একই বন্ধনে বাঁধা দুজনে 4,5,6

একই বন্ধনে বাঁধা দুজনে

একই বন্ধনে বাঁধা দুজনে

পর্বঃ-০৪
ডাক্তার এর চেম্বার এ বসে আছে রোহান। রোহানের বিপরীতে বসে আছে ডাক্তার মুখ টা গম্ভীর। নীরবতা ছেড়ে ডাক্তার বললো,, আপনার চোখের খুঁজ নিন আমরা ও নিচ্ছি।
প্রয়োজন পড়লে আমার টা নিন আমি আমার চোখ দুটো দিয়ে দিতে চাই। আমার কুহুর চোখে আলো নাই আমার চোখে আলো দিয়ে কি করবো।
মিস্টার আহাম্মেদ পাগলামি করবেন না আপনি চারোদিকে খুঁজ করুন আমরাও করছি।
ডাক্তার এর সাথে কথা বলা শেষ করে তার চেম্বার থেকে বের হয়ে সে কুহুর কেবিন গেলো গিয়ে দেখে মেয়ে টা হাঁটুতে মাথাটা ঠেকিয়ে কাঁদছে। ওর কাঁদার ফলে শরীর টা প্রতি খনে খনে কেঁপে উঠছে। রোহান গিয়ে ওর পাশে বসে কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
কুহু বললো,, কে রোহান ভাই?
রোহান হাসলো খানিকটা। তারপর বললো,,, কি ভাবে বুঝলি?
আপনার পারফিউম এর গন্ধ আর আমার মন বলেছে ওটা আপনি আপনি ছাড়া কেউ হতে পারে না। এই আদুরী স্পর্শ টা আপনার।
এই তিন দিনে এতো চিনেছিস। এতোটা চিনেছিস কি করে?
জানিনা তো।
আচ্ছা জানতে হবে না।
কাল ভাই এর গা এ হলুদ। বাড়ির চারোদিকে কত শত লাইট থাকবে আমার চোখ থাকবে অন্ধকার।
কথা টা শুনার মাত্র রোহানের বুক চিঁড়ে হৃদপিণ্ড টা বের হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। কুহুকে কি ভাবে বুঝাবে কুহুর থেকে ও ওর বেশি কষ্ট হচ্ছে। বৃদ্ধার আঙুলের সাহায্যে কুহুর চোখের পানি টা মুছে দিয়ে বললো রোহান প্রমিস করছে কুহুকে দুই-তিন ঘন্টার মধ্যে আমি তোর চোখের আলো ফুটিয়ে তুলবো। কাল তুই চোখের আলোয় সব দেখতে পারবি। আমি এখন বের হচ্ছি বাহিরে মা ভাই আর স্মৃতি আছে। একটু পর কেবিনে আসবে আমি তোর জন্য আলো ব্যবস্থা করে আসছি। আমি খালি হাতে ফিরবো না। কিন্তু আমি না ফিরা পর্যন্ত কথা দে তুই কাঁদবি না।
কুহু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
রোহান রুম থেকে বের হয়ে গেলো তারপর বাহিরে সকল কে কেবিনে যেতো বললো আর এও বলে দিয়েছে কুহুর সামনে যাতে কেউ আর না কাঁদে আর কুহুর চুল টা বেঁধে দিতে এই কথাগুলো বলে রোহান বের হয়ে গেলো।
রোহানের কথা মতো ওরা ও তাই করলো। কেবিনে ঢুকে হাসি হাসি মুখ করে কহুর সাথে কথা বলছে। আর অন্য দিকে রোহানের মা কুহুর চুল সুন্দর করে বেঁধে দিয়ে। কুহু কে ঘুম পাড়াছে। এক পর্যায়ে কুহু ঘুমিয়ে গেলো। চিন্তিত মনে বসে রইলো তিনটি মানুষ।
রোহান করিডোর দিয়ে যাচ্ছিলো হঠাৎ দেখতে পেলো বাড়ির মানুষ গুলো। বাড়ির মানুষ গুলো কে দেখে রোহানের শরীরের রক্ত আগ্নেয়গিরি মতো টগবগিয়ে ফুটতে লাগলো। দিক শূন্য হয়ে রোহান সেইদিকে চলে গেলো। রোহানকে দেখে ওরা সবাই ভয়ে তটস্থ হয়ে গেলো রোহান বাবা বললো,, দেখো রোহান একদম কোন সিনক্রিয়েট করবে না। সিনক্রিয়েট করলে মে”রে তোমার পিঠের ছাল-চামড়া তুলে নিবো।
মিস্টার আহাম্মেদ আমি আপনার সাথে কথা বলছি না আর না আমি ইন্টারেস্ট আমি এসেছি অন্য কাজে সবাই কে ঠেলে আইসিইউ ভিতরে ঢুকে ডাক্তার দের কে হম্বিতম্বি করে বললো যতক্ষণ আমার কুহুর জন্য চোখ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে ততক্ষণ ওর সকল প্রকার ট্রিটমেন্ট বন্ধ। শুধু অক্সিজেন চলবে আর কিছুনা।
রোহানের ফুফু বললো,, দেখ রোহান আমার মেয়ে টা ম”রে যাবে দোহাই তোর তুই এমন করিস না।
রোহান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,, ম”রে তো আমার কুহুপাখি ও যেতে পারতো। কিন্তু আল্লাহ্ লাখ লাখ শুকরিয়া ও বেঁচে আছে। রোহান মুনের দিকে তাকিয়ে বললো,, ও ম”র”বে না অক্সিজেন মাস্ক চলছে। শুধু ট্রিটমেন্ট বন্ধ থাকলো ততক্ষণ যতক্ষণ না আমি চোখ নিয়ে আসি কথা টা বলে সবাই কে উপেক্ষা করে চলে যাচ্ছিলো এমন সময় কুহুর মা বলে উঠলো,,, এইটা তোমার কেমন শিক্ষা বাবার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না?
রোহান তাচ্ছিল্য হেঁসে পকেটে হাত গুঁজে বললো আপনার সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই। আপনার সাথে কথা বলতেও রুচিতে বাঁধে ঘৃণা হয় আমার বমি বমি পায় কথাটা বলে সে চলে গেলো।
গাড়ি তে বসে কল বসালো সোহেল কে। রিং হওয়ার সাথে সাথে বললো মামা তুই কই তোরে আমার দরকার।
খালি কইয়া দেখ নিজের জীবন টা পর্যন্ত হাজির করমু।
জীবন লাগবো না চোখ লাগবো। তারপর কুহুর ঘটনা গুলো খুলে বললো। তোর বাড়ির আশেপাশে যতগুলো হসপিটাল আছে খুঁজ নে যদি না পাড়িস তাহলে প্রয়োজন পড়লে জ্যান্ত মানুষের চোখ তুলে নিবো। তবুও আজকের মধ্যে চোখ লাগবে মানে লাগবেই।
আরে চিন্তা করিস না আমি দেখছি। আল্লাহ্ ভরসা।
হুম রব ই ভরসা কথা টা বলে ফোনটা রেখে গাড়ি টা স্টার্ট দিলো। বেশ অনেক দূর একটা হসপিটাল এ যায় রোহান হসপিটাল তারপর হসপিটালের ম্যানেজার সাথে কথা বলে চোখ পেয়ে যায় তাও একটা মেয়ের চোখ। ওই বাড়ির মেয়ে টার সাথে কথা বললে তারা রাজি হয়। মৃ”ত্যু ব্যক্তির চোখ রেখে কি আর বা করবে। শেষে চোখ নিয়ে ফিরে যায়। তবে যথেষ্ট টাকা দিয়ে আসে। দেখেই বুঝা যায় ওই ফ্যামেলি টা সচ্ছল নয়। হাবিজাবি চিন্তা বাঁদ দিয়ে সোহেল কে কল করে বললো আমি হসপিটালে যাচ্ছি তুই ও আয় হসপিটাল এর চোখ পেয়ে গেছি।
আলহামদুলিল্লাহ্।
হুম রবের শুকরিয়া কথাটা বলে ফোনটা কেটে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। খুব স্প্রিডে গাড়ি চালাছে।
অবেশেষে সে পৌঁছায় হসপিটাল এ সবার আগে ডাক্তার এর চেম্বার এর যায় গিয়ে দেখে ডাক্তার নেই ঠান্ডা মেজাজ টা তরতর করে গরম হতে শুরু করলো। নেই মানে কি একটা পেশেন্ট রেখে ওনি বাড়িতে গিয়ে নিশ্চিন্তে কি ভাবে ঘুমাতে পারেন।
খুব জোড় জবরদস্তি করে একটা নার্সের থেকে ডাক্তার এর বাড়ির ঠিকানা টা নিয়ে নেয়। তারপর সে ওটি রেডি করতে বলে চলে যায় ডাক্তার কে আনার উদ্দেশ্যে।
ওইদিকে ডাক্তার কে বলে ও মুনের ট্রিটমেন্ট চালু করা যাচ্ছে না। ডাক্তার রোহানের কথায় ভয় পেয়ে আছে।
মুনের মা বাবা ভাই আর রোহানের বাড়ির সবাই আহাজারি করছে। রোহান শুনেও না শুনার বান করে ওদের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। ওদের আহাজারি ওদের আর্তনাত রোহানের মনে পৈশাচিক আনন্দ দিচ্ছে। রোহান বাকা হেঁসে গাড়ি তে উঠতে নিলে রোহানের বন্ধু সোহেল সেই মূহুর্তে চলে আসে। রোহানের সামনে বাইক টা দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো,, কই যাচ্ছিস?
ডাক্তার কে তুলে আনতে ডাক্তার হসপিটালে নেই বাড়ি গেছে আমি ও যাচ্ছি। তোর বাইক টা দে তোর বাইকে করে যাবো।
ঠিক আছে চল দুইজনেই সাথে যাই।
রোহান বাইক চালাছে আর সোহেল পিছনে বসে আছে। রোহান হাই স্প্রিডে বাইক চালাছে। নার্সের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী ওরা পৌঁছে গেলে ডাক্তার এর বাসায়।
কলিং বেল বাজিয়ে এই যাচ্ছে দরজা খোলার নাম নেই। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে রোহানের। একাধারে কলিং বেল বাজাতে বাজাতে তারপর ডাক্তার হোসেন দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলা পেতে রোহান রুমে ভিতরে ঢুকে ডাক্তার হোসেন এর গেঞ্জির কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,, সাহস কি করে হয় তোর পেশেন্ট ফেলে রেখে বাড়ি তে এসে নিশ্চিন্তে ঘুমাছি।
থতমত খেয়ে গেলো ডাক্তার। তারপর আমতা আমতা করে বললো আপনারা তো আর চোখের ব্যবস্থা করতে পারেন নি তাই আমি আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো সেই জন্য আমি চলে এসেছি। ডাক্তার এর কথাটা বলতে দেরি হলো কিন্তু পর পর দু গালে চড় পড়তে দেরি হলো না। রোহান আর কথা না বাড়িয়ে সোহেল কে বললো ডাক্তার এর ঘাড় টা ধরে নিয়ে যেতে।
সোহেল ও তাই করলো ডাক্তার এর ঘাড় টা ধরে বাহিরে বের করলো তারপর বাইকে উঠালো। সোহেলও তার পিছনে বসলো আর রোহান এসে সামনে বসে বাইক স্টাট দিলো। রোহান পা”গ”লের মতো বাইক চালাছে।
ডাক্তার ভয় পেয়ে বললো ভাই একটু আস্তে চালান।
রোহান বাইক চালাতে চালাতে বললো,,, আমার কাছে এই মূহুর্তে প্রতিটা সেকেন্ড ই মহা মূল্যবান। রাত হলেও রাস্তা যানযট ছিলো তবে অল্প-বিস্তর তাই রোহান রা দ্রুত হসপিটাল এ পৌঁছে গেলো। সোহেল কে বললো,, তুই ডাক্তার কে নিয়ে কেবিন এ আয় আমি আসছি। ৫ নাম্বার কেবিন টা তে যাবি। সোহেল ডাক্তার কে নিয়ে দ্রুত গতিতে হসপিটাল এর ভিতরে ঢুকে লিফটে উঠে বাটন প্রেস করে। খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলো কুহুর কেবিনে। কুহুর কেবিনে ডাক্তার এসে দেখলো কুহু ঘুমাছে। কুহুর পাশে রাখা সুইচ এর চাপ দিতেই একটা নার্স আসলো। ডাক্তার নার্সটিকে বললো চ্যাকআপ এর জিনিস পত্র নিয়ে আসতে। ডাক্তার এর কথা মতো নার্সটি চলে গেলো চ্যাক আপ এর জিনিস আনতে।
রোহান যখন বাইক টা পার্কিং করে আসছিলো করিডর দিয়ে ঠিক সেই সময় দেখতে পেলো তার বাড়ির লোক গুলো দাঁড়িয়ে আছে। রোহানে কে দেখে রোহানের বাবা এগিয়ে এসে বললো,, ওর ট্রিটমেন্ট চালু করতে বল।
অসম্ভব যতক্ষণ না কুহু তার চোখ দিয়ে সব দেখবে ততক্ষণ ওর ট্রিটমেন্ট বন্ধ। কুহু যদি আলো দেখতে না পারে তাহলে মুন ও আর আলো দেখবে না।
এতো পাষণ্ড হলি কবে থেকে?
তোমার ই তো বীজ তোমার মতোই হবো সিম্পল কথাটা বলে সবাই কে তোয়াক্কা না করে সে চলে গেলো কুহুর কেবিনে গিয়ে দেখে কুহুর চ্যাকআপ চলছে। ডাক্তার নার্সটির দিকে তাকিয়ে বললো ওকে রেডি করুন ওকে ও. টি তে নিয়ে যাবো আর ও. টি রেডি করুন।
ও.টি রেডি ই আছে মিস্টার আহাম্মেদ যাওর আগে বলে গিয়েছিলো। একটা নার্স এসে ও. টির ড্রেস দিয়ে গেলো। রোহান কুহুর পাশে বসে বললো,, একদম ভয় পাবি না আমি তোর সাথে থাকবো।
এই কথাটা শুনে উপস্থিত সকলের চোখ বড় বড় হয়ে যায় আর ডাক্তার কিছু বলতে নিলে রোহান চোখের ইশারায় থামিয়ে দেয়। তারপর তার মাকে বলে ওকে রেডি করে আনতে। ওকে নিয়ে ওর মা ওয়াশরুম এ যায়।
ডাক্তার রোহানের দিকে তাকিয়ে বললো,, ও. টির ভিতরে কেবল ডাক্তার,, নার্স আর পেশেন্ট ই থাকতে পারে আপনি তো তিনটা থেকে কোন টাই নন।
রোহান ডাক্তার এর কথা শুনে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে বললো,, সব উল্ট-পাল্ট করে ফেলবো তাও আমি রোহান আহাম্মেদ ওর সাথে ও. টি তে যাবো এম আই ক্লিয়ার।
ডাক্তার ভয়ে কিছু বললো না। ডাক্তার আরেকটা ও. টির ড্রেস এনে দিতো বললো নার্সটিকে। নার্স তাই করলো। ২ মিনিট এর মধ্যে একটা ও. টির ড্রেস এনে দিলো। রোহান কোন বাক্য ছাড়া ই পড়ে নিলো এর মধ্যে কুহুকে রেডি করে নিয়ে আসলো ওর মা। রোহান কুহুর গাল দুটো টেনে দিয়ে বললো চলল দুইজন ও. টি তে যাই ভয় পাচ্ছিস।
কুহু মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো রোহান সবার সামনে কুহুকে কোলে তুলে নিয়ে ও. টির দিকে রওনা দিলো। সবাই অবাক হয়ে রইলো। স্মৃতি ঠোঁট টিপে হাসলো এই সময়ে হাসি টা বেমানান তবুও তার ভাই এর পা”গ”লা”মি দেখে হাসি পেলো।
বাড়ির সব লোক দেখতে পেলো কুহুকে কোলে নিয়ে ও. টির দিকে যাচ্ছে রোহান।
রোহানের পিছন পিছন সোহেল,, রওনক,, স্মৃতি ডাক্তার,, নার্স আর রোহানের মা আসছিলো বাড়ির সবাই কে হসপিটালে দেখে খানিকটা অবাক হলেও পরে আর ওই দিকে মাথা না ঘামিয়ে ও. টির রুমের দিকে গেলো ও. টি র বাহিরে চেয়ার ছিলো ওখানে বসে সবাই অপেক্ষা করছিলো।
——–
ও. টির শেষে কুহুকে বেডে সিফট করা হলো। কুহুর চোখে এখনো ব্যান্ডেজ লাগানো। একটু পরেই ওর ব্যান্ডেজ টা খুলা হবে। ভয় বিরাজ করছে সকলের মনে। রোহান তো মনে মনে রবের নাম নিয়ে যাচ্ছে। ঘন্টাক্ষানিক পর ডাক্তার আসলো কুহুর চোখের ব্যান্ডেজ খুলা হলো তারপর কুহু কে বললো আস্তে আস্তে করে চোখ খুলতে যাতে চোখের উপর কোন প্রেশার না পরে। কুহু তাই করলো আস্তে আস্তে করে চোখ খুললো প্রথমে সবকিছু ঝাপসা দেখছিলো তারপর আবার চোখ বন্ধ করে তারপর আবার খোলল এইবার সবটা ক্লিয়ার দেখতে পাচ্ছে। সবার চোখে মুখে টেনশনের ছাপ দেখা যাচ্ছে। কুহু একটু হেঁসে বললো,, আল্লাহ্ রহমতে আমি সবাইকে দেখতে পারছি।
ও দেখতে পারছে শুনে সবাই একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো। রোহান কুহুকে বললো আমি আমার প্রমিস রেখেছি কুহুপাখি। এইবার তুমি রেস্ট করো আমি একটু আসছি বলে সে চলে গেলো। রোহান তার বাড়ির সামনে এসে বললো,, আপনাদের ভাগ্য ভালো কুহু দেখতে পারছে। সো আপনাদের মেয়ের ও ট্রিটমেন্ট শুরু হবে। ডাক্তার এর সাথে কথা বলে ট্রিটমেন্ট চালু করতে বলো। একপলক ওর দিকে তাকিয়ে দেখলো শরীরে বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট হয়ে আছে। রোহান একটা তৃপ্তি কর হাসি দিলো।
রোহান আবার কুহুর কেবিনে আসলো তারপর বললো তোমরা এখন চলে যাও। ভাই এর গা এর হলুদ এর প্রিপারেশন নেও। গা এর হলুদ ও হবে বিয়ে ও হবে।
কিন্তু কুহু?
কুহুকে রিলিজ নিয়ে আমি নিয়ে আসবো। যাও তোমরা। রোহান রওনক এর সামনে গিয়ে বললো যাও একটু ঘুমিয়ে নেও। তারপর আর পারবে না পরে তো আবার রিচুয়েল শুরু হবে। যাও।
রোহানের কথা মতো ওরা চলে গেলো। স্মৃতি থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু ওকে থাকতে দেয়নি রোহান পাঠিয়ে দিলো ওদের সাথে।
রোহান এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তার ঘুমন্ত পরীর দিকে। রোহান কুহুর হাত টা ধরে বললো,,
❝ যত দেখি তোর এই মুখ
মনে যাকে প্রশান্তি
কেটে যায় ক্লান্তি ❞
বুঝলি তো কুহুরানী তুই আর আমি সেই ছোট বেলা থেকে একই বন্ধনে বাঁধা পড়ে গেছি। সময় হলে তোকে জানাবো। ঘুমন্ত অবস্থায় কুহুর কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। ঘুমের মধ্যে ই কুহু খানিকটা কেঁপে উঠলো। রোহান ঠোঁট কামড়ে হেঁসে উঠলো। আমার কুহু।
বেলায় দশটায় হসপিটাল থেকে রিলিজ নিয়ে কুহুকে নিয়ে বের হলো বাড়ি যাওয়ার জন্য। রোহান আস্তে ধীরে গাড়ি চালাছে যাতে কুহুর কোন প্রকার অসুবিধা না হয়।
রাস্তায় যামে আটকালো ১ ঘন্টার মতো। তারপর আবার ঘাড়ি স্টার্ট দিলো। রোহান দেখলো কুহু ঘুমে মগ্ন তাই কুহু কে আর ডাকলো না। ডাক্তার অনেক নিয়ম দিয়েছে এক মাসের মতো। সেই নিয়ম গুলো মেনে চলতে হবে কুহু কে। রোহানের গাড়ি টা এসে থামলো বাড়ির বাগানে। রোহান গাড়ি থেকে নেমে তারপর কুহুকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে গেলো। রোহান তার মাকে বললো,, ও তো ঘুমিয়ে গেছে ওকে আমার রুমে নিয়ে যাই।
রোহানে মা মাথা টা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো রোহান খুব সাবধানে সিঁড়ি পেড়িয়ে ওর রুমে ঢুকে কুহুকে শুইয়ে দিয়ে ওর উপর কম্বল মুড়ি দিয়ে দিলো। তারপর রোহান ও গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে কুহুর পাশে শুয়ে পড়লো। মাথা টা ব্যাথায় টনটন করছে এখন না ঘুমালেই নয় তাই ঘুমিয়ে গেলো।
একই বন্ধনে বাঁধা দুজনে
পর্বঃ-০৫
কুহু ঘুম থেকে উঠে নিজেকে রোহানের ঘরে দেখে বেশ অবাক হলো। রোহান তখন সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।
রোহান কুহুর দিকে না তাকিয়ে বললো,,, উঠেছিস তুই?
হুম। কিন্তু আমি এই রুমে কেনো?
তুই এতো বোকা কেনো আমি তোকে নিয়ে এসেছি।
কখন আসলাম?
তিন ঘন্টা হলো। নে এইবার উঠ ফ্রেশ হয়ে নে। আর শুন বাথরুমে গ্লিজার আছে অন করে নিবি।
আমি আমার রুমে যাবো।
তুই তোর রুমে ই আছিস আর একটা বেশি কথা বললে চড়িয়ে সিঁধে করে দিবো। বেডের এক পাশে যত্ন করে রাখা আছে এক সেট কাপড়। নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। আমি স্মৃতি কে বলছি খাবার দিয়ে যেতে।
কুহু জামা নিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো।
রোহান দুই তিন বার স্মৃতি বলে ডাকতে ই স্মৃতি এসে বললো,, কি হয়েছে?
তোর আপুমনি উঠেছে ফ্রেশ হতে গেছে চট-জলদি খাবার নিয়ে আসবি। দুটো করে মাছ আনবি। তরকারি বেশি আনবি আর ভাত টা বেশি দিবি। গরু মাংস দিবি না মুরগী দিবি গরুতে এলার্জি আছে গো ফার্স্ট।
স্মৃতি নিচে গেলো খাবার আনতে।
যতক্ষণ না কুহু বের হচ্ছে ততক্ষণ রোহানের মন টা উসখুস করছে। রোহানের অপেক্ষা অবসান ঘটিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো কুহু। ভিজা চুল গুলো থেকে পানি ঝড়ছে। রোহানের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো অবস্থা। নারীর রূপ সত্যি ই ভয়ংকর। রোহান আজ সেইটা টের পাচ্ছে। রোহান বিরবির করে বলতে লাগলো,,, এই মেয়ে টা তো আমাকে শান্তি তে ও থাকতে দিবে না দেখছি কি মুসিবত রে। উফ্ফ এই যে আমার যে এখন জামাই জামাই ফিল হচ্ছে। এখন কি হবে। এই মেয়েটা আমাকে শুধু জ্বালাছে। সব ঠিক হোক তারপর আমাকে জ্বালানোর দিগুণ শাস্তি যদি আমি তোমাকে না দিয়েছি কুহুরানী তাহলে আমি রোহান আহাম্মেদ ই না।
রোহানের ফিলিং এর মধ্যে একটা বালতি পানি ঢেলে দিলো তার ছোট বোন টা এসে। কি জ্বালা।
রোহান কুহুকে ডাক দিয়ে বললো,, কুহু বেলকনি থেকে ভিতর আয় স্মৃতি খাবার এনেছে।
টেবিলের উপর খাবার টা রেখে স্মৃতি চলে গেলো।
কুহু বেলকনি থেকে এসে চেয়ার টেনে বসে খাবারের উপর থেকে ঢাকনাটা খুলতেই ৪৪০ ভোল্টেজ এর ঝটকা খেলো খাবারের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
ওর তাকানো দেখে রোহানের হাসি পাচ্ছে কিন্তু রোহান না হেঁসে গম্ভীর কন্ঠে বললো,,, খাবার আনিয়েছি খাওয়ার জন্য দেখার জন্য না। দয়া করে খাবারের প্রতি নজর না দিয়ে খাবার টা গিলে আমারে উদ্ধার করেন মহারানী।
কুহু রোহানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,, এতো খেতে পারবো না।
সমস্যা নেই গরুর খুঞা দিয়ে গুঁতিয়ে তোর মুখে খাবার দিবো।
চোখ বড় বড় করে রোহানের দিকে তাকাতেই রোহান বললো তোর তো খুব সাহস বেড়ে যাচ্ছে। আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাস চোখ খুলে হাত ধরিয়ে দিবো।
ইশ্ সবে মাত্র নতুন চোখ পেলাম আর আপনি তুলে নিবেন এইটা ভারি অন্যায়।
তুই ন্যায় – অন্যায় বুঝিছ। যদি বুঝতি তোর সাথে হয়ে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করতিস চুপ করে মুখ বুঁজে থাকতিস না। নে এইবার খেয়ে নে। সব টা খাবি একটা যোনো বাদ না যায় আমি এইখানেই বসে আছি।
এতো খেতে পারবো না।
শরীরে এক ফোঁটা ও শক্তি নেই শরীরে রক্ত শূন্য তা আর সে কিনা খেতে পারবে না চুপচাপ খেয়ে নে আমি কোন কথা শুনতে চাই না। নো মোর ওর্য়াডস।
কুহু মুখ ভোঁতা করে চুপচাপ খেয়ে নিছি। খেতে পারছে না তবুও রোহানের ভয়ে খেয়ে নিচ্ছে। খাওয়া শেষ হতে রোহান তাকে ওষুধ খাইয়ে চোখে ড্রপ দিয়ে দিলো।
কুহু ঘর থেকে বের হতে নিলে রোহান বললো,, কই যাস?
আমার রুমে।
আমি যেতে বলেছি। চুপচাপ আমার বেডে গিয়ে শুয়ে পড়। নাইলে ঢেং ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিছানায় পুতুল এর মতো বসিয়ে রাখবো।
কুহুর শরীরে ওতো এনার্জি নেই এই লোকটার সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হবে তাই সে কম্বল গা দিয়ে শুয়ে পড়লো।
কুহুর কৃতি দেখে রোহান ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠলো। আপসোস কুহু দেখতে পেলো না। নয়তো বলতো ছেলেরাও এতো সুন্দর করে হাসতে পারে আমার জানা ছিলো না। রোহান এঁটো প্লেট গুলো নিয়ে নিচে নেমে গেলো। তারপর সেইগুলো কিচেন এ রেখে দিয়ে তার মা এর পাশে বসে পড়লো।
কি হয়েছে কি ভাবছো?
তুই যে মুন কে মা”র”লি এর যে কি প্রভাব ফেলবে সেইটা ই ভাবছি।
আরে এতো ভাবছো কেনো? আমি আছি তো সব সামলে নিবো।
হুম আসছে আমাদের নায়ক।
পাশ থেকে স্মৃতি বলে উঠলো মা ভুল বলছো আপুমনির নায়ক হবে। তাই না রে ভাইয়া।
মা তোমার মেয়ে টা দিন পেকে যাচ্ছে। ওকে শাসন করো। নয়তো আমাদে ঝামেলা হবে।
স্মৃতি মুখ ভেংচি দিলো।
মা ভাইয়া কোথায়?
কোথায় আর ঘুমাচ্ছে কেনো রে দরকার?
না দরকার না এসেছি পর থেকে দেখলাম না তাই জিজ্ঞেস করছি।
ওহ্।
কুহু কোথায় রে কি করছে?
কি আর করবে ঘুমাচ্ছে। আমার রুমে ই থাকতে বলেছি।
ভালো করেছিস। ওদের কোন খবর জানিস?
না আমার এতো তেল নাই ওদের পিছনে খরচ করার। ওরা যেইখানে খুশি সেইখানে যাক আমার চিন্তা করার বিষয় ও না আমার ভাবার বিষয় ও না। আমার চিন্তা কুহু কে নিয়ে। ও ঠিক তো আমার জগৎ ঠিক।
মা আমি একটু বের হবো। কুহুকে দেখে রেখো। আমি চলে আসবো। খুব দরকার তাই যাচ্ছি।
আচ্ছা যা সাবধানে যাবি। আর তাড়াতাড়ি আসবি।
অবশ্যই রোহান চলে গেলো তার রুমে। রেডি হয়ে কুহুর উপর ভালো করে কম্বল টা টেনে দিয়ে কপালের সাথে কপাল টা ঠেকিয়ে নাকের সাথে নাক ঘষে তারপর রুম থেকে বের হয়ে গেলো। বের হওয়ার সময় মনে হচ্ছিল সে তার আত্মা টা ফেলে যাচ্ছে। তবুও যেতে হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ নয়তো সে কখনোই যেতো না।
সে চলে গেলো।
——
বিলাসবহুল রেস্তোরাঁর কেবিনে বসে মিটিং করছে রোহান। দেখেই মনে হচ্ছে কোন গোপন মিটিং। রোহান ফাইল টা মনযোগ সহকারে দেখছে। ফাইল টা দেখে শেষ করে রোহান টেবিলের একটা কোনে ফাইল টা রেখে ওদের দিকে সরাসরি চোখে চোখ রেখে বলতে লাগলো,,ওয়েল মিস্টার সেন এইটা যেহেতু এপার আর ওপার বাংলা সমস্যা তাহলে আমাদের কে মিলেমিশে কাজ করতে হবে বুঝতে পেরেছেন।
জ্বী মিস্টার আহাম্মেদ। আমি আমার লোকদের সব বলে দিবো সমস্যা নেই।
আচ্ছা তাহলে আমার কাজ শেষ আমার দিক থেকে ও আপনি ফুল সার্পোট পাবেন আপনাকে হতাশ করবো না। আমি চার দিন পর থেকে কাজে লেগে পড়বো।
অকে আমার কোন সমস্যা নেই।
তাহলে আমি এখন উঠছি বলে চলে যেতে নিলে মিস্টার সেন বলে উঠলো আরে মিস্টার আহাম্মেদ লাঞ্চ টা করে যান।
উঁহুম সম্ভব না ঘরে আমার বিবিজান অপেক্ষা করছে। আর ও আমার সবার আগে।
খুব ভালোবাসেন বুঝি?
অসম্ভব ভালোবাসি।
আসছি বলে ফাইল টা নিয়ে চলে গেলো। গাড়ি তে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। বেশ কিছুদূর গিয়ে একটা ফুলের দোকানে গাড়ি টা থামালো। তারপর ফুলের মালার দুটো সেট নিলো। তারপর আবার গাড়ি টা সার্স্টা দিলো গাড়ি টা একটা সামনের গ্রেসারির শপের সামনে দাঁড় করিয়ে বেশ কিছু চিপস,, জুস,, চকলেট,, বিস্কুট,, নুডলস কিনে নিয়ে গেলো। গাড়ি টা স্টার্ট দিলো।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। যত দ্রুত বাড়ি যাওয়া যায়। কুহু কে দেখার জন্য মন টা অস্থির হয়ে আছে। ইশ্ এখনো কি ঘুমাছে ও মনে হয় তো। নিজের মনে নিজেই প্রশ্ন করছে আবার নিজেই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে।
—–
নিজের রুমে এসে দেখে কুহু এখনো ঘুমাচ্ছে। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। যাক পা”গ”লি”টা তবে এখনো ঘুমাচ্ছে। দুপুর তো হয়ে গেছে এখনো ঘুমানোর কারন কি? আচ্ছা ঘুমাগ আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নেই তারপর ওকে উঠাবো। স্মৃতি এই স্মৃতি এই দিকে আয় তো একটু শুনে যা। ভাই এর ডাক শুনে স্মৃতি রুমে আসলো,,, বলো ভাইয়া ডাকছিলে।
হুম ডাকছিলাম। এই প্যাকেট চিপস,, জুস,, আর বিস্কুট আছে তোর রুমে বৈয়াম এর ভিতর রেখে দিবি আর এইটা তোর আপুমনির জন্য এইটা সুন্দর করে একটুগুছিয়ে রেখে দিস। আর এইখানে একটা ফুলের সেট আছে এইটা তোর জন্য ভাই এর হলুদে পড়বি।
কিন্তু ভাইয়া আদোও কি হলুদ হবে। বাড়ির কেউ তো বাড়িতে নেই।
যারা নেই তো নেই তাদের নিয়ে ভেবে লাভ নেই। আর বিয়ে টা একটা মেয়ের স্বপ্ন এখন যদি এই স্বপ্ন টা অন্য কারও দোষে ভেঙ্গে যায় কষ্ট হবে না।
কিন্তু বাবা না কি ফোনে করে বলে দিয়েছে বিয়ে টা পিছাতে।
না আমি ফোন করে বলে দিবো ঘরোয়া ভাবে হবে। ভাই এর গা এ হলুদে আমার ফ্রেন্ড আর ভাই এর ফ্রেন্ড থাকবে আমি,, তুই,, কুহু আর মা ব্যাস আর কি চায়? কারা থাকবে না এটা নিয়ে ভাববি না। আর শুন এইটা তে এক প্যাকেট নুডলস আছে এইটা ও কুহুর ঘরে রেখে দিবি তোরা যখন রাখে মুভির প্ল্যান করবি তখন বানিয়ে খেতে পারবি। আমি ইন্ড্রেকশন কুকার এনে দিবো পরে।
স্মৃতি খুশি তে তার ভাই কে জড়িয়ে ধরে বললো,, থ্যাংকস ভাইয়া।
হয়েছে এইবার ছাড় আমি ফ্রেশ হয়ে নেই।
স্মৃতি তার ভাইকে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো হাতে শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে।
রোহান আলমারি থেকে ড্রেস টা নিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে কুহুকে ডেকে তুলে তারপর ফ্রেশ হতে পাঠালো। কুহু আসতেই কুহুকে নিয়ে নিচে নামলো। কুহু তার খালামনির পাশে বসলো। রওনক কুহুর মাথায় হাত রেখে বললো,, কি রে বুড়ি কেমন আছিস??
আলহামদুলিল্লাহ।
রোহান তার মা কে বললো মা এই দিকে আসো একটু। রোহানের ডাকে তিনি বসা থেকে উঠে টেবিলের কোনায় গিয়ে দাঁড়ালে রোহান তার মা কে বললো,,, মা পাত্রীর বাড়িতে ফোন করে বললো বিয়ে টা যথা সময়ে হবে। আর আজ হলুদ সন্ধ্যা টা ও হবে।
একজনের ভুলের দশজনের সাফার করার কোন মানে হয় না।
রোহান আর একটা কথা শুন?
কি কথা?
তোর মামার আজ আসবেন সন্ধ্যায়।
তো..!
কুহুকে দূরে দূরে রাখিস। মামী তো আর ভালো না ওই বাড়িতে থাকাকালীন মেয়েটার উপর অনেক টর্চার করেছে তাই তো ওকে নিয়ে আসা।
ঠিক আছে চিন্তা করো না সামলে নিবো। এখন আমাদের খাবার দেও ক্ষিধে পেয়েছে।
ঠিক আছে আয় বস তোরা।
রোহান চেয়ার টেনে বসে সবাইকে ডাক দিলো তারপর সবাই বসে পড়লো খাওয়া জন্য।
——-
হসপিটালে বসে সবাই অপেক্ষা করছে কখন মুন ঠিক হবে। এমনিতে জ্ঞান ফিরলেও শরীরে ব্যাথা আছে। ব্যাথা থাকার ও কথা শরীরে যে ঠান্ডা পানিতে চাবুক টা দিয়ে মে”রেছ।
রোহানের ফুফু আর ফুফুর দুই ছেলে বসে বসে রাগে ফুঁসছে। যেইভাবেই হোক রোহানের ক্ষতি ওরা করে ই ছাড়বে। রোহানের জন্য আজ ওর বোন টা হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। এই সুদ তো তুলবে ই। সুলতানা সিকদার রোহানের বাবা আর চাচার সামনে এসে বললো,,, এইভাবে চলতে থাকলে রোহান আমাদের জন্য একটা থ্রে”ট হয়ে দাঁড়াবে আপনি বুঝতে পারছেন তো ভাইয়া।
হুম খু্ব বুঝতে পারছি।
তাহলে আমাদের উচিৎ ওর লাগাম টা শক্ত হাতে টেনে ধরা।
আগে মুন সুস্থ হোক তারপর দেখি কি করা যায়।
মেয়েটা কে কিভাবে মা”র”লো ভাবলে ই আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
যতই হোক বংশ তো কথা বলবেই তাই না। জমিদার বংশের রক্ত বলে কথা গরম তো থাকবে ই।
তাহলে তুমি কি ভুলে যাচ্ছো ভাইয়া সেই একই জমিদার বংশের মেয়ে আমিও তোমার ছেলে কে এর মূল্য দিতে হবে কঠিন মূল্য দিতে হবে। সাপের লেজে পা দিয়েছে তখন ছোঁবল টা তো খেতে হবে ই কথাটা বলে রাগে ফুঁস ফুঁস করছে রোহানের ফুফু।
—–
কুহু এখন তার নিজের রুমে অনেক কষ্টে সে তার রুমে এসেছে যেনো যুদ্ধ জয় করে আছে। ড্রয়ার টা খুলে ফোনটা হাতে নিলো ফোনটা হাতে নিয়ে হতাশ হলো অবহেলায় ফোনটা চার্জেহীন অবস্থায় পরে আছে। ড্রয়ার থেকে চার্জার টা নিয়ে ফোনটা চার্জে দিলো। তারপর সে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। বাহির টা অনেক সুন্দর সাজানো হয়েছে। কুহু হঠাৎ করে গেটের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে এসে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বাবা বাবা বলে ডাকছে। আর লোকটি ও মেয়েটি কে পরম আদরে যত্নে নিজের কাছে নিলো। আজ যদি কুহুর বাবা ও বেঁচে থাকতো তাহলে কুহুকে ও তো আদর করতো। ওর মাথার উপর ভরসার একটা হাত থাকতো। ছায়া থাকতো। আজ তার বাবা নেই বলে সে অবহেলার পাত্রী আর মা সে তো থেকে ও নেই। সে তার নতুন জীবন টা নিয়ে খুব হ্যাপি আছে। মাঝখানে খড়কুটোর মতো ভেসে বেড়াচ্ছে কুহু। যদি কুহু জানতো কেউ একজন আছে তাকে পাগলের মতো করে ভালোবাসে তাহলে কুহু এইটা ভাবতে ও পারতো না।
এক জোড়া দৃষ্টি যে তাকে প্রতিনিয়ত নজরে রাখছে সেইটা তো আর জানে না।
কুহু ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বারান্দা থেকে রুমে এসে রুমের সব দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়ে একদম অন্ধকার করে দিয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়। ও ঘুমিয়ে পড়তেই রোহান কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,, তুই একা নস কুহুপাখি আমি আছি তো তোর পাশে অন্ধকারে আলো আর আলো তে তোর ছায়া হয়ে। আমার দু বাহু টা মেলে দিয়ে তোকে জড়িয়ে নিবো। তোর পিছু আমি ছাড়বো না কথা টা বলে কুহুর কপালে চুম্বন করে চলে যায়। সামনে ওর অনেক কাজ আছে।
যথারীতিতে শুরু হলো গা এর হলুদ এর অনুষ্ঠান। কুহু খু্ব সুন্দর করে হলুদ শাড়ী পড়েছে কোন সাজ গুজ নেই শুধু ফুলের গহনা আর ঠোঁট এ লিপস্টিক। কপালে এখনো ব্যান্ডেজ। রোহান কুহুর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সবার আগে সে কুহু কে দেখবে এবং সাথে করে নিয়ে যাবে। কুহু রেডি হয়ে দরজা টা খুলে রোহান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থতমত খেয়ে গেলো। কুহু রোহানের দিকে তাকিয়ে আছে রোহানের চোখে চোখ রাখলো এই প্রথমবার রোহানের চোখে ছিলো অন্য কিছু। সেই নেশাক্ত চোখ দুটো যেনো কুহু কে কিছু বলছে। এই চোখে তাকিয়ে থাকার সাধ্য কুহুর নেই। কুহু সর্বাঙ্গে যেনো কাঁটা দিয়ে উঠলো। কুহুর বুক টা ও কেমন করে উঠলো এক মূহুর্তে মনে হতে লাগলো সে হার্টের রুগী। দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলো।
রোহান বলে উঠলো মাশা-আল্লাহ। পকেট এ হাত দিয়ে পাঁচ হাজার টাকা বের করে কুহুর হাতে দিয়ে বললো,, আমি মুগ্ধ হয়ে আমি খুশি হয়ে তোকে দিলাম।
কুহু হাত সড়িয়ে নিতে নিলে। রোহান চোখ পাকিয়ে তাকায়। রোহান কে চোখ পাকিয়ে তাকাতে দেখে আর কিছু বললো না। রোহান কুহুর নরম তুলতুলে হাত টা তার হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো চল একসাথে যাই।
আমি একা হাটতে পারবো।
তুই বেশি কথা বলিস তোর ঠোঁঠ দুটো আমি সিলাই করে দিবো বুঝলি। নে চল সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
ওরা চলে এলো বাগানের মধ্যে। বাগানের একটা পাশে সুন্দর করে স্টেজ সাজানো হয়েছে। কুহু দেখতে পেলো তার মামা মামী আর মামাতো ভাই এসেছে। মামীকে দেখে কেমন যেনো গুটিয়ে গেলো কুহু। রোহান কুহুকে এমন গুটিয়ে দেখতে বললো,, ভয় পাওয়ার কি আছে বাঘ না ভাল্লুক যে তোকে গিলে খাবে। যা গিয়ে ভাই এর পাশে বস আমি আসছি কথাটা বলে রোহান গেটের দিকে গেলো কুহু গিয়ে তার ভাই এর পাশে বসলো।
রওনক বিনিময়ে হাসলো।
স্মৃতি কুহুকে বললো,, আপুমনি তোমাকে অনেক সুন্দর দেখা যাচ্ছে।
কি যে বলো,, আমি তো সাজি নি তাহলে সুন্দর কি করে লাগবে?
তুমি নেচারাল সুন্দর। তাই তোমাকে কোন কিছু ইউজ করতে হয় না।
কুহু মিষ্টি একটা হাসি দিলো।
রোহানের গেটের সামনে আসার কারন সে দেখতে পেয়েছে তার বাপ,, চাচা,,চাচি,,চাচাতো বোন,, খালা,, সৎ খালু হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরছে তাই গেটের সামনে এসে দাঁড়ানো কাঁটা গা এ নুনেরছিটে দেওয়ার জন্য।
রোহানের বাবা রোহানকে দেখে বললো,,, গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
কেনো আবার আপনাদের ওয়েলকাম করতে। তা অটোতে আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো।
বেয়াদব ছেলে এইসব তোর কাছ।
আরে কুল কুল মিস্টার আহাম্মেদ এতো হাইপার হওয়ার কি আছে। বেশি হাইপার হলে আপনার প্রেশার টা না আবার বেড়ে যাবে।
ওর সাথে আর কথা না বাড়িয়ে ওরা গেট টা পেরিয়ে বাড়ির ভিতরে গেলো ফ্রেশ হওয়া দরকার।
রোহান ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। ও ফোন করে সোহেল কে বলেছিলো কিছু লোক পাঠাতে আর ওদের বাড়ির গাড়ির সকল চাক্কা যেনো খুলে নেয়। ব্যাস খুলে নিলো তার কথা মতো। এই আর কি।
রোহান গেট থেকে স্টেজ এসে দাঁড়িয়ে তার মাকে বললো হলুদ অনুষ্ঠান শুরু করতে। রোহানের মা ও তাই করলো রওনকের গালে হলুদ ছোঁয়ালো।
তারপর ছোঁয়ালো ওদের মামা আর মামী। তারপর ছোঁয়া স্মৃতি তারপর কুহু তারপর রোহান। এখন আসবে রওনকের বন্ধুরা।
রোহান কুহুর পাশে বসে বাটি থেকে হলুদ টা নিয়ে প্রথম সে তার গালে ছোঁয়ালো তারপর সেইখান থেকে অল্প একটু হলুদ নিয়ে কুহুর কোমরের সাইড থেকে একটু শাড়িটা সড়িয়ে সে কুহুর কোমরে লেপে দিলো হঠাৎ রোহানের এই স্পর্শে কুহুর শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে পুরো শরীরটা কেঁপে উঠলো মৃগী রোগীদের মতো। কুহু সরে যেতে নিলো রোহান বললো,, একদম মেরে ফেলবো আমার থেকে দূরে সড়বি না এইখানেই থাক।
কুহুর গালে নিজের গালটা ঘষা দিয়ে ওর গাল থেকে কুহুর গালে হলুদ দিলো। স্মৃতি এই মোমেন্ট টা মিস করতে চায় না তাই সবার অলোকে ফোনে ক্যাপচার করে নিলো।
এখন সবাই রওনকের বন্ধুরা আর রোহানের বন্ধুরা সবাই রোহান কে আবার চেপে ধরে বললো গান শুনাতে। রোহান কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো,, কি রে গাইবো?
সবার সামনে এইরকম কান্ডে কুহু লজ্জায় মাথায় নিচু করে রেখেছে। রোহান উচ্চস্বরে গা কাঁপিয়ে হেসে উঠলো। কুহুর ও কিন্তু গানের কন্ঠ বেশ ভালো আমি চাই ওও আমার সাথে গাক।
সবার জড়াজড়িতে কুহুও বাধ্য হলো গান গাইতে।
রোহান গিটার হাতে নিয়ে টুংটাং করে বাজাছে,,
মাইক এর সামনে চেয়ার দুটো চেয়ারে বসে আছে কুহু আর রোহান।
তুমি হৃদয়ের আয়না
তুমি চাঁদের জোছনা নও
তুমি ফুলের উপমা নও
তুমি চাঁদের জোছনা নও
ফুলের উপমা নও
নও কোন পাহাড়ি ঝর্ণা
আয়না…….
তুমি হৃদয়ের আয়না
তুমি সাগর নীলিমা নও
তুমি মেঘের বরষা নও
তুমি সাগর নীলিমা নও
মেঘের বরষা নও
তুমি শুধু আমারই গয়না
আয়না…….
আমি হৃদয়ের আয়না
কবির লেখা যত কবিতা
শিল্পীর আঁকা যত ছবি
তোমার তুমির কাছে
হার মেনে যায় যেন সবই
সাঁঝের বেলা রাঙ্গানো তুলি
বর্ষাকালের ভরা নদী
তোমার রূপের কাছে
হার মেনে যায় যেন সবই
তুমি সাগর নীলিমা নও
তুমি মেঘের বরষা নও
তুমি সাগর নীলিমা নও
মেঘের বরষা নও
তুমি শুধু আমারই গয়না
আয়না…..
আমি হৃদয়ের আয়না
বাবুই পাখির সাজানো বাসা
ময়না পাখির কথাগুলো
তোমার গুণের কাছে
সবকিছু হার মেনে গেলো
ভালবাসার রূপালী তারা
সূর্যের মাঝে যত আলো
তোমার প্রেমের কাছে
সবকিছু হার মেনে গেলো
তুমি চাঁদের জোছনা নও
তুমি ফুলের উপমা নও
তুমি চাঁদের জোছনা নও
ফুলের উপমা নও
নও কোন পাহাড়ি ঝর্ণা
আয়না…….
তুমি হৃদয়ের আয়না
আমি হৃদয়ের আয়না
তুমি হৃদয়ের আয়না
আমি হৃদয়ের আয়না..
দূর থেকে ওদের খুশিটা দেখে কেউ জ্বলে উঠছে। মনে হচ্ছে এখনি কুহুকে মে”রে পেললে শান্তি পাবে।
একই বন্ধনে বাঁধা দুজনে
পর্বঃ-০৬
আজ শুক্রবার পবিত্র জুম্মার দিন। জুম্মার নামাজ এর শেষে বিয়ে হবে রওনক আর শ্রাবনীর। খুব ধুমধামে বিয়ে টা হবে না। হবে শুধু ঘরোয়া ভাবে। কুহু খুব সুন্দর করে সেজে ঘর থেকে বের হতে মৌ এর সাথে দেখা হলো। মৌ কোন কিছু বললো না উল্টো দেখে ও না দেখার ভান করে চলে গেলো।
কুহু ভাবছে ওর হলো টা কী? কুহু দাঁড়িয়ে থাকতে স্মৃতি কুহুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,, আপুমনি আমার ওড়নাতে পিন আপ করে দিবে আমি পারছি না।
কুহু ক্ষানিকটা হেঁসে বললো,,, তুমি শুধু হাতে পা এই বড়ো হয়েছে এখনো বাচ্চা টি ই আছো।
পিছন থেকে রোহান বলে উঠলো বুঝলি স্মৃতি আমাদের কুহু অনেক বড়ো হয়ে গেছে ও একটা বাচ্চা মা।
কুহু বুঝে পায় না এই ছেলেটার সমস্যা কি সবসময় কুহুর দোষ ধরে।
তা কুহু ম্যাডাম আপনার বয়স কত?
১৮
বাহ্ খুব ভালো এই ১৮ বয়সে আপনার মনে হয় আপনি অনেক বড় হয়ে গেছেন। আমার তো মনে হয় নাক টিপ দিলে এখন দুধ বের হবে।
ওদের কথার মাঝে রওনক উপস্থিত হয়ে পড়লো। রওনক বললো,, প্লিজ রোহান দয়া করে ওর পিছন লাগিস না। ওকে ওর মতো থাকতে দে।
সমস্যা কি ভাই তোমার? আজ কিন্তু তোমার বাসর রাত। মনে রেখে আমি যদি একবার তোমার প্রতি রেগে যাই তাহলে তোমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মুখ টা আর দেখা হবে না।
থতমত খেলো রওনক।
রোহানের মুখে এইরকম কথা শুনে লজ্জায় কান গরম হয়ে গেলো। আর স্মৃতি ওতো মাথা নিচু করে ঠোঁট টিপে আসছে।
ছোট বোনদের সামনে এহেন কথায় চরম অস্তিত্বে বললো তাড়াতাড়ি আয় নামাজ পড়ে যেতে হবে ও বাড়িতে।
রোহান বললো,,, ইশ্ ভাইয়া তোমার তো আর তড় সইছে না।
বেশরম। এক মাঘে শীত যায় না আমার দিন আসবে রেডি থাকিস।
রোহান বললো,, সে দেখা যাবে।
বাড়ির সব পুরুষ গুলো মিলে নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে রোহানের। রোহান সিঁড়ি দিয়ে নামতেই রোহানের বাবা বললো আসছে আমাদের রাজপুত্র।
নিঃসন্দেহে আমি রাজপুত্র ই। তা নামাজে যাচ্ছেন পবিত্র মন নিয়ে যান আর আল্লাহ্ কে বলুন আপনার সকল পাপের জন্য আপনাকে যেনো ক্ষমা করে দেয়। আচ্ছা এমন কলুষিত হৃদয় নিয়ে আল্লাহ্ দরবারে কিভাবে যাবেন আপনার হৃদয় কাঁপবে হৃদয়ে ভয় জড়ো হবে না। আপনার এই অপবিত্র হাত দিয়ে আল্লাহ্ জিনিস ছুঁইবেন আপনার এই পাপিষ্ঠ হাত টা কেঁপে উঠবে না।
তুমি এইবার বেশি বেশি করছো ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার পিতা হই।
ওখানেই আমার কষ্ট আপনাকে নিজের পিতা বলে পরিচয় দিতে আমার ঘৃনা লাগে পারলে তো পাপীর রক্ত মুছে দিতাম। কিন্তু সমস্যা নেই পাপের রক্ত ই পাপ কে বিনাশ করবে আপনি তৈরি হন বিনাশের সুর বাজছে বৈকি।
আহ্ রোহান কি শুরু করলি ভাই চল তো নামাজে যাই কথা টা বলে রওনক রোহান কে টেনে নিয়ে গেলো।
ওরা মসজিদ এ আসলো। মসজিদের হুজুরে পিছনে হাজারো মানুষের সাথে দাঁড়ালো নামাজ আদায় করতে। একমাত্র এই একটা জায়গায় কোন ভেদাভেদ নেই। সকল শ্রেনীর মানুষ সমান। দুনিয়া টা তে মাত্র দুই দিনের আজ আছে কাল নেই তাও মানুষের মনে খোদা ভীতি তৈরি হয় না। মানুষ শয়তানের প্রবচলায় জড়িয়ে পরে হাজারও পাপে। আল্লাহ্ সকলকে হেদায়েত দান করুক এইটাই আমাদের চাওয়া এইটাই চাওয়া।
প্রশান্তি মনে বের হলো রোহান। দুই ভাই হেঁসে হেঁসে কথা বলতে বলতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে মসজিদ বেশি দূর নয় মাত্র ১০ মিনিট এর রাস্তা।
অবশেষে বাড়ি এসে গম্ভীর পরিবেশ দেখতে পেলো। রোহানের চাচির সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে কুহু। রোহানের চাচি কুহুর দিকে আঙুল তাক করে চোখ পাকিয়ে বললো,,, কাক কখনো ময়ূর হয়না কাক কাকই থাকে।
রোহান বেশ গম্ভীর কন্ঠে বললো তাই না কি চাচি কুহু কাক হলে আপনি কি? কুহু তো রূপে গুনে গুণবতী কিন্তু আপনি? আপনার না আছে গুণ আর না আছে রূপ। বুঝলাম না চাচা আপনাকে কি দেখে পছন্দ করেছে?
রোহান তুমি কার সাথে কাকে মিলাছো বলো তো? কোথায় ও আর কোথায় আমি?
ওর জুতার যোগ্য ও না।
এক ঘর ভর্তি মানুষের সামনে এমন কথা টা শুনে অপমানে গা টা রিরি করে উঠলো। তিনি আর কিছু না বলে যেতে নিলে রোহান খুব সর্তক পূর্ণ সাথে তার ডান পা টা একটু এগিয়ে দিতে তিনি হোঁচট খেয়ে পরে গেলো আর পরলো তো পরলো তাও কুহুর পা এর সামনে।
কুহু ওনাকে ধরে তুলতে নিলে রোহান চোখ গরম করে বললো খবর দার কুহু ভুলে ও এই দজ্জাল মহিলা কে তুই ছুঁবি না। যার যার কর্ম ফল সে সে ভোগ করবে। ওনি একাই উঠে যাবে। যা রেডি হওয়ার কিছু বাকি থাকলে হয়ে নেয় আমরা এখনি বের হবো।
কুহু আর কিছু না বলে রোহান কে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে রোহান স্লো ভয়েস এ বললো,, শাড়ি পড়েছিস ভালো কথা বাট শাড়ির ব্যাধ করে যেনো শরীরের একটা পার্ট ও দেখা না যায়। যদি দেখা যায় তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। আর আর একটা কথা তোকে যেনো কোন ছেলের আশে-পাশে বা ছেলেদের সাথে কথা বলতে না দেখি। ১০০ হাত দূরে থাকবি যদি দেখি তাহলে কিন্তু তোকে আমার ক্রোধের আগুনে পুড়িয়ে মা”র”বো। কথা টা তো মাথায় ঢুকিয়ে নিস বলেই চলে গেলো।
কুহু চোখ বড় বড় তাকিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো,, ও আল্লাহ্ গো কি তেজ। কিভাবে শীতল গলায় থ্রে”ট দিয়ে গেলো।
——————-
সোফায় বসে আছে সবাই আবার কিছু সংখ্যক লোক চেয়ারে বসে আছে। আনাচে কানাচে মানুষের ছিটাছিটি। তবে এ-ই বাড়িতে মেয়ের থেকে ছেলের সংখ্যা বেশি। রোহানের বেশ রাগ লাগছে কারন এইখানে প্রতিটা ছেলেই সুর্দশন যুবক। কুহু না আনলে ও পাড়তো। এখন যদি কোন পুরুষের নজর তার নাদান বউ এর উপর তাহলে তো হলো ও। রোহান একবার কুহুর দিকে তাকিয়ে দেখলো কুহু হাসছে। এ্যাঁ দাঁত ভেটকাছে দেখো কই আমার সামনে থাকলে তো কখনো হাসতে দেখি না। ওর ওদের সামনে হাসছে দেখো সমস্যা নেই বাসায় যেয়ে নেই তারপর তোকে ধরবো।
কাজি এসে উপস্থিত হতে পরিবেশ টা বেশ পাল্টে গেলে। হাসি খুশি পরিবেশ টা জানান দিচ্ছে বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেছে।
কাজি নিয়মানুসারে বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। আজ রোহানের ও স্মৃতির পেক্ষাপট ভেসে উঠছে সেই স্মৃতি। সেই স্মৃতিতে ছোট গুলুমুলু কুহু টা লাল একটা জামা পড়া আর লাল ওড়না মাথায় দেওয়া। আঙুল টা ধরে আছে রোহানের। তারপর তারা মসজিদে গিয়ে বিয়ে টা পড়ে নেয়। সাক্ষী হিসেবে ছিলো ওর মা আর ভাই। এখন হয়তো কুহুর মনে নেই। তাতে কি কিন্তু রোহানের তো সব মনে আছে। ছোট কুহুটাকে একনজর দেখার জন্য তার কত-শত ছটফটানি দম বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি কেই বা জানতো তার এই কুহুটা এখন যৌবনে পা দিয়েছে। হাসলে কি সুন্দর টোল পড়ে। মনে হয় সেই সময় গাল টা টেনে দেই। রোহান তার ভাবনায় ব্যস্থ এই দিকে খেয়াল ও নে যে সে তার ভাই এর বিয়ে বাড়িতে এসেছে। সে খেয়ালে ডুবে আছে তার প্রেয়সীর। যখন সবাই মিলে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো তখন রোহান মাশা-আল্লাহ বলে উঠলো। রওনক রোহানের কানে কানে বললো ভাই আমার তুই তো পুরো দেওয়ানা হয়ে গেছিস। এখন তো আমার বিয়ে কমপ্লিট হয়ে গেলো।
রোহান বাম ব্রুঁ টা কুঁচকে ফেলে বললো হয়ে গেছে।
রওনক পাড়ে না কপাল চাপড়াতে।
অবশেষে নতুন বউ নিয়ে রওনা দিলো তারা। নতুন বউ এর সাথে তার বাপের বাড়ি থেকে একজন এসেছে নাম স্বপ্নীল শেখ। রোহানের মোটেও পছন্দ হলো না কিন্তু ভাই এর শ্বশুর বাড়ি বলে কথা সিনক্রিয়েট করতে চায়নি তাই চুপচাপ হজম করে নিয়েছে কিন্তু কুহুকে সবার অগোচরে ঠিকই সাবধান করে দিয়েছে ওর আশেপাশেও যেনো না থাকে। কুহু গাড়ির এক সাইডে বসে আছে জানালা দিয়ে মাথা বের করে বাহিরে টা দেখছে।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। হঠাৎ কুহুর ফোন টুং করে একটা মেসেজ আসলো কুহু ফোনটা বের করে মেসেজ টা দেখলো তার ফ্রেন্ড সার্কেলের গ্রুপ থেকে। মেসেজ টা দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। রোহানের কপালে চিন্তা ভাঁজ পড়লো। কার এমন মেসেজ যার জন্য সুন্দর একটা মুচকি হাসি দিলো। তার মনে কোনে উঁকি দিলো,, বউ টা আমার পরকীয়াতে জড়ালো না। হায় আল্লাহ্ এখন তার কি হবে,,, না স্বামী হিসেবে তার একটা দায়িত্ব আছে না বউ কে সামলে চলা।
বউ নিয়ে বাড়ি আসতে আসতে রাত ৮ বেজে গেছে। নতুন বউ কে তারা অন্য একটা রুমে বসিয়ে রোহানরা লেগে পড়লো বাসর সাজাতে। সিম্পল এর মধ্যে সাজাবে যাতে তাড়াতাড়ি হয়। কুহু আসতে নিলো রোহান বাঁধা দিয়ে বলে খবদার এইখানে আসবি না। এইটা বড়দের জায়গা বাচ্চাদের নয়।
আমি মোটেও বাচ্চা নই।
না তুমি কেনো বাচ্চা হবে তুমি তো বাচ্চার মা।
আপনি কি জানেন আপনি একটু বেশি কথা বললেন।
হুম জন্ম থেকেই অভ্যাস করে নে। তোকেই সামলাতে হবে।
আমি কেনো সামলাবো আপনার বউ সামলাবে।
রোহান খুব সুন্দর করে আস্তে করে বলে উঠলো তুই ই তো আমার বউ।
কুহু আর কিছু না বলে চুপচাপ চলে গেলো। রাজীব আর সজীবের সামনে পড়লো। রাজীব ইচ্ছে করে কুহুকে ধাক্কা দিলো। কুহু পরে যেতে নিলে সজীব ধরে নিলো। তারপর আস্তে করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো সরি।
বিনিময়ে কুহু মাথা নেড়ে চলে গেলো।
ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো ওরা দুই ভাই। যেনো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।
বাসর সাজানো শেষ হলে ডিনার করছে সবাই। রোহানের পাশে বসে আছে কুহু। কুহুর যেই না মাংসে কামড় টা দিলো ঠিক সেই সময় পাখির মতো ছুঁ মেরে নিয়ে ওর খাওয়া মাংসের টুকারা টুকো রোহান নিয়ে টুপ করে মুখের ভিতর দিয়ে চোখ বন্ধ করে চিবিয়ে খাচ্ছে।
এই ঘটনায় কার কি প্রভাব পড়লো কুহুর জানা নেই কিন্তু কিহুর উপর মারাত্মক প্রভাব পড়লো। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে রোহানের দিকে। রোহান কুহুর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো কি হয়েছে তাকিয়ে আছিস কেনো? মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খাবি। চোখ দিয়ে আমায় গিলে না খেয়ে খাবার টা গিল।
আমার এঁটো করা মাংসের টুকরো টুকু আপনি নিলেন কেনো?
লেখা ছিলো তোর ও আমি জানতাম না মাত্রই চিবিয়েছি এখন আছে মুখে চিবুচ্ছি তোকে বের করে দিবো মুখ থেকে তুই খাবি।
ছিহ্ ওর্য়াক। আপনি ই খান আমি অন্য টা খাচ্ছি।
রোহানের এমন ব্যবহার ঠিক হজম হচ্ছে না কুহুর। কুহু কোন রকম খেয়ে চলে গেলো তার রুমে। শরীল টা বড্ড ক্লান্ত লাগছে শরীল টা জানান দিচ্ছে তার এখন শুয়ার দরকার। কুহু লাইট টা অফ করে ড্রিম লাইটটা জ্বালিয়ে তারপর শুয়ে পড়লো।
গভীর রাত সবাই শুয়ে আছে। রোহান চুপিসারে কুহুর ঘরে গেলো। কুহুর নিঃশ্বাস এর শব্দ শুনা যাচ্ছে।
কুহুকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। রোহানের গরম নিঃশ্বাস আঁচড়ে পড়ছে কুহুর মুখে ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠছে।
রোহান বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বলতে লাগলো,, আমি তো তোমায় কিছু করি নাই এখনো তাহলে কাঁপছো কেনো? এই মায়াবতী। কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছো তুমি। অন্যের ঘুম টা কেড়ে নিয়ে। কুহুর উপর আধশোয়া হয়ে কুহুর ঠোঁটের উপর আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বললো,,,
❝ আমার প্রিয়তমা স্ত্রী,,
ঘুমাও তুমি নিশ্চিন্তে আমি আছি তো
সারাক্ষণ তোমার সঙ্গে ❞
কথাটা বলে গভীর চুম্বন করে ওর উপর থেকে উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
নিজের রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লো রোহান।
সকালে কুহু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলো। পড়াটা কমপ্লিট করে ব্যাগ এ বই গুঁছিয়ে বের হয়ে গেলো নাস্তা করতে। রোহানের পাশের চেয়ারে ই বসতে হবে কুহুকে এইটাই আদেশ রোহানের। বাড়িতে তিন টা কাজের লোক থাকাতে বেশ সুবিধা হয়েছে। রোহানের মার আর কুহুর রান্না ঘরে যেতে হয় না।
নতুন বউ শ্রাবনী তেমন ভাবে কাউকে চিনে না। আর নতুন বলে একটু লজ্জা লজ্জা ভাব আছে। কুহুর সাথে চোখাচোখি হলো শ্রাবনীর। কুহু বিনিময়ে একটু মিষ্টি করে হাসি দিলো। শ্রাবনী ও হাসলো।
স্বপ্নীল কুহুকে দেখে বললো,, আরে বিয়ান যে তা কোথায় যাচ্ছেন?
কলেজ ড্রেস পড়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে আর কোথায় যেতে পারে ওর ড্রেস আপ দেখে বুঝা উচিৎ। ভাবীমা তুমার এখানে কোন অসুবিধা হচ্ছে নাতো।
শ্রাবনী বললো,, না ভাই হচ্ছে না।
আচ্ছা হলে আমাকে জানিয়ো। আর প্রয়োজন পড়লে ভাই এর নামে ও বিচার দিতো পারো সমস্যা নেই আমি শাসন এ ওস্তাদ।
স্মৃতি ফিক করে হেঁসে দিলো।
রোহানের চাচি খাবার টা মুখে দিতে ই বললো,,, এ মা খাবার টা একটু ও মজা হয়নি বলে প্লেট টা ছুড়ে মারলো।
রোহান দাঁতে দাঁত চেপে বললো চাচি উঠেন।
কিন্তু বসেই রইলো রোহান টেবিলে জোড়ে হাত দিয়ে বারি দিয়ে বললো,, ইস্ট্যান্ডে আপ।
রোহানের চাচি উঠে দাঁড়ালো।
তারপর রোহান বললো যেই খাবার টা ফেলেছো সেই খাবারের জন্য মানুষ কত টা যুদ্ধ করে তোমার কোন ধারণা আছে। অনেকে খালি পেটে রাত্রি যাপন করে তার কোন আইডিয়া আছে। মুখের সামনে সব পাও তো তাই সব হুঁশ হারিয়ে ফেলো। এই ফেলে দেওয়া খাবার টা ই তুমি খাবে কোন কথা শুনতে চাই না। আর সবাই শুনে রাখো তিন দিন আগামী তিন দিন আমাদের অর্কমা ঢেঁকি অশ্রেদ্ধেয় চাচি আম্মা কোন প্রকার খাবার পাবে না। আমি আবার দয়াবান ব্যক্তি তো তাই পানি খাওয়া টা না করতে পারি না শুধু পানি খেয়ে থাকবেন আসি এই কুহু তোর দেরি হচ্ছে না আয় তোকে পৌঁছে দেই। আর গাইসে ক্যারি অন। আর স্মৃতি তুই খেয়াল রাখবি যাতে এই খাবারের পর পানি ছাড়া আর কোন খাবার চাচি না পায় কথা টা বলে কুহু কে নিয়ে চলে গেলো।
সবার চোখ জোড়া রোহানের প্রতি। রোহান যেতেই সবাই একটা বড় করে শ্বাঃস নিলো। এতোক্ষণ সবার মনে হচ্ছিলো কোন ঝড়ের সম্মুখে পড়েছিলো। এখন সেই ঝড় টা কেটে গেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *