বন্য প্রণয়
পর্ব_২
( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
রাতের আঁধার ফুরিয়ে দিনের আলো ফুটেছে চারদিকে। গ্রামাঞ্চলে এখনো একটু-আধটু শীতল ভাব থাকলেও শহুরে জীবনে তার বালাই নেই। আয়ান ঘুম থেকে উঠেছে আজ একটু তাড়াতাড়ি। কালকে থেকে রমজান শুরু। আর রমজান আসলেই নিজেকে সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত রাখে সে। রমজানে কারো পরিবর্তন দেখলে ঠান্ডা, বিদ্রুপের সহিত হাসাহাসি করা উচিত নয়। কারণ রমজান মাস আসে মানুষকে পরিবর্তন করতে। ফোনের স্ক্রিনে সময় দেখে নিলো আয়ান। সকাল সাতটা চল্লিশ বেজেছে! তাহলে এরমধ্যে নিশ্চয়ই তৃষাও ঘুম থেকে উঠে গেছে? আনমনে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো আয়ান। তৃষা আয়ানের ছোটো বোন৷ বয়সে দু’বছরের ছোটো বড়ো হওয়ায় সম্পর্কটা মারকাটারি টাইপের।
” ভাইয়া! এই ভাইয়া!”
তৃষার গলার আওয়াজ শুনতেই আয়ান বিছানায় মরার মতো পড়ে রইলো আবারও। তৃষা এসে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখলো তার গুণধর ভাই এখনো শুয়ে। তাহমি শ্বশুর বাড়ি গেছে মাত্র একদিন তবুও মনে হয় কতদিন দেখা হয়নি! তাহমি তৃষা ও আয়ানের বড়ো। তিন ভাইবোনের সংসার থেকে একজন দূরে সরে যাওয়ায় তৃষার মনটা বেশ খারাপ। তাই তো সকাল সকাল এলো ভাইয়ের কাছে আদর খেতে। তৃষা তবুও আবারও ডাকলো আয়ানকে।
” ভাইয়া? ভাইয়া? একটু উঠবি? আমার না মনটা কেমন কেমন করছে। একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিবি? দে না প্লিজ!”
বোনের এমন আবদার শুনে আর শুয়ে থাকতে পারলোনা আয়ান। দু’জনের মধ্যে যেমন ঝামেলা হয় তেমনি ভালোবাসাও প্রখর। তাহমির সাথে অবশ্য এতটা সখ্যতা ছিলো না ওদের। সারাদিন বাইরে কাজ করে বিকেলে বাসায় ফেরার পরে সন্ধ্যায় যা আড্ডা হতো তিন ভাইবোনের। কিন্তু বেশিরভাগ সময় তৃষা আর আয়ানই বাড়ি মাথায় করে রাখতো। আয়ান অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে আছে আর তৃষা অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ালেখা করছে।
” কী হয়েছে তৃষু? মন খারাপ? আয় এদিকে। শো আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”
ভাইয়ের ডাকে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো তৃষা। ভেবেছিল একবার তাহমিকে কল দিবে। কিন্তু সকাল সকাল কল দিলে যদি দুলাভাই কিছু মনে করে? সেজন্য আর কল দিলো না। আয়ানের স্নেহভরা স্পর্শে কিছুক্ষণের মধ্যেই তৃষা ঘুমিয়ে গেলো। ঘুমন্ত বোনের মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো আয়ান। কিছুক্ষণ বাগানে হাঁটবে বলে ঠিক করেছে সে।
” আপনি কে বলছেন? সহন কোথায়?”
সাত-সকালে ফোনের রিংটোনের আওয়াজ শুনতেই ঘুম ভেঙে গেছিল তাহমির। ঘুমকাতুরে চোখে আশেপাশে তাকিয়ে খেয়ালে আসে সে এখন বিবাহিতা এবং শ্বশুর বাড়ি আছে। কিন্তু বর কই? রাতের কথা মনে পড়তেই দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করেছিল তাহমি। ফ্লোরে শুয়ে আছে সহন। পাশে ফোনটা অবিরত বেজে যাচ্ছে। যদিও অন্যের জিনিস না বলে ধরা উচিত নয় তবুও কেনো জানি হুড়মুড়িয়ে উঠে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়েছিল সে। স্ক্রিনে ‘Nila’ নামটা দেখতেই সকাল সকাল মেজাজ বিগড়ে গেলো তাহমির। কল রিসিভ করতে ‘হ্যালো’ বলতেই অপর পাশ থেকে শুনতে পেলো উক্ত কথাটি।
” আমি তোমাদের বিচ্ছেদের কারণ। শোনো মেয়ে তুমি আমার বয়সে ছোটো। ভালো করে লেখাপড়া কমপ্লিট করে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে নাও। গতকাল আমার আর সহনের বিয়ে হয়ে গেছে। বিশ্বাস না হলে আজকে এসে দেখে যাও।”
বিপরীত দিকের ভদ্রমহিলার কথোপকথন শুনে নীলা থমকাল। আসলেই কি সহন বিয়ে করেছে? কিন্তু কীভাবে? ছেলেটা তো তাকে পাগলের মতোই ভালোবাসে!
” আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আপনি কি ওর কোনো বান্ধবী? “
” এই বোকা মেয়ে বান্ধবী হলে এতো সকালে ওর রুমে কী করতাম বলো? “
নীলার মেজাজ বিগড়ে গেলো। সহসাই রেগে কিছু গালিগালাজ করলো।
” চুপ বে*ডি। আমার হবু জামাইয়ের ফোন নিয়া ফাইজলামি? মা*গি তুই ফোন সহনকে দে।”
তাহমি অবাক হলো। একটা মেয়ের ব্যবহার এরকম হতে পারে? সহনের দিকে তাকিয়ে রাগে বোম হয়ে ফোন কেটে দিলো তাহমি৷ এসব মেয়েদের সাথে ঝামেলা করে লাভ নেই। যা ভেবেছিল তাই! সহনের গার্লফ্রেন্ড মোটেও সুবিধার না। তাহমি দ্রুত নীলার নম্বর ব্লক লিস্টে এড করে নম্বরটা পাল্টে আবারও সেইভ করলো। তাহমির একটা পুরনো বন্ধ সিমের নম্বর ছিলো সেটা। যাতে সহন যদি কল করেও তবুও বন্ধ পায়। কিন্তু ওপাশ থেকে যদি নীলা অন্য কোনো সিম দিয়ে কল দেয় তখন? পরের কথা পরে হবে। এসব ভেবে ফোন ঠিক জায়গায় রেখে গোসল সেড়ে নিলো তাহমি। সকালে গোসল করা তার অভ্যাস।
ঘুম ভেঙে নিজেকে ফ্লোরে শুয়ে থাকতে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হলে সহন। গতকাল রাতের ঘটনা স্মৃতিপটে ভেসে উঠতেই আশেপাশে তাকিয়ে দেখে। তাহমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে ব্যস্ত। সহন উঠে গিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগোলো।
” সহন এদিকে এসো তো।”
ঠোঁট বাকিয়ে বললে তাহমি। সহন ভ্রু নাচিয়ে শুধালো,
” হঠাৎ তুই থেকে তুমি? “
” এখন তুমি আমার স্বামী তো। আর স্বামীকে তুই করে ডাকা কেমন লাগে না? এজন্য। “
সহনের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো তাহমি। সহন তড়িৎ গতিতে ফিরলো সেদিকে। কে জানে আবার কী করবে এই মেয়ে!
” কিছু বলবি? নইলে সর গোসল সেড়ে আসি।”
” গোসল যখন করতেই হবে কারণে করে,অকারণে কেনো?”
” তাহমি! নির্লজ্জতা ছাড় এবার তুই। মেয়ে মানুষ তুই একটু লাজলজ্জা তো থাকা লাগে। “
” আমি মানুষ, নট মেয়ে মানুষ। “
” হ ভাই। আচ্ছা তুই তো আমাকে ভালোবাসিস না। তাহলে এভাবে সংসার করার জন্য উঠেপড়ে লাগলি কেনো?”
তাহমি হুট করেই দু’হাতে গলা আঁকড়ে ধরলো সহনের। সহন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। এই মেয়েকে বারণ করলে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে সেই কাজ করে।
” দেখ সহন তোকে আমি কখনো ওই নজরে দেখিনি৷ তুই জানিস তো কলেজ কিংবা ভার্সিটি নিয়ে দু’টো প্রেমও করেছিলাম। সুতরাং তোকে আগ থেকে ভালোবাসার প্রশ্ন আসে না। “
” তাহলে? “
” তাহলে কী? বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক। আমরা এখন সেই সম্পর্কে আছি। আমি তোমার সাথেই সংসার করবো এবং তুমিও করবে। আর শোনো মাঝে মধ্যে তুই হয়ে যাবে৷ আস্তে আস্তে তুমি বলা অভ্যাস করবো।”
সহনের মাথা ঘুরছে। তাহমির পাগলামি তার জন্য চূড়ান্ত শাস্তি। নীলা কল দিয়েছিল গতকাল রাতে। কিন্তু ঘুম চোখে ঠিকঠাক কথা বলতে পারেনি সহন। কল ব্যাক করতে হবে। সামনা-সামনি দেখা করে মেয়েটাকে সবকিছু বলে সামলাতেও হবে সহনকে। এসব কথা খেয়ালে আসতেই তড়িৎ গতিতে তাহমিকে দূরে সরিয়ে দেয় সহন।
” তোর যা ইচ্ছে কর। আমি এখন গোসল করতে গেলাম।”
সহন আর কালক্ষেপণ না করে দ্রুত বাথরুমে চলে যায়। তাহমি ভেজা চুলগুলো ভালো করে ঝেড়ে মুছে ঘর থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরের দিকে এগোতে থাকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখে তার শ্বাশুড়ি ইতিমধ্যে চা,নাস্তা তৈরি করে ফেলেছেন। তাহমিকে দেখেই ফরিদা হেসে বলে ওঠেন,
” ঘুম ভেঙেছে? ফ্রেশ না হয়ে এলে হয়ে এসো। নাস্তা রেডি আছে। “
” আন্টি তুমি আমাকে তো আগের মতোই ট্রিট করছো! এখন কিন্তু আমি তোমার ছেলের বউ। একটু শ্বাশুড়ি শ্বাশুড়ি ভাব নিবা না?”
” ভাবসাব পরে নিবো। আগে একটু ভালো ব্যবহার করি। দু’দিন পরে দেখবি আমার আসল রূপ। “
ফরিদা খানের কথা শেষ হতেই তাহমি ও তিনি একসাথে হেসে উঠেন। সহনের মায়ের সাথে তাহমির আগে থেকেই সম্পর্ক বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলো। এখন সেটা আরও গাঢ় হচ্ছে।
” হুম বুঝলাম। তোমার ছেলেটা তোমার মতো কেনো হলোনা বলো তো?”
” কেন? কিছু বলছে ও? না-কি অন্য সমস্যা? “
” বলবে কী? আমার থেকে পালাই পালাই করে। অন্যত্র সম্পর্কে আছে তোমার ছেলে। মেয়েটা বিশেষ সুবিধার ঠেকলো না আমার। “
সহনের মা নববিবাহিতা তাহমির কথায় হকচকিয়ে গেলেন। সবকিছু কতটা স্বাভাবিকভাবে বললো মেয়েটা!
” তাহমি আমরা কিছু জানতাম না। আমি সহনের সামনে কথা বলবো।”
” দরকার নেই। আমি আর সময় মিলে সবকিছুই ঠিক করে নিবো। আপাতত তুমি নাস্তা দাওও ক্ষুধা লেগেছে খুউব।”
চলবে,
” তাহমি আসলে আমরা কিছু জানতাম না। জানলে এভাবে হুট করে বিয়েটা হতো না। যাইহোক, আমি সহনের সামনে কথা বলবো।”
” দরকার নেই। আমি আর সময় মিলে সবকিছুই ঠিক করে নিবো। আপাতত তুমি নাস্তা দাওও ক্ষুধা লেগেছে খুউব।”
আহ্লাদী স্বরে কথাগুলো বলেই একটা চেয়ার টেনে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলো তাহমি। ফরিদা খানও একেবারে আদর্শ শ্বাশুড়ির মতো ছেলের বউয়ের সামনে নাস্তা পরিবেশন করে দিলেন।
” খেয়ে নে তাহলে। “
” উঁহু সবাই একসাথেই খাবো। তোমার ছেলে তো আসছে গোসল সেড়ে, আঙ্কেল এখনও ঘুমিয়ে? “
” না,উঠেছে। এখুনি হয়তো চলে আসবে। অফিস আছে তো। শোন তাহমি আঙ্কেল বলে ডাকবি না একদম। আব্বু বলে ডাকবি ঠিক আছে? “
” ওকে মামুনি ঠিক্কাচ্চে। “
” তুই আর বড়ো হলি না তাহমি। আগের মতোই পাগলাটে রয়ে গেলি!”
তাহমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন সহনের মা। তাহমি কখনো চায়নি ব্যক্তিত্বের অজুহাত দিয়ে প্রিয়জনের সামনেও নিজেকে গুটিয়ে রাখতে। ওসব বাইরের লোকজনের সামনে ঠিক আছে। বাঁচবে কয়দিন? কী লাভ এতো গম্ভীর হয়ে?
ঘড়িতে সময় রাত তিনটা বেজে ত্রিশ মিনিট। ফোনের এলার্মের শব্দে ঘুমে যথেষ্ট ব্যাঘাত ঘটছে আয়ানের। আজকে প্রথম রমজান বলে একটু আগেভাগেই উঠার জন্য সময় বাড়িয়ে এলার্ম সেট করেছিল সে। কিন্তু ঘুম চোখে কিছুই খেয়াল থাকে না আয়ানের। তাই এলার্ম বন্ধ করে ফোনটা বালিশের নিচে ঢুকিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো সে। কিন্তু না সেটা আর হলো না। মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো আয়ানের। রমজান এলেই মায়েরা এমন করেই সন্তানের ডেকে দেন। রাতে দরজা খুলে রেখেই ঘুমায় আয়ান। তাই ঘরে ঢুকতে কোনো প্রকার বেগ পেতে হলো না আমেনা ইসলামের।
” আয়ান! আয়ান ওঠ সেহেরির সময় হয়ে গেছে। আয়ান?”
আয়ান না ঘুমিয়েও বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমকাতুরে ভান করে বললো,
” মা আরেকটু পরে উঠি? তোমরা খাও গিয়ে। “
” অলরেডি চারটা বাজবে প্রায়। তুই এই কথা বলতে বলতে পাঁচটা বাজিয়ে ফেলবি তবুও তোর আরেকটু পর আর হবে না বাপ। তুই এখুনি ওঠ নয়তো তৃষাকে এখানে পাঠিয়ে দিবো। ও আসলে তোর চুল টেনে ওঠাবে। “
অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো আয়ান। তৃষা আসলে আবার মারামারি করবে। তারচে মায়ের কথামতো উঠলেই ভালো হবে।
” না মা। আমি হাতমুখ ধুয়ে আসছি এখুনি। ওই শাঁকচুন্নিকে আর পাঠাতে হবে না। “
” ঠিক আছে। “
ছেলেকে ডেকে দিয়ে এসে ডাইনিং টেবিলে চেয়ার টেনে বসলেন আমেনা ইসলাম। আয়ানের বাবা ব্যাবসার কাজে রাজশাহী গেছেন তিন দিন আগে। সেখানেই থাকবেন আরো দু’দিন। তাই আপাতত দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়েই রমাদানের প্রথম সেহরি সম্পন্ন করবেন আমেনা। গতবছরও বড়ো মেয়েটা সেহরির সময় সাথে সাথে কাজকর্ম করেছিল, একসাথে খেয়েছিল। এ বছর সে তার শ্বশুর বাড়ি! চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে এলো আমেনার। হাতের পিঠ দিয়ে দু-চোখ মুছে সহসাই মেয়ের নম্বরে ডায়াল করলেন। বার দুয়েক আওয়াজ হতেই কল রিসিভ করলো তাহমি। শান্তভাবে কথা বলতে শুরু করলেন তিনি।
” আসসালামু আলাইকুম আম্মু। কেমন আছো তোমরা?”
” ওয়া আলাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ, তোমরা কেমন আছো? “
” জি আলহামদুলিল্লাহ। সেহেরি খেতে সবাই উঠেছে? তৃষা কোথায়?”
” তৃষা ঘরে আছে। আয়ান আসছে ফ্রেশ হয়ে। তারপর একসাথে সবাই খাবো। তুমি খেয়েছো? সহন খেয়েছে?”
” আমরা খেতে বসলাম মাত্র! তবে সহন আগেই খেয়ে চলে গেছে রুমে। “
” তাহলে রাখলাম এখন। আল্লাহ হাফেজ তাহমি।”
” আল্লাহ হাফেজ আম্মু।”
টুট টুট……
কল কেটে দীর্ঘশ্বাস ফেললো তাহমি। দু’টো দিনের ব্যবধানে কতটা পর হয়ে গেছে সে? একেবারে তুই থেকে তুমি তুমি করে ডাকলেন মা!
” কী হলো তাহমি? অমন অন্যমনস্ক হয়ে গেলি যে! সবকিছু ঠিক আছে? “
শ্বাশুড়ির প্রশ্নে হকচকিয়ে উঠলো তাহমি। সামনে ভাতের প্লেট তার। সহন এরমধ্যে খেয়ে রুমে চলে গেছে। আতাউল খান আর ফরিদা খানও প্রায় শেষের দিকে। শুধু তাহমির দেরি!
” না মামুনি। আমিও খাচ্ছি। “
তাহমি খাওয়াতে মনোযোগ দিলো। এদিকে রুমে এসে বিছানায় বসে নীলার নম্বরে আবারও কল দিলো সহন। সকাল হতেই নীলার নম্বরটা বন্ধ বলছে। নীলা কি তার বিয়ের বিষয় কিছু জানতে পেরেই নম্বর পরিবর্তন করলো? নাহ বাসায় বসে কিছু জানা যাবে না। তাহমির ভয়ে সারাদিন বাসায় বেড়ালের মতোই শুয়ে-বসে কাটিয়েছে সহন। কিন্তু না! ওকে ভয় পেলে নীলাকে হারাতে হবে। তাই আগামীকাল নীলার বাসায় গিয়ে দেখা করার জন্য মনঃস্থির করলো সহন। ভাবনার অতলে এতটা তলিয়ে ছিলো সে তাহমির ঘরে আসার বিষয়টা অবধি টের অবধি পায়নি। আজান হতে এখনো আধঘন্টা বাকি। তাই এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে বিছানার পাশের ছোটো টেবিলের উপর রাখলো তাহমি। আর তাতেই টনক নড়ল সহনের। তাহমি তার পাশে বসার আগেই প্রায় চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,
” দূরে সরে বস প্লিজ। রোজার একমাস আমার আশেপাশেও আসিস না ভাই। “
তাহমি চুপ করে রইলো। নেহাৎ রোজার কথা বললো বলেই এই নীরবতা। বিছানায় বসলো না। একটা চেয়ার টেনে একটু সামনে এগিয়ে বসলো।
” হয়েছে? “
” হু।”
ফোনের স্ক্রিনে মনোযোগ সহনের। তাহমির হাতেও ফোন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগানোর সময় হয়েছে এখন। তাহমি ক্যামেরা অন করে ফ্ল্যাশ লাইট না জ্বেলে সহনের একটা ছবি তুললো। যাতে সহন বুঝতে না পারে তার ছবি তোলা হয়েছে। গতকাল ফেইসবুকে এরকমই একটা ভিডিও দেখেছিল তাহমি। সেই মোতাবেক নিজেও ছবিটা জুম করতে লাগলো সে। জুম করতে করতে এতটা বড়ো করলো যে সহনের চোখের মধ্যে অন্য একটা মেয়ের অবয়ব দেখতে পেলো। ব্যাস! চেয়ার পাশে সরিয়ে এক ঝটকায় সহনের পাশে বসলো তাহমি। সহন চমকাল,থমকাল তাহমির কর্মকান্ডে। তাহমি চিলের মতো ছোঁ মেরে সহনের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বড়ো বড়ো চোখ দিয়ে স্ক্রিনে ভেসে থাকা মেয়েটার ছবি দেখলো। না তাহমির চেয়ে মেয়েটা মোটেও সুন্দরী নয়। ঠোঁটের কোণে পৈশাচিক হাসির রেখা ফুটে উঠেছে তাহমির। সহন চটে গেল উল্টো!
” এই তুই এভাবে আমার ফোনটা হাত থেকে কেনো নিয়েছিস?”
তাহমি তড়িৎ গতিতে সহনের বুকের উপর উঠে বসে গলা চেপে ধরার ভঙ্গিতে রেগেমেগে বললো,
” একটু আগে কী বললি? রমজান মাসে আমি যেনো দূরে সরে থাকি। আমি তোর স্ত্রী আমার সাথে দূরত্ব, আর এই পরনারীর ছবি দেখছিস তার বেলায় কিছু না? “
” তাহমি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। এভাবে বুকের উপর উঠে বসলি কেন? এতো বেহায়া কেউ হয়!”
” কীসের বেহায়া? তুই আমার স্বামী। তোর সবখানেই উঠে গড়াগড়ি খাবো আমি। “
সহন বলপ্রয়োগ করে তাহমিকে পাশে সরিয়ে দিয়ে নিজের ফোন হাতে নিলো।
” এতো গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছে করলে সামনের মাঠে যা। “
” তুই যদি ওই মেয়ের সাথে আর যোগাযোগ রাখিস আর সেটা যদি আমি টের পাই সহন তাহলে পুরো ঘরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিবো। আর শোন তোকে তুই করেই ডাকবো। যেদিন তুই তুমির যোগ্য হবি সেদিন তুমি করে বলবো।”
সহন প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে। বিরক্তির পর্যায় এতটা বাড়ন্ত লাগছে খাট থেকে নেমে চেয়ারে বসেছে ছেলেটা।
” তুই তুমি ডাকলে মনে হয় আমি ধন্য হয়ে যাবো! আগুন তুই তোর মাথায় লাগা। নয়তো পাবনা যা। একটা পাগল বিয়ে করিয়ে দিয়েছে আমাকে। ধ্যাৎ! “
তাহমি ওভাবেই বিছানায় বসে রইলো। সহন ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো কথা শেষ করেই। আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে চারদিক থেকে। তাহমি অসহায় দৃষ্টিতে টেবিলে রাখা পানির গ্লাসের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশ লোকটার সাথে ঝামেলা করতে গিয়ে আরেক গ্লাস পানি খাওয়া হলোনা! ভাল্লাগে না ধ্যাৎ!
( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
ঘড়িতে সময় সকাল সাতটা, বুধবার। অভ্যস্ততা দরুন আজকেও রান্নাঘরে এসে উপস্থিত হয়েছেন ফরিদা। কারণ আটটার মধ্যে আবার আতাউল খানের নাস্তা করতে হবে। সহন নয়টার মধ্যে অফিসে যায় সেজন্য সহনের বাবা আগেভাগে যান। সহনের বাবার প্রচন্ড গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। তাই রোজা রাখতে পারেন না। আর তাহমিরও হায়েজ দেখা দিয়েছে গতকাল। এজন্যই সকাল সকাল নাস্তা তৈরি করার জন্য এসেছিলেন ফরিদা খান।
” সকাল সকাল রান্নাঘরে তোকে কে আসতে বললো তাহমি?”
ছেলের বউয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন ফরিদা। ডিমের খোসা ছাড়িয়ে পাশের বাটিতে রাখছে তাহমি। সহনের মা-ও কাজে হাত দিলেন।
” কেউ না। আমি থাকতেও যদি সব কাজ তোমার একা করা লাগে তাহলে আমি আছি কেন? “
” ছেলেকে কি বিয়ে করিয়েছি বাড়িতে কাজের লোক লাগবে সেজন্য? তুই বাড়ির বউ।”
” আর তুমি? তুমিই তো সব করো। নিজের সংসার বলেই তো? তাহলে আমিও তেমন করবো। তাছাড়া আজকে থেকে ক্লাস আছে আমার। দশ রমজান পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে। “
ডিমগুলো রেখে টোস্টার মেশিনের দিকে মনোযোগ দিলো তাহমি। ফরিদা জুস তৈরি করছেন।
” ইশ! তাহলে তো তোকেও রেডি হতে হবে? বেশি বুঝিস আসলে।”
” দুপুরে তো তুমি একাই রান্না করবে মামুনি। আমি এখন একটু সাহায্য করে দিলাম তাই। খারাপ লাগছে তোমার? উঁহু তোমার সংসারে আমি ভাগ বসাবো না একেবারেই। আমি হলাম যুবরাণী আর তুমি হলে মহারাণী। বুঝলে?”
” হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি। তোর সাথে কথা বলে লাভ নেই। যা মনস্থির করেছিস তাই করে ছাড়বি।”
তাহমি হেসে ডাইনির টেবিলের উপর খাবার রাখতে যায়। এক ঘন্টার মধ্যেই সবকিছু তৈরি করে ফেলে শ্বাশুড়ি ও বৌমা। কাজ শেষ হতেই গোসল করতে ঘরে যায় তাহমি। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে গোসল করে যাওয়া অভ্যাস তার। রুমে ঢুকে সোফার দিকে দৃষ্টিপাত করলো তাহমি। সহন এখনো ঘুমাচ্ছে। তিন দিন পর আজকে সহনও অফিসে যাবে। নীলার সাথে দেখা করতে যাবে? নম্বরের বিষয়টা বুঝতে পারলেই তো সবকিছু বুঝে যাবে। এসব ভাবতে ভাবতেই গোসল সেড়ে আসলো তাহমি। কিন্তু ঘরে আসতেই চমকাল। সহন সটান হয়ে বসে আছে বিছানায়। তাহমিকে দেখেও না দেখার ভান করছে সে। তাহমি ভেজা চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে সহনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। সহন আনমনে ঢোক গিলে কিছুটা মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার ভান করে বললো,
” সকাল সকাল তোর বেহায়াপনা দেখতে হবে? রোজার দিনেও তোর এসব করা লাগে? “
সহনের কথায় তাহমি ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে আছে। যেনো কিছুতেই কিচ্ছু যায় আসে না তার।
” ঢং কম কম করবি সহন। স্বামী স্ত্রী কতটুকু কী করলে রোজা ভঙ্গ হয় আমিও জানি তুই নিজেও জানিস। মেইন কথা আমাকে তোর দেখতে ইচ্ছে করে না। তাই এমন করিস। কিন্তু বিশ্বাস কর এ জীবনে আমি ছাড়া আর কাউকে দেখার সৌভাগ্য তোর আর হবে না। এমনকি নীলাকেও না।”
সহন বিছানা ছেড়ে উঠে তাহমিকে পাশ কাটিয়ে আলমারি থেকে তোয়ালে বের করলো। অফিসে যেতে হবে, সেই সাথে নীলার কাছেও। এই মেয়ের সাথে কথা বলে অহেতুক সময় নষ্ট করার মানেই হয় না। কিন্তু সহন পাশ কাটাতে চাইলেও তাহমি ফের তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সহনের চোখে-মুখে বিস্ময়ের ছিটেফোঁটা। মেয়েটা আবার উলটোপালটা কিছু করবে না তো? সহনের ভাবভঙ্গি দেখে তাহমি জোরে হেসে উঠলো। সহন বিব্রত হলো খানিকটা তাতে।
” লজ্জা পাচ্ছিস নাকি ভয়? কিছুই পাস না। আমি তোর স্ত্রী! তোর নখ থেকে শুরু করে মাথার চুল অবধি সবকিছুই আমার। এমনকি মাথায় যদি উঁকুন থাকতো সেগুলোও আমরাই হতো। বুঝতে পেরেছিস? নীলার সাথে দেখা কর সমস্যা নেই। মেয়েটাকে বোঝা কিন্তু এই ঠোঁট, এই হাত যেনো তাকে স্পর্শ না করে। “
তাহমি সহনের ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে বলে। সহন এক মুহুর্তের জন্য ঘাবড়ে যায় ঠিক কিন্তু পরমুহূর্তেই গর্জে উঠে।
” আমার হাত, আমার ঠোঁট আমি যাকে ইচ্ছে ছোঁবো তাতে তোর কী?”
তাহমিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো সহন। তখুনি তাহমি তার পা দিয়ে সহনের পায়ে জোরে পা রাখে। ব্যথায় ‘আহহ’ করে উঠলো সহন। তাহমির পায়ে বাইরে বেরোনোর জন্য হিল জুতা পড়া ছিল।
” ছুঁয়ে দেখিস আমার কী দেখবি। তোর ঠোঁট ব্লেড দিয়ে কুচিকুচি করে কেটে মরিচগুঁড়া দিয়ে দিবো। সরর এখন আমি বেরোবো। “
সহন ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। তাহমি চুল ঠিক করে দ্রুত রেডি হয়ে ব্যাগপত্র নিয়ে রুম ত্যাগ করলো। ডাইনিং টেবিলে বসে খেয়েদেয়ে একেবারে বের হবে। ঘড়ির কাঁটায় ন’টা বাজার আওয়াজে টনক নড়ল সহনের। বউয়ের ভয়ংকর কথায় বরফের মতো জমে গিয়েছিল ছেলেটা। সত্যি কি তাহমি এমন কিছু করবে? না,না ওসব ওর ভাঁওতাবাজি হুহ্। মনে মনে এসব বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বাথরুমে গেলো সহন।
সকাল সকাল কোনো রকম চোখমুখ ধুয়েই টিউশনি পড়াতে এসেছে তৃষা। বাবার ব্যবসায় লস হওয়ার পর থেকেই দু’ভাই বোনকেই টিউশনির রাস্তা বেছে নিতে হয়েছে। তবে আয়ান সন্ধ্যার দিকে একটা ব্যাচ পড়ায় কেবল। সবাই মাধ্যমিকের স্টুডেন্ট ওরা। দলে মোট আটজন। আয়ানের ওদেরকে ওদেরকে পড়িয়েই ভালো ইনকাম হয়। তবে এখন তৃষার বাবার ব্যাবসায়িক অবস্থা আগের তুলনায় ভালো হওয়াতে তৃষাকে টিউশনি বন্ধ করতে বলছে বাড়ি থেকে। কিন্তু তৃষা বলেকয়ে দু’টো টিউশনি করাবে বলে রাজি করিয়েছে বাবাকে। সবারই উচিত আত্মনিয়োগ হওয়া। হন্তদন্ত হয়ে তৃষাকে রুমে ঢুকতে দেখেই চমকায় ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া ওহি। চুলগুলো খোঁপা করা তৃষার,পরনে কামিজ ও সালোয়ার। হাতে ছোটো একটা ব্যাগ। তবে চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।
” ম্যাম আপনি এভাবে তাড়াহুড়ো করে আসলেন কেনো?”
” দেরি হয়ে যাবে তাই। বসো তুমি। “
পড়ার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে বসতে বসতে বললো তৃষা। ওহি বসলো লেখাপড়ার যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে তৃষার সামনে। ওহিদের বাড়িতে শুধু ওহি আর ওর মা থাকে। ওহির আব্বু একজন আর্মি। বাড়ি থেকে পোস্টিং দূরে হওয়ায় মাসছয়েক হলো সেখানেই থাকে। মাঝে মধ্যে ওহির এক মামা আসে এ বাড়িতে। নাম তার অনিক। খুব সম্ভবত ডাক্তার তিনি। তবে তৃষা সঠিক জানে না। তবে লোকটার উপস্থিতি ভীষণ ভালো লাগে তৃষার। কিন্তু সেসব মোটেও অনিককে বুঝতে দিতে চায় না তৃষা। মেয়ে হয়ে অনুভূতি প্রকাশ করলে যদি নির্লজ্জ ভাবে? কিংবা সরাসরি রিজেক্ট করে? নাহ এসবের কিছুই চায় না তৃষা। পড়তে বসার মিনিট পাঁচেক পরেই ওহি বেশ নড়াচড়া শুরু করে দিয়েছে। কিছুক্ষণ দেখার পরে তৃষা কিছুটা রেগে বললো, ” কী হয়েছে ওহি? এরকম করছো কেনো!”
” ম্যাম মামা বলেছিল আজকে ঘুরতে যাবে। “
” কখন বলেছেন? পড়া বাদ দিয়ে যাবেন বলেছেন উনি?”
ওহি দু’দিকে মাথা নেড়ে বললো,
” তা বলেনি।”
” তাহলে পড়ায় মনোযোগ দাও। উনি সম্ভবত প্রাইভেট শেষ হলে যাওয়ার কথা বলেছেন। “
ওহি আর কিছু বললো না। পড়তে শুরু করলো বিজ্ঞান বইয়ের কিছু লাইন। তৃষা ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে। ডাইনিং টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি খেতে যাবে। ওহির মা খুব ভালো মনের মানুষ। তবে এসে থেকে তাকে না দেখতে পেয়েই সরাসরি নিজেই পানি আনতে গিয়ে রান্নাঘরের দিকে গিয়ে দেখবে বলে ঠিক করে তৃষা। ওহিকে পড়তে বলে তৃষা গেলো ডাইনিং টেবিলের দিকে। ওহির খেয়াল নেই যে মা একটু বাইরে গিয়েছে এবং সেটা তৃষাকে বলতে বলেছিল তার মা। রান্নাঘর ও ডাইনিং টেবিলের আশেপাশে ওহির মাকে না দেখে দ্রুত ওহির রুমের দিকে পা বাড়ায় তৃষা। রোজার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল তৃষা। প্রায় পানি খেতে গিয়ে ফিরে আসে মেয়েটা। ওহিকে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে ওর মা কোথায়,এই ভেবে এগোচ্ছে তৃষা।
” শুনুন! “
হঠাৎ গম্ভীর পুরুষালি আওয়াজে থমকে দাঁড়াল তৃষা। এই কন্ঠ তার পরিচয়, ডক্টর অনিক চৌধুরীর!
” জি বলুন। “
তৃষা দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে উত্তর দিলো। অনিক এগোল তৃষার দিকে।
” আপনি আমাকে পছন্দ করেন? “
হঠাৎ অনিকের এরকম প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেছে তৃষা। লোকটার মনে কী চলছে বুঝতে পারছে না মেয়েটা। কিন্তু হুট করেই তৃষা অনুভব করে তার সমস্ত শরীর ঘাম দিচ্ছে!
” নীলা সবকিছুই তো শুনলে। তুমি কি আমাকে ভুল বুঝে ত্যাগ করবে?”
কফিশপে দুই দিকে দু’জন চেয়ারে বসে আছে নীলা ও সহন। মাঝখানে টেবিলের উপর রাখা কফির কাপ দু’টো। দু’জনেই কফি খেতে খেতে কথা বলেছে এতক্ষণ।
” আমার কি উচিত তোমার সাথে সম্পর্ক কন্টিনিউ করা? তোমার বউয়ের সাথে কথা হয়েছে আমার। কথায় যা বুঝলাম সে তোমাকে আমৃত্যু ছাড়বে না। তাহলে কীসের জন্য আমি থাকবো? “
সহন নীলাকে শান্ত করার জন্য নিজের হাত নীলার হাতের উপর রাখতে চাইলেই তাহমির বলা কথাগুলো মনে পড়ে যায়। একমুহূর্তের জন্য থমকায় সহন। কিন্তু পরমুহূর্তে সবকিছু ভুলে নীলার হাত চেপে ধরে।
” এসব পরে ভাববে নীলা। আপাতত আমাকে ছেড়ো না। ওই পাগল ডাকাতের সাথে থাকতে পারবো না আমি। “
নীলা মুচকি হাসে। নিজের দর বাড়াতেই অহেতুক ভয় দেখাল সহনকে।
চলবে,