ঘাসফড়িং -১৪
_____________
তাকিয়া চিঠি খানা পড়ে খুব আনন্দিত হলো।যেন অনেকদিন পর সে প্রান খুলে হাসছে।রুমের এ পাশ থেকে ও পাশ লম্বালম্বি ভাবে হাটছে আর ফিক করে হাসছে। দূর থেকে এই কাণ্ড কারো দৃষ্টি গোচর হলে সবাই বলবে এই মেয়ে নির্ঘাত প্রেমে পড়েছে।এখন তার ইচ্ছে করছে গবাক্ষ দিয়ে সাদাতদের গবাক্ষ প্রত্যক্ষ করবে।সে তাই করলো।কিন্তু দেখতে পেলোনা।না পাওয়াইতো স্বাভাবিক। কারণ তাকিয়াদের গবাক্ষ বরাবর সাদাতদের গবাক্ষ, তাও আবার এক তলার ব্যবধান।এভাবে কি দেখা যায় নাকি।তাকিয়া এরপরও কিছুক্ষন গবাক্ষের পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো।অন্যদিন আসরের নামাজ পড়েই সে সব কক্ষের গবাক্ষ বন্ধ করে দেয়।আজ তা না করেই তার পাশে দাঁড়িয়ে ফিক করে হেসে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর ডান হাত দ্বারা নিজেই স্বীয় মাথায় মৃদু আঘাত করলো।মানে সেও অনুধাবন করতে পারছে সে পাগল হয়ে গিয়েছে। দ্রুত গবাক্ষ বন্ধ করে পর্দা টেনে দিলো।মশাদের কিছুতেই কক্ষে প্রবেশ করতে দেয়া যাবেনা।ঢাকা শহরে এমনিতেও মশার উপদ্রব বেশ বেড়েছে।মাঝে মাঝে তাকিয়ার কাছে মনে হয় ঢাকা শহর টি হয়তো মশাদেরই! মানুষরা হয়তো তাদের আগন্তুক অতিথি। খাবে, ঘুমাবে,কাজ শেষ হবে আর চলে যাবে।তাকিয়া সব কক্ষের গবাক্ষ বন্ধ করে নিজের কক্ষে আসলো।চিঠিটি প্রচ্ছন্ন ( লুকানো) করতে হবে।কারন রাফিয়ার আসার সময় হয়েছে।সে চটজলদি করে খাটের নিচ থেকে কাঠের একটি বাক্স বের করলো।ছোট এই বাক্স টি তার বাবার নাকি মায়ের এ সম্পর্কে তার ধারনা নেই। বাক্সটি তার খুব পছন্দের। সে এখানে তার সব থেকে প্রিয় জিনিস গুলো প্রচ্ছন্ন করে রাখে। বাক্সটি আকারে ছোট হলেও এর ভিতরের জায়গা প্রচুর। মাঝে মাঝে মনে হয় এটা জাদুর বাক্স।তাকিয়া বাক্স টি কাছে আনতেই হালকা কাশি হলো।এর পিছনেও একটি হেতু রয়েছে।অনেকদিন অযত্ন থাকার দরুন বাক্সের গাত্রে ধুলাবালি জমেছে।এগুলো পরিস্কার করতে যেয়ে তার কাশের আগমন।সে ধুলা বালি গুলো একটি কাপড় দিয়ে ঝেড়ে পরিস্কার করলো।অতঃপর চিঠিটি সুন্দর করে বাক্সে ভরে রাখলো।মৃদু আওয়াজে আলহামদুলিল্লাহ বললো।ভ্রু জোড়া উচু করে কিছু ভাবলো।এরপর জোর গলায় আবারো আলহামদুলিল্লাহ বললো।সে এখন বাড়িতে একা আছে সুতরাং যাই করুক না কেন আল্লাহ ব্যতীত কারো চক্ষুগোচর হবেনা।তাকিয়া আল্লাহর সাথে আরো অনেকক্ষন কথা বললো।
আল্লাহ যে মানুষটি এতো সুন্দর করে তোমাকে বুঝে।তোমার ভয়ে দুনিয়াবী ভালোবাসা থেকে বিরত থাকে।এ মানুষটি সত্যিই খুব ভালো মনের। যদি তার মধ্যে আমার জন্য কল্যাণ থেকে থাকে তাহলে আমি তাকে চাই আল্লাহ। তুমি কখনো আমাকে নিরাশ করোনি।আমি জানি এবারো করবেনা।
_________
এভাবেই হাসি কান্না সব মিলিয়ে তাকিয়ার দিন গুলো কেটে যাচ্ছিলো।অনেকদিন পরের কথা।
তাকিয়া এখন আর মাদ্রাসায় যায়না।প্রথমত রেবেকা বলেছিলো শুধু পরীক্ষা দিয়ে আসবে।কিন্তু এখন সে এটাও চায়না তাই তাকিয়া এখন বাড়িতেই থাকে।সাদাতের পড়া লিখা শেষ। রাফিয়া কলেজ শেষ করে ভার্সিটিতে পড়াশোনার জন্য নথিভুক্ত হয়েছে।সেও এক প্রকার অপেক্ষার মধ্যে আছে কখন সাদাত নিজে থেকে তাকে কাছে টেনে নিবে।রেবেকা আর হেনা বেগমের সম্পর্ক এখন খুব জোড়ালো হয়েছে।অবশ্য এটা রেবেকার দৃষ্টিভঙ্গি। তাকিয়ার ভালোর জন্যই হেনা এখনো নিশ্চুপ আছেন।একদিন হলো মহা কান্ড।রাফিয়া সবে মাত্র তার প্রতিষ্ঠানে পা দিয়েছে।সে সামনে আনিধাকে দেখেই যেয়ে জড়িয়ে ধরলো।আনিধার মধ্যে অবশ্য কোনো পরিবর্তন দেখা গেলোনা। রাফিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আনিধার দিকে তাকালো।
আনিধা নরম গলায় বললো।অনেক খারাপ কিছু হয়েছে।
“বল আমাকে শুনি।
” তোর মন ভেঙে যাবে।
“আমার কোনো বিষয়ে?
” হ্যাঁ।
” বল সমস্যা নাই।
” কালকে আমি ভাইয়াদের বাসায় গিয়েছিলাম, তখন সাদাত ভাইয়ার বাবা মা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
“রাফিয়া এখনো আনিধার কথার প্রতি মনোযোগী হয়নি।তাই সে আনিধাকে থামিয়ে দিয়ে বললো।একটা জিনিস দেখ, আমরা যখনি এই গাছগুলোর সামনে এসেছি, সেটা কেমন লজ্জায় মাথা নুইয়ে দিলো।খুব সুন্দর কিন্তু।
” হুঁ অসুন্দরের কিছুতো দেখছিনা। এগুলো হলো লজ্জাবতী গাছ।কাওকে দেখে চুপসে যাওয়া তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আচ্ছা তুই কি আমার কথা শুনবি? নাকি আমি চলে যাবো।এখন না শুনলে পরে কিন্তু পস্তাবি।
“আচ্ছা বল, আমি শুনছি ।সত্যি বলতে সাদাতকে নিয়ে কথা বলতে বলতে আমি এখন ক্লান্ত। কবে থেকে অপেক্ষা করছি ওর জন্য। কিন্তু ওর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াই নেই।তাই এখন ওর কথা বললেই আমার রাগ হয়।
” ও তাহলে এখন আর তুই ভাইয়াকে চাসনা তাইতো?
“আরে না কে বললো আমি এখনো ওকে চাই।শুধু অভিমান করি আরকি।আচ্ছা বল তুই কি বলছিলি।
” শোন তাহলে, আমি ওইদিন পাশের রুমে বসে গেমস খেলছিলাম। হঠাৎ শুনি তারা ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে।আমার আব্বু আম্মুও সেখানে ছিলো।
“রাফিয়া এখন পুরোপুরি প্রস্তুত, আনিধার কথা শুনার জন্য।সে তার পঞ্চ ইন্দ্রিয় সজাগ করে আনিধার দিকে মনোনিবেশ করলো। এবং বললো এরপর বল কি হয়েছে।
” তারপর আমি যা শুনলাম সেটা তোকে বললে তুই খুব কষ্ট পাবি।
“বলনা প্লিজ, এমন করিস না আমার হৃদপিণ্ড কাঁপছে।
“তারা তোর বোন তাকিয়াকে পছন্দ করেছে।ভাইয়া নাকি তাদের কাছে তাকিয়ার কথা জানিয়েছে। তাই এ সপ্তাহের কোন দিন তারা তোদের বাসায় তাকিয়ার জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসবে।আরে কথা শেষ হয়নিতো কই যাচ্ছিস তুই।রাফিয়া, রাফিয়া,, শোন এখন যাসনা ছুটি হলে আমরা এক সাথে যাবো।।কিন্তু কে শুনলো কার কথা। রাফিয়া সেখানে আর এক মুহুর্তও থাকলো না।সে রাগ, ক্ষোভ, ঘৃনা সাথে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলো।আজকে হয়তো তাকিয়া দুনিয়াতে থাকবে আর নয়তো সে থাকবে।সে কিছুতেই ক্রোধ দমন করতে পারছেনা।ললাটের পার্শ্বদেশ ফুলে উঠেছে।
রাফিয়া পদব্রজে অনেক দূর চলে এসেছে।এখন আর পিছন থেকে আনিধার ডাক শুনা যাচ্ছেনা।
আনিধা স্বীয় স্থানে দাঁড়িয়েই ঠান্ডা মাথায় কিছুক্ষন চিন্তা করলো। তার কি বলা উচিত হয়েছে নাকি হয়নি?ফলস্বরূপ সে যা পেলো তা হলো সে আপাতত নিরুপায়।রাফিয়া যদি পরে বিষয়টি জানতে পারতো তবে এ জন্য নিশ্চিত আনিধাকেই দোষ দিতো।তবে আনিধাও চায় তাকিয়া তার ভাবী হোক।রাফিয়া যদিও তার ভালো বন্ধু,তবুও সে তাকিয়াকেই সাপোর্ট করে। কারন তাকিয়ার প্রতি অত্যাচার গুলো সে কিছুটা হলেও আচঁ করতে পেরেছে।আনিধা মৌনাবলম্বন করে তার শ্রেণী কক্ষের দিকে এগিয়ে গেলো।লজ্জাবতী গাছ গুলো এখন আর নুয়ে নেই।মাথা উঁচু করে তারা দাঁড়িয়ে আছে।তবে খুব সচেতনতার সহিত, কেউ আসলে আবারো নুয়ে পড়তে হবে যে!আমাদের বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে আল্লাহর সুন্দর সুন্দর সৃষ্টির শেষ নেই।রাফিয়া এতক্ষনে বাড়িতে পৌছে গেছে।
কলিংবেল বাজালোনা, সেদিনের মত আজও দরজাতে কড়া নাড়তে থাকলো।খুবই বিকট শব্দ হচ্ছে।শুধু হাত দিয়ে কড়া নাড়ছে বিষয়টি তেমন না, সাথে তার পা গুলোও এ কাজে শামিল হয়েছে।
রেবেকা মেয়ের উপস্থিতি ঠাওর করতে পারলো।সে দরজা খুলেই শান্ত গলায় বললো। কি হয়েছে তোমার এত উত্তেজিত দেখাচ্ছে কেন।
“তাকিয়া কোথায়।
“ওর মাদ্রাসা থেকে ফোন এসেছে তাই মাদ্রাসায় গিয়েছে।
” ফোন দিয়ে ওকে বলো এখনি আসতে।
“আচ্ছা বলবো তার আগে বলো তুমি কান্না করছো কেন?আর আস্তে কথা বলো।মানুষ শুনলে কি বলবে?
” রাফিয়া আর নিজেকে সংবরণ করতে পারলোনা। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।মা আমি সাদাত কে হারিয়ে ফেলেছি শুধু মাত্র তাকিয়ার জন্য। আর এর জন্য আমি তোমাকে দায়ী করবো।কারন তুমি ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিলে এতো কিছু হতোনা।আমি আর নিতে পারছিনা মা।
“আচ্ছা শোনো, কান্না থামাও আগে, তারপর পরিস্কার করে বলো কি হয়েছে। দেখেতো মনে হচ্ছে খুব ক্লান্ত তুমি এখানে বসো আমি তোমার জন্য পানি নিয়ে আসছি।রাফিয়া কিছুতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা।সে একধারে কেঁদেই চলেছে।কখনো ভাবেনি তার বড় শত্রুই তার জীবনে কাল হয়ে দাড়াবে।রেবেকা মেয়ের সামনে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।রাফিয়া গ্লাসের অর্ধেক পানি খেয়ে শেষ করলো।রেবেকা কিছুক্ষণ মেয়ের মাথায় হাত বুলালো।রাফিয়া কিছুটা স্বাভাবিক হলে রেবেকা বললো।এবার বলো মামুনি।রাফিয়া শুরু থেকে তার মাকে সব বললো।রেবেকা স্বাভাবিক গলায় বললো,তুমিকি সত্যি সাদাতকে পেতে চাও?
“হুঁ মা আমি এখানে আসার পর থেকেই সাদাতের জন্য অপেক্ষা করে যাচ্ছি।আমি তাকে হারাতে চাইনা।
“তাহলে আমি যেভাবে বলবো।তুমি ঠিক সেভাবেই করবে কেমন?
” তুমি যা বলবে আমি সেটাই শুনতে রাজি।তবুও সাদাতকে চাই।
“তুমি এখন তাকিয়াকে কিছু বলবেনা।
” কিন্তু মা।
“কোন কিন্তু না।তাদেরকে আমাদের বাসায় আসতে দাও যা করার সব তাকিয়াই করবে।
” মা তোমার কি মনে হয় সব ঠিক হয়ে যাবে?
“আমাকে বিশ্বাস করোনা?
” করি মা,কিন্তু আমি নিজেকে শান্ত করতে পারছিনা।
“আমার প্ল্যান অনুযায়ী সব করতে হলে তোমাকে শান্ত থাকতে হবে।আবারো বলছি তুমি এখন থেকে ওর সাথে ভালো ব্যবহার করবে।
” এটা আমি পারবো না মা।
“তাহলে সাদাতকে পাওয়ার আশাও ছেড়ে দেও।ওকে পেতে হলে তোমাকে এতটুকু করতেই হবে।তাকিয়া নিজেই তোমার কাছে সাদাতকে তুলে দিবে।
” সত্যি বলছো?
“হুঁ। তুমি ভালো ভাবেই অবগত আছে তাকিয়ার সম্পর্কে। সে নিজের চেয়েও অন্যদের নিয়ে বেশি চিন্তা করে।কারো কষ্ট চোখের সম্মুখে উন্মোচন হলে সে তা সহ্য করতে পারেনা। তাই তোমাকে আমি যেভাবে বলবো তুমি ঠিক সেভাবেই করবে।
” আচ্ছা মা।
দুপুর বেলা তাকিয়া বাসায় আসলো।কিন্তু তার কাছে সব যেন নতুন মনে হচ্ছে।রাফিয়া তাকে খেতে ডেকেছে।তাকিয়ার রান্না করার ব্যাপারে মায়ের সাথে ঝগড়াও করেছে।তাকিয়া নিরব দর্শকের মত শুধু পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে।তার কথা বলতে ভালো লাগছেনা।তাই সে তাদের মধ্যে কোনো কথা বাড়ালোনা।দুপুরে খাওয়ার পর্ব শেষ করেই তাকিয়া তার কক্ষে চলে গেলো।চোখ দুটো যেন একটু ঘুমের রাজ্যে যেতে চায়।তাকিয়া সবে মাত্র বালিশে মাথা ঠেকিয়েছে এরি মধ্যে তার কক্ষে রাফিয়ার আগমন ঘটলো।
“রাফিয়া এসে খাটের কিনারায় বসলো। এবং শান্ত গলায় বললো।বোন তোর এখানেতো এসি নাই। চল আমার সাথে ঘুমাবি।
” না আপু আমার ফ্যানের বাতাসই হয়।তাছাড়া আমার রুমে গবাক্ষ দিয়ে একগাদা বাতাস প্রবেশ করে।কি যে শান্তি।
“আরে না চল। তুই এখন থেকে আমার কক্ষেই থাকবি। দুই বোন মিলে আরাম করে ঘুমাবো।
” তাকিয়া এবার আর কিছু বললোনা।তার কাছে বিষয় গুলো অপরিচিত লাগছে।কিন্তু ভালো লাগছে।ভালোবাসা পেতে কার না ভালো লাগে।সে চুপ করেই খাটের এক পাশে বসে থাকলো।রাফিয়া একটি বালিশ হাতে নিয়ে তাকিয়ার হাত চেপে ধরলো।এবং তাকে তার কক্ষে নিয়ে আসলো।বালিশ টি তার বালিশের পাশে রাখলো। অতঃপর এসি ছেড়ে দিলো।তাকিয়াকে ইশারা করে বললো। নে এবার শুয়ে পড়।তাকিয়া বাধ্য মেয়ের মত বোনের পাশে শুয়ে পড়লো।বোনদের ভালোবাসা গুলো খুব সুন্দর হয়।তাকিয়া অবশ্য এর আগে উপভোগ করেনি।সে বোনের এহেন আচরণে নিজের মধ্যে শান্তি অনুভব করলো।তার চোখ ভিজে উঠলো।ব্যাপারটি খুব অদ্ভুত তাইনা।একটু ভালোবাসা পেতেই তাকিয়ার চোখের পাপড়ি ভিজে উঠলো। এ থেকেই প্রমাণিত হয় সে একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কতটা অস্থির হয়ে থাকে।তার ভিতরের জলন্ত প্রদীপ যেন সব সময় তাকে এটাই বলে আমাকে একটু নীর দাও আমি তোমাকে ভালোবাসার চাদরে আবদ্ধ করে দিবো।তাকিয়া বালিশে মাথা ঠেকিয়েই ঘুমিয়ে পড়লো।আসরের সময় রাফিয়ার ডাকে তার ঘুম ভাঙলো। রাফিয়া মুচকি হেসে বললো।জানিস তুই পুরো ৩ ঘন্টা ঘুমিয়েছিস।২ টা বাজে ঘুম দিলি এখন বাজে ৫ টা।যা নামাজ পড়ে নে।ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে । তাকিয়া তার কক্ষে যেয়ে নামাজ সেরে নিলো।নামাজ পড়েই গবাক্ষের পাশে গিয়ে দাড়িয়ে কুরআন তেলওয়াত করলো।সে আকাশ পানে চেয়ে আল্লাহর সাথে কথা বললো।সে বললো,আমার দুয়া গুলো হয়তো তুমি কবুল করে নিচ্ছো। আমি আজ অনেক খুশি।সব সময় চেয়েছি মা, আপুকে নিয়ে খুব ভালোভাবে জীবন ধারন করবো।আজ আমার চাওয়া পূরণ হলো যেন।আল্লাহ আমার মা, বোন কে তুমি সঠিক বুঝ দাও।তাদের মনে আমার জন্য ভালোবাসা তৈরি করে দাও।তাকিয়া এভাবে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে তার ধারণা ছিলোনা।কিছুক্ষণ পর রাফিয়া এসে পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরলো।তাকিয়া মুখ না ঘুরিয়েই বললো।আপু দেখো আজকের আবহাওয়া খুব সুন্দর তাইনা?
“হুঁ খুব সুন্দর। তোকে না আমার কিছু বলার ছিলো।
” কি বলতে চাও বলে ফেলো।
“বোন আমাকে কি ক্ষমা করা যায়না।
” তাকিয়া নিশ্চুপ।
“দেখ আমি এতদিন যা করেছি তা অন্যায় ছিলো।আমি বুঝতে পারছি।আমি জানি তুই কখনো আমাকে বোন হিসেবে মেনে নিতে পারবিনা।কিন্তু ক্ষমা তো করা যেতে পারে।রাফিয়ার চোখ বেয়ে দু ফোটা অশ্রু তাকিয়ার হাতে এসে পড়লো।
“তাকিয়া নরম গলায় বললো।তোমার উপর আমার কোন রাগ নেই আপু।তুমি অতীতে যা করেছো এবং ভবিষ্যতেও যদি কিছু করে থাকো আমি সবকিছুর জন্যই তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।আমি তোমাদের মনে আমার জন্য জায়গা করে নিতে পারিনি,এটা আমার দুর্বলতা।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাদেরকে আমার পরিবার মনে করি।তোমাকে আপন বোনের মত ভালোবাসি।কিছুদিন আগে আমার জ্বর হয়েছিলো,কিন্তু তোমরা কেউই জানোনা।আমি জানালে তো জানবে? আমি বলিনি কারন আমি তোমাকে আর মাকে খুব ভালোবাসি তাই তোমাদের বিরক্ত করতে চাইনি।এই জ্বর নিয়েই তোমাদের জন্য রান্না করেছি।জানো কেন?
শুধু তোমাদের ভালোবাসি তাই। তোমার উপর মায়ের উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই।আমি শুধু তোমাদের ভালোবাসা চাই।
“বোন আর কিছু বলিস না।আমি নিতে পারছিনা।তুই আমাকে ক্ষমা করেছিস কি না সেটা বল।
” সেটাতো আগেই বলেছি।
“আচ্ছা আজকে থেকে আমরা আর ঝগড়া করবোনা কেমন?আমরা দুজন শুধু দুজনের জন্য বাচঁবো ঠিকাছে ?
” ঠিকাছে আপু।
রাফিয়া খুব দ্রুত তার রুম থেকে প্রস্থান করলো।তার এসব অভিনয় করতে আর ভালোলাগছেনা।এবং রেবেকার কক্ষে প্রবেশ করে শক্ত করে কপাট লাগালো।রেবেকার পাশে বসে কঠিন গলায় বললো। মা আর কতদিন এসব অভিনয় করতে হবে আমাকে বলোতো?
“অপেক্ষা, আর ধৈর্য ধরে থাকো।আর নয়তো তুমি সবই হারাবে।আচ্ছা এটা বলো,ও কিছু আন্দাজ করতে পারেনি তো?
“না, তুমি তো জানোই ও কতটা সরল মনের মানুষ।সব কিছু সত্যিই মনে করেছে।
” আচ্ছা ভালো হয়েছে।এখন বাকী পদক্ষেপের জন্য তৈরি থাকো।
আসছে।
ঘাসফড়িং -১৫
______________
হেনা তার স্বামীকে বুঝানোর জন্য প্রানপন চেষ্টা চালাচ্ছে। সাদাতের বাবা তার সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও নড়ছেন না।তার ভাষ্যমত অনুযায়ী ছেলের জন্য প্রয়োজন হলো,আগে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। নিজে কিছু একটা করা।কিন্তু হেনার বক্তব্য এটা না।
তিনি তাকিয়াকে নিয়ে চিন্তিত।মেয়েটা যে প্রচণ্ড ক্লেশবোধ ভাবে জীবন পার করছে। বিষয়টি তিনি ভালোভাবেই ঈক্ষা( অবলোকন) করেছেন।প্রথমত মেয়েটি এতীম। দ্বিতীয়ত মেয়েটি ভালো নেই। সাদাতের বাবা এ বিষয়ে কথা বাড়াতে চাচ্ছেননা।তাই তিনি খাটে যেয়ে বসলেন।আপাতত বিশ্রাম নিতে চান।কিন্তু হেনা নাছোড়বান্দি,তিনিও স্বামীর পাশে গিয়ে আসন পাতলেন। সাদাতের বাবা ঈষৎ নিরব থেকে বললেন।তাকিয়ার বাবা কিভাবে মারা গিয়েছে কিছু জানো?
“না। শুনেছি গাড়ি এক্সিডেন্ট করে।
” লক্ষিপুর গ্রামে মেয়েটাকে দেখেছিলাম কয়েকবার, ভারী মিষ্টি মেয়ে।
“হুঁ সেই সাথে খুব ভালো একটা মেয়ে তাকিয়া।
” সাদাত কি তাকিয়ার কথা নিজ মুখ তোমাকে বলেছে?
“হ্যাঁ। শুধু তাইনা তোমার ছেলে জানিয়াছে তাকিয়াকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়ে সে বিয়ে করবেনা।বুঝো কান্ড।
” কিন্তু ছেলে সবে মাত্র পড়া লিখা শেষ করলো।এখন কি দরকার বিয়ে শাদির বলোতো।আমি আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবকে বলে রেখেছি।ছেলের জন্য ইমামতির ব্যবস্থা করতে, আমার অনেক দিনের সখ ছেলের পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়বো।এর পাশাপাশি আমার বিজনেস টা সে সামলাবে। কয়েকটা বছর যাক এরপর না হয়ই তাকিয়াকেই আমরা আমাদের ঘরের পুত্রবধূ হিসাবে আনলাম।
“তোমার সিদ্ধান্তও সুন্দর। কিন্তু মেয়েটা সেখানে ভালো নেই।এতদিনে হয়তো সাদাতের ব্যাপারটি তারা আঁচ করতে পেরেছে।যদি তারা মেয়েটিকে জোর করে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দেয় তখন কি হবে বুঝতে পারছো?
” হ্যাঁ তাও ঠিক বলেছো।কিন্তু আমার মাথা কাজ করছেনা কিছু।
“আচ্ছা শোনো আমি তোমাকে বলছি। মেয়েটির সম্পর্কে কম বেশী আমরা সকলেই জানি। সে নম্র ভদ্র, একনিষ্ঠতা, এসবের দিক দিয়ে পিছু নেই।সেদিনের কাহিনীটাই শোনো ওই দিন আমি তোমার ৫০ হাজার টাকার বাণ্ডিল টি সাথে করে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। আমি গেইটের ভিতর পা দিয়ে ফেলেছি।সহসা এক মেয়ে পিছন থেকে আমাকে ডাক দিলো।আমি ঘুরে তাকালাম। তখন সে আমার হাতে একটি টাকার ব্যাগ ধরিয়ে দিলো। আমি উৎসুক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম সে কি বলে সেটা শুনার জন্য ।এরপর সে বললো।এটা বোধহয় আপনার,এর মধ্যে কতগুলো টাকা রয়েছে।আপনি রিকশার ভাড়া দিচ্ছিলেন তখন সেটা নিচে পরে যায়। আপনি ব্যাগটি খুলে দেখতে পারেন সব ঠিক আছে কিনা?তুমিতো জানোই আমি এক মুহুর্তের জন্যেও বেদিশা হইনা।বিশেষ করে টাকা পয়সার বিষয় গুলোর ক্ষেত্রে।কিন্তু সেদিন হয়েছিলাম হয়তো আল্লাহই স্বয়ং দেখাতে চেয়েছিলেন মেয়েটির সততা সম্পর্কে। একটা জিনিস চিন্তা করো।তুমি যখন আমাকে বিয়ে করেছিলে তখনও তুমি পরিপূরক ছিলেনা।আমরা দুজন মিলে আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের সাক্ষী হয়ে সুখ কে খুজে নিয়েছিলাম।পরিশেষে মনে হলো এক ছাদের নিচে দুজন এক সাথে থেকেও কেমন নাই নাই অনুভব হচ্ছে। সারাদিনের ব্যস্ততার মধ্যেও তুমি ছোট দুটি হাতকে মিস করতে।তোমার মনে আছে? তুমি আমাকে প্রায়ই বলতে ভিতরে কেমন যেন হাহাকার করে, অস্বস্তি বোধ হয়।আমরা অনেক ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছিলাম।কিন্তু ডাক্তাররা বলেছিলেন,আমরা বরাবরই এ সুখ থেকে বঞ্চিত হবো।কিন্তু তুমি আশা হারাওনি,আমাকে বললে আমরা তাহাজ্জুদ পড়ে পড়ে আল্লাহর কাছে চাইতে থাকবো।ইন শা আল্লাহ তিনি আমাদের ফিরিয়ে দিবেননা।তুমি সেদিন সত্য বলেছিলে।আল্লাহ আমাদের পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন, আমি তখন সবখানেই আমার ছেলের শরীরের গন্ধ পেতাম।প্রগাঢ় তমশায়ও মনে হয় আমি তাকে খুঁজে বের করতে পারতাম।আমরা ছেলে আসার খুশিতে শুকরিয়া স্বরুপ আল্লাহকে বলেছিলাম তাকে মাদ্রাসায় পড়াবো।তুমি কি এসব ভুলে গিয়েছো।সে কষ্টের মধ্যে আমাদের জন্য রহমত স্বরুপ এসেছিলো।আল্লাহ তাকে শান্তির বার্তা বাহক হিসেবে আমাদের জীবনে পাঠিয়েছিলেন। তাই তাকে সুখের পথে এগিয়ে দিতে আমাদেরও চেষ্টা করা দরকার। তুমি শুধু শুধুই চিন্তা করছো।আমাদের ছেলে তো মোটেও অযোগ্য নয়।দেখো সে সব দিকে খেয়াল রাখতে পারবে।
” সত্যি বলতে আমি তোমার মত এত সুন্দর করে অনুধাবন করিনি।আমি শুধু আমার ছেলের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টিই লক্ষ করেছি।সে কিভাবে সুখে থাকবে, কার সাথে সুখে থাকবে, আমি কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য ভুলে গিয়েছিলাম।তোমার কি মনে হয়,মেয়েটি কে তারা আমাদের কাছে দিবে?
“আমি সঠিক বলতে পারছিনা।আমাদের উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ হবে এটা এক মাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।আমরা চেষ্টা করে দেখতে পারি।
” আচ্ছা সেটাই করো তাহলে , আমি সময় বের করে তোমাকে জানাবো।এখন আমাকে এক কাপ চা করে দেও।চিনি কম দিবে।কাপ বলেছি বিধায় কাপেই এনো না কিন্তু।
“হেনা ঈষৎ হেঁসে বললো।আমি জানি তুমি যে বালতিতে ছাড়া চা খেতে পারোনা।
” বুঝলামনা অপমান করলে নাকি সাধুবাদ জানালে? যাই হোক আমার চা হলেই চলবে।
সাদাত মাকে কক্ষ থেকে বের হতে দেখে দৌড়ে মায়ের সম্মুখে গিয়ে দাড়ালো। প্রশ্নবোধক ভঙ্গিতে মায়ের দিকে তাকালো।হেনা বুঝতে পারলেন ছেলের ভাষা। কিন্তু তিনি ছেলেকে উপেক্ষা করে রসুইঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।সাদাতও মাকে অনুসরণ করে সেদিকে এগিয়ে গেলো।মায়ের শাড়ির আচল ধরে ফিস ফিস করে বললো।
“মা বাবা কি বলেছে?
” সেটা জেনে তুই কি করবি।
“বলোনা মা।
” বলেছে এখন বিয়ে শাদির নাম না নিতে।
“সাদাত নিশ্চুপ।
” আরো কি বলেছে শুনবিনা?
“বলো শুনি।
” তাকিয়াকে ভুলে যেতে বলেছে।
“এবার সাদাত পশ্চাত থেকে মায়ের সম্মুখে এসে দাড়ালো। দু হাত মায়ের কাধের উপর রেখে বললো।মা তুমি আর বাবা মিলে আমার সাথে এমন কেন করছো বলোতো? তাকিয়া অনেক ভালো মেয়ে।
” জানি তাকিয়া ভালো।কিন্তু আমাদের এটাই সিদ্ধান্ত। আর কোনো কথা নাই।
“মা তোমার হাত গুলো দেখো। রান্না করতে করতে কেমন দাগ পড়ে গিয়েছে।প্রায় সময় তুমি অসুস্থ থাকো।এসবের জন্যতো একজন মানুষ রাখা দরকার তাইনা?
” হ্যাঁ রাখলাম তো সানির মাকে ।
“সাদাত এবার দু হাত দিয়ে মাথায় মৃদু আঘাত করলো।এবং কিছুটা গম্ভীর স্বরে বললো। তুমি কিছুই বুঝোনা।তাকিয়া অনেক সুন্দর করে কাজ করতে পারে।
” ঘুরে ফিরে ওই তাকিয়ার চিন্তা মাথাতে চলে আসে তাইনা?
“আমিতো তোমাদের ভালোর জন্যই বলছি।আমার খুব খারাপ লাগে তোমাকে কাজ করতে দেখে।
” হেনা বেগম ছেলের কর্ণলতিকা চেপে ধরে বললেন।আর অভিনয় করতে হবেনা।কতটা কষ্ট যে পাও তুমি সেটা আমি ভালো করেই জানি।মাকে একটা কাজেও সাহায্য করবেনা আর উনার নাকি খারাপ লাগে।তাকিয়া আসলেতো ঠিকই ওকে সাহায্য করার জন্য রান্নাঘরে একটা জায়গা বানায় নিবি।
“মা কানে খুব ব্যথা পাচ্ছি।তবুও আমি খুশি কারন তুমি তাকিয়ার কথা বলেছো।তার মানে বাবা রাজী হয়েছে। সাদাত সব দাত বের করে হাসলো।হেনা বেগম ডান হাত দ্বারা ছেলের পিঠে চপেটাঘাত করে বলেলেন।তোর জন্য চা নিয়ে যেতে আমার দেরি হচ্ছে।তোর বাবা যদি কিছু বলে তবে কিন্তু তাকিয়া আবারো বাদ।
” মা দ্রুত যাও বাবাকে অপেক্ষা করানো ঠিক হবেনা।বাবাকে চা দিয়ে বলবে।এখন থেকে সাদাত তোমাকে চা করে দিবে।
হেনা বেগম ছেলের আচরণে হাসলেন।দাত বের করে হাসলেন।তিনি এভাবেই ছেলেকে সব সময় সুখি দেখতে চান।সাদাত তার কক্ষে গিয়ে গবাক্ষের পাশে দাঁড়ালো।তার দৃষ্টি এখন উপরের গবাক্ষের দিকে নিবদ্ধ। যদিও গগন ছাড়া বাকি কিছুই ঠাওর করা যাচ্ছেনা।তবুও সে এভাবেই কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।বুঝাই যাচ্ছে সেও তাকিয়ার মত উন্মাদ হয়ে গিয়েছে।কিছুক্ষণ পর হয়তো মাথায় স্বীয় হাত দ্বারা আঘাত করে নিজেকে সতর্ক করবে।আর অস্ফুট কন্ঠে বলবে।আরে সাদাত ধৈর্য ধরো।কেউ তোমাকে এ অবস্থায় দেখলে বলবে নির্ঘাত তুমি প্রেমে পড়েছো।
______
রাফিয়া, রেবেকা,তাকিয়া, এক রুমে বসে আছে।তিন জন মিলে গল্প করছে।রাফিয়া আর তাকিয়ার সম্পর্ক এখন আর আগের মত নেই। দু বোনের সম্পর্ক এখন মজবুত হয়েছে।অবশ্য এটা তাকিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি। এই ভালোবাসা গুলোর জন্যই তার মন একসময় মরিয়া হয়ে উঠতো। সারা রাত কেঁদে কেঁদে পার করতো।কিন্তু তাকিয়া এতটাই নরম স্বভাবের সে বুঝতেও পারছেনা রাফিয়া, রেবেকার বদলে যাওয়ার পিছনে যথেষ্ট কারন রয়েছে।সে যে শুধু তাদের ফাদে পা দিয়েই ক্ষান্ত থেকেছে বিষয়টি তেমন না।মাফির সম্পর্কেও তার মা, বোনের সাথে আলোচনা করেছে।রেবেকা প্রতিক্রিয়া স্বরুপ নিরব থেকেছে।হয়তো সে সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছে।রাফিয়া বসে বসে আম খাচ্ছে। তাকিয়াও অনুরূপ। তাদের নিজেদের গাছের ফল, খুব মজা করে দুই বোন খাচ্ছে। আম,লিচু,কলা, কাঠাল,জাম,পেয়ারা, ডালিম, আরো বিভিন্ন ধরনের ফলমূলে ভরপুর তাদের নিজস্ব বাগান।প্রতি বছর এই ফলফলাদি বিক্রি করেও প্রচুর টাকা ইনকাম করেন রেবেকা।রেবেকা মেয়েদেরকে আম কেটে দিচ্ছে আর বিভিন্ন গল্পে মেতে আছে, অকস্মাৎ তার ফোন বেজে উঠলো।
রেবেকা ফোন ধরলো। সালাম দিতেই অপর পার্শ্বের কন্ঠটি সে চিনে ফেললো।কিছু ক্ষন কথা বলার পর রেবেকার মুখে তমসার আভাস দেখা গেলো।দু মেয়ের দৃষ্টিই মায়ের দিকে। ফোন রেখে
সে কিছুক্ষন চুপ থাকলো।দুজনই উৎসুক হয়ে বসে আছে কখন রেবেকা তার বক্তব্য উপস্থাপন করবে তা শুনার জন্য। কিছুক্ষন পর রেবেকা ঠান্ডা গলায় বললো।
সাদাতের মা ফোন দিয়েছিলো। এই শুক্রবার তারা সাদাত আর তাকিয়ার আকদ সেরে ফেলতে চায়।
তোমরা কি বলো?
“সবাই নিশ্চুপ।
ঘরের মধ্যে এক প্রকার নিরবতা বিরাজ করছে। কারো মুখে কোন শব্দ নেই। রাফিয়ার হাতে আমের এক টুকরো ছিলো।এখন সেটা মেঝেতে অবস্থান করছে।তার কপোল বেয়ে অশ্রু ফোটা নিচে পড়ছে।সে এ অবস্থায় সেখানে থাকতে চাইলোনা।তাই উঠে চলে এলো। তার প্রস্থানের দিকে রেবেকা, তাকিয়া, দুজনেই অনিমিখে চেয়ে থাকলো।তাকিয়া রাফিয়ার এহেন আচরণে অবাক হলোনা।কারন সেও রাফিয়ার মুখ থেকে সাদাতের নাম বহুবার শুনেছে।সে জানে সাদাতকে রাফিয়া কত টা পছন্দ করে। তাকিয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে কাওকে কষ্ট দিয়ে কোনো কাজ করতে পারেনা।তার নীতি হলো।সে নিজে কষ্ট পাবে, তবুও কাওকে কষ্ট দিবেনা। তাকিয়া রাফিয়ার কক্ষে এগিয়ে গেলো ।রাফিয়া বালিশে মুখ চেপে কান্না করছে। তাকিয়া বিছানায় যেয়ে বসলো। তার মাথায় হাত বুলালো।কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলো।সে কি বলে বোনকে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পারছেনা।তবুও সে সাহসিকতার পরিচয় দিলো।নিরবতা ভেঙে বললো।
“আপু তুমি এভাবে কান্না করলে বা কষ্ট পেলে আমি আগাতে পারবোনা।আমার কষ্ট হবে। কান্না করো না প্লিজ।
“রাফিয়া বিলম্বে উত্তর দিলো।সমস্যা নেই তুই যা। আমিও চাই সাদাতের সাথে তোর বিয়েটা হোক। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত আমি প্রস্তুত নই।জানিস বোন আমি যখন এ বাড়িতে এসেছি তখন থেকেই সাদাতের সাথে আমার ভালো বন্ধুত্ব ছিলো।সে আমাকে অনেক উপহারও দিয়েছে।আমি সত্যিই বুঝিনি যে সে আমাকে শুধু বন্ধুই মনে করতো।তুই আমার জায়গায় থাকলে হয়তো কিছুটা বুঝতে পারতি আমি কত টা কষ্ট পাচ্ছি।
” এভাবে বলো না, আমার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। তোমাকে আর মাকে আমি কষ্ট দিতে চাইনা।
“আরে বোকা এভাবে বলছিস কেন, আমাকে নিয়ে ভাবিসনা, সব মেয়েরাই বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখে, আমি না হয় এ স্বপ্ন টা নিজের মন থেকে মুছে দিলাম।আমি আর বিয়ে শাদি করবোনা কখনো।তুই সুখে থাকিস।আমার দুয়া সব সময় তোর সাথে থাকবে।
” আপু কিন্তু!
“না আর কিছু বলিস না। আমার ভালো লাগছেনা। আমি একা থাকতে চাই এখন।
” তাকিয়া বোনকে বিরক্ত করলোনা। সে গন্তব্য স্বীয় কক্ষের দিকে করলো।কক্ষে প্রবেশ করেই শক্ত করে কপাট লাগালো।মেঝেতে বসে খাটের এক সাইটে ললাট ঠেকালো।অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে।নাসিকা মোবারক লাল হয়ে গিয়েছে।চোখ ফুলে গিয়েছে।দু গণ্ডদেশ লাল হয়ে রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে।আজ নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে।সে আল্লাহকে কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু তার আওয়াজ ক্ষীণ হয়ে এসেছে।সে আপাতত অন্তরিন্দ্রিয় এর সাহায্য নিলো।কারন সে ভালো করেই জানে আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভিতরের সমস্ত বিষয় অন্তর্যামী। তাকিয়া চলে আসার পরই রেবেকা মেয়ের কক্ষে ঢুকলো।কপালে ভাজ ফেলে বললো।যেভাবে বলেছি সেভাবে করতে পেরেছো?
” রাফিয়া গাঢ় স্বরে বললো।মা আমি বেশি কিছু বলিনি।শুধু বলেছি আমি প্রস্তুত নই। এতেই যে ওর কি হাল হয়েছে!আরেকটু হলেই বলে দিতো আমি এ বিয়ে করবোনা।সাদাতের সম্পর্কেও অনেক কথা বানিয়ে বলেছি।
“ঠিক আছে ভালো করেছো। এ কদিন এভাবেই অভিনয় করো। দেখবে ও নিজের মুখেই বলবে সাদাতকে বিয়ে করতে চায়না।
আসছে।
ভয় নেই খারাপ মানুষদের বিজয় সাময়িক। আর ভালো দের বিজয় স্থায়ী।
ঘাসফড়িং -১৬
~~~~~~~~~~~
তাকিয়া তোমাকে সুন্দর লাগছে।
বিশেষ করে এই শাড়ি টাতে খুব মানিয়েছে।তোমার হবু স্বামীর পছন্দ আছে বলতে হবে।
“তাকিয়া মুচকি হাসলো।
” আজকে সাদাতের সাথে তার আকদ সম্পন্ন হবে।ফ্ল্যাটের মানুষজনেরা তাকে দেখার জন্য তার কক্ষে ভীর জমিয়েছে।রাফিয়া কে তেমন একটা দৃষ্টি গোচর হচ্ছেনা।সকাল থেকেই তাকিয়ার মন রাফিয়াকে খোঁজায় ব্যস্ত।কিন্তু মেয়েটা কোথায় গেলো?একবার ঠিক করল মাকে জিজ্ঞাসা করবে।কিন্তু বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হলোনা।রেবেকা নিজে থেকেই বললো।রাফিয়া লক্ষিপুর ফিরে যাচ্ছে।এখন থেকে সে সেখানেই থাকবে।তুমি কিছু বলতে চাইলে তাকে বলতে পারো।
“মা আজ আপুর যাওয়া ঠিক হচ্ছে?
” আমি অনেক বুঝিয়েছি।কিন্তু সে শুনছেনা আমার কথা।
“আমি আপুকে বুঝাবো।
তাকিয়া সারে তিন হাত শরীরে শোণ ( লাল) রঙের শাড়ি পেচিয়ে এগিয়ে গেলো রাফিয়ার কক্ষে। আজ তাকে বড্ড সুন্দর দেখাচ্ছে।তার রিতী প্রণালীর (রূপ) প্রেমে পড়তে যে কেউ সময় নিবেনা। মন ভরে সারাজীবন দেখে যেতেও কেউ ক্লান্ত হবেনা।সত্যিই অপরূপ দেখাচ্ছে মেয়েটাকে।যেই রব এতো সুন্দর করে সৃষ্টি করতে পারেন। না জানি তিনি কতই না সুন্দর!
তাকিয়ার উপস্থিতিতে রাফিয়া বললো।
” কিরে তুই আমার ঘরে কি করছিস।কিছুক্ষন বাদেইতো বর চলে আসবে?
“তুমি নাকি চলে যাচ্ছো?
” হুম রে।
“কেন?
” এমনি.।
“এমনি কোন উত্তর নয়।
” আমি এখানে থাকতে পারবোনা বোন।কারন তোকে আগেই বলেছি আমি নিজেকে প্রস্তুত করতে পারছিনা।ওই দেখ কাদঁছিস কেন?
“তোমার চোখেও তো পানি। ফুলে তোমার চোখ লাল হয়ে গেছে।
” শোন তোকে একটা কথা বলি।
“হুঁ বলো।
” সাদাত কে আমি খুব ভালো বাসি।আমার ধারনা সেও আমাকে ভালোবাসতো।কিন্তু যখন থেকে তুই তার জীবনে এলি, সে আমাকে ভুলে গেলো। এতে আমার কোন দুঃখ নেই। আমি জানি তুই তাকে ভালো রাখতে পারবি। আমাকে নিয়ে একদম ভাবিস না আমি না হয় লক্ষিপুরের বাড়িটাতে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলবো।
তারপর একদিন না ফেরার দেশে চলে যাবো।আমার আসলে বাঁচার লিপসা টা এখন আর নাই।তুই আর সাদাত খুশি থাকলেই আমি খুশি।যা এখন তোর রুমে চলে যা, কিছুক্ষন বাদেই কাজী চলে আসবে।
শোন আরেকটা কথা।
“হু বলো।
” এই জিনিসটা রাখ।
“কি এটা।
” এটা আমার সুসাইট নোট।
“তাকিয়া বেশ চমকালো।সে অনিমিখে কিছুক্ষন রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
তুমি পাগল হয়ে গেছো আপু? এটা দ্বারা তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছ?
” আমার এ দুনিয়াতে থাকতে আর ইচ্ছা করছেনা।তুই মাকে দেখে রাখিস।
আর কান্না করিসনা।নয়তো তোর সাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
তাকিয়া কান্না থামিয়ে বললো।
“আপু আমি এ বিয়ে করতে পারবোনা।
” তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস।কিছুক্ষন বাদে তোদের বিয়ে পড়ানো হবে। আর এখন এসব বলছিস।
“মাকে বলে দাও আমি এ বিয়ে করবোনা।
” এটা এখন বললে ওদের সম্মান হানী হবে।পাগলামি করিসনা বোন আমার।
“আমি সত্যিই বলছি।
রাফিয়া,তাকিয়া এক রুমে বসে কাদঁছে।তাকিয়া কান্নায় কোন অভিনয় নেই। এটা বুঝার জন্য দলীল প্রমানের প্রয়োজন হবেনা।কিন্তু রাফিয়ার অশ্রুতে কতটা ছলনা মিশ্রিত আছে বরাবরই বিজ্ঞমানুষরা সেটা সুন্দর করে অনুধাবন করতে পারবে।
রেবেকা কাওকেই দাওয়াত করেনি।এর পিছনে অবশ্য যথেষ্ট কারনও রয়েছে।প্রথমত আজকে বড় কোন ঝামেলা হতে পারে।দ্বিতীয়ত ছেলেপক্ষরা শুধু বিয়ে পড়িয়ে রেখে দিতে চায়।যার দরুন দুই পরিবারই মেহমানদের শুন্যতা রেখেছে।
কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করেছে।সাদাত কোন জড়তা ছাড়াই বলে ফেললো।আলহামদুলিল্লাহ।কিন্তু তাকিয়ার বেলায় সমস্যা হলো।তার সামনে রাফিয়া বসে আছে।সে কিছু ক্ষন পর পরই রুমাল দিয়ে চোখ মুছায় ব্যস্ত। শেষ অবধি আর বিয়ে পড়ানো হলোনা।সাদাত খুব কষ্ট পেয়েছে।সে তাকিয়ার থেকে এমন কিছু আশা করেনি।তার বাবাও প্রচণ্ড রেগে গেছেন।তিনি এখন হেনার উপর আঙুল তুলছেন।হেনারই বা দোষ কোথায়? কিন্তু হেনা এটা বুঝতে পারছে সাদতের সাথে যা হয়েছে তা মোটেও ঠিক হয়নি।ছেলেটা নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পেয়েছে।তাকিয়া তাকে চায়না সেটা আগে বললেই পারতো।এতো কপটতা করার কি দরকার ছিল।সাদাত নিজেকে এক রুমে বন্দী করে রেখেছে। সে বিষয়টি নিয়ে দুর্ভাবনায় ডুবে আছে।কাল অবধিও তো সব ঠিক ছিলো।আজ এমন কি হলো যে তাকিয়ার এত পরিবর্তন। না আর ভাবতে পারছেনা সে।তার প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করছে।দুই হাত দিয়ে ললাটের পার্শ্বদেশ চেপে ধরে আছে। তবুও সেটা যেমন, তেমনি আছে।কিছুক্ষন মাথা ব্যথাটাকে উপেক্ষা করে সে ভাবনার জগতে মনোনিবেশ করলো।তাকিয়াকে সে ভালো করেই জানে।সে কখনো তাকে ঠকাবেনা।কিন্তু আজ যেটা করেছে সেটা কি ঠিক হয়েছে?সে আমাকে বিয়ে করবেনা এই বিষয়টি আগে বললেই পারতো। হতে পারে এর পিছনে যথেষ্ট কারন রয়েছে।কিন্তু কি কারন থাকতে পারে? সেতো তখন অকপটে বলেছিলো। আমি সাদাত কে বিয়ে করতে চাইনা।ফোন দিয়ে কি তার সাথে কথা বলবো?না, না কথা বলা যাবেনা। সে আমাকে লাঞ্চিত করেছে।আমাকে ভালোবাসলে কখনো এমন করতে পারতোনা।আচ্ছা থাক আমিতো তাকে ভালোবাসি। ফোন দিয়ে বিষয়টি জানা দরকার। সাদাত অভিমান ভেঙে ফোন দিলো।
“আসসালামু আলাইকুম। তাকিয়াকে দেওয়া যাবে?
“রেবেকা উৎসাহের সাথে বললো। কে সাদাত বাবা নাকি?
“জী।
” বাবা তোমার সাথে এমন হওয়া উচিৎ হয়নি।কিন্তু মেয়েটা কেন যে এমন করলো আমি বুঝতে পারছিনা।
“আপনি তার কাছে ফোনটা দেন।
” কিছুক্ষন আগে কার সাথে যেন ফোনে কথা বললো।আচ্ছা দিচ্ছি এখন মনে হয় কথা বলা শেষ।
“তাকিয়া নরম স্বরে সালাম দিলো।তারা যাওয়ার পর থেকে এক মুহুর্তের জন্য তার অক্ষিকে বিরতি দেয়নি।অথচ তাকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করলো। সে নাকি কার সাথে কথা বলছে।যাইহোক।
” সাদাত সালামের উত্তর নিয়ে বললো।মনে হচ্ছে কান্না করছো?
“বিশ্বাস করুন আমি এটা করতে চাইনি।
” আমি এটাই তোমার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছিলাম।সমস্যা নেই আমি বিয়ের তারিখ ঠিক করে আবার তোমাকে জানাবো কেমন?
“না।
” কি না.।
“আমি আপনাকে বিয়ে করবোনা।
” কেন?তুমি আমাকে অপছন্দ করো।?
“না।
” তাহলে সমস্যা কোথায়?
“কোথাও সমস্যা নেই।
” সত্যি করে বলতো তুমিকি অন্য কাওকে ভালোবেসে ফেলেছো?
“আমার জীবনে একজনকেই আমি ভালোবেসেছি।আর সারা জীবন তাকেই ভালোবাসবো।আর সেটা হচ্ছেন আপনি।
” তাহলে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়?
“আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। এটাই আমার শেষ কথা।
” হ্যালো হ্যালো।
“তাকিয়া ফোন কেটে দিয়েছে।সাদাতের মাথাব্যথা আরো দ্বিগুণে পরিণত হচ্ছে।কিন্তু সে কি করে জানবে তাকিয়া এমন কেন করছে?মেয়েটা কান্নার জন্য ভালো করে কথাও বলতে পারছিলো না।
সাদাতের বড্ড মায়া হচ্ছে সেই সাথে প্রচণ্ড রাগও হচ্ছে।তার রাগের কারন,তাকিয়া তার কাছে সবকিছু শেয়ার কেন করলোনা।
এমন সময় আবার ফোন বেজে উঠলো।
আনিধা ফোন দিয়েছে, কিন্তু সে ফোন ধরতে চাচ্ছেনা।মাথার উপর বালিশ দিয়ে শুয়ে আছে। আপাতত সে এতেই স্বস্তি বোধ করছে।কিন্তু ফোন তার নিজ গতিতে বেজেই চলেছে।সেদিকে সাদাত ভ্রুক্ষেপহীন, সে চিন্তায় মশগুল।মেয়েটা কেন তার সাথে এমন করলো?এর পিছনে কি কারন থাকতে পারে?ফোন বাজতে বাজতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।আপাতত সে আর সাদাতকে বিরক্ত করছেনা।কিছু ক্ষন পর টুং করে শব্দ হলো।বুঝাই যাচ্ছে ম্যাসেজ এসেছে।সাদাত বাধ্য হয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকালো।আনিধা ম্যাসেজ করেছে।
ভাইয়া ফোনটা ধর। তোর সাথে তাকিয়ার ব্যাপারে কথা আছে।
” এমন কি কথা থাকতে পারে। সাদাতের ফোন ধরতে ইচ্ছা করছেনা।আবেগ বলছে ফোন ধরিসনা।বিবেক বলছে ফোন ধরা উচিত। সাদাত বিবেককেই প্রাধান্য দিলো। সে ফোন কর্ণে তুলে নিলো।আনিধা এক শ্বাসে কথা বলা শেষ করলো।
সাদাতের ঠোটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।এখন আর মাথা যন্ত্রণা তাকে কষ্ট দিচ্ছেনা।সে উঠে বসলো।কোনো একটা বিষয়ে গভীর চিন্তা করলো।সে সমাধানের চেষ্টা করছে।মনে হচ্ছে কিছু একটা পেয়েছে।সাদাত স্বীয় কক্ষ থেকে ডাইনিংএর দিকে এগিয়ে গেলো। তার বাবা মা দুজনই অন্যমনস্ক। তারা সাদাতকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন।ছেলে না খেলে দুজনই না খেয়ে বসে থাকেন।ছেলে মন বিকল করে বসে থাকলে তারাও এ পন্থা অবলম্বন করেন।সেখান থেকে আসার পর এতক্ষন সে নিজেকে ঘর বন্দী করে রেখেছে।এখন রাত বাজে প্রায় বারোটা। সে মা বাবাকে এক সাথে দেখে বললো।
“তোমরা এখনো ঘুমাওনি?
” না ঘুম আসছেনা।
“খাবার খেয়েছো?
” না।সাদাতের মা বললো।তুই খাবিনা?
“হুম খাবতো খুব ক্ষুধা পেয়েছে।
” আচ্ছা বস এখানে। তোর বাবারও ক্ষুধা পেয়েছে আমি খাবার আনছি।
“সাদাতের বাবা ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন।বাবা হার জিত মিলিয়েই আমাদের জীবন। এর জন্য কখনো মন খারাপ করবেনা।
” না বাবা আমি ঠিক আছি।আমি তোমাদের সাথে অন্য কিছু নিয়ে কথা বলতে এসেছি।
“আচ্ছা বলিস।আগে তোর মা আসুক।
আসছে।