গল্পঃ ভালোবাসার রঙ

গল্পঃ ভালোবাসার রঙ

ভালোবাসার রঙ,

অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় হঠাৎ খেয়াল করি আমাদের অফিসের একজন স্টাফ খালিদ হাতে একটা গোলাপ নিয়ে রাস্তায় পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমি গাড়ির কাঁচটা নিচে নামিয়ে বললাম,
— আরে খালিদ, এইখানে কি করছো?
খালিদ গোলাপটা পিছন দিকে আড়াল করে বললো,
-বাসায় যাবো স্যার, তাই রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি
আমি বললাম,
–তোমার বাসা কোথায়?
খালিদ মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,
– উত্তরাতে স্যার
আমি অবাক হয়ে বললাম,
— আরে আমার বাসাও তো উত্তরাতে। আসো তোমার বাসায় নামিয়ে দিবো নে
খালিদ আমার কথা মত গাড়িতে উঠলো। ফুলটা যখন আমার চোখের সামনে থেকে আড়াল করতে চাইছিলো আমি তখন বললাম,
— ফুল কার জন্য?
খালিদ লাজুক হাসি হেসে বললো,
আমার স্ত্রী অর্পিতার জন্য?
— আজ কোন স্পেশাল দিন নাকি?
— জ্বি স্যার, আজকের দিনে আমি অর্পিতার প্রেমে পড়েছিলাম…
পরদিন অফিস থেকে যখন বাসায় ফিরবো তখন খালিদকে ডেকে বললাম, চলো একসাথে যাই।
গাড়ি দিয়ে যাবার সময় হঠাৎ খালিদ আমায় বললো,
-স্যার, সামনে ফুলের দোকানটাতে এক মিনিটের জন্য গাড়িটা একটু দাঁড় করাবেন?
আমি গাড়িটা দাঁড় করাতেই খালিদ তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে ফুলের দোকানটাতে ঢুকলো আর কিছুক্ষণ পর একটা লাল গোলাপ নিয়ে আসলো। আমি বললাম,
— আজকেও স্পেশাল দিন নাকি?
খালিদ আগের মতই লাজুক হাসি হেসে বললো,
-জ্বি স্যার, আজকের দিনে আমি অর্পিতাকে দেখে প্রেমে পড়েছিলাম।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
— তুমি না কালকে বলেছো কালকের দিনে তুমি তোমার স্ত্রীকে দেখে প্রেমে পড়েছিলে? আবার আজকে একই কথা বলছো?
খালিদ মাথা নিচু করে বললো,

-স্যার, আমি যতবার আমার স্ত্রীকে দেখি ততবার আমি প্রথম থেকে ওর প্রেমে পরি। তাই আমার কাছে প্রতিটা দিন স্পেশাল
ভালবাসার এমন সস্তা লজিক শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। নিজের রাগটা কোন রকম কন্ট্রোল করে খালিদকে বললাম,
— নতুন নতুন বিয়ে করেছো হয়তো তাই তোমার কাছে প্রতিটা দিন স্পেশাল মনে হচ্ছে। আমার মত দুই বছর সংসার করো তখন দেখবে সংসারটাকে জাহান্নাম মনে হবে
খালিদ আর কিছু বললো না। আমি রেগে গেছি হয়তো সেটা বুঝতে পেরেছে। শুধু গাড়ি থেকে নামার সময় বললো,
– স্যার, আমি বিয়ে করেছি ৫ বছর ৯ মাস হতে চললো। বিশ্বাস করেন আমাদের ভালোবাসাটা এখনো প্রথম দিনের মতই আছে…
|
|
বাসায় ঢুকার পর দেখি শ্রাবণী টিভি দেখছে। আমার আসার শব্দ শুনে শ্রাবণী কাজের মেয়ে শেফালিকে বললো,
– শেফালি তোর স্যার এসেছে। টেবিলে খাবার দে
খাওয়া দাওয়ার পর বিছানায় যখন শুয়ে আছি তখন শ্রাবণী এসে বললো,
– কাল আমার ৫০ হাজার টাকা লাগবে। একটা নেকলেস পছন্দ হয়েছে কাল সেটা কিনবো।
আমি রেগে গিয়ে বললাম,
— তোমার দুইদিন পরপর এত গহনা লাগে কেন? টাকা তো নিজে ইনকাম করো না তাই টাকার মূল্য বুঝো না।
আমার কথা শুনে শ্রাবণী রেগে গিয়ে বললো,
– নিজের বউয়ের শখ আহ্লাদ পূরণ করতে পারো না কেমন পুরুষ তুমি?
আমি ওর কথার কোনো উত্তর দিলাম না।
শ্রাবণী বালিশ নিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো আর আমি শুয়ে শুয়ে খালিদের কথা ভাবতে লাগলাম, হাদারাম বলে কি না স্ত্রীকে যখনি দেখে তখনি প্রেমে পরে। আরে আমারতো স্ত্রীর চেহারাটা দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায় প্রেমে পরবো দূরের কথা…

——
অফিসে আসার পর খালিদকে আমার রুমে ডেকে এনে বললাম,
–তুমি খুব ভাগ্যবান পুরুষ। আমি আমার স্ত্রীর পিছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করেও ভালোবাসার রঙ ধরে রাখতে পারি নি আর তুমি মাত্র ১৫টাকা দামের গোলাপ দিয়ে এত বছর ধরে ভালোবাসার রঙ ঠিক রেখেছো

খালিদ মুচকি হেসে বললো,
– স্যার, ভালবাসার রঙ কখনোই বদলায় না শুধু বদলে যায় আমরা আর আমাদের পাশে থাকা মানুষটি
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
— আমি বদলায় নি কিন্তু আমার স্ত্রী বদলে গেছে
খালিদ তখন বললো,
– বদলে যাওয়ার জন্য হয়তো আপনি নিজেই দায়ী
— মানে?
খালিদ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
– স্যার, স্ত্রী হলো মাটির মত আর ভালোবাসা হলো পানি। আপনি দুইটা একসাথে মিশিয়ে আপনার ইচ্ছে মত আকৃতি দিতে পারবেন। আপনার স্ত্রী কখনোই আপনার কাছে লাখ টাকা দামের জিনিস চাইবে না যদি আপনি মাঝে মধ্যে স্ত্রীকে নিয়ে রাস্তার পাশে ৩০টাকার ফুচকা খান। আপনার স্ত্রী কখনোই আপনাকে বলবে না আমার দামী গাড়ি কিনে দাও যদি আপনি মাঝে মধ্যে স্ত্রীকে নিয়ে হুট খোলা রিকশায় এই শহরটা একটু ঘুরে বেড়ান। পুরো সংসারের কাজ কারার পরেও আপনার স্ত্রীর বলবে না কষ্ট হচ্ছে যদি আপনি আপনার স্ত্রীর কপালে ভালোবেসে একটা চুমু খান।
একজন স্ত্রীর চাহিদা তখনি বেড়ে যায় যখন স্বামীর সাথে তার দূরত্ব বেড়ে যায়। তখন সে গহনা, শাড়ি, দামী জিনিস এইসবের মাঝে নিজের ভালোলাগা খুঁজে বেড়ায়।
আমার চুপ করা দেখে খালিদ উঠে দাঁড়ালো। দরজার কাছে গিয়ে আবার আমার কাছে ফিরে এসে বললো,
-স্যার, ভালোবাসা শুধু দামী জিনিসের মধ্যে লুকিয়ে থাকে না। মাঝে মধ্যে ভালোবাসা ১৫ টাকা দামের গোলাপ আর রাস্তার পাশে বিক্রি হওয়া ২৫ টাকা দামের কাঁচের চুরির মধ্যেও লুকিয়ে থাকে। একটাবার ভাবীকে বলে দেখেন ভালোবাসি দেখবেন আপনার চেয়েও হাজার গুণ ভালোবাসা ভাবী আপনাকে ফিরিয়ে দিবে

বাসায় এসে দেখি শ্রাবণী ওর কিনে নতুন গহনা পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে শেফালিকে বললো,
– টেবিলে খাবার দে
পিছনে লুকিয়ে রাখা গোলাপটা বের করে শ্রাবণীকে দিয়ে বললাম,
— তোমায় খুব ভালোবাসি আমি
শ্রাবণী অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– তোমার ঐ হাতে কি?

আমি বললাম,
— তেমন কিছু না। এক ডজন কাঁচের চুড়ি এনেছিলাম তোমার জন্য। ভেবেছিলাম নিজ হাতে তোমায় পরিয়ে দিবো কিন্তু তোমার এই এত দামী সোনার গহনার সাথে এই কাঁচের চুড়ি মানাবে না।
আমার কথা শুনে শ্রাবণী গহনা খুলে ফেলে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
— কাঁচের চুড়িগুলো পরিয়ে দাও বলছি…
একটা ১৫টাকা দামের গোলাপ আর ১ ডজন কাঁচের চুড়ির মাঝে কি আছে আমার জানা নেই। আমি শুধু অবাক হয়ে শ্রাবণীকে দেখছি। হুট করেই দুই বছরের চেনা মানুষটা অচেনা হয়ে গেছে। আজ সে নিজ হাতে আমার পছন্দের খাবার রান্না করছে অথচ কা’দিন আগেও আমার খাবারটা কাজের মেয়ে বেড়ে দিতো।

carnation plus

গল্পঃ ভালোবাসার রঙ
©

সংগ্রহ:- https://www.facebook.com/muhammad.tamim2

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *