(মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
“আজকের রাতটা আমার সাথে থাকো, টাকাপয়সা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। তিনগুণ বেশি দিবো। রাজি?”
” শিওর! “
” ওকে। তাহলে চলো। “
মেয়েটি মুচকি হাসলো। আন্দ্রেজ মুচকি হেসে মেয়েটিকে কোলে তুলে নিলো। বখাটে ছেলেগুলো নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বললেও আন্দ্রেজকে আর কিছু বললো না। জলে থেকে তো আর কুমিরের সাথে লড়াই করা সাজে না।
মাঝরাতে হঠাৎ দরজায় কলিংবেল কে বাজাচ্ছে? এসব ভাবতে ভাবতে দোতলা থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছেন ইয়ান ওয়ারসকি। বেচারা আন্দ্রেজ যেভাবে বাড়ির বাইরে গিয়েছিল, মেয়েটাকে সাথে নিয়ে তো সেভাবে আসতে পারবে না। সেজন্যই এতরাতে বাধ্য হয়ে কলিংবেলের শরণাপন্ন হতে হলো ওকে। ইয়ান চোখ ডলতে ডলতে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলেন। দরজা খুলতেই কিঞ্চিৎ চমকালেন ইয়ান।
” আন্দ্রেজ! তুমি? সাথে কে? “
কিছুটা বিস্ময় নিয়ে শুধলেন ইয়ান। আন্দ্রেজ মুচকি হেসে মেয়েটির হাত ধরে বাসার ভেতরে ঢুকে দরজা আঁটকে দিলো। এতক্ষণে ওর মামা যা বোঝার বুঝে গেছে। ছেলেটার প্রতি ভীষণ বিরক্ত ইয়ান। সঙ্গী প্রয়োজন হলে স্বজাতি থেকে নির্দিষ্ট কাউকে বেছে নিয়ে থাকুক! কিন্তু না এই ছেলের সব আগ্রহ মানুষের প্রতি।
” তুমি রুমে যাও মামা। আমরা পারসোনাল টাইম স্পেন্ড করবো। “
” ওকে। “
ইয়ান কিছু বললেন না আর। তবে নিজের ঘরেও গেলেন না। বসার ঘরে দাঁড়িয়ে রইলেন। আন্দ্রেজ মেয়েটিকে সাথে নিয়ে নিজের রুমের দিকে এগোলো। মিনিট পাঁচেক পরে মেয়েটি আন্দ্রেজের রুম থেকে বসার ঘরে এসে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে লাগলো। ইয়ান মুচকি হেসে বললেন,
( গল্পের প্রয়োজনে অধিকাংশ ইংরেজি কথোপকথন দিতে হতো, কিন্তু আমার পিচ্চি পাঠকদের সুবিধার্থে বাংলায় কথোপকথন দিচ্ছি।)
” যাক বুদ্ধিমতী মেয়ে তুমি। ইশারায় সবকিছু বুঝে গেছো। “
মারিয়া আশেপাশে নজর বুলিয়ে বললো,
” আপনি বললেন ওর সাথে সময় না কাটাতে। কিন্তু কেনো? আমি কিন্তু পাঁচ মিনিটের কথা বলে কোনোমতে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছি। “
” তোমার ভালোর জন্য বলেছি। তোমার ঠিকানায় টাকা পৌঁছে যাবে। এখন তুমি এসো তাড়াতাড়ি, যাও। “
মারিয়া চলে যেতে উদ্যোত হতেই আন্দ্রেজ দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে রেগেমেগে বললো,
” ওই! কই যাচ্ছো তুমি? খবরদার যাবে না। “
মেয়েটি কিছু বোঝার আগেই সিড়ি বেয়ে একপ্রকার দৌড়ে নিচে নেমে এলো আন্দ্রেজ। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেছে মারিয়া নামক মেয়েটি। এতগুলো বছর এসব কাজ করছে কিন্তু এমন সাইকো কাস্টমার আর দেখেনি ও। ইয়ান আন্দ্রেজকে ধরে ফেলে ইশারায় মারিয়াকে চলে যেতে বললো আবারো।
” আঙ্কেল! ছাড়ো আমাকে। “
” আমি আসছি, মাফ করবে। “
” দাঁড়াও বলছি! মুড তুলে দিয়ে কোথায় যাচ্ছো? উফ!”
মারিয়া দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেই ইয়ান আন্দ্রেজকে ছেড়ে দিয়েছে। রাগে ফুঁসছে ও।
” তোমাকে কতবার বলবো? নিরিহ মেয়েগুলো তোমার জন্য মারা যাচ্ছে। আজকে মারিয়াও হয়তো মারা যেতো। স্বভাব বদলাও আন্দ্রেজ। প্লিজ! “
” আমি তোমার মতো রসকষহীন নই আঙ্কেল। আমার মনপ্রাণ রসে টইটম্বুর, ওকে? দিলে রাতটার বারোটা বাজিয়ে। ধ্যাৎ! “
আন্দ্রেজ আঙ্কেলকে ওখানে রেখে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। মন মানসিকতা বেজায় খারাপ আজ। ইয়ান আর কী করবেন? অগত্যা তিনিও ঘুমানোর উদ্দেশ্যে নিজের ঘরের দিকে এগোলেন।
শীতের সকাল সাথে ঠান্ডা হাওয়া । ওয়ারিশ শহরে হালকা-পাতলা তুষারপাত হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই ইভানা নিজেকে এই পরিস্থিতিতে খাপখাওয়াতে চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে পোল্যান্ডের আবহাওয়ার বিস্তর পার্থক্য। এতো ঠান্ডা দেশে কখনো ছিলো না। ফলশ্রুতিতে প্রথম ক’দিন পরেই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ইভানা। তবে সেই জ্বর নিয়েই আজও অফিসে ছুটছে মেয়েটা। সামর্থ অনুযায়ী ছোটোখাটো একটা ঘর ভাড়া নিয়েছে ইভানা। অবশ্য একা থাকে না। রেবেকা নামেও আরো একটি মেয়ে থাকে ওর সাথে। রেবেকাও বাংলাদেশি। ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল বলেই হয়তো এ দেশে এসেও একজন দেশি মানুষ পেয়েছে ইভানা। আনমনে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে গাড়ির সামনে এসে গেছিল মেয়েটা টেরও পায়নি। আচমকা কেউ বুকে জড়িয়ে ধরাতে হুঁশ ফিরলো ইভানার।
” এই মেয়ে তোমার কি চোখ নেই? আরেকটু হলে তো গাড়ির নিচে চাপা পড়তে! “
আন্দ্রেজের গুরুগম্ভীর কণ্ঠে এতো রাগ আগে কখনো অনুভব করেনি ইভানা। এতক্ষণে দু’জন দু’জনার থেকে নিয়মমাফিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়েছে। এখান থেকে অফিসে যাওয়ার দূরত্ব মাত্র দশ মিনিটের। সেজন্য আন্দ্রেজ এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল হয়তো।
” ইভানা? আমি তোমার সাথে কথা বলছি।”
” জি স্যার! সরি স্যার! আসলে আমি না মানে, হয়েছে কী আমি…. “
” থাক। ভবিষ্যতে সাবধানে চলাফেরা করবে এতটুকুই। “
ইভানাকে আরকিছুই বলার সুযোগ না দিয়ে স্থান ত্যাগ করলো আন্দ্রেজ।
” হেই ইভানা! কেমন আছো? “
অফিসের গেইটের কাছেই ম্যাকের সাথে দেখা হলো ইভানার। হেসে জবাব দিলো ইভানা,
” এইতো বেশ আছি। তুমি কেমন আছো? “
ম্যাক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। হতাশাগ্রস্ত হওয়ার মতো ভাবভঙ্গি করে বললো,
” আর কেমন থাকবো? সারাদিন ওরকম পাগলের না মানে সরি ক্ষ্যাপা বসের সাথে থাকলে যেমন থাকা যায়। “
ম্যাকের কথায় মুচকি হাসলো ইভানা।
” স্যার শুনলে তোমার অবস্থা কাহিল হয়ে যাবে, বুঝলে? “
” তা তো বটেই! চলো চলো ভেতরে যাই। “
” হুম, চলো। “
ম্যাকের সাথে অফিসের ভেতরে যাচ্ছে ইভানা। গুনে গুনে পনেরো দিন হলো এখানে কাজ করছে ও। এরমধ্যেই আন্দ্রেজ স্যারকে ভীষণ ভালো লাগে ইভানার। এমনিতে ঠিকই আছে লোকটা। শুধু মাঝে মধ্যে কেমন হয়ে যান। ভালো করে কথা বলে অথচ হঠাৎ করে এমন রেগে যান মনে হয় একই শরীরে দু’টো আলাদা স্বত্বার বসবাস!
” আমার হাতটা দেখতে পাচ্ছো শিয়া? সুন্দর না? “
ফোনের অপরপ্রান্তে বসে ভিডিয়ো কলে নিজের হাত দেখিয়ে শুধালো আহিয়ান। শিয়া পাশে থাকা একটা বালিশ কোলে নিয়ে আরেকটু আরাম করে বসলো। রয়েসয়ে হেসে উল্টো শুধালো,
” আপনি দেখেছেন, কী সুন্দরভাবে আমাকে থ্রেট দিলেন আপনি! আপনার হাত তো লোহার মতো সেই হাত দিয়ে মা*রার প্ল্যান করছেন বসে বসে। “
আহিয়ান শব্দ করে হেসে ফেললো বেশ। শিয়াও হাসছে।
” বউ পেটানো পছন্দ করি না। তবে মাঝে মধ্যে হাতের শক্তি পরীক্ষা করার জন্য কয়েকটা থাপ্পড় মারতে পারলে ভালোই লাগবে। “
” আপনাকে আর্মিতে কে চাকরি দিলো আহিয়ান সাহেব? আইনের লোক হয়ে যতসব বেআইনি কাজ করার চিন্তা! “
ভেংচি কেটে বললো শিয়া। আহিয়ান কিছু বলতেই যাবে এমন সময় এ্যানি চৌধুরীর গলার স্বরে চমকে উঠে শিয়া। মা দেখলে নির্ঘাত ঝামেলা হবে ভেবে দ্রুত কল কেটে দিয়ে ইউটিউবে গিয়ে ভিডিয়ো দেখতে শুরু করেছে মেয়েটা।
” শিয়া! কী করছো তুমি? কখন থেকে ডাকছি কোনো সাড়াশব্দ নেই! “
” আরে আমি তো সিরিয়াল দেখছি। ফোনের দিকে মনোযোগ ছিলো তো সেজন্য শুনতে পাইনি মা। সরি?”
মেয়ের এমন কান্ডকারখানা দেখে এ্যানি চৌধুরী হাসছেন। সত্যি বলতে আজকাল বাবা-মাকে এতটা ভয় পায়, সম্মান করে এমন ছেলেমেয়ে খুব কম দেখা যায়। সেখানে এতো বড়ো হওয়া স্বত্বেও শিয়া মা’কে এতটা ভয় পায় এটা সত্যি বিরল ঘটনা।
” ঠিক আছে। সবদিকে খেয়াল রাখতে হবে এখন থেকে। বিকেলে শপিং যাবো। রিয়াকেও তোমার সাথে নিয়ে নিও৷ “
রিয়া শিয়ার বান্ধবী।
” ওকে মা। “
মা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো মেয়েটা। ওদিকে বেচারা আহিয়ান প্রেমিকাকে কল না পেয়ে ডিউটিতে মনোনিবেশ করলো।
চলবে