বন্য প্রণয় 41,42,43

বন্য প্রণয়
( মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
” তাহমি বেবি কিক মারলো! “
সহন উচ্ছ্বসিত কন্ঠে তাহমির দিকে তাকিয়ে বললো। বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় আছে তাহমি। সহন পাশেই বসা। ডিনার শেষে যে যার রুমে গিয়ে শুয়েছে। সহনের পাগলামি দেখে তাহমি ঠোঁট টিপে হাসছে।
” হ্যাঁ মারলো তো। আজকাল প্রায় কিক মারে বেবি।”
” মনে হয় তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। আর কতো দেরি বল তো!”
” এত অধৈর্য হওয়ার কিচ্ছু নেই বুঝেছিস? যখন সে আসবে দেখবি এরকমই লাথি দিবে হুহ্। “
” তাতে সমস্যা নেই। লাথি গুঁতো সবকিছুই সহ্য করে নিবো, তবুও সে তাড়াতাড়ি আসুক।”
তাহমি সহনের বুকে মুখ গুঁজে দিলো। সহন আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
” আরকিছু দিন তারপর অপেক্ষার অবসান হবে। “
” ইনশাআল্লাহ। আচ্ছা শোন, সামনে তো আয়ানের বিয়ে! যদিও বেশ দেরি আছে তবুও এখনই বলি, অনিমার জন্য কী কিনবি? “
” সেটা তুই জানিস। আপাতত আমি তো বেকার! তোর স্যালারি থেকেই নিবো টাকা। আমার যদিও কিছু টাকা ব্যাংকে আছে তবে সেটা হুটহাট প্রয়োজনের জন্য রাখা।”
” আরে টাকার কথা কে বললো? আমি বললাম এক্সাক্টলি কী কিনবি সেটা বল।”
” সেসব এখনও ভাবিনি। সময় আছে তো। পরে দেখা যাবে।”
” আচ্ছা ঠিক আছে। “
সহন কথা বলতে বলতে তাহমির ঘাড়ে নাক দিয়ে ঘষতে শুরু করেছে এরমধ্যে। উষ্ণ নিঃশ্বাস আর প্রিয়তমর ছোঁয়ায় লাগামছাড়া লাগছে তাহমির। সহন তাহমির রেসপন্স পেয়ে আরেকটু ঘনিষ্ঠ হলো। ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চোখ বন্ধ করে আরও উষ্ণতা ছড়াল। কিছু সময় পরে দু’জন দু’জনার ওষ্ঠকে মুক্ত করে প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ফেলতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো। তাহমি নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রেগন্যান্সির এই স্টেজে এসব করা ঠিক নয়। সহনও বিষয়টা জানে কিন্তু বেচারা দীর্ঘদিন দূরে সরে থাকার ফলে কন্টোললেস হয়ে গেছে।
” সহন প্লিজ শান্ত হ। বেবির কথা ভেবে একটু কষ্ট কর।”
তাহমির কথায় সহনের হুঁশ ফিরল। কিছুটা দূরে সরে বসে চোখ বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস ফেললো সহন। পরক্ষণে চোখ মেলে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো,
” সরি! আমার খেয়াল ছিল না। আচ্ছা তুই থাক আমি একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসি।”
তাহমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। সহন বিছানা থেকে নেমে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। নিজেকে শান্ত করার জন্যই যে ছাদে যাচ্ছে লোকটা সে বিষয় কোনো সন্দেহ নেই তাহমির। বেবি আসলে ওর দিকে তাকিয়ে সব দুঃখকষ্ট ভুলে যাবে দু’জনেই।
ইদানীং সত্তার শেখের শরীরটা বিশেষ ভালো যাচ্ছে না। যদিও তিনি মুখে কিছু কাউকে বলেননি কিন্তু শরীরের অবস্থা দেখে বেশ বোঝা যায়। প্রায় শহরের বাইরে কোথাও চলে যান তিনি। অনিমা জিজ্ঞেস করলে বলেন, ডাক্তার মাঝে মধ্যে হাওয়া বদল করতে বলেছেন তাকে। সেজন্য শহরের বাইরে গিয়ে ঘুরে আসে। অনিমারও খুব ইচ্ছে, বিয়ের পর সবাইকে একসাথে নিয়ে ঘুরতে যাবে। দু’মাস পরেই পরীক্ষা। দেখতে দেখতে এই সময়টাও কেটে যাবে। তাই লেখাপড়ার দিকে ভালো করে মনোযোগ দিয়েছে অনিমা। রেজাল্ট খারাপ হলে সবাই পেয়ে বসবে একেবারে। আজকাল আয়ানকে ভীষণ কাছে কাছে রাখতে ইচ্ছে করে অনিমার। মনে হয় কতো তৃষ্ণা বুকে জমে আছে মনখুলে কথা বলার জন্য। সেদিন আয়ান অকারণে কেমন করে কথা বলে গেলো কিন্তু আর সরি-টরি বললো না। সেই নিয়ে অনিমার একটু-আধটু অভিমান হয়েছিল ঠিক কিন্তু পরে সেসব উবে গেছে। মানে রাগ কিংবা অভিমান যা-ই হোক সেটা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে না মেয়েটা। সত্যি কাউকে ভীষণ ভালোবাসলে হয়তো এমন-ই হয়!
সন্ধ্যা নেমেছে শহরের বুকে। খানিকক্ষণ আগেই মাগরিবের নামাজ শেষ হলো। টিভিতে ইসরায়েলের উপর ইরানের আক্রমণ সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেইসব নিউজ খুব মনোযোগী হয়ে দেখছে অনিমা। পুরো বাসা খালি। কী করবে একা একা? সারাদিন ফোন ঘাঁটতে আর কতোই বা ভালোলাগে!
বাবাও বাড়িতে নেই। বাসায় কাজ করে রাহিমা আপা আছে শুধু। বয়স বিশের ঘরে তার। কিন্তু সে থাকলেও নিজের কাজে বিজি। ছাদে গিয়ে মাদুর পেতে ঘুমাচ্ছে সে। ঘরের মধ্যে না-কি তার ঘুম আসে না,কেমন দম বন্ধ হয়ে আসে। যদিও মাত্র সন্ধ্যা হয়েছে কিন্তু রাহিমার বরাবরই তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস। পরে অবশ্যই জেগে উঠে অনিমার খাবারদাবার দিবে। অসময়ে কলিংবেলের আওয়াজ শুনে নড়েচড়ে উঠলো অনিমা। এমন সময় তো কারো আসার কথা নয়! তবুও কেউ যে এসেছে সেটা তো নিশ্চিত। অনিমা হাতে থাকা রিমোট সোফায় রেখে দরজা খুলতে এগিয়ে গেলো।
” তুমি! “
দরজা খুলে আয়ানকে দেখে চমকাল অনিমা। আয়ান মুচকি হেসে গাল টেনে দিলো অনিমার।
” কেনো খুশি হওনি? “
” সেটা নয়। এমন সময় তো কখনো আসো না তাই। আচ্ছা বাসায় কিন্তু আব্বু নেই। বলতে গেলে আমি একা। এখন তুমি আসবে? নাকি চলে যাবে?”
আয়ান বুঝতে পারছে অনিমা কেনো এ কথাটা বললো। অনিমাকে অবাক করে দিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো আয়ান। যথারীতি চমকাল অনিমা। আয়ান চোখ টিপ্পনী দিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে দরজা আঁটকে দিলো।
” আমাকে কি তোমার একেবারে নিমপাতা মনে হয়? একটুও মিষ্টি কি নেই আমার ঝুড়িতে?”
” আমি কেনো বললাম সেটা তুমি ভালো করেই জানো। যাইহোক বসো এখানেই। আমি শরবত নিয়ে আসি। বাইরে থেকে এলে তো।”
অনিমা আয়ানকে সোফায় বসতে বলে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। মেয়েটা কেমন গম্ভীর হয়ে কথাবার্তা বলছে। পরিচিত অনিমার মতো দুষ্টমি নেই তার স্বরে। আয়ানের মোটেও তা ভালোলাগছে না। যদিও আজকে অন্য একটা উদ্দেশ্যে এসেছে এখানে। তবুও আজকে অনিমার অভিমান ভাঙাবে আয়ান। আয়ান এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিল। শরবত হাতে নিয়ে অনিমা ফিরে এভাবে আয়ানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফের বললো,
” কী হলো? দাঁড়িয়ে খাবা? বসো। “
” ওহ হ্যাঁ। বসছি। তুমিও বসো। “
আয়ান বসলো, অনিমাও অন্য সোফায় বসেছে। শরবতে চুমুক দিতেই প্রাণ জুড়িয়ে গেলো আয়ানের। এই গরমে ঠান্ডা তরমুজের শরবত জাস্ট ওয়াও!
” কী হলো? ওই সোফায় গিয়ে বসলে কেনো? আমার পাশে এসে বসো।”
আয়ান গ্লাস টি-টেবিলের ওপর রেখে দিলো। অনিমা চুপ করে আছে। আয়ানের কাছ থেকে নিজের পাগলামি দূরে রাখতে চায় সে।
” থাক। তুমি কি রাতে খেয়ে যাবে? না মানে তাহলে আমি তোর জন্য কিছু রান্না করতে বলতাম রাহিমা আপাকে।”
” উনি কোথায়? দেখছি না তো।”
” ছাদে গিয়ে ঘুমিয়ে আছে। “
” ও আচ্ছা। হ্যাঁ রান্না করতে বলো তাহলে। আমি আজকে থাকবো বাসায়। “
আয়ানের কথায় অনিমা হকচকিয়ে গেল। কথাটা ঠিক বিশ্বাস হলো না। তাই অনিমা নিজে থেকে আবারও শুধালো,
” তুমি রাতে থাকবে?”
” হ্যাঁ। কোনো সমস্যা? “
আয়ান বেশ স্বাভাবিকভাবেই বললো। তাতে অনিমা আরও ভড়কে গেছে। থতমত খেয়ে বললো সে,
” আমার কোনো সমস্যা নেই। আচ্ছা তুমি বসো। আর বিশ্রাম নিলে ঘরে গিয়ে শো কিংবা ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি রাহিমা আপাকে ডাকতে গেলাম।”
” ঠিক আছে যাও। তবে সাবধানে যেও ছাদে। “
” হুম। “
আয়ানকে বসার ঘরে রেখেই অনিমা ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বেলে ছাদে গেলো। এমনিতে ছাদে বাতি আছে কিন্তু রাহিমা ঘুমানোর জন্য নিভিয়ে রেখেছে। মেয়েটা যে কীভাবে ছাদে অন্ধকারে ঘুমায় বুঝে আসে না অনিমার।
” ছেলেটার পছন্দ আছে বুঝলে আয়ানের মা। যেমন মেয়ে ভালো তেমন মেয়ের বাবা। “
তৃষার বাবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন এতক্ষণ, মাত্র বিছানায় এসে শরীর এলিয়ে দিলেন। তৃষার মা’কে উদ্দেশ্য করে বললেন কথাটা।
” হ্যাঁ। সত্তার ভাই একেবারে মাটির মানুষ। আজকাল বড়লোকদের যে অহম, সেখানে অনিমার পরিবার একশোটার মধ্যে একটা।”
বন্য_প্রণয়
পর্ব_৪২
( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
“হ্যাঁ। সত্তার ভাই একেবারে মাটির মানুষ। আজকাল বড়লোকদের যে অহম, সেখানে অনিমার পরিবার একশোটার মধ্যে একটা।”
” সেটাই বললাম আয়ানের মা। মানেমানে বিয়েটা হলে নিশ্চিন্ত হই। অনিমার মতো মেয়ে ঘরে এলে তোমার আর একাকীত্ব বলে কিছু থাকবে না।”
আয়ানের বাবা মুচকি হেসে বললেন। আমেনা ইসলামও হাসলেন।
” সে তো বটেই। ভীষণ কথা বলে অনিমা। কিছুটা তাহমির মতো চঞ্চল। ওদের মনে হয় দুই বোন,তৃষা আর আয়ানের সাথে তো তাহমির মিল নেই। “
” ভালোই বললে। “
আয়ানের বাবা দু-হাত বুকে সমানভাবে রেখে চোখ বন্ধ করলেন ঘুমানোর উদ্দেশ্যে।
রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে অনিমা আয়ানকে বাড়ির অন্য একটা রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আয়ান দ্বিমত পোষণ করেনি। চুপচাপ খেয়েদেয়ে নিজের জন্য বরাদ্দ করা ঘরে দশটার মধ্যে চলে গেছে। অনিমাও নিজের ঘরে এসেছে অনেকক্ষণ। আয়ানের মতিগতি কিছু বুঝতে পারছে না সে। এভাবে তো কখনো আসেনি আয়ান! আজ কীসের জন্য এলো? এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই ওর কাছে। তা-ও আবার যখন সত্তার শেখ বাড়িতে নেই তখন এলো আয়ান? ভাবনার অতলে তলিয়ে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে অনিমা।
ঘড়িতে সময় ঠিক রাত বারোটা। দেয়ালঘড়ির আওয়াজ ভেসে এলো বসার ঘর থেকে। সেই সাথে আয়ানের কন্ঠে নিজের নাম কিছুটা উচ্চস্বরে শুনে ঘুম ভেঙে গেলো অনিমার। আচমকা আয়ান কেনো চেঁচিয়ে উঠলো সেই নিয়ে ভয় হচ্ছে অনিমার। কী হলো! চোখমুখ হাতের তালু দিয়ে ঢলে বিছানা থেকে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো অনিমা। সমস্ত ঘর অন্ধকার! তাড়াহুড়ায় ফোনটাই আনতে মনে নেই অনিমার। অন্ধকারে হাতড়ে ঘরের লাইট জ্বালাতে যাবে তখুনি একটা হাত এসে আঁটকে দিলো অনিমাকে। চমকাল অনিমা!
” কে? কে! আয়ান তুমি কোথায়? আমার কিন্তু ভয় করছে।”
ভীতি প্রদর্শন করে বললো অনিমা। আয়ান অনিমাকে শান্ত করতে অন্ধকারে জড়িয়ে নিলো বুকে।
” আমি অনিমা। শান্ত হও প্লিজ। কিছু হয়নি, সবকিছু ঠিক আছে। “
” তুমি? এভাবে ঘর অন্ধকার কেনো?
” তুমি দাঁড়াও। আমি এখুনি লাইট জ্বেলে দিচ্ছি। “
” আচ্ছা। “
অনিমাকে ছেড়ে দিয়ে আয়ান অন্ধকারে হারিয়ে গেলো কিছু সময়ের জন্য। অনিমা বুঝতে পারছে না কিছু। হঠাৎ ঘর আলোকিত হয়ে উঠলো। আয়ান,রাহিমা ও অনিমার বাবা সবাই সমস্বরে বলে উঠলো,
” হ্যাপি বার্থডে টু ইউ! হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ডিয়ার অনিমা।”
অনিমা দু-হাত দিয়ে মুখ চেপে দাঁড়িয়ে আছে। সবকিছু কল্পনার বাইরে ছিল তার। বসার ঘরের মাঝখানে টেবিলের উপর ইয়া বড়ো একটা সুন্দর কেক রাখা আর সমস্ত ঘরটা বেশ সুন্দর করে সাজানো। অনিমা এগিয়ে গেলো সত্তার শেখের দিকে। জড়িয়ে ধরলেন মেয়েকে তিনি। অনিমা আহ্লাদী স্বরে বললো,
” এজন্য তুমি মিছিমিছি বাইরে যাবে বলেছিলে? “
” ইয়েস মাই প্রিন্সেস। সবকিছু আয়ান একাই করেছে। আমরা শুধু সাথে ছিলাম। চলো কেক কাটি।”
আয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন অনিমার বাবা। অনিমা বাবাকে ছেড়ে কেকের সামনে এসে দাঁড়াল।
” তোমরা এতো ভালোবাসো আমায়! আজীবন যেনো এই ভালোবাসাটুকু অটুট থাকে। “
” ইনশাআল্লাহ থাকবে। আঙ্কেল ঘুমাবেন, সারাদিন আমার সাথে এসবকিছু ব্যবস্থা করেছেন তো। তুমি বরং কেক কেটে নাও আগে। তারপর আমরা কথা বলবো।”
” হ আপা কাটেন কেক। “
আয়ান ও রাহিমার কথামতো কেক কাটতে শুরু করলো অনিমা। প্রথমে ক্যান্ডেল গুলো ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে তারপর ছুরি দিয়ে কেক কাটলো। সবাই আবারও একসাথে জন্মদিনের গান গাইল। প্রিয় মানুষদের সাথে জন্মদিনের সময়টুকু কাটানোই অনিমার কাছে বেস্ট গিফট মনে হচ্ছে। কেক কাটা শেষে সত্তার শেখ নিজের ঘরে চলে গেলেন। রাহিমাও মনমতো কেক টেক খেয়ে তারপর ঘুমুতে চলে গেছে। শুধু বসার ঘরে দাঁড়িয়ে আছে অনিমা ও আয়ান।
” তুমিও ঘুমাতে যাও বরং।”
অনিমা আয়ানের হাত থেকে কোল্ড ড্রিংকসের গ্লাসটা নিজের হাতে নিলো।
” কেমন লাগলো সারপ্রাইজ? “
” ভীষণ ভালো। ধন্যবাদ দেওয়া দরকার বাট দিচ্ছি না হুহ্। “
” দিতে হবে না। তারচে বরং একটু ঠোঁট ছুঁইয়ে দাও বুকের মাঝখানে। “
আয়ানের নির্লজ্জ মার্কা কথায় কিছুটা অবাক হয়েছে অনিমা। তবে লজ্জাও লাগছে একটু-আধটু। কেশে উঠল অনিমা।
” সেসব বিয়ের পর। “
” এহহ! এমনিতে তো বলো কাছাকাছি আসি না, রোমান্স করি না! তাহলে এখন আসছ না কেনো তুমি? “
” তুমি যেমন পালাই পালাই করো তেমনটাতেই তোমাকে ভালো লাগে। ঠোঁটকাটা, নির্লজ্জ হলে ভীষণ বেমানান লাগবে। সামনেই তো বিয়ে! তারপর তুমি আমার হুহ্। “
” তাহলে এখন আমি কার?”
” এখনও আমার। তখনও আমারই হবা। পার্থক্য একটাই তখন হালাল ভাবে হবে। “
আয়ান অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো একবার। এমনিতে মেয়েটাকে থতটা পাগলি মনে হয় আসলে সেরকম নয়। বেশ উন্নতি হয়েছে তার মধ্যে।
” ঠিক আছে। তাহলে যাও তুমিও ঘুমাও। আমিও যাচ্ছি। “
” হুম। শুভ রাত্রি। “
” আহা! শুভ আর রাত্রি,এখানেও কাপল।”
আয়ান হেসে বলে নিজের ঘরের দিকে এগোলো। অনিমাও নিজের ঘরের দিকে এগোলো ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটিয়ে।
ইদানীং তাহমির হাঁটাচলা করতে সমস্যা হচ্ছে। আগের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে এই ঘর থেকে ওই ঘরে তো আর যেতে পারে না। সারাদিন বাড়িতে থাকতে থাকতে বিরক্ত লাগে আজকাল। ডাক্তারের তারিখ অনুযায়ী মাত্র দশ দিন বাকি আছে ডেলিভারির। ভয় লাগে। মনে হয় সবকিছু ঠিকঠাক মতো হবে তো?
” কী ব্যাপার? এই ভরসন্ধ্যায় ঘর অন্ধকার করে শুয়ে আছিস কেনো তাহমি? শরীর ঠিক আছে তো?”
ঘরে প্রবেশ করে বাতি জ্বেলে দিলো সহন। বিকেলে একটু বের হয়েছিল সে। মাত্র বাসায় ফিরলো। তাহমি এতক্ষণ শুয়ে ছিলো, সহনকে দেখে উঠতে চাইল ঠিক, কিন্তু একা উঠতে পারছে না। কোমরে ভীষণ ব্যথা। শুয়ে থাকলে আর নিজে থেকে একা একা উঠতে পারে না সে। শরীরের গঠন পরিবর্তনের ফলেই এই সমস্যা হয়। তাহমির কষ্ট হচ্ছে দেখে সহন ধরে উঠিয়ে বসায় তাহমিকে। তাহমি ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে। কিয়ৎক্ষণ লাগলো তার নিজেকে স্বাভাবিক করতে।
” সব ঠিক আছে সহন। কিন্তু ভয় লাগছে, সবকিছু ঠিক থাকবে তো?”
” বোকা মেয়ে! কিছু হবে না। সবকিছু ভালো হবে। “
” তাই যেনো হয়। আচ্ছা শোনো,এখন থেকে তোকে তুই করে ডাকলে সাড়া দিবি না। মামুনি বলছে ক’দিন পর আমাদের বেবি আসবে,সে যদি শোনে আমরা তুইতোকারি করি তাহলে সে-ও সেটাই শিখবে। অথবা বিষয়টা কেমন লাগবে না? “
সহন একটু সময় নিলো বিষয়টা নিয়ে ভাবতে। মিনিট পাঁচেক ভেবেচিন্তে তারপর বললো,
” তাহলে আমিও তুমি বলার চেষ্টা করবো। বাবা তার মা’কে তুই বলে ডাকলেও তো পুচকুর মনটা খচখচ করতে পারে। তাই না? “
” বেশ। এখন থেকে আমরা একে অপরকে তুমি বলে সম্মোধন করবো। ওকে?”
” ঠিক আছে। “
সহন তাহমির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে টেবিলের উপর রাখা প্রয়োজনীয় জামাকাপড় ওয়াশরুমে গেছে ফ্রেশ হওয়ার জন্য। তাহমি বসে আছে একা। জীবনে খারাপ সময় তেমন করে কখনো আসেনি। তাই বলেই ভীষণ ভয় লাগছে তাহমির।
আগামীকাল আবারও বাবার বাড়ি যাবে তৃষা,সাথে অনিকও যাবে৷ তাহমির সময় হয়ে গেছে জেনেই চলে আসবে তৃষা। সেই জন্য জামাকাপড় গোছগাছ করছে ব্যস্ত আপাতত। কিন্তু কাজের মধ্যে এসে অনিক পেছন থেকে তৃষাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।
” কী করছো! ছাড়ো বলছি। জামাকাপড় না গোছালে সকাল সকাল কীভাবে রওনা হবো?”
” আমি গুছিয়ে দিবো৷ আসো একটু ভালোবাসি।”
তৃষা নিজেকে অনিকের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলো। খিলখিল করে হেসে বললো,
” এসব পরে মশাই। আগে ঠিক করুন নতুন অতিথির জন্য কী কিনবো? এখন তো কিছু পড়তে পারব না বেবি। মানে ও তো এতটুকু থাকবে।”
#বন্য_প্রণয়
#পর্ব_৪৩
( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
তৃষা নিজেকে অনিকের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলো। খিলখিল করে হেসে বললো,
” এসব পরে মশাই। আগে ঠিক করুন নতুন অতিথির জন্য কী কিনবো? এখন তো কিছু পড়তে পারব না বেবি। মানে ও তো এতটুকু থাকবে।”
অনিক কিছুটা ভাবুক হয়ে গেলো তৃষার কথায়। আসলেই তো, পুচকি পৃথিবীতে এলে তাকে কী দিবে? কিয়ৎক্ষণ লাগলো সেটা ঠিক করতে। ফের পুরো উদ্যমে তৃষাকে জড়িয়ে ধরলো অনিক। ঘাড়ে নাক ঘষে বললো,
” সোনার আংটি দিবো নতুন অতিথিকে। উপহার দেওয়া তো ফুরিয়ে যাবে না। বড়ো হলে না হয় আবার তার ইচ্ছে অনুযায়ী কিছু দিবো।”
” হয়েছে থামুন। বেশি আশা করতে হয় না। আগে বেবি পৃথিবীতে সুস্থভাবে আসুক তারপর। এখন যান রেডি হয়ে আসুন আপনিও। আমার সময় লাগবে না কিন্তু! “
অনিক তৃষাকে নিজের বাহুডোর থেকে মুক্ত করে বিছানায় রাখা শার্ট ও প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল চেঞ্জ করতে।
সকাল থেকে তাহমির শরীরটা কেমন লাগছে। সেজন্য আজ অফিস যায়নি সহন। বাবার বাড়ি এসেছে দু’দিন হলো। সহনও এসেছে সাথে। তাহমির ভীষণ ভয় লাগছে। এমনিতে এতো সাহসী একটা মেয়ে অথচ মা হওয়া নিয়ে তার মনে নানা শংকা কাজ করে। সবচেয়ে বেশি চিন্তা হয় বেবিকে নিয়ে। সে ঠিকমতো পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে তো? তৃষাও সারাক্ষণ বোনের পাশে পাশে থাকছে। অনিক একবার চেকআপ করে গেছে। যতটুকু বুঝতে পারছে হয়তো আজকেই লেবার পেইন উঠবে। সেই অনুযায়ী হসপিটালে আগেভাগে সবকিছু রেডি করে রেখেছে অনিক। তাহমির শ্বাশুড়িও এসেছেন আজকে। তিনি কিছুক্ষণ পর পর এসে দেখে যাচ্ছে তাহমিকে। আমেনা ইসলাম তো মেয়ের থেকে একটু দূরে সরছেন না। তাহমি বলেকয়ে তাকে অন্যন্য কাজবাজ করতে পাঠাচ্ছে। আয়ান তো টেনশনে মাঝে মধ্যে পায়চারি করছে। আয়ানের বাবা বাড়িতে নেই। আসবে আগামীকাল রাতে। সবাই এতটাই উদ্বিগ্ন হয়ে গেছে মনে হয় তাহমি-ই পৃথিবীতে একমাত্র প্রেগন্যান্ট! ( একটা হাহা মার্কা ইমোজি)
সারাদিন এভাবেই কাটলো সবার। রাতে খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই যে যার ঘরে গিয়ে শুয়েছে। ফরিদা খান ও আমেনা তাহমির কাছে শুয়েছেন আজ। সহন আয়ানের সাথে ঘুমোবে। তৃষাও চেয়েছিল বোনের সাথে শুতে। কিন্তু দুই মায়ের অভিজ্ঞতা আছে বলে তাহমির অসুবিধা উনারা বুঝতে পারবেন বলে তৃষা আর জোর করেনি।
” আপাই তোর কি বেশি শরীর খারাপ লাগছে? “
বোনের মাথার পাশে বসে আছে তৃষা। ফরিদা খানও বসে অন্য পাশে। আমেনা ইসলাম পাশেই চেয়ারে বসে আছেন। তাহমির অস্থিরতা ক্রমে বাড়ছে।
” একটু। তুই যা অনিকের কাছে। রাতে কিছু হলে মামুনি তো আছেই। তোদের ডেকে নিবে। “
” হ্যাঁ তৃষা তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো।”
ফরিদা খান তৃষাকে বললেন। সবার কথায় তৃষা নিজের ঘরে গেলো। একটা সময় সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো। কিন্তু তাহমির চোখে ঘুম নেই। পেটে থেমে থেমে ব্যথা হচ্ছে। শরীরের ভেতর থাকা ছোটো প্রাণটি সে এখন অনুভব করতে পারে। এভাবেই ছটফটিয়ে সারা রাত কাটলো তাহমির। সকাল হতেই ব্যথার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলো। বিষয়টা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয় তাহমিকে। ডাক্তাররা চেষ্টা করেও নরমাল ডেলিভারি করতে না পেরে শেষমেশ সিজার করতে বাধ্য হয়। তাহমির কোল জুড়ে ছোট্ট একটি শিশু ভূমিষ্ট হলো। ও.টি রুমের সামনে সবাই অপেক্ষা করছে। এরমধ্যেই মাগরিবের আজান দিতে শুরু করেছে। অপারেশন থিয়েটার রুমের দরজা খুলতেই এগিয়ে আসে তাহমির বাড়ির সবার। একজন নার্স হেসে বলেন,
” আপনাদের পেসেন্টের ছেলে হয়েছে। মা এবং বাচ্চা দুজনেই সুস্থ আছে।”
সহন খবরটা শুনে খুশিতে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে ফেললো। সবার চোখের আড়ালে শক্তপোক্ত পুরুষের চোখের নোনাজল ঝড়ল তার পিতা হওয়ার সংবাদ শুনে। ছেলে কিংবা মেয়ে হওয়া নিয়ে দুই পরিবারের কারোরই কোনো মতামত ছিলো না৷ যা-ই হবে সুস্থভাবে পৃথিবীতে আসবে সেটাই ছিলো সৃষ্টিকর্তার কাছে সকলের প্রার্থনা।
” আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আমরা কখন দেখা করতে পারবো নার্স?”
তাহমির শ্বাশুড়ি হেসে জিজ্ঞেস করলেন। নার্স স্বাভাবিকভাবেই বলে,
” একটু পরই কেবিনে শিফট করা হবে উনাদের। তারপর দেখা করতে পারবেন। তবে বাচ্চার মা আপাতত সেন্সলেস। একটু পর ঠিক হয়ে যাবে। “
” ঠিক আছে। ধন্যবাদ। এটা আপনি রাখুন,তোমার বখশিশ। “
সহন মানিব্যাগ থেকে দু’টো হাজার টাকার নোট বের করে নার্সের হাতে দিলো। উনি হাসি হাসি মুখেই আবারও অপারেশন থিয়েটারে ঢুকলেন।
বিকেলের দিকে তাহমির ঠিকঠাক মতো জ্ঞান ফিরেছে। আপাতত গ্লুকোজ স্যালাইনের মাধ্যমে ক্ষুধা নিবারণ করা হচ্ছে রোগীর। পরে ভাত খেতে দিবে। নিজের পাশেই ছোট্ট প্রাণটাকে দেখে তাহমির বুকটা আনন্দে ভরে গেছে। সহন পাশে চেয়ারে বসে এতক্ষণ তাহমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল।
” তুই ঠিক আছিস তাহমি?”
” ঠিক আছি আমি। তুমি চিন্তা কইরো না। দেখেছ? আমাদের ছেলে একেবারে তোমার মতো দেখতে হয়েছে। সেম ভ্রু,সেম চোখ আর নাক! সবকিছুই তোমার মতো। “
সহন ঠোঁট কামড়ে হাসলো। ছোটো সহনের হাতে নিজের একটা আঙুল রেখে সহন বললো,
” হ্যাঁ, ডবল সহন। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও,তারপর আমরা একসাথে বাসায় ফিরবো।”
” ইনশাআল্লাহ। মা, মামুনি কোথায় সবে?”
” আছে সবাই। আবার আসবে আমি যাওয়ার পরে
তাহমি মুচকি হাসলো। দেখতে দেখতে কেটে গেলো সপ্তাহখানে। আজকেই বাসায় নিয়ে এসেছে সহন। সবাই খুব খুশি। পিচ্চির নাম রাখা হয়েছে, সাকিন। সাকিনের ছোটো ছোটো হাত-পা গুলো সুন্দর করে নড়াচড়া করছে। বিকেলে অনিমা এবং সত্তার শেখও আসবে বেবিকে দেখতে। আয়ান এসেছে অনিমার কাছে। বেবি দেখতে যাবে কথাটা শুনতেই খুব খুশি হয়েছে অনিমা।
” সত্যি? এখুনি চলো না আমরা।’
” পাগল একটা! এখন না, একটু পরে যাবো। আঙ্কেলকে বলেছি, তুমি রাত করে ফিরবে একটু। একেবারে রাতের খাওয়াদাওয়া করার পরে পৌঁছে দিবো আমি। আঙ্কেলের কাজ আছে পরে যাবেন তিনি। “
” আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে। তুমি বসো,আমি কফি তৈরি করতে বলছি।”
” কোল্ড কফি তৈরি করতে বলো।”
অনিমা হেসে বললো, ” ঠিক আছে। “
একটি ছোটো প্রাণকে ঘিরে দুই পরিবারের লোকজনের আনন্দ কমছে না। সন্ধ্যা হতে সবাই বসেছে ড্রইং রুমে। তাহমি ঘরে শুধু সাকিনকে নিয়ে। পাশে অবশ্য সাকিনের দাদি আছেন। সহন ইচ্ছে করে আয়ানকে ক্ষ্যাপানোর চেষ্টা করছে।
” বিয়েটা হলেই দেখবে শালাবাবু, মেয়েদের সামলান কঠিন না-কি সহজ হাহা!”
” হুম দেখা যাবে সেটা। “
” কী নিয়ে গুজরগুজর ফুসুরফাসুর করছো তোমরা?”
তৃষার কথায় চমকে উঠল দু’জন ওরা। সহন হেসে বলে,
” শালাবাবুকে শেখাচ্ছি কীভাবে মেয়েদের মন পেতে হয়।”
” ওও আচ্ছা। এসব না করে চলো আপুর কাছে যাই। সাকিন কি সারাদিন শুয়ে থাকবে শুরু? “
” হ্যাঁ চলো তাহলে। “

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *