মেরি জান 15,16

মেরি জান

মেরি জান সকল পর্ব👈 

মেরি জান (বিয়ে স্পেশাল)
পর্ব ১৫
( মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি ধুমধামে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে আন্দ্রেজ ও ইভানার। গোটা শহরের লোকজনের মনে রাখার মতো করেই চৌধুরী বাড়ির বিয়ের উৎসব চলবে আগামী তিনদিন পর্যন্ত। বউ নিয়ে বাড়িতে ফিরেছে আন্দ্রেজ। এখন রাত আটটা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট। সন্ধ্যার মধ্যেই ইভানাকে নিয়ে এসেছিল। আন্দ্রেজের ঘরেই বসে আছে ইভানা। সাথে শিয়া এবং শিয়ার দু’জন বান্ধবীও আছে । ইভানার সাথে দেখা করার জন্য লোকজন যাওয়া-আসা করছে । ইভানা সবার সাথে বেশ হাসিমুখে কথা বলার চেষ্টা করছে।
” ভাবি তোমার কি ক্ষুধা লেগেছে? “
ইভানার কাচুমাচু ভঙ্গিতে বসে থাকা দেখে শিয়া শুধালো। ইভানা মৃদু হেসে বললো,
” না শিয়া। “
” মুখ দেখে বুঝতে পারছো না শিয়া? ক্ষিদে লেগেছে বলেই চোখমুখ অমন শুকিয়ে গেছে। “
আচমকা আন্দ্রেজের আগমনে সবাই বেশ হকচকিয়ে গেল। ওর হাতে খাবারের প্লেট। ঘরে ঢুকে সোজা ইভানার পাশে বসলো ও। শিয়া ও ওর দুই বান্ধবী বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
” তা ঠিক বলেছো ভাইয়া। তুমি তাহলে ভাবিকে খাইয়ে দাও, আমরা একটু আসছি। “
ইভানার ভীষণ লজ্জা লাগছে৷ কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,
” তোমরাও বসো। আমি এখন খাবে না। “
” চুপ! তোমরা যাও। “
আন্দ্রেজের কথার পর ওরা তিনজন আর এক মিনিটও দেরি না করে রুম থেকে চলে যায়। বেচারা ইভানা গোলগোল চোখে আন্দ্রেজের দিকে তাকিয়ে আছে।
” কী হয়েছে? এমনভাবে তাকিয়ে আছো যেনো তোমাকে খাওয়াতে না খেতে এসেছি আমি! “
আন্দ্রেজ মুচকি হেসে বললো। ইভানা শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে,
” আপনাকে বিশ্বাস নেই। “
” কী বললে? “
” নাহ কিছুই না। “
” এসব রাতের জন্য তুলে রাখছি আপাতত। এখন চুপচাপ বসে খেয়ে নাও তো। “
” আচ্ছা। “
ইভানা চুপচাপ নিজেই খেয়ে নিলো। আন্দ্রেজ একবার চেয়েছিল নিজের হাতে খাওয়াবে কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো এসব ওকে দিয়ে হবে না।
পোল্যান্ড, ওয়ারশা শহর।
প্রিয় বান্ধবীর বিয়ে হয়েছে শুনে রেবেকা আজ দারুণ খুশি। আর সেই খুশি ভাগাভাগি করতে ম্যাকের সাথে একটা নাইট ক্লাবে এসেছে রেবেকা। এই কয়দিনে ম্যাকের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ওর। বন্ধুত্বের থেকেও হয়তো বেশি কিছু! কিন্তু ধর্মের বেড়াজালে আঁটকে গেছে সবকিছু।
” হেই রেবেকা! কী ভাবছো এতো? ক্লাবে এসে এভাবে কেউ চিন্তা করে? “
ম্যাকের কথায় ঘোর কাটলো রেবেকার। মৃদু হেসে বললো,
” কোথায় চিন্তা করছি? “
” সে তো তোমার চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বাই দ্য ওয়ে, চলো ডিনারে যাই। “
রেবেকা ভ্রু উঁচিয়ে শুধালো,
” ক্লাবে থাকতে চাও না? “
ম্যাক হেসে বললো,
” না। এখানে অনেক লোকজন। আপাতত নীরবতা দরকার একটু। “
” বেশ চলো তাহলে। “
” ওকে। “
ম্যাকের সাথে ডিনার করার জন্য ক্লাব থেকে বেরিয়ে গেলো রেবেকা। কখনো কখনো মুখে প্রকাশ না করলেও অনুভূতিরা আচার-আচরণে ঠিক ধরা দেয়। রেবেকাও ম্যাকের চোখেমুখে, আচরণে সেই অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারে এখন।
আন্দ্রেজ ও ইভানার বাসর ঘরটি রাজকীয়ভাবে সাজানো হয়েছে। প্রবেশের মুখে উজ্জ্বল সাদা ফুলের প্যাথওয়ে তৈরি করা হয়েছে। ঘরের মাঝখানে একটি বড়, স্বচ্ছ কাচের ফুলদানি রাখা হয়েছে, যেখানে রঙ-বেরঙের গোলাপ, লিলি ও জিপসফ্লাওয়ার সাজানো। ফুলগুলোর সুন্দর সুবাস পুরো ঘরকে স্নিগ্ধ করেছে। দেয়ালে সিল্কের ট্যাপেস্ট্রি ঝুলছে, যার রং হালকা গোলাপি এবং সাদা, যা ঘরের মার্জিত পরিবেশকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সারা ঘর জুড়ে কোমল আলো বিকিরণ করছে, যা ফুলের রঙগুলোকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। ফ্লোরে ছড়িয়ে আছে রংবেরঙের বেলুন। বিছানার একপাশে টেবিলে কিছু চকচকে মোমবাতি রাখা আছে, যা আলোর নরম আভা তৈরি করছে। বিছানার উপর সাদা ও গোলাপি রঙের কুশন সাজানো, সাথে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো।
খোলা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে ইভানা। চাঁদনি রাতের সৌন্দর্য সত্যিই অসাধারণ। চাঁদের সাদা আলো চারপাশের দৃশ্যকে এক নতুন জীবন দিচ্ছে যেন । মনে হচ্ছে গাছপালা, ঘাস, আর বাড়ির ছাদগুলো রূপালী চাদরে মোড়ানো। চাঁদের মৃদু আলোতে সবকিছু যেন এক অন্য রূপ ধারণ করেছে। আকাশে ছড়িয়ে থাকা তারাগুলো চাঁদের আলোকে আরও উজ্জ্বল করে তুলছে। হালকা হাওয়ায় ইভানার সামনের ছোটো চুলগুলো দুলছে , আর দূরে বাগানের মধ্যে অবস্থিত ঝর্ণার পানি চাঁদের আলোতে রত্নের মতো জ্বলজ্বল করছে। এমন নিস্তব্ধতার মাঝে এক ধরনের মাধুর্য যেন ভরে ওঠে। মনে হয়, এই মুহূর্তে পৃথিবী থেমে গেছে। চাঁদের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষণ এখানে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে নড়েচড়ে উঠলো ইভানা।
আন্দ্রেজ এসেছে নিশ্চিত! ইভানা তড়িঘড়ি করে বিছানার দিকে এগোতে যাবে তার আগেই দরজা আঁটকে দিলো আন্দ্রেজ।
” ওখানেই দাঁড়াও! “
ইভানা কিছুটা থতমত খেলো আন্দ্রেজের কথায়। লোকটা কি বকা দিবে? পোল্যান্ডে থাকাকালীন সেই রাতে আন্দ্রেজের যে হিংস্র রূপ ইভানা দেখেছিল সেটা কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারেনি মেয়েটা। আন্দ্রেজ ধীরপায়ে ইভানার দিকে এগোলো। ইভানা মোমের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে আছে। যেনো একটু নড়লেই কিছু হয়ে যাবে।
” এরকম পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? দাঁড়াতে বলেছি মানে এমন মোমের পুতুলের মতো? “
” না মানে…..”
ইভানার কথা শেষ হওয়ার আগেই আন্দ্রেজ আলতো করে জড়িয়ে ধরলো ওকে। সহসাই কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল ইভানা। ইভানার এই চুপচাপ হয়ে থাকা মোটেও ভালো লাগছে না আন্দ্রেজের। হাসিখুশি, চঞ্চল মেয়েদের নীরবতায় মানায় না। ওরা চুপ হয়ে গেলে সবকিছু এলোমেলো লাগে।
” ইভা একটু স্বাভাবিক হও প্লিজ! আমি তো তোমাকে বলেছি, তোমার সাথে ওরকম আচরণ করা মোটেও উচিত হয়নি আমার। “
” সমস্যা নেই। সেসব আমি ভুলে গেছি। “
” সত্যি? “
” হ্যাঁ। “
আন্দ্রেজ ইভানাকে নিয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ইভানাকে পেছন দিকে ফিরিয়ে ওর পেছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রেখে বললো,
” ডাহামিথ্যে বললে তুমি। ইভা আগের মতো হও না একটু! আমার এই ইভাকে চাই না। এরকম শান্ত, চুপচাপ! “
” আমি চেষ্টা করছি নিজেকে আগের মতো করার। আসলে ভালোবাসার মানুষের থেকে ওরকম আচরণ পেলে কোনো মেয়েই মানতে পারে না। “
ইভানার কণ্ঠে কেমন একটা অভিমান। আন্দ্রেজ বুঝতে পারছে সেটা। সত্যি তো বলেছে ও। দীর্ঘশ্বাস ফেললো মেয়েটা।
” ইভা! সরি! প্লিজ ফরগিভ মি!”
ইভানা আন্দ্রেজের দিকে ফিরে চোখে চোখ রাখলো। আজকের মতো এতটা শীতল চোখের চাহনি আগে দেখেনি ও। এই আন্দ্রেজ যেনো অন্য কোনো মানুষ!
” আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। “
” বেশ! আজকের রাত নিয়ে কোনো প্ল্যান আছে তোমার? “
ইভানার কোমরে হাত রেখে টেনে কাছাকাছি নিয়ে আসলো আন্দ্রেজ। ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির রেখা লেপ্টে আছে। ইভানা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে শুধু। কীসের প্ল্যানের কথা বলছে লোকটা? ছিহ!
” না মানে আসলে… প্ল্যান মানে!”
” প্ল্যান মানে কোনো বিশেষ কিছু করবে বলে ভেবেছ? যেমন ধরো, বাগানে গিয়ে একসাথে চাঁদ দেখা কিংবা একসাথে গল্প করা? “
আন্দ্রেজের কথায় হাঁপ ছেড়ে বাঁচল ইভানা। যতটা অধৈর্য লোকটাকে ভেবেছিল ততোটাও নয়। তবে আন্দ্রেজ যে কীভাবে নিজেকে সামলে নিচ্ছে সেসব তো ইভানা বুঝতে পারছে না৷ নিজের প্রেয়সীর সাথে আর কখনোই এমন আচরণ করবে না যাতে তার খারাপ লাগে। সেজন্যই নিজের ইচ্ছেকে মাটিচাপা দিয়ে দিচ্ছে আন্দ্রেজ।
” চলুন বাগানে যাবো। আজকের চাঁদটা বেশ সুন্দর, তাই না? “
” হ্যাঁ, তবে তোমার থেকে বেশি সুন্দর নয়। “
চোখে চোখ রেখে কথাটা বলাতে খানিকটা লজ্জা পেলো ইভানা। আন্দ্রেজ বিষয়টা বুঝতে পেরে ওর লজ্জা আরেকটু বাড়াতে কোলে তুলে নিলো।
” এই! কী করছেন? “
” বাগানে যাচ্ছি। “
” কিন্তু এভাবে কোলে তুলে অতদূর! না মানে….”
” তোমার বর অনেক স্ট্রং বুঝলে? “
carnation Academy
carnation Academy
মেরি জান
পর্ব ১৬
” এই! কী করছেন? “
” বাগানে যাচ্ছি। “
” কিন্তু এভাবে কোলে তুলে অতদূর! না মানে….”
” তোমার বর অনেক স্ট্রং বুঝলে? “
ইভানা মুচকি হেসে মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বললো। আন্দ্রেজ ইভানাকে কোলে তুলে নিয়ে ধীরে ধীরে বাগানের দিকে এগোচ্ছে।
বিছানায় অর্ধচেতন অবস্থায় শুয়ে আছেন কিং জিয়ান! সিলভা কি ইয়ানকে বলেনি আন্দ্রেজকে খবর দিতে? এভাবে বেশিক্ষণ হয়তো চোখ মেলে থাকতে পারবেন না জিয়ান। নিজের অন্তিম মুহুর্ত আগত বুঝতে পেরেই আন্দ্রেজকে দ্রুত দেখা করার জন্য বলেছিলেন তিনি। কিন্তু জিয়ানের এখন ইয়ানের উপরই সন্দেহ হচ্ছে। আন্দ্রেজকে বললে এতক্ষণে আন্দ্রেজ চলে আসতো নিশ্চিত। তবে এখন একটাই পথ খোলা আছে। টেলিপ্যাথি! হ্যাঁ আন্দ্রেজকে মনে মনে ডাকবে জিয়ান। এখন এটাই একমাত্র উপায় ওকে সবকিছু জানানোর।
চাঁদের ঝলমলে আলোতে প্রেয়সীর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আন্দ্রেজ। ইভানা ও আন্দ্রেজ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। ওরা দু’জন ঠিক ততটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে যতটা কাছে থাকলে একজন আরেকজনের নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারে। ইভানা কেমন ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে প্রিয়তম স্বামীকে। পরিবেশটাই এমন যে সবকিছু মোহনীয় লাগছে।
” ভালোবাসেন? “
ইভানা মৃদু স্বরে শুধালো। আন্দ্রেজ মুচকি হাসলো।
” তুমি কি জানো না? “
” প্রশ্ন করেছি উত্তর চাই। প্রশ্নের বদলে প্রশ্ন নয়! “
” হ্যাঁ ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি। “
ইভানা চোখ বন্ধ করে ফেলে লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেললো। ফের তাকিয়ে বললো,
” আমিও ভালোবাসি আপনাকে। “
আন্দ্রেজ কিছু বলতে যাবে এমন সময় মাথার ভেতর কেমন একটা করে উঠলো। কানের কাছে কে যেনো অস্পষ্ট স্বরে কিছু একটা বলছে বলে অনুভূত হচ্ছে ওর। কিন্তু কে ডাকছে ওকে? মামা! নাহ, উনার কণ্ঠস্বর তো এমন না। আন্দ্রেজ ইভানাকে বাহুডোর থেকে মুক্ত করে চোখ বন্ধ করে ফেললো। ইভানা ওর হালচাল দেখছে।
” কিং জিয়ান? আপনি আমাকে শুনতে পাচ্ছেন? “
আন্দ্রেজের কণ্ঠস্বর শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন জিয়ান। কিন্তু এভাবে সব কথা বলা সম্ভব হবে না। সেজন্য জিয়ান সরাসরি বললেন,
” তুমি এখুনি আমার কাছে এসো। দয়া করে দেরি করবে না এবং কাউকে জানাবে না। আমার হাতে সময় কম আন্দ্রেজ! “
কিং জিয়ানের কথার আগামাথা কিছুই বুঝল না আন্দ্রেজ। তবে বিষয়টা যে গুরুতর সে বিষয় নিশ্চিত।
” আমি আসছি।”
আন্দ্রেজ কথা শেষ করে চোখ মেলে তাকাতেই ইভানাকে খেয়াল করলো। মেয়েটা যে ওর সাথেই দাঁড়িয়ে আছে তা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল আন্দ্রেজ।
” একা একা কীসব বললেন আপনি! আপনার শরীর ঠিক আছে তো? “
ইভানার কণ্ঠে বিস্ময় সাথে কৌতুহল। আন্দ্রেজ আপাতত কিছু বলবে না ওকে। আগে জিয়ানের সাথে কথাবার্তা বলে আসুক তারপর সময় নিয়ে সবকিছু গুছিয়ে বলবে।
” আরে আমি ঠিক আছি। চলো রুমে যাই। “
” এখুনি চলে যাবো? “
” হ্যাঁ। আমাকে একটু বেরোতে হবে ইভা। “
” এখন! “
ইভা কিছুটা অবাক হলো। যে পুরুষ বিয়ের আগে ওকে কাছে পাওয়ার জন্য অধৈর্য হয়ে গেছিল সেই পুরুষ আজ, ফুলসজ্জার রাতে এভাবে নিষ্ক্রিয় আছে কীভাবে? সবটা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে মেয়েটার। কিছু তো অস্বাভাবিক আছেই!
” হ্যাঁ। এসব নিয়ে পরে কথা বলবো। রাত তো ফুরিয়ে যাচ্ছে না। আর তুমিও আছো আমিও আছি। তাছাড়া চাঁদনি রাতও আছে। মন খারাপ করো না ইভা। চলো এখন। “
” ঠিক আছে। “
ইভা মুচকি হেসে বললো। আন্দ্রেজ ইভানার ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে আবারো কোলে তুলে নিলো। তবে এবারে আর ধীরপায়ে নয় দ্রুত ঘরে চলে গেলো।
ইভানাকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে ঘরের বাইরে এসেই বাতাসের গতিতে কিংবা তারচে বেশি গতিতে ছুটতে লাগলো আন্দ্রেজ। এতটাই দ্রুত যে আন্দ্রেজকে দেখা যাচ্ছে না। ঠিক একঘন্টা পর ভিসলা নদীর উপকন্ঠে এসে পৌঁছল ও। সামনে ঘন জঙ্গল। আন্দ্রেজ কালক্ষেপণ না করে আবারো কাঙ্খিত জায়গার উদ্দেশ্যে ছুটতে লাগলো। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে প্রাসাদের সামনে এসে থামলো আন্দ্রেজ। সামনে এগোতে যাবে এমন সময় মনে পড়লো কিং জিয়ানের শেষ কথাটা! কেউ যেনো না জানে! তারমানে প্রাসাদের মধ্যে ঢুকতে গেলেও গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে। আন্দ্রেজ সেইমতন ধীরপায়ে প্রাসাদের ভেতর প্রবেশ করলো। মনে হচ্ছে প্রাসাদের অধিকাংশ ভ্যাম্পায়ার শিকারের জন্য বাহিরে গেছে। সেজন্য প্রাসাদটা কেমন শুনশান লাগছে।
” আন্দ্রেজ! তুমি এখন এখানে? “
আচমকা পেছন থেকে সিলভার কথায় চমকাল আন্দ্রেজ। কী করবে এখন? কিং জিয়ান যখন গোপনে আসতে বলেছেন তখন গোপনে আসাই কি উচিত নয়? আন্দ্রেজ দ্রুত সিন্ধান্ত নিলো। সিলভা ওর সামনের দিকে আসার আগেই ইয়ানের রূপ ধারণ করলো আন্দ্রেজ। বলা বাহুল্য, ইয়ান এবং আন্দ্রেজের শারীরিক গঠন প্রায় একইরকম, সুঠাম দেহের অধিকারী ।
” সিলভা তুমি ভুল করছো, আমি আন্দ্রেজ নই। “
” ইয়ান! “
” হ্যাঁ। “
ইয়ানকে দেখে সিলভা ক্রুর হেসে ওর হাত ধরে একপাশে গিয়ে দাঁড়াল।
” তুমি এসেছো ভালো করেছো ইয়ান। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সূর্যোদয়ের পূর্বেই কিং এর জীবনীশক্তি হারিয়ে যাবে। যদিও উনি চাইলে আন্দ্রেজকে ডাকতে পারবেন। “
সিলভা কথাগুলো বলে একটু থামলেন। আন্দ্রেজ তো অবাক হচ্ছে এসব শুনে। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। সিলভা আবারো বলতে লাগলেন,
” কিন্তু আমার মনে হয় না ফুলসজ্জার রাতে আন্দ্রেজের অন্য কোথাও মনোযোগ দেওয়ার সময় হবে। যেহেতু ওর মন ইভানার দিকেই থাকবে তাই আমার মনে হয় কোনো সমস্যা হবে না। “
আন্দ্রেজ বুঝতে পারছে না ঠিক কী বলবে! নিজের কানকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। ওর মামা? ইয়ান এসবকিছুর সাথে জড়িয়ে আছে!
” কী হলো ইয়ান! “
আন্দ্রেজের নীরবতায় ফের কথা বলে উঠলো সিলভা। এবার মুখ খুললো আন্দ্রেজ।
” কিছু না সিলভা। তোমার কথাগুলো ভাবছিলাম। অবশেষে আমাদের ইচ্ছে পূর্ণ হবে, তাই না? “
সিলভা ইয়ান রূপী ইয়ানকে জড়িয়ে ধরে হেসে বললো,
” হ্যাঁ ইয়ান। আচ্ছা শোনো!”
দুজনে ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতে লাগলো।
” হ্যাঁ বলো সিলভা। “
” তুমি কি এখন যাবে? “
” হ্যাঁ। কেনো? “
” তাহলে আমিও একটু কক্ষে যাবো। সকালে আবার মরাকান্না কাঁদতে হবে তো। “
কথাটা বলেই বেশ হেসে উঠলো সিলভা। আন্দ্রেজও সাথে তাল মিলিয়ে হাসলো কিছুটা। সিলভার মনে সন্দেহ সৃষ্টি হোক সেটা মোটেও চায় না আন্দ্রেজ।
” অবশ্যই! আমি গেলাম তুমিও নিজের কক্ষে যাও। “
” ঠিক আছে। সকালে দ্রুত এসো, সূর্য ওঠার আগেই। “
সিলভা এ কথা বলে নিজের কক্ষের দিকে এগোলো। আন্দ্রেজ ওকে দেখানোর জন্য সদরদরজা দিয়ে বাইরে বেরোতে লাগলো। কিন্তু সিলভা দৃষ্টির আড়াল হতেই আন্দ্রেজ পুনরায় প্রাসাদের ভেতর প্রবেশ করলো। ইয়ান রূপেই দ্রুত পা চালিয়ে কিং জিয়ানের কক্ষের দিকে এগোতে লাগলো। কক্ষে ঢুকেই দরজা ভালো করে বন্ধ করে নিলো আন্দ্রেজ। কিং জিয়ান আধো আধো চোখে ওর দিকে দৃষ্টিপাত করতেই আঁতকে উঠলেন। আন্দ্রেজ বিষয়টা বুঝতে পেরে নিজের আসল চেহারায় ফিরে এলো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন কিং জিয়ান। আন্দ্রেজ উনার পাশে গিয়ে বসে শুধালো,
” আপনি ঠিক আছেন? “
” আ..মি ঠিক আছি। আন্দ্রেজ আমার হাতে সময় কম! ভোরের আলো ফুটতে খুব একটা দেরি নেই। তার আগেই আমার সমস্ত শক্তি আমি তোমাকে অর্পণ করবো। “
কিং জিয়ানের কথায় চমকাল আন্দ্রেজ। শক্তি অর্পণ করা মানে তৎক্ষণাৎ জীবনীশক্তি হারিয়ে ফেলা। কিং জিয়ান এমন সিন্ধান্ত কেন নিচ্ছেন?
” এসব কী বলছেন! আপনি তো জানেন….”
” আমি সবকিছুই জানি, বুঝি আন্দ্রেজ। জেনেশুনেই বলছি এসব। তুমি জানো না তোমার মামা…..”
কিং জিয়ান কথা শেষ করার আগেই আন্দ্রেজ বলে,
” আমি জানি কিং! মামা আর সিলভা মিলেই আপনার এই হাল করেছে। “
” শুধু তাই নয় আন্দ্রেজ। ইয়ান কখনো তোমার ভালো চায়নি। “
আন্দ্রেজের যেনো আজকে শুধু অবাক হওয়ার পালা।
” কী বললেন কিং? “
” ধৈর্য ধরে শোনো সবটা। “
আন্দ্রেজ চুপ করে রইলো। কিং জিয়ান সবকিছুই বলতে লাগলেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *