মেরি জান 8

মেরি জান
মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।
শিয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই অপরপ্রান্ত থেকে কল কেটে দিলো আন্দ্রেজ। বেচারি শিয়ার মোটেও ভালো লাগে না ভাইয়ের এমন আচরণ।
” শিয়া? কী হলো তোমার! “
হঠাৎ বাবার কথায় নড়েচড়ে উঠলো শিয়া। এ সময় তো বাবা কখনো রুমে আসেন না!
” ভাইয়াকে কল দিলাম, কথা শেষ হওয়ার আগেই কেটে দিলো। ভালো লাগে না.. “
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো শিয়া। আন্দ্রেজের বাবাও তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললেন। মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন তিনি।
” মন খারাপ করতে হবে না। তোমার ভাই তো এমনই বলো? “
” হুম বাবা। কিন্তু ভাইয়া অনেক ভালো। “
শিয়া বাবাকে জড়িয়ে ধরে হেসে বললো। ওয়াসিম চৌধুরীও মুচকি হাসলেন মেয়ের কথায়। মেয়েটা একেবারে ভাই পাগল হয়েছে।
” হ্যাঁ। আচ্ছা শোনো, তোমার মা তোমার বিয়ের জন্য তার বান্ধবীর সাথে কথা বলেছেন। আমার মনে হলো তোমাকে বলা দরকার। তোমার কোনো পছন্দ থাকলে আমাকে বলতে পারো। “
বাবার কথায় চমকাল শিয়া। এখুনি বিয়ের কথা হচ্ছে? নিশ্চয়ই মায়ের কোনো স্বার্থ আছে। নইলে উনার বান্ধবীর ছেলের সাথেই কেনো? কিন্তু আহিয়ানের কথা কি এখুনি বাবাকে বলা উচিত? না-কি পড়াশোনার কথা বলে বিয়েটা পিছিয়ে ফেলার চেষ্টা করবে! তবে বাবাকে বলাই যায়। মেয়ের অন্যমনস্ক ভাবসাব দেখে ওয়াসিম চৌধুরী আরেকটু নম্র হয়ে শুধলেন,
” শিয়া?”
” হ্যাঁ বাবা। “
” কোনো সমস্যা? “
” বাবা আসলে আহিয়ান মল্লিক নামে একজনকে পছন্দ করি আমি। মাঝে মধ্যে কথা হয় আমাদের। “
ওয়াসিম চৌধুরী সহাস্যমুখ করে জিজ্ঞেস করলেন,
” আচ্ছা। আহিয়ান কি বেকার? হলেও সমস্যা নেই। আমার কোম্পানির দায়িত্ব তো আমার মেয়ে জামাইকেই সামলাতে হবে। “
শিয়া হেসে বললো,
” নাহ বাবা। ও জব করে, আর্মি অফিসার। “
” আরে বাহ! তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। তোমার মা-ও রাজি না হয়ে পারবে না। “
” কিন্তু বাবা আমি এখনই বিয়ে করতে চাইছি না। তুমি শুধু মা’কে বলো, লেখাপড়া শেষ করি তারপর হবে সব। “
ওয়াসিম চৌধুরী বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। সাথে শিয়াও দাঁড়িয়েছে।
” ঠিক আছে। আমি আসছি এখন। “
” ওকে বাবা। “
বাবা ঘর থেকে চলে যেতেই খুশিতে একা একা নাচতে শুরু করলো শিয়া। খানিকক্ষণ নাচানাচি শেষে আহিয়ানকে জানানোর জন্য কল দিলো।
সকালের নরম রোদ গায়ে মাখতে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আন্দ্রেজ। দু’দিন হলো আন্দ্রেজ ইভানাকে প্রপোজ করেছে। ইভানা এখনো কোনো উত্তর দিলো না। এসব ভেবে বেশ রাগ হচ্ছে আন্দ্রেজের। এই প্রথম কোনো মেয়ে ওর সাথে সম্পর্কে যাওয়ার জন্য ভাবাভাবি করছে। বিষয়টা বেশ ইগোতে লেগেছে আন্দ্রেজের। তার উপর গতকাল অফিসেও আসেনি ইভানা। সব মিলিয়ে একেবারে বিরক্ত। এরমধ্যে রুমে ম্যাক প্রবেশ করলো।
” স্যার আপনার কিছু লাগবে? “
” চুপ করো ম্যাক। চুপ থাকো। বেয়াদব কোথাকার! “
ম্যাক স্যারের কথায় চমকাল। মাথা ঠিক আছে তো?
” জি স্যার। আপনি কি ইভানা ম্যামের সাথে কথা বলতে চান? “
আন্দ্রেজ সিগারেটে সুখটান দিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেললো।
” রাবিশ কথা বলবে না তুমি। “
” স্যার আপনি উত্তেজিত হবেন না প্লিজ। “
” উত্তেজিত হবো না বলছো? গতকাল যে ইভানা অফিসে এলোনা, সে কি আমাকে ইনফর্ম করেছে? “
ম্যাক কিছুটা ভয়ে ভয়ে বলে,
“উনি আসলে গতকাল একটু অসুস্থ ছিলেন। আমাকে রাতে কল দিয়ে বললেন যাতে আপনাকে বলি। আজকে আসবেন অফিসে। তখন আপনাকে বলবে। “
” অসুস্থ? ওকে। সে অফিসে আসলে সবার আগে আমার রুমে পাঠিয়ে দিও। এখন তুমি যাও। “
” জি স্যার। “
ঠিক ঘন্টাখানেক পরে ইভানা আন্দ্রেজের রুমে প্রবেশ করলো। পরনে তার ফর্মাল পোশাক, চুলগুলো লো বান করা। দুজনের চোখাচোখি হতেই কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলো মেয়েটা।
” বসো। “
” জি স্যার। “
” তোমার উত্তর জানালে না এখনো! আমার ধৈর্য বড্ড কম ইভানা। আর পরীক্ষা নিও না। “
ইভানা রেবেকার বলা কথাগুলো ভাবছে।
❝ এভাবে সম্পর্কে যেতে চাইছে মানে জাস্ট রিলেশনশিপে গিয়ে সময় কাটাতে চাইছে। হয়তো এখানে কোনো ভালোবাসার কিচ্ছু নেই। তবুও একবার চেষ্টা করে দেখতে পারো।❞
রেবেকার কথামতো লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে ইভানা উত্তর দেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিচ্ছে। মানুষটার প্রতি একটা অনুভূতি আছে কিন্তু বিপরীত দিকেও তো সমান টান থাকতে হবে!
” আমি রাজি। “
আন্দ্রেজের ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসির রেখা ফুটে উঠলো। ইভানাও মৃদু হেসে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
” গুড গার্ল। তাহলে আজকে ডিনারে দেখা হচ্ছে। আমি গিয়ে তোমাকে বাসা থেকে নিয়ে আসবো। “
” আজকেই? “
কিছুটা থতমত খেয়ে শুধালো ইভানা। সবকিছু কেমন তাড়াতাড়ি এগোচ্ছে বলে মনে হচ্ছে ওর। আন্দ্রেজ হাত বাড়িয়ে ইশারায় হাত দিতে বললো ইভানাকে। কিন্তু ইভানার হাত-পা কাঁপছে। তবুও কাঁপা কাঁপা হাতটা এগিয়ে দিলো আন্দ্রেজের দিকে। আন্দ্রেজের বুঝতে অসুবিধা হলোনা ভয়ে কিংবা জড়তায় মেয়েটার হাত কাঁপছে।
” হ্যাঁ। রাত দশটায় রেডি থেকো। “
” ঠিক আছে। আসলে আমি একটু অসুস্থ ছিলাম তাই গতকাল…. “
” ম্যাক বলেছে সবটা। সমস্যা নেই। “
” ওকে স্যার। “
” সবার আড়ালে স্যার বলে ডাকতে হবে না। তুমি বরং নাম ধরে ডেকো। “
” আচ্ছা। “
” ওকে। এখন তাহলে এসো। “
আন্দ্রেজ ইভানার হাত আলগা করে দিলো। ইভানাও সাথে সাথে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। মাথা নেড়ে দ্রুত পা চালিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেললো কিছুক্ষণ।
পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে আন্দ্রেজ ও ইভানার সব কথাই শুনলো ইলোনা। ইলোনার আত্মা এখন অমরত্ব লাভ করেছে। অবশ্য সবকিছুর পেছনে অন্য কেউ আছে। যে চায় না আন্দ্রেজ কখনো কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ায়। কারণ? কারণ ক্রমশঃ প্রকাশ্য!
” কোন ড্রেসটা পরবো বলো তো রেবেকা? এই হোয়াইট এন্ড ব্লাক কালারের গাউন না-কি শাড়ি? “
রেবেকা ফোনের স্ক্রিন থেকে মনোযোগ সরিয়ে ইভানার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। হেসে বললো,
” তুমি শাড়ি পরবে? তা-ও এখানে! আন্দ্রেজ তোমাকে নিশ্চয়ই শাড়িতে দেখতে চায়নি?”
“উঁহু! উনি তো কিছু বলেননি। “
” তাহলে গাউন পরে যাও। তুমি বরং এটা না, ওটা পরে নাও।”
একটা পার্পল কালারের গাউনের দিকে ইশারা করে বললো রেবেকা।
” ওকে।”
ইভানা রেবেকার কথামতো ওই গাউনটা পরেই রেডি হয়ে নিলো। মেয়েটা কলেজে থাকতে প্রেম করেছিল একবার। কিন্তু ইভানার সাথে আর পাঁচটা মেয়ের মিলে না। প্রতিদিন ডেট করা,স্পেশাল সময় কাটানো এসব বিরক্ত লাগতো ওর। ইভানা চাইত লেখাপড়ার সাথে রিলেশনশিপ ব্যালেন্স করে চলতে। কিন্তু ইভানার প্রেমিক ছিলো ওর লেখাপড়ার বিষয় বড্ড উদাসীন। পর মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে হয়ে লেখাপড়ায় খারাপ করার কোনো সুযোগ ছিলো না ইভানার কাছে। তাই একটা সময়
পর ইভানা নিজেই সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছিল। আজ আবার এতগুলো বছর পর পুনরায় কোনো সম্পর্কে জড়াল সে। এই নিয়ে নানান চিন্তাভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে মস্তিষ্কে।
” ইভানা! তোমার কল এসেছে। “
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে ইভানা। ফোনের রিংটোনের শব্দে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আন্দ্রেজ কল দিয়েছে। তবে দশটা বাজতে তো এখনো বিশ মিনিট বাকি!
” রেবেকা বিশ মিনিট আগে কেন কল দিলো উনি? “
” বুঝতে পারছ না? লোকটা তোমার জন্য অধৈর্য হয়ে গেছে। “
ঠোঁট টিপে হাসতে হাসতে বললো রেবেকা। একটু লজ্জা পেলো ইভানা। কল রিসিভ করে ফোন কানে ধরলো।
” তোমার হয়েছে? আমি কিন্তু তোমার অ্যাপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। “
” এখুনি চলে এসেছেন! “
” হ্যাঁ এলাম তো। “
” ঠিক আছে। অপেক্ষা করুন আমি আসছি। “

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *