মিষ্টি বউ
-হ্যালো..
-হুম বল(বিরক্ত হয়ে বলাম)
-বাসায় আসবে কখন।।
-সেটা জেনে তোমার লাভ কি?এখন ফোন রাখ বিজি আছি।।।
-আচ্ছা।।
রিমি আর তামিম এর বিয়ে হয়েছে আজ ৪মাস হয়ে গেল পারিবারিক ভাবেই হয়েছে।বিয়েতে তামিম একদম মত ছিল না প্রায় জোর করে তাকে বিয়ে করানো হয়েছে।।তামিম এর সাথে পপি নামের একজনের সাথে রিলেশন ছিল কিন্তু ৫মাস আগে পপি তামিম কে ছেড়ে চলে যায় তাই তামিম তার স্মৃতি ঠিক করে এখনো ভূলতে পারেনি।।কিন্তু মা-বাবার চাপে শেষ পর্যন্ত রিমিকে বিয়ে করতে হয়েছে।রিমি মেয়েটা অনেক সহজ-সরল দেখতেও অনেক মিষ্টি।।প্রতিটা মেয়ে বিয়ের পর স্বামীর কাছ থেকে একটু ভালবাসা খুঁজে,একটু কেয়ারিং আশা করে,একটু সময় করে বেড়াতে একসাথে যাবে এই সব কিন্তু তামিম এর কাছ থেকে এসব কিছুই পায়নি রিমি পেয়েছে শুধু অবহেলা নামক না দেখা একটা অনুভূতি।।বিয়ের প্রথম রাতেই তামিম পরিষ্কার ভাবে বলে দিয়েছে রিমিকে যে আমি তোমাকে কখনো ভালবাসতে পারব না সবার সামনে জাষ্ট তোমার সাথে অভিনয় করব।।।সে দিন রিমি অনেক কেঁদেছিল হয়ত সে এটা আশা করেনি কিন্তু বাস্তবতার কাছে সেটা মেনে নিয়েছে তামিম অভিনয় করলেও রিমি কিন্তু তামিম কে সত্যি ভালবেসে ফেলেছিল।।তাই সব সময় ওর কেয়ারিং করত আর রিমির এই কেয়ারিং তামিম এর কাছে অসহ্য লাগে।।।
.
রাত ১১টা হয়ে গিয়েছে তামিম এখনো ফিরেনি তাই আবার ফোন দিল রিমি..
-হ্যালো আসবে না।।
-না আসব না।।একটা ব্যাপার বল তো আমি তোমাকে এত অবহেলার পরও কেন তুমি আমাকে বার বার ফোন দেও।।
-জানিনা…তবে তোমাকে সত্যি আমি অনেক ভালবাসি।।
-আমি বাসি না।।অকে।।আম্মুকে বল যে আমি আজ আসব না।।।
-আসবে না কেন??
-এত কিছু বলতে পারব না।।
এই কথা বলেই ফোন টা কেটে দিল তামিম।।
.
মা কে বলে রিমি নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে নিশব্দে কাঁদতে লাগল তার এই কান্না টা বালিশ ছাড়া আর কেউই বুঝতে পারে না।।চোখ গুলা লাল হয়ে গিয়েছে খুব জ্বালা করছে রিমির সব কিছুই অসহ্য লাগছে একটা মানুষকে এত ভালবাসার পরও কিভাবে পারে তাকে এত কষ্ট দিতে।।।।
সকাল হয়ে গিয়েছে রিমি উঠে অযু করে নামাজ পরে বাহিরে ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়েছে হাতে কফির মগ নিয়ে।।
চারিদিকের পরিবেশ টাকে অনেক সুন্দর লাগছে অল্প অল্প ঠান্ডা লাগছে চারিদিকে বাতাস বইছে।।সব মিলিয়ে অদ্ভুত সুন্দর একটা পরিবেশ কিন্তু রিমির তেমন ভাল লাগছে না কারণ হয়ত কাউকে এই সময় খুব ফিল করছে সে হল তামিম।।।যে কিনা তাকে নিয়ে ভাবার একটু সময় পায় না কিন্তু রিমি সব সময় তাকে নিয়েই ভাবে।।
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিল রিমি হঠাৎ পিছন থেকে একটা বাক্য আসল..
-আচ্ছা তোমার মগে কি কফি আছে।।
রিমি পিছনে ঘুরতেই দেখে তামিম তার পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে….
-কি হল আছে কি??
রিমি তার মগ টা তামিম এর দিকে বাড়িয়ে দিল।।।তামিম সেটা নিয়ে খেতে শুরু করল।।
.
কিছুটা সময় পর রিমি তামিম কে জিজ্ঞাস করল।…
-তুমি এত সকালে..
-কেন??আমি তো রাতেই এসেছি এবং তোমার সাথেই শুয়েছি।।
-কই আমি তো দেখিনি।।
-সারা রাত কেঁদে চোখ লাল করে দুর্বল হয়ে ঘুমিয়েছিলে আমাকে দেখবে কোথা থেকে।।তোমার আগেই ঘুম থেকে উঠে আমি ছাদে চলে আসলাম আর তোমার জন্য কখন থেকে অপেক্ষা করছিলাম।।
-কেন??
-জানিনা এমনি মনে হয়।।
–রাতে যে না করলে আসবে না।।
-হ্যাঁ বলেছিলাম।।কিন্তু পরে যখন কাউকে অনেক টা মিস করতে লাগলাম তখন আর না থেকে চলে আসলাম।।
-কাকে মিস করছিলেন।।
-আমি তো বিয়া ৪-৫টা করেছিলাম আর আমার বউ ও ৪-৫টা তাই তাদের সবাইকে মিস করছিলাম।।
-ও।।
-আরে তুমি এই রকম কেন??আমি তোমাকেই মিস করছিলাম কি অবাক হচ্ছ।।হবারই কথা কারণ যে মানুষটা তার এত একটা মিষ্টি বউ কে সব সময় অবহেলা করে তার কথা গুলা যন্ত্রণা মনে করে সে তাকে তো মিস করতে পারে না তাই না।।আসলে তুমি তো জানতে পারনি তুমি যখন রাতে গভীর ঘুমে তখন তোমার দিকে একজন চেয়ে থাকত ডিমলাইট এর আলোয় তোমাকে অনেক মায়াবী লাগত সেই সময়।।তুমি আমাকে ফোন করতে তুমি জানো তোমার ফোনের জন্য আমি সারাটা দিন অপেক্ষা করতাম কখন ফোন আসবে।।আসলে আমি দেখতে চেয়েছিলাম একটা মানুষকে অবহেলার পরও সে কি ভালবাসে।।।কিন্তু এটা দেখতে গিয়ে আমি সত্যি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও।।বিশ্বাস কর তোমাকে আর কক্ষনো একটুও কষ্ট দিব না।।।
.
তামিম কথা গুলা বলে যখন রিমির দিকে তাকালো তখন দেখল রিমির চোখ দিয়ে মুক্তার মত টপ টপ করে পানি পরছে তামিম হাত দিয়ে রিমির চোখ মুছে দিয়ে বলল…
-কি ক্ষমা করবে না তো….
-আমি বলেছি নাকি করব না।।
এই কথা বলে রিমি তামিম এর বুকে ঝাপিয়ে পরল..আর যদি কখনো এমন করেছ তাহলে কিন্তু ক্ষমা করব না হুহ।।
.
সুখে থাকুক রিমি আর তামিম।।।
.
লিখা-Ahmed Fahim(Fahim Ahmed Pappu)
.