মেডাম আমাদের কাছে এসে সবার উপর একবার চোখ বুলায় নিলো। আমাদের তো ভয়ে অবস্থা খারাপ!
নেহাকে উদ্দেশ্য করে,
মেডাম:- What do you want to say with Goats?
(ইংলিশ গুলা বুঝতে পারলাম কিন্তু কিছু বললাম না। কারণ সবার সাথে এমন ভাবে কথা বলি যে কেউ বিশ্বাস করবে না আমি ইংলিশ অনেক ভালো পারি।)
[কিভাবে ইংলিশ ভালো পারি আর কি জন্য বলিনা? কারণটা এখন রহস্যই থাক
]

মশিউর:- কিরে একলাস ইংলিশ টিচার সুনাম করল না দুর্নাম করলো কিছুই তো বুঝলাম না।
একলাস:- ভাই আমারো অবস্থা একই। কি বলল কিছুই বুঝলাম না। আল্লাহ যেন যেই বেটা ইংলিশ আবিষ্কার করছে ওর কোন মেয়ে থাকলে আমার সাথে মেয়েটার জোড়া মিলায়া দেয়।
মশিউর:-জোড়া মিলানো.. তার মানে কি?
একলাস:- মানে হলো তার মেয়ের সাথে আমার বিয়ে করা বা যুগলবন্ধী।
আল্লাহ আরও বলেন:
“এবং তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল-পুরুষ ও নারী।”
(সূরা নাজম: ৪৫)

মশিউর:- তার মেয়েকে বিয়ে করে কি করবি?
একলাস:- কি আর করব সংস্কৃত শিখতে পাঠাবো। সংস্কৃত বেলে অনেক কঠিন। আমি একটা সংস্কৃতের স্যারকে চিনি অনেক রাগী।
মশিউর:- কে…ন??(অবাক হয়ে)
একলাস:- এইযে ইংলিশ পারিনা, কেউ বকা দিলো না সুনাম করলো কিছু বুঝিনা। সে জন্য বদলা নিবো!
ওর কথা শুনে নিহা, বেলাল,মশিউর হেসে উঠল,আমি মাথা নিচু করে আছি।
ম্যাডাম : What you guys talking about? Are u guys mad? All the girls and boys come here to study. Not for watching you guy’s stupid Drama. Get out of my class….
(শুনে খুব রাগ উঠলো! আমাদের পাগল বলছে। আবার সবার সামনে বের হয়ে যেতেও বলছে ক্লাস থেকে)
একলাস:- অর্ণব তুই কিছু বুঝলি মেডাম যেসব বলল?
নাহাজুল:- হুম, বলল আমরা অনেক ভালো ছাত্র। আরো ভালো করে পড়তে হবে এটাই বললো।
ম্যাডামকে উদ্দেশ্যে করে,
একলাস:- Thanks মেডাম আপনি আমাদের নিয়ে এত কিছু ভাবেন, আমি তো জানতাম না!
মেডাম তো অবাক!
ক্লাসের সবাই একলাসের কথা শুনে হেসে উঠলো।
আমাদের মধ্যে নেহা একটু ভালো ছাত্রী। তাই এবার বিষয়টা বুঝলো।
নেহা : Sorry Mam! Next Time we will come in Time.Please Forgive us this Time.
মেডাম : Okay. This time i Forgiving you guys… But not again. Keep that in your mind. Come in.
নেহা : চল আমাদেরকে ঢুকতে বলতেছে।
একলাস:- চল সবাই।
তারপর আমি যায়ে রিপনের পাশে বসলাম।
রিপন:- আজ থেকে তোদের সবার সাথে আমার বন্ধুত্ব শেষ।
নাহাজুল:- মা…মানে?……পাগল হয়েছিস নাকি?
রিপন :- হুম..
অর্ণব : তার মানে তুই আমার আর নেহার বিয়েতে আসবি না?
(একটু মজা করতেছি)
(রিপন তো অবাক)
অর্ণব : সব কাজ কিন্তু তোদেরকেই করতে হবে। মানে তোরাই তো আমার ভাই। তোদেরকেই তো দায়িত্বগুলা নিতে হবে তাই না?
রিপন:- তুই সত্যি ওকে বিয়ে করবি?
(এই চেহারাটা দেখার জন্যই অপেক্ষা করতেছিলাম। ছেলেটা আরেকটু হলেই কেঁদে দিবে)
অর্ণব :- করলে কি হবে?
রিপন:- অনেক খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম,আমি চাইনা তোরা আমার থেকে দূরে চলে যা।
অর্ণব : কেন কেন?
ইংলিশ মেডাম আমাদের দিকেই তাকিয়ে ছিল আমরা খেয়াল করিনি! এবার আমরা শেষ।
মেডাম:- Hey You two ediots! Whenever i come to my class you guys always keep talking. Do you guys have any Problem with me?
(কি আর বলবো ভাগ্যটাই খারাপ। সবখানে আজকে ফাঁসে যাচ্ছি। এবার বোধহয় ক্লাস থেকেই বেড় করে দিবে)
মেডাম:- কি হলো কথা কানে যায়না নাকি ইংরেজি বুঝনা? বাংলায় বলতে হবে?
(মেডামের কথায় মাথা নিচু করে থাকলাম)
মেডাম : ক্লাশ থেকে বেড় হয়ে যাও।
রিপন :- ওকে মেডাম যাচ্ছি।
দুজনে বাইরে গিয়ে বসলাম।
রিপন :- তুই কি সত্যিই ওকে বিয়ে করবি?
অর্ণব : আরে না আমি মজা করলাম।
রিপন:-নিহাকে আমি প্রচুর ভালোবাসি, তুই কখনো এসব মজা করবি না।
অর্ণব : তে ওকে বলিস না কেন?
রিপন : প্রেম করা হারাম বুঝলি। এর দ্বারা বিভিন্ন ধরনের যেনা সংঘটিত হয়।
সহিহ মুসলিমে এসেছে-
“দুই চক্ষুর যিনা হচ্ছে- দেখা, দুই কানের যিনা হচ্ছে- শুনা, জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, হাতের যিনা হচ্ছে- ধরা, পায়ের যিনা হচ্ছে- হাঁটা, অন্তর কামনা-বাসনা করে; আর যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না।”
[সহিহ মুসলিম(২৬৫৭)]

প্রেমের দ্বারা এগুলা সব বাস্তবায়ন হয়। তাই এ কাজ আমি কখনোই করবো না।
অর্ণব : জানিস নেহাও কিছুক্ষণ আগে একই কথা বললো।
রিপন : ইসলাম কাউকে ভালোবাসতে হারাম করে নি। তাই আমি ওকে ভালোবাসি। আমি অপেক্ষা করতেছি সঠিক সময়ের। আমি ওকে সম্পূর্ণ হালালভাবে পেতে চাই। আর বিয়ে না ছাড়া এটা সম্ভব না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
তাঁর আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
-(সূরা রূম: ২১)

অর্ণব : ঠিক বলছিস। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা কর।
কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“এবং যারা ধৈর্যধারণ করবে আমি অবশ্যই তাদেরকে তারা যে কাজ করে তার চেয়ে উত্তম প্রতিদান দেব।”
-(সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৬)

রিপন : ইনশাল্লাহ
অর্ণব : তুই কিসের অপেক্ষা করতেছিস?
রিপন : আমি এখনো ছাত্র। আর বিয়ে মানে শুধু একসাথে থাকা না। ওর ভরনপোষণ থেকে শুরু করে সব কিছুর দায়িত্ব তখন আমার। ভালো করে পড়াশুনা শেষ করে একটা চাকরি পেলেই ওদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো।
অর্ণব : বাব্বাহ আমাদের রিপন তো দেখতেছি বড় হয়ে গেছে!
রিপন : আমার এখনো কিন্তু খটকা আছে।
অর্ণব : কি নিয়ে?
রিপন : তুই নেহাকে পছন্দ করিস তাই না?
অর্ণব : কি উল্টা পাল্টা ভাবতেছিস?
রিপন : আমি ঠিকই ভাবতেছি!
অর্ণব : একদম না! দেখ আমার রাগ উঠতেছে কিন্তু।
রিপন : হুম বুঝতে পারছি।
আমি রেগে গিয়ে,
অর্ণব : কি বুঝতে পারছিস? নেহা আমার শুধু বন্ধু হয়। আর কিছু না। তুই আমাদের সন্দেহ করতেছিস?
রিপন : তুই আমার বন্ধু। তুই চাইলে আমি সরে যাবো।
অর্ণব : তুই কি পাগল হলি?
রিপন : তুই ওকে বিয়ে করলে আমি কিছুই মনে করবো না।
অর্ণব : আমার অলরেডি বিয়ে হয়ে গেছে বুঝলি?

(মারছে রে! রাগের মাথায় সত্যিটা মুখ থেকে বেড় হয়ে গেছে।)
রিপন:- তুই বিয়ে করেছিস? কোন মেয়ে? পরিচয় করে দিসনি? কাউকে বলিস ও নি! এটা কিভাবে সম্ভব, যে তুই বিবাহিত?
Islamic গল্প

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”

Part : 6
অর্ণব :- আমি অন্য কাউকে আমার মনটা দিয়েছি,আর তার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে ২ মাস আগে। নেহার জন্য আমার তেমন কোন ফিলিংস নাই। এবার বিশ্বাস হলো তো?
[ জি হ্যাঁ। “সেই মেয়েটা” মানে আমার বউ! যেটা আমি এতোদিন রহস্য রেখেছিলাম
]

রিপন তো অবাক!
রিপন :- তারপর?
অর্ণব :- বাদদে বলতে চাচ্ছি না কিছু..
রিপন :- বলতেই হবে তোকে!
অর্ণব : দয়া করে এর বেশি জিজ্ঞাসা করিস না। আমি বলতে পারবো না। আর ওরা যেন না জানে যে আমি বিয়ে করেছি ২ মাস আগে!
রিপন:- কিন্তু কেন?
অর্ণব :-বললাম তো এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন করিস না। আর ভাই বলতেছি,কাউকে বলিস না!
রিপন:- ওকে আমি কাউকে বলবো না, এটা তো বল তোর বউ কোথায় এখন?
অর্ণব :-হারিয়ে গেছে অনেক দুরে। জানিনা ফিরে আসবে কি না। উনার অপেক্ষায় আমি প্রহর গুনতেছি!
রিপন:- হারিয়ে গেছে মানে?
অর্ণব :-অন্য একদিন সব ঘটনা খুলে বলল,আজ না।
আর ওরা সবাই এদিকেই আসছে বাদ দে এসব কথা?
রিপন:- ওকে।
(আমাকে জানতেই হবে কি এমন কথা যা অর্ণব সবার কাছ থেকে লুকাচ্ছে। এর ভিতর নিশ্চয় রহস্য আছে?)
ইংরেজি ক্লাস শেষ তাই নিহা,মশিউর,বেলাল ও একলাস একসাথে এদিকেই আসতেছে।
নিহা:- কি দরকার ছিল ক্লাসে কথা বলার?
রিপন:- আমাদের বের করে দিয়ে অনেক ভালো করেছে, একটা অজানা কথা জানতে পারলাম।
নিহা:- কি এমন অজানা কথা?
অর্ণবের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম ওয় রাগে ভূত। বললাম,
রিপম :- তোমার না জানলেও চলবে?
নিহা:- লাগবে না শোনা, মনে হয় না শুনলে আমি মরে যাব!
রিপন:- রাগ করনা নিহা,এটা আমি তোমায় বলতে পারব না..
বেলাল,মশিউর,একলাস বলে উঠল আমরা তো জানতে পারব নাকি,সাইটে চল।
রিপন:- না তোরাও জানতে পারবি না, আপাতত!
একলাস:- কিরে অর্ণব তুই বল, কি এমন কথা?
অর্ণব :- পরে বলব একদিন সময় হলে, এখন না, আর শোন সবাই “আমার খারাপ লাগছে, বাসায় চলে যাচ্ছি। আল্লাহ হাফেয।
একলাস :- ওকে যা, বাই বলতে হবেনা। আসসালাম অলাইকুম।
অর্ণব :-এটা নিয়ে রাগ করার কিছু নেই, সব কথা সব সময় বলা যায়না,সময় হলে এমনিতেই বলব। আর রিপন তুই আমার সাথে চল। অলাইকুম আসসালাম।
রিপন :- ওকে চল।
আমরা চলে যাওয়ার পর,
মশিউর:- কি এমন কথা যা ওরা আমাদের থেকে লুকালো?
ওরা তো সব কিছু শেয়ার করে আমাদের সাথে।
নিহা :-হুম তাইতো…
একলাস:- নিহা তুই রিপনকে জিজ্ঞাসা করলে ও তোকে বলে দিবে আসল কারণ টা।
নিহা:- তোদের বলল না আর আমায় বলবে?
একলাস:- হুম বলবে কারণ ও তোকে মন থেকে অনেক ভালোবাসে। লুকাতে পারবে না!
নিহা:- আচ্ছা দেখব, বলে কি না?
একলাস:- Thanks!
নিহা:- যদি ওর থেকে জানতে পারি তাহলে আমায় কি খাওয়াবি।
একলাস:- কিছুনা..
নিহা:- তাহলে আমি রাজি নাই,ওরে বলব না আমি?
একলাস:- আচ্ছা তুই বল কি খেতে চাস…
নিহা:- ফুচকা..
একলাস:–কিছুই বুঝিনা মেয়েরা এত ফুচকা ফুচকা করে কেন!
নিহা:- বিয়া কর তাহলে বুঝতে পারবি!
একলাস:–মোর বউ এসব খেতে চাইলে খবর আছে!
নিহা:- তোর কপালে বউ নাই!
একলাস:–হ তোরে কইছে!
মশিউর:- বাদ দে না ভাই কি শুরু করলি তোরা।
একলাস:–ওকে বাদ দিলাম, সবাই এখন বাসায় যাই। কালকে দেখা হবে। আসসালাম অলাইকুম!
সবাই : অলাইকুম আসসালাম!
অন্যদিকে আমি আর রিপন,
রিপন:- কিরে তুই আমায় ডেকে আনলি কেন? আর আমাকে নিয়ে বাশঁঝারের দিকে যাচ্ছিস কেন?
অর্ণব :- তুই আমার গোপন তথ্য জানতে পারছিস তাইনা,তোকে না মারলে ওরা সবাই যেনে যাবে। তাই আজকে তোকে খুন করে ফেলবো!
রিপন:- সত্যি সত্যি মেরে ফেলবে নাকি। আল্লাহ আমারে বাচায়া নেও,কারণ আমি মরলে নিহার কি হবে? নেহাতো বিয়ের আগেই বিধবা হয়ে যাবে।
অর্ণব : নেহাকে আমি বিয়ে করে নিব।
রিপন:- তোর না বউ আছে?
অর্ণব :- ছিল এখন তো নাই..
রিপন : দেখ মজা করিস না।
অর্ণব : তুই কি কাজটা ঠিক করলি? আমি তোকে বিশ্বাস করে কথাগুলা বললাম। আর তুই? জানিস
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আর যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, আর যারা তাদের সাক্ষ্য দানে অটল এবং নিজেদের সালাতে যত্নবান, তারা সম্মানিত হবে জান্নাতে।”
-(মা‘আরিজ-৩৫)

(রিপন চুপ করে আছে!)
অর্ণব : তুই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ভালো কাজ করলি না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি; (১) কথা বললে মিথ্যা বলে। (২) ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং (৩) তার কাছে আমানত রাখা হলে তার খিয়ানত করে।’’
-[সহীহুল বুখারী ৩৩, ২৬৮২, ২৭৪৯, ৬০৯৫]

আর মুনাফিকের শাস্তি সম্পর্কে,
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ পাক বলেছেন,
‘‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিকৃষ্ট স্তরে থাকবে এবং তাদের জন্য তোমরা কখনও কোনো সাহায্যকারী পাবে না|’’
-(সুরা নিসাঃ আয়াত-১৪৫)

রিপন : আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি। আর কি করবো তুই বল। ওদের থেকে কোন কিছু লুকানোর অভ্যাস নাই। তার উপর আবার নেহা ছিলো। মুখ থেকে বেড় হয়ে গেছে। Sorry!
অর্ণব : এবারের মতো মাফ করলাম।
এমন সময় আম্মুর কল আসলো!
অর্ণব :- আসসালামু আলাইকুম আম্মু।
মিস রাদিয়া :- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
অর্ণব :- আম্মু কল দিলা কেন?
মিস রাদিয়া :- সন্ধ্যা লেগে এল এখনো তোর ছোট ভাই নাজিম আসল না। ওর মেডামের বাসা থেকে নিয়ে আয়।
অর্ণব :- ও তো দুইদিন আগে থেকে নতুম ম্যাডামটার কাছে পড়া শুরু করছে। আমি তো একদিনও যায় নি। বাড়ি চিনবো কিভাবে?
মিস রাদিয়া :- রিপনদের বাড়ি যেতে একটা গলিতে “আজম আবাস” নামের বাড়িতে ওর ম্যাডাম ভাড়া থাকে। যায়ে নিয়ে আয়।
অর্ণব :- ওকে যাচ্ছি।
রাদিয়া বেগম :-এখনি যা!
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম।
রাদিয়া বেগম:- অলাইকুম আসসালাম! তারাতাড়ি যাস।
ফোনটা কেটে রিপনের কাছ থেকে ঠিকানাটা নিয়ে হাটা শুরু করলাম।
রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি আর আমার বউটার কথা মনে করতেছি!মনে মনে বলছি,
:- আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি! তুমিই আমার প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা। তুমিই আমার একমাত্র লক্ষি বউ! দুই মাস তো পার হয়ে গেলো। কোথায় তুমি? ইসসস যদি এই রাস্তাতে এখনই তোমার সাথে দেখা হয়ে যেত। সারা জীবন রানীর মতো রাখতাম তোমাকে। আর কোনদিনও হারাতে দিতাম না।
[ দুই মাস কেনো বলতেছি? আর কিভাবে হারালো? এটা এখন রহস্যই থাক
]

এগুলা আজগুবি কথাবার্তা ভাবতে ভাবতে আর দুইটা ভুল বাড়িতে ঢুকার পর নতুন মেডামের বাসা পেলাম। কারন আমি বাড়ির নামটা ভুলে গেছিলাম!
ডাকতেই নাজিম আসে গেট খুলে দিলো আর সাথে সাথে চলে গেলো পড়তে। গিয়ে দেখি, একটা মেয়ে পড়াচ্ছে, যদিও মুখ দেখতে পেলাম না, কারণ ও পাশে ঘুরে আছে। বাইরেই বসে থাকলাম।
এটাই তাহলে সেই নতুন ম্যাডাম। যার কথা শুনে নাজিম সকালবেলা সত্য কথা বলে আমাকে ফাঁসায় দিছিলো! চেহারাটাতো দেখা যাচ্ছে না। ধুর আমিও হই আরকি! অন্য মেয়ের চেহারা দেখে আমি কি করবো। শুধু শুধু নিজের পাপ বাড়াতাম। যাক ভালোই হইছে মেয়েটা পিছনে ঘুরে আছে।
অর্ণব : নাজিম তাড়াতাড়ি করো। আম্মু ফোন করেছিলো, তোমায় নিয়ে যেতে বলেছে তারাতাড়ি, আম্মু তোমার জন্য চিন্তা করছে।
অচেনা মেয়ে মানে নাজিমের ম্যাডাম বললো,
Islamic গল্প

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”

Part : 7
অর্ণব : নাজিম তাড়াতাড়ি করো। আম্মু ফোন করেছিলো, তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে তারাতাড়ি, আম্মু তোমার জন্য চিন্তা করছে।
অচেনা মেয়েটি:- এখনো পড়া শেষ হয়নি, আপনি একটু বসুন অঙ্কটা শেষ হলেই নিয়ে যাবেন।
মেয়েটার কন্ঠ শুনে বুকের ভিতর কেমন জানি লাগল, মনে হলো হাজার বছরের চেনা! তার মানে কি এইটাই আমার বউ? ধুর কি উল্টা-পাল্টা ভাবতেছি। এতক্ষণ বউয়ের কথা ভাবতেছিলাম তাই বোধহয় এরকমটা মনে হয়েছে! এটা কখনোই সম্ভব না!
হঠাৎ নাজিমের কথায় বাস্তবে আসলাম,
নাজিম:- ভাইয়া তুই একটু দারা অঙ্কটা শেষ করি।
অর্ণব : ওকে কর, কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি।
খটকা কিছুটা থেকেই গেলো,তাই অনেকগুলো প্রশ্ন মাথায় নিয়ে বসে আসি।
এই চিন্তাটা মাথা থেকে সরানোর জন্য নেগলাকে কল দিলাম। মেয়েটা কেন আজ কলেজে আসে নি সেটা শুনতে হবে!
প্রথমবার কল ধরেনি। আবার কল দিলাম তখন কল রিসিভ করছে!
নেগলা :- হ্যালো কে?
অর্ণব :- এত টাইম লাগে কল ধরতে?
নেগলা:- কাজ করছিলাম, কি বলবি বল।
অর্ণব : কলটা ধরে সালাম দিতে পারিস না? তুই জানিস সালাম দেওয়ার কত ফযিলত?
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
“হে মুমিনগণ, তোমরা নিজদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর”।
-[সূরা নূর, আয়াত: ২৭]

নেগলা :- এরপর থেকে সালাম দিবো ইনশাল্লাহ। এটা বলার জন্যই কি কল দিছিস?
অর্ণব : আজকে কলেজে আসিস নি কেন?
নেগলা : এমনিতেই।
নাহাজুল:- সত্যি করে বল!
নেগলা:- আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে,এক মাস পরে বিয়ে তাই!
অর্ণব :-এটা তো আগে থেকে শুনছি, কেন আসলিনা সেটা বল?
নেগলা:- বললাম না এমনিতেই!
অর্ণব :-বল বলছি,
নেগলা:- আগে বল মাথা ঠান্ডা রাখে কাজ করবি?
অর্ণব :- ঠিক আছে। আমি শান্ত ভাবেই সব করবো।
নেগলা :- তিতুমির….ভাই!
অর্ণব :-তিতুমির মানে, কি হয়েছে ওর?
নেগলা:- ওয় সেদিন ডিস্টার্ব করেছিল আমায় কলেজে, তাই যাই না!
অর্ণব : কি বলতেছিস? এটা কিভাবে সম্ভব? তুই তো বোরখার সাথে নিকাবও পড়ে যাস তাই না!
নেগলা : আসলে সেদিন আমি শাড়ি পড়ে গেছিলাম। আর তুই অসুস্থ ছিলি তাই আসিস নি কলেজে। আর সেদিনের ঘটনা এইটা। আমি তো পর্দার বিষয়ে একটু উদাসীন ছিলাম এটা তুই জানিস। তাই এরকমটা হয়েছে।
অর্ণব : আমি শুনছিলাম যে তুই নাকি একদিন শাড়ি পড়ে আসছিলি। এজন্যই তোকে ঐদিন পার্কে পর্দা নিয়ে এতোগুলা কথা বলছিলাম। পর্দা করার গুরুত্ব এবার বুঝতে পারছিস?
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে না। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(সূরা আহযাব : ৫৯)

নেগলা : হুম বুঝতে পারছি।
অর্ণব : তে তুই আমাদেরকে এটা বলিস নি কেন?
নেগলা:- দেখ ওয় আমাদের সিনিয়র বড় ভাই, আমি চাইনা তুই ওর সাথে কিছু কর, কারণ ওই অনেক খারাপ আর সবচেয়ে বড় কথা হলো ওই আমাদের বড়। হেড স্যারকে বললে তোদের বের করে দিবে।
অর্ণব : ঠিক আছে আমি ব্যাপারটা দেখতেছি।
নেগলা:- অর্ণব….উল্টাপাল্টা কিছু করিস না।
অর্ণব : ঠিক আছে। তোর সাথে কলেজে দেখা হবে। আসসালাম অলাইকুম।
নেগলা : অলাইকুম আসসালাম।
কলটা কেটে ভাবতেছি,কি করা যায়! এর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। তবে ঠান্ডা মাথায়। কেননা তিতুমির খুব খারাপ ছেলে। ও যে কোন কিছু করতে পারে। মারামারি করতে গেলে নেগলার বিপদ আরো বেড়ে যাবে। নেগলা একটা মেয়ে, তাই রাস্তায় সুযোগ পেলে ওর ক্ষতি করা খুব সহজ। মেয়েটার ভবিষ্যত জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তাই ঠান্ডা মাথায় সবকিছু করতে হবে!
হঠাৎ নাজিমের ম্যাডামের কথায় বাস্তবে ফিরলাম,
অচেনা মেয়েটি:- কে হয় মেয়েটি?
(আবার সেই কণ্ঠ)
অর্ণব : কোন মেয়েটা?
অচেনা : যার সাথে ফোনে কথা বলছিলেন..
(কথা গুলো পিছনে না ঘুরেই বলতেছে)
অর্ণব :- কেউ হোক আপনাকে বলব কেন?
অচেনা মেয়েটি :- বললে বলেন নাহলে ভাইকে নিয়া চলে যান!
(বুঝলাম মেয়েটা রাগী)
অর্ণব : আমার বন্ধু ছিল।
অচেনা মেয়েটি:- আপনাকে যে মেয়ে স্বামি হিসাবে পাবে সে অনেক ভাগ্যবতী হবে।
অর্ণব : কেনো?
অচেনা মেয়েটি:- কারন যে ছেলে বন্ধুর বিপদের সময় সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয়,সে তার বউ এর জন্য আরো কত কি করবে? এটাই ভেবে বললাম অনেক ভাগ্যবতী হবে আপনার বউ!
অর্ণব : বিপদগ্রস্থ ব্যক্তিকে সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব। আর নেগলাতো আমার খুব ভালো বন্ধু।
অচেনা মেয়েটি : ঠিক বলেছেন। কেননা
হাদীসে আছে,
“যে ব্যাক্তি বিপদগ্রস্ত মহিলাদের সাহায্য করে অথবা গরীবের সাহায্য করে, সে এমন, যেমন জিহাদে চেষ্টা করছে।
-(মিশকাত)

অন্য এক হাদিসে এসেছে,
“যে ব্যাক্তি দুনিয়াতে কোন মুমিনের মুসীবত দূর করে দিবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার মুসীবত দূর করে দিবে । যে ব্যাক্তি বিপদগ্রস্ত লোকের সাহায্য করবে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখেরাত তার জন্য সহজ করে দিবেন । যে ব্যাক্তি দুনিয়াতে কোন মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখবে অর্থাৎ প্রকাশ করবে না, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ ঢেকে রাখবেন।”
-(মিশকাত)

অর্ণব : জি। আপনাকেও যে পাবে সেও অনেক ভাগ্যবান হবে।
অচেনা মেয়েটি : কেনো?
অর্ণব : আপনার ইসলামিক জ্ঞানের জন্য। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় দিক দিয়ে আপনার উনি ফায়দা পাবে।
অচেনা মেয়েটি : হাহাহা। আমি এতোটাও জ্ঞানী না। একজন প্রাকটিসিং মুসলিমাহ। আর আপনিও কম কিসে? সবই তো শুনলাম।
(উফফফ কি সুন্দর হাসির আওয়াজ। একদম আমার উনার মতো। ইনিই কি আমার উনি? ধুর আমিও না! এ দুনিয়াতে সব মেয়েদের কণ্ঠ বোধহয় একই রকম। জীবনে উনার পরে শুধু ইনার সাথেই এভাবে কথা বলতেছি। তাই এরকমটা লাগতেছে বোধহয়।)
অর্ণব : কি? আপনি সব শুনছেন?
অচেনা মেয়েটি : জি। আপনার কথা গুলো এখান থেকে খুব ভালোভাবেই শুনা যাচ্ছিলো। আপনি উনাকে সালামের ফযিলত বললেন কিন্তু আমাকে সালাম দিলেন না কেনো?
অর্ণব : জি আপনি অচেনা তো তাই আপনাকে সালাম দিতে একটু লজ্জা পাচ্ছিলাম। কি না কি মনে করবেন। আর আপনি যদি গেট খুলতে আসতেন তাহলে ঠিকই দিতাম। আবার ভিতরে বসে আছেন তাই দেই নি।
অচেনা মেয়েটি : এর পর থেকে দিবেন। আর চেনা অচেনা সবাইকে সালাম দিবেন। এতে লজ্জার কিছু নাই।
#আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলামে কোন আমলটি সর্ব উত্তম? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, মানুষকে খানা খাওয়ানো এবং তুমি যাকে চিনো আর যাকে চিনো না সবাইকে সালাম দেয়া।”
-[বুখারি ও মুসলিম]

অর্ণব : জি আমি বুঝছি। এর পর থেকে আমি আসলে আপনাকে সালাম দিবো। তবে আমার বউ আমাকে পেলে ভাগ্যবতী হবে কি না জানি না। তবে উনাকে পেলে আমি দুনিয়ার সবচেয়ে ভাগ্যবান পুরুষ হবো এটা ঠিক।
অচেনা মেয়ে : ওহহো! তাহলে ইতোমধ্যে আপনার “উনি” -টা আছে?
অর্ণব : হাহাহা। না এখনো হয়নি। তবে অপেক্ষা করতেছি একজনের!
(নাজিম আছে তাই খুলে বললাম না)
অচেনা মেয়েটি : ওহ।
অর্ণব : আপনি কে বলুন তো, আপনার কথা বলার স্টাইল ভাব,ভঙ্গি সব আমার চেনা চেনা লাগে!
(আমি এতোক্ষণে অনেকটা নিশ্চিত এটাই আমার উনি!এবার আর ভুল হতেই পারে না। এই কন্ঠ,এই হাসি,এই কথা বলার ধাঁচ,মিষ্টি ব্যবহার আর এতো গভীর ইসলামিক ভাবধারা, সব কিছু একদম আমার “উনি” -টার মতো। মানে আমার বউয়ের মতো। আর এটা যদি আমার “উনি” না হতো তাহলে কখনোই আমার সাথে এতো কথা বলতো না। কেননা ইনি ভালোমতোই জানেন পর পুরুষের সাথে এতোটা মধুরতা মিশানো কন্ঠে কথা বলা জায়েয নাই।)
অচেনা মেয়েটি;- আমি তো চিনিনা আপনাকে? নিজের ভাইকে নিয়ে যান।
অর্ণব : আপনি একটু ঘুরে বসুন না, আপনার মুখটা একটু দেখি!
অচেনা মেয়েটি:- না,আমি অপরিচিত কাউকে নিজের মুখ দেখাই না। আসতে পারেন এখন!
এই রাগ দেখানোর ধাঁচ আমার উনার মতো,তাই আমি নিশ্চিত এটাই আমার উনি। আজকে আমি ইনাকে দেখেই ছাড়বো। দুই মাস অপেক্ষা করেছি আর না! আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেংগে যাচ্ছে।
মনে মনে এগুলা ভাবতেছিলাম আর সামনে এগুচ্ছিলাম।
অচেনা মেয়েটি:- আপনি এদিকে আসছেন কেন?
অর্ণব : আপনাকে দেখার জন্য?
অচেনা মেয়েটি:- আপনি আমার কাছে আসবেননা প্লিজ?
অর্ণব : আজকে আপনাকে আমার দেখতেই হবে।
(এটা বলছি আর সামনে এগোচ্ছি)
অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার সকল পর্ব👈
carnation e book