,
অর্ণব : তাড়াতাড়ি যায়ে ওযুটা করে নেন। আমি এখানেই আছি।

তানহা : আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো। এখানে তো ছেলেদের ওয়াশরুম৷ আপনি একটু বাইরে দাঁড়ায় থাকলে ভালো হতো।

আমারো মনে পড়লো আমাকেও একটু ওয়াশরুমে যেতে হবে।
অর্ণব : ঠিক আছে চলেন।

উনি ওয়াশরুমে ঢুকলেন আর আমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ভাগ্য ভালো উনি বাইরে আসা পর্যন্ত কেউ আসে নি। যাক আল্লাহকে শুকরিয়া।

উনি বাইরে আসতেই,
অর্ণব : আপনি একটু যান। ওযুটা করেন আমি আসতেছি।

তানহা : না। আপনি আসেন। আমাকে ওযু করার জন্য নিকাব,হিজাব,জুতা-মুজা খুলতে হবে। কেউ চলে আসলে সমস্যা আছে। আমি এখানেই দাঁড়িয়ে আছি।

তাড়াতাড়ি করতে হবে তাই আমি কথা না বাড়ায় তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ওয়াশরুম থেকে বেড় হয়ে মসজিদের গেটের কাছে দাঁড়ায় থাকলাম। একটু পর দেখলাম তানহা ওযু শেষ করে নামাজ পড়তে গেলো। ঘড়িতে দেখলাম আর দশ মিনিট বাকি আছে। তাই ওযু করে আমিও নামাজটা পড়ে নিলাম।

সফরকারীর জন্য শরিয়তের বিধি-

বিধানে কিছু শিথিলতা রয়েছে,
যথা চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ
নামাজগুলো দুই রাকাত আদায় করবে।
মুসাফির ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত সফর
অবস্থায় চার রাকাত নামাজ পূর্ণ করলে গুনাহ হবে। এ ক্ষেত্রে নামাজ পুনরায় পড়া ওয়াজিব। আর যদি ভুলক্রমে চার রাকাত পূর্ণ করে নেয়,
তাহলে যদি সে প্রথম বৈঠক করে থাকে, তাহলে সেজদা সাহু করে নিলে ফরজ নামাজ আদায় হয়ে যাবে, আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে তাহলে ফরজ আদায় হবে না,
আবারও পড়তে হবে। আর ফজর ও মাগরীবের নামাজ পুরাটাই পড়তে হবে।
-(বাদায়েউস সানায়ে ১/৯১)💕

এজন্য আমি আছরের দুই রাকাত কাজা ও মাগরিবের তিন রাকাত কাজা আদায় করে নিলাম।

তানহার আগেই আমার নামাজ আদায় হয়ে গেলো। মৃদু আলোতে দেখলাম এখনো নামাজ পড়তেছে। মাথায় ওরনা দেওয়া। আমি গেটের কাছে চলে আসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে তানহাও চলে আসলো।

আমি তানহাকে দেখে অবাক। ও শুধু ওরনাটা মাথায় দিছে। আর হাত দিয়ে ওরনাটার একটা অংশ এমনভাবে মুখে ধরে আছে যেন চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আর অন্য হাতে হিজাব আর নিকাব। আমি উনাকে যত রূপে দেখতেছি তত রূপে আরো বেশি পরিমানে উনার প্রতি মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। আল্লাহ আমাকে হেফাজত করুক।

বুঝলাম হিজাব আর নিকাব পড়ার সময় নাই এটা উনার মাথায় আছে। তাও জিজ্ঞাসা করলাম,
অর্ণব : কি ব্যাপার ওরনা দিয়ে এত কষ্ট করে পর্দা করলেন যে। হাত ব্যাথা হয়ে যাবে তো।

তানহা : শরিয়তে বলা হয়েছে সব দিক পর্যালোচনা করে বিবাহের বিষয় চূড়ান্ত হয়ে গেলেই তবে ছেলে মেয়েকে দেখতে পারবে।

হাদিসে আছে,-

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “তোমাদের কেউ যদি কোন মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দেয় এবং তার এমন কিছু দেখতে পারে-যা তাকে আগ্রহশীল করবে, তবে সে যেন তা করে নেয়।”
হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, “আমি বনী সালামা গোত্রের এক মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দেই এবং তাকে এক দৃষ্টি দেখার জন্য খেজুর গাছ তলায় লুকিয়ে থাকি ।একদিন আমি তাকে দেখে ফেলি, যা আমাকে তার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলে।ফলে আমি তাকে বিবাহ করে নিই।”
-{সুনানে বাইহাকী, ৭ম খন্ড, ৮৪ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১৩৪৮৭}💕

বলেই তানহা হাটতে শুরু করলো!

আল্লাহ! আমি তো শুনে পুরাই হতবাক। এটা কি ছিলো? আমি নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না। প্রোপজ করার স্টাইলটা তো আরো মাথা নষ্ট করে দেওয়ার মতো। হাদিসের দ্বারা প্রোপজ?! কেউ কখনো কল্পনা করছিলো! নাহ আমার বউটা সত্যিই অনেক ট্যালেন্টেড।

কিন্তু আমি আর কথা বাড়াইলাম না। কারন বাস ছেড়ে দিলে আমরা দুইজনে বিপদে পড়বো। তাড়াতাড়ি করে উনার সামনে গেলাম। আমি সামনে হাটতেছি আর তানহা আমার পিছনে। উনি যেহেতু বোরখার উপর ওরনা পড়ছেন তাই খুব ভালোভাবে কভার করতে হচ্ছিলো যাতে কারো নজর না যায়। পুরো রাস্তা আমরা আর কোন কথা বলিনি।

দেখলাম বাসের হেল্পার দাঁড়ায় আছে,
হেল্পার : তাড়াতাড়ি আসেন ভাই। আপনারা তিন মিনিট লেট।আর দুই মিনিট দাঁড়াইতাম। নাহলে রাখেই চলে যাইতাম।

অর্ণব : একটু দেরি হয়ে গেলো। আল্লাহ আপনার ভালো করুক।

হেল্পার : যখন দেখলাম ভাবীকে নিয়ে যাচ্ছেন তখনই বুঝছিলাম আপনাদের দেরী হবে।

হেল্পারের কাছে “ভাবী” ডাক শুনে তানহা আমাকে রেখে তাড়াতাড়ি বাসের ভিতর চলে গেলো। আমিও বাসে উঠে নিজের সিটে গেলাম। সিটে বসে কিছুক্ষণ আমরা কোন কথা বলিনি।

নিরবতাটা আমিই ভাঙ্গলাম,
অর্ণব : হাদিসটা যখন আমি পড়ছিলাম তখন অটোমেটিক্যালি হাসি বেড় হয়ে গেছিলো, খেজুর গাছের নিচে লুকায় থাকার বিষয়টাতে।

তানহা : হাহা। আমারো হাসি বের হয়ে গেছিলো ঘটনাটাতে। আর আমি দুঃখিত সেদিনের ঘটনার জন্য।

অর্ণব : কোনদিনের?

তানহা : দ্বিতীয় দিন যখন আপনি আমাকে দেখছিলেন। আসলে আমি কাউকেই আমার চেহারা দেখাই না। কঠোরভাবে পর্দা করি। আর আপনি আমাকে সাহায্য করতে আসে ভুল করে দেখে ফেলছিলেন তাই বোকা দিছিলাম।

অর্ণব : হাহা। আমি রাগেই গেছিলাম। তাই আপনার সাথেও খারাপ ব্যবহার করছি। আমাকেও মাফ করে দিয়েন। আর হ্যাঁ “বাবার গাড়িতে যাবেন…” কথাটা বলা যদিও উচিৎ হয় নি তবে আমি লক্ষ্য করছিলাম কথাটা উঠাতে আপনি চুপ হয়ে গেছিলেন। কারণ কি?

(কথা গুলো আমি নিচের দিকে আর তানহা বইয়ের দিকে তাকিয়েই বলতেছিলাম। কারণ তানহা শুধু ওরনা পড়েছিলো আর মুখ খোলা ছিলো।)

তানহা : আমার বাবা-মা খুব ছোটবেলায় মারা গেছে। একটা এতিম খানায় মানুষ হয়েছি। মনে হয় বুঝতে পারছেন।

আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলাম। সামনের দিকে তাকায়ে চোখ বন্ধ করে নিছিলাম। নিজের উপর খুব রাগ উঠতেছিলো। মনের অজান্তেই অনেক বড় ভুল করছি।
অর্ণব : আমি বুঝতে পারিনি বিষয়টা। আমি সত্যিই দুঃখিত।

তানহা : না ঠিক আছে। এতক্ষণে ভুলে গেছি ঐটা।

(এইবার তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম ইনাকেই বিয়ে করবো। আমি তানহার পরিবারকে নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলাম। ওরা মানে নিবে কি না! এখন আর কোন অসুবিধা নাই। দিনাজপুরে যায়ে কালকেই সব কিছু করে নিবো ইনশাল্লাহ! আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম)
উপরে তাকিয়ে বললাম,
অর্ণব : যাক আম্মুর বউয়ের আশা পূরণ হলো। কালকেই বউ দেখতে পাবে।

আমি বুঝতে পারলাম অর্ণব কি বলতে চাচ্ছে তাই আমিও সাংকেতিক ভাষায় উত্তর দিলাম,
তানহা : Permission দেওয়া হলো।

বুঝলাম তানহা উনাকে দেখার পারমিশন দিছে। শুভ কাজে আর দেরী কেনো। আল্লাহর নাম করে তানহার দিকে প্রথম বার ভালো মতো তাকাইলাম,
আমি ওর দিকে তাকাতেই আমার মনে এক অন্যরকম ভালো লাগা অনূভুত হলো। যদিও সেদিন উনার চেহারা দেখছিলাম। কিন্তু আজকে আর সেদিনের দেখার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য আছে। এত সুন্দর চেহারা, তানহা কলম দিয়ে ঠোঁটে আঘাত করতেছে আর পড়তেছে। বাইরের হালকা বাতাসে ওরনার সাইড দিয়ে চুলগুলা মুখের কাছে বার বার আসছে,আর সে বাম হাত দিয়ে বার বার চুলগুলো সরায় দিচ্ছে। আমি অপলক দৃষ্টিটে তাকিয়ে আছি,মনে হচ্ছে এই ভাবে তানহাকে দেখতে দেখতে আমার সারাটা জীবন পার করে দিতে পারবো।

তানহা : হইছে আর না। আমাকে পড়তে দিন। পড়তে পারতেছিনা আপনার জন্য।

আমি উনার কথায় বাস্তবে ফিরে আসলাম। অনেক্ষণ আমরা কোন কথা বলিনি।

অনেক্ষণ পর,
তানহা : আমি একটু ঘুমাবো। সকালে আমার কলেজের ইন্টারভিউ আছে। একটু দেখে রাখিয়েন।

অর্ণব : আপনি কথায় যাচ্ছেন আর কোন কলেজে?

তানহা : আমি দিনাজপুরে যাচ্ছি আর দিনাজপুর সরকারি কলেজের এসিস্ট্যান্ট ইংরেজি শিক্ষিকার পদে নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ। তার জন্যই পড়াশুনা করতেছিলাম। আপনি?

প্রথমটা শুনে যদিও খুশি হইছিলাম। কিন্তু পুরোটা শুনে আমি হাসবো না কাদবো তা ঠিক করতে পারতেছিলাম না। আমি যে কলেজে পড়ি আমার বউ সেখানকার শিক্ষিকা? আমি শেষ!
অর্ণব : আমার বাসাও দিনাজপুরে। আপনি ঘুমান।

তানহা পাশেই হেলান দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতেছে। আমি “Christ In Islam” বইটা পড়া শুরু করলাম।

প্রায় আধা ঘন্টা পর, আমি বই পড়তেছি এমন সময় পাশে একজন বৃদ্ধা আসলো। বললো,
: বাবা। বাসটার পিছনের দিকের সিটে একটু বেশি ঝাঁকি খাচ্ছে। আমি বয়স্ক মানুষ। খুব অসুবিধা হচ্ছে তুমি যদি আমার সাথে সিট পাল্টাতে তাহলে খুশি হতাম।

বৃদ্ধার কাছে এটা শুনে আমি কি বলবো বুঝতে পারতেছিলাম না! কোন চিপায় পড়ে গেলাম। তানহাকে ছাড়তেও ইচ্ছা করতেছে না। আবার বৃদ্ধার কথাও ফেলতে পারবো না। কেননা,

হাদিসে আছে,

“আল্লাহ তায়ালা বিপদগ্রস্ত লোকদের সাহায্য করাকে পছন্দ করেন।”
-(জামে সগীর/ মাকাসিদে হাসানা)💕

শেষ পর্যন্ত সাহায্য করাটাকেই বেশি প্রাধান্য দিলাম। তানহাকে ডাকলাম,
অর্ণব : এই যে শুনছেন?

ঘুম থেকে চোখ খুলে,
তানহা : কি হলো? এতক্ষণ পর যা একটু ঘুম আসলো আপনার জন্য ভেঙ্গে গেলো। ডাকাডাকি করতেছেন কেনো? আপনাকে বিয়ের জন্য শুধু চেহারা দেখাইছি এর মানে এই না যে আপনি আমার সাথে যা ইচ্ছা তা করতে পারবেন। জ্বালাইলে আমি প্রস্তাব ফিরায় দেবো।

আমি তো পুরাই অবাক! এই মেয়ে কি বলে। মেজাজটা আবার গরম হয়ে গেলো। বললাম,
অর্ণব : দেখুন আমি এটা বলার জন্য ডাকলাম যে এই বৃদ্ধার পিছনে বসতে কষ্ট হচ্ছে। তাই ইনি আমার জায়গায় বসবে। আপনার নিরাপত্তার খাতিরে বিষয়টা জানায় দিতেই ডাকতেছিলাম। ভালো থাকুন। আসসালাম অলাইকুম।

তারপর বৃদ্ধাকে সিট বুঝায় দিয়ে উপর থেকে আমার ব্যাগ নিয়ে পিছনে চলে আসলাম।

Send My Letter
Send My Letter

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖

Part : 24

বৃদ্ধাকে সিট বুঝায় দিয়ে উপর থেকে আমার ব্যাগ নিয়ে পিছনে চলে আসলাম।

বৃদ্ধার সিট ছিলো বাসের একদম পিছনে। এজন্যই বৃদ্ধা এত ঝাঁকি খাচ্ছিলো। পিছনের সারিটা পুরোটাতেই সিট থাকে মাঝে ফাঁকা থাকে না, আর ভালো লাগলো যে সবগুলা সিটই ফাঁকা। তারমানে এখানকার সবাই নেমে গেছে বা সামনে চলে গেছে। উনার জন্য মেজাজটা খারাপ হয়ে গেছিলো। কিন্তু এটা দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো। আরাম করে বসলাম। উনার পাশে তো খুব সাবধানে বসতে হইতো। এক তো নন মাহরাম তাই ষ্পর্শ জায়েয নাই তার উপর আবার উনিই প্রথমে ভেটো বসায় দিছিলেন যাতে উনার শরীরে যাতে ষ্পর্শ না লাগে। এখন হাত – পা ছাড়ে বসতে পারবো। আবার উনার দিকে তাকানো যেত না, যদি আবার উনার উপর চোখ পড়ে যাইতো। এখন যে দিকে খুশি তাকাইতে পারবো। ইয়াহু! সব মিলায় নিজেকে স্বাধীন লাগতেছে।

আরামে বসে বইটা পড়তেছিলাম। কিছুক্ষণ পর শুনতে পাইলাম কে যেন বলতেছে,
: দুঃখিত।

আমি বই থেকে চোখ সরায় সামনে তাকাইলাম। সামনে তানহা দাঁড়ায় আছে। মাথায় ওরনা আর ওরনার একাংশ দিয়ে মুখ ঢাকায় রাখছে,শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে।
অর্ণব : কি হলো আবার।

তানহা : আসলে ঘুম থেকে উঠছিলাম, এক তো কাঁচা ঘুম থেকে উঠাইছেন আবার আমার রাগটা একটু বেশি তো তাই উল্টা-পাল্টা বলে ফেলছি। Sorry!

অর্ণব : জি আমি মাফ করে দিছি আপনি যান ঘুমান।
(এখন আর কথা বলার ইচ্ছা নাই। তাই এখন কোনমতে উনাকে ভাগাইতে পারলেই বাঁচি।)

তানহা : ধন্যবাদ!
দেখলাম তানহা আমার পাশে বসলো। সাথে উনার ছোট ব্যাগটাও আছে।

অর্ণব : এখানে বসলেন কেনো? আপনার সিটে বসেন। আপনাকে আমি মাফ করে দিসি। প্লিজ যান। তার উপর আবার আপনার কালকে ভাইভা আছে, যায়ে ঘুমান।

তানহা : আসলে ওখানে বৃদ্ধা ঘুমাচ্ছে। উনার নাক ডাকার শব্দে আমার ঘুম আসতেছিলো না। তাই এখানে আসলাম। আশা করি আপনার সমস্যা হবে না।

আমি আর কি বলবো বুঝতে পারতেছিলাম না। আমি এতটা তো নিষ্ঠুর না যে উনার কালকে পরিক্ষা আর আমি উনাকে ঘুমাতে দিবো না। তাই বাধ্য হয়ে উনাকে এখানেই বসতে বললাম।
অর্ণব : তাহলে আপনি এখানে ঘুমান। আমি আপনার জায়গায় যায়ে বসতেছি।

রাগী স্বরে,
তানহা : একদম না। আমি এখানে একা ঘুমাবো? এটা পাবলিক বাস। ঘুমের ভিতর যদি কেউ…। আপনার দায়িত্ববোধ নাই?

অর্ণব : আচ্ছা বাবা আপনি ঘুমান। আমি এখানেই আছি।

তানহা : একটু সরে বসেন আমি লম্বালম্বিভাবে শুবো।

আমি সরে বসলাম। ধুর আবার সেই আটসাট হয়ে বসা। এগুলা ভালো লাগে?

উনি ঘুমাচ্ছেন আর আমি বই পড়তেছি। দেখলাম ঘড়িতে সাড়ে আটটা বাজে। বাস চলতেছে।

পড়তে পড়তে কখন যে এগারোটা বেজে গেলো বুঝতেই পারিনি। হঠাৎ তানহা ডাক দিলো,
তানহা : কয়টা বাজে?

ঘড়ি দেখে,
অর্ণব : এগারটা। আপনি কখন ঘুম থেকে উঠলেন।

তানহা : এখনি। আপনি ঘুমান নি?

অর্ণব : একটা মেয়ে পাবলিক বাসে আমার উপর ভরসা করে পাশে শুয়ে আছে আর আমি ঘুমাবো! আজব কথা বললেন তো আপনি।

(আমি যত দেখতেছি তত উনার প্রতি আকর্ষিত হচ্ছি। একটা ছেলে এতটা দায়িত্বশীল আর পরিণত হতে পারে জানা ছিলো না। তখন থেকে সব কথাগুলা বইটার দিকে তাকিয়েই বলতেছে। কতটা আল্লাহভীরু হলে তা সম্ভব!)
তানহা : নেন আপনি এখন ঘুমান!

অর্ণব : আরে নাহ। আমি এই বইটা শেষ না করে ঘুমাইতেই পারবো না। আপনি ঘুমান।

তানহা : বললাম না ঘুমান। আপনার অযুহাত শুনতে চাইনি।
বলে আমার হাত থেকে বইটা কারে নিতে আসলো।

এই সময় প্রচন্ড জোরে একটা আওয়াজ হলো। তানহা ভয়ে আমার হাতটা শরীরের সব শক্তি দিয়ে ধরে ফেললো। আমি হাতের ব্যাথায় ককিয়ে উঠলাম। দেখলাম তানহা চোখ বন্ধ করে আছে।

অর্ণব : ছাড়ুন আমার হাত কেনো ধরছেন?

তানহা : Sorry sorry! আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছিলাম। এটা কিসের আওয়াজ ছিলো?

দেখলাম বাসও থেমে গেছে। যারা ঘুমাচ্ছিলো সবাই জাগে উঠছে।
হেল্পার : পিছনের চাকা বাস্ট হয়ে গেছে। ঘাবড়ানোর কিছু নেই।

ওহ এজন্যই এখানে এতো জোরে শব্দ হইছিলো। তানহার তো প্রাণ যায় যায় অবস্থা হয়ে গেছিলো।

তানহা : রাত হয়ে গেলো,আবার গাড়ির চাকাও ফুট্টুস! ভাবছি আমি কি কাল পরিক্ষা দিতে পারবো?

অর্ণব : ফুট্টুস?😁 মজা পাইলাম। আরে চিন্তা করিয়েন না ২০ মিনিটের ভিতর নতুন চাকা লাগাবে ততখন বসে পড়ুন।

তানহা : আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি পরিক্ষা দিতে পারব না।

অর্ণব : এসব ভাবা বাদ দিয়ে পড়তে বসেন আর না হলে চলেন বাইরে থেকে ঘুরে আসি।

তানহা : হুম চলেন।

রাগে,
অর্ণব : আজব মেয়েতো! পাগল হলেন নাকি?

তানহা : কেনো আপনিই তো বললেন যাইতে।

অর্ণব : আমি বললেই যাইতে হবে? ভুল করে বলে ফেলছিলাম। আর একটা অচেনা জায়গায় একটা মেয়েকে নিয়ে এত রাতে রাস্তায় হাটবো! বাবারে বাবাহ। ভাবতেও গা শিউরে উঠতেছে।

মনে মনে,
তানহা : আসলেই তো! কি পরিমানে উনার উপর ভরসা করে ফেলতেছি আল্লাহ! উনার সাথে রাতেরবেলা হাটতে প্রচন্ড ইচ্ছা করতেছিলো। তাই কিছু ভাববার আগেই হ্যাঁ বলে দিছিলাম। আমরা মেয়েরা যার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ি বা যাকে ভালোবাসি তার কাছে নিজেকে সবচেয়ে নিরাপদ মনে করি। আল্লাহকে শুকরিয়া যে এমন একজনের প্রতি আমাকে দূর্বল করছে যার কাছে আমি আসলেই নিরাপদ। দুনিয়া ও আখিরাত দুই দিক থেকেই। সত্যিই আনি ভাগ্যবতী!

অর্ণব : আপনি পড়েন আমি খাবার নিয়ে আসতেছি।

বাস থেকে নিচে নামলাম। হেল্পার বললো সমস্যা দেখা দিছে তাই আধা ঘন্টার আগে এটাই বলা যাবে না যে আরো কতক্ষণ লাগবে। মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। আর গাড়িটা থামছে একটা নির্জন জায়গায়। তবে একটু দূরে একটা বাজার আছে। আমি সেদিকে হাঁটা শুরু করলাম। মাঝে মাঝে দু-একটা বাস,ট্রাক বা লরি পাশ দিয়ে যাচ্ছে।

দেখতে দেখতে বাজারে পৌঁছে গেলাম। একটা চায়ের দোকানে ঢুকলাম। যদিও চা তেমন একটা খাইনা। মাঝে মাঝে খাই। তবে আজকে রাত জাগতে হবে মনে হচ্ছে তাই দোকানদারকে বললাম ১ টা চা দেন।

দোকানদার :- বসেন দিচ্ছি।

কিছুক্ষণ পর দোকানদার চা দিল।

এমন সময় ৫-৬ টা ছেলে আসলো। এসেই দোকানদার কে বাজে ভাবে গালাগালি শুরু করল। তারপর বলল কিরে তুই কি চাস কাললেই তোর মেয়েকে রাস্তায় বিরক্ত করি, বাজে কথা বলি।

দোকানদার :- না বাবারা, ওই ছোট মানুষ। দোহায় তোমাদের, ওর সাথে এমন করোনা।

ছেলেগুলা:- তো তুই চা পাঠাসনি কেন।

দোকানদার :- তোমরা টাকা দেওনা, কাপ ভেঙ্গে ফেলো। তাই আজ চা দিতে যাইনি।

ছেলেগুলা:-কাল তোর মেয়ে যেন স্কুলে না আসে, আসলে তো বুঝতেই পারতেছিস।

আর বসে থাকা যায় না।

অর্ণব : এই যে ভাইসব এদিকে একটু শুনো তো।

একজন : কি হলো তোর আবার?

অর্ণব : ইভ টিজিং। অর্থাৎ, নারীকে উত্যক্ত করা। আসলে এটাই স্বাভাবিক। কারণ, নারীরা তো মাল হয়, তারা তো ভোগের জিনিস। তাই না? তাহলে তো আপনার মা-বোনটিও মাল, তাই না?

একজন : তোর মাথা ঠিক আছে? তুই কাকে কি বলতেছিস জানিস?

অর্ণব : আমি ঠিক বলতেছি। তারাও তো ভোগের জিনিস। তাহলে তাদের যেয়ে টিজ করেন। তাদের মাল বলে ডাক দিন। একটু রসে মাখা খারাপ মন্তব্য করুন!

একজন তো রীতিমতো আমার কলার ধরে বললো,
: কি বললি আরেকবার বল।

অর্ণব : কি আমার কথা শুনতে কি খারাপ লাগছে? এজন্যই তো আমার কলার ধরে আছেন। খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক।

বাজার এলাকা তাই চারপাশে ভীর জমে গেলো। মানুষদের দেখে কলার ছেড়ে বললো,
: অনেক বড় ভুল করতেছিস।

অর্ণব : আর আপনারা কি ভালো কাজ করতেছেন? নিজেদের মা-বোনেকে টিজ করার সময় কি আপনাদের হাত পা কাপবে না? তাহলে আপনারা কোন সাহসে আরেক জনের মা-বোনকে টিজ করেন? আপনারা নিজেকে কি ভাবেন?

মাথা নিচু করে আছে। আমার কথার জন্য না লোকের ভয়ে আল্লাহ জানে।

লোকজনকে উদ্দেশ্য করে,
অর্ণব : আর আমাদের সমাজের মানুষের একটা প্রধান সমস্যা হচ্ছে তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে না। যার জন্য এরা এতো সাহস পায়। একজন নারী যেখানে হেনস্তার শিকার হচ্ছে সেখানে পাবলিকের উচিত হেনস্তাকারিকে উচিত শিক্ষা দেওয়া। আর আপনারা তা না করে দেখে থাকেন ঠিক এখন যেমন দেখে আছেন।

কেউ একজন জিজ্ঞাসা করলো আসল ঘটনা কি! আসল ঘটনা বলাতে লোকজন ফুসে উঠলো। মারে মারে অবস্থা। শেষ পর্যন্ত কিছু বিজ্ঞজনদের কথায় কান ধরে উঠা বসা করাইলো সবাইকে। তারপর সবাই ওদেরকে সতর্ক করলো যদি দোকানদারের মেয়ের কিছু হয় আর আরেকবার গুন্ডামি করতে আসে তাহলে কঠিন শাস্তি হবে ওদের।

শেষে আমি ওদের বললাম,
অর্ণব : কিছু কথা শুনে রাখো,
*যে তোমাদের পাশে ঘুমায় সে তোমার স্ত্রী।
*ভবিষ্যতে যে তোমাদের বুকে ঘুমাবে সে হবে তোমাদের মেয়ে।
*তোমরা অসুস্থ হলে যার ঘুম হারাম হয়ে যায়, সেই ব্যাক্তিটি হচ্ছেন তোমাদের মা।

  • যে নারী আপনার পাশের রুমে ঘুমিয়ে আছেন সে তোমাদের বোন।

তাহলে রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়া মেয়েটি মাল হয় কিভাবে? সেওতো কারো মা,বোন,মেয়ে বা স্ত্রী। একজন ভদ্র এবং আদর্শ নারীর সন্তান কখনো অন্য কোনো নারীকে হেনস্তা করার চিন্তাও করতে পারে না। তাদের সম্মান দিতে শিখো।

ওরা মাথা নিচু করে চলে গেলো। বুঝলাম যদি আমাকে ধরতে পারে তাহলে রোস্ট করে চিবায় খাবে। লোকজনের ভীরও ফাঁকা হয়ে গেলো।

আমি দোকানদারকে চায়ের টাকা দিয়ে চলে আসতে ধরলাম,এমন সময় দোকানদার বলল,
দোকানদার : তুমি জানোনা ওরা কতটা খারাপ তারাতারি এ শহর থেকে চলে যাও।

অর্ণব : আমার চিন্তা করিয়েন না। আর শুনুন আপনার মেয়েকে চোখে চোখে রাখবেন। আর পারলে নিজে যায়ে স্কুলে রাখে আসবেন। বলা যায় না মাথা গরম আছে ওদের, কি করতে কি করে ফেলে।

দোকানদার : ঠিক আছে বাবা।

অর্ণব : আপনার দোকানে আর জ্বালাইতে আসবে না আশা করি। ঐ সাহস আর হবে না ওদের।

দোকানদার : তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো। তবে ঝুঁকিটা নেওয়া উচিৎ হয় নি তোমার।

অর্ণব : হুম আংকেল। আরেকটা কাজ করিয়েন। পুলিশে একটা সাধারণ ডাইরি করিয়েন ওদের নামে। গুন্ডামি আর ইভটিজিং এর হুমকি দুটারই। তাহলে ওরা ভুল করেও কিছু করবে না। আর সাক্ষী হিসেবে তো আজকে পুরা বাজারের লোক ছিলো। তাই কালকেই ডাইরিটা করে নিবেন।

দোকানদার : ঠিক আছে বাবা। আমি কালকেই করবো। তুমি এখন যাও। আর দ্রুত এই এলাকা ছাড়ো। ওরা খুব খারাপ।

অর্ণব : ঠিক আছে। আসসালাম অলাইকুম।

দোকানদার : অলাইকুম আসসালাম।

সালাম দিয়ে দোকান থেকে চলে আসলাম। তারপর একটা ষ্টেশনারী থেকে কিছু খাবার কিনে বাসের দিকে হাটা শুরু করলাম। ভাগ্য ভালো যে, ছেলেগুলা বাস যেদিকে আছে তার উল্টো দিকে গেছে। এতক্ষণে তো ওরা আমাকে মনে মনে ধুয়ে দিচ্ছে এটা নিশ্চিত। এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি পারি চলে যেতে হবে। আল্লাহ করে বাসের চাঁকা ঠিক হয়ে গেলে বাঁচি।

এগুলা ভাবতে ভাবতে বাসের কাছে চলে আসলাম। বাসের ভিতর ঢুকে দেখি
বাসের ভিতর কেউ নাই, সাইমা একা একা কান্না করতেছে।

কয়েক সেকেন্ডের জন্য তো আমি নির্বাক হয়ে গেছিলাম। কিছু উল্টা-পাল্টা হয়ে যায় নি তো মেয়েটার সাথে। নাহ! মেয়েটাকে রাখে যাওয়া একদম উচিৎ হয় নি। নিজের প্রতি প্রচুর রাগ হচ্ছিলো। তাড়াতাড়ি তানহার কাছে যায়ে,
অর্ণব : তানহা…. এই তানহা কি হইছে।

তানহা মাথা নিচু করে, মুখে হাত দিয়ে, কোন কথা না বলে কেঁদেই যাচ্ছে।

Send My Letter
Send My Letter

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖

Part : 25

অর্ণব : তানহা…. এই তানহা কি হইছে।

তানহা মাথা নিচু করে, মুখে হাত দিয়ে, কোন কথা না বলে কেঁদেই যাচ্ছে।

অর্ণব : কি হয়েছে বাসের সবাই কোথায় গেছে? আর আপনি একা একা কাঁদছেন কেন? চুপ করে থাকিয়েন না আমার টেনশন হচ্ছে। দয়া করে বলুন!

তানহা : হেল্পার বললো সামনের রাস্তায় নাকি অনেক মারামারি হয়েছে। কারা জানি ধর্মঘট করছে। তাই আজ বাস ছাড়বে না। আশেপাশের কোন গাড়িই সামনে যাবেনা আজকে।আমি তাহলে কিভাবে পরিক্ষা দেব?

আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক তানহার কিছু হয় নি! আল্লাহকে শুকরিয়া জানাইলাম। বললাম,
অর্ণব : চিন্তা করিয়েন না।

হাদিসে আছে,

“আল্লাহ যা করেন তা বান্দার মঙ্গলের জন্যই করেন।”
-(মুসলিম হা/৭৭১)💕

তানহা : হুম। সবকিছুতেই কিছু না কিছু কল্যাণ নিহিত থাকে। যেমন

হাদিসে এসেছে,

“যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুমিনের ব্যাপারটি কতই না বিস্ময়কর! তার সমস্ত কাজই তার জন্য কল্যাণকর। যদি তাকে কোন মঙ্গল স্পর্শ করে, সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। এটা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তাকে কোন মন্দ স্পর্শ করে, সে সবর করে। আর এটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়।”
-(মুসলিম হা/২৯৯৯; মিশকাত হা/৫২৯৭)💕

(এজন্যই তো আপনাকে এতটা ভালো লাগে। আল্লাহর কাছে এজন্যই বউ হিসেবে আপনাকে চাইছি। আপনিই আমার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণকর। তাই তো আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করে আপনাকে আমার জীবনে পাঠিয়েছে। আল্লাহকে হাজার হাজার শুকরিয়া!)
তানহা কিছুক্ষণ আগে আমাকে রাগাইছিলো। তাই একটু মজা করার জন্য বললাম,
অর্ণব : আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি ভালো থাকিয়েন। আমি গেলাম।

তানহা : গেলাম মানে? আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

অর্ণব : বাসের ভিতরের বাকি লোকগুলা কোথায় গিয়েছে যানেন না?

তানহা : হুম। অনেকেই তাদের পরিচিতদের বাড়ি, অনেকে আবার আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি, আর বাকিরা রাতে থাকার ব্যবস্থা করতে।

অর্ণব : গুড। এইতো বুঝতে পারছেন। আমিও তেমনটাই করতে যাচ্ছি। আপনি একটা কাজ করেন এখানেই ঘুমান কাল সকালে গিয়ে পরিক্ষা দিয়ে আসবেন। টাটা।

তানহা : প্লিজ, আপনি কোথাও যাইয়েন না।

অর্ণব : এই নির্জন জায়গায় আমি বাসে থাকতে পারব না, আপনি থাকেন আমি যাই।

বলেই পিছনে ঘুরে বাস থেকে নামার জন্য হাটা শুরু করলাম। ফোনটাতেও চার্জ নাই,বন্ধ হয়ে আছে। তার উপর আবার তানহা আমার সাথে। এখন তো ওর নিরাপত্তার দায়িত্বটাই মূল হয়ে উঠেছে। ধুর অনেক বড় বিপদে পড়লাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি তানহা ব্যাগ নিয়ে আমার পিছু পিছু আসতেছে। আমি মুচকি হাসলাম। অন্ধকারের জন্য তানহা দেখতে পায় নি। আমার ভবিষ্যৎ বউটাকে বললাম,
অর্ণব : আপনি আমার পিছনে পিছনে কেন?

তানহা : আমিও আপনার সাথে যাবো। প্লিজ না করেন না, আমি একা একটা মেয়ে কোথায় যাবো বলেন! আর নির্জন রাস্তা কিছু একটা যদি হয়ে যায়। আজ কালের ছেলেরা ভালো না….

অর্ণব : ওমা তাই নাকি। আর আমি বুঝি চার যুগ আগেকার ছেলে?

তানহা : আপনাকে আমি ভালোভাবেই চিনি। অন্ততপক্ষে আমার ক্ষতি করবেন না। ক্ষতি করতে চাইলে আমি ঘুমানোর সময়ই করতেন। আর আপনি একজন দ্বীনদার তাই ভুল করেও চেষ্টা করবেন না। এমনকি এখনও আপনি অন্যদিকে তাকায় আমার সাথে কথা বলতেছেন। এর থেকে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে।

অর্ণব : না। আমি আপনাকে সাথে নিয়ে যাবো না। এখন আপনি আসতে পারেন।

(তানহা কাঁদতে শুরু করলো!)

বললাম,
: হাহাহা! আমার দায়িত্ববোধ আছে বুঝলেন। আর আমি কখনোই একটা মেয়েকে এভাবে ছেড়ে যাইতাম না। কেননা,

পবিত্র কুরআনে আছে

“পুরুষ হিসেবে মহিলাদের সুরক্ষা দিন।”
-(০৪ঃ ৩৪)💕

কাঁদতে হবে না। আমি বদলা নিলাম। বৃদ্ধার সামনে আমাকে কি বলছিলেন মনে আছে?

ব্যাগটা দেখায়,
তানহা : এটা দিয়ে আপনার মাথায় মারতে ইচ্ছা করতেছে। আমি কতটা ভয় পাইছিলাম জানেন?

অর্ণব : হাহা। আর আমার মনে হচ্ছে রাগ উঠেনি!

তানহা : ক্ষমা তো চাইলাম। আর আপনার জন্যই আমি এখানে একা বসে ছিলাম। অপেক্ষা করতেছিলাম কখন আসবেন।

অর্ণব : আপনি কিভাবে ভাবলেন আমি আপনাকে একা রাখে যাবো? আপনার প্রতি তো আমার দায়িত্ব আরো বেশি। কারণ আপনার সাথে তো আমার ইয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আপনাকে একা ছাড়তে পারি?

তানহা লজ্জায় হাত দিয়ে মুখ ঢাকলো।
তানহা : আপনার কি লজ্জা নাই?

অর্ণব : Oh hello Mam! লজ্জা আছে বলেই ইয়ে বললাম। বিয়ে বলি নি।

তানহা : আপনি একটা…!

অর্ণব : আমি একটা?

তানহা : কিছুনা চলেন এখন।

অর্ণব : আগে হিজাব আর নিকাব পড়ে নেন। বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি না। আর মনে হয় না রাতে আবার বাসে ফিরে আসবো।

তানহা : ধন্যবাদ মনে করে দেওয়ার জন্য।

অর্ণব : ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নেই। এখন থেকে এটা আমার দায়িত্ব বুঝলেন।

তানহা : হইছে। এতটা রোমান্টিক হতে হবে না। এখনো ইয়ে হয় নি।

অর্ণব : ইয়ে মানে?😜

তানহা : চুপচাপ সাহায্য করেন না হলে থাপ্পর খাবেন।

আর কথা না বাড়ায় নিরাপদ দূরত্ব থেকে তানহাকে হিজাব আর নিকাব পড়তে সাহায্য করলাম। তারপর ব্যাগ গুছিয়ে সবকিছু ঠিক আছে নাকি সব দেখে, সব কিছু নিয়ে বাস থেকে নামলাম। তারপর একসাথে হাঁটা দিলাম। ঘড়িতে দেখলাম এগারোটা চল্লিশ বাজে।

আমি আর তানহা দুজনে পাশাপাশি হাটতেছি। রাস্তা পুরোটাই ফাঁকা। কিছুক্ষণ আগে আসার সময় মাঝে মাঝে দুএকটা বাস লরি যাচ্ছিলো কিন্তু এখন একটাও না। সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ। চারপাশটা নির্জন আর রাস্তার দুপাশে সারি সারি ধান ক্ষেত। অনেক দূর পর্যন্ত বাড়ি দেখা যাচ্ছে না। আর আমরা একা একা হাটতেছি। পরিবেশটা সত্যিই অনুভব করার মতো। আর সবচেয়ে বড় কথা আমার পাশের মেয়েটা তানহা যার সাথে আমার বিয়ে হবে ইনশাল্লাহ। আর তাকে আমি প্রচুর ভালোবাসি। আমার মনে হয় এই মুহূর্তে আমার থেকে ভাগ্যবান আর কেউ নেই।

মনে মনে,
তানহা : কিছুক্ষণ আগেই আমার ইচ্ছা হচ্ছিলো উনার সাথে হাটার। ইচ্ছাটা এতো তাড়াতাড়ি পূরণ হবে এটা ভাবতেও পারিনি। আমরা দুজন একসাথে রাতের বেলা হাটতেছি। তাও আবার একা একা! চারপাশটা কি নিস্তব্ধ আর এত রোমান্টিক পরিবেশ। উফফ! ভাবতেই একটা অন্যরকম ভালোলাগা অনুভব হচ্ছে। এরকম যেনো সারাজীবন উনার পাশে হাটতে পারি। নিরবতাটা আমিই ভাঙ্গলাম,
: তা আপনার নামটা তো জানা হলো না।

অর্ণব : আমার নাম অর্ণব। অর্ণব আহমেদ। তা আপনার নাম কি?

তানহা : আমার নামটা এখন অজানাই থাক। একদম বিয়ের সময় দেখে নিয়েন।

অর্ণব : আহ-হা😜

তানহা লজ্জায় দাঁড়ায় গেলো আর হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো।

আমি হাসতে হাসতে শেষ।
অর্ণব : হইছে এত লজ্জা পাইতে হবে না। আর এখানে লজ্জার কি আছে আমি বুঝি না। বিয়ে তো করতেই হবে।

তানহা : আপনার তো লজ্জা শরম বলে কিছু নাই। সবাইকে নিজের মত ভাবিয়েন না। আর এত হাসিয়েন না মুখে মশা ঢুকে যাবে।

(হাসিটা বন্ধ করে আমরা আবার হাটতে শুরু করলাম।)

অর্ণব : আমার বউ আর লজ্জা পাবে এটা হবে না। উনাকে নিয়ে তো আমার অনেক স্বপ্ন আছে। ওগুলার কি হবে?

[হুম🙄]

তানহা : এই যে মিস্টার। আমার “উনা” -কে নিয়েও অনেক স্বপ্ন আছে। আর লজ্জা মেয়েদের সহজাত গুণ। জান্নাতি নারীদের সর্দারণী মা ফাতেমা বলেছেন,

“লজ্জা, শরম হলো মেয়েদের
সবচেয়ে সুন্দর গহনা” (হযরত ফাতেমা (রাঃ))💕

বুঝলেন?

অর্ণব : তাই বলে আমার সামনেও? এটা হবে না।

তানহা : তে আপনার সামনে কে লজ্জা পাচ্ছে?

অর্ণব : এই যে একটু আগেই কেউ একজন লজ্জা পেলো।

তানহা : এখনো তো বিয়ে হয় নি। বিয়ের পর উনার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরী করবো। তবে উনি বাদে সবার সাথেই সবকিছু আগের মতোই থাকবে।

অর্ণব : আপনি তো শুধু বন্ধু হবেন। আর উনি হবেন আমার জীবনের প্রথম মেয়ে বেস্টফ্রেন্ড। যে জায়গায় কেউ কখনো ছিলো না। বুঝলেন?

তানহা : হাহা। আচ্ছা আপনি তখন আপনার বন্ধুকে বললেন আপনি একদিন দেরীতে যাচ্ছেন। কেনো একদিন দেরি হলো জানতে পারি?

অর্ণব : কেউ একজন সপ্তম দিনে নদীপারে আসে নি। তাই তাকে খুঁজতেছিলাম।

(মনেই করছিলাম।)
তানহা : তা আমার মনে হয় সেখানে চারটা মেয়ে ছিলো কোনটাকে খুঁজতেছিলেন? নাকি আবার পরের দিন মেয়ে বদলে গেছিলো।

(বুঝলাম উনি বলতে চাচ্ছেন যে অন্য মেয়েগুলার মধ্যে কাউকে খুজতে যায়ে উনাকে দেখার পর মত বদলায় ফেলছিলাম নাকি আবার!)
অর্ণব : না। আগের দিন আমি উনাকে ছাড়া কাউকেই দেখিনি। এমনকি প্রথমে তো উনাকেও ভালো মতো দেখিনি। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় উনার দ্বীনি জ্ঞান দেখে অবাক হয়ে গেছিলাম। তার পর উনাকে দেখলাম। উনার পূর্ণ পর্দা দেখে আরো বেশি অবাক হয়ে গেছিলাম। আমি আমার জীবন সঙ্গিনীর কাছ থেকে এই দুইটাই চাচ্ছিলাম। এটা দেখেই সিদ্ধান্ত নিই যে উনাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো। তারপরের দিনতো যা ঘটে গেলো! এমনকি আমি উনাকে অহংকারী অপবাদটাও দিছি। আশা করি মাফ করে দিবেন উনি।

(আমি তো সম্পুর্নভাবে অবাক! কি বলতেছেন উনি। আমাকে সেদিনই পছন্দ করছে? সেদিন তো আমি সম্পুর্ন পর্দার মধ্যে ছিলাম। আল্লাহকে হাজার হাজার শুকরিয়া ইনার মতো একজনকে আমার জীবনে পাঠানোর জন্য।)
তানহা : হুম মাফ করেছেন। তা উনাকে বুঝাইতে যান নি? বুঝাইলেই তো উনি বুঝতো।

অর্ণব : আমি বুঝাইতে গেলে ভাবতো আমি উনার সৌন্দর্য দেখে প্রস্তাব নিয়ে গেছি। আমার দ্বিতীয় বার অপমানিত হওয়ার ইচ্ছা ছিলো না।

তানহা : হাহাহা। আসলেই ঐটাই ভাবতাম। আপনার মাথায় ব্রেন আছে বলতে হবে।

অর্ণব : তা আপনারা দ্বিতীয় দিন আসেন নি কেনো?

তানহা : মাঝে মাঝে যাই। প্রতিদিন যাই না। সকালবেলা কেউ থাকে না তাই খুব সকালে যাই ঘুরতে। প্রথম দিন আমার একটা বান্ধবী তো উনার উপর ক্রাশ খাইছিলো। কিন্তু আমি ঘুরেও তাকাই নি। দ্বিতীয় দিন উনাকে অপমান করায় আমার উপর বান্ধবীটা খুব রাগে গেছিলো। এখন যখন দেখবে উনিই আমার বর তাহলে যে কি করবে আল্লাহ জানে। হাহাহা।

অর্ণব : আপনার বান্ধবীর টেস্ট খারাপ। হাহা।

তানহা : আহারে নিজের রুপের বর্ণনা আমার মুখ থেকে শুনতে চান তাই না! বুঝি বুঝি। আর আমার বয়েই গেছে আপনার প্রশংসা করতে।

অর্ণব : জি একদম না।

তানহা : আচ্ছা আপনি কবিতা পারেন?

অর্ণব : না কেনো?

তানহা : না কবিতা শুনাইতেন তাহলে সময়টা ভালোভাবে কাটতো। এরকম পরিবেশে একটা কবিতা শুনতে ইচ্ছা করতেছে।

(বাব্বাহ আমার বউটা সাহিত্যপ্রেমীকও)
অর্ণব : আমি রাস্তায় কবিতা শুনাবো? আমার মাথা কি খারাও হইছে!

তানহা : কেউ তো নাই। তাই শুনাইলে সমস্যা কি।

অর্ণব : তাহলে আপনি একটা গান শুনান।

তানহা : একদম না। ওগুলা বিয়ের পর।

অর্ণব : হাহাহা। তবে বিয়ের কথা শুনে বিয়ে নিয়ে একটা হাসির গল্প মনে পড়লো।

তানহা : তাহলে শুনান।

অর্ণব : দুইজন একই ইয়ারের প্রেমিক প্রেমিকা একসাথে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করলো।

“তা তারপর মেয়ে বললো,
: গ্রাজুয়েশন তো কমপ্লিট; এখন বলো, আমরা কবে বিয়ে করবো ?

ছেলে : মাশাল্লাহ! বোন, আপনি চমৎকার একটি প্রশ্ন করেছেন।”

তানহা : 😆😆😆…. আল্লাহ! ভাবা যায় এগুলা। এভাবে ধোকা না দিলেও পারতো😁

অর্ণব : হ্যাঁ সমবয়সী রিলেশনশিপ…একটি হৃদয় ভাঙার গল্প😁

তানহা : তাও তো ভালো আন্টি বলে নি শুধু বোনই বলছে😆

অর্ণব : হাহাহা।

তানহা : ভাইয়াটা বোধহয় জাকির নায়েকের লেকচার একটু বেশি শুনে। হাহা।

অর্ণব : হ্যাঁ শেষের লাইনটা😁

হঠাৎ আমার একটা কথা মনে পড়লো….

Send My Letter
Send My Letter

(চলবে….)

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖

carnation e book

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *