গল্প কভার

📖 গল্প পরিচিতি

গল্পের নাম: অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖Part : 29,30,31
লেখকের নাম: নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣
Genre: ইসলামিক জীবনধারা

সকাল পর্ব পড়তে চান?

সকাল পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖Part : 29

✍️ লেখক: নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣

ছাদ থেকে রুমে আসলাম। হঠাৎ বিয়ে তাই সেরকম কিছু সাজানো নাই। তবে রুমের সব কিছু সুন্দরভাবে সাজানো। রুমের আসবাবপত্র আর সেগুলা সাজানোর ধাঁচ জানান দিচ্ছে ইনারা কতটা ধনী। রুমের সাথে বেলকনি। বেলকনিতে তানহা দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকায় আছে। আমি উনার মনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অনিশ্চিত। তাই দরজা লাগিয়ে বিছানার এক সাইডে বসলাম। তানহা বুঝতে পারলো আমি আসছি তাই বেলকনি থেকে রুমে আসলো। আসার সময় দরজাটা লাগিয়ে দিলো।

তানহা : আসসালাম অলাইকুম। কোথায় গেছিলেন? অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।একটু ছাদে গেছিলাম। হঠাৎ সালাম দিলেন যে? (কারণ তুমি এখন আমার স্বামী, বুঝলেন মিস্টার অর্ণব।) তানহা : না এমনি। অর্ণব : বেলকনিতে কি করতেছিলেন? তানহা : চাঁদ দেখতেছিলাম। আপনি ছাদে কি করতেছিলেন? (যাক বাবা আমার বৌটা রোমান্টিক আছে দেখছি) অর্ণব : আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতেছিলাম। জানাইতে তো হবে যে বিয়ে করছি তাই না? তানহা : হাহা। তবে প্লিজ এখন থেকেই স্বামীর অধিকার চাইয়েন না। এটা আমার অনুরোধ! অর্ণব : জি আমি বুঝতে পারছি। আমাদের পরিচয় শুধু কয়েক ঘন্টার আর এভাবে হঠাৎ করে বিয়ে হবে এটা আমিও ভাবতে পারিনি। আপনারও ধাতস্থ হওয়ার জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন। (জি আমি জানতাম তুমি বুঝবা বিষয়টা। এজন্যই তো তোমাকে এতটা ভালো লাগে।) তানহা : ধন্যবাদ মিস্টার অর্ণব আহমেদ… Son of Mr. Rofik Ahmed And Misses Radia Begam😜 অর্ণব : বাবারে বাবাহ! আপনি কাবিন নামায় দেখে মনে রাখছেন! তাও আবার সম্পুর্ণটা? তানহা : জি। অর্ণব : Oh shit! আমি একদম ভুলে গেছিলাম। ঘোরের মধ্যে আপনার নামটা পর্যন্ত দেখিনি। তানহা : 😁😁 অর্ণব : দয়া করে এখন বলেন না প্লিজ। তানহা : না বলবো না। সময় হলে বলবো। অর্ণব : আপনার নাম মনে হয় তাসনিয়া তাই না? আপনার বান্ধবী সেদিন আপনাকেই ডাকতেছিলো। আর বিয়ে পড়ানোর সময়ও এরকমই কিছু একটা শুনছিলাম। তানহা : সময় হলে জানতে পারবেন। অর্ণব : ঠিক আছে আমিও বলবো না যে আমি কি করি। তানহা : হাহাহা। ঠিক আছে কিন্তু তাও বলবো না আমার নাম। আর আপনি কি করেন তা জানার দরকারও নেই।

অর্ণব : হাহা। আচ্ছা আপনি কি এই বিয়েতে খুশি? না মানে মেয়েদের তো বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে। আমাদের বিয়ে তো খুব সাদামাটাভাবে হয়ে গেলো তাই বলতেছি। তানহা : বিয়ের দিন নিয়ে আমার কোন স্বপ্ন ছিলো না। আর প্রচলিত বিয়েতে পর্দার খেলাপ হয় বলে আমি বরং একটু এটা নিয়ে চিন্তায়ই ছিলাম বলতে পারেন। তাই সাদামাটাভাবে বিয়ে করাই আমার ইচ্ছা ছিলো। আর হাদিসে এসেছে, মাসনূন বিবাহ সাদা সিধে ও অনাড়ম্বর হবে, যা অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি মুক্ত হবে এবং তাতে যৌতুকের শর্ত বা সামর্থের অধিক মহরানার শর্ত থাকবেনা। -(তাবারানী আউসাত, হাদিস নং- ৩৬১২)💕 কিন্তু যৌতুক না নেওয়ার জন্য আপনার বাবা কিছু বলবে না? অর্ণব : আমার বাবা এধরণের হারাম কাজ কখনো করার চিন্তাও করবে না। এটা নিয়ে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। কেননা কোন পক্ষ যেওরের শর্ত করা নিষেধ এবং ছেলের পক্ষ থেকে যৌতুক চাওয়া হারাম। -(আহসানুল ফাতাওয়া ৫/১৩)💕 অন্য বর্ণনায় এসেছে, “শর্ত আরোপ করে বর যাত্রীর নামে বরের সাথে অধিক সংখ্যাক লোকজন নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়ীতে মেহমান হয়ে কনের পিতার উপর বোঝা সৃষ্টি করা আজকের সমাজের একটি জঘন্য কু-প্রথা, যা সম্পূর্ন রুপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক।” -(মুসনাদে আহমাদ:২০৭২২, বুখারী: ২৬৯৭)💕 আর আমার আব্বু তো আমাকে বিয়ের জন্য নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন। তাই উনি বরং আরো খুশি হবেন। বুঝলেন?😉 (এই প্রথম আমরা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে কথা বলতেছি। আর তানহার চেহারাও খোলা। তানহা আগে আমার সাথে খুব সংযত হয়ে কথা বলতো। আর এখন সেই ভাবটা নেই বরং নরম ও মধুরতা মিশানো গলায় কথা বলতেছে।) তানহা : হুম বুঝছি। জানেন আমাদের বিয়েটা উত্তম দিনে হয়েছে। কেননা, হাদিসের আছে, “শাউয়াল মাসে এবং জুমুয়ার দিনে মসজিদে বিবাহ সম্পাদন করা। উল্লেখ্য, সকল মাসের যে কোন দিন বিবাহ করা যায়িজ আছে।” -(মুসলিম ১৪২৩, বায়হাকী ১৪৬৯৯)💕 এটা শাওয়াল মাস চলতেছে ও আমাদের বিয়ে রাত দুইটার দিক হয়েছে আর আজকে কিন্তু শুক্রবার। অর্ণব : তাই নাকি? এটা আমি জানতাম না। আমার বউ তো অনেক ট্যালেন্টেড। তানহা : দেখতে হবে না কার বউ😜 অর্ণব : হাহা। জানো বাসের কোন জানি একটা ঘটনার জন্য তোমাকে “ট্যালেন্টেড হ্যান্ডেল” বলছিলাম। তবে মনে করতে পারতেছি না। তানহা : “হ্যান্ডেল” কি? অর্ণব : আমি গালি দেই না বা কাউকে হেনস্থা করিনা। যখন রাগ উঠে তখন সামনের ব্যক্তিকে “হ্যান্ডেল” বলি। মূলত বোকা বুঝানোর জন্য।😁 তানহা : মজা পাইলাম😁 অর্ণব : আচ্ছা তোমার মোবাইলে বিকাশ আছে? তানহা : হুম কেনো? তারপর তানহার মোবাইলে আব্বুর দেওয়া বাকি টাকা আর আমার কাছে যা ছিলো শুধু যাওয়ার খরচটা বাদে পুরোটাই তানহাকে বিকাশ করে দিলাম। অর্ণব : এটা তোমার দেনমোহর। আমার কাছে সম্পুর্ন টাকা এখন নেই। তাই যা আছে তাই দিলাম বাকিটা পরে দিবো। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা নারীগণকে তাদের মোহরানা বা একটা নির্দিষ্ট উপহার দিবে। যদি তারা সন্তুষ্টচিত্তে মোহরানার কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তোমরা তা স্বাচ্ছন্দে ভোগ করবে।” -[সূরা নিসা – ৪]💕 আর মোহরানা আদায় না করা পর্যন্ত পুরুষের জন্য তার স্ত্রী হারাম। হাদিসে এসেছে, “মহানবী (সা:) বলেছেন, যে কোনও ব্যক্তি কোন মহিলাকে কম- বেশী “ মোহরের “ বিনিময়ে বিবাহ করছে, মনে মনে তার হক আদায় দেয়ার নিয়ত রাখেনি, তাকে ধোঁকা দিয়েছে, অতঃপর তার হক আদায় না করেই মারা গিয়েছে, সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন ব্যাভিচারী বা যেনাকারী হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।” -(ত্বাবারানী সঃ তারগীব ১৮০৭ )💕 তবে মেয়েরা অনুমতি দিলে তাকে ষ্পর্শ করা জায়েয আছে। আর মেয়েরা চাইলে দেনমোহর মাফ করে দিতে পারে, কিন্তু এটা ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী কেননা এটা আদায় ফরয। আর আমি যেহেতু কিছুটা আদায় করেছি তাই ভবিষ্যতে দিবো বা এরকম কিছু পারস্পরিক পরামর্শ সাপেক্ষে তুমি অনুমতি দিলে ষ্পর্শ করতে পারবো। বুঝলা?

তানহা : জি আমি জানি। আর দেন মোহর আমার অধিকার। কিন্তু আপনাকে এতো টাকা দেনমোহর কে বলতে বলেছে? হুম? শরিয়ত অনুসারে মোহরের সর্ব নিম্ন পরিমাণ হচ্ছে আড়াই ভরি রুপার দাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা । যা দিছেন দিছেন বাকিটা…. আমি সাথে সাথে তানহার মুখ চাপে ধরলাম। অর্ণব : Oh hello Mam! আর একটা কথাও বলবেন না। আমি পুরোটাই আদায় করবো। হাদিসে আছে, “সামর্থানুযায়ী মোহর ধার্য করা।” -(আবু দাউদ: ২১০৬)💕 আর আমার সামর্থ অনুযায়ী মোহরানা ধার্য করছি। বুঝলেন? তানহা নিজে হাতটা সরায় দিয়ে, তানহা : হাহাহা। নাহ আমার বরের আত্মসম্মান আছে বলতে হবে। ঠিক আছে করিয়েন। যেখানে মোহরানা না আদায় করে ষ্পর্শ পর্যন্ত করা যায় না, সেখানে মানুষ প্রেম কিভাবে করে বুঝিনা। অর্ণব : আল্লাহ হেদায়েত দিক সবাইকে। একটু কাছে আসো। তানহা কোন প্রশ্ন না করে কাছে আসলো। আমি তানহার মাথা থেকে শাড়ির অংশটা সরাইলাম। তারপর কপালের উপরের চুল হাতে নিলাম। তানহা : কি করতেছেন? অর্ণব : দোয়া পড়তেছি। কেননা,

হাদিসে এসেছে, বাসর রাতে স্ত্রীর কপালের উপরের চুল হাতে নিয়ে এই দোয়া পড়া, اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَمِنْ شَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ. উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা খয়রাহা ওয়া খয়রা মা জাবালতুহা আলাইহি ওয়াওযুবিকা মিন শার্রিহা মিন শার্রিমা জাবালতাহা আলাইহি” -(আবু দাউদ: ২১৬০)💕 তারপর তানহা আবার আগের জায়গায় চলে গেলো আর শাড়ি ঠিক করলো। অর্ণব : এই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ো কালকে অনেক কাজ আছে। তানহা : কেনো? অর্ণব : বিয়ের পরবর্তী আক্বদের অনুষ্ঠান তো করা গেলো না। সুন্নতটাও পালন করতে পারলাম না। হাদিসে এসেছে, “বিবাহের খবর ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিবাহ করা এবং বিবাহের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের মাঝে খেজুর বন্টন করা।” -(বুখারী: ৫১৪৭)💕 কিন্তু ওলীমা বা বৌভাতের অনুষ্ঠান তো করতে হবে। কেননা হাদিসে এসেছে, “বাসর রাতের পর স্বীয় আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাংখী এবং গরীব মিসকীনদের তাউফীক অনুযায়ী ওলীমা খাওয়ানোর আয়োজন করা।” -(মুসলিম: ১৪২৭)💕 বুঝলেন? তানহা : ওহ! ভুলেই গেছিলাম। আর শুনেন ওলিমাতে অবশ্যই গরীব মিসকিনদের খাওয়াবেন। কেননা, #হাদিসে এসেছে, “ওলীমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উচু মানের খানার ব্যবস্থা করা জরুরী নয়। বরং সামর্থানুযায়ী খরচ করাই সুন্নত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। যে ওলীমায় শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত দেওয়া হয়, দ্বীনদার ও গরীব গরীব-মিসকিনদের দাওয়াত দেওয়া হয়না, সে ওলীমাকে হাদিসে নিকৃষ্টতম ওলীমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের ওলীমা আয়োজন থেকে বিরত থাকা উচিত।” -(আবু দাউদ: ৩৭৫৪)💕 বুঝলেন? অর্ণব : জি ম্যাডাম। এখন চলেন ঘুমাতে যাই। আপনি অনেক ক্লান্ত, একটা কাজ করি মাঝখানে বালিশ দিয়ে রাখি তাহলে কারো সমস্যা হবে না। যদিও মাঝে বালিশের দরকার ছিলো না। এখন আমার অনেকটাই জড়তা কাটে গেছে। তাও বললাম, তানহা : ধন্যবাদ আমার মনের কথা বুঝার জন্য। (আমি ছাড়া তোমায় কে বুঝবে বলো। আমি তো তোমার সুখ-দুঃখের ভাগিদার হতে চাই।) অর্ণব : হাহা। তারপর আমি মাঝে দুইটা বালিশ দিয়ে দিলাম। তানহা ওপাশে শুলো আমি এপাশে। তানহা : আমি আপনাকে বিশ্বাস করে শুয়ে পড়লাম, কাছে আসলে কিন্তু খারাপ হবে। অর্ণব : কেনো? আমি আমার বউয়ের কাছে যাইতেই পারি! তানহা : এজন্যই পাশে ঘুমাচ্ছি। অন্য কেউ হলে ঘরেও ঢুকতে দিতাম না😊 অর্ণব : হাহা। ঘুমান। চিন্তা করিয়েন না। লাইটা অফ করলে সমস্যা আছে? (জানি আপনি কিছু করবেন না।) তানহা : না, অফ করে দেন আমারো লাইট থাকলে ঘুম আসে না। লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম। অনেক্ষণ পার হয়ে গেলো কিন্তু আমার ঘুম আসতেছে না। তানহা মনে হয় ঘুমাচ্ছে। তাই ফেসবুকে ঢুকলাম। কিছুক্ষণ পর, তানহা : ঘুমাবেন না? অর্ণব : আমার ঘুম আসতেছে না। আপনি ঘুমান নি? তানহা : আমারও ঘুম আসতেছে না। অর্ণব : চলেন বেলকনিতে যায়ে গল্প করি। তানহা : চলেন। তারপর আমরা দুজনে বেলকনিতে গেলাম। বেলকনিতে টবে করে নানা ধরনের গাছ সুন্দরভাবে সাজানো আছে। গ্রিলের ভিতর দিয়ে চাঁদটা খুব সুন্দর লাগতেছে। আমরা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি। হালকা বাতাস হচ্ছিলো। তানহা চুল খোলা রাখছে। এই প্রথম আমি তানহার চুল দেখলাম। মেয়েদের চুল এতো সুন্দর হয় জানতাম না। চুল খোলা রাখা অবস্থায় তানহাকে আরো বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। আর শাড়িতে তো তানহাকে দারুণ লাগতেছে। এক জায়গায় পড়ছিলাম যে, শাড়ি আর নারী নাকি Awesome combination… আজকে স্বচক্ষে দেখতেছি। চুল ছেড়ে দেওয়া আর সাথে শাড়ি, তানহাকে যে কত সুন্দর লাগতেছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। হালকা বাতাসে চুলগুলা উড়তেছিলো আর তানহার গালে আসে পড়তেছিলো। আমার মনে হচ্ছে সামনে এক অপ্সরা দাঁড়িয়ে আছে। আমি এক দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকিয়ে আছি। তানহার কথায় আমার ঘোর ভাঙ্গলো, তানহা : কি দেখতেছেন? অর্ণব : প্রথম কোন মেয়ের দিকে নজর দিলাম আর প্রথম কারো উপর ক্রাশ খাইলাম। তাকেই দেখতেছিলাম। তানহা : ক্রাশ খাওয়া হারাম😜 অর্ণব : কিন্তু আমারটা হালাল😜 এভাবেই আমরা গল্প-গুজবের মাধ্যমে সারা রাত কাটায় দিলাম। সকালে খাওয়া দাওয়া করে চাচার পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা বাস স্ট্যান্ড এর জন্য রওনা হলাম। খুব ইচ্ছা করতেছিলো ওর হাতটা ধরে হাঁটতে কিন্তু এখন দিনের বেলা। তাই চেষ্টাও করিনি। অর্ণব : আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো। তানহা : হাহা আমারো। অর্ণব : আজকে আব্বু-আম্মু অবাক হয়ে যাবে। ওদের জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করতেছে। তানহা : জি না আজকে না। অর্ণব : আজকে না মানে? তানহা : এখন আমি রাজশাহী যাবো আর আপনি দিনাজপুর যাবেন। অর্ণব : হাহ? আজকে আমাদের “বউভাত”। আর বউভাতের দাওয়াতে বউই গায়েব। এটা কেমন কথা। শুধু ভাতের দাওয়াত দিবো? তানহা : হাহাহা। বউভাতে আমাকে উপস্থিত থাকতে হবে এরকম কথা নাই। আপনি করে নিয়েন। অর্ণব : তাহলে নাম্বারটা দেন। তানহা : একদম না। দুই মাস পর দিনাজপুরে আবার পরিক্ষা দিতে আসবো তখন আপনার সাথে দেখা হবে। আর এই নাম্বারটা বন্ধ রাখবো। কারণ আপনার বন্ধুর কাছে নাম্বার থাকতেও পারে। (আমি চাই না আমার নিজস্ব একটা পরিচয় না হওয়া পর্যন্ত তোমার বাড়িতে যাইতে। জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে, আমারো হচ্ছে কিন্তু এটা আমাকে করতেই হবে। কেননা তোমার পরিবারকে তো আমি চিনিনা। কোন কিছু হয়ে গেলে আমার একটা অবলম্বন দরকার। সেই অবলম্বনটা তৈরী করার পারমিশন তোমার পরিবার আমাকে না দিতেও পারে। তাই আমি বাধ্য!) অর্ণব : আপনার দেখছি বুদ্ধি আছে। আচ্ছা ঠিক আছে। (আসলে রাজশাহীতে উনি বড় হয়েছেন। এতিম হলেও অনেক আপনজন এতোদিনে তৈরী হয়ে গেছে। তাদের থেকে বিদায় নেওয়া প্রয়োজন। আর বিষয়টা এতটা সোজা না। এতদিনের সম্পর্ককে রাখে নতুন শহরে নতুনভাবে সব কিছু তৈরী করা এটা একটা কঠিন কাজ। দুই মাস সময় তাই দেওয়াই যায়। ততদিনে তানহাও অনেকটা ধাতস্থ হবে আর এর মধ্যে সবকিছুর জন্য নিজেকে তৈরীও করবে। তাই মানা করলাম না।) তানহা : ধন্যবাদ পারমিশন দেওয়ার জন্য। ইনশাল্লাহ দুই মাস পর দেখা হবে। [এজন্যই আমি দুই মাস অপেক্ষা করতেছিলাম]

তারপর তানহাকে রাজশাহীর বাসে উঠায় দিয়ে আমি বাসে দিনাজপুর আসলাম। এভাবে আমার আর তানহার বিয়ে হয়েছিলো এবং তানহা আর আমি আলাদা হয়ে গেছিলাম। এখন বর্তমানে, অর্ণব : এই ছিলো ঘটনা। বুঝলি। ওরা সবাই অবাক হয়ে তাকায় আছে।

Part : 30

মশিউর : তুই তো পুরা গল্পের মতো ঘটনা ঘটায় আসছিস। এই জন্যই তুই আসার দিন অনুষ্ঠান দিছিলি। আমরা জানতে চাইছিলাম কিসের অনুষ্ঠান কিন্তু তুই বলিস নি। এবার বুঝলাম।

অর্ণব : হুম।

নেহা : আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারতেছিনা তুই বিয়ে করছিস। তারপর থেকে ভাবীর সাথে আর দেখা হয় নি?

অর্ণব : হুম দেখা হইছে।

সবাই একসাথে : কোথায়?

অর্ণব : সময় হলে তোরা জানতে পারবি। এখন একটু আমাদের মধ্যে সমস্যা চলতেছে। এগুলার পার্ট চুকে গেলেই সব কিছু জানতে পারবি।

একলাস : ওকে আমার খিদা লাগছে চল বাড়ি যাই।

অনেকগুলা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তারপর সবাইকে বিদায় জানায়ে আমরা নিজেদের বাড়ির দিকে রওনা হলাম। রিপন, আমি আর মশিউর আমাদের বাসার দিকে রওনা হলাম।

বাসার ভিতর প্রবেশ করতেই দেখি,আব্বু খবরের কাগজ পরছে।
আমায় দেখেই আব্বু বলল

রফিক সাহেব :- আসসালাম অলাইকুম। কয়দিন গেল মনে আছে কি?

অর্ণব :- অলাইকুম আসসালাম। কিসের কয়দিন গেল?

রফিক সাহেব:-আমার বৌমা কে কবে আনবি।

অর্ণব :- ওহ্ মনে আছে। আর ১৫ দিন তো সময় নিছি। আনবো ইনশাল্লাহ।

রফিক সাহেব:- দুই দিন কিন্তু চলে গেল। আর তুই কথা দিছিস। কথার খেলাপ যেনো না হয় এটা মনে রাখিস। কেননা

পবিত্র কুরআনে আছে,

মহান আল্লাহ্‌ বলেন, আর (তোমরা) অংগীকার পূর্ণ করো; কেননা অংগীকার সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
-( বনী ইসরাঈলঃ ৩৪)💕

অন্য এক আয়াতে আছে

আল্লাহ বলেন,

হে ঈমানদারগণ! তোমরা এমন কথা কেন বলো, যা তোমরা কার্যত পালন করো না।
-(সূরা সফঃ ২-৩)💕

অর্ণব :- হ্যাঁ আব্বু জানি। ইনশাল্লাহ ঠিক সময়ে তোমারাদের বৌমা কে পাবে।

আম্মুকে ডাক দিয়ে বললাম খেতে দিতে, অনেক ক্ষুদা লেগেছে বলেই রুমে গিয়ে ফেসবুকে ঢুকলাম। ঢুকেই দেখি “গুনাহগার বান্দী” থেকে তানহা আমার পেজে চারটা মেসেজ দিয়েছে।

মনে মনে ভাবলাম এতো দেখি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। তবে তানহার মেসেজগুলা দেখেই রাগ উঠে গেল,এসব মেসেজ মানুষ লেখে। মেসেজ গুলা ছিল,

তানহা :-এইযে লেখক সাহেব গল্প লেখেন বলে অনেক ভাব নাকি?
এত অহংকার কিসের আপনার?
*কি হলো কথা বলেন.?

(মোটেই না। তোমার জন্যে আমি সম্পুর্ণ ফ্রি। কারণ তুমি যে আমার লক্ষি বউ।)
বললাম,
অর্ণব : একটু ব্যস্ত ছিলাম। জ্বি বলুন।

তানহা :-বলুন মানে কত গুলা মেসেজ দিছি দেখেন নি।
(আমার মনে হয় এটা অর্ণবেরই আইডি)

অর্ণব :- হুম দেখেছি তো??

তানহা :- আচ্ছা বাদদেন এসব,তা লেখক সাহেব আপনাকে একটা কথা বলি?

অর্ণন :-হুম বলেন।

তানহা :- আপনি কিন্তু অনেক সুন্দর গল্প লেখেন। তবে আমার মনে হয় আপনি কাউকে খুব ভালোবাসেন। যা গল্পের পড়লে বুঝা যায়। আসলেই কি তাই?

(জি ম্যাম। আপনি ঠিক ধরছেন আর সেটা আর কেউ নয় স্বয়ং আপনি)
অর্ণব :- জি আমার জীবনেও এরকম একজন আছে।

কথা বলতে বলতে সব কিছু জেনে নিলাম কোথায় আছে কি করে , তার জীবনের লক্ষ্য কি, সব। যদিও কিছু কিছু বিষয় আগে থেকেই জানি। তাও জেনে নিলাম। এটাও জানলাম যে সে কালকে দিনাজপুর সরকারি কলেজে পরিক্ষা দিতে যাবে এবং দোয়া করতেও বলল আমাকে।

আমি বললাম,
অর্ণব :- সমস্যা নাই, আপনি ওই কলেজে চাকরি পাবেন ইনশাল্লাহ।

তানহা :- মানে বুঝলাম না,আপনি এতো কনফার্ম ভাবে বলছেন কিভাবে?
(আস্তে আস্তে সন্দেহ আরো গভীর হচ্ছে)

অর্ণব :- না এমনি আমার মন বললো।

তানহা :- ও আচ্ছা দোয়া করবেন।

(তোমার জন্যে শুধু দোয়া নয় সব করবো মিসেস তানহা)
অর্ণব : ফি আমানিল্লাহ!

তানহা :- আসসালাম অলাইকুম কাল আবার সকালে উঠে একটু পড়তে হবে।

অর্ণব :- ওকে অলাইকুম আসসালাম।

তানহার সাথে কথা বলে অনেক ভালো লাগলো,কিন্তু আব্বু তো বলেছে ১৫ দিনের ভিতর তাদের ঘরে বউমা আনতে হবে।কিভাবে তানহাকে রাজি করবো এটাই বুঝতেছি না। তানহাও এগুলা কি শুরু করছে বুঝতে পারতেছিনা।

যাই হোক রাতের খাবার খেয়ে আর এশার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে উঠে ড্রয়ারের চাবি নিয়ে আব্বুর অফিসে চলে গেলাম। যায়ে আংকেলের সাথে কথা বললাম। উনি আমাদের বিশ্বস্ত কর্মচারী। ব্যবসার যাবতীয় হিসাব-নিকাশ উনি রাখেন।
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম আংকেল।

আংকেল : অলাইকুম আসসালাম বেটা। এত সকালে আসলা যে? আজকে কি তুমিই সব কিছু দেখাশুনা করবা? তোমার আব্বু আসবে না?

অর্ণব : না আংকেল। আপনি যেটা ভাবতেছেন সেরকম কিছুই না। আমি একটা কাজে আসছি।

আংকেল : ওহ। আগে তো তুমিই ব্যবসাটা দেখাশুনা করতা। তখন এত সকাল সকাল চলে আসতা। তাই মনে করলাম আবার তুমি বোধহয় ব্যবসার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিছো।

অর্ণব : ইনশাল্লাহ একদিন আবার নিবো। তবে আজকে একটা জরুরি কাজে আসছি।

আংকেল : কি কাজ?

অর্ণব : ড্রয়ারে কি দুই লাখ টাকা ক্যাশ হবে? সকালবেলা না থাকতেও পারে তাই জিজ্ঞাসা করতেছি।

আংকেল : থাকার তো কথা। বাকিটা তোমার আব্বু জানে।

অর্ণব : ধন্যবাদ আংকেল।

আংকেল : তুমি কি টাকাটা নিবা? তোমার আব্বুকে কি বলবো? ওগুলা তো ব্যবসার টাকা।

অর্ণব : হুম। ঐটা আমি আব্বুকে বলে দিবো। আসসালাম অলাইকুম।

আংকেল : অলাইকুম আসসালাম।

ভাগ্য ভালো ক্যাশে টাকা ছিলো। সেখান থেকে টাকা নিয়ে ভালো মতো লক করে বেড় হয়ে আসলাম। তারপর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছে ও বিভিন্নভাবে কোনমতে ধারদেনা করে আরো এক লাখ টাকা জোগাড় করলাম। আমার কাছে জমানো ছিলো দুই লাখ টাকা।

[কিভাবে জমানো? এটা রহস্যই থাক]

আমি জানি তানহা অনেক ভালো ছাত্রী। বাসের ভিতর কথা বলা দেখেই বুঝতে পারছি। কিন্তু টাকার অভাবে তানহার এই চাকরি টা হবেনা। আর এতিমদের সাহায্য করলে আল্লাহ খুশি হন।

হাদিসে এসেছে,

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,
আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব (তিনি তর্জনী ও মধ্য অঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করেন। এবং এ দুটির মধ্যে তিনি সামান্য ফাঁক করেন)।”
-(বুখারি, হাদিস : ৫৩০৪)💕

তার উপর তানহা তো আমার নিজের বউ। ওর স্বপ্ন পূরণ করা আমার দায়িত্ব। আর তানহা যে শুরু করছে, তাতে ভয় হচ্ছে যে চাকরি না পেলে তানহা আবার রাজশাহী চলে যেতে পারে। তাই তানহার জন্যই টাকাগুলা জোগাড় করা।

টাকা নিয়ে সোজা কলেজের হেড স্যারের কাছে গেলাম এবং সব ঘটনা বলে আর বুঝিয়ে তানহার নামে টাকা জমা দিলাম। এটাও বললাম দয়া করে যেনো তানহাকে কিছু না বলে। আর তানহা যে আমার স্ত্রী এটা আমার বাবাকেও জানাতে মানা করলাম। আমি সময় হলেই সবাইকে জানাবো।

হেড স্যার :- ওকে। আচ্ছা অর্ণব একটা কথা বলি।

অর্ণব :-হুম স্যার বলুন?

হেড স্যার :- তুমি কলেজে কেনো ভর্তি হইলা এটা বুঝলাম না।

স্যারকে কারণটা বললাম।

স্যার : অনেক ভালো কাজ করতেছো।

[রহস্যটা তাড়াতাড়িই খুলবো😁]

অর্ণব : স্যার আর একটা রিকোয়েস্ট রাখতাম।

স্যার : বলো তোমার কি সাহায্য করতে পারি।

অর্ণব : তানহা খুব কঠোরভাবে পর্দা করে তাই পর্দাটাতে তানহাকে যেনো ছাড় দেওয়া হয়। প্লিজ।

স্যার : বিষয়টাতে একটু সমস্যা হতে পারে। কিন্তু তোমাকে কথা দিলাম যে তানহা ওর মতো পর্দা করে আসতে পারবে। আমি কথা বলবো এটা নিয়ে। তোমার বাবা সাহায্য করলেই আর লাগবে না।

অর্ণব :- আব্বু ইনশাল্লাহ করবে। এটা আমার বিশ্বাস আছে। আসসালাম অলাইকুম স্যার। আজ তাহলে উঠি।

স্যার : অলাইকুম আসসালাম।

তারপর কলেজ থেকে বেড় হয়ে বাসায় আসলাম।

বাসায় এসে খাবার খেয়ে একটু ঘুমিয়ে পড়লাম। সন্ধ্যায় উঠে আম্মুকে বললাম,
: আম্মু আমি নাজিমকে আনতে গেলাম।

রাদিয়া বেগম:- নাজিমতো আজ পড়তে যায়নি।

(ধুর আর তানহার বাসায় যাওয়া হলোনা, এখন কি করি? নাজিমটার উপর রাগ উঠতেছে।)

রাদিয়া বেগম:- কিরে অর্ণব কি হলো? কি ভাবতেছিস।

অর্ণব :- কোই আম্মু কিছুনা তো,ওর না সামনে পরিক্ষা এইভাবে চললে কিভাবে ভালো ফলাফল পাবে।

রাদিয়া বেগম:- তোরও তো সামনে পরিক্ষা, তুই কেন পড়িস না?

এইরে আমার তীর ঘুরে আমারই দিকে আসতেছে।
অর্ণব : না মানে আম্মু ওর তো পরিক্ষা আরো কাছে তাই ওকে ভালো মতো পড়তে হবে।

রাদিয়া বেগম :- ওয় তাও পড়ে। তুই কলেজে কেন ভর্তি হইলি এইটাই আমার মাথায় ঢুকে না। পড়াশুনাও তো করিস না। একটা বিয়ে করে ব্যবসার দায়িত্বও নিস না।

এই সময় নেগলা কল দিছে। আল্লাহ বাঁচাইছে। খুব তারাতারি আম্মুর সামনে থেকে কেটে পড়লাম।

কলটা ধরে,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম। কি জন্য কল দিলি?

নেগলা : অলাইকুম আসসালাম। আমার সামনের মাসে বিয়ে ঠিক হয়েছে।

অর্ণব : আলহামদুলিল্লাহ! ছেলেটার ব্যাপারে যা শুনছি তা থেকে বুঝছি ছেলেটা দ্বীনদার। তোর ভাগ্যটা আসলেই খুব ভালো। কেননা মুসলিম বিজ্ঞ পন্ডিত বেলাল বলেছেন,

“এমন কাউকে বিয়ে করুন,
যে আপনাকে উৎসাহিত করবে,
আপনার ঈমান বর্ধিত করবে
এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ,
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে
সাহায্য করবে।”
—ড. বিলাল ফিলিপ্স💕

যা ছেলেটার মধ্যে তুই পাবি।

নেগলা : তুই আমার অনেক সাহায্য করছিস। তোকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো।

অর্ণব : ধন্যবাদ দিতে হবে না। শুন

হাদিসে আছে,

হযরত উছামা (রা) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,
তোমার প্রতি যদি কেউ কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তখন যদি তুমি তাকে ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ – ﺟَﺰَﺍﻙَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺧَﻴﺮً (আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন) বলো তাহলেই তুমি তার যথাযোগ্য প্রশংসা করলে।
-[তিরমিযী ২০৩৫, ইবনে হিববান ৩৪১৩]💕

অন্য এক

হাদিসে এসেছে,

“আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) বলেন,
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি তোমাদের সাথে কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তাহলে তোমরাও তার সাথে কৃতজ্ঞতার আচরণ কর। (তাকে কিছু হাদিয়া দাও) যদি কিছু দিতে না পার অন্তত তার জন্য দু’আ কর। যাতে সে বুঝতে পারে যে, তুমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।”
-[বুখারী ২১৬]💕

নেগলা : জাযাকাল্লাহু খইরন।

অর্ণব : তবে পুরুষদেরকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য বলা “জাযাকাল্লাহু খায়রান” ( ﺟَﺰَﺍﻙَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺧَﻴﺮً ) এবং মহিলাদের ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য বলা “জাযাকি-আল্লাহুখায়রান” ( ﺟَﺰَﺍﻙِ ﺍﻟﻠﻪُ ﺧَﻴﺮًﺍ )।

কিন্তু অনেকে শুধু বলে “জাযাকাল্লাহ” অথবা শুধু “জাযাক” – এগুলো ব্যবহার সিদ্ধ নয় এবং অর্থের দিক থেকেও অপরিপূর্ণ।

নেগলা : হুম বুঝছি। এর মাধ্যমে শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ নয়, উপকারীর জন্য কল্যাণের প্রার্থনাও আছে। আর সবচেয়ে গুরু বিষয় হল এটি নবীজি (সা) এর সুন্নাত। অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় তুই আজকে বললি।

অর্ণব : হুম। আর

হাদিসে আছে,

যখন উছাইদ ইবনে হাদাইর (রা), রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, জাযাকাল্লাহু খায়রান!” তখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম বলেন, “ওয়া আনতুম ফা-জাযাকুমু-আল্লাহু খায়রান”

(ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻓَﺠَﺰَﺍﻛُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺧَﻴْﺮًﺍ)

(অর্থঃ তোমাকেও আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন)
-[শাইখ আলবানী আল-ছহীহার ৩০৯৬ নং হাদিছে একে ছহীহ বলেছেন, আল-তা’লিকাতুল হিসান আল ছহীহ ইবনে হিব্বান ৬২৩১]💕

সহিহ হাদিসে এমন কোনো প্রমাণ নেই যেখানে রাসূলুল্লাহ (সা)

“ওয়া ইয়াকুম (ﻭﺇﻳﺎﻛﻢ)”

অর্থঃ তোমার প্রতিও দয়া হোক।

বলে জবাব দিয়েছেন। কাজেই সঠিক সুন্নাহর অনুসরণ করাই উত্তম—যার জবাব হলো,

“ওয়া আনতুম ফা-জাযাকুমু-আল্লাহু খাইরান (ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻓَﺠَﺰَﺍﻛُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺧَﻴْﺮًﺍ)”

নেগলা : দেখ, কত সুন্দর শিক্ষা আমাদের ছিল। কিন্তু আমরা শুধু অবহেলা করেছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমাদের পূর্ব-পুরুষরাও শেখাইনি আমরাও শিখিনি, বরং শিখতে চাইও নি!

অর্ণব : হুম। ঠিক বলছিস।

নেগলা : ঠিক আছে এখন রাখি, সবাইকে বিয়ের খবরটা জানাইতে হবে। আসসালাম অলাইকুম।

অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।

ফোনটা কাটলাম আর সাথে সাথে আব্বু আমাকে ডাকলো। আমি আব্বুর কাছে গেলে,
রফিক সাহেব : তুই বেলে দুই লাখ টাকা ক্যাশ নিছিস। এত টাকা কি করলি?

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖

Part : 31

রফিক সাহেব : তুই বেলে দুই লাখ টাকা ক্যাশ নিছিস। এত টাকা কি করলি?

অর্ণব : হুম নিছি।

রফিক সাহেব : এত টাকা নিয়েছ কেন? আর আমাকে না বলে নিয়েছো কেনো?

অর্ণব : ঐ যে বউ…

রফিক সাহেব : ঐ যে বউ মানে?

অর্ণব : তোমার বউমার জন্য নিয়েছি। এখন বউয়ের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করিও না। সময় হলেই সব জানতে পারবা। আর টাকাটা আমি কাজেই লাগাইছি। এতটুকু ভরসা রাখতে পারো।

রফিক সাহেব : তাই বলে এত টাকা?

অর্ণব : একবারের মতো নিয়েছি। আর লাগবে না।

রফিক সাহেব : তো বাবা টাকাটা এখন কোথায় আছে?

অর্ণব : খরচ করা শেষ🤐

রফিক সাহেব : এত টাকা সকালে নিলি আর সন্ধ্যায় শেষ হয়ে গেলো?

অর্ণব : কি জন্য খরচ করেছি আর কোথায় খরচ করেছি সব জানতে পারবা। শুধু একটু সময় দাও।

রফিক সাহেব : ঠিক আছে টাকা যা যাবার গেছে কিন্তু আমার বৌমা কোথায়?

(কি আর বলবো তোমাদের বৌমা তো স্বীকারই করতেছেনা যে আমি তার স্বামী। বাড়িতে আসার কথা তো দূরে থাক)

এমন সময় আম্মু আসলো৷ আম্মু ঘটনা শুনে,
মিস রাদিয়া : এত টাকা কি করছিস বল?

অর্ণব : সত্যি আম্মু টাকা গুলা তোমাদের বৌমা আনার জন্য খরচ করেছি। বিশ্বাস করো।

খুশি হয়ে,
মিস রাদিয়া : তুই পারলে আরো খরচ কর। কিন্তু বউ যেনো বাড়িতে আসে। নইলে তোর খবর আছে।

অর্ণব : আর তেরো দিনের মধ্যে আনবো চিন্তা করিও না।

বলেই রুমের দিকে হাটা দিলাম, কারণ এখানে থাকলে আরো কত প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তা কে জানে।

রুমে গিয়ে ডাটা অন করলাম। উদ্দেশ্য, বউটা আমার পেজে মেসেজ দিয়েছে কি না দেখার জন্য। ডাটা অন করতেই দেখি বেশ কয়েকটা মেসেজ এসেছে আমার ফেসবুক পেজটাতে! তার ভিতর “গুনাহগার বান্দী” আইডি থেকে তানহাও মেসেজ দিয়েছে।

তানহা :- কি ব্যাপার আজকে গল্প দেননি যে। আমি আপনার গল্পের জন্য বসে আছি।

অর্ণব :- না আজকে দিতে পারিনি।

তানহা:-কেন?

অর্ণব :-আসলে ব্যস্ততার কারণে লিখতে পারিনি।

তানহা :- আপনি এতো ব্যস্ত থাকেন কেনো?

অর্ণব :-আরে তেমন কিছু না,এটা বলেন যে আপনার চাকরির কি হলো?

তানহা:- পরিক্ষা তো দিয়ে এসেছি,মনে হয় পরিক্ষায় টিকবো কিন্তু??

অর্ণব :- কিন্তু কি?

তানহা :- আমার মন বলছে চাকরি টা হবেনা,কারণ এতো বড় একটা কলেজের চাকরি এমনি এমনি দিবে মনে হয় না, টাকার ব্যাপার তো থাকবেই।

অর্ণব :- ঐটার চিন্তা করিয়েন না।

তানহা :- মানে? বুঝতে পারলাম না?
(আমাকে এটা অর্ণবই মনে হচ্ছে। এজন্যই আমাকে চিন্তা করতে মানা করতেছে।)

অর্ণব :-মানে হলো আপনার চাকরি এমনিতেই হবে,আর সেটা খুব তারাতারি।

তানহা :- তাই নাকি আমার মন তো বলছে হবেনা।
(যদি চাকরিটা হয়ে যায় তাহলে আমি সম্পুর্নভাবে নিশ্চিত হয়ে যাবো এটা অর্ণব)

অর্ণব :- দেখে নিয়েন আমার কথাই সত্যি হবে।

তানহা :- আমার চাকরী টা হলে আপনার সাথে দেখা করবো.??
(এটা অর্ণব হলে কথা ঘুরিয়ে বলবে দেখা করবে না। দেখা যাক কি করে।)

অর্ণব :-মানে বুঝলাম না।

তানহা :- মানে হলো আপনার বাসা তো দিনাজপুর, আমিও দিনাজপুরে থাকি তাই ভাবছি আপনার সাথে দেখা করবো।

(আমার সাথে দেখা করলেই তো বুঝতে পারবে যে,আমি ওর স্বামী। একদম দেখা করা যাবে না)
তারপর বললাম
: আমার সাথে দেখা করে কি করবেন?

(মিস্টার অর্ণব! আমার সাথে চালবাজি করতেছেন? আমি এখন নিশ্চিত এটা অর্ণব।)
তানহা :-না এমনি।আপনি এতো ভালো গল্প লেখেন, দেখা হলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম😜

অর্ণব :-একদিন আপনাকে আবাক করে দিব আপনার সামনে গিয়ে।

তানহা :- তাই নাকি।
(জি না মিস্টার। আমি এতটাও বোকা না যে এটা আপনি আর আমি বুঝতে পারবো না। এই কথা দিয়ে তো আপনি আরো নিশ্চিত করে দিলেন। কে অবাক হয় এটা সময়ই বলে দিবে😁)

অর্ণব :-হুম,ওকে এখন একটু কাজ আছে। আসসালাম অলাইকুম।

তানহা :- অলাইকুম আসসালাম।

পরের দিন সকালবেলা,
নাস্তা করে কলেজে গেলাম। দুই – তিনটা ক্লাস করার আর তানহার খবরটা নেওয়ার জন্য।
কলেজে গিয়েই দেখি নেহা আর নেগলা বসে আছে,সোজা ওদের কাছে গেলাম।

নেহা:- আসসালাম অলাইকুম বিবাহিতা অর্ণব সাহেব।

অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম সিংগেল মিস নেহা।

নেহা:- হাহাহা আমার কেউ একজন আছে।

অর্ণব :- ও তাই নাকি।নামটা একটু বলেন শুনি?
(যদিও আমরা জানি রিপন। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যেও বিষয়টা গোপন রাখছে এমনকি পরষ্পরকেও জানায় নি এবং তারা কঠোরভাবে সংযত আচরণ করে।)

নেহা:- জি না বলবো না। কেননা,

হাদিসে এসেছে,

“যে ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসে, তা লুকিয়ে রাখে, নিজেকে পবিত্র রাখে এবং এই অবস্থায় মারা যায় সে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে।”
-[কানজুল উম্মাল : ৩০/৭৪]💕

বুঝলি?

অর্ণব : হুম। আল্লাহ যেনো তোর সব নেক ইচ্ছা পূরণ করে। কি রে নেগলা চুপ করে আছিস কেনো?

নেগলা : ভাবতেছি!

অর্ণব : কি ভাবতেছিস?

নেগলা:- আর বলিস না, শুনলাম কাল থেকে নাকি নতুন ইংলিশ টিচার জয়েন্ট হবে।

(যাক তাহলে তানহার চাকরিটা হয়ে গেছে। মেয়ে পরিক্ষার্থী সম্ভবত শুধু তানহাই ছিলো তাই একটু বেশি নিশ্চিত হলাম। আল্লাহকে হাজার হাজার শুকরিয়া।)
অর্ণব :- কি? আর কি জানিস?

নেগলা:- শুনেছি নতুন ইংলিশ টিচার নাকি অনেক পর্দাশীল আর অনেক রাগী।

অর্ণব :-রাগী হয়েছে তো কি মনটা অনেক ভালো।
(এই যা! বউয়ের ব্যাপারে খারাপ কথা শুনতে না পারে একটা ভুল করে বসলাম। ধুর!)

নেগলা:- তাই….

(কথা শেষ করতে না দিয়ে)
নেহা:- দারা দারা তুই কেমন করে জানলি যে নতুন টিচারের মনটা অনেক ভালো?

(এই দেখ নেহা ঠিক ধরতে পারছে।)

নেগলা:- আসলেই তো। তুই কেমন করে জানলি যে নতুন ইংলিশ টিচারের মন অনেক ভালো?

অর্ণব :-আরে পর্দাশীল তো তাই মনে হইলো আরকি! তোরা এটা নিয়ে এমন করতেছিস কেনো?

নেগলা:- ওকে বাদদে চল এখন ক্লাসে যাই।

নেহা : আমার কিন্তু এখনো খটকা লাগতেছে। কারণ কাহিনীটাতে মেয়েটা মানে ভাবি কিসের জানি পরিক্ষার কথা বলছিলো।

(আসলে গল্পের কিছু কিছু কথা এদের বলিনি। যেমন তানহা এই কলেজের জন্যই পরিক্ষা দিতে আসতেছিলো)

অর্ণব : আরে বাদ দে তো। বললাম না মনে হইলো তাই।

নেহা চুপ হয়ে গেলো আর আমরা ক্লাশের উদ্দেশ্যে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে বাকিরাও চলে আসলো।

কলেজ শেষ করে সোজা বাসায় এসে নামাজ পড়ে খাওয়া-দাওয়া করলাম। তারপর সোজা ঘুম দিলাম। কারণ রাতে আবার তানহার কাছে যেতে হবে ভাইকে আনতে। যদিও ভাইকে আনতে যাওয়া মূল বিষয় না। মূল বিষয় হলো তানহার সাথে দেখা করতে যাওয়া।

সন্ধ্যার পরে সোজা ভাইকে আনার নাম করে তানহার সাথে দেখা করতে গেলাম। গিয়ে দেখি তানহা নাজিমকে পড়াচ্ছে।

বললাম,
অর্ণব :- নাজিম পড়া শেষ হয়নি?

নাজিম:- না ভাইয়া তুই একটু দাঁড়া আমি আর তিনটা অংক শেষ করেই যাচ্ছি।

অর্ণব :-ইংরেজীর মাস্টারনি অঙ্ক করাবে কিভাবে? তুই বাসায় গিয়ে আমার থেকে করে নিস।

তানহা :- কি বললেন আপনি??

অর্ণব :- কোই কিছুনাতো।

তানহা :- নিজে তো কিছুই পারেনা খালি মুখে পটর পটর।

অর্ণব :- কি বললা তুমি?

তানহা :- এই😡😡

তানহা ইশারা দিয়ে বুঝায় দিলো ছোট ভাই আছে তাই আমি যেনো “তুমি” না বলি।

আমি মুচকি হেসে উঠলাম, তারপর সোজা তানহার রুমের দিকে যেতে ধরলাম।

তানহা :- কোথায় যাচ্ছেন?

অর্ণব : আপনার রুমে।

নাজিম:- মেডাম আপনি কি আমায় ভাইকে আগে থেকে চেনেন? ভাইয়া আপনাকে তুমি করে বলল যে।

আমি কথাটা শুনে হাসতে হাসতে তানহার রুমের ভিতর ঢুকে পড়লাম। আমার ছোট ভাইটার বুদ্ধি আছে বলতে হবে। সঠিক যায়গায় সঠিক প্রশ্ন করছে।

তানহা :- বড়দের সব কথা শুনতে নেই, চুপ থাকো,আর তুমি এখানে এই অঙ্কটা করো আমি ভিতর থেকে একটু আসছি।

নাজিম:- দেখিয়েন মেডাম বেশিক্ষণ থাকিয়েন না যেনো। নাহলে পড়ে যেতে পারেন।

(আল্লাহ! এগুলা এ কি বলে? আমাকে প্রেমে পড়ার কথা বলতেছে। পিচ্চি শয়তান একটা।)
তানহা :- মানে কিসে পড়ে যাবো?

নাজিম:- আমি বলতে পারবো না, ভাইয়া রুমে আছে। ওইখানে গেলে পড়লেও পড়তে পারেন।

মনে মনে,
তানহা : কি বিচ্ছুরে বাবা। প্রেমে পড়ার কথা বলছে তাও আবার ইশারায়। দুই ভাই একি রকম। লজ্জাশরম কিছু নাই৷ আমি মেডাম হই আর আমার সাথেই এগুলা। কিন্তু বাছাধন তুমি তো জানো না তোমার ভাইয়ের প্রেমে আমি অনেক আগেই পড়ে গেছি। বললাম,

তানহা : অঙ্কটা না পারলে ভালো ভাবে টাইট দিবো। ওইদিকে মনোযোগ দাও। নইলে থাপ্পর খাবা।

এই বলে হাটা দিলাম।

আমি খাটের উপর বসতেই দেখি আমার বউটা নিজের ফোন বালিশের উপর রেখে গিয়েছে। নতুন মোবাইল তাও আবার এন্ড্রয়েড। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি, ওমা! কোন লক দিয়ে রাখে নি। সাথে সাথে তানহার মোবাইলটা থেকে ওর নাম্বারটা আমার ফোনে সেভ করে নিলাম। মনে হলো কেউ আসছে, পেছনে তাকিয়ে দেখি তানহা আসতেছে সাথে সাথে তানহার মোবাইলটা বালিসের নিচে রাখলাম।

তানহা :- আপনি কি বললেন?

অর্ণব :- কই কিছু বলিনি তো?

তানহা :- বাইরে তুমি করে বললেন কেন?

অর্ণব :- কখন কি বলছি?

তানহা :-আবার একই প্রশ্ন কেন?😡 তুমি করে বললেন কেন?😡

অর্ণব :- বউ কে তো তুমি করেই বলবো তাইনা।

তানহা :- কে বলছে আমি আপনার বউ?

অর্ণব :-কেউ না বললেও আমি তো মানি।

তানহা :- মানতে কে বলছে?

অর্ণব :- কেউ না আর এটা নিয়ে আমি তর্ক করতে চাচ্ছি না।

তানহা : আমিও চাচ্ছি না। এখন যান।

অর্ণব :-যাচ্ছি তার আগে বলো তোমার চাকরির হলো কি না?

তানহা :- আপনাকে বলতে বাধ্য নই আমি।

এমন সময় বাড়িওয়ালা আসলো। তানহা বাইরে গেলো কথা বলতে।

তানহা : আসসালাম অলাইকুম চাচা।

বাড়িওয়ালা : অলাইকুম আসসালাম। আজকে যে টাকাটা দিতে হবে মা।

কথাবার্তা শুনে বুঝলাম তানহা আজকে দিতে পারবে না আর আমার মনে হয় ও এই মাসে আর দিতেই পারবে না। তাই বাড়িওয়ালাকে দেখতে বাইরে বেড় হলাম।

বাড়িওয়ালা আমাকে দেখতে পেয়ে,
বাড়িওয়ালা : বাড়িতে এতো রাতে ছেলে ঢুকাইছো। এটা কিন্তু একদম ভালো করোনি। অন্ততপক্ষে তোমার কাছে এরকমটা আশা করিনি।

তানহা : আপনি এরকম কথা বলতে পারেন না। উনি আমি যে বাচ্চাটাকে পড়াই তার বড় ভাই।

বাড়িওয়ালা : তাই বলে রাতের বেলা রুমের ভিতর ঢুকানো কি ঠিক, বলো মা?

আমি আর সহ্য করতে পারতেছি না। সোজা বাড়িওয়ালার সামনে গেলাম,

অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম। আপনি আমার বাবার বয়সী। তাই আপনার সামনে নম্রভাবেই কথা বলতেছি। কিন্তু আপনার চিন্তাভাবনার জন্য আপনাকে প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে পারতেছি না। আমি তো তানহার ভাইও হতে পারতাম তাই না? না জিজ্ঞাসা করে কি জন্য খারাপ ধারনা পোষণ করবেন? আর

পবিত্র কুরআনে আছে,

“সন্দেহ এড়িয়ে চলুন।”
-(৪৯ঃ ১২)💕

আর আমি উনার স্বামী হই। বুঝলেন?

অবাক হয়ে,
বাড়িওয়ালা : আমি দুঃখিত! এটা জানতাম না যে তানহা আপনার বউ।

অর্ণব : আর আপনি বুঝতে পারতেছেন না যে তানহার টাকার সমস্যা হচ্ছে।

পবিত্র কুরআনে আছে,

“ঋণ গ্রহণকারীর কঠিন পরিস্থিতিতে পরিশোধের সময় বাড়িয়ে দিন।”
-(২ঃ ২৮০)💕

বাড়িওয়ালা : কিন্তু আমারো যে টাকাটা লাগতো।

অর্ণব : কত টাকা?

বাড়িওয়ালা : মোট সাড়ে আট হাজার।

অর্ণব : আপনার টাকা আপনি কালকে পেয়ে যাবেন।

এতক্ষণ চুপ থাকার পর,
তানহা : আপনি এসব নিয়ে ঝগড়া করছেন কেন? আমি তো উনার সাথে কথা বলতেছিলাম। আপনি এখান থেকে আপনার ভাইকে নিয়ে যান।

অর্ণব : তুমি চুপ থাকো। না জানে শুনে এত বড় কথা বলবে কেনো? এটা আমি সহ্য করবো না। আর উনার সাথে ভালোভাবেই কথা বলতেছি।

তানহা : বলছে আমায় বলছে, আপনার কি?

অর্ণব : আমার কি মানে? এক থাপ্পরে সব দাঁত ফেলে দিবো তোমার। সব সময় ফাজলামি? জানোনা আমার কি?

(তানহা চুপ হয়ে গেলো)

বাড়িওয়ালার দিকে ঘুরে,
অর্ণব : আপনাকে তো নতুন মনে হয় আগে তো দেখিনি।

বাড়িওয়ালা : জি আমি নতুন। কয়েকমাস হলো বাড়িটা কিনছি।

অর্ণব : আমি এখানকার স্থানীয়। খুব সহজেই আমার ঠিকানা পেয়ে যাবেন। আপনাকে কথা দিচ্ছি যে টাকাটা আপনি পেয়ে যাবেন তাও আবার খুব দ্রুত। এর মধ্যে তানহার যেনো কোন অসুবিধা না হয়।

বাড়িওয়ালা : ঠিক আছে।

জোরে,
অর্ণব : নাজিম তাড়াতাড়ি বাইরে আয়। বাড়ি যাবো।

নাজিম আসতেই সেখান থেকে চলে আসলাম।

বাড়িওয়ালা :- তানহা সত্যি কি সে তোমার স্বামী হয়?

অর্ণন :- হুম চাচা, সত্যি। আর আমি তাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু তাকে বলিনা। কারণ সে এখনো কলেজে পড়ে। তাই ওর পড়াশুনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলবো না,তার কাছেও যাবোনা। নইলে অর্ণবের পড়াশুনার ক্ষতি হতে পারে। যা আমি মোটেও চাই না। আর উনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন তাই আপনার কথাতে অনেক রাগ করেছেন। ওর হয়ে আমি মাফ চাচ্ছি।
(হুম আর এজন্যই আমি অর্ণবের সাথে এরকম ব্যবহার করতেছি। আমি জানি আমাকে পেলে সে পড়াশুনায় একদম মনোযোগী হবে না। যার ফলে ওর ভবিষ্যত ঝুঁকির মুখে পড়বে। যা আমি কখনোই হতে দিতে পারি না।)

বাড়িওয়ালা:- আমি তো এসব জানিনা। হুম ছেলেটা তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসে।কিন্তু প্রচন্ড রাগী আবার রাগের উপর নিজের কন্ট্রোলও আছে। অনেক ভালো স্বামী পেয়েছো।আচ্ছা তাহলে আজ আমি আসি।

তানহা :- কফি খেয়ে যান।

বাড়িওয়ালা :- আজ না অন্য একদিন।

তানহা : আসসালাম অলাইকুম।

বাড়িওয়ালা : অলাইকুম আসসালাম।

রাস্তায় হাটতেছি আর ভাবতেছি কিভাবে টাকা দিবো। তানহার চাকরির জন্য তো যা ছিলো সব কিছু দিয়ে দিলাম। এখন তো আমি ফতুর হয়ে গেছি। তার উপর আবার ধারদেনা হয়ে গেলো ঐটা আলাদা। কিন্তু টাকাটা তো কালকেই দিতে হবে। চিন্তা করতে করতে বাড়িতে পৌছে গেলাম।

রাতে খাবার খেয়ে নামাজটা পড়ে নিয়ে ঘুমাইতে গেলাম। তানহার কাছ থেকে নিশ্চিত হতে হবে যে ওর চাকরিটা হয়েছে কি না। যদিও সব কিছু ওর দিকেই নির্দেশ করতেছে। ফেসবুকে ঢুকতেই দেখি তানহা মেসেজ দিয়েছে।

তানহা : আসসালাম অলাইকুম।

সকাল পর্ব পড়তে চান?

সকাল পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

📚 আপনি আরও পড়তে পারেন

🌄 অর্ধাঙ্গিনী

জানালার পর্দা সরাতেই একঝলক রোদ সারার চোখের উপর পড়লো।সে চোখ কুঁচকেই চেঁচিয়ে উঠল-।

Read
Story 2

🕊️ তোমায় নিয়ে

মা দুধের গ্লাসটা হাতে নিয়ে পিছনে পিছনে ছুটতে ছুটতে দরজার সামনে..

Read

💫 একই বন্ধনে বাঁধা দুজনে

৭ বছর পর দেশে ফিরলো রোহান। কিন্তু বাড়ির কাউকে জানায়নি..।

Read
Ad Image

🛒 আজই ফ্রি স্টোর খুলুন!

হ্যান্ডমেড প্রোডাক্ট, কাস্টম পণ্য, বই বা যেকোনো কিছু বিক্রি করুন – একদম ফ্রিতেই!

👉 এখনই শুরু করুন