The Wedding Dreamer

✨ গল্পের নাম:ভুলনা আমায় 4,5 শেষ_পর্ব

By মেঘাদ্রিতা_মেঘা

🌙 Romance 🧠 Self-help 💛 Islamic 📘 Story

সম্পূর্ণ গল্প পড়তে চান?

Click here to read the full story.
ভুলোনা_আমায়
মেঘাদ্রিতা_মেঘা
পর্ব_৪
সবাই মিলে এক সাথে হাসাহাসি করছে।
কত্ত খুশি সবাই।
এর মধ্যেই হঠাৎ করে কলিং বেলের আওয়াজ।
আমি গিয়ে গেইট খুলতেই দেখি কল্প স্বয়ং হাজির।
আমি দেখে অবাক হবো নাকি খুশি হবো,কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
_তুমি?
ও কোন কথা না বলেই আমাকে শক্ত করে ওর বুকে জড়িয়ে ধরে।
ছেলেটা এখন কাঁদবে নিশ্চিত।
বলেছিলাম না কাঁদবে,
কান্না শুরু করেছে।
_আচ্ছা এইভাবে কান্না করার জন্য এসেছো তুমি?
হুটহাট না জানিয়ে কেউ এভাবে আসে?
_জানিয়ে আসলে কি সারপ্রাইজ দিতে পারতাম?
তোমার মুখের এই অদ্ভুত সুন্দর হাসিটা দেখতে পেতাম?
_এত ভাল কিভাবে বাসতে পারে মানুষ কলিজা?
_তুমি যেভাবে বাসো,ঠিক সেভাবে।
কল্পকে দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়।
আর খুশিও হয়।
তারপর সবাই মিলে এক সাথে বসে ফ্রেশ হয়ে গল্প করে।
আম্মুর রান্না হয়ে গেলে সবাই আমরা এক সাথে খাওয়া দাওয়া করি।
আমাদের বাসার সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে কিছু ক্ষণ কথা বার্তা বলে বাসায় চলে যায়।
সন্ধ্যা হয়ে যায়।
আম্মু আমাদের রুমে এসে,কল্পকে ডেকে বলেন।
_কিরে,তুই হঠাৎ করে চলে এলি যে?কাউকে তো কিছু জানালিও না।
_এমনিই আম্মু।আমাকে ওখান থেকে একবারে পাঠিয়ে দিয়েছে।
এখন কাজ কম তো তাদের।সেই জন্য।
আবার যখন বেশি কাজ পড়বে তখন নাকি ডাকবে বলেছে।আপাতত তাদের আর লোক লাগবেনা।
_তোকে একাই পাঠিয়েছে?
_না।আরো কয়েক জনকে পাঠিয়েছে আমার সাথে।
_থাক চিন্তা করিস না।
আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
হয়তো এখানেও কিছু ভালো লুকায়িত আছে।
_হুম আম্মু।
আচ্ছা রেস্ট নে তাহলে একটু।
রাতে এসে খেয়ে যাস তোরা।
আম্মু চলে যান।
_সত্যি সত্যি তোমাকে তারা পাঠিয়ে দিয়েছেন?
_হুম দিলো তো।
_একদম মিথ্যা বলবেনা আমার সাথে।
_কি মিথ্যা বললাম?
_তোমাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়নি।
বরং তুমি নিজ ইচ্ছায় একবারে চলে এসেছো।তাইনা?
_কে বলেছে তোমায় এসব?
_আমার জন্য চলে এসেছো তাইনা?
কল্প চুপ করে আছে।
_কেন আম্মুকে মিথ্যা বললে?
_আমি চাইনা কেউ মনের ভুলেও তোমাকে খারাপ ভাবুক,কেউ না বলুক বউ এর জন্য চাকরি ছেড়ে আমি চলে এসেছি।
আর তা শুনে তুমি কষ্ট পাও।
আম্মু না বল্লেও বাসার আর কেউ ও তো বলতে পারে তাইনা?
আর বাসা থেকে কথা বাইরে যেতে কত ক্ষণ?আর বাইরে কথা গেলে জানোই তো কি হয়।
আমি চাইনা কেউ তোমার দিকে আঙুল তুলুক।
_কেন এত ভালবাসো আমায় বলো তো?
কল্প আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে।
ভালবাসি বলেই ভালবাসি।
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।
_কিহ?
_জ্বীইই।
কি ভাবছো মিসেস কল্প?চুপ হয়ে গেলে যে?
_কিছুনা।
_টায়ার্ড লাগছে?
_তুমি এসেছো জার্নি করে,তুমি টায়ার্ড। তুমি রেস্ট নাও একটু।
_না আমি ঠিক আছি।
_জানো কল্প,আমার ইচ্ছে করছে আজকের দিন টা আমি যদি ফ্রেমে বন্দি করে রাখতে পারতাম।
কত ভালো হতো তাইনা।
সবাই কত খুশি ছিলো আজ।
এত খুশি আমি এর আগে কোন দিন কাউকেই দেখিনি।
আবার একদিন সবাই এ বাসায় একত্রিত হয়ে কাঁদবে তাইনা?
শুধু আমিই কাঁদবোনা।
কারণ আমি নিজেই তো থাকবোনা।
_কি সব আবোলতাবোল কথা বলছো?
এমন কথা আর যেন না শুনি।
একদম চুপ।
আচ্ছা দেখি তো আমার মা টা কি করে।
কল্প আমার পেটে কান পেতে বলে,
_আম্মাজান!আপনি কি করছেন এখন হুম?
আপনাকে আপনার বাবা কিন্তু খুব মিস করছে।
কবে আসবেন আপনি?
_এই এই তুমি কি বল্লা?আম্মাজান?
_হুম আম্মাজানই তো।
_কে বলেছে?যদি আব্বাজান হয়?
তখন কিন্তু আব্বাজান রাগ করে ফুলে থাকবে।
কথাই বলবেনা।
_এটা আমার আম্মাজানই দেখো।
তুমি মেয়ে চাও তো,আল্লাহ আমাদের মেয়েই দিয়েছেন দেখে নিও।
_ভালবাসি।
_ভালবাসি অনেক টা।
পরের দিনই কল্প আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।জানার জন্য ডাক্তারের কাছ থেকে,আমার কি অবস্থা।
ডাক্তার বলেন,আপাতত বেবী ছোট।
তাই তেমন কোন সমস্যা হবেনা।
কিন্তু বেবী বড় হবার সাথে সাথে সমস্যা শুরু হবে।
তবুও তারা যথেষ্ট চেষ্টা করবে সমস্যার মোকাবিলা করার।
কল্প ডাক্তারকে বলেন,
আমি আমার বাচ্চা আর বউ দুজনকেই চাই প্লিজ।
ডাক্তার বলেন,আল্লাহ ভরসা।
আমরা চেষ্টা করবো।
বাকি টা আল্লাহর হাতে।
কল্প আমাকে খুব যত্ন করে।
আমার খেতে ইচ্ছে করেনা বলে,খেতে না চাইলে জোর করে খাইয়ে দেয়।
আর এই বলে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে,
আম্মাজান কিন্তু না খেয়ে আছে।
তুমি না খেলে ও খাবার পাবে কই?
আর তখন না চাইতেও খেতেই হয়।
প্রেগন্যান্সিতে আমার মারাত্মক মুড সুইং হয়।
খিটখিটে মেজাজ,হঠাৎ রাগ।
মাঝ রাতে এটা সেটা খেতে ইচ্ছে করা।
সব অদ্ভুত কিছু ইচ্ছে করে।
একদিন রাত তিন টা বাজে তখন।
আমি কল্পকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি।
কল্প তো ভয় পেয়ে যায়,আমার কোন সমস্যা হলো কিনা।
পরে আমি বলি,
_কল্প!আমি আইসক্রিম খাবো।
_কয়টা বাজে এখন?
_এইতো আড়াইটা তিন টা বাজবে হয়তো।
_এত রাতে আমি আইসক্রিম পাবো কই?
_আমি জানিনা।
_আর তাছাড়া এখন আইসক্রিম খেতে হবেনা।
আম্মাজানের ঠান্ডা লাগবে।
_কিচ্ছু হবেনা।
ওর ও আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।
তুমি আমায় আইসক্রিম এনে দাও।
_এত রাতে?
সকালে এনে দেই?
এখন লক্ষী মেয়ের মত ঘুমাও।
_নায়ায়ায়া!তুমি আমাকে এখনই আইসক্রিম এনে দিবা।
এখনই।
নইলে আমি ঘুমাবোনা।
_আচ্ছা শোনো জান,তুমি এখন ঘুমাও একটু।
সকাল হলেই দেখবে আইসক্রিম তোমার সামনে।
_না আমি এখন খাবো।
নইলে ঘুমাবোনা না না না।
কল্প সত্যি সত্যি খু্ঁজে আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসে।
_এত রাতে আইসক্রিম পেলে কই?
_সব দোকান বন্ধ ছিলো।
একটা দোকানের মালিক দোকানের ভেতরে থাকে।
তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে এনেছি।
_ওরে আমার কলিজারে।
_হয়েছে হয়েছে,এবার আইসক্রিম খেয়ে ঠান্ডা হন।
আমি এখন ঘুমাই তাহলে একটু।
_হুম ঠিক আছে।
আমার এ সময়ের অদ্ভুত ইচ্ছে গুলো কল্প চুপচাপ হাসি মুখে পূরণ করে।
তাতে ওর যতই কষ্ট হোক।
একদিন আমার খুব শাড়ী পরতে ইচ্ছে করলো।
কিন্তু আমি নিজে শাড়ী পরতে পারিনা।
তাই জেদ করলাম কল্পই আমাকে শাড়ী পরিয়ে দিবে।
ও বার বার বলছিলো,চলো আম্মুর কাছে যাই।
আম্মু তোমাকে খুব সুন্দর করে শাড়ী পরিয়ে দিবেনে।
কিন্তু আমি আমার জেদে অটল।
শাড়ী কল্পকেই পরিয়ে দিতে হবে।
তাই বেচারা দীর্ঘ দুই ঘন্টা ইউটিউব দেখে শাড়ী পরা শিখে।
তারপর আমাকে শাড়ী পরিয়ে দেয়।
এ সময় নাকি একেক জনের একেক রকম ইচ্ছে হয়।
যাদের মুড সুইং হয় আরকি।
আর যাদের মুড সুইং হয়না,তাদের তো কোন সমস্যাই নেই।
তো একদিন হঠাৎ করে আমার ডান পায়ের নূপুর টা পা থেকে ছিঁড়ে পরে গেলো।
আর আমি এই কান্না,আমার এখন নতুন নূপুর লাগবে।
এখনই লাগবে।
কল্প আমার কান্না থামাতে জুয়েলারির দোকানে যায়।
কিন্তু আমার পায়ের মাপের কোন নূপুর পায়না।
পরে দেখে একজোড়া আছে।
কিন্তু সেটা অন্য জনের অর্ডারের।
আজই সে এসে নিয়ে যাবে।
পরে কল্প জোর করে ১০০০ টাকা আরো বেশি দিয়ে সেই নূপুর আমার জন্য নিয়ে আসে।
এত জ্বালাই আমি।
বেচারা তবুও এক বিন্দু রাগ করেনা।
দেখতে দেখতে অনেক গুলো দিন কেটে যায়।
সুখের মুহূর্ত গুলো খুব তাড়াতাড়িই চলে যায়।
এদিকে আমার পেটে খুব ব্যথা হতে শুরু করে।
আমি সহ্য করার চেষ্টা করি।
কিন্তু পারিনা।
বেবী যখন নড়াচড়া করে আমার খুব কষ্ট হয়,ওই যে আমার সমস্যা আছে যে সেই জন্য। কিন্তু কল্পকে বুঝতে দেইনা।
একদিন রাতে কল্পর বুকে মাথা রেখে আমি বলি,
_আমাদের মেয়ে হলে কি নাম রাখবা হুম?
_তুমিই বলো।
_না তুমি বলো।
_না তুমি বলো।
_নীরা রাখি হুম?আমাদের মেয়ে হলে নাম হবে নীরা।
আর ছেলে হলে রাজ্য।
_আচ্ছা তাই হবে।
_কল্প,
_হুম বলো।
_আমি চলে গেলে ”ভুলোনা আমায়” হুম।
_উফ চুপ করবা তুমি?
কোথাও যাবেনা তুমি আমাকে ছেড়ে।
কোথাও না।
_আচ্ছা যাবোনা।
এবার কান্না বন্ধ করো তো।
_জানো কল্প!আমার না অনেক শখ ছিলো,আমাদের একটা মেয়ে হবে।
ছোট্ট ছোট্ট হাত,ছোট্ট ছোট্ট পা।
ছোট্ট একটা পুতুল।
ওকে আমরা অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে রাখবো।
ওর না চুল কাটবোনা আমরা।
অনেক অনেক চুলের ক্লিপ কিনে দিবো,অনেক সুন্দর সুন্দর ড্রেস।
কত স্বপ্ন আমার।
_সব হবে কলিজা।
তুমি একদম চিন্তা করোনা।
_আমার কিছু হয়ে গেলে আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো হুম?আম্মুর খেয়াল রেখো।
_উফ চুপ করবে তুমি?
তোমার কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো ভেবেছো একবার?
কিছু হবেনা তোমার।ঘুমাও এখন।
একদম চুপ করে ঘুমাবা।
এরপর হঠাৎ একদিন রাতে আমি ঘুমের মধ্যেই অনুভব করি,আমার পেটে ব্যথা হচ্ছে।আর এতই ব্যথা হচ্ছে যা সহ্য করার মত না।
আমি কল্পকে ডাকতেই কল্প আমাকে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যায়।
আমি যেই ডাক্তারের আন্ডারে আছি তাকে ফোন দেয়।
সে দ্রুত হসপিটালে চলে আসেন।
এসে বলেন,
এখন তো এমন ব্যথা হবার কথা না।
এখনো তো অনেক সময় বাকি ওর।
যাইহোক,
এখনই যা করার করতে হবে।
দেরি হলে সমস্যা হয়ে যাবে।
আর বেবীকে কিন্তু আই সি ইউ তে রাখতে হবে আগেই বলে দিলাম।
_আর দ্রিতা?(কল্প)
_আল্লাহ কে ডাকুন।
আমি একটা পেপার পাঠাচ্ছি।
সেখানে সই করে দিবেন কেমন?
আমাদের বাসায় খবর দেয়া হয়েছে।
আমার সাথে কল্প,আম্মু(শাশুড়ী মা)আর ছোট ভাই(দেবর) এসেছে।
কল্প আমার হাত ধরে আছে।
_কল্প!আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে?
কল্প আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।
ওর চোখের পানি টপ টপ করে আমার গায়ে পড়ছে।
_আমি না তোমায় অনেক ভালবাসি কলিজা।
অনেক ভালবাসি।
_আমিও কলিজা।
একটা নার্স এসে বলেন,
পেশেন্টকে নিয়ে যেতে হবে।
চলুন।
_কিন্তু ওর বাবা মা কেউ তো এখনো আসেনি।
_পেশেন্টের অবস্থা সিরিয়াস তাই লেইট করা যাবেনা।
আম্মু(শাশুড়ী মা)
আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন,ভয় পেও না মা।
আল্লাহ ভরসা।
কল্প আমার হাত ধরে আছে।
নার্স আমাকে নিয়ে যাবার সময় কল্প আমার সাথে সাথে যাচ্ছে।
যখনই আমাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হবে তখন কল্প ডাক্তারকে বলে,
_আমি ভেতরে আসি প্লিজ?
_সরি।আপনাকে বাইরেই থাকতে হবে।
_ডাক্তার,আমার আমার ওয়াইফকে চাই প্লিজ!যে কোন কিছুর বিনিময়ে।
প্লিজ।
কল্প আমার হাত ছাড়েনা,
ডাক্তার বলেন,
ওকে ভেতরে আসতে দিন প্লিজ।
আমাদের হাত দুটো একটু একটু করে ছুটতে থাকে,
আমি কল্পের চোখের দিকে তাকিয়ে বলি,
“ভুলোনা আমায়”
চলবে?
শেষের লাইন গুলো লিখার সময় খেয়াল করলাম চোখ ভিজে গেছে আমার।লিখার ভেতর এতটাই ডুবে গিয়েছিলাম আমি।
এরপরের পর্বে কি চান আপনারা?
মতামত জানাতে পারেন।ধন্যবাদ।
ভুলোনা আমায়
৫ম ও শেষ পর্ব
কল্প আমার হাত ছাড়েনা,
ডাক্তার বলেন,
ওকে ভেতরে আসতে দিন প্লিজ।
আমাদের হাত দুটো একটু একটু করে ছুটতে থাকে,
আমি কল্পের চোখের দিকে তাকিয়ে বলি,
“ভুলোনা আমায়”
অনেক গুলো বছর পর…
বাবা,আমি ইরাজকেই বিয়ে করবো।
হাত ভেঙে গেছে তাতে কি?
আবার ঠিক হবে।
আমার তো কোন সমস্যা নেই তাতে।
তাছাড়া হাত তো আমারও ভাঙতে পারতো।
তাছাড়া বিয়ের পর যদি ও এক্সিডেন্ট করে হাত ভাঙতো,তাহলে কি করতে তোমরা?
তাছাড়া এক্সিডেন্ট তো আর সে ইচ্ছে করে করেনি।বলো?
তাহলে বাসার সবাই কেন ঘ্যান ঘ্যান করছে?
ও একটু সুস্থ হোক আমি ইরাজকেই বিয়ে করবো,এটা আমার শেষ কথা।
মেয়েটা একদম ঠিক ওর মায়ের মত হয়েছে।
কল্প ভাবছে সেদিনের কথা।
যেদিন নীরার মা দ্রিতাও ঠিক এই ভাবেই কথা গুলো বলেছিলো বাড়ীর সবার বিপক্ষে গিয়ে।
আর অবশেষে কল্পকেই বিয়ে করেছিলো।
নীরা,
কল্প আর দ্রিতার এক মাত্র মেয়ে।
ও একটা ছেলেকে পছন্দ করে,আর বাসায় বিয়ের কথা বার্তা চলছিলো বলে সবাইকে ইরাজের কথা বলে।
যাকে নীরা ভালবাসে,তার নামই ইরাজ।
কল্প নীরাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে।
তাই বিয়ের কথা বার্তাও চলছিলো,কিন্তু এরই মাঝে হঠাৎ ইরাজ এক্সিডেন্ট করে আর ওর একটা হাত মারাত্মক ভাবে ভেঙে যায়।
তাই নীরার চাচ্চু-ফুফুরা সবাই না করছিলো,বিয়েটা করার জন্য নীরাকে।
কারণ হাত টা খুবই খারাপ ভাবে ভেঙেছে।যদিই হাত টা ঠিক না হয়।আর ঠিক হলেও ওই হাত দিয়ে যদি কাজ কর্ম না করতে পারে।তাদের কথা পুরুষ মানুষ, এক হাত অচল হলে দুনিয়ার অর্ধেক টাই অচল।কাজ করে তো খেতে হবে।
যদিও কল্প নীরাকে বাঁধা দেয়নি বিয়ের ক্ষেত্রে।কারণ ও জানে, এমন সময় মেয়ে পক্ষ না করে দিলে কেমন লাগে।
কারণ ও নিজেও যে এমন এক পরিস্থিতিতে পরেছিলো।
_আচ্ছা বাবা,চাচ্চুরা ফুফুরা সবাই না করলো ইরাজকে বিয়ে করতে।
কিন্তু তুমি কেন একবার ও না করলেনা?
_কারণ একদিন আমিও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম।তাই আমি বুঝি,পরিস্থিতি টা কতটা ভয়াবহ।
তোর মা আমাকে ফিরিয়ে দেয় নি বলে আমি ডিপ্রেশনে পড়িনি।কষ্ট পাইনি।
নয়তো আমি নিজেই ডিপ্রেশনের সাগরে,কষ্টের সমুদ্রে তলিয়ে যেতাম।
মা যেমন মেয়েও তেমন।
আমি গর্ববোধ করি তোকে নিয়ে।
তোর বিয়ে ইরাজের সাথেই হবে।
_আম্মু তুমি কি বলো?
_আমি আর কি বলবো,তোর ইচ্ছেমতই হবে যা হবে।
.
.
কি খুশি হয়েছেন না সবাই?
নাকি অবাক হয়েছেন আমি বেঁচে আছি বলে?
হ্যাঁ আমি দ্রিতাই বলছি।
আমি বেঁচে আছি আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
সেদিন একটা মিরাকেল হয়।
আমার নীরা সময়ের আগে,অতি তাড়াতাড়ি দুনিয়ায় আসে বলে,আর আল্লাহ চেয়েছেন বলে,আমি বেঁচে যাই।
সেদিন ডাক্তার সি সেকশন এর সাথে সাথে আমার সেই আগের না হওয়া অপারেশন টা করেন।
আর আমাকে বলেন,ইটস মিরাকেল দ্রিতা।
আল্লাহ তোমার কল্প আর তোমার রাজকন্যার জন্য তোমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন।
আর তুমি কন্যা সন্তানের মা হয়েছো।এই কথা বলে ডাক্তার আমার নীরাকে আমার বুকে দেন।
আমি আলহামদুলিল্লাহ বলে আমার নীরাকে বুকে জড়িয়ে নেই।
বাইরে কল্প অপেক্ষা করছে।এত ক্ষণে আমার বাসার সবাইও এসে গেছেন বোধয়।
ডাক্তার আমায় এক গাল হেসে বললেন,তুমি বড় ভাগ্যবতী দ্রিতা।কল্পের মত বর পেয়েছো।
আমি মুচকি হেসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে দু চোখ বন্ধ করলাম।
ডাক্তার যখন নীরাকে নিয়ে বাইরে বের হন,তখন সবাই নীরাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও কল্প ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে,
_আমার দ্রিতা?
ও কেমন আছে?
ও ঠিক আছে তো?
প্লিজ ডাক্তার কথা বলুন।
ও কোথায় এখন?
আমি কি ওর কাছে যেতে পারবো?
ওকে দেখতে পারবো?
এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে যাচ্ছিলো কল্প।
ডাক্তার তারপর কল্পকে শান্ত করে উত্তর দেন,
_হয়েছে তো. এবার একটু শান্ত হন।
আপনার দ্রিতা আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ঠিক আছে।
ইটস মিরাকেল ডিয়ার।
আপনার ভালবাসা আর দোয়ায় আল্লাহ আপনার দ্রিতাকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
সি.সেকশন এর সাথে সাথে আমরা তার সেই অপারেশন টাও করে ফেলি,এখন আর কোন ভয় নেই।
সবাই কল্প আর ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে কিসের অপারেশন?
কল্প উত্তর দেয়,বাসায় গিয়ে সবাইকে বলবোনে।
ডাক্তারঃ-একটু ওয়েট করুন,
কিছুক্ষণের মধ্যেই দ্রিতাকে বেডে দেয়া হবে।
তখন আপনি দ্রিতার কাছে যেতে পারবেন।
কল্প এবার হাউমাউ করে কাঁদছে আর আল্লাহকে শুকরিয়া জানাচ্ছে।
সাথে ডাক্তারকেও কৃতজ্ঞতা জানায়।
কিছু ক্ষণ পর আমাকে বেডে দেয়া হয়।
কল্প দৌড়ে আমার কাছে আসে।
আমার হাত দুটো ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
_ভালবাসি।
ভালবাসি অনেক টা।
ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম জানো।
আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া তুমি ঠিক আছো।
তোমার কিছু হলে না আমি…
_পাগল হয়ে যেতে?
কিছু হয়নিতো,
এবার তো কান্না থামাও।
তখনই সবাই রুমে ঢোকেন।
আম্মু আব্বু কাঁদতে কাঁদতে আমার কাছে আসেন।
_কান্না করোনা তো।ঠিক আছিতো আমি।
এভাবে বাচ্চাদের মত কান্না করতে হয় নাকি?কান্না করোনা।
আম্মু (শাশুড়ি মা)নীরাকে এনে কল্পের কোলে দিয়ে বলেন,
_জানো মা,দ্রিতা দ্রিতা করতে করতে কল্প নীরাকেও দেখেনি এখন অব্দি।
এখন তো দেখেছিস তোর দ্রিতাকে এখন তোর মেয়েকে দেখ।
কল্প নীরাকে বুকে জড়িয়ে নীরার কপালে চুমু খেয়ে বলে,
_মা রে,তোর মায়ের জন্য ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।
তোর মায়ের কিছু হলে তোর আর আমার কি হতো বল।
তাই টেনশনে তোকে কোলেও নেই নি এত ক্ষণ।
আমার রাজকন্যা আমাকে বুঝবে তাইনা?
আমার রাজকন্যা তো।আমার সোনা মা টা।
তারপর কল্প নীরাকে আমার পাশে শুইয়ে দিয়ে বলে,
_এখন মা মেয়ে দুজন দুজনকে ভালো মত দেখো।
গল্প সল্প করো কিন্তু খবরদার,”ভুলনা আমায়”
ভুলনা কিন্তু আমায়।
ছোট্ট নীরা আজ কত্ত বড় হয়ে গেছে।
আল্লাহ নীরাকে আমার মনের মত করেই সৃষ্টি করে আমার বুকে পাঠিয়েছেন।
সেই কল্পের মত চোখ,
কল্পের মত হাসি।
কল্পের মত রাগ।কল্পের মত জেদ।
আর চঞ্চল।
আমি যেমন টা আল্লাহর কাছে চেয়েছি।
বাবার আদুরী সে।
বাবা ছাড়া কিচ্ছু বুঝেনা।
তার বাবাও তাকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝেনা।
তারের কাছে আমি যেন কই থেকে ভেসে এসে এসেছি।
মনে হয় যেন পাড়া প্রতিবেশী আমি হুহ।
দেখতে দেখতে আমাদের নীরা টা অনেক বড় হয়ে গেছে।
আজ ওর বিয়ে দিতে যাচ্ছি আমরা।
ওর পছন্দের ছেলের সাথেই।
ছেলেটা কয়েক মাস আগেই বড় একটা এক্সিডেন্ট করেছে।
আল্লাহর রহমত অল্পের জন্য বেঁচে গেছে।
একটা হাত মারাত্মক ভাবে ভেঙে গেছে।
প্লাস্টার করা হয়েছিলো।
ডাক্তার বলেছেন সময় লাগবে অনেক ঠিক হতে।
অনেকে বিয়ে টা না করে দিতে বলেছিলো।যেভাবে ভেঙেছে হাত,যদি ঠিক না হয়।
কিন্তু আমার নীরা পিছপা হয়নি।
আজ আল্লাহর রহমতে ইরাজ পুরোপুরি সুস্থ।
প্লাস্টার খোলা হয়েছে।
মাঝে মাঝে ব্যথা করে,ডাক্তার বলেছে সময় লাগবে একটু ব্যথাটা সারতে।
ও কিছুনা।
আমার কল্পের মুখের দাগ গুলোও কিন্তু বিয়ের এক বছরের মাথায়ই মিলিয়ে গিয়েছিলো।
যদিও অল্প দু এক টা দাগ আছে।তবে ওগুলা তেমন বোঝাও যায়না।
তাই কখনো মানুষের খারাপ পরিস্থিতিতে তাকে ছেড়ে দিতে নেই।
পরিস্থিতি সব সময় এক থাকেনা।
আল্লাহ কখন কার সাথে কি করেন বলা যায়না।
কল্প খুব কান্নাকাটি করছে মেয়ের জন্য।
খাওয়া দাওয়া বন্ধ প্রায় তার।
কলিজার টুকরোটাকে কিছু ক্ষণ পর বিদায় দিতে হবে যে।
কিন্তু নিয়ম যে এমনই,মেয়েদের ঘরে রাখা যায়না।
রাখা গেলে বাবা মা সারাজীবনই মেয়েদের নিজের ঘরে রেখে দিতেন।
নীরাকে আজ মাশাআল্লাহ খুব মিষ্টি লাগছে।
এই মাত্র বিয়ে সম্পন্ন হলো আমাদের কলিজার টুকরো টার।
এবার বিদায়ের ক্ষণ।
বুকের ভেতর চাপা একটা কষ্ট অনুভব হচ্ছে,
তবুও বিদায় তো দিতেই হবে।
নীরা এসে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
কল্পও মেয়ের কান্না সহ্য করতে পারছেনা।
ইরাজ কল্পকে শান্তনা দিয়ে বলছে,
বাবা!আপনি কোন চিন্তা করবেন না।
আমি ওর খেয়াল রাখবো।
আপনার মত আগলে রাখতে পারবো কিনা জানিনা।
আমি আমার সাধ্যমত যথেষ্ট চেষ্টা করবো
যাতে ওর চোখে আজকের পর আর কোন দিন পানি না আসে।
আসলেও তা যেন হয় খুশির অশ্রু।
কল্প ইরাজকেও জড়িয়ে ধরে।
আর বলে,
বাবারে,আমার তো আমার মেয়েকে নিয়ে কোন চিন্তা নেই।
কারণ তুমি ওর খেয়াল রাখবে আমি জানি।কিন্তু যে শান্ত মেয়ে আমার।
আমার তো চিন্তা হচ্ছে তোমার জন্য,
নিজের খেয়াল রেখো।
কল্পের কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে সবাই হেসে দেয়।
নীরাও চোখ মুছে হাসতে হাসতে বলে,
বাবা!তুমি না।
তারপর নীরা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
বাবার খেয়াল রেখো মা।
তোমায় আমি অনেক ভালবাসি মা।বাবা আমায় সব বলেছেন,
আমার জন্য তুমি তোমার জীবন বাজি রেখেছো।
আল্লাহ মৃত্যুর পর পরকালে আবার জীবন দিলে তোমার সন্তান করেই যেন আমায় রাখেন।
আমিও নীরাকে জড়িয়ে ধরে বলি,
নিজের খেয়াল রাখিস।
আমিও তোকে অনেক ভালবাসি।
নীরা সবাইকে বিদায় জানিয়ে ইরাজের সাথে চলে যাচ্ছে নতুন জীবন শুরু করতে।
ইরাজ নীরার হাত ধরে ওকে নিয়ে যাচ্ছে।
যাবার সময় নীরা পেছনে তাকিয়ে সজোরে বলে,
বাবা,
মা,
খবরদার!
“ভুলনা আমায়”
(সমাপ্ত)
#প্রিয় পাঠকবৃন্দ!পর্বটি দেরি করে দেয়ায় আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখীত।
অসুস্থতার কারণে আমার হসপিটালে দৌড়াতে হচ্ছে সেই জন্য আমি লিখার সময় পাইনি।
আর কিছু কথা,আপনারা অনেকেই প্রথম দিকের পর্ব গুলো পড়ার পর নেক্সট নেক্সট করলেও শেষ পর্ব পড়ে কোন কিছু মন্তব্য না করেই চলে যান।এটা দুঃখজনক।আবার অনেকেতো প্রথম থেকেই গল্প পড়েন ঠিকই কিন্তু কিন্তু কোন মন্তব্য না করে রিয়েক্ট না দিয়ে চলে যান।
আচ্ছা তাহলে আমরা যারা লিখি তারা বুঝবো কি করে যে গল্প টি আপনারা পড়ছেন?বা ভালো লেগেছে?আমরা লিখার অনুপ্রেরণা কোথায় পাবো?
গল্পটি কেমন লেগেছে জানালে অন্তত লেখক লেখিকারা একটু শান্তি পায়।ভাবে যে এত কষ্ট করে লিখাটা স্বার্থক হলো।
যাইহোক ধন্যবাদ এতদিন সময় নিয়ে আমার লিখা গল্পটি পড়ার জন্য।
আমাকে এত ভালবাসা দেয়ার জন্য।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আল্লাহ হাফেজ।আসসালামু আলাইকুম।

সম্পূর্ণ গল্প পড়তে চান?

Click here to read the full story.

💬 Give Your Review

We value your thoughts. Share your experience with us!

SUBMIT REVIEW