মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।
রেবেকা মুচকি হাসলো। ইভানাকে ভীষণ ভালো লাগে ওর। মেয়েটা একেবারে আলাদা। খুব মিশুক স্বভাবের, পাশাপাশি মনখোলা।
সেদিন বিকেলবেলা খুব ভালো করে ঘোরাঘুরি করলো ইভানা ও রেবেকা। টুকটাক কেনাকাটাও করেছে অবশ্য। ম্যাকের সাথে শপিংমলে দেখা হয়েছিল। ছেলেটা ভীষণ ভালো। ইভানার সাথে খুব জমে। তবে ইভানার সাথে দেখা হলে যতোটুকু কথা বলে তার এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে থাকে আন্দ্রেজ স্যারের কথা। এমনিতেই স্যারকে নিয়ে ইভানার মনে সুপ্ত ভালোলাগা রয়েছে, তার মধ্যে সব সময় তার কথা শুনতে শুনতে তাতে আরো ইন্ধন যোগাচ্ছে ম্যাক। তবে এই একমাসে স্যারের বিষয় ভালো করে খোঁজ নিয়েছে ইভানা। মানুষটা একটু অন্য রকম। বেশ অদ্ভুত বলা যেতে পারে।
” উফ! বড্ড টায়ার্ড লাগছে গো। আমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসছি ইভানা। “
বাসায় ফিরে ক্লান্ত বদনে বিছানায় শুয়ে গেছে রেবেকা। ইভানা জিনিসপত্রগুলো ঠিকঠাক মতো জায়গায় রাখছে। আন্দ্রেজের জন্য একটা ধূসর রঙের শার্টও কিনেছে। সেই নিয়ে রেবেকা মজা নিতেও পিছুপা হয়নি অবশ্য।
” ঠিক আছে। যাও তুমি। আমি ততক্ষণে এসবকিছু রেখে দিচ্ছি। “
রেবেকা শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো। চুলগুলো এলোমেলো করে মুচকি হেসে ইভানাকে চোখ টিপ্পনী কেটে বললো,
” আন্দ্রেজকে প্রপোজ করবে কবে? “
রেবেকার এহেন প্রশ্নে চমকাল, থমকাল ইভানা। প্রপোজ? কিন্তু কীভাবে!
” এসব কিছু না রেবেকা। “
” হ্যাঁ বুঝি তো সবই। দেরি না করে মনের কথা জানিয়ে দাও তাকে। বুঝলে? আমি এলাম। থাকো, ফ্রেশ হয়ে এসে রাতের জন্য রান্না করবো। “
” ওকে রেবেকা। “
রেবেকা চলে যেতেই মুচকি হাসলো ইভানা। আন্দ্রেজের মুখাবয়বটা ওর চেখের সামনে ভাসছে। তার হাসি, কথা বলার ধরণ সবকিছুই কতো মিষ্টি লাগে! নিজের ভাবনায় নিজেই লজ্জা পেলো ইভানা। মাথায় হালকা চাটি দিয়ে নিজের কাজেই মনোযোগ দিলো সে।
শীত শেষে ওয়ারশায় এখন বসন্তকালের আগমন ঘটেছে। ওয়ারশার বসন্ত সুদূরপ্রসারী ও মনোমুগ্ধকর। শহরের পার্ক ও সবুজ এলাকাগুলো ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে এখন। চারপাশে কতো রকমের রঙিন ফুল ও পাতা দেখা যাচ্ছে । বিভিন্ন রকমের ফুলগুলি খুব সুন্দর এবং সুগন্ধি ছড়াচ্ছে এখন। পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশায় বসন্তে তাপমাত্রা মাঝারি হয়ে ওঠে, যেটি বাইরে ঘোরার জন্য বেশ উপযুক্ত। তাছাড়া বসন্তে শহরের আবহাওয়া পরিষ্কার ও তাজা থাকে, যা শহরবাসীদের জন্য আনন্দদায়ক। ওয়ারশার রাস্তার আশেপাশে যে গাছগুলো দেখা যায়, যেমন- পপলার, , ম্যাপল, এবং সিলভার বার্চ গাছ। বসন্তের আগমনে এসব গাছে নতুন পাতা ও ফুল ধরেছে। যা শহরের সৌন্দর্যকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়াও এই সময় শহরের পার্ক ও বাগানগুলোতে নানা রঙের ফুলও পাওয়া যায়।
” ম্যাক আজকের মিটিং কিন্তু খুব দরকারি। ইভানাকে বলে দাও ও যেনো ভালো করে প্রেজেন্টেশন করতে পারে। “
নিজের রুমে বসে চেয়ার টেনে বসে বললো আন্দ্রেজ। কোম্পানির অনেক বড়ো একটা ডিল ফাইনাল হবে আজ। সেই নিয়ে ম্যাকের সাথে আলোচনা করছে। ম্যাক বরাবরের মতো সবগুলো দাঁত বের করে হাসলো।
” আমি অলরেডি ইভানাকে বলে দিয়েছি। “
” গুড। “
আন্দ্রেজের হঠাৎ করে মনে হলো ইভানা নামের মেয়েটা ওকে ফলো করে। হাবেভাবে মনে হয় হয়তো পছন্দও করে। তাছাড়া মাসখানেক আগে একটা শার্ট গিফট করলো! যদি আন্দ্রেজ কিছুতেই সেটা গ্রহণ করতে চায়নি কিন্তু পরে ম্যাকের কথায় শার্টটা নিয়েছিল। পরে অবশ্য সেটা ম্যাককে দিয়ে দিয়েছে আন্দ্রেজ। কিন্তু বাংলাদেশি মেয়ের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই ওর। সেজন্য বুঝেও ইগনোর করছে ইভানাকে।
” মে আই কাম ইন, স্যার? “
ম্যাক ও আন্দ্রেজের কথোপকথনের মধ্যেই ইভানা এসে উপস্থিত হলো সেখানে।
” হ্যাঁ এসো। বসো । “
” থ্যাংক ইউ স্যার। আপনার শরীর কেমন আছে? “
ইভানার এমন প্রশ্ন আজ নতুন নয়। কিছুদিন যাবৎ সবকিছুর খোঁজ রাখে সে। ম্যাক মিটিমিটি হাসছে ইভানার দিকে তাকিয়ে। আন্দ্রেজ বিষয়টা বুঝতে পেরে উচ্চস্বরে বললো,
” তোমার কি কোনো কাজ নেই ম্যাক? এভাবে মিটিমিটি না হেসে বাকি কাজগুলো দেখো। “
” জি স্যার। ইয়েস স্যার! না মানে যাচ্ছি। ইভানা ম্যাম, বেস্ট অভ লাক। “
ম্যাক আর একমুহূর্ত কালবিলম্ব না করে স্থান ত্যাগ করলো। ইভানা ওর শেষের কথাটা নিয়ে কিছুটা ভাবুক হয়ে গেছে। আন্দ্রেজ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ইভানাকে। হাসিখুশি, চঞ্চল স্বভাবের একটা মেয়ে! আচ্ছা একে অফার করলে কেমন হয়? বাসায় নিয়ে যাবেই না আর মামাও জানতে পারবে না, ঝামেলা শেষ।
” স্যার! “
ইভানার ডাকে হুঁশ ফিরলো আন্দ্রেজের। নড়েচড়ে উঠলো সে। ভ্রু উঁচিয়ে শুধালো,
” ডু ইউ লাইক মি?”
স্যারের থেকে হঠাৎ এরকম প্রশ্ন মোটেও আশা করেনি ইভানা। কেমন লাগছে ওর। অতিরিক্ত উত্তেজনায় শরীর যেনো থরথর করে কাঁপছে, গলা কেমন শুকিয়ে আসছে। কথা বলতে চেয়েও বলতে পারছে না, বুক ধুকপুক করছে। আন্দ্রেজ মুচকি হাসলো। ইভানা যেনো নিজের ভেতর থেকে হারিয়ে গেলো তাতে। একটা মানুষের হাসিতে এভাবে খু ন হওয়া যায়!
” উত্তর দিবে না? “
আন্দ্রেজ ইভানার অবস্থা বুঝতে পেরে ফের শুধালো। ইভানা এবার নিজেকে সর্বোচ্চ সামলানোর চেষ্টা করছে। কিয়ৎক্ষণ চুপ থাকার পর কন্ঠ খাদে নামিয়ে উত্তর দিলো সে।
” না মানে আসলে, হ্যাঁ। “
আন্দ্রেজের ঠোঁটের কোণের হাসির রেখাটা আরেকটু প্রসারিত হলো। ঠিক যেনো শিকার হাতের নাগালে আসার মতো আনন্দ অনুভব হচ্ছে ওর। আন্দ্রেজ ল্যাপটপে একটা বাটন প্রেস করতেই ওর রুমের দেয়ালটা অস্বচ্ছ কাঁচে রূপান্তরিত হলো। ইভানা একটু ঘাবড়ে গেছে তাতে। কী বলবে যার জন্য কেউ দেখলে সমস্যা হবে? ইভানার সমস্ত ভাবনার ছেদ ঘটল আন্দ্রেজের হাতের স্পর্শ পেয়ে। নিজের হাতের মধ্যে ইভানার কোমল, ছোটো হাতদুটো নিয়ে নাড়াচাড়া করছে আন্দ্রেজ। ইভানা কিছুটা ভয়ে পেলো, সাথে অজানা শিহরণ বয়ে গেলো মনেপ্রাণে।
” আজ থেকে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড। তবে বিষয়টা প্রকাশ করা যাবে না। “
প্রথম কথাটা শুনে খুশি হলেও পরবর্তী কথাটা শুনে কেমন অদ্ভুত লাগছে।
” আমার একটু সময় লাগবে স্যার। “
ভ্রু কুঁচকে ফেললো আন্দ্রেজ। সময় লাগবে? কিন্তু এতো ধৈর্য তো আন্দ্রেজ ওয়ারসকির নেই। তবুও চুপ করে রইলো ও।
” ওকে। টেইক ইউর টাইম। এখন যাও, মিটিং এর জন্য লাস্ট প্রিপ্রারেশন নাও। “
” ওকে স্যার। “
ইভানা কোনোরকমে কথাটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। দরজার বাইরে গিয়েই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো মেয়েটা। ম্যাক নিজের ডেস্কে বসে এতক্ষণ ইভানার জন্যই অপেক্ষা করছিল। ওকে রুমের বাইরে বেরুতে দেখেই নিজ থেকে এগিয়ে এলো ম্যাক।
” হেই ইভানা! কী ব্যাপার বলো তো? গাল কেমন লজ্জায় লাল লাল দেখাচ্ছে হু? “
ইভানা থতমত খেয়ে গেল ম্যাকের কথায়। কোনোরকমে মাথা নিচু করে, ” কিছু না ” বলেই সেখান থেকে চলে গেল। ম্যাক মাথা চুলকে স্যারের রুমের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। কারো সাথে ফোনে কথা বলছে সে। হঠাৎ মনে হলো ইভানা হয়তো সামনে কষ্ট পাবে। কারণ ম্যাক তো খুব ভালো করেই আন্দ্রেজকে জানে। একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ায় শুধু সময় উপভোগ করার জন্য। মানসিক কোনো বন্ডিং থাকে না সেই সম্পর্কে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের ডেস্কে গিয়ে বসলো ম্যাক। স্যার মানুষটা মোটামুটি ভালো শুধু চরিত্রটা খুবই জঘন্য।
” তুমি কবে আসবে ভাইয়া? আমরা তোমাকে কতটা মিস করি তুমি জানে! “
বিছানায় বালিশ কোলে নিয়ে বসে ঠোঁট উল্টে কথাগুলো বললো শিয়া। কথায় তার অভিমান স্পষ্ট! আন্দ্রেজ মুচকি হাসলো।
” তোমার বিয়েতে আসবো একেবারে। আগে লেখাপড়া শেষ করো তারপর একটা ভালো ছেলে দেখে তোমার বিয়ে দিতে বলবো মিসেস এ্যানিকে। “
আন্দ্রেজ কখনো তার সৎ মাকে মা বলে সম্মোধন করে না। বরাবর নাম ধরেই সম্মোধন করে। অবশ্য পোল্যান্ডে থাকায় সবাইকে প্রায় নাম ধরে সম্মোধন করতে হয়। অফিশিয়াল কাজে পার্টনার বয়সে বড়ো হলেও নাম ধরে সম্মোধন করে।
” ভাইয়া! প্লিজ এসো না একবার। “
” শিয়া লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। আমি তোমাকে রাতে কল ব্যাক করবো। “
” ভাইয়া শোনো তো……”
শিয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই অপরপ্রান্ত থেকে কল কেটে দিলো আন্দ্রেজ। বেচারি শিয়ার মোটেও ভালো লাগে না ভাইয়ের এমন আচরণ।
চলবে,
ভ্যাম্পায়ার ও মানুষের মিলনে যে বাচ্চা ভূমিষ্ট হয় তাকে সাধারণত ড্যাম্পায়ার বলা হয়। এরা ভ্যাম্পায়ারের থেকে নিম্নমানের হয়৷ তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। পাশাপাশি ভ্যাম্পায়ারের মতো রক্ত পান করতে হয় না, রোদেও কোনো সমস্যা হয় না।