গল্প : তোমায় নিয়ে
পর্ব- (৯+১০)
.
নীরা পিছন ফিরে ঈশামকে কিছু একটা বলবে অমনি খেয়াল করল ঈশাম নীরার দিকে এগিয়ে আসছে।
ঈশাম যতই নীরার দিকে এগিয়ে আসে ততই নীরা পিছনে যায়। নীরা আস্তে আস্তে দেওয়ালের গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তোতলাতে তোতলাতে বলতে থাকে:
– এএএএএই কি হইছে অাঅাঅাপনার। কাছে আসার চেষ্টাও করবেন না বলে দিচ্ছি! ভাল হবে না কিন্তু!! দূরে যান! দূরে যান বলছি!
ঈশাম নীরার সামনে থেকে সরছে না।
নীরা ঈশামের বুকে এক ধাক্কা দিয়ে কয়েকহাত দূরে ঠেলে দেয়।
– এই এই করছ কি? আমি তো পরে যাব! যদি পরে যেতাম? তাহলে কি হত?
– কি আর হত? কোমড় ভেঙে বসে থাকতেন। আমি মানা করছি না কাছে আসার চেষ্টা ও করবেন না। এমনি হবে। হুমমম!
– বারে! আমার বিয়ে করা বউ, ২ লক্ষ টাকা দেনমহর দিয়ে বিয়ে করে ঘরে এনেছি, আর আমি কিনা আমার বউকে ভালবাসতে পারব না?
– ভালবাসতে বলছে কে আপনাকে?
– আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা।
– নীরা চুপ।
ঈশাম আবারো নীরার কাছে আসতেই নীরা চিতকার করে উঠল-
– মা!!!!!!!!
.
ঈশাম ৫ হাত পিছনে সরে গেল। এই নীরু! চুপ!
– এই বার? হুম?
-মাকে ডাক কেন?
– নীরা দাত কেলিয়ে হাসতে থাকে।
.
আচ্ছা? আপনি আমাকে নীরু বলে ডাকেন কেন?
– খুব ইচ্ছে ছিল নিজের বউকে শর্ট নামে ডাকব।
– আহারে ইচ্ছা!
– হুম ইচ্ছা। কারন হযরত মুহাম্মাদ ( সা) উনার বিবিকে শর্ট নামে ডেকেছিলেন।
.
হযরত আয়েশা ( রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ ( সা) আমাকে সম্বোধন করে বললেন- হে আয়েশ! ইনি জিবরাইল ( আ), তোমাকে সালাম বলছেন। তদুত্তরে আমি বললাম, ওয়া আলাইহিস সালাম, ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আয়েশা ( রা) আরও বলেন, আমরা যা দেখি না, নবী কারীম ( সা) তা দেখেন। ( বুখারি- ৫৭৬৮)।
হযরত আনাস ( রা) থেকে বর্ণিত, একবার উম্মে সুলায়ম ( রা) সফরের সামগ্রীবাহী উটে সাওয়ার ছিলেন। আর নবী কারীম ( সা) এর গোলাম আনজাশা উটগুলাকে দ্রুত হাকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন নবি কারীম ( সা) তাকে বললেন, ওহে আনজাশ! তুমি কাচপাত্রবাহী উটগুলা ধীরে ধীরে হাকিয়ে নিয়ে যাও। ( বুখারি- ৫৭৬৯)
.
তাহলে আমার প্রেয়সী কে আমি কি শর্ট করে নামে ডাকতে পারব না?
– নীরা মুখ বাকা করল।
– আচ্ছা তুমি কি পোলিও রোগি?
– কেন? কথায় কথায় মুখ বাকা কর কেন? ছোটবেলায় আমার শশুড় শাশুড়ি কি আমার বউটাকে পোলিও টিকা খাওয়াই নাই?
– নীরার মুখ ফুলে গেছে।
– আচ্ছা কি নামে ডাকলে আমার প্রিয়তমা খুশি হবে শুনি? লাল পরি, নীল পরি, ডানা কাটা পরি, শাক চুন্নি, ময়না পাখি, টিয়া পাখি, হলুদিয়া পাখি, সারস পাখি, সোনা পাখি? নাকি সোনা বউ ডাকলে খুশি হবেন?
– আপনাকে এত পেচাল পারতে বলছে কে?
– পেচাল কই পারলাম?
– আপনি অতিরিক্ত কথা বলেন। বাচাল কোথাকার!
– তা বলতে পার!
– জি হা সেটাই।
– নীরু! তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি। চোখটা বন্ধ কর।
– কি? চোখ বন্ধ করব কেন? করব না।
– আচ্ছা ঠিক আছে। এই নাও।
ঈশাম নীরার সামনে এক গুচ্ছ বেলি ফুলের মালা ধরল।
ছোট হাদিয়া বলতে বলতে পার। তুমি কি পছন্দ কর না কর তা তো এখন পর্যন্ত জানতে পারলাম না। নাও ধর!
নীরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। এই ছেলেটা কিভাবে জানল আমি বেলি ফুলের মালা পছন্দ করি? কখনও তো বলি নি তাকে। আশ্চর্য!
ঈশাম এখানে একটা চালাকি করেছে। নীরার ফোনের গ্যালারি থেকে নীরার ছবি গুলা দেখেছে। নীরার সব ছবিতেই চুলের খোপায় বেলি ফুল গুজিয়ে দিয়ে ছবি তুলেছে। তাই নীরাকে প্রশ্ন করার মানেই হয় না নীরা কোন ফুল পছন্দ করে।
– আপনাকে ফুল আনতে বলেছিল কে?
– ছোট হাদিয়া বলতে পার। আল্লাহ আমার ছোট ছোট আশা পূরন করছে আলহামদুলিল্লাহ্।
– কোনো প্রয়োজন ছিল না।
– নীরু! তুমি কি জান হাদিয়া দিলে মায়া মহব্বত বৃদ্ধি পায়?
হযরত আবূ হুরায়রা ( রা) থেকে বর্ণিত হুজুর ( সা) ইরশাদ ফরমান, তোমরা পরস্পর পরস্পরকে হাদীয়া দাও। এতে মহব্বত বৃদ্ধি পায়। ( ফয়জুল কাদীর, জামে ছগীর- ২/২০৩)।
সামর্থ্য অনুযায়ী মাঝে মাঝে হাদীয়া দেওয়া উচিত।
রাসূলে কারীম ( সা) এর একটি সাধারন ও সংক্ষিপ্ত উপদেশ সব সময় স্মরনে রাখা কর্তব্য,
“তোমরা পরস্পর উপহার উপঢৌকন আদান প্রদান কর, দেখবে, এর ফলে তোমাদের পারস্পরিক ভালবাসার সৃষ্টি হয়েছে, পারস্পরিক প্রেম- ভালিবাসার মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। “
অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে,
তোমরা পরস্পরে হাদিয়া তোহফার আদান প্রদান করবে, কেননা হাদিয়া তোহফা দিলের ক্লেদ, ও হিংসা – দ্বেষ দূর করে দেয়। ( আহমদ, তিরমিযি)।
.
তুমি নিশ্চয় জান, মানুষের অন্তরে ধন সম্পদের মায়া খুবই তীব্র। তা যদি অন্য কারও কাছ থেকে লাভ করে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তার মন তার দিকে ঝুকে পরে, এবং ধন সম্পদ দানকারীর মনও ঝুকে পরে তার প্রতি যাকে সে দান করল। অবশ্য সেটা হতে হবে তার সামর্থ্য অনুযায়ি।
ইমাম ইয়াজিদ নখয়ী বলেছেন- স্বামীর পক্ষে তার স্ত্রীকে এবং স্ত্রীর পক্ষে তার স্বামী কে উপহার দেওয়া খুবই বৈধ কাজ।
কিন্তু এ ব্যপারে শরীয়াতের নির্দেশ হল, কেউ অপরের দেয়া উপহার ফেরত নিতে বা দিতে পারবে না।
হযরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ বলেছেন, এভাবে উপহার আদান প্রদান করলে কেউই কারোটা ফিরিয়ে দেবেও না, ফিরিয়ে নেবেও না।
আল্লামা আইনী লিখেছেন,
স্বামী স্ত্রী কে এবং স্ত্রী স্বামী কে যা কিছু একবার দিয়ে দিয়েছে, তা ফেরত নেওয়া কারও পক্ষেই জায়েজ নয়। ( উমদাতুলকারী)।
স্বামী স্ত্রীর মান- অভিমান অনেক সময় জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। অনেক সময় তা সীমালঙ্ঘন করে যায়। রাসূলুল্লাহ ( সা) এর দাম্পত্য জীবনেও তা দেখা দিয়েছিল। হযরত উমরের স্ত্রী একদিন হযরত উমার ( রা) বললেন,
” আল্লাহর কসম, নবীর নবিগন পর্যন্ত তার কথার প্রত্যুত্তর করে থাকেন। এমন কি তাদের এক একজন রসূলকে দিনের বেলা ত্যাগ করে রাত পর্যন্ত অভিমান করে থাকেন।
তখন উমর ( রা) চিন্তায় ভারাক্রান্ত হয়ে তার কন্যা উম্মুল মু’ মিনীন হযরত হাফসার নিকট বিষয়টি সম্পকে সত্যাসত্য জানতে চাইলেন। জওয়াবে হাফসা ( রা) হ্যা সূচক উক্তি করলেন। হযরত উমর ( রা) এর পরনাম ভয়াবহ মনে করে কন্যাকে সাবধান করে দিলেন এবং বললেন-
” সাবধান! তুমি রাসূলের ( সা) নিকট বেশী বেশী জিনিস চাইবে না। তার মুখের উপর জওয়াব দেবে না, রাগ করে কখনও তাকে ত্যাগ করবে না। আর তোমার কিছু দরকার হলে তা আমার নিকট চাইবে। “
.
তাই কোনো কিছু স্বামীর কাছ থেকে চাওয়ার আগে এও ভাবতে হবে যে, স্বামীর সামর্থ্য আছে কিনা। স্বামী দিতে পারবে কিনা। তা নাহলে অনেক সময় মনমালিন্য হতে পারে। স্বামী ও অনেক মন খারাপ করতে পারে যে, আমার স্ত্রী আমার কাছ থেকে চাইল তা আমি দিতে পারলাম না।
– বুঝেছ নীরু?
– নীরা চুপ করে থাকল।
.
সকাল বেলা ঈশাম অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। নীরা ঈশামকে বলল,
– আমার কিছু টাকা লাগবে। একটা জায়গায় যাব।
– কোন জায়গায়?
– পার্লারে।
– ও আচ্ছা। একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি?
-হুম।
– কি করতে যাবে?
– নিজেকে একটু ঠিক করতে। অনেক দিন হল যাওয়া হয় না।
– কত টাকা লাগবে।
– ৫০০। ৪০০ টাকা ফেসিয়াল আর ১০০ টাকা ভ্রু প্লাগ।
– আমি তোমাকে ৪০০ টাকা দিব।
– কিছু মনে করবেন না। ৫০০ টাকা দিতে কি আপনার কোনো প্রবলেম হবে? না মানে সমস্যা হলে আমার লাগবে না।
– আলহামদুলিল্লাহ। মাসের প্রথমে আমার সমস্যা নেই। আমি তোমাকে ৫০০ টাকাই দিতে পারব। কিন্তু তোমাকে আমি ৪০০ টাকাই দিব। কারন তুমি ফেসিয়াল করতে পার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ভ্রু প্লাগ করতে পারবা না।
– কি সমস্যা ভ্রু প্লাগ করতে? আমার অনেক দিন হয়ে গেল ভ্রু প্লাগ করি না। ভ্রু অনেক বড় হয়ে গেছে, একটু সাইজ করে আনতে হবে।
– নাহ! তুমি করতে পারবে না।
– কেন?
– আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ ( সা) এর নিষেধ আছে।
.
কিভাবে নিষেধ করা হয়েছে জান?
” হযরত আলকামা ( র:) বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ( রা) লানত করেন এমন সব নারীর উপর, যারা অপরের অঙ্গে উল্কি উতকীর্ণ করে। যারা কপাল প্রশস্ত করার জন্য কপালের উপরিভাগের চুল গুলো উপরে ফেলে ( ভ্রু প্লাগ) এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য দাত সরূ করে ও বড় করে কৃতিম উপায়ে আল্লাহর সৃষ্টি বদলে ফেলে।
তখন উম্মে ইয়াকুব জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কেন? উত্তরে আবদুল্লাহ ইবনে মাসাউদ ( রা) বললেন, আমি কেন তার উপর লানত করব না যার উপর স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( সা) লানত করেছেন। এমনকি আল্লাহর কিতাবেও তাই আছে।
তখন উম্মে ইয়াকুব বললেন, আমি সমস্ত কিতাব ( কোরঅান) পরেছি, কিন্তু তাতে তো এটা পেলাম না। তখন আবদুল্লাহ বললেন, যদি তুমি কোরঅান পাঠ করতে তা হলে অবশ্যই তাতে পেতে-
” রাসূল যা তোমাদেরকে দেন তা মজবুতভাবে আকড়ে ধর আর যা থেকে নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক। ( বুখারি- ৫৫১৪)।
.
রাসূলুল্লাহ ( সা) এর লানত যে কাজের জন্য ধার্য করা হয় তাহলে সেই কাজটা কি করা উচিত? রাসূলুল্লাহ ( সা) এর আমরা প্রিয় উম্মাত হয়ে কিভাবে তার কথার বিরোধিতা করতে পারি?
নীরা খানিক্ষন চুপ থেকে বলল,
আমাকে না হয় মানা করলেন কিন্তু হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মেয়েরা যে করছে?
– তাদেরকে তোমরা দাওয়াত দিবে।
– আর অনেকে না জেনে করে। কিন্তু অাফসোস বেশির ভাগই জেনেই করে। কারন তাদের কাছে মানুষের কাছে সুন্দর লাগানোই লক্ষ্য। কিন্তু অাদো তাদেরকে এই কাজ করলে সুন্দর লাগে না। এটা রাসূলুল্লাহ ( সা) এর লানত লাগে।
.
– ফেসিয়াল করতে সমস্যা?
– যদি না সেটা পরপুরুষ কে দেখাও। দেখালে সমস্যা। শুধু স্বামী দেখতে পারবে। আর ফেসিয়াল যদি হারাম কিছু দিয়ে না করে তাহলে ঠিক আছে। তোমার নিয়ত যদি থাকে আমার তকের যত্ন নিব স্বামীর কাছে সুন্দর লাগানোর জন্য তাহলে ১০০% ঠিক আছে।
.
ঈশাম বলল, অফিসে যাচ্ছি। আসসালামু আলাইকুম।
– ও আলাইকুমুসসালাম।
.
( চলবে ইন শা আল্লাহ)
গল্প: #তোমায়_নিয়ে
পর্ব- ১০
.
নীরা কয়েকদিনের জন্য বাবার বাড়ি বেড়াতে যায়। সেখানে গিয়ে ওয়্যারড্রপে কাপড় চোপড় গুছাতে গুছাতে নীরার চোখে পড়ল দুইটা হিজাব। ভার্সিটির বান্ধবীরা খুব সুন্দর করে, স্টাইল করে হিজাব বাধে মাথায়। তাদের দেখেই শখ করে ২ টা হিজাব কিনেছিল। কিন্ত আগে তো হিজাব পরার অভ্যাস ছিল না তাই আর পরা হয় নি। নীরা ব্যাগে হিজাব দুইটা ভরে নিল। শশুড় বাড়িতে নিয়ে যাবে। এখানে রাখলে জিনিস পরেই থাকবে। সবে নীরা বাবার বাড়িতে আসছে তিনদিন হল। এরই মাঝে ঈশাম বারবার ফোন দিয়ে বলছে তার কাছে যেতে। বাবার বাড়িতেও থাকতে দিবে না?
– আসসালামু আলাইকুম নীরু।
– ও আলাইকুমুসসালাম। বলেন। আর যাই বলেন, আমি কিন্ত কয়েকদিন এইখানে থাকব। যাইতে বলবেন না।
– আমার ভাল লাগছে না। আস তুমি।
-বললাম না! যাইতে বলবেন না।
– আমি নিতে আসব তোমাকে কাল ইংশা আল্লাহ। রেডি থাইকো।
এই বলে ঈশাম ফোন কেটে দিল।
নীরা বিষয়টা খুবই ইনজয় করছে। ঈশাম আর নীরার মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পক এখনও স্থাপন হয় নি। তাতেই ঈশাম নীরাকে ছেড়ে থাকতে চায় না। নীরা এত দিনে বুঝে গেছে ঈশাম নীরাকে খুবই ভালবাসে। তানাহলে একটা ছেলের এত ধৈর্য্য কিভাবে হতে পারে? এত শ্রদ্ধা? দুনিয়াতে এখনও এরকম ছেলে আছে ঈশামকে না দেখলে কখনওই বিলিভ হত না । নীরা ঈশামকে না নিয়ে যেতে বললেও নীরা ইচ্ছাকৃত ভাবে বলেছে, তাকে যেন এখনি না নিয়ে যায়। কিন্তু মন থেকে বলে নি । নীরা দেখতে চেয়েছিল সত্যই ঈশাম আসে কি? আর কত দিন নীরাকে ছেড়ে থাকতে পারে।
.
পরের দিনই ঈশাম মহাশয় হাজির নীরাকে নিতে। খাওয়া দাওয়ার পরই নীরাকে নিয়ে রওনা হল।
– কোথায় যাচ্ছেন?
– বাসায় ফিরার আগে কোথাও ঘুরে আসি চল।
– না বাসায় চলেন।
– উহু। না। বউকে নিয়ে ঘুরব।
.
ঘুরাঘুরির এক পর্যায়ে ঈশাম নীরাকে বলল কি খাবে?
– নীরা সাথে সাথে উত্তর দিল ফুচকা।
– আর কিছু?
– নাহ।
ঈশাম ফুচকার অর্ডার করল।
নীরার ফুচকার পাগল এককথায় যাকে বলে। নীরা ১ প্লেট আর ঈশাম ১ প্লেট খাওয়া শুরু করল। নীরার খুব কষ্ট হচ্ছিল নিকাবের নীচ দিয়ে খেতে। কিন্তু তবুও সে নিকাব খুলে নি। ঈশাম নীরাকে নিয়ে এক কোণে বসল যাতে নীরা আরামে খেতে পারে আর মানুষের আড়াল হয়।
১ প্লেট….
২ প্লেট…..
২.৫ প্লেট ফুচকা সাবার করল নীরা। ঈশামের প্লেটে আরও ৩ টা ছিল সেটাও মুখে পুরে নিল। কিন্তু আড়াই প্লেট এর পর আর পারল না।
ঈশাম শুধু নীরুর দিকে তাকিয়ে ছিল। আর নীরার খাওয়া দেখে খালি ঢোক গিলছিল।
.
বাসায় আসার পর যা হওয়ার তাই হল। নীরার বমি আর পেট খারাপ।
– আচ্ছা? মানুষ খায় তাই বলে আড়াই প্লেট ফুচকা একবারে? তাও আমার টাও খাইছ?
– চুপ থাকেন! আবার বমি আসতেছে বালতি নিয়ে আসেন।
– আনছি আনছি।
– আরও খাবা?
– কি?
– ফুচকা?
– আপনার মাথা খাব! বলছি না চুপ থাকতে! মনে পড়লেই খারাপ লাগছে। ওইটার কথা বলবেন না!
– আচ্ছা! আচ্ছা বলব না।
.
পরের দিন….
– নীরু! কেমন লাগছে?
– আগের থেকে ভাল।
– আজকেও খাবা ফু………..( ঈশাম নিজের মুখ চেপে ধরল)।
– কিহ?
– না কিছু না।
– রেস্ট নাও।
.
অনেক ট্রাই করছে কিছুতেই হচ্ছেনা। কতবার ট্রাই করল, তাও হচ্ছে না। মেয়েরা বাধে কিভাবে?
নীরা প্রায় ১ ঘন্টা ধরে হিজাব বাধার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। অবশেষে কোনো মতে এচিয়ে পেঁচিয়ে মাথায় শত ভাজ দিয়ে হিজাব পরল। আহা! কি কষ্ট! পরতেই পারছিলাম না! তাও হইছে কিছুটা।
.
ঈশাম অফিস থেকে ফিরে নীরাকে দেখল নীরা মাথার উপর ১৪ তালা বিল্ডিং বানিয়ে হিজাব পরেছে। মাথার পিছনে ইয়া বড় একটা খোপা। মনে হচ্ছে বাধা কপির স্তর মাথায় পরেছে। ফ্রেস হয়ে নীরাকে ডাকল ঈশাম।
– কি পরছ মাথায় ওইটা।
– দেখেন না? হিজাব। অনেক কষ্টে পরছি। পারছিলামই না পরতে। মেয়েরা যে কি সুন্দর করে বাধে!
– হুম! বাঁধাকপি বাধে মাথায়। খায় তো না! কি আর করবে? এজন্য মাথায় মাখে।
– কেন? সুন্দর তো লাগে।
– তোমরা যে কি সৌন্দর্য খুজে পাও তা আমার জানা নেই। কিন্তু এরকম করে ফ্যাশন করলে জান্নাত তো দূরে থাক জান্নাতের সুগন্ধও যে নসিব হবে না।
– কেন? তারা তো মাথা ডাকছে। চুল দেখানোর গুনাহ কম হচ্ছে।
– পর্দা কি শুধু চুলের? আর দেহের পর্দা নেই? লজ্জা কি শুধু চুলেই? বক্ষে নেই?
– হুম পর্দা তো সব অঙ্গেরর আছে। কিন্তু এখানে ভুল কোথায়?
– তোমাকে ক্লিয়ার করে দিচ্ছি বস এখানে।
নীরা বসে গেল।
.
হযরত মুহাম্মাদ ( সা) বলেছেন- দুটি দল জাহান্নামী, তাদের আমি কখনও দেখি নি।
এদের একটি দল এমন, যাদের হাতে সর্বদাই চাবুক থাকে যা দেখতে গরুর লেজের ন্যায়, তা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করে। ( অর্থ্যাত যারা সর্বদাই অন্যায়ভাবে মানুষের উপর যুলুম করে)।
আর অন্যটি নারীর দল, যারা অর্ধনগ্ন অবস্থায় কাপড় পরিধান করে। ফলে তারা লোকদের অাকৃষ্ট করে এবং তারাও দুষ্ট লোকদের দ্বারা অাকৃষ্ট ও ব্যাভিচারের শিকার হয়। তাদের মাথা যেন উচু কুজবিশিষ্ট চলন্ত উটের ন্যায়। এরা কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে। ( মুসলিম- ২১২৭)।
আর যারা এই হিজাব পরার মাধ্যমে বলে বেড়ায় তারা পর্দা করছে, তাহলে যেনে রাখ এগুলা স্রেফ তামাশা ছাড়া আর কিছুই না। রং ঢং করে কখনও পর্দা হয় না। তারা হিজাব পর্দার নামে যা করছে এতে পর্দার অপমান করা হবে। পর্দা হতে হবে শরীয়াত সম্মত! পর্দা নিয়ে কোনো রং তামাশাত স্থান নেই ইসলামে। এটা আল্লাহর ফরজ বিধান। হুকুম আহকাম! এটা নিয়ে মশকরা করার আগে এটার পরিনাম কি ভয়াবহ তা জানতে হবে। বুঝেছ নীরু?
– নীরা আস্তে আস্তে হিজাব খুলল। মাথায় উচু করে করা খোপা খুলে চুল ছেড়ে দিল।
.
ঈশাম নীরার খোলা চুল অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
– কি হল? কি দেখেছেন?
– না মানে ইয়ে। ক্ষুধা লাগছে । ভাত খাব।
নীরা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল।
ঈশাম বেআক্কেল এর মত ঠায় দাড়িয়ে রইল।
.
রাত ১টা।
সারা শহর ঘুমের রাজ্যে ঢলে পরেছে। সোডিয়ামের বাতিগুলো জলছে রাস্তায়। অালোর কাছে পোকা গুলোও যেন খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। রাস্তায় চলছে গোটা দুয়েক ট্রাক, মাঝে মাঝে ভো ভো করে ফাকা রাস্তা দিয়ে চলে যায়। তারপর আবার নিস্তব্ধতা যেন জেকে বসে। ছাদের কোনে দাড়িয়ে ঈশাম দেখছিল ব্যস্ত শহর ঘুমের কাছে যেন পরাজিত সৈনিক। ঘুম নেই যেন ঈশামের চোখে। নির্ঘুম চোখ জোড়া দিয়ে ঈশাম এই শহর টাকে দেখছে। মনে হয় যেন কত আপন, তারপই মনে হয় এসব কিছুই না ।
দীর্ঘ এক নি: শাস ফেলে আকাশের পানে চায় ঈশাম। কি নির্মল, কি স্বচ্ছ! সুবহানাল্লাহ! কি সৃষ্টি তোমার হে আল্লাহ! মৃদু হাওয়ায় যেন ভেসে যেতে ইচ্ছে করে রূপকথার সেই চাদের দেশে। কত বিশাল আকাশ? কত বড় জমিন!
নীরু! তোমার মনে কি আমার জন্য খানিকটা জায়গা নেই? আমার রাজ্যে শুধুই তুমি। আমার পৃথিবীতে শুধু তোমার অানাগোনা। কিন্তু তোমার রাজ্যে আমার ঠাই কোথায়? তোমার পৃথিবীতে কি আমার জন্য একটু জায়গা দিতে পার? যেখানে হৃদয়ের জমে থাকা ভালবাসার বীজ বপন করতে পারি, যত্ন করতে পারি! পারো না নীরু! আমার হৃদয়ের মনি কোঠায় শুধু তুমিই। ঠিক বুকের বা পাশটায়। তোমার রাজ্যের দুয়ার খুলবে কবে? আমি যে দাড়িয়ে আছি অনেক ভালবাসা নিয়ে। তোমার কি সময় হয় নি? কেন এত অপেক্ষা করাও। আমি কি তোমার ভালবাসার পরশ পেতে পারি না? উত্তম বন্ধু হিসেবে গ্রহন কর। স্বামী, বন্ধু যেটাই ভাব সেটাই আমি।
.
রাতের চাদটাও আর ভালো লাগছে না। ঘরে আমার চাদ আছে, অালোকিত করে রেখেছে, কিন্তু কোথায় যেন এক অপূর্ণতা! কোথায় যেন এক না পাওয়ার হতাশা! কোথায় যেন এক বুক শূন্যতা। কিছুতেই যেন তা পূর্ণ হয় না। হাহাকার করছে পাওয়ার জন্য। ঈশাম ভাবতে ভাবতে যেন খেই হারিয়ে ফেলল।
.
ঘোর ভাঙলো মশার কামড়ে। পায়ের কাছে শত শত মশা। ১০ টা তাড়ালে ১০০০ টা আসে। ধুত! এখানে আর থাকাই যাবে না। মিশার অত্যাচারে ঈশাম ছাদ থেকে রুমে ঢুকল।
সোনা বউয়ের ঘুমন্ত মুখ যেন পূর্নিমার অালোকেও হার মানায়। কি অপরূপা! মাশা আল্লাহ! কি মায়ায় আচ্ছন্ন! আচ্ছা? পৃথিবীর সব স্বামীর কাছেই তো তাদের স্ত্রী রূপসী! অবশ্যই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা এই পবিত্র বন্ধনটাকে কতই না মধুর করেছে, কতই না সুদৃঢ় করেছে। এই বন্ধনের যেন কোনো তুলনাই হয় না। আমার সোনা বউ পৃথিবীর সেরা সুন্দরী।
.
ঈশাম নীরার দিকে মুখ করে এক হাতের উপর শুয়ে আছে। নীরাকে দেখেই যাচ্ছে!
হঠাত নীরা কাত ফিরবে, এরই মাঝে একটু চোখ খুলল! চোখটা খোলার সাথে সাথে দেখল ঈশাম ট্যালট্যাল করে চেয়ে আছে। ভয়ে এক চিতকার করে উঠল! নীরার চিতকারের শব্দে ঈশাম এক লাফে বসে পরল।
– নীরু! কি হয়েছে? অমন করে উঠলে কেন?
– আপনি ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন এত রাতে?
– তোমাকে দেখছিলাম।
– দেখার আর সময় পান না?
– সব সময়ই দেখি।
– এই ভর দুপুর রাতে ভুতের মত চেয়ে আছেন! ভয় লাগে না! বুকটা ধুক ধুক করছে!
– কই দেখি কোথায় ধুক ধুক করছে?
– কিহ! ফাযিল!
– বারে! বউয়ের হৃদপিন্ডের শব্দও শুনতে পারি না?
– লাগবে না। আপনি শুয়ে পরুন। আর বলেন আপনি কেন তাকিয়ে ছিলেন?
– জানতে চাও?
– হুম।
– তাহলে শুন,
” যখন স্বামী স্ত্রী একে অপরের প্রতি প্রেম ও মহব্বতের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করেন, আল্লাহ তা’য়ালা ও তাদের উভয়ের প্রতি রহমতের দৃষ্টি বর্ষণ করেন। “( বুখারি- ৬১৯)।
তুমি তো আমার দিকে তাকাও না তাই কাজটা আগে আমিই শুরু করেছি। আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি চাই। তাই।
– নীরার গলা ধরে এল। কিন্তু সামলে নিল।
– বুঝেছ সোনা বউ?
– ঘুমান এখন। কাল অফিসে যাবেন না নাকি ।
– তাহাজ্জুদ পরে ঘুমিয়ে যাব ইংশা আল্লাহ! তুমি পরবে?
– আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
ঈশাম কিছু বলল না। আচ্ছা! বলে অযু করতে গেল।
.
শুক্রবার, ঈশামের অফিস বন্ধ। ঈশামের মা ঈশামের জন্য মুরগির মাংস রান্না করেছে। খুব প্রিয় ঈশামের। জুমুঅার নামাজ শেষে দুপুরে খেতে বসেছে ঈশাম আর নীরা।
– মা! বাবা কই?
– তোর বাবা ঘরে শুয়ে আছে।
– খাবে না?
– নামাজ পরে এসেই খেয়ে নিয়েছে। খুব নাকি ক্ষুধা পেয়েছিল। তাই খাইয়ে দিয়েছি।
– তুমি খাবে না।
– তোর বাবার সাথেই খেয়েছি । একা নাকি খাবে না। তোরা শুরু কর। আমি যাই তোর বাবার কিছু যদি লাগে।
নীরা কথাগুলা শুনল ঈশামের মায়ের মানে তার শাশুড়ির। অনেক কেয়ার করে শশুড়কে।
ঈশাম এক গাল হাসি দিতে খাওয়া শুরু করল। ক্ষুধায় পেট চো চো করছে । দুজনই খাওয়া শুরু করল। নীরারও মুরগী অনেক পছন্দের।
খাওয়ার এক পর্যায়ে ঈশাম নীরার হাত থেকে মাংসের হাড্ডিটা কেড়ে নিল।
.
( চলবে ইন শা আল্লাহ)।
গল্প : তোমায় নিয়ে
পর্ব: (১১)
.
– নীরা বুঝলা না কি হল।
– ওদিকে নীরার গোশতের হাড্ডি ঈশাম কট কট চিবিয়ে খাচ্ছে।
– এই যে! আপনি আমারটা কেড়ে নিলেন কেন?
– তোমারটা নিয়েছি আর কারও টা নেই নি।
– নিলেন কেন? দেখছেন না আমি খাচ্ছিলাম আর আমার এটা অনেক পছন্দের।
– আমার আরও পছন্দের একটা কাজ বউ এর এটো করা গোশতের টুকরা খাওয়া।
– মানে? আপনি আমার এটো করা খাবার খাবেন কেন?
– খাবই বা না কেন? যেখানে রাসূলুল্লাহ ( সা) ওনার বিবির এটো করা খাবার খেয়েছেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ ( সা) এর উম্মাত! কেন আমি এইটা করতে পারব না আমার বউ এর সাথে। মহব্বত বৃদ্ধি পায়।
” আমি ( আয়েশা) পান করে পাত্রটা নবিজী ( সা) এর দিকে বাড়িয়ে দিতাম। তিনি আমার এটো করা স্থানেই মুখ লাগিয়ে পান করতেন। দাত দিয়ে গোশত ছিড়ে খাওয়ার পর আমার লালা লেগে থাকা স্থানেই তিনি মুখ লাগিয়ে খেতেন। ( মুসলিম)।
কি রোমানটিক ছিলেন আমাদের প্রিয় নবীজি ( সা)! রোমান্টিকতাও শিক্ষা দিয়ে গেছেন আমাদের। কি চমতকার না?
– হুম!
খাওয়া শেষে নীরা পানি খেল। পানির গ্লাসটা রাখতে না রাখতেই ঈশাম গ্লাসটা হাতে নিয়ে নীরা যেখানে মুখ লাগিয়ে খেয়েছিল ঠিক সেখানেই মুখ লাগিয়ে পানি পান করল।
নীরা কিছুই বলল না। কারন কিছু বলারও ছিল না। শুধু ঈশামে মুগ্ধ হয়েছিল।
– ওই! নীরু!
– ( চমকে উঠে) কি?
– কি ভাবতেছ?
– কই কিছু না তো।
– আজ সন্ধায় ইংশা আল্লাহ হাটতে যাব। সো এখন একটু রেস্ট নাও।
খাওয়ার পর ঈশাম বিছানায় শুয়ে পরল। নীরাও বিছানার পাশে এসে বসে পরল। নীরা এখন কেমন জানি ভাবুক হয়ে গেছে। সারাদিন কি যেন ভাবে আর মাঝে মাঝে দীর্ঘ নি: শাস ফেলে। সারাদিন ভাবনার জগতে বিচরন করে কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
.
মাগরিবের নামাজ আদায় করার পর দুজনই বাহিরে বের হল।
– কেথায় যাচ্ছেন?
– চল! দেখা যাক আল্লাহ কোথায় নিয়ে যায়। কেন তোমার খারাপ লাগছে?
– না।
– চল কিছু দূরে একটা পার্ক আছে ওখানে হাটার জায়গা আছে। মূলত হাটার জন্যই করা হয়েছে। চল!
.
ঈশাম আর নীরা দুজন পাশাপাশি হাটছে। দুজন দুজনার পাশাপাশি, ব্যবধান শুধু দুই বিঘত পরিমান। আশেপাশে অনেকেই আছে স্বামী স্ত্রী আসছে হাটতে। হাত ধরে তারা হাটছে। ঈশামের এদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আপন মনে হাটছে। কিন্তু নীরা দেখছে চারদিকে তাকিয়ে।
– নীরু! ছুটির দিন তো তাই আজ একটু ভীর বেশি। সবাই তার পরিবার পরিজনকে নিয়ে আসছে। আসলে সবাই সারা সপ্তাহ অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকে। তাই ছুটির দিন গুলোতে পরিবার আর স্ত্রীকে সময় দিতেই মাঝে মাঝে ঘুরতে এবং হাটতে আসা। ব্যস্ত কর্মজীবন! সারা জীবন কাজের পিছনে পরে থাকলেই হয় না! পরিবার পরিজনদেরও হক আছে । তাদেরও সময় দিতে হয়। না হলে একটা গ্যাপ পরে যায়। এই যে দেখ! কত স্বামী স্ত্রী, পরিজনকে নিয়ে আসছে, হাটছে, কথাবার্তা বলছে! সারা সপ্তাহের জন্য একটা রিফ্রেশমেন্ট!।
” নবিজি ( সা) সারাদিন ব্যস্ত থাকতেন
ফাকে ফাকে স্ত্রীদেরকে সময় দিতেন। তবে রাতের বেলায়, চারদিক নিরব হয়ে এলে, তিনি আয়েশা ( রা) এর সাথে ঘুরতে বের হতেন। হাটতে হাটতে কথাবার্তা বলতেন। ( বুখারী)।
আর আমরা আজ সভ্য সমাজে বাস করি। নিজের পরিবারকে সময় না দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বন্ধু বান্ধবদের সাথে অযথা আড্ডাবাজিতে মত্ত থাকি, ফেসবুকে ওত পেতে থাকি সারাক্ষণ। পরিবারের লোকদের সময় দেওয়ারই সময় হয় না।
জানো নীরু! রাসূলুল্লাহ ( সা) স্ত্রীদের সাথে খেলাধুলাও করতেন?
” আয়েশা ( রা) বলেছেন- একবার নবিজি ( সা) আমাকে বললেন : চলো দৌড় প্রতিযোগিতা করি। আমরা দৌড়ালাম। আমি তার চেয়ে এগিয়ে থেকে দৌড় শেষ করলাম। কিছুদিন পর আমার স্বাস্থ্য একটু ভাল হলে, তিনি আবার একদিন প্রতিযোগিতা দিতে বললেন। এবার তিনি জয়ী হলেন। মুচকি হেসে বললেন: এটা সেটার বদলা। শোধবোধ! ( আবু দাউদ)।
ঈশাম হাদিসটা বলার পর মুচকি হাসল। নীরা খেয়াল করল।
– জানো! এটা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে হাদিসটা । নীরু! দৌড় প্রতিযোগিতা করবে?
– এখন? এখানে? কিভাবে সম্ভব?
– তাই তো! কি বলব বল! ঢাকা শহরে কোথাও মানুষ ছাড়া হাটার জায়গা নেই। কিন্তু ইচ্ছে ছিল দৌড় দেওয়া তোমার সাথে। দেখতাম কে জিতে।
– নীরা হাসতেছিল।
– ঈশামও নীরার সাথে সেই হাসি।
.
আজ নীরার ফাইনাল এক্সাম শুরু। সকাল বেলা নীরা রেডি হল। নীরার উদ্দেশ্য পরীক্ষার ১ ঘন্টা আগে গিয়ে পৌছাবে। কারন জ্যামের ভিতর পরলে সমস্যা আর তাছাড়া কখন পৌছাবে এত টেনশন নীরার ভাল লাগে না। তাই সিদ্ধান্ত যে ২ ঘন্টা আগে বের হয়ে যাবে। কতক্ষন লাগে লাগুক। ১ ঘন্টা আগে গেলেই হল।
– নীরু! তুমি কি রেডি? চল খেয়ে রওনা দেই।
– জি আমি রেডি।
ঈশাম নীরাকে দেখার সাথে সাথে নীরার জামা থেকে অতি সুগন্ধি পারফিউম ঈশামের নাকে এল।
– নীরা!
– হুম!
– পারফিউম দিও না। পারফিউম দিয়ে বাহিরে যেতে পারবে না। যাও গোসল করে আস।
– আমি তো রেডি হয়ে গিয়েছি। এখন গোসল করব? সময় তো চলে যাচ্ছে। আর কেন পারফিউম দিতে পারব না? শরির ঘেমে গন্ধ বের হওয়া আমার পছন্দ না। যাতে কোনো গন্ধ না হয় সেজন্য আমি দিয়েছি। আর দিলেই বা কি সমস্যা?
– অনেক সমস্যা। নারীদের সুগন্ধি ব্যবহার করে বাহিরে যাওয়ার অনুমতি নেই। যদি ঘামের কারনে শরিরে গন্ধও হয় তবুও না। সেজন্য নিয়মিত কাপড় পরিষ্কার আর শরিরের যত্ন নিতে হবে যেন শরীর থেকে কোনো দুর্গন্ধ না বের হয়।
– কেন মানা সুগন্ধি ব্যবহার নারীদের জন্য?
.
মহানবী ( সা) বলেছেন- সুগন্ধি ছড়াবার উদ্দেশ্য কোন মহিলা যদি তা ব্যবহার করে পুরুষদের সামনে যায়, সে ব্যভিচারিণী। ( আবু দাউদ, মিশকাত – ১০৬৫)।
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেন, যে মহিলা সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে যাবে সে মহিলার গোসল না করা পর্যন্ত কোনো নামাজ কবুল হবে না। ( ইবনে মাজাহ- ৪০০২)।
রাসূল ( সা) বলেন, আল্লাহর বান্দীদেরকে মসজিদে আসতে বারন কর না, তবে তারা যেন খুশবু ব্যবহার না করে সাধাসিধে ভাবে আসে। ( আবু দাউদ)।
রাসূলুল্লাহ ( সা) আরো বলেছেন- প্রত্যক চক্ষুই ব্যভিচারী। আর মহিলা যদি ( কোন প্রকার) সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন (পুরুষের) মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, তবে সে ব্যভিচারিণী। ( তিরমিযি- ২৭৮৬)।
.
সুগন্ধি ব্যবহার করে কোনো মহিলা মসজিদেও যেতে পারবে না। একদা চাশতের সময় আবু হুরাইয়া ( রা) মসজিদ থেকে বের হলেন। দেখলেন একটি মহিলা মসজিদে প্রবেশে উদ্যত। তার দেহ বা লেবাস থেকে উতকৃষ্ট সুগন্ধির সুবাস ছড়াচ্ছিল।
আবু হুরাইয়া ( রা) মহিলাটির উদ্দেশ্য বললেন, আলাইকিস সালাম।
মহিলাটি সালামের উত্তর দিল।
তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন- কোথায় যাবে তুমি?
সে বলল- মসজিদে।
বললেন- কি জন্য এমন সুন্দর সুগন্ধি মেখেছ তুমি?
বলল- মসজিদের জন্য।
বললেন- আল্লাহর কসম?
বলল- আল্লাহর কসম।
পুনরায় বললেন- আল্লাহর কসম?
বলল- আল্লাহর কসম।
তখন তিনি বললেন- তবে শোন, আমাকে আমার প্রিয়তম রাসূল ( সা) বলেছেন যে, সেই মহিলার নামাজ কবুল হয় না, যে তার স্বামী ছাড়া অন্য কারো জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করে। যতক্ষন না সে নাপাকির গোসল করার মত গোসল করে নেয়। অতএব তুমি ফিরে যাও, গোসল করে সুগন্ধি ধুয়ে ফেল। তারপর ফিরে এসে নামাজ পড়। ( ( আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, বায়হাকী)।
.
শুধু স্বামীর জন্য মহিলারা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে।
নীরা আর দেরি না করে গোসলে ঢুকল। তারপর রেডি হয়ে পরিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্য বের হল।
.
কিছুদিন পর……
ঈশাম হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ফিরল।
ঈশামের মা ঈশামকে জিজ্ঞাসা করল,
– কিরে আর এত তাড়াতাড়ি আসলি যে?
– মা একটা খবর আছে।
– কিরে?
– বড় খালু মারা গেছেন।
– ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। কখন?
– ১২ টার কিছু পরে।
– আর দেরি করিস না আমাকে নিয়ে চল।
.
ঈশাম, নীরা, মা, বাবা সবাই বড় খালার বাসায় গেল। পরিবারে চলছে শোকের মাতম। কে কাকে সান্ত্বনা দিবে?
ঈশামের খালা এদিকে কান্নাকাটি করছে বুক চাপড়িয়ে, বিলাপ করে। সবাই সান্ত্বনা দিচ্ছে।
ঈশাম মাকে ডেকে বলল
– মা! খালাকে একটু বুঝাও। এভাবে কান্নাকাটি করতে নিষেধ কর। এরকম করলে মুর্দার কষ্ট হয়। উনি কি এটাই চান? ওনাকে যাও বুঝাও। বিলাপ করে কান্না করতে নিষেধ কর।
ঈশামের মা খালার কাছে গিয়ে অনেক্ষন ধরে বুঝালেন। অনেক পরে খালার ক্রন্দনের আওয়াজ একটু কমে আসল।
.
নীরা ঈশামকে ডেকে বলল
– মানুষ মারা গেছে, কান্না তো আসবেই। আপনি কান্না করতেতে মানা করলেন কেন?
– আমি কান্না করতে মানা করি নি। কিন্তু খালা যেভাবে কান্না করছিল আসলে ওভাবে কান্না করা ইসলামে জায়েজ না, নিষিদ্ধ, কঠোর ভাবে নিষেধ আছে।
আত্নীয় স্বজনদের ইন্তেকালে গভীর মর্মব্যাথায় যে অশ্রুধারা বয়ে চলে তাতে দোষের কিছু নেই। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। রাসূলে কারীম ( সা) ছাহেবজাদা ইব্রাহীম ( রা) এর ইন্তেকালে এতই শোকার্ত হয়ে উঠেন যে, তার দুই গন্ডে অশ্রুধারা বইতে থাকে। এ সম্পকে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন-
” এটাতে মন্দের কিছু নেই। বরং এটা গভীর মমত্ববোধের পরিচয়বাহী।
অতপর বলেন,
চক্ষু অশ্রুসিক্ত, অন্তর শোকার্ত, তবে মুখে তাই বলব যা আল্লাহর পছন্দ, অর্থ্যাত, ইন্না লিল্লাহি…….. রাজিউন, হে ইব্রাহীম! তোমার বিচ্ছেদে আমি শোকে আমি সন্তপ্ত। ( বুখারী)
.
উম্মে আতিয়াহ ( রা) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, বাই’আতের সময় নবী ( সা) আমাদের কাছে এই অঙ্গীকার গ্রহন করেছেন যে, মৃতের ব্যক্তির জন্য মাতম করব না। ( বুখারি- ১৩০৬)।
মু’আবিয়া ( রা) হতে বর্নিত, তিনি হিমস নামক স্থানে ভাষনদানকালে তার ভাষনে উল্লেখ করেন যে, ” রাসূলুল্লাহ ( সা) বিলাপ করে কাদতে নিষেধ করেছেন। ( ইবনে মাজাহ ১৫৮০)।
আবু হুরাইয়া ( রা) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুল ( সা) বলেছেন, দু টো স্বভাব মানুষের মাঝে রয়েছে, যার কুফর বলে গন্য,
১) বংশে খোটা দেয়া।
২) মৃতের জন্য মাতম করে কান্না করা। ( মুসলিম- ১২১-(৬৭), তিরমিজি- ১০০১)।
ইবনে আব্বাস ( রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন,
মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলী প্রথা। ( ইবনে মাজাহ- ১৫৮২)।
অন্য হাদিসে আছে,
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ( রা) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন,
যারা ( মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গালে আঘাত করে, বুকের কাপড় ছিড়ে ফেলে এবং জাহিলী যুগের মত চিতকার করে, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়। ( বুখারি- ১৩৯৪, তিরমিজি- ৯৯৯)।
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন, মাতমকারিনী মহিলা যদি মরনের পূর্বে তওবা না করে, তাহলে আলকাতরারর পায়জামা এবং পাঁচড়ার জামা পরিহিতা অবস্থায় তাকে কিয়ামতের দিনে দাড় করানো হবে। ( মুসলিম- ১৫৫০)।
অন্য হাদিসে বর্ণনায় এসেছে,
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন, বিলাপকারিনী তওবা না করে মারা গেলে আল্লাহ তা’ য়ালা তাকে আলকাতরা যুক্ত কাপড় এবং লেলিহান শিখার বর্ম পরাবেন। ( ইবনে মাজাহ – ১৫৮১)।
রাসূল ( সা) ক্ষতবিক্ষতকারিনী, বক্ষদেশের জামা ছিন্নাকারিনী, ধ্বংস ও মৃত্যু কামনাকারিনী ও শোকগাথার অায়োজনকারিনীকে অভিসম্পাত করেছেন। ( ইবনে মাজাহ- ১৫৫৮)।
.
নীরা এবার বুঝেছ?
– হুম।
– আচ্ছা নীরা আমি যদি মারা যাই তাহলে তুমি কি আমার জন্য একটু কান্না করবে?
.
( চলবে ইন শা আল্লাহ)
Create a Stunning Free Website in Just 4 Easy Steps
গল্প: #তোমায়_নিয়ে
সানজিদা সুরাইয়া স্মৃতি
পর্ব: ১২
– আবল তাবল কথা কেন বলছেন আপনি?
– তাহলে তুমি কি আমাকে ভালবাস?
– আপনাকে ভালবাসতে আমার বইয়েই গেছে। ( মুখ অন্যদিকে ঘুড়িয়ে)
– তাহলে আবল তাবল কথা হল কিভাবে। ঠিকই তো বলেছি।
– আপনি বেশি বুঝেন।
– মনে তো হয়। মরে গেলেই বুঝবা।
-( নীরা চিতকার করে বলে উঠল) আপনি ঊল্টা পাল্টা কথা বলেন কেন???????
– কত ভালবাস তুমি আমাকে দেখছ?
– আমি কি সেটা বলেছি আপনাকে?
– না বললেও বুঝা যায়।
– কচু বুঝেন আপনি?!
– কচু কিন্তু খুবই ভাল লাগে।
– ( নীরার মুখ ভার)
– আচ্ছা আমি আসি। খালুর কবর দেওয়া হবে কিছুক্ষন পর। তুমি দোয়া করিও খালুর জন্য। তোমার দোয়ায় পারলে আমাকেও রাখিও।
ঈশাম এক রহস্যময় হাসি দিয়ে উঠল।
নীরা ঈশামের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল।
.
কয়েকদিন পর…..
নীরার ভার্সিটি কক্সবাজার ট্যুরের অায়োজন করেছে । যারা লাস্ট ইয়ার পরিক্ষা শেষ তাদের জন্য স্পেশিয়ালি।
– আমাদের ভার্সিটি থেকে কক্সবাজারে যাওয়া হচ্ছে।
– হুম।
– আমিও যেতে চাই। আমি এ সুযোগ মিস করতে চাই না।
– হুম যাও।
– আমরা ফ্রেন্ডরা মিলে যাচ্ছি।
– তোমরা একা যাচ্ছ?
– একা কেন? আমার অনেক ফ্রেন্ড থাকবে।
– মানে ওইটা না। বলছি তোমাদের সাথে কোনো মাহরাম যাবে না?
– নিয়ে যাওয়ার কি প্রয়োজন? আমরা তো হারিয়ে যাব না। সবাই এক সাথে থাকব।
– উহু! মেয়েদের একা ছাড়তে নেই। তুমি আমাকে নিয়ে চল।
– আপনাকে নিয়ে কেন যাব। কেউই তার হাজবেন্ডকে নিয়ে যাবে না। সবাই সিংগেল যাবে।
– তুমি আমাকে নিতে চাচ্ছ না এই তো। কোনো সমস্যা নেই তোমার বাবাকে আই মিন আমার শশুড় আব্বাকে সাথে নিয়ে যাও।
– কি বলছেন?
– হুম। ঠিকই বলছি।
– আমি বাবাকে নিয়ে যাব কেন? উহ!!! আপনি মনে হয় কোনো ট্যুরে যান নি?
– গিয়েছি তো।
– ফ্রেন্ডস দের নিয়েই তো গিয়েছিলেন।
– জি।
– আপনারা একা যেতে পারলে আমরা কেন যেতে পারব না? হাজবেন্ড, বাবা কে সাথে নিয়ে যেতে হবে?
– কারন ইসলাম পারমিশন দেয় না মেয়েদের একাকী সফরের।
– কেন?
– আবু হুরাইরা ( রা) থেকে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- মহান আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে নারী ঈমান রাখে, তার মহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন এক রাতের দূরত্ব সফর করা বৈধ নয়। ( বুখারী – ১০৮৮)।
তাছাড়া অনেক আলেম ওলামারা বলেছেন একাকী ছাড়াও যাবে না। মাহরাম লাগবে যদি তারা সফর করতে চায়।
– তাহলে আমাকে যেতে দিবেন না?
– যেতে দিব না কেন? আমাকে নয়ত বাবাকে সাথে নিয়ে যাও। আমি তোমাকে মানা করছি না । তোমার নিরাপত্তার জন্যই বলছি।
– হুম বুঝেছি।
– কি বুঝলা?
– আপনি এই কয়দিন আমাকে ছাড়া থাকতেই পারবেন না তাই বলুন।
– ঈশামের সেই হাসি। হুম তা বটে। কিন্তু তোমার যাওয়াতেও আমার আপত্তি নেই কিন্ত মাহরাম সাথে নিয়ে যেতে হবে । তাছাড়া আমি তোমাকে ছাড়ছি না।
– ঠিক আছে। না ছাড়লে ছাড়ার দরকার নেই। আমি যাচ্ছি না।
– না গেলে আরও ভাল। আমি টেনশনে থাকব না।
– মেয়েদের শিক্ষা সফর নিয়ে ইসলামে কি বলে?
.
শিক্ষা সফর হওয়া উচিত শিক্ষার মত। কিন্ত আমাদের স্কুল কলেজ ভার্সিটির শিক্ষা সফর আসলে তার মধ্য পরে না। এখন শিক্ষাসফর না, বরং বেহায়াপনা, উশৃঙ্খলতা, গান নাচ, ছেলেমেয়ের ফ্রি মিক্সিং মূলত এগুলা কোনো মতেই একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম / মুসলিমাহ এগুলাতে যেতে ইচ্ছা পোষন করবে না। তুমি তো আগে গিয়েছ, আমিও গিয়েছিলাম ২ বার, কিন্তু এরপর আমি এসবের জন্য আর যাই নি। হ্যা! আমি আমার ফ্রেন্ডস দের সাথে ঘুরে বেরিয়েছি। নাচানাচি, গান বাজনা, ফ্রি মিক্সিং ছিল না। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে মাহরাম ব্যতীত সফর কোনো মতেই উচিত না। আমি যতটুকু জানি ততটুকুর উপর আমল করলে এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, ফেতনার যুগে মেয়েদের এইরকম সফরে না যাওয়াই ভাল, একাকী যাওয়া তো কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। আমি স্বামী হিসেবে কখনই হতে দিব না।
– ওকে! বুঝে গেছি আমি।
– আলহামদুলিল্লাহ।
– হুম।
– আল্লাহ যদি সামর্থ্য দেয় তাহলে আমিই নিয়ে যাব। আর যা কিছু আল্লাহর খুশির জন্য সেক্রিফাইস করবা আল্লাহ তার উত্তম প্রতিদান দেবেন।
– নীরা কথা শুনে চুপ হয়ে গেল। পরে মুখে মুচকি হাসি ঈশামের দৃষ্টিগোচর হল।
.
নীরার আজ খুব মন খারাপ। কেন তা নীরা নিজেও জানে না। মন খারাপ হলে, বেশি খুশি হলে নীরা গান শুনে। নীরার ফোনে প্রায় হাজার খানেকের মত গান আছে। বাংলা, হিন্দি, ইংলিশ, স্প্যানিশ, কোরিয়ান, চাইনিজ আরও বিভিন্ন দেশের গান। মন চাইলেই প্লে করে শুনে নীরা।
আজ নীরার যেন কেমন লাগছে। তাই গান শোনার জন্য মোবাইলের প্লেলিস্টে গেল।
বারবার ঢুকছে, আবার বের হচ্ছে। কিছুক্ষন পর নীরা বুঝতে পারল তার ফোনের সব গান ডিলেট!!!
নীরা যেন আকাশ থেকে পরল। তার এত সাধের গান। বেছে বেছে সে গান গুলা ডাউনলোড করে ফোনে রেখেছে, আর সেগুলা ডিলেট?
নীরার মাথাই যেন কাজ করছিল না। মন খারাপ ছিল এখন মেজাজ বিগড়ে গেছে। রাগে নীরা কাঁচুমাচু করছে।
সন্ধায় ঈশাম বাসায় ফিরল। ফ্রেস হয়ে মাগরিবের নামাজ পরে, খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় রেস্ট নিতে আসল।
– আপনি আমার ফোনের গান গুলো ডিলেট করেছেন?
– হুম।
– নীরা তেলেবেগুনে জলে উঠল। কেন আমার পারমিশন ছাড়া ডিলেট করলেন?
– একটু ভুল হয়ে গেছে। জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল। সরি!
– সরি!! আপনি জানেন না আমি গান কতটা পছন্দ করি। আপনি কোন সাহসে সব গুলো গান ডিলেট করেছেন। বলুন?
– আই এম এক্সট্রিমলি সরি।
– আপনি কি মনে করেন! সবাই একবারে চেঞ্জ হয়ে যাবে, একলাফে সব কিছু ছেড়ে দিতে পারবে!
– না।
– তা আপনি একবারে কেন ডিলেট করলেন? আপনিও তো আগে গান শুনতেন? শুনতেন না?
– মাথা নিচু করে। হুম।
– আপনি কি পেরেছিলেন একলাফে সব ছাড়তে?
– না।
– তো আমি কিভাবে পারব? যেখানে আপনিই ধীরে ধীরে চেঞ্জ হয়েছেন। আপনি নিজেই তো একবারে নিজের ফোনের গান একসাথে ডিলেট করেন নি। তো আমার করেছেন কেন?
– আমার ভুল হয়ে গেছে। একটু আস্তে কথা বল মা বাবা শুনবে।
– শুনলে শুনুক।
– বললাম তো ভুল হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারি নি।
নীরা রাগে গজগজ করছে। রাগ এমন পর্যায়ে চলে গেল যে নীরার হাতে থাকা বাবার দেওয়া আই ফোনটা মেঝেতে এক ঢিলা দিল।
মুহূর্তের মধ্যে ফোনটা ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে গেল।
ঈশামের মা বাবা পাশের রুম থেকে সবই শুনছিল। ফোনটা ভাঙার সাথে সাথে সব কিছু নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
.
ঈশাম ফোনের টুকরা গুলো মেঝে থেকে কুড়াতে লাগল। সব একসাথে জোড়ো করে নীরার কাছে আসল।
– এত দামি একটা সেট এভাবে ফেলে দিলে?
– দিলাম তো কি হইছে?
– এটা অপচয়।
– একটা ভেঙেছি আরেকটা কিনব। কোনো সমস্যা?
– গান বাজনা হারাম।
ইবনু আব্বাস ( রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা মদ, জুয়া, ও সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন। ( মিশকাত – ৪৩০৪)।
আসলে একসাথে সবাই সব কিছু ত্যাগ করতে পারে না। আমার বিষয় টা মাথায় আসে নি। তাই আমি তোমার পারমিশন ছাড়াই গান গুলো ডিলেট করেছি। আসলে তোমাকে আগে বুঝানো উচিত ছিল।
– নীরা কোনো কথা বলে না।
সবাই চুপ।
.
ঈশাম তার কাছে কত টাকা জমানো ছিল তা দেখতে থাকল। তিন হাজার টাকা এই মাসে আছে। একটা ভাল ফোন কিনতে তো আরও লাগবে। নীরাকে বুঝাই যে টাকা কালেক্ট হলেই ফোন কিনে দিবে।
– নীরা আমি তোমাকে ফোন কিনে দিব। কিন্তু এই মাসে হচ্ছে না। তুমি একটু ওয়েট করতে পারবে কিছুদিন?
– আপনাকে ফোন কিনতে কে বলেছে?
– তোমাকে আই ফোন কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। কিন্তু মোটামুটি ভাল একটা ফোন কিনে দিব। তুমি একটু ওয়েট কর।
– আপনাকে কিনে দিতে হবে না।
– তোমার ফোনের প্রয়োজন আছে।
– আমি আমার বাবাকে বললেই এখনি ফোন কিনে পাঠিয়ে দিবে। আমি আমার বাবাকে বলব।
– না! তোমার বাবাকে বলতে পারবে না।
– কেন?
– আমি তোমার স্বামী। আমার সামর্থ্য যেটা হবে সেটাই আমি তোমাকে দিব। কারন তোমার ভরন পোষনের দায়িত্ব আমার। আর আমার আত্ন মর্যাদা একটু বেশি। এটা গুন না দোষ জানি না। আমি তোমাকে কিনে দিব ইংশা আল্লাহ। কিন্তু আমার শশুড় কে বলতে পারবা না।
– কেন বলতে পারব না? আমার আই ফোন লাগবে। পারবেন না তো দিতে। আমি আমার বাবাকে বলব। অবশ্যই বলব।
এই বলে নীরা ঈশামের ফোনটা হাতে নিয়ে নীরার বাবার নাম্বার ডায়েল করতে লাগল।
ঈশাম নীরার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিতে যাবে কিন্তু নীরা ফোনটা আকড়ে ধরে ছিল। ঈশাম অনেক চেষ্টা করল ছাড়াতে কিন্ত পারছিল না।
কাড়াকাড়ির এক পর্যায়ে নীরা বলল,
– ছাড়েন বলছি ফোন!!!!
ঈশাম নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে না পেরে নীরার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল।
.
নীরার এক হাতে ফোন আর এক হাত দিয়ে গাল ধরে ঈশামের দিকে তাকাল…..
.
( চলবে ইন শা আল্লাহ)