কাব্য ভাইয়া আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন।এই বলে নিশি বিছানা থেকে ওঠে বালিশ নিয়ে কাব্য কে ধাওয়া করতে লাগলো ,কাব্য ও রুমের ভিতর এদিক সেদিক ছুটতে লাগলো।
শুরু হয়ে গেলো প্রতিদিনকার টম এন্ড জেরির কাহিনী।
রোজকার মতো কাব্য নিশিকে ডাকতে এসে দেখে মহারাণী বেশ আরাম করে ঘুমাচ্ছে ,কয়েকবার ডাকলেও সারা দেয় নি।এদিকে নিশি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলো ,ঝুম বৃষ্টিতে মনের আয়েশ মিটিয়ে ভিজতে ছিলো।কিন্তু এটা কি হলো হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে দেখে পাশে কাব্য বসে আছে শুধু তাই নয় টেবিলে রাখা গাছে স্প্রে করার বোতল দিয়ে নিশির সারা চোখ নাক মুখে স্প্রে করছে।চোখ খুলেই এটা দেখে মাথাটা গরম হয়ে গেলো ,ওর এতো সুন্দর দেখা স্বপ্নটা ভেঙে দিলো ? আর তখনই শুরু হয়ে গেলো টম এন্ড জেরির দৌড়ানি।
রুম থেকে বের হয়ে কাব্য ড্রয়িং রুমে গেলো সেখানে নিশির মা আইরিন বেগম (কাব্যের একমাএ খালা )কে দেখে তার পেছেনে গিয়ে দাঁড়ালো ।
-মা সরো তুমি ,আমার আরামের ঘুমটা হারাম করে দিছে তোমার বোন পো আজ তাকে তো ..
-আরে আরে কি করছিস ও তো তোকে ভার্সিটিতে নিবে বলে আসছে আর তুই কিনা ওকে মারছিস?
কাব্য খালার কথা শুনে বললো
-দেখোনা খালামনি তোমার মেয়ে কি করছে ..এ জন্যই উপকার করতে নেই।
-ইশ আসছে আমার উপকারী লোক ..ঘুমটা ভেঙে দিলো আবার বলছে উপকার করছে।
-এই তোরা থাম তো রোজ রোজ তোদের এ সব দেখতে ভালো লাগে না।কবে বড়ো হবি তোরা?
মাথা চুলকাতে চুলকাতে কাব্য বলে উঠলো
-আমিতো বড়ো হইছি কিন্তু তোমার মেয়েই তো বড়ো হয় না ,কিছু বুঝতে চায় না।
তখনই সুযোগ বুঝে বালিস দিয়ে কাব্যকে এক বারি দিয়ে দিলো নিশি
-কি আমি ছোটো আছি আমি কিছু বুঝি না?
-আউচ খালামনি তোমার মেয়ে আমাকে মেরে ফেললো তো!
-থামবি তোরা ??কাব্য বাবা যা তুই বস ও রেডি হয়ে আসছে।
-ঠিক আছে খালামনি আমি গাড়িতে গিয়ে অপেক্ষা করছি ওকে পাঠিয়ে দাও।
-নিশি এক্ষুনি যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় আমি খাবার নিয়ে আসছি ছেলেটা কতোক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে এটা একটু বুঝার চেষ্টা কর।
-কে বলছে তাকে অপেক্ষা করতে আর মা তুমি এতো আদিক্ষেতা দেখাও কেনো তার প্রতি ?মনে হয় সেই তোমার কাছে সব আমি নই।
-পাগলি মেয়ে আমার তুই তো আমার মেয়ে আর ও তো আমার বোনের ছেলে আর আমার নিজের ছেলে নেই বলেই তো ছোটো বেলা থেকে ওকে আমি ছেলের মতোই জানি।তোরা দুজনেই আমার কাছে সমান।যা তো এখন আর দেরি করিস না শেষে ক্লাসের ও দেরি হবে।
—ঠিক আছে মা যাচ্ছি।
রেডি হয়ে মায়ের হাতে খেতে ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে মাকে বলে বাসা থেকে বের হলো নিশি।গেটের কাছে এসে দেখে কাব্য গাড়িতে বসে মোবাইল দেখছে কিন্তু নিশির দিকে না চেয়েও গাড়ির দরজা খুলে দিলো কাব্য।নিশি কাব্যের পাশে বসে পরলো।কাব্য মোবাইল রেখে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে মনোযোগের সাথে গাড়ি চালাতে লাগলো।
~~~~~~~
পরিচয় পর্বঃ
“জুবায়ের কাব্য চৌধুরি ,বাবা মায়ের একমাএ ছেলে ওর একটা আদরের ছোটো বোন আছে ।নাম রিয়া আদর করে সবাই রিয়ু বলে ডাকে।সে দশম শ্রেণিতে পড়ে।বাবা নাম করা বিজনেস ম্যান রায়হান চৌধুরি।মা আন্জুমান বেগম।”
“তাসনিয়া রহমান নিশি বাবা মায়ের একমাএ মেয়ে ।বাবা শেখ জয়নাল রহমান ,আগে তার আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিলো না ।কাব্যের বাবার অনেক সাহায্য সহযোগিতার পর নিজের একটা ছোটো খাটো বিজনেস দাঁড় করাতে পেরেছে।কিন্তু সে এতো এতো কৃপণ যে সবাই তাকে হারকিপটে বলে।সহজে টাকা খরচ করতে চায় না।”
“আন্জুমান আর আইরিন বেগম দুই আপন বোন ।আন্জুমান বেগম বড়ো ,কোনো ভাই নেই তাই বোন কে সহযোগিতার পাশি পাশি নিজের কাছাকাছি রেখেছেন সবসময়।এমনকি একই বিল্ডিং এ থাকেন আলাদা ফ্লাট নিয়ে।দু বোনের মধ্যে সম্পর্কটা ও অনেক ভালো।আইরিন বেগম বোনের মেয়ে কে নিজের মেয়ের মতোই জানে।”
“কাব্যের চার বছরের ছোটো নিশি।সম্পর্কে ওরা দুজন খালাতো ভাই বোন হলেও ছোটো বেলা থেকেই এদের সম্পর্কটা দা কুমড়ার মতো।কিন্তু এমন টম এন্ড জেরির মতো সম্পর্ক হলেও নিশি কাব্যকে সহ্য করতে না পারলেও কাব্য সেটাকে পাওা না দিয়ে বারবার নিশির কাছে ছুটে আসে।আত্নীয়র সম্পর্ক বাদেও কাব্যের মনে নিশির জন্য অন্যরকম একটা ফিল আছে আর সেটা ভালো মন্দ বুঝার পর থেকেই।আর তাই তো নিশির দিকে কোনো ছেলে ভুলেও চোখ তুলে তাকাতে পারে না শুধু তাই না এ পর্যন্ত নিশির বাবা তার মেয়েকে বিয়ে দিবে বলে যতো বার ছেলে পক্ষ বাসায় এনেছে ততোবার ই সেই সব ছেলেদের কাব্য এমন হাল করে ছেরেছে যে দ্বিতীয় বার আর ওদের বাড়ির সীমানায় আসতে পারেনি।প্রতিবার বিয়ে ভেঙে যাওয়াতে নিশি খুব খুশি হয় কিন্তু কাজটা কে করে সেটাই জানে না।জানলে তাকে বড়োসড়ো ধন্যবাদ দিতো,মনে মনে এটাই ভেবে রেখেছে।বেচারি নিশি এতো বড়ো হলো আফসোস কাব্যের মনের অনুভূতিটাই বোঝে না।আর এসব জানা তো দূরে থাক।
কাব্য প্রাইভেট ভার্সিটির অনার্স ফাইনাল ইয়ার পড়ছে।অপরদিকে এইস এস সি পাশ করার পর নিশি পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স না পাওয়ায় নিশির মা বাবাকে মানে কাব্যের খালা খালুকে বুঝিয়ে নিজের ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে নেয় ।অনেক খরচের ভয়ে নিশির বাবা প্রথমে রাজি ছিলো না কারন উনি সবার কাছে পরিচিতো হারকিপটে মানুষ একটা।বহু কষ্টে আর টেকনিক করে কাব্য ওর খালুকে রাজি করায় ,অবশ্য খালা এ বিষয়ে অনেক সাপোর্ট করছে।
অপরদিকে নিশি রাজি ছিলো না কাব্যের ভার্সিটিতে ভর্তির জন্য কিন্তু মায়ের জেদের কাছে হার মানতে হলো।
পরিচয় পর্ব শেষ”
~~~~~
গাড়ি থেকে নেমেই নিশি কোনো কথা না বলে নিজের ক্লাসের দিক হাটা দিলো।
কাব্য গাড়ি পার্কিং করে নামতেই ভার্সিটির ইনা মিনা টিনা টাইপের মেয়ে গুলো ওকে দেখা মাএই হা করে তাকিয়ে থাকে যদিও এটা প্রতিদিনই ঘটে থাকে আর আজও করছে তাই এসবের প্রতি কাব্যের কোনো ইন্টারেস্ট নেই কারন সে তো একজনের মায়ার বাধনে বাঁধা আছে।ভুলেও ওদের দিকে তাকায়না সে।
ভার্সিটির ভিতরে বেশ বড়ো না হলেও ছোটো একটা মাঠ আছে আর কিছু বড়ো গাছ আছে যেখানটাতে বসার জায়গা করে দেওয়া আছে।কাব্য আর ওর বন্ধুরা মিলে ওখানে আড্ডা দেয়।ক্লাসে না গিয়ে কাব্য সোজা ওখানে গিয়ে বসে পরে।ক্লাস হতে এখনও বেশ খানিকটা সময় বাকি আছে।
ওকে দেখে বন্ধুরা বলতে শুরু করলো-
—কিরে এতোক্ষণে আসার সময় হলো?
আরেক বন্ধু বলতে লাগলো
—আরে আগে আসবে কি করে ভাবিকে সাথে নিয়ে আসে নাকি ?বুঝিস না
—হুম বুঝি তো মামা আমাদের না থাকলে কি হবে বুঝতে তো হবে নাকি
বলে ওরা হাসতে লাগলো।
—আরে ইয়ার মজা নিস না তো ভালো লাগে না।
—কেনো রে কি হইছে ,কোনো ঝামেলা?
—নাহ তা নয় ,
—তা হলে?
—যাকে সেই ছোটো বেলা থেকে চাই ভালোবাসি সে তো এক কানা কড়ি ও বোঝে না রে,,কেমনে আর কবে বুঝবে ?
—আহারে “বোঝে না সে বোঝে না”
—ফাইজলামি করিস না রে
—তা হলে ডিরেক্ট বলে ফেল”
—নাহ আমি চাই ও নিজ থেকে বুঝুক জানুক আমাকে,চিনুক ভালো করে আমি কতোটা চাই ওকে কতোটা ভালোবাসি ওকে।
—আরে এ সব দেখা দেখি করতে গিয়ে আবার হারিয়ে না ফেলিস দোস্ত ।
—এমন কথা বলিস না বিশ্বাস আছে তো আমার।
—কিন্তু সে না বুঝলে বিশ্বাস দিয়ে কি হবে বন্ধু ।
—আবার দেখিস না নতুন কেউ তোদের মাঝে এন্ট্রি নিয়ে তোর মানুষটাকে না নিয়ে যায়।
কাব্য হঠাৎ রেগে বলে উঠলো—
—চুপ কর ইয়ার এমন কথা বলিস না এমন যদি হয়তো হলে তাকে আমি শেষ করে দিবো।
আরেক বন্ধু বলে উঠলো
—এই তোরা কি শুরু করলি বল তো যা হবে ভালো হবে দেখিস ।প্রকৃত ভালোবাসার জয় হবেই।চল চল ক্লাসে
—হুম চল।
~~
“নিশি ক্লাসে বসে আছে,নতুন তাই তেমন কোনো বন্ধু হয়নি তবে কয়েক জনের সাথে এ কয়দিন আলাপ হয়েছে।চুপচাপ বসে বউয়ের পাতা উল্টাচ্ছে তখনই পাশের মেয়ে গুলোর কথা কানে গেলো ওর-
—ইশ কি হ্যান্ডসাম রে দেখলে পাগল হয়ে যাই।
আরেক জন বলতে লাগলো
—আর বলিস না রে,কি লুক ইয়ার ড্যাসিং
—জিম করা বডি উহুম মন চায় যে কি করতে আর বলতে পারছি না রে।
—এই থাম তো যাকে নিয়ে এতো কথা বলছিস সে কি তোদের পাওা দেয় ? শুধু কি তাই এক নজর ও তো তাকায়না।তাই বলছি এসবের থেকে দুরে থাক ।
আরেক জন বলে উঠল
—এই ঠিক বলছিস রে ,দেখতে সুন্দর হিরোর মতো, ব্রিলিয়ান্ট ভার্সিটির টপার বয় কাব্য চৌধুরী সে কেনো তোদের মতো মেয়েদের দিকে তাকিয়ে সময় নষ্ট করবে।তার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই হুম।
কথা গুলো শুনে বেচারী কাব্য পাগল মেয়েদের মুখ একেবারে চুপসে গেছে।
ওদের সব কথা পাশ থেকে নিশি শুনে নিলো।কিন্তু কোনো রিয়েক্ট করলো না।কিন্তু মনে মনে কিছু একটা ভেবে রাখলো।
ক্লাসে স্যার ডুকতেই সবাই ক্লাসে মনোযোগ দিলো।
ক্লাস শেষ করেই কাব্য অপেক্ষা করছে নিশির জন্য।কিন্তু নিশির আসার নাম নেই।
অপরদিকে নিশির তো কাব্যের প্রতি সকালের রাগ এখন ও যায়নি তাই ইচ্ছে করেই বের হচ্ছে না।সহপাঠির সাথে লাইব্রেরিতে গিয়ে নোট লিখছে।আর ও খুব ভালো করেই জানে কাব্য ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
ঘন্টা পার হলো এখনও নিশিকে বের হতে না দেখে কাব্য ভেতরে ডুকে সোজা লাইব্রেরিতে চলে গেলো।কারন ও জানে এটা নিশি ইচ্ছে করেই করছে।সামনে গিয়েই কাব্যের প্রশ্ন করা শুরু..
—তোর সমস্যা কি হ্যা ? ফোন ধরছিস না মেসেস এর রিপ্লে দিচ্ছিস না ঘন্টা পার হলো একটা মানুষ তোর জন্য অপেক্ষা করছে আর তুই মজা নিচ্ছিস?
—মজা নিবো কেনো আমিতো নোট করছিলাম।
—হা নোট করছিস তো আমি বেশ ভালো করেই জানি তোকে যাই হোক দু মিনিট সময় দিলাম বাইরে চলে আয় বলেই চলে গেলো।নিশি এবার ঢোক গিলে বই খাতা গোছাতে শুরু করলো ,ও জানে কাব্য রেগে গেলে তুলকালাম ঘটে যাবে তাই একমিনিট এর মধ্যে সবটা করার চেষ্টা করতে হবে ।ব্যাগ গুছিয়ে এক দৌড়ে এসে গাড়িতে বসে পরলো।কাব্য কোনো দিকে না চেয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো।
মনে মনে নিশি দোয়া পড়তে লাগলো,আল্লাহই জানে বাসায় গেলে আবার কি ঘটনা ঘটে।কারন ছোটো বেলা থেকে এ পর্যন্ত কাব্যের অগনিত চর নিশির দু কপলে কম পরেনি ।শুধু মাএ ওর জেদের কারনে।এ সব ভেবে নিজের অজান্তে দু হাত দিয়ে দু গাল চেপে ধরলো।আর নাহ বলে চিল্লানি দিলো।
হঠাৎ নিশির চিল্লানিতে কাব্য গাড়ি ব্রেক করে ফেললো।
—কি হলো ষাড়ের মতো চিৎকার করছিস কেনো?
বেচারী এতোক্ষণ ঘোরের মধ্যে ছিলো বুঝতে পেরে বললো
—নাহ কিছু না
কাব্য ওর মনের সবটাই বুঝতে পেরেছে এটা নতুন কিছু নয়,তাই মনে মনে হাসতে লাগলো ..পাগলী একটা কবে বুঝবি আমাকে বল ?বড়ো তো হয়েছিস কিন্তু বোঝার জ্ঞান টা এখন ও হয়নি ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছেরে আবার গাড়ি চালাতে লাগলো।