অপেক্ষার প্রহর 8,9,10

অপেক্ষার প্রহর
অন্ধকার রুমে উপুর হয়ে শুয়ে নিরবে কান্না করে যাচ্ছে নিশি।রুমের দরজাটাও লাগানো ।এর মধ্যে মা এসে কয়েকবার দরজা নক করে কোনো সারা না পেয়ে বুঝতে পারলো মেয়ে ঘুমিয়ে আছে তাই আর মেয়েকে ডাকলো না।দুপুর গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা পার হতে চললো কিন্তু নিশির সে দিকে কোনো খেয়াল নেই।মনের মধ্যে একটাই ভাবনা যাকে এতো বিশ্বাস করলো তার কারনে জীবনের সবটা ওলোট পালোট হয়ে গেলো আজ।এমনটা হবে ভাবনার বাইরে ছিলো ওর।কি করবে এখন ? কিভাবে এই অবুঝ ভাঙ্গা মনটাকে শান্ত করবে।এ সব ভাবতেই হু হু করে আবার কেদে উঠলো।
“গতো পরশু ভার্সিটি শেষ করে নিশি রাতুলের সাথে দেখা করেছে।নিশির তেমন একটা ইচ্ছে ছিলো না রাতুলই ফোন করে খুব জোড়াজুড়ি করছে,শেষে ওর কথা রাখতেই রেস্টুরেন্ট এ দেখা করেছে।কিন্তু ওদের প্রতি কেউ একজন নজর রাখছিলো।দুজনে নির্জন একটা টেবিলে বসেছিলো,খাবার অর্ডার করে কথা বলছিলো তখন রাতুলের ফোনে কল আসে,রিসিভ করছিলো না ।আবার ফোন আসলো,যতোবার কল আসে ততো বারই কেটে দিচ্ছিলো।পাশ থেকে নিশি রাতুলকে বললো
—কে কল দিচ্ছে?
—আমাদের একজন বিজনেস পার্টনার
—তা হলে কল টা রিসিভ করুন
—না এখন এই সময়ে অন্য কথা ভালো লাগছে না।
—তারপরও গুরুত্বপূর্ণ ও তো হতে পারে
আবার কল আসলে রাতুল এবার রিসিভ করে কিন্তু অপর পাশ থেকে কথা শুনে মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।কিছু না বলে ফোনটা রেখে দিলো।
—কি হলো রেখে দিলেন যে।
—আসলে নিশি আমার একটা জরুরী মিটিং আছে আমাকে উঠতে হবে
—সমস্যা নেই ওঠা যাক
—নিশি সরি ফর দ্যাট তোমাকে সময় দিতে পারলাম না
—ইটস ওকে আরেক দিন মিট করবো।
রাতুল চলে গেলো আর নিশিও বাসায় চলে আসলো।তার পরদিন সকাল বেলা নিশির ফোনে আননোন নম্বরে একটা কল আসলো।নিশি রিসিভ করলো
—হ্যালো নিশি বলছেন
—জ্বী বলছি আপনি কে বলছেন?
—আমি কে বলছি সেটা পরে বলবো তার আগে আপনার সাথে আমার জরুরী কথা আছে
—জরুরী কথা তাও আমার সাথে ?আমি তো আপনাকে চিনি না জানি না
—দেখুন এতো কিছু জিজ্ঞেস করবেন না তবে আপনার ভালোর জন্যই বলছি প্লিজ আপনি দেখা করবেন আর হা কোথায় আসবেন আমি সেটা ম্যাসেজ করে জানিয়ে দিবো।বিকেল বেলা আর টাইম টা ও জানিয়ে দিবো।
নিশি অজানা ব্যক্তির ঠিকানা অনুযায়ী সেই জায়গায় গেলো,একটু পরেই একটা মেয়ে এসে ওর সামনে হাজির হলো।
—কেমন আছেন নিশি?
—জ্বী ভালো,আপনি….?
—আমি সেই যে আপনাকে কল করে এখানে আসতে বলেছি
—ওহ আচ্ছা ,কিন্তু আপনি আমার নাম আর ফোন নম্বর জানলেন কি ভাবে?
—সে সব কথা এখন থাক
—ঠিক আছে,তো বলুন কি বলবেন
—বেশি কিছু না শুধু জানতে চাই রাতুলকে কতোদিন ধরে চিনেন?
—রাতুলকে আমি কতোদিন ধরে চিনি এটা শুনে আপনি কি করবেন?বাই দ্যা ওয়ে রাতুল কে আপনি কিভাবে চিনেন?
—বলবো বলবো সবই বলবো মিস নিশি ধৈর্য্য ধরেন।আমি যতোদূর জানি বেশি দিন হয়নি আপনি ওকে চিনেন কিন্তু ও যে কি আর কেমন মানুষ এটাই ভালো করে চিনতে পারেননি।
—মানে টা কি একটু বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ আমার এ সব ভনিতা একদমই ভালো লাগছে না।
—হুম জানি ভালো লাগবে না কিন্তু আসল কথা শুনলে আপনার রিয়েকশন টা কি হবে সেটাই ভাবছি ।
—আসল কথা ?কি সেটা?বলুন
—আমি সীমা তবে আমার আরেকটা পরিচয় হলো রাতুলের বউ হই আমি শুধু তাই না কলেমা পরেই ইসলামি শরিয়ত মতে বিয়ে হয়েছে আমাদের।
কথাটা শুনেই নিশির চারদিক টা ঘুরতে লাগলো।
—চুপ করুন মিথ্যে বলছেন আপনি ,কি প্রমান আছে আপনার কাছে
—জানতাম এটাই বলবেন তাই সব প্রমাণ সাথে করেই নিয়ে এসেছি।এই যে বিয়ের ছবি আর কাবিননামার কাগজ।
নিশি সব কিছু হাতে নিয়ে দেখছে ,দেখতে দেখতে একসময় দারানো থেকে বসে পরলো।
—না জেনে না বুঝে কারো সাথে রিলেশন করতে নেই।রাতুল এক নম্বরের ধোঁকাবাজ ,আমার জীবনটাকে নরক বানিয়ে আবার আপনাকে ধরেছে শুধু তাই না এভাবে অনেক মেয়ের জিবন ও নষ্ট করছে তবে আপনি এখনও ঠিক আছেন তাই বোন হিসেবে বলবো এখন ও সময় আছে ওর থেকে দূরে সরে যান ,না হলে আমার মতোই দশা হবে বোন।ও বড়োলোকের ছেলে হলে কি হবে ওর চরিএ ভালো না।যখন কাল তোমাদের একসাথে রেস্টুরেন্ট এ দেখেছি তখনই তোমার প্রতি আমার মায়া হয়েছে।আমি চাই না আমার মতো আর কোনো মেয়ে ওর মতো শয় / তানের পাল্লায় পরুক।আর জিবনের সর্বস্ব হারিয়ে বসে থাকুক।
—আপনি যদি বউ হয়ে থাকেন তা হলে রাতুলের সাথে থাকছেন না কেনো?
—এটাই তো ভাগ্যদাষ,কাউকে না জানিয়ে একা বিয়ে করেছিলাম,আর সেটাই ছিলো সবটাই তে বড়ো ভুল।বউ হয়েও আজ বউয়ের অধিকার পাচ্ছি না।ওর তো আমাকে এখন আর প্রয়োজন নেই ,যা প্রয়োজন ছিলো তা তো নিয়েই গেছে।
বলে মেয়েটি কাঁদতে লাগলো।
—কাঁদবেন না প্লিজ,আপনি বাসায় যান আর আপনার কথা যদি সত্যি হয় তো ও এর শাস্তি ঠিক পাবে ।
বলেই নিশি সামনের দিকে হাঁটা দিলো।আজ কেমন বুকের মাঝে হা হা কার লাগছে।কিভাবে এ সব বিশ্বাস করবে।কই ওকে দেখলে তো এমন মনে হয় না।তবে ওকে সামনা সামনি সবটা জিজ্ঞেস করতেই হবে।না হলে তো স্বস্তি নেই।
সেদিন নিশি বাসায় এসে শুধু ছটফট করছে আর রাতটাও অনেক টেনশনে পার করেছে।কিন্তু বাসার কাউকে কিছু বুঝতে দেয় নি।
পরদিন সকালেই রাতুলকে ফোন দিয়ে মিট করতে তাইলে রাতুল না করে দেয় কিন্তু নিশি ও ছেড়ে দেবার পাএি নয় জেদ ধরেছে আর রাতুল ও সম্মতি দিয়েছে ।
প্রায় ঘন্টা খানেক অপেক্ষার পর রাতুল এসেছে
—কি হলো এমনি আসতে চাও না আজ জরুরী তলব ব্যাপার কি?
—জরুরী তলব মানে নিশ্চই জরুরী কথা তাই না মি.রাতুল
—এ ভাবে কথা বলছো কেনো?
—ঠিক ভালো ভাবেই বলছি সীমা কে আর তার সাথে কি সম্পর্ক আপনার?
—সীমা কে সীমা আমি কোনো সীমা নামের কাউকে চিনি না।
বলেই কেমন থমকে গেলো।চেহারায় চিন্তার ছাপ দেখা দিলো।
—সত্যি আপনি এ নামের কাউকে চিনেন না?
—সত্যি বলছি
—ওহ তা হলে এই ছবির মেয়েটা কে যার সাথে আপনার ছবি
তাও আবার দুজনে বর বউ সাজে।
(নিশি সীমার থেকে চেয়ে একটা ছবি নিয়েছিলোযাতে করে রাতুল কে প্রমাণ হিসেবে দেখাতে পারে)
—এ ছবি তুমি কোথায় পেয়েছো ?
—সে কথা না হয় পরে শুনবেন
বলেই নিশি রাতুলের গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো,
আচমকা এমন হওয়াতে গালে হাত দিয়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো রাতুল।
—এতো বড়ো ধোকা আমার সাথে,কেনো করলেন এমনটা?
—বিশ্বাস করো নিশি এগুলো ফেক বানোয়াট ,আজকাল এমন ছবি এডিটিং করে প্রিন্ট করা যায়।
—চুপ করুন আর কোনো মিথ্যে বলবেন না।আমি সব বুঝে গেছি।আজকের পর থেকে আমার সামনে তো দুরের কথা ফোন ও দিবেন নি মাইন্ড ইট
বলেই নিশি চলে যেতে লাগলে রাতুল ওর হাত ধরে বসে।
—সবটা যখন জেনে গেছো তা হলে তো এতো সহজে তোমাকে ছাড়ছি না।হা ও আমার বউ কিন্তু এখন আর ওকে চাই না ।এতো দিন ধরে তোমাকে পটিয়েছি ,তোমার পিছ পিছ ঘুরেছি সেটার মূল্য তো তোমাকে দিতে হবে।তা হলেই না আমার প্রতিশোধ নেওয়া শেষ হবে।
বলেই হাসতে লাগলো।
—প্রতিশোধ ? কিসের প্রতিশোধ?
—মনে করে দেখো তোমার সাথে প্রথম দেখা আর তখন তোমার হাত স্পর্শ করার অপরাধে তোমার কাজিন আর ওর বন্ধুরা মিলে আমাকে সেদিন খুব মেরেছিলো।সেদিন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তোমারে আমার বেড পার্টনার করেই ছাড়বো।
—ছিহ কতোটা জগন্য মনের মানুষ আপনি,লজ্জা করে না আপনার এ সব করতে।নাহ করে না।
বলেই হাত আরে শক্ত করে ধরলো।
—হাত ছাড়ুন বলছি ভালো হবে না কিন্তু
—কি হবে বলো একটু শুনি
—আমার ভাবতেই ঘৃণা লাগছে উপরের এই আপনি টা ভেতরে কতোটা জঘন্য মনের ।
—হুম ভালো করে জেনে নেও আর চলো আমার সাথে সহজেই ছেড়ে দিবো না তোমাকে।
রাতুল নিশি হাত ধরে টানছে ঐ মুহূর্তে নিশি আসেপাশে কয়েকজন লোক দেখতে পেয়ে চিৎকার করলে রাতুল হাত ছেড়ে পালিয়ে যায়।আর নিশিও হাফ ছেড়ে বাঁচে।লোকগুলো ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলে বলে একটি লোক ওকে বিরক্ত করছিলো তাই চিৎকার করছে।নিশির চোখে মুখে ভয়ের ছাপ,লোক গুলো বুঝতে পেরে ওকে একটা রিক্সা ডেকে উঠিয়ে দিলে নিশি বাসায় এসে সেই থেকে কান্না করেই যাচ্ছে””
এতো বেলা অব্দি মেয়ে তো ঘুমায় না তাই ভেবে আইরিন বেগম মেয়ের রুমে নক করলেন আর ডাকতে লাগলেন।নিশি চোখ মুছে উঠে রুমের লাইট অন করে দরজা খুলে দিলো।আইরিন বেগম রুমে ডুকতেই নিশি মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
—কি হয়েছে মা তোর ? কি অবস্থা করেছিস চেহারার,
—মা আমি ভুল করেছি অনেক বড়ো ভুল করেছি।
—কি করেছিস আর কি ভুল বল আমায়
—মা তুমি ঠিক বলেছো জিবনে সঠিক মানুষ নির্বাচন করতে হলে তার চরিএ টাই আগে দেখতে হয়।আমি রাতুল কে চিনতে পারিনি ,ও আমাকে ঠকিয়েছে মা ।ও একটা ঠকবাজ,প্রতারক,আমাকে ক্ষমা করে দিও মা ক্ষমা করে দিও।
বলে নিশি ওর মায়ের পা জড়িয়ে ধরলো।
আইরিন বেগম মনে মনে বেশ খুশি,মেয়েকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো লাগেনি সে নিজের ভুল নিজেই বুঝতে পারছে এতেই খুশি সে।
—ওঠ মা এ সব ভুলে যা সব কিছু আবার নতুন করে শুরু কর।তোর সুন্দর একটা ভবিষ্যত আছে ,তা ছাড়া আমাদের একমাএ মেয়ে তুই।তোকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা।
—কিন্তু মা এসব কেমনে ভুলবো আমি,মানুষ এতোটা খারাপ কেমনে হয় মা
—পৃথিবীর সবাই খারাপ না আর ভালোর ভিরে কয়েকজন খারাপ থাকবেই।তাই সব ভুলে যা।পারবিনা বল?
মায়ের কথা গুলো নিশির মনে গেথে গেলো।সত্যি কথা,যে বাবা মা এতো কিছু করছে তাদের কথা না ভেবে দুইদিনের পরিচিতো একজন কে নিয়ে ভাবাটা বোকামি ছাড়া কিছুই না।
—পারবো মা আমাকে পারতেই হবে।আগে আমার লেখাপরা শেষ করবো তারপরে তোমাদের সব স্বপ্ন পূর্ন করবো মা।
~~~~~~
৯.
পরদিন নিশি রেডি হয়ে ভর্সিটি যাচ্ছিলো,ড্রইং রুমে আসতেই
বাবা ডাক দিলো
—নিশি মা আমার “এদিকে আসো
—জ্বী বাবা কিছু বলবে?
—তুমি তো রাতুলকে বাসায় আনলে না,আর পরিচয় ও করিয়ে দিলে না।
—বাবা আমি যাই আমার দেরি হয়ে যাবে
তখনই নিশির মা এসে বললো
—তুমি ঐ ছেলের নাম আর নিবে না,ছেলেটা ভালো না ।আর তুমিও মেয়ের জন্য এর পর থেকে কোনো ছেলে খুঁজবে না।আমার মেয়ে কে আমি দেখে শুনে বিয়ে দিবো।তুমি আমার মেয়ের বিয়ে নিয়ে ভাববে না বলে দিলাম।
—কিন্তু নিশির মা
—কোনো কিন্তু না,
—বাবা আমি এখন আর বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবতে চাই না আগে লেখাপড়া শেষ করতে চাই।তারপরে যা ভালো মনে হয় করো তোমরা।
নিশির বাবাও মেয়ের দিকে চেয়ে বুঝতে পারছে মেয়ের মন ভালো নেই।মেয়ের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো
—ঠিক আছে মা তোর কথা মতোই হবে সব।
নিশির বাবার কথা শুনে আইরিন বেগম খুশি হলেন,অবশেষে তার স্বামীর বুদ্ধি হলো।
সে দিনের পর থেকে নিশি স্বাভাবিক থাকলেও ভেতর থেকে নিশ্চুপ হয়ে গেছে।ভার্সিটি বাদে কোথাও বের হয় না সারাক্ষণ রুমে সময় কাটায়।কারে সাথে কেমন কথা বলে না এমনকি ফ্রেন্ডদের সাথে ও না।মেয়ের এমন অবস্থা দেখে আইরিন বেগম নিশির বেস্টু ফারিয়া কে কল করে বাসায় আসতে বলেছে।মেয়ের মন খারাপ ফারিয়া যেনো নিশি কে একটু বুঝায়।
বিকেলের দিকে নিশির আর রুমে ভালো লাগছিলো না তাই ছাদে চলে গেছে।এই একটা জায়গাই নিশির শতো মন খারাপ ভালো করে দেয়।চোখ বন্ধ করে দোলনায় বসে আছে নিশি।
—আসবো
ফারিয়ার কথায় চোখ খুলে পেছনে তাকালো
—হুম আয়
—কিরে কেনো খোঁজ খবর নাই
—আন্টির কাছে শুনলাম মন খারাপ
—তেমন কিছু না
—নিশি আমি তোরে ছোটো বেলা থেকে চিনি জানি কা ছাড়া কোর চেহারার দিকে তাকালেই বলতে পারি কি চলছে তোর মনের মাঝে।
—কি সব বলছিস আমার কিছু হয়নি ,ঠিক আছি আমি।
—আমার দিকে তাকিয়ে বল তুই ঠিক আছিস
নিশি আর বেশিক্ষণ নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
—তুই ঠিকই বলেছিলি মানুষ কে না জেনে তার সাথে সম্পর্কে জড়ানো ঠিক না।দোস্ত রাতুল আমায় ঠকিয়েছে।
—শান্ত হ তোর কিছু হয়নি তুই একদম ঠিক আছিস ,
—কিন্তু আমি তো মন কে সান্তনা দিকে পারছি না কি করে এমন একটা ভুল করে বসলাম আমি।
—ও সব ভুলে যা ,যা হয়েছে ভালো হয়েছে।তোর কোনো ক্ষতি হয়নি সেটাই শুকরিয়া।
—তবে একটা কথা মনে রাখবি যে তোকে ভালোবাসে তাকেই ভালোবাসতে হয় তবে সেটা মন দিয়ে অনুভব করতে হয় ।না হলে ভালোবাসার মানুষটিকে চেনা যায় না,আর তার ভালোবাসাটাও তোর চোখে পরে না।
—কি বলতে চাস তুই
—কিছুনা এমনি বললাম,এমনও হতে পারে কেউ তোকে তার জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসে কিন্তু তুই জানিস না।
কথাটা শুনে নিশি হাসতে লাগলো
—এমন কেউ নেই রে আর এ সব নিয়ে ভাববো না।
—সময় হলেই দেখবি ,এখন চল
—হুম চল
ফারিয়া অনেকক্ষণ থেকে বাসায় চলে গেছে,নিশির এখন একটু ভালো লাগছে ,ফারিয়ার কথা গুলো ওর ভালো লাগছে।যাওয়ার আগে বারবার বলে গেছে মন খারাপ করা যাবে না।এই মেয়েটা সবসময়ই নিশির ভালো চেয়েছে হয়তো ওর প্রতি বন্ধুত্বও না বোনের মতো আলাদা একটা টান আছে।
“আজ খুব করে কাব্যের নিশির কথা মনে পরছে।যতই ভুলতে চায় ততোই মনে পরে।ভালোবাসা নামক কথাটা সত্যি বড়ো যন্তনাদায়ক।ওয়ালেট খুলে ছবিটা এম দৃষিটতে দেখতে লাগলো।পাশ থেকে রনি সবটাই দেখতে লাগলো।হঠাৎ করে রনি কাব্যের ওয়ালেট টা ছো মেরে নিয়ে নিলো।
—রনি দিয়ে দে ওটা
—উহুম দিবো না,আমার বন্ধু যার জন্য কষ্ট পাচ্ছে তার ছবি এখানে থাকবে না এটা এখনই খুলে ফেলে দিবো।
কথাটা বলতে দেরি রনির গালে চড় পরতে দেরি হয়নি।কাব্যের এমন ব্যাবহারে রনি তেমন কিছু মনে করেনি যেনো এটাই হওয়ার কথা ছিলো।
—এতোই যখন মায়া তা হলে আবার ভুলতে চাস কেনো?আগের থেকে সামনা সামনি বলতে পারতি,তা হলে তো এতো কষ্ট পাওয়া লাগতো না।
—ও আমাকে ভালো না বাসলেও আমি তো বাসি তাই আগের মতোই আমি ওকে ভালোবাসি আর এ ভাবেই যত্নের সাথে ছবিটা আমার কাছেই থাকবে।বুঝেছিস?
—হুম বুঝলাম তবে মন থেকে দোয়া করি দোস তোর আশাটা যেনো পূর্ন হয়।
একই বিল্ডিংএ থাকলেও আইরিন বেগম বোনের বাসায় তেমন একটা যেতে পারে না।তাই আজ সময় করে কাব্যদের বাসায় আসলো।এসে দেখে আন্জুমান বেগম ছেলের সাথে কথা বলছে।কথা শেষ করে মন খারাপ করে আছে।
—কি হলো বুবু মন খারাপ কেনো?কাব্য ঠিক আছে তো?
—হা আছে কিন্তু ছেলেটার সাথে কথা বললেই বলে দেশে আসবে না।এটা কোনো কথা?
—বুবু কিছু কথা বলার ছিলো
—কি বল
নিশির মা নিশির ব্যাপারটা সব খুলে বলছে তার বোনকে।সবটা শুনে আন্জুমান বেগম মনে মনে বেশ খুশি।কিন্তু প্রকাশ করছে না।
—কি করি বুবু বলো তো মেয়েটা সারাক্ষণ একা একা থাকে ঠিক করে কথা ও বলে না।
—ওকে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দিবি না হলে আমি রিয়া কে পাঠিয়ে দিবো ও গিয়ে নিয়ে আসবে।আসা যাওয়া করলে মনটা ভালো লাগবে।
—ঠিক আছে বুবু।
আন্জুমান বেগমের কথা মতো রিয়া নিশিদের বাসায় যায়।বাসায় আসার কথা বললে যেতে চায় না।রিয়া ওকে জোড় করে ধরে নিয়ে যায় বাসায়।
নিশিকে দেখে কাব্যের হাত ধরে টেনে এনে নিজের কাছে বসিয়েছে
—কেমন আছিস মা ?
—ভালো খালামনি
—এখান থেকে এখানে আর খালামনির কথা মনে পরে না বুঝি?
—পরে তো
—তা হলে আসিস না কেনো?
—এখন থেকে আসবো খালামনি
—আচ্ছা ঠিক আছে এখন রিয়ার রুমে যা তোরা কথা বল আমি কিছু বানিয়ে নিয়ে আসছি।
—ঠিক আছে
নিশি রিয়ার রুমে যাওয়ার সময় কাব্যের রুমে উকি দিছে।মানুষ টা নেই কিন্তু রুমের সব কিছু আগের মতোই সাজানো গোছানো রয়েছে।কাব্যের সাথে শেষ কবে কথা হয়েছে মনে নেই।তবে রুমে ঢোকার পর কাব্য ওর সাথে যতো দুষ্টুমি খুনসুটি করতো সব মনে পরতে লাগলো।একজনের চক্করে পরে কাব্যকে পুরোই ভুলে গিয়েছিলো।যদিও কাব্য নিশি কে যে চোখে দেখতো নিশি কাব্য কে ওভাবে দেখতো না ।তবে ওর প্রতি বেশ কেয়ারিং ছিলো কাব্য।রুম টা ঘুরে ঘুরে সব দেখতে লাগলো।কোনো জিনিসই কাব্য ধরতে দিতো না কিন্তু আজ সব পরে আছে।আজ নিশি কিছু ধরলেও শাসন করার মতো
কেউ নেই।টেবিলে রাখা সেই রংজলা ডায়েরিটা চোখে পরলো নিশির ,যেটা শেষ বার ধরেছিলো বলে কাব্য খুব রেগে গিয়েছিলো।ডায়েরিটা ধরতে গিয়ে সে কথা মনে করে থেমে গিয়ে ফিরে আসতে চেয়ে আবার টেবিলের কাছে গিয়ে ডায়েরিটা হাতে নেয়।ওড়নার এক পাশ দিয়ে কভারের গায়ের হাল্কা লেগে থাকা ধূলো মুছে নেয়।
ডায়েরির প্রথম পৃষ্ঠায় বড়ো বড়ো করে লেখা “তোমার অপেক্ষায় আমি”
এর পরে দ্বিতীয় পৃষ্ঠা থেকে পড়ে নিশির মাথায় কেমন আকাশ ভেঙে পরলো।এ গুলো কি লেখা ,এ কি করে সম্ভব?মাথা যেনো ঘুরছে ওর।
অপেক্ষারপ্রহর
১০.
অঝোর ধারায় শ্রাবণের অবাধ্য বৃষ্টির ফোটা গুলো ঝড়ঝড় করে পরছে ‘থামার নামগন্ধ নেই,আর এই বৃষ্টির পানিতে সিক্ত হচ্ছে একজনের মন প্রাণ।তবে আজ আনন্দ আর উল্লাস নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে না আজ বৃষ্টির পানিতে নিজেকে ভিজানো হচ্ছে অন্য কারনে।যেই কারন টা তার অনেক আগেই বোঝা উচিত ছিলো।কিন্তু সময় মতো সেটা সে বুঝতে পারেনি।এখন সে কি করবে ?কি করা উচিত ? কোনো উওর বা সমাধানের উপায় জানা নেই তার।মানুষ যা ভাবে তেমন হয় না আর যেটা ভাবেনা সেটাই হয় নিশির ক্ষেএেও তাই হয়েছে।
“কাব্য ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে?এটা কি করে সম্ভব?কাব্যের পুরো ডায়েরি জুড়েই ছিলো নিশি কে নিয়ে লেখা ওর মনের যতো কথা।ভালো মন্দ বুঝার পর থেকেই কাব্য নিশির প্রতি আসক্ত কিন্তু ছোটো বেলা থেকেই নিশির প্রতি ছিলো আলাদা একটা টান,মায়া।তবে নিশিকে জ্বালাতন করতে কাব্যের বেশ লাগতো।যদিও নিশি কাব্যের ফিলিংস টা বুঝতো না।
ডায়েরির প্রত্যেক টা পাতায় লেখা গুলো ছিলো নিশিকে নিয়ে কাব্যের আবেগমাখা হৃদয়নিংড়ানো সব কথা।ওর সাথে প্রতিটা কাটানো মুহূর্ত কাব্যের মনে অন্যরকম আনন্দ লাগতো।দিন শেষে সব ঘটনা গুলো কাব্যে ডায়েরির পাতায় স্বযত্নে লিপিবদ্ধ করে রাখতো।কাব্য চাইতো কোনো একটা সময়ে যখন নিশি বুঝতে পারবে কাব্য ওকে কতোটা ভালোবাসব তখন ও এটা ওকে উপহার দিবে কিন্তু সেটা হলো না।ডায়েরির শেষের দিকে লেখা গুলো ছিলো নিশি অন্য কাউকে পছন্দ করে সেটা নিয়ে..তবুও কাব্যের কামনা ছিলো “তাকে নিয়েই তুই খুশি হ যাকে তুই পছন্দ করিস।”
ডায়েরির প্রত্যেক টা লেখা নিশির মনে দাগ কাটতে লাগলো।
এতো বড়ো একটা কথা নিশি জানতে পারলো না সেটা দূরে থাক দুজন এতো কাছাকাছি ছিলো বুঝতেই পারলো না কোনোদিন?
নিজে নিজে বলতে লাগলো ‘তার মানে ঐ দিন কাব্য ভাইয়া আমাকে কিছু বলতে চাইছে?আর আমার কথা গুলো শোনার পরই সে কষ্ট পেয়ে কিছু একটা করেছিলো যার কারনে হসপিটাল ভর্তি ছিলো,কেমন মেয়ে ও এতো কাছে থেকে ও কিনা এক জনের মনের খবর রাখতে পারে না তার তো সত্যি আরেক জনের ভালোবাসা পাওয়া আশা করা টা বোকামি।রাতুল যা করছে ওর সাথে এটাই প্রাপ্য ও।চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরতে লাগলো।
ডায়েরির লেখা গুলো পড়তে পড়তে শেষের লাইনগুলো পরে নিশি ফ্লোরে বসে পরলো।
“প্রিয়তমা নিজের চাইতেও তোকে বেশি ভালোবাসেছি,ভালোবাসি,ভালোবেসে যাবো।
জানি ভালোবাসিস না তাতে কি হইছে
ভালোবেসে না হয় আমিই নিঃস্ব হলাম।
বলতে পারিনি বুঝাতে পারিনি
অক্ষম এ অন্তর্যামী
তবুও সবশেষে বলতে চাই
“তোমার অপেক্ষায় আমি”
কতোক্ষণ ডায়েরিটা বুকে জড়িয়ে কেঁদেছে কিন্তু এ ভাবে থাকলে বাসার সবাই টের পেয়ে যাবে তাই ডায়েরিটা জায়গা মতো রেখে চোখ মুছে উঠে খালামনিকে বলে বাসায় চলে আসলো কিন্তু রুমে যেতে ইচ্ছে করছে না বাইরে মেঘ ডাকছে এখনই বৃষ্টি নামবে বোধহয় ।নিশি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো ছাদের দরজায় দাড়িয়ে উকি মেরে দেখলো ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে..শখ করেই নিশি সবসময় ভিজে তবে আজ ভিজবে কষ্টটা কে বৃষ্টির পানির সাথে ধুয়ে দিবে বলে।ছাদের এক কোনায় গিয়ে হাটু ভাজ করে বসে পরলো।সেই থেকে এই পর্যন্ত নিশি ভিজছে।তবে এ ভেজাটা আনন্দের হতে পারতো কিন্তু না অনেক দেরি হয়ে গেছে কাব্যের কথা গুলো জানতে।তাই বলা যায় এটা ব্যর্থতার গ্লানি মুছে দিতে আর কষ্টটা কে একটু হলেও দূর করার জন্য নিশি আজ ভিজছে।”
কয়েক ঘন্টা হয়ে গেলো মেয়ের খোঁজ নেই তাই আইরিন বেগম পাঁচ তলায় বোনের বাসায় গিয়েছে মেয়ের খোঁজে।সেখানে গিয়ে শোনে অনেক আগেই নিশি চলে আসছে।আইরিন বেগম বুঝতে পারলেন মেয়ে আর কোথাও না ছাদেই আছে সেখানে গিয়ে এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে এক কোনায় মেয়েকে সেন্সলেস অবস্থায় পরে থাকতে দেখে চিৎকার করে উঠলো।আন্জুমান বেগম ও আইরিন বেগম এর পিছন পিছন আসলেন ।ঐ অবস্থা দেখে সে ও আৎকে উঠলো।দুজনে ধরে বাসায় নিয়ে গেলো।কাপড় পাল্টে হাত পায়ে গরম তেল মালিশ করতে লাগলো।সারা শরির ঠান্ডা হয়ে গেছে।নিশির বাবা বাসায় ডাক্তার নিয়ে আসলো।ডাক্তার বললেন বেশিক্ষণ ভিজছে তাই এমন হয়েছে ভয়ের কিছু নেই ঔষধ দিয়েছি খাওয়ালো ঠিক হবে তবে জ্বর আছে আরো বাড়তে পারে।ঔষধ চালিয়ে যেতে হবে।আর সেন্স তারাতারি ফিরবে চিন্তা করবেন না।
রাতে নিশির জ্ঞান ফিরছে কিন্তু জ্বর কমেনি।মা অল্প কিছু খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিছে।মেয়ের অসুস্থ্যতা দেখে আর আইরিন বেগম কিছু জিজ্ঞেস করলেন না।তবে এমনিতেই মনের অবস্থা ও ভালো না সেটাও সে বোঝেন।তাই মেয়ে সুস্থ্য হলেই বোঝাবেন তাকে।
আন্জুমান বেগম নিশিকে রেখে বাসায় গেলেন,রিয়া এসে বললো
—মা ভাইয়া ফোন করেছিলো
—কি বলেছিস ওকে বলছি তুমি ঐ বাসায় গেছো
—আর কিছু বলছে?
—বলছে কল করতে
আন্জুমান বেগম ছেলেকে ফোন দিলেন
—কেমন আছো মা?
—ভালো আছি তুই কেমন আছিস বাবা?
—ভালো মা,শুনলাম খালার বাসায় গিয়েছিলে তারা কেমন আছে?
—ভালো আছে
—ওহ
—আর কিছু শুনবি না?
—আর কি শুনবো মা
—কেনো নিশির কথা
নিশির নাম নিতেই কাব্যের মনে মোচড় দিয়ে উঠলো,মা তো আসার পর থেকে এ ভাবে সরাসরি কখন ও ওর কথা বলে না।আজ হঠাৎ বলছে?
—ওর কথা কি শুনবো সে তো দিব্যি ভালো আছে ।
—হা খুব ভালো আছে,যাই হোক ওর কথা যেহেতু তুমি শুনতে চাও না ,আর না শুনাই ভালো।তুমি তোমার মতো জীবন গড়ে নেও আর আমি চাইবো পড়ালেখা শেষ করে দেশে চলে আসো।
—মা আমি তো বলছি আর ফিরবো না।
—সেটা সময় হলেই বুঝবো।
বলেই আন্জুমান বেগম ফোন রেখে দিলো।অন্যদিকে কাব্য ফোন রেখে ভাবতে লাগলো মার হঠাৎ কি হলো নিশির ব্যাপারে এমন কথা কেনো বললো।আর বেশি কিছু ভাবলো না।তবে কেনো জানি আজ ওর নিশির কথা ভাবতে বেশ ভালো লাগছে।মনে কোনো রাগ লাগছে না।এমন টা ও ফিল হচ্ছে যদি ওকে একটু দেখতে পেতাম আবার ভাবছে নাহ ও এখন আরেক জনের তাই প্রশ্নই ওঠে না দেখার ভেবে মুড অফ হয়ে গেলো।
~~~~~
দুদিন পরই নিশি সম্পূর্ণ সুস্থ্য।তবে শরির দূর্বল তাই ভার্সিটি যেতে পারছে না।একা একা ভালো ও লাগে না।রিয়া আর খালা এসে মাঝে মাঝেই গল্প করে গেছে ।আজ আর কেউ আসেনি তাই ও ফারিয়া কে কল করে বাসায় আসতে বলছে।আধঘন্টার ভিতর ফারিয়া চলে আসছে,ফারিয়ার একটা রাগ ছিলো নিশির ওপর আর যখন শুনছে রাতুলের সাথে নিশির ব্রেকআপ হইছে তখন থেকেই নিশির ওপর ফারিয়া সন্তুষ্ট ।
—কিরে দোস কি অবস্থা এখন ?
—এই তো ভালো রে
—এমন অবস্থা আমাকে আগে জানাসনি কেনো?
—এমনি আর দিবো যে নিজেরই হুস ছিলো না আর মা ও আমাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলো।যাই হোক তোর কি অবস্থা বল?
—ভালো তবে এখন আরো ভালো তোর খবর টা শুনে।
—আরো একটা খবর আছে ওটার জন্যই তোকে ডাকা ,তোকে তো আমি সবটাই শেয়ার করি তাই এটাও করতে চাই।
—বল কি বলবি
নিশি ফারিয়াকে সব ঘটনা খুলে বললো।কিন্তু ফারিয়া তেমন রিয়েক্ট করলো না।
—কিরে তুই কিছু বলছিস না যে
—কি বলবো এটা তো পুরান কথা
—মানে?
—হা তোকে বলছিলাম না ভাইয়া বলছে তার গার্লফ্রেন্ড আছে,আরে বুদ্ধু ওটা তুই ছিলি।ভাইয়ারা সবাই জানে আমাকে বলছিলো কিন্তু তুই যাতে না জানিস সেটা কাব্য ভাইয়া বারন করে দিয়েছিলো তাই বলিনি।সে চাইতো তুই নিজে থেকে জানবি বুঝবি।কিন্তু নাহ কিছুই বুঝলি না। জানিস তুই যখন রাতুলের কথা ভাইয়া কে বলছিস তখন তার কি অবস্থা হয়েছিলো?থাক ওটা আর শোনা লাগবে না।এখন ও সময় আছে নিজেকে সেই ভাবে গড়ে তোল আর পেছনের সব কথা ভুলে সঠিক মানুষটিকে ভালোবাসতে শিখিস তা হলে দেখবি যে কাব্য ভাইয়া তোর জন্য দেশ ছেরে বিদেশে পরে আছে সেই কাব্য ভাই একদিন তোর টানে দেশে চলে আসবে।পারবি না বল কাব্য ভাইয়ার ভাঙা মনটা জোড়া লাগাতে ? আমার বিশ্বাস তুই পারবি।
—কিন্তু সে কি আমায় ক্ষমা করে মেনে নিবে?
—সেটা বলতে পারবো না তবে শুনেছি ভালোবাসা দিয়েই ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়।
—পারবো কিনা জানি না তবে আমি আর দ্বিতীয় বার তাকে হারাতে চাই না।দোস একটা কথা রাখবি ?
—বল
—আমি যে সবটা জানছি এটা আবার তুই ফাহিম ভাইকে বলবি না তা হলে কাব্য ভাইয়া কে জানিয়ে দিবে।তুই যা বলছিস আমি সেটাই করতে চাই।
—ঠিক আছে চিন্তা করিস না।
ফারিয়া চলে গেলে নিশি ধিরে ধিরে বিছানা ছেড়ে ওঠে আলমারি খুলে ছবির যতো নতুন পুরাতন অ্যালবাম ছিলো সব বের করতে লাগলো আর সব গুলো খুলে দেখতে লাগলো।নিশির সাথে কাব্যের অনেক ছবি ।সবগুলোই ফ্যামিলির বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময়ে তোলা ।ভার্সিটিতে ওঠার পরে একসাথে তেমন ছবি করেনি,তবে খুঁজে কয়েকটা পেয়েছে নিশি যখন প্রথম ভর্তি হয় ওদের নবীন বরণে নিশির সাথে কাব্য ছবি তুলেছিলো।ছবি গুলো ভালো করে দেখা হয়নি কিন্তু আজ দেখে খুব ভালো লাগছে।কাব্যের ছবির ওপর হাত বুলিয়ে দেখছে,আর ফিল করছে অনেক দিন দেখে না মানুষটাকে।কতো দুষ্টুমি করতো কতো জ্বালাতন করতো নিশিকে,ভালোবাসতো ঠিকই কিন্তু এ সব করে নিশি কে বুঝতে দিতো না কিছু।নিশি তো উল্টো ওকে সহ্য করতে পারতো না ।আজ নিশির নিজেকে বড্ড বোকা মনে হচ্ছে।সত্যি বয়সের সাথে ওর মেচুরিটি টা হয়ে ওঠেনি।
নিশি অ্যালবাম থেকে একটা ছবি নিয়ে কেচি দিয়ে কেটে কাব্যের ছবিটা আলাদা করে ছোটো একটা ফ্রেমে রেখে দিছে ।টেবিলে রেখে কতোক্ষণ দেখলো কিন্তু এটা এখানে রাখা যাবে না কেউ দেখে ফেলবে তার চাইতে টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দেওয়াটা ঠিক হবে ।পরে ছবিটা ড্রয়ারে রেখে দিলো।
আইরিন বেগম রান্না করতে ছিলেন,নিশি মাকে ডাকতে ডাকতে কিচেনার সামনে গেলো।আইরিন বেগম মেয়ের ডাকে সারা দিয়ে জানতে চাইলেন কিছু লাগবে কিনা।নিশি গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো
—আজ আমি বিরিয়ানি খাবো রান্না করে দাও
—ঠিক আছে করে দিবো আর কি করবো সাথে?
—আর কিছু না তবে ডিম হলে মন্দ হয় না বলে হাসতে লাগলো।
—ঠিক আছে করে দিবো
—সোনা মা আমার
বলে মায়ের গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো।
মেয়ের মনে এমন হাসি খুশি দেখে আইরিন বেগম ও খুশি।মনে মনে বলতে লাগলো যাক তা হলে সব কিছু ঠিক ঠাক হচ্ছে তাহলে।
নিশির মন ভালো থাকলে মায়ের কাছে এভাবেই খাবারের আবদার করে থাকে।
নিশি এখন প্রায়ই কাব্যদের বাসায় যায়,খালা খালু রিয়া সবার সাথেই আগের মতো কথা বার্তা হয় ।নিশির পছন্দের অনেক খাবারই খালা করে খাওয়ায় ।রিয়া কে নিয়ে মাঝে মাঝেই শপিং এ যায়।রিয়ার যে রাগ গুলে ছিলো নিশির প্রতি সেটা এখন আর নেই।নিশি মাঝে মাঝে ইনিয়ে বিনিয়ে খালা না হলে রিয়ার কাছ থেকে কাব্যের খোঁজ নেয় ।আবার দেখতে মন চাইলেও যখন ওর সামনে খালা ভিডিও কলে কথা বলে তখন পাশ থেকে উকি মেরে কাব্যকে এক নজর দেখে নেয়,তবে সাবধানে দেখে কাব্য যাতে না টের পায়।দেখে আর কেমন একটা লজ্জা লজ্জা ফিল হয় যেটা আগে কখনও হতো না।কিন্তু ওর এ সব কিছু একজনের চোখে ঠিকই ধরা পরে যায় আর সে মুচকি মুচকি হাসে।
আজকাল কাব্যের ফোনে একটা আননোন নম্বরে কল আসে কিন্তু রিসিভ করলে কথা বলে না,শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ আর কিছু বুঝতে পারে না।তবে ও বুঝতে পারছে এটা বাংলাদেশের নম্বর কিন্তু কে দিবে এভারে ডিরেক্ট কল আর দিলেই বা কথা কেনো বলে না।আচ্ছা মুশকিল তো ,কিছুক্ষণ আগেও সেই নম্বর থেকে কল এসেছে এবার ও কাব্য রিসিভ করছে কিন্তু কথা বলছে না ।এভাবে আর পারছে না কাব্য সহ্যের একটা সীমা থাকা দরকার এরপরে কল করলে বেশি বেশি বলবে কিন্তু কি লাভ বলে কথাই তো বলে না নো রেসপন্স ।তাই আর বেশি কিছু না ভেবে নম্বরটা ব্লক করে দিলো দেখা যাক এরপর কি হয় সামনে।
carnation e book

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *