( কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
“এসব পরে ভাববে নীলা। আপাতত আমাকে ছেড়ো না। ওই পাগল ডাকাতের সাথে থাকতে পারবো না আমি। “
নীলা মুচকি হাসে। নিজের দর বাড়াতেই অহেতুক ভয় দেখাল সহনকে। আসলে বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলেকে হাতছাড়া করার কোনো ইচ্ছে তার নেই।
” ঠিক আছে। তুমি রোজা ছিলে না?”
” হুম ছিলাম। তোমার সাথে কফি খেতে গিয়ে ভঙ্গ হলো। এতো এতো চিন্তা হচ্ছিল যে ভুলে গেছিলাম তা-ও নয় কিন্তু… “
নীলার নিজেকে নিয়ে ভীষণ গর্ব হল এই মুহুর্তে। ছেলেটা তার কতটা হাতের মুঠোয় তা আর বুঝতে বাকি নেই। সৃষ্টিকর্তার চেয়ে যদি কোনো মানুষের প্রতি বান্দার মনে বেশি টান সৃষ্টি হয় তখন সেই মানুষের সাথে সম্পর্কে নষ্ট হয়। কারণ সৃষ্টিকর্তার চেয়ে কাউকে বেশি ভালোবাসতে নেই। সহন এর সত্যতা এখন না বুঝলেও পরে হাড়েহাড়ে টের পাবে,পাবেই!
” ইট’স ওকে। “
নীলাকে সামলে নিতে পেরে সহন বেশ মানসিক শান্তি লাভ করেছে। দুজনে আরো বেশ কিছুক্ষণ সময় একসাথে সময় কাটিয়ে অফিসে ফেরত চলে যায় সহন।
দ্বিতীয় পিরিয়ডের ঘন্টা দিয়েছে। লাইব্রেরিতে এতক্ষণ ক্লাস না থাকায় বসে ছিলো তাহমি। চতুর্থ শ্রেনীতে বিজ্ঞান পিরিয়ড এখন। তাহমি সেখানেই গেলো ক্লাস করাতে। রোজার দিনে রোজা না রাখার এক সমস্যা হলো কোথাও দাঁড়িয়ে পানি খেতে গেলে অস্বস্তি লাগে। তাহমি তাই বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত একটুও পানি পান করেনি। বিকেলের দিকে বাসায় ফেরে সে। ফ্রেশ হয়েও আর কিছু খায় না তাহমি। ভালো লাগছে না শরীরটা। কোমরে আর পেটে ভীষণ ব্যথা করছে। এই সময়টাতে যে কতটা অসহ্য লাগে সেটা শুধু মেয়েরাই জানে।
পুরো একটা দিন কেটে গেছে, তৃষা গতকালের ঘটনার রেশ কাটাতে পারেনি। জানালার পাশে আনমনে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। গতকাল যখন তৃষা ফের ওহির ঘরে ফিরছিলো তখুনি পেছন থেকে ডাক দিয়েছিল অনিক।
“আপনি আমাকে পছন্দ করেন? “
এই প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেছিল তৃষা। হুট করে গোমড়ামুখো ডাক্তারের কাছে এমন কিছু আশা করেনি তৃষা। মানুষ যা কল্পনাও করে না হরহামেশা সেসব ঘটে। তৃষা যথাসম্ভব নিজেকে সামলে বলে,
” এটা কী ধরনের প্রশ্ন? আমি কি আপনাকে তেমন কিছু বলেছি কখনো? “
তৃষার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করায় অপ্রস্তুত হয়ে গেছে অনিক।
” না। তবে আমাকে পছন্দ করে থাকলে ভুলে যাবেন। আমরা একজন অপরের জন্য অনুপযোগী। আসুন এবার।”
অনিক নিজের রুমে ঢুকে গেলো। তৃষা কিছুক্ষণ চুপচাপ সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো। সারারাত মেয়েটা শুধু ভেবেছে,লোকটা কেনো এমন কথা বললেন? সে কি নিজেকে তৃষার অযোগ্য ভাবলো নাকি নিজেকে তৃষার অযোগ্য? নাহ,কোনো উত্তর তৃষার কাছে নেই। প্রিয় মানুষটা এভাবে সরাসরি ‘না’ বলার ফলে মনটাই খারাপ লাগছে ভীষণ।
” রোজা ভাঙলি কেন সহন? “
ঘরে ঢুকে হাতঘড়ি, ওয়ালেট রেখে তোয়ালে নিয়ে বাথরুমের দিকে এগোচ্ছিল সহন। তখুনি তাহমির প্রশ্নের সম্মুখীন হয় সে। এই মেয়ে কীভাবে জানলো সে রোজা ভেঙে ছিল?
” আজাইরা কথা বলবি না। তোর কাজ তুই কর।”
তাহমির বুঝতে বাকি নেই সহন নিশ্চিত নীলার কাছেই গিয়েছিল। কারণ রুমে ঢোকা মাত্রই লেডিস পারফিউমের স্মেইল পেয়েছে তাহমি। শার্টে হালকা কফি পড়ার দাগও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু রোজা ঠিক কী কারণে ভাঙলো সেটা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। কফি খেতে গিয়ে নাকি নীলার সাথে সহনের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে? নাহ! নিজের মনকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো তাহমি। ততক্ষণে সহন বাথরুমে চলে গেছে। এরমধ্যেই তাহমির যা ভাবার ভেবে ফেলেছে সে।
রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই যে যার ঘরে গিয়ে শুয়েছে। তাহমি ঘুমিয়ে গেছে এরমধ্যেই। শরীর খারাপ থাকায় না খেয়েই শুয়ে ছিল। সহন সোফায় শুয়ে যথারীতি ফোনে নীলার সাথে টেক্সট করছে। বজ্জাত মেয়েটা আজ কিছু না বলেই ঘুমিয়ে গেছে সেসব ভেবে সহনের মন বেশ ফুরফুরে লাগছে।
নিশুতি রাত! চারদিকে নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে দূর থেকে ভেসে আসছে নেড়রি কুকুরের ডাক। হুট করে সহনের ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুমের মধ্যেই কেমন নিজেকে বন্দী লাগছিল। মনে হচ্ছিল কিছু একটা তাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরে আছে। চোখ মেলে তাকিয়ে নিজের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই আঁতকে উঠলো সহন। ঘরে বাতি জ্বেলে সামনেই বসে আছে তাহমি। যেনো তার ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় ছিলো মেয়েটা।
” তাহমি! কী করেছিস্ এসব! আমার হাত-পা বেঁধে রেখেছিস কেন?”
বেশ নড়াচড়া করেও হাত পায়ের বাঁধন খুলতেই পারছে না সহন। তাহমি আগের মতো চুপচাপ বসে আছে। সহনের অবস্থা দেখে শুধু ঠোঁট টিপে হাসছে।
” তোকে সাবধান করেছিলাম না? বলেছিলাম নীলাকে তুই স্পর্শ করবি না?”
সহন ভয়ে চুপসে গেলো। সত্যি সত্যি কি তাহমি এবার তার ঠোঁট কেটে দিবে? সহন আমতা আমতা করে বললো,
” কখন স্পর্শ করলাম? “
” মিথ্যা কথা বলিস না আর। তুই কি ওর সাথে ফিজিক্যাল হয়েছিলিস? রোজা ভঙ্গ করার হেতু কী?”
সর্বনাশা কথায় সহনের চিত্ত কেঁপে উঠল। মেয়েটার কি মানসিক সমস্যা আছে? কই! অনেক বছর তো একসাথেই পড়ালেখা করলো তখন তো এরকম কোনো সমস্যা দেখেনি সহন। তবে তাহমি বরাবরই এমন ডাকাত টাইপের।
” তাহমি! ভাই তুই কি পাগল হলি? আমাকে তোর এমন মনে হয়? শুধু হাত ধরেছিলাম আরকিছুই না।”
কথাটা বলে জিহ্বা কামড়ে ধরে তাহমির মুখশ্রী পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত হয়ে উঠলো সহন। ভয়ে সত্যিটা বলেই ফেললো। তাহমি আস্তে আস্তে এগিয়ে এলো সহনের দিকে। দু’হাতের উপর কতগুলো তেলাপোকা ছেড়ে দিলো। সহন তেলাপোকা ভয় পায় ভীষণ। কলেজ লাইফে এই নিয়ে সবাই বেশ ক্ষ্যাপাতে চাইতো সহনকে। সহন চিৎকার করতেও পারছে না৷ এতো রাতে বাবা-মা তার চিৎকার শুনলে নিশ্চিত এ ঘরে চলে আসবে। এসে যদি শোনে নীলার সাথে দেখা করার অপরাধের শাস্তি এসব তাহলে তার বাবা হয়তো তাকে বাড়িছাড়া করবে।
” তাহলে তোর হাতে এবার ওরা সুড়সুড়ি দিক। দেখ পরনারী স্পর্শ করার শাস্তি কেমন। আমি পাশে বসলেও তোর কলিজায় ঠাডা পড়ে। আর নীলা না ফিলার সাথে শখ করে হাত রাখিস!”
” আর কখনো করবো না। প্লিজ এগুলো সরা।”
” ইশ কেউ যদি তোর এই হাল দেখতো কেমন হতো? আজীবন সবাই জেনে এসেছে মেয়েরা ভীতু,তেলাপোকা দেখলে ভয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ায়। কিন্তু সহন খানও যে এতে কাবু হয় সেটা কেউ জানে না।”
সহন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাহমির দিকে। একবার ছাড়া পেলে এই তাহমিকে যে কী করবে সেটা আছে সহনের মনে।
” আমি আর নীলাকে কখনো স্পর্শ করবো না। তবুও ছাড় প্লিজ।”
তাহমি এবার সহনের ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট এগিয়ে ফিসফিস করে বলে,
” ঘরে সুন্দরী বউ থাকতে যে পুরুষ বাইরে ছুঁকছুঁক করে তার কথার কোনো দাম নেই। আজকে ছাড়বো কিন্তু যদি আর কোনো দিন আমি টের পেয়ে যাই,তুই ওই মেয়ের সাথে দেখা করেছিস খবর আছে। আমি সিরিয়ালের ন্যাকা নায়িকা না যে স্বামীর প্রাক্তনকে আপু বলে ঘরে ডাকবো।”
” তুই তো সিরিয়ালের মাফিয়া কুইন।”
সহন খুব আস্তে করে বললো কথাটা। তাহমি শুনলো না। সহনের হাতপায়ের বাঁধন আলগা করে দিলো। নিজেকে মুক্ত পেয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল সে। তাহমি কিছু বোঝার আগেই সহন তাকে বিছানার সাথে চেপে ধরলো। তাহমির দুই হাত এখন সহনের দুই হাতের কব্জায়।
” এখন? এখন কোথায় যাবি?”
ঠোঁটের কোণে কুটিল হাসি ফুটিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসের সহিত কথাটা বললো সহন। তাহমি হাসলো একবার। তারপর চকিতে সহনের ঠোঁট নিজের ঠোঁটের দখলে নিলো মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য। সহন চমকাল,থমকাল। বিষয়টা বুঝতে পারা মাত্রই ঝড়ের বেগে তাহমিকে ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে পাশের চেয়ারে বসলো। তাহমি শুয়ে শুয়েই মিটমিট করে হাসছে।
” কী ভেবেছিলি? লজ্জায় মরে যাবো? তুই আমার স্বামী। তোর কাছে আবার লজ্জা কীসের? “
” থাম ভাই। তুই মেয়েই না! কিঞ্চিৎ লজ্জা নেই? ভাবলাম তুই ভয় পাবি কিন্তু…..”
” মেয়ে কি-না প্রমাণ দিবো?”
তাহমি বিছানা থেকে নেমে একপা একপা করে সহনের দিকে এগোতে লাগলো। সহন ততক্ষণ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে।
” অসভ্য একটা। সরর এখান থেকে। তোকে ছোঁয়ার কোনো ইচ্ছে নেই আমার। “
” তা থাকবে কেন? ছোঁয়াছুঁয়ি তো সব নীলার সাথে। “
চলবে,
(প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
তাহমি বিছানা থেকে নেমে একপা একপা করে সহনের দিকে এগোতে লাগলো। সহন ততক্ষণ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। সমস্ত বিস্ময় এখন বিরক্তিতে পরিণত হয়েছে। এটা কে রে ভাই? কোথা থেকে জুটেছে! পারলে মনে হয় ধর্ষ*ণ করে ছেড়ে দিতো। সহনের চিন্তাভাবনার মধ্যেই তাহমি এসে চুল ধরে টান দিলো। নড়েচড়ে উঠলো সহন। চোখমুখ কুঁচকে ফেললো বিরক্তিতে। পারলে কয়েক ঘাঁ দিয়ে দিতো এই মেয়েকে।
” অসভ্য একটা। সরর এখান থেকে। তোকে ছোঁয়ার কোনো ইচ্ছে নেই আমার। তুই আমাকে জোরাজোরি করবি না। “
” তা থাকবে কেন? ছোঁয়াছুঁয়ি তো সব নীলার সাথে। ঘরের মধু হলো রেডিমেড, তেঁতো লাগে? আর বাইরের মধু হলো প্রাকৃতিক একেবারে, মিঠা-ই মিঠা-ই?”
কীভাবে যে তাহমিকে চুপ করাবে বুঝতে পারছে না সহন। মাঝরাতে ঘুম রেখে এসব কোন বরের শুনতে ইচ্ছে করে?
” ভাই তুই থামতে কত টাকা নিবি? না না বউ! বউ তুই স্বেচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায়, বউ হোস আমার। আমি অসহায় বর। তুই আমাকে আজকের মতো ছাড়। তোর সাথে ঝামেলায় আমি পারছি না।”
সহন ফ্লোরে বসে রাগে,দুঃখে নিজের চুল টানাটানি করছে। তাহমির ভীষণ মজা লাগছে। আরো যাবি নীলার কাছে? তাহমিও আস্তে করে সহনের পাশে বসলো। গাল টেনে দিলো আস্তে। সহন কিচ্ছু বললো না। বললে যে তাহমি আরো ক্ষেপে যাবে সেটা এতক্ষণে সহন বুঝতে পেরে গেছে।
” সবকিছুই বুঝলাম কিন্তু তুই রোজা কেন ভাঙলি?”
” কাল থেকে একটা রোজাও মিস যাবে না। এখন আমি সোফায় গিয়ে শুই? চারটার দিকে উঠবো সেহেরি খেতে। “
সহন এ কথা বলেই হুড়মুড়িয়ে বসা থেকে উঠে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। তাহমিও যেনো নাছোড়বান্দা! কোনো কিছুতেই ক্লান্ত হয় না সে। সহনের পায়ের উপরেই গিয়ে বসলো। সহনের একটু ব্যথা লাগছে বটে কিন্তু সেসবে পাত্তা না দিয়ে তাহমির দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
” আমার ভয়ে সব রোজা রাখবি বললি,অথচ যে আল্লাহ সৃষ্টি করলেন তাকে ভয় পাস না? আমি তোকে জোর করে রোজা রাখাতে পারলেও তোর অন্তরে আল্লাহর প্রতি প্রেম সৃষ্টি করতে পারবো না। সময় থাকতে ধর্মের দিকে মন দে। হারাম জিনিস ত্যাগ কর। শুভ রাত্রি। “
তাহমি বিছানার দিকে এগোলো। সহন কিছু বললো না। কোথাও গিয়ে নিজের ভেতর কথাগুলো বাড়ি খাচ্ছে। আসলেই ইবাদত করতে হবে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য পাওয়ার আশায়,মানুষকে ভয় পেয়ে কিংবা দেখনদারি করার জন্য নয়।
” আয়ান তৃষা ইদানীং কেমন জানি চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে। “
ছুটির দিন আজ,শুক্রবার। বাসায় সবাই আছেন। তৃষার বাবাও ফিরেছেন বাসায়। তবে গতকাল জার্নি করে ছিলো বলে ফজরের নামাজের পরে ঘুমিয়ে গেছেন। বেলা এগারোটা বাজলো তবুও এখনো জাগেননি। কথা হচ্ছে মা – ছেলের সঙ্গে। আয়ানের ঘরের বারান্দায় বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ আছে। গোলাপ,অর্কিড, টিউলিপ, ডালিয়াসহ আরও নাম না জানা ফুল ফোটে সেখানে। গাছগুলোর দিকে মনোযোগ ছিলো আয়ানের। হঠাৎ বোনের বিষয় এমন কথা শুনে মায়ের দিকে দৃষ্টিপাত করলো সে। আমেনা ইসলাম দরজায় দাঁড়িয়ে কথাটা বললেন।
” হু আমিও খেয়াল করেছি। বাসা থেকেও বের হয়নি দু’দিন। প্রাইভেট কি পড়াচ্ছে না?”
মায়ের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে রইলো আয়ান। মা আমেনা ইসলাম চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে বলেন,
” এমনিতে পড়াচ্ছে কিন্তু দু’দিন ধরে নিজেই যাচ্ছে না। সেখানে আবার কোনো ঝামেলা হয়েছিল নাকি?”
” আমি যতদূর জানি তৃষা যেখানে পড়ায় সেই দুই বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ থাকে না। চাকরির জন্য দূরে থাকেন দু’জনেই। “
মায়ের মন স্বাভাবিক হতে পারছে না। মায়ের চিন্তাযুক্ত চেহারা দেখে আয়ান ফের বলে,
” তুমি চিন্তা কইরো না। আমি কথা বলবো বিকেলে। “
” ঠিক আছে। যা বাজারে গিয়ে ভালোমন্দ কিছু কিনে নিয়ে আয়। কতদিন পরে তোদের বাবা ফিরলো! ইফতারির জন্য যা যা লাগবে লিস্ট করে দিয়েছি। “
” আচ্ছা ঠিক আছে মা।”
আয়ানের দিকে ছোটো একটা চিরকুট এগিয়ে দিলেন আমেনা ইসলাম। আয়ান সেটা নিয়ে প্যান্টের পকেটে রেখে দিলো। ইফতারের পরে বোনের সাথে কথা বলবে বলে মনস্থির করলো আয়ান। সারাদিন হৈহৈ করতে থাকা মেয়েটাকে নীরবতা মোটেই মানায় না। তৃষা বেশি তাহমির থেকে শান্ত তবে মোটেও শান্ত স্বভাবের নয়। সে তুলনায় আয়ান শান্ত প্রকৃত বটে।
দু’দিন হলো চঞ্চল মেয়েটাকে এ বাড়িতে আসতে দেখছে না ডাক্তার অনিক চৌধুরী। বোনের কাছে সে নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করাও সমীচীন মনে হচ্ছে না তার। ওহি কি কোনো কারণে ছুটি চেয়েছে কয়েকদিন? নাকি সেদিন ওরকম কথা বলার জন্যই মেয়েটা আসা বন্ধ করে দিলো? আনমনে বারান্দায় হাঁটছে আর এসব ভেবে যাচ্ছে অনিক। চিত্ত তার তৃষার জন্য আকুল হয়ে আছে। অথচ নিজেকে তৃষার কাছাকাছিও নিতে পারছে না। কী এক অদ্ভুত যাতনায় ভুগছে ডাক্তার সাহেব সে কাউকে বুঝাতে পারবেন না।
” ভাইয়া! কিছু হয়েছে? “
বোনের কথায় সংবিৎ ফিরে পেলো অনিক। ল্যাপটপের দিকে দৃষ্টিপাত করেই আনমনা হয়ে ছিল এতক্ষণ।
” কিছু হয়নি দিনা। ওহি কই? বাড়িটা নিশ্চুপ লাগছে! “
ওহির মা দিনা ভাইয়ের পাশে বসলো। বাবা-মা মারা গেছেন সেই কবে। আপন বলতে পৃথিবীতে শুধু দুই ভাইবোন।
” ওহি একটু পাশের বাসায় গেছে খেলতে। একটু পর ফিরবে। দু’দিন হলো প্রাইভেট নেই তো এজন্য লেখাপড়ার দিকে অমনোযোগী হয়ে গেছে। “
অনিক আগ্রহী হয়ে সোজা হয়ে বসে।
” প্রাইভেট নেই কেনো?”
” কল দিলাম আজকে তৃষাকে,ওর না-কি একটু অসুবিধা আছে। পরশু থেকে আসবে।”
মনটা খারাপ হয়ে গেলো অনিকের। কারণ আগামীকাল সকালেই অনিক তার বাসায় ফিরবে। ওহিদের বাড়ি আসে সপ্তাহে দুই কিংবা তিন দিনের জন্য। এখানকার হসপিটালেও চেম্বার আছে তার। কিন্তু এ সপ্তাহে আর তৃষার সাথে দেখা হবে না ভাবতেই মনটা কেমন করছে। আগে তো এমন হয়নি! মেয়েটাকে আঘাত দিয়ে কথা বলার জন্যই হয়তো এরকম অপরাধী লাগছে নিজেকে।
” দিনা একটা কথা বলবো।”
হঠাৎ ভাইয়ের ভরাট গলায় কথা বলায় দিনা নড়েচড়ে বসে। স্থিরভাবে বসে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
” বলো ভাইয়া। এনি থিং সিরিয়াস? “
” ইয়েস। আমার পর্যবেক্ষণ ভুল না হলে তৃষা আমাকে পছন্দ করেন।”
” কী!”
চমকাল দিনা। অনিক মাথা নেড়ে “হু ” বলে। মিনিট পাঁচেক দু’জনেই চুপ করে থাকে। ফের মুখ খোলে দিনা।
” সেটা বুঝেই কি তুমি তৃষাকে কিছু বলেছো? সেজন্য মেয়েটা আসেনি দু’দিন। “
” হুম।”
” কেনো করো এমন? প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই একটা অতীত থাকে। কারো অতীত ঝলমলে সুন্দর আর কারো অতীত নিকষকালো অন্ধকার। তবে অতীত তো অতীতই হয়! সেটাকো বর্তমানে টেনে এনে কেনো ভবিষ্যতকে বরবাদ করতে চাচ্ছ?”
” দিনা শান্ত হ। তৃষার বয়স কম। আমার সাথে যায় না। তাছাড়া সবকিছু শুনলে ও নিজেই আমাকে ভুলে যাবে। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম এমনি বললেই হয়তো…. “
” হয়তো স্বাভাবিকভাবে নিবে তাই তো?”
” হু।”
” কিন্তু স্বাভাবিক নিলে তো আসতো বাসায়। নিশ্চয়ই তৃষা কষ্ট পেয়েছে ভীষণ। “
” কী করবো তাহলে? “
” নিজেই ভাবো। জীবনটা তোমার। তোমার জীবনের সিন্ধান্ত তোমাকেই নিতে হবে। “
অনিক চুপ করে থাকে। কী বলবে বুঝতে পারছে না। মনে মনে এ সপ্তাহে ওহিদের বাসায় থেকে যাওয়ার প্ল্যান করে। তৃষাকে সবকিছু খুলে বলবে সে। তারপর তৃষা তাকে এমনিতেই ভুলে যাবে। ফলে অনিকের অপরাধবোধ কিছুটা কমবে।
বিকেল চারটা। প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কেনাকাটা করতে সহনকে নিয়ে মার্কেটে এসেছে তাহমি। অবশ্য সহন যে নিজের মর্জিতে আসেনি সেটা আমরা সবাই জানি। আসার আগেই বেঁধেছিল ছোটখাটো তুলকালাম।
একটু আগের ঘটনা –
” সহন বিছানায় আর গড়াগড়ি না খেয়ে উঠে রেডি হ।”
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়ে খোপা করতে করতে বললো তাহমি। সহন বিছানায় শুয়ে ফোন টিপছিল। তাহমির কথায় টনক নড়ল।
” কেন? কই যাবো? তুই যা জাহান্নামে। তোর সাথে কোথাও যাচ্ছি না।”
” ভালো কথায় আজকাল কাজ হয় না। সেটা তোর সাথে কথা বললেই বোঝা যায়। “
” হুঁশ! “
” বদ লোক একটা তুই। হুঁশ কী? এ্যাঁ হুঁশ কী? আমি কি গরুছাগল! “
” তুই একটা আস্ত পিশাচিনী।”
” হ্যাঁ যা বলিস তাই। ইফতারের আগে বাসায় ফিরতে হবে। অফিস থেকে তো তাড়াতাড়ি ফিরলি এখন বউয়ের সাথে চললল।”
তাহমি সহনকে চুল ধরে টেনে বসালো। ফলে সহনও রেগে তাহমির গালে মাঝারি সাইজের একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। তাহমিও কম যায় না। হুট করে মাথা থেকে ছোটো একটা ব্যান্ড খুলে সহনের নাকের ডগায় আঁটকে দিলো। মুহুর্তেই ব্যথায় “আহহ” করে শব্দ করে উঠে ছেলেটা। নিজেই খুলে ফেলে তারপর।
” তোর সাথে যা যেতাম এখন তা-ও যাবো না। “
” তুই যাবি নাকি মামনিকে বলবো নীলার কথা? “
” ব্লাকমেইল করছিস?”
বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সহন। তাহমি নাকের ডগায় হুট করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলে,
” বেসিক্যালি তুই একটা ব্লাক মেইল-ই। “
” আমি কালো? এটাকে শ্যামলা বলে কালো না। শ্যামলাকে শ্যামলা বলতে শেখ।”
” শ্যামবর্ণ পুরুষ তুই কি যাবি না?”
তাহমির দাঁত খিঁচিয়ে কথা বলায় সহন মিইয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে,” রেডি হয়ে আসছি।”
এখন-
” তোর আর কিছু কেনার বাকি আছে? “
পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে শুধালো সহন। তাহমি আশপাশে তাকিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে গেলো। নিজের হাতের ব্যাগ দু’টোও সহনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
” তোর হাঁটতে সমস্যা হলে এখানে বস। আমি গিয়ে বাকি জিনিসগুলো কিনে নিয়ে আসছি।”
” আমি কি তোর চাকর? তোর ব্যাগ নিয়ে এখানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবো!”
চলবে,
(প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
তাহমি আশপাশে তাকিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে গেলো। নিজের হাতের ব্যাগ দু’টোও সহনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
” তোর হাঁটতে সমস্যা হলে এখানে বস। আমি গিয়ে বাকি জিনিসগুলো কিনে নিয়ে আসছি।”
” আমি কি তোর চাকর? তোর ব্যাগ নিয়ে এখানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবো!”
” চাকর হলে কি এভাবে আদর করে সাথে নিয়ে হাঁটতাম তোকে? “
সহন মুখ ভেংচি কেটে অন্য দিকে ফিরে নাক সিটকে বললো,
” তোর আদর তোর কাছেই রাখ। চল কোন দিক যাবি। কথায় কথা বাড়বে।”
ইফতারের বেশি সময় বাকি নেই বলে তাহমিও আর কথা বাড়ালো না।
ভোরের আলো উঁকি দিচ্ছে জানালার ফাঁক দিয়ে। রোদের আবছা আলোয় চোখ মেলে তাকালো তৃষা। গতকাল ইফতারের পরে আয়ান এসেছিল তৃষার ঘরে। তখন তৃষা নামাজ পড়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়েছিল কেবল। ভাইকে দেখেই উঠে বসে তৃষা।
” বসতে হবে না। শুয়ে থাক।”
ভাইয়ের কথায় সত্যি শুয়ে পড়লো তৃষা। মৃদুস্বরে শুধালো,
” কিছু হয়েছে ভাইয়া? এই সময় তো কখনো ঘরে আসো না তুমি! “
” আমার হয়েছে? হয়েছে তো তোর। এখন কী হয়েছে সেটা খুলে বল। দু’দিন হলো একেবারে চুপচাপ হয়ে গেছিস। “
তৃষার বুকটা কেমন হুহু করে উঠলো। ভাইটা কত্ত ভালোবাসে! কতটা খেয়াল রাখে ভাবতেই মনে আনন্দের দোলা লেগে যাচ্ছে।
” কী হলো বল! হ্যাঁ রে যেখানে টিউশনি পড়াতে যাস সেখানের কেউ কিচ্ছু বলেনি তো?”
বোনের নীরবতা দেখে ফের শুধালো আয়ান। তৃষা উঠে বসলো। ম্লান হেসে বললো,
” এতো চিন্তা কেনো করো ভাইয়া? আমার কিছু হয়নি। একটু মন খারাপ ছিলো ঠিক কিন্তু এখন ঠিক আছে। একটা বিষয় নিয়ে খুব আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু হুট করে জানলাম সেটা কখনো আমার পাওয়া হবে না। “
আয়ান বোনের চোখে স্পষ্ট হারানোর শোক দেখতে পাচ্ছে। তৃষার একটা হাত নিজের হাতের মধ্যে রেখে আয়ান আস্তে ধীরে বলতে লাগলো,
” যখন আমরা কোনো কিছু নিয়ে খুব প্রত্যাশা করি এবং সেটা পাই না আমাদের ভীষণ মন খারাপ লাগে। কষ্ট হয়,রাগ হয়। কিন্তু এই কষ্টের কারণ কিন্তু আমরা নিজেই। বুঝলি না?”
তৃষা মাথা নেড়ে “না” বোধক উত্তর দিলো। আয়ান মুচকি হাসলো।
” মনে কর একটা নতুন বই এসেছে বাজারে। তুই তো উপন্যাস পড়তে ভালোবাসিস তাই এই উদাহরণ দিচ্ছি। এখন তুই মনে মনে নিরানব্বই ভাগ আশা করে বসে আছিস বইটা তুই কিনবি। তোর কাছে টাকাও আছে। কিন্তু দোকানে গিয়ে দেখলি কোনো কারণে বইটা আসেনি কিংবা স্টক আউট হয়ে গেছে। অর্থাৎ তুই বইটা পেলি না। টাকা থাকা সত্বেও বই কিনতে পারিসনি বলে তোর ভীষণ খারাপ লাগলো। এখন বই তো শেষ হয়ে যেতেই পারে কিংবা সমস্যার কারণে মার্কেটে না-ও আসতে পারে। তুই যদি প্রত্যাশার পরিমাণ ফিফটি ফিফটি রাখতি তাহলে কিন্তু এতটা কষ্ট পেতিস না। আর যদি বইটা কোনভাবে তুই পেয়ে যেতিস তাহলে তো কথাই নেই। “
তৃষা ভাইয়ের কথার অর্থ বুঝতে পেরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
” সুতরাং প্রত্যাশা যত কম করবো জীবন ততই সুন্দর। কোনো কিছুর জন্য অতিরিক্ত আশা করা যাবে না। যা আমার তা এমনি পাবো কিন্তু যা আমার নয় তা হাতের নাগালে থাকলেও পাবো না। যেমন টাকা থাকতে বই পেলাম না! আমাদের ধর্মানুসারে তকদীর বলে এটাকে। তকদীরে বিশ্বাস করা ঈমানের অংশ। ঠিক আছে এবার? “
” হ্যাঁ। আমার লক্ষ্মী বোন। আর মন খারাপ লাগবে? “
তৃষার হাত ছেড়ে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আয়ান। তৃষা সহাস্যমুখ করে বললো,
” না ভাইয়া। তুমি আমার সেরা ভাইয়া।”
খুশিতে গদগদ হয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে তৃষা। আয়ান মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় খানিকক্ষণ।
” হয়েছে। এবার বিশ্রাম নে, ভালো লাগবে। “
” হুহ্, পড়াতে বসবো। আর কাল থেকে পড়াতে যাবো। ওদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। আমি গেলাম ফ্রেশ হতে। হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বসলে ভালো লাগে। “
তৃষা আবারও চঞ্চল হয়ে উঠলো। আয়ান চলে গিয়েছিল নিজের ঘরে। তৃষা নিজের মনকে বোঝালো, ডাক্তার সাহেব তার জন্য নয়। হলে এমনিতেই পাবে কিংবা পেতো।
রাতের কথা ভাবতে ভাবতে বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হতে লাগলো তৃষা। আজকে পড়াতে যাবে ওহিকে। এমনিতেই অনিক চৌধুরীর তো দেখা পাবে না আজ! সে তো গতকালই চলে আসে।
” ও আল্লাহ গো! ছাঁদ ফুটো হয়ে গেছে মা! ও মা! ছাঁদ ফুটো হয়ে পানি পড়লো….”
ঘুমন্ত অবস্থায় হঠাৎ চোখেমুখে পানির ফোয়ারা বয়ে গেলো সহনের। ঘুম ভেঙে আঁতকে উঠে তাই আউলানো কথাবার্তা বলতে শুরু করেছে। সহনের অবস্থা দেখে সামনে দাঁড়িয়ে তাহমি ঠোঁট টিপে হাসছে। মিনিট দুয়েক লাগলো সহনের নিজেকে স্বাভাবিক করে সবকিছু বোঝার জন্য। তার পরেই লাগবে গৃহ যুদ্ধ! হাত দিয়ে দু-চোখ ঢলতে ঢলতে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সহন। একটা লাল রঙের মগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে তাহমি। পরনে কালো রঙের শাড়ি। চোখে কালো কাজল,ঠোঁটে কোনো লিপস্টিক নেই। তবে এমনি হালকা গোলাপি সেই ঠোঁট! একমুহূর্তের জন্য সহন তাহমিকে দেখে পানির কথা ভুলে গেলো। কিন্তু পরক্ষনেই তাহমি চোখ টিপ্পনী দিতেই সবকিছু মনে পড়ে গেলো লোকটার। এই মেয়ের দিকে মোহিত হয়ে তাকিয়েছিল সে? ভাবতেই নিজের রুচির কী হাল সেই নিয়ে নিজেকেই গালাগালি করল মনে মনে।
” এটা কী হলো শাঁকচুন্নি? তুই সকাল সকাল আমার মাথায় পানি কেনো ঢাললি?”
সোফা থেকে নেমে তাহমির সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত খিঁচিয়ে কথাটি বললো সহন। তাহমির হাসির মাত্রা দ্বিগুণ গতিতে বাড়লো দেখে সহন কিছুটা ভড়কে গেলো। নিশ্চিত এই মেয়ে অন্য কিছু ঘটাবে। ঘটলো তাই! মগের অবশিষ্ট পানিটুকু তাহমি সহনের চোখেমুখে ছুড়ে মারলো। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সহন। কীসের জন্য এই অত্যাচার কিচ্ছু বুঝে আসছে না তার।
” ফজরে নামাজ না পড়ে ফোনে কথা বলতে ছাদে গেছিলি কেন? কল দিয়ে কি জিজ্ঞেস করছিলি,‘ বাবু সেহরি খাইছো? ঠিকমতো খাইছ ত?’ এসব বলছিলি?”
নীলার সাথে কথা বলতে গতরাতে যে সহন ছাঁদে গিয়েছিল সেটাও তাহমি জানে, শুনতেই চুপসে গেলো সহন। কী এক ঝামেলা! নীলার সাথে কথা না বললে থাকা যায়? আর নীলার সাথে কথা বলেছে শুনলে ঘরে থাকা দ্বায়।
” আরে তুই এতো বেশি বুঝিস কেন? কথা বললাম এক বান্ধবীর সাথে। “
” আমি কি বলছি ওটা তোর বন্ধু? “
সহন বুঝতে পারছে তাহমির সামনে ভেজা বিড়াল হলে চলবে না। তাহলে আরো পেয়ে বসবে। ওদিকে নীলার কিছু টাকা লাগবে বলেছে। সেগুলো হাতে দিয়ে আসবে আর একসাথে একটু সময় কাটাবে বলে ভেবে রেখেছে সহন। কিন্তু সেসব যদি তাহমি টের পেয়ে যায়, তাহলে নিশ্চিত ঘরে বেঁধে তেলাপোকা ছেড়ে দিবে। এমনিতে তো সহনের সাথে শক্তিতে পারবে না তাহমি। কিন্তু কতক্ষণ না ঘুমিয়ে থাকবে? ঘুমোলে – ই তো তাহমি বাঁধবে! না,না এসব হতে দেওয়া যায় না। সহন উল্টো রাগ দেখিয়ে তাহমির হাত থেকে মগ কেড়ে নিয়ে বললো,
” ফাইজলামি কম করবি তাহমি। তোর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। দেখ তোকে আজ কী করি!”
তাহমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সহন তাকে পাঁজা কোলা করে ওয়াশরুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। তাহমি সহনের বুকে এরমধ্যেই কয়েকটা কিল-ঘুষি মেরে দিয়েছে।
” ছাড় বেয়াদ্দপ। কী করবি? ওয়াশরুমে কেন যাচ্ছিস সহনননন……”
সহন থামলো না। সোজা ওয়াশরুমের ভেতর গিয়ে দরজা আঁটকে দিলো। তারপর ঝরনা ছেড়ে তাহমিকে জোর করে ধরে রাখলো। যাতে ঝরনার নিচ থেকে সরে যেতে না পারে তাহমি। এরমধ্যে পানিতে ভিজতে শুরু করেছে তাহমি। সহনের শরীরের কিছু অংশ আগেই তাহমির দেওয়া পানিতে ভেজানো ছিল বলে সে নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই তার।
” আরো ভেজাবি? এখন ভেজা কাকে বলে দেখ তুই। “
” সহন ছাড় বললাম। ভালো হবে না কিন্তু। “
তাহমি সহনের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য জোড়ে সরে নড়াচড়া করছে ঠিক। কিন্তু ছাড়া পাচ্ছে না। পুরুষ মানুষ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে নিজেকে মুক্ত করা যে কতটা কঠিন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে তাহমি।
” কী খারাপ হবে শুনি? ছাড়বো না আমি। পারলে তুই যা। আজকে শিক্ষা দিয়ে দিবো।”
সহনের দুই হাত তাহমির পিঠে,কখনোসখনো আবার কোমরে। মোটকথা কিছুতেই আজ তাহমিকে ছাড়বে না সহন।
চলবে,