মেরি জান
পর্ব ৯
( প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
” তুমি কি রেডি হয়েছ ইভানা? আমি কিন্তু তোমার অ্যাপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তাড়াতাড়ি এসো! “
আন্দ্রেজ হেসে বললো ফোনের অপরপ্রান্তে বসে। ইভানাও মুচকি হাসলো। একটু চুপ করে থেকে উত্তর দিলো,
” এখুনি চলে এসেছেন! “
” হ্যাঁ এলাম তো। “
” ঠিক আছে। অপেক্ষা করুন আমি আসছি। “
” ওকে। “
পার্পল কালারের গাউনে আজ ইভানা বেশ স্নিগ্ধ লাগছে। চুলগুলো খোলাই রাখা, কানে এবং গলায় একেবারে সিম্পল গয়নাগাটি। আন্দ্রেজ গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। দূর থেকে ইভানাকে দেখে কিছুটা চমকে গেছে ও। মেয়েটা এতো সুন্দরী আগে তো খেয়ালই করেনি! ইভানা এগিয়ে আসছে আন্দ্রেজের দিকে। আন্দ্রেজ ঠিকমতো দাঁড়াল।
অন্ধকারেও যে ও ইভানাকে দেখতে পাচ্ছে এটা তো বুঝতে দেওয়া যাবে না।
” হাই ইভানা! “
” হ্যালো স্যার। “
” ডোন্ট কল মি ‘স্যার’। ইউ আর লুকিং গর্জাস। “
আন্দ্রেজের প্রশংসায় বেশ ভালো লাগলো ইভানার। ঠোঁট কামড়ে নিজের হাসিটুকু আড়াল করে বললো,
” আপানাকেও দারুণ লাগছে। “
” থ্যাংকস ডিয়ার, আচ্ছা চলো। যেতে যেতে কথা হবে। “
” আচ্ছা। “
আন্দ্রেজ গাড়ির দরজা খুলে ইভানাকে ভেতরে ঢুকে বসার জন্য ইশারা করলো। তারপর ইভানা বসার পর নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়িতে স্টার্ট দিলো। আজকে আন্দ্রেজ নিজেই গাড়ি চালাবে। ম্যাকের আজ ছুটি। ম্যাক আন্দ্রেজের অফিসের পাশাপাশি ড্রাইভিং এর কাজটাও প্রায় করে।
অন্ধকার ঘরের ঠিক মাঝ বরাবর জলন্ত অগ্নিকুন্ডের সামনে বসে আছে একজন আগন্তুক। ইলোনার আত্নাও অগ্নিকুন্ডের একপাশে অবস্থান করছে। আগন্তুক কীসব মন্ত্র উচ্চারণ করছে আর ইলোনা যন্ত্রণায় ছটফট করছে।
” দয়া করে আর কষ্ট দিবেন না। আমি আর সহ্য করতে পারছি না!”
ইলোনার আকুতি আগন্তুকের কর্ণকুহরে হয়তো পৌঁছেনি। কিংবা পৌঁছলেও ইচ্ছে করে না শোনার ভান করছে।
” দয়া করুন! আমি যাচ্ছি আন্দ্রেজের কাছে। “
ইলোনা অসহায়ের মতো অনুনয় করে বলাতে না-কি আন্দ্রেজের কাছে যাবে বলাতে আগন্তুক মন্ত্র উচ্চারণ করা স্থগিত করলো সেটা সঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
” যাও! ভালো করে দেখো আন্দ্রেজের জীবনে যাতে আর কোনো মেয়ে না আসে। কোনোভাবে যদি….. “
আগন্তুক কথা শেষ করে না। ইলোনা নিজেও জানে না এই অসমাপ্ত কথার সমাপ্তি ঠিক কীসে! আর জানার ইচ্ছেও নেই। মুক্তি পেতেই ইলোনা আন্দ্রেজের কাছে যেতে লাগলো। আগন্তুকের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখাটা আরেকটু প্রসারিত হলো তাতে।
সারা পথ টুকটাক কথা বলতে বলতে একটা রিসোর্টে এসেছিল আন্দ্রেজ ও ইভানা। হরেকরকমের খাবার ছিলো ডিনারের মেনুতে। কিন্তু ইভানা তেমন কিছু খায়নি। আন্দ্রেজও কম খায়। খাওয়াদাওয়া শেষে দু’জন রুমে মুখোমুখি বসে আছে। রুম জুড়ে টাইটানিক মুভির গান ❝মাই হার্ট উইল গো অন❞ এর মৃদু সুর শোনা যাচ্ছে ।
Every night in my dreams
I see you,
I feel you That is how I know you go on
Far across the distance
And spaces between us
You have come to show you go on
Near, far, wherever you are
I believe that the heart does go on
Once more, you open the door
And you’re here in my heart
And my heart will go on and on
Love can touch us one time
And last for a lifetime
And never let go ’til we’re gone
Love was when I loved you
One true time I’d hold to
In my life, we’ll always go on……
ইভানা আন্দ্রেজের মতিগতি ঠিক বুঝতে পারছে না। ডিনার করতে কোনো রেস্টুরেন্টে না গিয়ে এখানে কেনো? প্রশ্ন অনেক কিন্তু কোনো উত্তর নেই। কিছু জিজ্ঞেস করা কি ঠিক হবে? রুম জুড়ে এমন রোমান্টিক গানের সুর! মুখোমুখি বসে আছে লোকটা কী মতলব আঁটছে সেটাই ভাবনার বিষয়।
” কিছু ভাবছো? “
আচমকা আন্দ্রেজের হাতের স্পর্শে চমকাল ইভানা। তাহলে কি যা ভাবছে তাই হতে চলেছে?
” না কিছু না। আমাদের এখন বেরোনো দরকার। “
” এখন? সকালে যাবো। “
আন্দ্রেজ কথার ফাঁকে ইভানাকে খুব কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। অজানা ভয় আর শিহরণে কিছু বলতেও যেনো ভুলে গেছে মেয়েটা। থরথর করে কাঁপছে ওর সমস্ত শরীর।
” নাহ, আমাকে এখুনি দিয়ে আসুন!”
ইভানার কম্পনরত ঠোঁট দু’টোর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো আন্দ্রেজ। আঙুলের সাহায্যে একটু ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো সে,
” ভয় পেও না। কষ্ট দিবো না বেশি। “
” মানে!”
ইভানা ভয় এবং বিস্ময়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আন্দ্রেজ ইভানাকে কোলে তুলে নিয়েছে ততক্ষণে। বালিশে শুইয়ে দিয়ে নিজের শরীরের ওজন ইভানার শরীরের উপর ন্যস্ত করলো সে। ইভানার অসহ্য লাগছে।
” চুপ!”
” দেখুন স্যার আমার পক্ষে…. “
ইভানার কথা শেষ হওয়ার আগেই তামাটে বর্ণের পুরুষালি শক্ত ঠোঁটের স্পর্শে চমকাল সে। হাতে হাত রেখে ওষ্ঠ পেষণ করাতে একেবারে অসহায় লাগছে ওর। কিন্তু আন্দ্রেজকে সরানোর মতো শক্তিও ওর শরীরে নেই এখন। কিন্তু এসব হতে দেওয়া যায় না! ইভানা নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে আন্দ্রেজকে সরিয়ে ফেললো। আন্দ্রেজের মেজাজ বিগড়ে গেলো তাতে! সহসাই ওর মধ্যে থাকা পৈশাচিক স্বত্বা জেগে উঠল। ইভানাকে কোলে তুলে একপ্রকার বলপ্রয়োগ করেই মেলামেশা করার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠেছে লোকটা। ইভানার চোখ দিয়ে টুপটাপ জল গড়িয়ে পড়ছে। এই লোকের সাথে শক্তিতে যে পারবে না সেটা ভালো করে বুঝে গেছে ও। তাই বুদ্ধি খাটালো।
” আপনার মা-ও একজন নারী। সেই নারী আমিও! দয়া করে নিজের মায়ের জন্য হলেও আমাকে ছেড়ে দিন! আপনার কাছে এসব মজা হলেও আমার কাছে সেরকম নয়। দয়া করে ছেড়ে দিন স্যার! “
হঠাৎ মায়ের কথা উঠতে মন মানসিকতা বদলে গেলো আন্দ্রেজের। হুট করেই ইভানাকে ছেড়ে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো ও। ইভানা চমকাল কিছুটা। আজ যেনো ওর চমকানো দিবস!
” এখুনি এখান থেকে চলে যাও তুমি। আমার সামনে আর এসো না। “
ইভানা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
” ভালোবাসার ডাক ভেবে আপনার কাছে এসেছিলাম স্যার। আজীবন আপনার দৃষ্টির আড়ালে রইবো। “
ইভানা কথাগুলো বলেই হনহনিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। মেয়েটার চোখে ওর জন্য কতটা ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে যদি একবার বুঝতো! ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে ব্যস্ত আন্দ্রেজ। আজ প্রথম চূড়ান্ত মুহুর্তে এসেও সরে যেতে হলো ওকে। মেয়েটা ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে এভাবে চলে গেলো?
ইলোনা আড়ালে দাঁড়িয়ে সবকিছুই দেখলো। যাক! নতুন কারো সাথে জড়াতে পারেনি ড্যাম্পায়ার আন্দ্রেজ ওয়ারসকি! সমস্যা হচ্ছে আন্দ্রেজের সামনে গেলে ধরা পড়ে যাবে ও। ইভানা না দেখতে পেলেও আন্দ্রেজ ঠিকই ইলোনার আত্মাকে দেখতে পাবে।
রাত বারোটা পেরিয়ে গেছে তবুও ইভানা ফিরছে না দেখে একটু-আধটু চিন্তা হচ্ছে রেবেকার। অন্য কোনো মেয়ে হলে হয়তো চিন্তা করতোনা। কিন্তু ইভানা আর দশটা মেয়ের মতো নয়। কারণ অন্য কোনো মেয়ে হলে বসের সাথে রাত কাটিয়ে হেসেখেলে বাড়িতে ফিরলেও ইভানা সেটা করবে না কিংবা পারবে না। আর এখানেই ভয়! যদি কোনো বিপদে পড়ে মেয়েটা? আন্দ্রেজ যদি রাগের বশে কিছু করে? নাহ! এসব ভাবলে আরো চিন্তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারচে অপেক্ষা করা ভালো। মনে মনে এসব জল্পনা-কল্পনা করতে করতে পায়চারি করছে রেবেকা। কিন্তু চিন্তা কি চাইলেই বন্ধ করা যায়? উঁহু! চিন্তা হচ্ছে নাছোড়বান্দা টাইপের, না চাইতেও চলে আসে।
চলবে,