অপেক্ষার প্রহর 11,12শেষ পর্ব

অপেক্ষার প্রহর
১১.
লাল বেনারসি পরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে কেউ একজন বসে আছে।কাব্য তার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করছে কে সে।কিন্তু কোনো প্রশ্নের জবাব সে দিচ্ছে না বরং এখন সে কান্না করছে ।কাব্য মনে মনে ভয় পেয়ে যায় কে আর কেনোই বা কান্না করছে?আবার ও জিজ্ঞেস করলে এবার মেয়েটি মাথা উঁচু করে ঘোমটা সরিয়ে ফেলে।মুখ টা দেখেই কাব্যের হার্ট বিট বেরে গেলো,ওর সামনে নিশি বসে আছে।নিশি বললো ,আমার তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তুমি কিছু করো”বিয়েটা ভেঙে দাও।
কাব্য বললো বিয়ে কেনো ভাঙবো ?কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি কাব্য ভাইয়া ।কথাটা শুনে কাব্য কিছু বললো না তাই নিশি চোখ মুছতে মুছতে বসা থেকে উঠে চলে যাচ্ছিলো,ঠিক তখনই কাব্য হাত ধরে বসলো কিন্তু নিশি হাত ছাড়িয়ে চলে গেলো আর কাব্য যেওনা যেওনা বলে চিৎকার করতে লাগলো।
কাব্যের চিৎকার শুনে রনি ছুটে আসলো।চোখে মুখে পানির ছিটা দিতে লাগলো।
—কি হলো কাব্য চিৎকার করছিস কেনো?
—রনি আমার নিশির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ও চলে যাচ্ছে আমাকে ছেড়ে,জানিস ও বলেছে ও নাকি আমাকে ভালোবাসে।
—কাব্য তুই হুসে আয় স্বপ্ন দেখছিলি ভাই।
—স্বপ্ন?
—হা স্বপ্ন,আর শোন বিয়ে টিয়ে কিছু না সারাদিন মাথার মধ্যে নিশির ভূত চেপে থাকলে তো এমনটাই দেখবি নাকি।
—হয়তো।তবে জানিস রনি ওর নাকি ঐ ছেলেটার সাথে ব্রেক আপ হইছে মা বললো।
—বাহ এটাতো ভালো খবর এখন তো ওকে মনের কথাটা বলাই যায় নাকি?
—বলতে চাইছিলাম কিন্তু মা ওর কথা ভাবতে নিষেধ করছে
—কেনো কেনো?
—কারন ওর জন্য আমি কষ্ট পেয়েছি দেশ ছেড়েছি তাই।কোনো বাবা মাই চাইবে না যার দ্বারা তার সন্তান কষ্ট পেয়েছে তাকে আবার মেনে নিতে।
—কিন্তু তারপরও আন্টিকে তুই বুঝা এই তো সুযোগ ।
—নাহ অনেক ভেবেছি মাকে কষ্ট দিবো না ।আর দেশে ও ফিরবো না।
—তা হলে সব সমাধান হবে?
—জানিনা
—আচ্ছা ওঠ এখন এ সব নিয়ে পরে কথা বলবো ।
কিন্তু সত্যি ভেতরে ভেতরে কাব্যের চিন্তা হতে লাগলো সপ্ন সত্যি হয়!! যদি নিশি বিয়ে হয়ে যায় তখন কি করে এটা সহ্য করবে ও।
~~~~~
আজকাল নিশির মনটা বেশ উৎফুল্ল থাকে এ সব দেখে আইরিন বেগম ও জয়নাল সাহেব ও খুশি।কয়েকটা দিন মেয়ের মনের ওপর ঝড় বয়ে গেছে।এখন সবটা স্বাভাবিক হোক এটাই কাম্য।জয়নাল সাহেব ও আগের মতো নেই নিজেকে পূর্ণ ভাবে পরিবর্তন করে নিয়েছে এর জন্য আইরিন বেগম ও স্বামীর ওপর সন্তুষ্ট,জয়নাল সাহেব এখন ভাবেন এই সংক্ষিপ্ত জীবনে কৃপণতা করে কোনো সুখ নেই।
অনেক দিন বাদে নিশি আজ নিজেকে একটু সাজিয়েছে।সাজলে এমনিতে মন ভালো থাকে।আয়নায় নিজেকে পরিপাটি করে মাকে বলে বের হয়ে গেলো।বাইরে এসে হঠাৎ করেই কাব্যের কথা মনে পরে গেলো।প্রতিদিন কাব্য ওর জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করতো।সেই সময় বুঝতে না এখন নিশি আফসোস করে যদি আগে জানতে পারতো তাহলে দু জনের সম্পর্ক টার মধ্যে দূরত্ব থাকতো না।এ সব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেরে সামনে হাটতে লাগলো,আজ আর রিক্সা করে নয় বাসে করে ভার্সিটি যাবে।
ভার্সিটির গেট দিয়ে ভিতরে ডুকে সামনে এগোতে লাগলো হুট করে একটা মেয়ে তারাহুরো করে হাটতে গিয়ে নিশির সাথে ধাক্কা লাগলে নিশি পরে যায়।পরে গিয়ে কোমরে ব্যাথা পেয়েছে সাথে কাপরে ধুলোবালি লেগে গেছে।নিশি পরে গিয়ে ও মা গো বলে উঠলো।মেয়েটি সরি সরি বলে চলে গেলো ।নিশি অবাক হয়ে মেয়েটার যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো কি মেয়েরে বাবা একটু তুলে উঠিয়ে গেলেন।ভাবতেই হঠাৎ কেউ হাত বাড়িতে দিলো নিশির সামনে।নিশি সামনের ব্যাক্তিটি কে দেখে চমকে গেলো ওর সামনে কাব্য “তুমি এখানে ?কিন্তু কিভাবে সম্ভব?কতো দিন পরে দেখা তোমার সাথে।
আরে সবই সম্ভব আগে হাতটা ধর তারপর আকাশ থেকে পরিস।হাতটা ধরে উঠতেই সামনের মানুষটা বলতে লাগলো
কি বললি তখন কতো দিন পরে দেখা ? এই বুদ্ধ কালই তো দেখা হলো এবার নিশি হুসে আসলো এ তো কাব্য নয় ওর ক্লাস মেট প্রিয়া যে কিনা ভার্সিটির একমাএ বেস্টু।
—কিরে কি হইছে আর পরলি কিভাবে আর পরে কি ও ভাবেই বসে থাকতে হবে? আসে পাশের সবাই কেমন করে তাকাচ্ছিলো তোর দিকে।
—আর বলিস না একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগলো কিন্তু আজব মেয়েটা একটু তুললো না।
ক্লাসে এসে দুজন পাশাপাশি বসলো।বই খুলে নিশি পরতে গেলেই কাব্যের মুখটা ভেসে ওঠে।আচ্ছা মুশকিল তো বই বন্ধ করে গালে হাত দিয়ে এক ধ্যানে কি যেনো ভাবছে।নিশির এ অবস্থা দেখে প্রিয়ার আর বুঝতে বাকি নেই ওর বেস্টুর কিছু একটা হয়েছে।
—নিশি এই নিশি কি ভাবছিস এতো?
প্রিয়ার ডাকে নিশির ধ্যান ভাঙলো।
—নাহ কিছু নাহ
—সেটা তুই না বললেও বেশ বুঝতে পারছি।বল না কি হইছে তোর?
নিশি বুঝলো প্রিয়ার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই ওকে সবটা বলতেই হবে।
—হুম সবটা বলবো তবে এখন না ক্লাস শেষে বাইরে গিয়ে
—ঠিক আছে দোস
ক্লাস শেষ করে দুজন বাইরে গিয়ে বসলো।নিশির ওর সব ঘটনা প্রিয়াকে শেয়ার করলো।প্রিয়া শুনে তো বেহুঁশ
—ও মাই গড ভার্সিটির সুদর্শন কাব্য চৌধুরী যার জন্য মেয়েরা পাগল ছিলো।দোস জানিস আমিও কাব্য ভাইয়াকে প্রথম দেখাতে ক্রাশ খেয়েছিলাম কিন্তু সে তো মেয়েদের পাওাই দিতো না।অহংকারী লোক একটা।
—কি বললি তুই?
—না মানে সেটা তো আগে ভাবতাম কিন্তু তখন কি জানতাম নাকি যে তার জিএফ আছে ।যাই হোক তুই তো ভাগ্যবতী রে।
—আর সেটা হলাম কি করে রে বুঝতেই তো দেরি হয়ে গেলো।কি করে তাকে ফিরিয়ে আনবো।
—দোস্ত বলে ফেল যে তুই ও তাকে ভালোবাসিস
—নারে সরাসরি বলবো না আমার বিশ্বাস ভালোবাসার টান থাকলে পূর্ণতা পাবেই
—অল দ্যা বেষ্ট বন্ধু।
শেষ বিকেলের সুর্যাস্ত দেখবে বলে নিশি ছাদে উঠলো ,সেখানে গিয়ে রিয়া কে দেখতে পেলো।নিশিকে দেখে রিয়া বললো
—আরে আপু এসো এসে দেখো আমার নতুন গাছটায় কি সুন্দর ফুল ফুটছে ।
—ওয়াও কি সুন্দর
—তোমার ভালো লেগেছে?
—হুম খুব
—নিবে তুমি?
—নাহ ফুল ছিড়তে ভালো লাগে না গাছের ফুল গাছেই মানায়
—ঠিক বলছো,জানো আপু আমার খুব ইচ্ছে ভাইয়ার বিয়েতে হলুদের অনুষ্ঠানে বেশি করে কাঁচা ফুলে গয়না পরবো।কিন্তু দেখো ভাইয়া তো আসতেই চায় না।বলছে আর দেশে আসবে না।তুমিই বলো যদি না আসে তা হলে কি করে ভাইয়ার বিয়ে দিবো আর আনন্দ করবো বলো?
কথাটা শুনেই নিশির বুকে ছ্যাৎ করে উঠলো।সত্যিই কি অসবেনা?
—আপু চলো বাসায় যাই
—চল যাই
নিশি রিয়ার সাথে ওদের বাসায় আসলো,এসে দেখে খালা কাব্যের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে।নিশি উকি মেরে একটু দেখবে তারও উপায় নেই ।তখনই রিয়া নিশি আপু বলে ডাক দিলো আর নিশি আসতেছি বলে ওর রুমে চলে গেলো।কাব্য রিয়ার ডাক শুনেই বুঝতে পারলো নিশি ওদের বাসায় আছে ।বেচারা চাইলেও একটু দেখতে পারছে না।মায়ের সাথে কথা শেষ করে রিয়া কে চাইলে আন্জুমান বেগম মেয়ের কাছে নিয়ে ফোনটা দিলো।
রিয়া ফোন নিয়ে কথা বলতে লাগলো।আর পাশ থেকে নিশি কাব্যের সব কথা শুনতে পেলো কিন্তু কি করে বলবে একটু দেখতে চায় কাব্য কে।
রিয়াও কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে নিশিকে এক নজর দেখিয়ে দিলো কাব্যকে।কাব্য ভেবাচেকা খেয়ে বসলো।ওর দুষ্টু বোনটা না চাইতেই এমন একটা কাজ করে বসলো।
—কি হলো ভাইয়া মন ভালো হইছে তো?
—মানে কি বলতে চাস তুই
—যেটা তোমার মন চাইলো সেটা তো করে দেখালাম তাই বললাম আর কি।
—বেশি পেকে গেছিস দারা তোর ব্যাবস্থা করছি শিগ্রই তোকে অন্যের বাড়ি পাঠানোর
—তার আগে তোমার ব্যবস্থা করবো এর আগে আমার টা হবে না।
পাশ থেকে নিশি ওদের কথা গুলো শুনতে লাগলো।ভাই বোনের দুষ্ট মিষ্ট কথা।
“দেখতে দেখতে রিয়া এস এস সি পাশ করে কলেজ ভর্তি হয়েছে।অন্যদিকে রনি তো সরাসরি কাব্যকে বলেই ফেলছে লেখাপড়া তো শেষ হতে আর কিছু দিন বাকি এর পর ও দেশে চলে যাবে আর সাথে কাব্য কে যেতে হবে।দেশে গিয়েই ওর বোনকে বিয়ে করবে।কাব্য প্রথমে ইয়ার্কি মনে করলে ও এখন এটা যে সিরিয়াসলি বলছে সেটা ও বুঝতে পারছে।কাব্য আর অমত করেনি, রনি ছেলেটা যথেষ্ট ভালো ছেলে।রিয়ার জন্য এমন ছেলেই ঠিক আছে।ওদের অবস্থা ও বেশ ভালো ।নিজেদের বিজনেস আছে,রনি এখানে কিছু করবে না বরং দেশে গিয়েই করবে।তবে ও দেশে যাওয়ার আগে ওর পরিবার কে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কাব্যের বাসায় আগে পাঠাবে সেটাই ঠিক করে রেখেছে।রিয়ার ছবি ওর পরিবারের সবাই কে দেখালে সবাই রিয়াকে পছন্দ করেছে।তাই রনি চিন্তা মুক্ত।তবে কথা গুলে কাব্য জানলেও কাব্যের বাসার কেউ এখনও জানে না।আর রনিও ভেবে রেখেছে কাব্য যতই বলুক দেশে যাবো না ওকে তো সাথে করেই নিয়ে যাবে আর ওর আর নিশির একটা ব্যবস্থা করেই ছারবে।
অনেক দিন পর কাব্যের ফোনে একটা মেসেস আসলো…মেসেসটি সিন করে পড়তে লাগলো
“আবার যদি রৌদ্র ওঠে
মেঘ কেটে যায় মনের..
আমি তোমার সঙ্গী হবে
বন ফুলো বনের”
খুঁজে দেখো মনের মাঝে
আমি আছি স্বপ্নের সাঁজে,
তোমার ওই চোখের তারায়
হাজার স্বপ্ন এসে দাঁড়ায়,
সুখের সেই স্বপ্নের মাঝে,
পাবে তুমি আমায় ।”
কিন্তু কে লিখতে পারে এমন করে? আর বেশি কিছু না ভেবে ঐ নম্বরে কল করলো কিন্তু নম্বরটি বন্ধ পেলো…তবে লেখা গুলো কাব্যের মন ছুয়ে গেলো।আগে তো কল করে কথা বলতো না নম্বর ব্লক দেওয়ার পর এতো দিন বাদে আবার অন্য নম্বর দিয়ে মেসেস তবে এটা শিওর যে এই দুই নম্বরের মালিক একজনই শুধু এখন জানতে হবে কে সে….?
অপেক্ষার প্রহর
১২.(শেষ পর্ব)
বাসায় আজ নতুন মেহমান আসবে তাই অতিথি আপ্যায়নের জন্য কাব্যদের বাসায় আয়োজন চলছে।
“আগেই কাব্য রনির ব্যাপারে বাবা মাকে সবটা জানিয়েছে।রনি রিয়াকে পছন্দ করে ব্যাপার টা শুনেই আন্জুমান বেগম আর অমত করেনি।প্রথম থেকেই আন্জুমান বেগমের রনিকে পছন্দ যদিও ছেলের মতো ভাবতো তবে জামাই হিসেবে ও অনেক পছন্দ হয়েছে।কাব্যের বাবা প্রথমে একটু অমত করেছিলো কেনোনা মেয়ে সবে মাএ কলেজে পা দিয়েছে তাই ,কিন্তু আন্জুমান বেগম যেহেতু মত দিয়েছে তাই আর কাব্যের বাবা আর আপওি করেনি।
রনিদের বাসা থেকে ওর অভিভাবক কাব্যদের বাসায় আসবে রিয়াকে দেখতে।ছেলের পছন্দের কথা শুনে রনির বাবা মা আর দেরি করতে চাইলেন না।আজকাল আবার কলেজ পড়ুয়া সুন্দরী মেয়েদের জন্য বাসার প্রপোজাল আসে বেশি,তখন ভালো ছেলে পেলেই মেয়ের মা বাবা মেয়েকে তারাতারি পাএস্থ করে দেয় ।সেই ভয়ে বেচারা রনি আর দেরি করলো না।যদিও কাব্য আরো কয়েকদিন পরের কথা বললেও রনি কাব্যের কোনো কথাই শুনলো না।আর কাব্যও রনির কথায় সায় দিয়েছে।ওর বোনের জন্য যেমন ছেলে ও চেয়েছিলো তেমনটিই কাব্য পেয়েছে।
রনি যে রিয়াকে পছন্দ করে এটা শোনার পর থেকে রিয়া বেচারি শকের মধ্যে আছে।এটা সত্যি নাকি স্বপ্ন? পছন্দ ও করতো কিন্তু রনি করে এটা শুনার পর থেকেই ওর রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।”
বেশি আত্নিয় স্বজনদের বলা হয়নি শুধু মাএ নিশিদের পরিবার আর কাব্যদের পরিবার।রনিদের বাসা থেকে জানিয়েছে তাদের বিকেল হবে আসতে।
সব আয়োজন শেষ মেহমান আসার অপেক্ষা ।নিশিদের বাসার সবাই কাব্যদের বাসায় ।ছেলেপক্ষ মেয়েকে ন্যাচারাল লুকে দেখবে তাই আর পার্লার থেকে সাজানো হয়নি।নিশি রিয়ার রুমে গেলো।সেই বেচারি লজ্জায় রুম থেকে বেরই হচ্ছে না।
“কিরে রিয়া এতো লজ্জা পাচ্ছিস যে?আমি তো ভাবতাম আমার বোনটা বেশি কিছু বোঝে না,আর এ তো দেখছি লজ্জাবতী লাজুক লতা হয়ে আছে।কি ভাগ্য দেখ বড়ো বোনের আগে ছোটো বোনের বিয়ে।”
“আপু বিয়েটা কিন্তু আমি এখন করবো না আমার নিশি আপুকে আগে বিয়ে দিবো তার পরে আমি কবুল বলবো দেখে নিও”
বলে বোনকে জড়িয়ে ধরলো রিয়া “
“হুম হইছে আর পাকামো করতে হবে না,আয় তোকে মায়ের দেওয়া শাড়িটা পরিয়ে দেই।”
“ওয়াও আপু কি সুন্দর শাড়ি !খালামনির পছন্দ আছে বলতে হবে।”
“অনেক বেছে এটা তোর জন্য আনছে।”
নিশি রিয়াকে শাড়ি পরিয়ে হাল্কা করে সাজিয়ে দিয়েছে।নিশিও আজ শাড়ি পরেছে।খুব সুন্দর লাগছে ওকে।
এর মধ্যে ছেলে পক্ষ চলে এসেছে।তাদের ড্রয়িং রুমে বসানো হয়েছে।এসেই তারা মেয়ে দেখার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পরেছে।কাব্যের বাবা মেহমানকে নাস্তা দেওয়ার জন্য বললো।অনেক ধরনের খাবার তাদের সামনে দেওয়া হলো।নিশির মা গিয়ে নিশিকে বললো রিয়াকে নিয়ে আসতে।নিশি রিয়াকে নিয়ে ছেলেপক্ষের সামনে গেলো ।কাব্যের মা রিয়াকে নিয়ে তার পাশে বসালো।
ঐ দিকে তাদের সাথে আসা এক আন্টি নিশিকে দেখে চোখ আটকে গেলো।সে গিয়ে নিশির সাথে সেধে সেধে কথা বলতে লাগলো।কি নাম ,?কিসে পড়ে,?বিয়ে হইছে কিনা নিশি সবটার জবাব দিলেও বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করা মাএই কাব্যের মা গিয়ে আন্টিকে বললো “ওর বিয়ে ঠিক করা আছে” সামনেই ওর বিয়ে ।কথাটা সবাই শুনলো কিন্তু কেউ কিছু বললো না।নিশি তো মনে মনে অবাক ওর খালামনি কি বললো এটা আর কেনো বললো?
আর বেশি কিছু ভাবলো না নিশি,দিতে মায়ের পাশে গিয়ে বসলো।ঐ আন্টি কাব্যের মায়ের কথা শুনে মুখটা সাথে সাথে বাংলার পাঁচের মতো হয়ে গেছে।রনির মায়ের ভিষণ পছন্দ হয়েছে রিয়াকে শুধু তাই না সবারই পছন্দ হইছে।তখনই রনির মা একটা বক্স বের করে সবাই কে বললো
“কারো কোনো আপওি না থাকলে আমার হবু বউমাকে চেইন পরাতে চাই আর আমার ছেলে আসলে একবারে আংটি পরানো সহ বিয়ের কাজ টা সেরে ফেলতে চাই ,আপনাদের কি মত?”
কেউ আর অমত করেনি,রিয়াকে চেইন পরিয়ে দিলো।ঐ সময় ছেলেকে ভিডিও কল দিয়ে সবটা দেখানো হয়েছে।রিয়া তো লজ্জায় রনির দিকে তাকাতে পারছিলো না।কিন্তু রনি তো চোখ ফেরাতে পারছিলো না।অন্য দিকে কাব্য নিশি কে পাশ থেকে দেখে বুকের মধ্যে হাতুরি পেটা শুরু হয়ে গেছে ।নিশিকেও আজ অনিন্দ সুন্দর লাগছে।কিন্তু মনে জড়তা কাজ করছিলো তাই আর কথা বলার কথা সাহস করে বলতে পারেনি।নিশিও কাব্যকে দেখে নিশির ও সেম অবস্থা ।মেহমানরা চলে যাওয়ার আগে কাব্যের মা তাদের জানিয়েছে কাব্য দেশে ফিরলে ছেলের বিয়ে আগে দিবে তার পর মেয়ের বিয়ে দিবে ।এতে রনির পরিবার সম্মতি দিয়েছে।সবশেষে ছেলেপক্ষ মেয়ের বাড়ি থেকে বিদায় নিলো।
“নিস্তব্ধ রাত মোটামুটি সবাই ঘুমে কিন্তু নিশির চোখে ঘুম নেই।খালার কথা গুলো কানে বাজছে।এক তো বললো ওর বিয়ে ঠিক কিন্তু কেনো বললো? আরেক কাব্যের বিয়ে নিয়ে কথা বলছে।সত্যি কাব্য ভাইয়া আসলে তাকে বিয়ে দিবে? তা হলে আমার কি হবে ? আমি তো নতুন করে তাকে নিয়ে সপ্ন বুনছি।তা হলে দ্বিতীয় বারের মতো আবার আমি ..না না এসব ভাবতে পারছে না আর নিশি।চোখ বন্ধ করে ফেললো।
তা হলে কেনো এতো ভালবাসলে,কেনোই বা দূরে গেলে আর এখন কেনো ভূলে গেলে ?কিন্তু নিশির মন বলছে ওকে কাব্য ভোলেনি,ভুলতে পারেনা।যে মানুষটার মনে শুরু থেকে নিশি নামটা হৃদয়ে গাথা,সেই মানুষটা এতো সহজে সেই নামটি মুছে ফেলতে পারেনা ।নিশি আর বেশি কিছু ভাবতে পারছে না।ও শুধু ভাবছে ওর কাব্যকে চাই না হলে এ জীবনে বেঁচে থেকেও সব বৃথা।
অন্য দিকে কাব্যের ভাবনাগুলো ও সেম।এতো দূরে এসেও তাকে ভুলতে পারিনি।যতোই ভুলতে চায় ততোই মনে পরে।তারওপর মা বলছে নিশিকে নিয়ে না ভাবতে।সেটাও মেনে না নিয়ে উপায় নেই,আবার দেশে গেলে মা অন্য মেয়ের সাথে বিয়ে দিবে এটাও মেনে নিতে পারবে না তাই কাব্য ঠিক করলো দেশেই যাবে না ,রনিকে একাই পাঠাবে।কিন্তু ওর মা যে রাগি ছেলের তো মায়ের কথা না শুনেও উপায় নেই ,কি করবে কাব্য ভাবতে পারছে।কষ্টে মাথার চুলগুলো ধরে টানতে লাগলো কি করবো আর কি হবে।শতো চিন্তার মাঝেও নিশির মায়া ভরা মুখটা ভেসে উঠতেই সব চিন্তা উধাও হয়ে যায়।কাব্য আবার নিশির ভাবনায় ডুব দেয়।
“দিন গুলো এভাবেই পার হতে লাগলো কিন্তু এর মাঝেই পাকৃতিক নিয়মে সবটার পরিবর্তন ও ঘটে থাকে।রনি আর কাব্যের এমবিএ কমপ্লিট।এখন দেশে ফেরার পালা কিন্তু কাব্য কোনো মতে দেশে ফিরতে নারাজ।রনি অনেক বোঝানো কোনো কিছুতেই রাজি হচ্ছে না।কাব্যের বাবা আর রিয়া অনেকবার বললেও কাজ না হলে শেষে মায়ের শরির ভালো না বলায় কাব্য আর থাকতে পারলো না।দুজনে সব গুছিয়ে নির্ধারিত সময়ের ফ্লাইটে রওয়ানা হলো বিডির উদ্দেশ্য।
ওদের রিসিভ করতে দু বাড়ির লোকজন আসছে।রনি আর রিয়ার সাথে প্রথম দেখা রিয়া আজও রনির দিকে লজ্জায় তাকায়নি মেয়েটার এতো লজ্জা কেনো? বিয়ে ঠিক হবার পর থেকেই লজ্জায় কথাও ঠিক ভাবে বলেনি,আর আজ দেখা হয়েছে তাও সেই লাজুকলতা সেজে আছে।হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো বেচারা রনি।
কাব্য তো বাসার সবাই কে পেয়ে অনেক খুশি।দু বছরের বেশি সময় পর ছেলেকে পেয়ে কাব্যের বাবা মা দুজনেই কান্না করতে লাগলো।ছেলের জন্য খুব চিন্তা হতো আন্জুমান বেগমের।কিন্তু এখন কাছে পেয়ে সব চিন্তা শেষ হলো নিমিষেই।
দু পরিবারের কথা শেষ করে যে যার বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা হলো।
গাড়ি থেকে বাসার গেটে নেমে অন্যরকম শান্তি অনুভব করতে লাগলো কাব্য।মনে মনে একজন কে খুঁজছে ।সিঁড়ি বেয়ে যতো উপরে উঠতে লাগলো ততোই ওর বুকের হার্টবিট বেড়ে যেতে লাগলো।তিনতলায় এসে কলিং বেল দিতেই আইরিন বেগম দরজা খুলে কাব্য কে দেখেই বুকে জড়িয়ে নিলো।ছেলেটার অনেক দিন পর পেলো।জয়নাল সাহেবের সাথে দেখা করলো ।ভেতরে ডুকতে বললে কাব্য আর ডুকলো না ,অন্য সময় আসবে তাই বললো।কয়েকবার ভেতরে উকি দিলো যদি একটু নিশির দেখা পায় কিন্তু নাহ দেখা পেলো না।হতাশ হয়ে আবার সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো।নিজেদের ফ্লাটে গিয়ে ডুকলো।অনেক পথ জার্নি করেছে তাই খুব ক্লান্ত লাগছে।আন্জুমান বেগম ছেলেকে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নিতে বললো।ছেলের পছন্দের খাবার আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছে সেটাই ছেলেকে নিজ হাতে খাওয়াবে।
অনেকদিন পর সামনে না হলেও আড়াল থেকে একনজর কাব্যকে দেখে নিশির আজ অনেক আনন্দ লাগছে ।মানুষটা ঠিক আগের মতোই আছে।তবে চেহারার পরিবর্তন হয়েছে অনেক,আগের থেকে বেশি সুন্দর লাগছে।
“পুরোনো বন্ধুদের সাথে ফোনে কথা বলে বের হলো।আগের সেই পুরোনো আড্ডার জায়গায় সবাই একসাথে হইছে।কয়েকজনই জব করে আবার কেউ বিজনেস করছে।এদের মধ্যে ফাহিমের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে তাই নিয়ে অন্য বন্ধুরা বেশ আফসোস করলো। কাব্য ওদের সান্তনা দিলো যে ধৈয্য ধর সবারই একে একে সিরিয়াল আসবে।ফাহিম বলে উঠলো
“কাব্য এবার নিশির সাথে বিয়েটা ফাইনাল করে ফেল”
আমরা সবাই তোর বিয়েতে আনন্দ করবো ইয়ার।
“বাদ দে তো আর বিয়া তাও নিশির সাথে,মা ও সব ভুলে যেতে বলছে।ডিসিশান নিয়েছি বিয়ে করবো না।”
“কিন্তু কেনো রে ? নিশির ব্যাপারটা তো শুনলাম তা হলে সমস্যা কোথায়?
“ আছে অনেক সমস্যা আর এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।তোদের টা নিয়ে ভাব”
“ঠিক আছে মন খারাপ করিস না এ নিয়ে আর আমরা কেউ তোকে কিছু বলবো নারে”
কাব্য অনেক ক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসলো।প্রায় দু তিন দিন হয়ে গেলো কিন্তু কাব্যের সাথে নিশির দেখা হলো না।কাব্য ভাবছে আজব তো কোথাও দেখি না কেনো ? আবার ভাবছে ও তো আমাকে ভালোবাসেনা তা হলে দেখা হলেই বা কি হবে।তার চাইতে না হওয়ার ভালো।মন খারাপ করে বিছানাতে গা এলিয়ে দিলো।
“রনিদের বাসা থেকে ফোন আসছে আন্জুমান বেগম আর রায়হান চৌধুরী অনেকক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে ড্রয়িং রুমে বসে নিজেরা কথা বলছে,ঐ সময় কাব্য আসলো।মা ওকে ডেকে পাশে বসালো।আর বললো
“রনিদের বাসা থেকে ফোন করছিলো”
“কি বললো ওরা?
“ওরা বিয়ের জন্য বেশি দেরি করতে চায় না বিশেষ করে রনি”
“ভালোই তো শুভ কাজে দেরি কেনো?
“হুম সেটাই তবে আমি ওদের বলে দিয়েছি ঘরে আমার ছেলের বউ এনে তবেই মেয়েকে বিয়ে দিবো”
“কি বলছো মা এসব?
“ঠিক বলছি আর শুনে রাখো আমি তোমার জন্য মেয়ে দেখে রেখেছি আর ঐ মেয়ের সাথেই বিয়ে হবে আর অমত করলে ভাববো মাকে ভালোবাসোনা আর মায়ের কথার দাম তোমার কাছে নেই”
কাব্য মায়ের এই কথার ওপর আর কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।কিছু না বলেই বাসার বাইরে চলে গেলো।
রায়হান চৌধুরি আন্জুমান বেগমকে বললো” ছেলেকে এমন প্রেসার ক্রিয়েট করলে হিতের বিপরীত না হয় কাব্যের মা”
তুমি চিন্তা মুক্ত হও ছেলে আমাদের মতের বাইরে কিছু করবে না আর আমার ওপর বিশ্বাস রাখো।যা করবো ছেলের ভালোর জন্যই করবো।
কথা গুলো শুনে কাব্যের বাবা স্বস্তি পেলো।
কাব্য রনিকে ফোন করে একটা রেস্টুরেন্ট এসে অপেক্ষা করতে লাগলো ।কিছুক্ষণ বাদেই রনি এসে বাজির ।
“আরে সমন্ধি যে কি খবর ?তো আসলি যখন বোনটাকে নিয়ে আসতে পারতি,আল্লাহ কি একটা মেয়েকে পছন্দ করলাম সামনেও আসতে চায় না আবার কথাও বলতে চায় না বিয়ের পর যে কি হবে তাই ভাবছি”
তোর এসব কথা বন্ধ করবি? তোরটা তো ফিক্সট হয়ে আছে আর আমাকে দেখ মা আমার জন্য মেয়ে ঠিক করে রেখেছে আর তাকেই বিয়ে করতে হবে।তুই বল চিনি না জানিনা ,দেখতে কেমন আর তাকেই বিয়ে করতে হবে?উফ আর কিছু ভাবতে পারছি না।
“চাপ নিস না দোস্ত দেখিস ভালো কিছু হবে ,মা বাবা যা করে সন্তানের ভালোর জন্য করে।রাজি হয়ে যা।আর তোর বিয়েটা হলে আমার রাস্তাটা ক্লিয়ার হয় রে।
বুঝতে পারছি সবাই এক ,কেউ আমার মনের কথা গুলো বুঝলো না।ঠিক আছে সবার স্বার্থে আমি বিয়েটা করবো।তবে মন থেকে নয়।বলে চলে আসলো।
রনি কাব্যকে অনেকবার ডাকলো কিন্তু কাব্য আর ফিরে তাকায়নি ।
“অন্য দিকে নিশি রিয়ার কাছ থেকে কাব্যের ব্যাপারটা জানতে পেরেছে।সবটা শুনে মুখের কথা হারিয়ে ফেলেছে।কি শুনলো ও?কি করে সম্ভব এতো বছর ধরে কাব্য ওকে ভালোবাসলো আর শেষে কিনা অন্য কাউকে বিয়ে করবে ? এই তার ভালোবাসা? এ সব ভাবতে থাকে আবার ভাবে আমি যে তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছি এ কথা তার অজানা আর তার ভালোবাসার মুল্য দিতে পারিনি বলেই সে দূরে চলে গিয়েছিলো।আমি তো তাকে বলতেই পারিনি।এতো দিনে তার ভালোবাসার দাবি নিয়ে সামনে যেতে পারিনি বরং পালিয়ে বেড়াচ্ছি।সত্যিই তো আমি তো তার যোগ্য না,হোক না সে অন্য কাউকে নিয়ে সুখি।এ সব মনে মনে বলতে লাগলো আর চোখ ভিজাতে লাগলো ।
মায়ের ডাকে স্বাভাবিক হলো নিশি,বুঝতে দেওয়া যাবে না ।মায়ের কাছে গিয়ে বসলো।বাবাও ছিলো সেখানে,
“মা এখন তো বড়ো হয়েছিস লেখাপড়াও শেষ হবে তোর বাবা আর আমি মিলে তোর জন্য পাএ দেখেছি।
কথাটা শুনেই নিশি চমকে গেলো।কিন্তু কিছু বললো না।বলার মতো কিছু নেই।
জয়নাল সাহেব মেয়েকে বললো
“তোর কি মতামত মা?
“বাবা মা তোমরা যা ভালো মনে করো তাই করবে,আমার কেনো কথা নেই বলেই ওখান থেকে চলে আসলো।”
একই সাথে এমন দুটো কথা শুনে নিশির মনে হচ্ছে পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটাই বৃথা কিন্তু নাহ খারাপ কিছু করা যাবে না।এটা ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বলা যেতে পারে ।সবাই সব কিছু পায় না,আর সবাই পরিপূর্ণ সুখী হয় না,হলাম না হয় অসুখীদের একজন ।তবে আফসোস একটা বার মন খুলে তাকে বলতে পারতাম
“ভালোবাসি ভালোবাসি”এতোদিন তোমার অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম আমি।তোলা থাক কিছু কথা মনের ডায়েরিতে।”
দুই পরিবারে বিয়ের আমেজ শুরু হয়ে গেছে।কাব্যের আর নিশির একই দিনে বিয়ে ঠিক হইছে।দুজনের ই কমিউনিটি সেন্টার এ বিয়ে হবে।তবে কারো সাথে আর দেখা হলো না।কাব্য তো বিয়ের কথা শোনার পর থেকে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছে না অন্যদিকে নিশির ও একই অবস্থা।
ঘরোয়া ভাবে ওদের দুজনের হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো,মেহমানে ভর্তি দুই বাসা।রনিদের বাসা থেকেও সবাই এসেছিলো কিন্তু ওরা অনুষ্ঠান শেষে আবার চলে গেছে।
আজ সেই শুভক্ষণ”বর বেশে কাব্য, বন্ধুরা মিলে কাব্য কে রেডি করিয়েছে।বাসার সবাই সাজগোজ শেষ করে কমিউনিটি সেন্টার এর উদ্দেশ্য রওয়ানা হলো,বাকি আত্নিয়রা ঠিকানা অনুযায়ী সেখানে চলে যাবে।
নিশিকে পার্লার থেকে সাজানো হয়েছে তবে ওর সাথে রিয়া সারাক্ষণ ছিলো।রিয়াও আজ পার্লার থেকে সেজেছে।সাজানো শেষে ওরা কমিউনিটি সেন্টারে চলে গেলো।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো।কাব্যের টা আগে শুরু হলো ,কাজি সাহেব ওর সামনে গিয়ে কি কি বলছে সে দিকে ওর কোনো খেয়াল নেই ,ওর ভাবনায় কেবল নিশি,এক পর্যায়ে ওকে কবুল বলতে বলা হলে বলছে না ,উপস্থিত সবাই ওকে বলতে বললে অনেক কষ্টে কবুল বলে কাবিন নামায় সিগনেচার করে দেয় ।পাশে যে কনে কে ? কি নাম তার তাও খেয়াল করেনি।
অন্যদিকে নিশির সামনে কাজি সাহেব গিয়েছে ,ওর ও একই অবস্থা,কাজি কি বলছে কিছুই খেয়াল করছে না ..কবুল বলতে বললো তাও বলছে না,অনেক বার বলার পরে কবুল বলে কোনো মতে সই টা করে দেয়।সবাই তো খুশি ,এবার কনে বিদায়ের পালা ,নিশির কান্না বন্ধ কেমন যেনো পাথর হয়ে গেছে,কিছু বলছে না।সবাই ওকে নিয়ে বাইরে গাড়ির সামনে আসলো।গাড়িতে বসিয়ে দিলো কিন্তু গাড়িতে ওঠা মাএই নিশি অজ্ঞান হয়ে গেছে।ঐ অবস্থায় ওকে বরের বাড়ি আনা হলো।কেউ একজন ওকে কোলে করে এনে বাসর ঘরে রেখে গেলো।
কাব্য ও বউ নিয়ে বাড়ি আসলো কিন্তু সারাপথ নববধুর দিকে ফিরেও তাকায়নি গাড়ি থামার সাথে সাথে গেট খুলে কোথায় যেনো চলে গেছে।শেষে বন্ধুরা বুঝিয়ে বাসায় পাঠালো ।যা হবার হয়ে গেছে এখন তো বউকে কষ্ট দেওয়া ঠিক হবে না।
নিশির জ্ঞান ফিরতেই বোঝার চেষ্টা করলো কই আছে? মনে পরলো ও তো এখন বিবাহিতা তার মানে এখন সে বরের বাড়িতে তার রুমে আছে ।পাশে টেবিল ল্যাম্প ছিলো সেটা অন করে দিলো।বেশি একটা আলো না।তবে মোটামুটি দেখা যায়।হঠাৎ করে দরজা খোলার শব্দে নিশি নিজেকে ঠিক ঠাক করে ঘোমটা টেনে বসলো।মনের মধ্যে ভয় শুরু হয়ে গেলো,কি হবে কি হবে?দেখলো লোকটা কেমন ঢল ঢল করছে,আর ওর দিকে এগিয়ে আসছে।নিশি বুঝতে পারলো সে নে/শা গ্রস্থ অবস্থায় আছে।চিৎকার করে বললো
“থামুন আর এক পাও এগোবেন না ,না হলে খারাপ কিছু হয়ে যাবে।লোকটা থেমে গেলো,কেমন পরিচিতো কন্ঠ মনে হলো,মাতাল সুরে বলতে লাগলো
“আসলে কি হবে?
“আসবেন না বলছি তো “
“কিন্তু কেনো? আর তুমি তো আমারই বিয়ে করা বউ”
“তাতে কি হইছে আমি এ বিয়ে মানি না”
“কেনো?আর কি কারন”
“কারন আমি একজনকে ভালোবাসি আর তার নাম কাব্য”
কথাটা শুনেই সামনের মানুষটা তার মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে নিশির ঘোমটা উঠালো, মুহূর্তেই নিশি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।এ কাকে দেখছে?সত্যিই কি নাকি ওর চোখের ভ্রম,চোখ মুছে আবার দেখলো না এটা মিথ্যে নয় সত্যি নিশি আর কোনো কথা না বলে সময় নষ্ট না করে কাব্যের বুকে ঝাপিয়ে পরলো।
“সত্যি তুমি ? আমি তো জানি অন্যকেউ।বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি ,কাব্যে এতোক্ষণ বিশ্বাস ই করতে পারছিলো না এটা ওরই নিশি।তার মানে ওর সাথেই বিয়ে হইছে।কাব্যও নিশিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো,
“আমি তো ভাবছি চিরতরে হারিয়ে ফেলছি আমি আমার প্রিয়তমাকে”
আর দেখো আমি নে/শা করিনি জাস্ট ওটা দেখানোর জন্য ভাব ধরেছিলাম।
তখনই বাইর থেকে আওয়াজ আসলো ভেতরে ডুকতে পারি? বলেই কাব্যের মা আর নিশির মা ভেতরে ডুকে লাইট অন করে দিলো।আর হাসতে হাসতে বলতে লাগলো
“কি কেমন ছিলো সারপ্রাইজ ?
“তার মানে কি মা?
“মানে এ সব এই দুই বোনের কারসাজি বলে জয়নাল সাহেব আর রায়হান চৌধুরি হাসতে লাগলো।
“তোরা তো দুজন কেউ কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারবি না কাই এই প্লান করছি।দু জন দু প্রান্ত থেকে কষ্ট পাচ্ছিলি তাই।
কাব্যের মা বলতে লাগলো
“তবে হা আমি তো জানতামই না আমার নিশি মাও তোকে ভালোবাসে ,তোর ডায়েরি পরে ও সবটা জেনে যায় আর রিয়া সেটা দেখে আমাকে জানায় ,তারপর থেকেই বুঝতে পারছি মেয়েটা তোর প্রতি কতোটা দুর্বল,বাসায় আসতো ভিডিও কলে কথা বলার সময় তোকে একনজর দেখার জন্য,পাশ থেকে দেখেই চলে যেতো,তোর ছবি নিয়ে সারাক্ষণ দেখে দেখে কথা বলে সময় পার করছে,এটাও আমাদের চোখ এড়ায়নি।আর সবচাইতে বড়ো কথা হলো ছোটো বেলা থেকেই আমি আর তোর খালামনি ঠিক করে রেখেছিলাম বড়ো হলে তোদের বিয়ে দিবো সেই কথা আমরা ঠিক রেখেছি।এবার তোরা সব ভুলে সুন্দর ভাবে সংসার কর।এটাই আমাদের সবার চাওয়া।
ঐ সময় কাব্যের সব বন্ধুরা আর রনিও হাজির
“কি বন্ধু চমকে গেলি তো”
“তার মানে তোরাও এর সাথে জড়িত ? সবাই জানতি ?
“ হা আমরাতো আগে থেকেই সবটা জানতাম আন্টিই জানায় আমাদের কিন্তু বলতে মানা ছিলো।
সবার কথা শেষ করে রুম ত্যাগ করলো শুধু রিয়া বাদে
কিরে তুই জাবি না?
না যাবো না..
“ভাইয়া আমার পাওনাটা দাও না হলে আজ রাতে আমি এখানেই থাকবো”
“কাব্য কোনো উপায় না দেখে ওর ওয়ালেট টা রিয়ার হাতে দিয়ে ওকে বিদায় দিলো।দরজা বন্ধ করে নিশির সামনে এসে বসলো,হাতটা ধরে বলতে লাগলো
আজ আমার জীবনের সবচাইতে আনন্দের দিন,সত্যি বাবা মা যা করে সন্তানের ভালোর জন্যই করে।
“হুম ঠিক তাই”
“আচ্ছা নিশি সত্যি করে বল তো এই মেসেস গুলো তুই দিয়েছিস?
নিশি কাব্যের ফোনের মেসেস গুলো দেখে আর কিছু বলতে পারলো না,মাথা নাড়িয়ে বুঝালো ওই দিতো।
“তার মানে ঐ কল গুলো ও তোর ছিলো তাই না ?
“হুম”
“এতোটা ভালোবাসতে শিখেছিস?যাক দূরে গিয়ে ভালোই হলো কাছে থাকলে তো বুঝতে পারতি না আমাকে।
“বাদ দাও না এ সব কথা,আমারা আমাদের সবকিছু নতুন ভাবে শুরু করতে চাই যেখানে শুধু ভালোবাসা আর বিশ্বাস ছাড়া কিছু থাকবে না।
“হুম ঠিক বলছিস হলে কাব্য নিশির ললাটে চুমু একে দিলো।নিশি আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো।”
হুট করেই কাব্য নিশিকে কোলে তুলে নিলো
“ কি করছো ছাড়ো
“ নাহ আজ কোনো কথা নয় “মন যা চাইবে তাই করবো,চলো ছাদে গিয়ে জোৎন্সা বিলাস করবো”
নিশিও সায় দিয়ে কাব্যের গলাটা শক্ত করে ধরে রাখলো “দুজনের চোখে চোখ রেখে চলতে লাগলো সিঁড়ির বেয়ে উপরের দিকে।অবশেষে এতোদিন পর দুজনের অপেক্ষার প্রহরের অবসান হলো॥
“ভালোবাসা সত্যিই সুন্দর ।আর সঠিক মানুষটি জীবনে পেলে ভালোবাসাটা আরো রঙিন লাগে।এভাবেই বেঁচে থাকুক পৃথিবীর সকল ভালোবাসা।”
(সমাপ্ত)
carnation e book
Carnation Academy Premium Bundles
Carnation Academy Premium Bundles

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *