ঘাস ফড়িং 27,28

ঘাস ফড়িং

ঘাস ফড়িং

পর্ব -২৭
~~~~~~~~
২৭.
তাকিয়া সময় বুঝে রাফিয়া কে ফোন দিলো। প্রথম বার কল রিসিভ হলোনা। তাই দ্বিতীয় বার আবার চেষ্টা করলো।এবার আর বিফলে গেলোনা।রাফিয়া ফোন ধরলো।
রাফিয়া বিরক্তি ভরা কন্ঠে বললো।
কে?
“তোমার শত্রু। কেমন আছো।
” কন্ঠটি রাফিয়ার পরিচিত। সে শুকনো হাসি দিয়ে বললো। ওহ তুই? কেমন আছিস?
“কেমন আছি সেটা তো আমার থেকে তুমি ভালো জানো।
” রাফিয়া এতোক্ষন শুয়ে ছিল।এখন সে উঠে বসলো।তার ধারনা সামিয়া তার কথা অনুযায়ী সব কাজ করতে পেরেছে।সে কোন বনিতা না করেই বললো। কিযে বলিস কিছুই বুঝিনা। বুঝিয়ে বলতো কি হয়েছে?
“আচ্ছা তাহলে বুঝিয়েই বলি।মনোযোগ সহকারে শুনবে।
তোমার মত মেয়ে হচ্ছে এ পৃথিবীর ভাইরাস। তুমি কেন বেঁচে আছো বলোতো?মায়ের সাথে সাথে তোমারও জেলে যাওয়া উচিত ছিল।আমি খুব অবাক হচ্ছি। বাবা মানুষ চিনতে এতোটাই ভুল করেছে? এটা সত্যিই খুব শোচনীয়। যাক কাজের কথাই আসি।আমি তোমার জন্য অনেক বার আল্লাহর কাছে হেদায়েতের দোয়া করেছি।কিন্তু আমার দোয়াটা বোধহয় কবুল হয়নি।হবেইবা কি করে? তোমার মনে রয়েছে নেফাকিতে ভরপুর। তুমি এত টা নিচে নামবে আমি একদমও ভাবিনি।
“রাফিয়া আফসোস ভরা কন্ঠে বললো।শোন তোর বর যদি অপরাধি হয়ে থাকে এতে আমার দোষ কোথায়? আমি গ্রামে আর তোরা ঢাকায়।তবে একটা কথা মানতেই হবে তুই প্রচুর কথা শিখেছিস। এখন আর সে ছোট বাচ্চাটি নেই তুই।
” তাকিয়া এবার হাসলো।তবে সেটা মুচকি হাসি নয়। সে ঈষৎ উঁচু আওয়াজে হাসলো।তাকিয়ার হাসির আওয়াজ রাফিয়ার মনে বেশ বিস্ময় সৃষ্টি করলো।অবশ্য বিস্ময় সৃষ্টি করার পিছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। কারন রাফিয়া এখনো জানেনা সামিয়া তার কথা রাখেনি।রাফিয়া এবারো শুকনো একটা হাসি দিয়ে বললো।
কি হয়েছে তোর বলতো এভাবে হাসার কারন কি?
“তাকিয়া তার ভ্রু জোড়া কপালে উঠিয়ে বললো।যাক অবশেষে তোমার মধ্যে আমার হাসি নিয়ে কৌতুহল জাগলো?
পুরো কথা শুনলে হয়তো তোমার মাথায় বাজ পড়তে পারে? সামলাতে পারবেতো সবকিছু?
“রাফিয়া নিশ্চুপ।
“তাকিয়া আবারো বলতে শুরু করলো।তোমার কথায় ই তোমাকে অপরাধি সাব্যস্ত করারা জন্য যথেষ্ট ।তোমার প্লান মুতাবেক কিছুই হয়নি।সামিয়া আমাকে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে। এখন হয়তো তুমি ভাবছো সামিয়ার মাকে শেষ করে দিবে। কিন্তু সেটাও পারবেনা।কারন সামিয়ার মায়ের হেফাজতের ব্যবস্থাও আমি করেছি।তুমি তোমার কাজে কখনো সফল হবেনা।কারন খারাপ রা কখনো বিজয়ী হয়না।ভেবেছিলাম মাকে জামিনে ছুটিয়ে আনবো।কিন্তু সেই সুযোগ টাও তুমি হারিয়েছো। তোমার শাস্তি এটাই একা একা সারাজীবন কাটাবে। না পাবে মায়ের ভালোবাসা। না পাবে মানুষের ভালোবাসা।আমার কাছে তোমার কুকীর্তির সব প্রমানই রয়েছে।যদি এরপর থেকে আমার বা আমার পরিবারের কারো ক্ষতি করার চেষ্টা করো।তবে তোমার অবস্থাও মায়ের মতই হবে। কথাটা মাথায় রেখো।
রাফিয়া কথা গুলোর ভার নিতে পারলোনা। সে তাকিয়াকে কোন জবাব না দিয়েই ফোন রেখে দিলো। অনিমিখে মাটির দিকে চেয়ে আছে সে। চোখ জোড়া নির শূন্য। মনের গহীনে হয়তো নীরেরা ছুটে বেড়াচ্ছে। তার বিবেক তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে । মানুষ যতই অপরাধ করুকনা কেন এক সময় ঠিকিই বিবেকের কাঠগড়ায় তাকে দাড়াতে হয়।বিবেকের করাঘাত তাকে খুড়ে খুড়ে খায়।অপরাধী দের মধ্যে তখন দুটি ভাগ হয়।কেউ বা সৎ পথে ফিরে আসে কেউ বা আবার অসৎ পথেই রয়ে যায়।রাফিয়াও ঠিক তাদের মধ্যেরই একজন। তবে সে কোনটা গ্রহন করবে সেটা সে নিজেও জানেনা।
রাফিয়ার সাথে কথা শেষ করে তাকিয়া তার নাম্বারটি প্রথমত ব্লকলিস্টে ফেললো। সে আর পূর্বের মত করে জীবন জাপন করতে চায়না।সে নিজেকে পরিবর্তন করতে চায়।সেও এখন থেকে অন্যায়ের প্রতবাদ করবে। তাকিয়া ফোন টেবিলের উপর রেখে জানালার পাশে একটি চেয়ারে গিয়ে বসলো।আজ তার খুব কষ্ট হচ্ছে। কেন হচ্ছে সে জানেনা।কিছু কিছু সময় কষ্টের কারন গুলোও ঠিক মত খুঁজে পাওয়া যায়না। বাহিরে বাতাসের খুব আনাগোনা।বাতাসের তীব্রতা এতটাই প্রকট যে জানালার পর্দা ভেদ করে তাদের উপস্থিতি এখন কক্ষে। পৃথ্বীতে রোদের উপস্থিতিও রয়েছে। তবে গগনে জমে থাকা মেঘ গুলোর জন্য সেগুলো কিছুক্ষণ বাদে বাদেই হারিয়ে যাচ্ছে।কখনো আবার সুযোগ পেলে মহীতে উঁকি দিচ্ছে।তাকিয়ার অবশ্য এসবের দিকে নজর নেই।সে ভাবছে তার বাবার কথা।মানুষটি তার পাশে থাকলে তাকিয়া বর্তমান অবস্থা দেখে ভিষণ খুশি হত।তাকিয়ার ভাবনা স্থায়ী হলোনা।সাদাত এসেছে। সে তার পাশে একটি চেয়ার টেনে বসলো।এবং তাকিয়ার ধ্যানে বিঘ্ন ঘটিয়ে বললো।মন খারাপ?
“ওও আপনি!কখন আসলেন?
” আমি আমার উত্তর কিন্তু পাইনি?
“তাকিয়া এবার মনের বিরুদ্ধে হাসলো।এবং সাদাতের হাতে হাত রেখে বললো।
আপনি আমার পাশে থাকলে পৃথিবীর কোন কিছুই আমার মনকে খারাপ করতে পারবেনা।আমি একদম ঠিকাছি।
” সামিয়াকে বিদায় করে দিয়েছো যে?
“তাকে প্রয়োজন নেই তাই।
” একা একা কাজ করতে পারবে তুমি?
একজন মানুষ পাশে থাকলে ভালো হতোনা?
“আপনি আমার জন্য একদম চিন্তা করবেননা। আমি একাই সব করতে পারবো।
আর বেশি কষ্ট হলে আপনি তো আছেনই।
” সাদাত তার শুভ্র দন্ত গুলো বের করে হাসলো।সে আর কিছুই বললোনা।
তাকিয়া বললো।চলুন ভাত খাবেন।খুব ক্ষুধা পেয়েছে আমার।আমি এখনো খাইনি।
সাদাত কিছুটা কড়া গলায় বললো।
” কিছুক্ষন পর আছরের আজান দিবে আর তুমি বলছো খাওনি। কেন খাওনি বলো?
” তাকিয়া অনুনয়ের স্বরে বললো। তখন ক্ষুধা পায়নি তাই।এখন পাচ্ছে আসেন খেয়ে নিই।
সাদাত কথা বাড়ালোনা।
তাকিয়া সাদাতের প্লেটে ভাত বেড়ে দিচ্ছে।ভাত বাড়ার পর্ব শেষ।কিন্তু তাকিয়া নিজের প্লেটে ভাত বাড়লোনা।সাদাত তাকে এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন করলোনা।সে তাকিয়ার অভ্যাসের সাথে পরিচিত।সাদাত কোন কথা না বাড়িয়ে তাকিয়াকে খাইয়ে দিলো। সাদাত ভালো করেই জানে। এটা না করলে তার আঙুলে কামড় পড়তো।বেচারা বিষয়টি সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত রয়েছে। দু তিন লোকমা খাওয়ার পর পরই তাকিয়া মুখ চেপে ধরে উঠে পড়লো।সে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো।তার খুব বমি পাচ্ছে।সাদাত বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকিয়া আগে কখনো এমন করেনি।সাদাত হেনাকে ডাক দিয়ে নিয়ে আসলো।হেনা ছেলেকে চলে যেতে বললেন।সাদাত চলে আসলো।তার ধারনা, হয়তো ভাত মাখা মজা হয়নি।
আসছে।
,
গল্প সম্পর্কে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেননা কিন্তু 🙂
ঘাসফড়িং
শেষ পর্ব
২৮.
তাকিয়া কক্ষে আসার পর সাদাত মলিন মুখে জিজ্ঞাসা করলো।
“কি হয়েছে বলোতো আমায়?
” তাকিয়া লাজুক স্বরে বললো।
তেমন কিছুইনা। হঠাৎ খুব খারাপ লাগলো।এই আরকি।
“আচ্ছা তাই বলো আমি ভাবলাম কোনো সমস্যা হলো কিনা?আচ্ছা ঠিকাছে তুমি বিশ্রাম নেও আমি নামাজ পড়ে আসি।সাদাত এটুকু বলেই ওয়াশরুমে চলে গেলো।
তাকিয়া চাইলেই বলে দিতে পারতো তার মধ্যে একটি নিষ্পাপ প্রান ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। দুইদিন আগেই তাকিয়া বিষয়টি বুঝতে পেরেছে।
তার শাশুড়ীর চোখে বিষয়টি আগে ধরা পড়েছে।এইতো সেদিনও সে এভাবে খাবার থেকে উঠে গিয়েছিল। হেনা বেগমের কাছে বিষয়টি চক্ষুগোচর হলে তিনি তাকিয়ার সামনে এসে কোন বনিতা না করেই বললেন।এতো সুন্দর খবর টা আমার কাছ থেকে লুকালি? তাকিয়া পুরো পুরি বোকাবনে গেলো।কি লুকিয়েছে সে? সে তার শাশুড়ির সাথে সব কথা শেয়ার করে।তাকিয়াকে চুপ দেখে হেনা হেসে বললেন।
কি লুকিয়েছিস সেটাইতো জানতে চাচ্ছিস তাইনা?আচ্ছা তাহলে শোন আমাকে দাদিমা বলে ডাকার জন্য কেউ এ পৃথিবীতে আসছে।
হেনা ভিজ্ঞ মানুষ। তিনি বউকে একবার দেখেই বিষয়টি অনুধাবন করে ফেলেছেন। কিন্তু তাকিয়াতো এর বিপরীত।তবে যাই হোক তাকিয়া কথা টা শুনে খুব খুশি হয়েছে।তার মনের শুকনো শস্য দানা গুলো যেন প্রান খুঁজে পেলো।হৃদয়ের নিভু নিভু পিদিম অকপটে জ্বলে উঠলো।সে ভেবে রাখলো।সাদাত আসলে সে সাদাতের বুকে আগে মুখ লুকাবে. তারপর তার কর্নলতিকায় ওষ্ঠ নিয়ে বলবে। আমাদের ভালোবাসা আজ পূর্নতা পেয়েছে। কিন্তু সেটা আর হলো কোথায়? সে সাদাতকে কিছুই বলতে পারেনি।এর কারন হিসাবে সে দুইটা যুক্তি দাড় করিয়েছে।
প্রথমত। রাফিয়া ।দ্বিতীয়ত – লজ্জা। সব মিলিয়ে আর বলা হয়ে উঠেনি।কিন্তু আজ বলে দেওয়া উচিত।
সাদাত ওজু করা শেষ।সে এখন নামাজের জন্য রওনা হবে।তখনই তাকিয়া তাকে ক্ষীণ আওয়াজে ডাকদিল।
সাদাত ফিরে এসে বললো।কি হয়েছে,
কিছু বলবে?
“হুঁ।
” বলো?
“আপনি আমাকে বলেছিলেন আপনি আমার মনের ভাষা গুলো পড়তে পারেন।তাহলে আজ আমার মন কি বলছে আপনি শুনতে পাচ্ছেননা?
” সাদাত মুচকি হাসলো।বলে রাখা ভালো। তাকিয়ার মনে উচাটনতা (চঞ্চল্যতা) সৃষ্টি করার জন্য সাদাতের একটি হাসিই যথেষ্ট। তাকিয়া জিজ্ঞাসুনেত্রে সাদাতের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো বুঝার চেষ্টা করছে।সাদাত কিছুক্ষন নিরব থেকে তাকিয়াকে কোলে তুলে নিল।এবার যেন লজ্জায় তার মাথা নুয়ে আসলো। তাদের দুষ্টুমি গুলো চার দেয়ালেই আবদ্ধ থাকলো।সাদাত তাকিয়াকে কোল থেকে নামিয়ে বললো।আমি সুন্দর খবর টি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছিলাম।আমার ধারনা আমি এতোটা বোকা নই।কিন্তু আমি খেয়াল করেছি তুমি বরাবরই নিরব ভুমিকা পালন করেছো।
তুমি জানো আমি খুব খুশি হয়েছি। এত টাই খুশি যে এই খুশিগুলোর ভার নিতেও আমার কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। হয়তো এ জন্যই প্রতিটি মানুষ সুখের কান্না করে।তাকিয়া সাদাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো।আমার ভালোবাসা, আপনার এ সুখ দেখে সত্যিই আমি খুব আনন্দিত। আমি সব সময় চেয়েছি পৃথিবীর সব গুলো সুখ বা শান্তি যাই হোক না কেন আপনাকে উপহার দিবো। জানিনা পেরেছি কিনা।কিন্তু আপনার আজকের প্রানবন্ত মুখচ্ছবি আমার সারাজীবন মনে লেগে থাকবে।খুব ভালোবাসি প্রিয় আপনাকে।
“সাদাত ক্ষীণ স্বরে বললো।
আমিও।
সাত মাস পরের কথা
তাকিয়া অপারেশন থিয়েটারে শুয়ে আছে।কিছুক্ষন আগেই নার্স একজন নবজাতক কন্যাকে হেনা আর হানিফ সাহেবের কোলে দিয়ে গেছেন। বাচ্চাটি দেখতে অবিকল সাদাতের মত হয়েছে। গায়ের রং মায়ের মত হয়েছে। দুধে-আলতা গায়ের রং। কিন্তু সাদাতের মুখে হাসি নেই।চোখজোড়া বেয়ে দু ফোটা অশ্রুও চলে এসেছে।আসবেনাই বা কেন তার প্রিয় মানুষটি সম্পর্কে ডাক্তার কিছুই বলতে পারছেননা।তারা আল্লাহর উপর আস্থা ছেড়ে দিয়েছেন।সাদাত হসপিটালের বারান্দায় একটি বেঞ্চে বসে আছে। কষ্ট পাওয়ার কারন গুলো তার মাথায় ভীড় জমাচ্ছে। সে কিছুক্ষন পর পরই মাথা নাড়াচ্ছে।সে আপাতত কষ্টের কথা গুলো শুনতে চায়না। সন্তানের কষ্ট গুলো মায়েরা ঠিকিই বুঝতে পারে।তাই
হেনা বেগম ছোট্ট মেয়েটিকে সাদাতের সামনে এসে ধরলেন।
হাসি মুখে বললেন
” দেখ বাবা আমাদের সোনামনিটা কত সুন্দর হয়েছে?
“সাদাত সম্মতি সূচক মাথা নাড়ালো। মানে হ্যাঁ আসলেই তার মেয়ে খুব সুন্দরী। সাদাত তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে নিল।তাকিয়া প্রায় বলতো আমাদের ছোট একটি সংসার হবে। আমাদের ছোট্ট বাবুটা আমাদের খুব বিরক্ত করবে।আমি হয়তো মাঝে মাঝে দু একটা বকাও দিব।অতঃপর আপনি যখন বাড়িতে আসবেন।তখন সে আমার নামে আপনার কাছে গাল ফুলিয়ে অনেক অভিযোগ করবে।আপনি এসে আমাকে ওর খুশির জন্য বকা দিবেন।আমি তখন কান্নার ভান ধরবো।সে এটা দেখে খুশি হয়ে যাবে।বিষয়টি খুব আনন্দ দায়ক হবে তাইনা? সাদাত তখন মুচকি হেসে বলতো হুম সত্যিই খুব আনন্দদায়ক হবে। আজ কেন তার এ কথা গুলো মনে হচ্ছে? তাদের মেয়ে হয়েছে। কি মায়াবতী তার চাহুনি। গোলাপি রঙে রাঙানো তার ঠোট। ছোট ছোট হাত দুটি সুযোগ পেলেই মুখে ভরে দিচ্ছে। যেন এক সদ্য প্রষ্ফুটিত ফুল। সাদাত এসব ভাবা বন্ধ করলো।সে তার মেয়ের মায়ায় পড়ে গেলো।না চাইতেও এক শুকনো হাসি দিয়ে তার সন্তানকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিল। কপালে চুমু একে দিলো।বাচ্চাটিও বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।সাদাত বড় একটি শ্বাস ফেলে আবারো মেয়েকে হেনা বেগমের কোলে দিয়ে দিলো।সে কিছুক্ষন একা থাকতে চায়।সাদাত উঠে দাড়ালো। হেনা বেগম আর হানিফ সাহেব ছেলের কাধে হাত রেখে বললেন।অযথাই চিন্তা করছিস বাবা তাকিয়া সুস্থ হয়ে উঠবে দেখিস?
” সাদাত এবারো একটি শুকনো হাসি দিলো।সে মসজিদের পানে এগিয়ে যাচ্ছে।এখন একটাই উপায় আল্লাহকে ডাকতে হবে। আল্লাহই সমস্যা সমাধান করে দিবেন।
“এক রাত পেরিয়ে গেছে এখনো তাকিয়ার জ্ঞান ফিরেনি। ছোট্ট মেয়েটি কিছু ক্ষন পর পরই মায়ের উপস্তিতি পাওয়ার জন্য কেঁদে উঠে। ক্ষুধা কমাতে চায়।কিন্তু হেনা আশে পাশের কাওকেই পেলোনা।বাচ্চাটিকে খাবারের স্বাধ দেওয়ার জন্য। অবশ্য হেনা বেগমও আর থেমে থাকলেননা।গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে তার মধ্যে আঙুল চুবিয়ে নাতনির মুখে ধরলেন।ছোট সোনামনিটি এতেই বোধহয় খুশি হয়েছে। দাদির আঙুল কেই সে শব্দ করে চুষে চুষে খাচ্ছে। চুক চুক জাতীয় শব্দ হচ্ছে।হেনা ছোট্ট সোনামণিটির মুখের দিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন।
আল্লাহ এই বাচ্চাটি তো নিষ্পাপ। সেতো পাপের ধারে কাছেও যায়নি।এক মাত্র তুমিই পারো এই নিষ্পাপ প্রান টিকে মায়ের ভালোবাসায় সিক্ত করতে।তুমি তাকে এ নেয়ামত থেকে বঞ্চিত করোনা।
হসপিটালে সাদাত আর হানিফ সাহেব আছেন।গ্রাম থেকে আনিকা আর তার দাদিও এসেছে। সবাই আল্লাহকে প্রান পনে ডেকে যাচ্ছেন।
সাদাত একমুহূর্তের জন্যও ভাবতে পারছেনা।
শ্রান্তিহীন (ক্লান্তিহীন) উজ্জ্বল মুখচ্ছবির মানুষ টি তাকে আর বিরক্ত করবেনা।এসব ভাবনা তার মনে আসলেও সে ঝেড়ে ফেলে দিচ্ছে।সে এই মানুষটির সাথেই বাকি জীবন কাটাতে চায়।সাদাত ভাবনার জগতে আছে।কিন্তু সে, বেশিক্ষন সে জগতে থাকতে পারলোনা।একজন নার্স তার ধ্যানে ব্যাঘাত ঘটালো।
নার্সটি সাদাতকে উদ্দেশ্য করে বললো।আপনাদের পেসেন্ট এর জ্ঞান ফিরেছে।তিনি তার হাসবেন্ড এবং সন্তান কে খুঁজছেন।কিছু ক্ষনের মধ্যেই আমরা তাকে নরমাল রুমে দিয়ে দিব। তার স্বামী এবং সন্তান কে তার সাথে দেখা করতে বলবেন
এতে রুগী তার মনে প্রফুল্লতা খুঁজে পাবে।
সাদাত খুশির সংবাদটি শুনে হাসলোনা।তার কাদতে ইচ্ছে করছে।তবে সেটা সুখের কান্না। দু রাকাত শুকরিয়া স্বরুপ নামাজ আদায় করা দরকার।আল্লাহ তার কথা রেখেছেন।সত্যি আল্লাহ খুবিই মহান।আমরা মুলত আল্লাহ কে ডাকার মত ডাকতে জানিনা।তিনি এতোটাই মহান যে তিনি তার বান্দাদের কখনো নিরাশ করেননা।
“তাকিয়ার কোলে তার বাচ্চাকে দেওয়া হয়েছে সাদাত পাশেই বসে আছে।সাদাতের খুব ইচ্ছে করছে বউয়ের পাশে বসে গল্প করবে। কিন্তু তা আর হচ্ছে কোথায়?মানুষ জন তো তাদেরকে একা রেখে যাচ্ছেইনা।সাদাত সত্যিই মনে মনে বিরক্ত হচ্ছে।তাকিয়া বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছে।তাই সাহস নিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললো।আমি উনার সাথে কিছু ক্ষন একা কথা বলতে চাই।সবাই তার ইচ্ছাপূরণ করতে সম্মতি জানালো।সবাই এক এক করে রুম থেকে চলে গেলো।সাদাত চুপ করে বসে আছে। সাদাতকে নিশ্চুপ দেখে তাকিয়া বিরক্ত ভরা কন্ঠে বললো।সবাইকে রুম থেকে বের করলাম, তবুও আপনি চুপ করে বসে আছেন।এদিকে আসুন।আমার কাছে এসে বসুন।আপনাকে ভিষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
” সারা রাত ঘুমাইনি তাই হয়তো।
“কেন ঘুমাননি?
” ঘুম আসেনি তাই।
তাকিয়া বাবুর দিকে তাকিয়ে বললো।দেখেছিস তোর বাবা তবুও স্বীকার করছে না সে আমার চিন্তায় ঘুমাতে পারেনি।এখন থেকে আম্মাজান আপনিই পারবেন আপনার বাবাকে শাসন করতে।
এবার সাদাত হেসে দিলো।তার শুভ্র দন্ত গুলো প্রায় দেখা যাচ্ছে।সাদাত হাসি থামিয়ে বললো।তাকিয়া আমি তোমাকে ভিষণ ভালোবাসি।কখনো তোমাকে হারাতে চাইনা।
“আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি।আচ্ছা বলুনতো আমাকে এখন কেমন লাগছে।চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। অনেকটা মোটা হয়ে গিয়েছি।গায়ের রঙ টাও কেমন অনুজ্জ্বল হয়ে গেছে।ভালো লাগছে আমাকে?
” তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা।সত্যি বলছি তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।ঠিক যতটা সুন্দর প্রথমদিন তোমাকে লেগেছিলো।তোমার কোলে থাকা আমার মেয়ের দিকে তাকালেই মনে হচ্ছে তোমার সৌন্দর্য আগের থেকেও দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে।
“খুশি হলাম।সব সময় এটাই চাইতাম। আমি যেমন তেমনই যেন আমাকে কেউ ভালোবাসে।আমার বাহ্যিক রুপ যেন ভালোবাসার প্রধান কারন না হয়।আল্লাহ আমার ইচ্ছে পূরণ করেছেন।
” আমার কাছে তুমি সব সময়ই সুন্দর। ও,,, তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি।তুমি গর্ভকালীন সময়ে যেই বইটি লিখেছিলে ওই বই সম্পর্কে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছেন তারা বইটি প্রকাশ করবে।আমাদের মেয়ের জন্মের পর পরই ফোন আসলো সেখান থেকে।
“আলহামদুলিল্লাহ এক সাথে দুইটি ভালো খবর।সত্যিই আমি আল্লাহর কাছে ভিষণ রকমের কৃতজ্ঞ তিনি সব সময় আমাকে বেশি দিয়েছেন।চাওয়ার থেকেও বেশি।সব সময়ই আক্ষেপ ছিলো মাকে নিয়ে।আজ তিনি আমাকে একজন মাও দিলেন।আশা রাখি একজন বাবাও উপহার দিবেন।
” সাদাত তাকিয়ার কথা শুনে মুচকি হাসলো।সে তার পরিবারকে ভিষণ ভালোবাসে।এখন থেকে তার দায়িত্ব যেন আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।পবিত্র ভালোবাসা গুলো বোধহয় এমনি সুন্দর হয়। আল্লাহ সকলকে সৎ এবং চক্ষুশীতল জীবন সঙ্গী দান করুন।আমীন।
________________
সাদাত তাকিয়ার গল্প টা এখানেই শেষ করা হলো।
তবে এই গল্পের সিজন ২ লিখার ইচ্ছে আছে।যদি আপনারা চান তাহলেই।সিজন ২ তে সাদাত আর তাকিয়ার বেবি কিছুটা বড় হওয়ার পর থেকে গল্প আগাতে থাকবে।যদি আপনারা সিজন ২ পড়তে চান তবে কমেন্টে আমাকে জানাবেন।আর সিজন ২ কিছুদিন পরে আসবে।
গল্প সম্পর্কে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন🙂

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *