গল্প : তোমায় নিয়ে
পর্ব: (১৩+১৪)
.
ঈশাম নীরাকে থাপ্পড় মেরে বেআক্কেল সেজে গেল। ওদিকে নীরা গালে হাত দিয়ে ঈশামের দিকে তাকিয়েই রইল। কেউ বুঝল না আসলে হল টা কি।
পরেক্ষনেই নীরা ফোনটা বিছানার উপর ঢিলা মেরে বিছায় ধপাস করে কাথা মুরি দিয়ে শুয়ে পরল।
ঈশাম নীরাকে ডাকল…
– নী…… কিন্তু ঈশামও অনেক রাগ করে বাসার ছাদের উপর চলে গেল।
.
ঈশামের বাবা মা দুইজনই সব কিছুই শুনেছে। ঈশামের বাবা মাকে বলল,
– কাল সকালে ঈশামকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও। ওর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
– আচ্ছা।
রাতে নীরা ঈশাম কেউ ভাত খায় নি। নীরাকে ভাত খেতে ডাকতে গিয়ে ঈশামের মা দেখে নীরা কান্না করে চোখ ফুলিয়ে তুলেছে। গালে ৩ অাঙগুলের দাগ।
– মা! অাসো ভাত খাও।
– না মা! আমার খুধা নেই। আপনারাই খেয়ে নিন।
– অনেকক্ষণ জোর করার পরও নীরা খেতে আসল না।
দুজনই সারা রাত অভুক্ত থেকে গেল। ঈশাম অনেক সময় পর ছাদ থেকে রুমে ঢুকল। দেখল নীরা ওই কাথা মুরি দিয়ে শুয়েই আছে। ঈশাম অনেক বার ডাকার জন্য কাছে গেল কিন্তু তখনি আবার রাগ করে আর ডাকে না । দুইজনই এপিঠ ওপিঠ করে শুয়ে আছে।
.
সকালে…….
– ঈশাম তোর বাবা তোকে ডাকছে?
– ঈশাম ঘাবড়ে গেল। কারন তার বাবা যখনই তাকে মাকে দ্বারা ডেকে পাঠায় তখনি সিরিয়াস কিছু বলে। ছোট বেলায় একবার এক বন্ধুকে ঠেলা মেরে পানির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। পরে বাবা শুনতে পেরে মাকে দ্বারা খবর পাঠিয়েছিলেন যে, তোর বাবা তোকে ডাকছে।
ওরে আল্লাহ! যাওয়ার সাথে সাথে বাঁশের কইঞ্চা দিয়ে এমন মারা মারছে আজও তার মনে আছে। ঈশাম সেই লেভেলের ভয় পাইছে। জিজ্ঞাসা করল কেন মা?
– জানি না। তুই গিয়ে শোন।
এই মানুষটা অনেক সরল আবার অনেক কঠিন। ঈশাম বাবার কাছে গিয়ে বলে উঠল,
– বা……… ( ঈশামের বাবা কামাল সাহেব পিছন থেকে ফিরে ঠাসসসসসস করে একটা চড় বসিয়ে দিল)।
ঈশামেরও সেইম অবস্থা। হাত দিয়ে গাল সাথে সাথে ধরল। ঈশামের আন্দাজটা ঠিকই কিন্তু এরকম হবে প্রস্তুত ছিল না।
কামাল সাহেব বললেন,
– হাত সরা গাল থেকে!
– ঈশাম হাত সরিয়ে ফেলল।
– এক, দুই, তিন, চার। চারটা অাঙগুলের ছাপ উঠেছে। আরেকটা কম। বসাই দিব আরেকটা?
– ঈশাম মাথা নিচু করে রইল।
– তোরে মেরে তক্তা বানিয়ে দেওয়া উচিত! তুই আমার ছেলে? ভাবতেও লজ্জা লাগে! আমার ছেলে নাকি সে! কিরে তোর বাবার কাছ থেকে শিখেছিস? তোর বাবা কি এরকম ছিল? কোনো দিন কি দেখেছিস তোর মায়ের গায়ে হাত দিয়েছি? এই শিখেছিস? তুই আমার ছেলে হয়ে এই অাদর্শে মানুষ হলি? এত কষ্ট করে গড়ে তুললাম আমার ছেলেকে?
কামাল সাহেবের চোখ লাল হয়ে গেছে।
শুন! তোর বাবা যে কাজ আজ পর্যন্ত তোর মায়ের সাথে করে নি কাল তুই তোর বউ এর সাথে করেছিস। কাজটা ভাল করিস নি। কুরঅান হাদিস তুই তো অনেক জানিস। এই তোর আমল? আর তুই নিজেকে দ্বীনদার দাবি করিস? নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারিস না, বউ এর সাথে কিভাবে আচরন করতে হয় তা জানিস না, আবার কিভাবে নিজেকে দ্বীনদার ভাবিস? বল?
.
– বাবা আমি বুঝতে পারি নি । আমি ক্ষমা চাচ্ছি।
– না বুঝে কাজ করা কি বোকামী নয়?
কামাল সাহেব বসে পরলেন।
– বাবা আসলে আমার অনেক রাগ উঠেছিল তাই আর…
– হযরত মুহাম্মাদ ( সা) রাগ করতে নিষেধ করেছেন। এই হাদিসটা পড়িস নি?
” তুমি রাগ করো না”।
– জি বাবা।
– তাহলে?রাগের মাথায় এমন কিছু বলবি না বা এমন কিছু করবি না যাতে পরে পস্তাতে হয়।
– জি বাবা। ইংশা আল্লাহ আর হবে না।
– হুম। আমি তোকে জিজ্ঞাসা করব না কি হয়েছে, কেন হয়েছে, শুধু বাবা হিসেবে ছেলেকে কিছু নসিহত করতে চাই। বস এখানে। ঈশাম বাবার সামনে বিছানায় বসে পরল।
কামাল সাহেব বলতে থাকলেন,
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- পূর্ণ ঈমানদার ব্যক্তি সেই যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। ( তিরমিজি- ১১৬২)।
ঈশাম স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে না পারলে পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবি?
– না।
– সারা দুনিয়ার মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করে এসে বাসায় এসে বউ এর সাথে রাগ দেখালে, তার সাথে ভাল ভাবে কথা না বললে, মারধর করলে কি আল্লাহ খুশি হবেন?
– না।
– হুম। শুন ঈশাম। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মন মালিন্য হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এই সুযোগ টা শয়তানকে দিবি না। কারন এই সুযোগে শয়তান নানা রকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। আর স্বামী স্ত্রীর মাঝে ফাটল ধরাতে খুব সহজ হয়। অনেক জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। নারীরা সাধারণত লাজুক স্বভাবের। অল্পতে রেগে যায়, অভিমান করে, ক্ষুব্ধ হয়। এগুলা নারীর চরিত্র। মেয়েদের এই স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য সম্পকে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
” তোমরা স্ত্রীদের সাথে খুব ভালভাবে ব্যবহার ও বসবাস কর। তোমরা যদি তাদের অপছন্দ কর তাহলে এ হতে পারে যে, তোমরা একটা জিনিসকে অপছন্দ করছ, অথচ আল্লাহ, তার মধ্যে বিপুল কল্যান নিহিত রেখেছেন। ” ( সুরা আন নিসা- ১৯)।
এ আয়াতে স্বামীদের হেদায়েত দেওয়া হয়েছে। স্বামীদের প্রতি আল্লাহর প্রথমত নির্দেশ হচ্ছে, তোমরা যাকে বিয়ে করে ঘরে আনলে, যাকে নিয়ে ঘর বাধলে, তার প্রতি সব সময়ই খুব ভাল ব্যবহার করবে। তাদের অধিকার পুরোপুরি আদায় করবে।
আর প্রথমেই যদি এমন কিছু দেখতে পাও যার কারনে তোমার স্ত্রী তোমার কাছে অপছন্দনীয় এবং যার কারনে তার প্রতি তোমার মনে ভালবাসা জাগার বদলে ঘৃণা জেগে উঠে তখনি তুমি তার প্রতি খারাপ আচরন করতে শুরু কর না। বুদ্ধি পরিস্থিতিকে আয়ত্তে আনার চেষ্টা করবে।
তোমাকে বুঝতে হবে কোনো বিশেষ কারনে যদি তোমার স্ত্রীর প্রতি ঘৃণা জাগে, তবে এখানেই চূড়ান্ত নৈরাশ্যের ও চির বিচ্ছেদের কারন হয়ে গেল না।
কেননা হতে পারে, প্রথমবারে তুমি হঠাত এক অপরিচিতা মেয়েকে তোমার সমগ্র মন দিয়ে তুমি গ্রহণ করতে পার নি। তার ফলেই ঘৃনার সৃষ্টি হয়েছে কিংবা তুমি হয়ত একটি দিক দিয়েই তাকে বিচার করছ এবং সেদিক দিয়ে তাকে মন মত না পেয়ে হতাশ হয়ে পরছ।
অথচ তোমার বুঝা উচিত, সেই বিশেষ দিক ছাড়াও আরও সহস্র দিক এমন থাকতে পারে, যার জন্য তোমার মনে ঘৃনার এ ঘনঘটা দূর হয়ে যাবে। এবং তুমি তোমার অন্তর দিয়ে তাকে আপন করে নিতে পারবে। সেই সাথে এও বোঝা উচিত যে, কোন নারীই সমগ্র ভাবে ঘৃণার পাত্রী হয় না। যার একটি দিক ঘৃণা যোগ্য, তার এমন আরও হাজার গুন থাকতে পারে, যা এখনও তোমার সামনে উদঘাটিত হতে পারে নি।
তার বিকাশ লাভের জন্য যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন। এবং সে সময় তাকে দেওয়া তোমার একান্তই কর্তব্য। এ কারনেই নবী কারীম ( সা) বলেছেন-
” কোন মুসলিম পুরুষ যেন কোনো মুসলিম নারীকে তার কোনো একটি অভ্যাসের কারনে ঘৃনা না করে। কেননা একটি অপছন্দ হলে অন্য আরো অভ্যাস দেখে সে তুষ্টও হয়ে যেতে পারে। “
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- আমার কাছ থেকে মেয়েদের সাথে সদ্ব্যবহার করার শিক্ষা গ্রহণ কর। কেননা নারী জাতিকে পাজরের বাকা হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। পাজরের হাড় গুলোর মধ্যে ওপরের হাড়টা সর্বাপেক্ষা বাকা। অতএব তুমি যদি সোজা করতে চাও, তবে ভেঙে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি ফেলে রাখ তবে বাকা হতেই থাকবে। অতএব নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর। ( বুখারি- ৩০৮৪)।
.
মহিলাদের সৃষ্টিই করা হয়েছে পাজরের হাড় থেকে।
” মেয়েলোকদের হাড় থেকে সৃষ্টি ” করার অর্থ কি?
বদরূদ্দীন আইনী লিখেছেন,
” পাজর থেকে সৃষ্টি ” কথাটা বক্রতা বোঝাবার জন্য রূপক অর্থে বলা হয়েছে। তার অর্থ হচ্ছে যে, মেয়েদের এমন এক ধরনের স্বভাব দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে যে, সে সৃষ্টির মধ্যেই রয়েছে বাকা হওয়া অর্থ্যাত মেয়েদের এক বাকা মূল থেকে থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতএব তাদের দ্বারা কোনোরূপ উপকারিতা লাভ করা সম্ভব কেবল তখনি, যদি তাদের মেজাজ স্বভাবের প্রতি পূর্ণরূপে সহানুভূতি সহকারে লক্ষ্য রেখে কাজ করা হয় এবং তাদের বাকা স্বভাবের কারনে কখনও ধৈর্য্য হারানো না হয়।
.
হযরত আবূ হুরায়রা ( রা) থেকে বর্ণিত, এক হাদিসে বলা হয়েছে,
” মেয়েলোক পাজরের হাড়ের মত। তাকে সোজা করতে গেলে চূর্ণ করে ফেলবে, আর তাকে ব্যবহার করতে প্রস্তুত হলে তা স্বাভাবিক বক্রতা রেখেই ব্যবহার করবে। “
.
এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, নারীদের স্বভাব জন্মগত বক্র। এ বক্রতা সম্পূর্ণ রূপে দূর করা অসম্ভব। তবে তাদের আসল প্রকৃতি কে বজায় রেখেই এবং তাদের স্বভাব কে যথাযথ ভাবে থাকতে দিয়েই তাদেরকে নিয়ে পারিবারিক জীবন গড়ে তুলতে হবে। তাদের প্রতি ভালবাসা পোষন করা, তাদের সাথে নম্র ব্যবহার করা এবং তাদের মন রক্ষা করতে শেষ সীমা পর্যন্ত যাওয়া।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ক্ষমাশীলতা দাম্পত্য জীবনের মাধুর্য ও স্থায়িত্ব এর জন্য একান্তই উচিত। যে স্বামী স্ত্রী কে ক্ষমা করতে পারে না, কথায় কথায় দোষ ধরাই যে স্বামীর স্বভাব, তার পক্ষে কোন নারীকে স্ত্রী হিসেবে সাথে করে স্থায়ীভাবে জীবন যাপন করা সম্ভব হতে পারে না। স্ত্রী দের সম্পকে সাবধান বানী উচ্চারণ করার সাথে সাথে তাদের প্রতি ক্ষমা সহিষ্ণুতা প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কুরঅান মাজীদে বলা হয়েছে,
” হে ঈনানদারগন! তোমাদের স্ত্রীদের ও সন্তানদের মধ্যে অনেকেই তোমাদের দুশমন। অতএব তাদের সম্পকে সাবধান! তবে তোমরা যদি তাদের ক্ষমা কর, তাদের উপর বেশী চাপ না দাও বা জোর জবরদস্তি না কর, এবং তাদের দোষ ত্রুটিও মাফ কর দাও, তাহলে যেনে রাখ, আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। “
.
নবী কারীম ( সা) বরাবরই তার স্ত্রীদের অনেক বাড়াবাড়িই মাফ করে দিতেন। হযরত উমর ফারুক ( রা) হতে বর্নিত একদিনের ঘটনা হতে:
” হযরত উমর ( রা) একদিন খবর পেলেন, নবী কারীম ( সা) তার বেগমগনকে তাদের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারনে তাকাল দিয়েছেন। তিনি এ খবর শুনে ভয়ে ভয়ে রাসূলুল্লাহ ( সা) এর নিকট উপস্থিত হলেন।
জিজ্ঞাসা করলেন,
– আপনি আপনার বেগমদের তালাক দিয়েছেন?
রাসূলুল্লাহ ( সা) বললেন- না।
পরে রাসুল ( সা) তার সাথে হাসিমুখে কথাবার্তা বলেছেন। ( বুখারী)।
.
– ঈশাম!
– জি বাবা!
– তুই কাল বউমাকে ওইরকম করে মারলি এটা কি শরীয়াত সম্মত?
– না বাবা।
– তাহলে?
– সরি বাবা। ইংশা আল্লাহ আর হবে না।
– নবী কারীম ( সা) তার নিজের ভাষায় স্ত্রী দের মারপিট করতে স্পষ্ট নিষেধ করে বলেছেন-
” তোমরা স্ত্রী কে এমন নির্মম ভাবে মারধোর কর না, যেমন করে তোমরা মেরে থাক তোমাদের ক্রীতদাসীদের। ( আবু দাউদ)।
.
স্ত্রী কে না মেরে, তার ত্রুটিবিচ্যুতি ক্ষমা করে দেওয়া ও তার প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করাই অতি উত্তম নীতি। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( সা) এই নীতি ও চরিত্রেই ভূষিত ছিলেন। হযরত আয়েশা ( রা) বলেন,
” রাসূলে কারীম ( সা) তার কোন স্ত্রীকে কিংবা কোন চাকর বাকরকে কখনও মারধোর করেন নি- না তার নিজের হাত দিয়ে, না আল্লাহর পথে। তবে যদি কেউ আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ করে, তবে সেই আল্লাহর জন্যে তার প্রতিশোধ নিতেন। “( নাসাঈ)।
.
স্ত্রী দের মারধোর করা, গালমন্দ করা, এবং তাদের সাথে কোনো রূপ অন্যায় আচরন করতে নিষেধ করে রাসূলে কারীম ( সা) বলেছেন-
” তোমরা স্ত্রীদের অাদৌ মারধোর করবে না এবং তাদের মুখমণ্ডলকেও কুশ্রী করে দিও না। ( আবু দাউদ)।
অপর এক হাদিসে বলা হয়েছে,
” তোমরা স্ত্রীদের মুখের উপর মারবে না। মুখমণ্ডলের উপর আঘাত করবে না, তাদের মুখের সৌন্দর্য বিনষ্ট করবে না, অকথ্য ভাষায় তাদের গালিগালাজ করবে না, এবং নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য। কোথাও তাদের বিচ্ছিন্নাবস্থায় ফেলে রাখবে না। “
.
– ঈশাম?
– জি বাবা?
– ইসলাম স্ত্রীদের কখন মারতে বলেছে আর কিভাবে তা জানিস না?
– জি বাবা জানি।
– কিন্ত আমি তোকে বলব। কারন বাবা হিসেবে ছেলের কাছে নসিহত।
.
( চলবে ইন শা আল্লাহ)
গল্প : #তোমায়_নিয়ে
পর্ব: ১৪
.
স্ত্রীদের মারধোর করা কি অাদৌ জায়েজ?
ইমামা খাত্তাবী লিখেছেন –
” স্ত্রীদের ‘ মুখের উপর মারবে না’ মুখমণ্ডল ব্যতীত দেহের অন্যান্য অংশের উপর স্ত্রীকে মারধোর করা যাবে। তবে শর্ত এই যে, তা মাত্রায় বেশি ও অমানুষিক মার হতে পারবে না।
.
কিন্তু স্ত্রী কে মারধোর করা কখন ও কি কারনে করা সংগত?
মহান আল্লাহ কুরঅান মাজীদে বলেন,
” আর যেসব স্ত্রী লোকদের বিদ্রোহের ব্যপারে তোমরা ভয় কর, তাদের তোমরা ভালভাবে বুঝাও, নানা উপদেশ দিয়ে তাদের বিনয়ী বানাতে চেষ্টা কর। পরবর্তী পর্যায়ে বিছানা থেকে দূরে সরিয়ে রাখ। আর ( শেষ উপায় হিসেবে) তাদের প্রহার কর। এর ফলে যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যায়, তাহলে তাদের উপর অন্যায় ব্যবহারের নতুন কোনো পথ খোজ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বোচচ, সর্বশ্রেষ্ঠ।”
.
এ আয়াতে দুনিয়ার মুসলিম স্বামীদের সম্বোধন করে কথা বলা হয়েছে। ” ভয় করা” মানে জানতে পারা অথবা নি: সন্দেহে বুঝতে পারা যে, স্ত্রী স্বামীকে মানছে না, অথচ স্বামী কে মেনে চলাই স্ত্রীর কর্তব্য। এ অবস্থায় স্বামী কি করবে, তাই বলা হয়েছে এই আয়াতে।
.
প্রথমত, বলা হয়েছে স্ত্রীকে ভালভাবে বুঝাতে, উপদেশ দিতে ও নসিহত করতে, একথা তাকে জানিয়ে দিতে হবে যে, স্বামীকে মেনে চলা, স্বামীর সাথে ভাল সম্পক গড়ে তোলা ও তা বজায় রাখার জন্য আল্লাহ তা’য়ালাই নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ তাকে অবশ্যই পালন করতে হবে। অন্যথায়, তার ইহকালীন দাম্পত্য জীবন ও পারিবারিক জীবন বিষাক্ত হয়ে যাবে, আর পরকালেও তাকে আল্লাহর আযাব ভোগ করতে হবে।
.
দ্বিতীয়ত, বলা হয়েছে যে, অমান্যকারী স্ত্রীকে বিছানা থেকে সরিয়ে রাখা, তার সাথে যৌন সম্পক বিচ্ছিন্ন করা। অন্যকথায় তাকে না শয্যা সঙগি বানাবে, না তার সাথে যৌন সম্পক বজায় রাখবে।
.
তৃতীয়ত, বলা হয়েছে তাকে মারধোর করতে। কিন্ত এ মারধোর সম্পরকে এ কথা স্পষ্ট যে, তা অবশ্যই শিক্ষামূলক হতে হবে। ক্রীতদাস ও জন্তু জানোয়ারকে যেমন মারা হয়, সে রকম মার দেওয়ার অধিকার কারও নেই।
.
– ঈশাম? তুমি কি তাকে বুঝিয়েছ আগে?
– না বাবা।
– প্রথমেই তুমি তাকে বুঝাও নি, দ্বিতীয়ত তাকে দূরেও সরে রাখ নি। কিন্তু তৃতীয় পদক্ষেপ কেন গ্রহন করলে? তুমি কি আল্লাহর কুরঅানের আয়াত কে অবজ্ঞা করলে না?
– ঈশাম চুপ।
– মানুষ এখন উল্টো কাজ করে। আগে ধুমাধুম মার দেয় যে মার শরীয়াত সম্মত নয়, পরে আলাদা থাকে, শেষে গিয়ে বুঝাতে থাকে। কি অদ্ভুত?! আল্লাহর দেওয়া নিয়মটাকেই উল্টা বানিয়ে ফেলেছে।
.
স্ত্রীদের প্রতি ব্যবহার সম্পকে একথা বলে দুনিয়ার স্বামীদের বিশেষভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, যেন তারা নারীর প্রতি কোনো রকম দুর্ব্যবহার ও অন্যায় অত্যাচার করতে সাহসী না হয়।
অত:পর বলা হয়েছে, স্ত্রী যদি স্বামী কে মেনে নেয়, স্বামীর সাথে মিলেমিশে বসবাস করতে রাজি হয় এবং তাই করে, তাহলে স্বামীর কোন অধিকার নেই তার উপর কোনরূপ অত্যাচার করার, আয়াতের শেষাংশে কোন উপযুক্ত কারন ব্যতীত স্ত্রীকে কষ্ট দেওয়া যে কতদূর অন্যায় তার দিকে ইংগিত করে বলা হয়েছে, তারা যদিও অবলা, দুর্বল, তোমাদের যুলুম – পীড়ন থেকে আত্নরক্ষা করার সাধ্য যদিও তাদের নেই, তোমাদের অত্যাচারের প্রতিশোধ গ্রহন করতে তারা যদিও অক্ষম ; কিন্ত তোমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, আল্লাহ হচ্ছেন প্রবল পরাক্রান্ত, তিনি অবশ্যই প্রত্যেক যালিমের যুলুমের প্রতিশোধ গ্রহন করবেন, এবং সেজন্য কঠোর শাস্তিদান করবেন। সুতরাং তোমরা শক্তিবান বলে স্ত্রীদের উপর অন্যায়ভাবে যুলুম করতে উদ্যত হবে, তা কিছুতেই হতে দেওয়া যায় না।
স্ত্রীদের উপর অন্যায় ভাবে, অকারনে ও উঠতে বসতে আর কথায় কথায় কোনরূপ দুর্ব্যবহার বা মারধোর করতে শুধু নিষেধ করেই ক্ষান্ত করা হয় নি, ইসলাম আরও অগ্রসর হয়ে স্ত্রীদের প্রতি সক্রিয়ভাবে উত্তম আচরনের নির্দেশ দিয়েছে স্বামীদের। কুরঅানে আছে,
” স্ত্রীদের সাথে যথাযথভাবে খুব ভাল ব্যবহার করবে। “
.
আল্লামা আলুসী লিখেছেন,
” তাদের সাথে ভালভাবে ব্যবহার কর। আর ‘ ভালভাবে ‘ মানে এমন ভাবে যা শরীয়াত ও মানবিকতার দৃষ্টিতে অন্যায় নয়। ( রুহুলমায়ান)।
” স্ত্রীকে মারধোর করবে না, তার সাথে খারাপ কথাবার্তা বলবে না এবং তাদের সাথে সদা হাসিমুখে ও সন্তুষ্টচিত্তে সম্পক রক্ষা করে চলবে। “
একটি হাদিসে রয়েছে,
” রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল লোক সে যে তার পরিবার ও স্ত্রী পরিজনের জন্য ভাল। আর আমি আমার নিজের পরিবারবর্গের পক্ষে তোমাদের তুলনায় ভাল। তোমাদের সঙগি – স্ত্রী বা স্বামী যদি মারা যায়, তাহলে তার কল্যানের জন্যে তোমরা অবশ্যই দোয়া করবে।
.
একদিনের ঘটনা, একদা নবী কারীম ( সা) সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেন –
‘ তোমরা আল্লাহর দাসীদের মারধোর কর না।’
তখম হযরত উমর ফারুক ( রা) রাসূলের কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন:
‘ আপনার এ কথা শুনে স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের উপর খুবই বাড়াবাড়ি শুরু করে দিয়েছে। ‘
তখন নবী কারীম ( সা) তাদের মারবার অনুমতি দিলেন।
একথা জানতে পেরে বহু সংখ্যক মহিলা রাসূলের ঘরে এসে উপস্থিত হল এবং তারা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে নানা প্রকার অভিযোগ পেশ করল। সব কথা শুনে নবী কারীম ( সা) বললেন-
” বহু সংখ্যক মহিলা মুহাম্মাদের পরিবারবর্গ এর নিকট এসে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে গেছে। মনে হচ্ছে, এসব স্বামী তোমাদের মধ্যে ভাল লোক নয়।”
.
– ঈশাম আশা করি তোমার স্ত্রী যদিও কখন তোমার বাধ্য না হয় তুমি তোমার ভাল ব্যবহার দিয়েই মুগ্ধ করে দিবে, এবং প্রথম স্টেপেই তুমি সাকসেসফুল হবে ইংশা আল্লাহ। আমি তোমার উপর আশাবাদী। কারন তুমি আমার ছেলে, যেভাবে মানুষ করেছি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তারই যেন উত্তম প্রতিফলন দান করেন। আর একটা কথা তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে ঠিক সেভাবেই আচরন করবে ঠিক যেমন তুমি তোমার মেয়ের সাথে যেমন আচরনটি চাও। আল্লাহ যদি তোমাকে কন্যা সন্তান দান করেন তাহলে তুমি যেকরম চাইবে তার সাথে তার স্বামী ব্যবহার করুক ঠিক তেমনি তুমি এখন থেকেই তোমার স্ত্রীর সাথে ব্যবহার কর।
রাসূলুল্লাহ ( সা) বিদায় হজ্জের ভাষনে বলেন, পুরুষের কাছে নারীদের কিছু অধিকার আছে,
১) তোমরা নারীদের ভরন পোষন প্রদানে উত্তম উপায় অবলম্বন করবে।
২) তোমরা নারীদের যাবতীয় জামা কাপড় দেয়ার ব্যপারে উত্তম আচরন করবে।
৩) তোমরা নারীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার কর, কারন তারা তোমাদের কাছে বন্দী। ( তিরমিজি- ১১৬৩)।
রাসূলুল্লাহ ( সা) আরও বলেছেন, তুমি যখন খাবে তাকেও খাওয়াবে, এবং তুমি যখন পরবে তাকেও পরাবে, চেহারায় কখনও প্রহার করবে না, অসদাচরণ করবে না। ( আবু দাঊদ- ২১৪২)।
.
ভাল ব্যবহার, ভাল ব্যবহার, ভাল ব্যবহার!!!!!
এই জিনিস ছাড়া নারীদের থেকে কোনো কিছু আদায় করতে পারবে না। তুমি যত বীরপুরুষই হও না কেন। বুঝেছ ঈশাম?
– ঈশাম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করল।
– যাও বউমার কাছে। কাল থেকে না খেয়ে আছে। তোমার মা খাওয়াতে পারে নি। অনেক অভিমান করে আছে। মান অভিমানও ভাঙাতে পার না! নালায়েক কোথাকার!! এগুলাও কি মা বাবা শিখে দিবে???
– ঈশাম মাথা নিচু করে মুচকি মুচকি হাসতেছে।
– লজ্জাও করে না বাবার সামনে এসব কথায় হাসে! আরেকটা কানের নিচে দিব?
– না না বাবা! আর লাগবে না।
– তা আমার সামনে থেকে সর! যা ভাগ!!!
ঈশাম হাসতে হাসতে রান্না রুমে চলে গেল।
– মা এক প্লেটে ভাত দাও।
– ভাত বেড়ে রেখেছি। এই না। দুই প্লেট দিই তুইও খা?
– এক প্লেটই হবে। একসাথে খাব।
– আচ্ছা।
ঈশামের মা সেই প্লেটে আরো ভাত বেশি দিয়ে দিল।
– এই নে যা তাড়াতাড়ি খাওয়া, আর নিজেও খা।
– আচ্ছা মা।
ঈশাম খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে গেল।
.- নীরু!
– উত্তর নেই।
– এই নীরু!
– উত্তর নেই।
– উঠ না। কাল থেকে খাও নি। উঠ একসাথে খাই খাবার এনেছি।
– খাব না।
– আমার ঘরে এসে আমার বউ না খেয়ে থাকবে এটা আমি হতে দিতে পারি না। উঠ!
– আপনি খান! পেট ভরে গলা পর্যন্ত কব্জি ঢুবিয়ে খান!
– বউকে ছাড়া কব্জি ডুবিয়ে গলা পর্যন্ত কেমনে খাই?
– উত্তর নেই।
– রাগ করছ সোনা বউ?
– না!
– কালকের জন্য সরি আমি। আর হবে না ইংশা আল্লাহ! আল্লাহ আমায় যতদিন বেচে রাখবেন আমার দ্বারা আর কখনও এমন ব্যবহার পাবা না। সরি। আমি বুঝতে পারি নি।
-নীরা চুপ।
– খুব ক্ষুধা পেয়েছে, কেমনে আছ তুমি এতক্ষণ না খেয়ে, নিজের কথা না হয় নাই ভাবলা আমার কথাও কি ভাবতে ইচ্ছে করে না? আমিও যে খাই নি।
– আপনি খেয়ে নিন।
– কেমন ঘাড়ত্যাড়া মেয়ে দেখ! সরি তো বললাম!
– ইট’স ওকে!
– তাহলে উঠ!
– নীরা চুপ।
– ঈশাম ভাতের প্লেট টা রেখে হাত ধরে টেনে তুলল নীরা কে।
– টেনে তুললেন কেন!!
– হা কর।
– আপনাকে খাওয়াতে হবে না আমি নিজেই খেতে পারি।
– আমি খাওয়াই দিব। হা কর।
– নীরা হা করল।
ঈশাম অনেক যত্ন করে নীরাকে খাওয়াই দিল। ঈশামের চোখের কোনে মুক্তার দানা চক চক করছে। মনে হচ্ছে পুতুল খেলছে ঈশাম। পুতুলকে খাওয়াচ্ছে। কেন জানি নীরাকে খুব ভালবেসে ফেলেছে ঈশাম!
– আপনি মেয়ে মানুষের মত কাঁদছেন কেন?
– কই!
– আমি কি কিছুই দেখতে পারি না?
– আরেহ না। আই এম সরি কালকের জন্য।
– বললাম তো ইট’স ওকে।
– আসলে তোমার বাবা তোমাকে আমার কাছে সারাজীবনের জন্য তুলে দিয়েছেন। তারই রাজকন্যার সাথে এমন ব্যবহার! আর হবে না ইংশা আল্লাহ।
– আমারও ভুল হয়ে গেছে। আমিও সরি।
– আরেহ না। কি যে বল। কিন্তু তুমি তোমার বাবাকে বলতে পারবে না। এটা কিন্তু ফাইনাল! আমি কিন্তু…..
– নীরা হাসতে হাসতে বলল: আচ্ছা আচ্ছা বলব না।
ঈশাম আর নীরা দুইজনই খেয়ে নিল।
.
.
নীরার মাথার চুলে কতদিন ধরে তেল দেওয়া নেই। নীরার শাশুড়ি বলছে,
– এই যুগের মেয়েদের যে কি হয়েছে! মাথায় তেল দিতে চায় না। নীরা! আস তেল দিয়ে দিই মাথায়।
– নীরা চোর পালানোরর মত করে বলল: না না! লাগবে না। এমনি ভাল। আমি তেল দিব না। চুল গুলো চুপসে যাবে।
– কিসের চুপসে যাবে। মাথা ঠান্ডা থাকবে।
– আম্মু অনেক তেল দিয়ে দিত! মুখ বেয়ে বেয়ে পরত। লাগবে না মা!
– নীরার শাশুড়ি নীরাকে জোর করে ধরে মাথায় তেল দিতে বসল।
.
( চলবে ইনশাআল্লাহ্)
গল্প : তোমায় নিয়ে
পর্ব: (১৫+১৬)
.
নীরার শাশুড়ি নীরার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে আর তাতে তেল দিয়ে দিতে লাগল।
– নীরা তুমি কি জান নেককার মহিলা কারা?
– কারা মা?
– হযরত আবু উমামা ( রা) হতে বর্নিত, নবী কারীম ( সা) বলেছেন, আল্লাহ ভীতির ন্যয় নিয়ামত অর্জনের পর মুমিন বান্দার জন্য নেক স্ত্রী ব্যতীত আর কোনো উত্তম জিনিস হতে পারে না। স্বামী কোন কিছু বললে তা সে শোনে। স্বামী তার দিকে তাকালে তাকে তুষ্ট করে । স্বামী তাকে কোনো বিষয়ে কসম দিলে সে তা পূর্ণ করে। স্বামী বাইরে কোথাও গেলে তার জান মালের নিরাপত্তার জন্য কল্যান কামনা করে। ( মিশকাত – ২৬৮)।
এই হাদিসে আল্লাহভীতি নামক নিয়ামতের পর পুরুষদের জন্য নেককার মহিলাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কোন পুরুষের ভাগ্যে নেককার মহিলা জীবনসংগিনী হয়ে গেলে তার মত ভাগ্যবান আর কে আছে?
প্রথমত, স্বামী তাকে দেখা মাত্রই খুশি হয়। এ ধরনের স্ত্রী কে স্বামী দেখলে খুশি না হয়ে পারে না। হাস্যেজ্জল চেহারা নিয়ে স্বামীর সম্মুখে নিজেকে হাজির করবে। গোমরা মুখে স্বামীর কাছে আসা উচিত নয়। স্বামী ঘরে প্রবেশ করা মাত্রই মুখ ভার করে ঘ্যানর ঘ্যানর করা অনুচিত। স্বামীর সামনে কোনো দু:খ কষ্ট প্রকাশ করে স্বামী কে চিন্তা যুক্ত করাও ঠিক না। অপরিষ্কার হয়ে স্বামীর কাছে যাবে না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে সেজেগুজে স্বামীর সামনে যাবে। অপরিষ্কার অগোছালো হয়ে থাকলে স্বামী বাইরের অন্য কোনো সুন্দরী নারীর প্রতি অনিচ্ছাকৃত ভাবে তাকালে তার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হতে পারে। অন্য কোথাও গেলে নারীরা নিজেকে অনেক অাকর্ষনীয় করে বের হয়, যে সৌন্দর্য বাইরের পুরুষদের দেখানো জায়েজ নয়।
হ্যা! বিয়ের পর স্বামী কে দেখানো জায়েজ। পর পুরুষদের জন্য তা হারাম। এক হাদিসে তো এদেরকে ব্যভিচারিণী বলা হয়েছে। সে অন্ততপক্ষে চোখ ও অন্তর দ্বারা মানুষকে ব্যভিচারের প্রতি ডাকে মানুষকে নিজের প্রতি অাকৃষ্ট করে।
স্ত্রী হিসেবে অবশ্যই অঙ্গ সজ্জার মাধ্যমে স্বামী কে খুশি করতে হবে।
.
দ্বিতীয়ত, কসম পূর্ণ করার অর্থ হল, স্বামী – স্ত্রীর প্রতি বিশাস রেখে কসম করল, যেমন স্বামী বলল- শপথ করছি, এটা তুমি অবশ্যই করবে, তাহলে স্বামীর মন খুশি করার জন্য তা পূর্ন করা অবশ্য কর্তব্য।
.
তৃতীয়ত, স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার জান মালের নিরাপত্তার উদ্দেশ্য হচ্ছে , স্ত্রী যেন যেখানে সেখানে স্বাধীন ভাবে বিচরন না করে। অন্য কারও সাথে যেন সখ্যতা সৃষ্টি না করে। কোন কোন মহিলা কে দেখা যায়, স্বামীর অনুপস্থিতির। সুযোগ পেয়ে বেপর্দায় চলা ফেরা করে। অপরিচিত পুরুষের সাথে কথাবার্তা বলতে লজ্জা বোধ করে না।
ধন সম্পদ ইত্যাদি কল্যান কামনা মর্ম হল, প্রয়োজন ছাড়া টাকা পয়সা খরচ না করা, জিনিসপত্র যত্ন সহকারে রাখা। অনুরূপ স্বামীর বর্তমানে যাদের কিছু দেয়া সম্ভব হয় না, স্বামীর অবর্তমানেও তা কাউকে দেয় না।
.
জান্নাতি মহিলাদের পরিচয় জান? হযরত আনাস ( রা) হতে বর্নিত, নবি কারীম ( সা) বলেছেন-
আমি কি তোমাদের বেহেশতি মহিলা সম্পকে বলে দিব না?
সাহাবিগন বললেন, বলুন, হে আল্লাহর রাসূল ( সা)!
বেহেশতি মহিলার পরিচয় দিতে গিয়ে নবীজি ( সা) বলেন, স্বামীর প্রতি প্রেমাস্পদ অধিক সন্তান জন্মদাত্রী।
যখন সে রাগান্বিত হয় বা তাকে গালমন্দ করলে বা তার স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট হলে সে মহিলা স্বামী কে সন্তুষ্ট করতে বলে, আমার হাত আপনার হাতের উপর। আমার প্রতি খুশি না হওয়া পর্যন্ত আমি বিছানায় যাব না। ( তারগিব ৩/৩৭)।
স্বামীর সামন্য অসন্তুষ্টি স্ত্রী কে অস্থির করে তুলে। মন তার ছটফট আরম্ভ করে। স্বামী কে অসন্তুষ্ট রেখে ক্ষনিকের জন্যও সরে না। স্বামীর প্রতি ভালবাসা থাকলে স্ত্রী অন্য কারও প্রতি অাকৃষ্ট হতে পারে না। এবং গভীর ভালবাসার কারনে স্বামীর পক্ষ থেকে তার জন্য কোনো কষ্ট প্রকাশ পেতে পারে না। ভালবাসা গভীর হলে তিক্ত কথাবার্তা ও মধুময় মনে হবে। প্রকৃত ভালবাসার কারনে প্রেমাস্পদের পক্ষ থেকে যেকোনো কষ্ট মোটেই অনুভূত হয় না।
.
হযরত আনাস ইবনে মালিক ( রা) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন, আল্লাহ পাক যাকে নেক স্ত্রী দান করেছেন তাকে যেন অর্ধেক দ্বীনই দান করা হল। সেজন্য তার উচিত অবশিষ্ট অর্ধেক দ্বীনের ব্যপারে খোদাভিরুতা হাসিল করা।
একজন নেককার স্ত্রীর মর্যাদা দেখেছ?
যে নেককার স্ত্রীকে পেলে তার দ্বীন অর্ধেক পূর্ন হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! কি ইচ্ছে করে না? একজন নেককার স্ত্রী হয়ে দ্বীন দুনিয়া পরকাল হাসিল করতে?
.
জানো কি? ধার্মিক স্ত্রী মহা সম্পদ!
হযরত আবু উমামা ( রা) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন, হে মুয়াজ ( শোন) কৃতজ্ঞ অন্তর, আল্লাহর স্মরনে ব্যস্ত জিহ্বা এবং নেক স্ত্রী তোমাদের দীন দুনিয়ার ব্যপারে সাহায্যকারী। এ গুলো মানুষ যা ধন সম্পদ অর্জন করে তার চেয়ে অতি উত্তম। ( তিরবানী ৪/২৭৬)।
.
যে ধার্মিক স্ত্রী দ্বারা দীন দুনিয়ার সাহায্য হয় সে বড় সম্পদ। এ ধরনের স্ত্রী দ্বারা দুনিয়ার জীবন হয় সুখ শান্তির, পরকালীন কাজে সহায়তা করে পাপ থেকে রক্ষা এবং আল্লাহভীতি অর্জনের জন্যও নানাভাবে সহায়তা করতে পারে। সত হওয়ার কারনে নিজেও পাপ থেকে রক্ষা পায় এবং স্বামী কেও পাপ থেকে রক্ষা করতে পারে। নেক কাজে উতসাহী করে তোলে এতে পরকালীন কল্যান হয়।
এর চেয়ে বড় সম্পদ আর কি হতে পারে?
এ সমস্ত মহিলার বিপরীতে যারা পাপিষ্ঠ তারা তো পাপিষ্ঠই বটে অধিকিন্তু স্বামী কেও পাপের প্রতি অাকৃষ্ট করে।
সেজেগুজে বেপর্দা হয়ে স্বামীর সাথে বাইরে ঘোরাফেরা করে। সিনেমা থিয়েটারে, ক্লাবে যায়, ঘরে টিভি না থাকলে স্বামী কে আনতে বলে। এরাই সন্তানদের দ্বীন বিমুখী ও বে নামাজি বানায়। এভাবে তারা তাদের ঘরকে জাহান্নামের সদৃশ বানায়। এরকম পাপিষ্ঠ সুন্দরী নারীর প্রতি অাকৃষ্ট হয়ে পুরুষরা জাহান্নামকে নিজেদের আবাস্থল করে নিচ্ছে। জাহান্নামে যেতে রাজি কিন্ত এসব নারীর চাহিদা মেটাতেও পুরুষরা রাজি হয়। হায় অাফসোস!
দুনিয়ার মোহে পরে পরকাল বরবাদ করে দিচ্ছে। সাময়িক সুখ লাভ করছে কিন্তু কিয়ামতের দিন যখন আমল নামা দেওয়া হবে তখন রক্তাক্ত অশ্রু বর্ষন করেও পার পাওয়া যাবে না।
.
তুমি কি জান দুনিয়ার মহিলারা হুরেঈন থেকে উত্তম?
হযরত উম্মে সালামা ( রা) রাসূলুল্লাহ ( সা) কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল ( সা)! দুনিয়ার মহিলারা শ্রেষ্ঠ নাকি বেহেশতের হুরেঈগন শ্রেষ্ঠ হবে?
হুজুর ( সা) বলেন, জান্নাতের হুরেঈন থেকে দুনিয়ার মহিলারা শ্রেষ্ঠ। শ্রেষ্ঠত্ব এর দিক দিয়ে তারা এমন যেমন অপ্রকাশ্য জিনিস থেকে প্রকাশ্য জিনিস উত্তম।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এরকম কেন হল?
রাসূলুল্লাহ ( সা) বললেন- নিজের নামাজ, রোযা এবং আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাতের কারনে এরূপ হয়েছে।
উল্লেখিত হাদিসের মর্ম হল, দুনিয়াতে নেককার ও নামাজি স্ত্রী গন হুর থেকেও উত্তম। কারন হুরদের জন্য জান্নাতে নেক আমল নেই। এগুলা করতে হয় দুনিয়াতে। সেজন্য হুরের নামাজ, রোযা, কুরঅার তিলাওয়াত, দান খয়রাত, হাজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ইবাদাতের সাওয়াব এবং যে সমস্ত ইবাদাত আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্য লাভের মাধ্যম হয় সেগুলা থেকে তারা বঞ্চিত। ( তিবরানী)।
.
তুমি কি জান নারীদের জন্য বেহেশতের ৮ টি দরজাই খোলা থাকবে। আর কারা সেই সৌভাগ্যবতী?
হযরত মুহাম্মাদ ( সা) বলেন, যে নারী ৫ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্ব এর সাথে পরবে , রমজানে রোযা রাখবে, লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে, এবং স্বামীর অনুগত্য করবে, তাদের জন্য বেহেশুতের ৮ টি দরজা উন্মুক্ত থাকবে। তারা যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে করবে সে দরজা দিয়েই প্রবেশ করবে। ( সহিহ ইবনে হিব্বান – ৪১৬৩)।
দেখো তো? মাত্র ৪ টি কাজ। এই কাজ গুলা কি খুব কঠিন? নামাজ, রোযা, ইজ্জতের হেফাযত, স্বামীর আনুগত্য করা। এই কাজ গুলো করলে বেহেশতের ৮ টি দরজা খুলে দেওয়া হবে যে দরজা দিয়ে মন চায় সেই দরজা দিয়েই ঢুকতে পারবে।
কত বড় মর্যাদা, কত বড় সুযোগ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা নারীদের দিয়েছেন। কিন্তু এই কাজ গুলোই যেন নারীদের কাছে পাহাড় কাধে নেওয়ার মত কঠিন হয়ে পরেছে।
আজ কাল তো নারীরা নামাজের ধার ধারে না। সময় পায় না নামাজের কাজে ব্যস্ত থাকে নামাজের সময় কোথায় ?
স্বাস্থ্য নষ্ট হবে দেখে রোযা রাখে না।
মান ইজ্জতের হেফাজত করার বদলে মান ইজ্জত বিলিয়ে দিচ্ছে। পরপুরুষ কে নিজের দিকে অাকৃষ্ট করতেই ব্যস্ত। সৌন্দর্য দেখিয়ে বেরিয়ে মজা পাচ্ছে। স্রেফ নিজের সৌন্দর্য দেখিয়ে বেরাচ্ছে শুধু মাত্র বাহবা পাওয়ার জন্য। আর কিছু না। এর ফলে কি হচ্ছে জান?
পরকিয়া, পর নারীর প্রতি আসক্ত হয়ে সংসার ভাঙন, ধর্ষণ এগুলা যেন মামুলি ব্যপার। শুধুমাত্র নারীরা তাদের মান ইজ্জতের হেফাযত করছে না বলেই এত এত ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।
নারীরা সৌন্দর্য দেখায় আর পুরুষেরা দেখে ফলে কি হয়? দুজনেরই চোখের জিনা, মনের জিনা। না পারে পুরুষ নিচের দিকে তাকাতে না পারে নিজেকে সংযত রাখতে।
এগুলা কি বেপর্দার কারনে হচ্ছে না? আর সেখানে আল্লাহ বলেছেন, নিজের মান ইজ্জতের হেফাজত করলে জান্নাতের দরজা খুলা থাকবে।
আর স্বামীর আনুগত্য করা। স্বামীর বাধ্য হওয়া। খুব কি কঠিন? আর আজকালকার মেয়েরা নারী আন্দোলন করে, নারীদের নাকি পুরুষেরা স্বাধীনতা দেয় না, ঘরে আটকে রাখে। অাফসোস সেই নারীদের জন্য! স্বামী সেবা, স্বামীর আনুগত্য করা যাদের কাছে কাজের বুয়ার মত লাগে।
তারা আজও বুঝল না যে, স্বামীর আনুগত্য এর মাঝে আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা নারীদের জান্নাত এর সুসংবাদ দিয়েছেন।
.
তোমার স্বামী তোমার জন্য জান্নাত কিংবা জাহান্নাম!
.
হযরত হোসাইন ইবনে মিহছাব ( রা) বর্ননা করেন যে, একদিন তার ফুফী নবী কারীম ( সা) এর খেদমতে উপস্থিত হন। হুজুর ( সা) তাকে জিজ্ঞাসা করেন,
তোমার কি স্বামী জীবিত আছে?
তিনি বললেন- হ্যা! আছে।
তখন রাসূলুল্লাহ ( সা) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
তুমি তার সাথে কি রকম ব্যবহার কর?
তিনি বললেন-
সম্ভব সকল পন্থায় তার সেবা করি, তবে সাধ্যের বাইরে নয়।
হুজুর(সা) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
তুমি তার সাথে কেমন আচরন কর?
তিনি বললেন- আমার সাধ্যমত যা করার তাই করি।
এবার রাসূলুল্লাহ ( সা) বললেন-
জেনে রেখো! সেই তোমার জান্নাত – জাহান্নাম। ( তারগীব ৩/৩৪)।
স্বামীর সন্তুষ্টিই স্ত্রীর জন্য জান্নাত অথবা জাহান্নাম। স্বামীর মতের বিপরীত মত পোষন করা তার অসন্তুষ্টিত, স্বামীর কথার উপর কথা বলা তার সেবা যত্নে কার্পণ্য করা, ইত্যাদি কাজ স্ত্রীর জন্য জাহান্নামের কারন হবে। অবশ্য শরীয়াত সম্মত হতে হবে অসন্তুষ্টি গুলো। আল্লাহ ও তার রাসূলুল্লাহ ( সা) এর নির্দেশিত পথে।
.
বর্তমানে দেখা যায়, বিয়ের পর মাত্র কয়েকদিন ভাল থাকে , স্বামীর কথা মত চলে, কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতে স্বামী কে স্বামীই মনে করে না।
আমি কি তোমার দাসী? দাসীবান্দী করার জন্য এসেছি?
তোমার সংসারে এসে কোনো দিন সুখ পেলাম না!
আমাকে কি কয়েদি পেয়েছ যে ঘরে বন্দি থাকতে হবে?
আধুনিক যুগের মেয়েরা কি এরকম দাসত্ব করে বেরাবে?
মেয়েদের স্বাধীনতা বলে কি কিছু নেই?……..
.
এসব কথা এখন মুক্তমনা নারীবাদীদের। তারা এখন স্বাধীনতা চায় সংসার স্বামী থেকে, যেন তারা বাইরে ইচ্ছে মত পরপুরুষ দের সাথে রং তামাশা করতে পারে, বেপর্দা হয়ে বেরাতে পারে ।
.
আর যে স্বামী কে সন্তুষ্ট রাখবে সে জান্নাতে যাবে!
.
হযরত উম্মে সালামা ( রা) হতে বর্নিত, নবি কারীম ( সা) বলেছেন, কোন মহিলা ইন্তেকাল করল, আর এ সময় স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট ছিল – তাহলে সে মহিলা বেহেশতে যাবে। ( বায়হাকী, শোয়েবুল ইমান ২/৪২১)।
.
স্বামীর হক সম্পকে বলা হয়েছে…
হযরত আলী ( রা) হতে বর্ণিত, নবী কারীম ( সা) বলেছেন-
হে মহিলাগন! আল্লাহকে ভয় কর এবং স্বীয় স্বামীর মন সন্তুষ্ট রাখ। মহিলারা যদি জানত যে স্বামীর হক কি তাহলে সকাল বিকাল খানা নিয়ে দাড়িয়ে থাকত। ( কানযুল উম্মাল ১৬/১৪৫)।
এ হাদিসের মর্ম হল, যে কথায় স্বামী খুশি থাকে বা তার মন মেজাজ অনুকূলে হয়, যে কথার স্বামীর ভাল লাগে, যা তার পছন্দসই হয় ( শরীয়াত পরিপন্থী নয়) সে ধরনের কথা তাকে শোনানো। যেমন স্বামীর পছন্দ গরম খাবার, তাহলে সাধ্যানুযায়ী সদ্য রান্না করা গরম খাবারেরই ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বামী সকালে নাস্তা খেতে অভ্যস্ত হলে খুব ভোরে শয্যা ত্যাগ করে নাস্তা তৈরি করতে হবে।
কোন একটা নির্দিষ্ট সময় স্বামীর চায়ের অভ্যাস থাকলে আদেশের পূর্বেই চা প্রস্তুত রাখবে।
কিন্তু স্বামী যদি শরীয়াত পরিপন্থী কোনো কাজ করতে বলে তাহলে তা করা যাবে না। স্বামীর আদেশ পালন করতে গিয়ে আল্লাহর আদেশকে লংঘন করা যাবে না।
.
( চলবে ইনশাআল্লাহ)
.
নীরা একাধারে শাশুড়ির কথা গুলো শুনছে। ভাবছে, মা এত হাদিস জানে? মা যেমন ঠিক তার ছেলেও হয়েছে তেমন।
আসলেই তো মা রত্নগর্ভা! এমন একটা ছেলেকে জন্ম দিয়েছে।
– নীরা!
– জি মা?
– ওই তেলের কৌটাটা দাও তো।
– এই নিন। কি এমন আছে এই তেল এ?
– আমলকী থেতো করে শুকিয়েছিলাম। সেটাই তেলের মধ্যে চুবিয়ে রেখেছি। আলহামদুলিল্লাহ! চুল পড়া কমে। এখন থেকে এইটা দিবা।
– নীরা হাসে!
– চুলে তেল দিবা এমন উসকো খুসকো চুলে যেন না থাকে।
– নীরা ভেবেছিল সব শাশুড়ি এক। আসলে নীরার ভুলটা ভেঙে গেছে। নীরা ঈশামের কথা ভাবছে। আসলেই এমন একটা ছেলেকে সে জীবনসংগি হিসেবে পাবে তা চিন্তাতেও আসে নি। কিন্তু নীরাই বা ঈশামকে এত দূরে রেখেছে কেন?
তাকে কেন স্ত্রীর হক দিচ্ছে না নীরা?
শুধু নিজের মনের মত স্বামী, ঘর পায় নি বলে? আর আজ কিই বা পায় নি? এত ধৈর্য্য শীল স্বামী, দ্বীনদার, শশুড় শাশুড়ি একদম যেন মা বাবার মত। আর কি লাগে একটা মেয়ের জীবনে? আমিই তো ঈশামের যোগ্য নই। এই বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্যই তো আমি নই। যেখানে এত ভালবাসা, এত স্নেহ, মমতা পাচ্ছি আর সেখানে আমার স্বামী কে আমি দূরে সরিয়ে রেখেছি।
যার সাথে আমার সারাটা জিবন কাটাতে হবে তাকে দূরে সরিয়ে রেখে আমি তাকে বিষিয়ে তুলছি।
কিসের জন্য?
নীরা যেন ভাবনার দুনিয়ায় চলে গেছে।
– নীরা? এই নীরা?
– জি মা?
– জান আমার বিয়ের আগে আমার মা, দাদি, নানি কত পরামর্শ দিয়েছিল। স্বামীর সাথে কিভাবে চলব, তার কথা কিভাবে মানব, তাকে কিভাবে খুশি রাখব এসব কথা আমাকে বুঝাত। মাঝে মাঝে কথা গুলা শুনে ভীষন লজ্জা পেতাম। কিন্তু পরে এটার ভাল একটা ফলাফল পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ!
– কি রকম মা?
– শুনবে?
– হুম!
– এই ধর আমার নানী আমাকে বলত স্বামী কে ভালবাসবি। স্বামী কে ভালবাসলে আল্লাহও তোকে ভালবাসবে।
এই নিয়ে হাদিস শুনিয়ে দিত।
হযরত আলী ( রা) নবী পাক ( সা) থেকে বর্ননা করেন যে , নবী কারীম ( সা) বলেছেন, যে মহিলা তার স্বামী কে ভালবাসে আল্লাহ সে মহিলাকে ভালবাসে। হাসি খুশি এবং পর পুরুষ থেকে স্বীয় মান সম্ভ্রান্ত এর হেফাজতকারিনী মহিলাকে আল্লাহ তা’য়ালা ভালবাসেন।( কানযুল উম্মাল)।
– আপনি এটা কিভাবে এপ্লাই করেছেন?
– আমার বিয়ের পর আমার স্বামী মানে তোমার শশুড়কে ভালবেসেছি আর আমি যে তাকে ভালবাসি তাকে বুঝাতাম। লুকিয়ে রাখতাম না। বিয়ের পর আমি কোনো পরপুরুষের সাথে ইচ্ছাকৃত ভাবে কথা বলিনি। যদি না খুব প্রয়োজন হত। সেটা তোমার শশুড় বুঝতে পেত। এবং বলত- কিগো বুড়ো হয়ে গেলেও কি এত ভালবাসবে নাকি ফেলে দিবে?
আমি বলতাম- তুমি বুড়ো হলে কি আমি জোয়ান থাকব? দুই বুড়ো বুড়ি মিলেই ভালবাসব।
আলহামদুলিল্লাহ এখন প্রায় সেই বয়সেই যাচ্ছি আমরা। ভালবাসায় কোনো ফাটল ধরে নি। ইংশা আল্লাহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এভাবেই থাকতে চাই।
– নীরার শাশুড়ির মুখে এরকম কথা শুনে মনে হচ্ছিল মা বাবা যেন মনে হয় ২৫/২৬ বছরের টগবগে তরুন তরুনী। কি ভালবাসার টান, কি মহব্বত!
..
– আমার মায়ের কড়া কথা! স্বামী সেবা করবি। স্বামী কি খেতে ভালবাসে তাই রান্না করে রাখবি, ওযুর পানির আগে থেকেই ব্যবস্থা করে রাখবি, স্বামীর জামা কাপড় ধুয়ে রাখবি, অসুস্থ হলে সেবা করবি, গরম গরম খাবার পরিবেশন করবি, নামাজের সময় হলে ঘুম থেকে ডেকে তুলবি। খুব ভাল ভাবে এবং কড়া করেই মা আমার মাথায় কথা গুলো ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। এবং বলেছিলেন,
” হযরত ইবনে ওমর ( রা) মারফু বর্ননায় বলেন, নবী কারীম ( সা) বলেছেন- স্বামী সেবা স্ত্রীর জন্য সদকাতুল্য। ( কানয- ১৬/১৬)।
– সেই থেকে কি মা আপনি কথা গুলো পালন করে আসছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ! আমার মা বাড়িতে গিলেই জিজ্ঞাসা করত। আমি স্বামী সেবায় কোনো তারতম্য করি কিনা।
-তাই আজও আমার শশুড় আব্বা আপনাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না। তাই না মা?
– হিহিহিহি! তুমি বুঝলে কিভাবে?
– একটুও আপনাকে চোখের আড়াল হতে দেয় না।
– ভালই তো দেখ!
– নীরা হাসতেছে।
– জান মাঝে মাঝে তোমান শশুড় আমাকে আজাইরা কাজ করতে বলত। এই ধর, পানির কলসি টা আমি রান্না ঘর থেকে শোয়ার ঘরে নিয়ে যাব। কিন্তু ওইটা করতে দিত না। রাতের বেলায় বার বার পানি চাইত আর রান্নাঘর থেকে নিয়ে যেতে হত। বল তো একবারে পানির কলসি ঘরে নিয়ে গেলে কি হত এত কষ্ট করতে হত?
– আপনি রাগ হতেন না?
– নাহ! এই কাজটা কয়েকবার করিয়েছে। শুধু একটা পরীক্ষা নেওয়ার জন্য।
– কিসের পরিক্ষা?
– আমার নানী একটা জিনিস শিখিয়েছিলেন। স্বামীর আদেশ অনর্থক হলেও মান্য করা উচিত।
হযরত আয়েশা ( রা) হতে বর্নিত তিনি বলেন, নবী কারীম ( সা) বলেছেন- স্বামী যদি স্ত্রী কে আদেশ করে তুমি জাবালে আহমার পর্বতকে জাবালে আসওয়াদ পর্বতে নিয়ে যাও অথবা জাবালে আসওয়াদ পর্বতকে আহমারে স্থানান্তরিত কর, তাহলেও স্ত্রী যেন তা করার চেষ্টা করে। ( ইবনে মাজাহ পৃ: ১৩৪)।
দেখ তো এই হাদিসের মর্ম হল, পাহাড় স্থানান্তরিত করা কিন্তু অনর্থক। কিন্তু যেহেতু স্বামী আদেশ করেছে এটা অনর্থক হলেও স্বামীর আদেশ মানার জন্য তার চেষ্টা করতে হবে। তখনও স্বামী কে বলা যাবে না,
কি আজেবাজে কথা বলছ যা করা অসম্ভব!
নীরা! আমাকে নানী একথা শিখিয়ে দিয়েছিলেন। এবং আমি তা মান্য করি।
পরপর তিনদিন আমাকে এরকম করে পরীক্ষা নিয়েছিলেন তোমার শশুড়। চতুর্থ দিনে তিনি নিজেই কলসি শোয়ার ঘরে নিয়ে এসে আমাকে বলে,
– আমি সত্যিই তোমার উপর খুশি। কাজটা অনর্থক আর কষ্টের হলেও তুমি আমার কথা মান্য করেছ। আর করতে হবে না এরকম।
সেদিন থেকে তোমার শশুড় আমাকে আরো ভালবাসতে থাকে। কারন ওনার কথা আমি কখনো ফালাই নি। আলহামদুলিল্লাহ!
.
তোমাকে একটা সুন্দর হাদিসের গল্প বলি। স্বামীর আদেশের মূল্য কত এ থেকেই বুঝতে পারবে।
হযরত আনাস ইবনে মালিক ( রা) নবী কারীম ( সা) থেকে বর্ননা করেন, জনৈক ব্যক্তি ঘর থেকে বের হয়ে যাবার সময় তার স্ত্রীকে বলে গেল:
ঘর থেকে বের হবে না।
তার পিতা ঘরের নিচ তালায় বাস করত। আর সে থাকত উপরের তালায়।
মহিলার পিতা অসুস্থ হয়ে পরলে সে লোক পাঠিয়ে নবী কারীম ( সা) এর পিতার অসুস্থতার কথা এবং স্বামীর নিষেধের কথা জানায়।
রাসূলুল্লাহ ( সা) বললেন-
তোমার স্বামীর নিষেধ মান্য কর।
মহিলার পিতা ইন্তেকাল করার পর মহিলা আবার রাসূলুল্লাহ ( সা) এর নিকট লোক পাঠায়ে জানায়।
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলে দিলেন,
তাকে বলো স্বামীর আনুগত্য করতে।
অতপর রাসূলুল্লাহ ( সা) মহিলার নিকট লোক পাঠিয়ে জানালেন, তুমি তোমার স্বামীর আনুগত্য করার কারনে আল্লাহ পাক তোমার পিতাকে মাফ করে দিয়েছেন।
.
– নীরা তুমি তো নামাজ পড়। তাই না?
– নীরা ইতস্তত করে বলল, পড়ি কিন্তু ফজরের নামাজ কাজা হয়ে যায়।
– না না! মোটেই কাজা করবে না। ঈশাম তোমাকে ডাকে না?
– ডাকে।
– অবশ্যই উঠবে কাল থেকে ইংশা আল্লাহ।
– জি মা।
– তুমি কি জান কাদের কাদের নামাজ কবুল হয় না আর কাদের কাদের নেক আমল আকাশে উঠে না?
– না মা! আমি এটা জানি না।
– হযরত জাবির ( রা) হতে তিনি বলেন, নবী কারীম ( সা) বলেছেন-
তিন ধরনের লোকের নামাজ কবুল হয় না। নেক আমল আকাশে উঠে না।
এরা হল:
১) পলাতক গোলাম যে পর্যন্ত সে তার মুনিবের কাছে ফিরে না আসে এবং মুনিবের হাতে হাত না রাখে।
২) যে নারীর উপর তার স্বামী নাখোশ।
৩) মদ খোর। যতক্ষন না তার মদের নেশা শেষ হয়। ( বায়হাকী শেয়াবুল ঈমান)।
– নীরার বার বার শুধু ঈশামের কথা মনে পরছে। নীরার শাশুড়ির কথা গুলো শুনে নীরার মনের ভিতর ছটফটানি শুরু হচ্ছে। আসলেই কেন ঈশামকে সে তার ভালবাসা হতে এত দূরে রেখেছে? নীরা খুবই অস্থির হয়ে উঠেছে। মনটা খুব ভারী লাগছে। কি যেন চাইছে নীরা! নীরা কি দেরি করে ফেলছে?
নীরাও যে ঈশামের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। সেটা বোধ হয় নীরা বুঝতে পেরেছে।
.
– নীরা! স্বামী একটা নারীর জিবনে কত বড় একটা সম্পদ তা সময় থাকতেই বুঝে নাও।
– নীরা চুপচাপ ভাবছে। মনটা তার অনেক খারাপ হয়ে আছে। মনের ভিতর শুধু এটাই ঘুরপাক খাচ্ছে- নীরা কি খুব দেরি করে ফেলছে না তো?
– সব সময় তো আর সব কথা বলা যায় না। তাই আজকে এতটুকুই বললাম। নীরা?
– জি মা?
– আমার আরো কিছু বলার ছিল, এত কিছু তো একবারে বলা যায় না। ঈশামের কাছে অনেক গুলো বই আছে। ওগুলো পরবে তুমি। অনেক কিছু জানতে পারবে। বুঝছ?
– হুম।
– এই দেখ তেল দিয়ে কত সুন্দর লাগছে। আমার ছেলের সামনে অবশ্যই সেজেগুজে থাকবে। বুঝলা?
– আচ্ছা মা! নীরা শাশুড়ির দিকে মুচকি হাসি দিল।
.
নীরা আয়নার সামনে দাড়াল।
ঠিক নীরার আম্মুর মত করে নীরার শাশুড়ি তার মাথায় তেল দিয়ে দিয়েছে। তেল যেন মাথা বেয়ে মুখের দিকে আসছে। নীরা হাত দিয়ে মুখের তেল মুছে নিল। আর মনে মনে বলল-
এই তেল দেওয়ার সময় সব মায়েরাই কি এইরকম করে তেল দিয়ে দেয়?
নীরা মনে মনে হাসতেছে। মুখের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।
নীরা সুন্দর করে বেনী গাঁথল। মুখের অতিরিক্ত তেল সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে তুলল।
.
বিয়ের প্রথম রাতে ঈশামের দেওয়া বই গুলো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল। টেবিলের উপর সুন্দর করে গোছানো বই গুলো। তাছাড়া আরো অনেক বই আছে। কিন্তু নীরাকে দেওয়া বই গুলোর উপর হাত বুলাচ্ছে। বইটা খুলে বইয়ের গন্ধ নিচ্ছে। কয়েক পাতা উল্টাতেই লক্ষ করল ঈশামের গলা শুনা যাচ্ছে। বই গুলো তাড়াহুড়ো করে রেখে দিল। তারপর তার রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে দেখল, ঈশামের মা ঈশামের হাত থেকে ব্যাগ নিল।
ঈশামকে দেখল রুমের দিকে এগিয়ে আসছে।
পর্দার কাছ থেকে সরে এসে বিছানার পাশে আসল নীরা।
ধপাস করে ঈশাম বসে পড়ল বিছানায়।
কেন জানি নীরার লজ্জা লাগছে ঈশাম কে দেখে। তাকাতেও লজ্জা লাগছে। নীরা জিজ্ঞাসা করল,
– আজ খুব টায়ার্ড?
– নীরার দিকে তাকিয়ে বলল হুম।
আগে কখনও নীরা ভাল কি মন্দ জিজ্ঞাসা করে নি। আজ হঠাত কি হল?
.
ঈশাম নীরার দিকে তাকিয়ে রইল।
কিন্তু নীরা তাকালে পারল না। চোখ সরিয়ে নিল নীরা।
– আজ হঠাত জিজ্ঞাসা করছ?
– এমনিতেই।
– ওহ।
.
নীরা রুম থেকে চলে গেল।
কিছুক্ষন পর আসল।
– এই নিন।
– ঈশাম নীরার হাতে পানির গ্লাস দেখে থতমত খেয়ে গেল।
– নিন বলছি? কতক্ষন ধরে থাকব।
– ঈশাম নীরার দিকে তাকিয়ে থেকেই পানির গ্লাসটা হাত থেকে নিল।
ঈশাম কিছুই বুঝল না। হঠাত নীরার কি হল?
– বিসমিল্লাহ্ বলে ৩ নি: শাসে ঈশাম পানি পান করে আলহামদুলিল্লাহ বলল।
মুহূর্তের মধ্যে ঈশামের ক্লান্তি যেন কোথায় গায়েব হয়ে গেল।
ঈশাম শুধু ভাবছে নীরা তো কখনও আমার সাথে এরকম করে নি। আজ হঠাত?
– নীরু!
– বলেন।
– আজ হঠাত?
– জানি না কিছু। গ্লাসটা দিন রেখে আসি।
– ঈশামের হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে রুম থেকে চলে গেল নীরা।
.
এদিকে ঈশাম খুব খুশি হল। আর মনে মনে আল্লাহকে শুকরিয়া জানাচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ।
ঈশাম মনে মনে প্রশ্ন করছে: নীরু! তুমি কি আমার প্রেমে পড়ে গেছ?
.
( চলবে ইনশাআল্লাহ)