উওম জীবন সঙ্গী 8,9,10
সম্পূর্ণ গল্প পড়তে চান?
Click here to read the full story.উওম_জীবন_সঙ্গী
নেখনিতে-বর্ণ
৮.
আরেকটা সুন্দর সকালের আবির্ভাব হলো।আজ অলীদের আগেই রাইসার ঘুম ঙেঙ্গে গেলো।চোখ খুলে আড়মোরে তাকাতেই মানুষটাকে দেখে রাতের কথা মনে পরে গেলো।নিজের অজান্তে দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো।মনে হয় দুনিয়ার সব লজ্জা আজ ওর ওপর ভর করেছে।মনে মনে ভাবতে লাগলো সে সজাগ হলে কিভাবে সামনা সামনি হবে।মুখ থেকে হাত সরিয়ে অনেক ক্ষণ ধরে মন ভরে দেখতে লাগলো।কি নিষ্পাপ আর মায়া ভরা মুখটা দেখলে মন ভরে না শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে।কিন্তু যদি ঘুম ভেঙ্গে যায় তাই নিঃশব্দে পাশ থেকে উঠে রাইসা ওয়াশ রুমে চলে গেলো।শাওয়ার নিয়ে এসে নামাজ পড়ে নিলো।
আস্তে আস্তে অলীদ কে কয়েক বার ডেকে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।অলীদ উঠে রাইসা কে দেখতে না পেয়ে ভাবলো মনে হয় বারান্দায় আছে।অলীদ ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে আবার শুয়ে পরলো।রাইসা আর রুমে না এসে নাস্তা রেডি করতে লাগলো।
ঠিক টাইমে অলীদ উঠলো কিন্তু পাশে রাইসাকে না দেখে ডাকতে লাগলো।কিন্তু কেনো সাড়া না পেয়ে ওয়াশ রুম আর বারান্দায় না পেয়ে রান্না ঘরে গেলো সেখানে না পেয়ে চিন্তায় পরে গেলো।ব্যাপার কি কই যাবে মেইন দরজা ও লাগানো।রাইসা ডাক শুনে সাড়া না দিয়ে আরেক রুমে চলে যায় ।অলীদ সাড়া না পেয়ে পাশের রুমের কথা মনে পরতেই সেখানে গেলো,রুমের দরজা চাপানো ছিলো সেখানে দরজা ঠেলে ডুকে দেখে রাইসা ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে ।অলীদ এবার বেশ বুঝতে পারছে সমস্যা টা কোথায় ।
—রাইসা এখানে কি করছো?
—
—কি হলো কথা বলো”
—না মানে
আর কিছু বলতে পারেনা,অলীদ ওর হাত ধরে টেনে সামনে দাড় করালো
—তাকাও আমার দিকে,আরে এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে
কিন্তু রাইসা তাকাতেই পারছে না
—কি ব্যাপার মনে হচ্ছে পালিয়ে বেড়াচ্ছ ,তা এতো লজ্জা কই ছিলে কাল রাতে হুম?
মাথা নিচু করেই জবাব দিলো
—জানিনা
—এদিকে তাকাও ,শোনো আমি চাইনি এখনই তোমার কাছে যেতে কিন্তু আমি পারিনি নিজেকে ঠিক রাখতে।কারন আমার মনে হলো কাছাকাছি না গেলে আবার দূরত্বের সৃষ্টি না হয়।এবার বলো তুমি খুশি না ?বলো ?
—হুম খুশি
বলেই অলীদের বুকে মুখ লুকালো রাইসা।অলীদ ওর হাত দিয়ে রাইসাকে বুকে আগলে রাখলো।
—আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে তোমাকে খুশি রাখতে চাই।
বলে কপালে ঠোঁট এর ছোয়া দিলো।
আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো আজ সত্যি আবার অনুভব করলো জীবনের উওম মানুষটাকেই পেয়েছে।সত্যি তাই”যে কিনা ভালোবাসায় ওর জীবনটাকে ভরিয়ে দিবে আর কি চাই”
~~~~
সময় তার নিজের গতিতে বহমান ,অবশেষে রাইসার পরিক্ষার আর কয়দিন বাকি।অন্তত তিন চার দিন আগে যেতে হবে বাড়িতে।কলেজের আনুসাঙ্গিক কাজ গুলো আগেই করা হয়ে গেছে ।বাড়ি গিয়ে আবার রেস্ট করে পড়াশুনা করতে হবে।অলীদ ওকে দিয়ে আসবে।যদিও রাইসা কে ছেড়ে থাকতে অলীদের ভীষণ কষ্ট হবে কিন্তু কিছু করার নেই।কয়দিনের ব্যাপার এর পর তো আবার নিজের কাছে নিয়ে আসবে।
আজ জমিলা কাজে এসেছে ।কাজ করতে করতে খেয়াল করলো রাইসার মন আজ খারাপ
—কি ব্যাপার রাইসা মা আজ মনে হয় মন খারাপ
—হুম কিছুটা
—কয়দিনের জন্য বাড়ি যাবো তাই
—অহ
রান্না বান্নার ফাকে দুজনের মধ্যে অনেক কথা হলো।রাইসা কয়দিনের জন্য বাড়ি যাবে শুনে মনখারাপ হলো জমিলার।এখানে এসে একটু মন খুলে কথা বলতে পারে।এ কয়দিন বলতে পারবে না ।
—মন খারাপ করে না খালা আমার পরিক্ষা শেষ হলেই চলে আসবো।
ঝমিলা আর মন খারাপ করে না।
—ভালো ভালোই চলে আইসো মা
—হুম খালা
ব্যাগ পএ গুছিয়ে নিলো রাইসা,আগামীকাল সকালের গাড়িতে করে রওয়ানা হবে।রাতের বেলায় রুমে অলীদ কিছু হাতের কাজ করছিলো,রাইসা পাশে মন খারাপ করে বসে আছে
—কি মন খারাপ কেনো?
—
—কিছু তো বলো?
—
কোনো কথা বলছে না দেখে নিজেই উঠে রাইসা সামনে গিয়ে বসে হাত দুটি ধরে
—মন খারাপ করো না আমি তো সাথে যাচ্ছি নাকি?
—হুম কিন্তু দিয়ে তো চলেই আসবেন
—কি করবো বলো ছুটি নেই আবার ক্লাস ও মিস দেওয়া যাবে না।সামনে আমারও পরিক্ষা”
—হুম ঠিক আছে।
পরদিন সকালে রওয়ানা হয়ে বাড়ি পৌঁছাতে প্রায় দুপুর হলো।সবাইকে অনেক দিন পরে দেখে রাইসার মন ভালো হয়ে গেলো ।ভাইটা তো ওদের পেয়ে অনেক খুশি ,আর ওর জন্য নেওয়া চকলেট পেয়ে দারুন খুশি।
দুজনে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলো।খাবার পরে সবাই একসাথে বসে কথা বলছে।
—কয়দিনের ছুটি নিয়ে এসেছো অলীদ ?
—এই তো মামা কালই চলে যাবো ছুটি নেই
—ওহ আচ্ছা
—মামা এতিমখানা মাদ্রাসার ব্যাপারে কিছু কথা ছিলো
—হা ঐ ব্যাপারে এমনিতেও কথা বলতাম
—আপনি জায়গা ঠিক করে দিয়েন বাকিটার ম্যানেজ আমি করে দিবো
—হুম ঠিক আছে তবে হা তোমার জায়গা কেনা লাগবে না আমার যে জায়গাটা আছে সেটা মাদ্রাসার জন্য উপযুক্ত তাই ঐ জায়গাটা আমি দিতে চাই ।তুমি শুধু নির্মান কাজের ব্যাবস্থাটা করে ফেলো আর হা সে ব্যাপারেও আমি সাহায্য করবো কোনো চিন্তা করো না।
—আপনি আছেন বলেই আমি চিন্তা মুক্ত মামা।
—আমি জানি সেটা।
মায়ের কোলে মাথা রেখে রাইসা এতোদিনের জমানো কথা গুলো বলতেছে।
—মা তোমাদের অনেক মিস করছি,
—অলীদের সাথে সব ঠিক ঠাক আছে তো?ওকে জ্বালাতন করিস না তো আবার?
—না একদমই না সব ঠিক আছে মা ।
—ছেলেটা অনেক ভালো,বর্তমানে এমন ছেলে পাওয়া কষ্ট ।ওকে তুই কষ্ট দিবি না।
—হুম আর তোমার মেয়ে বুঝি ভালো না?
—আমার মেয়েটাও অনেক ভালো সোনা মা আমার
বলেই মেয়েকে মা আদর করে দিলো।
—এবার রুমে যা ছেলেটা আবার কাল সকালেই চলে যাবে ভোরে উঠতে হবে।
কথাটা শুনেই রাইসার মন খারাপ হয়ে গেলো,এই কয়দিনে মানুষটার প্রতি আলাদা একটা মায়া জমে গেছে।
রুমে গিয়ে দেখে অলীদ শুয়ে আছে,পাশে গিয়ে বসলো।কিন্তু মন খারাপ করে ,মনে হয় এক্ষুনি কান্না করে দিবে।অলীদ বুঝতে পেরে একটু উঁচু হয়ে রাইসার এক হাত ধরে টান দিতেই রাইসা ওর বুকের ওপর পরে ।অলীদ ও দুই হাত দিয়ে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ।রাইসাও বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ থাকে ।
—মন খারাপ করে না পাগলী মাএ কয়টা দিন।আমি নিজে এসে নিয়ে যাবো।আর হা সাবধানে চলাফেরা করবে।ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়বে কেমন”
—হুম
—এবার একটু হাসো তো
রাইসা জোড় করে হাসে কিন্তু সেটা ও বুঝে গেছে তাই বউয়ের মন ভালো করতে তাকে আদর করতে লাগলো ,একসময় অলীদ রাইসার মাঝে ডুব দিলো।
“অলীদ চলে গেছে আজ দুদিন হলো ,আর একদিন পরই পরিক্ষা ।আপাততো পরিক্ষার পড়ালেখা নিয়েই রাইসা পরে আছে মন খারাপ হলেই অলীদের সাথে কথা বলে।সাথে সাথে মন ভালো হয়ে যায়।
রাইসার শ্বশুর বাড়ি থেকে সবাই আসছে রাইসাদের বাড়িতে।রাইসা যেতে পারেনি তাই তাঁরাই এসেছে।ছেলের বউয়ের পরিক্ষা তাই সাথে করে অনেক কিছু নিয়ে এসেছে।কেনোনা নতুন বউ আর পরিক্ষা উপলক্ষ্যে তো পাওনা আছেই।কিন্তু তারা একবেলা খেয়েই চলে গেছে।এই অল্প সময়ে রাইসার মা বাবা তাদের আপ্যায়নের কোনো ত্রুটি রাখেনি।যাওয়ার সময় পুএ বধুকে মন ভরে দোয়া করে গেছে।
রাইসার আজ পরিক্ষা সব কিছু নিয়ে রেডি হয়ে নিলো।মায়ের কাছ থেকে বিদেয় নিয়ে বাবার সাথে চললো পরিক্ষা কেন্দ্রে।সেখানে পৌঁছেই অলীদের সাথে আগে কথা বলে নিলো।অলীদ ওকে একদমই চিন্তামুক্ত হয়ে পরিক্ষা দিতে বলছে।বাবাকে বলে কেন্দ্রে ডুকে পরলো।
পরিক্ষা শেষে বের হলো মনটা বেশ ফুরফুরে ,পরিক্ষা অনেক ভালো হয়েছে ।বের হয়ে বাবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।কিছুক্ষন বাদে মনে হলো ওকে কেউ ফলো করছে।কিছুটা দুরে একটি লোক শুধু ওর দিকে তাকাচ্ছে আর ফোনে কথা বলছে।রাইসার মনে ভয় হতে লাগলো,এরই মধ্যে ওর বাবা আসলে পরিক্ষার কথা জিজ্ঞেস করলে ভালো হইছে বলে পাশে তাকালে দেখে লোকটি নেই।
হাফ ছেরে বাচলো কিন্তু কথাটা ওর বাবাকে জানায়নি কারন তেমন কিছু মনে হয়নি তাই।বাবার সাথে বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা হলো ,রিজার্ভ করা অটোতে উঠে বসলো।
ক্রমশ….
উওম_জীবন_সঙ্গী
লেখনিতে-বর্ণ
৯.
আষাঢ় মাসের শেষ সময়।এই সময়টাতে এই রোদ তো এই বৃষ্টি হয়ে থাকে।
রাইসার কয়েকটা পরিক্ষা হয়ে গেছে আর কয়টা বাকি আছে।তবে পরের পরিক্ষাটা আর দুইদিন পরে ।সকাল গিয়ে দুপুর প্রায় রাইসা ওর রুমে পড়তে ছিলো।এর ফাকে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলো আকাশে ভিষণ মেঘ জমেছে,মনে মনে বেশ খুশি বৃষ্টি হলেই ভিজবে,মা একদমই ভিজতে দেয় না।আজ যে করেই হোক ভিজবেই।ভাবতে ভাবতেই আকাশের বুক চিরে ঝম ঝম করে বৃষ্টিরা পরতে লাগলো।রাইসা আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেলো।কিন্তু কিভাবে যাবে একা মন চাচ্ছে না তখনই ভাইকে ডাক দিলো।তাওসীফ আসতেই ওকে বললো
—আয় না ভাই আমরা বৃষ্টিতে ভিজবো।
—না না আপু তা হলে মা রাগ করবে
—আরে কিছু বলবে না তুই শুধু আগে নেমে পর তারপরে আমি নামবো।
তাওসীফ রাজি না হলেও ওকে জোর করে নামালো তারপরে রাইসা নিজেও নামলে বাইরে ,প্রায় ঘন্টা খানেক ভিজলো।রাইসার মা অনেক রাগ করলো কিন্তু কে শোনে কার কথা।গোসল শেষে রাইসার মা রাইসাকে হাতের কাছে না পেলেও তাওসিফ কে ধরে বসলো
—মা আমাকে ছেড়ে দাও আমি কিছু করিনি সবটাই আপুর কথাতে করছি।
—আচ্ছা যা আর ওর যদি জ্বর আসে তা হলে তো খবর আছে ।
ঘরের ভিতর থেকে রাইসা মায়ের কথা শুনছে আর হাসছে।কিন্তু এই মুহূর্তে কাছে যাওয়া যাবে না।তা হলে বোম/ব্লাস্ট হবে। দুপুরে না খেয়েই দরজা চাপিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।খাওয়ার সময় মা এসে ডাকলেও সারা দেয়নি এরপরে বাবা এসে ডাকলেও সারা দেয়নি,দরজা ঠেলে দেখে মেয়ে ঘুম ভাবলো ঘুমিয়ে আছে থাক পরে উঠে খেয়ে নিবে।
~~
অলীদ অফিসে কাজ করছে।কাজের খুব চাপ বাসায় ফিরতেই সন্ধ্যা হয়ে যায় আর কোম্পানি জব বলে কথা।আজকাল বৌকে খুব মিস করে হয়তো দূরত্ব তাই।কাজের ফাকে রাইসার কথা মনে পরতেই ফোন করে কিন্তু ফোন বন্ধ পায়।কয়েক বার চেষ্টা করে শেষে মামার ফোনে ফোন দেয়,রাইসার বাবা ফোন রিসিভ করে
—আসসালামু আলাইকুম মামা
—ওয়া আলাইকুমুস সালাম,কেমন আছো বাবা ?
—এই তো ভালো ,আপনারা সবাই ভালো তো ?
—হুম সবাই ভালো।
—মামা রাইসাকে কল দিচ্ছি মোবাইল বন্ধ একটু ওকে বলেন অন করতে।
—আচ্ছা ঠিক আছে আমি বলতেছি ,বলে লাইন কেটে মেয়ের রুমে গিয়ে ডাকলো কিন্তু সারা দেয়নি ,আম্মাজান বলে মেয়ের কপালে হাত দিতেই চমকে গেলেন অনেক গরম তার মানে জ্বর উঠেছে ।তখনই ওর মাকে ডাকতে থাকলো ।রাইসার মা দৌড়ে আসলো,এসে দেখে অনেক জ্বর।
—মেয়েটাকে কিছু বললেও শোনে না ।বৃষ্টিতে ভিজে আজ এই অবস্থা।এমন হলে পরিক্ষা দিবে কেমনে।
—আচ্ছা থামো এখন এ সব বলে লাভ নেই আমি গিয়ে ঔষধ নিয়ে আসি আর হা ওর ফোনটা অন করো অলীদ ফোন দিবে।
কথাটা শুনে রাইসার মা ভাবছে কি জবাব দিবে অলীদ কে ।অন করতেই ফোন আসলো,রাইসার মা রিসিভ করে কথা বললো রাইসার কথা জিজ্ঞেস করতেই কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,জ্বরের কথা শুনলে ছেলেটা চিন্তা করবে তাই ওকে বলে দিলো ঘুমাচ্ছে।কিন্তু এই অবেলাও ঘুমায় ?জেগে জেনো ফোন দেয় বলে কল কেটে দিলো।রাইসার মাও হাফ ছেড়ে বাচলো।
ফার্মেসি থেকে ঔষধ এনে ঘুম থেকে ডেকে তুললো রাইসাকে ,জোড় করলে অল্প করে কিছু খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিলো।একটু হুসে আসলে সবাই কে নিষেধ করলো ওর জ্বরের কথা যেনো অলীদ কে না জানায়।কিন্তু রাইসার বাবাই অলীদ কে কল করে তখনই বলে দেয়।কথাটা পরে হলেও শুনবে তো তার চাইতে আগে বলাই ভালো।
অলীদ তো শুনে চিন্তায় শেষ সাথে রাগ ও হয়ে আছে।ফোনটা ওকে দিতে বলতেই রাইসার বাবা ফোনটা রাইসার নিকট দেয় ।মনের মধ্যে ধুরু ধুরু করছে আজ শেষ কি না কি বলে আল্লাহ ,ফোন কানে নিয়ে হ্যালো বলতেই
—তুমি কি কোনো দিন শুধরাবে না ।এতো ছেলেমানুষি করো কেনো? পরিক্ষা চলছে এখন কি ভেজার সময় ? জ্বর যদি না কমে কিভাবে পরিক্ষা দিবে বলো?
রাইসা কি জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছে না।
—উওর দিতে পারবে না জানি,আমারই ভুল হইছে বাটন ফোন না দিয়ে একটা স্মার্ট ফোন দিলে ঠিক হতো।যখন তখন ভিডিও কলে কথা বলে দেখতে পারতাম কখন কি করো “
যাই হোক মেডিসিন ঠিক মতো খেও আর ফোন অন রেখো কল দিলে ঠিক সময়ে রিসিভ করবে।
—আচ্ছা ঠিক আছে”
—রাখছি তাহলে
-হুম আল্লাহ হাফেজ বলে হাফ ছাড়লো,
এতোক্ষণ সাহেবের লেকচার শুনে কানে তালা লেগে গেলো।
অলীদের প্রতি ওর আগে থেকে রাগ টা থাকলেও ভয় টা ঠিক পেতো,এখন কেমন জানি আগের চাইতে একটু বেশিই ,হয়তো ভালোবাসা আর কেয়ারিং বেশি হলে এমনটা হয়।
পরের দিন থেকেই জ্বরটা কমতে শুরু করছে এখন অনেকটা ভালো লাগছে।প্রতি ঘন্টায় অলীদ রাইসার খোঁজ নিয়েছে।তাই নিয়মিত খাওয়া আর মেডিসিন নিতে একদমই ভুল করেনি। রাইসা দুইদিনের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে গেলো আবার কাল থেকে ভালো ভাবে পরিক্ষা দিতে পারবে।

অবশেষে পরিক্ষার দিন গুলো দেখতে দেখতে শেষ হয়ে আসলো।প্রত্যেক টা পরিক্ষাই আশানুরূপ ভালো হয়েছে।আগামী কাল শেষ পরিক্ষা।এর মধ্যে অলীদ একদিনও আসতে পারেনি কাজের চাপে ,কিন্তু রাইসার খোঁজ নেওয়াটা অলীদের নিত্যদিনের রুটিন হয়ে গিয়েছে ।এ জন্য রাইসাও মন খারাপ করেনি।
পরদিন রেডি হয়ে বাবার সাথে অটোতে রওয়ানা হলো।মনটা বেশ ফুরফুরা লাগতে শুরু করলো ,পরিক্ষা শেষ করেই আবার মানুষটার কাছে যাবো আবার তাকে কাছে পাবো ।কতোদিন দেখিনা এ সব ভাবতে ভাবতেই কেন্দ্রে চলে আসছে।ভিতরে ঢোকার আগে হক সাহেব বারবার বলে দিয়েছে সে আসা না পর্যন্ত যেনো গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে ।রাইসাও বাবাকে আস্বস্থ করে ভিতরে চলে গেলো।
পরিক্ষা শেষে বের হয়ে বাবার জন্য অপেক্ষারত আছে রাইসা।ফোনও আনা নিষেধ একটা কল করবে তারও অবস্থা নেই ।আবির ভাবলো চলেই তো আসবে,কিন্তু একে একে সবাই বের হয়ে পুরো কেন্দ্র ফাঁকা হয়ে গেছে ।রাইসার বান্ধবি নিপার সাথে দেখা হলে অনেকক্ষণ ধরে ওর সাথে কথা বলে সেও দেরি হচ্ছে বলে চলে গেলো।যদিও ও বলেছিলো ওর সাথে যেতে কিন্তু দুজনের দুই জায়গায় বাড়ি আর যেহেতু বাবা আসবে তাই ওকে না করে দিয়েছে।গেটের সামনে থেকে হাটতে হাটতে একটু দূরে ফাঁকা জায়গায় চলে গেলো রাইসা ভাবলো সামনে এগিয়ে যাই বাবা আসলেও সামনে দেখা হবে কিন্তু না আসছে না।কিছুক্ষণ পরই কয়েকটা ছেলেপেলে ওর সামনে আসলো।আর কেমন বাজে ভাবে কথা বলছে
—কি ব্যাপার আজ একা কেনো?চলো আমরা বাড়ি পৌছে দেই।
—আপনারা কারা ?সামনের থেকে সরে যান।
—আরে আমরা তো তোমার গ্রামের তুমি একা তাই তো সাহায্য করতে চাচ্ছি
এই বলে হাসতে লাগলো।তখনই আরেকজন এসে হাজির সে আর কেউ না ওদের লিডার..
—আরে তোরা ভদ্রভাবে কথা বল ওর সাথে দেখছিস না কেমন ভয় পাচ্ছে।
কথাটা শুনেই ভালো ভাবে দেখে রাইসা চমকে উঠলো এ তো আর কেউ না চেয়ারম্যান এর ছেলেটা।এখন কি হবে ?কি ভাবে বাড়ি যাবে মনে মনে আল্লাহ কে ডাকতে লাগলো।
—আরে ভয় পেও না,তোমাকে প্রথম দিন থেকেই ফলো করছি কিন্তু হাতের নাগালে ছিলে।একাকি পাই না তবে আজ পেলাম!আজ আর ছাড়ছি না।একবার আমার নজর যার ওপর পরে তাকে কাছে না পাওয়া পর্যন্ত মনে শান্তি পাইনা।
বলে বিশ্রী হাসি দিতে লাগলো।রাইসা কোনো মতে ওখান থেকে আসতে লাগলে হুট করে ছেলেটা ওর হাত ধরে বসে।রাগে রাইসা হাত ছাড়িয়ে অন্যহাত দিয়ে ছেলেটার মুখে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
—কিহ তুই আমাকে চড় মারছিস ,এই আমাকে ?আজ তোকে এমন শিক্ষা দিবো যে সারা জীবন মনে রাখবি ।
রাইসা কথাটা শুনেই উল্টো দৌড় দিলো ,পিছে ওরাও “
রাইসা কিছুটা দৌড়ে আসতেই কারোর বুকের সাথে ধাক্কা লাগতেই সে ধরে ফেলে।
—রাইসা তুমি এখানে এমন দৌড়াচ্ছ কেনো?
অলীদের কন্ঠ শুনে যেনো রাইসার প্রাণ ফিরে পেলে।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
রাইসার আর উওর দেওয়া লাগেনি সামনে তাকিয়ে দেখে বখাটে গুলো ।অলীদকে দেখেই ওরা সামনে না এসে উল্টোদিক ঘুরে দৌড় দিলো,কিন্তু এই মুহুর্তে রাইসা ভয়ে কাঁপছে তাই ওকে সামলাবে নাকি ওদের পিছু নিবে ,যদি ওদের পিছু নেয় আর সে সময় মেয়েটার ভয়ে খারাপ কিছু ঘটে যায় সে চিন্তা করে আর ওদের পিছু নেয়নি।ওদের কে ও পরে দেখে নিবে।
—রাইসা কথা বলো ভয় নেই আমি চলে আসছি তো।
—আপনি সত্যি আসছেন?
—হা দেখো ..
—এতো দেরি করছেন কেনো আসতে,আসছেন যখন আরো আগে আসতে পারতেন।
—সারপ্রাইজ দিবো বলে আমি মামাকে বলেছি যে আমি নিজে যাবো তাই মামা আসেনি আর তোমাকে ও বলেনি আমার কথা কারন আমি নিষেধ করছিলাম বলতে,পথে গাড়ি নষ্ট হওয়াতে দেরি হয়ে গেলো।সরি সোনা শান্ত হও আল্লাহ সহায় আছে তাই কিছু হয়নি।
—রাইসা তুমিকি ওদের চিনো?
—হা একবার দেখেছিলাম ওরা চেয়ারম্যান এর ছেলে আর ওর বন্ধুরা,তবে প্রতিদিনই মনে হতো কেউ ফলো করে আমায় কিন্তু সামনে পরেনি তাই কাউকে বলিনি ।এখন বুঝলাম ওরাই হবে হয়তো।
—ড্যাম ইট,কেনো বলোনি ?আগে বললে আমি এর ব্যাবস্থা করে রাখতাম ।আর আমার যদি আরো দেরি হতো আসতে কি হতো ভেবে দেখেছো?
রাইসা আর উওর দিতে পারছে না এমনিতেই ভয়ে কাঁপছে ।তাই মেয়েটাকে শান্তনা দিয়ে বাড়ি যাবার জন্য গাড়িতে উঠলো।
অন্যদিকে…
“বারবার পাখি হাত ছাড়া হয়ে যায় আজ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারলাম নাহ,কোথা থেকে ভেজালটা চলে আসলো শিট ..তবে আমিও হার মানবে না,”
থাপ্প/রের প্রতিশোধ তো আমি নিবোই।
বলে হাসতে লাগলো”
বাড়ি পৌঁছেই সবাই ঘটনা শুনে ভয় পেলো।হক সাহেব কি বলবেন ভেবে পাচ্ছে না শুধু মেয়েটা নিরাপদে আছে ভেবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করতে লাগলো।
এখন ওকে স্বাভাবিক করতে হবে।
—মামা আমি কালই রাইসাকে নিয়ে ঢাকাতে চলে যাবো আর দেরি করবো না।
—আচ্ছা ঠিক আছে।
রাতে সবাই একসাথে বসে কথা বলছে।রাইসার মার মন ভালো নেই মেয়েটা চলে যাবে আবার এমন একটা ঘটনা ঘটলো এর জন্য ও।রাইসার বাবা বাইর থেকে ফিরলো।ঘরে ডুকেই একটা সংবাদ দিলো সবাইকে।
—সন্ধ্যার পর কে বা কারা চেয়ারম্যান এর ছেলেকে নির্জনে ধরে নিয়ে অনেক মেরেছে আর সাথে হাত দুটো ভেঙ্গে দিছে।হাসপাতালে ভর্তি আছে।
শুনে সবাই তাজ্জব হয়ে গেলো।কে করলো এমন কাজ তবে যেই করুক একদম ঠিক কাজ করেছে ।
রাইসা অলীদকে সন্দেহ করলেও পরে আবার ভাবলো সে তো সারাক্ষণ আমার সাথেই ছিলো ।এমনটা সে কিভাবে করবে?যে করছে ভালো করছে।ঐ হাত দুটো দিয়ে আর কাউকে না ছুতে পারে বলে মনে মনে খুশি হলো।
পরদিন ভোরে সবকিছু নিয়েওরা ঢাকার পথে রওয়ানা হলো।গাড়িতে আজও রাইসা বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেছে।অলীদ ওকে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে ।ঘুমালে একদম বাচ্চাদের মতো লাগে মেয়েটার চেহারা।ভাবতে লাগলো যদি কাল বড়ো কোনো অঘটন ঘটে যেতো তা হলে অলীদ নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারতো না।ছোটো বেলা থেকে যাকে সবসময় চোখে চোখে দেখে আসছে আজ এই সময় এসে এমন খারাপ কিছু ঘটতে লাগছে ভাবতেই অলীদের মাথা ফেটে যাচ্ছে।
~~
গতো কাল রাইসাকে নিয়ে বাড়ি আসার পরে ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে একটু শান্ত করে।ফ্রেশ হওয়ার পরে খাইয়ে বিকেলে ঘুম পারিয়ে দেওয়া হয়।এই ফাকে অলীদ ওর ছোটো বেলার বন্ধু যে কিনা বর্তমানে রাইসাদের থানার ওসি।ওর সাথে দেখা করে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে।আর এ ও বলছে ওকে এরেস্ট না করে এমন কিছু করতে যাতে কারো দিকে কুনজরে তাকিয়ে কোনো মেয়েকে স্পর্শ করতে না পারে।তবে সাথের ছেলেগুলোকে কিছু না করতে বলছে কারন ওরা তো লিডারের কথা শোনে,আর যখন দেখবে চেয়ারম্যান এর ছেলের এমন অবস্থা তখন ওরা এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে।
ওর বন্ধু অলীদ কে ভরসা দিলো।যা বলছে তাই করবে।
সন্ধ্যার পরেই কয়েকজন পুলিশ সিভিলে চেয়ারম্যান এর ছেলেকে নির্জনে পেয়ে এমন মাইর দিছে আর হাত এমন ভাবে ভাঙছে যে চিকিৎসা করে ভালো হলেও কোনো কিছু হাত দিয়ে ভালো ভাবে ধরার শক্তি পাবে না।”
ঘটনাটা মনে করতেই অলীদ মনের অজান্তেই হাসলো।আমার জান পাখিটার ক্ষতি করতে চাইলে এমন ই অবস্থা হবে।রাইসার মুখের দিকে চেয়ে বির বির করতে লাগলো…তোমার সবকিছুর দায়িত্ব আমার।জীবন দিয়ে হলেও আগলে রাখবো তোমায় ভালোবাসি সোনা বউ খুব খুব।”
ক্রমশ….
উওম_জীবন_সঙ্গী
লেখনিতে-বর্ণ
১০. (অন্তিম পর্ব)
সময়ের সাথে সাথে প্রতিটি মানুষের পরিবর্তন হয় আর এটা প্রকৃতির নিয়ম।রাইসা আর অলীদের জীবনেও এসেছে অনেক পরিবর্তন।
পরিক্ষার পরে ঢাকা এসে আর বাড়ি যাওয়া হয়নি ।খুব ভালো রেজাল্ট করেছে রাইসা।এর পরে শুধু একবার ভর্তির জন্য কাগজপএ আনতে গিয়েছিলে তাও একদিনের জন্য।অলীদের সাথে গেছে আবার আসছে।
রাইসাকে সব সময় ঐ একটা ভয় খুব করে তারা করতো।সারাক্ষণ ভিতিকর অবস্থায় থাকতো।বলতে গেলে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলো কিন্তু অলীদ ওর পাশে থেকেছে সবসময় সময় দিয়েছে।কোনো কোনো সময় তো অলীদ ছুটি নিয়ে বাসায়ই থেকেছে।অবশেষে রাইসা সব ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছে ।
পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে রাইসা ।অলীদের ও ভার্সিটি লাইফ শেষ হলো।খুব ভালো একটা সরকারী জব পেয়েছে।অনেক ব্যাস্ততায় পার হচ্ছে ওদের দুজনের জীবন।এরই মাঝে আরেক টা সুসংবাদ হলো রাইসা কনসেপ্ট করেছে,এখন পাঁচ মাস চলছে।
যেদিন শুনছে ঐ দিন অলীদ অনেক খুশি হয়েছে ,সে যে কি পাগলামি করেছে তা বলার মতো না,সংবাদটি শুনেই আসেপাশের সবাইকে মিষ্টি খাইয়েছে।রাইসা শুধু অলীদের পাগলামি গুলো দেখছে ,কতো খুশি মানুষটা।
রাতে রাইসা বেডে পা ঝুলিয়ে বসে আছে এমন সময় অলীদ এসে ওর সামনে হাটু গেড়ে বসে রাইসার হাত দুটো ধরে বলছিলো..
—জানো আজ মনে হয় আমার জীবনের সব চাইতে আনন্দের দিন।আমি আল্লাহর কাছে চাই আমার মায়ের মতো একটা মেয়ে হোক।মায়ের আদর আমি পাইনি কিন্তু এই মাকে পেলে আমার জীবনে আর কিছু চাই না।বলে রাইসার কোলে মাথা রেখে খুব করে কেঁদেছিলো ।সেই দিন রাইসার খুব কষ্ট হয়েছিলো।পৃথিবীতে মা হলো বড়ো অবলম্বন ।মা না থাকলে প্রকৃত ভালোবাসা পাওয়া যায় না।এই আদরের কাছে অন্য আদর ভালোবাসার মূল্য নেই।
রাইসা এ অবস্থায় বাড়ি যেতে না পারলেও অলীদের আর রাইসার বাড়ির লোকজন এসে ওকে দেখে যায়।একবার মা আসে তো একবার শ্বাশুড়ি আসে,তবে ওর ননদ মিমিকে ওদের কাছে এনে রাখছে।এই সময়টা ওর কাছাকাছি কাউকে না কাউকে থাকা দরকার তাই।ঝমিলা প্রতিদিন এসে সবকাজ করে দিয়ে যায় কিন্তু তার বাসায় আবার সমস্যা তাই রাতে থাকতে পারে না ।
এই সময়টা রাইসার মুডসুইং হয় ,কিছু ভালো লাগে না।এ সময়টাতে অলীদ ওকে যথাসাধ্য সামলে রাখে ।যখন যেটা মন চায় খেতে তখনই অলীদ সেটা এনে দেয়।সেটার কোনো সময়ের ঠিক নেই ,হোক সেটা রাত আর দিন তবে মাঝরাতে হলেও চেষ্টা করে।
এরই মাঝে অলীদ গ্রামে ওর মায়ের নামে এতিমখানা মাদ্রাসার কাজ শুরু করে দিছে ।কাজ প্রায় শেষের দিকে।গ্রামের লোকজন ও খুশি এমন একটা সামাজিক কর্মকান্ডে।মাঝে মাঝে অলীদ গিয়ে কাজ দেখেই আবার চলে আসে।
এখন আর রাইসা ভার্সিটির ক্লাস করতে পারছে না,শরীর অনেক ভারি হয়ে গেছে।মাঝে মাঝেই পায়ে পানি আসে।শুরু থেকেই অলীদ ওকে প্রতিমাসে চেকআপ এর জন্য হসপিটাল নিয়ে যায় ।শারিরীক কোনো সমস্যা নেই তবে এ সময়টাতে মেয়েদের শরীরে অনেক পরিবর্তন হয়ে থাকে।তাই অলীদ ডাক্তারের কথা মতো রাইসার খেয়াল রাখছে।
সিজার ব্যাপারটা রাইসা অনেক ভয় পায় তাই ডাক্তার ওকে একদমই এ সব বিষয়ে চিন্তা করতে নিষেধ করছে..শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে বলছে ।তবে সবসময় নিয়ম করে হাটাহাটি করতে বলছে বেশি বেশি পানি খেতে বলছে আর সাথে অন্য ভিটামিনযুক্ত খাবারের লিস্ট তো আছেই।
আজকাল রাইসা ওর মাকে খুব মিস করছে ,অলীদ সাথে সাথে কল করে আসতে বলছে ।আর বেশি সময়ও নেই এসময় মা কাছে থাকলে মেয়েরা ভরসা পায় বেশি ।মেয়ের কথা শুনেই রাইসার মা আর দেরি না করে চলে আসছে মেয়ের কাছে।মাকে পেয়ে রাইসার মনে শতোগুন ভরসা বেড়ে গেলো।
একটা মাই বুঝতে পারে তার মেয়ের মনের কথা গুলো।নিজ হাতে মেয়েকে সময় করে খাইয়ে দেয়,না খেতে চাইলে জোড় করে খাওয়াতে হবে এটা অলীদ ও বলে রেখেছে।
বিকেল বেলায় রাইসার মা রাইসার মাথায় তেল ম্যাসাজ করে দিচ্ছে তখনই অলীদ কল করলো.
—কি করছো এখন?
—বসে আছি মা মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে
—ওহ ,তেমার জন্য কিছু আনতে হবে?
—হুম আসার সময় আচার নিয়ে আসবেন ,খুব খেতে ইচ্ছে করছে।
—এই সময় খাবে ? মেয়েরা তো জানি প্রেগন্যান্সির শুরুতে খায় আর তুমি শেষের দিকে খাবে?
—আরে শুরু আর শেষ আছে নাকি?বলছি খাবো ,আপনি আসার সময় নিয়ে আসবেন
—ঠিক আছে সোনা বউ।
অফিস শেষে বাসায় ফিরলো অলীদ সাথে এক বক্স আচার নিয়ে।এতো আচার দেখে তো রাইসার মাথা খারাপ।
—এতো আচার ?
—এতো কোথায় ? খেতে চেয়েছো সামান্য আচার ,মন তো চাইছে দোকান সহ আনি কিন্তু সেটা তো পারিনি।শেষ করে নেও আবার আনবো।
—আমার আচার খাওয়ার স্বাদ মিটে গেছে।এতো কিভাবে খাবো?
—আচ্ছা ঠিক আছে শোনো আমরা সবাই মিলে খাবো তা হলেই শেষ হয়ে যাবে।বলে হাসতে লাগলো।
—সবসময় ইয়ার্কি করেন ক্যান ? ভালো লাগে না
—আরে রাগ করে না কাছে আসো ,কি অবস্থা, কেমন লাগছে শরির ?
—ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে অনেকটা খারাপ লাগে
অলীদ ওকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রেখেছে
—আর কয়েকটা দিনের অপেক্ষা সোনা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো সব ঠিক করে দিবে।
—হুম
এভাবে পার হলো আরো কয়েক দিন ,রাইসার প্রেগনেন্সির শেষ সময় প্রায়।হাঁটা চলা করতে বেশ কষ্ট হয়।অলীদ এখন বেশি সময় দেয় ওকে বলা যায় না কখন কি হয়ে যায়।
রাতে দুজন ঘুমিয়ে হঠাৎ রাইসার ঘুম ভাঙ্গে পেইন হচ্ছে ,একাই ওঠে ওয়াশ রুম যায়,কিন্তু আসার পরই মনে হলো ব্যাথা দ্বিগুন হারে বেড়ে যাচ্ছে।অলীদ কে ডাকতে থাকলো কিন্তু অলীদ শুনতে পারছে না ।অনেক কষ্টে ওর কাছে গিয়ে কপালে হাত রাখতেই অলীদ থরফরিয়ে ওঠে ।এমন অবস্থা দেখে অলীদ অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো কি হয়েছে ,জবাব না পেলেও বুঝতে বাকি নেই।রাইসার মাকে ডেকে তুললে মেয়ের কাছে আসলো ,অলীদ এই মুহহর্তে গাড়ি কই পাবে আর এম্বুলেন্স এ কল করলে আসতেও সময় লাগবে।তখনই বাড়িওয়ালার কথা মনে পরলো।
সে বলে রেখেছে এমন অবস্থায় পরলে গাড়ি নিতে ।তখনই
তাকে কল করলে সে চলে আসে ।ড্রাইভার দিয়ে গাড়ি বের করে তখনই রাইসাকে নিয়ে সবাই মেডিকেল চলে যায়।
রাইসার কষ্ট দেখে অলীদের জানে পানি ছিলো না।শুধু একটাই চিন্তা মাথায় ছিলো ছোটোবেলায় মা হারিয়েছে এখন যেনো স্ত্রী সন্তান ঠিক থাকে ।আল্লাহর কাছে বার বার এই দোয়াই করতে লাগলো।”
~~~~~
এক বছর পরে”
—কি হলো তোমরা রেডি হইছো?
—হুম আর একটু গোছানো বাকি আছে ।
বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পেলো ,রাইসা অলীদ কে ডাক দিয়ে বললো
—একটু মেয়েটাকে সামলান কান্না করছে তো”
সেদিন অলীদের ইচ্ছা আল্লাহ পূর্ন করেছে,মেয়ের বাবা হয়েছে।আর মেয়ে তো ও জানের জান।দেখতে ওর মতোই হয়েছে।বয়স এক বছর হয়ে গেছে।আজ ওরা গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে।মায়ের নামের এতিমখানা মাদ্রাসার কাজ শেষ ওরা গিয়ে উদ্বোধন করবে ।তাছাড়া রাইসা প্রায় দুই বছরের বেশি যায় না আজ যাচ্ছে তাই খুব খুশি।
—মেয়েকে ধরতে দেরি কান্না থামতে দেরি নেই।বাবার স্পর্শ বেশ বুঝতে পারে মেয়েটা।কোলে নিয়ে মেয়েকে কপালে গালে আদর দিতে থাকলো।
“বের হয়ে প্রাইভেট করে রওয়ানা হলো ওরা ।বাড়ি পৌঁছাতেই সবাইকে এক সাথে দেখলো।অলীদের বাড়ির সবাই এসেছে।ছোটো সোনা মনিকে পেয়ে সবাই খুশি,ছোটো হলে কি হবে বচ্চাটা এর কোল ওর কোলে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর খুব আনন্দ পাচ্ছে।বিকেল বেলায় এতিমখানা উদ্বোধন হবে।সবাই এক সাথে খেয়ে গল্প করছে এই মুহূর্ত সবার আনন্দের উৎস রাইসার পিচ্চু মেয়েটা ।মেয়ের নাম রাখা হয়েছে “আফরা আহনাফ”।সবাই আফরা আফরা বলে ডাকছে।
বিকেল বেলা সবাই একসাথে গিয়ে এতিমখানা মাদ্রাসা উদ্বোধন করলো।সেখানের আসে পাশের গরিব আর এতিমদের অলীদ সাধ্য মতো টাকা দিয়েছে।একবেলা খাবারের আয়োজন না করে টাকাটা দিলে উপকার হবে অলীদ এটাই ভালো মনে করছে।সবাই অনেক দোয়া করে দিলো।আর এলাকাবাসীর উদ্দেশ্য কিছু কথা বলে ওরা সবাই বাড়ি চলে আসলো।
“অলীদ চেয়ারম্যানের ছেলের ও খোঁজ নিছে,জানা গেছে বেচারা মাইর খেয়ে এখন সোজা হয়ে গেছে।এখানের চিকিৎসায় তেমন সুস্থ্য না হলে চেয়ারম্যান তার ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা করে নিয়ে আসছে।কিন্তু এখন ও পুরোপুরি হাত ঠিক হয়নি।”
আজ ভরা জোসনা অলীদ আর রাইসা বাসা থেকে বের হয়ে নির্জনে হাত ধরে হাটছে।দুজনেরই জোসনা রাত অনেক পছন্দের ।
—জানো আজ অনেক হাল্কা লাগছে নিজেকে মনে হলো দায়িত্ব পালন করতে পারছি।কিন্তু আমি গরিব দুঃখি মানুষের জন্য আরো করতে চাই রাইসা।
—হুম আপনি পারবেন এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
হুট করেই অলীদ রাইসাকে কোলে তুলে নিলো,
—কি করছেন ?
—দেখছো না বউকে কোলে নিছি এভাবে ঘরে নিয়ে যাবো।
—কষ্ট হবে তো
—হবে না …তোমাকে পেয়ে জীবনের সব কষ্ট ঘুচে গেছে।তুমি আমায় আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার দিয়েছো।বিনিময়ে তোমাকে দিবো সারা জীবন বুক ভরা ভালো বাসা ।
—আর আমিও আপনাকে পেয়ে অনেক খুশি।সত্যি আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া।আপনার মতো “উওম জীবন সঙ্গী”পেয়েছি বলে।”
সমাপ্ত..
Post Views: 29