( কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে তৃষা। কখনো ডানে ফিরে শোয় তো কখনো বামে। আবার সোজা হয়ে শুয়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকে। মোটামুটি গরম পড়ে আজকাল। তাই মাঝে মধ্যে ফ্যান চলে। এখনও চলছে। গরমের মধ্যে কম্বল মুড়ি দিয়ে বাতাস খাওয়া তৃষার স্বভাব। সেই ঘন্টাখানেক আগে কল দিয়েছিল অনিককে। এখনো কল ব্যাক করলোনা না মানুষটা। আছে তো ওহিদের বাসায়। তাহলে কীসের এতো ব্যস্ততা? সারারাত অপেক্ষা করতে করতে ফজরের পরে ঘুমিয়ে পড়ে মেয়েটা।
কল আসার অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ার অনুভূতিরা বিশ্রী।
সকালবেলা শরীরের উপর ওজন ওজন ফিল হতে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো তাহমি। গতকাল রাতে নিজে সোফায় শুয়ে সহনকে বিছানায় শুতে বলেছিল মেয়েটা। তাহলে কি অসভ্য ছেলেটা তার উপর শুয়েছে? না,না ওর ওজন নিশ্চয়ই এতটা কম নয়! তাহমি বুকের উপর তাকিয়ে দেখলো মিলু শুয়ে আছে। মিলু এ বাড়ির নতুন পোষা বিড়াল। ধবধবে সাদা গায়ের রঙ, বয়স অল্প। তাহমি তার দিকে তাকাতেই সে হাই তুলে মৃদু স্বরে ‘মিউ’ বলে ডাকলো।
” শালার বিড়ালের কী ভাগ্য! কোথায় বউয়ের বুকে মাথা রেখে আমি ঘুমবো, তা না উনি বুকের উপর বসে আছে। “
সহন হাতে দুই কাপ চায়ের কাপ নিয়ে ঘরে ঢুকে দাঁড়াল। টি-টেবিলের ওপর কাপ দু’টো রেখে মিলুকে তাহমির উপর থেকে সরিয়ে ফ্লোরে ছেড়ে দিলো।
” তুই সরালি কেন ওকে?”
” কারণ ওই জায়গা আমার মিলুর না।”
সহনের ইশারায় লজ্জা পেলো তাহমি। পরক্ষণেই পূর্বের ঘটনা মনে পড়তে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। হুড়মুড় করে উঠে বসলো সে। কিছুটা রাগ প্রদর্শন করে বললো,
” একটা দিয়ে হচ্ছে না? না-কি ঠিকমতো দেয় না? নেহাৎ বাসায় কিছু বলতে পারিনি। তাই তোকে সহ্য করতে হচ্ছে। “
সহন তাহমির পাশে হুট করে বসলো। হঠাৎ করে তাহমিকে ধরে নিজের কোলের উপরে তুলে বসালো। তাতে তাহমি দ্বিগুণ ক্ষেপে গেলো।
” সহন! বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।”
” উফ! আমার বউটা কত্ত হট,সুন্দরী। আগে কেনো চোখে পড়েনি বল তো? বাই দ্য ওয়ে,ঠোঁটের বাম দিকের তিলটা কিন্তু জোশ। “
তাহমি না চাইতেও লজ্জা পাচ্ছে। এই লোকটা ভেতর ভেতর এতো অসভ্য কল্পনাও করেনি।
” ভালো করে কথা বল। চোখে পড়বে কীভাবে? চোখ তো নীলার দিকে ছিলো।”
” চুপ! আর একবারও ওর নাম নিবি না। আমি ওর কথা শুনতেও চাই না তাহমি।”
সহন তাহমির ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে চুপ করাতে বললো। তাহমি যেনো সহনের কথা শুনবে না বলেই প্রতিজ্ঞা করেছে।
” একশোবার বলবো,হাজারবার বলবো। তুই নীলার কাছে যা। নীলাকে হট বল। নীলাকে জড়িয়ে ধরর। নীলার সাথে সেক্…..!
তাহমি আরকিছুই বলতে পারে না। সহন রেগে গিয়ে তাহমির দুই হাত পেছনে চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়েছে। তাহমি চেষ্টা করেও নিজেকে মুক্ত করতে পারছে না। তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে ঠোঁটে। মিনিট দুয়েক পরে তাহমি মুক্তি পেলো। দ্রুত কোল থেকে নেমে সামনে দাঁড়াল তাহমি। আঙুল ছুঁইয়ে দেখলো ঠোঁট কেটে রক্ত বের হয়ে গেছে। তাহমির যেনো হঠাৎ করে কী হলো। সহনকে কষিয়ে চড় বসিয়ে দিলো একটা। সহন অবাক হলো কিছুটা। বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে রইলো তাহমির দিকে। যে মেয়েটা তাকে নিজে থেকেই আদরে সিক্ত করতো সে আজ এতটুকুর জন্য এমন আচরণ করলো?
” তুই খবরদার আমাকে স্পর্শ করবি না আরর।”
তাহমি দৌড়ে ওয়াশরুমের দিকে গেলো। চা টেবিলেই রইলো। তাহমিকে আর দেওয়া হলোনা সহনের। সকাল সকাল রান্নাঘরে গিয়ে শ্বাশুড়ির সাহায্য নিয়ে বউয়ের জন্য নিজের হাতে চা তৈরি করেছিল বেচারা।
তপ্ত দুপুরের রোদ উপেক্ষা করে হেঁটে চলেছে আয়ান। আজকে সন্ধ্যায় বাসায় সবাই একসাথে একটু আনন্দ করবে। তাই তাড়াতাড়ি টিউশন পড়াতে এসেছে। কিছুটা পথ এগিয়েই বড়লোক বাড়ির গেট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো সে। মাত্র সপ্তাহ হয়েছে এ বাড়িতে পড়াতে শুরু করেছে সে। তবে বাড়ির মানুষগুলো খুব ভালো শুধু ছাত্রীটি বেশি পাকা!
” হাই ইয়াং ম্যান! হাউ আর ইউ?”
বসার ঘরে সোফায় বসে আছেন তমাল আহমেদ। উনারই একমাত্র মেয়ে অনিমা আহমেদকে পড়াতে আসে আয়ান। এই নিয়ে দশজন শিক্ষক পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়ের কিছুতেই পড়ালেখায় মন বসে না। এবার এসএসসি দিবে। কিন্তু বয়সের তুলনায় অতিরিক্ত বুঝে মেয়েটি। সাথে ঠোঁটকাটা তো বটেই। মা মরা মেয়ে বলে ছোটো থেকে আদরে আদরে বাঁদর তৈরি হয়েছে একেবারে।
” আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন আঙ্কেল? “
” এইতো ভালোই। যাও যাও অনিমা রুমেই আছে। দেখো গাধা পিটিয়ে ঘোড়া বানাতে পারো কি-না! “
” আমি চেষ্টা করবো আঙ্কেল। “
আয়ান দ্রুত পায়ে এগিয়ে অনিমার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। খাটের উপর দাঁড়িয়ে একা একাই গান ছাড়া নাচছে মেয়েটা। আয়ান ভড়কে গেলো কিছুটা। তবে মেয়েটা যে নরমাল না সেটা সে জানে।
” অনিমা! কী করছো এসব?”
আয়ান কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে ধমকের গলায় বললো। অনিমা ধুপ ধাপ করে খাট থেকে নেমে আয়ানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাত ধরে টেনে বিছানায় বসালো। আয়ানের রাগ যেনো তার কাছে কোনো বিষয় না।
” হেই আয়ান স্যার আমরা কাপল ডান্স করতে পারি? আপনি যদি পাঁচ মিনিট আমার সাথে ডান্স করেন তাহলেই আজকে আমি মন দিয়ে পড়তে বসবো।”
অনিমার কথায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইলো আয়ান। জীবনে কোনো মেয়ের হাত অবধি ধরলো না যে ছেলে আজ তাকে মেয়েদের সাথে কাপল ডান্স করতে হবে? আয়ানের ভ্যাবলা চেহারা দেখে অনিমা চোখ টিপ্পনী দিলো। ফলে আয়ানের কাশি শুরু হয়ে গেছে। অনিমা পানি দিলো আয়ানকে। পানি খেয়ে অনিমার দিকে দৃষ্টিপাত করলো আয়ান।
” অনিমা আমি তোমার টিচার তবে ডান্স টিচার নই।”
” সমস্যা কী? শিক্ষক তো বটে! আসুন আসুন।”
” অনিমা….”
অনিমা কোনো মানা না শুনে আয়ানকে দাঁড় করিয়ে নিজের হাত রাখলো তার কাঁধে ও পিঠে। এবার আয়ানের ধরার পালা। কিন্তু এভাবে মেয়েদের স্পর্শ করা তার ধাঁচে নেই। ফলে বিব্রত হলো কিছুটা। কিন্তু কিছু করার নেই। এই মেয়ে যে কতটা ত্যাড়া সেটা হাড়েহাড়ে টের পেয়ে গেছে আয়ান। এই মাসটা পড়ানোর পরে এমনিতেই এখানে আর পড়াতে আসবে না বলে ঠিক করলো আয়ান।
” আরে ধরুন তো! দাঁড়ান গান প্লে করি।”
অনিমা ফোন বের করে একটা হিন্দি গান প্লে করে আবারও আয়ানকে ধরে। আয়ানও শেষমেশ অনিমার কোমরে ও কাঁধে হাত রেখে ওর তালে তাল মেলাতে থাকে। নেহাৎ টিউশনির টাকাটা অগ্রিম নিয়ে ফেলেছে আয়ান। নইলে কখনও এই পাগলের পাগলামি সহ্য করতে হতোনা তাকে।
সারাদিন তাহমি নিজের ঘরে আসেনি। দুপুরে খাওয়াদাওয়া শেষে তৃষার ঘরে গিয়ে দুবোন কথাবার্তা বলেছে। তৃষার অবশ্য মনটা ভালো না। বোন আসাতে ওহিদের বাসায় যাওয়া হয়নি দু’দিন। অনিকের কী হয়েছে বুঝতে পারছে না তৃষা।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে কীভাবে বউয়ের রাগ ভাঙাতে পারবে সেসব ভাবছিল সহন। সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমে। সন্ধ্যা হওয়ার আগ মুহুর্ত। হঠাৎ ফোনের আওয়াজে ভাবনার ছেদ ঘটে তার। কলার আইডি দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। দ্রুত কল কেটে দিলো সে। ভুলবশত চাপ লেগে নীলার নম্বরের ডিটেইলস সামনে এলো। চমকে উঠল সহন। লাস্ট কল তো ওইদিন রাতের ছিলো, যেদিন তাহমির সাথে ছিলো! কিন্তু সহন তো কল রিসিভ করেনি। সহন কিছু একটা ভেবে কল রেকর্ড চেক করতে লাগলো। সৌভাগ্যক্রমে সহনের কল রেকর্ড অপশন চালু করা। তাই খুব একটা সময় লাগলো না সেদিন রাতে ঠিক কী বলেছিল তাহমি। যা ভেবেছিল তাই! নীলার শেষ কথাগুলো শুনেই ভুল বুঝেছে তাহমি।
” আপু আমি একটু কল রিসিভ করে কথা বলি?”
দুই বোন বারান্দায় দাঁড়িয়ে সূর্য অস্ত যাওয়া দেখতে দেখতে টুকটাক কথা বলছিল। এমন সময় অনিকের কল এলো।
” অবশ্যই! তুই কথা বল আমি আসছি।”
তাহমি বারান্দা থেকে সরে যেতেই কল রিসিভ করলো তৃষা। লম্বা শ্বাস নিয়ে কথা বলতে শুরু করলো। নিজের অস্থিরতা প্রকাশ করতে চায় না সে।
” আসসালামু আলাইকুম। “
” ওয়া আলাইকুম আসসালাম। তৃষা একটা খারাপ সংবাদ আছে। “
” কী হয়েছে? আপনি ঠিক আছেন? বাসার সবাই ঠিক আছে তো!”
” ওহির বাবা গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে। খুবই বাজে অবস্থা। আমরা সবাই সেখানে আছি। গতকাল দুপুরে ঘটেছে এই ঘটনা। “
” ইন্না-লিল্লাহ! আপনি দিনা আপু আর ওহির দিকে খেয়াল রাখবেন। আর নিজের দিকেও।”
” চিন্তা করতে হবে না তোমাকে। কল না পেলেও মন খারাপ করো না। কথা হোক বা না হোক প্রতিদিন আমি আছি। “
” আমি জানি। অনুভব করতে পারি সেটা। শুধু বিপদ-আপদের ভয় হচ্ছিল। তাই হলো।”
” দোয়া করো। আপাতত রাখছি। বুঝতেই পারছো ওহিকে সামলাতে হচ্ছে সাথে দিনাকেও।”
” আচ্ছা। সময় পেলে আপডেট জানাবেন। “
” ওকে। টাটা।”
” আল্লাহ হাফেজ।”
মনটা খারাপ হয়ে গেলো তৃষার। ওহির মতো ছোটো মেয়েটা কতটা কষ্ট পাচ্ছে? আর দিনা আপুও কতো ভালো মানুষ।
চলবে,
( কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
রাতের আকাশে একফালি চাঁদ ঝলঝল করছে। আশেপাশে শুভ্র সাদা মেঘের আনাগোনা। শহরের সোডিয়াম আলোর ভীড়ে চাঁদের আলোর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে না শহুরে মানুষজন।
” বুঝলে ফরিদা, তোমার ছেলে বিয়ে মানবে না মানবে না করে এখন বউয়ের রাগ ভাঙাতে একেবারে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে উঠেছে। “
ডাইনিং টেবিলে খাবার খেতে খেতে বললেন আতাউল খান। পাশেই বসেছেন ফরিদা খানও।
” হ্যাঁ। তোমার ছেলেই তো! সবকিছু বুঝতে দেরি করে ফেলে।”
” এই তুমি কিন্তু সুযোগে আমাকে কথা শোনাচ্ছ। “
” উচিত কথা কারোরই সহ্য হয় না খান সাহেব। “
” আহা কতদিন পরে বললে!”
” কী বললাম? “
” খান সাহেব বলে সম্মোধন করলে।”
ফরিদা খান ঠোঁট টিপে হাসছেন। আতাউল খানের দৃষ্টি তার দিকেই নিবদ্ধ।
” এই বয়সে এসেও কত পাগলামি তোমার। “
” ভালোবাসা প্রকাশের কোনো বয়স হয় না ফরিদা। ভালোবাসা আজীবন রঙিন। “
” হ্যাঁ, হ্যাঁ। এবার খাওয়া শেষ করো।”
ফরিদা খাওয়া শেষ করে নিজের প্লেটসহ কিছু বাসনকোসন বেসিনে নিয়ে গেলো ধোয়ার জন্য। আতাউল খান খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন।
সারাদিন বোনের ঘরে থাকলেও রাতে আর সেখানে ঠাঁই হলোনা তাহমির। তৃষা ইচ্ছে করে বোনকে ঘরে জায়গা দিলো না। অগত্যা দোনোমোনো করতে করতে ঘরের দরজার বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছে তাহমি। সহন বিছানায় শুয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে ছিলো। কারো হেঁটে আসার খচখচ শব্দে দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। তাহমি দাঁড়িয়ে আছে। সহন বিছানা থেকে নামলো। কোনো কথা না বলে তাহমির হাত ধরে টেনে বিছানায় বসালো। তাহমি ইচ্ছে করে চুপ করে আছে। সহনের সাথে ঝামেলা করার ইচ্ছেটুকু পর্যন্ত নেই তার।
” কিছু বললি না? “
সহন পাশে বসলো। তাহমির নীরবতা ভাঙতে চাইছে ছেলেটা।
” নাহ। সহন আমি অবহেলা সহ্য করেছি কিন্তু তোর অন্যায় সহ্য করতে পারবো না। “
সহন কোমরে হাত দিয়ে তাহমিকে নিজের কাছে টানল। কোমল ঠোঁটের স্পর্শে তাহমিকে এলোমেলো করে দিতে চেষ্টা করলো। তাহমি মানলো না। নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো আলগোছে। সহন সময় নষ্ট করলোনা আর। নীলার নম্বরে কল করলো। স্পিকারে দিলো ফোন। নীলাকে কল করে স্পিকারে দেওয়ায় তাহমি দ্বিগুণ রেগে গেলো। সহন তাহমির রাগ কমাতে ঝুঁকে বক্ষ বিভাজনের উপর ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। ফলে লজ্জা পেয়ে নুইয়ে গেলো তাহমি।
” হ্যালো সহন! কোথায় তুমি বেবি? কতবার কল দিলাম। ধরলে না!”
” আমি আছি নীলা বেবি। আচ্ছা শোনো সেদিন যে রকির সাথে তুমি ইন্টিমেট হলে সেটা কি আমার অক্ষমতার জন্য? আমি তোমার সাথে ঘনিষ্ঠ হইনি বলেই অন্য পুরুষের সাথে বিছানায় গেলে?”
” সরি সহন। আসলে ওইদিন নেশাগ্রস্ত ছিলাম। তুমি প্লিজ ভুলে যাও ওসব? আর আমার কোনো ঘনিষ্ঠতা লাগবে না। তুমি কতটা ভালো আমি জানি। নইলে আজকাল কোন ছেলে আছে যে প্রেমিকার সাথে এরকম দূরত্ব রাখে!”
তাহমি অবাক হলো নীলার কথা শুনে। একই মুখে কতরকম কথা বলে মেয়েটা!
” আচ্ছা রাখছি আমি আপাতত। “
সহন নীলাকে আরকিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিলো। তাহমি চুপ করে আছে।
” কিছু বুঝলি?”
” মেয়েটা সুবিধার না। “
” আমি বিছানায় যাইনি বলে গোপনে সে অন্য ছেলের সাথে ফিজিক্যাল রিলেশনশিপে ছিলো। আমাকে ওর দরকার শুধু টাকার জন্য। “
” কী অদ্ভুত মেয়ে! “
” রাগ কমলো?”
তাহমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সহনের দিকে। যেহেতু লোকটা ওসব করেনি তাহলে তো আর রাগ করে থাকা ঠিক নয়? উঁহু এত জলদি একে পাত্তা দিলে চলবে না। সে ভুল বুঝে ফিরে এসেছে বলে তো সেই দিনগুলো মিথ্যা হয়ে যায়নি! তাহমি চাইতেও যখন সহন শুধু দূরত্ব বাড়িয়ে অবহেলা করে গেছে। তবে হ্যাঁ মোটামুটি পাত্তা অবশ্যই দিবে।
” রাগ করিনি। শুয়ে পড়। আমিও ঘুমাবো।”
সহন তাহমির ওড়না ধরে টান দিয়ে নিজের বুকের উপর এনে ফেললো।
” গায়ের উপর এসে বসবি? বসে একটা টসটসে চুমু দে। আগে যেমন জোর করে দিতি ওইরকম! ইশ আমার বউটা কত্ত হর্ণি!”
” চুপ বেয়ান্দাজ বেডা। কোনো আন্দাজ নাই। তখন তো তুই বড্ড দেমাক দেখাতিস। “
সহন তাহমিকে নিজের বুকের উপর শুইয়ে নিজেও শুয়েছে।
” তাতে কী? এখন নিজে থেকে চাইলাম বলে দিবি না?”
” হ তাই। ঘুমালাম আমি। “
তাহমি সহনের বুকের উপর থেকে নেমে বালিশে শুয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে ঘুমাতে চেষ্টা করছে। বেচারা সহন বউয়ের পেছন দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে দিলো।
আজ প্রায় এক সপ্তাহ পরে বাড়ি ফিরে এসেছে সহন। সাথে তাহমিও এসেছে। বাবার বাড়ি থেকে টাইট না দিয়ে শ্বশুর বাড়ি বসেও দেওয়া যাবে ভেবে চলে এসেছে। সহনের মা-বাবা ভীষণ খুশি হয়েছেন পুত্রবধুর ফেরত আসায়। অন্যদিকে ওহির বাবা আগের থেকে এখন সুস্থ আছে। তবে বাড়ি নিয়ে আসতে পারেনি তাকে। অফিসের হেডকোয়ার্টারে আপাতত দিনা, ওহি ও ওহির বাবা থাকছে। বাসে জার্নি করে বাড়ি ফিরলে সমস্যা হতে পারে। অনিক চৌধুরী আজকেই ফিরেছে তার নিজ শহরে। আগামীকাল তৃষার সাথে দেখা করতে যাবে।
কলম হাতে নিয়ে কামড়ে যাচ্ছে অনিমা। আয়ান তাকে বাংলা ব্যাকরণ বোঝাতে ব্যস্ত। সমাসের ব্যাখ্যা করছে। কিন্তু হঠাৎ অনিমার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই আয়ান বুঝতে পারলো মেয়েটা এখানে বসে থাকলেও তার মন আছে অন্য কোথাও। ফলশ্রুতিতে আয়ানের মেজাজ চটে গেল।
” অনিমা! পড়াশোনার দিকে মনোযোগ নেই কেনো? মনে মনে কোথায় গিয়ে বসে আছো?”
” বান্ধবীর সাথে বসে আছি। “
অনিমার ভাবলেশহীন উত্তর। আয়ান থমকাল,চমকাল। মাঝে মধ্যে মনে হয় মেয়েটার মানসিক চিকিৎসা দরকার।
” সেখানে কী করছো? মন পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে আনো। নয়তো স্কেলের পিটানি খাওয়ার জন্য রেডি হও।”
” জানেন আয়ান স্যার, বান্ধবী ললিতা থুক্কু অর্না গতকাল ডেটে গিয়েছিল তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে। তারপর নাকি জোর করে…. “
” চুপ! একেবারে চুপচাপ বসো। এই বয়সে এসব আজেবাজে কথা কীভাবে বলো?”
এই প্রথম অনিমা ভড়কে গেলো আয়ানের ধমকে। আসলেই কী বেশি কিছু বলে ফেললো?
” আয়ান স্যার! এরকম ধমক আর দিবেন না। দিলে কিন্তু….! “
” দিলে কী করবে তুমি? “
” এভাবে লাফ দিয়ে আপনার কোলে উঠে বসবো। এতো জোরে ধমক দিলে ভয় পাই না বুঝি?”
অনিমা আয়ানের কোলে বসে দু’হাতে গলা আঁকড়ে বসে আছে। আয়ান জ্ঞান হারানোর প্রান্তে দাঁড়িয়ে। মনে হচ্ছে এই মেয়ে তাকে অসতী বানিয়ে ছাড়বে! ওহ আয়ানের মনে ছিল না পুরুষের ক্ষেত্রে এমন কোনো শব্দের ব্যবহার নেই। আয়ান চলে যেতেই অনিমা জোরে জোরে পেত্নীর মতো হেসে উঠে। দ্রুত কল দেয় বান্ধবী অর্নাকে।
” কী রে তোর স্যার ভাগলো? “
” একেবারে না গেলেও মনে হয় শীঘ্রই পালাবে। যা নাজেহাল করছি না!”
” তাই নাকি?”
” হ্যাঁ রে। ধুরর বা*ল ভাল্লাগে না এই পড়ালেখা। বিয়ের বয়সটা হলেও তো বিয়ে করে নিতাম। “
” বিয়ে করে কী করবি শুনি? তুই কী সংসার করার যোগ্য? “
” চুপ বেডি। আমার বিরুদ্ধে কথা বলবিইইই না তুই। রাখ এখন। “
” আচ্ছা আপা।”
” আরে শোন শোন অর্না!”
” কী হয়েছে? “
” কালকে একটা বেডা আক্তার বেডির সাথে মজা করেছি। “
অনিমার কথায় চমকাল অর্না। বেডা আক্তার বেডি আবার কেমন নাম?
” কার সাথে? “
” উঁহু বলছি,বেডা আক্তার বেডি হলো একটা ছেলে মেয়েদের নামে ফেইক আইডি খুলে এসেছিল ভাব জমাতে। ওমা! দু’দিন টুকটাক কথা বলার পর বলে সে মেয়ে না ছেলে। তাহলে তো ওটা বেডা আক্তার বেডি হলো তাই না? “
” ভাই রে ভাই এসব তুই পারিস। রাখলাম আমি। “
অর্না ফোন কেটে দিলো। এরমধ্যেই মাগরিবের আজানের ধ্বনিতে মুখরিত হতে শুরু করেছে সারা শহর।
” এই তাহমি?”
” হুম বললললল..”
” এমন করিস কেন ভাই? “
” কেমন করলাম বলবি তো?”
পাশাপাশি দু’জন শুয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে ছিলো এতক্ষণ। শেষমেশ সহন মুখ খুললো। কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে টানল সহন। গলার নিচে নাক ঘষে দিলো আলতো করে। তাহমি নড়াচড়া করছে বেশ।
” নড়বি না তাহমি। এতদিন যখন আমি কাছাকাছি আসতে দিতাম না তখন কতো আদরের বাহানা দেখতাম। আর এখন নিজে পালাই পালাই করিস কেন?”
” তুই আগে তোর খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি দিয়ে আমাকে খোঁচানো বন্ধ কর প্লিজ। গলায় লাগছে। “
সহন নিজের গালে হাত দিয়ে দেখলো অল্প অল্প দাঁড়ি গজিয়েছে দু’দিনেই। দু’দিন আগেই ক্লিন সেইভ করেছিল।
” বেশ সরলাম। তুই আয় আমার উপরে। “
” কীসব কথা বলছিস? আমি কেন তোর উপরে যাবো?”
তাহমি ঠোঁট টিপে হেসে বললো। আসলে তাহমি সহনকে টাইট দিতেই দূরে সরে থাকছে। দেখ কাছে আসার কামনাবাসনা ঠিক কতটা পোড়ায়। সহন অধৈর্য হয়ে নিজেই তাহমিকে বুকের উপর মাথা রাখাল। এরমধ্যেই কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পেলো।
” দুপুরবেলা আবার কে এলো!”
তাহমি সহনের বুক থেকে মাথা তুলে বিছানা থেকে উঠে বসলো। বাসায় ওরা দু’জন ছাড়া কেউ নেই। বাবা-মা দু’জনই বেরিয়েছেন।
” আমি দেখে আসছি।”
তাহমি গেলো দরজা খুলে দিতে। পেছন পেছন সহনও যাচ্ছে। দরজা খুলতেই চব্বিশ – পঁচিশ বছর বয়সী একজন মেয়েকে দেখলো তাহমি। সহনকে দেখেই মেয়েটি ভেতরে ঢুকে এসে বললো,
” কতবার কল দিলাম তোমাকে? কল ধরছিলে না কেনো?”
তাহমিট বুঝতে অসুবিধা হলোনা মেয়েটা কে। কিছু একটা ভেবে নিজেদের ঘরে গিয়ে ফের বসার ঘরে উপস্থিত হলো সে। সহনের মেজাজ এখন সপ্তম আসমানে।
” তোমার সাহস তো কম না নীলা….”
” উফ থামো না সহন। এই আপুর সাথে পরে কথা বলবে। আগে বাইরে গিয়ে ব্যথার ঔষধ নিয়ে এসো। আর খাট ঠিক করার জন্য মিস্ত্রিও ডাকতে হবে না?”
সহন বুঝতে পারছে না তাহমির মতিগতি। তবুও বললো, ” হ্যাঁ হ্যাঁ যাচ্ছি।”
এটা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো সহন। বাড়ির সামনের ফার্মেসীতে যাবে। নীলা তাহমিকে দেখে ফুঁসছে।
” আপু আপনি কষ্ট করে একটু কফি বানিয়ে খাবেন? আসলে আমার এতো কোমরে ব্যথা যে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। লোকটা এতো বোল্ড আর ডিমান্ডিং না!”
তাহমি মুচকি হেসে বললো কথাগুলো। রাগে-দুঃখে শরীর হিড়হিড় করছে নীলার। শেষমেশ সহন এই মেয়ের সাথে ইন্টিমেট হলো? তাহলে ইচ্ছে করেই এত বছর কাছাকাছি আসতো না সে। নীলা আর এক সেকেন্ডও দাঁড়াল না। হাইহিলের ঠকঠক আওয়াজে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে। বাসা থেকে বের হতেই দেখা হলো সহনের সাথে। হাতে তার ঔষধ।
” তোমার বউ এতো নির্লজ্জ বলার মতোই না। যাও ঔষধ নিয়ে। এরপর বুঝেশুনে খেলবে তোমার বউয়ের সহ্য হয় না অতটা। “
সহন কিছু বলতে যাবে কিন্তু নীলা দাঁড়াল না। কে নির্লজ্জ সেটা বলা দরকার ছিল। এজন্যই বলে নিজের মাথায় গোবরে ভরা সে অন্যের মাথার গোবর খোঁজে।
চলবে,
( কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
সহন কিছু বলতে যাবে কিন্তু নীলা দাঁড়াল না। কে নির্লজ্জ সেটা বলা দরকার ছিল। এজন্যই বলে নিজের মাথায় গোবরে ভরা সে অন্যের মাথার গোবর খোঁজে। নিজে যে কতটা নির্লজ্জ, বেহায়া সেটার দিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই নীলার!
ঔষধ হাতে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বাসায় ঢুকে দরজা আঁটকে দিলো সহন। তাহমি দরজা খুলে রেখেই বেডরুমে গেছে ভেবে সেদিকে এগোচ্ছে সহন। নীলাকে নিশ্চিত উল্টাপাল্টা বলেছে তাহমি। নয়তো বিছানার কথা কেন বললো? রুমে ঢুকতেই চমকাল সহন। সমস্ত বিছানা এলোমেলো। যেনো কেউ ধস্তাধস্তি করেছে। তাহমি সেগুলো গোছাতে ব্যস্ত।
” এসব কী? এমন এলোমেলো হলো কীভাবে? “
” তোর কল্লা! আমি নিজেই এমন করে রেখেছিলাম। যাতে নীলা রুমে ঢুকলে এসব দেখতো আর জ্বলতো।”
” তাহমি তুই এত্তো পাজি কেন? এই নে তোর ব্যথার ঔষধ। আজকে না লাগলেও পরে লাগবে এ বিষয় নিশ্চিত থাক।”
সহন বিছানার উপর ঔষধ রেখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। সহন চোখের আড়াল হতেই তাহমি হাসলো। ইশ! পুরুষ মানুষ স্ত্রী পাশে থাকতেও আদর সোহাগ করতে পারছে না বলে কত্ত অভিমান!
বিকেল পাঁচটা। ওহিদের বাসায় এসেছে অনিক। সেখানেই আসতে বলেছে তৃষাকেও। ফোনে বললো মিনিট পাঁচেক লাগবে পৌঁছাতে। তৃষা প্রথম না বললেও পরে রাজি হয়েছে। আসলে খালি বাড়িতে অনিকের সাথে দেখা করতে যাওয়া অশোভন বলেই রাজি হচ্ছিল না মেয়েটা। অনিক বসার ঘরটা একটু গোছগাছ করে সেখানে বসেই অপেক্ষা করছে। তৃষা আসলে একসাথে বের হবে সামনের পার্কে যাবে। এসব ভাবতে ভাবতে কলিংবেলটা বাজালো। তারমানে তৃষা এসে গেছে। অনিক দ্রুত দরজা খুলে দিলো। হাসিমুখে ভেতরে প্রবেশ করলো তৃষা। দরজা আঁটকে অনিক গিয়ে সোফায় বসলো আর পাশের সোফায় তৃষা। কেমন একটা ভয় ভয় লাগছে তার। বন্ধ ঘরে সাথে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ!
” কেমন আছো বলো? “
অনিক সামনে থাকা কফি মেকার থেকে কফি দিলো তৃষাকে।
” ভালো। ওদিকে সবাই কেমন আছেন? “
” আপাতত আছে ভালো। বিশ্রাম দরকার ওহির বাবার। আমি আবার রাতে ফিরবো বুঝলে। “
” আজকেই! আরেকদিন থাকা যায় না? “
অনিক মুচকি হেসে কফির কাপে চুমুক দিলো।
” থেকে কী করবো? কিছুদিন পর তো বিয়ে করে ঘরে নিয়ে যাবো। তখন না হয় কাজকর্ম রেখে সারাদিন তোমার সামনেই বসে রইলাম? “
দু’জনেই একসাথে হেসে উঠলো এবার।
” ঠিক আছে। “
” তুমি বসো একটু। আমি রেডি হয়ে আসি। আর দরজা খুলে বাইরেও দাঁড়াতে পারো। তোমার নার্ভাস লাগছে। “
বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো অনিক। তৃষা চমকাল। কীভাবে তার মনের কথা বুঝলো মানুষটা? তৃষা অপ্রস্তুত হয়ে গেছে। কিছু বললো না উত্তরে। অনিক গেলো রেডি হতে। ফিরলো দশ মিনিট পরে। তৃষা তখনও এক জায়গায় বসে আছে।
” হয়েছে আপনার? “
তৃষা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অনিক কালো রঙের শার্ট পরেছে সাথে জিন্সের প্যান্ট। তৃষা চোখ ফেরাতে পারছে না।
” হ্যাঁ। “
অনিক তৃষার দিকে এগিয়ে গেলো। তৃষা উঠে দাঁড়িয়েছে। সামনাসামনি দু’জন! দু’জোড়া চোখের দৃষ্টির মিলন হতেই লজ্জা পেলো তৃষা। মাথা নুইয়ে ফেললো সে।
” আমি কি তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরতে পারি?”
তৃষা চোখ বন্ধ করে ফেললো। বুকের ভেতর কেমন ঢিপঢিপ করছে। মানুষটা এভাবে অনুমতি চাইলো? এতটা ভালো কেনো হতে হবে? হুট করে জড়িয়ে নিলেই তো হতো। কীভাবে বলবে, ‘হ্যাঁ জড়িয়ে ধরো!’ আবার কিছু না বললেও তো খারাপ দেখাবে। তৃষার নীরবতাকে সম্মতি ভেবেই বুকে জড়িয়ে নিলো অনিক। বুকে মুখ গুঁজে স্থির হয়ে হৃৎস্পন্দন শুনছে তৃষা।
অনেকদিন হলো কোথাও একসাথে ঘুরতে যায়নি তিন ভাইবোন। তাই গতকাল সবাই মিলে ঠিক করেছে সামনের শুক্রবার একসাথে পিকনিক করবে। লোকেশন কাছেই। তৃষাদের বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একটা সুন্দর পার্ক আছে। সেখানেই তাহমি,সহন,তৃষা ও আয়ান মিলে পিকনিক করবে। অবশ্য বাবা-মাদের বলেছিল জয়েন হতে, কিন্তু উনারা রাজি হননি।
সকালবেলা চোখেমুখে পানির ছিটেফোঁটা লাগতেই ঘুম ভেঙে গেলো সহনের। আজ শুক্রবার। তাহমি আগেভাগে উঠে গোসল সেড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে ব্যস্ত। সহন উঠে বসলো। তাহমির দিকে তাকাতেই বুঝলো পানি এসেছে কোথা থেকে। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সে। তাহমির মনোযোগ অন্য দিকে। পেছন থেকে গিয়ে আলতো করে উদরে হাত রেখে জড়িয়ে ধরলো সহন। তাহমি হকচকিয়ে উঠলো।
” হুঁশ! এভাবে কেউ ধরে? “
সহন এরমধ্যে ঘাড়ে নাক ঘষতে শুরু করেছে। হাত দিয়ে স্লাইড করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। তাহমির অস্থির লাগছে।
” কীভাবে ধরবো? আরও গভীরভাবে? “
” ছাড় তুই। ফ্রেশ হয়ে রেডি হ। বেরোতে হবে আমাদের। “
তাহমি সহনকে ছাড়িয়ে অন্য দিকে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সহনের অসহ্য লাগছে।
” কোথাও যাবো না বা*ল। ভাল্লাগে না বা*ল। ধুর!”
প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা আঁটকে দিলো লোকটা। তাহমি হাসতে হাসতে চুলগুলো মেশিনের সাহায্যে শুকিয়ে নিচ্ছে।
প্রাইভেট গাড়িতে করে চারজন পার্কে পৌঁছল মাত্র। দুই বোন শাড়ি পরেছে সাথে ম্যাচিং হিজাব। সহন অফ হোয়াইট কালারের শার্ট আর আয়ান ব্লাক কালারের টি-শার্ট। প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে এসেছে ওরা, সাথে বাসা থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে এসেছে। এখানে বসে রান্না করার কথা অবশ্য ছিলো তবে সেটা আর হয়নি। অনিক অবশ্য চেম্বার বন্ধ রেখে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু তৃষা সুন্দর করে মনে করিয়ে দিয়েছে, বিয়েটা এখনো হয়নি! পার্কের উত্তর দিকে সবাই মাদুর পেতে বসেছে। সহনের মন মেজাজ বিশেষ ভালো না। কথা সবার সাথে হেসে হেসে বললেও তাহমি সেটা বুঝতে পারছে ঠিকই।
” তারপর আয়ান তোর পড়ালেখা, টিউশনি কেমন চলছে? “
তাহমি খাবারের প্যাকেট থেকে বিরিয়ানি প্লেটে পরিবেশন করছে। সহন ফোন নিয়ে ব্যস্ত। তৃষা সাহায্য করছে বোনকে।
” পড়াশোনা চলছে কিন্তু টিউশনি? নাউজুবিল্লাহ আপাই,পুরাই নাউজুবিল্লাহ! “
আয়ানের কথায় সহনও ফোন রেখে আগ্রহ সহিত তার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। তাহমি কৌতূহল সংবরণ করতে না পেরে শুধালো, ” কী হয়েছে রে? “
” আর কী বলবো? বড়লোক বাবার এক মেয়েকে পড়াচ্ছি প্রায় দিন পঁচিশে। সরি মেয়ে না বলে এটম বোম বললে ভালো হয়। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিবে সামনে। অথচ অকাল পক্ক! “
বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেললো আয়ান। তৃষা সেটা দেখে হো হো করে জোরে হেসে উঠলো। আয়ান দিলো তাতে ছোটো করে একটা কিল। তৃষাও কম যায় না। সে-ও ভাইয়ের চুল ধরে টান দিয়ে সহনের পেছনে লুকিয়েছে।
” আহা! থাম তোরা দু’জন। আর তৃষা তুই ক্ষ্যাপানোর চেষ্টা করছিস কেন? আমার ভাইটার সত্যি কষ্ট হচ্ছে মেয়েটাকে সামলাতে। “
” শালাবাবু মেয়েদের সামলানো মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। ভুলেও আবার ফেঁসে যেও না।”
সহনের কথায় তাহমি অন্য দিকে তাকিয়ে হেসে নিলো একটু। আয়ানও সমস্বরে বলে উঠে, ” ওই মেয়ের সাথে আমি? আল্লাহ আমাকে রক্ষা করুন। কোনোভাবে একদিন রাতে পেলে আমাকে ধর্ষণ করে ছেড়ে দিবে!”
শেষের কথাগুলো আস্তে করে বললো আয়ান।
” বলা যায় না শালাবাবু, কখন কার সাথে কার কানেকশন হয়ে যায়। দেখছো না তোমার বোনের সাথে কেমন করে আমার ঘটে গেলো?”
” আহারে বেচারি দুলাভাই আমার! “
তৃষার সাথে তাহমিও উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। সারাদিন একসাথে সময় কাটিয়ে মাগরিবের আজানের আগে আগে যে যার বাসায় পৌঁছল। মাঝে মধ্যে দম বন্ধ করা পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে কিংবা ব্যস্ত জীবনকে ছুটি দিতে আমাদের এরকম সময় কাটানো উচিত। প্রকৃতির সান্নিধ্যে গেলে মন ও শরীর দুটোই ভালো থাকে।
চলবে,