ঘাস ফড়িং 21,22,23

ঘাস ফড়িং

ঘাস ফড়িং -২১

————————
২১.
তুমি চিন্তা করোনা। তোমাকে এখান থেকে বের করবোই।তোমার অপমান মানে আমার অপমান।
“রাফিয়া তুমি আমাকে কিভাবে বের করবে?
” সময় হলেই জানতে পারবে।
“এখন তুমিই এক মাত্র আমার ভরসা।
” চিন্তা করোনা মা। সব আবার আগের মত হয়ে যাবে।তুমি শুধু ধৈর্য ধরো।
অনেকদিন পর রাফিয়া তার মাকে দেখতে এসেছে।এখানে আসলেও বেশিক্ষন কথা বলার সময় পায়না।দ্রুতই স্থান ত্যাগ করতে হয়।আজও তাই হয়েছে।রাফিয়া মায়ের জন্য খুবই চিন্তিত। ছোট বেলা থেকেই সে তার মাকে বাবা মনে করতো।তার প্রতিটি বিষন্নতায় তিনি ছিলেন ছায়ার মত।
আজ সকাল থেকেই সামিয়া মুখ ভার করে রেখেছে। সকলের অজান্তে দু এক ফোটা পানি চোখ থেকে গড়িয়েও পড়ছে।মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে।তার অবস্থা খুব অবনতির দিকে যাচ্ছে।তার চিকিৎসার জন্য অগাধ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এতো টাকা সে পাবে কোথায়?
রাফিয়া একটা সুযোগ দিয়েছে।কিন্তু সেটাও সে করতে পারছেনা।তাকিয়ার ব্যবহারে সে মুগ্ধ। কি করেই বা এই ভালো মানুষ টাকে সে ঠকাবে?সেদিনের কথা মনে পড়লেই তার চোখে পানি চলে আসে।
সামিয়ার পা কেটে গিয়েছিলো।তাকিয়া তার পা বেধে দেয়ার জন্য হাতের কাছে কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলোনা।অবশেষে নিজের ওড়না থেকে কিছু অংশ ছিড়ে সামিয়ার পা বেধে দিলো।একজন কাজের মেয়ের সাথে এই অমায়িক ব্যবহার ভুলার মত না।সামিয়া সত্যিই নিরুপায় হয়ে গিয়েছে।সে তার ঘরের এক কোণায় বসে বসে চোখের পানি ফেলছে।আজ তাকে রান্না ঘরে তেমন দেখা যায়নি।তাকিয়াই সবকিছু নিজের হাতে করেছে।সামিয়ার মন খারাপ বিধায় তাকে বিন্দুমাত্রও বিরক্ত করেনি। দুপুরের খাবারের সময় হলে সামিয়ার দরজায় নক পড়লো।তাকিয়া এসেছে তার হাতে ভাতের প্লেট।
সে প্লেটটি বিছানার একপাশে রাখলো।
এবং বললো।
“তুমি খাবার খেতে যাওনি তাই আম্মু বললো খাবার টা তোমার রুমে দিয়ে যেতে।
আমি নিজেই তোমাকে খাইয়ে দিতাম। কিন্তু আমার সাহেব রুমে আছে।তাকে সময় দিতে আমি খুব আগ্রহ বোধ করছি।
তুমি খেয়ে নিও কেমন?
” আফা।
“বলো।
” আপনে খুব ভালা মানুষ। আপনেরে না দেখলে হয়তো বিশ্বাসই করতামনা। কারন আমি ভিন্ন কিছু শুনেছিলাম।
“তাকিয়া কপালে ভাজ ফেলে বললো। বুঝলামনা তুমি কি আমাকে আগে থেকেই চিনতে?
” সামিয়া নিজেকে প্রস্তুত করে বললো।না চিনতামনাতো।
“ওহ।আচ্ছা তুমি খেয়ে নাও।
তাকিয়া দরজা অবধি চলে গেলো ।তারপর আবার ঘুরে দাড়ালো। শাহাদাত আঙুলের অগ্রভাগ দিয়ে ভ্রু চুলকাতে চুলকাতে বললো।
” শোনো।
” জী আফা কন।
“কেউ একজন তোমাকে ফোন দিয়ে খুজছিলো?
” কে খুজছিলো?
“আমি জানিনা আম্মুর ফোনে ফোন দিয়েছে।তুমি কথা বলে দেখ।
” আইচ্ছা।
তাকিয়া আর কোন কথা বাড়ালোনা।সে তার কক্ষের দিকে পদব্রজে এগিয়ে গেলো। সাদাত শুয়ে শুয়ে বই পড়ছে।তার বই পড়ার প্রতি আগ্রহ প্রচুর। সময় পেলেই সে বই নিয়ে বসে যায়।তাকিয়া সাদাতকে দেখে মুচকি হাসলো।সাদাতও ঠিক তাই।সে তার পাশে গিয়ে বসলো।সাদাত বই রেখে তাকিয়ার দিকে মনোনিবেশ করলো।
“এখন একটু ঘুমাও। শরীর ভালো থাকবে।সারাদিনতো অনেক কাজ করেছো।
“আজ ঘুমাবোনা।
” কেন?
“আপনি আমাকে রেখে চলে যান তাই।
সাদাত হাত দিয়ে তাকিয়াকে কাছে টানলো।তাকিয়ার মাথা তার কাধে রেখে বললো।
আমি কেন যাই তুমি বোঝো না? কাজ না করলে টাকা কোথায় পাবো?
“হুঁ বুঝি দেখেই তো তাকিয়ে থাকবো।ঘুম থেকে উঠলে এমনিতেই মন খারাপ থাকে।আবার আপনাকে যদি না দেখি তাহলে আরো বেশি মন খারাপ হয়ে যায়।
” আচ্ছা তুমি যেটা ভালো মনে করো।
“না থাক আপনি যেটা চাইবেন সেটাই হবে।মাথায় হাত বুলিয়ে দিন আমি ঘুমিয়ে পড়বো।
” আচ্ছা মহারানী দিচ্ছি,আপনি ঘুমান। আমি আছি আপনার পাশে।
তাকিয়া এতোক্ষনে ঘুমের রাজ্যে চলে গেছে।জানালার পর্দার একপাশ দিয়ে কক্ষে সূক্ষ্ম আলোকরশ্মি প্রবেশ করছে।এ ক্ষণ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে নিশ্চিত। সুতরাং পর্দা সুন্দর করে দিয়ে দেয়া উচিত। সাদাত উঠতে চাইলো।কিন্তু ব্যর্থ হলো।সে সিদ্ধান্ত নিলো।আগে তাকিয়ার মাথা বালিশের উপর রাখা উচিত।এরপর জানালার পর্দা ঠিক করা উচিত।সে তার সিদ্ধান্তমত কাজ করলো।পর্দা সুন্দর করে ঠিক করে আবারো তাকিয়ার পাশে এসে বসলো।মানুষটি ঘুমিয়ে আছে তবুও তাকে কতটা সুন্দর লাগছে।যেন মুগ্ধতা শুধু বেড়েই যাচ্ছে।তাকিয়ার মুখে কিছু চুল বিরক্ত করার জন্য বসে আছে।সে কিছুক্ষণ পরপর নড়ে উঠছে।বুঝাই যাচ্ছে বেচারি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সাদাত বিষয়টি লক্ষ্য করে চুল গুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিলো। আজ সত্যিই তার বাসা থেকে বের হতে ইচ্ছে করছেনা।বউয়ের পাশে থাকতে ইচ্ছে করছে।হাটু ভাজ করে এক হাতে ভর দিয়ে বসে বউকে শুধু দেখে যেতেই ইচ্ছে করছে।কিন্ত অনেক ক্ষেত্রে সবার ভালোর জন্য নিজের ইচ্ছেকেও বিসর্জন দিতে হয়।তাই হয়তো তার ইচ্ছেও বিসর্জন দিতে হচ্ছে।
তাকিয়া যখন চোখ খুলবে তখন হয়তো সাদাতকে পাশে দেখবেনা।এতে তার ক্ষীণ মন খারাপ হবে বটে। তারপরেও সে মানিয়ে নিবে।কারন ওইযে? সবার ভালোর জন্য নিজের ইচ্ছেকে বিসর্জন দিতে হয়।
_____
সামিয়া ফোনের অপর পাশে থাকা মানুষটির সাথে আজ একটু কড়া গলায়ই কথা বলছে।নিজেকে কত সংযত রাখা যায়।চারিত্রিক দিক থেকে সামিয়া অসম্ভব ভালো একটা মেয়ে।কিন্তু সে নিতান্তই অসহায়। মা অসুস্থ। যতই হোক মাকে ভুলে যাওয়া সম্ভব না।।এসব কারনেই সামিয়া অপর পাশে থাকা মানুষ টির কাছে জিম্মি হয়ে গিয়েছে। সামিয়া কঠিন বলছে।
“আপনি যা কইতাছেন। তা একবারও ভাবছেন?
আল্লাহ আরশ কাইপা উঠবো।
” তুমি যদি তোমার মাকে সুস্থ দেখতে চাও তাহলে তো এতটুকু করতেই হবে।জানোইতো তোমার মা এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ।ইশ কতইনা কষ্ট হচ্ছে তার। জানো কাল তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। কিযে অবস্থা হয়েছে। তাকে দেখলে যে কারো চোখে পানি চলে আসবে।যাই হোক তোমার সাথে এতো কথা বলে সময় নষ্ট করে লাভ নাই। তুমি না হয় বাড়িতেই চলে আসো। এবং মায়ের মৃত্যু স্বচক্ষে দেখো।
“না আফা এডি কইয়েননা।আমি আপনের ইচ্ছা পূরণ করমু। তবুও আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকা দেন।
” হু ভালো। এবার লাইনে এসেছো।আচ্ছা রাখি তাহলে।সব খোজ খবর আমাকে সময় করে জানিয়ে দিও।আর চিন্তা করোনা তোমার মায়ের চিন্তা আমি করছি।
সামিয়া ফোন কেটে দিলো।ইচ্ছে করছে ফোনটাকে ভেঙে ফেলতে।কিন্তু তা মোটেও উচিত নয়।কারন এটা অন্য কারো ফোন সুতরাং এর উপর রাগ দেখানো মোটেও যুক্তির মধ্যে পড়েনা।সামিয়া জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকলো।কি করলে সে এসব থেকে মুক্তি পাবে।কিন্তু বেশিক্ষন চিন্তা করতে পারলোনা।এর পূর্বেই তার অক্ষি নীর দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।স্বীয় স্মৃতিতে উদীয়মান হলো অতীতের কথা।সামিয়ারা এক ভাই এক বোন।তার বাবা তার মাকে কোনো কারণ ছাড়াই ছেড়ে চলে গিয়েছে।তিনি এখন অন্য কাওকে নিয়ে সংসার পেতেছে।নিজের যে দুটি সন্তান রয়েছে এ ব্যাপারে তিনি উদাসীন। এত কঠিন সময়েও সামিয়ার মা তাদের ফেলে যায়নি।তার মামারা চেয়েছিলো তার মাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবেন।কিন্তু তার মা তার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন।তিনি সোজাসাপটা জানিয়ে দিয়েছেন।তিনি আর কারো সাথে পরিণয় সুত্রে আবদ্ধ হবেননা।তিনি শুধু তার ছেলে মেয়েদের নিয়ে শান্তিতে বাচঁতে চান। আর আজ সেই মাকেই সামিয়া হারাতে বসেছে টাকার অভাবে।সামিয়া ডানহাত উলটো করে স্বীয় চোখ মুছলো।পিছন থেকে তাকিয়ার কণ্ঠধ্বনি শুনা গেলো।
“সামিয়া কি হয়েছে তোমার?
” সামিয়া নিজেকে প্রস্তুত করে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো।কিছুনা আফা।মায়ের কথা মনে পড়ছে।
“কেন কি হয়েছে তার?
” কিছুনা।এমনিই মনে পড়ছে।
“তার সাথে কথা বলো হালকা লাগবে।তুমিতো দেখি ভাতও খাওনি।সত্যি করে বলোতো কি হয়েছে তোমার?
” সামিয়া নিশ্চুপ।
“আচ্ছা বুঝেছি আমার কাছে বলতে চাচ্ছোনা।কোনো ব্যাপার না।তুমি বরং এক কাজ করো। আসরের আজান হয়ে গিয়েছে।অজু সেরে নামাজ পড়ে নাও।আর আল্লাহকে তোমার সমস্যার কথা গুলো জানাও।দেখবে তোমার মন হালকা লাগবে।
” ঠিকাছে আফা আমি যাচ্ছি।
সামিয়া তাকিয়ার কথা অনুযায়ী গোসলখানায় চলে গেলো।সে পূর্বে নামাজের প্রতি তেমন মনোযোগী ছিলোনা।কিন্তু এখন ধীরে ধীরে নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে।ভালো মানুষদের সংশ্রবে থাকার এই এক ফায়দা।
আসছে।
তো দেখা যাক রাফিয়া তার ষড়যন্ত্রে সফল হতে পারে কিনা? আমারতো মনে হচ্ছে পারবেনা যেহেতু সামিয়া অনুশোচনায় ভুগছে।তবে আপনাদের কি মনে হচ্ছে কমেন্টে জানান আমায়।🙂
ঘাসফড়িং -২২
_____________
২২.
পৃথিবী জুড়ে সকালের রোদ্দুর বিরাজমান। হালকা শিতল বাতাসের আনাগোনা রয়েছে । কিছুক্ষন বাদেই সূর্যিমামা স্বীয় তেজদীপ্ত আলো মহীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিবে।তারা কক্ষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে অন্ধকার কে শুষে বের করে নিয়ে আসবে। তবে তারা মানুষের মনের লুকাইয়িত অন্ধকার কে কখনো বের করতে পারবেনা।এ ক্ষমতা তাদের দেয়া হয়নি। স্বয়ং রাব্বুল আলামিনই জানেন মানুষের মনের গভীরে কি চলে।
সাদাত কইদিন যাবত খুব অসুস্থ। জ্বরের প্রকটতা খুবই বেড়েছে। তাকিয়া এক মুহুর্ত ও তার আড়াল হচ্ছেনা।স্বামীর সেবা যত্নেও কোন প্রকার কৃপনতা করছেনা। তাকিয়া এখন তার শাশুড়ির বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে। মনের আনাচে কানাচে বিষন্নতা ভরপুর। প্রিয় মানুষের কষ্টে বুঝি এভাবেই মন খারাপ হয়।তাকিয়া নিশ্চুপ রবে বাহিরে তাকিয়ে আছে। পিছন থেকে শাশুড়ীর ডাক শুনা গেলো।
“কিরে এখানে কি করছিস?
” কিছুনা মা, ভালো লাগছিলোনা।তাই আপনার কাছে এসেছিলাম।কিন্তু আব্বু থাকায় ঘরে ঢুকিনি।
“আয় এখন। তিনি চলে গেছেন কাজে।
কিছু বলবি?
” হুঁ।
“হেনা বাটি থেকে পান নিতে নিতে বললেন।বলে ফেল।
” আম্মু কিছু মনে করবেননা।সামিয়ার ব্যপারে কিছু বলতে চাই।এই মেয়েটাকে আমার সন্দেহ হচ্ছে। কয়েকদিন যাবত খেয়েল করছি।সে কোন অজুহাত ছাড়াই আপনার ছেলের সামনে চলে যাচ্ছে।তাকে খাবার বেড়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।বিষয়গুলো আমার কাছে ভালো লাগছেনা।আমি তাকে বলেছিলাম পর্দা করে চলতে।আব্বু আর তার সামনে না যেতে। প্রথম কইদিন ভালোই কথা শুনেছে। কিন্তু ইদানীং একটা কথাও শুনেনা।
“সে কি মুখে মুখে তর্ক করে?
” না সেট করেনা। কিন্তু কিছু বললে এক কানে ভরে আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়।
” এগুলো ছাড়া কি আর কোন সমস্যা করে?
“না।তবে কইদিন যাবত খুব অন্যমনস্ক দেখা যাচ্ছে।
“শোন প্রথম কথা হচ্ছে তুই সাদাত কে খুব বেশি ভালোবাসিস। তাই ওর পাশে কাওকে সহ্য করতে পারিসনা।আর পর্দার বিষয়টি ভেবে দেখ। এই মেয়েটি কখনো ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী চলা ফেরা করেনি, তাহলেতো একটু সময় লাগবেই।তুই এসব নিয়ে ভাবিসনা মা।পরে দেখা যাবে,চিন্তা করতে করতে সাদাতের সাথে সাথে তুইও অসুস্থ হয়ে গিয়েছিস।
” আচ্ছা চিন্তা করবোনা।কিন্তু আপনি তাকে কিছু একটা বলে দিন।
“আচ্ছা বলে দিব। এসব ছোট খাটো ব্যাপার নিয়ে ভাবার দরকার নেই । কোন সমস্যা হলে আমার কাছে শেয়ার করবি।মনের মধ্যে সব পুষে রেখে দিবিনা।আমি তোর মায়ের মত না। বরং আমি তোর একজন মা।
” আল্লাহ আমাকে কত বড় নেয়ামত দান করেছেন তা ভেবে মাঝেমাঝে কান্না চলে আসে।রহমানের শুকরিয়া আদায় করে কখনো শেষ করতে পারবোনা।
“আচ্ছা থাক আর মন খারাপ করিস না।এখন রুমে যা। দেখ সাদাত হয়তো উঠে পড়েছে।
তাকিয়া হেনার থেকে বিদায় নিয়ে কক্ষের দিকে পা বাড়ালো। কিন্তু সেথা থেকে সামিয়া কে বের হতে দেখে সে বেশ চমকালো। অবশ্য তার আশ্চর্য হওয়ার পিছনে যথেষ্ট কারনও রয়েছে।
প্রথমত, সাদাত রুমে একা, দ্বিতীয়ত সে ঘুমাচ্ছে। তৃতীয়ত তাকিয়া সামিয়াকে এ সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা আরোপও করেছে।সুতরাং তার চমকে যাওয়া টা স্বাভাবিক। তাকিয়া কিছু ক্ষন চুপ থেকে মুখ খুললো।সামিয়া তার সামনে হাত মুঠ করে মাথা নত করে দাড়িয়ে আছে। সে যে অপরাধী তাকে দেখেই যে কেউ বলে দিতে পারবে।
তাকিয়া গম্ভীর স্বরে বললো।
তুমি রুমে কি করছিলে?
“সামিয়া নিশ্চুপ।
” চুপ করে থেকোনা। কথা বলো।
চুপ করে থেকে কি কথা বানাচ্ছো?
“না আফা?
” তাহলে আমার কথার উত্তর দাও।
“আফা ঘরে পানি আছিলো কিনা দেখতে আইছিলাম।
” আমি কি তোমাকে এ কাজের নির্দেশ দিয়েছিলাম?তাছাড়া তোমার চোখ মুখই সাক্ষ্য দিচ্ছে তুমি মিথ্যা বলছো। কথা বলার সময় তোমার চোখ, ঠোঁট কাপছে।
“আফা সত্যি আমি এ কারনেই আমনের রুমে গেছিলাম।
” থাক আর অজুহাত দিতে হবেনা।তোমার সাথে কথা বলতে আপাতত আমার ইচ্ছে করছেনা।তবে এতটুকু শুনে রাখো।আমি কিছুটা আন্দাজ করেছি। তুমি কে?তুমি কখনোই কিছু করতে পারবেনা।আল্লাহ আমাকে আগেও সাহায্য করেছেন এখনো সাহায্য করবেন।
এবার তুমি তোমার কাজে যেতে পারো।তাকিয়া কথা বাড়ালোনা।বরাবরই সে নিরব ধরনের মানুষ।কোনো কাজ করার পূর্বে তাকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হয়।এরপর সিদ্ধান্ত নিতে হয়।হয়তো সে এ জন্যই তেমন কথা বাড়ায়নি।সে কক্ষে ঢুকে প্রথমত পুরো কক্ষ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো।সে কিছুই দেখতে পেলোনা।অতঃপর চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবলো।এবং পানির জগের দিকে এগিয়ে গেলো।মেয়েটা পানির কথা বলেছে। তাহলে পানিতে সে কিছু মিশিয়ে দেয়নিতো? সাদাত এখনো ঘুমাচ্ছে।তাকিয়া পানির দিকে ভালোমত নজর দিলো।তবে এতো বড় কাজ টা সামিয়া কখনো করতে পারেনা।তবুও তো একটু যাচাই করলে সমস্যা হবেনা।তার বিবেক তাকে দোদুল্যমান নির্দেশ দিচ্ছে।এক যাচাই করে দেখো। দুই,যাচাই করার কোন প্রয়োজন নেই।তাকিয়া প্রথম নির্দেশ কে মেনে নিলো।ঘরে থাকা একটি মাছির উপর কিছু পানি ফেললো।মাছিটির মধ্যে কোনো প্রকার পরিবর্তন দেখা গেলোনা।তাকিয়া
ক্ষীণ জোর গলায় বললো।আমাকে ক্ষমা করো আল্লাহ।আমি একটা মেয়েকে এতটা খারাপ জায়গায় বসিয়ে সন্দেহ করতে পারিনা।এটা আমার ভুল হয়েছে।আমি অনুতপ্ত।তাকিয়ার উচু আওয়াজে সাদাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলো।সে উঠে বসলো।এবং ললাটে আংশিক ভাজ ফেলে বললো।
“কি হয়েছে। এত বিষন্ন দেখাচ্ছে কেন?
” আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি।কখনো আপনাকে হারাতে চাইনা।
“সেটাতো আমিও জানি। আমিওতো তোমাকে খুব ভালোবাসি।আমি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবো দেখে নিও। মন খারাপ করোনা।
” হুঁ।
“খুব পানি তেষ্টা পেয়েছে।
” অপেক্ষা করুন আমি এনে দিচ্ছি।
“সাদাত ভ্রু কুচকে তাকিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো।জগেই তো পানি আছে।
” আমি জগে হাত দিয়েছিলাম।আমি আপনার জন্য ভালো পানি এনে দিচ্ছি।
“আচ্ছা নিয়ে আসো।
তাকিয়া জগ নিয়ে রানড়বার দিকে এগিয়ে গেলো।করিডর থেকে ফিস ফিস আওয়াজ ভেসে আসছে। পুরো বাড়িতে ৪ জন সদস্য এখন অবস্থান করছেন।তাদের মধ্যে মা,এবং সাদাত তার কক্ষে শয়নরত অবস্থায় রয়েছে।আর বাকি থাকলো সামিয়া।তাকিয়ার মনে আবারো সন্দেহের উৎপত্তি হলো।সে রানড়বায় ধীরে ধীরে প্রবেশ করলো।এখন আওয়াজ ঈষৎ কিছুটা বুঝা যাচ্ছে।এটা সামিয়ারই কন্ঠস্বর।কিন্তু কার সাথে কথা বলছে তা ঠাওর করা যাচ্ছেনা।তাকিয়া সামিয়ার কথপোকথন শেষ হওয়ার পূর্বেই তার কক্ষে চলে গেলো।এতক্ষণে সাদাত আবারো ঘুমিয়ে পড়েছে।তাকিয়া তাকে ডাকলোনা।সে গবাক্ষের পাশে এসে দাড়ালো। তাকে দেখে মনে হচ্ছে এখন আর মুখাবয়বে উদ্বেগের ছাপ নেই।সেখানে এখন নিরুদ্বেগের বসবাস।তাকিয়া তার অন্তরিন্দ্রিয় দ্বারা আল্লাহর সাথে কথা বললো।তোমাকে হাজার শুকরিয়া আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য।এখন বাকি কাজগুলো করার জন্য আমাকে শক্তি দাও।সাহায্য করো।শত্রুদের উপর আমাকে বিজয় দান করো।আমি বিশ্বাস করি তুমি আমাকে অবশ্যই সাহায্য করবে। এমন কি শুনেছে তাকিয়া যার দরুন তার মধ্যে এত পরিবর্তন।তাকিয়া গবাক্ষ থেকে সরে এসে সাদাতের পাশে এসে বললো।এক হাত দিয়ে সাদাতের মাথায় হাত বুলাতে থাকলো।সাদাত তাকিয়ার স্পর্শে জেগে উঠলো।
” দেখো এরমধ্যে আবার ঘুমিয়েও পড়েছিলাম।
” ঠিকাছে কোনো ব্যাপার না।পানি নিয়ে এসেছি।
খেয়ে নিন।
“দাও।সাদাত ডগ ডগ করে পুরো গ্লাসের পানি শেষ করলো।তাকিয়া এখনো সাদাতের দিকেই তাকিয়ে আছে।সাদাত গ্লাস টি খাটের পাশে থাকা টেবিলের উপর রাখলো।এবং তাকিয়াকে কাছে টেনে নিয়ে অস্ফুট স্বরে বললো।
“তোমাকে আজ খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
” আজ দেখেচ্ছে মানে।অন্য কোন সময় লাগেনা।
“অন্য সময় কেন লাগবে।তুমি কি সুন্দর নাকি?
” আমি সুন্দর না?
“আমরা যখন ছোট ছিলাম।তখন তোমার সাথে একটা মেয়ে প্রায়ই আসতোনা আমাদের বাড়িতে?কি যেন নাম! তা যাই হোক ওই মেয়েটা কিন্তু ভালোই দেখতে তাইনা?
” আমি যা জিজ্ঞাসা করেছি তার উত্তর দিন।
“সাদাত নিশ্চুপ।
“তাকিয়া উঠে বসলো।এবং কঠিন গলায় বললো। বুঝতে পেরেছি আমাকে এখন আর আপনার ভাল লাগেনা।ভালো লাগবে কেন? আমিতো পুরান হয়ে যাচ্ছি।থাক আপনাকে এসব বলে লাভ নেই। আমার কোন কথা বলতে ভালো লাগছেনা।আমার প্রচণ্ড রাগ লাগছে। আপনাকে বলতেই হবে আমি সুন্দর। আর নয়তো আপনার শাস্তি আছে ।
এভাবে মিটি মিটি হাসবেননা।বলেন আমি সুন্দর।
“না তুমি সুন্দর নও।কি জানি নাম তোমার বান্ধবী টার। ওহ মনে এসেছে আনিকা। মেয়েটা কিন্তু বড় হয়ে বেশ সুন্দর হয়ে গেছে তাইনা??
” আপনার শুধু অসুখ দেখে। আর নয়তো এখন বালতি ভরে পানি এনে আপনার উপর ঢেলে দিতাম।আপনি আনিকার দিকে তাকিয়েছেন কেন?
“তাকালাম কই? ওতো সবসময় বোরখা পড়া থাকে।
” তাহলে সুন্দর বললেন কেন?
“ওহ তাইতো? কেন বললাম? হে মনে পড়েছে। ছোট বেলায়তো দেখেছিলাম তাকে, তাই বললাম আর কি।
” আজকে থেকে আপনি আমার সাথে কোন কথা বলবেননা।
“আশ্চর্য তুমি আমার একটা মাত্র বউ, তুমি ছাড়া কার সাথে কথা বলবো?
” আমি জানিনা। কিন্তু আমার সাথে কথা বলবেননা।আপনি একটা খারাপ মানুষ।
“তুমি যদি আমাকে খারাপ বলো।তাহলে আমার কোন দুঃখ নেই।কারন আমিতো তোমারি।
” তাকিয়ার দিক থেকে কোন সাড়া নেই।সে তার কথা রাখা অলরেডি শুরু করে দিয়েছে।
“সাদাতও চুপ হয়ে গেছে।
” কিছুক্ষন পর তাকিয়ার ফোনে টুং করে শব্দ হলো।বুঝাই যাচ্ছে মেসেজ এসেছে।সে ফোন অন করলো। সাদাত ম্যাসেজ দিয়েছে।দুজন এক ঘরে বসেই এই কাহিনী করছে।
“তোমার সৌন্দর্যের তারীফ করার ভাষা আমার নেই।আমার মনে হয় তোমার সৌন্দর্যের প্রশংসা যে সব শব্দ দ্বারা করতে হবে তা এখনো কেউ প্রকাশ করতে পারেনি। আমিতো শুধু একটা জিনিস ভাবি তোমাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কতইনা সুন্দর।যাই হোক পরিশেষে আবারো বলি।তুমি একটুও সুন্দরী না।
,
তাকিয়া সাদাতের দিকে তাকালো।সে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন সে কিছুই জানেনা।তাকিয়া যেয়ে সাদাতের পাশে বসলো।এবং তার কর্ণলতিকায় মুখ এনে বললো।পৃথিবীর সবাই বলুক আমি কুৎসিত তাতে আমার যায় আসবেনা।কিন্তু আপনি বললে আমার যায় আসে।আপনার মুখ থেকে নিজের প্রশংসা শুনলে আমার ভালো লাগে।মনের কোণে প্রশান্তিরা ভীড় করে।
“সাদাত তাকিয়ার থেকে কিছুটা দুরে সরে বললো। তুমি আমাকে কথা বলতে নিষেধ করেছো কিন্তু।
“হুঁ আপনিতো আর বলছেন না।আমি বলছি।এখন আমি বলবো আর আপনি শুনবেন।
” বুঝতে পারছি আমার কানের ১২ টা বাজানো শুরু করে দিবে তুমি।
“হ্যাঁ তাই।
আসছে।
গল্প সম্পর্কে অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন🙂
ঘাসফড়িং -২৩
______________
তাকিয়া দুই রাকাত সালাতুল হাজাত নামায পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করে নিয়েছে।তার সমস্যা গুলো একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই ঠিক করতে পারবেন। মস্তিষ্কে তার নতুন বুদ্ধির উপস্থিতি ঠাওর করা যাচ্ছে। হয়তো এ জন্যই আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে নিলো সে।আজ সাদাত খুব দ্রুতই কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে।পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।তবুও তাকে আটকে রাখা যায়নি।হানিফ সাহেব আজ আর কাজে যাননি।ছেলেকে দায়িত্ব দিয়ে তিনি খুব নিশ্চন্ত হতে চান।তিনি বেলকনিতে বসে আছেন।সকালের মিষ্টি রোদ্দুর ঘরে প্রবেশ করছে। টেবিলের উপর একটি পত্রিকা রাখা। আজকের পত্রিকা মনে হচ্ছে।হানিফ সাহেব পত্রিকাটি হাতে নিলেন।পত্রিকাটি পড়া দরকার। কিন্তু তিনি চশমা আনতে ভুলে গিয়েছেন।চশমাটি ড্রয়িং রুমে ফেলে এসেছিলেন।এখন উঠে যেতেও ইচ্ছে করছেনা।হেনাকে ডাক দিবেন, এমনটা মনে মনে ভাবলেন। এমন সময় তাকিয়া চশমা নিয়ে হাজির।
সে এসেই মুচকি হেসে বললো।
“বাবা আমি ড্রয়িং রুম গোছাচ্ছিলাম।সেখানেই চশমাটি ছিলো।তাই ভাবলাম আপনাকে দিয়ে যাই।
” ভালো করেছো বউ মা।আমি এটা এই মুহুর্তে তলব করছিলাম।
তো মা তোমার দিন কাল কেমন যাচ্ছে।ভালো লাগেতো এ বাড়িতে?
“অনেক ভালো লাগে বাবা। এ বাড়িটাকে আমার নিজের বাড়িই মনে হয়।
” তাই নাকি। ভালো ভালো।তুমি কি কিছু বলতে চাও?
“হ্যাঁ বাবা।
” বলে ফেলো।
“আমি চাচ্ছি কয়দিন গ্রাম থেকে যেয়ে ঘুরে আসবো।
” এটাতো ভালো কথা হ্যাঁ যাও সাদাতকে নিয়ে।
“আপনার ছেলে মনে হয় ঘুরাঘুরি কম পছন্দ করে?
” কে বললো।তার মাদ্রাসা ছুটি হলে আমরা তাকে খুঁজে পেতামনা।বন্ধু বান্ধবদের সাথে ঘুরেফিরে দিন পার করতো।
“ওহ, কিন্তু ওইদিন আমি ঘুরার কথা বললাম।তিনি বললেন ঈদের পুর্বে কোন প্রকার ঘুরাঘুরির নাম না নিতে।
” এটা হয়তো কাজের চাপের কারনে বলেছে।আচ্ছা সমস্যা নেই তুমি তাকে আমার সাথে দেখা করতে বলবে।তখন আমি তাকে বলে দিবো।
“তো বাড়িতে যেয়ে কোথায় উঠবে।এখনতো তোমাদের বাড়িতে কেউ নেই?
” আনিকাদের বাড়িতে উঠবো।তাছাড়া ওকে সাথে নিয়ে একটি জরুরি কাজ করতে হবে।
“আচ্ছা কোনো ব্যাপার না।তাহলে কালকেই রওনা হয়ে যাও তোমরা।
“জী বাবা।
” হানিফ সাহেব পত্রিকা হাতে নিয়ে বললেন। বউ মা এক কাপ চা করে আনোতো।আদা দিয়ে করবে।ইদানীং ঠান্ডা টা বেড়ে যাচ্ছে।
“জী বাবা আমি নিয়ে আসছি।
” হানিফ সাহেব পত্রিকা পড়ছেন।পত্রিকায় বড় করে হেড লাইন হয়েছে।সেখানে বড় অক্ষরে লিখা। কাজের মেয়ের হাতে বাড়িওয়ালা খুন। তিনি থমকে গেলেন।ইশ কি বাজে নিউজ। এখন এ দুনিয়াতে কাওকে আর বিশ্বাস করা যায়না।সংবাদটি দেখেই তার মেজাজ বিগড়ে গেলো।লোকটিই বা কি জানতো। কাজের মেয়েটি এতো বড় প্রতারণা করে বসবে!হানিফ সাহেব আর এ পৃষ্ঠা টি পড়লেননা।তিনি পৃষ্ঠা উল্টালেন।খেলাধুলার খবর পড়তে থাকলেন। কিছুক্ষন পরই তাকিয়া চায়ের মগ নিয়ে হাজির।
“বাবা চা নিয়ে এসেছি।আদাও দেয়া হয়েছে।
” হানিফ সাহেব চায়ের মগ নিতে নিতে বললেন।জানো মা এই পৃথিবীতে কাওকে বিশ্বাস করতে নেই।যাকেই তুমি বিশ্বাস করবে সেই তোমার পিছন থেকে আঘাত করবে।তারা খুব বুদ্ধি করে টেকনিক খাটায়।কখনো তারা তোমাকে সামনে থেকে আঘাত করবেনা।
“হুঁ তা ঠিক বলেছেন।এমনতো অহরহই হচ্ছে।হঠাৎ এই কথা কেন?
” হানিফ সাহেব চায়ের মগে চুমুক দিলেন। চা খুব স্বাধমত হয়েছে।কিছুটা গরম রয়েছে।তাতেকি তিনি খুব সাবধানতার সাথে চুমুক দিচ্ছেন।তিনি কথার প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বললেন।সাদাতকে জিজ্ঞাসা করিও।ম্যানেজার সাহেব এসেছেন কিনা?ইদানীং লোকটা কাজে ফাকি বাজি করছে প্রচুর।
“জী।
” ভাবছি ছেলেকে পুরো ব্যবসা বুঝিয়ে দিয়ে কিছুদিনের জন্য আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে পড়বো।তা আর হচ্ছে কোথায়?ছেলেকে সবাই তেমন একটা ভয় পায়না।আবার সে অনেক কিছু বুঝেওনা।
“তাকিয়া ক্ষীণ হেসে বললো।
সে তো নতুন,, তারমানে তাঁর এখনো অনেক কিছু শিখার বাকি আছে।আপনি তার সাথে থাকলে আস্তে আস্তে হয়তো সবকিছু বুঝে যাবে।
” হুঁ তা ঠিক বলেছো।
“আচ্ছা তাহলে আমি এখন যাই বাবা।ঘরে অনেক কাজ পড়ে আছে।
” যাও মা।
_____
সামিয়ার ফোন এসেছে।কেউ একজন তাকে চাচ্ছে।হেনা রান্নায় ব্যস্ত। তাই তিনি ফোনের ব্যাপারে তেমন আগ্রহ দেখালেননা। এ সুযোগে সামিয়া ফোন নিয়ে তার কক্ষে চলে গেলো।রাফিয়া ফোন দিয়েছে। সামিয়া ফোন কর্ণে রেখেই কিছু একটা ভাবলো।সে যে তার কথা অনুযায়ী কাজ করেনি এটা জানলে রাফিয়া নিশ্চিত তার মায়ের উপর প্রতিশোধ নিবে।সুতরাং তাকে একদমই রাগানো ঠিক হবেনা। সামিয়া নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো।
“কি হইছে কন।
” কিছু করতে পেরেছো?
” করছিলাম কিন্তু হয়নাই।
“মানে।
” মানে সহজ। আমি বিষ দিসিলাম জগে।তাকিয়া আফা ওইডা খাইছে কিন্তু মরেনাই।আল্লাহ তারে সাহায্য করছে।
“কি বলছো তুমি?মাথা ঠিক আছেতো?
” জে আছে। তাকিয়া আফা ভালা মানুষ তাই আল্লাহ তারে সাহায্য করছে।আর কিছুনা।আমি বলিকি আফা আপনেও সব খারাপ কাজ ছাইড়া ভালা হইয়া যান।
“চুপ বেশি কথা বলবেনা।
তোমাকে যা বলছি তা কান খুলে শুনো।আমি আর কিছু দিন অপেক্ষা করবো যদি তুমি তবুও কিছু না করতে পারো তবে খুব খারাপ কিছু হবে তোমার সাথে।
” আরে আফা আমিতো চেষ্টা করতাছি।আফনে রাগেন কেন?
“রাফিয়া তার পরবর্তী পরিকল্পনার কথা সামিয়াকে জানালো।আদৌও সামিয়া প্লান কার্যকর করতে পারবে কিনা এ ব্যপারে তার সন্দেহ হচ্ছে।
” অবশ্য এখন আর সামিয়ার মনে উৎকন্ঠারা আগমন করেনা।সে কাল জগে বিষ দিতে যেয়েও দেয়নি।অনুশোচনায় ফিরে এসেছে।এবং স্বীয় মনের ভারত্ব কমানোর জন্য ভাইকে সব জানিয়ে দিয়েছে।ভাই সান্ত্বনা স্বরুপ বলেছে,চিন্তা করিস না বোন।রাফিয়াকে মায়ের আশে পাশেও আসতে দিবোনা।তুই ভেঙে পড়িসনা।তুই বরং এক কাজ কর তোদের মালিককে মায়ের কথা বলে কিছু টাকা দিতে বল।পরে আমরা কাজ করে তাদের টাকা ফিরিয়ে দিবো। হয়তো এই বিষয়গুলোর জন্যই সে স্বাভাবিক রয়েছে।
_______
তাকিয়া দুপুরের খাবার খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। সাদাতকে খুব মনে পড়ছে।সাদাতের ফোনে কল দিতে ইচ্ছে করছে। তার কন্ঠ শুনতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু কিছুক্ষন আগেই তো তাকে ফোন দিলো। এখন কি অজুহাতে আবার ফোন দিবে। তাকিয়া মাথায় হাত রেখে ভাবতে থাকলো।হুম একটা বুদ্ধি মাথায় এসেছে।সে সাদাতকে ফোন দিয়ে খেয়েছে কিনা এটা জিজ্ঞাসা করতে পারে।যেই ভাবা সেই কাজ।সাদাতকে ফোন দিলো।
” সাদাত ফোন ব্যাক করলো। এবং তাকিয়ার সালামের উত্তর নিয়ে বললো।
কিছু বলবে?
“হুঁ। আপনি খেয়েছেন?
” হে কিছুক্ষন আগেই খেয়েছি।তুমি?
“খেয়েছি।
” আর কিছু বলবে?
“না খেয়েছেন কিনা এটা জানার জন্যই ফোন দিয়েছিলাম।
“আচ্ছা তাহলে রেখে দেই।খুব ব্যস্ত এখন।
” না।
“কেন?
” আপনাকে খুব মিস করছি। বাড়িতে চলে আসুননা।
“সাদাত মুচকি হাসলো।এতো ব্যস্ততার মধ্যেও ফোনের ওপাশে থাকা মানুষটির সাথে তার কথা বলতে ভালো লাগছে।সে ঠান্ডা গলায় বললো।শোনো এখন খুব ব্যস্ত আমি। কি করে আসবো বলো।এরচেয়ে বরং তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
” তাকিয়া নিরব।সাদাতও নিরব।কিছুক্ষণ পর তাকিয়া নিরবতা ভেঙে দু ঠোঁট উল্টো করে বললো।
আচ্ছা।
“রাখি তাহলে।
” হুঁ।
সাদাত কোন বনিতা না করেই ফোন রেখে দিলো।তাকিয়া ঘুমানোর চেষ্টা করছে।জানালা দিয়ে মধ্যাহ্নের রবির সূক্ষ্ম আলোকরশ্মি আলো প্রক্ষেপণ করছে।তাকিয়া উঠে গিয়ে জানালা লাগিয়ে দিলো।পুরো কক্ষে লঘু তিমির প্রবেশ ঘটলো।তাকিয়া এবার বালিশে মাথা ঠেকালো।ঘুম পরীরা তার মাথায় হাত বুলাচ্ছে।কিছুক্ষনের মধ্যেই সে ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করলো।এভাবে কতক্ষন নিদ্রিত ছিলো তার ধারণা নেই।কোনো এক পরিচিত কন্ঠস্বর সহসা তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটালো।
সে উঠে বসলো। প্রিয় মানুষটির উপস্থিতি তার আশে পাশেই রয়েছে,সে আঁচ করতে পারলো।এক হাত দিয়ে বুক চেপে ধরলো।হৃদপিণ্ড মাত্রা হীন ভাবে কাপছে। সে তেজস্বী কন্ঠের মানুষটির কাছে যেতে চায়।তাকে জড়িয়ে ধরতে চায়।তার কর্ণলতিকায় অস্ফুটবাকে বলতে চায়।ভালোবাসি তোমাকে। তাকিয়া ঘুম ঘুম চোখেই লঘু পদব্রজে প্রিয় কন্ঠ অনুসরণ করতে করতে এগিয়ে গেলো।তার ধারণা বাস্তব রুপ নিলো।সাদাত এসেছে।অসময়ে কেন এসেছে সে সম্পর্কে তার বাবার কাছে কৈফিয়ত দিচ্ছে।
“হানিফ সাহেব ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলেন।অসময়ে কেন এসেছো।
” এমনি বাবা, তবে ম্যানেজারকে সব বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি।
“হেনা বললেন।
ভালো হয়েছে এসেছে।আমার ছেলেটা কত পরিশ্রম করে ইদানীং তুমি দেখতে পাওনা?
তাকিয়া দেয়ালে হাত ঠেকিয়ে অনিমিখে সাদাতের দিকে চেয়ে আছে।তাকিয়া ভাবেনি সাদাত তার কথা রাখতে এখন বাড়িতে চলে আসবে।তাকিয়ার অভিনিবেশ নয়নে সাদাতের দিকে তাকিয়ে থাকার বিষয়টি তার শশুর শাশুড়ীর দৃষ্টিগোচর হলো।হেনা এখন কিছুটা আচ করতে পারছে,ছেলে কেন অসময়ে বাড়িতে এলো।
সাদাত লজ্জায় পড়ে গেলো। সে তাকিয়াকে হাতে ধরে কক্ষে নিয়ে গেলো।তাকিয়া কিছু বলার পূর্বেই সাদাত বললো।
” এভাবে তাকিয়ে ছিলে কেন?
“তোমাকে দেখছিলাম। দেখতে ভালো লাগছিলো
তাই। তুমি বলেছিলে খুব ব্যাস্ত তুমি।
” হ্যাঁ ঠিকইতো বলেছিলাম।এখন ব্যস্ততা কিছুটা কমেছে তাই এসেছি।
“ও আচ্ছা ব্যস্ততা কমেছে তাই তোমার আগমন তাইনা? আচ্ছা যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।তাকিয়া এক হাত দিয়ে মুখ চেপে জৃম্ভণ (হাই) তুলে বললো।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আমি এখন ঘুমাবো।
” ওহ তাই তুমি এখন ঘুমাবে? ঠিকাছে ঘুমাও।আমি চলে যাচ্ছি।
“এই না না। আমি ঘুমাবোনা।
” হুঁ এবার ঠিক আছে। সাদাত তাকিয়াকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিলো।এ মানুষটির স্পর্শ এখনো তাকিয়ার কাছে নবীন মনে হয় সেই প্রথম স্পর্শের ন্যায়। তাকিয়া সাদতের কর্ণলতিকায় ঠোঁট ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বললো।ভালোবাসি বলা থেকেও আমার মুখের কোন কথাটি তোমাকে অধিক আনন্দ দেয়?
“সাদাতও ফিসফিস করে বললো।যখন তুমি আমার কাছে কোনো আবদারের বায়না করো।অবশ্য এই কাজটিও তুমি ভালোমত পারোনা।
“আচ্ছা ঠিকাছে আজ মনে হয় আমি বিশাল কিছু আবদার করে বসবো।
” সাদাত তাকিয়াকে ছেড়ে দিয়ে বললো।সত্যি!তুমিতো আমার কাছে কিছুই চাওনা।বলো কি আবদার করতে চাচ্ছো।
“আমার অনেকগুলো টাকা লাগবে।
” কি করবে।
“এখন বলবোনা কাজ শেষ হলে বলবো।
” আচ্ছা কোনো ব্যাপার না, আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।কবে লাগবে বলো?
“আজই, কারন কাল আমরা লক্ষীপুর যাচ্ছি।বাবা বলেছেন।
” বাহ এটাতো ভালো খবর।গ্রামের মানুষগুলোকে কতদিন হলো দেখিনা।এরচেয়ে বড় কথা হলো তোমাদের গ্রামে সুন্দরী মেয়েদের বসবাস প্রচুর।
“কি? ভালোসময়ে মেজাজ খারাপ করে দিচ্ছো আমার।যাও তুমি এখান থেকে।
” এই না না মজা করলাম।থাক সব বাদ দাও।আপাতত তোমাকে ভালোবাসতে চাই।
“আজাইরা কথা না বললে তোমার ভালো লাগেনা তাইনা?
” আরে বাবা বললামতো সরি।
আসছে।
ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং কমেন্টে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন 🙂

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *