অর্ধাঙ্গিনী
৫মপর্ব
মোর্শেদা খাতুন
………………………..
পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল জারার।দীর্ঘদিনের অভ্যাস ফজরের আগে আগে ঘুম ভাঙা।আজ একটু দেরীতে ভাঙল।জারা ঘুম ভাঙার পর দেখলো আফনান বিছানায় নেই।দুরে সোফাতে ঘুমাচ্ছে।জারা আস্তে ধীরে নিচে নামল,বাথরুমে গেল,ওযু করে বেরোবার মুখেই শুনতে পারলো এলার্ম বাজছে।আফনান সম্ভবত দিয়ে রেখেছিল।
.
জারা সেটা বন্ধ করার জন্য হাত দিতেই আফনান চোখ বন্ধ করেই হাত বাড়িয়ে দিলো, তারপর ঘড়িসহ জারার হাত চেপে ধরল।হাতের অস্তিত্ব টের পেয়ে চোখ খুলল,-তাকিয়ে দেখল জারা!-“ওহ্,আপনি?”স্যরি!”
জারা হাত ছাড়িয়ে ওকে বলল-“উঠে পড়ুন,তাড়াতাড়ি,ফজরের ওয়াক্ত হয়েছে।”
.
আফনান ঘড়ি দেখল।তারপর উঠে পড়ল।দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে শরীর মুচড়ে শব্দ করে আড়মোড়া ভাঙলো।জারা পেছন থেকে মৃদু চাপড় দিলো ওর পিঠে-“এ্যাই, আস্তে।”ঘুম থেকে উঠে প্রথমে ঘুম ভাঙার দুআ পড়তে হয়।তারপর কব্জি পর্যন্ত হাত ধুতে হয় এটাই সুন্নত।”
ওর দিকে তাকিয়ে তারপর বেসিনের দিকে গেল আফনান।হাত ধুলো।তারপর বলল-“এখন কি করবো ?”
-“উফ,এটাও বলে দিতে হবে?তাড়াতাড়ি অযু করে আসুন।আলো ফুটে যাবে তো!”
-“সেকি গোসল নাকি করতে হয়?”আফনান অবাক হবার ভান করে বলল।
-“উফ্…আ..ফ..না..ন ” বলে জারা কোমড়ে দুহাত রাখল তারপর ডান হাতের আঙ্গুল তুলে শাসালো।
-“আরে রাগের মত কি বললাম।!”
-“আপনি যাবেন তাড়াতাড়ি?দেরি হচ্ছে কিন্তু আমাদের নামায কাযা হয়ে না যায়”!
-“হায়রে! জিজ্ঞেস করলেও দোষ!’ আফনান হাসল।আসলে ওর জারার সঙ্গে দুষ্টুমী করতে খুব ভালো লাগছে।অথচ ও যথেষ্ট সিরিয়াস টাইপ ছেলে।ওর নিজের ভেতরে এই শিশুসূলভ মানসিকতা যে লুকিয়ে ছিল আফনান নিজেই জানতো না।মাথা চুলকে সে বাথরুমে ঢুকে গেল।
.
জারা দুটো জায়নামাজ বিছিয়ে ফেলল চট করে।একটা সামনে আরেকটা পেছনে।
আফনান টুপি খুঁজলে জারা তা বাড়িয়ে ধরল-“জানি,এটাই খুঁজবেন।এই নিন,আসুন।”
-” দুটো আগেপিছে কেন?পাশাপাশি দাঁড়াবো না?”
-“জ্বীনা,পুরুষের কাতার সামনে!আর আপনি ইমামতি করবেন, আমি আপনার পেছনে নামাজ পড়বো !সুরাটুরা মনে আছে তো!”
-“এতটা আন্ডার এসটিমেট করাটা উচিত না,ছোটবেলায় মক্তবে তিনবছর পড়েছি,তখন আমরা গ্রামে……”জারা ওকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সোজা করে দিয়ে বলল-“চুপ্, পরে শুনবো! এখন শুরু করুন!”
.
আফনান গলা ঝেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।কয়েক সেকেন্ড নিরব থেকে তারপর ভরাট কন্ঠে ইক্বামত দিতে শুরু করল।জারার মন কান যেন জুড়িয়ে গেল।কি সুন্দর স্পষ্ট বিশুদ্ধ উচ্চারন।আফনানের এই বিরাট গুনটি তো জানা ছিলো না!”
-“আল্লা….হু আকবার”! বলে তাকবীর দিতে জারা নিজেও নিঃশব্দে তাকবীর বলে হাত বাঁধল।
এ এক চমৎকার দৃশ্য।ধূলোমলিন পৃথিবীতে যেন জান্নাতের বাগিচা।স্বামী স্ত্রী মহান রবের দরবারে একত্রে হাজিরা দিচ্ছে।ইবলিশ এমন সব পরিবারে শয়তানি করে সুবিধে করতে পারেনা কেবল দুর থেকেই ঘুরঘুর করে!
নামাজ শেষে জারা উঠতে গিয়ে দেখল আফনান তখনো মুনাজাতে মগ্ন হয়ে আছে।
জারার চোখে আফনানের সম্মান আজ অনেক উঁচুতে উঠে গেল।মনে মনে রবের শোকর আদায় করল এমন লোককে স্বামী হিসেবে পেয়ে।জারা একমনে ভাবছে হঠাৎ আফনান জারার চোখের সামনে হাত নাড়ল -“কোথায় হারিয়ে গেছেন?”
জারা আফনানের দিকে তাকাল।যেন নতুন করে ওকে দেখছে।তারপর মৃদু হেসে বলল-“আমাকে তুমি করে বলবেন প্লিজ।’আপনি’ টা শুনতে ঠিক ভালো লাগছেনা।”
আফনান চমকে বলল-“কিই?হঠাৎ এই অধমের প্রতি দয়ার কারন?”
জারা মুখ নামিয়ে বলল-“আমাকে মাফ করে দেবেন,আমি আসলে আপনাকে আন্ডার এস্টিমেট করিনি, ভেবেছি……!”
-“দুর ছাড়ো তো! বাদ দাও।আচ্ছা খিদে লেগেছে নাকি?”
-“আমার এত ঘন ঘন খিদে লাগেনা!”
-” তাই! এজন্যই তো স্বাস্থ্য নাই।আচ্ছা, ভালো কথা, আমার প্রমোশন কি কেবল ঐ ‘তুমি’ বলা পর্যন্তই নাকি আরো কোনো সু..যো..গ সু..বি..ধা।”
জারা কড়া চোখে তাকাতেই আফনান হেসে চোখ মারল-“ঠাট্টা করেছি!”
♥
জারা উঠে বিছানায় গিয়ে বসল-“সকাল হতে তো এখনো দেরী আছে,আপনি কিন্তু কাল রাতে একদম ঘুমাননি।আসুন, কিছুক্ষণ শুয়ে নিন!”
-“আরে দুর, এখন ঘুম আসবেনা।! “
-“আরে আসুন তো,আমি সাহায্য করছি!”
আফনান বলল-“কিভাবে?”
-“চুলে হাত বুলিয়ে দেবো!” জারা অন্যদিকে তাকিয়ে বলল!”
.
আফনান একটা কৃত্রিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় গিয়ে গড়িয়ে পড়ল-“ভেবেছিলাম কপাল বোধহয় খুলে গেছে!”
জারা ওর চুলে হালকা হাতে আঙ্ঙ্গুল চালাতে চালাতে বলল-“প্রথম দিন কিন্তু আপনাকে খুবই ভদ্র আর গম্ভীর মনে হয়েছিল।”
-“এখন কি অভদ্র হয়ে গেছি?”
-” না,তা না তবে আপনাকে দেখে বাইরে থেকে মনে হয়না যে আপনি এতটা ছেলেমানুষ আর……!”
-“আর…?আর কি বলো?”
-“আর দুষ্ট ও! “জারা হেসে বলল।
শোয়াবস্থাতেই খপ করে জারার হাত ধরে ফেলল আফনান-“এ্যাই,কি অভদ্রতা করেছি এ পর্যন্ত বলো! “
-“থাক্,ঘুমান।”
-“আমাকে অভদ্র কে বানালো? তুমিই তো বানিয়েছো, সব দোষ তোমার। তোমাকে দেখলেই দুষ্ট বুদ্ধি মাথায় আসে তো আমি কি করবো?”
-“আচ্ছা,একটা কথা,আপনাকে সকালে দেখলাম সোফায়।কোন সমস্যা? না মানে,আপনাকে তো বিছানাতেই দেখেছিলাম…!
-“হুঁ…নিজেতো বেঘোরে ঘুমিয়েছো।আমার বারোটা বাজিয়ে।সহ্য হচ্ছিলো না।তাই সরে গেছি।আরো কিছু?”
জারা চুপ করে রইল,তারপর ফিসফিসিয়ে বলল-“আমাকে একটু সময় দিন,প্লিজ”!আ..আমি…..সারার কথা……!”
হঠাৎ শুনতে পেলো আফনানের মিহি নাক ডাকার শব্দ।জারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
.
কয়েক ঘন্টা পর, চোখেমুখে হালকা পানির ছিটা পড়তেই আফনানের ঘুম ভেঙ্গে গেল।তাকিয়ে দেখল জারা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে!
-“উঠুন,আর কত ঘুমাবেন?দশটা তো প্রায় বাজতে চলল।”
-“আরে তাই নাকি?”বলে ঘড়ি দেখল আফনান।
-“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন”!
-“নাস্তার কথা বলে দাও,ও..ভালো কথা ফুপির খোঁজ নিয়েছো?”
-” জ্বী,দেখা করে এসেছি সকাল বেলাতেই।নাস্তাও খেয়েছেন।”
-“যাক্! ” বলে আফনান বাথরুমে চলে গেল।জারা জেনে নিল গোসল সেরে কোন পোশাকটা পড়বে আফনান।তারপর তার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো হাতের কাছে এনে রাখল।
আফনান এসে সব গোছানো দেখতে পেয়ে বলল-“আহ্,এবার মনে হচ্ছে ঘরে বউ আছে।আচ্ছা,শোনো আজ তোমাকে নিয়ে একটু বাইরে যাবো,লাঞ্চের পর।তৈরী থেকো!”
-“আমার আর তৈরী…! কেবল বোরকাটাই তো পড়বো!”
-“ওহ্,দ্যাটস রিমাইন্ড মি,তোমার জন্য একটা নতুন বোরকাও আছে। ঐ ড্রয়ারে।
জারা উঠে ড্রয়ারের কাছে যেতেই আফনানের ফোন বাজল।
ফোনটা রিসিভ করেই আফনান জোরে বলে উঠল-“ওহ্….মা….কেমন আছো তোমরা?”
জারা অসহায়ের মত সেদিকে চেয়ে রইল।

অর্ধাঙ্গিনী
৬ষ্ঠপর্বঃ
মোর্শেদা খাতুন।
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
আফনান বেশ অনেকক্ষণ ধরে ফোনে কথা বলছে।জারা ড্রয়ার ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।ভাবছে,আফনানের মা যখন জানবে এ বিয়ের কথা,জারার কথা,সেটা কিভাবে নেবেন উনি!
তাছাড়া সেজানই বা কি করবে!! ভাবতে ভাবতে মাথাটা ঝিমঝিম করতে শুরু করল।হঠাৎ পেছন থেকে ওর কানে কেউ ফুঁ দিলে চমকে উঠল।তাকিয়ে দেখল আফনান হাসছে।জারার চেহারার বিষন্নতা দেখে উদ্বিগ্ন স্বরে বলল-“কোনো সমস্যা? কি হলো তোমার?এমন চাঁদমুখে অমাবশ্যার ছায়া কেন?”
জারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-“নাহ্,কিছু না”!বলে সরে যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়ালে আফনান চট করে ওর সামনে এসে পথ রোধ করল।-“অসম্ভব!কিছু তো হয়েছেই,তোমার মুখ বলছে সামথিং ইজ রং”!
জারা দ্বিধা করে শেষে বলেই ফেলল-“মা যদি আমাদের বিয়েটা মেনে না নেন?”
-“পাগল? মা মানবেই।সে আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।আমার খুশিই তার খুশি,ওটা নিয়ে ভেবোনা,ওটা আমার উপর ছেড়ে দাও”!
-“ইনশাআল্লাহ,বলুন! “
-” ইনশা..আল্লহ! “
♥
বোরকা খুলে জারা অভিভূত হয়ে গেল।এতো সুন্দর আর প্রচুর ঢোলা।ঝরণার ধারার মত যেন হাত থেকে পিছলে পড়ে যেতে যায়।গাঢ় কফি কালারের উপর সেই রঙেরই মার্জিত কারুকাজ।জারা বোরকাটা গায়ে দিল,সাজবেনা ভেবেও হালকা করে লিপষ্টিক ছোঁয়াল।লোশন মাখতে যাবে তখনি শুনলো পেছন থেকে আফনান বলছে,”সোনার হাতে সোনার কাঁকন,কে কার অলংকার?”
জারা মৃদু হেসে লোশন মাখাতে লাগল হাতে গলায়।পায়ে দেবার জন্য ঝুঁকেছে তখনি আফনান ওকে থামিয়ে দিল-“আমি সাহায্য করছি।”
-“মানে?”
-“আরে মানে মানে কি?বসো এখানে” বলে বা হাতের তালুতে একগাদা লোশন ঢেলে নিলো আফনান।জারা প্রায় চেঁচিয়ে উঠল,”ইন্নালিল্লাহ,এত লোশন দিয়ে কি করবেন আপনি?”
আফনান জবাব দিলোনা কেবল ওর দিকে তাকিয়ে চোখ মারল।জারাকে বসিয়ে আফনান নিজেও ওর পায়ের কাছে বসল।তারপর দুহাত দিয়ে ওর পায়ের গোড়ালী থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত মেখে দিতে লাগল।”
জারা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো।আফনান বলল-” —“পায়েই তো দিচ্ছি অন্য কোথাও তো দিচ্ছিনা,এত্ত অস্থির হচ্ছো কেন?আরে,লোশন মনে হয় বেশী হয়ে গেছে।”!
জারা মৃদু ধমকের সুরে বলল-“তখনি তো বললাম,দেখুন পায়ের অবস্থা, মাটিতে পা রাখলে স্লিপ করে পড়ে যাবো,ছাড়ুন তো! “
আফনান তবু মাখাতে লাগল-“আরে দাঁড়াও,ভালো করে মাখিয়ে দিলেই মিশে যাবে,হাঁটু পর্যন্ত দিতে হবে এই আরকি!”
জারা ছটফট করে উঠল-“ইয়াল্লাহ,সুড়সুড়ি লাগছে,ছাড়ুন..বলে পা ছাড়াতে গিয়ে বোরকার পিচ্ছিল কাপড়ে পেঁচিয়ে উপুড় হয়ে পড়ল।আফনান সময়মতো ধরে না ফেললে কপাল ঠুকে যেতো মাটিতে।ওকে বাঁচাতে গিয়ে আফনান নিজেই মাটিতে চিৎ হয়ে পড়ে গেছে।জারা ওর গায়ের উপর পড়েছে বল ব্যথা পায়নি কিন্তু লজ্জায় এতটুকুন হয়ে গেল।আফনান দুহাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে রাখল।জারা নিজের মুখটা আফনানের গলার কাছে লুকিয়ে রেখেছে।আফনান বুঝতে পারলো জারা একটু যেন কাঁপছে।ওর মুখ দেখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো।জারা মুখটা গুঁজে রেখেছে।আফনান ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল-“অজ্ঞান হয়ে গেছো নাকি আমার বুকে থাকার জন্য এটা চালাকি?”
জারা দ্রুত উঠে যেতে চেষ্টা করল কিন্তু কোনোভাবেই সুবিধা করতে পারলোনা!আফনান ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।বেশী নড়াচড়া করতে গেলে আরো বিশ্রীভাবে আফনানের গায়ের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে।জারা দুহাত মাটিতে ঠেকিয়ে উঠার চেষ্টা করল-“ছাড়ুন না,উঠতে দিন,দেরী হচ্ছেনা?”
-” কিসের দেরী।থাকো না এভাবেই।জানটা ঠান্ডা হয়ে গেলো!”
জারা বলল-“আপনার মতলব দেখছি সুবিধের না,ছাড়ুন নাহলে কিন্তু ব্যথা পাবেন পরে আমাকে দোষ দেবেন না”!
-“ব্যথা? দাও ব্যথাই দাও,আর কিছু যখন পাবোনা……আ..আ..!” করে চিৎকার দিয়ে জারাকে ছেড়ে দিল।জারা ওকে ধাক্কা দিয়ে উঠে পড়ল।আফণান উঠে বসে বাম হাত দিয়ে নিজের কাঁধ ডলতে লাগল-“ইসস, কামড় দিয়ে একেবারে মাংস নিয়ে নিয়েছো!”
জারা অদুরে দাঁড়িয়ে চোখে রাগ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকল।কিন্তু আফনানকে মলিন মুখে কাঁধ ডলতে দেখে এগিয়ে এল-“দেখি,খুব বেশী লেগেছে?”
আফনান মুখ গম্ভীর করে বসে কাঁধ ডলতে লাগল।মুখ দেখে মনে হলো প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছে।ব্যথায় মুখটা বারবার কুঁচকে ফেলছে।জারা আর থাকতে পারলোনা,ওর কাছে গিয়ে ওর হাতটা সরিরিয়ে বলল-“দেখি,কোথায় লেগেছে?”
অমনি জারাকে বাগে পেয়ে আফনান ওকে পেঁচিয়ে ধরল-“এইবার? এইবার কোথায় পালাবে?”আফনান হাসতে লাগল।
-“তারমানে আপনি ব্যথা পাননি? মিথ্যে অভিনয় করছিলেন?”
“তোমার দাঁতে একদম জোর নেই।কামড় দিলে না আদর করলে?”
-“আপনি একটা মহা অসভ্য, ছাড়ুন। “
-“শোধ না নিয়ে ছাড়বো ভেবেছো?”
জারা সরে যাবার চেষ্টা করল।আফনান ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল-“যেখানে কামড় দিয়েছো সেখানে আদর করে দাও,তাহলে ছেড়ে দেবো!”
জারা পীড়াপীড়ি করে একসময় ক্ষান্ত হলো।তারপর বাধ্য হয়ে কাঁধে হালকা করে ঠোঁট ছোয়ালো-” হয়েছে? “
-“কামড় দিলে সর্বশক্তি দিয়ে আর আদর করলে জ্বরের রুগীর মত?”ওর কথা শুনে জারা হাসি চাপতে পারলোনা।খিলখিল করে হেসে উঠল।আফনান ওর হাসিটা দেখল কিছুক্ষণ।তারপর
জারাকে শক্ত করে ধরে ওর কাঁধে নিজের মুখটা ডুবিয়ে দিল।জারা নড়তে চেয়েও পারলোনা।সাঁড়াশির মত আঁকড়ে ধরে রেখেছে।জারার মনে হলো ওর কাঁধে আগুন লেগে গেছে।ও সর্বশক্তি দিয়ে আফনানের চুলগুলো মুঠো করে টেনে সরাতে চাইল।আফনানকে একচুল নাড়ানো গেলোনা।অবশেষে ফ্যাঁসফ্যাঁসে কন্ঠে বলল-“প্লিইজ! “
আফনান ধীরে ধীরে মুখ সরিয়ে নিল।ওর মুখে হাসি।জারা কে ছেড়ে দিয়ে বলল- “শোধবোধ হয়ে গেল।”
জারা লজ্জায় ওর দিকে তাকাতে পারছিলোনা।আফনান ওকে ধরে দাঁড় করিয়ে দিল-” যাও, তৈরী হও।”
জারা ওর দিকে তাকালোনা, বোরকার নিকাব খুঁজতে লাগল।আফনান হঠাৎ নিজের সাদা শার্ট দেখিয়ে বলল-” এটা কি করেছো দেখো!”
জারা দেখলো আফনানের ধবধবে সাদা শার্টে লালচে দাগের ছড়াছড়ি।মনে পড়ল ও সামান্য লিপষ্টিক ব্যবহার করেছিল।
-“এটা আপনারই দোষ,গায়ে পড়ে লাগতে এসেছিলো কে?”
-“লিপষ্টিক পড়ে আমাকে নিরব আহ্বান জানিয়ে ছিল কে?”আফনান পাল্টা জবাব দিল।”নিজের দোষটাতো দ্যাখো না”!
-“অসভ্য কোথাকার,!ডাকাত “! জারা মৃদু স্বরে বলল।
♥♥♥
কাল সন্ধ্যের ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে ওরা।তাই টুকটাক করে গোছানো শুরু করেছে জারা।আফনান ওকে নামিয়ে দিয়ে সেই যে বেরিয়েছে ফেরার নাম নেই!
পুরোটা সন্ধ্যা জারা ফুপু আর বাবুর সাথে সময় কাটালো।ফুপু জারার কোলে বাবুকে দিয়ে উঠে বাথরুমে গেলেন!”
জারা বাবুকে নিয়ে কতক্ষণ খেলা করল।তারপর ওর জন্য ফিডার বানাল।ফিডার খেয়ে বাবু ঘুমিয়ে পড়লে ওর জিনিসগুলো এক এক করে গোছাতে শুরু করল।রাত প্রায় বারোটা বেজে গেছে।ফুপু ঝিমাচ্ছে দেখে জারা ফুপুকে শুয়ে পড়তে বলে নিজের রুমে চলে এল।সাড়ে বারোটারও বেশী বেজে গেছে।চিন্তায় জারা ছটফট করতে লাগল।আফনানের সেল নম্বরটা পর্যন্ত ওর জানা নেই। অস্থিরতায় জারার দুচোখ দিয়ে পানি আসতে চাইছে।
আফনান ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় একটা বেজে গেল।দুশ্চিন্তায় জারার মুখ শুকিয়ে গেছে।বারবার আল্লাহর কাঝে ওর সালামতির জন্য দুআ করছিল।
এমন সময় বেল বাজল।জারা আইভিউ দিয়ে দেখে একটানে দরোজা খুলে ফেলল।আফনান ক্লান্ত বিধস্ত শরীরে রুমে ঢুকে গেট লাগাল।জারার চোখে পানি,আফনান ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল-“একি,চোখে পানি কেন?”
-“আপনি সেই সন্ধ্যায় গেছেন।তারপর না ফোন না কোন খবর আমার বুঝি চিন্তা হয়না?”
আফনানের মুখটা অন্যরকম আবেগে নরম হয়ে গেল-“আমার জন্য তুমি এত কষ্ট পেয়েছো?”
জারা জবাব দিলোনা।ছুটে গিয়ে আফনানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল।-“টেনশনে আমার কলিজা কাঁপছিলো”!
-“দুর! পাগলি!”
জারা মিশে গেল আফনানের বুকের সাথে।আফনান ওকে যেন বুকের সাথে পিষে ফেলতে চাইল।তারপর দুহাতে ওর মুখ তুলে ধরল।জারা বাধা দিলোনা।বাইরে হঠাৎ প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলো।বাতাসের ঝাপটায় ঘরের ভেতরটা ভিজে যাচ্ছে।ওরা কেউই খেয়াল করছেনা।
Introduction Microsoft Word & Google Docs.
অর্ধাঙ্গিনী
৭ম পর্বঃ
মোর্শেদা খাতুন।
…..♥♥♥……
.
আফনান ওর কপালে চুমু খেয়ে বলল-“তুমি আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা!!
জারা ওকে বলল-“চলুন,রাত বাড়ছে!” ওরা ভেতরে চলে এল।কিছুক্ষণ পর দুজনে খেতে বসল।
জারা বলল-“কোনো জরুরী কাজ ছিল আজকে??
-“আরে আর বোলোনা,ব্যবসায়িক কাজেই একজনের সাথে হঠাৎ মিটিং ফিক্সড হলো,উনি ঢাকা যেতেন কিন্তু আমি সিলেটে আছি শুনে অনুরোধ করল মিটিংটা এখানেই সেরে নেবার জন্য।এর মধ্যে আবার মিটিং চলাকালে একজন অসুস্থ হয়ে পড়ে,ওকে হাসপাতালে পৌঁছে দিলাম,চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হলো,এসব করতে করতে কখন যে এত রাত হয়ে গেল টেরই পাইনি।শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছে’”।
জারা বলল-“খেয়ে বিশ্রাম নিন,চায়ের কথা বলবো জাকিয়াকে?”
আফনান বলল-“হ্যাঁ,বলো! ভালো কথা,জাকিয়া সব ঠিকমতো করে দিচ্ছে তো?”আমি প্রথমেই ওদের বলে দিয়েছি কোন পুরুষ ওয়েটার যেন ৩০১-২ তে না আসে।”
-“ও,এজন্যই শুধু মেয়েরাই আসে।জাকিয়া মেয়েটাই বেশী আসে, মাঝেমাঝে কিন্নরী নামে একটা মেয়ে আসে।”
-” জারা,চা টা বারান্দায় দিতে বোলো”!
-“সে কি আবার বারান্দায় বসবেন?ঘুমাবেন না? আপনি তো ক্লান্ত!” জারা গ্লাসে পানি ঢেলে আফনানের দিকে এগিয়ে দিল।
-“তোমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে ক্লান্তি কেটে গেছে”।বলে আফনান পানির গ্লাসটা সরিয়ে বলল-“তুমি কোন গ্লাসে পানি খেয়েছো?”
জারা কিছুটা অবাক হয়ে ওর আধাখাওয়া পানির গ্লাসটা আঙ্গুল তুলে দেখাল।
আফনান হাত বাড়িয়ে সেটা নিল তারপর গ্লাস ঘুরিয়ে দেখে যে জায়গাটা দিয়ে জারা পানি পান করেছে বলে ধারনা হলো সে স্থান দিয়ে বাকি পানিটুকু পান করল।
জারা তাকিয়ে আছে দেখে বলল-“সুন্নত আমিও কিছু কিছু জানি আলহামদুলিল্লাহ।আজ এই সুন্নতটার উপর আমল করার সুযোগ আল্লাহতা’লা আমাকে করে দিলেন।”
জারা এবার হাসল।আফনান বলল-“তুমি তো নিশ্চয়ই জানতে এটা?”
-“জ্বী, জানতাম।মা আঈষা রাঃ পাত্রের যে স্থানে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতেন রাসুল সাঃ ঠিক সেই স্থানে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতেন।”
-“আবার মা আঈষার গোস্তের আধখাওয়া টুকরো রাসুল সাঃ নিয়ে খেতেন,ঠিক না?”আফনান বলল।
-“জ্বী,ঠিক!”
আমি গুনে গুনে সবগুলো সুন্নত পালন করতে চেষ্টা করবো ,ইনশাআল্লাহ।দাম্পত্য জীবনে রাসুল সাঃ এর বেশ কিছু চমৎকার সুন্নত আমি পড়েছি।”
জারা ঠোঁট মুড়ে হাসল-“সত্যি,তিনি স্বামী হিসেবেও ছিলেন অসাধারন।এটা তাঁর স্ত্রীদের ভাষ্য”!
.
আফনান কিছু বলতে যাবে তখনি বেল বাজল।আফনান ইশারা করল-“যাও,দ্যাখো!,তোমার জাকিয়া এসেছে।”
জাকিয়া চা দিয়ে সব প্লেট বাটি নিয়ে গেল।কাপগুলো সকালে নিবে বলে জানালো।সকালে নাস্তা কখন দেবে তাও জিজ্ঞেস করল।জারা ফুপুর ঘরে আটটার দিকে নাস্তা দিয়ে দিতে বলল আর তাদেরটা যখন কল দিবে তখন দিতে বলল।
জারা চা নিয়ে বারান্দায় এলো,আফনানের হাতে চা দিয়ে নিজেও পাশের চেয়ারে বসল।আফনান পাশের চেয়ারটা জারাসহ টেনে নিজের চেয়ারের পাশে লাগিয়ে বলল–” এতো দুরে বসেছো কেন?””
জারা দুষ্টুমি করে বলল-“দুর যত মধু তত”!
আফনান চমকে সোজা হয়ে বসল-“উরিব্বাবা,তুমি তো ভালো কবিতাও জানো দেখছি!
“,কিন্তু মাননীয়া,এটা জানেন কি? স্বামী যখন স্ত্রীকে তার কাছে ডাকে তখন স্ত্রী যদি না আসে তবে ফেরেস্তারা সারারাত লানত করতে থাকে?”.
জারা আফনানের মুখের উপর হাত রেখে বলল–“প্লিজ…,থামুন!”
আফনান ওর হাত ধরে ফেলল,তারপর তাতে চুমু খেয়ে বলল–“তোমার কাছাকাছি আসলে আমার পালপিটেশন বেড়ে যায় এটা সত্য তবে আমি চাই তুমি ভালোবেসেই আমাকে একদিন ডাকবে,আমি ঠিক সেদিনেরই অপেক্ষা করছি”!
জারা মৃদু স্বরে বলল-“ক’টা বাজে?”
আফনান ঘড়ি দেখলো-” সোয়া দুইটা বাজে,কেন তোমার ঘুম পাচ্ছে?”
জারা মাথা নেড়ে না বলল।আফনান ওর হাতটা টেনে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল-” কাল তো ঢাকা চলে যাবো,তারপর শুরু হবে ব্যস্ততা,তোমার সাথে এভাবে রাত জেগে গল্প করার সুযোগ আবার কবে পাবো জানি না!”
জারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-“আমার পরম সৌভাগ্য যে আপনার মত স্বামী পেয়েছি কিন্তু কি জানেন,সারার স্মৃতি আমাকে সারাক্ষণ কাঁদাচ্ছে।আমি আপনাকে আপনার প্রাপ্য অধিকার দিতে পারছিনা,সারার চেহারা বারবার আমার চেতনায় হানা দিচ্ছে….আমাকে ক্ষমা করবেন,প্লিজ…..!”
আফনান মৃদু হাসলো-“আমরা দুজন দুজনকে ভালবেসেছি একসময় পরিস্থিতিই আমাদের কাছে এনে দেবে।এই যে,চুটিয়ে রোম্যান্স করছি তোমার সাথে এটা কি কম? মাঝে মধ্যে মনে হয় স্বপ্ন দেখছি…….জারা বাতাসের শব্দে হেসে উঠল।
এভাবে গল্পে আড্ডায় সুন্নতের আলোচনায় খুনসুটিতে ওদের সময়গুলো কেটে গেল।ভোরের আযান শুনে দুজনই উঠে পড়ল।
♥
♥
ফুপু এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আসতে চেয়েছিলেন।জারাই নিষেধ করল।যাবার সময় ফুপু অনেক কাঁদলেন–“মা ‘রে বাচ্চা নিয়ে সংসার একা কিভাবে সামলাবি ভেবেই চিন্তা হচ্ছে।জামাই তো আমাকে মোবাইল কিনে দিলো, সময় পেলেই ফোন দিবি,কেমন?
জারা ফুপুর চোখ মুছে দিয়ে বলেছে-“তুমি কেমন আছো জানিও ফুপি।”ফুপি কন্যাসম ভাতিজীকে জড়িয়ে ধরলেন।
প্লেনেও জারার মনটা কিছুটা খারাপ ছিল।পাশাপাশি নতুন সংসার নতুন শ্বশুড়বাড়ীর পরিবেশ কেমন হবে এসব ভেবেও কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিল যদিও ওর শ্বাশুড়ী দেশে নেই।
♥
আফনান সম্ভবত আগে থেকেই বলে রেখেছিল।কাজের লোকজন গাড়ীর হর্ণ পেয়েই ছুটে এল।আফনান ওদের একজনকে জিজ্ঞেস করল–“খালামণি কোথায়?”
ঠিক তখনি পেছন থেকে একজন মধ্যবয়স্কা ভদ্রমহিলা বেরিয়ে এলেন।গোলগাল চেহারা হাসিখুশি মুখ।জারাকে আপাদমস্তক বোরকাবৃতা দেখে খানিকটা থমকে গেলেও দ্রুত সামলে নিলেন।জারাকে দেখিয়ে আফনানকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন -‘এটাই? ‘ আফনান হাসল।খালামণি জারাকে একহাতে জড়িয়ে ধরলেন।জারা মৃদুস্বরে সালাম দিল।–“এসো মা,’বলে জারার কোলের বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আরেকহাতে জারাকে ধরে ভেতরে নিয়ে গেলেন।ড্রইংরুমটা দেখে পেছনের একটি দিনের কথা মনে পড়ে গেল জারার।খালামণি জারাকে একেবারে ভেতরের রুমে নিয়ে গেলেন-“তোমার জন্য আমাদের ফিন পুরো বাড়ীর পরিবেশটাই বদলে ফেলেছে।তুমি পর্দা করো বলে তোমার রুমটা ভেতরের দিকে নেয়া হয়েছে,ওদিকটায় বাথরুম ছিলোনা বুঝলে নতুণ বাথরুম করা হয়েছে।আফনান যে কি পাগল,কি রেখে কি করবে,ওকে এত এক্সাইটেড কখনো দেখিনি,ফোনে আমাকে আর ওর খালুকে পাগল করে ছেড়েছে।খালামণি এমন করবে,অমন করবে।কি করবো বলো,আপা দেশে নেই, সেজানটাকে নিয়ে……. খালামণি হঠাৎ চুপ হয়ে গেলেন।কথা বলতে বলতে তিনি ভুলেই গেছিলেন যে জারাকে বিয়ের ব্যাপারে সেজানের একটা ভূমিকা রয়েছে।ঘরে পৌঁছে বললেন-“এই হলো তোমার ঘর,তোমার সংসার…নাও এবার বোরকাটা খোলো তো তোমাকে দেখি!
জারা নম্র ভঙ্গিতে বোরকার নেকাব সরালো।তারপর বোরকা খোলার আগে খালামনিকে জিজ্ঞেস করল-“কেউ আসবেনা তো এদিকে?”এদিকে খালামনি পলকহীন চোখে জারার দিকে তাকিয়ে থাকলেন,তারপর জারার প্রশ্নে সম্বিত ফিরে পেলে বললেন-“মাশাল্লা,মাশাল্লা, আমাদের আফনানের পছন্দের তারিফ করতে হয়।জারা লজ্জা এড়াতে বলল-“আপনাকে আমি খালামনি বলতে পারবো?”
–“হ্যাঁ,হ্যাঁ,আমি আমার সব ভাগনে ভাগনির ফেভরিট খালামনি”!
-“খালামনি,আমি আপনার পা ছুঁয়ে সালাম করিনি বলে রাগ করবেন না,প্লিজ।কারন ইসলামে এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সামনে মাথা নোয়াতে নেই তাই আমি……!”
-“আরে ও কিছুনা,মা,তুমি আগে জামাকাপড় ছাড়ো ফ্রেশ হও।এতদুর জার্ণি করেছো।বলে”এ্যাই কমলা” বলে চেঁচিয়ে এক কাজের মেয়েকে ডাকলেন।কমলা এসে দাঁড়াল।জারা দেখলো একটা কম বয়সী হালকা পাতলা গড়নের মেয়ে, খুব হাসিখুশি মুখ।জারার দিকে তাকিয়ে হাত তুলে সালাম দিলো-“সালামালাইকুম মামী”!
জারা হালকা মাথা ঝাঁকিয়ে হাসল-“ওয়াআলাইকুমুসসালাম।”
মেয়েটা খালামনির দিকে তাকিয়ে বলল-“নানী,মামী কি সোন্দর দ্যাকসেন?”
খালামনি হেসে বলল–“হ্যাঁ,হ্যাঁ,মামির কাছাকাছি থাকবি তুই।মামি যা বলে করে দিবি,ঠিকআছে?” কমলা সোৎসাহে মাথা নাড়ল।তারপর খালামনির কাছে গিয়ে বলল-“বাবুরে এট্টু নিমু!”
খালামনি ওর কোলে বাচ্চাকে দিয়য়ে সতর্ক করে বললেন-“সাবধানে নিবি,দেখিস বাবুর ঘুম না ভাঙ্গে।”
তারপর জারার দিকে তাকিয়ে বলল-“তুমি ফ্রেশ হও মা,আমি ওদিকটা দেখে আসি।আরে তোমরা আসবে বলে আফনান আমাকে থাকতে বলেছে।সে তো আমাকে বলে-“কেউ না থাকলে আমার বৌ কে গ্রহন করবে কে?আম্মা বাসায় নেই! তোমাকে থাকতেই হবে।ও যা জেদী ওরে বাবা,আমি না এলে ও আমাকে আস্ত রাখবেনা!”
-“বসুন না খালামনি!”
-“না মা, আজ বসবো না,কাল তো আবার আসবোই।তখন কথথা হবে।চলি কেমন?”
জারা সালাম দিয়ে তাঁকে এগিয়ে দিল।
জারা এবার পুরো ঘরটা দেখলো।বেশ বড় রুমটা।পাশেই খোলা চওড়া বারান্দা।ঘরটাতে চারদিক ছড়িয়ে বিভিন্ন আসবাব রাখা হয়েছে।জারা কমলাকে ইশারায় ডেকে বলল-“তোমার মামা কোথায়?”
-“মনে হয় বাইরের ঘরে,ডাক দিবো মামী! “
-“একটু ডেকে আনতো মা।”বলে বাবুকে নিজের কোলে নিল জারা।কমলা দ্রুতপায়ে বেরিয়ে গেল।জারা বাবুকে হালকা দোল দিয়ে আস্তে করে বিছানায় শুইয়ে দিল।সোজা হয়ে দাঁড়াতে গিয়ে হঠাৎ চমকে উঠল।
হঠাৎ পেছন থেকে আফনানের কথায় চমকে উঠল-“কেমন লাগছে এখানে ?”
জারা ওকে ছাড়িয়ে বলল-“আলহামদুলিল্লাহ! বিশেষ করে খালামনিকে তো বেশ ভালো লেগেছে,উনি খুবই আন্তরিক।”
আফনান ওর হাত ধরে চুমু খেয়ে বলল-“তোমাকে আমার ঘরে আনতে পেরে আমি নিজে খুব আনন্দিত ! ওহ্,আরেকটা সুসংববাদ।আগামী শনিবার তোমার শ্বাশুড়ী দেশে ফিরছেন।সেজান আসবেনা,সে ওখানেই চিকিৎসাধীন থাকবে।আরো খুশির কথা হলো আম্মাকে তোমার কথা বলেছি।আম্মা প্রথমে একটু চমকে গেলেও পরে খুব খুশি হয়েছে।আজ আমি অনেক খুশি!”
..♥..
সিলেট থেকে আসার পর থেকে আফনান প্রচন্ড ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।নাস্তা খেয়ে বেরোয়,কোনোদিন লাঞ্চ করতে বাড়ী আসে কোনদিন অফিসেই সেরে নেয়!”
জারার বাবুকে নিয়েই সময় কাটে।কমলার সাথে গল্প করে।কমলাই আজ বলল-“বড় নানু যে কি রাগী!””
জারা বুঝলো ও আফনানের মা’র কথাই বলছে।কাল তিনি আসবেন।তাই বাড়ী ধোয়া মোছার কাজও জোরেশোরে চলছে।কমলাকেও খুব তটস্থ মনে হলো।জারার টেনশন বাড়ছে।কাল কখন আসবে কে জানে !আফনান অফিসে।এমন সময় গাড়ীর শব্দ এলো।বাইরে মৃদু গুন্জন শোনা গেল।কে এল এসময়ে? আফনান ফিরতে ফিরতে তো রাত!”
জারা সাতপাঁচ ভাবছে।এমন সময় হালকা ঘিয়ে রঙের শাড়ী পড়া, লম্বা ও খুব ফর্সামত একজন মহিলা ঢুকলেন।মাঝখানে সিঁথি দিয়ে চুলগুলো পরিপাটি করে আঁচড়ানো,একপাশে সাদাচুলগুলো এমনভাবে আঁচড়ানো যে দেখলে ইন্দিরা গান্ধীর কথা মনে পড়ে।জারা সালাম দিলে তিনি সালামের জবাব না দিয়ে জারার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শান্ত গম্ভীর কন্ঠে বললেন-“তুমিই তাহলে সেই মেয়ে?”
জারা তাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো! তিনি পুনরায় দাঁতে চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন-“এই রূপ দেখিয়েই তাহলে আমার ছেলের মাথাটা খেয়েছো…তাই না?”
জারা অবাক হয়ে ব্যথিত চোখে তাকিয়ে রইল।ভাছে,ইনি নিশ্চয়ই আফনানের মা! কিন্তু ওনার তো আগামীকাল আসার কথা,উনি আজই চলে আসলেন।!?

সংগ্রহ:-https://www.facebook.com/golpo.bhandar72/
carnation e book