( প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত।)
” তৃষা! এই তৃষা! আর কতক্ষণ লাগবে তোমার? “
” পাঁচ মিনিট! হয়ে গেছে তো।”
অনিক বসার ঘরে কখন থেকে পায়চারি করে যাচ্ছে! স্কাই ব্লু কালারের শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পরে দারুণ লাগছে লোকটাকে। শপিং করতে বেরোবে দু’জন। তৃষার রেডি হতে হতে প্রায় আধঘন্টা পেরিয়ে গেলো। তবুও রেডি হওয়া হলোনা এখনো তার। ছুটির দিন বলেই আজকে অনিকের সাথে বাইরে যাবে বলে ঠিক করেছে তৃষা। ঔষধ নিয়মিত চলছে অনিকের। আগের থেকে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিও হয়েছে বটে। যতটুকু সমস্যা আছে ততটা তৃষা মানিয়ে নিয়েছে। চাইলে সহজেই সমস্যার অযুহাত দিয়ে তৃষা অনিককে ছেড়ে দিতে পারে কিন্তু ভালোবাসার মানুষকে এতো সহজে কীভাবে ছাড়বে সে? আর যাইহোক, মানুষটা তো ভালোবাসার অভাবেই আজ এরকম হয়েছে। ভালোবাসার কাঙালের মতো বড়ো কাঙাল কি পৃথিবীতে আছে?
” তৃষা! তোমার পাঁচ মিনিট আর শেষ হচ্ছে না আধঘন্টা থেকে। “
তৃষা হন্তদন্ত হয়ে বেডরুম থেকে বেরিয়ে এলো। হোয়াইট এন্ড বেবি পিংক কালারের কম্বিনেশনের থ্রি-পিস পরেছে তৃষা। সাথে ম্যাচিং করে বেবি পিংক কালারের হিজাবও পরেছে। বেচারি এখনো ওড়না নিয়ে টানাটানি করছে ঠিক করার জন্য। সেটা দেখে অনিক ফিক করে হেসে দিলো। তৃষা মুখ বেঁকিয়ে বললো,
” ওমন করে হাসার কী হলো শুনি? “
” হাসবো না বলছো? “
” হ্যাঁ একদম হাসবেন না আমার ওড়না ঠিক করা দেখে। দুষ্ট লোক একটা। “
অনিক তৃষার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওড়নায় হিজাব পিন মেরে দিলো।
” হ্যাঁ বউয়ের কাছে পৃথিবীর সব পুরুষই একটু-আধটু দুষ্ট তো বটেই। তা হলো মহারাণীর? হলে চলুন এগোতে হবে। “
অনিক হাত সামনে বাড়িয়ে দরজার দিকে ইশারা করে বললো। তৃষা মাথা নেড়ে, “হু।” বলে এগোলো সেদিকে।
এমনিতে শুক্রবারে সব জায়গায় একটু বেশি ভীড় থাকে। ছুটির দিনে সবাই আসে কেনাকাটা করতে, ঘুরতে। তৃষা অনিকের সাথে কথা বলে ঠিক করেছে সামনের সপ্তাহে বাবার বাড়ি যাবে তৃষা। অনিকও যাবে সাথে। সেই জন্য বাবার বাড়ির সবার জন্য ও দিনাদের জন্যই শপিং করতে আসা আজকে। শপিংমলে ঢুকেই প্রথমে শাড়ি কিনতে দাঁড়াল তৃষা। রোগা-সোগা একজন লোক দাঁড়িয়ে, উনি দোকানী।
” মামা ইন্ডিয়ান তন্দুজ জামদানী দেখান তো।”
” ঠিক আছে। “
দোকানী একের পর এক শাড়ি বের করলো। দেখেশুনে দু’টো শাড়ি পছন্দ করলো তৃষা। একটা নিজের জন্য আরেকটা তাহমির জন্য।
” ঠিক আছে। মামা প্রিন্ট কাঞ্চিভারাম কাতান শাড়ি দেখান কয়েকটা। মায়ের জন্য নিবো তো সুন্দর দেখে দিবেন।”
” আচ্ছা। “
দোকানী আবারও প্রফেশনাল ভাবে কয়েকটি শাড়ি বের করলেন। যথারীতি পছন্দ করলো তৃষা। কিন্তু বিপত্তি বাঁধল দামের বেলায়। দোকানদার বললো প্রিন্ট কাঞ্চিভারাম কাতান শাড়ির দাম আড়াই হাজার । তৃষা বলছে দুই হাজার! এরকম কিছুক্ষণ দামাদামি করে নিজের মনমতো দামেই শাড়িগুলো কিনে দোকান থেকে বেরিয়ে এলো তৃষা ও অনিক। গোটা সময় দোকানে দাঁড়িয়ে অনিক একটা কথাও না বলে বউয়ের দামাদামির ট্যালেন্ট দেখছিল। বাইরে আসতেই মুখ খুললো সে।
” তোমাকে শপিং করতে নিয়ে না আসলে তো জানতে পারতাম না হাজার টাকার জিনিস পাঁচশ টাকায় পাওয়া যায়! “
তৃষা বিজয়ীর হাসি হেসে বললো, ” তাহলে এরপর থেকে সব সময় আমাকে নিয়ে শপিং করতে বের হবেন। “
” ঠিক আছে। চলুন মহারাণী, অন্য দোকানে যাই।”
বাকি কেনাকাটা সারতে অন্য জায়গায় যাচ্ছে দু’জন।
আসবে বলার পরেও কেটে গেছে একদিন। আয়ান আসেনি গতকাল রাতে! সেই নিয়ে অনিমার মন খারাপ হয়ে গেছে খুব। রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে মন খারাপ করে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে মেয়েটা। সামনেই রেজাল্ট দিবে এসএসসি পরীক্ষার। সেই নিয়েও একটু-আধটু চিন্তা হচ্ছে তার। তবে বড়ো টেনশনের নাম হলো আয়ান স্যার! হঠাৎ বাড়ির সামনের রাস্তায় নজর পড়লো অনিমার। সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়ান। হাতে সাদা কাগজে কালো কালি দিয়ে লেখা, ❝ আসবো? ❞
অনিমা ভেংচি কেটে ঘরে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখল আয়ান এরমধ্যে কয়েকবার কল করেছিল। অনিমা ফোন হাতে নিয়ে আবারও বেলকনিতে এসে দাঁড়াল। কিন্তু সামনে তাকিয়ে আর আয়ানকে দেখতে পেলো না।
” অনিমা!”
হঠাৎ আয়ানকে দেখে চমকে উঠল অনিমা। আয়ান বেলকনির বামপাশে দাঁড়িয়ে আছে হাসি হাসি মুখে। এতো জলদি দেয়াল টপকে পাইপ বেয়ে কীভাবে উঠলো লোকটা?
” তুমি এতো জলদি কীভাবে এলে?”
” যেভাবে তুমি আমার মনে প্রবেশ করেছিলে ঠিক সেভাবে। “
আয়ান এগিয়ে এসে সামনে দাঁড়াল অনিমার। অনিমা মুচকি হেসে সময় নিলো না আয়ানের কোলে উঠতে। বাচ্চাদের মতো দু’পাশে পা দিয়ে জড়িয়ে, হাত দিয়ে গলা আঁকড়ে ধরে ঝুলে আছে অনিমা। আয়ান রাগ করলো না। ওভাবেই হেঁটে গিয়ে বিছানায় বসলো। অভ্যস্ত হয়ে গেছে অনিমার এই অদ্ভুত কাজকর্মে। তবুও মাঝে মধ্যে বিরক্ত লাগে কিন্তু আবার না এসেও পারে না। প্রেমের জ্বালা কী সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে আয়ান। অনিমা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে। আয়ানও চুপ করে আছে ও কী করে সেটা দেখতে।
” তোমার কি আমাকে কিস করতে ভাল্লাগে না? “
অনিমা ঠোঁট উল্টে বললো কথাটা। চেহারার অভিব্যক্তি দেখে না হেসে পারলোনা আয়ান। হাসলো মৃদু। ললাটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো অনিমার। অনিমা তাতে টিউব লাইটের মতো জ্বলে উঠলো!
” এই তো করলাম কিস। তুমি আমার আস্ত এক ভালোলাগার রেশ। তোমার সবকিছুই ভালো লাগে। তবে মাঝে মধ্যে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। “
” মেজাজ কেনো খারাপ হবে ভালোলাগা থাকলে?”
” তা-ও ঠিক! “
আয়ান ভাবনায় ডুবছে এমন মনে হলো অনিমার। ধপাস করে শুইয়ে দিলো আয়ানকে। বুকে নাক ডুবিয়ে ঘষতে শুরু করলো মেয়েটা। আয়ানের সমস্ত শরীরে অজানা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। আলতো করে কোমর চেপে ধরলো আয়ান। অনিমা তার নাকের গতি বাড়িয়ে দিলো। সাথে হাত দিয়ে আয়ানের চুলগুলো দলাইমলাই করতে লাগলো। কেমন একটা ঘোরের মতো লাগছে আয়ানের। অনিমার খোলা চুলের শ্যাম্পুর ঘ্রাণে অন্য রকম কিছু ফিল হচ্ছে আজ। কিন্তু আয়ান নিজেকে সামলে নিলো। আলগা করে দিল কোমরের চাপ। অনিমা মাথা উঁচিয়ে তাকাল আয়ানের দিকে।
” কী হলো? ছাড়লে কেনো?”
” ধরাধরি ভাল্লাগে খালি? ঠিকঠাক মতো ধরলে সহ্য করতে পারবে?”
” সরো তুমি। ভাল্লাগে না বাল। সব সময় এমন করো বাল। ধুর বাল!”
অনিমার হতাশা দেখে আয়ান ঠোঁট কামড়ে হাসলো একটু। আর তাতেই অনিমা গেলো আরো ক্ষেপে। হঠাৎ করে এগিয়ে এসে ঠোঁটে আলতো করে কামড়ে দিলো মেয়েটা। আয়ান বরফের মতো জমে গেছে যেনো। পুরুষ মানুষ! মেয়ে হয়ে এতো আশকারা দিলে সামলানোর ক্ষমতা থাকে কতক্ষণ?
” অনিমা কাছে আসলেই এসব না করে সুন্দর করে কথা বলতে পারো না? মাঝে মধ্যে তো গানও শোনাতে পারো?”
অনিমা উঠে বসেছে। আয়ান শুয়ে আছে। কী মনে হলো মেয়ের,হঠাৎ করে হাসতে লাগলো। আয়ান গেলো ঘাবড়ে! কে জানে এই পাগলি কীসের জন্য হাসছে।
” গান শুনবে?”
আগ্রহসহকারে জিজ্ঞেস করলো অনিমা। আয়ান শান্তভাবে বলে,
” হ্যাঁ। তবে আস্তে আস্তে। তোমার বাবা যাতে না শোনে। আমাদের এভাবে সময় কাটানো মোটেও ভালো নয়।”
অনিমা আয়ানের শেষের কথাগুলো জাস্ট পাত্তা না দিয়ে গান গাইতে শুরু করলো।
এক দিন একলে দ্য হাম-তুম
তুম মুজামেন মেন তুম্মে গাম
এক দিন আকেলে দ্য হাম-তুম
তুম মুঝামেন মেন তুম্মে গাম
মেরে কানন মে আহিস্তা সে
আস রোজ কাহা থা জো তুমনে
কিসি অর সে না ভো কেহনা
তুম মেরে হো মেরে রাহানা
তুম মেরে হো মেরে রাহানা
তুম সাথ মেরা হারদম দেনা
তুম মেরে হো মেরে রাহানা……
( প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত।)
বসন্ত যাই যাই করছে। গ্রীষ্মকাল সামনে। রোদের তেজ বেড়েছে আজকাল। আবার মাঝে মাঝেই হঠাৎ করে আকাশে ঘনকাল মেঘের আনাগোনা দেখা যায়। সময়টা কালবৈশাখীর। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এরমধ্যে সিলেট শহরে প্রচুর শিলাবৃষ্টি হয়েছিল। তার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক মানুষজন। ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে গাছপালা, পশুপাখি,মানুষ ও যানবাহনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেই ঝড়ের শিলাবৃষ্টিতে।
তৃষার বাবার শরীরটা খারাপ যাচ্ছে আজকাল। ছেলেমেয়েদের জন্য চিন্তা বেড়েছে। সবকিছু নিয়ে তৃষার মায়ের মন মেজাজ খারাপ থাকে। আয়ানের মাস্টার্স কমপ্লিট হলো দেখতে দেখতে। তৃষারও গ্রাজুয়েশন শেষ। আয়ান চেষ্টা করছে একটা মোটামুটি ভালো চাকরি পাওয়ার। কিন্তু এ শহরে চাকরি যে সোনার হরিণ! পেতে কপাল লাগে তারচে বেশি যেটা হলো সেটা হচ্ছে মামার জোর অর্থাৎ টাকা। অনিমাকে নিজের করে পেতে হলে নিজেকে ভালো একটা পজিশনে নিতে হবে। সেই সাথে পরিবারের দায়িত্বও নিতে হবে আয়ানকে। তাহমি আর সহনের সম্পর্ক চলছে সমান্তরালভাবে। কিন্তু তৃষা ভালো নেই! ঔষধ পত্র খেয়েদেয়ে সুস্থ হলেও মাঝে মধ্যে অদ্ভুত আচরণ করে অনিক। এই যেমন বাসায় মেহমান এলে সাবধানে চলাফেরা করতে বলে অথবা বাইরে গেলে ভয় পায় যদি কেউ তৃষাকে পছন্দ করে ফেলে। সত্যি বলতে সেগুলো হয়তো তেমন কিছু না কিন্তু তৃষার ধৈর্য শক্তি ফুরিয়ে গেছে। এই টক্সিক রিলেশনশিপ আর ভালো লাগছে না তার। নিজেকে জেলখানার কয়েদি মনে হয়। সেইবার বাবার বাড়ি গিয়েছিল অনিককে নিয়ে। মোটামুটি দু’দিন ঠিকঠাক ছিলো সব কিন্তু তৃতীয় দিন ঝামেলা হলো সহনের এক বন্ধুকে নিয়ে। বেচারা শাকিল এসেছিল বন্ধুর সাথে তার শ্বশুর বাড়ি। কিন্তু অনিক তার সাথে খারাপ আচরণ করে। ফলশ্রুতিতে তৃষার নাক কাটা গিয়েছিল বাবার বাড়ির লোকজনের সামনে। এই অশান্তি নিয়ে দিন অতিবাহিত হচ্ছে মেয়েটার। অনিক রাত হলে শিশুদের মতো কাঁদে মাঝে মধ্যে। কিন্তু তৃষার সেসবেও অসহ্য লাগে । অন্য ঘরে গিয়ে ঘুমায় সে। অনিক একা ঘরে চিৎকার করে আবার মাঝে মধ্যে চুপচাপ সারারাত বসে থাকে। তবে তৃষা তার বাবার বাড়িতে এখনও জানায়নি এসব অনিকের মেন্টাল ডিসঅর্ডার। উনারা ভেবেছিলেন তৃষাকে নিয়ে ওভার পজেসিভ বলেই শাকিলের সাথে ওরকম আচরণ করেছিল অনিক।
গোধূলির আলোয় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে তাহমি। আজকের আকাশটা যেনো অন্য রকম সুন্দর লাগছে। লাল আভায় ছেয়ে গেছে আকাশ। মৃদুমন্দ বাতাস এসে ছুঁইয়ে যাচ্ছে শরীর। সহনকে ভীষণ মিস করছে। দুদিন হলো শহরের বাইরে গেছে মানুষটা। যদিও অফিসের কাজের জন্য গেছে তবুও মনটা অস্থির লাগছে তাহমির। ইশ দু’দিন ধরে মানুষটার সাথে ঝগড়া, খুনসুটি কিছু করা হয়নি! আনমনে এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ঘাড়ে কারো উষ্ণ নিঃশ্বাসে চমকে উঠলো তাহমি। তড়িৎ গতিতে পেছনে তাকিয়ে দেখলো সহন দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটের কোণে তার দুষ্ট হাসি। তাহমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচল যেনো। বাড়িতে তো সহন ছাড়া অন্য কেউ আসার কথাই নয় তবুও ঘাবড়ে গিয়েছিল সে।
” কেমন দিলাম বল তো?”
” ছাই দিয়েছিস,কচু দিয়েছিস! ভয় পেয়ে গেছিলাম। “
তাহমি ভেংচি কেটে বললো। সহন ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে জড়িয়ে ধরল তাহমিকে। তাহমি মুখ গুঁজে দিলো তার বুকে। যেন শান্তির নীড় খুঁজে পেলো বহুদিন পরে।
” ইশ! আমার রণচণ্ডী বউটা এতটুকুতে ভয় পেয়ে গেলো কীভাবে? “
তাহমি আস্তে কয়েকটা ঘুষি মারল সহনের বুকে। সহন খিলখিল করে হাসছে। কতটা জার্নি করে এসেও কোনো ক্লান্তি নেই তার। তাহমিকে কাছে পেয়ে তার সমস্ত বিষাদ মুছে গেছে।
” শয়তান লোক একটা। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি গিয়ে খাবার দিচ্ছি। “
” ঠিক আছে। “
তাহমিকে নিজেকে সহনের থেকে সরিয়ে তোয়ালে আর লুঙ্গি বের করলো তাহমি। সহন সেগুলো নিয়ে এগোল ওয়াশরুমের দিকে।
রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে বিছানায় শুয়ে ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে ব্যস্ত আয়ান। হঠাৎ অনিমার বাবার নম্বর থেকে কল আসায় শোয়া থেকে উঠে বসলো ছেলেটা৷ রীতিমতো ভড়কে গেছে সে। অনিমার সাথে তার সম্পর্কের বিষয় কিছু জেনে গেলোনা তো? কীভাবে জানলো? গত ছয় মাস ধরে রাতে অনিমার কাছে যায় না আয়ান। একদিকে ধরা পরার ভয় অন্য দিকে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশংকায় অনিমার কাছে যাওয়া বন্ধ করেছিল আয়ান। তবে দিনে প্রায় ঘুরাঘুরি করে। রাস্তায় বসে তো আর অনিমা ওরকম পাগলামি করতে পারে না আর। একটু-আধটু অভিমান করে তবে সেটা মানিয়ে নিয়েছে আয়ান। কল বেজে যাচ্ছে। এখুনি রিসিভ না করলে কল কেটে যাবে! তড়িঘড়ি করে কল রিসিভ করে ফোন কানে ধরলো আয়ান।
” আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। কেমন আছেন? “
” ওয়া আলাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি,তুমি কেমন আছো? “
আয়ান দম নিলো একটু। ভদ্রলোকের গলা শুনে ভয়ের কিছু মনে হচ্ছে না।
” আলহামদুলিল্লাহ। তবে বাবার শরীরটা মাঝে মধ্যে খারাপ হচ্ছে ইদানীং। “
” ডাক্তার দেখিয়েছো?”
” জি।”
” বেশ তাহলে ঠিকমতো খেয়াল রেখো উনার। আচ্ছা শোনো তোমাকে যে কারণে কল দিলাম!”
” জি বলুন আঙ্কেল। “
” তুমি অনিমাকে পড়িয়েছিলে বলেই মেয়েটা এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছিল। তাই তোমার যদি সমস্যা না হয় এখনও যদি পড়াতে ভালো হতো। মা মরা মেয়েটা লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হোক এটাই চাওয়া বাবা।”
অনিমার বাবাকে সব সময় ভালো লাগে আয়ানের। ভদ্রলোকের টাকাপয়সা থাকলেও কোনো অহংকার নেই। মোটেও সিনেমার নায়িকাদের বাবাদের মতো হম্বিতম্বি করেন না। কিন্তু সমস্যা তো অন্য জায়গায়! অনিমাকে পড়াতে গেলেই তো জ্বালিয়ে মারবে আবার। মেয়েটা বড্ড জ্বালাতন করে। বিয়ের পর যে কীভাবে সামলাবে সেই নিয়ে মাঝে মধ্যে চিন্তায় পড়ে যায় আয়ান। আয়ানের নীরবতায় অনিমার বাবা ফের বললেন,
” কিছু বলছো না যে বাবা?”
” জি আঙ্কেল সমস্যা নেই আমার। “
” যাক আলহামদুলিল্লাহ। তবে কাল থেকে পড়াতে এসো। বিকেলের দিকেই। আমি তো তখন বাসায় থাকবো না। তাই দেখা হবে না কাল।”
” ঠিক আছে সমস্যা নেই। “
” বেশ। তাহলে রাখছি আমি। “
” আল্লাহ হাফেজ। “
অপরপ্রান্ত থেকে কল কেটে দিলেন ভদ্রলোক। মধুর জ্বালায় পড়েছে আয়ান। তবে এবার অনিমা বেশি পাগলামি করলে একেবারে আদরের সাধ ঘুচিয়ে দিবে আয়ান। একদিন আদর করলে বুঝবে মজা! এই ভেবে আনমনে হাসলো আয়ান।
” এই সহন শোন।”
” হ্যাঁ বল।”
” বলছিলাম যে আমাদের একটা বেবি হলে কেমন হতো?”
সহন ফোনের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাহমির দিকে দৃষ্টিপাত করলো। তাহমি উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সহন সময় নিলো একটু। তারপর তাহমির মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
” তুই নিজে আগে বড়ো হ তারপর বেবির কথা বলিস।”
তাহমিও তো চুপ থাকার মেয়ে না। যে হাত দিয়ে গাট্টা মেরেছিল সহন,সেই হাত উঁচিয়ে ধরে দিলো এক কামড় বসিয়ে। সহন উঁহু করে উঠলো। হাত ধরে সরিয়ে নিয়ে বললো,
” দেখ তোর অবস্থা! এজন্যই তো বললাম তুই নিজে আগে বড়ো হ। নিজেই তো দাঁত ওঠা বাচ্চাদের মতো কামড়ে দিস।”
” ভালো হচ্ছে না কিন্তু সহন।”
সহন তাহমির নাকে নাক ঘষে দিলো। পুলকিত চিত্তে শুধালো, ” খারাপের কী হচ্ছে? “
” এখন হবে! “
” কী হবে? “
” তোর বাচ্চা হবে। “
সহন জোরে হেসে উঠলো। তাহমি এক ধাক্কায় সোজা করে শুইয়ে দিলো সহনকে। তারপর গায়ের উপর চড়ে বসলো। সহনের মন তো উড়ুউড়ু করছে এখন। মেয়েটা ক্ষেপে গেলেই এমন দুষ্ট মিষ্টি আদর পাওয়া যায়।
” সিজার করবি? এজন্য পেটের উপর বসলি?”
” অন্য কিছু করবো।”
শুকনো ঠোঁট জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নিলো তাহমি। সহন থমকে গেলো সেটা দেখে। হৃদয়ে আনচান করতে লাগলো। কীসের একটা তাড়া অনুভব করলো সমস্ত শরীরে। তাহমি ঝুঁকে ললাটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো সহনের। সহন সময় নিলো না। নিজে থেকেই ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো তাহমির ঠোঁটে। আবেশিত হয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো অনেকক্ষণ।
( কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
সন্ধ্যা নেমেছে। পাখিরা নিজ নিজ গন্তব্যে উড়ে যাচ্ছে। শহরের যন্ত্র মানবেরা কর্মক্ষেত্র থেকে বেরিয়ে যার যার বাসার দিকে এগোচ্ছে। সারাদিন কাজ করে এই সময়টাতে সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যস্ত হয়ে উঠে। আতাউল খানও তার ব্যতিক্রম নন। অফিস থেকে বেরিয়ে নিজের প্রাইভেট কারে চেপে বসেছেন ভদ্রলোক। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে সাবধানে। অফিসে আজ একটা বড়ো ডিল হয়েছে। সেজন্য ভদ্রলোকের মনটা বড্ড চনমনে আজ। সবার জন্য আইসক্রিম আর ফুচকা কিনে নিয়েছেন অফিস থেকে বেরিয়েই। পাঁচ মিনিট বাদেই বাড়ির সামনে পৌঁছাবেন।
বসার ঘরে বসে লুডু খেলছে ছেলের বউ ও শাশুড়ী। সহন অবশ্য পাশে বসলেও তার মনোযোগ টিভিতে খেলার সংবাদের দিকে।
” মামুনি হবে না,হবে না, হবেই না বললাম! “
তাহমি উত্তেজিত হয়ে গেছে। খেলায় টানটান উত্তেজনা এখন। শেষ একটা গুটি আছে দু’জনেরই! ফরিদা খানের ঘনঘন ছয় পরছে বলে তাহমির সন্দেহজনক আপত্তি। ফরিদা হাসলেন তাহমির কথায়। আবারও ছয় মারলেন তিনি। পরপর দুই ছক্কা দুই!
” কেনো হবে না? আমি তো ইচ্ছে করে ছক্কা মারি না। এমনি পড়লে কি আমার দোষ? “
” উফ! মা তোমরা একটু আস্তে কথা বলবে? একটু মন দিয়ে খবরও শুনতে পারছি না। “
সহন ওদের উচ্চস্বরে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো। তাহমি উঠে গিয়ে টিভির প্লাগ উঠিয়ে ফেলে ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
” এখন ঘরে গিয়ে ফোনে যতো ইচ্ছে খবর শোন যা। উনার জন্য আমরা মুখে কুলুপ এঁটে থাকবো মনে করছে হুহ্। “
” তাহমি টিভি অন কর বললাম। নইলে কিন্তু তোর খবর আছে। “
” তুই যা নয়তো তোর খবর আছে। “
” তুই টিভি অন কর বলছি! এখুনি করবি,এক সেকেন্ডও সময় দিবো না।”
সহন ঠোঁট টিপে হেসে বললো।
” তোর সময় আমার লাগবেও না। এই বসলাম আবারও খেলতে। পারলি টিভি অন করিস,বুঝিয়ে দিবো মজা। “
এদের ঝগড়া দেখে ফরিদা নিঃশব্দে হেসে যাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে তাহমিকে বলবে তার একটা নাতীনাতকুর লাগবে। কিন্তু এই মেয়ে তো নিজেই এখনও বাচ্চাদের মতো করে! সে আবার কীভাবে একটা বাচ্চা ক্যারি করবে? অবশ্য বয়স অনুসারে বেবি নেওয়ার মতো আর লালন পালন করার মতো ক্ষমতা আছে তাহমি। ফরিদার ভাবনার আর তাহমি ও সহনের ঝগড়ার ব্যাঘাত ঘটল কলিং বেলের আওয়াজে। নড়েচড়ে উঠলো দু’জন। ফরিদা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। বাবাকে ঢুকতে দেখে তাহমি ও সহন দু’জনই ভদ্র হয়ে বসে আছে। দেখে কেউ বলতে পারবে না এঁরা দু’জন একটু আগে ঝামেলা করছিল।
” ফরিদা এই আইসক্রিমগুলো তোমরা আগে খেয়ে নাও। তারপর ফুচকা খেও। ওদের দাও তুমিও খাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
আতাউল ফরিদার হাতে খাবারগুলো দিয়ে বললেন।
” হ্যাঁ যাও তাহলে।”
ফরিদা হাতে হাতেই আইসক্রিম দিলো তাহমি ও সহনকে। আইসক্রিম আর ফুচকা সবারই ভীষণ প্রিয়। তাহমির হঠাৎ করে তৃষার কথা মনে পড়লো। মেয়েটা ভীষণ আইসক্রিম পাগল।
অনিমাকে পড়াচ্ছে প্রায় সপ্তাহখানেক হয়ে গেছে। এরমধ্যে আয়ানকে অনেকভাবে জ্বালিয়ে মেরেছে অনিমা। কখনো টেবিলের নিচ থেকে পা দিয়ে পা ঘষে আবার কখনো হুটহাট জড়িয়ে ধরে কিস করে। লেখাপড়ার থেকে তার আয়ানের দিকে মনোযোগ প্রবল। নেহাৎ অনিমার বাবা ভালো এবং ব্যস্ত মানুষ বলেই সবকিছু টের পাননি এখনো। কিন্তু টের পেতে কতক্ষণ? একজন বেকার ছেলের সাথে কোনো পরিবার তাদের মেয়েকে বিয়ে দিতে চায় না, চাইবে না। এটাই সমাজের স্বাভাবিকতা। রাতের নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছে শহরকে। আয়ান আজ নিজে থেকেই রাতে আসবে বলেছিল অনিমাকে। সেজন্য তো অনিমা মহাখুশি। কখন থেকে সেজেগুজে বসে আছে আয়ানের জন্য। বললো পাঁচ মিনিটে আসছে, ছয় মিনিট হলো তবুও আসার নাম নেই! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হিসেব কষছে সে। হঠাৎ বেলকনিতে কিছু একটা পড়ার শব্দে নড়ে উঠলো অনিমা। কিন্তু পরক্ষণেই বুঝলো নিশ্চিত আয়ান এসেছে। হ্যাঁ আয়ান এলো ঘরে।
” বাহ আজকে এতো সাজগোজ?”
আয়ান অনিমার পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো। অনিমা সময় নিলো না উত্তর দিতে। আয়ানের কোলে উঠে বসে বললো, ” তুমি নিজে থেকে দেখতে এলে তাই। “
” আমি তো আজকে শুধু দেখতে আসিনি।”
আয়ান অনিমার কোমরে বাম হাত রেখে বললো। ডান হাত অনিমার ঘাড়ে আলতো করে ছুঁতে ব্যস্ত।
” কী করতে এলে তাহলে?”
” তোমাকে আদর করবো। এতটা কাছাকাছি যাবো যতটা গেলে তুমি তৃপ্তি পাবে।”
আয়ান হেসে বললো। অনিমা ঘাবড়ে গেলো কিছুটা। আয়ানের স্পর্শ কেমন লাগছে হুট করে। অনিমা উঠতে চাইল কোল থেকে কিন্তু আয়ান ছাড়ল না।
” আদর করো ঠিক আছে কিন্তু…. “
” কীসের কিন্তু? শুধু কিস করলে আর জড়িয়ে ধরলে হবে? আজ তোমাকে অন্য কিছু দিবো।”
” ছাড়ো আমি উঠবো আয়ান।”
” কেনো? এইভাবে আদর করলেও তো চমৎকার হবে ! এভাবেই শুরু করি চলো।”
অনিমা লজ্জায় নুইয়ে গেলো। চোখ তুলে তাকাতে পারছে না আয়ানের দিকে। চেনা আয়ানকে বড্ড অচেনা লাগছে আজ। ভয় লাগছে মেয়েটার। হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেলো বান্ধবীর কথা। ক’দিন আগেই বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড জোর করে ধর্ষণ করেছিল বান্ধবীকে। অনিমা খুব ছটফট করতে শুরু করেছে এখন। চেহারায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।
” আয়ান এসব কিছু করবো না। প্লিজ ছাড়ো!”
” উঁহু! তুমিই তো বলো তোমাকে আদর করি না? সারাক্ষণ পাগল হয়ে থাকো। আসো সব কষ্ট ভুলিয়ে দিচ্ছি। “
আয়ান কোমর থেকে উদরে, উদর থেকে ধীরে ধীরে বক্ষ বিভাজনে এসে থামাল তার হাত। অনিমা করুন চোখে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে। আয়ান বুঝেও বুঝল না কিছু। পেছন থেকে কামিজের চেইন খুলে ফেললো এক টানে। অনিমার দু-চোখ ছলছল করছে। আয়ানের দৃষ্টি এড়ায়নি সেটা।
” আমি এসব করতে চাই না। প্লিজ জোর করো না। আমার ভীষণ খারাপ লাগছে তোমার স্পর্শ। “
” ভয় লাগছে? “
অনিমা চুপ করে রইলো আয়ানের প্রশ্নে। ততক্ষণে চোখ গড়িয়ে জল আয়ানের হাতে পরেছে। বিষয়টা আর এগোলো না আয়ান। কামিজের চেইন আঁটকে কোল থেকে পাশে নামিয়ে বসালো অনিমাকে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে অনিমা। আয়ান হাসছে ওর অবস্থা দেখে। বাচ্চা মেয়ে এমনিতে উতলা হয়ে থাকে। অথচ জানেই না এতো উতলা হলে কী করতে হয়। এটাও জানে না পুরুষ মানুষকে এতটা পোড়াতে নেই। পোড়াতে গেলে যে নিজেকেও পুড়তে হবে সেসব বোঝার ক্ষমতা অনিমার নেই। আয়ান বিছানা থেকে উঠে টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি এনে দিলো অনিমাকে। অনিমা সময় নিলো না পানি পান করতে। ঢকঢক করে সবটুকু পানি নিঃশেষ করে ফেললো। আয়ান একটু দূরে বসেছে। সময় দিলো কিছুটা অনিমাকে,যাতে স্বাভাবিক হতে পারে। মিনিট পাঁচেক পরে অনিমাকে টেনে আবারও নিজের কোলে বসালো। অনিমা চুপ করে আছে। চোখে চোখ রাখছে না।
” খুব বেশি খারাপ লেগেছে? সরি অনিমা। আমি আসলে ইচ্ছে করে এমন করেছি। “
অনিমা চোখ তুলে তাকাল আয়ানের দিকে। কিছুটা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। আয়ান বুকে জড়িয়ে নিলো। মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ফের বললো,
” লক্ষ্মীটি কেঁদো না। আমি তোমাকে বোঝাতে চেয়েছিলাম সব সময় আমার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কতটা কষ্টকর হয়। তুমি বোঝো না,সব সময় ওরকম পাগলামি করলে আমি লাগামছাড়া হয়ে যাই? পুরুষ মানুষ আমি! নিজের প্রেমিকার এতো কাছাকাছি এসে, আশকারা পেয়েও নিজেকে সামলে রাখি কেবল তোমাকে পবিত্রভাবে পাবো বলে। তুমি একটু সাহায্য করবে না? পাগলামি করো কিন্তু এমনভাবে নিজেকে আমার সাথে আনবে না যাতে আমার সমস্যা হয়।”
অনিমা কিছুটা শান্ত হয়েছে। বিষয়টা বুঝতে সময় লাগলেও বুঝে গেছে আয়ান তার সাথে খারাপ কিছু করতোনা।
চলবে,