আদম আঃ এর জীবনী

আদম আঃ এর জীবনী

আদম আঃ এর জীবনী

Ebook Download Now

আদম আঃ এর জীবনী

প্রথমে আল্লাহ ছিলেন আল্লাহ ছাড়া কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিলনা। এমন কোন মুহূর্ত ছিল না যখন তিনি ছিলেন না। তিনি ব্যথিত কোন বাস্তবতা ছিল না।

কোন এক পর্যায়ে অসীম জ্ঞানের মালিক সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি সৃষ্টি করবেন। সম্ভাবনার জগত থেকে বাস্তবতার জগতে নিয়ে আসতে লাগলেন তার সৃষ্টি গুলোকে, অসীম জ্ঞানের মালিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সৃষ্টি বলে কিছু থাকবে তার মানে সৃষ্টির অস্তিত্ব থাকাটাই স্বাভাবিক। সেই সৃষ্টি ভালো কিছুই করুক বা খারাপ কিছুই। আল্লাহ তার আরশ সৃষ্টি করলেন, কলম সৃষ্টি করলেন, এবং সেই কলমকে আদেশ করলেন লিখো। 

কলম বলে উঠলো আমার রব আমি কি লিখবো। আল্লাহ বলে উঠলেন সময়ের শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ কেয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে সব কিছু লিখো। আরশ শব্দের অর্থ আসন। আসন, পানি,কলম এই শব্দগুলোর অর্থ আমরা জানি। কিন্তু আল্লাহর সেই আরশ শুরুর সেই পানি সবকিছু লেখা কলম আসলে কেমন তা আমাদের জানা সম্ভব নয়। এবং একমাত্র আল্লাহর কাছেই পরিপূর্ণ জ্ঞান রয়েছে। 

মহাবিশ্ব তৈরীর পঞ্চাশ হাজার বছর আগেই আল্লাহর হুকুমে সেই কলম সবকিছু লিখে রেখেছিলো লাওহে মাহফুয এ। ৫০০০০ বছর পর আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করলেন। 

( যারা কুফরি করে তারা কি দেখে না যে আসমান সমূহ ও জমিন মিশেছিল ওতপ্রোতভাবে তারপর :আমরা উভয়কে পৃথক করে দিলাম। এবং প্রানো বন সব কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে তবুও কি তারা ঈমান আনবে না? (২১:৩০))

অতঃপর কোন এক পর্যায়ে আল্লাহ সৃষ্টি করলেন ফেরেশতাদের, নুর থেকে তৈরি আল্লাহর এই অপূর্ব সৃষ্টি, প্রবৃত্তি গতভাবেই আল্লার ইবাদতে নিমজ্জিত থাকে। এবং আল্লাহর কোন হুকুমের অবাধ্যতা করে না। তাদের মধ্য থেকে সর্ব প্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন জিব্রাইল আঃ ,। আল্লাহ নূর থেকে ফেরেশতা তৈরি করার পর আরো কিছু সময় অতিবাহিত হল। এবং এরপর এক নতুন জাতির সৃষ্টি করলেন, এবং তাদের সৃষ্টি করলেন এক ধরনের ধোয়াবিহীন আগুন থেকে। এই জাতির নাম হল জ্বীন ফেরেশতা আর জ্বীন জাতির মূল পার্থক্য হল জ্বীন জাতি প্রবৃত্তিগতভাবেই আল্লার ইবাদত করে না, এবং তারা চাইলে তার হুকুম  অমান্য করতে পারে।

আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়াতে খলিফা হিসেবে পাঠালেন। আগুন থেকে তৈরি এই সৃষ্টি ছিল উত্তেজনা প্রবন। তারা ঘনঘন যুদ্ধ ও খুনা খুনিতে লিপ্ত হতে লাগলো। এবং দুনিয়াতে অন্যায় অনাচার ছড়িয়ে পড়ল। কিছু পুণ্যবান জ্বীন থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ জ্বীন আল্লাহকে অমান্য করতে লাগলো কিন্তু একজন জ্বীন ছিল যে বিশেষভাবে আল্লার ইবাদত করত এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার চেষ্টা করত, এক পর্যায়ে তার পুরস্কার শুরুপ আল্লাহ তাকে তার কাছে আশার অনুমতি দিলেন, যে সেই ফেরেশতাদের অবস্থান থেকে আল্লাহর ইবাদত করার সুযোগ পেল।

 অন্যদিকে দুনিয়াতে জ্বীন জাতির অপকর্ম চলতে থাকায় , আল্লাহতালা ফেরেশতাদের হুকুম দিলেন দুনিয়াতে গিয়ে সেই জ্বীনদের বিতাড়িত করতে। এই দায়িত্ব পূরণ করতে ফেরেশতাদের সঙ্গে পাঠানো হলো আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করা সেই জ্বীন কেও,  দুনিয়ায় অন্যায় অনাচার সৃষ্টি করা জ্বীনদের ফেরেশতারা ধ্বংস করল। এবং খুব অল্প সংখ্যক জিন রেহাই পেলো। আল্লাহর হুকুম পালন করে ফেরেশতারা আসমানে ফিরে আসলো। এবং তাদের সাথে সেই পূর্ণবান জিন। এরপর কতটুকু সময় পার হল তা আমরা জানিনা, কিন্তু এক পর্যায়ে রব্বুল আলামীন ঘোষণা দিলেন তিনি এক নতুন জীব সৃষ্টি করবেন। 

(আর যখন আমার রব ফেরেশতাদের বললেন নিশ্চয় আমি জমিনে খলিফা সৃষ্টি করেছি। তারা বলল আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে ফ্যাসাদ ঘটাবে ও রক্তপাত করবে? আর আমরা আপনার হামদ সহ তাসবীহ পাঠ করি এবং পবিত্রতা ঘোষণা করি। তিনি বললেন নিশ্চয় আমি তা জানি যা তোমরা জানো না। (২:৩০))

যখন আল্লাহ ঘোষণা দিলেন তিনি মানুষ সৃষ্টি করবেন ফেরেশতারা অবাক হয়ে যায়, তারা দেখেছিল স্বাধীন ইচ্ছা সম্পন্ন জ্বীন দুনিয়াতে কত অন্যায় অনাচার করেছিল, তারা জানতো মানুষকেও যদি স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দেওয়া হয় একই রকম অন্যায় অনাচারে লিপ্ত হবে। তবু কেন আল্লাহ তাদের সৃষ্টি করবেন? তারা আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর প্রশ্ন তুলছিল না বরং তাদের বিস্ময় প্রকাশ করছিল। আল্লাহ খুব সহজ ভাবে বুঝালেন তার কাছে এমন জ্ঞান রয়েছে যা ফেরেশতাদের কাছে নাই। অর্থাৎ মানুষকে সৃষ্টি করার পর তারা দুনিয়াতে অপকর্ম লিপ্ত হলেও তাদের সৃষ্টি করার পেছনে কারণ রয়েছে। এবং শীঘ্রই সেই কারণগুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে।

*********

অতঃপর আল্লাহ নিজ হাতে আদম আঃ কে সৃষ্টি করলেন, এবং তাকে সৃষ্টি করলেন মাটি থেকে এবং তার দৈহিক গঠন সম্পূর্ণ করার পর, তার ভিতর রুহ বা আত্মা ফুকে দিলেন, এবং তিনি আদম আলাই সালাম কে সব কিছুর নাম শেখালেন. 

( আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন তারপর সেগুলো ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করে বললেন এগুলোর নাম আমাকে বলে দাও যদি তোমরা সত্যবাদী হও (২:৩১))

এবং তিনি ফেরেশতাদের হুকুম দিলেন আদম আঃ কে সেজদা করার জন্য। ফেরেশতাদের আসনে তখন সেই পূর্ণবান জীনেরও স্থান ছিল। সেই আদেশটি তার ওপরেও প্রযোজ্য ছিল কিন্তু প্রতিটি ফেরেশতা আদম আঃ কে সম্মানস্বরূপ সেজদা করলেও সেই জ্বীন তাকে সেজদা করলো না। 

প্রথমবারের মতো কেউ আল্লাহর উপস্থিতিতে আল্লাহর হুকুম অমান্য করার সাহস দেখালো। 

(যখন আপনার রব ফেরেশতাদেরকে বলেছিলেন আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি কাদা থেকে, অতঃপর যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রুহ সঞ্চয় করব তখন তোমরা তার প্রতি সেজদা করবে। তখন ফেরেশতারা সকলেই সেজদা করলো ইবলিশ ছাড়া সে অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হলো (৩৮:৭১-৭৪))

এবং সাথে সাথে তার এত বছরের ইবাদতের উদ্দেশ্য প্রকাশ পেলো। সে বেশি বেশি ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা কামনা করেনি, কামনা করেছিল মর্যাদা সম্মান, আগুনের তৈরি জ্বীন হয়ে ইবাদতের মাধ্যমে নুরের তৈরি ফেরেশতাদের মধ্যে জায়গা করে এতটাই অহংকারী হয়ে গেছিল যে সে মাটির তৈরি আদম আঃ সেজদা করাকে ছোট করে দেখলো।

সে গোটা মহাবিশ্বের স্রষ্টা মহান রাব্বুল আলামিনের আদেশ অমান্য করার মাধ্যমে সবচেয়ে অপদস্ত অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছিল তা বুঝতে পারল না। 

( তিনি বললেন আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম তখন কি তোমাকে সেজদা করতে বাধা দিল? সে বলল আমি তার চেয়ে বেশি ভালো আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কাদামাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন))

এবং হয়তো আল্লাহকে অমান্য করার চেয়েও বড় ভুলটা সে তার পরই করলো, হে আল্লাহর রহমত এবং ক্ষমার ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়লো। সে ধরেই নিল সে যে ভুল করেছে এর থেকে আল্লাহ তাকে আর কখনো ক্ষমা করবেন না, এই হতাশ হয়ে যাওয়াকে আরবীতে বলা হয় (আব্লাসা) এবং সেই থেকে তার নাম হয়ে গেল ইবলিশ। 

অতঃপর আল্লাহ তায়ালা ইবলিসকে বিতাড়িত করলেন, 

(তিনি বললেন তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও নিশ্চয় তুমি রাজিম (বিতাড়িত) আর নিশ্চয় তোমার উপর আমার লানত থাকবে বিচার দিবস পর্যন্ত (৩৮:৭৭-৭৮)

ইবলিশের মনে এত প্রবল হিংসা আর ক্রোধ জন্ম নিল যে সেই অভিশাপের মুহূর্তেও আল্লাহর কাছে দোয়া করে ফেললো, কিন্তু সে মাগফিরাতের জন্য দোয়া করলো না, বরং আল্লাহর কাছ থেকে কিছু সময় পেয়ে নিলো, যেন সে আল্লাহর কাছে প্রমাণ করতে পারে, মানবজাতি কতটা খারাপ, এবং মহান রাব্বুল আলামিন এত বেশি দয়াশীল তার সৃষ্টিকে তিনি এতটাই ভালোবাসেন যে তার সরাসরি হুকুম অমান্য করার পর ইবলিশ যখন তার কাছেই দোয়া করলো তিনি তার দোয়া কবুল করে নিলেন।

(তাহলে আমরা যখন ভুল করে ফেলি বারবার একই গুনায় লিপ্ত হতে থাকি, তারপর আমরা ভাবি আমরা অনেক বেশি খারাপ হয়ে গেছি, আল্লাহ হয়তো আমাদের ক্ষমা করবেন না, আমাদের কি এমন চিন্তা করার কোন কারন রয়েছে? )

আল্লাহ আদম আদম আঃ কে জান্নাতে প্রবেশ করলেন, এবং তিনি সেখানে তার রবের নেয়ামত উপভোগ করতে লাগলেন। এবং ইবলিশ তাকে গোপনে ধোকা দেওয়ার পরিকল্পনা করতে লাগলো।

carnation academy
carnation academy

***********

ইবলিশ যখন বছরের পর বছর আল্লাহর ইবাদত করার পর ইবাদতকারীদের মধ্যে অত্যন্ত সম্মানিত স্থানে পৌঁছে যায়, এমন নৈকট্য লাভ করার সুযোগ পায় যা শুধু বিশেষ ফেরেশতারাই পেয়েছিল। তখন আল্লাহ তাকে আরও বিশেষ ইবাদত করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তাকে বলেছিলেন আদম আঃ কে সিজদা করতে, কিন্তু সে আল্লাহর আদেশ অমান্য করলো‌ , আল্লাহর আদেশ অমান্য করার মাধ্যমে তার এত বছরের ইবাদত করার একটি দিক প্রকাশ পেলো, তার এত বছরের ইবাদতের কারণ ছিল আরো মর্যাদা পাওয়ার আকাঙ্ক, নিজের মাহাত্ম্য প্রমাণের আকাঙ্ক্ষা, আল্লাহ যেহেতু (লাথিফুল খাবির) তিনি প্রতিটি অন্তরের সবচেয়ে গোপন বিষয়গুলো জানেন, তাই তিনি সবসময় জানতেন ইবলিশের ইবাদতের গভীরে কেমন উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে। 

কিন্তু তিনি তো আর রাহিমুর রাহিমীন, তাই তিনি ইবলিশকে ধীরে ধীরে তার কাছে টেনে নিয়েছেন। তাকে শ্রেষ্ঠতর সংগীতের সাথে তাকে ইবাদত করার সুযোগ করে দিয়েছেন কিন্তু তার অন্তরের অহংকার বোধ এত প্রবল ছিলো, সৃষ্টির সেরা ফেরেশতাদের সঙ্গ পেয়েও তার মধ্যে কোন পরিবর্তন আসেনি। 

অতঃপর আল্লাহ তার সামনে এমন এক পরীক্ষা দিলেন যা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেল তার অন্তরে আসলে কি ছিলো।

যে সত্যিকার অর্থে আল্লাহকে ভালোবেসেছে, একনিষ্ঠভাবে তারি নৈকট্য লাভ করার চেষ্টা করেছে। সে আল্লাহর হুকুম মানার জন্য উৎসুক হয়ে থাকবে। আল্লাহ তাকে যেই হুকুমই দেন না কেন, ইবলিশ যখন আল্লাহর আদেশ অমান্য করলো তখন সবার কাছেই এই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেলো, তার অন্তরে আল্লাহর আনুগত্যের চেয়ে তার পদমর্যাদা প্রাধান্য পেয়েছে। 

এবং সে এতটাই হতভাগা যে যেই পদমর্যাদা তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিল সেই পদমর্যাদা আল্লাহর হুকুম পালন করলে সে এমনি এমনি পেয়ে যেত। 

এবং হাজার হাজার বছর পর আজও কত মানুষ সেই একই ধোকার মতো পড়ে রয়েছে। 

আরো একটা প্রশ্ন থেকেই যায় যে মাটির তৈরি আদম আঃ কে নূরের তৈরি ফেরেশতাদেরকে সেজদা করতে বললেন কেন? 

এর বিভিন্ন কারণ এর মধ্যে একটি হচ্ছে জ্ঞানের মর্যাদা। আল্লাহ আদম আ: কে সৃষ্টি করার সাথে সাথেই তাদেরকে সেজদা করার আদেশ দেননি বরং তিনি প্রথমে আদম আঃকে শিক্ষা দিয়েছেন। এবং আদম আঃ সেই শিক্ষা গ্রহণ করার পরেই বাকিদের কাছ থেকে সিজদা করার মত অবস্থানে পৌঁছেছেন। 

আল্লাহর রহমতে আদম আঃ জান্নাতে বাস করতে লাগলেন। ইবলিশ নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করে ওঠ পেতে বসে থাকলো আদম আঃ কেউ ফাদে ফেলার জন্য, অন্যদিকে আদম আঃ জান্নাতের অগণিত নিয়ামত গ্রহণ করতে লাগলেন। কিন্তু বছরের পর বছর পার হয়ে যাওয়ার পর তিনি তার অন্তরে এক নতুন ধরনের অনুভূতি অনুভব করলেন। 

***********

এই অনুভূতি ছিল একাকীত্ববোধ। তিনি ধীরে ধীরে লক্ষ্য করলেন আল্লাহর জগতে এত এত ফেরেশতা, এত এত জান্নাতি পশু পাখি, কিন্তু তার মত আর কেউ নেই। অতঃপর তার জন্য আল্লাহ একজন জীবনসঙ্গী সৃষ্টি করলেন। এবং আমাদের মা হাওয়া আঃ মের জন্ম হলো। তাকে পাওয়ার সাথে সাথেই আদম আঃ এর নিঃসঙ্গতা দূর হয়ে গেল। 

আদম আঃ এবং হাওয়া আঃ মের জন্য আল্লাহ পুরো জান্নাত উন্মুক্ত করে দিলেন। এবং শুধুমাত্র একটি গাছের ব্যাপারে তাদের সতর্ক করে দিলেন। এবং বললেন এই গাছের কাছেও এসো না।

 এই আদেশ কে ঘিরেই ইবলিশ তার ফাঁদ পাততে লাগলো। সে ধাপে ধাপে আদম আঃ কে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো, এবং অবশেষে সে আল্লাহর কসম খেয়ে বলল, সে তাদের সৎ উপদেশ দিচ্ছে এবং তারা যদি সেই গাছের ফল খায়, তারা অমর হয়ে যাবেন, ফেরেশতাদের মত হয়ে যাবেন। 

আদম আঃ এবং মা হাওয়া এত পবিত্র পরিবেশে জীবন যাপন করেছিলেন, যে তারা কখনো মিথ্যা কথার সন্মুখিনী হননি। আল্লাহর কসম খেয়ে মিথ্যা কথা বলা তো অনেক দূরের কথা। তারা ইবলিশের ফাঁদে পা দিলেন। এবং সেই নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেললেন। 

এবং সাথে সাথেই তারা তাদের নগ্নতা উপলব্ধি করলেন। এবং যে আলো দ্বারা তাদের নগ্নতা সুরক্ষিত ছিল, সেই আলো নিভে গেলো এবং তারা গাছপালা দিয়ে নিজেদের ঢেকে নিলেন। 

(এখানে একটা কথা মনে রাখা উচিত নগ্নতা ছিল আল্লাহর তরফ থেকে শাস্তি, আর এখন আমরা এটাকে স্বাধীনতা বলি। )

আদম আঃ এবং মা হাওয়া সাথে সাথে তাদের ভুল বুঝতে পারলেন। যদিও ইবলিস তাদেরকে ফাঁসিয়েছিলো, তারা বুঝতে পারলেন যখন আল্লাহ পরিষ্কার আদেশ করেছিল, তাদেরকে সেই গাছ থেকে ফল না খাওয়ার জন্য, তাই তাদের ইবলিশের কথায় কান দেওয়া উচিত হয়নি, তাই এতে তাদেরও দোষ ছিল।

এবং তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করে বললেন 

( হে আমাদের রব আমরা আমাদের নাফসের উপর জুলুম করেছি, এবং যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের উপর রহম না করেন। তো নিশ্চয়ই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব) 

এবং এখানেই আদমান আঃ এবং ইবলিশের মাঝে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য দেখা দেয়। যখন ইবলিশ আল্লাহর সরাসরি আদেশ অমান্য করেছিল তখন সে আল্লাহকেই দোষারোপ করেছিল, নাউজুবিল্লাহ সে বলেছিল নিশ্চয় আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন অতএব আমি মানুষকে পথভ্রষ্ট করব। 

অন্যদিকে আদম আঃ সব দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়ে আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে বলেছেন, আল্লাহ যদি তাকে ক্ষমা না করেন তার আর কোন আশা থাকবে না। তার আর কোন উপায় থাকবে না। 

এবং আল্লাহতালা আদম আঃ এবং মা হাওয়ার দোয়া কবুল করলেন, এবং তাদেরকে আদেশ করলেন যেহেতু তারা সেই গাছের ফল খেয়েছিলো, তাই তাদেরকে একটা নির্দিষ্ট সময় পৃথিবীতে কাটাতে হবে। 

মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে আল্লাহ তাআলা আদম আঃকে শুক্রবারে সৃষ্টি করেছেন, তাকে শুক্রবারে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন, আর শুক্রবারেই তাকে সেখান থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছিল। (বই 4, সংখ্যা 1857)

আদম আঃ এবং মা হাওয়া পৃথিবীর দুটি আলাদা স্থানে অবতরণ হলেন। তারা ঠিক কোথায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন সে বিষয়ে অনেক মত রয়েছে। তবে সব বর্ণনায় যা আসে তাহলে তারা দুজন পৃথক পৃথক জায়গায় অবতরণ হয়েছিলেন। 

জান্নাতের মতো জায়গায় একে অপরের সুমধুর সঙ্গ পাওয়ার পর, দুনিয়ার মত জায়গায় এসে নিঃসঙ্গ দিন কাটানো অনেক বড় একটা পরীক্ষা ছিল। 

একবার ভেবে দেখুন আপনার জীবন সঙ্গী, যাকে আপনি সবসময় কাছে পাচ্ছেন ঘরে ফিরলেই যাকে দেখতে পান। যাকে ঘিরে আপনার সব পরিকল্পনা তাকে যদি হঠাৎ করে আপনি হারিয়ে ফেলেন এবং কত দিনের জন্য আপনি হারিয়ে ফেলেছেন তা আপনি জানেন না, এবং আপনি যে রবের কাছে দোয়া করছেন আপনার ভয় হচ্ছে যে আপনার রব আপনার ওপর রেগে আছে। এবং আপনি এমন জায়গায় আছেন যা অন্ধকার এবং ভয়ানক। এবং আপনি জানেন না আপনার জীবনসঙ্গী কেমন জায়গায় আছে। এমন অবস্থায় নিজেকে কতটা অসহায় মনে হবে। 

তারা ব্যাকুল হয়ে একে অপরকে খুঁজতে লাগলেন খুঁজতে খুঁজতে কতদিন পার হয়ে গেল তার কোন নির্দিষ্ট হিসাব নেই, 

কিন্তু অবশেষে তারা একে অপরকে খুঁজে পেলেন। এবং আদম আঃ এবং মা হাওয়া তাদের দুনিয়ার জীবনের সংসার শুরু করলেন। 

বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে আদম আলাই সাল্লাম প্রায় পৃথিবীতে এক হাজার বছর বেঁচে ছিলেন। এবং এই সময়ে মা হাওয়া অনেক বার মা হয়েছিলেন। এবং প্রতিবার আল্লাহর হুকুমে তার কোলে জমজ সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। 

এবং সেই সময়ের নিয়ম ছিল এক কলের সন্তানকে অন্য এক কলের সন্তানকে বিয়ে করতে হবে। অর্থাৎ যেহেতু তখন প্রতিটি মানুষই সরাসরি একে অপরের ভাই বোন ছিল, তখন ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে করে নিষেধাজ্ঞা জমজ ভাই-বোনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। 

আদম আঃ সালামের প্রথম পুত্র সন্তানের নাম ছিল কবিল। এবং এর পরের পুত্র সন্তানের নাম ছিল হাবিল। কাবিল ছিল কৃষক আর হাবিল পশু পাখি পালতো। কাবিল ছিল কিছুটা রাগী প্রকৃতির এবং সে হাবিলের বোনকে বিয়ে করতে অসম্মতি জানালো। তার দৃষ্টিতে তার নিজের বোন ছিল আরো বেশি রূপবতী। 

এই অবস্থায় আদম আঃ সালামের মাধ্যমে ওহী আসলো, তারা দুই ভাই যেন আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করে। এবং যার কোরবানি কবুল হবে তার পছন্দই চূড়ান্ত হবে। 

হাবিল তার খামার থেকে সবথেকে সুন্দর পশুটি আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করলো। অন্যদিকে কাবিল তার সবচেয়ে খারাপ ফসল কোরবানির নিয়তে উঠিয়ে রাখল। এবং আল্লাহ হাবিলের কোরবানি কবুল করলেন এবং কাবিলের কোরবানি কবুল হলো না। 

এবং হাবিল আল্লাহর হুকুমে কাবিলের বোনকে বিয়ে করার জন্য সম্মতি জানালো। কিন্তু এতে কাবিলের অন্তর হিংসা বিদ্বেষে ভরে গেল। এবং সে একপর্যায়ে হাবিলকে একটি পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করল। এবং এভাবেই কবিল হয়ে গেল মানব ইতিহাসের প্রথম হত্যাকারী।

যতক্ষণ পর্যন্ত আদম আঃ এর কাছে খবর এলো। ততক্ষণে কাবিল সে নিজের কৃতকর্মের ব্যাপারে চিন্তা করে পালিয়ে গিয়েছে। সে ভাবল তার আর কোন আশা নেই। আদম আঃ এবং মা হাওয়া তাদের দুই সন্তানকে এইভাবে হারিয়ে বাকি সন্তানদেরকে নিয়ে তাদেরকে সৎ উপদেশ দিতে থাকলেন এবং আল্লাহর ইবাদত করার জন্য উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করতে থাকলেন। 

ধীরে ধীরে বহু বছর পার হয়ে গেল এবং তাদের অনেক সন্তান জন্মগ্রহণ করল। কিছু কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায় যে মা হাওয়ার 20 জোড়া সন্তান হয়েছিল। আবার কেউ কেউ বলেন সে সংখ্যা ১০০ রো বেশি। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় নেই। এবং তাদের সব সন্তানদের মধ্যেও একজন সন্তান ছিল শীত আঃ যে তার বাবার মত ভাল কাজ করার উপদেশ দিতেন এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিতেন। 

আদম আঃ যখন অনেক বৃদ্ধ, তখন একদিন তিনি ফল খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। বাস্তবে তার জান্নাতের ফলের কথা অনেক মনে পড়ছিলো এবং তিনি জান্নাতের ফল খেতে চাচ্ছিলেন। তাদের সন্তানেরা যখন শুনলো যে তার বাবা ফল খেতে চাচ্ছেন। তখন তারা বেরিয়ে পড়ল সেই অঞ্চলের সব থেকে ভালো ফল আনার জন্য, তারা যখন ফলের সন্ধানে জঙ্গলে গেল। এবং সেখানে তাদের কিছু ফেরেশতাদের সঙ্গে দেখা হয়, এবং ফেরেশতারা বলল তোমাদের বাবা যেই ফল চেয়েছেন তা এখানে নেই, তোমরা বরং তার কাছে ফিরে যাও, আমরাও তার সাথে সাক্ষাত করব।

আদম আঃ এর সন্তানেরা যখন সেই ফেরেশতাদের নিয়ে বাড়ি ফিরল, তখন মা হাওয়া সেই ফেরেশতাদের একজনকে চিনতে পারল। কারণ সে ফেরেশতা এর আগেও একবার দেখা দিয়েছিল। যখন তার ছেলে হাবিলকে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি বুঝতে পারলেন মালাকুল মউত তার স্বামীর আত্মাকে নিতে এসেছেন। 

জান্নাতে বহু বছর সুখে শান্তিতে কাটানোর পর। যখন তাদেরকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছিল। তখন যে সময়টা মা হাওয়া আদম আঃকে ছাড়া একাকী কাটিয়েছিলেন, সেই কষ্টকর সময়ের কথা তার মনে পড়ে গেল। এবং তিনি মালাকুল মউত কে বাধা দিলেন। কিন্তু আদম আঃ মা হাওয়াকে বুঝিয়ে বললেন, তাকে তার রবের কাছে ফিরে যেতে হবে। অবশেষে মা হাওয়া সরে দাঁড়ালেন। 

এবং মালাকুল মউত আদম আঃ এর আত্মা নিয়ে নিলেন। তারা আদম আঃ এর মরদেহকে গোসল করলেন। দাফোন করলেন। এবং মাটিতে কবর দিলেন, এবং সেই প্রথা আমরা আজ পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। 

আদম আলাই সালাম এর মৃত্যুর সময় মানব সমাজ অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছিল। এবং সেখানে ভালো কাজের পাশাপাশি নানা ধরনের খারাপ কাজ বাড়তে লাগলো। এবং এই অবস্থায় আল্লাহর বাণী প্রচার করার কাজে নামলেন আদম আঃ এর সন্তান শীত আঃ।

carnation ebook

নবীদের কাহিনী

1 thought on “আদম আঃ এর জীবনী”

  1. Pingback: নবীদের কাহিনী - CARNATION E BOOK

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *