উওম জীবন সঙ্গী 2,3,4
সম্পূর্ণ গল্প পড়তে চান?
Click here to read the full story.#উওম_জীবন_সঙ্গী
#লেখনিতেঃ বর্ণ
২.
কিছুক্ষণ আগের কথা মনে করছে আর একাই নিজের সাথে বিরবির করছে।লোকটার সামনে অনিচ্ছা সত্বেও যাওয়া লাগছে।
—উফ এখনও আব্বু আর মা মানুষটাকে নিয়ে কি আদিখ্যেতা দেখায়,দেখলে রাগ লাগে।কিন্তু এতোটা রাগ হচ্ছি কেনো?সে তো আমার সাথে কথাই বললো না।
অলীদ আসতেই ওর মামা মামীর সাথে কুশলাদি বিনিময় করে ঘরে ডুকে বসে ।সাথে করে আনা জিনিস পএ মামীর হাতে তুলে দেয় ।তাওসীফের জন্য চকলেটের বক্সটা আগেই দিয়েছে।সেটা পেয়ে তো মনে হলো আকাশ সমান খুশি সে।মামা ভিশন ব্যস্ত হয়ে পরলো ভাগ্নের যত্নাদির জন্য।
রাইসার মা রাইসা কে ডাকতে লাগলো ঠান্ডা সরবত নিয়ে আসার জন্য।রাইসার তখন থেকেই মেজাজ খারাপ।মাথার ওড়না ঠিকঠাক করে এক গ্লাস সরবত নিয়ে ডুকলো রুমে ।সালাম দিয়ে গ্লাসটা এগিয়ে দেয়,অলীদ সালামের জবাব দিয়ে রাইসার দিকে শুধু এক নজর তাকিয়ে নজর ফিরিয়ে নিলো।মনে মনে মা শাহ আল্লাহ বলে নিলো।সাথে গ্লাসটাও নিয়ে সরবত খেয়ে নিলো।রাইসা আর দাঁড়িয়ে না থেকে নিজ কক্ষে চলে গেলো।
বেতনের টাকা দিয়ে সাধ্য মতো কিছু কানাকাটা করে নিয়ে আসছে সে গুলো মামা মামী কে দিলো।যদিও মামা একটু রাগ করেছে ,কি দরকার ছিলো এ সবের? উওরে অলীদ বলে দিয়েছে
—মামা অন্তত এটুকু করতে দিন অনেক করছেন আপনারা আমার জন্য।বিনিময়ে আমি সারাজীবন আপনাদের অনেক অনেক দিলেও এ ঋন শোধ হবে না ।তাই এরপর থেকে আর কিছু শুনতে চাইনা বলে দিলাম।
মামাও ভাগ্নের ওপর খুশি হলো।তাওসীফ আর রাইসার জন্যও আনছে সেটাও মামীর কাছে দিয়েছে।খাওয়া দাওয়া করে অলীদ ওর রুমে গিয়ে শুয়ে পরছে।কিন্তু ঘুম আসছে না চোখ বন্ধ করলেই কেমন যেনো অস্থির অস্থির লাগছে।কিন্তু না এমন মনে হলেও একটু তো ঘুমানো লাগবে।কেনোনা জার্নি করে আসছে না ঘুমালে আবার মাথা ব্যাথা হবে।
রাইসার মা রাইসার রুমে গিয়ে ওর হাতে অলীদের দেওয়া প্যাকেটটা দিলো।
—এটা কি মা?
—খুলে দেখ ছেলেটা নিয়ে আসছে বলে চলে গেলো।
প্যাকেট দেখেই আবার রাগ হলো ,খুলে দেখে একটা থ্রিপিচ আর ম্যাচিং চুড়ি।আর দুটোর রংই রাইসার ভিষণ পছন্দের ।এ গুলো পেয়ে ভালো লাগা কাজ করলেও কেনো জানি খুশি হতে পারছে না। মনে মনে রাগ বাড়তে লাগলো কেনো আনলো এসব কি জন্য ।আমি তো তার কোনো জিনিসই চাই না।এই মুহূর্তে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে কেনো আনছে।তাই প্যাকেটটি নিয়ে অলীদের রুমের দিকে পা বাড়ালো।
রুমের সামনে গিয়ে দরজাটা একটু ফাঁক করে আগে দেখে নিলো।কি করে সে?কিন্তু অলীদ গভীর ঘুমে আছন্ন ।মানুষটা কে অনেক দিন আগে দেখছে আর আজ দেখলো ।চেহারা আগের মতো নেই গায়ের রং ফর্সা আর লম্বা চাপ দাড়িতে অনেক আকর্ষণীয় লাগছে।কিন্তু এসব কি ভাবছে সেটা ভেবেই বলতে লাগলো ছি ছি কি সব ভাবছি বলে চলে আসলো সেখান থেকে।
পরদিন সামছুল হক তার ভাগ্নেকে নিয়ে গ্রামের উওর পাড়া গেলো যেখানে চাড় বানানোর কথা।সেখানে গিয়ে দেখলো যে যার মতো বাঁশ এনে হাতে হাত লাগিয়ে চাড় বানানোর কাজ করতেছে।হক সাহেব পুরোটা সময় সেখানে ছিলো।মানুষের জন্য এসব কমর্কান্ডে মামাকে নিয়োজিতো দেখে বরাবরের মতোই অলীদ আজও অনেক খুশি হলো।ছোটো বেলা থেকে মামাকেই অনুসরন করছে যেনো বড়ো হয়ে নিজেও তার প্রফেশনের পাশাপাশি গ্রামীন উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিতো করতে পারে।গরীব দুঃখি মানুষের পাশে থেকে যেনো তাদের সাহায্য সহযোগিতা করতে পারে।
কাজ শেষ ,সুন্দর একটি বাঁশের চাড় বানানো হলো।উপস্থিত সবাই হক সাহেবের তারিফ করতে লাগলো তার বুদ্ধির জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।সেখান কার মুরুব্বিরাও মন ভরে দোয়া করতে লাগলো।হকসাহেব তাদের জুম্মার নামাজে মসজিদে দেখা হবে বলে অলীদ কে নিয়ে তলে আসলো।
বাড়ির ভেতর দুজনে ঢুকলো হকসাহেব তার রুমের দিকে গেলো আর অলীদ ওর রুমের দিকে।ঠিক সে সময়ে রাইসা ঐ রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো রাইসা অলীদ কে দেখলো কিন্তু অলীদ ওর দিকে একদম না তাকিয়ে রুমে ডুকে গেলো।রাইসা ওর এমন কাজে আবার রাগ হলো
—এতো দেমাগ ক্যান তার?দুরো ভাল্লাগেনা।না তাকালেই বা ওর কি আসে যায়।বলেই চলে গেলো।
হকসাহেব ,অলীদ আর তাওসীফ একসাথে জুম্মার নামাজ পড়তে গেলো।নামাজ শুরু হওয়ার আগে অলীদ উপস্থিত সবার সামনে কিছু কথা বলতে চাইলে ওকে অনুমতি দেওয়া হলো-অলীদ উঠে দাঁড়িয়ে কথা গুলো বলতে লাগলো
—আমার সবসময়ের ইচ্ছে গ্রামের দুস্থ অসহায়দের জন্য সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতা করবো।আর এই গ্রামে আমার মায়ের নামে একটি এতিম খানা মাদ্রাসা নির্মাণ করতে চাই ।এ ব্যাপারে আপনাদের মতামতটা জানতে চাই।কারন আপনাদের অনুপ্রেরনা না পেলে সম্ভব হবে না।
অলীদের কথা শুনে সবাই খুশি আর ওর মামা তো আরো খুশি ভাগ্নে ঠিক তার মতোই হয়েছে।সবাই এক সাথে ওর কথায় সায় দিলো।আর মাদ্রাসা নির্মানে সবাই ওর পাশে থাকবে বলে কথা দিলো।অলীদ ও সবার সাপোর্ট পেয়ে খুব খুশি।নামাজ শেষ করে সবাই বাড়ি ফিরে গেলো।
দুপুরের খাবারের আয়োজনে সবটাই অলীদের পছন্দ মতো খাবার রান্না হলো।এক সাথে সবাই খেতে বসছে
—মামী কষ্ট করে এতো কিছু রান্না করতে গেছেন আমিতো এতো খেতে পারবো না।
—যতোটুকু পারো খেয়ে নাও
মায়ের আদর না পেলে ও মামীর আদর মায়ের আদরের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিলো না আর এখনও তাই।ওর মামার একটাই কথা ছিলো আমার ভাগ্নে যেনো মায়ের অভাব বোধ করতে না পারে আর রাইসার মাও তেমনটাই করছে নিজের সন্তানের চাইতে বেশি ভালোবাসা দিয়েছে।
খাওয়া শেষে মামার সাথে বসে কথা বলছিলো-
—মামা আমার ছুটি নেই তাই কাল চলে যাবো আর আজ আমাদের বাড়ি যেতে চাই বাবাকে দেখতে যাবো ওখান থেকেই চলে যাবো।
—আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই।এখন রেষ্ট নেও পরে যেও
—ঠিকআছে মামা।
অলীদ শুয়ে আছে ঘুম আসছে না তাই বই হাতে নিয়ে পড়তেছিলো।তখনই ওর মনে হলো কেউ দরজার ফাঁক দিয়ে রুমে উকি ঝুঁকি মারছে।বইটা পাশে রেখে তাকালো কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না।আবার বই নিয়ে পড়তে লাগলো আবার এমন মনে হলো তখন ও উঠে দরজার পাশে দাড়ালো।ঠিক তখনই বাহির থেকে ঘরের ভিতর নজর রাখা ব্যক্তিটি ঘরে কাউকে দেখতে পায় না।আস্তে করে হাত বাড়িয়ে দরজাটা খুলে দেখতে চাইলে তখনই অলীদ হাত টা ধরে ফেললো।ভয়ে চোখ বন্ধ করেই বলতে লাগলো হাত ছাড়ুন ভাইয়া আমি রাইসা সঙ্গে সঙ্গে হাত ছেরে দিলো।সামনে এসে বলতে লাগলো
—তুমি ?এখানে কি করছো ?
—এমনি তেমন কিছু না
—না কিছু তো একটা আছে যে মানুষ আমাকে সহ্য করতে পারে না সে মানুষ আমার রুমে উকি দিচ্ছে ব্যাপারটা কি বলো জলদি’
—আপনি আমার জন্য ঐ সব আনছেন কেনো?আপনি নিজেও তো আমাকে সহ্য করতে পারেন না।
—সবার জন্য আনছি তাই তুমি আর বাদ থাকবে কেনো সে জন্যই আনা।পছন্দ না হলে রেখে দিও।এখন নিজের রুমে যাও বলে দরজা চাপিয়ে দিলো।
অলীদের এ সব কর্মকান্ডে রাইসা মনে মনে আরো জ্বলতে লাগলো।
—এতো ভাব কেনো তার হুম আমার ও কি কম আছে নাকি।বলে চলে গেলো।
অলীদ রাইসার কথা ভাবতে লাগলো সেই ছোটো বেলার মতোই আছে একটুও পাল্টায়নি।মেয়েরা নাকি নরম মনের হয় কিন্তু এতো পুরোই উল্টো।তবে উল্টো চলতে চাইলেও অলীদের জন্য পারেনি সবসময়ই মামাকে দিয়ে শাসনে রেখেছে ।চলা ফেরায় এদিক সেদিক দেখলেই মামার কাছে নালিশ দিয়েছে ।নিজে একবার শাসন করতে গিয়ে সেই থেকে এই পর্যন্ত তার চোখে অলীদ খারাপটাই রয়ে গেছে।ভেবেই হাসতে লাগলো মেয়েটা সত্যি পুরাই পাগলী কবে বুঝবে ওকে কবে বুঝবে যা যা করছে সবটাই ওর ভালোর জন্য।

প্রকৃতির নিয়মানুসারে দিন যায় রাত আসে আবার নতুন দিনের শুভ সূচনা হয়।সামনেই রাইসার এইসএসসি পরিক্ষা।নিয়মিতো কলেজ যাচ্ছে সে।হক সাহেব বেশির ভাগ সময়ই মেয়েকে কলেজ দিয়ে আসে আবার নিয়ে আসে।দিন কাল এমনিতে ভালো না বোরখা পরে চলাচল করলেও আজকাল মেয়েরা তাতেও নিরাপদ নয় ।একদিন নিজের ব্যস্ততায় হকসাহেব মেয়েকে নিয়ে যেতে পারেনি তাই রাইসা ওর ক্লাস মেটদের সাথে গেছে।কলেজ শেষ করে আসার সময় সামনে
কয়েকটা ছেলেকে দেখতে পেলো।তার ভিতর একজন গ্রামের চেয়ারম্যান এর ছেলে দেখতে সুন্দর শহরে লেখাপড়া করে কিন্তু চলাচল আর চিরিএিক দিক ভালো না।মোটামুটি ওদের সবাই চেনে।
তখনই চেয়ারম্যান এর ছেলেটা রাইসাদের ইশারা দিয়ে থামালো ।থামিয়ে রাইসা কে এইটা সেটা প্রশ্ন করতে শুরু করলো।এমনিতে ওদের দেখেই মেয়েগুলো ভয় পাচ্ছে তার ওপর আবার প্রশ্ন শুরু হয়ে গেছে।রাইসা ও ভয়ে ভয়ে প্রশ্নের জবাব দিলো ।ঠিক তখনই পাশ দিয়ে হক সাহেব এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু লোক যাচ্ছিলো।উনি ছেলেদের উদ্দেশ্য বলে উঠলো
—এই তোমরা এখানে কি করছো?আর ওদের সাথে কি কথা তোমাদের ?
—না কেমন কিছু না চাচা পরিচিতো হচ্ছিলাম এই আর কি।
লোকটার ওদের হাবভাব ভালো লাগলো না তাই মেয়েদের কে বললো
—তোমরা আর এখানে এক মুহূর্ত দাঁড়াবে না সোজা যে যার বাড়ি চলে যাবে।আর এই ছেলেরা তোমরা জানো না এভাবে মেয়েদের কে থামিয়ে কথা বলাটা কতোটা খারাপ কাজ।তার ওপর তুমি তো চেয়ারম্যান এর ছেলে ।এ সব যেনো আর না দেখি তা হলে তোমার বাবার কাছে বিচার যাবে কিন্তু বলে সে চলে গেলো।
ছেলেটা বিশ্রী হাসি দিয়ে বলতে লাগলো
—শুনছি হকসাহেবের মেয়েটা সুন্দরী আজ দেখতে না পারলেও অনুভব তো করতে পারলাম আর আমার নজর যার ওপর পরে তাকে তো ছেড়ে দেই না বলেই আবার হাসতে লাগলো।
—ওস্তাদ চলেন এবার না হলে ঝামেলা হতে পারে
—চল তাইলে বলে সব গুলো বাইকে করে চলে গেলো।
রাইসা বাড়ি এসেই হাফসাতে লাগলো সত্যিই তখন অনেক ভয় পেয়ে গেছিলো কিন্তু কাউকে কথাটা বললো না।
হক সাহেব বাজারে একটা মিটিং এ ছিলো সেটা সেরে বাড়ি চলে আসতেই সামনে ঐ বন্ধুর সাথে দেখা।আর সে চেয়ারম্যান এর ছেলের ঘটনা গুলো খুলে বললো।শুনে হক সাহেব এর মনে অজানা ভয় ডুকে গেলো।এতোবড়ো উপকারের জন্য বন্ধুকে ধন্যবাদ দিয়ে বাড়িতে চলে আসলো।
বাড়ি এসে বউ কে কাছে ডেকে মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করলো
—রাইসা তো কলেজ থেকে এসেই নিজের রুমে আছে মনে হয় ঘুমাচ্ছে ।
মেয়ে কে আর ডাকে নি ,হকসাহেব পুরো ঘটনাটা বউকে শেয়ার করলো।শুনে রাইসার মা ভয় পেলো যদি মেয়ের কোনো ক্ষতি হয়ে যায় ?ঐ ছেলের নজর যার ওপর পরে তাকে এমনি ছেড়ে দেয় না বাবার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে খারাপ কাজ করে বেড়ায়।আজ কথা বলছে কাল ও তো আবার সামনে আসতে পারে এমনকি একা পেলে না না আর ভাবতে পারছেন না কিছু ,আর মেয়ে ও কিছু বললো না ভাবলো হয়তো ভয়ে বলেনি।যাই হোক রাইসার আব্বু এখন কি করবেন ভেবেছেন কিছু সামনে মেয়েটার পরিক্ষা ।
—হা ভেবেছি বলেই অলীদ কে ফোন করলো
রিং হতেই রিসিভ করে সালাম দিয়ে কেমন আছে জিজ্ঞেস করলো অলীদ।
—ভালো আছি বলে অলীদ কে সব ঘটনা খুলে বললো আর সবটা শুনে অলীদের চোখদুটো রাগে লাল হয়ে গেলো।মনে মনে বলতে লাগলো এতো বড়ো সাহোস ওর কি ভাবে হলো?
—অলীদ আমি আর কোনো কিছুর জন্য দেরি করতে চাই না
— কিন্তু মামা সামনে তো ওর পরিক্ষা
— হোক পরীক্ষা ,সেটা পরেও দিতে পারবে আগে শুভ কাজটা সেরে ফেলতে চাই ।
—খুশিতে আবেগে চোখ বন্ধ করে ভেবে নিলো।অবশেষে ওর অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে।অলীদ ও সায় দিলো।মামা আপনার কথাই বহাল থাকবে আপনি যেমন চান তেমনই হবে,আমি আসছি তাহলে ঠিক সময়ে মধ্যে ।”
#ক্রমশ…….
Sponsored

🛍️Carnatio Academy
unlock your potential with premium courses — now available at up to 50% off. Don't miss out!.
https://academy.carnationplus.in/
#উওম_জীবন_সঙ্গী
লেখনিতে-বর্ণ
৩.
বসার ঘরে সামসুল হকের ঠিক সামনে বসে আছে অলীদের বাবা আমজেদ আহমেদ।খুবই দরকারী কথা আছে বলে আসতে বলা হয়েছিলো।তাই দেরি না করে চলে আসলো সে।আসতে তার দুপুর হয়ে গেছে তাই দুপুরের খাবারটা দুজনে একসাথে খেয়ে নিলো।
—ভাইজান এতো জরুরীভাব তলব করছেন যে?
—হুম খুব জরুরী তাই তোমাকে ডাকতে হলো।
—বলেন ভাইজান আমি তো চিন্তায় পরে গেছি কি এমন কথা?
—দেখো অলীদের বাবা আমার বোনের অনেক আশা ছিলো তার ছেলের জন্য আমার মেয়ে কে ছেলের বউ করার শুধু তাই না তার মৃত্যুর সময় আমাকে কথা দেওয়া লাগছে।আমি আমার সাধ্যমতো তোমার ছেলের জন্য সবটা করছি এখন এই একটা কাজই বাকি।এখন তুমি কি বলো মানে তোমার কি মতামত?ছেলের বাবা হিসেবে তোমার ও তো মতামত দেওয়ার রাইট আছে।
—ভাইজান ,মা মরা ছেলেটার জন্য আপনি যা করছেন সত্যি বলতে এতোটা আমি করতে পারতাম না আর ছেলেটা যে মানুষের মতো মানুষ হইছে সবটাই তো আপনার চেষ্টায় ।এখন বিয়ে সাদির ব্যাপার দেরি না করাই ভালো আমার কোনো আপওি নাই রাইসা মামনির মতো মেয়ে আমার ছেলের বউ হবে এটাও তো ভাগ্যের ব্যাপার।তাই আপনি যা ভালো মনে করবেন সেটাই হবে।
—তা হলে তো কোনো কথাই নাই আর দিন কাল ভালো যাচ্ছে না বুঝেই কো মেয়ে বড়ো হনে বাবার কতো চিন্তা তাই আমিও দেরি করতে চাই না আপাততো ঘরোয়া ভাবে বিয়ের কাজটা সেরে ফেলি ।
—ঠিক আছে ভাইজান তাই হোক।
—তা হলে অলীদকে কয়দিনের ছুটি নিয়ে আসতে বলে দাও ছেলের বাবা হিসেবে এখন বিয়ের দায়িত্ব তুমি পালন করো আর আমি এদিকের টা করি কেমন।
—ঠিক আছে ভাইজান
—কই গো রাইসার মা মিষ্টি নিয়ে আসো ,কথা তো পাকা হয়ে গেলো মিষ্টি মুখ করি এখন ।বলেই দুজন আনন্দে হাসতে লাগলো।
রাইসার মা মিষ্টি নিয়ে সামনে রেখে বসলো।উপস্থিত সবাই মিষ্টি মুখ করলো।এদিকে আড়াল থেকে রাইসা সবটা শুনে মনে হলো ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
—এতো বড়ো একটা কথা সবাই জানে অথচ শুধু ওই জানে না।তাছাড়া নিজের ও তো পছন্দ অপছন্দ মতামতের ও একটা ব্যাপার আছে সেটাও তো কেউ বিবেচনা করলো না।এসব ভেবে সবার ওপর ওর অভিমান টা বাড়তে লাগলো।
——
রাতের বেলা হকসাহেব তার স্ত্রীর সাথে কথা বলছিলো এক পর্যায়ে তার স্ত্রী বললো
—রাইসার আব্বু বিয়ে তো ঠিকঠাক কিন্তু মেয়ে তো আজও জানতে পারলো না হঠাৎ শুনে যদি বেকে বসে তাই বলছিলাম ওর মতামত টাও তো দরকার নাকি?
—আমার কথার ওপর কথা বলার মতো মেয়ে নয় ও ,তাছাড়া এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেই নি যেটা আমার মেয়ের জন্য খারাপ হবে ।বরং সঠিক মানুষটাই নির্বাচন করেছি ওর জন্য।
—তারপর ও একটু কথা বলেন মেয়ের সাথে ।মেয়েটার ও তো মানসিক প্রস্তুতির দরকার আছে।
—ঠিক আছে তা হলে চলো দুজনেই যাই গিয়ে কথা বলি।
—হুম চলেন
রাইসা পড়তে ছিলো ঠিক তখনই ঘরে ডুকলো ওর বাবা মা।
—আম্মাজান ?
—জ্বী আব্বু কিছু বলবেন?
পাশে বসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে পড়ালেখার খোঁজ নিচ্ছিলো।
—আম্মাজান তোমাকে কিছু বলার ছিলো
—জ্বী বলেন আব্বু
—তুমি হয়তো জানো না তোমার ফুপুর ইচ্ছা ছিলো তোমাকে ছেলের বউ করবে ।এখন সেই ইচ্ছা অনুযায়ী অলীদের সাথে তোমার বিয়ের কথা পাকা করেছি তোমার ফুপুর সাথে।এ বিষয়ে কি তোমার কোনো দ্বিমত আছে?
অবশ্য আমার বিশ্বাস তুমি আমার মেয়ে আর আমি যে সিদ্ধান্ত নিবো সেটাই তুমি মেনে নিবে।
—হুম,কিন্তু আব্বু সামনে আমার বোর্ড পরিক্ষা !!
—সে বিষয়ে কোনো চিন্তা করো না অলীদ তোমার সব দায়িত্ব নিবে আমি জানি তোমার পড়ালেখার ক্ষতি ও হতে দিবে না বরং এ ব্যাপারে সাহায্য করবে।
—ঠিক আছে আব্বু আপনারা যা ভালো মনে করেন তাই করবেন আমার কোনো দ্বিমত নেই।
—ঠিক আছে আম্মাজান মন দিয়ে পড়ো,এই রাইসার মা চলো ।
—হুম চলেন।
বিয়ের কথা শোনার পর থেকেই নিজেকে এলোমেলো লাগছে বাবার সিদ্ধান্তের ওপর কথা বলার সাহোস ওর নেই।তবে যার সাথে জীবনটা জুড়বে সে এই সত্য জেনেও আমার সাথে কেনো এমন করলো ।আমাকে কেনো এতো কষ্ট দিলো এতোটা বছর ধরে ।ভেবে চোখ থেকে নোনা জল গরিয়ে পরতে লাগলো।তাকে যে এখন কথা গুলো জিজ্ঞেস করবে সেই ইচ্ছাটা ও নেই ওর ভিতরে।কারন ভাঙ্গা মন জোড়া কি লাগবে?এ সব ভেবেই চোখ বন্ধ করে নিলো।
“তিনদিনের ছুটিতে অলীদ বাড়ী এসেছে ।ওদের বাড়িতেই আছে।মোটামুটি ঘরোয়া বিয়ের জন্য কনের যা যা দরকার সেটা ওর ছোটো মা আর ছোটো দুই ভাই বোন মিলে কিনে নিয়েছে।ও চায় তারাও যাতে এসব করে খুশি থাকে।পরদিন হক সাহেবের বাড়িতে দশ পনেরো জন মুরুব্বি নিয়ে এসে দু পরিবার মিলিত হয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে ।বিয়ে পড়ানো শেষে খাওয়া দাওয়া সেরে কনেকে নিয়ে বরপক্ষ রওয়ানা হলো।বিদেয় বেলা হক সাহেব মেয়ের জন্য বেশ ভেঙে পরছেন ।যাওয়ার সময় রাইসাও কান্নাকাটি করলো মা আর ছোটো ভাইটাকে জড়িয়ে ধরে।আদরের মেয়ে তার যদিও অনেকটা তারাহুরো করে বিয়েটা দিতে হলো এ ছাড়া তার উপায় ও ছিলো না।পাশ থেকে রাইসার মা তাকে সান্তনা দিতে লাগলো রাইসার বাবাকে।
~~~~
হক সাহেবের মেয়ের বিয়েটা ধুমধাম না করে হলেও গ্রামের নাম করা কয়েকজন গন্যমান্য লোক উপস্থিত ছিলো ।আর গ্রামের মোটামুটি সবাই জানতে পেরেছে বিয়ের কথা।বিয়ের খবর গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলের কানে ও পৌছে গেলো।
—ওস্তাদ ওস্তাদ শুনছেন ঘটনা?
—কি হয়েছে খুলে বল
—আপনার নজর যার ওপর পরছিলো সেই পাখির তো আজ বিয়ে হয়ে গেছে।
—কি বলছিস তুই সবটা শুনে এসেছিস তো?
—জ্বী ওস্তাদ সবটা শুনেই বলছি,ইশ আপনার টার্গেট এই প্রথম মিস হইলো ওস্তাদ।
—হক সাহেব অনেক চালাক টের পেয়েছে তাই এমন কাজ করছে কিন্তু আমিও ছেড়ে দিবো না মনে যখন ধরছে একদিনের জন্য হলেও পাখিকে খাচাতে বন্ধি করে রাখবো ।
বলেই শয়/তানি হাসি দিলো।

গাড়িতে সারাটা পথ রাইসাও কান্না করতে করতে এলো তবে অলীদ বেশ আগলে রেখে সান্তনা দিয়েছে যদিও রাইসা এ সব পাওা দেয়নি নিজের মতো শুধু কান্নাই করে গেছে।আর অলীদের জন্য মনে মনে রাগের পাহাড় গরে তুলছে।সামনে কি হবে কে জানে?
মোটামুটি রাত অনেকটা হয়েছে ।আসেপাশের লোকজন আর আত্নীয় স্বজনরা মিলে বউ দেখে চলে গেছে ।রাইসাকে ওর শ্বাশুড়ি নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে।মানুষটা খারাপ না ভালোই সেটা তার আচরনেই রাইসা বুঝতে পেরেছে।যদিও আগে পরে দেখেছে তাকে।ছোটো বেলায় বেড়াতে আসতো কিন্তু বড়ো হয়ে কখনও আর আসা হয়নি।খাওয়ার পরে কিছু কথা বার্তা বলে মেয়েদের ডেকে বললো ওকে রুমে দিয়ে আসতে ।
বাসর ঘরে বসে আছে রাইসা ।ওর ননদ আর অলীদের কিছু কাজিনরা মিলে ওকে অলীদের ঘরে বসিয়ে রেখে গেছে।বেশ সুন্দর করেই রুমটা সাজানো হয়েছে।কাঁচা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে ,রুমটাতে ফুলের সুবাসে ভরে গেছে।এসব রাইসার ভালো লাগলেও অলীদের কথা ভেবেই মুহূর্তেই মনটা বিষাদে ভরে গেলো।মনে মনে যেনো বলতে লাগলো একবার আসুক তারে আমি মজা দেখামু।যাই হোক অপেক্ষা তো করছে কিন্তু মানুষটি যে লাপাওা আসছে না কেনো?
এদিকে অলীদ ও পরেছে বেশ টেনশনে বলতে গেলে হঠাৎ করেই বিয়েটা বয়ে গেলো।বিয়েটা নিয়ে ওর মনে অনেক ঝল্পনা কল্পনা থাকলেও পরিস্থিতিতে পরে বিয়েটা করতে হলো না হলে আবার যদি খারাপ কিছু হয়ে যেতো।এতো বছর ধরে যার অপেক্ষা করছে তাকে হারানোর ভয়েই তো মামার কথা ফেলতে পারেনি।বেচারা এখন বাইরে বসে বসে টেনশন করছে আর সামনে তার সাথে আসা একমাএ রুমমেট যদিও আগে একসাথে ছিলো অলীদের ভাইয়ের চেয়েও বেশি ওর বন্ধু শাহরিয়ার সে ওকে সান্তনা দিচ্ছে।
—কি করবো বল?তার তো আমার ওপর এমনিতেই অনেক বছরের রাগ বর্ষিত আছে।তার ওপর এভাবে তার সাথে কথা না বলেই একবারে বিয়ে দোস্ত আমি জানি ও আমার ওপর ভিষণ রেগে আছে ।একটা সমাধান দে দোস,,
—আরে কিছু হবে না তুই না পুরুষ মানুষ যা কিছু হবে না ।আল্লাহর নাম নিয়ে রুমে যা।আমার না খুব ঘুম পাচ্ছে।
বলে ওকে ঠেলতে ঠেলতে রুমে ডুকিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
রাইসার এবার ঘুম ঘুম পাচ্ছে আর ভাবছিলে না আসলেই ভালো।কিন্তু নাহ অপেক্ষার অবসান মনে হয় হয়ে গেলো।কাংক্ষিতো মানুষটা ভিতরে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিলো ।শব্দ পেয়ে রাইসা এবার ঠিক ঠাক ভাবে বসে নিলো।অলীদ বুকে সাহস নিয়ে সামনে আসলো এসে কাশি দিলো কিন্তু রাইসা কোনো রেসপন্স করছে না এমন কি সালাম ও দিচ্ছে না।অলীদ এবার খাটের ওপর রাইসার সামনে এসে বসে খুব সাহসের সাথে বিসমিল্লাহ বলে যেই নাহ ঘোমটা সরালো ওমনি রাইসা বলে উঠলো
—খবরদার কাছে আসবেন না একদম ছোবেন আমায়,
অলীদ ওর কথা শুনে অবাক অবশ্য এমন কিছু হবারই ছিলো।
—জানতে পারি কেনো ?
—আপনি জানেন না আপনি কি করছেন আবার জানতে চান?
অলীদ ও মুচকি হেসে জানতে চাইলো
—বুঝিয়ে বলো এমন একটা রাত আর তুমি কি সব বলছো।জানো এই রাতের জন্য সবারই একটা স্বপ্ন থাকে।
—হা আমারও ছিলো কিন্তু সেটা তো আপনি কবেই নষ্ট করে দিছেন।একবার আপনি শাসন করেছেন ঠিক আছে কিন্তু আরেক বার কি করছেন মনে নেই ?ওহ সেটা আপনার মনে না থাকলেও আমার মনে আছে।কোনোদিনই আপনি আমাকে পছন্দ করতেন না ভালো ভাবে কথাও বলতেন না।কিন্তু আজ কেনো বিয়ে করলেন বলুন?শুধু কি আমার বাবার কথায় নাকি আপনার মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরনের জন্য?আমি তো ভাবতাম আপনি অন্য কাউকে মনে হয় পছন্দ করেন।যাই হোক সেটা আপনার ব্যাপার।কিন্তু বিয়ে ঠিক এ কথাটা আপনিও জানতেন তা হলে আমাকে কখনও বলেননি কেনো?বলুন?
অলীদ পুরোটা সময় চুপ থেকেছে কারন এই মুহূর্তে ওর চুপ থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
—অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পরো আর এসব নিয়ে কথা বলো না কেউ শুনলে খারাপ মনে করবে।বলে বারান্দায় গিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পরলো।অনেকক্ষণ আগে রাইসার বাবা ফোন করে করে অলীদের কথা বলছিলো।রাইসার বাবা জানতে চাইলো সব ঠিকঠাক কিনা কারন মেয়ের খবর ও তার জানা আছে।তাই অলীদ ও আস্বাস দিলো সব ঠিকঠাক চিন্তা করবেন না মামা।মামাও চিন্তা মুক্ত হয়ে ফোন রাখলো।মেয়েকে ঠিক তার ভাগ্নেই সামলাতে পারবে।
রাইসা ওর আগের কথা মনে করতে লাগলো,ছোটোবেলায় অলীদের চর খাওয়ার পরে ওকে সহ্য করতে পারতো না ঠিক। কিন্তু বড়ো হওয়ার সাথে সাথে ওকেই ভালো লাগতে শুরু করেছিলো ।তবে অলীদ ভুলেও ওর দিকে তাকাতো না এমনকি প্রয়োজন ছাড়া কথাও বলতো না।
একদিন বান্ধবীদের সাথে কথা বলার সময় শুনতে পায় ওদের কেউ একজন কোনো ছেলের সাথে রিলেশনে আছে।সেটা শুনে ও জিজ্ঞেস করেছিলো সেটা আবার কি কেমনে করে?ওদের একজন ওকে বলেছিলো
“যাকে ভালো লাগে তার কাছে গিয়ে বলতে হয় তা হলেই রিলেশন হয়।”
যেমন শুনা তার তেমনি কাজ ,,একদিন অলীদের রুমে গিয়ে বলেছিলো
“ভাইয়া আপনাকে আমার ভালো লাগে আমি রিলেশন করতে চাই।”
অমনি অলীদ রেগে হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে আসে।আর বলে দিয়েছিলো এমন কথা যেনো না বলে তা হলে মামার কাছে বিচার দিয়ে মার খাওয়াবে।সে দিনের পর থেকে রাইসার দু চোখের দুশমনের মতো লাগতো অলীদ কে ।যদিও এখন বুঝতে পারছে কিন্তু রাগটা ঠিক রয়ে গেছে।
অন্যদিকে অলীদ ও সে কথাই ভাবতে লাগলো ।অল্প বয়স ছিলো কি বলতে কি বলেছে আর সব সময়ই ভাবতো মামার বাড়ি থাকি এমন কিছু করবো না যাতে মামার অসম্মান হয় ।আর তখন পর্যন্ত অলীদ বিয়ের ব্যাপারে জানতে পারেনি।ব্যাপারটা ও অনেক পরেই জানতে পেরেছে তবে মামার অনুরোধে রাইসাকে বলতে পারেনি।কিন্তু ও ছোটো বেলা থেকেই রাইসা কে বেশ পছন্দ করতো আর যখন বিয়ে ঠিক এটা জানতে পারছে ঠিক তখন থেকেই ভালোবাসার ঘনত্ব টা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিলো।শুধু বিপরীত মানুষটাকে প্রকাশ করেনি ।কারন ও চেয়েছিলো একটা হালাল সম্পর্ক।যে সম্পর্কের মাধ্যমে খুব সহজেই ওর প্রিয় মানুষটাকে কাছে টেনে নিবে। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়ে গেলো।
তবে যাই হোক না কেনো ভালো কিছুই হবে।ভালোবাসা দিয়েই অলীদ রাইসার মন জয় করে নিবে সেই আস্বাস নিজেই নিজেকে করলো।
ক্রমশ……
Sponsored

🛍️Carnatio Academy
unlock your potential with premium courses — now available at up to 50% off. Don't miss out!.
https://academy.carnationplus.in/
#উওম_জীবন_সঙ্গী
#লেখনিতে-বর্ণ
৪.
চারদিকে আজানের ধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে।ঠিক তখনই অলীদের ঘুম ভেঙ্গে যায়।চোখ মেলে নিজের অবস্থানটা অবগত হয়ে নিলো।সারারাতই বারান্দাতে কাটিয়ে দিয়েছে।অবশ্য রাতে কয়েকবার রুমে গিয়ে দেখে আসছে রাইসা ঠিকঠাক ঘুমিয়েছে কিনা।সে তো ঠিক ঘুমিয়েছে আর এখনও ঘুমাচ্ছে।আজান শেষ হতেই ওঠে ফ্রেশ হয়ে বাড়ির পাশের মসজিদে নামাজ পড়তে চলে গেলো।
নামাজ শেষ করে এসে রাইসাকে ডেকে তুললো নামাজের জন্য ।রাইসা উঠে ওয়াশরুমে চলে যেতেই অলীদ বিছানায় শুয়ে পরে।রাতে ভালো ঘুম না হওয়াতে সাথে সাথেই চোখে ঘুম চলে আসলো।রাইসা ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখে অলীদ ঘুম।রাইসা নামাজ পরে নিলো কিন্তু এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।বাইরে এখনও পুরোপুরি আলোকিতো হয়নি তাই বারান্দায় গিয়ে বসলো।আর ভাবতে লাগলে —মানুষ টা সারারাত এখানে ছিলো নিশ্চই ভালো ঘুম হয়নি একটু বেশিই করে ফেললাম নাকি তার সাথে?
আবার ভাবছে —এর চাইতে অনেক কষ্ট আমি তার জন্য পাইছি পাক না কিছু কষ্ট বুঝুক কষ্ট পেতে কেমন লাগে।এভাবে অনেক সময় পার হয়ে গেলো।হঠাৎই দরজায় নক করার শব্দ পেয়ে নিজেকে ঠিকঠাক করে দরজা খুলে দিলো।দরজা ঠেলে অলীদের বোন ডুকলো।
—ভাবি কি অবস্থা ?
—এই তো ভালো
—তুমি কি ঘুমাচ্ছিলে নাকি ?
—নাহ অনেকক্ষণ আগেই উঠে পরেছি।
সেই সময়ে অলীদের মা ওর বোনকে ডাকতে ডাকতে রুমে ডুকলো।
—মিমি এই মিমি ,,আসলে বউমা ওকে আমি নিষেধ করছি এখন না পরে আসিস ওতো শুনলোই না আমার কথা।
—ঠিক আছে মা আমি অনেক আগেই উঠছি কিন্তু বের হইনি ভাবছি কেউ আসতো যদি।
—দেখছো মা এবার তো হলো ,,চলো ভাবি তোমাকে নিয়ে বাইরে ঘুরে আসি ।
—মা যাবো ?
—হা যাও তবে বাড়ির বাইরে না কিন্তু
—ঠিক আছে মা
—এই ভাবি আসো তো
—হুম চলো।
বলে দুজন বের হলো।বাড়িটি মোটামুটি অনেকটা জায়গা জুরে করা ,অনেক ধরনের ফল গাছ লাগানো সবটাই রাইসার শ্বশুরের হাতে লাগানো।আর গাছে সিজনের ফল ধরেছে অনেক।সত্যি মানুষটা গাছ প্রেমি একজন।এতো গাছ দেখে মনে খুব ভালো লাগা কাজ করলো।ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম সব কিছু ।
অলীদের ঘুম ভেঙে গেলো।চোখ খুলে রুমে রাইসাকে দেখতে না পেয়ে ভাবলো ওয়াশরুমে মা হয় বারান্দায় কিন্তু কোথাও না দেখে বাইরে বের হলো,মায়ের রাত থেকে জানতে পারলো ওরা আসে পাশেই আছে ।একটু এগিয়ে দেখতে পেলো রাইসা আর মিমিকে এক ধ্যানে দেখতে লাগলো রাইসাকে -কি সুন্দর লাগছে দেখতে,একসময় যাকে নিয়ে নিজের মতো ভাবতে গেলে দ্বিধা হতো আজ সেই ওর বউ।কিন্তু বউ তো বরটাকে শাস্তি দিচ্ছে ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
শাহরিয়ার ঘুম থেকে ওঠে ব্রাশ করতে করতে অলীদের সামনে এসে হাজির হলো
—কি ব্যাপার বল তো সারারাত দেখেও মন ভরেনি তোর?
—মানে কি বলছিস?
—যে ভাবে বউকে দেখছিস মনে হচ্ছে সারারাত দু জন দু
প্রান্তে ছিলি তাই বলছিলাম আর কি।
—ঠিকই বলছিস দোস্ত ঐ অবস্থাতেই পরেছিলাম
—মানে সত্যি বলছিস তো
—না মিথ্যে বলছি এখন যা তো মুখ ধুয়ে নেয় বলে ঘরের মধ্যে চলে গেলো।
সকালের খাবার সবাই একসাথে খেয়ে নিলো ।খাওয়া শেষে শাহরিয়ার সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য চলে গেলো।ওর দরকারী কাজে আজই যেতে হবে।আর অলীদের তিন দিনের ছুটির মেয়াদ আজ শেষ হলেও আরো একদিনের ছুটি নিয়েছে ।কারন আজ রাইসাদের বাড়ি গিয়ে পরেরদিন ঢাকা রওয়ানা হবে তাই।
অলীদ আর রাইসাও বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদেয় নিয়ে রাইসাদের বাড়ি রওয়ানা হলো।যেতে যেতে প্রায় দুপুর গড়িয়েছে।আগে থেকেই ওর বাবা মাকে ফোন করে দেওয়া হলে রাইসার মা রান্না বান্না সবটা করে রেখেছে।আগে যেমন আদর আপ্যায়ন করতো এখন তো তা দ্বিগুন হয়ে গেছে,একমাএ মেয়ে জামাই বলে কথা।
বাবা মার সাথে কথা বলা শেষ হলে অলীদকে নিয়ে ওর রুমে যেতে বলা হলে রাইসা একটু অবাকের সুরে বলে ওঠে
— কি আমার রুমে ?
—হা নয় তো কি?
—ওহ ঠিক আছে,
আসুন বলে অলীদ কে সাথে করে নিয়ে গেলো রুমে।এতো দিন আলাদা রুমে ছিলো এই প্রথম রাইসার রুমে অলীদের আসা হলো মনে অন্য রকম ফিলিংস হচ্ছে।
—আহ কি শান্তি বলে বলে শুয়ে পরলো
—এই আপনি শুয়ে পরলেন যে যান ফ্রেশ হয়ে আসুন
—হুম তা তো হবো তবে আজ কিন্তু আমি রুমে ঘুমাবো আর তুমি কিন্তু রুমের বাইরে থাকবে।
—কেনো কেনো?
—কারন কাল আমার রুম ছেরে দিয়েছিলাম আজ তুমি ছেড়ে দিবে।
—কিহ?তাহলে আপনি আপনার রুমে যান
—তা হলে কি সেটা কি ভালো দেখাবে মানে আমার শ্বশুর যদি জানতে পারে তা হলে তোমার কি অবস্থা হবে ভেবে দেখছো।
—ঠিক আছে ঠিক আছে তখন দেখা যাবে।
বলে রাইসা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।অলীদ ওর অবস্থা দেখে হাসতে লাগলো।পাগলী একটা সব কিছু সিরিয়াস ভাবে নেয়।
সবাই একসাথে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলো।আজ জামাই ভোজ খেয়ে অলীদের অবস্থা খারাপ যদিও সবসময়ই মামা খাওয়ার সময় নিজের হাতে তুলে তুলে খাইয়ে দিছে আর আজ তো ডাবল আদর আপ্যায়ন পেলো।খেয়ে দেয়ে অলীদ রুমে শুয়ে আছে রাইসা রুমে যাবে ঐ সময় ওর ক্লোজ বান্ধবি নিপা ডাকতে ডাকতে ওর সামনে এসে জড়িয়ে ধরলো।রুমে না ডুকে রুমের বাইরে বসেই কথা বলছে।
—কিরে বলা নাই কওয়া নাই বিয়ে করে নিলি?
—কি করবো বল আমি নিজেও জানতাম নাকি আব্বুর সিদ্ধান্তে সব হলো।
—যাই হোক সোনা তুই তো সেই যাকে চাইছিলা তাকেই পেলি।
—আর পাওয়া মনে কতো ইচ্ছে ছিলো অন্তত রিলেশন করবো কিন্তু কি হলো যাকে পছন্দ করতাম সে তো কখনও পাওাই দিলো না আর দেখ আব্বু হুট করেই বিয়ে দিয়ে দিলো।
—তাতে কি হইছে অলীদ ভাইয়ের মতো মানুষ কে পাইছোছ আর কি লাগে বল?
—কিন্তু সে তো আমাকে পছন্দ করে না চাপে পরেই বিয়েটা করছে ,মনে নেই তোর সে আমাকে শুধু অপমান করতো এড়িয়ে চলতো তুই ই বল কেমনে কিভাবে সে আমাকে ভালোবাসবে।
—আরে চিন্তা করিস না এতো সুন্দর বউ সামনে থাকলে এরিয়ে যাবার কোনো চান্স আর নেই এখন তো সুযোগ যেটা আগে করতে পারিসনি সেটা এখন করবি।
—হুম বলা সহজ আর সে কি দিবে আমায় সুযোগ ?আর বিয়ের পর তার সাথে প্রেম করবো? আল্লাই জানে কি হবে , দেখলে তো মনে হয় নিরামিষ একটা।
—উফ ভাবিস না তো অলীদ ভাই তোকে ভালো না বেসে থাকতেই পারবে না।
—বাদ দে তো,তোর কথা বল
—এই চলছে সামনে পরিক্ষা ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে
—হা তা তো নিতেই হবে।
—ঠিক আছে রে যাই তা হলে ,
—দেখা করবি না তোর ভাইয়ার সাথে?
—চল
এদিকে অলীদ রুম থেকে বের হতে লাগলে ওদের সব কথাই শুনে ফেললো কিন্তু বের না হয়ে আবার রুমে চলে যায়।
অলীদের সাথে নিপা কথা বলে চলে গেলো।
রাতে খাবার পরে সবাই বসে কথা বলছে ,তখন অলীদ মামার উদ্দেশ্য বললো
—মামা আমি কিছু বলতে চাই
—হুম বলো
—আমি কাল আপনাদের মেয়েকে সাথে করে নিয়ে যেতে চাই।
—এতো ভালো কথা নিয়ে যাবে আর এখন তো ওর সব দায়িত্ব তোমার যেটা ভালো মনে করো।
পাশ থেকে রাইসা বলে উঠলো
—কিন্তু আব্বু আমার তো সামনে পরিক্ষা এ সময় যাবো ?
—বই সাথে করে নিয়ে যাবে আর অলীদ তোমাকে সব দেখিয়ে দিবে ।পরিক্ষার আগে আগে চলে আসবে।ওর সাথে যাবে আর কোনো কথা হবে না।
কথা গুলো শুনে রাইসা আর কিছু বলতে পারেনি।
কথাবার্তা শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো ।অলীদ ফোনেই গাড়ির টিকিট করে নিলো অর এর বন্ধুকে বলে রাখছে কাল ওরা যাচ্ছে এ কথা শুনে শাহরিয়র অনেক খুশি হলো।
—ওকে দোস্ত ঠিক ভাবে আসিস তা হলে।
রাইসা রুমে যেতেই ওকে সবটা গুছাতে বললো।রাইসার জীবনে সবটাই যেনো হুট হাট ঘটতে লাগলো।প্রথমত বিয়ে এখন আবার তার সাথে যেতে হবে কি আর করার।অলীদের কথার উওর না দিয়ে কাপড় চোপড় গোছাতে লাগলো।এই প্রথম বাবা মাকে ছেড়ে দূরে কোথাও যাচ্ছে।বিয়ে হলে স্বামীর কথা মতো চলতে হয় এটা ও বুঝে গেছে ।হাজার বার না বললেও কেউ শুনবে না।
—কতোক্ষণ আর গোছাবে ঘুমাতে আসো
—হুম বলে বালিস নিয়ে চলে যেতে লাগলে অলীদ বলে উঠলো
—কই যাও ?
—পাশের রুমে না হয় বারান্দায় আজ তো আপনি শোবেন এখানে কাল আপনি আপনার বেড ছেরে দিয়েছেন আজ আমি ছেরে দিলাম।
—হইছে আর মানবতা দেখাতে হবে না পাশেই শুয়ে পরো এ সব মামা শুনতে পেলে তোমারই সমস্যা হবে।
বাবার কথা মনে করে ভাবলো সত্যিই তো বাইরে গেলে আব্বু দেখলে সমস্যা হবে।আর রুমে খাট ছারা অন্য কিছু নেই যেখানে ঘুমাবে আর ফ্লোরে ঘুমানো সম্ভব নয়।তাই সবটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে অলীদের পাশেই শুয়ে পরলে।
সকাল সকাল ওঠে পরলো দুজন ,হাল্কা পাতলা নাস্তা করে সব কিছু নিয়ে বের হলো ।একমাএ মেয়েকে এই প্রথম দূরে দিচ্ছে ভাবতেই বাবা মায়ের মনে কষ্ট হতে লাগলো।নিয়তির বিধান এটা যে হবার ছিলো ।বিয়ের পরে মেয়েরা কাছে থাকে না সবটা মেনে নিতে হয়।বাসস্টান্ড যেতে হবে তাই অটো ঠিক করে উঠে পরলো।রাইসাও কান্না কাটি করছে কিন্তু বাবার প্রতি একটু চাপা রাগ হলো তার।কেনো আজই পাঠালো পরেও যাওয়া যেতো ।ভাবতে ভাবতেই বাসস্টান্ড চলে আসলো ।ব্যাগপএ নিয়ে নির্ধারিত বাসে উঠে বসলো।জানালার পাশে রাইসাকে বসতে দিয়ে নিচে চলে গেলো অলীদ ।কিছুক্ষণ পরে কিছু খাবার পানি আর ঔষধ নিয়ে আসছে।ও জানে রাইসা বাসে উঠলে বমি করে আর এখন তো লং জার্নি তাই এটা তো মাস্ট হবে।বাসে উঠেই ঔষধ টা আগে খাইয়ে দিলো।
রাইসা মনে মনে ভাবলো মানুষটা এটা মনে রাখছে ভেবে একটু অবাক হলো কিন্তু কোনো রিয়েকশন করলো না।
বাস ছেড়ে দিয়েছে অনেকক্ষণ হলো বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলো রাইসা,মাঝে মাঝে আড় চোখে অলীদ কে দেখছে।অলীদ ও চেয়ে পরলে নজর ফিরিয়ে নেয় ও।
দেখতে দেখতে আরিচা ফেরি ঘাটে চলে আসলো ওদের বাস।ফেরিতে উঠলে অলীদ রাইসাকে ওয়াশ রুমে যাবে কিনা জিজ্ঞেস করলো কিন্তু ও যাবে না তাই অলীদ বের হলো।নিচে নেমে ফেরির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো ।বাতাসে অলীদের চুল গুলো উড়ছে ফরমাল ড্রেসে চোখে চশমা এক অন্যরকম মারাত্মক সুন্দর লাগছে মানুষটাকে।এক ধ্যানে চেয়ে দেখতে লাগলো রাইসা অলীদ কে।মনে হলো নতুন করে মানুষটার ওপর প্রেমে পরে গেলো ভেবেই নিজে নিজে লজ্জা পেলো।ইশ কি ভাবছি এসব।
কিছুক্ষণ পরে অলীদ ঝালমুড়ি এনে রাইসাকে দিলো ও তো অবাক এটা তো ওর প্রিয় খাবারের একটা।ঝালমুড়ি খেতে লাগলো।আর ভাবছে এতো কেয়ার করছে মানুষটা তা হলে কি আমার প্রতি তার ফিল আছে ?কি জানি থাকতেও পারে ।
ফেরি ওপাশে গিয়ে থামলো একসময় গাড়ি ফেরি থেকে নেমে আবার গন্তব্য স্থলের উদ্দেশ্য চলতে লাগলো।আর বাকি পুরোটা সময় রাইসা ঘুমে বিভোর ছিলো।অলীদ ওকে একহাত দিয়ে আগলে রেখেছে যাতে ঘুমের সমস্যা না হয়।আর পুরোটা সময়ই অলীদ ওর ভালেবাসার মানুষটার মায়াবী মুখটা দেখেই পার করলো।
ক্রমশ…..
সম্পূর্ণ গল্প পড়তে চান?
Click here to read the full story.
Post Views: 7