ঘাস ফড়িং 24,25,26

ঘাসফড়িং

ঘাস ফড়িং -২৪

——————–
তাকিয়া ব্যাগ গুছানোর কাজে ব্যস্ত। বিকেলেই তারা রওনা হয়ে যাবে।সে লাগেজের এক পাশে তার নিজের কাপর আরেক পাশে সাদাতের কাপর গুছিয়ে রাখলো। সাদাতের সব পাঞ্জাবি ধবল (সাদা) রঙের তাই সে পাঞ্জাবি গুলো শপিং ব্যাগে ভরে তারপর লাগেজে রাখলো।সেই সাথে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস পত্রও নিয়ে নিল। যেমন, ব্রাশ, চিরুনি, চার্জার, স্নো, পাউডার আরো ইত্যাদি ইত্যাদি ।তাকিয়ারও ইচ্ছা ছিলো ঈদেরছুটিতেই ঘুরেবেড়াবে।কিন্তু সামিয়ার জন্যই সে দুরে যাচ্ছে।তাছাড়া আনিকা, দাদি তাদেরকে সমস্যা টা জানালে তারাও হয়তো সুন্দর কোন পরামর্শ দিতে পারবে। সব থেকে বড় কথা তাকিয়া আল্লাহর কাছে দোয়া করছে।ইন শা আল্লাহ সমাধানের একটা পথ নিশ্চয়ই বেরিয়ে যাবে। আল্লাহ তার বান্দাদের কখনো নিরাশ করেন না। তাকিয়ার সব কাজ শেষ করে সে সামিয়াকে ডাক দিলো।সামিয়া এখন আর তাকিয়ার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেনা।হয়তো তার বিবেক তাকে বাধা দেয়।সামিয়া তাকিয়ার কক্ষে এসেই প্রথমে দাত কেলিয়ে কিছুক্ষণ হাসলো।তাকিয়া কিছু বললোনা।
সামিয়া বললো।
“আফা ডাকছেন যে।কিছু বলবেন?
” হুঁ।
“জী বলেন।
“আমার অবর্তমানে আব্বু আম্মুকে দেখে রাখবে। তাদের সেবা যত্নে যেন কোন প্রকার কার্পন্যতা না হয়। পারবেনা?
” জী আফা আপনে কোন চিন্তা কইরেননা।আমি আপনের বিশ্বাস ভাঙবো না।
“হুঁ ভালো।তোমার আম্মু না অসুস্থ?
” হুঁ।কিন্তু আফনি কিভাবে জানেন?
“জানি জানি আমি তোমার সব খবরই রাখি।
মন খারাপ করোনা আল্লাহ সুস্থ করে দিবেন।তবে তোমাকে আরো ভালো হতে হবে। তুমি যদি আল্লাহর জন্য খারাপ কাজ কে বর্জন করো তাহলে এমনো হতে পারে।আল্লাহ তায়ালা তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়ে তোমার মাকে সুস্থ করে দিবেন।
” সামিয়ার দৃষ্টি নিচের দিকে নিবিদ্ধ। সে তার মাকে খুব ভালোবাসে।সে কেন?সব সন্তানদেরই মায়ের প্রতি আলাদা একটা টান থাকে।তাকিয়া সামিয়াকে নিশ্চুপ দেখে বললো।তোমাকে কিছু টাকা দিয়ে যাচ্ছি।কোনো প্রয়োজন হলে খরচ করবে।
“এবার আর সামিয়া চুপ করে থাকলোনা। সে ঠান্ডা গলায় বললো।আফা এ বাড়িতে আসার পর আমি অনেক কিছু শিখছি।আমনেগো মত মানুষ এ দুনিয়াতে কমই পাওয়া যায়। আমি আগে যত ভুল করেছি সব কিছুর জন্যে আপনার কাছে ক্ষমা চাই।আমারে মাফ কইরা দেন।
” তুমি যদি কোন ভুল করে থাকো। তাহলে অবশ্যই তার জন্য তুমি ক্ষমা পাবে।তবে শর্ত হলো।ভবিষ্যতে ভুল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পারবেতো?
“পারবো। চিন্তা করবেননা।আমি আপনাদের মন ভাঙবোনা।
” হুঁ ভালো।এখন তুমি যেতে পারো।আচ্ছা দাড়াও যেওনা।তোমার বাড়ির ঠিকানাটা একটা পৃষ্ঠায় লিখে দাও।
“সামিয়া জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকিয়ার দিকে তাকালো।
” তাকিয়া আবারো বললো।কি হলো শুনতে পাওনি কি বললাম।
“জী আফা শুনছি।এখনই নিয়া আসতেছি।
তাকিয়া সামিয়ার দিকে অনিমিষ নয়নে চেয়ে থাকলো।সে সহায়হীন ক্লিষ্ট( কষ্ট) সম্পর্কে অবগত রয়েছে।জীবনের অনেকটুকু সময় সে অনুভূতিহীন ভাবে পাড় করেছে।ভয়ানক ক্লিষ্ট গুলোই তাকে অনুভূতিহীন হতে বাধ্য করেছে।কিন্তু আল্লাহ তাকে আবার সব কিছু ফিরিয়ে দিয়েছেন।হয়তো অনেকটা সময় লেগেছে কিন্তু তিনি নিরাশ করেননি।
.
সাদাত বাসায় এসেছে। দুপুরের খাবার খেয়েই তারা রওনা হয়ে যাবে।সাদাত যানবাহনের বিষয়ে আলাদা করে কিছু ভাবেনি।কারন তাদের নিজস্ব গাড়ি রয়েছে।কিন্তু তাকিয়া ভাবছে সে ট্রেনে চড়ে যাবে।তাই সাদাত এর কারন জানতে চাইলে তাকিয়া বললো।প্রিয় মানুষটির সাথে কিছু পথ হেঁটে ট্রেনে উঠবো তারপর ট্রেন থেকে নেমে আবার হেটে রিকশা নিবো এরপর রিকশায় চড়তে চড়তে এক সময় বাড়ি পৌঁছে যাবো।এর মাঝখানে আমরা অনেক গল্প করবো।বিষয়টি খুব মজার না? সাদাত ফিক হেসে বললো হুঁ খুবই অসাধারণ ।এরপর আলতো করে তাকিয়ার নাকে টেনে দিয়ে বললো।বাবারে,,, আমার বউ দেখি খুব রোমান্টিক। তাকিয়ার নাসিকার অগ্র ভাগ লাল হয়ে গিয়েছে।সুন্দর মানুষের এই একটা সমস্যা। সে এক হাত নাক ঘষতে ঘষতে বললো। রোমান্টিকের কিছুই না।বিয়ের পর এই প্রথম কোথাও যাচ্ছি।তাই চাচ্ছি যাত্রাপথ কিছুটা দীর্ঘ হোক।
“আচ্ছা বাবা তুমি যেভাবে চাইবে সেভাবেই হবে এখন বলো সব গুছিয়েছো সুন্দর করে?
” হুঁ সব কিছুই গুছিয়ে নিয়েছি।শুধু আপনি ব্যতিত?
“আমি ব্যতিত মানে।
” এই পাঞ্জাবি পড়ে যাওয়া যাবেনা।আমি যেটা পছন্দ করে দিবো সেট পড়তে হবে।
“আচ্ছা মহারানী। আপনি যা চাইবেন।
আসরের আজান পড়ে গিয়েছে।দুজনেই নামাজ পড়ে বাবা মাকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়লো।সাদাতের এক হাতে লাগেজ আরেক হাত দিয়ে সে তাকিয়াকে ধরে রেখেছে। সে একা হাটলে সব সময় তার একটি হাত পকেটে থাকে।কিন্তু আজ সেটা হচ্ছেনা।দুজনে কিছু পথ রিকশায় চড়ে গিয়ে ট্রেনের টিকেট কাটলো।জানালার পাশে সীট পড়েছে। লাগেজ তাদের পাশে রেখেই তারা বসে পড়লো।তাকিয়াদের পিছনে এক দম্পতির সীট পড়েছে।তাদের আড়াই বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। ছোট বাচ্চাটি কিছুক্ষন পর পরই তাকিয়ার বোরকা ধরে টান দিচ্ছে। এবং তাদের দুষ্ট মিষ্টি আলাপে ব্যঘাত করছে। দুজনের কেউই বাচ্চাটির উপস্থিতিতে বিরক্ত হচ্ছে না।উভয়েই বিষয়টি খুব উপভোগ করছে।সাদাত কিছুক্ষন পরপরই মাথা বাকিয়ে বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।বাচ্চাটিও অনুরুপ করছে। সে কি বুঝে করছে কে জানে?কিছুক্ষন এভাবে বাচ্চাটির মিষ্টি নির্যাতন এই নব দম্পতিরা উপভোগ করলো।এখন আর সে তাকিয়ার বরকা ধরে টান দিচ্ছে না। তাদের কথায় ব্যঘাত সৃষ্টি করছে না।দুজনেই বিষয়টি বুঝার জন্য উঠে দাড়ালো।দেখলো বাচ্চাটি এক আঙুল মুখে ভরে নিয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। সাদাত আর তাকিয়াকে দাড়াতে দেখে বাচ্চাটির মা হাসি মুখে বললেন। সে এখন ঘুমে ব্যস্ত তাই আপনাদের বিরক্ত করছেনা। তারপক্ষ থেকে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।তাকিয়া ভদ্র মহিলার প্রতিউত্তরে বললো।
“ছি ছি কি বলেন। আমরা ওর দুষ্টুমি গুলো উপভোগ করছিলাম।ও কেন শান্ত হয়ে গেলো সেটা দেখার জন্যই আমরা উঠে দাড়িয়েছি।
“বাচ্চাটির বাবা সাদাতকে উদ্দেশ্য করে বললো।ছোট বেলা থেকেই ও অনেকটা চঞ্চল প্রকৃতির। সারা বাড়ি একদম নিজের দুষ্টুমিতে মাতিয়ে রাখবে।দেখলেননা ট্রেনে উঠেও একি কাজ।
“সাদাত মুচকি হেঁসে বললো।দুষ্টুমি করা খেলাধুলা করা এটা বাচ্চাদেরই কাজ।খুব ভালো লেগেছে আপনাদের মেয়েকে মা শা আল্লাহ।
“সাদাত,আর,তাকিয়া সিটে বসে পড়লো।এবং নিজেদের কথায় মনোনিবেশ করলো।
তাকিয়া অনেকটা স্বস্তির সাথে বললো।
দেখেছেন বাবুটা কত কিউট।
আমার তো তাকে কোলে নিতে ইচ্ছে করছে।
” সাদাত গম্ভীর স্বরে বললো। আর কিছুদিন অপেক্ষা করো। আর কইদিন পর আমাদেরকে বিরক্ত করার জন্য আল্লাহ তায়ালা এমন একজন কে পাঠাবেন ইন শা আল্লাহ। সে তোমাকে মা আর আমাকে বাবা বলে ডাকবে।
“তাকিয়া হাসলো। কিন্তু তার হাসি মাখা মুখ দেখা গেলো না।নিকাবের আড়ালেই তার হাসি মাখা মুখখানি রয়ে গেলো।
ট্রেন নিজ গতিতে চলছে। বাহিরে দৃষ্টি পড়লেই মনে হচ্ছে গাছ পালা গুলো যেন উল্টো পথে হাঁটছে। কিছুদুর যেতেই চোখে পড়লো সবুজ শ্যামল বিরাট মাঠ। আবার কিছুদুর যেতেই দেখা গেলো টিন সীটের ছোট বাড়ি। ইশ কি তারাতাড়িই তারা চলে যাচ্ছে। ট্রেন এর গতিবেগ এতোই বেশি যে সাদাত কোন কিছুই তৃপ্তি সহকারে দেখতে পারছেনা।তবুও সে দেখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । আল্লাহর কথা মনে হচ্ছে।কত সুন্দর করে তিনি এই মহীটাকে সাজিয়েছেন। অতুলনীয়। যার কোন তুলনাই হয়না।সাদাত বাহিরে দৃষ্টি রেখেই তাকিয়াকে সম্বোধন করে বললো।দেখো রাত হয়ে গিয়েছে।তাকিয়ার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেলোনা।সে ঘুমিয়ে গিয়েছে। সাদাত আলতো করে তাকিয়ার মাথা স্বীয় স্কন্ধে রাখলো।
যদিও বা এটা কথা ছিলোনা।তাদের প্লান অনুযায়ী ট্রেনে তাদের গল্প করে যাওয়ার কথা ছিলো।তাকিয়া হয়তো ঘুমের সাথে যুদ্ধ করতে পারেনি।তাই না চাইতেও ঘুমিয়ে পড়েছে। সাদাত তাকিয়াকে জাগালো না।সে তার এক হাত দিয়ে তাকিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। সে ঘুমাবেনা।সে ঘুমালে এ মানুষ টি জাগ্রত হয়ে যেতে পারে। তাই সে জাগ্রত থাকবে।এবং এ সুন্দর মুহুর্ত টি সে একাই সাক্ষী হবে।তাকিয়া জেগে উঠে দেখবে নিজ গন্তব্যে চলে এসেছে।তখন হয়তো সাদাতকে ঘুম ঘুম চোখে জিজ্ঞাসা করবে।আমাকে জাগাননি কেন?সাদাতের ধারণামতই সব কিছু ঘটলো।ট্রেন এসে স্বীয় গন্তব্যে থেমে গেলো।সাদাত ডাক দিলো।তাকিয়া ঘুম ঘুম চোখে বললো আমাকে জাগাননি কেন? সাদাত কথা বাড়ালোনা।শুধু মুচকি হাসলো।দুজনে ট্রেন থেকে নেমে রিকশায় চড়ে বসলো।ঝিঁঝিঁ দের আওয়াজ প্রকট হচ্ছে। দূর থেকে শেয়ালের হাঁক ভেসে আসছে।মানুষের সমাগমও খুব ক্ষীণ। হয়তো সকলে নিদ্রাদেশে পাড়ি দিয়েছে।রিকশা পিচের রাস্তা থেকে সম্মুখপানে এগিয়ে গিয়েছে। এখন তারা মাটির রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়াত করছে।বিশাল বড় ধানক্ষেতের সামনে রিকশা আসতেই তাকিয়া উঁচুআওয়াজে বললো।
“মামা এখানেই রাখুন।
” রিকশা চালক বললেন আপনাদের গন্তব্য তো আরো সামনে এখানে কেন নামতে চাচ্ছেন?
“সাদাত তাকিয়ার দিকে প্রশ্নবোধক নয়নে তাকিয়ে আছে।তাকিয়া সাদাতকে অভয় দেয়ার ভঙ্গিতে বললো।
” আমরা বাকি পথটুকু হেঁটে যাবো।তাই রিকশা থামাতে বললাম।
“সাদাত মৃদু হেসে বললো।আচ্ছা তাই বলো আমি ভাবলাম কোনো সমস্যা হলো কিনা?আচ্ছা মামা আপনি এখানেই রাখুন।
” রিকশা চালক থামলেন।সাদাত তার হাতে ভাড়ার টাকা গুজে দিয়ে বিদায় জানালো।রিকশা চালক অপেক্ষা না করেই দ্রুপ প্রস্তান নিলেন।তাকিয়া সাদাতকে লক্ষ্য করে বললো পিছনে তাকান।দেখুনতো কিছু মনে পড়ে কিনা?
“হ্যাঁ মনে পড়েছে।এখানে বিকেল হলে আমরা সকলে এসে উপস্থিত হতাম।কানামাছি বৌচি বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলতাম।
” কিন্তু এ ছাড়াও এ স্থানটি অন্য এক কারনে আমার কাছে প্রিয়।
“কেন বলোতো?
” কারন আমি যখন মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে ফিরতাম।তখন এ স্থানে আসলেই আমি থমকে যেতাম।আমার মাফিকে মনে পড়তো।এ স্থানটিতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে সব সময় আমার মাফির ভালোর জন্য দোয়া করতাম।
“সাদাত লাগেজটি হাত থেকে মাটিতে রেখে দু হাত দিয়ে তাকিয়ার গাল ধরে বললো।তুমি যতটা আমাকে মিস করতে আমিও ঠিক ততটাই তোমাকে মিস করতাম।তোমার দেয়া ফোন নাম্বারে অসংখ্য বার ফোন দিয়েছি।কিন্তু আমি কখনোই তোমাকে পাইনি।নিরাশ হবো ভেবেও আমি হাল ছাড়িনি। বারবার ওই বন্ধ সীমেই আমি ফোন দিয়ে যেতাম।কিন্তু আজ তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে। এটা আমার জন্য কতটা আনন্দের আমি বুঝাতে পারবোনা ।
” আমার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো এই স্থানে এসে চিৎকার করে আপনাকে ভালোবাসি বলবো।আজ সেটা বলতে চাই।
“সাদাত মুচকি হেসে পিছনে সরে গেলো।এবং ঠান্ডা গলায় বললো।আমিও তাকিয়া। খুব অদ্ভুত না দুজনের ইচ্ছেই মিলে গেলো।
” আসলেই খুব অদ্ভুত। আচ্ছা কে আগে বলবে?
“তুমি আগে বলো।
“তাকিয়া শুকনো ধান ক্ষেতের মাঝবরাবর দাড়ালো।অথচ একসময় এ স্থানটি উষ্ণ ও আদ্রতে রুপান্তরিত হয়।এবং কৃষকেরা সেথায় ধান বপন করে। কিন্তু বর্তমানে এখানে ধান নেই।দেখে মনে হচ্ছে ধান গুলো এখন কৃষকদের বাড়িতে অবস্থান করছে।তাকিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে দু হাত দিয়ে স্বীয় মুখকে আড়াল করলো।যেন আওয়াজের আধিক্য প্রচুর হয়।এবং বললো।মাফি খুব ভালোবাসি তোমাকে।রজনির নিস্তব্ধতায় তাকিয়ার আওয়াজ প্রতিধ্বনিতো হয়ে তাকিয়ার কাছেই ফিরে আসলো।সাদাত স্বীয় স্থানে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলোনা।ছুটে গেলো তাকিয়ার কাছে। দু হাত দিয়ে উঁচু করে তাকে কোলে তুলে নিলো।সেও জোড় গলায় বললো।আমিও ভালোবাসি তাকিয়া তোমাকে। দুজনের পাপড়ি নয়ননীরে ভিজে উঠলো।তারা একসাথে কন্ঠমিলিয়ে বললো।তোমাকে অনেক শুকরিয়া আল্লাহ।গগনে এখন নক্ষত্ররা বিরাজ করছে।মধুচন্দ্রিমা মিষ্টি হেসে তাদের দিকেই যেন চেয়ে আছে।বাতাসে বাতাসে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে তাকিয়া এবং সাদাত তোমাদের স্বাগতম। এ পৃথ্বী ধোকার আবাস।এর মধ্যেও তোমরা সুন্দর দুটি মন খুজে পেয়েছো এর পুরো কৃতিত্বই তোমাদের রহমানের। তাঁকে ভুলে যেওনা।তাঁর শুকরিয়া আদায় করো।যেন সারাজীবন তিনি তোমাদের একই ছাদের নিচে থাকার তাওফিক দেন।
উভয়ে রাস্তার কিনারা ঘেঁষে হাটঁছে।পাশেই একটি ছোট মাটির ঘর। সেথায় এখনো হারিকেনের আলো দেখা যাচ্ছে।তাকিয়া সেদিকটাতে এগিয়ে গেলো।সাদাত এবারো প্রশ্নবোধক ভঙ্গিতে তাকিয়ার দিকে তাকালো।তাকিয়া মুচকি হেসে বললো।চলুন পড়ে বলছি।
তাকিয়া দরজায় দুবার টোকা দিতেই দরজাটি খুলে গেলো।দরজার অপর পাশের মানুষটি তাকিয়াকে দেখে কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলো। তাকিয়া নিরবতা ভেঙে বললো।আমি তাকিয়া চিনতে পেরেছেন?
“জী আপু চিনতে পেরেছি।
” আপনার টাকা গুলো নিয়ে এসেছি। তাকিয়া লাগেজ থেকে টাকাগুলো বের করে উপস্থিত মানুষটির হাতে দিয়ে বললো।টাকা গুলো যে আমি আপনাকে দিলাম এ বিষয়টি কাওকে এখনই বলবেননা।সময় হলে আমি নিজেই বলবো।অপরাধীদের শাস্তি দিতে চাই।
“জী আপু আমি কাওকে বলবোনা।আপু ভাইয়াকে নিয়ে ভিতরে আসেন।
” না এখন না অন্য কোনো দিন।
তাকিয়া আর সাদাত চলে আসলো।কিন্তু সাদাত এখনো নিরব।তাকিয়া বললো আপনি জানতে চাইবেননা কিছু?
“তুমি বলেছো কাজ শেষ হলে বলবে।এ পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করবো।
” ওরে আমার কিউট বর টা।
“আমি কিন্তু আসলেই কিউট।মেয়েরা পছন্দ করবে আমাকে বলোতো?
” আবারো আজাইরা কথা, আমি কিন্তু আপনাকে একা রেখেই চলে যাবো।
“আরে বাবা রাগ করো কেন।আমি মজা করে বললাম।
” দুজনে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলো আনিকাদের বাড়ির আঙিনায়। আনিকা আর দাদীমা বাড়ির সদর দরজার সামনে টচ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তাকিয়াকে দেখেই আনিকা দৌড়ে আসলো।এবং তাদেরকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলো।
আসছে।
কমেন্টে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেননা কিন্তু 🙂
ঘাসফড়িং –২৫
______________
আনিকা এখন স্বামী সংসার নিয়ে অনেকটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখন ঘন ঘন দাদিকে দেখতে আসতে পারেনা।তাকিয়া আসবে শুনে সে তার শশুর শাশুড়ী থেকে অনুমতি নিয়ে চলে এসেছে।সাদাত এখনো ঘুমাচ্ছে। তাকিয়া আর তাকে ডাকলোনা।সে ফ্রেশ হয়ে দাদির কক্ষে চলে গেলো।দাদী সুপারি কাটছেন।তাকিয়াকে দেখে তিনি এক গাল হেসে পাশে বসতে বললেন।তাকিয়া গিয়ে পাশে বসলো।দাদী তাকিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন।ঘুম হয়েছে?
“হ্যাঁ প্রচুর।
” এখন কয়টা বাজে জানিস?
“হ্যাঁ জানিতো আর কিছুক্ষণ পর যোহরের আজান দিবে।
” জামাই বাবাজীও লম্বা ঘুম দিয়েছে।
“হুঁ।কাল অনেক ক্লান্ত ছিলো সে।
” তোদের জায়গা পত্রের দলীল গুলো কি রেবেকা দিয়ে গিয়েছিলো?
“না দিয়ে যায়নি।রাফিয়া আপুর কাছে সেইগুলো আছে।আমি সেইগুলো নিতেই এসেছি।
” রাফিয়া কি ভালোই ভালোই ওইগুলো দিবে?
“সেতো দিবেনা জানিই।আমি তার খালামনির সাথে যোগাযোগ করেছি।তিনি খুব ভালো মানুষ।তিনি জানিয়েছেন দলীল গুলো লুকিয়ে তিনি তার কাছে রেখেছেন।এখানে এসে নিয়ে যেতে।
” তবেতো ভালোই হয়।
“কিন্তু দাদী আরেকটা সমস্যা আছে।
” কি সেটা?
“রাফিয়া আপু আমাকে মারার জন্য আমাদের বাড়িতে একজন কাজের মেয়ে পাঠিয়েছিলেন।যদিও প্রথমে আমরা কেউ বুঝতে পারিনি। কিন্তু সে আমার সন্দেহের তালিকায় সবসময় ছিলো।
এটুকু শুনেই দাদিমা তার হাত থেকে সুপারি গুলো নিচে রাখলেন।তিনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় সজাগ করে তাকিয়ার কথার প্রতি মনোনিবেশ করলেন।দাত চিবিয়ে ক্ষীণ স্বরে রাফিয়াকে দু একটা বকাও দিলেন।এরপর বললেন।এই মাইয়ারেও পুলিশে দেওয়া উচিত।আমারতো মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।
তাকিয়া বললো।দাদীমা তুমি পুরো কথা আগে শুনো।
” হ্যাঁ বল।
“একদিন আমি ওই মেয়ের আমাদের বাড়িতে আসার উদ্দেশ্য জেনে যাই।আসলে মেয়েটি নিতান্তই অসহায় এবং নিরুপায়। রাফিয়া আপু মেয়েটিকে ব্লাকমেইল করে আমাদের এখানে পাঠিয়েছে।মেয়েটির মা ভিষণ অসুস্থ।আর এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে রাফিয়া।তবে এখন আলহামদুলিল্লাহ ভয় নেই কারন আমি মেয়েটির ভাইকে টাকা দিয়েছি এবং তার মায়ের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে বলেছি।তবে আমাদের কাজের মেয়েকে এসব জানাতে বারণ করেছি।আমি চাচ্ছি তার ভুলের কোনো একটা প্রমান আমাদের হাতে আসুক এবং আমরা তার ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারি।
” এটাই কর।এই মেয়েকেও তার মায়ের সাথে জেলে ঢুকানো উচিত ছিলো।
“আচ্ছা থাক দাদীমা তুমি এত উত্তেজিত হইয়োনা।বিপদ কেটে গেছে এটা ভেবেই আমি খুশি আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া।
” তোর জামাই জানে?
“না তাদের কাওকেই বলিনি।
” তাদেরকে বিষয়টি জানিয়ে দিলেই ভালো হবে।
“হ্যা ভাবছি এবার বাড়িতে যেয়ে জানিয়ে দিবো।আচ্ছা যাই হোক বাদ দাও এসব আনিকা কোথায়?
” ও এত ক্ষন রান্না করেছে তোদের জন্য। হয়তো এখন গোসলঘরে গিয়েছে।
“আচ্ছা ঠিকাছে তুমি তাহলে তোমার কাজ করো।আমি যেয়ে উনাকে ডেকে তুলি।
_____
এখানে তাকিয়ারা এসেছে দুইদিন হয়ে গিয়েছে।তাকিয়া যে উদ্দেশ্যে এখানে এসেছে সব কিছুই পূর্ণ হয়েছে।এখন শুধু রাফিয়াকে ধরার পালা।সামিয়া আর সামিয়ার ভাই জানিয়েছে এ ক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করবে।ঢাকা গেলেই হয়তো এ উদ্দেশ্য সফল করা যাবে।তাকিয়াও সাদাতকে সব জানিয়ে দিয়েছে।সাদাত রাফিয়ার বিকৃত মন মানসিকতার কথা শুনে প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছে।এই মেয়ে মানসিক ভাবে সুস্থ নেই।একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কখনো হত্যা করার মত পরিকল্পনা করতে পারেনা।সাদাত সামিয়ার ভাইয়ের সাথে কথা বলেছে।রাফিয়া যেন টাকার ব্যাপারটি কিছুতেই আচঁ করতে না পারে।দরকার হয় ডাক্তারকে পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে বলবেন।সামিয়ার ভাইও সাদাতের কথা অনুযায়ী কাজ করছে।
ঘড়িতে সময় দুইটা।ঠিক ঠিক করে সেটা বেজেই চলেছে।বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। টিনের চালে টুপ টাপ আওয়াজ হচ্ছে।পুরো গ্রামে বৃষ্টির রব ব্যতিত আর কোনো শব্দের উপস্থিতি ঠাওর করা যাচ্ছেনা।মনে হচ্ছে ঝিঁঝিরাও চুপসে আছে।পুরো বাড়ির সকলে গভীর ঘুমে নিমজ্জিত। কিন্তু সাদাত আর তাকিয়ার চোখে ঘুম নেই।তারা এই সুন্দর মুহুর্ত টি উপভোগ করছে। সাদাত কিছুক্ষণ বাদে বাদেই কক্ষের জানালা খুলে দিচ্ছে।বাতসের প্রকটের সাথে সাথে ঘরে বৃষ্টির ছাটও প্রবেশ করছে।যখনি এর পরিমান বেশি হয়ে যাচ্ছে তখনি সে চটজলদি করে জানালা বন্ধ করে দিচ্ছে।সাদাতের খুব ইচ্ছে হচ্ছে বৃষ্টির নীরে ভিজতে।খুব অদ্ভুত ইচ্ছে।তাও আবার এখন মাঝ রাত।সে তাকিয়াকে তার ইচ্ছের বিষয়ে জানালো।তাকিয়া চোখ বড় বড় করে বললো।
“এখন?
” হুঁ এখনি
চলো। বৃষ্টিতে ভিজি।
“আমারো ইচ্ছে করছে। কিন্তু?
” কোন কিন্তু না চলো।
দুজনে নিকষ কালো আধারেই নেমে পড়লো বৃষ্টিতে ভিজতে।গগনে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।মাঝে মাঝে এ জন্য বিকট আওয়াজও হচ্ছে। তাকিয়ার অবশ্য এসবে কিছুটা ফোবিয়া রয়েছে।সে সাদাতকে শক্ত করে ধরে রাখলো।সাদাতের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আটলো।সে তাকিয়ার কানে ফিসফিস করে বললো।
গ্রামে এতো রাতে কিন্তু ভুত থাকে।
“তাকিয়া সাদাতকে আরো শক্ত করে ধরে বললো।ভয় দেখালে কিন্তু চলে যাবো।
” ভয় পাবার কোন কারন নেই।আমিতো আছিই ভুত টি যদি ছেলে হয়।তাহলে তাকে বন্ধু বানিয়ে নিবো।আর যদি মেয়ে হয় তাহলে……
“হইছে আর বলতে হবেনা।আমি বুঝেছি।
” সাদাত স্বীয় মুখ থেকে তাকিয়ার হাত সরাতে সরাতে বললো।ওরে বাবাহ ভুতের সাথেও তোমার হিংসে?
“হিংসে কোথায় করলাম? কাওকে আমি হিংসা করিনা।
” ওহ আচ্ছা তাই। তাহলে আসতে দাও ভুতিনীকে।
“আপনি সুন্দর মূহুর্ত গুলোতে আমাকে রাগিয়ে দেন শুধু।একদিন এমন অবস্থা করবো।সারাজীবন ঘরেই থাকতে হবে।
” কেন ঘরে থাকতে হবে ?
“কারন আপনার পা দুটো আমি ভেঙে ফেলবো।
” আচ্ছা বুঝতে পেরেছি।যা করবো তাই তোমার ভালো লাগবেনা।রেগে যাবে।তাহলে তোমার সাথে রোমান্স করলে নিশ্চয়ই কিছু বলবেনা?
“তাকিয়া ঠান্ডা গলায় বললো।কেন এর জন্যকি কখনো বকা দিয়েছি?
“ও তবেতো ভালোই।এই বৃষ্টি ভেজা রাতই সুন্দর মুহুর্ত ।তাকিয়া প্রস্তুত হয়ে বললো।পাগল হয়ে গেছেন আপনি। একটু পরেই দাদি উঠে যাবে।আমরা বৃষ্টিতে ভিজছি এটা দেখলে তিনি হাজারটা কথা শুনাবেন।আর এখানে আপনি পড়ে আছেন আপনার রোমান্স নিয়ে।
“আমি জানতাম তুমি এমন একটা উসিলা দিবে। কি আর করার চলো ঘরে ফিরে যাই।বেশি ভিজাটা ঠিক হবেনা।
দাদি বৃদ্ধ মানুষ। তিনটার পর উঠে তিনি আর ঘুমাননা।তাহাজ্জুদ নামায পড়েন।আমল করেন,ফজরের নামায পড়েন।তারপর একটু ফর্সা হয়ে এলে তাসবিহ হাতে নিয়ে বাহিরের চলে যান।দাদি তাদেরকে দেখার পূর্বেই তারা ফ্রেশ হয়ে কক্ষে চলে গেলো। আর নয়তো আজ বকা শুনতে হতো।
______
তাকিয়া ব্যাগ গোছাচ্ছে। আগামীকাল তারা চলে যাবে।আনিকা তাকিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো।আর কয়েকদিন থেকে গেলে কি হতো? তুই থাকলে তোর উসিলা দিয়েও আমি থাকতে পারতাম।
” আবার অন্যকোন দিন এসে থাকবো।এখন থাকাটা ঠিক হবেনা।আর কেন ঠিক হবেনা সেটাতো তোকে বলেছিই।
“হুঁ এ জন্যই বেশি জোর করিনা।রাফিয়া আপুকে আল্লাহ সঠিক বুঝ দিক।তুই চিন্তা করিসনা। সাদাত ভাইয়া একটা ব্যবস্থা অবশ্যই করবেন।
” হুঁ। আচ্ছা বাদ দে এসব কথা। দুলাভাইকে আসতে বল।সাদাতের সাথে না হয় দেখা করে যাবে।
“আমি বলেছি। কিন্তু সে এখন খুব ব্যস্ত। আমাকে যে ফোন দিবে সে সময় টুকুও তার নেই। আমি ফোন দিয়ে দিয়ে তার সাথে কথা বলি।
তার কথা বাদ দে। আমি চিন্তা করেছি আজ রাতে বাচ্চাদের নিয়ে বারবিকিউ পার্টি করবো।কেমন হবে বলতো?
” ভালোই হবে।সাদাতও খুব উপভোগ করবে।
,”তাহলে রাতে এই কথাই রইলো কেমন?আবার কবে না কবে তোর সাথে দেখা হয়?
“হুঁ।
তাদের কথা অনুযায়ী রাতে বারবিকিউ পার্টি হচ্ছে।উঠোনে ছোট বাচ্চাদের ভীড় জমেছে। সবাই প্রস্তুত প্রনালী অবলোকন করছে। তাকিয়া উঠোনের মাঝখানে কিছু জায়গায় দু পাশে দু’টো দু’টো করে ইট বসিয়ে দিয়েছে।তার উপরে চিকন লোহার রোড রাখা হয়েছে।এর উপরেই মশলায় মাখানো মুরগির মাংস গুলো বিছিয়ে দিবে।তাকিয়া তাই করলো।বাতাসে ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে। আশে পাশের মানুষগুলোও এসে এসে একবার উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। সাদাত তাকিয়ার পাশেই একটি চেয়ারে বসে আছে। আনিকা বরকা পড়ে তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে।তাকিয়া কাজের ফাঁকে ফাঁকে সাদাতকে দেখছে। সাদাতও ঠিক তাই। দুজনেই সকলের আড়ালে কিছুক্ষন পর পর একে অপরের চোখে আটকে যাচ্ছে।তাদের রান্না প্রায়ই শেষ। সহসা তাকিয়ার দৃষ্টি পড়লো।একজন মধ্যবয়সী মহিলার দিকে। তিনি এক দৃষ্টিতে সাদাতের দিকে তাকিয়ে আছেন।তার চোখে মুখে কেমন রহস্যময়ী আভাস। মনে হচ্ছে সে সাদাতকে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে।তাকিয়ার ধারনাই সত্যি হলো।মহিলাটি সাদাতকে মাফি বলে ডাক দিলো।
সাদাত কিছুটা অবাক হলো।কিন্তু সে মুখাবয়বে তা প্রকাশ করলোনা।মহিলাটি আবারো বললো আমাকে চিনতে পারোনি বাবা আমি ফারজানার মা।
” এবার সাদাতের মনে পড়েছে।মহিলাটি তার বাবার বন্ধুর স্ত্রী। অবশ্য এখন আর তাদের সাথে আগের মত সম্পর্ক নেই।অনেক আগেই সম্পর্কে ছেদ পড়েছে। কারনটি মোটামুটি জটিল ধরনের। ফারজানার বাবা হানিফ সাহেবকে ব্যবসায় ঠকিয়েছিলেন।তার সাথে প্রতারণা করেছিলেন।অথচ একজন বন্ধুর কাছে এমনটি আশা করা যুক্তির বাহিরে।এরপরেই হানিফ সাহেব লক্ষিপুর ছেড়ে ঢাকা চলে আসেন।এতো বছর পর পরিচিত মানুষকে দেখে কি বলা উচিত সাদাত অনুধাবন করতে পারছেনা।তবুও সে বললো।হে চিনতে পেরেছি।কেমন আছেন।
“ভালো আছি।
তুমি নাকি বিয়ে করেছো?
” হে। আমার পাশের মানুষটিকেই।ওর নাম তাকিয়া।
“আমি চিনি তাকে।তখনতো অনেক ছোট ছিলো।
” সাদাত ক্ষীণ হেসে বললো।হ্যাঁ তবে এখন আর ছোট নেই।
মহিলাটি বললো।আমি এখানে একটা দরকারে এসেছি।আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।যদি তোমার বউ একটু দূরে যেত তবে ভালো হত।
“তাকিয়া চুপ হয়ে গেলো।কথা টি শুনার জন্য সে প্রস্তুত ছিলোনা।সাদাতও ঠিক তাই।তিনজনের মধ্যেই নিরবতা বিরাজ করলো।সহসা সাদাত বললো।তাকিয়া মানেই আমি।তাকিয়াতেই আমি বিদ্দমান আছি।আর আমাতে সে। সুতরাং দুজনের মাঝে ব্যক্তিগত কোন ব্যপার নেই।আপনি যা বলতে চাচ্ছেন।সেটা তার সামনেই বলতে পারেন।
” কথাগুলো শুনলে তোমার বউ কষ্ট পাবে।তাই চলে যেতে বললাম আরকি।
ঠিকাছে সমস্যা নেই আমি বলছি।আমি রাফিয়ার ব্যাপারে কিছু বলতে চাই তোমাকে।মেয়েটি তোমাকে খুব ভালোবাসে।একা একা অনেক কষ্ট পাচ্ছে।তার অবস্থা দেখলে যে কারো মায়া লাগতে বাধ্য।মহিলাটি পুরো কথা শেষ করতে পারলেননা।এর পূর্বেই তাকিয়া বলে উঠলো। চুপ করুন।আর কিছু বলবেননা।আপনি জানেন মানুষ টি বিয়ে করে ফেলেছে।তবুও মিথ্যা আবেগের দোহায় দিয়ে মানুষটিকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাচ্ছেন তাইতো?আপনার আর কিছু বলতে হবেনা।আপনি এখন চলে যেতে পারেন।
“ফারজানার মা বিরক্তি ভাব নিয়ে বললেন।এ জন্যই তোমাকে চলে যেতে বলেছিলাম।রাফিয়া ঠিকই বলেছে তুমি আসলে সুবিধাবাধি মানুষ। আমি কি বলতে চাচ্ছি সেটা না শুনেই প্রতিবাদ করে বসলে।আর মাফী তুমিও কিছু বললেনা মেয়েটিকে। শুনে রেখো এর মাশুল তোমাদের দিতেই হবে।রাফিয়া এবার যে প্লান করেছে এর থেকে তোমরা কেউই বাচতে পারবেনা।আসছি আমি।মহিলাটি একা একাই কিছুক্ষণ বিড়বিড় করে চলে গেলো। তার প্রস্থান শেষে সাদাত তাকিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো।তাকে বলতে দিতে। তার কথা গুলো শুনে এরপর প্রতিবাদ করা উচিৎ ছিলো।
“আপনিও আমাকে দোষ দিচ্ছেন।দেইনি বেশ করেছি।আমি এখানে আমার কোন দোষ দেখতে পাচ্ছিনা।
” আমিও বলছিনা যে তুমি দোষি।আমি বলতে চাচ্ছি তার উদ্দেশ্য কি সেটা হয়তো পুরো কথা শুনলে বুঝা যেত।
“তাকিয়া নিশ্চুপ।
” রাগ করেছো? আচ্ছা বাদ দাও এসব। চলো আমরা খেতে যাই।
“আমি খাবোনা।আপনি যান।
” রাগ করোনা। যা হওয়ার তো তা হয়েই গিয়েছে।
“আপনিতো আমাকে দোষ দিচ্ছেন।
” মোটেও না। তুমি যেটা করেছো একদম ঠিক করেছো।তোমার জায়গায় আমি থাকলে হয়তো একই কাজ করতাম।বাদ দাও এসব। এখন চলো খেতে যাই।খুব ক্ষুধা পেয়েছে।রাফিয়ার জন্য আমরা নতুন করে চিন্তাভাবনা করবো সমস্যা নাই।
“আমি বিশ্বাস করি।আল্লাহ ব্যতিত কেউই আমাদের আলাদা করতে পারবেনা।তবে এতটুকু বুঝতে পারছি।তিনিও রাফিয়ার দালাল।
মা জেলে আছে এটা হয়তো সহ্য করতে পারছেনা।তাই এসব করছে।
” তিনি জেলে গিয়েছেন তার অপরাধে। সেখানে আমাদের দোষ কোথায়?
“থাক এসব কথা।তাকিয়া মুচকি হেসে বললো।আপনার না ক্ষুধা পেয়েছে।চলুন আমি আপনাকে খাইয়ে দিব।
আসছে।
ঘাসফড়িং
পর্ব – ২৬
~~~~~~~~
তাকিয়া সকলের থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকা ফিরে আসলো।সাথে বাড়ির দলীলপত্র গুলোও নিয়ে এসেছে।কিন্তু এখানে এসে মন আরেক তরফা বিষন্ন হলো।তার শাশুড়ী মা অসুস্থ। এভাবে তাদের একা রেখে যাওয়াটা উচিত হয়নি।তাকিয়া বরকা খুলেই তার শাশুড়ীর কাছে গেলো।হানিফ সাহেব, তাদের আসার কিছুক্ষন পূর্বেই বের হয়ে গেছেন।
তাকিয়া হেনার কক্ষে প্রবেশের পূর্বে মৃদু আওয়াকে কাশি দিলো। কিন্তু হেনার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেলোনা।কারন হেনা বেগম ঘুমাচ্ছেন।এটাকে ঘুম বললেও ঠিক অনুচিত হবে।অর্থাৎ তিনি আধঘুমন্ত অবস্থায় আছেন।তাকিয়া হেনার পাশে গিয়ে বসলো।যেহেতু তিনি আধঘুম অবস্থায় রয়েছেন।তাই সহজেই তিনি তাকিয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে গেলেন।তিনি কাথা থেকে তার মুখাবয়ব বের করে বললেন।এতো দেরী হয়েছে কেন আসতে?
“তাকিয়া কোন বনিতা না করে বললো।রাস্তায় জ্যাম ছিল মা।
” কোন সমস্যা হয়নিতো আসতে?
“না। আল্লাহর রহমতে কোন সমস্যা হয়নি।এসব থাক। আগে বলুন আপনার অবস্থা কি? আপনার ছেলে আপনার অসুস্থতার কথা শুনে এক মুহুর্তও সেখানে থাকতে চায়নি।বাড়িতে ফিরার জন্য অস্থির হয়ে গিয়েছে।
” হেনা কিঞ্চিৎ হেসে বললেন।সাদাত এখন কোথায়?
“তিনি এসে একবার আপনার রুমে উঁকি দিয়ে গেছেন।আপনি ঘুমাচ্ছিলেন।তাই গোসলে গিয়েছে।
” ভালো করেছে।তুইও গোসল সেরে নে।আমাকে নিয়ে ভাবিসনা।আমার ঠান্ডা থেকে সামান্য জ্বর এসেছে।
“যতই হোক আপনাদের ফেলে এতোদিন থাকাটা আমার ঠিক হয়নি।
” হেনা আবারো হাসলেন।এবার তার হাসিতে ঈষৎ শব্দ হলো।তিনি বললেন।আমরা কি ছোট নাকি? তুই তো কিছুই জানিসনা মা। আমি কত দিন, কত রাত এভাবে একা একা পার করেছি।তা শুধু আমার আল্লাহই ভালো জানেন।
“হুঁ বুঝেছি।আগের কথা ভিন্ন।এখন আর কষ্ট করতে দিবনা।তাকিয়া কিছুক্ষন নিরব থেকে বললো।আচ্ছা মা, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি।
” হুঁ বল।
“সামিয়া মেয়েটাকে আপনার কেমন মনে হয়?ওকে কি আমাদের কাছে রাখা ঠিক হবে?
” মেয়েটাকে প্রথম প্রথম খুব সন্দেহ হত।সব সময় অস্থির থাকতো।এখন আর সন্দেহ লাগেনা তাকে।
“কেন লাগেনা। জানতে পারি?
” হেনা মাথার নিচের বালিশটি খাড়া করে রেখে সেটাতে হেলান দিয়ে বসতে বসতে বললেন।এখন লাগেনা কারন, তুই যাওয়ার পর মেয়েটা আমার খুব সেবা যত্ন করেছে।মেয়েটাকে দেখলেই মনেহয় তার ভিতরে একটা চাপা কষ্ট বিরাজ করছে।তাছাড়া তার চালচলনেও তো তেমন খারাপ কিছু দেখিনি।তবে তাকে রাখা বা না রাখা পুরোটাই তোর উপর আমি ছেড়ে দিলাম।তোর কাছে যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করিস।হেনা পুরো কথা বলে শেষ করতে পারলেননা।এরি মধ্যে সাদাত এসে হাজির।সে এসে প্রথমত মাকে সালাম দিলো।খুব স্বযত্নে মায়ের হাতে চুমু দিলো।এরপর ঠান্ডা গলায় বললো।তোমার জন্য কষ্ট হচ্ছিলো আম্মু।এখন আর চিন্তা নেই তাকিয়া আর আমি চলে এসেছি। তাকিয়া তোমার সেবা যত্নে কোন প্রকার ত্রুটি রাখবেনা।
তাকিয়া মা ছেলের কাহিনি দেখে মুচকি হাসছে।পৃথিবীতে সব থেকে সুন্দর সম্পর্কের মধ্যে একটি হচ্ছে মা সন্তানের সম্পর্ক। মা ছেলে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছে।তাকিয়া এই সুন্দর মুহুর্তে বিরক্তির কারন হতে চাইলোনা।সে বসা থেকে উঠে দাড়ালো। সাদাতের কাধে হাত রেখে মুচকি হেসে বললো।আপনারা কথা বলুন আমি দেখি রান্না কতটুকু হয়েছে।সাদাতও মুচকি হেসে চোখে ইশারা দিয়ে বললো। আচ্ছা যাও।
তাকিয়া রানড়বায় চলে আসলো।সামিয়া রান্না ঘরের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে।ভাতের মাড় গড়িয়ে পড়ছে সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।তাকিয়া তার পিছন বরাবর যেয়ে দাড়ালো।এবং অস্ফুট স্বরে বললো।সামিয়া কি ভাবছো?
“তাকিয়ার উপস্থিতিতে সামিয়া অনেকটা ঘাবড়ে গেলো।সে তাকিয়ার দিকে ফিরে হাত দিয়ে বুকে চেপে ধরে বললো।ও মাগো আফা আমনে। আমি খুব ডরাইছিলাম।ভাবছিলাম কেডা জানি।
” ভয়ের কিছু নাই আমি ভুত না।দেখো ভাত হয়েছে কিনা?
“সামিয়া ভাতের দিকে তাকিয়ে জিভে কামড় দিয়ে বললো।আল্লাহ ভাত তো জাউ হইয়া যাইতাছে।
সে দ্রুত চুলার বন্ধ করে দিলো।এখন মাড় ফেলতে হবে।আর নয়তো এই ভাত আর বাড়ির কেউ মুখে দিতে পারবেনা।সামিয়া অস্থিরতার সহিত তার ওড়না দিয়ে পাতিলের দু পাশ ধরলো।তাকিয়া তাকে থামিয়া দিলো।এবং বললো।
” আগে স্বাভাবিক হও।এত দ্রুত করে করলে ভাত পড়ে যাবে।এক কাজ করো গরম পাতিল বা কড়াই ধরার জন্য আলাদা সরঞ্জাম রয়েছে।রেক থেকে তা নিয়ে আসো।এরপর ঠান্ডা মাথায় কাজ করো।সামিয়া তাই করলো। ভাতের মাড় এখন টুপ টুপ করে নিচে পড়ছে।কার কিছুক্ষন পরেই ভাত থেকে মাড় আলাদা হয়ে যাবে।তাকিয়া এখনো সামিয়ার পিছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব কিছু পর্যবেক্ষন করছে। কিছুক্ষন পর তাকিয়া নিরবতা ভেঙে বললো।তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে বিকেলে আমার রুমে আসবে।
“সামিয়া মাথা নাড়ালো।মানে সে যাবে।
” তাকিয়া তার কক্ষে চলে আসলো।এখন গোসল করতে হবে।ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে আর এক মূহুর্তও থাকতে ইচ্ছে করছেনা।তাকিয়া ওয়াড্রব থেকে একটি সুতি থ্রিপিস বের করলো।গোসলে প্রবেশের পূর্বে সে একবার তার জানালার সামনে এসে দাড়ালো।কৃষ্ণচূড়া গাছটির দিকে চোখ যেতেই স্বীয় ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করলো।গাছটির একটি ঢাল তাদের জানালা ঘেসে আছে। অবশ্য এটি তার আগেও কয়েকবার দৃষ্টিগোচর হয়েছে।কিন্তু এখন যেন ডাল টি জানালার আরো নৈকট্যে অবস্থান করছে।তাকিয়া ভ্রু জোড়া উচু করে কিছু একটা ভাবলো।মানে সে এবার উদঘাটন করতে পারছে এ রহস্য। গতকাল বৃষ্টি হয়েছিলো হয়তো প্রচন্ড ঝটিকার ( ঝড়) দরুন ডালটি নুয়ে গিয়েছে।তবে এতে তাকিয়া খুব খুশি হয়েছে।কারন ফুল তার কাছে সব সময়ই পছন্দনীয় একটি জিনিস। সে ডাল থেকে কয়েকটি ফুল ছিড়ে খাটের উপরে রেখে দিলো।পাশে ছোট্ট এক কাগজে লিখে দিলো।
(আপনার জন্য) এবং সে গোসলঘরে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পরেই সাদাত কক্ষে প্রবেশ করলো।গাত্র থেকে পাঞ্জাবি খুলে হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখলো।খাটের উপর ফুল দেখে সেদিকে এগিয়ে গেলো।ছোট কাগজের লিখার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসলো।এবং ফুল গুলো হাতে নিয়ে গোসলঘরের কপাটের পাশে এসে দাড়ালো।ভিতর থেকে ঝর্ণার পানির আওয়াজ ভেসে আসছে।সাদাত কপাটে দু বার টোকা দিতেই ঝর্ণা থেকে পানি পড়ার আওয়াজ আর শুনা গেলোনা।সাদাত কপাটে ঠোঁট ঠেকিয়ে বললো।ধন্যবাদ বউ।তাকিয়া কপাটের অপাশ থেকে বললো।ধন্যবাদ দেয়ার আর সময় হলোনা।এখনই ধন্যবাদ দিতে হবে?
“হু আমার এখনই দিতে ইচ্ছে করলো।ভালোবাসি বলতেও ইচ্ছে করছে।আমার কোনো দোষ নেই।বরং সব দোষ তোমার তুমি কেন এখনই গোসল করতে গেলে।
” তাকিয়া উঁচু আওয়াজে বললো।হু সব দোষ তো আমারই।
“প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে আমার তাড়াতাড়ি বের হও।
” একটু অপেক্ষা করুন আমি বের হয়েই আপনাকে খাবার দিচ্ছি। এরপর আবারো ঝর্ণা থেকে পানি পড়ার আওয়াজ শুনা গেলো।সাদাত সেথা থেকে সরে পড়লো।ফুল গুলো খাটের এক পাশে রেখে শুয়ে পড়লো।একটু বিশ্রাম নিতে চায় সে।
________
বিকেল বেলা সামিয়া তাকিয়ার কাছে আসলো।তাকিয়া তাকে খাটে বসতে বললো।সামিয়া বসলো।তাকে দেখে মনে হচ্ছে আগের থেকে তার মধ্যে অনেক বেশি পরিবর্তন এসেছে।নম্রতা, বিনয়ীভাব এ চরিত্র গুলো যেন তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। তাকিয়া সামিয়ার দিকে তাকিয়া গম্ভীর গলায় বললো।আমাকে খুন করা ছাড়াও রাফিয়া তোমাকে আর কি কি শর্ত দিয়ে এখানে পাঠিয়েছে আমাকে সব কিছু খুলে বলো।
“আফা খুব বাজে একটা কথা শিখায় দিসে উনি আমারে।আমি কিভাবে যে বলমু আপনারে বুঝতে পারতেছিনা।
” সমস্যা নাই বলে ফেলো।
“উনি আমারে শিখায় দিসে আমি যেন সবার কাছে এইডা কই সাদাত ভাইয়ের আমার,,,
বাকিটুকু শোনার ইচ্ছে নেই তাকিয়ার।তাই সে সামিয়াকে থামিয়ে দিলো। এবং কথা ঘুরিয়ে সামিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো।তোমার মায়ের সুস্থতার জন্য আমি টাকা দিয়েছি। চিন্তা করোনা।তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন।আমি পরিপূর্ণ বিশ্বাসী ছিলাম আল্লাহ আমাকে সাহায্য করবেন।ঠিকই তিনি আমাকে সাহায্য করেছেন।এতোদিন তারা আমাকে নির্যাতন করেছে আমি কিছু বলিনি।কিন্তু এখন আমার স্বামীর নামে মিথ্যা অপবাদ দিতে চাচ্ছে এটা আমি কখনো সহ্য করবোনা।রাফিয়ার সাথে বলা ফোন রেকর্ড গুলো আছে তোমার কাছে?
” জী আফা রাখছি আমি।আপনি বলার পর এই মেমোরি টা তে সব গুলো রেকর্ড আমি উঠায় রাখছি।
“মেমোরি টা আমাকে দাও।
সামিয়া মেমোরি তাকিয়ার হাতে দিয়ে দিলো।তাকিয়া তার সাথে আর কোনো কথা না বাড়িয়ে তাকে স্থান ত্যাগ করার জন্য ইশারা করলো।সামিয়া বাধ্য মেয়ের মত স্থান ত্যাগ করলো।যাওয়ার আগে সব দাত বের করে কয়েকবার ধন্যবাদ বললো।তাকিয়া নরম গলায় বললো।ধন্যবাদ আমাকে নয় আল্লাহকে জানাও।তিনিই তোমার মাকে সাহায্য করেছেন।সামিয়া এক দিকে মাথা ঝুকালো।মানে সে এটাই করবে।সে চলে যাওয়ার পর তাকিয়া বসে বসে কিছু একটা ভাবলো।সে রাফিয়ার ষড়যন্ত্রের নোংরা মনোবাঞ্ছার কথা শুনে খুবই আহত হলো।সাদাতের সাথে বিয়ে হওয়া অবধি সে তাকে লক্ষ্য করে এসেছে।সাদাত কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে পর্যন্ত দেখেনা।আর সে কিনা সামিয়ার সাথে,,,,
ছি এগুলো ভাবলেও অন্যায় হবে।এবার আর তাকিয়া চুপ থাকবেনা।সে এখন নিজেকে প্রতিবাদী করে তুলবেই।
আসছে।
আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন 😊

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *