গল্প : তোমায় নিয়ে
পর্ব: (৫+৬)
.
ছায়া থেকে চোখ আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠিয়ে নীরা দেখল ঈশাম ঘরের দরজা দিয়ে ঢুকছে। ঘরের দরজাটা আস্তে করে বন্ধ করে দিয়ে নীরার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে।
.
নীরার হৃদপিন্ড মনে হয় গলা দিয়ে বের হবে। হৃদপিন্ড এর বিট যেন প্রতি মিনিটে ১০০ বার লাব ডাপ করছে। কেন এত ভয় লাগছে? কত বখাটে ছেলে অাঙগুল তুলে শাসিয়েছে নীরা!
আর আজ ঈশামকে দেখে বুক দুরুদুরু করে কাঁপছে। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। কিছুই যেন মাথায় ঢুকছে না। ঘোর ভাঙগল ঈশামের সালাম শুনে।
– আসসালামু আলাইকুম।
– ( নীরা তোতলাতে তোতলাতে উত্তর দিল) ও আলাইকুমুসসালাম।
ঈশাম বুঝতে পারল যে নীরা ভয় পাচ্ছে। তাকে সহজ করার জন্য বলল
– হালুমমমমম!!! আচ্ছা আমি কি বাঘ না ভাল্লুক? ভয় পাচ্ছ কেন?
– নীরা কোনো প্রতিউত্তর দিল না। কপাল দিয়ে ঘাম ঝরছে আর নি: শাস অনেক জোরে জোরে নিচ্ছে।
ঈশাম বলে উঠল:
– ভয় পাবেন না। আমি আপনার স্বামী। বন্ধু বলতে পারেন। বন্ধুর থেকেও অনেক কিছু। ভয়ের কোনো কারন নেই।
নীরা চোখ মিটমিট করছে। কোনো কথা বলে না।
.
তোমার সাথে জমানো অনেক কথা আছে। যা এত বছর মনের মধ্যে পুষিয়ে রেখেছি। আজ বলব ইংশা আল্লাহ। আগে এস আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার উদ্দেশ্য ২ রাকাত নামাজ আদায় করি ।
.
আর একটা কথা: তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। এখন এই জামা কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। ওযু করে আসুন একসাথে নামাজ আদায় করব। আমি অপেক্ষা করছি।
.
নীরার নামাজের কথা শুনেই কেমন যেন করতে লাগল। নামাজ পরার মত মন মানসিকতা নেই নীরার। কিন্তু নতুন বলে ঈশামের কথা মত ড্রেস চেঞ্জ করে ওযু করে আসল। ঈশাম আগে আর নীরা ঈশামের পিছনে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পরে নিল। নীরা নামাজ শেষে ঈশামের দিকে তাকাল দেখল ঈশাম দীর্ঘ মুনাজাত ধরেছে। কি বলছে ঈশাম? সে এক আল্লাহ জানে।
.
ঈশাম প্রশ্ন করল
– আচ্ছা তুমি কি ঘরে ঢুকার আগে বিসমিল্লাহ্ আর সালাম দিয়ে ঢুকেছিলে?
– না।
– ও আচ্ছা আমাকে আগেই জানানো উচিত ছিল। শুন তাহলে প্রতিটা ভাল কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ্ বলে শুরু করবে আর ঘরে সালাম করে ঢুকবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’ আলা অনেক বরকত দিবেন এবং রহমত দিবেন। নতুন সংসার তো তাই আল্লাহর নামে শুরু করছি।
– নীরা মাথা নাড়াল।
.
অনেকক্ষণ দুজন চুপচাপ বসে আছে। নীরা ঈশামকে বলল:
– আপনাকে একটা কথা বলব।
– জি অবশ্যই
– দেখুন আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই নি। আর কিভাবে যে আমি বিয়েতে আমি মত দিয়েছি তাও আমি জানি না। আমি মোটে ও প্রস্তুত না। আপনি আমার অনুমতি ব্যতিত আমাকে স্পর্শ করবেন না প্লিজ। আমি এখনও আপনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারছি না।
.
ঈশাম কিছুক্ষন কি যেন ভাবল তারপর উত্তরে বলল – আচ্ছা ঠিক আছে।
তোমার জন্য আমার কিছু উপহার আছে। এই বলে ঈশাম তার আলমারি থেকে উপাহারের প্যাকেট বের করে আনল।
– নীরা তুমি কি খুলবে?
– নীরা চুপ
– আচ্ছা আমি খুলে দেখাচ্ছি।
নীরার জন্য একটা কুরঅান শরিফ, জায়নামাজ তাসবীহ, একটা বোরখা আর কতক গুলো বই ছিল। আহকামুন নিসা, প্রিয়তমা, বিয়ে স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর, ওগো শুনছ, আই লাভ ইউ, দুজন দুজনার, তুমি সেই রাজা তুমি সেই রানি, ভালবাসার চাদর। এক এক করে বইয়ের নাম পরে শুনাল নীরাকে। আর বলল অবশ্যই সময় বুঝে পরতে।
.
স্বামী বা বন্ধু হিসেবে তোমাকে কিছু নসিহত করতে চাই। শুনতে মন না চাইলেও শুনিও। কারন হয়ত কখনো বলা হয়ে উঠবে না।
.
আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। তাই আমি তোমার পোশাক আর তুমি আমার পোশাক। কুরঅানে বলা হয়েছে
” তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পোশাক স্বরূপ আর তোমার তাদের পোশাক স্বরূপ। ” ( আল বাকারাহ- ১৮৭।
আমি তোমার স্বামী। তাই আমিই তোমার নিকট উত্তম হতে চাই আর সেই চেষ্টাই করে যাব।
.
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন, পূর্ণ ঈমানদার ব্যক্তি সেই যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্য উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। ( তিরমিজি- ১১৬২)।
.
আমি চাই তুমিই আমার সম্পদ হও। দুনিয়ার থেকে সবচেয়ে মহা মূল্যবান সম্পদ!
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- গোটা দুনিয়া সম্পদে পরিপূর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হল পূণ্যবতী স্ত্রী। ( মুসলিম)।
.
আমি চাই আল্লাহ আমার যখন মৃত্যু দিবেন তার আগে যেন আমি তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়ে মরতে পারি।
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- স্বামীকে খুশি রেখে যে স্ত্রী লোক মারা যাবে সে জান্নাতে যাবে। ( ইবনে মাজাহ)।
.
তুমি কি জান নেককার মহিলাগন কারা?
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- আল্লাহ ভীতির ন্যায় নিয়ামত অর্জনের পর মুমিন বান্দার জন্য নেক স্ত্রী ব্যতীত আর কোন উত্তম জিনিস হতে পারে না। স্বামী কোন কিছু বললে সে তা শোনে। স্বামী তার দিকে তাকালে তাকে তুষ্ট করে। স্বামী তাকে কোন বিষয়ে কসম দিলে সে তা পূর্ণ করে। স্বামী বাহিরে কোথাও গেলে তার জান মালের নিরাপত্তার জন্য কল্যান কামনা করে। ( মিশকাত – ২৬৮)।
.
তুমি কি জান কোন কোন কাজে তোমাদের জন্য বেহেশতের ৮ টি দরজাই খোলা থাকবে?
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- যে সমস্ত মহিলা আল্লাহকে ভয় করে, স্বীয় মান সম্ভ্রমের হেফাজত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, নামাজ পরে তাদের জন্য জান্নাতের ৮ টি দরজাই উন্মুক্ত থাকবে।
.
এত সহজ কাজ তবুও অনেক মহিলার কাছে এগুলা পাহাড় সমান বোঝা হয়ে দারিয়েছে।
.
তুমি আমার স্ত্রী! আজ থেকে এই ঘর সংসার সব তোমার। তুমিই এর হেফাজত এর দায়িত্ব আছ। তোমার ঘর। এই ঘরের কাজকে কখনও ছোট মনে করবে না। আল্লাহ কিন্তু তোমাকে এই ঘরের দায়িত্ত এর জন্যও পাকড়াও করবে। আর এই ঘরের কাজের জন্য আল্লাহ। তোমাদের কত সম্মান দিয়েছে তা জান?
হযরত আনাস ( রা) বলেন, একদিক মহিলারা নবি কারীম ( সা) এর দরবারে এসে বললেন- হে আল্লাহর নবি ( সা)! জিহাদ করে তো পুরুষরা তো সব ফজিলত নিয়ে গেল। আমাদের মহিলাদের জন্য এমন কি আমল আছে যাতে জিহাদের ফযিলত পাওয়া যাবে? তখন নবিজী ( সা) বললেন- হ্যা! গৃহের কাজে আত্ন নিয়োগ করা জিহাদের ফযিলাতের সমান। ( বায়হাকী- ৬/৪২০)।
আর স্বামী সেবা করা প্রতিটা স্ত্রীর জন্য সদকা স্বরূপ।
হযরত ইবনে ওমর ( রা) মারফু বর্ণনায় বলেন, নবী কারিম ( সা) বলেছেন, স্বামী সেবা স্ত্রীর জন্য সদকাতুল্য। ( কানয- ১৬/১৬)।
.
নীরা তোমার কি ঘুম পাচ্ছে? আমি কি বেশি কথা বলে ফেলেছি? আচ্ছা তুমি শুয়ে পর। কাল আমাদের বাসায় ওলিমা হবে। তোমার ঘুম প্রয়োজন। তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পার।
.
ঈশাম আর নীরা আর কোনো কথা না বলে শুয়ে পরল।
ঈশাম কাত ফিরে ভাবতে লাগল, আল্লাহর কাছে নীরার হেদায়েতের জন্য দোয়া করতে হবে। কারন আল্লাহ আমাকে নীরাকে স্ত্রী হিসেবে দিয়েছেন অবশ্যই তিনি ভাল জানেন। হেদায়েতের মালিক আল্লাহ সুবাহানু ওয়া তা’য়ালা।
.
আর ওপাশে নীরা ভাবতে লাগল – কিভাবে আমি এই লাইফটা লিড করতে পারব?
.
( চলবে ইন শা আল্লাহ)…….
গল্প : #তোমায়_নিয়ে
পর্ব: ৬
.
বিয়ের প্রথম রাতের পরের দিনই ঈশাম আর নীরার ওলিমা হয়। খুব সাদামাটা ভাবে। এই দিনও নীরাকে তার বান্ধবিরা সাজিয়েছিল কিন্তু ঈশাম মাহরাম আর মহিলা ব্যতীত কাউকে নীরাকে দেখতে দেয় নি। নীরা মোটেও খুশি ছিল না। নীরার মা বাবা তাদের অনেক দোয়া করেছিলেন যাতে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হয়। নীরা বাবাকে বলেছিল :
– বাবা তুমি আমাকে কোথায় বিয়ে দিলে?
– শাহিন সাহেব শুধু একটা কথা বলছিল: আজ এই কথা বলছ তুমি কিন্তু কালের বিবর্তনে তুমিই এর উল্টা কথা বলবে যে বাবা! তুমি আমাকে উত্তম জায়গায় বিয়ে দিয়েছ। আমি সেই আশায় আছি। ইংশা আল্লাহ।
– নীরা কেঁদে বুক ভাসায়। কারন নীরার সাথে কোনো কিছুই এডযাস্ট হচ্ছে না। কিভাবে সে সংসার করবে।
– শাহিন সাহেব নীরাকে বলল: মামুনি আমার যে রত্ন তুমি পেয়েছ সময় থাকতেই তার যত্ন করিও। হারিয়ে গেলে সারা জীবন কষ্ট পেতে হবে।
.
ঈশাম নীরাকে নামাজ এর দাওয়াত দেয়। অনিচ্ছাকৃত ভাবে ৪ ওয়াক্ত নামাজ পরলেও ফজরের সময় নীরা উঠে না। ঈশাম ফজরের নামাজের সময় নীরার মুখে পানির ছিটা মারে কিন্তু নীরা এতে খুবই বিরক্ত বোধ করে।
– আপনি এত সকালে ঘুম থেকে ডেকে তুললেন কেন? সকালে ঘুমাতেও দিবেন না নাকি? তাও আবার পানির ছিটা মারেন।
ঈশামের চেষ্টা ব্যার্থ হয়।
.
১ সপ্তাহ পর…..
নীরার বান্ধবিরা নীরাকে ফোন করছে বারবার। নীরা ফোন রিসিভ করছে না।
– ফোন ধর তোমার ফ্রেন্ড ফোন করছে।
.
নীরা ফোন রিসিভ করে বলল- আমি ভার্সিটি যাব না। এই বলে নীরা ফোন কেটে দিল।
ঈশাম বলল- তোমার ফাইনাল পরীক্ষা কিছুদিন পর। এখন ক্লাস মিস করলে পরিক্ষা ভাল হবে না। আর তো কটা দিন তারপর তুমি গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করবে। তোমার বাবা বলেছিল তোমার গ্র্যাজুয়েশন টা যাতে তুমি কর। চল তোমাকে ভার্সিটি পৌছে দিয়ে আসি।
ঈশাম নীরাকে গিফট করা বোরখা নিয়ে এসে নীরার হাতে দিল। বলল :
– আজ থেকে ঘরের বাহিরে পর্দা করে যাবে। আমি আমার বউকে শুধু দেখব। অন্য কোনো পরপুরুষ আমার বউকে দেখবে সেটা আমি সহ্য করতে পারব না। আমি জেলাস ফিল করি এই বিষয়ে।
নীরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে:
– আমার বাবাও আমাকে বোরখা পরাতে পারে নি । আর আপনি বলছেন? আমি ভুত হয়ে বাহিরে যাব? বান্ধবিরা দেখে হাসবে।
– হাসলে হাসাটা উড়িয়ে দিবে। পর্দা ফরজ বিধান আল্লাহর। তুমি শুরু কর। দেখবে এর মায়ায় পরে গেছ। কিন্তু মনে রেখ পর্দা ছাড়া আমি তোমাকে ঘরের বাহিরে যেতে দিব না। আমি তোমার স্বামী। আধিকারটা একটু বেশিই আমার।
.
নীরা দাত কিড়মিড় করে বোরখাটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে চেঞ্জ হতে গেল। অবশেষে আল্লাহর আশেষ রহমতে নীরা বোরখা পরল। কিন্তু মন থেকে না।
ঈশাম নীরাকে দেখে বলে উঠল: মাশা আল্লাহ।
.
নীরা নিকাব পরেছে। চোখ দুটি শুধু দেখা যাচ্ছে । ঈশাম বলল: তুমি এটা দিয়েই শুরু কর। পরে তুমি আল্লাহর ইচ্ছায় হাত পা মোজাও পরবে।
নীরার কপালে ভাজ পরল। এই লোকটা বলে কি? এমনিতেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, বমি বমি লাগছে, আমার কেমন কেমন জানি গায়ের ভিতর লাগছে আর এই লোকটা আবার বলে হাত পা মোজা ও পরতে । কি পেয়েছে কি আমাকে? আর আমিই বা কেন তার কথা মেনে নিলাম? কিছু বলতেও পারছি না কেন?
.
ঈশাম আর নীরা একসাথে বের হয়। তারা দুজন পাশাপাশি হাটছে। ঈশামের সাদা পাঞ্জাবী আর নীরার কালো বোরখা। রং দুটিই যেন তাদের বন্ধনকে জানিয়ে দিচ্ছে।
– আমার তো সামর্থ্য নেই তোমাকে নিজস্ব গাড়িতে উঠানোরর বা সিএনজি ভাড়া দেওয়ার। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী আমি তোমাকে পাবলিক বাসে করে নিয়ে যেতে পারি। তোমার ফাইনাল পরিক্ষা পর্যন্ত আমি তোমাকে দিয়ে আসব এবং নিয়ে আসব।
দুজন তারা বাস স্ট্যান্ড এর যাওয়ার জন্য হাটছে। নীরা খেয়াল করল আজ নীরার দিকে কেউ তাকায় না। কি আশ্চর্য ব্যাপার! যে নীরাকে মানুষ পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখত আজ নীরাকে কেউ তাকিয়ে দেখছে না। নিজেকে নীরার অনেক ছোট মনে হল। কেউ তার দিকে ফিরে তাকায় না ।
পাবলিক বাসে দুজন পাশাপাশি সিটে বসা। নীরার ভার্সিটিতে যেতে বড় জোর ১০ মিনিট লাগবে। কিন্তু জ্যামে পরলে ৩০ মিনিট।
ঈশাম নীরাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল :
– নীরা তুমি কি জানো মেয়েদের ইসলাম প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি দিয়েছে। আল্লাহ বলেন:
” হে নারীগন! তোমরা তোমাদের ঘরের ( বাড়ীর চতুর্সীমানার) ভিতর অবস্থান কর এবং বাহিরে বের হইয় না, যেমন ইসলাম পূর্ব জাহিলী যুগের মেয়েরা বের হত। ( সুরা আহযাব- ৩৩)।
” হে নবি! আপনি আপনার পত্নীগনকে ও কন্যাগনকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগনকে বলুন, যখন কোনো প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হয়, তখন তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয় ( যেন পর্দার ফরজ বিধান লংঘন না হয়। এমনকি তাদের চেহারাও যেন খোলা না রাখে, তারা যেন বড় চাদরের ঘোমটা দ্বারা নিজেদের চেহারাকে অাবৃত করে রাখে)। ( সুরা আহযাব- ৫৯)।
.
আর মুসলিম নারীদের মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাদের নিরাপত্তা বিধানে বলেছেন-
” ঈমানদার নারিকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ্যমান তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্তবাদী, যৌনকামনা মুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পকে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারও কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণ না করে। হে মুমিনগন! তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। ( সুরা নুর-৩১)।
.
নীরা দেখ আমাদের সৃষ্টিকর্তার সাবধানবানী!
আল্লাহ আমাদের নারী পুরুষ উভয়কেই দৃষ্টি নত রাখতে বলেছেন।
এরপর আমাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করতে বলেছেন।
নারীদের সৌন্দর্য বাহিরে প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন।
নারীরা কাদের কাদের তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারবে তাও বলে দিয়েছেন।
তাছাড়া নারীর সাজসজ্জা যাতে প্রকাশ না পায় তার জন্য জোরে পদচারণ করতে মানা করা হয়েছে।
.
বর্তমান সময়ে তোমরা যা করছ তা অাদো সঠিক না। পর্দাকে তোমরা বলছ যে পর্দা নাকি তোমাদের আবদ্ধ করে রেখেছে, স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে, আসলে পর্দা আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ট নিরাপত্তা নারীদের জন্য। কিন্তু অাফসোস! সেই নারী জাতিই পর্দার মূল্য বুঝে না।
পর্দা না করলে জাহান্নামের আগুনে জলতে হবে আজীবন। তুমি কি রান্না করেছ কখোনো? বিয়ের পর তোমার রান্না খাওয়ার সৌভাগ্য হল না আমার।
– নীরা মনে মনে বলল : সৌভাগ্য না, বলেন দুর্ভাগ্য। আমার হাতের রান্না খাইলে চিতপটাং হয়ে পরে থাকবেন।
ঈশাম বলতে লাগল, তুমি যখন রান্না প্রথম প্রথম শিখবে তখন দেখিও তোমার হাতে আগুনের তাপ এসে লাগবে, হাত জালা যন্ত্রনা করবে। কখনও কখনও গরম তেল হাতের উপর এসে পরবে, সেখানে সাথে সাথে ফোসকা পরবে।
দুনিয়ার এই সামান্য আগুন আর তাপই সহ্য হয় না। বেপর্দা হয়ে জান্নাহামের আগুনের তাপ সহ্য কিভাবে করা যায় বল তো?
.
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- তোমাদের ( ব্যবহৃত) আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ মাত্র। ( বুখারি- ৩০৩৭)।
তো ভেবে দেখ! দুনিয়ার আগুনের চেয়ে আরও ৬৯ ভাগ বেশি আগুনের তীব্রতা! আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার! আল্লাহ আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত কর। আমীন।
.
তো! স্বামী হিসেবে আমার দায়িত্ত আছে। আমি আমার পরিবারকে জাহান্নামের আগুনে জলতে দিতে পারি না। আল্লাহ আমাদের বলেছেন-
” হে বিশাসী বান্দাগন! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয় ও কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগন। তারা আল্লাহ তা’ আলা যা আদেশ করেন তা অমান্য করে না এবং তারা তাই করে যা তাদের আদেশ করা হয়। ( সূরা তাহরীম- ৬)।
নীরা ঈশাম এর দিকে তাকাল- আবার চোখ নীচু করল।
.
জানো নীরা! আমি যদি তোমাকে দাওয়াত না দেই, ইসলাম সম্পকে না বুঝাই, তাহলে আল্লাহ আমাকে পাকড়াও করবেন। কেননা, তুমি আমার অধিনস্তে আছ আর আমার তোমার প্রতি দায়িত্ব আছে।
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন, জেনে রাখ! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং নিজ নিজ অধীনস্থের বিষয়ে তোমাদের প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে। ( মুসলিম- ১৮২৯)।
.
নীরা তুমি কি জান? দাইয়ুস কাকে বলে?
নীরা উত্তরে বলল- না।
ঈশাম জানিয়ে দিল: দাইয়ুস হল ঐ ব্যক্তি যে তার পরিবারের অশ্লীলতা ও কুকর্মকে মেনে নেয়। ( মুসনাদে আহমদ)।
আর দাইয়ুস ব্যক্তিকে আল্লাহ তা ‘ য়ালা কখনও জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। ( মিশকাত- ৩৬৫৫)।
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- ৩ ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন-
১) নেশাদার দ্রব্যে আসক্ত ব্যক্তি
২) পিতামাতার অবাধ্য সন্তান
৩) দাইয়ুস ( মুসনাদে আহমদ- ৫৮৩৯)।
.
নীরা ঈশামের কথা খুব মনোযোগ দিয়েই শুনেছে। ঈশামও বুঝতে পেরেছে। নীরা ঈশামকে কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক ঐ মুহূর্তে পিছন থেকে কোনো একটা মেয়ে চিতকার করে উঠল। বাসের সবাই পিছন ফিরে তাকাল…
.
( চলবে ইন শা আল্লাহ)….
গল্প : তোমায় নিয়ে
পর্ব: (৭+৮)
.
মেয়েটি বলে উঠল: তোর এত বড় সাহস!!! মেয়েদের গায়ে হাত দিস!!!
এই বলে মেয়েটি তারই পিছনে থাকা পুরুষটির গালে চটাস! চটাস! করে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল। মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগল ব্যাপারটা ঘটতে।
ঈশাম মেয়েটির থেকে দৃষ্টি ততক্ষণাত সরিয়ে নিল। নীরা ঘটানা পিছনে তাকিয়েই দেখছিল। বাসের ভিতর একটা হোট্টগোল বেধে গেল। বাসের ভিতর লোকেরা কি হয়েছে তা মেয়েটির কাছে প্রশ্ন করল।
উত্তেজিত ভাবে মেয়েটি উত্তর দিল: ঐ পুরুষ আমার পিছনের সিটে বসেছিল। পিছন থেকেই আমার কোমড়ে হাত দিয়েছে। ২ বার করেছে ২ বারই আমি পিছনে তাকিয়েছি আমি।
কিন্তু ৩য় বার যখন করল তখনি আমি ঐ লোকটাকে থাপ্পড় মারি। কথা গুলো শুনে বাসে থাকা পুরুষ গুলো লোকটাকে বেধম মারল। এবং মারা শেষে তাকে বাস থেকে নামিয়ে দিল। বাসের লোকেরা বলল: আর কোনো সমস্যা নেই। আপনি এখন নিশ্চিন্তে বসতে পারেন।
পরিস্থিতি ঠান্ডা।
যে মেয়েটি টিজের স্বীকার হয়েছিল সেই মেয়েটিকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিল আধুনিকা মেয়ে। অতিব সুন্দরী যাকে বলা হয়। শাড়ি পরেছে, খোপায় বেলি ফুল, কপালে লাল টিপ, ঠোটে লিপস্টিক, মুখে কড়া মেক আপ। মেয়েটি এমনভাবে শাড়ি পরেছে যার কারনে তার শরীর সম্পূর্ণ ভাবে ঢাকে নি। কোমড়ের অর্ধেক অংশই ছিল খোলা।
এইটাই হয়ত সেই মানুষ রূপি শয়তান আর কন্ট্রোল করতে পারে নি। পিছনের সিটে থেকেই কাজটা করেছে ।
বাস চলছে অতি ধীর গতিতে। ঢাকার জ্যাম বলে কথা। এত কথা, এত ঘটনা ঘটে তবুও নির্ধারিত গন্তব্যের দেখা মিলে না।
.
– নীরা!
– হুম!
– নারী পুরুষের কাছে সব থেকে কাংখিত একটি সত্তা। নারী কে পাওয়ার জন্য যে কোনো পুরুষ সব কিছুই করতে পারে। হালাল পথে অথবা হারাম পথে। বর্তমানে এই নারীই ফিতনার মূলে। যা হযরত মুহাম্মাদ ( সা) আজ থেকে ১৪০০ বছর আগেই বলে গিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- আমার পরে নারী ফিতনা পুরুষদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ( বুখারী, মুসলিম)।
আর এই ফিতনাটাকেই কিছু কিছু নারী সহজ থেকে সহজতর করে ফেলছে। রাস্তাঘাটে এমনভাবে বের হয় যা দেখে ঈমানদার পুরুষরাও ফিতনায় পতিত হয়। কিন্ত নারী সমাজ নিজেরাই নিজেদেরকে উজার করে দিচ্ছে। তারা নিজেরাই পুরুষদের তাদের সৌন্দর্য দেখানোর আহবান করছে।
অাফসোস লাগে খুব! আমরাই নাকি নবিজী ( সা) এর উম্মাত! যারা কিনা আল্লাহ ও তার রাসুল ( সা) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত আছি।
.
নীরা মনে মনে ভাবছে, ঠিকই তো! আমিও কত হ্যারেজমেন্টের স্বীকার হয়েছি, যখন আমি উন্মুক্ত হয়ে চলতাম। বিয়ের আগ পর্যন্ত আমাকে লোকেরা দেখত পিছন ফিরে আর আমি গর্ব বোধ করতাম। কিন্তু কত জনের যে মনের খোরাক ছিলাম। ঠিক ঐ মেয়েটির মত। না জানি কত জন আমাকে নিয়ে বাজে চিন্তা করেছে! ছিহ! আসলেই তো! আজ ঐ মেয়েটির জায়গায় আমিও থাকতে পারতাম। আজ আমি বোরখা পরেছি, কেউ তো আমার দিকে কুনজরে তাকাল না।
নীরার মনে অপরাধ বোধ জন্ম নিল।
.
ঈশাম বলল: রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেন: নারীর সর্বাঙ্গই সতরের অঙ্গ। ( গোপনীয় বস্তু কাজেই নারী দেহ সম্পূর্ণটাই ঢেকে রাখা অপরিহার্য)। ( মিশকাত- ৩১০৯)।
কিন্তু নারী আজ নিজেদেরকে বিলিয়ে দিচ্ছে। তাদেরকে কেউ বাধ্য করছে না। নিজেরি ইচ্ছায়।
রাসুল ( সা) বলেছেন- শেষ যুগে অরিচেই আমার উম্মাতের মধ্য এমন কিছু নারী হবে, যারা কাপড় পরেও উলংগ থাকবে। তারা অভিশপ্ত। ( মুসলিম)।
নারী হল গোপনীয় সত্তা। যখন সে ঘর থেকে বের হয় তখম শয়তান তার দিকে দৃষ্টি উচু করে তাকাতে থাকে। ( তিরমিজি- ১/২২২)।
কোনো বুদ্ধিমান নারী নিজেকে পরপুরুষের অন্তরের চাহিদার পন্য হিসেবে প্রেজেন্ট করবে না। বুঝেছ নীরা?
– নীরা ঈশামের দিকে তাকিয়ে রইল: কিভাবে পারে একটা মানুষ এভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলতে?
মানুষটাতে মুগ্ধ না হলেও তার কথায় মুগ্ধ হয়ে গেছি। নীরা মনে মনে কথা গুলো বলল।
.
কিছুক্ষন পর নীরা তার ভার্সিটির সামনে এসে পরল।
ঈশাম নীরাকে উদ্দেশ্য করে বলল- যাও! কিন্ত মনে রেখ তুমি আমার সম্পদ। আমারই অধিকার আছে সবকিছুর। আর কারও বা।
.
নীরা বলল আমার ক্লাস ৩ টায় শেষ।
আমি তার আগেই তোমাকে নিতে আসব। এই বলে ঈশাম অফিসে চলে গেল।
.
নীরা খুব অস্থির হয়ে হাটছে। এই প্রথম এভাবে সে ভার্সিটি আসল।
ক্লাসে ঢুকতেই সবাই নীরার দিকে তাকাল।
কেউ প্রথমে চিনতে পারল না। পরে সবাই যখন ভাল মত দেখল তখন একসাথে চিতকার করে উঠল:
– নীরা!!!!!!!!!!!!!
কেউ বিশাস করতে পারছে না নীরা বোরখা পরেছে। নীরা কিছুই বুঝতে পারছিল না সে কিভাবে সামাল দিবে সিচুয়েশনটাকে।
.
কিন্তু নাহ! নীরাকে সবাই এপ্রিশিয়েট করেছে। স্যার মেডামরাও নীরাকে দেখে মুচকি মুচকি হেসেছে। আলহামদুলিল্লাহ! কারও হাসি বিদ্রুপের স্বীকার হয় নি নীরা যা সে আগে ভাবত।
.
নীরা আজ নিজের ইচ্ছাই মেয়েদের সিটের মাঝখান বসেছে।
.
যোহরের আযান দিলে নীরার মন খুত খুত করে। ভার্সিটিতে তো প্রেয়ার রুম আছে। নামাজ না পরলে আবার ঈশাম মহাশয়ের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে। নীরা প্রেয়ার রুমে গিয়ে যোহরের সালাত আদায় করল।
.
৩ টার একটু আগেই ঈশাম নীরাকে নিতে আসল।
.
রাতের বেলা নীরা ঈশামকে জিজ্ঞাসা করল: আচ্ছা! আপনি কেন আমার পিছনে এত কথা খরচ করছেন? আমাকে কি আপনি চেঞ্জ করতে পারবেন? আপনি কি আমাকে হেদায়েত দিতে পারবেন?
– হেদায়েতের মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা। আমি কখনও তোমাকে চেঞ্জ করতে পারব না যতক্ষন না আল্লাহ করেন। আমি শুধু দাওয়াত দিতে পারব আর চেষ্টা। তাছাড়া আমার হাতে আর কিছুই নেই।
– দাওয়াত দেওয়ার পরও যদি সে চেঞ্জ না হয়?
– হুম। তখন আল্লাহ বলেন: কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে তোমার দায়িত্ব শুধু সত্যটা জানিয়ে দেওয়া। ( সূরা নাহল- ৮২)।
– আল্লাহ কাউকে হেদায়েত না করলে সে কিভাবে হেদায়েত পাবে? তার তো কোনো হাত নেই।
– আল্লাহর কাছে তো চাইতে হবে। চাওয়ার মত চাইতে হবে । হেদায়েত আল্লাহর এমন একটি জিনিস যা আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নিতে হবে। অনেকে সৌভাগ্যবান না চাইতেই আল্লাহ দিয়ে দেন। আবার কেউ আল্লাহর কাছে চেয়ে পায়। কিন্তু আল্লাহর দিকে না ফিরলে আল্লাহর কাছে না চাইলে কিভাবে পাওয়া যাবে?
কুরঅানে আল্লাহ কি বলেছেন জান?
” আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, আমি তাদের অবশ্যই আমার পথসমূহের হেদায়েত দিব। আর নিশ্চয় আল্লাহ মুহসিনদের সাথে রয়েছেন। ( সুরা আল আনকাবুত-৬৯)।
.
নিজের হেদায়েতের জন্য নিজেই যদি দোয়া কর তাহলে কি আল্লাহ তোমাকে তার দরবার থেকে ফিরিয়ে দিবেন? কখনও না।
দোয়া করবে এভাবে,
” হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন, আমাকে আপনি হেদায়েত দিন, আমাকে নিরাপদ রাখুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন। ( মুসলিম- ৪/২০৭২)।
.
তোমাকে একটি খুব সুন্দর হাদিস বলি।
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি ১ টি নেকি করবে, তার জন্য, ১০ গুন নেকি রয়েছে অথবা ততোধিক বেশি। আর যে ব্যক্তি ১ টি পাপ করবে, তার বিনিময় সে ততটাই পাবে তার বেশি নয় অথবা আমি ক্ষমা করে দিব।
আর যে ব্যক্তি আমার প্রতি ১ বিঘত নিকটবর্তী হবে, আমি তার প্রতি ১ হাত নিকটবর্তী হব। আর যে ব্যক্তি আমার প্রতি ১ হাত নিকটবর্তী হবে, আমি তার প্রতি দু’ হাত নিকটবর্তী হব। যে আমার দিকে হেটে আসবে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাব।
আর যে ব্যক্তি প্রায় পৃথিবী সমান পাপ করে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, অথচ সে আমার সাথে কাউকে শরিক করেনি, তার সাথে আমি তত পরিমানই ক্ষমা নিয়ে সাক্ষাৎ করব। ( মুসলিম- ৭০০৯)।
.
সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!
তাইলে কেন আমরা এই সুযোগ টা হাত ছাড়া করব বলতে পার?
নীরা ঈশামের দিকে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে রইল।
– কিছু বলবে নীরা?
– চোখ নামিয়ে বলল: না!
.
সকালে উঠে নীরা ওয়াশরুমে যাবে, এমন সময় হঠাত সে দেখল…..
.
( চলবে ইন শা আল্লাহ)
গল্প : #তোমায়_নিয়ে
পর্ব: ৮
.
ঘুম ঘুম চোখে সে চেয়ে দেখল ওয়াশরুমের দরজায় কিছু একটা লিখা। চোখ দুই হাত দিয়ে ডোলতে ডোলতে সামনে এগিয়ে গিয়ে পরতে লাগল একটা কাগজে লিখা:
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﻧﻲ ﺍﻋﻮﺫﺑﻚ ﻣﻦ ﺍﻟﺨﺒﺚ والخباءث
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ।
অর্থঃ হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট পুরুষ ও স্ত্রী শয়তানের অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাই। -(বুখারী: ৬৩২২)
.
নীরা বলে উঠল – কি অদ্ভুত আইডিয়া! ওয়াশরুমের দরজায় বাথরুমে যাওয়ার দোয়াটা লিখে রেখেছে। এই ছেলেটা!!!!
ততক্ষনে নীরা দোয়াটা পরে নিয়েছে, এটা স্বাভাবিক যে যাওয়ার পথে কাগজে কিছু লিখা থাকলে তাতে চোখ আটকাবেই।
সেখানে ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার দোয়াটাও লিখা ছিল:
ﻏﻔﺮﺍﻧﻚ
উচ্চারণঃ গুফরা-নাকা।
অর্থঃ হে আল্লাহ আপনার নিকট ক্ষমা চাই। -(আবু দাউদ: ৩০)
.
নীরা ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়াল। মুখ মুছা শেষ হলে চিরুনি নিতে যাবে ঠিক ঐ মুহূর্তে নীরার নজরে পরল আয়নাতেও কাগজে লিখা :
اللهم حسنت خلقي فحسن خلقي’
উচ্চারণ “আল্লাহুম্মা হাসসান তা খালকী ফাহাস সীন খুলুকী”
অর্থ- হে আল্লাহ! আপনি আমাকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। আপনি আমার চরিত্রকে সুন্দর করে দেন। (মুসনাদে আহমদ মিশকাত)
.
হায়রে পাগল!!!
আলত করে চুল আঁচড়াতে লাগল নীরা আর কি যেন ভাবতে লাগল!।
.
নীরা খুব পিপাসা পেয়েছে। রান্নারুমে যেতেই নীরা খেয়াল করল কাগজে লেখা কোনো কিছু খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ্ বলতে হবে আর শেষে আলহামদুলিল্লাহ।
এই ছেলেটা কখন করেছে এসব? রাতে? কি জানি আল্লাহই জানে।
ঈশাম সকাল সকাল অফিসে চলে যায় নীরার ঘুম ভাঙার আগেই। যেদিন নীরার ভার্সিটি থাকে সেদিন নীরাকে পৌছে দিয়ে অফিসে যায়।
আজ ভার্সিটি নেই। ঈশামের মা বাবার সাথেই বা কতক্ষণ কথা বলা যায়। মা রান্নায় ব্যস্ত। আর নীরা তো আনাঢ়ী একটা মেয়ে। রান্নাঘরে গেলে রান্নার ১২ টা বাজিয়ে ফেলবে। ঈশামের মাও নীরাকে জোর করে না। সংসার বুঝে গেলে এমনিতেই করবে। এখন একটু স্বামীকে সময় দিক, তারা নিজেদের মধ্য একটু বুঝা পড়া হউক, সারা জীবনটাই তো সংসার করবে, এখন তাদের ভালবাসা মহব্বত হউক। ঈশামের মায়ের কথা এগুলাই।
.
নীরার খুব বোরিং লাগছে। একা একা কি থাকা যায়? অলস সময়! খুবই বিরক্তিকর লাগছে।
ফেসবুকে একটু লগ ইন করি। টাইম পাস। নীরা ফেসবুকে ঢুকে বান্ধবিদের সাথে চ্যাটিং এ ব্যস্ত হয়ে গেল। একে একে বান্ধবিরা অন লাইন থেকে চলে গেলে আবারো একা পরে গেল নীরা। ফেসবুকে সময় কাটাতে নীরা ফেসবুকের নিউজ ফিড স্ক্রল করা শুরু করল। স্ক্রল করছে আর লাইক দিচ্ছে। স্ক্রল করতে করতে নীরার একটা পেজের পোস্টে নজর পরল। টাইটেলে লিখা: ” where is your hijab?
পোস্টে ঢুকে অার্টিকেলটা পরতে লাগল। সেখানে পর্দার বিষয় বস্তু এবং বাহিরে যেতে পর্দা করছেন কিন্তু পর্দা করার পরও সোশাল মিডিয়াতে কেন ছবি ছাড়েন এই বিষয় টা অতীব চমতকার করে লিখা ছিল।
নীরা খুব মনোযোগ সহকারে পরল। ঈশাম বলেছিল বলে পর্দা করেছে নীরা, মন থেকে না। কিন্তু পর্দা সম্পর্কিত কুরঅানের আয়াত এবং হাদিস নীরার মনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। পর্দার মূল্য কিছুটা হলেও বুঝতে শিখছে নীরা। তারপর অার্টিকেলটা পরার পর মনে হল: আমার ফেসবুকে তো এখনো ছবি আছে। তাহলে আমার এত কষ্ট করে বোরখা পরে লাভ কি হল, হিজাব করে নিকাব পরে কি আমি মশকরা করছি? খুব ভাল ভাবেই নীরা বুঝতে পারল যে এটা উচিত নয়।
নীরা ফেসবুকের ফোটোতে গেল। সেখানে দেখল তার কিছু ছবি, ভার্সিটি লাইফের আনন্দঘন ছবি। নীরা ডিলেট করতে যাবে, কিন্তু পারছে না,
ভাবছে, থাক না! কিই বা হবে?
আবার ব্যক করছে।
পরেক্ষনেই আবার মনে হচ্ছে পর্দার কথা। আবার যাচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষন এরকম করার পর নীরা এক দমে সব ছবি ডিলেট করে দিল।
বাহ! মনটা অনেক হালকা লাগছে! নীরার অন্যান্য বান্ধবিদের বলল: তোদের কাছে আমার ছবি আছে। ওগুলা ডিলেট করে দিস।
.
নীরার মনটা অনেক ফুরফুরে হয়ে গেল। সে নিজেও বুঝতে পারতেছিল না যে, কত বড় গুনাহ থেকে আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা বাঁচিয়েছেন।
দুপুরে নামাজের পর খাওয়ার পর্ব শেষে বিছানায় হেলান দিয়ে বসল নীরা। বালিশের নীচ থেকে হে’দ ফোনটা বের করে স্মুথ হিন্দি গান প্লে করল। গানের রাজ্যে হারিয়ে গিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পরল নীরা বুঝতেই পারল না।
.
ঘুম ভাঙলো পেটের ব্যাথ্যায়। কি অসহ্য যন্ত্রনা! নীরা পিরিয়ড এর তারিখ ভুলে গিয়েছিল। এর কারনে কোনো ব্যবস্থাই করে রাখে নি নীরা। শুধু মনে মনে ভাবতে লাগল কেন তারিখটা ভুলে গেলাম! এখন কি হবে?
ঈশামকে বলবই বা কিভাবে যে আমার জিনিস লাগবে। অনেক ভাবনা চিন্তা করে নীরা ঈশামকে ফোন দিল।
– আসসালামু আলাইকুম নীরা!
– ও আলাইকুমুসসালাম।
– কিছু বলবে তুমি? ( নীরা আজ পর্যন্ত ঈশামকে কখনও ফোন দেয় নি)
– হুম।
– কি বল?
– কখন আসবেন?
– সন্ধা ৭ টায় ইংশা আল্লাহ।
– ও!
– তোমার কি কিছু লাগবে নীরা?
– হুম।
– কি বল।
– আসার সময় ফার্মেসী থেকে প্যাড নিয়ে আসিয়েন।
এই বলে নীরা টুস করে ফোনটা কেটে দিল।
ঈশাম ও দিকে খুব অনুশোচনায় পরে গেল। কারন ঈশামের আগেই উচিত ছিল এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করার। তার প্রয়োজনীয় জিনিস কি লাগবে তা আগে থেকেই ম্যানেজ করে দেওয়া উচিত ছিল। ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু নীরাকে এসব জিজ্ঞাসা করলে মাইন্ডও করতে পারত। তবুও নীরা আমাকে বলেছে এটাই আলহামদুলিল্লাহ।
.
ঈশাম অফিস শেষে খুব দ্রুত বাসায় ফিরে।
– নীরা এই নাও।
– নীরা দেখল তার প্রয়োজনীয় জিনিস এনেছে কিন্তু নীরা যেটা ইউজ করে সেটা না অন্যটা।
– আপনি এটা কেন এনেছেন?
– কেন?
– আমি এটা ইউজ করি না।
– ইয়ে মানে! তুমি না বললে আমি কিভাবে জানব বল।
– নীরা ঈশামকে বলে দিল কোনটা ইউজ করে।
– আচ্ছা দাও আমি চেঞ্জ করে আনি।
– না থাক! লাগবে না।
– না দাও চেঞ্জ করে নিয়ে আসি।
– বললাম তো লাগবে না।
– ঈশাম নীরার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে আবার ফার্মেসীর দোকানে গেল চেঞ্জ করতে ।
.
– এই নাও। এইটা না?
– হুম। আল্লাহ কেন যে এই। রোগটা দিল মেয়েদের!!! খুব বিরক্তিকরভাবে নীরা বলল।
ঈশাম শুনে বলল, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে সৌভাগ্যের বিষয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা এরই মাধ্যমে তোমাদের মা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন যা একজন পুরুষকে আল্লাহ দেন নি। সূরা আল বাকারাহ ২২২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন-
” আর তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েয সম্পকে। বলে দাও – ইহা অনিষ্টকর। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন হতে বিরত থাকবে। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষন না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদের হুকুম দিতেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।
.
হায়েযকে কখনও ছোট মনে করবে না। কারন এই সময় তোমরা অপবিত্র থাক একথা ঠিক। কিছু বিষয়ে তোমরা এই কয়দিন ছুটিতে থাকবে। এটা আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ ( সা) এর আদেশ।
নীরা জান? হযরত মুহাম্মাদ ( সা) আর আয়েশা (রা) এর রোমানটিকতা কি ছিল?
” হযরত আয়েশা ( রা) থেকে বর্নিত, আমি হায়েয অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ( সা) এর মাথা চিরুনি দ্বারা আঁচড়াতাম। ( বুখারী – ২৯১)।
হযরত আয়েশা ( রা) থেকে বর্নিত, তিনি সফিয়া ( রা) কে বলেছেন- নবী কারীম ( সা) কোন কোন সময় আমার কোলে টেক লাগাতেন, আমি তখন হায়েয অবস্থায়, আর তিনি কোরঅান তেলাওয়াত করতেন। ( বুখারি- ২৯৩)।
.
আমাদের আইডল হযরত মুহাম্মাদ ( সা) স্ত্রীদের হায়েয অবস্থাতেও বিবিদের সাথে একই চাদরের নিচে শয়ন করেছিলেন। এই হাদিস থেকেই বুঝা যায়,
হযরত উম্মুল মো’মেনীন হযরত উম্মে সালামা ( রা) থেকে বর্নিত, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ( সা) এর সাথে পশমি চাদরের উপর শুয়ে ছিলাম। হঠাত আমার হায়েয দেখা দিলে আমি গোপনে বিছানা ছেড়ে উঠে হায়েযের কাপড় পরে নিলাম। হুযুর ( সা) আমার পরনে হায়েযের কাপড় দেখে বললেন, কি? তোমার হায়েয এসে গেছে নাকি?
আমি বললাম- হ্যা!
হুযুর ( সা) আমাকে পুনরায় বিছানায় ডাকলেন। আমি তার সাথে সে অবস্থায়ই পশমি চাদরে শয়ন করলাম। ( বুখারী – ২৯৪)
.
আল্লাহ তোমাদেরকে এই সময়ের নামাজও মাফ করে দিয়েছেন।
বল তো? আমাদের সেই সুযোগ দিয়েছেন? নাহ! দেন নি। এটা আল্লাহর অনুগ্রহের মধ্যে আরেকটি অনুগ্রহ।
.
হযরত মুঅাযাহ বিনতে আবদুল্লাহ ( রা) থেকে বর্নিত, জনৈক মহিলা এক সময় হযরত আয়েশা ( রা) কে বললেন, কারও হায়েয দেখা দেয়ার পর যখন সে পবিত্র হয়, তখন কি সে তার হায়েয কালীন নামাযগুলার কাযা আদায় করতে হবে?
আয়েশা ( রা) তাকে বললেন- তুমি কি হারুরিয়া? ( হারুরিয়া খারেজি সম্প্রদায়ের একটি উপদল)।
তিনি আরও বললেন- নবি কারীম ( সা) এর যামানায় তিনি আমাদেরকে হায়েযকালীন নামাযের কাযা আদায় করার আদেশ করেননি।
অথবা তিনি বলেছেন, আমরা এরূপ করতাম না।
( অর্থ্যাত হায়েযের দিন গুলার কাযা আদায় করতে হবে না)।
.
নীরা বলে উঠল- আপনার জ্ঞানের প্রসংশা করতে হয়। ইচ্ছা করছিল না বলতে! কিন্তু না বললে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ হবে।
– উহু! নাহ! আল্লাহর দেওয়া জ্ঞান। উনাকে বল। আল্লাহ দিয়েছেন বলেই বলতে পারছি । মাশা আল্লাহ বলো?
– নীরা মুখ ভেংচি কাটল।
.
নীরা ঈশামের দিক থেকে ফিরে অন্য দিকে মুখ করে মনে মনে বলল-
মাশা আল্লাহ!
.
নীরা রুম থেকে বের হবে এমন সময় ঈশাম পিছন ফিরে ডাক দিল:
– নীরু!!!!!
.
নীরার হৃদপিন্ড যেন ধরাস করে উঠল….
carnation e book