পর্ব-১+২
এগারো বছরের তাকিয়া দরজায় দাড়িয়ে বাবাকে বিদায় জানাচ্ছে। সাথে তার সৎ মা এবং সৎ বোন রাফিয়া ও আছে। হানিফ সাহেবের চলে যাওয়ায় সবাই দুঃখ পাচ্ছে। তাকিয়ার চোখ দুটো পানিতে ছলছল করছে।এবং তা গণ্ডদেশ গড়িয়ে নিচে বেয়ে পড়ছে। হানিফ সাহেব মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন। গালে বেয়ে পড়া অশ্রু মুছে দিয়ে বললেন।তুমি কাদঁছো কেন মা।বাবা আবারো ফিরে আসবো। তোমার সাথে মিলে বই পড়বো।আমরা অনেক গল্প করবো।তাকিয়া কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো।কখনো তোমাকে ছাড়া থাকিনি, তুমি চলে যাচ্ছো এটা ভেবেই খারাপ লাগছে।
“কষ্ট পেওনা মামুনি।তোমার মা বোনদেরকে সময় দিবে। তোমার বোনের সাথে গল্প করবে।আমাকে নিয়ে ভেবোনা।আমিতো তোমাদের সুখের জন্যই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছি।
” তাকিয়া বাবার কথা শুনে হা সূচক মাথা নাড়ালো।
হানিফ সাহেব তাকিয়ার সৎ মা কে উদ্দেশ্য করে বললেন।তোমার মেয়েকে কখনো আমি পর মনে করিনি। আমার মেয়েটাকেও তুমি তোমার নিজের মেয়ে মনে করবে।তাকে কখনো কষ্ট দিওনা।সে যেটা চাইবে তাকে সেটাই দিবে। এবং বাড়ির দলীল গুলো সযত্নে রাখবে।আমি সেথায় গিয়ে তোমাকে ফোন দিব।
“আমি কখনো আপনাকে কষ্ট দিয়েছি?আপনার মেয়ে মানে তো আমারো মেয়ে। আপনি ওকে নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না।আমি ওর সেবা যত্নে একদমই কার্পন্যতা করবো না।
” তিনি স্ত্রীর কথা শুনে নিরব থাকলেন। স্ত্রীর মুখ থেকে আশ্বস্ত করা বুলি শুনেও তার মন শীতল হলোনা।এতো কিছুর পরও কেন জানি তার বাড়ি থেকে যেতে মন টানছিলো না। তবুও তিনি তার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চললেন।
★
তাকিয়া চৌরাস্তা পর্যন্ত তার বাবার সাথে গেলো।আর সামনে যেতে পারলো না।তার বাবা কিছু মজা কিনে দিয়ে তাকে বাড়িতে চলে যেতে বললো। কিন্তু তাকিয়া সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো।তার বাবার গাড়ি একমনে সামনের দিকে এগিয়ে চললো। মানুষের সমাগমের মধ্য দিয়ে গাড়িটি তাকিয়ার অক্ষিযুগলের আড়ালে মিলিয়ে গেলো।সে মাথা নত করে বাড়ির আঙিনার উদ্দেশ্যে ছুটে চললো।
নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।তাকিয়ার যখন ৫ বছর তখন তার মা তাকে রেখে না ফেরার দেশে চলে যান।যখন ৮ বছর বয়স তখন তার বাবা নতুন বিয়ে করেন। যাকে বিয়ে করেন তার আগের ঘরের একজন মেয়ে রয়েছে।তাকিয়ার বাবা ওই মেয়ে সহই তার সৎ মাকে মেনে নেন।তার সৎ মা যদিও তার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো না ।কিন্তু সুযোগ পেলে তিনি তার মুখোশ না খুলেও থাকতেননা। কিন্তু তাকিয়া তার বাবা কে কখনো তার মা সম্পর্কে অভিযোগ করেনি।সে খুব শান্ত স্বভাবের একটি মেয়ে,সে কখনো কারো খারাপ চায়না। সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলে।তার অনন্য এক বৈশিষ্ট্য হলো, সে খুব সত্যবাদী একজন মানুষ।আজ তার বাবা ব্যবসার উদ্দেশ্যে কানাডা পারী জমিয়েছেন। তিনি কখনো তাকিয়াকে ছাড়া দুরে কোথাও থাকেননি।তাই তাকিয়া বাবার চলে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না। সে হয়তো আন্দাজ করতেও পারছেনা কতটা ভয়ানক ভবিষ্যত তার সামনে অপেক্ষমান রয়েছে।
তাকিয়া রাস্তার কিনারা দিয়ে হেটে চলেছে।রোদের প্রখরতা আজ একটু বেশি। কিন্তু বেশি হলেও কি? গ্রামের সরু রাস্তা গুলোর পাশে বেশির ভাগ জায়গায় হরেক রকমের গাছপালারা সারিপাতে দাড়িয়ে থাকে। যার দরুন ইটের রাস্তা গুলোতে রোদ মশাই গাছের পত্র পল্লবের মায়া ভেদ করে পথে এসে পৌঁছাতে পারে না। পত্র পল্লব কে ঘিরেই তারা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে থাকে । মাঝে মাঝে তারা পত্র কুলের ফাঁক দিয়ে ইটের রাস্তা গুলো তে বিভিন্ন প্রকার ছায়া নকশা তৈরি করে।আজও ঠিক এমনি হচ্ছে।তাকিয়া বিষন্ন মন নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে পরভৃৎরা কা কা শব্দে তার কান ঝালাপালা করছে।লক্ষি পুর গ্রামের এই মেয়েটি আসলেই খুব অসাধারণ ।কালো একটা ফ্রগ সাথে লাল সেলোয়ার, লাল ফিতা দিয়ে মাথায় একটি বেণি করাও আছে। বেণিটা যেয়ে শেষ হয়েছে ঠিক কটিদেশে।রোদের কারনে শুভ্র গাল খানা রক্তিমবর্ণ ধারন করেছে।এত সুন্দর অবয়বের মেয়েটিকে দুর থেকে দেখেই চিনে ফেললো আনিকা, সে আর কেউ নয়। তার খুব কাছের একজন সই।আনিকা দৌড়ে এসে তাকিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।কিন্তু তাকিয়া কোন প্রকার অনুভূতি দেখালোনা।আনিকার বুঝতে পারলো। তার সইয়ের মন খারাপ।আনিকা তাকিয়াকে উদ্দেশ্যে করে বললো। কিরে সই কি হয়েছে তোর।এভাবে মুখগোমড়া করে রেখেছিস কেন?
আনিকা খেয়াল করলো তাকিয়ার চোখের পানি টলমল করছে।মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে দিবে।তাই সে তাকিয়ার গণ্ডদেশে হাত রেখে বললো।থাক কাদিস না।বল না কি হয়েছে।তাকিয়া নরম স্বরে বললো। বাবা চলে গিয়েছে।আনিকা বললো। থাক কষ্ট পাস না। চল বাসায় চল আজকে দাদিমা গরুর মাংস রান্না করছে দুজনে মিলে খাবো।
তাকিয়ার গরুর মাংস খুব পছন্দের। সে প্রথমত যেতে বারণ করলো।কিন্তু আনিকা নাছোড়বান্দী।
সে তাকিয়াকে তার বাড়িতে নিয়েই গেলো।
আনিকা তাকিয়ার সমবয়সী।
তার এই দুনিয়াতে তার দাদি,আর তার সই ছাড়া কেউ নেই।আছে অনেকেই কিন্তু ভালোবাসা দেয়ার মত কেউ নেই।আনিকা একটু তোতলিয়ে কথা বলে তাই তার সাথে তেমন কেউই মিশেনা।কিন্তু তাকিয়া সব কিছু উপেক্ষা করেই গোধূলি মিশ্রিত এক বিকেলে আনিকাকে বলেছিলো তুমি আমার বান্ধবী হবে।এর পর থেকেই দুজন দুজনকে ছাড়া কিছু বোঝে না।
★
বিকেলে তাকিয়া তাদের বাড়িতে গেলো।
কিন্তু সে বাড়িতে প্রবেশ করতেই খুব বিস্মিত হলো।তাকিয়াদের বাড়িটি হচ্ছে ২ তলা বিশিষ্ট। তাকিয়া প্রকৃতি খুব পছন্দ করে তাই তার বাবা তাকে এমন একটি রুম দিয়েছেন। যার পাশেই ছিল ছোট একটি বেলকনি, বেলকনির পুরোটাজুড়ে গ্রিলে আবদ্ধ ।গ্রিলের কিছু অংশে হরেক রকম ফুল গ্রিলের গাত্রে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে। তার পাশেই ছোট একটি নার্সারি। সেখানেও হরেক রকম ফুল দিয়ে ভরপুর ।নার্সারির পাশেই রয়েছে একটি পেয়ারা বাগান।।বাগানের ডান পার্শে রয়েছে ছোট একটি পুকুর ঘাট এখানে মানুষ গোসল করা, থালাবাসন ধোয়া থেকে নিয়ে আরো বিভিন্ন রকমের কাজ করে থাকে।অনেকে আবার কলসি করে পানি ভরে বাড়িতেওপর নিয়ে যায়। তাকিয়ার মন খারাপ হলেই বেলকনিতে চলে যায়। প্রকৃতির দেখা পেয়ে মন ভালো করে নেয়।কিন্তু আজকে ঘটলো অন্য কিছু। তাকিয়ার রুমে তার কোন জিনিস পত্র নেই। তার বড়বোনের জিনিস পত্র দিয়ে তার রুম সাজানো হচ্ছে।বিষয়টি দেখে তাকিয়া সহ্য করতে পারলো না। প্রতিবাদ করলো।অমনি রাফিয়া খরতানে বলে উঠলো। মা বলেছে আমাকে এই ঘরে থাকতে।
তাকিয়া বললো।তাহলে আমি কোথায় থাকবো? তাছাড়া আপু এই বাড়িতে তো আরো সুন্দর সুন্দর রুম রয়েছে। তুমি সেখান থেকে একটা নাও।
রাফিয়া আড়চোখে তাকিয়ার দিকে তাকালো। এবং উঁচু আওয়াজে তার মাকে সম্মোধন করে বললো।মা তাকিয়া আমার সাথে ঝগড়া করছে।এবং আমার গায়ে হাত তুলেছে।তুমি জলদি আসো।তাকিয়া খুব অবাক হলো।কারন সে তার থেকে এক হাত দুরে দাড়ানো।
ঘাসফড়িং – ২
____________
★★★
রাফিয়ার ডাকে তার মা রুমে আসলেন।তিনি দুজনকে চুপ করিয়ে তাকিয়াকে পাশের রুমে নিয়ে গেলেন।তাকিয়াকে সান্তনা দিয়ে বললেন।
থাক মা, বড় বোন যেহেতু তোর রুমটা খুব পছন্দ করেছে। এখন আর কি করবি।তুই এই রুমেই থাক। তোর বাবা চলে আসলেই তোর রুম তুই পেয়ে যাবি।তাকিয়ার মা তাকে এমন করে বুঝাচ্ছে, যেন রুমটি রাফিয়ার। তাকিয়া জোর করে সেখানে থাকতে চাচ্ছে।তিনি তাকে আগডুম বাগডুম বুঝিয়ে রাফিয়ার রুমের দিকে পা বাড়ালেন।রাফিয়া মাকে দেখেই বলে উঠলো।তুমি কিছু বলোনি তাকে?
রেবেকা মেয়ের কথার প্রতিউত্তরে বললেন।
আরে ধৈর্য হারা হলে হবে না।প্লেন অনুযায়ী সব করতে হবে।আর তোমাকে একটা কথা বারবার বলছি, তুমি তাকিয়ার সাথে খারাপ ব্যবহার করবেনা। কারন তাকিয়াকে আমাদের প্রয়োজন রয়েছে।
“রাফিয়া কাপড় ভাজ করতে করতে বললো।আচ্ছা ঠিক আছে মা, কিন্তু আমি আমার মাথা ঠিক রাখতে পারিনা। কারন তাকিয়াকে দেখলেই আমার গা জ্বলে উঠে। এই বাড়িতে যেই আসে সেই তাকিয়ার প্রশংসা করে। আমাকে যেন তাদের চোখেই পড়ে না।এমন কি আছে ওর মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই?
” থাক উত্তেজিত হয়ো না। তুমি তার সাথে ভালো ব্যবহার না করতে পারো, করো না।কিন্তু আমার করতে হবে। তুমিতো ভালো করেই জানো। হানিফ কে আমরা মেরে দিয়েছি।কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে ওইখানে, সে তার এতো এতো সম্পত্তি তাকিয়ার নামে করে রেখেছেন।আমার নামে শুধু একটি জায়গা বরাদ্দ রেখেছেন।তাকিয়ার থেকে সম্পত্তি গুলো নিতে হলে আমাদের তার সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে।
“আচ্ছা মা সমস্যা নাই। তুমি করো। কিন্তু আমি পারবো না।
কথা খানি বলেই রাফিয়া আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো।মাথায় চিরুনি করতে করতে বললো। আচ্ছা মা আমি কি সুন্দরী না?
” রেবেকা মেয়েকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন।হুঁ মামুনি তুমি দেখতে ঠিক রাজকুমারীদের মত।
“কিন্তু তাহলে সবাই তাকিয়াকে সুন্দর বলে কেন?
” উফ বাদ দাও তো এসব চিন্তা করে করে তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে।আচ্ছা শোনো খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেও। আমি আজকে খাবো না।
“কেন খাবেনা।তোমাকে ছাড়া একা একা খেতে আমার একদমই ভালো লাগবে না।
” আমি সন্ধায় খেয়ে নিয়েছি। তুমি খেয়ে নিও।রেবেকা রাফিয়ার কপালে চুমু একে তার রুমের দিকে পা বাড়ালেন।
★
তাকিয়া খাটের মধ্যে গুটি সুটি হয়ে শুয়ে আছে। এবং একাধারে কেঁদেই চলেছে।আজ তাকে সান্ত্বনা দেয়ার মতও কেউ নেই।স্বার্থপর এই দুনিয়ায় সকলে স্বীয় মুখোশ পড়ায় ব্যস্ত।কিন্তু জরিনা এ থেকে আলাদা। সে রুম ঝারু দিচ্ছে,এবং সান্তনা মূলক দু একটি ফুলের ঝুরি তাকিয়াকে উদ্দেশ্য করে ছুড়ে মারছে।জরিনা তাকিয়াদের বাসায় কাজ করে। বলা বাহুল্য তার ছোট বেলা টা তাদের বাড়িতেই কেটেছে।জরিনা তাকিয়াকে খুব ভালোবাসে।শুধু জরিনা না, সবাই তাকে খুব ভালোবাসে। তাকিয়ার চোখে অনেক মায়া রয়েছে।তার চোখের দিকে তাকিয়ে যে কেউ তার মায়ায় পড়ে যেতে পারে।
“জরিনা ঝাড়ু টি দেয়ালে হেলান দিয়ে রাখলো।এবং তাকিয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো।থাক, আর কাইন্দেন না।আপনি আমার ছোট বোনের মত। আপনারে এইভাবে দেখলে আমার ভালা লাগে না।
“তাকিয়া নিশ্চুপ।জরিনার সান্তনা শুনে তার কান্নার আওয়াজ আরো প্রকট হলো ।
“জরিনা আবারো মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো।এখন যদি আপনি এইভাবে কাঁদতে থাকেন। তাহলে ওই শাকচুন্নি রাফিয়া আরো খুশি হইবো।তাই আপনেরে শক্ত থাকতে হইবো।আপনেরে আমি ছোট বেলেরতেইন দেইখা আইছি। আপনে সহজে ধৈর্য হারা হন না।কিন্তু আজকে এতো কানতেছেন কেন।
“তাকিয়া ডান হাত দিয়ে স্বীয় চোখের পানি মুছলো।এবং বললো।বাবার কথা খুব মনে হচ্ছে। কেন জানি মনে হচ্ছে বাবা ভালো নেই। বাবা যাওয়ার সময় বলেছিলেন আমাকে ফোন দিবেন।কিন্তু এখনো তার ফোন এলো না।
“জরিনা দীর্ঘ শ্বাস টেনে বললো।মনে হয় ফোনে চার্জ শেষ হয়ে গেছে।থাক আপনি আর কাইন্দেননা।আসেন অল্প দুগ্যা ভাত খাইয়া নেন।
” না খাবো না আমি। তুমি খেয়ে নাও।।
কিন্তু জরিনা নাছোরবান্দী। সে তাকিয়ার মন ভালো না করা অবধি খ্যান্ত হবে না।সে তাকিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো।
“আইচ্ছা আমার কাছে একটা জিনিস আছে যেইডা দেখলে আপনের মন অটমেটিক ভালা হইয়া যাইবো।
“তাকিয়া মাথা উঁচু করে ভ্রু কুচকালো।এবং বললো।কি জিনিস।
“কথা দেন ওই টা পাইলে খাইতে যাইবেন।
” আচ্ছা যাবো আগে বলো।কি জিনিস।
জরিনা পিছন থেকে একটা কলম এনে তাকিয়াকে দিলো।তাকিয়া কলম টা দেখে সত্যিই খুব খুশি হলো।এই কলম টি মাফি তাকে দিয়েছিলো।মাফি হচ্ছে তাকিয়ার ছোট বেলার খেলার সাথি।দু বছর আগে সে তার বাবা মায়ের সাথে ঢাকা পারি জমায়। এরপর থেকে কখনো তার সাথে যোগাযোগ হয়নি।সে যাওয়ার সময় এই কলম টি তাকিয়াকে দিয়ে যায়। তাকিয়া সযত্নে সেটা রেখে দেয়।কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত একদিন কলম টি হারিয়ে যায়। তাকিয়া সেদিন অনেক কেঁদেছিলো।আজ রুম গোছাতে গিয়ে জরিনা কলম টি পেয়েছে। কলম টি পেয়ে তাকিয়ার মনের ভারীবোজা কিছুটা হালকা হলো।তার ঠোটের কোণে মিষ্টি হাসির রেখা ফুটে উঠলো। সে জরিনাকে জড়িয়ে ধরলো। তাকিয়া এখনো মাফিকে খেলার সাথি হিসেবেই মনে করে।
তাকিয়া আর জরিনা গল্প মেতে উঠেছে।এহেন সময় রাফিয়া জরিনা কে চিৎকার করে ডাকতে ডাকতে তাকিয়ার রুমে আসলো।সে জরিনা কে বসে থাকতে দেখে কর্কশ কন্ঠে বললো।
“আমি কখন থেকে তোকে ডাকছি।তুই শুনতে পাসনা।
” জরিনা প্রস্তুত হয়ে বললো। শুনতে পাইনাই তো।
“আবারো মুখের উপর কথা বলিস?
” জরিনা মাথা নত করে দাড়িয়ে থাকলো।
“জরিনার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে রাফিয়া বললো।আচ্ছা শোন রাতে কি রান্না করেছিস?
” রুই মাছ ভাজি, আর ডিম ভাজি।আপনের মা বলছে রাতে এই দুই আইটেম ই রাখতে।
“আচ্ছা বুঝেছি।আমার খাবার টা আমার রুমে দিয়ে যা।রাফিয়া এতটুকু বলে চলে যাওয়ার জন্য উদ্বত হলো।কিন্তু কিছু একটা মনে করে আবার ঘুরে দাড়ালো।এবং বললো।
” শোন। আমার জন্য মাছও দুইটা দিবি। এবং ডিমও দুই টা দিবি।
“কিন্তু,,,,।
জরিনা কিছু বলার পূর্বেই তাকিয়া তার হাত চেপে ধরলো।চোখের ইশারা করলো। বাদ দাও। রাফিয়া চলে গেলো।
জরিনা তাকিয়ার থেকে তার হাত ছুটিয়ে বললো।
” আচ্ছা আপনি আমাকে বলতে দিলেননা কেন?এই ডাইনিরে যদি দুইটা দেই তাহলে আপনেরে কি দিমু।তাছাড়া আমনের মায়ও সন্ধ্যায় একটা সাবার করছে।
“তাকিয়া নরম স্বরে বললো । খাবারের জন্য কাওকে নিষেধ করতে হয়না। বাবা আমাকে এভাবেই বলেছিলো।তাছাড়া আমিতো সবসময় খাই।আজকে না খেলে তেমন কিছু হবে না।
জরিনা কথা বাড়ালোনা।কিন্তু তার মন কথা বললো।একদম মায়ের মত হয়েছে মেয়েটা। খুবিই ন্যায়পরায়ণ,সৎ। আসলে ভালা মাইনষের কপালেই দুঃখ থাহে বেশি।
জরিনা দীর্ঘ শ্বাস টানলো। এবং বললো।আমি শাকচুন্নি রে খাবার দিয়ে আসি। আপনি ঘুমাইয়েননা। আমি ডিম ভাইজা আনতেসি।খাইয়া তারপর ঘুমাইবেন।
তাকিয়া মাথা নাড়ালো।
জরিনা পাক রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।
★
জরিনা রাফিয়াকে খাবার দিয়ে তাকিয়ার রুমে আসলো।দুজনই খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।জরিনা খাবার নিয়ে নিচে বসে পড়লো। বিষয়টি তাকিয়ার কাছে ভালো লাগলো না।সে জরিনা কে তার সাথে খাটে বসতে বললো।জরিনা প্রথমত অসম্মতি জানালেও পরবর্তীতে তাকিয়ার জেদের কাছে হার মানলো।রাফিয়ার মায়ের কিছু কঠোর নির্দেশ রয়েছে, কাজের মেয়েরা বাড়ির মেয়েদের সাথে বেশি মিশতে পারবেনা।তাদের সাথে বসে খেতে পারবেনা।তাই জরিনাও এসব ক্ষেত্রে খুব সতর্কতা অবলম্বন করে। যদিও আজকের দৃশ্যটি রাফিয়ার চোখে পড়লো না । তাহলে তার মায়ের কাছে গিয়ে ইনিয়ে বানিয়ে কিছু একটা বলে দিত।সৌভাগ্য ক্রমে রাফিয়া দৃশ্য টি তার ফ্রেমে বন্দি করার পুর্বেই জরিনা খাবার খাওয়া শেষ করে উঠে পড়লো।
এবং তারা গভীর নিদ্রা সাগরে তলিয়ে গেল।
★
(আসুন এবার একটু কাজের মেয়েদের নিয়ে বাস্তবতা আলোচনা করি।
হযরত আনাস রাঃ কে তো চিনেন। তিনি হচ্ছে সেই বিখ্যাত সাহাবী যিনি একাধারে ১০ বছর রাসুলুল্লাহ সাঃ এর খেদমত করেছিলেন। তিনি বলেন।আমি ১০ বছর রাসুলুল্লাহ সাঃ এর খেদমত করেছি।অথচ রাসুল সাঃ কখনো আমার সাথে রাগ করেননি।এবং আমার সাথে কোন প্রকার দুর্ব্যবহারও করেননি।যে জায়গায় রাসুল সাঃ পৃথিবীর বাদশাহী পেয়েও চাকর দের সাথে ভালো ব্যবহার করতে পেরেছে।
আর আমরাতো তার পায়ের ধুলির কোনা থেকেও নগন্য। তাহলে আমরা কেন তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করি।তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করার পুর্বে আমাদের ৫০০ বার ভাবা উচিত তার জায়গায় তো আমিও থাকতে পারতাম।তাই কেউ কখনো দুর্বল কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না। আপনি যেটা পছন্দ করবেন তাকেও সেটা দিয়ে খুশি রাখবেন কারন সে আমাদের মতই একজন মানুষ।তারও আমাদের মত বাঁচার অধিকার আছে।)
★
পরের দিন সকাল বেলা আনিকার কান্নার আওয়াজে তাকিয়ার ঘুম ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠে সে খুব অবাক হলো।জরিনাও তার পাশে দাড়িয়ে কাদঁছে।কি এমন হয়েছে?যে সবার চোখেই পানি।
আসছে।
~মুসাফফা মারহামা মিম।