বছর পাঁচেক আগে দেশে গিয়েছিল আন্দ্রেজ। সেই বাবার সাথে শেষ দেখা। কিন্তু আজকাল বাবার কথা খুব মনে পড়ে আন্দ্রেজের। ইচ্ছে করে একবার বাংলাদেশে যাবে। কিন্তু মায়ের প্রতি বাবার উদাসীনতা মনে করতেই সেই ইচ্ছে বিলুপ্ত ঘটে আবার। এক দারুণ যন্ত্রণার মধ্যে মাঝে মধ্যে রাত কাটে ওর। কালো রঙের টি-শার্ট আর হাফপ্যান্ট পরে বিছানায় বসে মদ্যপান করছে আন্দ্রেজ। আজ অমাবস্যার রাত। আন্দ্রেজের কাছে আজকের রাতটা আলাদা। একটু পরেই এক জায়গায় যাবে সে। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ জানালার দিকে দৃষ্টিপাত করলো ও। একটা বাদুড় উড়ছে বাইরে। জানালার আশেপাশে কয়েকবার ঘুরপাক খাচ্ছে আবার একটু দূরে সরে যাচ্ছে। আন্দ্রেজের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। বিয়ারের বোতল রেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সোজা জানালার পাশে গিয়ে বাইরের দিকে তাকাল। বাদুড়টা আগের মতোই উড়ছে। অমাবস্যার চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো আন্দ্রেজ,
” এখুনি যাবে? “
বাদুড়টা কিছু একটা বললো অথবা ইশারা করলো। আন্দ্রেজ মুহুর্তেই চোখ বন্ধ করে অলৌকিকভাবে নিজের শরীরের পোশাক পরিবর্তন করে ফেললো। ওর নীল রঙের চোখের মনি জোড়া কেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, ঘাড় অবধি বাদামী বর্ণের চুলগুলো মৃদুমন্দ শীতল বাতাসে দোল খাচ্ছে। ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত লম্বা কালো রঙের আলখাল্লায় বেশ অদ্ভুত লাগছে ওকে। বাদুড়টা উড়তে লাগলো। সাথে সাথে আন্দ্রেজও মুচকি হেসে জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে শূন্যের উপর দিয়ে বিদ্যুৎতের গতিতে ছুটতে লাগলো। বাদুড়টা ঠিক ওর সাথে উড়ে পারছে না। এভাবেই দু’জন রেষারেষি করতে করতে ভিসলা নদীর উপকন্ঠে ঘন জঙ্গলে গিয়ে পৌঁছল। ওরা দু’জন জঙ্গলে পৌঁছাতেই সবকিছু কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। আন্দ্রেজ ধীরগতিতে শূন্য থেকে মাটিতে নেমে দাঁড়িয়ে বাদুড়টার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
” কেনো যে তোমাদের সঙ্গে আমাকে তুলনা করো মামা আমি জানি না। তুমি ভ্যাম্পায়ার হয়েও তো আমার সাথে পেরে উঠছ না! “
বাদুড়রূপী ইয়ান ওয়ারসকি মানব রূপে ফিরে এলো। উনার পরনেও কালো রঙের আলখাল্লা। লোকটা ফিচেল হাসলো।
” ঠিকই বলেছো আন্দ্রেজ। ভবিষ্যতে হয়তো ভ্যাম্পায়ারের থেকে ড্যাম্পারদের বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। “
কথা বলতে বলতে দু’জন সামনে এগোতে লাগলো। আন্দ্রেজ বলে,
” অবশ্যই! কারণ তোমাদের কতো সমস্যা দেখো! রোদ সহ্য করতে পারো না, রক্ত ছাড়া চলতে পারো না। আর আমাকে দেখো? কোনো রক্তটক্ত খাওয়ার দরকার পড়ে না। অবশ্য ইচ্ছে করলে খেতে পারি। আর রোদেও কোনো সমস্যা নেই। “
” হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি সেরা। এবার খুশি? “
” অবশ্যই! চলুন ইয়ান ওয়ারসকি। আমরা পৌঁছে গেছি। “
মামা-ভাগনে মহানন্দে জঙ্গলের ভেতর এক জায়গায় এসে উপস্থিত হলো। সামনে বিশালকার এক প্রাসাদ। পোল্যান্ডের মধ্যে এটাই ভ্যাম্পায়ারদের আস্তানা। সারা শহরের ভ্যাম্পায়ারদের মিলনস্থল এটাই। প্রাসাদের গেটে অবস্থানরত দু’জন ভ্যাম্পায়ার ইয়ান ও আন্দ্রেজকে দেখে মুচকি হেসে ভেতরে যেতে বলে। দুজনে হাঁটতে হাঁটতে প্রাসাদের মূল ফটকে পৌঁছে গেছে। ভেতরে প্রবেশ করতেই জমকাল আয়োজন নজরে এলো ওদের। শয়ে শয়ে ভ্যাম্পায়ার উপস্থিত হয়েছে আজ। সবাই কালো রঙের আলখাল্লা পরা, মুখে মাস্ক। আন্দ্রেজ নিজের দিকে একবার তাকিয়ে পরক্ষণে মামার দিকে দৃষ্টিপাত করলো।
” কী দেখছো? চলো..”
” আমাদের মাস্ক দরকার। “
আন্দ্রেজ আঙ্গুলের সাহায্যে তুড়ি মারতেই দু’টো কালো রঙের মাস্ক সেঁটে গেলো ওদের চোখেমুখে।
” এবার চলো। “
” হুম। “
শতশত ভ্যাম্পায়ারদের মধ্যে আন্দেজ একা অন্য রকম! আগে অবশ্য অস্বস্তি হতো ওর। কিন্তু এখন নিজেকে ওদের থেকে কোনো অংশে কম মনে করে না।
” হেই আন্দ্রেজ! এসো এসো। কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম! “
কিং জিয়ানের মুখে আন্দ্রেজের কথা শুনে বেশ ভালো লাগলো ইয়ানের। জিয়ানের বয়স হয়ে গেছে। কয়েক হাজার বছর ধরে ভ্যাম্পায়ার রাজ্য সামলে আসছে সে। আন্দ্রেজ হাসিমুখে এগিয়ে গেলো জিয়ানের দিকে।
” দুঃখিত! সম্ভবত আমরা দেরি করে ফেলেছি। “
” আরে না। বসো তুমি। “
কিং এর কথায় আন্দ্রেজ একপাশে গিয়ে বসলো। ইয়ান কিছুটা বিরক্ত হয়েছে ওর উপর। রাজাকে কি একবার জিজ্ঞেস করতে পারতো না, তার শরীরের কী অবস্থা! ছেলেটা কেমন একটা ধরনের।
” কিং আপনার শরীর কেমন আছে এখন?”
ইয়ান নিজেই শুধলেন জিয়ানের কাছে। জিয়ান ধীরপায়ে হাঁটতে লাগলেন আর সাথে ইয়ানও।
” ঠিক আছি আমি। তবে আমার পক্ষে আর এতো দায়দায়িত্ব পালন করা সম্ভব না ইয়ান। “
” তাহলে কী করবেন কিং?”
বলাবাহুল্য জিয়ান নিঃসন্তান। মায়াবী শক্তি থাকা সত্বেও সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো ক্ষমতা তার নেই। কারণ সবকিছু সৃষ্টিকর্তার আদেশেই হয়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে লাগলেন জিয়ান,
” আমি একটা সিন্ধান্ত নিয়েছি ইয়ান। তবে এটা সবাই সহজে মানবে না। হয়তো আমার কথার উপর কেউ কিছু বলবে না কিন্তু ভেতর ভেতর অনেকেই আমার সিন্ধান্তের বিরোধিতা করবে নিশ্চিত। “
” কীসের সিন্ধান্ত? “
আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ইয়ান। এরমধ্যে একজন ভ্যাম্পায়ার এসে দুই গ্লাস রক্ত দিয়ে গেলো উনাদের। জিয়ান গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে বলেন,
” আন্দ্রেজকে আমার জায়গায় বসাতে চাই ইয়ান। “
” কী!”
বিস্ময়ে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইয়ান। জিয়ান মৃদু হেসে ইশারায় ইয়ানকেও গ্লাসে চুমুক দিতে বললেন। ইয়ানও কথামতো এক চুমুক দিয়ে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকাল কিং এর দিকে।
” হ্যাঁ। “
” কিন্তু কিং সবাই এটা কখনোই মানবে না। সমস্ত ভ্যাম্পায়ার সাম্রাজ্য একজন ড্যাম্পায়ার পরিচালনা করবে এটা তারা কোনো দিন মানবে না। উপরন্তু, আন্দ্রেজের শত্রু বৃদ্ধি পাবে কিং। “
” তুমি সেসব নিয়ে ভেবো না কিয়ান। আমি যা করবো অবশ্যই ভেবেচিন্তে করবো। আপাতত এ বিষয় কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। আন্দ্রেজকেও না! সময় হলে আমি নিজেই ওকে জানাবো। “
ইয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। নিজেকে শান্ত করে বললেন,
” বেশ কিং। আপনার ইচ্ছে! “
মাঝে মধ্যে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয়। এমনিতে আন্দ্রেজ কখনো কোনো ভ্যাম্পায়ারের সাথে সময় কাটায় না। কিন্তু আপাতত উপায় নেই। কোনো মানবীর সাথে উষ্ণতা ছড়াতে পারছেনা অনেকদিন। অগত্যা বাধ্য হয়ে ভ্যাম্পায়ার এলিযাকে নিজের কথার জালে ফাঁসিয়ে একটা কক্ষে নিয়ে এসেছে আন্দ্রেজ। এলিযা বয়সে আন্দ্রেজের থেকে কয়েকশো বছরের বড়ো হলেও দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। কক্ষের দরজা আঁটকে দিয়েই আন্দ্রেজ এলিযার উপর চড়াও হলো। মেয়েটার শরীরের কালো আলখাল্লা খুলতেই হাঁটু অবধি ছোটো গাউন ও পায়জামা নজরে এলো আন্দ্রেজের। এলিযা কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আন্দ্রেজ ইতিমধ্যে নিজেকে সম্পূর্ণ অনাবৃত করে ফেলেছে। এলিযা নিজের গাউন খুলতে গেলে বাঁধা দিলো আন্দ্রেজ।
” এসব খুলতে হবে না এখন। আমার আবার ধৈর্য কম এলিযা। “
এলিযা অবাক হলো ওর উন্মাদনা দেখে। কোমর থেকে পা অবধি উন্মুক্ত করেই আন্দ্রেজ নিজের কামনাবাসনা পূর্ণ করতে লাগলো। ওকে সামলাতে বেশ কষ্টই হলো এলিযার।
ঘুম ঘুম চোখে চোখ মেলে তাকাল ইভানা। বারবার চোখের উপর রোদের আলো পড়াতেই ঘুমের বারোটা বেজে গেছে। ক্ষীণ স্বরে রেবেকাকে উদ্দেশ্য করে বললো ইভানা,
” রেবেকা! প্লিজ জানালা বন্ধ করে দাও। “
” বেলা দশটা বেজে গেলো তবুও মেডামের ঘুম ছাড়লো না! “
বিছানার পাশের ছোটো টেবিলের উপর দুই কাপ কফি রেখে বললো রেবেকা। বেলা দশটা! কথাটা নিজে নিজে কয়েকবার আওড়াচ্ছে ইভানা। ঘুমে আচ্ছন্ন চোখদুটো হঠাৎ করেই সম্পূর্ণ ঘুম ছাড়া হতেই হুট করে শোয়া থেকে উঠে বসলো মেয়েটা। এলোমেলো চুলগুলো মেসি বান করে রেবেকার দিকে দৃষ্টিপাত করে বললো,
” আরো আগে ডাকলে না কেনো? আমাদের তো বের হওয়ার কথা ছিলো! “
” ব্যাপার না। আজকে অফ ডে, এটুকু ঘুম দরকার ছিলো তোমার। আমরা দুপুরের পরেও তো বেরোতে পারবো। “
” তা ঠিক। আচ্ছা তুমি বসো, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। “
” হ্যাঁ এসো তুমি। আমি অপেক্ষা করছি, একসাথে কফি খেয়ে নাস্তা করবো। “
ওয়াশরুমের দিকে এগোতে এগোতে বললো ইভানা,
” তুমি এতক্ষণ না খেয়ে না থাকলেও পারতে! বসো আমি দুই মিনিটে আসছি। “
রেবেকা মুচকি হাসলো। ইভানাকে ভীষণ ভালো লাগে ওর। মেয়েটা একেবারে আলাদা। খুব মিশুক স্বভাবের, পাশাপাশি মনখোলা।
চলবে,