গল্প: তোমায় নিয়ে 1,2

তোমায় নিয়ে
পর্ব:-১+২
.
মা দুধের গ্লাসটা হাতে নিয়ে পিছনে পিছনে ছুটতে ছুটতে দরজার সামনে পৌছালো।
– লক্ষী মা আমার! এতটুকু তো অন্তত খেয়ে যা! সারাদিন তো ভার্সিটিতে থাকবি। কি খাবি না খাবি। খেয়ে যা মা!
– মা আমার একটুও সময় নাই! লেইট হয়ে যাচ্ছে।
– একটু লেইট হলে কি হবে শুনি! দারা তো?
– না মা! প্লিজ!
নীরা দ্রুত দরজার সামনে এগিয়ে যেতেই দরজা খুলে নীরার বাবা বাসায় ঢুকল।
নীরার দিকে চোখ পরতেই সাথে সাথে চোখ নিচু করল নীরার বাবা।
নীরা ফ্যাশানেবল, স্মার্ট, স্টাইলিশ মেয়ে। বর্তমানের সাথে তালে তাল মিলিয়ে চলা মেয়ে। গায়ের রং হালকা শ্যামলা হলেও মুখের গঠন সুশ্রী। চেহারার দিকে তাকালে এক অদ্ভুত মায়া জেকে বসে। চোখ ফিরানো দায় হয়ে পরে। তার উপর সাজসজ্জা বাড়তি এক রাশি সৌন্দর্য ঢেলে দেয়। নীরা উচ্চ মধ্যবিত্ত না হলেও ধরা যায় ধনী পরিবারের মেয়ে। একমাত্র মেয়ে শাহিন সাহেবের। আদরের দুলালী বলা চলে। শাহিন সাহেব এলাকার পরিচিত লোকের মধ্য অন্যতম। যশ, খ্যাতি, অর্থ সম্পদ, সব দিক দিয়েই তিনি এগিয়ে। কোনো কিছুর কমতি নেই। শাহিন সাহেব বেশ টাকা পয়সা কামিয়ে প্রায় ৩৫ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর অনেক বছর বাচ্চা কাচ্চা হয় নি। বিয়ের প্রায় ১০ বছর পর নীরার জন্ম। এরপর আর কোনো সন্তান হয় নি শাহিন সাহেবের ঘরে। তাই অতি আদরের কন্যা নীরা।
মাটিতে রাখে না পিঁপড়ায় কামড়াবে বলে, মাথায় রাখে না উকুনে কামড়াবে বলে- এরকম ভাবে লালিত পালিত নীরা। মা বাবা সব উজাড় করে মেয়েকে মানুষ করছে। কোনো কিছুর অভাব দেয় নি সেই ছোট বেলা থেকে। তাই অভাব কি জিনিস তা নীরার বুঝার বাহিরে। চাওয়া মাত্র পাওয়া এইভাবেই তার বেড়ে উঠা। স্কুল কলেজে ভাল রেজাল্ট করা নীরার স্বপ্ন নিজের পায়ে দাড়িয়ে অনেক বড় হওয়া। তাই সুনাম ধন্য এক প্রাইভেট ভার্সিটিতে এডমিশন নেয়। এখন তার ৪র্থ বর্ষ চলছে অনার্স এর।
.
নীরার বাবা চোখ নিচু করার কারন নীরা বুঝতে পারল না। তাই বাবাকে কৌতুহলবসত জিজ্ঞাসা করল:
– বাবা তোমার কি হয়েছে?
বাবার উত্তর :
– মা তোমার কি খুব তাড়া?
– না মানে ইয়ে! বল বাবা! কিছু বলবে?
– হ্যা মা! কিছু বলব। একটু ভেতরে বসবি?
– আচ্ছা অাসো।
.
কিছুক্ষন নীরব থাকার পর বাবা বলে উঠল
– আম্মু! তোমার ড্রেসটা তোমাকে মানাচ্ছে না। তুমি বরং এটা চেঞ্জ করে আস।
– কেন বাবা? এটাতে সমস্যার কি হল?
– সমস্যা বলতে অনেক সমস্যা। আমি তোমার বাবা। বাবা হয়েই যদি তোমার ড্রেস আপ দেখে চোখ নিচু করতে হয় তাহলে বাহিরের পুরুষদের সামনে তুমি নিজেকে কিভাবে সামাল দিবে?
– বাবা আমার লেইট হয়ে যাচ্ছে আমার চেঞ্জ করার সময় নেই।
– লেইট হউক তুমি চেঞ্জ করে আস।
.
নীরা বেশি কথা না বলে ড্রেস চেঞ্জ করে ভার্সিটির দিকে রওয়ানা দিল।
বাবা তার মেয়ের চলে যাওয়া পর্যবেক্ষন করল। ধীরে ধীরে নীরার চলে যাওয়ার পথ ঝাপসা থেকে আরও ঝাপসা হয়ে গেল। শাহিন সাহেব চোখ থেকে চশমাটা খুলে মুছতে লাগলেন।
কি যেন ভাবতে ভাবতে চশমা মুছতে লাগলেন এবং মিনিট পাচেক পর আবার চোখে চশমাটা পরলেন।
.
সোফা থেকে উঠে গিয়ে বারান্দায় হেলানো চেয়ারে বসে পরলেন। সজোরে নীরার মাকে ডাকলেন।
– নীরার মা!
– কিছু কি বল?
– হ্যা! এই দিকে একটু আস।
– এই তো আসছি।
.
কিছুক্ষন পর নীরার বাবা স্ত্রীকে হাত ধরে টেনে এনে সামনের চেয়ারে বসালেন।
– কি বল? কিছু কি লাগবে তোমার? চা খাবে?
– না চা খাব না। বস তোমার সাথে কথা আছে।
– হুম! বল! কি কথা।
– মেয়ে তোমার বড় হয়ে গেছে তাই না।
– হ্যা! দেখতে দেখতে তো অনেক বড় হয়ে গেল।
– আমরা মা বাবা হিসেবে ব্যর্থ তা কি জান?
– কেন একথা বলছ?
– মা বাবা হিসেবে সন্তানদের প্রতি সঠিক দায়িত্ত কর্তব্য পালন করতে পারি নি।
– কেন একথা বলছ নীরার বাবা? আমরা তো যথেষ্ট চেষ্টা করে নীরাকে মানুষের মত মানুষ করার আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছি।
– হুম তা শুধু দুনিয়াবি কাজের জন্য। দুনিয়াতে সে কিছু সময় ভাল থাকবে এজন্য এত অায়োজন। কিন্তু পরকালের জন্য না তুমি, না আমি বা না আমার মেয়েকে আমরা পরিবর্তন করতে পেরেছি। দোষটা আমাদের। আমরা সঠিক সময়ে মেয়েকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারি নি। কারন আমরা আজ নিজেরাই অজ্ঞ। নিজেরাই আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। মা বাবাই আজ অন্ধকারে আচ্ছন্ন তাহলে আমাদের সন্তানরা অালোর মুখ দেখবে কিভাবে? নীরার মা? সত্যি করে একটা কথা বলবে?
– হুম বল!
– তুমি মা হয়ে কখনো কি তোমার মেয়েকে এই উগ্র ভাবে চলতে বাধা দিয়েছ? বা কখনও কি বলেছ এভাবে চলিস না! এভাবে না ওভাবে চলাচল কর?
– ( নীরার মা মাথা নিচু করে আছেন)
– বললাম না দোষটা প্রথমত আমাদের। আমরা মেয়েকে ধর্মীয় শিক্ষা দেই নি। ইংরেজি শিখিয়েছি হাজার হাজার টাকা খরচ করে, হাজার টাকা খরচ করে চাকচিক্যময় পোশাক কিনে দিয়েছি, ছেলে বন্ধু বান্ধবের সাথে চলতে নিষেধ করি নি। আর আজ ফলাফল দেখে নিজেই লজ্জিত আমি। বাবা হয়ে মেয়ের পোশাক দেখে লজ্জা পেতে হয়। নীরার মা বল আমরা পিতা মাতা হয়ে কি শিক্ষা দিলাম মেয়েকে?
– ( নীরার মা বাকরুদ্ধ)
– আজ বয়সের পড়ন্ত বিকেলে অতিতের কাজের কথা মনে পড়ে বড়ই আফসোস হচ্ছে। কি করলাম সারাটা জীবন? আর কিই বা অর্জন করলাম পরকালের জন্য? আর কিই বা আমাদের ভবিষ্যৎ কর্ণধার রেখে যাচ্ছি? কখনও কি খেয়ালে আসে নি নীরার মা?
– ( খুব অনুতপ্ত হয়ে বসে আছে নীরার মা)।
– যাও গোসল সেরে নামাজ পড়। আমিও মসজিদে যাব যোহরের নামাজ আদায় করতে।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
– ও! নীরা কখন আসবে বলেছে কিছু?
– একটু লেইট হবে নাকি। ওর বন্ধুর বার্থডে পার্টি আছে নাকি তাই ফিরতে দেরি হবে।
.
শাহিন সাহেব দীর্ঘ এক নি: শাস ফেলে বাসা থেকে বের হলেন যোহরের নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্য।
.
মসজিদের ইমাম বয়ান করছেন-
” রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- জেনে রাখ! তোমাদের প্রত্যকেই দায়িত্বশীল এবং নিজ নিজ অধীনস্থের বিষয়ে তোমাদের প্রত্যকেই জিজ্ঞাসিত হবে। ” ( বুখারি- ৮৯৩)।
” পুরুষ তার পরিবারের উপর দায়িত্বশীল। অতএব, সে তার দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। ” ( বুখারি- ৮৯৩)।
তারপর ইমাম সাহেব দাইয়ুস ব্যক্তির সংজ্ঞা দিলেন-
ঐ ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয় যে তার পরিবারের অশ্লীলতা ও কুকর্মকে মেনে নেয়।( মুসনাদে আহমাদ-, নাসাঈ) ।
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন, তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন
১) নেশাদার দ্রব্যে আসক্ত ব্যক্তি
২) পিতামাতার অবাধ্য সন্তান
৩) দাইয়ুস ( মুসনাদে আহমদ- ৫৮৩৯)।
রাসূলুল্লাহ ( সা) আরও বলেছেন- দাইয়ুস ব্যক্তি কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ( নাসায়ী- ২৫৬২, মিশকাত- ৩৬৫৫)।
.
ইমাম সাহেবের বয়ান শেষে শাহিন সাহেব প্রায় অনেক সময় ধরে মসজিদে বসে ছিলেন। আর কি যেন ভাবছিলেন। ইমাম সাহেব লক্ষ করে বললেন
– শাহিন সাহেব আসসালামু আলাইকুম
– ও আলাইকুমুসসালাম ইমাম সাহেব
– ভাল আছেন?
– জি আলহামদুলিল্লাহ।
– শাহিন সাহেব পেরেশান কিছু নিয়ে।
– জি ইমাম সাহেব! দোয়া প্রার্থী।
– আল্লাহ আপনার পেরেশানি দূর করে দিন।
.
রাতে নীরা বাবা মা সবাই একসাথে খেতে বসল। খাওয়া শেষে বাবা নীরাকে বলল মা! আমাকে একটু চা খাওয়াও।
.
– ওয়েট বাবা! আমি আনছি।
.
মিনিট দশেক পর নীরা বাবার জন্য চা বানিয়ে আনল।
– এই নাও বাবা চা!
.
শাহিন সাহেব হাতে চা নিয়ে এক চুমুক দিলেন।
সাথে সাথে মুখ ৯০ ডিগ্রী এংগেলে বেঁকে গেল।
চায়ের কাপটা হাতে নিয়েই নীরাকে বললেন-
.
( চলবে ইন শা আল্লাহ)……..
গল্প : তোমায়_নিয়ে
পর্ব: ২
.
– মামুনি আমার তুমি কি এইভাবে স্বামীকে চা বানিয়ে খাওয়াবে? তোমার শশুড় মশায় যদি তোমার হাতে চা খেতে চায় তাহলেও কি এভাবে চা বানিয়ে খাওয়াবে?
– কেন বাবা চা কি ভাল হয় নি?
– সত্য বলব নাকি মিথ্যা?
– সত্যই বল।
– চা বানানো শিখতে হবে মা আমার। নাহলে শশুড় বাড়ির লোকেরা কি বলবে যে মেয়ে একটু চাও বানাতে পারে না।
– শশুড় বাড়িতে দাসীবান্দী করব আমি? আমি কি কাজের বুয়া যে শশুড় বাড়িতে সবার মন মত রান্নাবান্না করব, ঘরের কাজ করব? নো ওয়ে বাবা! আমি কারও দাসী হতে চাই না। আমি পড়াশুনা করছি । তারপর আমি জব করব। নিজের পায়ে দাড়াব। সবাই আমাকে বাহবা দিবে। আর তুমি বলছ স্বামীর ঘরে লাকড়ি আর চুলা ঠেলতে? চা খাওয়ার ইচ্ছা হলে কাজের বুয়া থাকবে ৪/৫ টা তারা খাওয়াবে বানিয়ে। আমি এসবে নেই।
– স্বামী সংসারের কাজ তোমার কাছে দাসীবান্দী মনে হয়?
– হবেই বা না কেন?
– আচ্ছা ধর! তোমার ওরকম ফ্যামিলিতে বিয়ে হল না। তখন?
– বাবা! আমরা কিরকম ফ্যামিলি বিলং করি তা তুমি জান। আর আমার অনেক বান্ধবির অনেক বড় ঘরে বিয়ে হয়েছে তাদের কাড়িকাড়ি টাকা আর তাদের ৩/৪ টা করে কাজের বুয়া আছে। তারা যদি এরকম পায় তো অভিয়েসলি আমিও পাব। তুমি যে কি বল না!
– মামুনি তোমার মাও তো তোমার বাবাকে রান্না করে খাওয়ায়, সংসার সামলায়, স্বামী সেবা করে, তাহলে তুমি কি বলতে চাও তোমার মাও দাসী?
– বাবা! আমরা আধুনিক যুগে বাস করছি। সেকেলে ধরনের ধ্যানধারণা থেকে বেরিয়ে আস। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিখ। আর বাবা তুমি আমাকে এসব কথা বলছ? তোমার মানসিকতা আগে কত আধুনিক ছিল। আর এখন কি যে বল তুমি?
– হুম! আধুনিক। আজ তোমরা আধুনিক। আধুনিকের ছোয়াতে আজ মেয়েরা হয়েছে বেপর্দা, বেহায়া, নির্লজ্জ, মুক্তমনা, স্বামী অবাধ্য। কিন্তু দোষ তো শুধু তোমাদের না, আমাদের মতন কিছু মা বাবারও। কারন এই আমরা মা বাবা শুধু সন্তানকে জন্মই দিয়েছি কিন্তু ধর্মীয় শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা, মনুষ্যেতের শিক্ষা দিতে পারি নি। চরম ব্যার্থতা আমাদের।
– বাবা হয়েছে তোমার কথা? আমি যাচ্ছি শুতে।
.
নীরা উঠে চলে গেল তার শোয়ার ঘরে। শাহিন সাহবের নি: শাস দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে উঠল। রাত নির্ঘুম কেটে যায়। ভাবনায় বিভর শাহিন সাহেব। এত এত টাকা আমার, সম্পদ, সুনাম, আমি এগুলা দিতে কি করব? সারাটা জীবন এসব মেকি জিনিসের পিছনে বহু সময় ব্যয় করেছি। সবই পেয়েছি কিন্তু আমার ঔরসজাত কন্যা কে দ্বীন শিক্ষা দিতে পারি নি। ফলশ্রুতিতে মেয়ের মুখে আজ এসব কথা শুনতে হল। আমি দুনিয়াতে কি রোজগার করলাম যার ফলাফল আজ পেলাম। নিজের কলিজার টুকরাকে এত ভালবাসা দিলাম কিন্ত অালোর পথ দেখাতে পারলাম না। দেখাবই বা কিভাবে নিজেরাই তো অন্ধকারের পথিক। পথ চলার দিকনির্দেশনা দিব কিভাবে?
.
ভাবনায় ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল শাহিন সাহেব তা ঠেহর করতে পারলেন না। ফজরের নামাজের আগেই জেগে গেলেন। কিছুর প্রতি মনটা অনেক টানছে। অনেক ইচ্ছে করছে কিছু করতে।
নাহ! আর সময় নষ্ট না। এখনি যেতে হবে। এখনি যেতে হবে রাব্বুল আলামীন এর কাছে। তার নিকট হাজিরা দিয়ে নিজের কথা ব্যক্ত করার সময় এখনি। ওজু করে শাহিন সাহেব তাহাজ্জুদে দাড়িয়ে গেলেন।
.
মুনাজাতে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানালেন। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সকল মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করলেন। আরও দোয়া করলেন নয়নের মনি সন্তান নীরার জন্য।
নীরার মা কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। এত রাতে কে কানছে? খানিকটা ভয়ও পেলেন। পাশের রুমে দরজার সামনে দাড়িয়ে দেখলেন নীরার বাবা মুনাজাতে কানছেন। এবং মহান আল্লাহর দরবারে বলছেন-
” হে আল্লাহ! দুনিয়ার কাজে এতটাই নিমগ্ন ছিলাম যে তোমাকে সময় দিতে পারি নি। এত বছর পর তোমাকে চিনতে পারলাম। আমাকে দিশেহারা পথ থেকে ফিরিয়ে আনলে তুমি। আমাকে আর আমার পরিবারকে ক্ষমা করে হেদায়েত দান কর হে রাব্বুল আলামীন! হে আল্লাহ! আমার কলিজার টুকরা মেয়েকে হেদায়েত দান কর। তাকে তুমি তোমার দ্বীনের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় দান কর। হে আল্লাহ! তাকে এমন একজন স্বামী নসিব কর সে যেন তার হেদায়েতের ওসিলা হতে পারে। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা কর।
.
নীরার মা শাহিন সাহেবের মুনাজাতের বাক্যগুলি শুনতেছিল। নাহ! ওনাকে বিরক্ত না করি। কাঁদতে দেই। কাঁদুক উনি। মনের ব্যাথা, কষ্ট কিছুটা হলেও হালকা হবে। নীরার মা চলে গেলেন ফজরের নামাজের প্রস্তুতি নিতে।
.
শাহিন সাহেব তাহাজ্জুদ নামাজ শেষ করে মসজিদের উদ্দেশ্য যাবেন ফজরের সালাত আদায় করতে। যাওয়ার সময় নীরার রুমটা চোখে পরল। দরজা একটু খুলে দেখলেন নীরা ঘুমাচ্ছে আরামে।
শাহিন সাহেব নীরার পা ধরে একটা ঝাঁকুনি দিলেন।
ঘুমের ঘোরে নীরা এপাশ ওপাশ করতে লাগল।
– নীরা মা! নীরা!
– ঘুমন্ত চোখে নীরার উত্তর : কি বাবা?
– ফজরের আযান হয়েছে সালাতের সময় হয়েছে, উঠে পর।
– কাল ভার্সিটি আছে বাবা! ঘুমাতে দাও। তুমি নামাজ পর। এই বলে কানের উপর একটা বালিশ চেপে আবার ঘুমিয়ে পরল নীরা।
শাহিন সাহেবের মন বিষন্নে ছেয়ে গেল। হ্যা! এমনটাইই হওয়ার কথা! কারন। ছোটবেলা থেকে তো তাকে কখনও নামাজের জন্য তাগিদ দেওয়া হয় নি। ফজরের নামাজের জন্য মেয়েকে না জাগিয়ে সকালে স্কুল আছে এজন্য আরামে ঘুমানোর জন্য বলা হয়েছিল। আর আজ এত তাড়াতাড়ি সেই অভ্যাস কি বদলাবে?
শাহিন সাহেব মসজিদে গেলেন।
.
– নীরার বাবা!
– হুম! কিছু কি বলবে?
– হ্যা!
– কি বল?
– নীরার জন্য একটা প্রস্তাব এসেছে।
– হুম।
– ছেলে ডাক্তার, ঢাকায় নিজস্ব বাড়ি আছে, ছেলেও নাকি ভাল।
– আচ্ছা! ছেলে কি নামাজি, দ্বীনি?
– আমি তো তা জানি না।
– চিন্তা কর না। নীরার মা। তোমার মেয়ের জন্য শুধু দোয়া কর। মা বাবার দোয়া আল্লাহ কবুল করবেন। আমি নীরার জন্য ভাল পাত্র খুজব। শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া কর।
নীরার মায়ের সেই রাতের কথা মনে পরল। নীরার বাবা তার মুনাজাতে মেয়ের জন্য কি দোয়া করেছিল।
– নীরার মা!
– হ্যা বল।
– নীরার জন্য একটা বোরখা কিনে এনেছি। ওকে দিও আর পরতে বইলো।
– আচ্ছা।
– তোমার জন্যও একটা এনেছি। আজ থেকে ঘরের বাহিরে এক কদমও যদি যাও তো বোরখা পরে বের হবে।
– তুমি যা বল তাই হবে।
– হ্যা! কিন্তু মনে রেখ সব কিছু হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
.
চশমাটা খুলে পাশে রাখলেন শাহিন সাহেন। জামাতের প্রথম কাতারে দাড়ালেন যোহরের নামাজের জন্য। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হতে লাগলেন।
.
মসজিদের গেইটে আসার সাথে সাথে পিছন থেকে কে যেন ডেকে উঠল………..
.
( চলবে ইন শা আল্লাহ্)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *