বন্য প্রণয় 11,12,13

বন্য প্রণয়

বন্য প্রণয়

#বন্য_প্রণয়
#পর্ব_১১
( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
স্ত্রী’র অত্যাচারে আজকাল আর বাসায় ফেরে না সহন। প্রায় বন্ধুদের বাসায় থাকে। নীলা অবশ্য নিজের ফ্ল্যাটেও থাকতে বলে কিন্তু সহন সেরকম ছেলে নয়। মাস ছয়েক কেটে গেছে এভাবে। তাহমি পাগলামি করে খুব। মাঝে মধ্যে জোর করে কাছে আসে। কিন্তু প্রথম প্রথম সহন স্বায় দিলেও পরে বিরক্ত লাগতে শুরু করে। শুধু কি কাছে আসা? এইতো কয়েকদিন আগের কথা! সহনের শার্টে কোনোভাবে লিপস্টিপের দাগ দেখতে পেয়েছিল। হয়েছিল কি,সহন রাতে বাসায় ফিরেছে।নীলাকে কিছু টাকা দিয়ে সারাদিন ঘুরেছিল একসাথে। হুট করে নীলা কেমন অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল বলে বুকের সাথে ধরতে হয়েছিল তাকে। হয়তো তখুনি লিপস্টিকের দাগটা লেগেছিল। কিন্তু তাহমি এতকিছু শোনার অপেক্ষা করেনি। দাগ দেখা মাত্রই সহনের বুকে কামড়ে দিয়েছিল তাহমি। রাগে,দুঃখে হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছিল মেয়েটার। কামড়ের গভীরতা এতটা ছিলো যে একটা দাঁত বসে গেছে এমন। সহন যতক্ষনে ব্যথার তীব্রতা অনুভব করছে ততক্ষণে তাহমি নিজেই ধাক্কা দিয়ে সহনকে সরিয়ে দিয়েছিল নিজের কাছ থেকে। এতকিছুর পরেও কি এমন মেয়ের সাথে ঘরে থাকা নিরাপদ? হয়তো হুট করে মে*রে দিলো তাকে! এই ভয়ে চুপসে গেছে সহন। মায়ের কাছে বলেছে তাহমিকে যেনো মানসিক ডাক্তার দেখায় দ্রুত। কিন্তু সহনের মা উল্টো বললেন,
” ডাক্তার তাহমির না,তোর লাগবে। সময় থাকতে সংসারে মন দে।”
মুখ ঝামটি দিয়ে চলে গেলেন ফরিদা খান। বেচারা সহন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তারপর!
তপ্ত দুপুরে বাসে করে দাঁড়িয়ে আছে সহন।সপ্তাহখানেক হবে নীলার সাথে দেখা হয়নি সহনের। এরমধ্যে নীলা তেমন কল করেনি। সেদিন এক বন্ধু বললো,নীলা না-কি একসাথে অনেকগুলো রিলেশনশিপ কন্টিনিউ করে। কথাটি শোনা মাত্র সহন রেগে যায় ঠিক কিন্তু বন্ধুকে কিছু বলে না। নীলার পরিবর্তন সে নিজেও টের পায়। বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে দু’দিন আগে। ফোনেও চার্জ নেই। নিজেদের গাড়ি নিয়ে আসেনি বাড়ি ছাড়ার আগে। বাসায় যাচ্ছে আজ। সন্ধ্যায় না বলেই নীলার ফ্ল্যাটে যাবে বলে ঠিক করেছে সহন। মিনিট পাঁচেক পরে বাস থামলো। ধীর পায়ে সিড়ি বেয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কলিংবেল চাপলো সহন। দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই যে যার ঘরে শুয়েছিল। সহনের বাড়ি ছাড়ায় তার বাবা-মা মোটেও তাহমির উপর রাগান্বিত নন। বরং উনাদের মতো শিক্ষা হওয়া দরকার বলে মনে করেন ছেলের।
” তুই এসেছিস! আয়..”
তাহমি এসে দরজা খুলে দিলো। সহন কিছু বললো না। পাশ কাটিয়ে ঘরে চলে গেলো। তাহমি দরজা আঁটকে নিজেও হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে গেলো। ততক্ষণে সহন গোসল করার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকেছে। বিছানার একপাশে খাবার রেখে সহন আসার অপেক্ষায় বসে তাহমি। মানুষটাকে কখন কীভাবে এতটা ভালোবেসে ফেলেছে জানে না তাহমি। শুধু জানে বাড়িতে না থাকলে মনটা অস্থির হয়ে যায়। কোনো কিছুতেই শান্তি মিলে না। কিন্তু এভাবে জোরাজোরি করবে কতদিন? দিনশেষে জোর করে কাউকে পাওয়া যায় না। তাহমি পাচ্ছে না সহনকে।
” আমি খাবো না। সরর একটু ঘুমাবো।”
তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে ফোন চার্জে লাগিয়ে দিল সহন। তাহমি মুচকি হেসে উঠে গিয়ে সহনের সামনাসামনি দাঁড়াল।
” ক্ষিদে নেই? “
” না। ঠোঁট কামড়ে দিবি? না-কি বুক? যা ইচ্ছে কর। তারপর ঘুমাই।”
সহনের ভাবলেশহীন কথায় তাহমির কিছুটা খারাপ লাগলেও পরক্ষণেই সেই খারাপ লাগা উবে যায়। চঞ্চল মেয়েদেরকে বেশিক্ষণ মন খারাপের অসুখ আক্রান্ত করে রাখতে পারে না। তাহমি পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তার স্বামীর দিকে। চুলগুলো থেকে এখনও টুপ টুপ পানি ঝরছে। শুধু লুঙ্গি পরনে তার। লোমশ বুকের দিকে তাকিয়ে কেঁপে ওঠে তাহমি। আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় বুকের মাঝ বরাবর। সহনও কেঁপে উঠল। কারণ এই স্পর্শে কোনো আক্রোশ ছিল না, ছিলো ভালোবাসা।
” খাবি নাকি?”
তাহমি লুঙ্গির দিকে তাকিয়ে দুষ্ট ইশারা করে ঠোঁট টিপে হাসছে। সহন চমকাল। লুঙ্গি শক্ত করে ধরে বললো, ” আর বেইজ্জতি করিস না। কিন্তু অল্প খাবো।”
সহন বিছানায় বসে সেন্ডো গেঞ্জি গায়ে দিলো। তাহমি ততক্ষণে হাত ধুয়ে এসেছে। সহন হাত দিয়ে ভাত ছুঁতে যাবে এমন সময় তাহমি চেঁচিয়ে বললো,
” থাম! আজকে আমি খাইয়ে দিবো।”
” বলির পাঠা আমি? আগেভাগে যত্ন নিচ্ছিস?”
তাহমি হেসে ভাত মাখল ডাল দিয়ে। পাশে ইলিশ মাছ ভাজা। মাছ নিয়ে ভাত এগিয়ে দিলো সহনের দিকে। সহন মুখে নিলো ভাত। মনটা কেমন করে উঠলো। মায়ের পরে এরকম আদর করে তাকে আর কেউ খাইয়ে দেয়নি কখনো। আজ প্রথম তাহমি কোনো প্রকার রাগ দেখাল না তার সাথে। অবশ্য দেখানোর কারণ নেই। নীলার কাছেই তো যায়নি এতদিন।
সময়গুলো ভালো কাটছে তৃষার। প্রতি সপ্তাহে দু’দিন অনিকের সাথে দেখা হয়। দিনা বেশ খুশি। নিজের ভাইয়ের অগোছালো জীবনে আবারও কারো পদচারণা ঘটেছে বলে। মানুষটাকে দূর থেকে যতটা শান্ত,অল্পভাষী মনে হতো কাছাকাছি যাওয়ার পরে তৃষা তাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছে। অনিক আসলে কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না। গ্রাজুয়েশন শেষ করতে যেহেতু অনেকটা সময় বাকি তাই তৃষা সিন্ধান্ত নিয়েছে ভাইকে অনিকের বিষয় জানাবে। আয়ান নিশ্চয়ই তার বোনের পছন্দের মূল্যায়ন করবে!
সন্ধ্যা নেমেছে। পাখিরা তাদের আপন নীড়ে ফিরতে ব্যস্ত। পড়তে বসেছে আয়ান। সামনে ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। মাস্টার্স শেষ করে একটা চাকরি করতে হবে। যদিও ছোটখাটো একটা কাজের খোঁজ করে যাচ্ছে সে।
” ভাইয়া আসবো?”
বোনের কন্ঠে বইয়ের দিক থেকে নজর সরিয়ে দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। আজ হঠাৎ অনুমতি চাওয়ায় অবাক হলো সে।
” তৃষা তোর শরীর ঠিক আছে? “
বোনের কাছে এগিয়ে গিয়ে গালে,কপালে হাত ছুঁইয়ে দেখছে।
” হ্যাঁ। জ্বর হয়নি তো।”
” নাহ, শরীর তো ভালো। তবে এরকম অনুমতি চাইলি কেন! এমনিতে তো উড়ে এসে চিলের মতো ছোঁ মেরে আমার জিনিসপত্র নিয়ে যাস।”
তৃষা আর আয়ান গিয়ে মুখোমুখি চেয়ারে বসলো। ভাইয়ের বিস্ময় দেখে তৃষা ভেংচি কেটে বললো,
” ভাইয়া তুমি সব সময় এমন ভাবো কেনো? হুহ্! “
” সিরিয়াস কিছু বলবি? কী হয়েছে? কেবল প্রপোজ করেছে? “
তৃষা নড়েচড়ে উঠলো। চোখ পিট পিট করছে। ঘন ঘন ঢোক গিললো বারকয়েক। আয়ান বেশ বুঝতে পারছে নিশ্চয়ই কোনো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে।
” ভাইয়া!”
” হ্যাঁ বল।”
” আমি আমি না মানে আমি একজনকে ভালোবাসি! “
” কাকে?”
” ওহির মামা।”
” ডাক্তার অনিক চৌধুরী?”
” হুম! “
কলিংবেলের শব্দে সোফা হতে উঠে দাঁড়ালো একজন যুবক। সোফায় বসে আছে নীলাসহ আরো দু’জন নরনারী। সামনের টি-টেবিলে হার্ড ড্রিংকস ও কিছু চিপস এবং আইস রাখা। যুবক দরজা খুলে দিতেই সহন কিছুটা অবাক হলো। কারণ এই ফ্ল্যাটে শুধু নীলা ও ওর বান্ধবী থাকে। হয়তো কোনো বন্ধু ভেবে সহন স্বাভাবিকভাবে শুধালো, ” নীলা আছে বাসায়? “
” হু। নীলা বেবি দেখো তো কে এসেছে “
লোকটার কথায় নীলা হেলেদুলে এলো দরজার দিকে। ততক্ষণে সহনের সমস্ত শরীর রাগে থরথর করে কাঁপতে শুরু করেছে। নীলা সহনকে দেখতেই বড়সড় একটা শক খেলো বটে। এতদিন কথা হয়নি,এরমধ্যে না জানিয়ে সোজা বাসায় আসবে বুঝতে পারেনি সে।
” সহন! সহন ভেতরে এসো। ওরা আমাদের বন্ধু। “
সহন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে একবার ভেতরে উঁকি দিতেই নেশার সামগ্রী নজরে আসলো। এরমধ্যেই লোকটা নীলাকে সহনের সামনে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরে হাসতে লাগলো। লোকটা অলরেডি ড্রাঙ্ক হয়ে গেছে। নীলার চোখের ইশারায় কিছু বোঝেনি তাই। সহন আর এক সেকেন্ড সময় ব্যায় না করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো। এরচেয়ে বেশি সময় ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলে হয়তো নীলাকে গলাটিপে মেরে ফেলতো। মাথা কাজ করছে না সহনের। কীসের পেছনে এতগুলো বছর নষ্ট করলো সে?
চলবে,
বন্য_প্রণয়
পর্ব_১২
( কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত। এই পর্বে কিছু খারাপ ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। )
মাথা কাজ করছে না সহনের। কীসের পেছনে এতগুলো বছর নষ্ট করলো সে? শুধু কি সময়? টাকাগুলো তো কষ্ট করেই ইনকাম করা হয়েছিল। রাস্তার পাশ দিয়ে আনমনে হাঁটছে সহন। এরকম অনেক হিসেব মেলাতে ব্যস্ত সে। এতগুলো বছরে কতগুলো টাকা নীলা চেয়ে নিয়েছে তার হিসাব। নীলার কাছে সহন ছিল শুধু টাকা পাওয়ার মেশিন। সহনের অস্থির লাগছে। কী করবে সে? নীলার কাছেই যাবে। ওর সাথে একটা বোঝাপড়ার দরকার আছে। পনেরো মিনিটের মাথায় ফের সহন নীলার ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে দরজা খোলাই আছে। সহন কোনো কিছু না ভেবে সোজা ভেতরে ঢুকে যা দেখলো তা দেখার জন্য মোটেও সে প্রস্তুত ছিল না। নীলার জামাকাপড় গুলো সব ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বেডরুমের দরজার দিকেও কিছু জামাকাপরেট অংশ দেখা যাচ্ছে। মাথায় আগুন জ্বলছে সহনের। যাকে অপবিত্র করবেনা বলে এতগুলো বছর স্পর্শ করলোনা, আজ সে কী অবস্থায় আছে? সহন হিংস্র বাঘের মতো এগিয়ে গেলো ওর বেডরুমের দিকে। অতঃপর রাগে,ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টিপাত করে চেঁচিয়ে উঠলো।
” নীলা!”
সহনের এমন বাজখাঁই আওয়াজে আঁতকে উঠলো নীলা ও রকি। দু’জনেই অন্তরঙ্গতার চরম মুহুর্তে ছিলো। নীলা বিছানার চাদর গায়ে জড়িয়ে টলমল পায়ে দাঁড়িয়েছে। আর রকি সহনকে পুরো পাত্তা না দিয়ে আয়েস করে পাশের টেবিলে রাখা লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরিয়ে আঙুলের ফাঁকে গুঁজে সুখটান দিতে ব্যস্ত।
” চেঁচামেচি করছো কেনো সহ..ন? একটু আগেই তো দেখে গে..লে আমি নে…শা করি। এখন আবার এসব দেখ…..তে এসে..ছো বুঝি?”
থেমে থেমে কথা বলছে নীলা। মুখ থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে। সহন নিজেকে সামলাতে পারে না। কষিয়ে চড় বসিয়ে দেয় নীলার গালে। তাতে নীলা ক্ষ্যাপাটে বাঘিনীর মতো হুংকার দিয়ে কিছু বাজে গালি দেয়।
” মাদা**চো*দ*! তোর মতো ছেলেকে কি সত্যি সত্যি ভালোবাসছি আমি? নেহাৎ টাকা-কড়ির মালিক বলেই এতগুলো বছর তোর পেছ*নে নষ্ট করেছি। তোর মতো অক্ষম পুরুষ আমি জীবনে দু’টো দেখিনি। এত বছরে সে*ক্স করা তো দূর কখনো গায়ে হাত পর্যন্ত দিসনি। তাই আমার শরীরের তৃষ্ণা এই রকি মেটায়। যাহ ভাগ এখান থেকে। বউ থাকবে না তোর সাথে। রাতে দিতে না পারলে কেউ থাকে না। “
” ছিঃ! তোর মতো একটা মেয়ের সাথে এতদিন একসাথে ঘোরাঘুরি করিছি ভাবতেও ঘৃণা লাগে। আমি অক্ষম? এর জবাব ভবিষ্যতে পাবি। তোর মতো মেয়েদের জায়গা হলো বে*শ্যা পাড়ায়। থু! শরীরের চাহিদার জন্য যে মেয়ে অন্য পুরুষের সঙ্গ দেয় সে বউ হওয়ারা যোগ্য না।”
সহন নীলার বাসা থেকে বের হয়ে গেলো আবারও। মাথা কাজ করছে না সহনের। একটা মেয়ে তার পরুষত্ব নিয়ে কথা বললো? যাকে ফুল ভেবে বুকে আগলে রাখলো সে এই অপবাদ দিয়েছে ভাবতেই সমস্ত শরীর রাগে হিড়হিড় করে উঠছে তার। অন্য একটা পুরুষের সাথে বিছানায় গেলো নীলা? তা-ও সহনের অগোচরে, দিনের পর দিন!
ঘড়ির কাঁটা টিকটিক আওয়াজ করে রাত এগারোটা বেজেছে জানান দিচ্ছে। তাহমি না খেয়ে বসে ছিলো কিছুক্ষণ। কিন্তু শ্বাশুড়ির বলায় খেয়ে নিয়েছে। নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করতে মানা করেছেন ফরিদা খান। সেজন্য খাওয়াদাওয়া শেষে সোজা ঘরে এসে শুয়ে পড়েছে। আজকে হয়তো সহন ফিরবে না। এসব ভাবছিল এমন সময় দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো সহন। তাহমি শোয়া থেকে উঠে বসলো। কেমন অদ্ভুত লাগছে সহনকে। প্রতিদিন তো বাসায় ফিরে তোয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হতে যায়। কিন্তু আজকে রুমে ঢুকেই দরজা আঁটকে দিলো সে। তারপর ওয়ারড্রবের ওপর শার্ট,গেঞ্জি খুলে রাখলো। তাহমি এরমধ্যে বিছানা থেকে নেমেছে।
” খাবার ডাইনিং টেবিলে ঢাকা আছে। খেয়ে আয়।”
” আমি খাবো না। “
চোখগুলো কেমন রক্তবর্ণ হয়ে গেছে লোকটার। তাহমি শতশত জ্বালাতন করলেও এই চোখের চাহনিতে ভয় লাগছে আজ।
” তোর কী হয়েছে? শরীর কেমন? “
” শরীর! “
সহন অস্ফুটে স্বরে বললো কথাটা। তাহমি কিছু বোঝার আগেই চট করে কোলে তুলে নিলো তাকে। তাহমি অবাক হলো সহনের এমন কাণ্ডে। এরমধ্যে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে তাহমিকে।
” কী…”
তাহমি কথা শুরু করার আগেই ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে ইশারায় চুপ করতে বলে সহন। তাহমি চুপ করে। সহনকে অস্বাভাবিক লাগছে। মনে হচ্ছে প্রচন্ড রাগে শরীর কাঁপছে। সহন তাহমিকে সময় দিলো না। দু-হাত দু’হাতে আবদ্ধ করে ওষ্ঠ পিষতে লাগলো। তাহমির ভীষণ লাগছে। মনে হচ্ছে এতদিনের সমস্ত রাগ এভাবেই ঝাড়ছে সহন। তাহমি চেষ্টা করলো নিজেকে ছাড়াতে। পারলো না। কিছুক্ষণ পরে ওষ্ঠ ছেড়ে ক্রমশ নিম্নাংশে ওষ্ঠ ছোঁয়াতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো সহন। চোখ বন্ধ করে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে তাহমি। সহন তাহমিকে এলোমেলো করে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টায় আছে। তাহমি প্রথম সাড়া না দিলেও স্বামীর আহবানে ঠিক থাকতে পারে না। সহনের জংলীপনায় কেটে যায় অনেকটা সময়।
দুটো প্রাণ ক্লান্ত হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। সহন ঘুমিয়ে গেছে। তাহমির উঠে বসতে কষ্ট হলো একটু। সহন এতটা ডিমান্ডিং ভাবতেও পারেনি কখনো। কী হলো হুট করে! ভাবতেই নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেলো তাহমি। অথচ লজ্জা তার সাথে যায় না! আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো পোশাক ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে সেগুলো। দ্রুত সেগুলো পরে নিলো মেয়েটা। সহনের দিকে একবার তাকিয়ে, ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই তখুনি ফোনে কল এলো নীলার নম্বর থেকে। তাহমি খুশি মনে ফোনটা হাতে নিতেই বুকটা আঁতকে উঠলো তার। ভেবেছিল সহন হয়তো সবকিছু বাদ দিয়ে তার কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু?
তাহমি কলটা রিসিভ করে চুপ করে থাকে। নীলার কথা শোনার জন্য।
” সহন প্লিজ আমার কথা শোনো। তখন আমি নেশার ঘোরে ছিলাম। রকি আমার ড্রিংকসে কিছু একটা মিশিয়ে আমার সাথে সে*ক্স করেছে। আমি যা যা বলেছি তার জন্য সরি। প্লিজ প্লিজ আমাকে মাফ করো বেবি!”
তাহমি দপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। মনে হচ্ছে চোখের সামনে অসংখ্য ছোটো ছোটো পতঙ্গ উড়ে যাচ্ছে। ফোন এখনও কানে। সহনের কথা না শুনতে পেয়ে নীলা আবারও বলতে লাগলো,
” রাগ করলে? অক্ষম পুরুষ বললাম বলে? আমি তো জানি তোমার সবটা। তোমার মতো সুপুরুষ আর কয়জন আছে? “
ফোনটা আর ধরে রাখতে পারলোনা তাহমি। একটু আগে তার সাথে যেভাবে সময় কাটালো সহন নীলার সাথেও তেমন কাটিয়েছে? আর সেজন্য সুপুরুষ বললো মেয়েটা! তাহমি ফোনটা ফ্লোরে রেখেই দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ঢুকলো। দ্রুত ঝরনা ছেড়ে দিয়ে পানির নিচে দাঁড়ালো। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে সে। ভালো মতো গোসল করতে লাগলো সে। ওই নোংরা মানুষটার স্পর্শ শরীরে রাখতে চায় না তাহমি। এতদিন যতই যা করুক এটুকু বিশ্বাস ছিল, মানুষটা ওর হক নীলাকে কখনো দিবে না। কিন্তু কই হলো তা? নিশ্চয়ই নীলাকে আজ কাছে পায়নি বলেই বউয়ের সাথে অন্তরঙ্গতা গড়েছে সে।
কাক ডাকা ভোরে দরজায় কলিংবেলের শব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো আয়ান। আয়ানের রুম দরজা থেকে সবচেয়ে কাছে। ছেলেটা সকাল সকাল উঠে নিজের পড়াশোনা কমপ্লিট করে রাখে। যাতে বিকেলে কিংবা রাতে প্রাইভেট নিশ্চিন্ত মনে পড়াতে পারে।
” আপু এতো সকাল সকাল! তা-ও একা কেনো?”
দরজার বাইরে বড়ো বোনকে দেখতে পেয়ে বিস্মিত জলো আয়ান। তাহমি ঘরে প্রবেশ করে। আয়ান বাইরে রাখা ব্যাগগুলো ভেতরে রাখে।
” এমনি। এবার কয়েকটা মাস থাকবো। “
বোনের চেহারা দেখেই আয়ান কিছু একটা বুঝতে পেরেছে। তাই কোনো কিছু আর জানতে চাইল না আয়ান।
” ঠিক আছে। আপাতত ঘরে দিয়ে আসি তোর ব্যাগপত্র। বাকিরা ঘুমিয়ে আছে। “
আয়ানের পিছু পিছু নিজের রুমের দিকে এগোতে লাগলো তাহমি।
চারদিকে যানবাহনের কর্কশ আওয়াজ। এসব শুনতে শুনতেই প্রতিদিন শুরু হয় শহুরে মানুষের। সহনের ঘুম ভেঙে গেছে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো সে। দেয়ালঘড়ির দিকে দৃষ্টিপাত করলো সময় দেখার জন্য। এগারোটা বিশ বেজেছে! এত বেলা অবধি কীভাবে ঘুমিয়ে ছিলো সে? তাহমির তো এতক্ষণে মগে পানি নিয়ে আসার কথা! না-কি গতকাল রাতের ঘনিষ্ঠতায় খারাপ লেগেছে মেয়েটার? সহন এসব ভাবতে ভাবতে বিছানা থেকে উঠে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে দৃষ্টিতে করলো। নীলার কথা মনে পড়তেই মেজাজ খারাপ লাগছে তার। নীলার করা অপমানের শোধ নিলো তাহমির উপর। নিশ্চয়ই তাহমির লেগেছে শরীরে! সহন দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে চেক করলো তাহমি আছে কি-না। না থাকায় রান্নাঘর আর ছাঁদে গিয়ে খুঁজে এলো। কিন্তু না,সারা বাড়ির কোথাও তাহমি নেই। এমনকি আলমারিতে ওর শাড়ি কিংবা থ্রিপিসও নেই। মনটা কেমন করছে সহনের। সহন তো গতরাতে একেবারে জোরজবরদস্তি করে কাছাকাছি যায়নি তাহমির। তাহমির নিজেরও স্বায় ছিলো। দু’জনের সম্মতিতে বন্য প্রণয় ঘটেছিল চার দেয়ালের অভ্যন্তরে।
চলবে,🤍
বন্য_প্রণয়
পর্ব_১৩
( কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
ড্রয়িং রুমে সবাই মিলে সমবেত হয়েছে। তাহমির বাবা বেশিরভাগ সময় কাজের সূত্রে শহরের বাইরে থাকেন। আজকেও তেমনই বাড়িতে নেই উনি। হঠাৎ শ্বশুর বাড়ি থেকে চলে আসায়, গতকাল কেউ কোনো প্রশ্ন না করলেও আজকে সবাই একসাথে বসেছে আলোচনা করতে। তৃষা বসেছে তাহমির পাশে,আয়ান দাঁড়িয়ে আছে এককোনায়। সামনাসামনি বসেছেন তাহমির মা। সহন যা-ই অন্যায় করুক বাবার বাড়িতে কীভাবে বলবে সেসব? তাতে যে নিজেরই মানসম্মান খোয়া যাবে।
” কী চুপচাপ বসে রইলি কেনো তাহমি?”
মায়ের প্রশ্নে নড়েচড়ে উঠলো তাহমি। তৃষা তাকিয়ে আছে বোনের দিকে। তাহমি খানিকটা সময় নিয়ে বলতে লাগলো।
” মা আমি কিছুদিন সহনের থেকে দূরে থাকতে চাচ্ছি। মানুষ দাঁত থাকতে দাঁতের মূল্য বোঝে না। আমাদের পূর্ব পরিচয় থাকলেও বিয়েটা হয়েছিল হুট করে। তাই স্বাভাবিক সম্পর্কে নেই আমরা। আমার অনুপস্থিতিতে যদি সে আমার মূল্য বোঝে তবেই আমি তার সংসারে ফিরবো। ভালোবাসাহীন সম্পর্কে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
মেয়ের কথায় কোন ভুল খুঁজে পেলেন না আমেনা।
” তুমি ঠিক করেছো আপু। তবে আমার বিশ্বাস সে আসবে।”
আয়ান পাশ থেকে বললো। তৃষা জবাবে বলে,
” আসলে আসবে। ঠিকঠাক মতো টাইট দিবা আপু।”
” চুপ কর তোরা দু’টো। শোন মা তাহমি, তোর সাথে আমি একমত। কিন্তু ছেলেটা তোর কাছে এলে ফিরিয়ে দিবি না। সম্পর্ক হলো একটা গাছের মতো। খেয়াল রাখতে হবে, পরিচর্যা করতে হবে। এবং সেটা দু’জনকেই করতে হবে। তুই নিয়মিত স্কুলে যা আর বাসায় ওদের সাথে সময় কাটাবি। তাহলে আর খারাপ লাগবে না।”
” ঠিক আছে মা।”
” হ্যাঁ হ্যাঁ! জানিস তৃষু আবার প্রে…”
মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে অনিকের কথাটা বলতেই যাচ্ছিল আয়ান। কিন্তু তৃষা ইশারা করতে চুপ করে গেলো। তৃষার গ্রাজুয়েশন শেষ হলে একেবারে পারিবারিক ভাবেই বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে অনিক।
” তৃষা আবার কী করলো আয়ান?”
তাহমির প্রশ্নে থতমত খেলো আয়ান। কী বলবে এবার? আমেনা ইসলাম উঠে দাঁড়ালেন। বিরক্ত হয়ে বললেন, ” ওদের কথা বাদ দে তুই। আমি গেলাম ঘুমুতে। ঔষধ খেয়েছি তো ঘুম পাচ্ছে। “
” আচ্ছা মা যা-ও। “
আমেনা ইসলাম চলে যেতেই দুই ভাইবোনের দিকে দৃষ্টিপাত করলো তাহমি।
” এই তৃষা আয়ান কী বলছিল রে? প্রেমটেম করছিস বুঝি? আয়ান সেটা জানিস? তাহলে কি তোরও বউ ঠিক হয়ে গেছে? “
” আরে এ আপা না না! আমি ওসব প্রেমটেম করি না। সোজা বিয়ে করবো। আগে একটা চাকরি পাই তারপর। তৃষা করছে প্রেম। তা-ও ডাক্তার সাহেবের সাথে। “
আয়ান এগিয়ে এসে সোফায় বসেছে। তৃষা পাশেই ছিলো। গোপন তথ্য ফাঁস করার অপরাধে ভাইয়ের হাতে চিমটি কাটলো সে। ব্যথায় ‘আহহ’ করে উঠলো আয়ান। কিন্তু শুধু চোখ পাকিয়ে তাকিয়েই ক্ষান্ত হলো আজ। কারণ বড়ো বোন সামনে আছে। তাহমি কিছুটা গম্ভীর হলো। তা দেখে তৃষা মোটামুটি চিন্তায় পড়ে গেছে। বোন কি তাহলে রাগারাগি করবে তার সাথে?
গতকাল থেকে ছটফট করছে সহন। বারবার কল করেও ফোন বন্ধ পেয়েছে। নিজের মা-ও তাহমির হয়ে কথা বলছে। গতকাল সকালে সারা বাড়িতে তাহমিকে না পেয়ে মায়ের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিল সহন। তিনি তখন নিজের ঘর পরিষ্কার করছিলেন।
” মা তাহমি গেলো কই?”
” দরকার কী?”
” দেখছি না তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
” সে বাবার বাড়ি চলে গিয়েছে। তুই এবার যাকে ইচ্ছে বিয়ে করিস।”
রাগে গজগজ করতে করতে সহনকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন সহনের মা।
নীলার কথা মনের ভুলেও ভাবতে চায় না সহন। তাহমির সাথে যতই ঝামেলা ডাকুক সবকিছুর আড়ালে একটা সফট অনুভূতি আছে ওর জন্য। তারচে বড়ো কথা তাহমি তার স্ত্রী! মেয়েটা যে কেনো রাগ করে চলে গেলো সেটাও বোধগম্য হচ্ছে না। যদি কাছে আসার জন্য রাগ করতো তবে নিজে আশকারা দিতো না। নিশ্চিত অন্য কিছু ঘটেছে। নাহ! ঘরে বসে এসব ভাবলে চলবে না। সহন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত ন’টা বাজে। তাড়াতাড়ি গায়ের টি-শার্ট পরিবর্তন করে কালো রঙের একটা শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পরে রেডি হলো সহন। মায়ের কাছে আর না গিয়ে বাবাকে বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায় সে।
রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে বিছানায় শরীর এলিয়ে অনিকের নম্বরে কল দিলো তৃষা। তাহমি আসার পর থেকে তেমন কথা বলা হয়নি। কিন্তু পরপর দু’বার কল বেজে গেলো। অনিক রিসিভ করেনি। এরমধ্যেই কলিংবেলের আওয়াজ ভেসে এলো তার কর্ণকুহরে। তৃষা বালিশের পাশে ফোন রেখে দরজা খোলার উদ্দেশ্য বসার ঘরের দিকে এগোলো। আয়ান বসার ঘরেই টিভি দেখছিল। তাই তৃষা পৌঁছুনোর আগেই আয়ান দরজা খুলে দিলো। সহনকে দেখে আয়ানের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। বিয়ের পর এই প্রথম সহন এ বাড়িতে এলো।
” কী অবস্থা শালাবাবু? কেমন আছো? “
” আলহামদুলিল্লাহ দুলাভাই। আগে ভেতরে আসুন। তারপর বলুন, আপনি কেমন আছেন? “
সহন ভিতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে এদিকওদিক তাকাচ্ছে। আয়ান দরজা আঁটকে ততক্ষণে সহনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তৃষাও এরমধ্যে সেখানে উপস্থিত হয়েছে।
” আছি কোনো প্রকার। বউ রেগে বাবার বাড়ি গেলে যেমন থাকা যায় তেমনই। “
তিনজন একসাথে হো হো করে হেসে উঠলো। তৃষা ভেংচি কেটে বললো, ” হয়েছে হয়েছে। এখন গিয়ে রাগ ভাঙান আপুর। আপু ঘরেই আছে। “
” আমার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি কোথায়?”
” আব্বু বাসায় না। আম্মু ঘুমিয়ে গেছেন। কালকে দেখা করে নিবেন বরং। “
” তাহলে তোমার আপুর ঘরটা দেখিয়ে দাও।”
” চলুন।”
তৃষার পেছন পেছন তাহমির ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সহন। তৃষা ওকে রেখে নিজের ঘরের দিকে এগোলো।
শুয়ে শুয়ে ফেইসবুকে রিলস দেখছে তাহমি। হঠাৎ দরজা ঠেলে ভেতরে কেউ প্রবেশ করার শব্দে সেদিকে তাকাল। এমনিতে দরজা লক করে রাখে না তাহমি। সহনকে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো মেয়েটার। কিন্তু শোয়া থেকে উঠলো না তবুও। সহন হাসি হাসি মুখে এগিয়ে এলো তার দিকে।
” কেমন আছিস তাহমি? এভাবে না বলেকয়ে কেউ চলে আসে? “
” তুই এখানে এসেছিস কেনো? “
সহন আস্তে করে তাহমির পাশে বসলো।
” তোকে বড্ড মিস করছিলাম তাই। “
” আজাইরা কথা বলবি না।”
” সত্যি! “
” তুই চলে যা। নইলে কিন্তু! “
সহন তাহমির দিকে ঝুঁকে বললো, ” নইলে কি কামড়ে দিবি? নাকি কিস করবি?”
তাহমি হাত দিয়ে সহনকে দূরে সরিয়ে দিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে, ” তোকে স্পর্শ করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। “
” এহহ! একদিন আমিই বলেছিলাম এই কথাটা। তাই আজকে আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিলি?”
” হুম দিলাম। “
তাহমির বিরক্তি উপেক্ষা করে সহন তাহমির দিকে আবারও ঝুঁকে থুতনিতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। তড়িৎ গতিতে শোয়া থেকে উঠে বসলো তাহমি। কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
” এসব গিয়ে নীলাকে করবি। লাগলে খাট ভেঙে ফেলিস। চরিত্রহীন একটা! “
সহনের হাসে পাচ্ছে ভীষণ। ঠোঁট টিপে হাসছে সে। তাহমির জেলাস হওয়া দেখে যেমন ভালো লাগছে তেমনি আবার কৌতুহল জাগছে। নীলা কথা তো প্রথম দিন থেকেই জানে তাহমি। তাহলে কী এমন হলো যে বাড়ি ঘর ছাড়লো?
” খাট ভেঙে ফেললে শোবো কোথায়? তারচে চল ফ্লোর করি।”
সহনের কথায় তাহমির অক্ষিকোটর থেকে বের হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ছেলেটাকে দেখে মনে হয় ভদ্র। আচরণেও এতদিন মনে হয়েছে তাই। কিন্তু এটা যে এতটা বজ্জাত তা তো জানতোই না!
” চুপপপ! অশালীন কথা। এসেছিস কেনো? “
” তোকে বাড়ি নিয়ে যাবো তাই। “
” আমি আর ফিরবো না। আর তুই আমাকে খবরদার স্পর্শ করবি না। তোর গায়ে পরনারীর স্পর্শ! “
” তাহলে আমিই এখানে থেকে যাবো। আর সব সময় করবো লাগলে চৌদ্দ বার করবো মানে স্পর্শ করবো আরকি। নীলার সাথে আমার কোনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না তাহমি।”
” তুই যাবি নাকি আমি বেরিয়ে যাবো ঘর থেকে? “
” আচ্ছা তুই যা!”
তাহমির রাগে নিজের চুল ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। পারলে তো সহনের সারা গায়ে কামড়ে দিতো। কিন্তু এসব কিছুই না করে বিছানা থেকে উঠে দরজার দিকে এগোলো সে। সহনও উঠলো দ্রুত। হাত ধরে হেঁচকা টানে সোজা দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো সহন। দু’জনের নাকে নাক রেখে ঠোঁট প্রায় ছুঁইছুঁই অবস্থা। তাহমির অস্থির লাগছে। তাহমি কিছু বলার আগেই সহন তাকে আঁটকে দিলো। গাঢ় চুম্বনে আবিষ্ট হলো দু’টো ঠোঁট। একটু পর ছাড়লো সহন। এতক্ষণ ছটফট করছিল তাহমি। গায়ের জোরে সহনের সাথে সে পেরে ওঠেনি।
” নীলার সাথে এসব করা শেষ তাই মজা না পেয়ে আমার সাথে করছিস না? জোর করে তুই এসব করলেও আমার মনে তোর জন্য শুধু ঘৃণা অবশিষ্ট আছে। “
” তাতেই হবে বউ। ভালোবাসা না থাকলেও কিছু তো একটা আছে! আমি এবার সহনশীল হয়ে বউকে সামলাবো। যতদিন না তুই নিজে থেকে আমার সাথে ফিরে না যাবি, ততদিন আমিও এখানে থাকবো। “
” আগে হাত ছাড় তারপর কথা বল। গায়েপড়া বেডা মানুষ। “
চলবে,
সহনশীল হয়ে পেইজে ফলো দিয়ে বড়ো করে একটা মন্তব্য করে যাবেন।🤭 আর হ্যাঁ পায়ে একটা সেলাই লেগেছে আমার। ঔষধ চলছে। ভালোবাসা নিবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *