২.
সারাপথ নিশি কাব্যের রাগ নিয়ে চিন্তা করলেও শেষমেষ ওর সাথে খারাপ কিছু হয়নি।গন্তব্য স্থলে এসে গাড়ি থেকে নেমে একসাথে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলেও একটা কথাও কাব্য নিশির সাথে বলেনি।
নিশিদের বাসা তিনতলা আর কাব্যদের পাঁচ তলা।নিশি তিন তলায় এসে দাঁড়ালো আর কাব্য সোজা উপরে চলে গেলো ,এমন ভাব করলো যেনো ওর সাথে কেউ ছিলো না।
নিশি মনে মনে হাফ ছাড়লো,
—উফ এ যাএার বেঁচে গেলাম।কিন্তু হঠাৎ এমন ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল হয়ে গেলো যে ব্যাপার কি???
বাসায় ঢুকেই ড্রয়িং রুমে ছোটো বোনকে দেখে কাব্য অর্ডার করলো
—এই ছুটকি এক গ্লাস পানি দিয়ে যা তো।
বলেই নিজের রুমে চলে গেলো।
—এসেছে নবাব জাদা খালি এটা দে ওটা দে,বলি কি আমাকে তোমার কাজের মেয়ে মনে হয় নাকি? হুম
“কথা গুলো শুনে কাব্য হাসতে হাসতে রুমের ভিতর ঢুকলো।ও জানে ওর প্রাণ প্রিয় বোনটাকে কিছু বললে এমনি উওর দেয় আর ওকে জ্বালাতেও ওর খুব ভালো লাগে।”
পাশ থেকে মা বলে উঠলো..
—আহা এমন করে বলছিস কেনো যা দিয়ে আয় পানিই তো চাইছে।ছেলেটার কষ্ট হয়ে গেছে না।
—হুম কষ্ট হয়ে গেছে।এ কথা তো বলবেই একমাএ রাজকুমার যে তোমার ।রাজ্য জয় করে এসেছে যে।
—হুম তা তো বটেই,আর তুই আমার রাজকন্যা হয়েছে এবার যা গিয়ে দিয়ে আয়।
—এই নাও ভাইয়া তোমার পানি আর হা আমার একটা সুন্দর নাম আছে ওটা বলে ডাকবে ..এখন বড়ো হয়েছি না এই নামে ডাকলে আমার বান্ধবীরা শুনে হাসে ,প্লিজ ভাইয়া আর ডেকো না।
—যতো বড়োই হোস না কেনো আমি ঐ নামেই ডাকবো।
—তা হলে আমি আর তোমার কোনো কাজ করে দিবো না বলে দিলাম,বিয়ে করে বউ এনে নাও,তারপর তাকে দিয়ে করিয়ে নিও।
কাব্য বোনের দুষ্টুমি করে কান টেনে ধরে বলতে লাগলো
—কি বললি আমার কোনো কাজ করে দিবি না
—নাহ দিবো না
—তা হলে আর কি আমি যে চকলেট গুলো এনেছিলাম ঐ গুলো অন্য কাউকে দিয়ে দিবো।
—চকলেট..?দাও না ভাইয়া ভুল হয়ে গেছে আর তুমি যে নামে ডাকো সমস্যা নেই কিন্তু চকলেট চাই আমার।
—এই তোরা কি শুরু করলি বল তো? দুটোই বড়ো হয়েছিস কিন্তু বুদ্ধি জ্ঞান একটার ও বাড়েনি দেখছি।বাবা খেতে ডাকছে চলে আয় ।
—দেখোনা মা ভাইয়া আমাকে চকলেট দিচ্ছে না।
—তোদের কোনো ব্যাপারে আমি নাই গেলাম আমি॥
—এই নে আর হা ভাবি চাই তোর সেটা পেয়ে যাবি খুব শিগ্রই।
—সত্যি ভাইয়া তুমি তাকে বলছো সব।
—আরে নারে ও তো বুঝেই না ,বাদ দে খবরদার তুই আবার বলতে যাস না কেমন।সময় হলেই বলবো।
—তুমি নিঃচিন্তে থাকো ভাবি জানতে পারবে না।তুমি আসো আমি যাই।
“কাব্য নিশিকে পছন্দ করে ব্যাপারটা কাব্যের বাসার সবাই জানে আর খুশিও সবাই ,কিন্তু ওর অনুরোধে কেউ ও বাসার কাউকে বলতে পারছে না।ওর একটাই কথা লেখাপড়া শেষ করে নিজের একটা অবস্থান করে নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিবে আর এর মধ্যে নিশি যদি ওর মনের কথা জানতে আর বুঝতে পারে তা হলে তো আর কথাই নেই।কিন্তু মাঝে মাঝে কাব্যের ভিষণ ভয় হয় নিশিকে নিয়ে ওর বাবা আবার কোনো ঝামেলা করে না বসে।যদিও এটার চাইতে আরেকটা ভয় ও পায় সেটা হলো নিশিকে নিয়ে ও আবার অন্য কাউকে ….না না এ সব নিয়ে কাব্য ভাবতে গেলে ওর জানে পানি থাকে না।যে করেই হোক ওর ভালোবাসাকে ওর চাই,আজীবনের জন্য চাই।”
সবাই একসাথে ডাইনিং এ খাবার খেতে বসেছে ।তখন কাব্যের বাবা কাব্যকে উদ্দেশ্য করে বললো
—ফাইনাল ইয়ার তো শেষ হতে চললো।এর পরে কি ভেবে রেখেছো?
—কোন ব্যাপারে ?
—এমবিএ টা কোথায় করতে চাচ্ছো?আমার কিন্তু ইচ্ছে তুমি বিদেশ থেকে করে আসো।
—কিন্তু বাবা আমার ইচ্ছে দেশেই করবো।আর এখানেই কিছু একটা করবো বাইরে যাবার মতো মন আমার নেই।
—অহ ভালো কথা তবে আমার কথাটাও ভেবো যদিও আমি জোর করছি না।
—হুম ঠিক আছে বাবা
খেয়ে নিজের রুমে এসে শুয়ে পরলো।খুব করে নিশির কথা মনে পরছে।কাছে রাখা অনেক আগের একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবিটা যেটা কিনা ও সবসময় ওয়ালেট এ রেখে দেয়।ওটা বের করে দেখছে আর ভাবছে..দেখতে দেখতে অনেক বছর পার হয়ে গেলো।দুজনেই বড়ো হয়ে গেছি
—তোকে আর বকা দিবো না,তোকে সময় দিতে চাই যাতে করে আমাকে বুঝতে পারিস।আমার রাগটাই চোখে পরে তোর?তুই বুঝিস নাহ তোকে কতোটা চাই।ছবিটাকে চুমু খেয়ে বুকের ওপর রেখে চোখ বন্ধ করে বলতে লাগলো
“তোমার অপেক্ষায় আমি” প্রিয়তমা ॥
~~~~
বিকেলের আবহাওয়াটা বেশ লাগছে,আর সেটা যদি হয় বৃষ্টি হওয়ার পরের মুহূর্তটা তা হলে তো কোনো কথাই নেই।ছাদে উঠে এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ উপভোগ করতে লাগলো নিশি।ছাদটি বেশ বড়ো অনেক ধরনের ফুল ফলের গাছ দ্বারা পরিবেষ্টিতো।ফুল গাছ গুলো ওকে খুব করে কাছে টানে।মাঝে মাঝে গাছ গুলোর সাথে কথা ও বলে নিশি,আজও তাই করছে আর এ সব দরজায় দাড়িয়ে একজন খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে।হা সেটা কাব্য ,কাছে না গিয়ে অনেকক্ষণ ধরে দেখে নিচে নেমে গেলো।যদিও নিশি টের পায়নি,এর পরই আবার কাব্যের বোন রিয়া ছাদে আসলো..
—আপু কি করছো?
—আরে রিয়ু তুই আয় এদিকে গাছের সাথে কথা বলছিলাম।
—আপু তুমি গাছের ভাষা বুঝো মানে ওরা ও কি তোমার সাথে কথা বলে?
—হুম বুঝি ওদের ও তো জীবন আছে নাকি?
—তা হলে তুমি কারো মনের ভাষা বুঝো না কেনো?
—মানে কি বলছিস কারো মনের ভাষা মানে??
—উফ সরি আপু কিছু না এমনি বললাম।
—ওহ,আচ্ছা শোন তোর লেখা পড়া কেমন চলছে?
—ভালো আপু,তোমার নতুন ভার্সিটি কেমন লাগছে?
—ভালো রে।আচ্ছা আপু আমি যাই মা আবার খুঁজবে আমায় তুমি এসো বাসায়।
—আচ্ছা যা।
অনেকক্ষণ ধরে ছাদের দোলনায় বসে আছে আর গুন গুন করে গান গাইছে নিশি।হঠাৎ ফোনের রিংটোনের শব্দে গান থামিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে ওর কলেজ লাইফ এর বেস্টু ফারিয়ার কল।রিসিভ করে কথা বললো।ওরা দু তিন জন মিলে নিশিদের বাসায় এসে ওকে না পেয়ে কল দিয়ে শুনলো নিশি ছাদে আছে আর নিশিও ওদের ছাদে আসতে বলে দিছে।ফারিয়ার সাথে রিফা আর জবাও আছে।
অনেকদিন পর ওরা একসাথে হলো।একই কলেজে পড়ে পাশ করে সবাই আলাদা আলাদা জায়গায় চান্স পেয়ে ভর্তি হয়েছে তাই সবার মনেই দুঃখ আর কষ্ট ।এতো পরানের পরান জানের জান বেষ্টু গুলো আলাদা হলে তো কষ্ট লাগারই কথা।
কষ্টের কথা গুলো এরে অপরে বলছে আর আফসোস করছে কিন্তু এ সবের মাঝে জবা বলে বসলো..
—আরে নিশি তোর কাজিন কাব্য ভাইয়ার সাথে সিঁড়িতে দেখা ইয়ার।কি হ্যান্ডসাম দেখেই তো ফিদা আমি।
রিফাও বলে বসলো
—হা রে আর বলিস না দেখলে দেখতেই মন চায় ,এমন একটা কাজিন আমার যদি থাকতো রে উফ যে করেই হোক নিজের করে নিতাম।
নিশি ওদের কথা শুনে টাস্কি খেলো।কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছে না।
তখন ফারিয়া বলে উঠলো
—আরে তোরা থামবি ,তার দিকে নজর দিয়ে লাভ নেই।
জবা বললো
—কেনো কেনো??
ফারিয়া জবাব দিলো
—কেনোনা আমার বড়ো ভাইয়া আর কাব্য ভাইয়া বেষ্ট ফ্রেন্ড আর ওরা একই ভার্সিটিতে পড়ে।ভাইয়ার কাছে একদিন শুনছিলাম কাব্য ভাইয়ার নাকি জন্মগতোই গার্লফ্রেন্ড আছে মানে সে বুকড্।
তখন রিফা আর জবা এক সাথে চিৎকার করে বলে উঠলো
—কিহ জন্মগতো গার্লফ্রেন্ড আছে ????
—জ্বী
—কিন্তু কে সে মানে মেয়েটা কে? কই থাকে ? কি তার পরিচয়?
—উফ এতো কিছু আমি জানি না আমাকে ভাইয়া বলেনি আর বলবেও না,আমারও কোনো ইন্টারেস্ট নাই জানার ।তাই স্টপ কর এসব।
এ সব শুনে নিশি কেমন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো ,কি শুনলো সত্যি নাকি মিথ্যে।কিন্তু কই কাব্য ভাইয়া তো কখনও আমায় কিছু বলেনি।আবার ভাবছে এ সব কেনো বলবে ওকে ,যার যার পার্সোনাল ম্যাটার ইচ্ছে করে না বললে সেখানে শোনার কিছু থাকে না।তবে কে সে ? আর জন্মগতো গার্লফ্রেন্ড মানে কি।
ধূর কি সব ভাবছি ,থাকতে পারে তাতে আমার কি?
ফারিয়া বলল
—এই নিশি কি ভাবছিস রে?
—কিছু নারে,
—তোর কাজিন তুই কিছু জানিস নাহ?
—কাজিন হলেই যে জানতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।
—তবে আমি কিন্তু প্রথমে তোর কথাই ভেবেছিলাম ইয়ার
—আমার কথা??
—হা হতে পারে না?? তা ছাড়া তোদের মধ্যে সম্পর্ক টা ও তো ভালো।
—ভালো না ছাই সেই ছোটো বেলা থেকে আমাকে জ্বালিয়ে মারছে।আমার সব কিছুতেই ইন্টারফেয়ার না করলে চলে না তার,আর এ সব ভাবিস কেমনে তোরা ..কোনো এফেয়ার ট্যাফেয়ার নেই তার সাথে আমার শুধুই কাজিন বুঝলি”
—হা বুঝলাম রে “
জবা বলে উঠল
—বাদ দে তো আড্ডা দিতে আসছি তাই সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।
ওরা ঘন্টা খানেক গল্প করে যার যার বাসায় চলে গেলো আর নিশি ওদের এগিয়ে দিয়ে এসে রুমে ঢুকল।
“সকালের মিষ্টি রোদের এক ঝলক আলো নিশির সারা নাকমুখে এসে পরলো।এক পলক চোখ খুলে আবার বন্ধ করে ফেললো।বাম হাত উল্টো করে চোখের ওপর রেখে আবার তাকালো।
সকাল সকাল ডাকলেও নিশি ঘুম থেকে ওঠে না তাই ওর মা মাঝে মাঝে জানালার পর্দাটা সরিয়ে দেয় যাতে করে রোদ এসে সোজা ওর মুখেই পরে।আজও এর কোনো ব্যাতিক্রম হয়নি,পর্দাটা ওর মা ই সরিয়ে রেখে গেছে।দেওয়ার ঘরির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো সকাল নয় টা বেজে গেছে।ক্লাস আছে বের হতে হবে তো।মনে পরলো কাব্যের কথা আজ আসলো না যে?
মনে মনে ভাবছে ধূর না আসলেই ভালো নিজের মতো করে যাবে।ভেবেই মনে মনে খুশি হতে লাগলো ,বেড ছেড়ে উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
নিশি রেডি হয়ে ডাইনিং এ এসে বসলো ওর মা আর বাবা ও বসেছে খাওয়ার জন্য ।
—মা খাইয়ে দাও
—হুম দিচ্ছি
পাশ থেকে বাবা বলে উঠলো
—নিজের হাতে খাওয়া শেখো আর কতো দিন কয়েক দিন পর যখন শ্বশুর বাড়ি যাবে তখন তো নিজের হাতে খেতে হবে নাকি।
—তুমি কেমন বাবা হা ? মেয়েকে বিয়ে দেবার জন্য উঠে পরে লাগছো।আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে দেরি আছে আর যদি দেই নিজের কাছেই রেখে দিবো।
—কি বলছো নিশির মা আমার কতো খরচ হচ্ছে ভেবে দেখছো আর তখন জামাই সহ তো আরো হবে ।আমি ওতো খরচ করতে পারবো না বলে দিলুম।
নিশি বলে উঠলো
—কি শুরু করছো তোমরা থামবে..বাবা তুমি আর বদলালে না।মাঝে মাঝে ভাবি তুমি আমার বাবা নাকি আমি অন্য কারো মেয়ে।
—দিলে তো মেয়েটার মন খারাপ করে ,সত্যি তুমি ভালো হলে না,তোমার সব সম্পদ পিঁপড়াতে খাবে।
—মা টাকা দাও দেরি হয়ে যাচ্ছে
—এই খরচের টাকা দাও মেয়েকে
নিশির বাবা টাকা বের করে মাএ অল্প কিছু টাকা দিলো,
—এ কয়টা টাকাতে কি হবে বাবা ?
তখন নিশির মা নিশির বাবার কাছে থেকে টাকা নিয়ে মেয়েকে দিলো ।
—আরে আরে এতো টাকা দিলে হায় হায়।
—মেয়েটা ভার্সিটিতে পড়ে হিসাব আছে তোমার ?ওর বেশিই তো লাগবে।ভালো হয়ে যাও বলে মুখ ভেংচি দিয়ে কিচেনে চলে গেলো।
নিশি মাকে বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেটে আসতেই চক্ষু চরখ হয়ে গেলো।সামনে কাব্য গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে।
নিশি ভয়ে ঢোক গিলে বলতে লাগলো
—কাব্য ভাইয়া তুমি?তুমি যাওনি?
—হা আমি তো চলে গেছি ,মাঝ পথে গিয়ে তোর কথা মনে পরতেই আবার তোকে নিতে এসেছি।
—মানে আমি ভাবছিলাম তুমি চলে গেছো”
—এ পর্যন্ত তোকে না নিয়ে আমি গিয়েছি কখনও বল?
—নাহ ,ঠিক আছে কিন্তু আমার জন্য ওয়েট করার কি আছে চলে যেতে।
—আমি যাবো কি যাবো না সেটার কৈফিয়ৎ কি তোকে দিবো?
—না তা নয়
—বেশি কথা না বলে উঠে পর
নিশি আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে পরলো।
মনে মনে রাগ লাগছে নিশির,আর ভাবছে যার জিএফ আছে সে কেনো আমাকে নিয়ে চিন্তা করে ধূর।আরে তুমি তোমার জিএফ নিয়ে চিন্তা করবে ভাই কেনো আমার পিছে পরে আছো?আজ নিজের মতো করে যেতে পারলাম না।উটকো ঝামেলা একটা।
—খারাপ চিন্তা বাদ দিয়ে ভালো কিছু চিন্তা কর কাজে দিবে।
কথাটা শুনেই নিশি তো অবাক .. বাপরে এ তো দেখছি মন ও পড়তে জানে..!ডেন্জারাস আদমি হে”
অপেক্ষার প্রহর
৩.
ভার্সিটিতে ডুকে কাব্য আর নিশি যে যার ক্লাসের দিকে চলে গেলো।কিন্তু নিশি ক্লাসে ঢোকার আগেই হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে পরে যায়।
—সরি সরি আমি খেয়াল করিনি।
পরে গিয়ে নিশির অবস্থা খারাপ,একে তো পরে গিয়ে ব্যাথা পেলো তার ওপর লজ্জা ও পাচ্ছে।আসে পাশের ছাএ ছাত্রীরা চেয়ে চেয়ে দেখছে ।
সামনের মানুষটার সরি কথাটা শুনেই চেয়ে পরলো তার দিকে।সুদর্শন ব্যাক্তিটি হাত বাড়িয়ে দিলো নিশির দিকে।নিশি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।দেখতে তো ভদ্রলোক মনে হচ্ছে।প্রথমে ভেবেছিলো আচ্ছা করে কিছু শুনিয়ে দিবে কিন্তু কোনো জানি তার কথা গুলো আর বিনয়ী সুরে বলা সরিটা নিশির মনে ভালো লাগা কাজ করলো।
—কি হলো হাতটি ধরুন,ব্যাথা পেয়েছেন উঠতে পারবেন না তাই সাহায্য করতে চাচ্ছি।
নিশি সত্যিই খুব বেশি না হলেও ব্যাথা তো পেয়েছে,আর সাত পাঁচ না ভেবে বাড়িয়ে দেওয়া হাতটি ধরে উঠে দাঁড়ালো।
—ধন্যবাদ
—ইটস ওকে কিন্তু আবার সরি বলছি কারন দোষটা আমার ছিলো।
—না না ঠিক আছে আমিও খেয়াল করিনি ।
—বাই দ্যা ওয়ে আমি রাতুল আর আপনি?
—আমি নিশি
—নাইস নেইম
উফ যেমন নাম তেমনি সুন্দর মেয়েটা,একদম সবদিকে দিয়ে পারফেক্ট বির বির করে বলতে লাগলো।
—কিছু বলছেন?
—নাহ
—ওকে আমি আসি আমার ক্লাস শুরু হবে।
—ওকে ওকে বাই।
—বাই।
নিশি ক্লাসে চলে গেলো আর রাতুল ওর যাওয়ার পানে চেয়ে থাকলো।
আর এ সব কিছু দূর থেকে একজন সবটা দেখে নিলো।আর সাথে সাথে গিয়ে তার বসের কানে সবটা দিয়ে আসলো।বস তো শুনে তেলে বেগুনে জ্বলতে লাগলো।
—কতো বড়ো সাহস ওর আমার জানের হাত স্পর্শ করে আজ ওর ঐ হাত টি আমি শেষ করে দিবো।
~~~~
ক্লাস শেষ করে নিশি সোজা গেটের বাইরে চলে আসলো।এসে দেখে কাব্য গাড়িতে বসে আছে।কথা না বলে উঠে পরলো নিশি।কাব্য গাড়ি স্টার্ট দিলো,
—কিরে ক্লাস কেমন চলছে?
—হুম ভালো ।
কাব্য আর কোনো কথা বলেনি,সোজা বাসার নিচে এসে থামলো।নিশি বাসার ভিতর ডুকে গেলো কিন্তু কাব্য না নেমে গাড়ি ঘুরিয়ে আবার যেনো কোথায় চলে গেলো।
নিশি বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বেডে শুয়ে পরলো।হঠাৎ করেই ঐ লোকটার কথা মনে পরলো।আর ভাবছে কে সে ? আর কেনোই বা ভার্সিটিতে আসছে? দেখে তো মনে হয় না নিজে পরে ,আবার ভাবছে হয়তো তার কেউ পড়ে এখানে তার সাথে দেখা করতে আসছে মনে হয়।এ সব ভেবে আবার ভাবছে ধূর কি ভাবছি এ সব।
মায়ের ডাকে ভাবনা থেকে বের হলো”
—জ্বী মা
—খেতে আয়
—আসছি
খাবার খেতে খেতে নিশির বাবা বললো
—কাল ভার্সিতে যাওয়ার দরকার নেই তোমার
—কেনো বাবা?
—কাল আমার এক বন্ধুর ছেলে আসবে আমাদের বাসায়
নিশির মা বলে উঠলো
—আবার ছেলে পক্ষ আসবে মেয়ে দেখতে?
—হা মেয়েকে রেডি করে রেখো ওরা ফোন করেছিলো
—ওদের না করে দিও ,আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিবো না
—না করে দিবো মানে ? ওদের বলে দিয়েছি আর মানা করার উপায় নেই।অনেক বড়োলোক পরিবার হাত ছাড়া করতে চাই না।
—তুমি কি বাবা নাকি কষাই মেয়ের ভালো মন্দ বুঝো না কেনো?
—আরে বুঝি না মানে কি বলছো এ সব? দেখো মেয়ে কে বিয়ে দিলে খরচ করতে হয় আর আমার খরচ হবে নাহ উল্টো ওরা আমাকে অনেক টাকা দিয়ে মেয়ে নিবে।
—ছি ছি ছি তুমি কেমন বাবা হা?
পাশ থেকে এ সব নিশি দেখছে আর খাচ্ছে কিছু বলছে না।কারন ও জানে কিছু বললে ও কাজ হবে না ।প্রতিবারই এমন করে ওর বাবা যা করার সময় মতো করতে হবে।যদিও প্রতিবারের বিয়ে ভাঙার ব্যাপারে নিশির কোনো হাত নেই কাজটা যে কে করে ও জানে না,তবে ওর বিশ্বাস এবার গতোবারের ন্যায় হবে।ছেলেপক্ষ কে আসতে দিতে হবে আর সেজেগুজে ঠিক তার সামনে ওকে যেতে হবে ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেরে খাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেলো।
.
আজ সারা দিন কাব্য বাইরে ছিলো,সন্ধ্যার পরে বাসায় ফিরছে।আন্জুমান বেগম ছেলেকে দেখে বুঝতে পারছে আজ ছেলের মন ভালো নেই কারন যে দিন এমন হয় সে দিন কাব্য বাইরে থাকে ।ছেলে কে কিছু না বলে ছেলের পিছ পিছ রুমে গেলো।কাপড় চেন্জ না করেই উপুর হয়ে শুয়ে পরছে।মা কাব্যের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো
—কিরে বাবা কি হয়েছে?সব ঠিক ঠাক তো?
ছেলে মাথা উঁচু করে মায়ের দিকে ফিরে জবাব দিলো
—হুম ঠিক আছে মা চিন্তা করো না।
—বাইর থেকে খেয়েছিস কিছু ?
—হা বন্ধুরা মিলে খেয়েছি
—ফোন রিসিভ করিসনি কেনো?
—অনেক জরুরি কাজে ব্যাস্ত ছিলাম আর ফোন সাইলেন্ট ছিলো মা।
—ওহ ,তা হলে এখন ফ্রেশ হয়ে নে আমি কফি করে নিয়ে আসছি ।
—ঠিক আছে মা ।
“এ দিকে নিশির মনে চিন্তা শুরু হয়ে গেছে,কি হবে কি হবে ? কাকে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।ফোনটা হাতে নিয়ে ফারিয়াকে কল দিলো।ফারিয়া রিসিভ করলো..
—হ্যালো ফারিয়া কেমন আছিস?
—এই তো ভালো রে তোর কি খবর?
—ভালো না রে
—কেনো কি হইছে?
—আর কি হবে বাবা আবার তার আগের পাগলামি শুরু করে দিছে।
—বলিস কি আবার ছেলেপক্ষ আসবে দেখতে?
—হুম কি করি বল তো?
—টেনশন করিস না কিছু একটা তো করতে হবে।
—হা কিন্তু কি করবো মাথায় কিছু আসছে নারে
—আচ্ছা শোন একটা বুদ্ধি দেই তোকে
এই বলে ফারিয়া নিশিকে একটা আইডিয়া দিলো,নিশি শুনে খুশি হলো।
—ঠিক আছে দোস্ত তোর কথা মতোই কাজ করবো।
—আচ্ছা রাখি তাইলে।
—আচ্ছা বাই।
নিশি শিওর না এই আইডিয়া কাজে লাগবে কিনা তবুও কাজে লাগাতে সচেষ্ট থাকবে।
“রাতের বেলায় কাব্যরা সবাই ডিনার করছে তার মাঝে আন্জুমান বেগম বলে উঠলো
—কাল নিশিকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে
কথাটা শুনে সবাই খাওয়া বাদ দিয়ে কাব্যের মায়ের দিকে চেয়ে পরলো।রায়হান চৌধুরী জিজ্ঞেস করলো
—কি বলছো এসব
—হ্যা ঠিক বলছি আইরিন এসে সবটা বলে গেলো।
ওদিকে কাব্য কিছু বলছে না কতোক্ষণ খাওয়া বাদ দিয়ে আবার কিছু একটা ভেবে খেতে লাগলো।
—নিশির বাবাটা আসলে ঠিক হলো না কাব্যের মা।কি দিয়ে গড়া এই লোকটা ।একটাই তো মেয়ে আর সে কিনা মেয়েটাকে বোঝা মনে করছে?
—তা নয় সে চাইছে মেয়েটাকে বিক্রি করতে না হলে কোনো বাবা ছেলে পক্ষ থেকে টাকা নেওয়ার লোভ করে বিয়ে দিতে চায় বলো?
—হা ঠিক বলছো।এ জন্যই মন চায় এখনই মেয়েটাকে ছেলের বউ করে নিয়ে আসি তা নয় ,তোমার ছেলের জন্য পারছি না।যে দিন মেয়েটার হুট করে অন্য কোথাও বিয়ে হবে তখন বুঝবে ঠেলা।
—প্লিজ থামো তোমরা এমন কিছু হবে না।আর ওর বাবাকে টাইট দিতে আমার এক সেকেন্ড সময় লাগবে না কিন্তু সম্মান করি বলে কিছু করছি না।
বলে খাওয়া শেষ করে কাব্য রুমে চলে গেলো।মাথার ওপর থেকে যেনো চিন্তার পাহাড় একটার পর একটা চড়ে বসছে।
কাব্য ভাবছে এই মেয়েটা যদি আমার ফিলিংস টা একটু বুঝতো তা হলে এতো কিছু ফেস করা লাগতো না সোজা বিয়ে করে নিতো কিন্তু ও তো বোঝে না আর জোড় করেও কিছু এই মুহূর্তে করা সম্ভব না।
কারন জোড় করে সব পাওয়া যায় কিন্তু ভালোবাসা পাওয়া যায় না ।তবে আপাততো বিয়েটা ভাঙতে হবে ,ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে কল দিলো কাব্য।
“সেজে গুঁজে আয়নার সামনে বসে আছে নিশি ।পাশেই ফারিয়া আর জবা বসে আছে।ওদের ফোন করতেই চলে আসছিলো।ওরাই নিশিকে সাজিয়ে দিছে।কাব্যের মা আর ছোটো বোন রিয়াও এসেছে।এর মধ্যে ছেলেপক্ষ কল করে জানিয়ে দিছে ওরা রওয়ানা হয়ে গেছে।
নিশির বাবা নিশির মাকে কথাটা জানিয়ে দিলো আর বলে রাখছে নাস্তা গুলো রেডি রাখতে।
ছেলেপক্ষের গাড়িটা যখন নিশিদের বাসার প্রায় কাছেই তখন সামনে কিছু ছেলেপেলে গাড়িটি থামিয়ে দেয়।ছেলেপক্ষের থেকে আসা কয়েকজন গাড়ি থেকে নেমে তাদের বলতে লাগলো কি সমস্যা গাড়ি কেনো থামিয়েছে তখন ওরা ওদের কিছু কথা বলতে লাগলো।আর কথা গুলো শুনে আবার গাড়িতে গিয়ে উঠে পরলো।কিন্তু ওরা মেয়ের বাড়ির ওদিকে না যেয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলো।
ছেলেপক্ষ থেকে আবার কল আসলো।নিশির বাবা কল রিসিভ করে তাদের কথা গুলো শুনে দাঁড়ানো থেকে বসে পরলো।পাশ থেকে নিশির মা বললো
—কি হয়েছে ? কি বললো ওরা?
—ওরা আসবেনা চলে গেছে ,ওদের ছেলে নাকি অন্য মেয়েকে পছন্দ করে আর তাকেই বিয়ে করবে।
কথাটা শুনে উপস্থিত সবাই খুশি হলো। নিশি তো সেই খুশি ফারিয়া আর জবাকে খুশিতে জড়িয়ে ধরেছে।
শুধু নিশির বাবা ছাড়া।বেচারা কতো আশা করছিলো কতো কিছু পাবে।সব আশা ভেঙে গেলো।
ঠিক তখনই কাব্য আর ওর বন্ধুরা নিশিদের বাসায় আসলো।
—কি হলো মেহমানরা কই?
কাব্যের মা বললো
—আসবে না চলে গেছে।
কথাটা শুনে কাব্য মনে মনে হাসতে লাগলো,আসবে না জানি এমন টাইট দিছি এই এলাকায় কোনোদিন ভুলেও আসবে না।
—যাই হোক মন খারাপ করে লাভ নেই খালুজান ,পরের বার এর চাইতে ভালো যায়গায় ওর সমন্ধ দেখে বিয়ে দিয়ে দিবো।এখন আমার বন্ধুরা আসছে খাবার গুলো খেয়ে যাই না হলে এ গুলো তো নষ্ট হবে নাকি?
বলেই সব খাবার গুলো ওরা খেয়ে নিলো।
—এই তোদের পেট ভরেছে নাকি আরো খাবি ?
—নারে আর লাগবে না,অনেক খেয়েছি এবার যাই।
বলে ওরা চলে গেলো।কাব্যের মা সবটা বুঝতে পেরেছে।এটা এই গ্যাংদের কাজ আবার চালাকি করে খেয়ে গেলো।ছেলেটা পারেও বটে।
~~
এ ভাবেই কেটে গেলো বেশ কিছুদিন,কাব্য আজকাল লেখা পড়া নিয়ে অনেকটা ব্যাস্ত ।ফাইনাল পরিক্ষা সামনে,তাই নিশির সাথেও তেমন একটা দেখা হয় না ।মাঝে মাঝে ভার্সিটিতে নিয়ে যায় আবার কোনো দিন নিশি একাও যায়।অবশ্য এ ব্যাপার টার জন্য নিশি খুব খুশি।কিছুটা হলেও নিজে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারছে।
কয়েক দিন পরে হঠাৎ একদিন নিশির ফোনে আননোন নম্বর থেকে একটা কল আসলো।দুই বার কিং হওয়ার পর রিসিভ করলো।
—হ্যালো কে বলছেন?
—আপনার শুভাকাংঙ্খী বলছি।
—সরি চিনলাম না।
—না চিনলে কি কথা বলা যায় না?
—নাহ যায় না,পরিচয় দিন না হলে রেখে দিচ্ছি
—প্লিজ রাখবেন না পরিচয় দিচ্ছি,আমি রাতুল বলছি
—কোন রাতুল?
—মনে নেই ?আমি সেই রাতুল যার সাথে ভার্সিটিতে ক্লাসের সামনে ধাক্কা লেগে পরে গিয়েছিলেন।
—মাই গড আপনি সেই রাতুল? কিন্তু আপনি আমার নম্বর পেলেন কি ভাবে?
—মানুষ চাইলে সব কিছু করতে পারে ,আর ইচ্ছা থাকলে অসাধ্য বলে কিছু থাকে না।
—তারপরও আমার নম্বর আপনার কাছে এটা তো ভাবনার বিষয় শুধু তাই নয় অবাক লাগছে কেমনে কি করে পেলেন আর কেনোই বা নিলেন?
—আহা অতো চাপ নিয়েন না,শেষে মাথা হ্যাং হয়ে যাবে।আচ্ছা মনে করেন আপনার পরিচিতো কারো কাছ থেকে নিয়েছি তবে হা আর কিছু জানতে চাইবেন না প্লিজ।
নিশি কিছু একটা ভাবলো তারপর বললো
—ঠিক আছে জানতে চাইলাম আর,তবে রাখছি এখন ।আমি অনেকটা ব্যাস্ত আছি ।
বলে কল কেটে দিলো।
ব্যাপারটা নিয়ে আর নিশি ভাবলো না তবে এখন প্রায়ই রাতুল নিশিকে কল দেয় আর নিশিও কথা বলে।আগে কিছুটা বিরক্ত হলেও এখন আর সে রকম লাগে না ।বরং একটি ভালো লাগা কাজ করে মনের মাঝে।
আর এ দিকে কাব্য যখন সময় পায় নিশিকে কল দিলে প্রায় সময়ই বিজি পায়।পরে জিজ্ঞেস করলে বলে বান্ধবীদের কল ছিলো।পরিক্ষার ব্যাস্ততায় কাব্য আর অতো কিছু ভাবে না।বিজি থাকতেই পারে ওর বিশ্বাস নিশি এমন কিছু করবে না যে কাব্য ওর থেকে কোনো ধরনের কষ্ট পাবে।কিন্তু কে জানে ভবিষ্যতে কি অপেক্ষা করছে কাব্যের জন্য ।
অপেক্ষার প্রহর
৪.
আজ নিশিরা সবাই মিলে গ্রামের বাড়ি যাবে।ওর চাচাতো বোনের বিয়ে উপলক্ষ্যে।যদিও আগের থেকে কোনো প্লান ছিলো না যাওয়ার ,নিশির বাবা খরচের ভয়ে না করে দিলেও ওর চাচার পরিবারের বিশেষ অনুরোধে আর না করতে পারলো না যদিও নিশির মা ই কথা দিছে যাবে।এ জন্য নিশির বাবা ওর মায়ের ওপর অখুশি হয়ে আছে।নিশি অবশ্য বেশ খুশি,কোথাও সে ভাবে যাওয়া হয় না বেড়াতে আর যাবে কি ভাবে বাবা কোথাও নিয়ে যায় না যে।
ব্যাগ পএ সব গুছিয়ে নিলো ,কিন্তু ওদের যাওয়ার বিষয়ে কাব্য কিছু জানে না।কাব্যের মা শুনলেও তখন কাব্য বাসায় ছিলো না।বিকেল বেলা নিশিরা সবাই গ্রামের বাড়িতে রওয়ানা হয়ে চলে গেছে।ঢাকা থেকে মাএ দুঘণ্টার পথ।তাই সন্ধ্যার আগেই ওরা পৌছে গেলো।বাড়িতে পৌছে দেখে একদম রাস্তা থেকে গেট সাজানো আর বাড়ির ভিতরেও সুন্দর করে সাজানো।গ্রামের বাড়ি হলেও নিশির চাচা অনেক চাকা পয়সার মলিক সে সুবাদে তার বাড়িটিও শহরের বাড়ির মতো করে বানানো।
মেহমানে পুরো বাড়িটি ভরপুর ,আর আজ হলুদ সন্ধ্যা তাই বাড়িতে হলুদের উৎসবে মেতে উঠেছে সবাই।নিশি দের সাথে সবার আলাপ হলো।আপ্যায়ন শেষে চাচি ওদের জন্য আলাদা রুমের ব্যাবস্থা করে দিলো।আর বলল ওরা যেনো সাজগোজ করে নেয় ।মেয়ের বিয়ের জন্য বাড়িতে আসা সব মেয়েদের জন্য হলুদ শাড়ি কিনে রাখা হইছে।আর ছেলেদের জন্য ও আলাদা এক রংয়ের পান্জাবীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।নিশির চাচি ওর মাকে আর ওকে শাড়ি দিয়ে গেছে।নিশি বেশ খুশি শাড়ি পেয়ে কারন ওর শাড়ি অনেক পছন্দ ।
—ওয়াও কতো সুন্দর শাড়ি,মা তুমি কিন্তু পরিয়ে দিবে।
—হুম দিবো কিন্তু প্রতিবারের মতো আবার শাড়ি খুলে না যায়।এমনিতেই শাড়ি সামলাতে পারিসনা,এটা নিয়ে আমার টেনশন হয়।
—কিছু হবে না,বেশি করে সেপটিপিন লাগিয়ে দিবে তা হলে আর খুলে যাবার ভয় থাকবে না।
—ঠিক আছে,আয় পরিয়ে দেই পরে অমি রেডি হবো।
এর মাঝে নিশির অন্য কাজিন বোনরা এসেছিলো ওকে ডাকতে কিন্তু সাজ শেষ হয়নি দেখে চলে গেছে।শাড়ি পরা শেষ হতেই ওর এক বোন এসে টেনে নিয়ে গেছে আরেক রুমে যেখানে কনেকে সাজিয়ে দিয়েছে পার্লারের লোক এসে।আর ওদের কাছ থেকেই সব মেয়েরা সেজে নিয়েছে ।নিশিকেও পার্লারের মেয়েরা সাজিয়ে দিছে।খুব সুন্দর লাগছে নিশিকে দেখতে।এখানের সব কাজিনরা ওকে বলতে লাগলো
— আজ তো কনের থেকে তোমাকে বেশি সুন্দর লাগছে।
কথাটা শুনে নিশি বেশ লজ্জা পেলো ,কিছু বললো না।
হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।বাড়ির মুরুব্বিরা আগে হলুদ ছুয়ে দিছে।পরে একে একে সবাই দিচ্ছে।এর মাঝে ছোটো বড়ো সবাই বেশ আনন্দ করছে।নাচ গানে মেতে উঠেছে বাচ্চারাও।সবাই ওদের হাততালি দিয়ে উৎসাহিতো করছে।এরই মাঝে কারেন্ট চলে গেলে নিশি বেশ ভয় পেয়ে যায়।অন্ধকারে মনে হলো হঠাৎ ওর হাত ধরে টেনে কোথাও নিয়ে যেতে লাগছে কিন্তু কে আর কেনো ।কোনো একটা রুমে নিয়ে গিয়ে ওর হাত ছেড়ে দিলো কিন্তু মনে হলো ওর কোমরে কিছু একটার আঁচড় লাগছে আর প্রচুর জ্বালা করছে।মোবাইলের টর্চ জ্বালাতেই নিশি সামনের মানুষটাকে দেখে চমকে গেলো।
—কাব্য ভাইয়া তুমি এখানে?
—হা আমি ,কেনো আমি আসতে পারিনা?
—তা নয় ,তোমার না সামনে পরিক্ষা ?আর এভাবে না জানিয়ে আসছো তাই অবাক হলাম।
—আমার পরিক্ষা নিয়ে তোর চিন্তা করা লাগবে না,আর মোবাইল কই তোর ? চেক করলে বুঝতে পারতি না জানিয়ে আসছি কিনা।
তখনই ফোনটার কথা মনে পরলো।মেকআপ নেওয়ার সময় ফোনটা সাইলেন্ট করে পার্স এর মধ্যে রেখে দিয়েছিলো।বের করে দেখে কাব্যে অনেকবার কল করেছিলো।
—ইয়ে মানে সরি ভাইয়া ফোনটা সাইলেন্ট ছিলো।
—ইটস একে ,আর আমি জানতাম তোকে কল করে পাবো না তাই খালামনির সাথে কনটাক্ট করে চলে এসেছি।
তখনই কারেন্ট চলে আসে।এতো ক্ষণ মোবাইলের আলোতে নিশিকে কাব্য ভালো ভাবে খেয়াল করতে পারেনি কিন্তু এখন দেখে পুরাই টাস্কি খেয়ে বসছে।মেয়েটাকে দারুন লাগছে শাড়িতে।যদিও কাব্য এর আগেও ওকে শাড়ি পরতে দেখলেও আজ একদম অন্যরকম লাগছে।
—কি হলো ভাইয়া কি দেখছো ,আগে কি দেখোনি আমাকে?
—হুম দেখছি আর আজ তোকে অন্যদিনের চাইতে অন্যরকম লাগছে।
—অন্যরকম?
—হা একদম ভূতের মতো
বলেই হাসতে লাগলো।এ কথা শুনে নিশির মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।আবার শুরু হয়ে গেলো কাব্যের সেই কথাগুলো যে গুলো বললে নিশি তেলে বেগুনে ক্ষেপে যায়।মেয়েটাকে এ সব বলে কাব্য বেশ মজা পায়।
এতোক্ষণ পরে নিশির খেয়াল হলো ওর কোমরের খালি অংশটা জ্বলছে ,হাত দিয়ে দেখে খানিকটা রক্ত কিন্তু কিভাবে হলো সেটাই বুঝতে পারলো না।কাব্য জিজ্ঞেস করতেই বললো কিছু না ভাইয়া অন্ধকারে হয়তো কিছুতে বেধে এমন হইছে ।
—ভাইয়া চলো হলুদের স্টেজে যাই।
—হুম যাবো কিন্তু একমিনিট চুপচাপ দাঁড়া এখানে বলে ওর শাড়ির আঁচলের অংশ কিছুটা বাড়তি করে কোমরের দৃশ্যমান অংশটা ঢেকে সেপটিপিন দিয়ে আটকিয়ে দিয়েছে।
—এবার ঠিক আছে চল এখন
নিশি মনে মনে খুশি হলো আর ভাবলো এমন ভুল কাজ আগে করলে তো চড় খেতাম কিন্তু আজ যে ঠান্ডা মাথায় ঠিক করে দিলো আবার কিছু বললো ও না ব্যাপারটা কি।
—কি হলো যাবি না ?
—হুম চলো ।
“ভার্সিটি শেষ করে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিয়ে বিকেলে বাসায় ফিরে কাব্য শুনতে পায় নিশিরা গ্রামের বাড়ি গেছে।শুনে মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে ।একবার তো ওরে বলতে পারতো? আবার ভাবছে এই মেয়ে আমাকে আর কি বলবে ওর আসে পাশে না গেলেই ও তো খুশি।কিন্তু এই মুহূর্তে কাব্য ওখানে যাবে বিয়ে বাড়ি বলে কথা,যদি কেনো অঘটন ঘটে নানান চিন্তা করে কাব্য আর দেরি না করে তখনই খালাকে ফোন করে লোকেশন জেনে নিয়ে রওয়ানা হলো।কিন্তু এখানে এসে নিশিকে কল করলে ওকে পায়নি ।স্টেজের ওখানে যেতেই নিশিকে দেখলো কিন্তু সাইড থেকে নিশির শরিরের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিলো বলে কাব্যের মেজাজ খারাপ হয়ে যায় আর ঐ সময় কারেন্ট চলে যায় আর কাব্য সুযোগ বুঝে নিশির হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসে।”
কাব্য মনে মনে বলছে-সরি তোকে আঘাত দেওয়ার জন্য এ ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিলো না।আমি চাই না তোকে কেউ বাজে ভাবে দেখুক ।
হলুদের ওখানে গিয়ে খালার সাথে কাব্যের দেখা হতেই
—আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো রে?
—না খালামনি হয়নি।
—নিশি কাব্যকে কিছু খেতে দে
—হুম দিচ্ছি মা।
—আমি কিন্তু একা আসিনি খালামনি সাথে আরো দুজন এসেছে।
—সত্যি বলছিস তা ওরা কই ডেকে নিয়ে আয়।
—হা আনছি।কাব্য ওদের ডেকে ভেতরে নিয়ে আসলো।
“কাব্যের দুইটা বন্ধু ও এসেছে যদিও ওদের আনার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না কিন্তু ওরা শুনেই আসার জন্য বায়না ধরেছে।যার ফলে আনতে বাধ্য হয়েছে ওদের ।”
নিশির চাচা চাচির সাথে কাব্য আর ওর বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।অনেক কথা হলো তার ওদের সাথে।
—ভালো হয়েছে তোমরা এসেছো খাওয়া দাওয়া করে রেস্ট নেও।
—হুম ঠিক আছে আংকেল ।
কাব্য কে দেখে কয়েকটা মেয়ে তো পুরাই ক্রাশ খেয়ে বসে আছে ।এমন কি মেয়ে গুলো নিশিকেও গিয়ে বলছে এ কথা।নিশি অবশ্য এ সব মাথায় নেয়নি।কিন্তু কিছু একটা ভেবে বলছে
—ঠিক আছে তোমাদের যেহেতু এতো পছন্দ হয়েছে তা হলে ফুল নিয়ে সোজা প্রপোজ করে ফেলো।
তখন মেয়ে গুলোও খুশি মনে চলে গেলো।
নিশি মনে মনে ভাবছে যাও মজা বুঝবে এবার..
কাব্যরা ছাদে আড্ডা দিচ্ছে এমন সময় দু তিন টা মেয়ে ওদের কাছাকাছি গিয়ে বলছে
—এক্সকিউজ মি
কাব্যের এক বন্ধু বললো
—জ্বী বলেন
—আসলে আপনাকে না আপনার বন্ধুকে বলছিলাম।
কাব্য তখন বললো
—জ্বী বলুন কি বলবেন?
—আসলে বলছিলাম কি এই গোলাপটা আপনার জন্য ,নিন
—কিন্তু কেনো নিবো এটা?
—প্রথম দেখায় আপনাকে আমার ভালো লেগেছে তাই।
পাশ থেকে কাব্যের দুই বন্ধু বলতে লাগলো
—লাভ নেই ওর গার্লফ্রেন্ড আছে তার চাইতে আমাদের দাও সুন্দরীরা আমরা পিওর সিঙ্গেল আছি।
মেয়েগুলোর মনটাই খারাপ হয়ে গেলো কথা গুলো শুনে।আর কোনো কথা না বলে মন খারাপ করেই চলে গেলো।ওদের মন খারাপ দেখে নিশি গিয়ে জিজ্ঞেস করলো কাজ হয়েছে কিনা কিন্তু ওরা বললো
—আপু তোমার কাজিন এর জিএফ আছে তুমি কেনো বললে না ,তা হলে তো এমন অপমানিতো হতে হতো না আমাদের ।কতো আশা নিয়ে গেছিলাম সবটাই জলে গেলো।
নিশি ওদের কথা শুনো পুরোই বোকা বনে গেলো ।তাহলে সত্যি সত্যি কাব্য ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে।যা হোক থাকুক তাতে আমার কি?
তখনই নিশির ফোনে কল আসে।রাতুল কল করেছে,রিসিভ করে কথা বলতে লাগলো রাতুলের সাথে।অনেকক্ষণ ধরে কথা বলে ফোন কাটলো নিশি।যদিও নিশি ওকে কখনও কল করে না কিন্তু রাতুলই কথা বলে।
হলুদের অনুষ্ঠান শেষ পরদিন বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে সবাই ব্যাস্ত।সকাল সকাল কাব্য ওর বন্ধুদের নিয়ে নাস্তা করে গ্রাম দেখতে বের হলো।
নিশি কাব্যদের রুমে গিয়ে দেখে কাব্যরা কেউ নেই।তখনই নিশির কিছু কাজিন রা এসে বললো
—আপু চলো একটু বের হই তুমি তো এখানকার ভালো করে কিছু চেনোই না।
নিশিও শুনে খুশি একটু ঘুরে আসা যাক।
—ঠিক আছে চলো যাই।
মাকে বলে ওরা ৪/৫ জন মিলে বের হলো ।আসেপাশের সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।এক সময় ওরা একটা টং দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো।মূলত ওরা কাব্যদের দেখে থামছে।কাব্যের বন্ধুরা দেখে বললো
—কি সুন্দরীরা এখানে কি?
নিশি বললো
—আমরা ঘুরতে বের হইছি
—তা তো দেখতে পারছি কিন্তু এখানে কি
নিশির একটা কাজিন খুব চালাক প্রকৃতির
ও বলে উঠলো
—আমাদের ক্ষিদে পাইছে তাই খেতে আসছি ,আপনি আমাদের সবাইকে খাওয়াবেন ।
—এখানে তোমাদের খাওয়ার মতো তেমন ভালো কিছু নেই তো।
—নেই মানে চিপস চানাচুর এই সব হলেই চলবে।
নিশি ওর কথা শুনে হাসছে কিছু বলছে না।কাব্য পাশ থেকে বললো
—এই দোকানদার মামা ওরা যা চায় দিন
দোকান থেকে খাবার নিয়ে ওরা সবাই এক সাথে হাটতে লাগলো।একটা সময় কাব্যের বন্ধুরা নিশির কাজিনদের সাথে গল্প করতে করতে সামনে চলে গেছে আর কাব্য নিশির সাথে হাটছে।কাব্য নিশিকে থামিয়ে রাস্তার পাশে গিয়ে কি একটা নিয়ে আবার আসলো।এসেই নিশির সামনে হাটু গেড়ে বসে ওর সামনে কাশ ফুলের একটা তোরা ধরে বলতে লাগলো
—অনেক অনেক ভালোবাসি প্রিয়তমা ..আমার তরফ থেকে এই ছোট্ট উপহারটি গ্রহন করো।
কথা গুলো শুনে নিশি হাসতে লাগলো।
—হাসছিস যে ,আমি কি কোনো জোকস বলছি ?
—না তা নয় হাসছি এ জন্য শুনলাম তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে শুধু তাই না জন্মগতো গার্লফ্রেন্ড।
—ওহ এই কথা ,হুম আছে তো তাই তোকে দিয়ে প্রাকটিস করতেছিলাম ওকে কি ভাবে প্রপোজ করবো।
—হুম ভালোই পারো।কিন্তু কে সে জানালে না তো।
—কে সে সময় হলেই জানতে পারবি।
মনে মনে কাব্যের রাগ হলো কি মেয়ে যে কিনা আমার মনের কথা গুলো বুঝতে পারে না।অথচ ওর অভাব বোধ হবে বলেই চলে আসছি আর সে কিনা…
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো
—চল যাই
—হুম চলো।
“দুপুর থেকেই আবার লোকজনে ভরপুর হতে লাগলো বাড়ি।একপাশে রান্নাবান্নার আয়োজন চলছে,বরের বাড়ির লোকজনও চলে আসবে প্রায়।ছেলে মেয়েরা সেজে গুঁজে আছে।বিয়ের কনেকে পার্লার থেকে সাজিয়ে আনা হইছে সাথে নিশিও সেজে এসেছে।নিশি আজ লেহেঙ্গা পরেছে।দারুন লাগছে ওকে ,কাব্য তো দেখেই চোখ ফেরাতে পারছে না।কাব্যকেও অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে।ঐ মেয়ে গুলো ড্যাব ড্যাব করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু সে দিকে কাব্যের খেয়াল নেই ,ও তো ওর নিশির মাঝেই হারিয়ে গেছে।
বর চলে এসেছে ,ছেলেমেয়েরা সবাই গেট ধরেছে নিশি ওদের সাথে সামনে আছে।গেট ধরে টাকা আদায়ের সময় বরের এক কাজিন কো নিশি কে দেখেই ফিদা।গেটের ঝামেলা শেষ হলেই বরযাত্রী ভেতরে এসে বসলো।কিন্তু ঐ ছেলেটা শুধু নিশিকে ফলো করছে।নিশির সাথে সেধে সেধে কথা বলছে,আবার গিয়ে নম্বর চাইছে।নিশির কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগেনি কিন্তু নতুন আত্নীয় তাই কিছু বলতেও পারছে না।আর এ সবটাই কাব্য দূর থেকে খেয়াল করছে।আর জিদে মনে হয় ফেটে যাচ্ছে।মনে মনে ভাবছে এটাকে তো শিক্ষা দিতে হয়।
বিয়ে পরানো শেষ,খাওয়া দাওয়ার পর্ব ও শেষ ,এই ফাকে কাব্য ঐ ছেলেটাকে একাকি ডেকে নিয়ে বললো
—ব্রো যার পেছনে ঘুরছো সে অন্য কারো বাধনে বাঁধা আছে মানে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।আর সেই মানুষটা হলাম আমি।তাই আজাইড়া ঘুরে কোনো লাভ নেই বুঝছো।
থেলেটি শুকনো ঢোক গিলে বললো
—জ্বী ভাইয়া বুঝতে পারছি ভুল হয়ে গেছে।
—ওকে এখন যাও
ছেলেটা ওখান থেকে এসে হাফ ছাড়লো।ভেবেছিলো খারাপ কিছু হবে ওর সাথে।বরযাএী যাওয়ার আগ পর্যন্ত ছেলেটা মনের ভুলেও নিশির ধারেকাছে যায়নি। বিয়ে বাড়ির কনে বিদায়ের পর অনেকেই চলে গেছে ।কাব্য ওর বন্ধুদের নিয়ে রাতেই এসেছে কিন্তু নিশিকে জানায়নি শুধু নিশির মাকে বলে এসেছে।পরদিন ক্লাস আছে তাই।এতে নিশির কিছুটা খারাপ লাগছে।ওর ধারনা কাব্য ভাইয়া অনেক চেন্জ হয়ে গেছে।আর এখন বলবেই বা কেনো জিএফ আছে তো তার।
Carnation e book