ঘাস ফড়িং 17,18,19,20

ঘাসফড়িং

ঘাসফড়িং –১৭

~~~~~~~~~~
সাদাত গবাক্ষের পাশে গরম চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দন্ডায়মান ।সেথা থেকে গরম ধোঁয়া উড়ছে। সে কাপে চুমুক দেয়ার পূর্বেই ডান হাত দিয়ে একটি চেয়ার নিজের দিকে টানলো।আপাতত লম্বা বৈঠক দিবে সে।গোধূলিলগ্ন বিদায় নিলেই রাফিয়ার সাথে তার বিয়ে হবে।অথচ তার মুখাবয়বে উদবেগের ক্ষীণ আভাসও নেই। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার মস্তিষ্কে নিরুদ্বেগের উপস্থিতি বিরাজমান।ঠোঁটের কোণে এক চিলতে রহস্যজনক হাসি।সে সমস্ত কিছু উপেক্ষা করে বহির্ভাগে দৃষ্টি রাখলো।প্রকৃতি কুহেলিকার চাঁদরে আচ্ছাদিত।বুঝাই যাচ্ছে শীতঋতুর আগমন অস্তিত্বশীল। পৃথ্বীতে ( পৃথিবী) শৈত্যপ্রবাহের উপদ্রব ঢের।যদিও বা ঢাকা শহর নাতিশীতোষ্ণ ( গরম ঠান্ডার দুয়ের মাঝামাঝি) অঞ্চল। তবুও সাদাত ঠান্ডা অনুভব করলো।সে গাত্রে থাকা চাঁদরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিলো।অমনি তার মস্তিষ্কে অতীতের দৃশ্যপট উঁকি দিলো।একদিন ভোর বেলা সাদাত ওরফে মাফি, হাঁটতে হাঁটতে তাকিয়াদের উঠোনে গিয়ে হাজির হলো।ছোট্ট তাকিয়া একটি ব্রাশ নিয়ে উঠোনের মাঝ বরাবর দন্ডায়মান। মাফিকে দেখামাত্রই সে ফিক করে হেসে মাফিকে কাছে ডাকলো।
” ভাইয়া এদিকে আসো দেখে যাও একটা জিনিস?
“মাফি হন্তদন্ত হয়ে তার সম্মুখে গিয়ে বললো।কি জিনিসরে?
” দেখো আমাদের কবুতরের বাচ্চাটি শীতে খুব কষ্ট পাচ্ছে।তাই আমি তাকে আমার মখমলের চাঁদর দিয়ে ঢেকে দিয়েছি।
“মাফি ভ্রু জোড়া উচু করে বললো।আরে তুই পাগল হয়েছিস? বাচ্চাটি তো মারা যাবে। মাফি দৌড়ে কবুতরটির কাছে গেলো।তার ধারণা বাস্তবে রুপ নিলো।তাকিয়া চাঁদর দিয়ে বাচ্চাটিকে এমন ভাবে আবৃত করে রেখেছে যার দরুন বাচ্চাটির শ্বসল গ্রহনে অসুবিধা হচ্ছিলো।ফলস্বরূপ সে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলো।তাকিয়া এ কাণ্ড দেখে বিন্দুমাত্রও অপেক্ষা করলোনা।উচ্চরবে কাঁদতে আরম্ভ করলো।মাফি বুঝানোর চেষ্টা করলো।তোকে আরেকটা কবুতর আমি কিনে দিবো।তবুও কাদিস না।কিন্তু সে ব্যর্থ হলো।তাকিয়ার বাবা মেয়ের কান্নার আওয়াজ শুনে স্বীয় কক্ষ থেকে উঠোনে আসলেন।মেয়েকে কোলে তুলে নিলেন।মাথায় হাত বুলালেন,ললাটে চুম্বন করলেন।ধীরে ধীরে তাকিয়া শান্ত হলো।বাল্যস্মৃতি মনে হতেই সে ফিক করে হেসে দিলো।অতঃপর চায়ের কাপে দৃষ্টি রাখলো।এখন আর সেথা থেকে ধোঁয়া উড়ছেনা।গবাক্ষের গ্রিলে সুক্ষ্ম জলবিন্দু দেখা যাচ্ছে।ঠান্ডা হাওয়া অকপটে কক্ষে প্রবেশ করছে। সাদাত জানালা লাগিয়ে দিলো।দ্রুত চা শেষ করে আনিধাকে ফোন দিলো।
” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া বলো?
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। প্রমান গুলো বের করেছিস?
” হ্যাঁ ভাইয়া।
“আমার ফোনে সেন্ড কর।
আনিধা কিছু একটা সাদাতের ফোনে পাঠালো।সাদাত মুচকি হাসলো।তার মা কক্ষে প্রবেশ করলো।হেনাবেগমের ঠোঁটের কোণেও দেখা যাচ্ছে রহস্য জনক হাসি।
_____
আজও রাফিয়াদের ফ্ল্যাটে মানুষজনদের ভীর।রেবেকা একদমি ধারনা করেনি ছেলেপক্ষরা নিজে থেকেই তাদের কাছে আসবে?কিন্তু এসেছে।অবশ্য তারা প্রস্তাব নিয়ে না আসলে রেবেকা নিজেই যেত।আর যাবেনাই বা কেন এত কষ্ট করে বিয়েটা ভাঙা হলো।এত সহজেই কি ছেড়ে দেওয়া যায়? রেবেকা যদি নিজে থেকেই রাফিয়ার জন্য প্রস্তাব নিয়ে যেত তাহলে তাকিয়া হয়তো এতটা কষ্ট পেতনা।কিন্তু সাদাত নিজে রাফিয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে।তাকিয়া বিষয়টি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা।এখন কষ্ট পেয়েই বা কি হবে? যা হবার তা হবেই। রাফিয়াকে সাজানো হয়ে গেছে।পাশে তাকিয়া বসে আছে।কিছুক্ষন পরপরই সকলের অগোচরে অক্ষি থেকে গড়িয়ে পড়া নীর মুছে নিচ্ছে।একটা সময় মানুষ কষ্ট পেতে পেতে ধৈর্যের সাথে আর পাল্লা দিয়ে উঠতে পারেনা।প্রতিটি ক্ষন তার কাছে বিষাক্ত মনে হয়। বুকের ঠিক বা পাশে সে অনুভব করে পর্বতের ন্যায় ভারী ভারী জিনিসের উপস্থিতি। সে চায় চিৎকার করে কান্না করতে কিন্তু পারেনা। কুলুপ দিয়ে তার ওষ্ঠ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সে ডুবে যায় বিষাদের অতল গহ্বরে। তাকিয়াও ঠিক এমন হয়ে গেছে।তবুও সে ধৈর্যের চাদরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে, এর একটাই কারন।আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরাআন শরীফে বলেছেন।
তোমরা ধৈর্য ধারন করো।ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো। আল্লাহকে ভয় করো।অবশ্যই তোমরা সফলকাম হবে।
সুরা,আলে ইমরান।
আর জেনে রাখো আল্লাহর ওয়াদা সত্য।
সুরা রুম।
বাস্তবেই আল্লাহ সত্যবাদী। সুতরাং ধৈর্য হারানোর কোন প্রশ্নই আসেনা।যখন কষ্টের মাত্রা বেশী হয়ে যায়।তখন তাকিয়া মুনাজাতে কান্না করে তৃপ্তি খুঁজে নেয়।যেহেতু আল্লাহ নিজেই বলেছেন ধৈর্যের প্রতিদান তিনি নিজ হাতে দিবেন।সুতরাং হতাশ হওয়াটা কখনো যুক্তির মধ্যে পড়েনা।এরপরও আমাদের বড় পরিচয় হলো আমরা মানুষ। আমাদের রাগ,ক্ষোভ,ঘৃনা,ভয়,আনন্দ,দুঃখ,এসব অনুভূতি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।সুতরাং এ গুলোর কোনো একটি যখন আমাদের উপর ভর করে সেগুলো না চাইলেও আমাদের মুখাবয়বে প্রকাশ হয়ে যায়।কিন্তু এতকিছুর পরেও অধৈর্য হওয়া মোটেও সমীচীন নয়।তাকিয়া নিজেকে এভাবেই সান্ত্বনা দিয়ে শান্ত করে।
কাজী চলে এসেছেন। মেহমানদের আনাগোনাও বেশি। গ্রাম থেকে তাদের অনেক আত্বীয় স্বজনরা এসেছেন।আনিকাও এসেছে।সে কিন্তু একা না সাথে তার বরও এসেছে।আনিকার বর বেশ রসিক মানুষ।তিনি সাদাতকে দেখেই রসিকতা করে বললেন।
“হোয়াট প্রবলেম ব্রাদার? তোমার তো এখানে থাকার কথা না?
” সাদাত মৃদু হেসে বললো।আই নো,
“ইউ লাভ রাফিয়া?
” নো,ভাইকি সব সময় ইংরেজি বলেননাকি?
“আরে না বাংলাদেরশ থেকে ঢাকা আসলামতো তাই একটু ইংরেজি বলার ট্রাই করতেছি।তা যাইহোক যাকে ভালোবাসোনা ভাই, তাকে বিয়ে করবে কেন?
” বিয়ে কেন করবো সেটা পরে বলি।আগে,,,
আনিকার বর সাদাতকে থামিয়ে বললো।আই নো তুমি ঢাকা কোথায় সেটা আমাকে জানাবে।সেটা আমার মুখস্থ।তুমি না হয় ২য় প্রশ্নের উত্তর দাও।
সাদাত আর তার বন্ধুরা আওয়াজ করে হেসে বললো।ভাই বেশ মজার মানুষতো আপনি।ইয়াসিন বললো।ভাই শুধু অপেক্ষা করেন।নিজেই সব উত্তর পেয়ে যাবেন।
“ওকে ব্রো।
ইয়াসিন এর এক মামা একজন পুলিশ অফিসার। সাদাত তাকেও দাওয়াত করেছে।তিনি কাজীর পাশে গিয়ে বসেছেন।কাজী বিয়ে পড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সাদাত সকলের থেকে অনুমতি নিয়ে বললো।আমি কিছু কথা বলতে চাই।তাকে অনুমতি দেওয়া হলো।সে তার পকেট থেকে ছোট একটি সাউন্ড বক্স বের করলো।এবং সকলের উদ্দেশ্যে বললো। আশা করি আপনারা আমার কথা মনোযোগ সহকারে শুনবেন।সকলের মধ্যে একধরনের চাপা উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে।সাদাত উপস্থাপনা স্বরুপ কিছু একটা বলে সাউন্ড বক্স অন করলো।
আসসালামু আলাইকুম কে রাফিয়া?
“হুঁ আমি। কিছু বলবি?
” হুঁ রে তোর কি খবর। শেষ অবধি তাকিয়ার বিয়েটা কিভাবে আটকালি?
“আর বলিসনা। তাকিয়া সরল মনের মানুষ ওকে ইমোশনালী ব্ল্যাকমেইল করেছি।এতেই বিয়ে করবেনা বলে না করে দিয়েছে।
উপস্থিত সকলের দৃষ্টি এখন রাফিয়ার দিকে।সবাই রাফিয়ার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আছে।রেবেকার ললাটে উৎকন্ঠার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।রাফিয়ার অন্তরিন্দ্রিয় বলছে। উচ্চরবে বলতে, এটা বন্ধ করো।কিন্তু নতুন বউয়ের কাছে থেকে অবশ্য কেউ এমনটা আশা করেনা।সে তার স্থানে শান্ত মেয়েদের মত বসে আছে।তার শ্বাস প্রশ্বাস প্রগাঢ় হচ্ছে।হৃদপিণ্ড অস্বাভাবিক মাত্রায় কাপছে।একমাত্র সেই জানে এরপর কি হতে চলেছে।
সাউন্ড বক্স থেকে এখনো আওয়াজ আসছে।আনিধার কন্ঠ শুনা যাচ্ছে।ওহ আমিতো ভেবেছিলাম তোর বাবাকে যেভাবে মেরে ফেলেছিস এভাবেই ভাইয়া কে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিস।তাই বুঝি তাকিয়া বিয়ের কথা না করেছে।
” তুই পাগল হয়ে গেছিস।বাবাকে মা মেরেছে সম্পত্তির জন্য।আর সাদাতকে মেরে ফেলার প্রশ্নই আসেনা।সে আমাকে না ভালোবাসলেও আমি তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি।
“শেষ পর্যন্ত রাফিয়া নিজেকে সংবরন করতে পারলোনা। চেঁচিয়ে বলে উঠলো। এগুলো বন্ধ করো। আমি এসব কিছুই জানিনা।আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।রেবেকা স্বীয় স্থান থেকে এক চুলও নড়ছেন না।কিছুক্ষনের জন্য তার কাছে মনে হচ্ছে পুরো অম্বর সে স্বীয় মাথায় বহন করে আছে।মেহমানদের সকলের অগ্নিদৃষ্টি মা, মেয়ের দিকে। আনিকার দাদি ধৈর্য ধরে রাখতে পারলেননা।তিনি এসে রেবেকার গালে চপেটাঘাত করে বসলেন।মেহমানদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে।শুধু তাকিয়া এক কোনে বসে আছে।এখন তার চোখে কোনো নীর নেই।আনিকা পাশে বসে তার কাধে হাত রাখলো।তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো।কষ্ট নিসনা সখি। তার কর্ণে যেন কোন কথাই যাচ্ছেনা।সে কিছুক্ষনের জন্য মুর্তিতে পরিণত হয়েছে।সে এসব শুনার জন্য কখনো প্রস্তুত ছিলনা।পুলিশ এতোক্ষনে রেবেকার হাতে হাতকড়া পড়িয়ে ফেলেছেন।রাফিয়া পুলিশের হাতে পায়ে ধরছে যেন তার মাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।কিন্তু এখন আর কিছুই করা যাবেনা।যদিও আজকের দিনটি অনেক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে।কিন্তু তাতে কি অপরাধীতো শাস্তি পেয়েছে এটাই অনেক।প্রতিটি অপরাধীর জন্যই থাকে এমন কিছু লাঞ্চনাদায়ক শাস্তি । যেটা সহ্য করার ক্ষমতা হয়তো তার মন, দেহ এখনও অর্জন করেনি।সময় থাকতে আগেই সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।
______
পুরো দু সপ্তাহ কেটে গেছে । এ ক’টা দিন তাকিয়ার জীবন অনেক রকম ভাবে পরিবর্তন পরিবর্ধন করে দিয়েছে।আনিকার দাদি,আর আনিকা এতদিন তার পাশে থেকে তাকে স্বাভাবিক করেছে।সে তার বাবার এহেন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলোনা।মানসিক ভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।দু তিনদিন হলো সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। রাফিয়াকে গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের পুরাতন বাড়িতে না।রেবেকা গ্রামে একটি নতুন বাড়ি বানিয়েছিলো সেখানেই রাফিয়াকে পাঠানো হয়েছে।তার খালামনিরা এক এক করে রাফিয়াকে সঙ্গ দিচ্ছেন।রেবেকা বর্তমানে জেলে আছেন।সাদাতও খুব ভেঙে পড়েছে।এর এক মাত্র কারন হলো তাকিয়া।সে শুধু চেয়েছিলো অপরাধীরা শাস্তি পাক।তাকিয়াকে আঘাত করা কখনোই তার উদ্দেশ্য ছিলোনা। সাদাত মনে মনে পণ করে নিয়েছে আজ সে তাকিয়ার কাছে এজন্য ক্ষমা চাইবে।যেহেতু আজ তাদের বিয়ের প্রথম রাত্রি আশা করা যায় তাকিয়া ক্ষমা করে দিবে।
গল্প সম্পর্কে আপনাদের সঠিক মতামত জানাবেন।রেবেকা জেলে, রাফিয়া কিন্তু না।সুতরাং সাদাত আর তাকিয়ার বিবাহিত জীবন কতটা সুখকর হবে বলা যাচ্ছেনা।কিন্তু আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করবো তাকিয়াকে জিতিয়ে দিতে।তবে আপনারা অবশ্যই আমার পাশে থেকে আমাকে উৎসাহ দিবেন 🙂
ঘাসফড়িং –১৮
18. ~~~~~~~~~~~
তাকিয়া কক্ষে বসে বসে অপেক্ষমান রয়েছে।কিন্তু এখনো সাদাতের আসার খবর নেই।পুরো কক্ষ খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে বিছানার মাঝ বরাবর তাকিয়া আর সাদাতের নাম লিখা হয়েছে।খাটের চার পাশে হরেক রকম ফুল দিয়ে লম্বালম্বি করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।ফুল গুলো যেন ঝুলে ঝুলে তাকিয়াকে দেখছে।তাকিয়া অনেকক্ষণ খাটের এক পাশে বসে রইলো।তার ধারণা ১২ টার মধ্যেই সাদাত কক্ষে প্রবেশ করবে।কিন্তু তা হলোনা।তাকিয়া সময়নিরুপক যন্ত্রটির দিকে তাকালো।হ্যাঁ পরিস্ফুট দেখাচ্ছে ১২ টা ১০ বেজেছে। তাকিয়া এখন কিছুটা বিরক্ত। এমন একটি দিনেও কি মানুষ এমন করে? ইচ্ছে করছে সাদাতকে খুজে নিয়ে আসতে। কিন্তু সেটা সম্ভব না।কারন সে নতুন বউ।৬, ৭ গজের লম্বা শাড়ি গাত্রে পেচিয়ে কারো জন্য অপেক্ষা করা অতিশয় আয়েশের কথা নয়।তবুও তাকে থাকতে হচ্ছে।তার উপর খাটে ফুলের ছড়াছড়ি। তাকিয়ার ফুলে এলার্জি রয়েছে।সে ভ্রুজোড়া কুঞ্চিত করে উঠে দাড়ালো। দাঁড়িয়ে আঙুল গুনে গুনে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিলো।প্রথমত এই শাড়ি টি খুলে একটি সুতি শাড়ি পড়বে তাহলে গরম কম লাগবে।দ্বিতীয়ত খাট থেকে ফুল গুলো যত্নের সহিত সরিয়ে দিবে।যেই ভাবা সেই কাজ।সে শাড়ি পরিবর্তন করলো। এখন তার গাত্রে রয়েছে ফিরোজা রঙের একটি সুতি শাড়ি।তাকিয়া ড্রেসিং টেবিলের সম্মুখে গিয়ে দাড়ালো।আয়নায় দৃষ্টি রাখলো।নিজের প্রতিবিম্ব সচক্ষে দেখে লজ্জায় শির নত করে নিলো।মুখাবয়বে প্রকাশ পেলো এক রাশ ব্রীড়া ( লজ্জা) সে ঘুরে দাড়ালো।এখন খাট থেকে ফুল গুলো সরাতে হবে।কিন্তু কিছু একটা মনে হতেই আবারো আয়নার সম্মুখে গেলো।আয়না দেখার দোয়া পাঠ করলো।এটা অবশ্য তাকিয়ার দৈনন্দিন অভ্যাস।এরপিছনেও যথেষ্ট কারন রয়েছে।মহৎ কারন টি হলো এটা রাসুল সাঃ স্বয়ং উম্মতি মুহাম্মাদিকে এই দুয়া শিখিয়ে গিয়েছেন।
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আয়নার দেখলে) বলতেন-
اَللَّهُمَّ حَسَّنْتَ خَلْقِيْ فَاَحْسِنْ خُلُقِيْ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা হাস্সানতা খালকি; ফা আহসিন খুলুকি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছো; কাজেই (এভাবে) আমার চরিত্র সুন্দর করে দাও (মিশকাত)
দোয়াটির গুরুত্ব হলো
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ দোয়া উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রত্যেক মানুষই আয়নায় নিজের চেহারা দেখেন। আর তা দেখে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ও অনুকরণে নিজের সুন্দর চেহারার মতো নিজের চরিত্র সুন্দর করার জন্যই আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন।কতই না সুন্দর ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তারপরও তিনি সুন্দর চরিত্রের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন! যার চরিত্রের সত্যয়ন করে আয়াত নাজিল হয়েছে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা-বলেন
وَ اِنَّکَ لَعَلٰی خُلُقٍ عَظِیۡمٍ
অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’
আল্লাহ তাআলা কোরআনে যার চরিত্রকে মহান বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনিই আয়নায় চেহারা দেখে এই দুয়া টি পড়তেন।সুতরাং উম্মতে মুহাম্মাদির সকলের উচিত, সুন্দর ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে বেশি বেশি এ দোয়া করা।বুঝাই যাচ্ছে এই দুয়াটির বদৌলতে আল্লাহ আমাদের চরিত্র সুন্দর করে দিবেন।তাই আমলটি আমাদের করা উচিত। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি এ দোয়াটি পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সে দুয়া পাঠ শেষ করেই ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার গুলো খুলতে থাকলো।ওজু করার দরুন অক্ষির কাজল,ওষ্ঠের লিপস্টিক উধাও। ড্রয়ারে কোনো প্রকার সাজগোজের সরঞ্জাম পাওয়া গেলোনা।না পাওয়াটাই স্বাভাবিক।এই কক্ষ টি সাদাতের। সাদাততো আর এসব দিয়ে অভ্যস্ত না তাইনা? তাকিয়া নৈরাশ্যদের অন্তর্ভুক্ত হলোনা।সে তার ব্যাগ থেকে সাজগোজের সরঞ্জামাদি বের করে সেজে নিলো।আবারো আয়নার সম্মুখে আসলো।দোয়া পড়লো।তৃপ্তির হাসি হেসে চলে গেলো ২য় কাজ টি সম্পন্ন করতে।তাকিয়া ফুল গুলো সরিয়ে উপাধান গুলো ঠিক করলো।সে ঈষৎ অবাক হলো।উপাধানের নিচে একটি চিরকুট রাখা।তাকিয়া ভাবাত্মক হৃদে চিরকুট খুললো। সেখানে বড় বড় করে লেখা আছে।
“মনে প্রশ্ন জাগছে নিশ্চয়ই। আমি কেন এখনো ঘরে আসিনি।প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক। আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিচ্ছি।আমি সেদিন তোমার ব্যবহারে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।কোন দিন বলতো?তুমি নিশ্চয়ই এখন সেদিনের কথা ভাবছো।যেদিন বিয়ে করবেনা বলে আমাকে সকলের সামনে ফিরিয়ে দিয়েছিলে।
কিন্তু তোমার ধারনা ভুল।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি তুমি বারবার ফিরিয়ে দিলেও আমি তোমার কাছেই ফিরে যেতাম।আমি বুঝাতে চাচ্ছি ওইসময়ের কথা, যখন আমি তোমাকে ফোন দিয়েছিলাম, তুমি তোমার সমস্যা গুলো আমাকে শেয়ার না করেই ফোন রেখে দিয়েছিলে।সত্যি বলতে তুমি কখনোই আমাকে গুরুত্বপূর্ণ কেউ মনে করোনি।তা যাই হোক এখন মুল কথায় আসি। আমি একমাস যাবত তোমার সাথে কোনো কথা বলবো না। তোমাকে উপেক্ষা করে চলবো।এটাই তোমার শাস্তি, এখন ঘুমিয়ে পড়ো। ও আরেকটা কথা আমার কারনে যদি কখনো কষ্ট পেয়ে থাকো আমাকে ক্ষমা করে দিও।
এই ক্ষুদ্র একটি বিষয়কে তিনি এতো বড় করলেন? এটা মোটেও উচিত হয়নি।কে বললো সে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না। সবখানে এক লাইন বেশি বুঝে, আসুক কাল। দেখি আমার থেকে কিভাবে দুরে থাকে।আমার অধিকার আমি জোর করে হলেও আদায় করে নিবো।তাকিয়া স্বীয় স্থানে দাঁড়িয়েই কিছুক্ষণ এভাবে বিড়বিড় করলো।আজ আর ঘুম হলোনা তার।সাদাতকে তার জীবনে দেওয়ার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত। তাই সে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাড়ালো।
ফজরের নামায পড়ে সাদাত ড্র্যয়িং রুমে বসে আছে।বরাবরই ইচ্ছা করছে নিজের কক্ষে যেতে, তাকিয়াকে এক নজর দেখতে। কিন্তু কোন উছিলা খুজে পাচ্ছেনা।সারারাত গেস্টরুমে থেকে মশার কামড় খেয়েছে।মেহমানের আনাগোনা নেই। তাই হয়তো বউকে একা রেখে গেস্ট রুমে থাকা গেছে।আজ কি করবে? আজ বাড়িতে মেহমান দিয়ে ভরে যাবে।থাক,, আপাতত সে এসব ভাবতে চাচ্ছেনা।শুধু উছিলা খুঁজছে কিভাবে কক্ষে প্রবেশ করা যায়।হুঁ একটা বুদ্ধি মাথায় এসেছে, সেটা কাজে লাগানো দরকার।কক্ষে প্রবেশ করে বলবে সে তার টুপি নিতে এসেছে। এই বুদ্ধি কাজে লাগানো যেতে পারে।যেই ভাবা সেই কাজ, সে স্বীয় কক্ষে প্রবেশ করলো। তাকিয়াকে দেখা যাচ্ছেনা।
হয়তো ওয়াশরুমে আছে।না, সেখানেও নেই।
বেলকনিতে আছে হয়তো।সাদাত বেলকনিতে উঁকি দিলোনা।সে তাকিয়ার আসার অপেক্ষা করতে থাকলো। সে যে তাকিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে সেটা কিছুতেই বোঝানো যাবেনা।সেতো তার বউয়ের সাথে বিরাট রোষ করেছে তাইনা? সে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করার অভিনয় করতে থাকলো।আপাতত এতেই সে উপভোগ করছে।কিছুক্ষন পর তাকিয়া পিছন থেকে তাকে জরিয়ে ধরলো।সাদাত মুহুর্তটির জন্য অপেক্ষা করেনি।তার উদ্দেশ্য ছিলো। এক নজর তাকিয়াকে দেখেই চলে যাবে।কিন্তু তা আর হলো না।
তাকিয়া ক্ষীণ আবেগী স্বরে বললো।
“কাল কোথায় ছিলেন?
” সেটা তোমাকে কেন বলবো?
“তাহলে কাকে বলবেন।আপনার কি আরেকটা বউ আছে?
“নেই ঠিক আছে।কিন্তু তোমায় বলবো না।
ছাড়ো আমায় যেতে হবে।
” না বললে ছাড়বো না।
“ঘরে কেউ প্রবেশ করতে পারে।
” কেউ করবেনা কারন আমার শশুর শাশুড়ী যথেষ্ট ধার্মিক। তার অনুমতি ব্যতিরেকে কারো কক্ষে প্রবেশ করেনা।
“আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু আমি রেগে আছি তোমার সাথে, তাই ছেড়ে দাও।
” কিভাবে রাগ করে আমাকে দেখানতো।
“যেভাবে আমি আছি সেভাবেই।
” কই আপনিতো মুচকি মুচকি হাসছেন।এটা কোন গ্রহের রাগের নমুনা।
“এটা পৃথিবী গ্রহের রাগের নমুনা।ছাড়ো এবার।
” আচ্ছা ছাড়বো তবে একটা শর্তে।
“কি শর্ত আজ একই কক্ষে আমরা থাকবো।এবং চাঁদ দেখবো।
” সেটা বলা যাচ্ছেনা।
“আপনিতো খুব বিরক্তিকর লোক।যান ছেড়ে দিলাম।
” অবশ্য না ছাড়লেও আমি রাগ করতামনা
“তাকিয়া এবার হাসলো। দাঁত বের করে হাসলো।তারমানে আপনার মনে একটা আর মুখে আরেকটা।থাক বাদ দিন,দেখুনতো আমার শাড়ি পড়া কেমন হয়েছে।আর আমাকে কেমন লাগছে।
“সাদাত এক হাত দিয়ে কপোল ছুয়ে খুব মনোযোগ সহকারে তাকিয়াকে দেখলো।কিছুক্ষণ পর সব গুলো দাত বের করে হাসতে থাকলো।হাসার পিছনেও অবশ্য যথেষ্ট কারন রয়েছে।যে কেউ তাকিয়াকে দেখলেই বুঝতে পারবে সে মনে হয় শাড়িটাকে পুরো শরীরে পেঁচিয়ে রেখেছে।ঠিক মত কুচিও দিতে পারেনি।কিভাবেই বা দিবে, সেতো এর আগে কখনো শাড়ি পড়েনি।যারা শাড়ি পড়তে জানেনা তাদের কাছে এটা খুবই কষ্ট সাধ্য ব্যপার।তবে ভুল ধরতে সবাই পারে।
তাকিয়া ঠোঁট উল্টিয়ে বললো।
” এভাবে হাসছেন কেন।আমি কি কখনো শাড়ি পড়েছি?
“পড়নি কেন? জানোনা বিয়ের পরে এটা পড়তে হয়।আগে শিখে রাখার দরকার ছিলো।
” ও তাই বুঝি? যুক্তিতো খুব সুন্দর করেই দিতে জানেন।এবার আমার যুক্তি শুনুন।যেহেতু আমি শাড়িটি পড়তে পারছিনা।তাই আপনি এখন আমায় শাড়ি পড়িয়ে দিবেন।
“ইশ এর মধ্যে আমি নেই আমি চললাম।
” কোথায় চললেন।
“আম্মুর কাছে যাচ্ছি।
” আচ্ছা অপেক্ষা করুন।তাকিয়া হাতে একটি লিপস্টিক নিয়ে সাদাতের পাঞ্জাবিতে লাগিয়ে দিলো।
“এই এটা কি করলে?
” কই কিছুনাতো।আপনার পাঞ্জাবির রং শুধু সাদা, তাই আমি একটু লিপস্টিক দিয়ে লাল করে দিলাম।
“এটা একদম ঠিক হইনি।আমি এখন বাহিরে যাবো কিভাবে?
” সমস্যা কোথায়? আগে যেভাবে যাচ্ছিলেন, এখন সেভাবেই যাবেন।
“তোমাকে লিলিস্টিক কিনে দেওয়াই ভুল হয়েছে আমার।
” তাকিয়া ক্ষীন হেসে বললো।কি স্টিক?
“যেটাই হোক এসব আমার জানার দরকার নেই।সরে পড়ো আলমারি থেকে পাঞ্জাবি বের করবো।
“না আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো।
” তাহলে আমিও দাঁড়িয়ে থাকবো।
“আমি আপনাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো।
” তাহলে আমিও দেখবো।
“দেখুন সমস্যা নাই।আমিতো এটাই চাই।
” আচ্ছা আমারো কোনো সমস্যা নাই।আমিও চাই তুমি আমাকে দেখো।
“আপনি আগের মতই রয়ে গেলেন।শুধু আমাকে বিরক্ত করেন।
” ইশ ছোট বেলা তুমি আমাকে বিরক্ত করতে। আমি না।
“তো কে করবে?আমিই সারাজীবন জালাবো।আর কারো এই অধিকার নেই।
” কারো নেই?
“না কারো নেই।বক বক বাদ দিয়ে বলুন আমাকে কেমন লাগছে।
” ডাইনির মত।
“কি?এখন কিন্তু লিপস্টিক পুরোটা আপনার পাঞ্জাবিতে লাগিয়ে শেষ করবো।
” এ না না এটা করোনা।আমি বলছি আগে আলমারিটা খুলতে দাও?
“আচ্ছা খুলুন।
“আলমারি খুলছে না কেন?
” তালাবদ্ধ থাকলে কিকরে খুলবে?
“তারমানে চাবি তোমার কাছে?
সাদাত অসহায় ভঙ্গিতে বললো। চাবিটা দাও।
” দিবো ২ শর্তে। আগে বলবেন আমাকে কেমন লাগছে।এরপর আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিতে হবে।
“পাগল নাকি? আমি কি জীবনে শাড়ি পড়েছি? যে তোমাকে পড়িয়ে দিবো।
“আমি কিছু জানিনা। চাবি পেতে চাইলে শাড়ি পড়াতেই হবে।আর নয়তো আজ এ ঘর থেকে বের হতে পারবেননা।কারন পাঞ্জাবিতে আপনার বউয়ের লিপস্টিকের দাগ।বুঝতে পারছেন ব্যপারটা।
” তোমার জালায় আর বাচিনা।আসো পড়িয়ে দিচ্ছি।ঠিক আধঘণ্টা পর সাদাত আবিস্কার করলো।মূলত শাড়ি টি সুন্দর করে বানানো হইনি।
শোনো তোমাকে একটা কথা বলি।তুমি শাড়ি ব্যাগে ভরে রেখ। আমি যেয়ে ফেরত দিয়ে আসবো।
কি ব্যাপার হাসছো কেন?
” হাসবো না তো কি করবো।?
শাড়ি পড়াতে পারেননা এটা আপনার দুর্বলতা। এখন শাড়িকে দোষ দিচ্ছেন?
“আচ্ছা যেটাই হোক। তোমার শাড়ি পড়ার দরকার নেই।অন্য কিছু পড়ে নাও।
তাকিয়া কিছু বলার পূর্বেই কপাটের অপাশ থেকে হেনা বেগমের আওয়াজ ভেসে আসলো।তাকিয়া মা সাদাতের চাচিরা এসেছে। তাদের সাথে দেখা করে যা।
“আসছি মা।
” এবার অন্তত চাবিটা দাও। কেউ আমাকে এ অবস্থায় দেখে ফেললে কত টা লজ্জাজনক হবে বিষয়টি বুঝতে পারছো।
“আহারে কি লজ্জা মাফি সাহেবের।শুধু মা ডেকেছে।আর নয়তো আপনার ১২ টা বাজিয়ে ছাড়তাম।
” কি জল্লাদ বউরে বাবা। এখন বাজে ৭ টা সে নাকি ১২ টা বাজিয়ে ছাড়বে।
তাকিয়া চাবিটি সাদাতকে দিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে তার ড্রেস পরিবর্তন করে নিলো।তার ধারণা সাদাত চলে গিয়েছে।কিন্তু সাদাত যায়নি।সে এখনো আলমারির পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকিয়া সাদাতকে দেখে মুচকি হাসলো।এবং কপাটের দিকে এগিয়ে গেলো।পিছন থেকে ডাক পড়লো।
“পরি শোনো?
” তাকিয়া ফিক হেসে ঘুরে তাকালো।
“তোমাকে কেমন লাগছে শুনবেনা?
” তাকিয়া হাসলো।মুখাবয়বে লাজুকভাব প্রকাশ পেলো।
“সাদাত বললো।শুনেছি জান্নাতি হুর নাকি অনেক সুন্দরী।তাদেরকে দেখার অনেক সখ ছিলো।কিন্তু আজ আল্লাহ আমার সে সখটাও পূরণ করে দিয়েছেন।তুমি আমার জীবনে না আসলে জানতামই মানুষ এতটা সুন্দর হতে পারে?তা যাই হোক আমি কিন্তু হুরদের সাথে সংসার করবো বুঝলা?
তাকিয়ার মুখাবয়বে এখন আর লাজুক ভাব নেই।সেখানে এখন ক্রোধের আগমন।সে দু দাত কিড়মিড় করে সাদাতের দিকে এগুতে থাকলো।অমনি আবারো হেনার ডাক পড়লো।
” কিরে তাকিয়া আয় মা।
“তাকিয়া সাদাতের দিকে তাকিয়ে বললো।আমি এই প্রতিশোধ নিবো।চিন্তা করবেননা।হুর দের সাথে সংসার করা বের করবো।আমি আসতেছি অপেক্ষা করেন।যদি আপনার ১২ টা না বাজিয়েছি।
“সাদাত অসহায় ভঙ্গিতে বললো।আরে ভুলে মুখ থেকে বের হয়ে গেছে।
“তাকিয়া কথা বাড়ালোনা।মেহমানদের কাছে চলে গেলো।সাদাত দু হাত ভাজ করে তাকিয়া চলে যাওয়া দেখতে থাকলো।আর অস্ফুট স্বরে বললো পাগলী একটা। আমি পৃথিবীর সব চেয়ে সুখি পুরুষটি কারন আমি তোমায় পেয়েছি।
আসছে।
কালকের পর্বে জানতে পারবেন রাফিয়ার নতুন ষড়যন্ত্রের বিষয় সুতরাং মিস করা যাবেনা।🙂
গল্প সম্পর্কে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন 🙂
ঘাসফড়িং –১৯
. ~~~~~~~~~~~
১৯.
দু’দিন হলো মেহমান রা বিদায় নিয়েছেন। মেহমানরা থাকাকালীন সময়ে তাকিয়া খুব খুশি ছিলো।কারন তারা যথেষ্ট মিশুক। সাদাতের চাচাতো বোনের সাথে আলাদা একটা ভাব জমে গেছে তার।মেয়েটা সারাক্ষন শুধু ভাবি জানো অমুক হইছে ভাবি জানো তমুক হইছে।তার ভাষ্যমত অনুযায়ী তাকিয়ার হাসি সুন্দর। সে অবশ্য এখানে থাকা কালীন এ গূঢ় রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। কিন্তু যাওয়ার আগে সে তার ভাবীর হাসির রহস্য বের করে গিয়েছে।
ভাবি তোমার হাসি রহস্য কি জানো?
“নাতো আমি জানিনা তুমি বলোতো কি?
” প্রথমত হাসির সময় তোমার উপরের, নিচের দাত গুলো বেরিয়ে পড়ে।
২য়তো তুমি চোখে হাসো।এ জন্যই তোমার হাসি সুন্দর। তাকিয়া তার কথা শুনে সাদিনও হেসে ছিল।তবে মুচকি হাসি।সেদিন আর দাত গুলো বের করে হাসি দেয়নি।হয়তো লজ্জা পেয়েছিলো।
বিয়ের পাঁচ ছয়দিন হয়ে গেছে এখনো সাদাতের রাগ ভাঙাতে পারছেনা।সে চিঠিতে একমাসের কথা উল্লেখ করেছে,তার ভাবভঙ্গিতে বুঝা যায় সে এই এক মাস পূর্ণ করেই ছাড়বে।দুজনের একই কক্ষে বসবাস।কিন্তু একজন থাকে খাটে আরেকজন মেঝেতে।এ নিয়েও তাদের ঝগড়া হয়েছে।সাদাত চায় খাটে শুতে।কিন্তু তাকিয়া নাছোড়বান্দী,সে কিছুতেই খাট ছাড়বেনা।বাধ্য হয়েই সাদাতকে মেঝেতে ঘুমাতে হয়।অবশ্য তাকিয়ার কাছে সাদাত অপরাধী। কে বলেছে তাকে চিরকুটে একমাসের কথা উল্লেখ করতে!তা যাই হোক তাকিয়া, সাদাত দুজনই সুযোগ পেলে দুজনকে খোচাতে ভুলেনা।তাকিয়ার এ বাড়িতে এসে যেন দুঃখরা বিদায় নিয়েছে। প্রতিটি কাজ সে সানন্দের সাথে করে।খুব উপভোগ করে।সে তার শাশুড়ী কে এখন আর রান্না করতে দেয়না। খুব যত্নের সহিত সে এ দায়িত্ব টা নিজের কাধে উঠিয়ে নিয়েছে।আজও তাকিয়া নিজ হাতে রান্না করেছে।রুই মাছ রান্না করা হচ্ছে। মাছ দুটোর মাথা বড় করে কেটে রাখা হয়েছে। একটা তার শশুরের জন্য আরেকটা তার বরের জন্য।কড়াইয়ে তেল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।ভরা তেলে ডুবিয়ে মাছ গুলো ভাজা হচ্ছে। পুরো বাড়িতে ঘ্রাণ ছোটাছুটি করছে।
হেনা পাশে দাড়িয়ে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।এটা এভাবে কর, ওটা ওভাবে কর।অকস্মাৎ হেনার ফোন বেজে উঠলো। সাদাত ফোন দিয়েছে।হেনা ফোন কর্ণে তুলে নিলো।তাকিয়ার অন্তরিন্দ্রিয় হেনার দিকেই নিবদ্ধ
আসসালামু আলাইকুম, আম্মু আমি দুপুরে বাসায় আসতে পারবোনা।
” কেন কি হয়েছে।
“ইয়াসিনের বাবা আচানক অসুস্থ হয়ে পড়েছে।তাকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছে আমি সেখানেই আছি।
” আচ্ছা সাবধানে থেকো বাবা।লোকটা খুব ভালো মানুষ ছিলো।হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো।
“এখনও সঠিক বলতে পারছিনা। জানলে তোমাকে জানাবো।
কথা শেষ করে সাদাত ফোন রেখে দিলো।তাকিয়া জিজ্ঞাসু নেত্রে শাশুড়ীর দিকে চেয়ে আছে।হেনা সাদাতের বলা কথা গুলো তাকিয়াকে জানালো।তাকিয়া নিরবতা অবলম্বন করলো।সে
রান্না শেষ করে তার কক্ষে যেয়ে বসলো।ফ্যানের গতিবেগ পুরোপুরি বাড়িয়ে দিয়েছে।বড্ড ক্লান্ত লাগছে তাই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।অক্ষিকোটর ফ্যানের পাখার দিকে আটকে আছে।মস্তিষ্কে সাদাতের চিন্তা বিদ্যমান রয়েছে। সাদাত জানিয়েছে সে বিকেলে আসবে , তাই সেও বিকেলে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।খুব গরম লাগছে, গোসল করা দরকার।কিন্তু আপাতত তার লিখতে ইচ্ছে করছে।মাঝে মাঝেই তার লেখিলেখি করার সখ জাগে।বিয়ের পর যেন ঘনঘনই সে খাতা কলম নিয়ে বসে যায়।সে টেবিলে যেয়ে বসলো।খাতা কলম বের করে লিখা শুরু করলো।
(আমি সবসময় আমার খোপা বেধে রাখি।
কেন জানো?
আমি চাইলেই পারি আমার দিঘল কালো কেশ গুচ্ছ দিয়ে পুরো মহীকে মোহিত করতে।
কিন্তু আমি করিনা, কারন আমি চাই তোমাকে আমার প্রেমে মোহিতো করতে ।তাই আমি তোমায় আমার খোপায় বেধে রাখি)
আর লিখতে ইচ্ছে করছেনা।যতক্ষণ অবধি গোসল না শেষ হবে ততক্ষন আর লেখা লেখি করে শান্তি লাগবেনা।লেখালেখি করার জন্য মস্তিষ্ক আর মনের একাগ্রতা অতিশয় প্রয়োজনীয়। কিন্তু ক্লান্ত দেহে এ একাগ্রতার উপস্থিতি থাকা অসম্ভবই বটে।তাকিয়া ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিলো।আগে গোসল করবে। এরপর নামাজ পড়বে।এরপর সাদাতের জন্য অপেক্ষা করবে।যদি সে না আসে তাহলে লিখতে বসবে।যে ভাবা সেই কাজ।সে আলমারি থেকে কাপর নিয়ে চলে গেলো গোসলঘরে।
_____
গাছের শাখী, পত্র পল্লব গুলো একদম নিস্তেজ হয়ে গেছে।সবাই সবার জায়গায় থেকে নিরবতা অবলম্বন করছে। চৈত্র মাস ছায়ার বিন্দুমাত্রও দেখা নেই।সহসা দেখা গেলেও, রোদ্ররা তাদের গিলে খেয়ে ফেলে।পক্ষীকুলেরাও বড় ক্লান্ত,তাদের ক্যাচক্যাচানি সবসময় শুনা যায়না।কারণ রোদের প্রকট খুব বেশি। এই কাঠফাটা রোদ্দুরেও রাফিয়া বাড়ির উঠোনে বসে আছে।অবশ্য তার সমস্যা হচ্ছেনা। কারন উঠানের মাঝখানেই একটি বড় কড়ুইগাছ আপন মনে দাড়িয়ে আছে।অনেক টুকু জায়গায় সে রোদদের আসন পেতে বসতে দিচ্ছেনা।ছায়ারা সেখানে আনন্দে দৌড়াদৌড়ি করছে। তার খুব পানি তেষ্টা পেয়েছে। মনে হচ্ছে এক জগ পানি এক শ্বাসে খেতে পারবে।কিন্তু স্বীয় জায়গা থেকে উঠতেও ইচ্ছে করছেনা।
রাফিয়া ললাটে ভাজ ফেলে মনিকাকে ডাকলো।
” মনিকা,
” জি আফা কিছু লাগবো।
“হুম এক গ্লাস পানি দাও খুব তৃষ্ণা পেয়েছে।
” আনতাছি।অপেক্ষা করেন।
মনিকা তাদের বাসায় কাজ করে। তার মা জেলে যাওয়ার পর সে বড্ড একা হয়ে গেছে, তাই মনিকাকে এনেছে।
“নেন আফা পানি।
” রাফিয়া এক শ্বাসে পানি খেয়ে শেষ করলো।অবশ্য পানি খাওয়ার সুন্নত হলো তিন শ্বাসে খাওয়া এবং পাত্রে শ্বাস না ফেলা। কিন্তু রাফিয়া সেটা ভুলে গিয়েছে।
“আফা একখান কথা কই।
” বলো।
“আপনি নিজেরে আর কত কষ্ট দিবেন।আপনি যার জন্য এতো কষ্ট পাইতাছেন। হেয় দেহেনগা দিব্যি হাইসা খেইলা জীবন পার করতাসে।
” সে যেনো আর হাসতে না পারে সেই চিন্তায় করছিলাম।
“কি কন আফা কিছুই তো বুঝতাছিনা।
” বুঝিয়ে দিলেই বুঝবে।
আর কাজ টা তুমিই করবে।
“কি কন আফা, এডি কওয়া পাপ। এগুলা মুখেও আইনেননা।
” তোমার মা তো অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য টাকা পাচ্ছোনা তাইনা?
“হ আফা ডাক্তার কইছে মেলা টাকার ব্যাপার।
” আমি তোমায় টাকা দিবো।
“সত্যি আফা খুব খুশি লাগতাছে।
রাফিয়ার মস্তিষ্কে দুষ্ট বুদ্ধির উদয় হচ্ছে।সে নতুন এক ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। তার ওষ্ঠতে দেখা যাচ্ছে এক প্রকার রহস্য জনক হাসি।
______
সাদাত বিকেলে এসে ফ্রেশ হয়ে তার কক্ষে খেতে বসলো।তাকিয়া খাচ্ছেনা।চুপ করে বসে আছে।সাদাত তাকিয়াকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছে আর বলছে।ইশ কি মজা, দারুন।সে চাচ্ছে তাকিয়া লোভে পরে খেতে বসুক।তাকিয়াযে খায়নি এটা সে উপলব্ধি করতে পেরেছে।সাদাতের খাওয়া দেখে তাকিয়া কক্ষের কপাট শক্ত করে লাগালো।এরপর আবারো সাদাতের পাশে এসে বসলো।এবং তার হাতে জোরে একটি কামড় বসিয়ে হাতের খাবার নিজের মুখে ভরে নিলো।
” উহ এভাবে কেউ কামড় দেয়।তুমি খেতে চাচ্ছো সেটা আগে বললেই পারতে।
“বেশ হয়েছে আপনি বুঝেননি আমার ক্ষুধা পেয়েছে।খাইয়ে দিলেননা কেন?
” ওহ এটাই আমার দোষ, নেও প্লেটের সব খাবার এখন তুমি খাবে।
“খাইয়ে দিতে হবে।
” পারবোনা।
“তাহলে আবার কামড় দিবো।
” না, না,খাইয়ে দিচ্ছি।
“এইতো এখন লাইনে এসেছেন।
হা করুন আমি আপনাকে খাইয়ে দিবো।
” না করবোনা।
“আচ্ছা ঠিকাছে তাহলে কামড় দেই।
” এই না না, হা করলাম।
দুজনেই দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি তে বিকেল টা পার করলো।
,
আসছে।
আমি একটু ব্যস্ত তাই আজকের লেখাটা লিখে নিজেই তৃপ্তি পেলামনা।তবুও যেহেতু আপনাদের বলেছি গল্প দিবো তাই পোস্ট করছি।ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।এবং আমাকে সাপোর্ট করবেন।আপনাদের সাপোর্ট আমাকে লিখার ক্ষেত্রে ভিষণ উৎসাহ জাগায়😊
ঘাসফড়িং -২০
______________
আজ জাফর সাহেবের রাগ দিগুণ পরিমানে বেড়েছে।না বেড়ে উপায় আছে।সকালে খাবার খেয়ে বের হয়েছেন।পথিমধ্যেই এক মেয়ে পিছনে লেগেছে।বয়স আর কত হবে? এই ১৭, ১৮। ষাট, পয়ষট্টি বয়সের একজন লোকের কাছে এই বয়সের মেয়েদেরকে বাচ্চাই মনে হয়।মেয়েটির সাথে ছোট একটি ব্যাগ রয়েছে।হয়তো কাপড়ের ব্যাগ। মেয়েটি পুরো ঢাকা শহরে আর কাওকে পেলোনা? জাফর সাহেবের পিছনেই পড়তে হলো।মেয়েটিকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।
জাফর সাহেব এক রাশ বিরক্ত নিয়ে বললেন। এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার? আমার পিছন পিছন আসছো কেন?
“সাহেব, আমারে একটু আশ্রয় দিবেন?
আমার ঢাকা শহরে থাকার মতন কেউ নাই।
” কেউ নাই, তাহলে ঢাকা এসেছো কেন?
“মায়ের শরীল ডা ভালা না। ডাক্তার কইছে মায়েরে বাচাইতে হইলে, মেলা টাকার প্রয়োজন।আমনেরে দেইখা খুব ভদ্র মনে হইলো।তাই আমনের পিছনে ঘুরতাছি।সাহেব আপনের বাসায় আমারে একটা কাজ দিয়া দেন।
” আমার বাসায় অবশ্য কাজের লোক দরকার।কিন্তু আমি তোমাকে নিতে পারবোনা।তোমাকে চিনিনা জানিনা।বিশ্বাস করি কি করে বলো।
“সাহেব আমনে আমার মায়ের লগে কথা কইলেই আমারে বিশ্বাস হইবো।বিশ্বাস করেন সাহেব আমি খুব অসহায়।
” না না তারপরেও আমি তোমাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবোনা।এর চেয়ে বরং আমি তোমাকে কিছু টাকা দিচ্ছি তা রেখে দাও।
এই এই কি করছো পায়ে ধরছো কেন?
পা ছাড়ো।
“না সাহেব ছারমুনা। যতক্ষন না আপনি আমারে একটা কাম না দিবেন?
আমরা খুব গরীব, সাহেব।।
” আচ্ছা উঠো।কাজ দিবো তোমায়।তোমার মায়ের নাম্বার দেও।আগে কথে বলে নেই তার সাথে।জাফর সাহেব কথা বললেন আগন্তুক মেয়েটির মায়ের সাথে। এখন কিছুটা বিশ্বাস করতে পারছেন যেন।তিনি কথা শেষ করে মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন।
নামকি তোমার?
“ছামিয়া।
“আসো আমার সাথে।
“কই যামু সাহেব?
” আমার বাসায়।
জাফর সাহেবের মেজাজ খুব খিটখিটে লাগছে।তবুও তিনি নিজেকে দমন করে রাখছেন।যে করেই হোক সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করা যুক্তিযুক্ত না।জাফর সাহেব বাড়িতে পৌঁছে গেছেন।তাঁকে অন্যমনস্ক লাগছে।তিনি এটা নিয়েই বেশি চিন্তিত যে হেনাকে কি জবাব দিবেন।হেনা নিশ্চয়ই একজন অজ্ঞাত মানুষ কে আশ্রয় দেয়া পছন্দ করবেনা।অবশ্য তার পছন্দ না করার পিছনেও সে কতক গুলো যুক্তি দাড় করাতে পারবে। আর আমি সেইটুকুও পারবো না।
জাফর সাহেবের ভাবনা গুলোই বাস্তবে পরিণত হলো।
হেনা তাকে আড়ালে নিয়ে বললেন।
“এতোবড় রিক্স নেওয়া ঠিক হচ্ছে?
” আমি কি করবো বলো।মেয়েটাকে দেখে অনেক অসহায় মনে হচ্ছিলো।আমি তাকে অনেক বুঝিয়েছি।তার মায়ের সাথেও কথা বলেছি।আচ্ছা সমস্যা নেই। কইদিন রেখে তারপর বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে?
“আমার কাছে বিষয়টি একদম ভালো লাগছেনা।
সেদিন বাধ্য হয়ে মেয়েটাকে তারা আশ্রয় দিয়েছিলো।কারন তারা নিরুপায় ছিলো।তাকিয়াও বিষয়টি পছন্দ করেনি।কিন্তু সে তার শশুর শাশুড়ীর কথার উপরে কথা বলা অনুচিত মনে করেছে।
—–
তাকিয়া স্বীয় কক্ষে একা বসে আছে।সাথে ছামিয়াও আছে।ছামিয়া হলো তাদের নতুন কাজের মেয়ে। ছামিয়া মেঝেতে বসা। তাকিয়া তাকে খাটে বসতে বললো।
” না আফা খাটে বসতে পারবোনা।
“সমস্যা নেই বসো।তোমার প্রথম পরিচয় হচ্ছে তুমি একজন মানুষ। প্রতিটি মানুষেরই ভালো করে বেঁচে থাকার অধিকার আছে।তাছাড়া আমাদের সকলকে এক আল্লাহ নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং এখানে ভেদাভেদ করা অনুচিত।
” আফা সত্যি আপনে খুব মহান।শুধু আপনে না এ বাড়ির প্রতিটা মানুষ খুব ভালা।
“হুঁ, তাই ভালো মানুষ গুলোকে কখনো ঠকিওনা।
” ছামিয়া যেন অপ্রস্তুত ছিলো।মুহুর্তেই নিজেকে প্রস্তুত করে বললো। কিযে কন আফা আমি কারে ঠকামু।
“তাদের কথার মাঝখানে কলিংবেল বেজে উঠলো। ছামিয়া উঠে দাড়ালো।কিন্তু তাকিয়া তাকে বসিয়ে দিয়ে বললো।
কিছু সময় আমি তোমাকে নির্ধারণ করে দিবো।এ সময়গুলোতে তুমি কখনো দরজা খুলবেনা।
” কেন আফা।
“কারন এ সময়গুলো আমার শশুর,এবং আমার হাসবেন্ড আসার সময়।
আচ্ছা আফা।
” ওহ আরেকটা কথা। তুমি কি জান্নাতে যেতে চাও?
“জী আফা চামুনা কেন।
” তাহলে এখন থেকে পর্দা করবে।
তাকিয়া দরজার দিকে আগাতে আগাতে বললো।হাদীসে এসেছে যে ব্যাক্তি পর্দা করবেনা।সে জান্নাতেও যেতে পারবেনা।এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবেনা।
“সাদাত মুচকি হেসে বললো। দরজা খুলতে এতো দেরী করলে কেন?
” একজন নতুন মেয়ে এসেছে।তার সাথে কথা বলছিলাম।তাই কিছুটা দেরী হয়েছে।
“সাদাতের হাতে কাচাবাজারের ব্যাগ থাকায় তার জুতা খুলতে কষ্ট হচ্ছে।বিষয়টি তাকিয়ার দৃষ্টি গোচর হলে সে উবু হয়ে বললো,
আমি খুলে দিচ্ছি।
সদাইগুলো রানড়বায় রেখে তারা তাদের কক্ষে ঢুকলো।তাকিয়া ছামিয়াকে বললো।মা কে ডাক দেওয়ার প্রয়োজন নেই।তাকে ঘুমাতে দেও।তিনি গোসলঘরে ঢুকলেই আমি এসে গুছিয়ে দিয়ে যাবো।
” সাদাত আজ খুব ক্লান্ত। ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে ফ্যানের নিচে বসেছে।গাত্রে থাকা কাপড় গুলো এখনো খুলেনি।তাকিয়া ক্ষীণ মুচকি হেসে সাদাতের কাছে গেলো।এবং তার পাঞ্জাবীর বুতাম গুলো খুলে দিয়ে কোমল স্বরে বললো।গোসলখানায় আপনার জামা এবং গামছা রাখা আছে। গোসল সেরে নিন।তাহলে ভালো লাগবে কিছুটা।
“তুমি পাশে আছো।আপাতত এতেই ভালো লাগছে।
” তাকিয়া বিরস মুখে বললো।আপনি শুধু মিথ্যা বলেন।
“কে বললো।বউকে কেউ মিথ্যা বলে?
” তাহলে রাতে আপনি নিচে থাকেন।আর আমি খাটে থাকি।এ নিয়ম কেন?
“সাদাত সামনের দাত গুলো বের করে হেসে বললো।আরে পাগলী এটা তো ক্ষীণ অভিমান।
” আজকে দেখেন আপনাকে কি শাস্তি দেই।
“এই শাস্তির কথা বলোনা।আমি কিন্তু তোমার শাস্তি গুলোকে খুব ভয় পাই।
” আচ্ছা বলবোনা।যান এখন গোসল করে আসুন।আব্বু চলে আসবে। আমি খাবার রেডী করছি।
“আচ্ছা মহা রানী, জোহুকুম
সাদাত গোসল খানার দিকে পা বাড়ালো।
,,
সবাই খেয়ে শুয়ে পড়লো।প্রতিদিনের মত আজও সাদাত নিচে বেড করে থাকলো।তাকিয়া কিছুই বললোনা।মাঝরাতে সাদাতের ঘুম ভেঙে গেলো।কারো গরম নিশ্বাস সে অনুভব করতে পারলো।মোবাইলের টচ জ্বালিয়ে যা দেখলো তাতে মোটেও অবাক হলোনা।তাকিয়া তাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে।সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সাদাত তাকে ডাক দিলোনা।টচের ক্ষীণ আলো দিয়ে তাকিয়াকে দেখতে থাকলো।মেয়েটাকে ঘুমের মধ্যেও বড্ড সুন্দর দেখাচ্ছে।ইচ্ছে করছে তার মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেতে।সাদাত তাকিয়ার মাথায় একটি চুমু একে দিলো।পরক্ষণেই তার মাথায় এক দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো।
এখন যদি তাকিয়াকে রেখে ড্রয়িং রুমে চলে যাই তাহলে কেমন হয়? সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাকে না দেখলে হয়তো বিস্মিত হবে।সকালে উঠেই হাজারটা কথা শুনাবে।তাকিয়ার অভিমানী কথা গুলো সাদাত খুব উপভোগ করে।মেয়েটা একদম গালফুলিয়ে সাদাত কে হাজারটা কথা শোনায়।
সাদাত ড্রয়িং রুমে যেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।সারাদিনের ক্লান্ত শরীর সোফায় লাগাতেই ঘুমপরীরা এসে হাজির।
কিছুক্ষন পর সাদাতের আবারো ঘুম ভেঙে গেলো।এবারো একি কাণ্ড তাকিয়া তাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।সাদাত ভয় পেয়েছে।এখন যদি তার মা অথবা বাবা জেগে যায় তাহলে কি কেলেঙ্কারিটাই না হবে?
সাদাত ফিসফিস করে তাকিয়াকে ডাকলো।
” তাকিয়া তুমি পাগল হয়ে গেছো?এখন যদি আম্মু আব্বু জেগে যায়।তাহলে কি হবে বুঝতে পারছো?
“না বুঝতে পারছিনা।
” যাও রুমে যেয়ে শুয়ে থাকো।
“যাবোনা।
” বুঝতে চেষ্টা করো।এই কি করছো।কেউ দেখে ফেলবে তো।
“দেখে ফেলুক তবুও সরবোনা।
” তুমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছো।তাকিয়া দেখো আম্মুর রুমের লাইট জ্বালানো।
“তো আমি কি করবো।
” আচ্ছা বলো কি করলে তুমি রুমে যেতে রাজি হবে।
“আপনি যদি আপনার সব অভিমান ভুলে যান তাহলে।
” না এটা সম্ভব না।
“তাহলে আমি ঘুমাই।আমাকে আর ডাকবেননা।
” এই না না যাও আজকে থেকে কোন অভিমান নেই।
“সত্যি
” হুঁ
“আচ্ছা তাহলে রুমে যেয়ে আপনি আমার সাথে খাটে শোবেন তো?
” হুঁ
“এইতো ভদ্র ছেলে।
তাকিয়া বুঝে গেছে কিভাবে সাদাতকে টাইট দিতে হবে?দুজনেই বালিশে মাথা ঠেকালো।অমনি সাদাত একটি বালিশ সরিয়ে দিয়ে তাকিয়াকে নিজের কাছে টেনে নিলো।কক্ষে মধুচন্দ্রিমার মৃদু আলো প্রবেশ করছে।তাকিয়া লজ্জাবতী ফুলের মত কাবু হয়ে আছে।সাদাত তার কর্ণলতিকায় ওষ্ঠ নিয়ে বললো।তুমি বলেছিলে আমার সাথে চাঁদ দেখবে।আসো ছাদে যাই আমরা।
” এখন?
“হ্যাঁ এখনই।
দুজনেই কংক্রিটের বিল্ডিংয়ের উপরের আচ্ছাদনে দাঁড়িয়ে আছে।চাঁদের দিকে অনিমিখে চেয়ে আছে।তাকিয়ার মুখাবয়ব থেকে লাজুক ভাব এখনো যায়নি।চাঁদের মৃদু আলোর আলোকরশ্মি দিয়ে সাদাতকে দেখে যাচ্ছে।দুজনই নিরব,সাদাত নিরবতা ভেঙে বললো।আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি তাকিয়া।কখনো আমাকে ছেড়ে যেওনা। তাকিয়া কিছু বললোনা।সে মৌনাবলম্বন করে সাদাতের সম্মুখে গিয়ে দাড়ালো।তার চোখে চোখ রাখলো।স্বীয় ললাটকে সাদাতের ললাটের সাথে ঠেকিয়ে ক্ষীণ আওয়াজে বললো।আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি মাফি।শুধু এ জনম ভালোবেসে তৃপ্ত হবোনা আমি,আমার তোমাকে পরের জন্মেও প্রয়োজন। জান্নাতেও আমি তোমার সাথেই থাকতে চাই।তাকিয়ার প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাসের গতিবেগ সাদাত পরিমাপ করতে পারছে।যামিনীর আবছা আলোয় দুজন মানুষ দুজনকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে,তাদের পাশের সর্বস্ব কিছু এটাই সাক্ষী দিচ্ছে,এখনের পরিবেশ খুব রোমাঞ্চকর হতে চলেছে।এখানে নেই কোনো পাখির কুজন,নেই কোনো ঝিল্লির রব,গগনের ক্ষনে ক্ষনে রয়েছে নক্ষত্রের আনাগোনা।তরু ডাল পাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে হিম শীতল বাতাস।তাকিয়া সাদাতের স্পর্শে ক্ষণে ক্ষণে কেপে উঠছে, সাদাত তাকিয়া কর্ণলতিকা থেকে চুল গুলো সরালো,এবং তার কর্ণকুহরে ঠোঁট ঠেকিয়ে বললো।আমরা আজ আর চাঁদ দেখবোনা।এখন চলো আমাদের কক্ষে ফিরে যাই।তাকিয়া ক্ষীণ আওয়াজে শুধু বললো,হুঁ, সাদাত আর অপেক্ষা করলোনা।তাকিয়াকে স্বীয় ক্রোড়ে তুলে নিয়ে নিজেদের কক্ষে এগুতে থাকলো।দুজনেই দুজনকে ভালোবাসার জন্য প্রস্তুত
আসছে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *