( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
দু’দিন কেটে গেছে। তাহমির অবস্থা একটু ভালো এখন। চেহারার একপাশ যতটা পুড়েছে চিকিৎসার মাধ্যমে দাগ নিরাময় করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন ডাক্তার। তবে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ চলবে। কিন্তু কাঁধের অবস্থা খারাপ। জরজেটের পোশাক পুড়ে শরীরের সাথে লেগে বিশ্রী অবস্থা হয়ে গেছিল। তাহমির শাশুড়ী চেহারায় তাৎক্ষণিক পানি ঢালার কারণে একটু হলেও উপকার হয়েছে। আরো চারদিন বার্ন ইউনিটে থাকতে হবে তাহমিকে। তারপর বাসায় যেতে পারবে। যদিও চাইলে এখনও নিতে পারে, সেক্ষেত্রে ইনফেকশনের ভয় আছে। এজন্য সহন হসপিটালেই রাখবে তাহমিকে। দু’দিন ধরে তেমন খাওয়াদাওয়া হয়নি সহনের। তাই দুপুরে আয়ান একপ্রকার জোরাজোরি করে সহনকে খেতে পাঠিয়েছে। গতকাল অনিক এসে দেখে গিয়েছে তাহমিকে। আকস্মিক ঘটনায় সবাই এলোমেলো হয়ে গেছে। তৃষার বিয়েটাও কয়েকদিন পিছিয়ে দিতে চাচ্ছে অনিক। তবে সে বিষয় এখুনি কোনো সিন্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তাহমি এরমধ্যে গতকাল একবার কথা বলেছিল সহনের সাথে। সহনের দু-চোখ ছলছল করছিল।
” কী হয়েছে? তোর চোখ অমন লাল হয়ে গেছে কেন?”
তাহমি দূর্বল কন্ঠে শুধালো। সহন তাহমির ডানহাতের একটা আঙুল ছুঁয়ে আছে। হাতে স্যালাইন লাগানো।
” কিছু না। তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ ওঠ। আমার একা একা ভালো লাগে না। “
” অশান্তি ভাল্লাগে তোর? আমার ত্যাড়ামি, ঝগড়া মিস করছিস?”
মৃদু হেসে বললো মেয়েটা। সহন নিজের সামলাতে পারছে না। আঙুলেই চুমু খেলো আলতো করে।
” আমি তোর সবটাই মিস করছি রে। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাড়ি চল।”
” যাবো ইনশাআল্লাহ। “
” সহন! ভাতের মধ্যে আঙুল ডুবিয়ে বসে না থেকে খেয়ে ফেল তাড়াতাড়ি। “
মায়ের কথায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে সহন। মাথা নেড়ে “হু” বলে খেতে শুরু করে। শরীরে খাবারেরও দরকার আছে। খেয়েদেয়ে আবার হসপিটালে যাবে। এখনো চারটা দিন তাহমি এ বাড়িতে থাকবে না! ফরিদা খানের নিজেকে কেনো জানি অপরাধী মনে হয়। সেদিন যদি উনি চা করতে যেতে না বলতেন তাহলে হয়তো এরকম ঘটনা ঘটতো না বলেই ভাবেন উনি। আদতে এমন কিছু নয়। যা হওয়ার সেটা এমনি হয়। তকদিরের লেখা এড়ানো সম্ভব নয়।
প্রায় সপ্তাহ চলে গেছে। এতগুলো দিন আয়ান স্যার আসেননি পড়াতে। আর না তো একটা মেসেজ পর্যন্ত করেছে সে। এ নিয়ে অনিমার মনে চাপা অভিমান জমা হয়েছে বেশ। তবে লেখাপড়া থেমে নেই তার। দিনরাত প্রাণপাত করে লেখাপড়া করে যাচ্ছে অনিমা। পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ভালো রেজাল্ট করা চাই ওর। বিকেলের রোদ গায়ে মেখে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে অনিমা। মনটাকে কিছুতেই বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাখতে পারছে না। বারবার ইচ্ছে করছে আয়ান স্যারকে একবার কল দিয়ে জানবে,কেনো সে আসছে না! নিজের সাথে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত আর না পেরে আয়ানকে একটা মেসেজ পাঠাল অনিমা। মানুষটার কি ওর কথা একবারও মনে পড়ে না? সবটাই কি একপাক্ষিক ছিল তবে?
” আপনারা যা বলবেন তাই হবে মা। তবে আমি চাচ্ছিলাম তাহমি আপু আরেকটু সুস্থ হলে সবকিছু হতো বরং। “
ড্রইং রুমে সোফায় বসে আছে অনিক। আমেনা ইসলামের কথার পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত কথাটি বললো। তৃষা গিয়েছে তাহমির কাছে। গতকালই তাহমিকে বাসায় নিয়ে এসেছিল সহন। তাই সকাল সকাল আয়ান ও তৃষা বোনের কাছে চলে গেছে। অনিক হবু শাশুড়ীর সাথে কথা বলতেই কেবল এসেছে আজ।
” তাহমির রেস্ট দরকার, ও রেস্ট নিবে সময় নেই। কাজকর্ম ওকে কেউ করতেও দিবে না। আগের থেকে তো এখন সুস্থ। বিয়েটায় বাঁধা আসুক আমি চাইছি না। আত্মীয়স্বজনদেরও বলা হয়েছে তো,বুঝতেই পারছো!”
” ঠিক আছে। আমার দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। আমি দিনার সাথে আলোচনা করে নিবো। আপনারা বললেই বিয়ের তোরজোর শুরু করবে ওরা। “
” ঠিক আছে বাবা। “
বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় বসে আছে তাহমি। চোখমুখ এই ক’দিনে কেমন মলিন হয়ে গেছে। চেহারায় আছে ক্ষতের দাগ,হাসিতে প্রাণ নেই যেনো। সহন পাশে বসে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে। চেয়ারে বসে আছে আয়ান ও তৃষা। অনিক তৃষাকে না জানিয়েই গিয়েছিল তাদের বাড়িতে।
” আপাই খেয়ে নাও তুমি। “
” আয়ান তোরা কিছু খাসনি,আমার বাড়ি এসে তোরা না খেয়ে থাকলে কি ভালো লাগে বল?”
” তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হও আপাই। তৃষার বিয়েতে অনেককিছু খাবো আমরা। আর তোমার বাড়ি তো আছেই বলো?”
সহন জোর করে আরেক চামিচ স্যুপ তাহমির মুখে দিয়ে হেসে বললো, ” একদম ঠিক। আমার একমাত্র শালিকার বিয়েতে প্রচুর খেতে হবে। বিয়ে বাড়িতে না খেলে পাপ হয় বুঝলে?”
গ্লাসে চুমুক দিয়ে এক ঢোক পানি খেয়ে আর খেলো না তাহমি। খাবারের প্রতি ভীষণ অনীহা জন্মেছে তার।
” দুলাভাই থামেন তো। সবাই মিলে শুধু আমার বিয়ে বিয়ে করেন। লজ্জা লাগে না বুঝি?”
” এহহ! ঢঙ দেখে মরে যাই। নিজে থেকে বর খুঁজে আনলো তার আবার লজ্জা! সরর নির্লজ্জ মেয়ে। “
আয়ান তৃষার কপালে গাট্টা মেরে দিলো একটা। তৃষা গাল ফোলাল তাতে। তাহমি ওদের ভাইবোনের খুনসুটিতে না হেসে পারছে না। তৃষা তাহমির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
” আপাই দেখো, ভাইয়া কেমন করে বলছে আমাকে।”
” সত্যি তো আয়ান! তুই কেনো এভাবে বললি? দেখিস তুই যেনো নিজের পছন্দ করে আবার বিয়ে করিস না। তাহলে কিন্তু আমরা কথা শোনাতে ছাড়বোনা হুহ্। “
সহন বসা থেকে উঠে আয়ানের কাঁধে হাত রেখে হেসে বলে,” দুই বোন একজোট হয়ে আমার শালাবাবুকে কথা শোনানো হচ্ছে? আমার শালাবাবু নিরামিষ মানুষ। ওসব পছন্দ করে টরে বিয়ে সে করবে না। তাই না? “
সবাই একসাথে হেসে উঠলো। আয়ান চুপ করে রইলো শুধু। হঠাৎ করে অনিমার কথা মনে পড়ে গেলো। কতদিন হলো দেখা হয় না, কথাও হয় না। মেয়েটা কি তাকে একটুও মিস করে? আচ্ছা একটা মেসেজ পাঠালে কেমন হতো? নিজের বোনের এরকম বিপদ হয়েছে সেটা তো অনিমাকে বললেও পারতো সে। বাসায় গিয়ে মেসেঞ্জারে কল দিয়ে সবকিছু বলবে বলে ঠিক করলো আয়ান।
রাতের নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছে গোটা শহর। তাহমি ঘুমিয়ে গেছে। সহনের চোখে ঘুম নেই। সে বসে বসে প্রিয়তমার ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখতে ব্যস্ত। এতদিন না দেখে থাকার সাধ আজ পূর্ণ করে নিচ্ছে। কড়া ঔষধ চলে তাই তাহমির ঘুম বেশ গাঢ় হয়। সহনও সেই সুযোগে মনপ্রাণ ভরে দেখে নিচ্ছে শান্ত তাহমিকে। জেগে থাকলে তো আর এরকম শান্ত হয়ে থাকে না। অবশ্য তাহমির চঞ্চলতাই তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য।
রাত আড়াইটার সময় অনিমাকে অনলাইনে এক্টিভ দেখে অবাক হলো আয়ান। ইনবক্সে ঢুকেই দেখল গতকাল বিকেলে সে তাকে মেসেজ দিয়ে রেখেছে।
“আয়ান স্যার! “
চিন্তাভাবনা বদলে গেলো আয়ানের। লিখতে চেয়েছিল, এতরাতে অনলাইনে কী? কিন্তু এখন সেসব আর লিখবে না। ভেবেচিন্তে রিপ্লাই টাইপ করলো,
” হুম বলো।”
অনিমা মেসেজ আসতেই তৎক্ষণাৎ সিন করলো এবং রিপ্লাই টাইপ করতে লাগলো। আয়ান অপেক্ষা করছে কী লিখে পাঠাবে তার জন্য। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মেসেজ এলো।
” আমার পড়ালেখার কোনো চিন্তা নেই আপনার? কতদিন পড়াতে আসেননি! “
” তোমার বাবাকে জানিয়েছিলাম,আমার বোন অসুস্থ। “
” ওহ! বাবা আমাকে কিছু বলেনি সেসব। “
” তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে?”
” উমম… না আসলে জিজ্ঞেস করিনি। তবে নিজ থেকে তো বললেন না। “
” কাল থেকে যাবো পড়াতে। এখন ঘুমাও। অনেক রাত হয়েছে। “
আগামীকাল আয়ান স্যারের সাথে দেখা হবে ভাবতেই আনন্দে লাফ মেরে শোয়া থেকে উঠে বসলো অনিমা। তারপর ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা বজায় রেখে লিখলো, ” ঠিক আছে আয়ান স্যার। শুভ রাত্রি। “
” হু শুভ রাত্রি। “
অনিমা সাথে সাথে অফলাইনে গেলো দেখে আয়ানের ভালো লাগলো। মেয়েটা ওর কথা শুনেছে বলে। অনিমার মুখে আয়ান স্যার ডাকটা বেশ ভালো লাগে। যদিও প্রথম প্রথম কেমন লাগত তবে সময়ের সাথে ভালোলাগা জন্মেছে এখন।
( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
” আপনি গতকাল বাসায় এসেছিলেন, সেটা মাত্র শুনলাম আমি। “
ফোনের অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসলো অনিক। শান্তভাবে বললো,
” অভিমান হলো?”
” না। “
” আশ্চর্য! অভিমান হওয়ার কথা ছিল। “
” যেহেতু বিয়ের কথা বলতে এসেছিলেন, সেজন্য আর অভিমান করিনি।”
” এতো উতলা হয়ে আছো বুঝি?”
তৃষা লজ্জা পেলো। এমন করে কেউ কথা বলে? প্রসঙ্গ এড়াতে অন্য কথা জুড়ল সে।
” আপনার ডাক্তারি কেমন চলছে? “
” আগের মতোই! তবে তুমি আসার পরে ধীর গতিতে চলবে কয়েকদিন। প্রথম প্রথম একা থাকতে তো বিরক্ত লাগবে তোমার। তাই আমি সঙ্গ দেবো।”
” ঠিক আছে দেখা যাবে। এখন রাখলাম। “
” ওকে টাটা।”
” হুম। “
কল তবুও কাটলো না দু’জন। মিনিটখানেক চুপচাপ থাকার পরে তৃষা নিজেই কল কেটে দুপুরের রান্নাবান্নার কাজে মা’কে সাহায্য করতে এগোল।
চৈত্রের তপ্ত দুপুর। গরমে হাসফাস করছে সমস্ত প্রাণি ও উদ্ভিদ কূল। আকাশে মেঘ জমেছে। বৃষ্টি হলেই যেনো স্বস্তি পেতো সবাই। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিল অনিমা। পিংক কালারের গাউন পরেছে সে। চিন্তাভাবনা যখন সম্পূর্ণ অন্য দিকে তখনই ঘরে প্রবেশ করলো আয়ান। আয়ানের উপস্থিতি টের পায়নি অনিমা। আয়ান স্থিরচিত্তে দাঁড়িয়ে দেখছে ষোড়শী কিশোরীকে। এই ক’দিনে তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি তার মধ্যে। কিন্তু এই তীব্র গরমে পা পর্যন্ত গাউন পরে? অনিমা পরেছে। এভাবেই কেটে গেলো মিনিট দশেক। এরমধ্যেই অনিমা জানালা থেকে সরে উল্টো ঘুরতেই দেখে আয়ান স্যার দাঁড়িয়ে আছে। দু’জনের চোখাচোখি হতেই দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো আয়ান। অনিমা একইভাবে আয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকেই পড়ার টেবিলে গিয়ে বসলো। আয়ানও বসলো তবে সময় নিয়ে।
” কেমন আছো অনিমা?”
” যেমন দেখে গেছিলেন তেমনই আছি।”
অনিমা হেসে বললো। আয়ান চমকাল। কীরকম দেখে গিয়েছিল সেটা ভাবতে লাগল। কিন্তু ভেবে কিছুই পেলো না। শেষমেশ অন্য দিকে আলোচনা ঘুরিয়ে দিলো।
” পড়ালেখার কী খবর? পরীক্ষার তো কয়েকদিন বাকি!”
” খুব ভালো। আপনার আপু কেমন আছেন? “
অনিমা বই খুলে সামনে রাখল। আয়ান বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বললো,
” আগের চেয়ে অনেক ভালো, আলহামদুলিল্লাহ। “
এতদিন ঠিকঠাক মতো পড়াশোনা করেছে কি-না ধরলো আয়ান। লেখাপড়ার উন্নতি দেখে বেশ ভালো লাগছে আয়ানের। তবে অনিমা আগের থেকে বেশি খেয়াল করছে আয়ানকে। কেমন ঘোলাটে দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আয়ানের দিকে। আয়ান সেটা বুঝতে পারলেও ধরা দেয় না। আগে নিজের অনুভূতি নিজে বুঝুক। তারপর অনিমাকে বলা যাবে। তাছাড়া মেয়েটার এসএসসি পরীক্ষা সামনে।
আগের থেকে তাহমির শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে এখন। দাগগুলো আছে তবে ব্যথা একেবারে কমে গেছে। নিয়মিত ঔষধ সেবন ও যত্নের ফলেই এতটা দ্রুত ব্যথা থেকে মুক্তি পেলো তাহমি। সবকিছুই সহনের জন্য। ছেলেটা দিন-রাত এক করে বউয়ের সেবা করে গেছে। এ ক’দিনে সহনকে নতুন করে চিনেছে তাহমি। স্ত্রী’র অসুস্থতায় স্বামীর ভালোবাসা বোঝা যায়। হাতেগোনা আর দুই দিন বাকি তৃষার বিয়ের। ও বাড়িতে তৃষার বাবা-মা, আয়ান সবাই ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছে। আগামীকাল যাবে সহন ও তাহমি।
বিকেলবেলা। আসরের নামাজ শেষে তাহমির ঘরে এসেছে ফরিদা। সহন একটু কাজে বেরিয়েছে। তাহমি বিছানায় শুয়ে ছিল। শাশুড়ীকে ঘরে ঢুকতে দেখে ব্যস্তসমস্ত ভঙ্গিতে উঠে বসলো।
” উঠে বসতে গেলি কেনো? “
” সারাদিন তো শুয়ে থাকি মামুনি। আমি তো এখন ভালো হয়ে গেছি। তুমি এসেছো বলে একটু বসলাম। “
ফরিদা খানও তাহমির পাশে বসলেন।
” কাল তো ও বাড়িতে তোরা দু’জন যাবি,সাবধানে থাকিস তুই। আমরা বিয়ের দিন যাবো একেবারে। “
” ঠিক আছে মামুনি।”
হঠাৎ তাহমির চুলের দিকে নজর গেলো ফরিদার। চুলে আঙুল ছুঁইয়ে দেখলেন একটু।
” তোর চুলে তো তেল নেই একটুও। চুলগুলো অযত্নে শেষ হয়ে গেছে এই ক’দিনে।”
” তাতে কিছু হবে না। “
ফরিদা উঠে দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গেলেন।
” পাগলি একটা! দাঁড়া আমি তেল নিয়ে আসছি। তেল দিয়ে চুল আঁচড়ে দিচ্ছি। “
” তুমিও পারো মামুনি। কোনো শাশুড়ী যে এতো ভালোবাসে কেউ নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করত না।”
তাহমির পেছনে বসে দু-হাতে তেল নিয়ে চুলে ম্যাসেজ করতে লাগলেন ফরিদা। ভালো করে তেল লাগিয়ে চিরুনি নিলেন হাতে।
” বিশ্বাস করতে হবে না কাউকে। এরপর থেকে নিজে না পারলে আমাকে বলবি চুলে তেল লাগিয়ে দিতে। “
” ঠিক আছে। “
ছেলের বউয়ের সাথে আরও কিছুক্ষণ আলাপচারিতা সেড়ে ঘর ত্যাগ করেন সহনের মা।
রাত নেমেছে শহরের বুকে। তাহমি আগেভাগে খাবার খেয়ে রাতের ঔষধ খেয়ে নিয়েছে। সহন বাসায় ফিরলো রাত দশটায়। তাহমির ভীষণ মন খারাপ লাগছিল। দুপুরে বেরিয়ে রাতে ফিরলে কী ভালো লাগে? ডিনার করে ঘরে এসে দরজা আঁটকে দিলো সহন। তাহমি মুখ গোমড়া করে শুয়ে আছে। সহন বাইরের পোশাক বদলে হাতমুখ ধুয়ে আসলো। আজকে যে তার ঘরণী রাগ করবে সেটা আগেই বুঝেছিল সে। কিন্তু কী করবে? এতদিন বাসায় থাকায় কোনো কাজ করতে পারেনি। আজকে তাই একটা দরকারি কাজে এতক্ষণ বাইরে থাকতে হয়েছিল। তাহমিকে চুপ করে থাকতে দেখে পাশে উঠে বসলো সহন। নড়েচড়ে অন্য দিকে এগিয়ে শোয়ার চেষ্টা করলো তাহমি৷ কিন্তু সহন দিলো না সেদিকে সরতে।
” রাগ করেছো? না-কি অভিমান? “
তাহমি চুপ করে রইলো তবুও। সহন ঝুঁকে ললাটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। তবুও তাহমি তার দিকে দৃষ্টিপাত করলো না। কিছু একটা ভেবে পাশের টেবিলের উপর থেকে একটা গোলাপ নিয়ে এসে দাঁড়াল সহন।
” আমি আমার একমাত্র ঝগরুটে এবং রোমান্টিক বউটাকে ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি। সে কি আমাকে একটুও ভালোবাসে?”
তাহমি ফিক করে হেসে উঠলো সহনের দিকে না তাকিয়েই। এবার ফিরলো সহনের দিকে। হাতে লাল গোলাপ দেখে মুচকি হাসলো। উঠে বসলো তাহমি।
” ইয়েস! আই লাভ ইউ টু।”
গোলাপ ফুল হাতে নিলো তাহমি। সহন মাথা চুলকে পাশে বসলো। কেমন কেমন করছে লোকটা। তাহমি ঠিক বুঝতে পারছে না সহনের কী হয়েছে! তাই নিজে থেকে জিজ্ঞেস করলো,
” কী হয়েছে তোর? এরকম ছটফট করছিস কেনো?”
” একটা কথা বলবো?”
অস্বস্তি নিয়ে প্রশ্ন করলো সহন। তাহমি অবাক হলো তার আচরণে। বিস্ময় নিয়ে শুধালো, ” হ্যাঁ বল। “
” আমি তোকে জড়িয়ে ঘুমালে কষ্ট হবে তোর?”
” এই কথা? “
” উঁহু। “
” তাহলে?”
” কতদিন হলো…”
তাহমি ঠোঁট টিপে হাসছে এবার। পুরুষ মানুষ এভাবে কী বলতে পারে ঠিক বুঝে ফেলেছে তাহমি।
” কী হলো বলবি তো?”
সহন বলতে পারছে না। তাহমি তো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। এখন কীভাবে বলবে সে আদরের কথা?
” কিছু না। আয় ঘুমোতে আয়। কালকে আবার ও বাড়িতে যেতে হবে তো।”
” হ্যাঁ। তুই বাতি নিভিয়ে শুতে আয় তাহলে। “
সহন তাহমির কথামতো বাতি নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে দিলো। কিন্তু পরক্ষণেই অবাক হলো। তাহমি এক হাত সহনের বুকে রেখেছে। অন্য হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সাহস পেয়ে বুকে রাখা হাতটা ধরে নিচের দিকে নামিয়ে দিলো সহন৷ তাহমি তার আঙুল দিয়ে সহনের উদরে স্লাইড করছে। সহন আর স্থির থাকতে না পেরে তাহমির দিকে ফিরে শুয়েছে। ডিম লাইটের মৃদু আলোতে ভেজা ঠোঁট জোড়াকে নিজের ঠোঁট দিয়ে আঁকড়ে ধরে মধু পান করতে লাগলো সে। সাথে এলোমেলো ভাবে ছুঁয়ে দিচ্ছে তাহমিকে। মিনিট পাঁচেক পরে থামলো দু’জন। হঠাৎ মনে হলো মেয়েটা এখনো বেশ দূর্বল। সহন নিজেকে শান্ত করে নিলো সময় নিয়ে। তাহমিকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে রইলো চুপচাপ। তাহমি বুঝতে পারছে না হঠাৎ কী হলো। তাই নিজে থেকে জিজ্ঞেস করলো, ” কী হয়েছে? “
” আজকে না। কিছুদিন পর। ঔষধ খাচ্ছিস,রাতে ঘুম দরকার তোর।”
তাহমি বুকে আস্তে করে কামড়ে দিলো সহনের। সহনের খারাপ লাগছে। মেয়েটাকে উত্তে**জিত করে দিয়ে এভাবে দূরত্ব বাড়িয়ে কষ্ট দিলো। তারচে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে কাছাকাছি না আসাই উচিত ছিল।
( মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
বাড়িতে বিয়ে লেগেছে। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের আনাগোনায় মুখরিত হচ্ছে তাহমিদের বাড়ি। সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে। আসরের নামাজের পরে বিয়ে। বরপক্ষ নামাজের পরে আসবে। হাতেগোনা একঘন্টা সময় বাকি আছে মাত্র। শেষ মুহূর্তে বউকে সাজানোর প্রস্তুতি চলছে। তাহমি নিজেই সাজাচ্ছে তৃষাকে। সাথে তৃষার বান্ধবী তামান্না ও ফাতেমা সাহায্য করছে।
” তামান্না দেখ তো ঠিকঠাক হলো সব?”
তাহমি তৃষার থুতনিতে হাত রেখে ভালো করে দৃষ্টিপাত করলো চেহারার দিকে। পিংক কালারের বেনারসি সাথে ম্যাচিং লিপস্টিক। হালকা মেকআপ, কাজল,আইশ্যাডো, আইলাইনার,মাশকারা সবকিছুই ঠিকঠাক মতো দেওয়া হয়েছে। তামান্না নিজেও একবার ভালো করে পরখ করে বললো,
” ঠিকই লাগছে আপু। তুই দেখ তো ফাতেমা।”
” সুন্দর লাগছে। “
ফাতেমা হেসে বললো। তৃষা লজ্জা পাচ্ছে। আজকে যেনো পৃথিবীর সব লজ্জা এসে ভড় করেছে তার উপর। একটু আগেই আবার ডাক্তার সাহেব কল করেছিলেন। তামান্না কল রিসিভ করে কথা বললো। কী লজ্জা! বিয়ের একটু আগেও বর বউয়ের সাথে কথা বলার জন্য আকুপাকু করছিলো।
” যাক তাহলে,আমার বোনটা রেডি। মাশা-আল্লাহ! কারো নজর না লাগুক। “
তৃষা ঠুকরে কেঁদে উঠে তাহমিকে আলগোছে জড়িয়ে ধরে। তাহমি মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বোনকে শান্ত করতে বলে,
” বোকা মেয়ে মন খারাপ কেনো করছিস? আমাকেও তো শ্বশুর বাড়ি থাকতে হয়। মেয়ে মানেই পরের ঘরে যেতে হবে। তবে তোর তো একার সংসার। অনিক ছুটি পেলেই দু’জনে চলে আসবি। “
” সবাইকে খুব মিস করবো আপাই।”
” আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। কান্না করিস না! সব ঘেঁটে যাবে তো। লক্ষ্মী বোন এরকম করিস না।”
তৃষাকে শান্ত করার জন্য চেষ্টা করছে তাহমি। ঘরের বাইরে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে সহন। কখন থেকে উঁকি দিচ্ছে বউকে দেখার জন্য। কিন্তু দরজা ভেতর থেকে লক করা। বোনের বিয়েতে কেমন সাজল সেই নিয়ে লোকটার ভাবনার শেষ নেই। তবে অনেক কষ্ট করে তাহমিকে সাজার জন্য মানিয়েছিল সহন। চেহারার একপাশে পোড়া দাগ থাকার কারণে আয়নার দিকে তাকায় না তাহমি। যদিও দাগ হালকা হয়ে আসছে। তবে মন খারাপ তো লাগবেই।
সারা বাড়ি ঘুরতে ঘুরতে লাইব্রেরিতে ঢুকে বসেছে অনিমা। ল্যাভেন্ডার কালারের লেহেঙ্গা পরেছে সে। খোলাচুল, হালকা লিপস্টিক ঠোঁটে। সাজগোছ কম করে এই মেয়েটা। একা একা ভালো লাগছিল না বলে আয়ানদের বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছিল এতক্ষণ। হঠাৎ লাইব্রেরি লেখা দেখে সেখানে ঢুকল। ভেতরে দাঁড়িয়ে চারপাশে নজর বুলিয়ে নিলো সে। অনেক রকমের বইয়ের সমাহার এখানে। যেমন কালজয়ী লেখকদের বই আছে এখানে তেমনি নতুন লেখকদের বই-ও আছে। হঠাৎ দরজার বাইরে কারো জুতার খসখস আওয়াজে চমকে উঠলো অনিমা। কোনো পুরুষ মানুষ হঠাৎ এখানে চলে এলে অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হবে নিশ্চিত। অনিমা এসব ভাবছিল তখুনি রুমে ঢুকল আয়ান৷ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো অনিমা। যেনো আয়ানের কাছে সে ভীষণ নিরাপদ। আয়ান অনিমাকে এখানে দেখবে বলে আশা করেনি। সে উল্টো সারা বাড়ি খুঁজছিল মেয়েটাকে।
” অনিমা! তুমি এখানে একা একা কী করছো?”
” লাইব্রেরি লেখা দেখে এলাম। বইটই দেখতে ভালো লাগে আমার। বর তো এখনো আসতে একটু বাকি তাই ঘুরছিলাম বাড়িময় জুড়ে।”
অনিমা আয়ানের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। উচ্চতায় আয়ানের ঠিক বুক বরাবর সে। আয়ানের সামনে যেনো সে কিছু না। আয়ানের হৃৎস্পন্দনের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অস্বাভাবিকতার কারণ সে বুঝতে পারছে না। অনিমাকে কি বলবে কিছু? না! অতটুকু মেয়েকে কী বলবে সে?
” ভালো করেছো। চলো তাহলে নিচে যাই।”
” আপনি যান আমি আসছি আয়ান স্যার। “
আয়ান গেলো না। তাহমিও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। নিজেকে সামলাতে পারছে না আয়ান। ইচ্ছে করছে এতটুকু মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে নিতে। তবেই বুঝি তার এই অস্থিরতা কমবে। অনিমা চোখ বন্ধ করে নিঃশাস ফেলে আয়ানকে চমকে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। হুট করে কী হলো সেটা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো আয়ানের। অনিমা কিছু ভাবছে না আপাতত। বুকে মুখ গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দরকার হলে আয়ান স্যার সরিয়ে দিবে। তবে যতক্ষণ না সরায় ততক্ষণ তো ধরে থাকাই যায়! আয়ান আর কিছু ভাবল না। সে বুঝে গেছে তাদের দু’জনার ভাবনা এক ও অভিন্ন। অনিমাকে চমকে দিয়ে আয়ানও দু’হাতে আঁকড়ে ধরলো ছোট্ট শরীরটাকে। অনিমার কিছু একটা হলো। ভীষণ সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে। কতকাল পরে যেনো একটা নিরাপদ, শান্তির স্থানের খোঁজ পেলো সে। পরম তৃপ্তিতে বুকে মাথা ঠেকিয়ে রইলো যতক্ষণ না তাদের কেউ খোঁজ করে।
পর্দার অপরপ্রান্তে বসে কাজী সাহেব তৃষাকে কবুল বলতে বলছেন। তৃষা বসে আছে সাথে আছে তার বোন,অনিমা,বান্ধবীরা। সবকিছু কেমন ঘোরের মতো লাগছে। শুধুমাত্র তিন কবুল বলার অপেক্ষা! তারপর সে ডাক্তার সাহেবের বিবাহিতা স্ত্রী হয়ে যাবে। ওপাশ থেকে তাড়া এলো। তাহমি বোনকে ফিসফিস করে কবুল বলতে বলছে। সবাই চুপ করে আছে। অতঃপর থেমে থেমে তিন কবুল বললো নববধূ। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো। অনিকের হৃদয়ে বয়ে গেলো নতুন জীবনের আগমনী বার্তার সুর। যখন আমাদের জীবন থেকে ভালোবাসার মানুষগুলো আঘাত দিয়ে কিংবা পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে হারিয়ে যায়, তখন আমরা একা হয়ে পড়ি। আমাদের সমস্ত অনুভূতি তবুও জমিয়ে রাখি সেই ভুল মানুষদের জন্যই। কখনো ভুলেও ভাবতে পারিনা আর কাউকে ভালোবাসতে পারবো। যখন দ্বিতীয় বার ভালোবাসার কথা-ই আমরা ভুলে যাই তখনই এমন কোনো মানুষ আসে জীবনে যাদেরকে না ভালোবেসে পারা যায় না। এরা আমাদের হৃদয়ে নতুন করে ভালোবাসা সঞ্চার করে। নতুন করে বাঁচতে শেখায়,রঙিন স্বপ্ন দেখায় নতুন করে। অনিকের জীবনে তৃষা সেই দ্বিতীয় মানুষ। এই মানুষটাকে ঘিরেই এখন অনিকের আগামী দিনের পরিকল্পনা ও স্বপ্ন। বিয়ে শেষে খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়ে বউ নিয়ে বেরোনোর সময় আগত। এই সময়টা ভীষণ কঠিন। তৃষার মা আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদছেন। তাহমি চলে যাওয়ার পরে তৃষা ছিলো তার ছায়া সঙ্গী। এখন ছোটো মেয়েরও বিয়ে হয়ে গেলো। তৃষার বাবা চুপচাপ মানুষ। এককোণ বসে আছেন নিশ্চুপ। উনাকে দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না ভেতরে কতটা দহন হচ্ছে। মেয়ের বিয়েতে বাবাদের এভাবেই কলিজা পোড়ে। এতকিছুর পরেও নববধূকে বিদায় দিতে হলো সবাইকে। চিরচেনা পরিবেশ, মানুষগুলো ছেড়ে বরের হাত ধরে নতুন গন্তব্যে এগিয়ে গেলো তৃষা। এই জীবনে অনিক তার একমাত্র ভরসা।
বিকেলের ঘটনার আয়ান কিংবা অনিমা কেউ কারো সাথে কথা বলেনি। ঘড়ির কাঁটায় রাত দশটা বেজেছে। পাশাপাশি খোলা আকাশের নিচে শহরের রাস্তায় হাঁটছে অনিমা ও আয়ান। সামনেই গাড়ি পার্ক করা অনিমার। ড্রাইভার ছিলো সর্বক্ষণ। একটু আগেই উনি আয়ানদের বাসা থেকে।
” আমি ড্রাইভার মামার সাথে চলে যাবো স্যার। আপনি বরং আসুন। “
অনিমা দৃষ্টি রাস্তায় রেখেই বললো কথাটা। আয়ান সময় নিলো উত্তর দিতে। সাহস করে হাত ধরলো অনিমার। অনিমা কিছু বললো না। আঙুল ধরে এগোতে লাগলো সামনের দিকে। কেমন অদ্ভুত ফিল হচ্ছে অনিমার। এই হাতে আর মানুষটার বুকে এতো প্রশান্তি কীসের? ছুঁয়ে দিলেই মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বিশ্বস্ত মানুষ হচ্ছে তার আয়ান স্যার।
” এখন থেকে কম কম বুঝবে। আমি বাসা পর্যন্ত যাবো তোমার সাথে। দিনকাল ভালো না। এই রাতে ড্রাইভারের সাথে একা আমি তোমাকে ছাড়তে পারিনা। তোমার বাবার কাছ থেকে বলে নিয়ে এসেছিলাম তোমাকে। আমার দায়িত্ব নিজের সঙ্গে করে তোমাকে তার কাছে পৌঁছে। “
” ঠিক আছে। “
অনিমা কথা বাড়াল না। কেনো জানি চুপচাপ এভাবে হাঁটতেই বেশি ভালো লাগছে তার। নতুন নতুন অনুভূতিরা তার চিত্তকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। আয়ানের এখন আর কোনো সংশয় নেই। নিজের মনকে বুঝতে না পারলেও অনিমার চোখের ভাষা পড়তে তার সমস্যা হয়নি। অনুভূতিরা দোল খাচ্ছে ছোট্ট অনিমার মনেও। তবে আয়ানের ভয় হয়। এই বয়সের ভালোলাগা যদি ভবিষ্যতে গিয়ে না থাকে অনিমার? তখন!