বন্য প্রণয় 29,30,31

বন্য প্রণয়
( কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
অনিকের অসহায়ত্ব তৃষাকে আঘাত করছে হৃদয়ে। তৃষাও চেয়ার ছেড়ে ফ্লোরে বসে পড়লো। হাতে হাত রাখল অনিক। তৃষা এগিয়ে গিয়ে দু’জনার মাথা ঠেকাল মাথায়।
” আমিও আপনাকে আঘাত করে কথা বলতে চাইনি। আমার মন মানসিকতা খারাপ থাকে। বিয়ের আগে যে আপনাকে পেয়েছিলাম,বিয়ের পরে সেই আপনাকে আমি পাচ্ছি না। সম্পূর্ণ আলাদা মানুষ মনে হচ্ছে আমার। যেনো একের ভেতর দু’টি সত্তার বসবাস! “
অনিক চমকাল। মস্তিষ্কে একটা কথা বারবার আনাগোনা করতে লাগলো ❝ একের ভেতর দু’টি সত্তার বসবাস!❞ আসলেই কি তেমন কিছু? তার কি কোনো মানসিক রোগ হয়েছে? নিজেকে সামলে নিল লোকটা। আলতো করে নাকের ডগায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো তৃষার। তৃষার গাল বেয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে। অনিক আলগোছে সেই পানিটুকু মুছে দিল।
” তৃষা আমি ডাক্তার দেখাবো। আমি সব রকমভাবে চেষ্টা করবো নিজেকে স্বাভাবিক রাখার। তুমি একটু ততদিন আমাকে সহ্য করে নাও লক্ষ্মী বউ আমার। “
” ঠিক আছে। আমিও চাই আমাদের একটা সুন্দর সংসার হোক। দু’জনের সুখের সংসার। তারজন্য আমি অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করবো।”
তৃষা নিজে থেকেই জড়িয়ে ধরলো অনিককে। অনিক তৃষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মাথার তালুতে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো।
সকালবেলা তড়িঘড়ি করে বাসার কাজকর্ম সব শেষ করে বাসা থেকে স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে তাহমি। এমনিতে বাসে করে যায় তবে মাঝে মধ্যে আবার রিকশায় চড়েও যাওয়া হয়। আজকে অবশ্য বাসে উঠেছে। লোকাল বাসের হেলপার গুলোকে ভীষণ অসহ্য লাগে তাহমির। লাগার অবশ্য কারণ আছে। এই যে একটু আগে, ওভারব্রিজের নিচে নেমে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো তাহমি। বলার অপেক্ষা রাখে না বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। এরমধ্যে একসাথে দু’টো বাস থামলো। দু’জন হেলেপার সামনে এসে শুরু করলো প্যাসেঞ্জার নিয়ে কাড়াকাড়ি। একজন বলতেছে,
❝ আপা আমগো বাসে আহেন। এক্কেরে সামনে সিট আছে।❞
অন্য জন আবার বললো,
❝ আরে তোরা আর কী সিট দিবার পারবি? আফা এদিকে আইয়েন। একেবারে জানালার পাশে সিট দিয়ামনে। ফুরফুরা বাতাস খাইয়েন।❞
শেষমেশ বিরক্ত হয়ে তাহমি একটা বাসেও উঠেনি। পরের বাসে উঠে বসেছিল।
” আরে তাহমি না? কত বছর পরে দেখা হলো!”
হঠাৎ পুরুষালী আওয়াজে ভাবনার ছেদ ঘটলো তাহমির। ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ তুলে তাকাল সেদিকে। এক পলকে চিনতে পারল লোকটাকে। তার কলেজের ক্লাসমেট ছিল অথবা বলা যায় তাহমির প্রথম প্রেম!
” হ্যাঁ। কেমন আছিস শ্রেয়ান?”
স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞেস করলো তাহমি। শ্রেয়ান হাসলো একটু। লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
” পাশের সিট তো খালি আগে না হয় বসি,তারপর কথা বলবো?”
তাহমি কিছুটা ইতস্ততভাবে বলে, ” হ্যাঁ বস।”
শ্রেয়ান বসলো পাশের সিটে। তাহমি জানালার দিকের সিটে বসেছে।
” আছি আলহামদুলিল্লাহ। তোর খবর কী? বিয়েটিয়ে করেছিস নাকি?”
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কেন তুই কি বিয়ে না করে দেবদাস হয়ে বসে আছিস?”
” সেটা নয়। তবে বিয়ে করিনি এখনো। তোর তো বিয়ে করার কথা নয়। বিয়েশাদি তো বিশেষ পছন্দ ছিল না। “
চলন্ত বাস মাঝে মধ্যে থেমে আবারও চলছে। কখনো ঝাঁকি খাচ্ছে তো কখনো সমানভাবে চলছে। তাহমির অপ্রস্তুত লাগছে ভীষণ। কেনো লাগছে নিজে জানে না। যদিও সেরকম সিরিয়াস টাইপের রিলেশনশিপ ছিলো না শ্রেয়ানের সাথে। তবুও কিছু স্মৃতি তো আছেই। তবে সেসব নিছকই অতীত। অতীত বর্তমানে প্রভাব ফেলে।
” আমার বিয়ে হয়ে গেছে। সহনের সাথে। “
” কী!”
শ্রেয়ান ছোটখাটো একটা শক খেলো মনে হয়। অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাহমির দিকে। তাহমি মৃদু হেসে বললো,
” হুম। শ্রেয়ান চলতি পথে অতীত আমাদের সামনে এসেই পড়ে। তাই বলে বর্তমানের সামনে অতীতকে প্রশ্রয় দিতে নেই। আমাদের সম্পর্ক এখন শুধু ক্লাসমেট ছিলাম। আমার সংসার আছে। তুইও বিয়ে করে নিবি আশা করি। “
” সত্যি বলতে আমি বিয়ে কেনো করিনি আমি নিজেও জানি না। ভেবেছিলাম হয়তো একদিন তোর সাথে দেখা হবে, আরেকবার সুযোগ চাইব। মিস হয়ে গেলো। শালা সহন মাঝখান থেকে গোল দিলো। যাগগে কংগ্রাচুলেশনস। “
” ধন্যবাদ দোস্ত। একদিন বাসায় আসিস তাহলে। আমার গন্তব্য এসে গেছে। “
বাস থামলো। হেলপার যাত্রীদের উদ্দেশ্য বারবার জায়গার নাম বলে যাচ্ছে, কেউ নামার থাকলে যেনো নেমে যায়।
” ঠিক আছে। বিয়ের কার্ড দিতে যাবো একেবারে। ভালো থাকিস।”
” সেইম টু ইউ। “
তাহমি বাস থেকে নামতেই জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টিপাত করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো শ্রেয়ান। সেদিন একটু সিরিয়াস হলে আজকে মানুষটা তার ঘরে থাকতো। এই আফসোস কখনো ঘুচবে না শ্রেয়ানের। তাহমি ছাড়া শ্রেয়ান ভালো নেই এমন না কিন্তু তাহমির শূণ্যতা আজীবন তার জীবনে থেকে যাবে। একজন গেলে একজন আসে ঠিক কিন্তু সেই চলে যাওয়া একজনের মতো আর হয় না দ্বিতীয় কেউ। প্রত্যেকটা মানুষের উপলব্ধি আলাদা।
আকাশে কালো মেঘ জমেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় কালো রঙ করেছে কেউ। ঘনকাল মেঘেরা আর ঠান্ডা হাওয়া কালবৈশাখীর আভাস দিচ্ছে। এখন সময় দুপুরবেলা। রান্না ঘরের টুকটাক কাজ শেষ করে ফরিদা খান গোসল করতে ওয়াশরুমে ঢুকেছেন। আজকে শুক্রবার বলে তাহমি,সহনও আছে বাসায়। তাহমি দুপুরের খাবারগুলো ডাইনিং টেবিলে গুছিয়ে রেখে ছাদের দিকে এগোলো। বৃষ্টি হলে সব জামাকাপড় ভিজে একাকার হয়ে যাবে। ছাদের সিড়ি পর্যন্ত উঠতেই সহনের গলার আওয়াজ শুনতে পেলো সে। কারো সাথে ফোনে কথা বলছে সে। আবহাওয়া এমন তারমধ্য ছাদে বসে কেন থাকতে হবে? থাকবি যখন কাজ করে খাবি। তাহমি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো ছাদের উত্তর পাশের বেঞ্চির দিকে।
” ওকে মিস্টার শেখর আপনি আগামীকাল অফিসে আসুন। আমরা বাদবাকি কথা তখন না হ সেড়ে নিবো। “
সহনের কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছিল তাহমি। ফোন কাটতেই আলতো করে ঘাড়ে কামড়ে দিলো সে। সহন লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বড়ো বড়ো চোখ মেলে পেছনে তাকিয়ে দেখলো কীসো কামড়াল তাকে। তাহমির তো হেসে হেসে শেষ হওয়ার যোগাড় হয়েছে। লোকটা যে কতটা চমকে গেছে সেটা চোখের চাহনি দেখেই স্পষ্ট বুঝতে পারছে তাহমি।
” তুই! এরকম কেউ করে? ধুর বেটা ভয় পেয়েছি।”
তাহমি সহনের দিকে এগিয়ে পায়ে পা রেখে গলা আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো,
” কী ভেবেছিস ভ্যাম্পায়ার এসে কামড়ে দিলো? হাহাহা! “
সহন উত্তর দিলো না। দু’হাতে শক্ত করে তাহমির কোমর চেপে ধরলো। তাহমি শিহরিত হলো। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো সহন। তাহমি সেদিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। তাহমির ঠোঁটও নিজের জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে দিলো সহন। থেকে থেকে কেঁপে উঠল মেয়েটা। সহন থামল না তাতে। দীর্ঘদিনের দূরত্ব তাকে অধৈর্য করে তুলেছে। দু’জনের ভেজা ঠোঁট একত্র হলো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই। হঠাৎ মেঘের গর্জনে নড়েচড়ে উঠলো দু’জন। দু’জন দু’জনার দিকে তাকিয়ে দূরে সরে গেলো। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে।
” চল জামাকাপড় গুলো নিচে দিয়ে আসি। তারপর আবার আসবো ছাদে।”
কথাগুলো বলতে বলতেই দু’জন একসাথে সমস্ত জামাকাপড় হাতে নিতে শুরু করেছে। বৃষ্টি থেকে থেকে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিঁড়ির দিকে এগোলো দু’জন।
” আবার কেন?”
” ভিজবো দু’জন। “
তাহমি মুচকি হাসলো। সহনকে ওখানে দাঁড় করিয়ে রেখে নিজেই সবগুলো জামাকাপড় ঘরে রেখো এলো চট করে। সহন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাহমি আসার অপেক্ষা করছে। বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে তাহমি এলো। সহন কিছু না বলে তাহমিকে কোলে তুলে নিয়ে ছাদের দিকে এগোচ্ছে। ছাদের মাঝখানে এসে দাঁড়াল। বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে দু’জনের গায়ে।
( কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। চারদিক মেঘে অন্ধকার হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে সন্ধ্যা নেমেছে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে তাহমি এলো। সহন কিছু না বলে মুচকি হেসে তাহমিকে কোলে তুলে নিয়ে ছাদের দিকে এগোচ্ছে। তাহমির অন্য রকম কিছু অনুভব হচ্ছে। দীর্ঘদিন সহনের উষ্ণ ছোঁয়া থেকে দূরে ছিল সে। খানিক বাদে ছাদের মাঝখানে এসে দাঁড়াল সহন। বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে দু’জনের গায়ে। তাহমি সহনের মুখশ্রীর দিকে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টির পানি সহনের নাকের ডগা দিয়ে বেয়ে তাহমির ঠোঁট ছুঁইয়ে যাচ্ছে। বাজ পড়লো আশেপাশে কোথাও। সেই সাথে আঁতকে উঠলো তাহমি। খানিকটা ভয় পেয়েছে মেয়েটা। সহন তাহমিকে নামিয়ে দিলো কোল থেকে। তারপর শক্ত করে জড়াল বক্ষে।
” তাহমি এভাবে বাইরে থাকা ঠিক হবে না এখন। দেশের সব জায়গায় কমবেশি কালবৈশাখী হচ্ছে। “
” হ্যাঁ ঠিক বলেছো। চলো বাসায় চলো। পরে একদিন ভিজবো আবার। এখন শুধু বৃষ্টি না বেশ ঝড় হচ্ছে। “
দু’জনের সম্মতিতে ছাদ থেকে নেমে গেলো দু’জন। প্রথমে তাহমি ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল সেড়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগোলো। তারপর সহন গোসল করতে ঢুকলো। তাহমিকে ডাইনিং টেবিলের দিকে আসতে দেখে ফরিদা উদগ্রীব হয়ে বললেন,
” কী রে এতক্ষণ ডাকলাম কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না কেন? “
” ছাদে ছিলাম মামুনি। তুমি এখানও খাওনি?”
তাহমি চেয়ার টেনে বসলো। ফরিদা আগে থেকেই ছেলে ও বউয়ের জন্য প্লেটে ভাত,তরকারি বেড়ে রেখেছেন। সহনের বাবা অফিসে খাবে দুপুরে। কীসের একটা জরুরি মিটিং আছে শুক্রবারেও! বিদেশি কোম্পানির সাথে কোনো একটা চুক্তি হওয়ার কথা।
” তোদের রেখে একা একা খেতে কি ভালো লাগে! “
” আচ্ছা তোমার ছেলেও আসবে এখুনি। ততক্ষণে তুমি শুরু করো বরং। “
তাহমির কথার মধ্যেই সহন এসে পৌঁছল সেখানে।
” এইতো আমিও এসে গেছি। মা খাওয়া শুরু করো এখন। “
ফরিদা খান খেতে শুরু করলেন সাথে তাহমি ও সহনও।
” মি.চৌধুরী আপনার বোনকে বিয়ে দিবেন না?”
আকস্মিক এ ধরনের প্রশ্নে হকচকিয়ে গেল তৃষা। আজকে অনিকের সাথে তার চেম্বারে এসেছে তৃষা। এতদিন বিয়ে হলেও নিজের স্বামী কোথায় কাজ করে সেসব দেখা হয়নি বলেই আজকে অনিক তৃষাকে সাথে করে নিয়ে এসেছিল। হসপিটালের অন্য একজন ডক্টর তৃষাকে দেখেই হুট করে প্রশ্নটি করলো। অনিক মৃদু হেসে বললো,
” এমবিবিএস ভালো ডাক্তার পেলেই বিয়ে দিয়ে দিবো।”
তৃষা চমকাল। অনিকের হাবভাব বুঝতে পারছে না। তবে সামনে থাকা লোকটার মনে যে লাড্ডু ফুটছে সে বিষয় কোনো সন্দেহ নেই তৃষার। লোকটা আগ্রহসহকারে এবার চেয়ার টেনে অনিকের সামনাসামনি বসলো।
” তাই? আজকালকার যুগে এরকম বোরকা পরে পর্দা করা মেয়ে পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। “
” তা ঠিক বলেছেন ডা. সৌরভ। বাই দ্য ওয়ে, আলাপ করিয়ে দেই উনি ডাক্তার সৌরভ হাওলাদার,আমার কলিগ। আর সৌরভ এই মেয়েটি আমার বোন নয়,স্ত্রী। আবারও বিয়ে করেছি,তবে সেটা তেমন একটা জানানো হয়নি কাউকে। “
ডাক্তার সৌরভ হাওলাদার বিষম খেলো। অনিক টেবিলে থাকা পানির বোতল সৌরভের দিকে এগিয়ে দিয়ে ফের বললো,
” আরে নিন নিন খেয়ে নিন মশাই। “
সৌরভ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেছে। কাঁপা কাঁপা হাতে পানির বোতল হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পানি পান করতে লাগলো। তৃষা ঠোঁট টিপে হাসছে। অনিক যে এরকম রসিকতা করতে পারে সেটা তৃষা আজকেই আবিষ্কার করলো প্রথম। কিন্তু কোথাও গিয়ে ভয় লাগছে তৃষার। বাড়ি গিয়ে এটা নিয়ে আবার ঝামেলা করবে না তো? অনিকের ঔষধ চলছে নিয়মিত। তৃষা নিজে উদ্যোগ নিয়ে সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। সৌরভ পানির বোতল টেবিলে রেখে দিয়ে একটু ধাতস্থ হয়ে বললো,
” সরি ড. অনিক। ভাবী কিছু মনে করবেন না। আমি আসলে বুঝতে পারিনি। তো যাইহোক, বিয়ের দাওয়াত পেলাম না একদিন ট্রিট কিন্তু চাই। “
অনিক জোরে হাসলো, তৃষা মুচকি মুচকি হাসছে।
” আরে আমিও মজা করেছি একটু। ইট’স ওকে। নেক্সট শুক্রবার আমাদের বাসায় তোমার ইনভাইট রইলো। রিমি,খায়রুল ও সবুজকেও বলেছি।”
” ঠিক আছে। তাহলে এলাম এখন। দেখা হবে ভাবী আল্লাহ হাফেজ। “
তৃষা জবাবে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। কিন্তু কথা বললো না। অনিক যদি রেগে যায় সেই ভয়ে চুপ করে থাকে। ডাক্তার ছয় মাসের ঔষধ খেতে দিয়েছেন। সেই সাথে এই ক’মাস অনিকের মনমতো সবকিছু করতেও বলেছে। তৃষা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সবকিছু তাই মেনে নিয়েছে। ফোনের রিংটোনের আওয়াজে নড়েচড়ে উঠলো তৃষা। অনিক টেবিলের রাখা ফাইলের দিকে নজর বুলিয়ে দেখছে। আয়ান কল করেছে। দ্রুত কল রিসিভ করলো তৃষা।
” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। কেমন আছো তোমরা?”
বোনের আওয়াজে হৃদয় শীতল হয়ে গেছে আয়ানের। আসবে আসবে করেও এতদিন বিভিন্ন কারণে আসা হচ্ছিল না এদিকে। আজকে না বলেই চলে এসেছে তৃষাদের বাড়ি।
” আলহামদুলিল্লাহ। তোরা কেমন আছিস? আর তোরা কোথায়? আমি তো তোদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। “
তৃষা চমকাল। ভাই এসেছে তার বাড়ি! বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তৃষা। সেটা দেখে অনিকও বুঝল গুরুত্বপূর্ণ কিছু হয়েছে।
” আমি উনার সাথে হসপিটালে এসেছি ভাইয়া। তুমি থাকো, আমি ত্রিশ মিনিটের মধ্যে আসছি।”
” ঠিক আছে। সাবধানে আয়।”
কল কেটে দিতেই তৃষা দেখে অনিক উৎসুকভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
” ভাইয়া এসেছে আমাদের বাসায়। “
” বাহ! চলো তাহলে বাসায় যাই। এমনিতেই রোগী কম আজকে৷ তাছাড়া অন্য ডাক্তাররা আছে। “
” যাবে তুমি? “
হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো অনিক।
” বারোটা চল্লিশ বেজে গেছে। জোহরের আজান দিতে তো বেশি সময় বাকি নেই। তোমাকে গিয়ে রান্না করতে হবে আবার। বাসায় তো শুধু ডাল,মাছ আর ভাত রান্না করে রেখে এসেছো। আয়ানের জন্য মাংস রান্না করবে তো।”
” আগে বাসায় যাই তারপর সেসব দেখা যাবে। ভাইয়া তো চলে যাবে না এখুনি। বিকেলে না হয় মাংস রান্না করবো।”
” ঠিক আছে। চলো। তুমি যা ভালো মনে করো তাই হবে। “
অনিকের পিছনে পিছনে তৃষাও বাড়ির পথে এগোচ্ছে। মানুষটা এখন যেমন আছে সব সময় যদি তেমন থাকতো! দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়িতে উঠে বসলো তৃষা।
Online-Course
Online-Course
ডাইনিং রুম থেকে নিজের রুমে এই নিয়ে তিন বার গেলো এলো সহন। তাহমির খাওয়া শেষ হচ্ছে না কেনো সেই নিয়ে বহুত রাগ হচ্ছে নিজের উপর। অথচ এতে নিজের সাথে রাগ করার কোনো কারণ আছে? রাগ করলে করবে তাহমির সাথে, তা না করে নিজেকে গালিগালাজ করে যাচ্ছে লোকটা। নাহ তিনবার গেলো আর একবার গিয়ে দেখবে। তাহমির কাজ শেষ হলে ভালো নয়তো সোজা ঘরে গিয়ে আজকে নিজেই বিছানা গুছিয়ে মশারী টানানোর কাজও করবে হুহ্। কপাল খারাপ লোকটার। তাহমি খাওয়া শেষ করে শ্বাশুড়ির সাথে গল্প জুড়ে বসেছে। দুপুরের অধরা রোমান্স তো পূর্ণ করতে হবে রাতে! সেসব কি মেয়েটার মাথায় নেই? সহন বিরক্ত হয়ে নিজের ঘরেই চলে গেলো। প্রথমে ভালো করে ঝেড়ে ঝেড়ে বিছানা পরিষ্কার করলো। এতো জোরে ঝাড়ছিল বিছানা মনে হচ্ছিল বিছানায় ময়লার অভাব নেই। তারপর গেলো মশারী টানাতে। মশারী টানিয়ে বালিশে মাথা রেখে সটান হয়ে শুয়ে পড়লো সে। এরমধ্যে দরজা বন্ধ করার আওয়াজ ভেসে এলো কানে। তাহমি ঘরে ঢুকে দরজা আঁটকে দিলো। বিছানার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই হাসলো একটু। এগিয়ে গিয়ে বসলো একপাশে।
” আজকে সব নিজে থেকেই করে ফেললে?”
” কথা কম, কাজ বেশি। “
সহন তাহমিকে মশারীর বাইরে থেকে ভেতরে নিয়ে শুইয়ে দিলো। নিজে তাহমির একহাত সোজা করে তাতে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। তাহমি ঠোঁট টিপে হাসছে।
” কীসের কাজ এখন?”
” কর কর ঢঙ কর। মেয়েদের কাজ তো ঢঙ করাই। তোরা বুঝবি তোদের জামাই জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে তবুও জিজ্ঞেস করবি, কী হয়েছে?
( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
” কীসের কাজ এখন?”
” কর কর ঢঙ কর। মেয়েদের কাজ তো ঢঙ করাই। তোরা বুঝবি তোদের জামাই জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে তবুও জিজ্ঞেস করবি, কী হয়েছে?”
সহনের কথায় খিলখিল করে হেসে উঠলো তাহমি। সহন দিলো মুখ ভেংচি তাতে। এজন্যই বলে কারো পৌষ মাস আর কারো সর্বনাশ। সহনেরও এখন সর্বনাশ হচ্ছে আর তার বউয়ের হাসি দেখে গা-পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে । তাহমি আহ্লাদী হয়ে বললো,
” আহারে বেচারা বর আমার! “
” এই চুপ কর। কথা বলবি না একেবারে। গায়ের উপর উঠে বস তো আগের মতো। তারপর একটা চুমু খা ঠোঁটে।”
” ছি! কী নির্লজ্জতা, কী নির্লজ্জতা! “
” তাহমি! বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু…. “
সহন দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে কথাটি বললো। তাহমি আলতো করে সহনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। সহন এক হাত তাহমির পিঠের নিচে ঢুকিয়ে অন্য হাত উদরে রেখে তাহমিকে নিজের শরীরের উপর তুলে নিলো। দু’জন দু’জনার দিকে তাকিয়ে রইলো খানিকক্ষণ।
” শোন!”
” হ্যাঁ বল। “
” আজকে ঘুমাতে দে?”
তাহমির কথায় কিছু একটা ছিলো। সহন ‘না’ বলতে পারলোনা। না বলা সমস্যা যেনো চোখের ইশারায় বুঝে গেছে সে।
” ঠিক আছে। তবে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবি।”
” অবশ্যই ডিয়ার বর। ”
” ওকে। শুভ রাত্রি। “
” মিষ্টি রাত্রি!”
তাহমি হেসে বুকে মাথা রাখল প্রিয়তম স্বামীর। সহনও তাহমিকে বুকে জড়িয়ে নিশ্চিতে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।
ঘুম ঘুম চোখে বালিশের পাশে হাতড়ে ভাইব্রেট হওয়া ফোনটা হাতে নিলো আয়ান। কার ফোন দেখার মতো হুঁশ না থাকায় এমনি রিসিভ করে কানে লাগাল ফোন। কিন্তু অপরপ্রান্তের থাকা মানুষটির প্রতিক্রিয়া শুনে প্রায় দশ সেকেন্ডের মধ্যে বড়ো বড়ো চোখ করে আশেপাশে তাকিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো আয়ান। বোনের বাড়ি এসেছিল দু’দিন আগে। বোন আর বোনের জামাইয়ের আবদারে থেকে গেছে এই ক’দিন।
” অনিমা কী হয়েছে তোমার? এভাবে হু হু করে কাঁদছ কেন? “
আয়ান ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলো। অনিমা কোনো উত্তর না দিয়ে মরার মতো কাঁদতে ব্যস্ত এখনো। আয়ান খুব কষ্ট করে ধৈর্য ধরে চুপ করে আছে। এই মেয়েকে বারবার জিজ্ঞেস করেও লাভ নেই। নিজে না বললে কান্নার কারণ আয়ানের পক্ষে ধমকে জানা সম্ভব নয়। তাই চুপ করে রইলো মিনিট পাঁচেক। ততক্ষণে অনিমার কান্নার বেগ কিছুটা কমেছে। কাঁদো কাঁদো গলায় বলে অনিমা,
” আজ দুদিন হয়ে গেলো তোমাকে দেখি না,রাতে জড়িয়ে ধরি না। আমার বুকটা খালি খালি লাগে রে এএএ। আমার এখন কী হবে বলো? আমার আর ভালো লাগে না কেনো?”
খুব করে একটা ধমক দিতে ইচ্ছে করলেও সেটা পারছে না আয়ান। ছোটো মেয়ে ধমক দিলে আবার অন্য ঝামেলা। খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে অসুস্থ হয়ে যাবে।
” অনিমা আমি আজকে বিকেলে রওনা হবো। রাতের মধ্যে বাসায় ফিরবো। সেই হিসেবে কালকে আমাদের দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। এবার চোখমুখ ধুয়ে এসো যাও।”
” পরশু! কালকে? না থাক, ঠিক আছে। কিন্তু দেখা হবে? আর কিছু হবে না? আমাকে জড়াবে না বুকে? “
আল্লাহ! এই মেয়ের অদ্ভুত আচরণে অতিষ্ট হওয়ার যোগাড় হয়েছে আয়ানের। এইটুকু মেয়ের মাথায় সব আঠারো প্লাস চিন্তা সারাক্ষণ! মাঝে মধ্যে আয়ানের ইচ্ছে করে এখুনি বিয়ে করে বিয়ের সাধ ঘুচিয়ে দিতে। আয়ান লম্বা করে শ্বাস নিলো। নিজেকে শান্ত করে বললো,
” তোমার যা যা লাগে সব হবে। ওকে? এখন চুপচাপ ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও।”
” ঠিক আছে। লাভ ইউ এন্ড উম্মাহহ।”
” হুম দুই।”
” দুই আবার কী? বলো লাভ ইউ টু। আর একটা পাপ্পি দাও! “
” উম্মাহ এর চৌদ্দ গুষ্টির তুষ্টি! “
আয়ান বিরবির করে বললো কথাটা। অনিমা শুনতে পায়নি ঠিকমতো তাই আবারও জিজ্ঞেস করলো। আয়ান চোখ বন্ধ করে কোনোরকমে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বললো,
” উম্মাহহহ,লাভ ইউ টু, থ্রি, ফোর। টাটা।”
” টাটা। “
অনিমা কল কাটতেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচল আয়ান। দিন যত যাচ্ছে অনিমার পাগলামি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে তো তা-ও টিচার ছিলো একটু-আধটু ভয়ডর পেতো মেয়েটা। কিন্তু এখন তো সে ডোন্ট কেয়ার মুডে থাকে সব সময়। যতসব ন্যাকামি মার্কা কার্যকলাপ আছে সবকিছুই করে সে। এজন্যই দামড়া ছেলেদের নিব্বিদের সাথে প্রেম করতে নেই। মনে মনে এসব বলে নিজেকে গালিগালাজ করলো আয়ান। তারপর ফোনটা রেগেমেগে খাটের নিচে রেখে ফের ঘুমানোর চেষ্টা করলো। সকাল পাঁচটা বেজেছে সবে। এখনো ঘন্টা তিনেক ঘুমানোর প্ল্যান আছে আয়ানের। বিকেলের বাসে উঠে বাড়ির দিকে রওনা দিবে। বোনের সংসার বেশ ভালোই চলছে। সেজন্য মনে মনে ভীষণ প্রশান্তি অনুভব করেছে আয়ান।
স্কুল শেষে আজকে একটু বাবার বাড়ি যাবে বলে ঠিক করেছে তাহমি। শরীরটা কেমন লাগছে ক’দিন ধরে। প্রেশার কমে গেছে খুব। মা’কে দেখতে ইচ্ছে করছে হঠাৎ। আয়ান বাড়িতে নেই, মা একেবারে একা ভেবেই বিকেলে যাওয়ার প্ল্যান করেছে তাহমি। সহন একবার বলেছিল ও নিজেও অফিস শেষ করে শ্বশুর বাড়ি যাবে। কিন্তু তাহমি মানা করে দিয়েছে। সব সময় না বলতেই যেতে হবে কেন? যেকোনো জায়গায় নিজের মূল্য বজায় রেখে চলতে হয়। তাই আজকের রাতের মতো বিচ্ছেদ হয়েছে দু’জনার। আসরের আজানের কিছুক্ষণের মধ্যেই তাহমি তার বাবার বাসায় পৌঁছে গেছে। আয়ানকে কল করেছিল তাহমি। জানিয়েছে সে বাসে আছে। বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত একটা কিংবা দু’টো বাজতে পারে।
” তাহমি সহন এলো না কেনো? কিছু আবার হয়নি তো?”
বসার ঘরে সোফায় বসে আছে মা ও মেয়ে। মায়ের কথায় নড়েচড়ে উঠলো তাহমি। সত্যি বলতে তো কিছু হয়নি। সেসব মাকে বলা স্বত্বেও মা একই প্রশ্ন করে যাচ্ছে।
” কিছু হয়নি তাহলে এলোনা কেন? ঝগড়া করে এসেছিস নাকি?”
” আরে না। এমনি আসতে পারি না বলো?”
” পারবি না কেনো? কিন্তু বিয়ের পর কখনো একা আসতে পারবি না। হয় তুই এখনই বাড়ি চলে যাবি নয়তো সহনকে কল দিয়ে আসতে বলবি। মাগরিবের আজান হয়নি এখনো, আরামসে চলে যেতে পারবি তুই।”
মায়ের কথায় চমকাল, থমকাল তাহমি। উনি আসলেই ওর মা? জামাইকে সাথে আনলো না বলে ফেরত পাঠিয়ে দিতে চাইছেন! তাহমি ক্লান্ত ভঙ্গিতে বললো,
” আসতে বললাম মেসেজ করে সহনকে। এবার ঘরে যাই আমার? “
” যা গিয়ে বিশ্রাম কর। সহন এলে আমি ডেকে দিবো।”
” দিও।”
তাহমি নিজের ঘরের দিকে এগোলো। বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আজ। তৃষার বিয়ের পর আজকেই প্রথম এ বাড়িতে এলো তাহমি। ছোটো বোনটার অনুপস্থিতি খুব পোড়াচ্ছে তাহমিকে। যদি আসার আগে কল দিয়ে কথা বলেছে তৃষার সাথে। তবুও চোখে দেখা আর ফোনে কথা বলার মধ্যে অনেক পার্থক্য!
” ভাই আজ জলদি যাচ্ছেন যে? “
সহনকে অফিস থেকে বের হতে দেখে দারোয়ান সালমান জিজ্ঞেস করলো হেসে। সহন দাঁড়িয়ে গেলো একটু। সহাস্যমুখে বললো,
” শ্বশুর বাড়ি যাবো সালমান ভাই। তুমিও বিয়েটা করে নাও। “
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মলিন হাসলো সালমান।
” সাবধানে যেও তবে। “
” আচ্ছা সালমান ভাই এলাম।”
সহন বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে। সালমান চোখ বন্ধ করে হারানো প্রেয়সীর মুখশ্রী দেখে নিলো একবার। এই পৃথিবীতে সব পুরুষ প্রেয়সীকে হারিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে পারে না। পারে না প্রেয়সীকে ছাড়া নিজের অস্তিত্ব ভাবতে। সালমানও ঠিক সেই ধরনের পুরুষ।
চলবে,

 বন্য প্রণয়

carnation e book

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *