মেরি জান 2

মেরি জান

মেরি জান

( কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
পর্ব_২
” আন্দ্রেজ কী করছো তুমি? “
ইলোনার হাতের বাঁধন খুলে, মুখের স্কচটেপ খুলে দিতেই প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়ে গেছে। তবে আন্দ্রেজ কোনো উত্তর দিচ্ছে না। গাড়ি থেকে নেমে আবারো ইলোনাকে কাঁধে তুলে নিয়ে বাড়ির গেট পেরিয়ে ভেতরের দিকে এগোচ্ছে সে। ভিসলা নদীর উপকন্ঠে আন্দ্রেজের এই বাড়িটা। ভিসলা পোল্যান্ডের প্রধান নদী। তবে আন্দ্রেজ সব সময় এখানে থাকে না, কখনোসখনো রাতে আসে। বাড়ির দুইপাশে জঙ্গল, একপাশে নদী। শহর থেকে একেবারে আলাদা জায়গাটা। আন্দ্রেজ ইলোনাকে নিয়ে সোজা বিশালকার বসার ঘর পেরিয়ে নিজের শয়নকক্ষে প্রবেশ করে মেঝেতে ফেলে দিয়েছে। ইলোনা ব্যথায় মৃদু শব্দ করে উঠতেই আন্দ্রেজ ক্ষিপ্র গতিতে ওর টুঁটি চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
” আমার সাথে রিলেশনশিপ রাখা সম্ভব হচ্ছে না কিন্তু বন্ধুদের সাথে ডেট করতে তো কোনো সমস্যা নেই? আমি ছুঁয়ে দিলে খুব লাগে তাদের ছোঁয়ায় সুখ লাগে? “
ইলোনা ব্যথায় মোচড়াচ্ছে। আন্দ্রেজের চোখমুখ কেমন বদলে গেছে। নীলচে চোখের মনিগুলো কেমন রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। ইলোনা ওর এই হিংস্রতার সাথে পরিচিত। গত সপ্তাহে ঠিক এসব কারণেই ইলোনা আন্দ্রেজের সাথে সম্পর্ক শেষ করেছিল। তারপরও আজ এসব সহ্য করতে হচ্ছে ওকে।
” প্লিজ আন্দ্রেজ! কুল ডাউন। তোমার মাথা ঠিক নেই এখন। আমরা পরে কথা বলবো? প্লিজ!”
আন্দ্রেজ ইলোনাকে মেঝেতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। তারপর নিজের শরীরের পোশাক খুলে অন্য দিকে ছুড়ে ফেললো। ইলোনা বসা অবস্থায়ই একটু একটু করে পিছিয়ে যাচ্ছে। নগ্ন শরীরে ইলোনার দিকে এগোচ্ছে আন্দ্রেজ। ইলোনা ভয়ে বারবার আকুতিভরা কণ্ঠে বলছে,
” আন্দ্রেজ, না! প্লিজ এই অবস্থায় আমার কাছে এসো না। আই ওন্ট বি এবল টু হ্যান্ডল ইট! আন্দ্রেজ, নো। “
” তোমাকে পারতেই হবে। যা আমার তা কেবলই আমার। বুঝেছ? “
ইলোনা আরকিছু বলার আগেই হিংস্র আন্দ্রেজ নিজের ওষ্ঠ দ্বারা ওর ঠোঁট বন্ধ করে ফেললো। কোমল ঠোঁটে অতিরিক্ত চাপ অনুভব করায় ব্যথায় ছটফট করছে মেয়েটা। আন্দ্রেজের তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। ইলোনাকে শাস্তি দেওয়াই ওর একমাত্র উদ্দেশ্য এখন। আন্দ্রেজের পাগলামি সহ্য করা ইলোনার জন্য কখনো সম্ভব হয় না। বিশেষ মুহুর্তে লাগামছাড়া হয়ে যায় লোকটা।
অফিসের মিটিং শেষে গাড়িতে বসে কেবল ফোন হাতে নিয়েছে ওয়ারেক মিকলোজ। ইলোনার টেক্সট দেখে মুহুর্তেই অস্থির হয়ে উঠলো সে। আন্দ্রেজের বেপরোয়া মনোভাব প্রথম থেকেই অপছন্দ ওয়ারেকের। তবুও বোনের জন্য সব সময় চুপ করে থাকতো। তাছাড়া ব্যাবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলেও আন্দ্রেজের সাথে মিলেমিশে চলতে হয় ওয়ারিককে।
” স্ক্রেআচ্ ভ্ প্রাভো।”
পোলিশ ভাষায় ড্রাইভারকে গাড়ি ঘোরাতে বললো ওয়ারিক। ড্রাইভার ওয়ারিকের কথামতো উল্টোদিকে গাড়ি ঘোরালো।
সারা কক্ষে এলোমেলো হয়ে আছে সবকিছু। ইলোনা জ্ঞান হারিয়েছে। অর্ধনগ্ন শরীরে বিছানায় অবচেতন হয়ে পড়ে আছে মেয়েটা। আন্দ্রেজ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দূর আকাশে দৃষ্টি রেখে কিছুক্ষণ পরপর হাতে থাকা বিয়ারের বোতলে চুমুক দিচ্ছে। ঠোঁটের কোণে তার তৃপ্তির হাসি। আজকে পূর্ণিমা। আবহাওয়াটা বেশ সুন্দর। মৃদুমন্দ বাতাসে আন্দ্রেজের ঘাড় সমান বাদামী রঙের চুলগুলো হালকা হালকা নড়ছে। হঠাৎ ফোনের রিংটোনে একটু ভাবান্তর হলো আন্দ্রেজের। বিছানার একপাশে রাখা ফোনটা হাতে নিয়ে আবারো জানালার পাশে এসে দাঁড়াল সে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কল এসেছে।
” হোয়ার আর ইউ আন্দ্রেজ! ঠিক আছো তো? নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যেও না প্লিজ! “
মামার উদগ্রীব হওয়া নিয়ে বেশ ভালোই লাগে আন্দ্রেজের। অন্তত এই একটা মানুষ তো পৃথিবীতে ওর কথা ভাবে!
” আমি ঠিক আছি মামা। নো টেনশন। “
” ওকে। বাট ওয়েন উইল ইউ কাম ব্যাক ? “
” সকালে ফিরবো। “
” হু, তবে তোমার সাথে থাকতে থাকতে আমিও বাঙালি হয়ে যাচ্ছি। “
আন্দ্রেজ মৃদু হাসলো। বাঙালি! শব্দটা খুব হাস্যকর লাগে ওর কাছে। মাত্র দশ বছর বয়সে বাবাকে ছেড়ে এতদূরে পোল্যান্ডে চলে এসেছিল সে। অথচ তার সেই বাঙালি বাবা একবারও বাঁধা দেয়নি। অবশ্য দিবেনই বা কেনো? নতুন সংসারে ঝামেলা রাখতে চাননি তিনি। আন্দ্রেজের নীরবতায় ইয়ান ফের বললেন,
” ওকে ঘুমাও তাহলে। আগামীকাল দেখা হবে। আর হ্যাঁ অবশ্যই মাথা ঠান্ডা রেখো। “
” ওকে মামা। বাই। “
ফোনে কথা বলা শেষ হতেই পেছন ফিরে তাকিয়ে ইলোনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো আন্দ্রেজ। হাতে ওর একটা ফুলদানি। সম্ভবত আন্দ্রেজকে আঘাত করার জন্যই হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল হবে, কষ্ট করে দাঁড়িয়ে আছে। শরীর দূর্বল খুব। আন্দ্রেজ হেসে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই সজোরে মাথায় আঘাত করে বসলো ইলোনা। কিন্তু পরক্ষনেই চমকাল মেয়েটা। এতো জোরে আঘাত করার পরেও কিচ্ছু হয়নি আন্দ্রেজের। উল্টো ইলোনাকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলো আন্দ্রেজ।
” চেষ্টা ভালো ছিলো ইলোনা। পরবর্তীতে আমাকে অবহেলা করার পরিণাম এরথেকে খারাপ হবে। “
ইলোনার গলায় নিজের ঠোঁটের রাজত্ব চালাতে চালাতে বললো আন্দ্রেজ। ইলোনার ঠোঁটের কোণ থেকে চুইয়ে রক্ত পড়ছে। ব্যথায় সমস্ত শরীর বিষের মতো হয়ে গেছে।
” আন্দ্রেজ আমাকে মেরে ফেললেও আমি তোমার সাথে থাকতে পারবোনা। তুমি স্বাভাবিক নও। তোমার মানসিক সমস্যা আছে। তাছাড়া তোমার এই ফিজিক্যাল ডিমান্ড কোনো মেয়ের পক্ষেই মেটানো সম্ভব না। এরচেয়ে আমাকে মেরে ফেলো তুমি। আমি মুক্তি চাই! প্লিজ! “
ইলোনার চোখের পানি আন্দ্রেজের মুখাবয়ব স্পর্শ করতেই ঘোর কাটলো যেনো ওর। শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো আন্দ্রেজ। ইলোনাও খুব কষ্টে উঠে বসলো। বিছানার একপাশে পড়ে আছে ওর ছেঁড়া ফাটা গাউনটা। পোশাকটা পর্যন্ত ধৈর্য সহকারে খুলতে পারে না লোকটা! ইলোনা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছেড়া গাউনই পরে নিলো। আন্দ্রেজ পাশের কক্ষ থেকে একটা লং জ্যাকেট এনে ইলোনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
” এটা পরে নাও। তারপর বাসায় চলে যাও। তুমি এখানে থাকলে হয়তো আমি আবারো নিয়ন্ত্রণ হারাবো। “
ইলোনা ওর থেকে জ্যাকেটটা নিয়ে দ্রুত গায়ে জড়িয়ে নিলো। শরীরের সমস্ত কষ্ট ভুলে টলমল পায়ে উঠে দাঁড়ালো মেয়েটা।
” আমি যাচ্ছি। প্লিজ গাড়ির চাবিটা দাও। “
আন্দ্রেজ কথা বাড়ালো না। গাড়ির চাবিটা ইলোনার হাতে তুলে দিয়ে অন্য কক্ষে চলে গেলো। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ইলোনা। এই মাঝরাতে একা একটা অসুস্থ মেয়ে কীভাবে বাসায় যাবে একবারও ভাবলো না আন্দ্রেজ! অবশ্য এসব তো আন্দ্রেজের ধাঁচে নেই। কেবল জেদের বসে ইলোনাকে নিজের করে রাখার প্রচেষ্টা। নিজের কোনো জিনিস অন্য কারো সাথে মোটেই সহ্য করতে পারে না সে। ইলোনা চোখের কোণে জমা থামা জলটুকু হাত দিয়ে মুছে ফেললো। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে ভাইকে আরেকটা টেক্সট করলো, সাথে লোকেশনও শেয়ার করে দিলো। এই শরীর নিয়ে বাসা পর্যন্ত ড্রাইভ করা সম্ভব না-ও হতে পারে ভেবেই অগ্রীম সতর্কতা স্বরূপ কাজটা করেছে ইলোনা।
ভোরের আলো ফুটতেই ওয়ারিশ শহরের ❝উল. উইশোগ্রডস্কা❞ রাস্তায় ভয়ংকর দূর্ঘটনার কবলে পড়া ওপেল ব্যান্ডের ব্লাক কালারের গাড়ি নিয়ে লোক মুখে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। তুষারে ঢাকা শহরের হঠাৎ এমন দূর্ঘটনা সবাইকে বেশ নাড়িয়ে দিয়েছে। আশেপাশের লোকজনসহ প্রশাসনের লোকজনও অবাক হয়েছে দূর্ঘটনার ধরণ দেখে। গাড়িটা একেবারে ভেঙেচুরে এক জায়গায় একত্রিত হয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে কেউ হাতের তালুতে নিয়ে বুঝি দুমড়েমুচড়ে ফেলেছে! উদ্ধারকারী দল এরমধ্যেই ঘটনা স্থলে এসে পৌঁছে গেছে। রাস্তার অন্য পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটা সাদা রঙের চার চাকার স্কোডা গাড়ি। বাকরূদ্ধ হয়ে গাড়ির সামনে রাস্তায় বসে আছে ওয়ারিক। বোনের এরকম মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সে। ইলোনাই ছিলো এই গাড়িতে। গতকাল রাতে যখন ইলোনা লোকেশন শেয়ার করে ওয়ারিক ঠিক তখনই পুরো স্পিডে গাড়ি চালাতে বলে ড্রাইভারকে। এক পর্যায়ে ড্রাইভারের উপর বিরক্ত হয়ে মাঝপথে ড্রাইভারকে নামিয়ে দিয়ে নিজেই গাড়ি চালাতে শুরু করে ওয়ারিক। কিন্তু এতকিছু করেও শেষ রক্ষা হয়নি। যখন ওয়ারিকের গাড়ি ইলোনার গাড়ির কাছাকাছি পৌঁছাল ঠিক তখুনি ইলোনার মরণ-চিৎকার ভেসে এসেছিল ওয়ারিকের কর্ণকুহরে। ঠিক দুই মিনিটের মাথায় আন্দ্রেজের গাড়ি দেখেই চিনে ফেলে ওয়ারিক। রাস্তার ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল ইলোনার গাড়ি। ওয়ারিক গাড়ি থেকে নেমে ইলোনার কাছাকাছি যাবে এমন সময় হঠাৎ করে গাড়িটা যেনো দুমড়েমুচড়ে যেতে লাগলো। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না ওয়ারিক। মনে হচ্ছিল সবকিছু ভ্রম অথবা দুঃস্বপ্ন। কিন্তু কয়েক মুহুর্ত অতিবাহিত হতেই বুঝতে পারে সত্যি সত্যি ঘটেছে সবকিছু। তার একমাত্র বোন গাড়ির ভেতরে বসেই মারা গেলো একটু আগে!
চলবে,

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *