মিসসে সালমা আহাম্মেদ তার ছেলের রুমে এসে দেখলেন তার ছেলে কাজ করছে। মিসেস সালমা আহাম্মেদ বললেন,, তুই কি ব্যস্ত?
না ব্যস্ত না এমনি টুকটাক কাজ করছিলাম। এসো বসো।
সালমা আহাম্মেদ বসলেন।
কিছু বলবে?
হুম..!
কি বলবে বলো আমি শুনছি।
তুই আয় তো আমার সামনে বস।
রোহান বিনা বাক্যে তার মা এর সামনে বসলেন।
রোহানের মা মিসেস সালমা আহাম্মেদ বললেন,, বাবারে এইভাবে কুহুকে নিরাপত্তা দিতে পারবি না। ওর নিরাপত্তার জন্য একটা শক্তপোক্ত পরিচয় দরকার। আমি বলি কি তোর আর কুহুর বিয়ের কথা টা বলে দেই।
মা তুমি বুঝতে পারছো না। এই বাঘ বন্দী খেলাতে আমি কুহুকে আনতে পারি না। ওরা মানুষ রূপী জা”নো”য়া”র। আমার শত্রুর শেষ নেই। সেই শত্রুতার টানে যদি কেউ কুহুর কোন প্রকার ক্ষতি করে দেয়। তাহলে আমি জীবিত অবস্থায় মৃ”ত হয়ে যাবো। আগে আমি এই বাঘ বন্দী খেলা টা শেষ করবো তারপর আমি সবাইকে জানাবো। ভুলে যেওনা মা আমাদের ঘরের ভিতরেই কিন্তু শত্রু। বাহিরে মানুষদের সাথে লড়াই করা যায় কিন্তু নিজের প্রিয়জনদের সাথে কি করা যায়। তবুও তো আমি করছি প্রতিনিয়ত।
রোহানের কথা শুনে দীর্ঘ শ্বাঃস ফেললেন মিসেস সালমা আহাম্মেদ। তারপর বললেন রোহান শুন এতো রেগে যাস না। ওদের কে অন্য ভাবে ও তো শাস্তি দিতে পারতি?
না মা পারতাম না। ওঁদের নোংরা হাত তো আমার দিকে এগিয়ে গেছিলো আমার তো উচিৎ ছিলো ওদের হাত টা কে”টে টুকরো টুকরো করে দিতে।
যদি হিতে বিপরীত হয়ে যেতো তখন কি করতি?
মা তুমি তো জানো আমি এই রকম ই আমার মুখটা চলে কম হাত টা চলে বেশি। আর যার কারনে আমি মারি পয়েন্টে পয়েন্টে আর ওদের ব্যাথা লাগে জয়েন্টে জয়েন্টে।
আচ্ছা তুই ঘুমিয়ে পড়িস আমি যাচ্ছি তোর বাপ চাচারা কেউ ফিরেনি।
ওরা ফিরবেও না।
তিনি চলে গেলেন। তিনি চলে যেতে রোহান কল করলো অগ্নিকে।
হ্যালো অগ্নি।
হুম বলো।
বলছি যে ওদিকের সব ঠিক আছে তো।
হ্যাঁ এমনিতে সব ঠিক ই আছে তবে আরো কিছু ক্লু পেয়েছি।
কেমন সেইটা?
এইদের কারবার অনেক বড় এইটা বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়া থেকে শুরু করে চায়নাতেও আছে। কাল আমরা কেবল এক সাইড থেকে ওদের বাঁচাতে পাড়লেও অন্য সাইড পারিনি। আমার একটা মিশন সাকসেসফুলি করতে পারলেও আরেক টা পাড়ি নি। আর পাড়া কথা ও না কারন আমাদের চোখের সামনে কিছু জিনিস হাইড করা হয়েছিলো। কাল আরো এক সাইডে নারী পা”চা”র সহ কিছু মা”দ”ক দ্র”ব্য আর কিছু অ”স্ত্র ও পাচার হয়েছিলো চায়নাতে। আপনি দেশে আসার পর আমি অনেক দেরিতে জানতে পারি জানতে পেরে ছুটে যাই কিন্তু অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।
বিশ্বাস করো অগ্নি ওদের যদি পাই না সোজা ই”ন”কা”উ”ন্টা”র করে দিবো।
এখন কি করবে?
আমি এখন চায়নার CID এর সাথে যোগাযোগ করবো।
তুমি চিনো?
হুম আমি চায়নাতে স্পেশ্যাল ট্রেনিং এর জন্য গিয়েছিলাম।
ওহ্ আচ্ছা।
এখন রাখি বলে রোহান ফোন টা কেটে চায়না CID- হেডকোর্য়াটারে একটি গোপন যোগাযোগ করে।
রোহানঃ “নীহাও, উও শি লাইজি মেংজালা গুও C.I.D দে লুওহান আইহামাইদ। উও শিয়াও জেনি মেন দে ফু ঝের তানহুয়া। ঝে শি জিনজি ছিংকুয়াং।”
বাংলা: “হ্যালো, আমি বাংলাদেশের C.I.D থেকে রোহান আহাম্মেদ। আমি আপনার ইনচার্জের সঙ্গে কথা বলতে চাই। এটা জরুরি।”
অফিসারঃ “ছিং তিগং নিন দে শেনফেন ঝেংমিং, ইবিয়ান উমেন হেশি নিন দে শেনফেন।”
বাংলা: “আপনার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য দয়া করে আপনার আইডি বিস্তারিত তথ্য দিন।”
রোহান তার আইডির ডিটেইল দেয়।
লি ঝাওঃ”লুওহান শিয়ানশেং, নিন লিয়ানশি উও দে ইয়ুয়িন শি শেনমা?”
বাংলা: “রোহান সাহেব, আপনি আমাকে কেন যোগাযোগ করেছেন?”
রোহানঃ “উওমেন দেদাও দে শিনশি শিস, ইগে ফানঝুই জুজি ঝেংজাই ছং মেংজালা গুও থুও ইন্দু শিয়াং ঝোংগুও ফানমাই রেনকৌ, দুপিন হে উকি। শিংতং জিও ডিংজাই মিংওয়ান।”
বাংলা: “আমাদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, একটি অপরাধী সংগঠন বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে চীন পর্যন্ত মানব পা”চা”র, মা”দ”ক এবং অ”স্ত্র পা”চা”র করছে।”
লি ঝাওঃ “হাও দে, উও হুয়ে আনপাই শিংতং, দান শুইয়াও নিন দে সিয়েচু।”
বাংলা: “ঠিক আছে, আমি অভিযান শুরু করব, তবে আপনার সাহায্য প্রয়োজন হবে।”
রোহানঃ “তাংরান, উওমেন দে মুবিয়াও ঝিঊইগে, জিও শি চেদি শাওমি ঝেগে ফানঝুই ওয়াংলুও।”
বাংলা: “অবশ্যই, আমাদের লক্ষ্য একটাই—এই অপরাধ চক্রের পুরোপুরি ধ্বংস করা।”
লি ঝাও:ডুই, নিন শুয়াদে ডুই। উওমেন বু জিনগি ইয়াও চুইহুই ঝেগে ফানঝুই জুডুয়াং, হাইও শুইয়াও কুয়েবাও তা বু জাই ফুসেং।”
বাংলা: “হ্যাঁ, তুমি ঠিক বলেছো। আমাদের শুধু এই অপরাধী গোষ্ঠী ধ্বংস করতে হবে না, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যাতে তারা আর কখনও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।”
রোহানঃ “শিয়ে-শিয়ে” (ধন্যবাদ)
রোহান একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো বাট তার আরেক টা চিন্তা কারা করা এই চক্রের সাথে জড়িতো আর কারাই বা মূল মাথা।
রোহানের প্রচুর মাথা ব্যাথা করচ্ছে। তাই রোহান নিচে গেলো কফি বানানোর জন্য। হঠাৎ রান্না ঘর থেকে টুংটাং শব্দ পাচ্ছে। রোহান লম্বা লম্বা পা ফেলে কিচেন রুমে এগিয়ে গেলো গিয়ে দেখলো কুহু রান্না করে।
রোহান তার গম্ভীর কন্ঠে বললো,, এতো রাতে রান্না ঘরে কি করিস?
কফি করছি।
আমার জন্য ও কর।
কুহু সম্মতির মাথা নাড়ালো।
রোহান সোফায় গিয়ে বসে। মিউট করে টিভি ছাড়লো।
কুহু কফি বানিয়ে কফির একটা মগ রোহান কে দিয়ে আরেক টা মগ সে নিজে নিলো। হঠাৎ চোখ যায় টিভিতে। টিভির একটা জায়গায় চোখ টা আঁটকে যায়। রোহান যেই না চ্যানাল টা চ্যাক করতে যাবে ওমনি কুহু বলে উঠলো এক মিনিট এখন চেঞ্জ করবেন না।
কুহু মনোযোগ দিয়ে দেখছে সেইটা বুঝার জন্য সেও তার মতো টিভিতে মনোযোগ দিলো কিন্তু কাজের কাজ কিছু হলো।
রোহান কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো,, কি এতো দেখছিস আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।
সাদা কালারের পাঞ্জাবি পড়া ছেলে টা কে দেখেছেন আমার সাথে পড়তো। ক্লাস ১০ পর্যন্ত পড়েছে পরে আর পড়েনি। এখন আবার মডেল হলো কিভাবে কি ফিটনেস । আমাকে পপ্রোজ করছিলো আমি রিজেক্ট করে দিয়েছিলাম আর এখন..
রোহান ভ্রুঁ কুঁচকে কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো,, এখন কি বল? এখন কি তোর আফসোস হচ্ছে। কুহু তোর তো নজর ভালো না। তুই ছেলেদের ফিটনেস দেখিস। এমনেতে এমন ভাবে থাকিস যেনো ভাজা মাছ টা উল্টে খেতে পাড়িস না আর তলে তলে এইসব। তুই তো দেখে মিনমিনা শ”য়”তা”ন। যদি ওই চোখ দিয়ে কোন ছেলেদের দিকে তাকিয়েছি তো চোখ খুলে মার্বেল খেলবো। যা কফি টা খেয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়। আমার ফুরফুরে মেজাজ টা বিগড়ে দিলো।
কফির মগ টা নিয়ে চলে গেলো রোহান। আর রোহানের যাওয়ার পানে থতমত চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে কুহু।
—
সকালে কুহু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে শীতের জামা পড়ে পড়া টেবিলে বসে পড়ছে আজ থেকে তার এক্সাম। এই তিনটা কুহুর জীবনে কত কিছু ঘটে গেছে। জীবনটা ছোট কিন্তু জীবনে ঘটে যায় ঘটনাগুলো এক একটা সাহিত্য উপন্যাস এর কাছেও হেরে যাবে।
কুহু পড়ছিলো ঠিক সেইসময় শ্রাবনী এসে বললো,, কুহু নাস্তা নিয়ে এসে খেয়ে নেও। পরীক্ষা যাওয়া সময় আবার খেয়ে যাবে।
কি?
বেশি খেলে তো মোটা হয়ে যাবো।
কিছু করা নেই রোহান বলে দিয়েছে। তোমার শরীর নাকি দুর্বল বেশি বেশি খেতে।
না আমি খাবো না।
রোহান বুকে হাত গুঁজে দরজার সাথে হেলান দিয়ে বললো,, কেনো খাবি না?
আকস্মিক রোহানের গলা পেয়ে হকচকিয়ে গেলো পরে আবার নিজেকে ঠিক সামলে নিয়ে বললো মোটা হয়ে যাবো বেশি খেলে।
চড়িয়ে সিঁধে করে দিবো। তুই কি কোন মডেলিং বা সিনামাতে নাম লিখেয়েছিস না কি? চুপচাপ খাবি। নয়তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বুঝেছিস ননসেন্স একটা বলে কুহুর রুমে ঢুকে কুহুর বিছানাতে আয়েশ করে বসে বললো নে খা আমি বসে আছি যতক্ষণ না খাবি ততক্ষণ আমি রোহান এইখান থেকে নড়বো না।
অসহায় কুহু হাল্কা কিছু খেয়ে নিতেই স্মৃতি দুধে গ্লাস নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে বললো,, আপুমনি দুধটুকু ফিনিশ করো।
ইর্য়াক আমি খেতে পাড়ি না গন্ধ লাগে।
ভালো জিনিস তো ভালো লাগবেই না। বুঝলি স্মৃতি বুঝলে ভাবীমা ওকে পান্তা ভাত আর পেঁয়াজ মরিচ দেও ওটা খাবে।
তো ওটা তো খাবার জিনিস ই।
কুহু সিরিয়াসলি তুই আমার মুখের উপর তর্ক করছিস।
অসহায় কুহু ওদের সাথে পেরে উঠবে না। তাই নাকে টিপ দয়ে হলেও দুধ টুকু ফিনিশ করে বললো হ্যাপি তোমরা খুশি এইবার পড়তে দেও।
আর স্মৃতি যাও গিয়ে পড়তে বসো।
ওরা সবাই চলে গেলো কিন্তু রোহান যায়নি সে তো কুহুর রুমে বসে আছে।
রোহান বসে আছে বলে কুহু কিছু বলতে নিলে রোহান বললো খবরদার কুহু আমাকে রুম থেকে যেতে বলবি না। আমার যখন ইচ্ছে তখন যাবো। আমি এসেছিও নিজের ইচ্ছে যাবো ও নিজের ইচ্ছে চুপচাপ পড়।
পড়া শেষ করতে করতে ৯ টা বেজে গেলো। রোহান ওর ফাইল টা সুন্দর করে গুঁছিয়ে দিয়ে আর কিছু টাকা দিয়ে বললো,, খবরদার পরীক্ষার শেষে কিন্তু হেটে একদম বাড়ি ফিরবি না। রিকশা নিয়ে তবে বাড়ি ফিরবি। আর শুন কোন দরকার হলে আমাকে কল দিস।
এক্সাম এ ফোন এলাও না।
ঠিক আছে আয় তোকে পৌঁছে দিয়ে আসি। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে স্মৃতি আর কুহুকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলো।
কুহুর কলেজে বেশি দূরে না। আধাঘন্টার মতো লাগে কুহুকে তার কলেজে পৌঁছে দিয়ে স্মৃতি কে নিয়ে রওনা দিলো তার স্কুলে স্মৃতির স্কুল টা একটু দূরে।
স্মৃতি স্কুলে নামিয়ে দিয়ে রোহান সোহেল কে কল করলো।
রিং হওয়ার সাথে সাথে সোহেল রিসভ করলো।
সোহেল রিসিভ করতে রোহান বললো,, আমি লোকেশন টা অন করছি তুই আয় আমার সাথে সাথে তারপর ফোন টা কেটে দিয়ে আবার গাড়িটা স্টার্ট দিলো।
—
একটা পুরনো বাড়িতে এসেছে রোহান আর সোহেল। সেইদিন ক্লাবে থেকে ধরে আনা লোকটি কে এই বাড়িতে আটকে রেখেছে। দুই ব্যস্ততার জন্য আসতে পারেনি। আজ এলো। না”রী পা”চা”র চক্রের সাথে এও জড়িয়ে আছে। রোহান চেয়ার টেনে বসলো। সোহেল কে চোখের ইশারা দিলো লোকটির চোখের আর মুখের বাঁধন টা খুলে দিতে। রোহানের কথা মতো সোহেল সেইটাই করলো। রোহান পানির বোতল নিয়ে লোকটির চোখে মুখে দিতেই লোকটি চোখ মেলে তাকালো। লোকটি আশেপাশ দেখতে নিলে রোহান গমগম কন্ঠে বলে উঠলো,, আশপাশ পরে ও দেখতে পারবি। এখন সামনে তাকা।
লোকটি সামনে তাকিয়ে দেখলো এক লম্বা চওড়া যুবক তার সামনে দাঁড়িয়ে বসে আছে চোখ মুখ শক্ত করে। আর চোখ যেনো চোখ নয় কোন ফুটন্ত আগ্নেয়গিরির লাভা।
লোকটি একটা ঢোঁক গিললো।
রোহান লোকটির মুখের সামনে পানিটা নিয়ে গাল টা চেপে ধরে হা করিয়ে পানি খাইয়ে দিয়ে বললো,, তোর কাহিনী শেষ এখন আমার কয়টা প্রশ্নের উত্তর ঠিক ঠিক দে নয়তো তোকে গু”লি করে মে”রে ফেলতেও দুই সেকেন্ড ভাববো না।
লোকটি ভিতরের ভয় টা চেপে রেখে মনে সাহজ রেখে বলে উঠলো,, কে তুই? তোকে ভয় পাই না।
রোহান লোকটির দিকে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো আমি কে সেইটা শুনার পর তো তুই প্যান্ট নষ্ট করে ফেলবি।
CID অফিসার রোহান আহাম্মেদ নামটা তো শুনেছিস ই। এখন বল নারী পা”চা”রে”র সাথে কে কে জড়িত।
জানিনা আর জানলে ও বলবো না।
তোর বলতে হবে না আমি নিজেই বের করে নিবো তোর মুখ থেকে। আমি খারাপ হতে চাইনি বাধ্য করলি।
রোহান সোহেলকে বললো সব রেডি করে নিয়ে আয়। সোহেল পাশের রুমে গেলো গিয়ে সবকিছু নিয়ে এলো।
গরম দু’টো রড এনে সোহেল রোহানের হাতে দিলো। রোহান ক্রু হাসি দিয়ে বললো বলবি কি না?
না বলবো না।
অকে তোর চয়েস আমাকে কিছু বলতে পারবি না বলে গরম রড দু’টো ওর দুই উরুতে ধরলো।
মূহুর্তে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে উঠলো লোকটি।
রোহান কোমরে গুঁজে রাখা পি”স্ত”ল টা বের করে। লোকটির কপাল বরাবর ধরে বললো শুট করে দেই। আমি এক থেকে তিন বলবো এর মধ্যে তুই সত্যি টা বলবি। সোহেল গুনতো।
সোহেল কাউন্ট করা শুরু করলো। চোখের পলকে তিন গুনা শেষ। যেই না রোহান ট্রিগার টা চাপ দিতে যাবে ঠিক সেই সময় বলে উঠলো না না আমাকে মা”র”বে”ন না আমি বলছি। আমাকে অর্ডার করা হতো আমি সেই মতো ই কাজ করতাম। এইখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতাম আর নারীদের সাথে প্রত্যারনা করে ওদের নিয়ে এসে ঢাকায় বিক্রি করতাম শুধু এইটাই আমার কাছ আর কিছুনা।
কার কাছে বিক্রি করতে।
“ফয়সালের” কাছে। রাস্তার বড় পাশে যে বস্তি টা আছে না ওই বস্তিতে থাকে ও সব জানে। আমাকে ছেড়ে দিন আমাকে মারবেন না।
তোর মতো নোংরা আর্বজনা পরিষ্কার করতে হয় নয়তো সমাজ নষ্ট হবে বলে পর পর কয়েকটা গু”লি করলো। লোকটি র”ক্তা”ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লো প্রানহীন হয়ে।
সোহেল শুন তুই ফয়সালের বিষয়ে খুঁজ নে কালকের ভিতরে জানাবি।
আয় এখন আমার লোক এসে একে নিয়ে গিয়ে গুম করে দিবে।
সোহেল আর রোহান ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে।
রোহান বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে অগ্নির সাথে যোগাযোগ করলো। অগ্নি বলেছে কাল বা পরশুর মধ্যে সে দেশে আসবে। রোহান নিচে নেমে সোফায় বসে টিভি দেখছিলো। আর ঘড়ি দেখছে ঘড়িতে যখন একটা বাজে তখন রোহান বাসা থেকে বের হলো কুহুকে আনতে।
—-
পরীক্ষা হল থেকে বের হয়ে কুহু আর কুহুর দুটো ফ্রেন্ড সিয়াম আর লিমার সাথে দাঁড়িয়ে চটপটি খাচ্ছিলো। চটপটি খাওয়া শেষ করে নিজেদের বিল ভাগাভাগি করে দিয়ে তারপর হাটা ধরলো। হঠাৎ পিছন থেকে একটা ছেলে ডেকে উঠলো,, কুহু।
কুহু পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে ওদের কলেজের সিনিয়র ভাই।
কলেজের সিনিয়র ভাই। দৌড়ে এসে কুহুর সামনে এসে থেমে বললো,,, কুহু কেমন আছো? তোমার তো দেখাই নাই।
কুহু একটু হেসে বললো,, আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
আলহামদুলিল্লাহ।
বলো দেখা শুনা নেই কেনো?
আসলে লেখা পড়া নিয়ি বিজি ছিলাম তাই।
ওহ্ আচ্ছা একটা খাম বের করে দিয়ে বললো এই নেও।
কি এইটা?
আরে নিয়েই দেখো তো।
কুহু যখনই খাম টা নিতে যাবে ঠিক সেই সময় রোহান বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে ছেলেটির হাত থেকে খামটা নিয়ে গেলো।
রোহান কে এই মূহুর্তে এইখানে দেখে ভীষণ চমকে গিয়ে বললো আপনি এইখানে?
রোহান দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বললো,, তোকে নিতে এসেছি চল তুই আমার সাথে।
তারপর সামনের ছেলেটিকে বলে ওর ধারে কাছেও যেনো তোমায় না দেখি। তোমার খাম তোমার কাছেই রাখো ওর কাছে যেনো সেইটা না যায় যদি যায়। তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। আসি বলে কুহুর হাতটা ধরে বাইক এর সামনে দাঁড়ালো তারপর কুহুর কোমর ধরে কুহুকে তুলে বাইকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে বাইক স্টার্ট দিলো। সবকিছু এতো দ্রুত হলো যে কুহু প্রতিক্রিয়া করতে ভুলে গেলো। বাড়ি এসে কুহুর হাত টেনে রোহান তার রুমে এনে দরজাটা ধরাম করে বন্ধ করে দিয়ে ওকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো,, খুব সাহস তোর তাই না?
ওই ছেলের সাথে কিসের এতো কথা কুহু।
আমি জানতাম না হৃদয় ভাইয়া আমাকে খাম দিবে আমি চলে আসছিলাম সেই সময় ডাক দিয়েছিলো তখন দিয়েছে।
আর পাশের জন কে আমারই ফ্রোন্ড সিয়াম।
রোহানের প্রচুর রাগ উঠছে রোহান কুহুর গালের তিলেতে ঠোঁট চেপে ধরে গভীর চুম্বন এঁকে দিলো। তারপর কুহুর কপালে নিজের কপাল টা ঠেকিয়ে বললো,,
” তোকে কারনে – অকারণে ভালোবাসি
তোকে ছুঁয়ে দিতে কোন অনুমতি লাগবে না,,
কারন জন্ম-জন্মান্তে তুই আমার,,
তুই আমার এমন একজন যাকে হারানোর
ভয়ে বুক কেঁপে উঠে সারাক্ষণ
তুই শুধু আমার “
রোহানের মুখে এইসব কথা শুনে সে তব্দা খেয়ে গেলো। তার শরীর শিহরিত হচ্ছে। তার হৃদপিণ্ড বরাবার কেঁপে কেঁপে উঠছে মনে হচ্ছে ওর কোন হার্ডের রোগী। শ্বাঃস টা যেনো আটকে আসছে। কানে শুধু বেজে উঠছে বার বার ভালোবাসি।
একই_বন্ধনে_বাঁধা_দুইজনে
পর্বঃ-১১
নীলাশা_চৌধুরী
কুহু, সেই যে রুমে এসে দরজার সামনে বসে আছে, আর বের হয়নি। তার চোখে লজ্জার ছায়া, যেন একটি কালো মেঘের মতো মনের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিছানার ওপর হালকা দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা যাচ্ছে, এবং সে অজান্তেই তার মুখমণ্ডলটি হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছে। তার ভিতরের অস্থিরতা, অস্বস্তি, এবং চরম লজ্জা যেন একে অপরকে ধারণ করে, আর বাইরে থেকে কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে, সে চুপচাপ বসে থাকে। মুখের কোণে হালকা রক্তিম ভাব, সারা শরীরের মধ্যে এক ধরনের অদ্ভুত শূন্যতা। সে জানে না, কিভাবে এই মুহূর্তটি পার করবে। ওর কানে বার বার বেজে উঠছে রোহানের একটি কথা ভালোবাসি। রোহানের চুম্বন টা না যতটা এফেক্ট করেছে তার থেকে বেশি রোহানের ভালোবাসি কথাটা এফেক্ট করেছে।
রোহান ল্যাপটপের স্কিনে বসে কুহুর প্রতিটা কার্যকলাপ দেখে মুচকি হেসে বলছে পা”গ”লি একটা।
ঠিক সেই সময় কল আসে রোহানের। বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ইন্ডিয়ার CID থেকে কল এসেছে।
রোহান ফোন টা রিসিভ করে বললো,, হ্যালো রোহান আহাম্মেদ স্পিকিং,,
সিআইডি অফিসার রণবীর সিং:হেলো, রোহান। মই সিআইডি অফিসার রণবীর সিং। সবসে পেহলে, মই আপকো অউর আপকি টিম কো বধাই দেনা চাহতা হুঁ। মহিলা তস্করি, হাতিয়ার অউর মাদক পদার্থোঁ কে ইস বড়ে র্যাকেট কো খতম করনে কে লিয়ে আপনে অউর অগ্নি নে জো কাম কিয়া হ্যায়, ওহ সরাহনীয় হ্যায়। ভারত অউর বাংলাদেশ কি এজেন্সিয়োঁ নে মিলকর এক শানদার অপারেশন কিয়া।
( “হ্যালো, রোহান। আমি সিআইডি অফিসার রণবীর সিং। প্রথমেই, আমি আপনাকে এবং আপনার টিমকে অভিনন্দন জানাতে চাই। নারী পাচার, অস্ত্র এবং মাদকের এই বড় চক্র ধ্বংস করার জন্য আপনি এবং অগ্নি যে কাজ করেছেন, তা প্রশংসনীয়। ভারত এবং বাংলাদেশের সংস্থাগুলি একসঙ্গে চমৎকার একটি অপারেশন করেছে।”)
রোহানঃ ধন্যবাদ, স্যার। লেকিন অভি কহনা জলদবাজি হোগি কি হাম পুরি তরহ সফল হো গয়ে হ্যায়। ইয়ে নেটওয়ার্ক সির্ফ ভারত অউর বাংলাদেশ তক সীমিত নেহি হ্যায়। ইয়ে চক্র চায়না তক ফেলা হুয়া হ্যায়। কল রাত মেরি চায়না কে সিআইডি অফিসার সে বাত হুই। উনহোনে কহা হ্যায় কি বে জলদ হি ইস পার কার্যাবাহি করেঙ্গে।
( “ধন্যবাদ, স্যার। তবে এখনই বলা খুব তাড়াতাড়ি হবে না যে আমরা পুরোপুরি সফল হয়েছি। এই নেটওয়ার্ক শুধু ভারত ও বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়। এই চক্র চীন পর্যন্ত বিস্তৃত। গত রাতে আমার চীনের সিআইডি অফিসারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন যে খুব শিগগিরই এই বিষয়ে তারা অভিযান চালাবেন।)
সিআইডি অফিসার রণবীর সিংঃ ইয়ে তো অউর ভি বড়ি বাত হ্যায়। আগর ইয়ে নেটওয়ার্ক চায়না তক ফেলা হুয়া হ্যায়, তো হমে উনকি কার্যাবাহি কা ইন্তেজার করনা হোগা। হমে জো ভি মদদ চাহিয়ে, হাম তুরন্ত দেঙ্গে। লেকিন তব তক হমে ইহাঁ কি নিগরানি জারি রাখনি হোগি।
(“এটা তো আরও বড় ব্যাপার। যদি এই নেটওয়ার্ক চীন পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে, তবে আমাদের তাদের অভিযানের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে যা যা সাহায্য প্রয়োজন, আমরা সঙ্গে সঙ্গে দেব। তবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এখানকার নজরদারি চালিয়ে যেতে হবে।”)
রোহানঃ বিলকুল সহি, স্যার। হাম হর কদম পর সতার্ক রহেঙ্গে। জব তক ইস চক্র কা আখরি ব্যক্তি পকড়া নেহি যাতা, তব তক ইয়ে মিশন অধূরা হ্যায়।
(“একদম ঠিক, স্যার। আমরা প্রতিটি পদক্ষেপে সতর্ক থাকব। যতক্ষণ পর্যন্ত এই চক্রের শেষ ব্যক্তি ধরা না পড়ে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই মিশন অসম্পূর্ণ।”)
সিআইডি অফিসার রণবীর সিংঃ ঠিক হ্যায়, রোহান। হামেঁ ভরোসা হ্যায় কি আপ অউর আপকি টিম ইসে পুরি তরহ খতম কর দেঙ্গে। আগর কিসি ভি মদদ কি জরুরত হো, তো হমে তুরন্ত বাতায়েং।
(“ঠিক আছে, রোহান। আমাদের বিশ্বাস যে আপনি এবং আপনার টিম এটি পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারবেন। যদি কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তবে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে জানান।”)
রোহানঃ “ঠিক হ্যায় স্যার বলে ফোনটা কেটে দিলো রোহান।
প্রায় সন্ধ্যা এখন কুহু কি করছে দেখা দরকার। তাই আবাও ল্যাপটপ টা অন করে দেখতে পেলো কুহু পড়তে বসেছে। রোহান একটু হাসলো।
রোহান রুম থেকে বাহিরে বের হয়ে নিচে নেমে দেখলো তার মা আর ভাবীমা কথা বলছে। রোহান পাশে গিয়ে বসেই ওর ভাবীমা বললো,, কি গো দেবরজী,, আজ কালকি আমার ননদ কে কাছ ছাড়া করছোনা ব্যাপার কি?,
রোহান চোখ বন্ধ করে বুকে হাত দিয়ে বললো কি করবো বললো,, ফুলটা তো আমার আমার ফুলে যাতে অন্য কোন ভ্রমর বসতে না পারে তার ব্যবস্থা করছি। যদি আমি কাছে কাছে থাকি তাহলে তো আর কোন ভ্রমর আসতে পারবে না। তা তোমরা কি নিয়ে কথা বলছিলে?
কি নিয়ে আবার তোর বাপ চাচারা আসছেন একটু পরে তাই নিয়েই। না জানি কোন অশান্তি বাঁধে সেইটা নিয়ে ই টেনশন করছি।
উঁহুম টেনশন করো না। আমি আছি তো সবটা সামলে নিবো শুধু কুহুকে রুমের বাহিরে আসতে দিয় না। কাল ওর পরীক্ষা যদি পরীক্ষায় খারাপ করে এইসব ঝামেলায় তার থেকে ভালো ও ঘরে থাক।
রুমে থাকলে তো শুনবেই।
মা তুমি ভুলে যাচ্ছো আমার রুমটা সাউন্ড প্রুব সো কোন চিন্তায় নাই। দরজাটা লক করে দিলে ই হবে।
বাহ্ আমার দেবরজী তো খুব চালাক। তোমার রক্তে শিরায় শিরায় ব্রিটিশ।
কি করবো বলো তোমার চাচা শ্বশুর,, তোমার বাবা শ্বশুড়,, ফুফু শ্বাশুড়ির শরীরের রন্ধনে রন্ধনে ব্রিটিশ। সো তাদের কে ঠিক করতে তো আমাকে মহাব্রিটিশ হতে হবে।
ওর কথা শুনে ওর মা আর ভাবীমা হেসে উঠলো।
রোহানের মা আস্তে করে রোহানের বাহুতো চাপর দিয়ে বললো,, ফা”জি”ল একটা।
রোহানের মা আর রোহানের ভাবীমা রান্নাঘরে গেলো কাজের লোকদের সব দেখিয়ে দিতে।
রোহান বসা থেকে উঠে কুহুর রুমে গেলো দুই একবার দরজাতে নক করতেই দরজাটা হুট করে খুলে গেলো। দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতে দেখলো কুহু কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কুহুকে দেখে রোহান ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে বললো,, কি রে তোর লজ্জা কি এখনো কাটেনি? না কাটলে পরে কাটাবি এখন আয় আমার রুমে পড়তে বসবি।
আমি এইখানেই পড়বো।
কোন কথা হবে না।
আমিও যাবো না।
কুহুরানী তুই আমাকে জীদ দেখাচ্ছিস তোর এই জেদ আমার সামনে তোর জেদ খাটবে বলে কুহুর কোমড়ে ধরে কাঁধে তুলি নিয়ে আরেক হাতে কুহুর বইটা নিয়ে রোহান চললো তার রুমে বেচারি কুহু ঝুলে আছে রোহানের কাঁধে। রোহানের সামনে কুহু তো ছোট এতটুকু পাখির বাচ্চা ওকি আর পাড়বে ওর সাথে। চুপচাপ রইলো। বাহিরে যে কেউ ছিলো না কারও সামনে যে ও পড়েনাই এইটাই ওর ঢের ভাগ্য। রোহান রুমে এসে কুহুকে কাঁধ থেকে নামিয়ে বিছনায় বসিয়ে দিলো।
কুহু বিরবির করে বললো,, হাতি একটা।
রোহান কুহুর কথা শুনে কুহুর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বললো,, ওয়াট ইউ স্যা কুহু?
নাথিং।
স্যা এগেইন কুহু।
কুহু একটু চুপ থেকে বললো হাতি।
রোহান বুকে হাত গুঁজে আলমারির সাথে হেলান দিয়ে বললো,, কাকে হাতি বলেছো?
কুহু ওড়নার একটা অংশ টা আঙ্গুলে পেঁচাতে পেঁচাতে বললো আপনাকে।
সিরিয়াসলি কুহু। রোহান বড় বড় কদম ফেলে কুহুর সামনে এসে কুহুর গা থেকে ওড়না টা টেনে নিয়ে বললো এইটা তো শাস্তি। চুপচাপ পড়। আর একটা কথা বললে তোকে ভয়ংকর শাস্তি দিবো কুহু কথা না বাড়িয়ে পড়ছে। রোহান দরজাটা টেনে দিয়ে রুম থেকে বের হলো। বের হয়ে নিচে এসে সোফায় বসে টিভি ছাড়লো। ঠিক সেই সময় প্রবেশ করলো,, ওর বাবা,, চাচা,, চাচি আর ওর একমাত্র চাচাতো বোন।
ওদের দেখে তীর্যক হাসলো রোহান। রোহানের হাসিটা যেনো ওদের কাটা ঘা এ নুনের ছিটা দেওয়ার মতো।
রোহানের বাবা তেড়ে এসে বললো,, র্নিলজ্জ বেহাইয়া ছেলে ওই দিকে ছেলে দুটো ম”র”তে বসেছে আর তুমি কি করছো হাসছো? ওরা তোমার কাজিন হয়।
রোহান তার বাবার হাত টা কলার থেকে সড়িয়ে জ্যাকেট টা ভালো করে ঝেড়ে নিয়ে বললো,, এমন কাজিন মোর লাগবো না। এহন আপনার কথাখানা শেষ হইলে আপনে যাইবার পারেন। মোর আবার এতো কথা কহনের টাইম নাই। মোর আবার মেলা কাম।
রান্না ঘরের দরজাটাতে দাঁড়ি ভাবীমা আর মা সবটা শুনছে। ভাবীমা মুখ টিপে হেসে বললো,, মা আপনার ছেলে তো ভারি দুষ্টু। কিভাবে কথা বলছে।
ছোট থেকেই ঘাড় ত্যাড়া।
ওনারা কিছু না বলে চলে গেলো। ওনারা চলে যেতেই রোহান ও হেসে দিলো। রান্না ঘর থেকে এসে ওর মা ওর কান টা টেনে দিয়ে বললো অ”স”ভ্য ছেলে একটা।
রোহান আর কথা না বাড়িয়ে সে রুমে গেলো রুমে গিয়ে দেখে কুহু ঘুমিয়ে পড়েছে। রোহান বুঝে পায় না না খেয়ে একটা মানুষের ঘুম কিভাবে আসে। ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে দেখে মায়া লাগলো তাই সুন্দর করে বিছানায় শুইয়ে দিলো। রাতে চুপচাপ সবাই খেয়ে রুমে চলে এলো রোহান ও রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে কুহুকে টেনে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।
—
সকালে কুহুর আগে ঘুম থেকে উঠলো রোহান। ঘুম থেকে উঠে দেখলো কুহু তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। রোহান কে আর পায় কে ইশ এই রকম একটা মূহুর্তের জন্য কতগুলো দিন কতগুলো মাস কতগুলো বছর অপেক্ষা করে ছিলো। আজ সে সার্থক। মানুষ না কি শরীর ছুঁয়েও তৃপ্তি পায় না অথচ আমি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর এইভাবেই থাকতে পারবো। শুধু ভালোবাসি ভালোবাসি বলে হয় না ভালোবাসলে সেই মানুষটাকে আগলে রাখতে হয়,, সবসময় পাশে থাকতে হয়,, ভালোবাসা একটা দায়িত্ব একটা কর্তব্য যা পালন করতে হয়,, রয়াল থাকতে হয়,, ভালোবাসার মানুষটিকে সম্মান দিতে হয় শ্রদ্ধা করতে হয় তবে ই না ভালোবাসার সার্থকতা। আর আমি আজীবন এইসব পালন করে যাবো বুঝলে তো কুহুরানী। কুহুর মাথাটা বুকের সাথে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো,, “ইউআর মাই এভরি-থিং” তারপর কুহুর চুলে মুখ ডুবালো। বেশ কিছুক্ষণ সময় এইভাবে থাকার পর রোহান এক লম্বা শ্বাঃস নিয়ে বললো,, “আই অ্যাম ইয়োর ডেসটিনি ” বেশ কিছুক্ষণ এইভাবে থাকার পর রোহান উঠে ফ্রেশ হতে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর কুহু ঘুম থেকে উঠে বসে আড়মোড়া দিতে এক বড়সড় ঝটকা খায় কারন সে যখন দেখলো সে রোহানের ঘরে তখন তার চোখ গুলো বড় হয় যায়। রোহান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে কুহু এইভাবে বসে আছে। রোহান আলমারি থেকে জ্যাকেট টা পড়তে পড়তে বললো,, এতো ভাবার কিছু নেই কাল পড়তে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলি আলমারির এক সাইড থেকে একটা পেপার বের করতে করতে “জাস্ট ফর্গিভ ইট” তারপর কুহুর সামনে এগিয়ে গিয়ে একটা পেইন আর পেপার টা এগিয়ে বললো “সাইন হিয়ার”।
কুহু ভ্রুঁ কুঁচকে রোহানের দিকে তাকিয়ে বললো,, কিসের পেপার?
ওই আর কি তোর নামে ব্যাংকে কিছু টাকা রেখেছি তার জন্য তোর সাইন লাগবে ঝটপট করে ফেলতো।
কুহু কিছু বলতে নিলে,, রোহান কুহুর ঠোঁটের আঙুল দিয়ে বললো হুঁশ “নো মোর কোশ্চেনস, ‘ডু অ্যাজ আই সে “। “ডু ইউ ট্রাস্ট মি?”
কুহু উপর নিচ মাথা নাড়ালো অর্থ সে করে।
ভেরি গুড তাহলে “সাইন দ্যা পেপার “।
কুহু রোহানের হাত থেকে পেইন টা নিয়ে পেপার টাতে সাইন করে দেয়।
রোহান বললো যা ফ্রেশ হয়ে আয় নাস্তা করে নিবি আজ একটু দেরিতে উঠেছিস পড়তে হবে না রেডি হয়ে বের হবো। নয় টা প্রাই বাজতে চললো।
কুহু বের হয়ে গেলো রোহান এর রুম থেকে। রোহান এর রুম থেকে কুহুকে বের হতে দেখলো রোহান এর বাবা,, চাচা,,চাচি ওরা নিজে বসে ছিলো। কুহু তার রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো নামার সময় দেখলো রোহান ও এসে বসে আছে নাস্তার টেবিলে। কুহু দ্রুত পায়ে নেমে রোহানের পাশের চেয়ার টাতে বসে পড়লো। রোহান কুহুর প্লেট খাবার দিলো। কুহু মাত্রই রুটি ছিঁড়ে ভাজি টা নিয়ে মুখে দিয়ে চিবুতে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময় ওদের বাড়িতে প্রবেশ করলো কুহুর মা। তিনি এসে বললো,, এইখানে যেহেতু সবাই উপস্থিত তাহলে আমি একটা কথা বলতে চাই।
সালমা আহাম্মেদ বললো,, কি কথা?
আমি কুহু নিয়ে যেতে এসেছি। আমি তো ওর মা ওর উপর আমারও কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে তাই ওকে বিয়ে দিতে চাই।
এই কথা টা শুনে রোহান হাত তালি দিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
শ্রাবনী রওনকের কানে কানে বললো,, রোহান এইভাবে হাসছে কেনো?
খুব সিম্পল ওর মাথায় অন্য কিছু চলছে।
ওকে এইভাবে সবাই হাসতে দেখে বাকিরা তো সবাই অবাক। কুহুর মা বললো,, রোহান “ওয়াই আর ইউ লাফিং লাইক দিস?”
“বিকজ দিস ওয়াজ দ্যা বেস্ট ফান অফ 2025 “। যেই মেয়েটাকে দিনের পর দিন তুমি ফেলে রেখেছিলে তার মামার বাড়ি মেয়েটা বেঁচে আছে কি না ম”রে গেছে তার কোন খবর রাখো নেই। মামার বাড়িতে লাঠি-ঝেটা খেয়ে বড় হয়ে আমাদের বাড়িতে এসে সেইম অবস্থা। শুধু আমরা কয়েক জন আছি যে মেয়েটাকে আগলে রেখেছি আজ তার চিন্তায় আপনার ঘুম আসছেনা মিসেস সিকদার। আজ এসে তার বিয়ের কথা বলছেন। “ফর ইউ কাইন্ড ইনফরমেশন শী ইজ ম্যারিড “।
কুহু ম্যারিড শুনাতে যেনো ওরা চমকে গেলো। শুধু মাত্র রোহানের মা,, ভাই-ভাবী,,আর বোন বাদে কারন ওরা তো সবটা জানে। তবে জানে কুহু তাই কুহু অবাক হয়েছে। কুহু কিছু বলতে নিলে রোহান হাত তুলে বাঁধা দিয়ে বললো তোর প্রশ্নের উত্তর পরে পাবি।
কুহুর মা বললো,, কার সাথে বিয়ে হয়েছে আর ওর কে সে?
“শী হ্যাজ মেরিড মী” আর প্রমান মা ওর সাথে যে আমার ধর্মে মতে বিয়ে হয়েছে সেইটা তো তুমি আর ভাইয়া জানো আর স্বাক্ষী ও ছিলে আজ সকালে আমাদের রেজিস্ট্রাি ম্যারেজ হয়েছে তার প্রমান আছে ফোন বের করে সেই পেপারে ছবি দিয়ে বললো দেখে নি।
ওনি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে বললো আমি মানিনা।
প্লিজ সাত-সকালে আর হাসিয়েন না তো “ইট ডাজেন্ট ম্যাটার ওয়েদার ইউ এগ্রি অর নট” আন্ডারস্ট্যান্ড।
আমি কুহুর সাথে কথা বলবো।
কোন লাভ নেই আপনার মতো নোংরা মহিলার ছায়াও ওর উপর পড়তে দিবো না। স্টে আওয়ে ফ্রম হার। নয়তো আমার থেকে খারাপ কেই হবে না। রোহান কুহুকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজেও খাচ্ছে কুহুকেও খাইয়ে দিচ্ছে খাওয়া শেষ করে কুহুর হাত টা ধরে ওর মার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,, এই যে দেখতে পারছেন হাত টা ধরেছি কেয়ামতের আগে ও ছাড়বো না। হাশরের ময়দানের আল্লাহ্ কাছে ওকে চেয়েনিবো হোক সেইটা জান্নাত বা জাহান্নাম। তবুও ওকেই আমার চাই। আল্লাহ্ হাফেজ শ্বাশুড়ি মা দোআ কইরেন বলে কুহুকে নিয়ে রওনা দিলো কলেজের উদ্দেশ্যে। সবাই ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। গাড়ি চালাতে চালাতে রোহান বললো,,
“শুন কুহু একই বন্ধনে বাঁধা দুজনে,,
আর এই বাঁধন তুই বা আমি কেই ছিন্ন করতে পারবো না যদি কেউ করতে ও চায় তাকে আমি রোহান আহাম্মেদ কে”টে টুকরো টুকরো করে দিবো “
আই লাভ ইউ লাইক ক্রেইজি। তারপর কুহুর কপালে চুম্বন করে তাকে কলেজের গেইট অব্দি পৌঁছে দিয়ে সে তার কাজে গেলো। সবকিছু নিয়ে কুহু একটু ঘেঁটে গেলো। ওর মস্তিষ্কে এর প্রভাব পড়লো ও রিয়েক্ট করা ও ভুলে গেলো।
—
বিলাসবহুল এক হোটেল রুমে বসে আছে রোহান,, অগ্নি,, আরো একজন CIDঅফিসার নাম পূজা সেন।
অগ্নি একটা ফাইল দিলো রোহানকে রোহান সেই ফাইল টা নিলো। তারপর ফাইল টা খুললো ফাইলটা খুলে কিছুর নামের দিকে চোখ টা আটকে গেলো ও যা ভেবিছিলো ওটাই ঠিক। রোহান ফাইল টা সোহেল কে দিলো সোহেল ও ফাইলে জড়িত থাকা ব্যক্তির নাম গুলো দেখে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো এও কি সম্ভব। রোহানের পূজার নামে মেয়েটিকে একদম ভালো লাগেনি কেমন যেনো গা এ পড়া টাইপের রোহান এসেছে পর থেকে কেমন ঘেঁষাঘেঁষি শুরু করে দিলো। কেমন করে তাকিয়ে থাকে জাস্ট ডিসকাসটিং লাগছে রোহানের কাছে। রোহান ফাইল টা হাতে নিয়ে অগ্নির সাথে হ্যান্ডশেক করে তারপর বের হয়ে গেলো। রোহান সোহেল কে বললো সোহেল শুন আজ রাতের ভিতর ফয়সাল কে ধরে নিয়ে আসবি আমার সামনে।
এখন কোথায় যাবি?
ডিপার্মেন্ট এ যাই শিহাব স্যার জরুলি তলব করেছেন।
আচ্ছা যা সাবধানে।
হুম তোকে যেই দায়িত্ব দিয়েছি সেইটা ফল কর প্লিজ।
অকে করবো।
রোহান তার গাড়িটা নিয়ে চলে গেলো।
সোহেল ও তার গাড়ি টা নিয়ে চলে গেলো।
ঘন্টা-দুয়েক পর রোহান পৌঁছালো ডির্পামেন্ট এ। রোহান সোজা স্যার এর রুমে এসে দরজাটা নক করলো। দরজাটা নক করতে ভিতর থেকে শিহাব চৌধুরী বলে উঠলো,, ইয়েস কামিং।
রোহান দরজা টা ঠেলে ভিতরে ঢুকে গিয়ে স্যার এর সামন গিয়ে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে বললো কেমন আছেন স্যার?
আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ্। কোন দরকারে আমাকে ডেকেছেন?
হুম ক্যাস টা কত দূর এগোলো?
প্রায় শেষের প্রথে।
ভেরি গুড। আমি জানতাম একমাত্র তুমি ই পারবে এই ক্যাস টা সমাধান করতে। ডির্পামেন্ট তোমার জন্য গর্বিত মাই চাইল্ড।
আরে স্যার এইটা আমার ডিউটি। সবার আগে আমার দেশ মাতা। তারপর অন্য কিছু। স্যার আমি আসি।
হুম আসতে পারো।
রোহান বের হয়ে এসে গাড়িতে বসে ডির্পামেন্ট এর থেকে বেশ দূরে এসে গাড়িটা থামিয়ে মাক্স টা খুলে ফেললো।
—
কুহু পরীক্ষা শেষে ক্লাস থেকে বের হলো। আজ পরীক্ষা টা তার বেশি ভালো হলো না। তাই সে মনমরা হয়ে হাটছে। ঠিক সেই সময় রোহান তার গাড়িটা কুহুর সামনে এনে দাঁড় করায় এতে কুহু বেশ কিছুটা হকচকিয়ে যায় তারপর যখন দেখলো রোহান তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে তখন শান্ত হলো রোহান কুহুর কাছে এসে ওর কোমল হাত দুটো ধরে বললো কি নিয়ে চিন্তা করছিলে সেই কখন থেকে হর্ণ বাজাছি শুনতে পাও নি তাই তো এইভাবে এসে দাঁড়ালাম। কি এতো ভাবছো? কিছু কি হয়েছে কেউ কিছু বলেছে? আমায় বলো আমি তার শি”র”শ্ছে”দ করে নিয়ে আসবো তোমার সামনে।
কুহু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখলো রোহানে পানে তারপর বিরক্তির সুর নিয়ে বললো,, আপনি সবসময় এতো হাইপার থাকেন কেনো?
তেমন কিছুনা একটু মন খারাপ ছিলো পরীক্ষা ভালো হয়নি+ সকালের বিষয় টা নিয়ে।
দূর বোকা মেয়ে এতো ভাবার কি আছে? তোমায় এতো ভাবতে হবে না তোমার ভাবনা গুলো আমায় দিয়ে দেও। আর তুমি রিলাক্স এ থাকতো। “আই অ্যাম হিয়ার, রাইট?” সো “ডোন্ট ওরি, বি হ্যাপি”। ট্রাস মি আই উইল হ্যান্ডল এভরিথিং।
কুহু অবাক হয়ে দেখলো। কুহুকে যে কখনো এতোটা ভালোবাসবে কুহু কখন বুঝতে পারেনি। বুঝতে পারেনি বললে ভুল হবে বুঝতে চায়নি। কিন্তু এখন সে চায়। কুহু একটা “অপ্রত্যাশিত” ঘটনা ঘটালো কুহু হুট করে রোহান কে জড়িয়ে ধরলো। আকস্মিক এমন কিছুর জন্য রোহান মোটেও প্রস্তুত ছিল না। সে তো “থ” মেরে রইলো। তারপর তার মস্তিষ্কে টনক নড়ে উঠলো। তাকে আর পায় কে সে তো মহাখুশি তার মন বলছে কুহুর মনে রোহানের জন্য ভালোবাসার নামক একটা জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। একটু পর রোহান বললো,, কুহুপাখি আমার ছাড়ো এইটা রাস্তা আমাদের বেডরুম না সবাই দেখছে এসো গাড়িতে এসে বসো। ওরা গাড়িটাতে উঠতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো।
গাড়ি টা এসে থামলো পাড়ার গলির মোড়ে একটা পর্লারে। কুহু জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে রোহানের দিকে তাকাতে রোহান বললো নাক ফুটো করতে হবে তো এইযে দেখো তোমার জন্য নোসপিন নিয়ে এসেছি। ভিতরে ছেলেদের এলাও না যাও তুমি “আই অ্যাম ওয়েটিং ফর ইউ” বলে কুহু কপালে চুম্বন এঁকে দিলো। কুহু নোসপিন টা নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে ঢুকে গেলো,, ১০ মিনিটের ভিতরে কুহু চলে আসলো। এইবার কুহুকে কেমন যেনো বউ বউ লাগছে সাদা পাথরে নাকফুলটা সূর্যের রশ্মিতে চিক চিক করে উঠছে অপলক দৃষ্টিতে রোহান তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ তারপর কুহুকে নিয়ে রওনা দিলো বাড়ির জন্য।
বাড়ি ফিরতেই কুহুরা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিয়ে সে তার রুমে চলে গেলো রেস্ট নিতে প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।
—
সন্ধ্যায় কুহু ঘুম থেকে উঠে তার খালামনি,, স্মৃতি আর ভাবীমার সাথে বসে গল্প করছিলো। কাজের একজন মহিলা এসে কুহুদের নাস্তা দিয়ে গেলো। কুহু ছিলো বলে রোহানের চাচি আর সেইদিকে যায়নি। কুহুর সাথে রোহানের বিয়ে টা তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি চেয়েছিলেন ওনার ভাই এর মেয়েকে রোহানের সাথে বিয়ে দিতে কিন্তু হলো কি রোহান কিছু না জানিয়ে বিয়ে করে নিলো কুহুকে।
সন্ধ্যার নাস্তা খেয়ে কুহু পড়ছিলো। সেই মূহুর্তে রোহান হুড়োহুড়ি করে কুহুর রুমে ঢুকলো কুহু একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। তারপর নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,,আপনি এখানে কি চায় আপনার?
এ আবার কেমন কথা কি চায় মানে? বারে আমার বাবুর আম্মু এইখানে আমি আসবো না। এই নে তোর জন্য নিয়ে এসেছি ডিনারের পর সুন্দর করে সেজে রুমে আসবি যদি না এসেছিস তাহলে খবর আছে বলে চলে গেলো।
কুহু হাতের থাকা প্যাকেট টা খুলে নিয়ে দেখলো একটা লাল জামদানী শাড়ি তাতে “এম্ব্রয়ডারি” কাজ করা অনেক সুন্দর চুলের জন্য ফুলের গাজরা নিয়ে এসেছে। কুহুর খুব পছন্দ হয়েছে। কুহু এইসব সুন্দর করে গুঁছিয়ে রেখে পড়তে বসলো। পড়তে পড়তে ডিনার টাইম হয়ে গেলো। কুহুরা সবাই ডিনার করে নিলো। কুহু ডিনার করে রুমে এসে আলমারি খুলে শাড়ীর সাথে সব প্রয়োজনী জিনিস নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো তারপর সুন্দর করে শাড়ি পড়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাল্কা সেজে নিয়ে কোমড় ছাড়া লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে সুন্দর করে গাঁজরা টা দিয়ে তারপর রোহানের ঘরের দিকে গেলো,,, কুহু লজ্জা মিশ্রিত অনুভূতি নিয়ে এগিয়ে চললো রোহানের রুমে দিকে দরজা টা খুলা ছিলো খুলা দরজায় দিকে তাকিয়ে আছে রোহান লাল পরিহিত এক অষ্টাদশী কন্যার পানে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটি তার বিবাহিত স্ত্রী ভাবতেই অন্তরে এক শীতল অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। উফফ কি সুন্দর এক অনুভূতি। রোহান এগিয়ে গেলো কুহুর পানে তারপর হাত টা ধরে ঘরের ভিতর নিয়ে এসে দরজা টা লক করে দিয়ে কুহুকে পাঁজা কোলে নিয়ে এসে বিছানায় বসিয়ে দিলো। তারপর আলমারি থেকে দুটো বক্স নিয়ে কুহুর সামনে হাটু মোড়ে বক্স টা খুলে দিয়ে বললো,, তোমার হাত জোড়া খালি এই চুড়ি জোড়া তোমার জন্য বানিয়ে নিয়ে এসেছি একদম “কম্ফ্-টার-বিল” রোহান যত্ন সহকারে পড়িয়ে দিয়ে তারপর আংটির বক্স টা খুলে বললো,,
” প্রাণের চেয়েও প্রিয় স্ত্রী,,
আপনি আমার হৃদয়ের এক বিশেষ অংশ
আপনার জন্য আমার হৃদয়ে বানিয়েছি
ভালোবাসার মহল আর সেই মহলে
নিত্যদিন খেলে যায় তুমি নামক
এক পবিত্র অনুভূতি “
তুমি আমার হবে শুধু আমার একান্ত আমার। ক্যান উই বিইকম ক্লোজ?
কুহু কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,,
আমি আপনাকে ভালোবাসি রোহান তবে কখন কিভাবে ভালোবেসে ফেলেছি জানিনা যখন আপনি ইন্ডিয়াতে ছিলেন তখন কেমন যেনো শূন্যতা অনুভব করতাম। কোন কাছে মন বসাতে পারিনি। কাল আপনার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শুনার পর আমার অনুভূতি গুলো আরো এক ধাপ এগিয়ে যাই তারপর বুঝতে পারলাম আমি আপনাকে ভালোবাসি ছেড়ে যাবেন না তো কখনো?
রোহান কুহুর অনামিকাতে আংটি পড়িয়ে দিয়ে তার হাতের পিঠে চুম্বন করে বললো,, প্রশ্ন ই উঠে না। তুমি আমার আত্মা আত্মা ছাড়া কি কেউ কখনো বাঁচে।
“তুমি আমি অবিচ্ছেদ্য, এক মন এক প্রাণ,
যতদিন এই পৃথিবী, ততদিন থাকবে ছায়া যেমন আকাশে হেমন্ত বাণ।
প্রেমের নদী বয়ে চলুক, দু’টি হৃদয় এক সুরে,
জীবন হোক সঙ্গী, যাত্রা হয়ে উঠুক পূর্ণ,
বহে যেন ভালোবাসার বায়ু, হাওয়া যেন সুগন্ধে মিষ্টি।
তুমি আমি অবিচ্ছেদ্য, চিরকাল, চিরদিনের মতো,
অগাধ সাগরে ডুবতে, কিন্তু কখনো হারানো নয় “।
রোহান উঠে কুহুকে শুইয়ে দিয়ে নিজেও কুহুর উপর শুয়ে কুহুর অধর জোড়া ছুঁয়ে দিচ্ছে তার অধর দিয়ে। রোহান আজ তার ভালোবাসার পিপাসা তৃষ্ণণা মিটাচ্ছে। ঢুবে যাচ্ছে তারা ভালোবাসার সাগরে। দুই দেহ দুই মন আজ মিলেমিশে একাকার হচ্ছে। পূর্ণতার তৃপ্তি পাচ্ছে ভালোবাসা।
একই_বন্ধনে_বাঁধা_দুইজনে
পর্বঃ-১২ (প্রথম খন্ড)
নীলাশা_চৌধুরী
সকালে কুহু সবার আগের ঘুম থেকে উঠেছে। রোহান তখনো ঘুমে আছন্ন হয়ে আছে। ঘুমন্ত রোহানকে কুহু ভালো ভাবে পর্যবক্ষণ করছে। ঘুমন্ত রোহানের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁটটা আলতো করে ছুঁয়ে দিলো। তারপর যেইনা কুহু উঠতে যাবে সেই মূহুর্তে কুহুর কোমর টা জড়িয়ে ধরে টেনে তার সাথে মিশিয়ে নিয়ে কুহুর ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে বললো,, চুমু দেওয়ার যখন এতো ই শখ তখন জেগে থাকার অবস্থায়ই দিতে পারিস তখন ফিল হয় কিন্তু ঘুমন্ত অবস্থায় দিলে কি আর ফিল হয় তুই বল।
ছিহ্ আপনি অ”স”ভ্য হয়ে যাচ্ছেন।
আমি সভ্যই বা কবে ছিলাম তোর ব্যাপারে আমি বরাবরই বেপরোয়া ছিলাম।
এতো ভালোবাসেন কেনো?
কারন তুই আমার মায়াবতী তাই।
যদি হারিয়ে যাই তখন কি করবেন?
হুঁশ এই কথা মুখেও আনিস না তাহলে সেইদিনই আমি লা”শে”র পরিণত হবো।
“কুহু এই বুকে কান পেতে শুন না
আমার হৃদপিণ্ড টা কেমন ধুকপুক করছে
এই টা কখন হয় জানিস যখন তুই আমার সাথে থাকিস তখন তোর আর আমার হৃদপিণ্ড টা এক হয়ে যায়।
যত দিন বেঁচে থাকবো,,,
ইভেন আখিরাতেও
হাশরের ময়দানে ও আল্লহ্ কাছে
তোকে চেয়ে নিবো।
তুই আমার একান্ত আমার। #একই_বন্ধনে_বাঁধা_দুজনে পড়েছি সেই বাঁধান টা আজীবন থাকবে। নে উঠ ফ্রেশ হয়ে নে তোর তো আবার পরীক্ষা।
আমার লজ্জা করছে।
ওমা কাল না তোর লজ্জা ভেঙ্গে দিয়েছি তাহলে আবার কেন লজ্জা পাস। না-কি আবার ভাঙ্গাতে হবে। ভাঙ্গতে হলে বলে দে। আমার কোন আপত্তি নেই।
কুহু রাগী চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে রোহানের দিকে।
রোহান কুহুর নাক টা টেনে দিয়ে বললো আমার কুহুপাখির আবার রাগ ও আছে।
উফ্ আপনি না যাতা আমি যাচ্ছি ফ্রেশ হতে। আলগোছে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে দরজার কাছে গিয়ে লক টা খুলতে নিলে রোহান বললো কোথায় যাচ্ছিস?
বারে ফ্রেশ হবো না ড্রেস তো আনিনি।
তুই কি ব”ল”দ আমি আলমারিতে তোর জন্য কিছু ড্রেস এনে রেখেছি ওখান থেকে একটা নিয়ে নে।
কুহু সল্প হেসে আলমারি কাছে গিয়ে এক সেট জামা আর টাওয়েল টা নিয়ে ওয়াশরুম এ গেলো।
রোহান বসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো চায়না CID থেকে একটা মেইল এসেছে। মেইলে লেখা হয়েছে ওদের কে ধরা হয়েছে আর ওরা অনেক কিছু স্বীকার করেছে আমি সেই সেই ভিডিও গুলো আপনাকে পাঠাছি। আর কিছুর জন্য সাহায্য লাগলে জানাবেন।
রোহান কানে ব্লুটুথ টা লাগিয়ে কাজে ফোনে ভিডিও গুলো অন করে দেখছে। সব ভিডিও এক এক করে শুনার পর রোহানের ঠোঁটে বাঁকা হাসি খেলা করছে। ওয়াশরুমের দরজার লক খুলার শব্দে রোহান হাসিটা মিলিয়ে গেলো। কুহু ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো টাওয়ালের সাহায্যে মুছছে। এই দৃশ্যাটা দেখে রোহান কি আর ঠিক থাকে। রোহান বিছানা থেকে নেমে কুহুকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে স্নেহ আর আকাঙ্ক্ষার মিশ্রণে, তার নিঃশ্বাস কুহুর গা স্পর্শ করল। দুই দেহ একে অপরকে শ্বাসে শ্বাসে জড়িয়ে নিলো। যেনো পৃথিবী আর কিছুই নেই, শুধু এই মুহূর্তে তারা দুজনেই একে অপরের মধ্যে হারিয়ে গেছে।
“ভেজা চুলে ভেসে আসে, রোদে ভেজানো স্বপ্নের রাশি,
চুলের ফাঁকে সপথের মৃদু ছোঁয়া, ঘুরে আসে আবেগের বাশি।
মুছতে মুছতে চুপিসারে, দিনটা যেনো হয়ে যায় রাত,
তার চোখের জ্যোতি আঁকা থাকে, চুলে হালকা বাতাসের সঙ্গীভাবে কাট”
এমন করে বলবেন লজ্জা লাগে।
ওরে আমার লজ্জাবতীরে। তুই বসে চুল শুকা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর নিজে গিয়ে নাস্তা খাবো।
কুহু বিছানায় বসে চুলগুলো ভালোভাবে মুছে নিচ্ছে। তারপর সে টাওয়েল টা নিয়ে বেলকনিতে মেলে দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে ফাইলটা হাতে নিয়ে আবার রোহানের রুমে আসলো। বসে বসে রোহানের জন্য অপেক্ষা করছে।
রোহান ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে কুহুকে নিয়ে নিচে গেলো নাস্তা করতে। ওদের দুইজন কে একসাথে নামতে দেখে ওর বাবা,, চাচা,,চাচির যেনো জ্বলে উঠছে। রোহান ওদের কে ইগনোর করে সোজা টেবিলে গিয়ে বসলো। রওনক রোহান কে খোঁচা মেরে বললো কিরে এই শীতে সাত-সকালে গোসল ব্যাপার কি?
ওমা ব্যাপার আবার কী তুমি বুঝোনা ভাইয়া নতুন দাম্পত্য রা কেনো সকাল সকাল গোসল করে। ওটা যেই সেই গোসল না ফরজ গোসল।
রওনক রোহানের কথা শুনে একদম নিস্তব্ধত হয়ে গেলো। তুই আসলেই একটা কান কা”টা র্নি”ল”জ্জ একটা।
পুরুষ মানুষ র্নি”ল”জ্জ না হলে চলে না।
কুহু খাচ্ছে কোন কথা কানে নিচ্ছে না। ওর ভাবটা এমন যে ওর সামনে খাওয়া ছাড়া কিছু নেই। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রোহান কুহুকে নিয়ে বের হয়ে গেলো। কুহুকে কলেজ এ নামিয়ে দিয়ে রোহান চললো তার কাজে।
—
রোহান, অগ্নি, সোহেল আর পূজা একটি মিশনে রয়েছে। তাদের টার্গেট হলো চারজন শীর্ষ অপরাধী, যাদের ধরলেই এই বিপজ্জনক খেলা শেষ হবে।
অগ্নি, ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে রোহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি ভাবছো? কী করবে এখন?”
রোহান ঠান্ডা গলায় বলল,
“হুম… ধরবই। তবে সহজে নয়। ওরা হচ্ছে দ্রুতশেয়াল—চতুর আর ক্ষিপ্ত। এদের ধরতে হলে একটু খেলাতে হবে। আর তোমরা তো আছোই পাশে, তাই না?”
অগ্নি মুচকি হেসে বলল,
“ঠিক বলেছো। কিন্তু আমাদের চাল যে নিখুঁত হতে হবে। একটা ভুলেই ওরা ফসকে যেতে পারে।”
পূজা, যিনি এতক্ষণ নীরবে ছিলেন, শেষ পর্যন্ত বললেন,
“এইবার ভুল করা যাবে না। আমাদের চারদিক থেকে চেপে ধরতে হবে। সোহেল, তুমি কি ওদের গতিবিধি সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছ?”
সোহেল তখন আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে বলল,
“আমি ওদের ফলো করছি। ওরা কখন কোথায় যাচ্ছে, সব খবর আমার কাছে আছে। সামনে বড় একটা চালান দিতে যাচ্ছে। সেটাই ওদের জন্য শেষ ভুল হবে। তখন আমরা ওদের হাতে-নাতে ধরব।”
অগ্নি একটু উত্তেজিত হয়ে বলল,
“চালান দিতে গেলে ওরা অনেকটা সময় এক জায়গায় থাকবে। এটাই আমাদের সুযোগ। কিন্তু সঠিক জায়গাটা জানতে পারলে খেলাটা জমবে।”
রোহান মাথা নাড়িয়ে বলল,
“ঠিক আছে, সোহেল, তুমি ওদের গতিবিধি নজরে রাখো। পূজা, তুমি তোমার সিস্টেম থেকে কিছু বের করতে পারো? বিশেষ করে যদি কোনো গোপন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে থাকে।”
পূজা সঙ্গে সঙ্গেই ল্যাপটপ খুলে কাজ শুরু করল।
“দেখি। আমি ওদের যোগাযোগের ফিড স্ক্যান করছি। যদি কিছু মেলে, তাহলে জানাব।”
অগ্নি হাসি দিয়ে বলল,
“তাহলে এবার শুরু করা যাক। দ্রুতশেয়ালদের ফাঁদে ফেলব, কিন্তু ওদের নিজেদের চালকে আমাদের জন্য অস্ত্র বানাতে হবে।”
রোহান দৃঢ় গলায় বলল,
“ঠিক বলেছো। এইবার বাঘ-বন্দি খেলা শেষ করতে হবে।”
সবার মধ্যে একটা নতুন উদ্যম দেখা গেল। পূজা তথ্য জোগাড় করতে ব্যস্ত, সোহেল তার নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে, আর রোহান ও অগ্নি ফাঁদ পাতার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে শুরু করল।
কিন্তু ওরা কি সময়মতো তাদের এই বিপজ্জনক টার্গেটগুলোকে ধরতে পারবে? নাকি এই চারজন দ্রুতশেয়াল তাদের জন্য নতুন চমক অপেক্ষা করছে?
রোহান ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। তার মুখে দৃঢ়তার ছাপ স্পষ্ট। গাড়ির দরজা খুলে বসে ইঞ্জিন চালু করল। তার সামনে এখন একটাই কাজ—শিহাব স্যারকে প্ল্যান এবং অপরাধীদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানানো।
গাড়ি ছুটছে শহরের রাস্তা ধরে। রাস্তাগুলো যেন নিস্তব্ধ, কিন্তু রোহানের মাথায় চিন্তার ঢেউ বইছে। সবার কথা, পরিকল্পনার প্রতিটি খুঁটিনাটি বারবার তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। তার সামনে থাকা একটি ফাইলের দিকে বারবার চোখ যাচ্ছে। ওই ফাইলের ভিতর রয়েছে অপরাধীদের গতিবিধি, চালানের সময়, এবং তাদের অবস্থানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
“শিহাব স্যারকে এটা জানানো ভীষণ দরকার। আমরা যদি ওদের হাতেনাতে ধরতে পারি, তাহলে এই মিশন সফল হবে। কিন্তু ছোট্ট একটা ভুল হলেই সব শেষ।” রোহান নিজেকে এভাবে মনেই মনে বলল।
গাড়ির স্পিডমিটার ক্রমশ বেড়ে চলেছে। হঠাৎ ফোনে পূজার নাম ভেসে উঠল। রোহান ব্লুটুথ হেডসেটে কল রিসিভ করল।
“হ্যাঁ পূজা, বলো।”
পূজার গলা অন্যপ্রান্ত থেকে ভেসে এল,
“রোহান, সাবধান থেকো। আমি সিসিটিভি ফিড হ্যাক করে দেখেছি, দ্রুতশেয়ালদের মধ্যে একজন যেন আমাদের গতিবিধি নিয়ে সন্দেহ করছে।”
রোহানের চোখ সংকুচিত হয়ে গেল। সে বলল,
“এটা ভালো খবর নয়। তবে চিন্তা করো না, আমি স্যারকে সব জানাচ্ছি। আমাদের প্রস্তুতি আরও শক্ত করতে হবে। তুমি নজর রেখো, যেকোনো আপডেট সঙ্গে সঙ্গে দিও।”
ফোন কেটে রোহান গ্যাস প্যাডেলে চাপ বাড়িয়ে দিল। CID অফিস এখন খুব কাছেই।
“সব ঠিকঠাক মতো হতে হবে। শিহাব স্যারকে জানানো মানে পরিকল্পনাকে আরও সুসংগঠিত করা। আমাদের আর সময় নেই।”
গাড়ি CID অফিসের গেটের সামনে এসে থামল। রোহান এক দমে অফিসে ঢুকে শিহাব স্যারের কেবিনের দিকে এগিয়ে গেল। তার হাতে ধরা ফাইলটা যেন এই মিশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র।
কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে এক মুহূর্ত থেমে শ্বাস নিল। তারপর কড়া নাড়ল। ভিতর থেকে শিহাব স্যারের গম্ভীর গলা ভেসে এল,
“ভেতরে আসো।”
রোহান দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে বলল,
“স্যার, আমাদের পরিকল্পনার জন্য আপনার অনুমতি প্রয়োজন। এবং এই ফাইলটায় এমন কিছু তথ্য আছে যা আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে।”
শিহাব স্যার তার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“বল, কী প্ল্যান করেছো?”
এবার রোহান ফাইল খুলে ধাপে ধাপে পুরো পরিকল্পনা শিহাব স্যারের সামনে তুলে ধরতে শুরু করল।
“গুড জব, মা’ই চাইল্ড। আই’ম ইমপ্রেসড।
রোহান উঠে দাঁড়িয়ে স্যালুট দিল।
“অলরাইট, স্যার। তবে অপারেশনটা আজ নয়, কাল করব। আমরা ওদের ওপর নজর রাখব, আর সবদিক থেকে প্রস্তুতি নিশ্চিত করব।”
শিহাব স্যার মাথা ঝুঁকিয়ে বললেন,
“ভালো সিদ্ধান্ত। ওদের ওপর নজরদারি চালিয়ে যাও। কাল অপারেশনের সময় যেন কোনো ফাঁক না থাকে। আমি ব্যাকআপ টিম প্রস্তুত রাখব।”
রোহান বলল,
“জি স্যার। আমরা পুরোপুরি তৈরি থাকব।”
CID অফিস থেকে বেরিয়ে রোহান দ্রুত গাড়িতে উঠল। ইঞ্জিন চালু করার পর সে টিমের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করল।
“পূজা, সোহেল, অগ্নি—সবাই শুনছো? শিহাব স্যার প্ল্যানটা অনুমোদন করেছেন। তবে অপারেশন কাল করা হবে। আজ রাত পর্যন্ত আমরা ওদের গতিবিধি নজরদারি করব। পূজা, তুমি সিসিটিভি ফিডের ওপর নজর রাখো।”
পূজার গলা ভেসে এল,
“ফিডের ওপর পুরো নজর আছে। কিন্তু একটা বিষয় মাথায় রাখো—ওরা সিগন্যাল জ্যাম করার চেষ্টা করছে। আমি সেটার প্রতিরোধে কাজ করছি।”
রোহান বলল,
“ভালো। কিন্তু নিশ্চিত হও, কোনো গ্যাপ যেন না থাকে। সোহেল, তোমার আপডেট কী?”
সোহেল বলল,
“আমি ওদের ফলো করছি। ওরা এখনো ফ্যাক্টরিতে আছে। তবে তাদের চালানের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। কাল ভোরের দিকে তারা ট্রাকগুলো বের করবে। জায়গাটা আমি ভালো করে চেক করেছি। কাল দুই দিক থেকেই ব্লক করলে ওরা পালাতে পারবে না।”
অগ্নি তখন তার পজিশন চূড়ান্ত করে বলল,
“আমার জায়গা ঠিক আছে। পেছনের পথও আমি ব্লক করে রাখব। যদি ওরা পালানোর চেষ্টা করে, প্রথম আঘাত আমি করব।”
রোহান মাথা ঝুঁকিয়ে বলল,
“ঠিক আছে। আজ রাতের জন্য সবাই প্রস্তুত থাকো। পূজা, তুমি ওদের যোগাযোগ সিস্টেম মনিটর করবে। সোহেল, ওদের গতিবিধি আপডেট দাও। আর অগ্নি, কাল ভোরের আগে আমরা পজিশন চেক করব।”
পূজা শেষবার বলল,
“রোহান, চালান কাল ভোরে ঠিক কয়টায় শুরু হবে, সেটা ট্র্যাক করছি। আরেকটু সময় দাও, আমি ফাইনাল সময় জানাব।”
রোহান দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
“সবাই সতর্ক থাকো। কাল ভোরে এই খেলা শেষ হবে। আর আমাদের কোনো ভুল করার সুযোগ নেই।”
পূজা বললো,,
“রোহান, ফাইনাল সময় রাত তিনটায়। চালান তখনই শুরু হবে। আমি সিস্টেম ট্র্যাক করছি, সবকিছু নিশ্চিত করছি।”
রোহান মাথা ঝুঁকিয়ে বলল,
“ঠিক আছে, পূজা। রাত তিনটায় অপারেশন শুরু হবে। সবাই প্রস্তুত থাকবে।”
সোহেল, আরেকটি আপডেট দিয়ে বলল,
“ওরা খুবই সাবধান। ফ্যাক্টরি থেকে বের হওয়ার জন্য একাধিক গাড়ি ব্যবহার করবে, বিভ্রান্তি তৈরি করতে। তবে আমি তাদের গাড়িগুলো নজরে রেখেছি, এবং তাদের গতিবিধি ঠিকমতো ট্র্যাক করছি।”
অগ্নি, ঠাণ্ডা মাথায় বলল,
“এরা যতই সাবধান হোক, আমার পজিশন পুরোপুরি সুরক্ষিত। পেছন থেকে চুপিসারে এগোচ্ছি। পালানোর কোনো সুযোগ ওদের থাকবে না।”
রোহান দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
“তাহলে সবাই প্রস্তুত থাকো। পূজা, তুমি ফিড মনিটর করো। সোহেল, তাদের গাড়ির গতিবিধি নজর রাখ। আর অগ্নি, পেছন থেকে আক্রমণ করো। আমি সামনে থাকব। একযোগে কাজ করতে হবে, কোনো ভুল করার সুযোগ নেই।”
পূজা দ্রুত জানাল,
“রোহান, রাত তিনটায় ওরা বের হবে। সিকিউরিটি সিস্টেমের কিছু দুর্বলতা আমি খুঁজে পেয়েছি। আমি সেটার ওপর কাজ করছি।”
রোহান নিশ্চিন্ত হয়ে বলল,
“ঠিক আছে, পূজা। সিস্টেমে আমাদের ঘাঁটানোটা একটা বড় সুযোগ হতে পারে। সবাই প্রস্তুত থাকো। কাল রাত তিনটায় আমাদের অপারেশন শুরু হবে।”
টিম একযোগে কাজ শুরু করল। রোহান গাড়ি চালিয়ে প্রস্তুত অবস্থায় ছিল। সবাই জানত, এটাই তাদের সবচেয়ে বড় সুযোগ। শিহাব স্যারের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী, অপারেশন কাল রাত তিনটায় শুরু হবে।
“সবকিছু ঠিক থাকলে, কাল রাত তিনটায় এই অপারেশন শেষ হবে,” রোহান নিজেকে মনে মনে বলল।
ঘড়িতে টাইম দেখলো রোহান সময় ১২ঃ৩০ টা রোহানকে দ্রুত যেতে হবে কলেজ থেকে কুহুকে নিয়ে আসতে হবে এতোক্ষণে ওর এক্সাম হয়তো শেষ হয়ে যাবে ও যেতে যেতে।
—–
এক্সাম শেষে কুহু বের হয়ে গেটের সামনে এসে তার বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছিলো ঠিক সেই সময় রোহান আসে ঝড়ের গতিতে গাড়িটা ওদের সামনে দাঁড় করিয়ে হুড়মুড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে বললো,, এই তুই ঠিক আছিস??
কুহু ঝালমুড়ি হাতে নিয়ে গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে রোহানের দিকে।
রোহান বললো,, তোর চোখ দুটো কে রসগোল্লা করে তাকিয়ে থাকতে বলি নাই উত্তর দে আমার প্রশ্নের?
কুহু নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,, আমি ঠিক আছি কি হইছে আপনার?
কিছুনা চলো বাসায় চলো।
ঝালমুড়ি খাচ্ছি তো গাড়িতে যেতে যেতে খাবে আসো। কুহুর হাত টা ধরে যেইনা গাড়িতে উঠবি ঠিক সেই সময় বাইকে করে এসে কেউ একজান কুহুকে শুট করে চলে যায়। সবকিছু এতো দ্রুত হলো যে সে প্রতিক্রিয়া করতেই ভুলে গেছে আচমকা কুহু তীব্র চিৎকার শুনে রোহানের মস্তিষ্কে টনক নড়ে রোহান পাশ ফিরে চাইতেই দেখে কুহু মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। যন্ত্রণা ছটফট করছে। কুহুর সাদা কামিজ টা রঞ্জিত লাল রাঙ্গা রক্তে। কুহুকে এই অবস্থায় দেখে রোহানের গোটা দুনিয়া যেনো নড়ে গেলো। রোহান এগিয়ে এসে কুহুকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসে চললো হসপিটালের উদ্দেশ্যে। কুহুর চোখ তখন নিভু নিভু। রোহান কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো,, কুহুপাখি প্লিজ চোট বন্ধ করিস না চোখটা খুলা রাখ। তোর কিছু হবে না। এইতো আমি তোকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি। কুহুর চোখের পলকও যেনো আর পড়ছিলো না। রোহান তখন সারা শরীরে উত্তেজনা আর ভয় নিয়ে গাড়ির গতি আরও বাড়িয়ে দিলো। হাসপাতালে পৌঁছাতে সবে মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি, কিন্তু মনে হচ্ছিলো সময় থমকে গেছে। কুহু একেবারে নিস্তেজ হয়ে গেছে। রোহান চিন্তিত হয়ে কুহুর হাতটা ধরে বললো, “তুমি আমার জীবন, কুহু, তুমি কিছু হবে না, আমি তোকে বাঁচাবো।”
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর রোহান দ্রুত কুহুকে নেমে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটলো। ডাক্তাররা অপেক্ষা করছিলো, তারা দ্রুত কুহুকে জরুরি চিকিৎসা দিতে শুরু করলো। রোহান বাইরের দিকে দাঁড়িয়ে ছিলো, তার চোখে এক অদ্ভুত দুঃখ আর অসহায়ত্ব ছিলো। মনে হচ্ছিলো পৃথিবীটা এখন তার জন্য অন্ধকার হয়ে গেছে।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর রোহান দ্রুত কুহুকে গ্যাঙওয়ে ধরে নেমে নিয়ে হাসপাতালের জরুরি ইউনিটে ছুটলো। ডাক্তাররা প্রস্তুত ছিলো, তাদের চোখে তৎপরতা আর চিন্তা। তারা তাড়াতাড়ি কুহুকে জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য অ.টি. (অপারেশন থিয়েটার) দিকে নিয়ে গেলো। রোহান চোখে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে শুধু দেখলো। তার মাথার ভিতর শব্দ মিশে যাচ্ছিলো, পৃথিবী যেন থেমে গিয়েছিলো।
ডাক্তারদের মধ্যে একজন দ্রুত রোহানকে পাশ থেকে ডেকে বললো, “আমাদের সময় খুব কম, আপনি এইখানে যেতে পারেন না। আমাদের কাজ করতে দিন।” রোহান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো, তার হৃদয় ফেটে পড়ছিলো, কুহু তার জীবনের অমূল্য রত্ন। কুহুর অবস্থা তার জন্য এক বিভীষিকা, তবে তাকে রক্ষা করার জন্য ডাক্তাররা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে—এটাই ছিলো তার একমাত্র আশার আলো।
রোহান হাসপাতালের করিডোরে দাঁড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে এক মুহূর্তের জন্য মনে করলো, “কুহু, তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না, তুমি ফিরেই আসবে।”
‘”ধূসর রঙে মোড়া এক নিঃসঙ্গ ভোর,
মেঘলা আকাশে জমে রয়েছে ম্লান এক ঘোর।
আলো-ছায়ার খেলা, সব যেন থেমে,
ধূসর পৃথিবী ডাকছে আপনেমনে।
নীরব পথের ধারে ঝরে পড়া পাতা,
ধূসর ছায়ায় মিশে জীবন যেন মলিন কথা।
তবুও এ রঙে লুকিয়ে আশার গান,
ধূসর শেষে আসে রঙিন নতুন ভোরের”
“জানি তুমি ফিরবে
কোন এক গোধূলিমাখা সন্ধ্যে,
আমি দাঁড়িয়ে থাকবো,
অপেক্ষার দৃষ্টিতে, ফুল হাতে,,
আকাশে লাল-সোনালি ছটা,
পাখিরা ফিরে যাচ্ছে নীড়ে,
আমার বুকের ভেতর এক অভিমান—
কিছু বলবে কি সেদিন ফিরে?
তুমি আসবে কি আলোর মতো,
নাকি নিঃশব্দে ছুঁয়ে যাবে মন?
আমি অপেক্ষায় থাকি,
তোমার ছোঁয়ার অপেক্ষায়, প্রতিটি ক্ষণ”
ঠিক বিকাল ৪ টা অগ্নি,, সোহেল,,পূজা,, রওনক,,স্মৃতি,, শ্রাবনী আর ওর মা বসে আছে কেবিনে। কিছুক্ষণ আগে কুহু কে কেবিনে শিফট করে গেছে।
ডাক্তার কুহুর কেবিনে ঢুকে সবার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ভাগ্য ভালো, গু”লি”টা তেমন গভীরে ঢোকেনি। তবে কুহু অনেক র”ক্ত হারিয়েছে, তাই সম্পূর্ণ সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগবে। আপনারা দয়া করে তাকে এখন বেশি প্রশ্ন করবেন না।”
সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। রোহান পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল, চুপচাপ। তার মনের মধ্যে তোলপাড় চলছিল। সে ধীরে ধীরে কুহুর কাছে এগিয়ে গেল। কুহু চোখ খুলে দেখলো, রোহান তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার মুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি, কিন্তু চোখের কোণে লুকানো কান্নার ছাপ।
কুহু মৃদু স্বরে বললো,
“আপনার এই অস্থিরতার কারণ কী, মিস্টার রোহান?”
রোহান হেসে বললো,
“তোর জন্য পাগল না হয়ে উপায় আছে? তুই তো আমার জীবনের শ্বাস-প্রশ্বাস। আর যদি কিছু হয়ে যেত, আমি কী করতাম?”
কুহু মৃদু হাসলো, তারপর বললো,
“আপনার চিন্তা করার কিছু নেই, আমি ঠিক আছি। তবে একটা কথা বলতে পারি?”
রোহান কিছুটা অপ্রস্তুতভাবে বললো,
“হ্যাঁ, বল।”
কুহু হেসে বললো,
“আপনি এত বড় নাটক করতে পারেন, আগে বুঝতে পারিনি। এই যে ছুটে এসে হুংকার দিয়ে আমাকে গাড়িতে তুলে নিতে চান, তার মানে কী?”
রোহান হতবাক হয়ে বললো,
“তুই এই অবস্থায় হাসতে পারছিস? আমি তো ভয়েই শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম! তুই জানিস, আমি কতটা দুশ্চিন্তা করছিলাম?”
কুহু এবার চোখ বন্ধ করে বিছানায় হেলান দিলো। তার কণ্ঠ মৃদু হলো।
“আপনার দুশ্চিন্তা দেখে মনে হলো, যেন পুরো পৃথিবীটাই থেমে গেছে। রোহান, আপনি কেন আমার জন্য এত চিন্তা করেন?”
রোহান কিছুক্ষণ চুপ রইলো। তারপর গভীর দৃষ্টিতে কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুই জানিস না, কুহু? আমি তোর জন্যই বাঁচি। তুই যদি কিছু হয়ে যেত, আমি কী করতাম?”
কুহু অবাক হয়ে রোহানের দিকে তাকালো। তার চোখে একধরনের বিস্ময় আর মায়া একসঙ্গে জ্বলজ্বল করছিল।
নার্সের কথা শুনে রোহান অনিচ্ছাসত্ত্বেও উঠে দাঁড়াল। দরজার সামনে এসে একবার কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই ভালো করে বিশ্রাম নে। আমি বাইরে আছি, কিছু দরকার হলে ডাকিস।”
কুহু শুধু মাথা নাড়ল। রোহান বাইরে বেরিয়ে গেল, কিন্তু তার চোখে-মুখে এক অজানা উদ্বেগ ফুটে ছিল।
কুহু ধীরে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। তার মনে অদ্ভুত এক উষ্ণতা কাজ করছিল। রোহানের ওই কথাগুলো—”তুই যদি কিছু হয়ে যেত আমি কী করতাম?”—তার হৃদয়ের গভীরে বাজছিল।
ঠিক সেই সময় কেবিনের দরজায় টোকা পড়লো। একজন নার্স ঢুকে বললো,
“ভিজিটিং আওয়ার শেষ। এখন রোগীকে বিশ্রাম করতে দিন।”
অগ্নি রোহানের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,, তুমার কি মনে হয় এইটা কি ইচ্ছাকৃত?
অবশ্যই ইচ্ছা কৃত কাল আমাদের অপরাশেন আজ কুহুর উপর এ্যাটাক এর অর্থ কেউ ফলো করে আমার দুর্বলতাতে আঘাত করতে চেয়েছিলো যাতে ভয় পেয়ে পিছিয়ে। আরে আমি হচ্ছি রেসের পাগলা ঘোড়া এতো সহজে কি আটকানো যায়। রোহান কিছুটা চিন্তিত হয়ে সোহেলের দিকে তাকিয়ে বললো, “তুই একটু কুহুর কলেজের আশপাশের সিসি ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ চেক কর। কিছু তো ঘটেছিলো, কেউ এই সব কিছু জানতো, আর এখন আমাদের দুর্বলতায় আঘাত করতে চেয়েছে। কোনোভাবেই যেন পালিয়ে না যায়।” সোহেল দ্রুত মাথা নেড়ে বললো, “বুঝেছি। তাড়াতাড়ি জানাবো।“ সে দ্রুত উঠল এবং রোহানকে একটি আশ্বস্ত দৃষ্টিতে দেখিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলো।
সোহেল এবার তার প্রিয় গ্যাজেটটি বের করলো, ফোনের স্ক্রীনে সিসি ক্যামেরার লিঙ্ক খোলার জন্য কিছু ডেটা ইনপুট করলো। তার চোখে চিন্তার রেখা স্পষ্ট। যতটুকু সম্ভব দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে ফুটেজের মধ্যে খুঁজে বের করা তার লক্ষ্য ছিলো। সোহেল জানতো, এটা তার পক্ষে কোনো সাধারণ কাজ নয়। যারা আক্রমণ করেছে, তারা খুবই পাকা পরিকল্পনা করেই এসেছে।
তার মস্তিষ্কে ঘুরছিলো একের পর এক সম্ভাব্য পরিকল্পনা, কিন্তু কোনো কিছুই পুরোপুরি পরিষ্কার হচ্ছিলো না। তার হাতে ছিলো একমাত্র সুযোগ, ফুটেজের সঠিক তথ্য।
—
সোহেল যায় কুহুর কলেজের আশেপাশে সিসি ক্যামেরা চ্যাক করতে একটা জায়গায় চোখ আটকে যায়। যা দেখে সোহেল অবাক। সোহেল রোহানকে ফোনে বললো, “রোহান, আমি কিছু পেয়েছি। বাইক আরোহী যে দ্রুত পালিয়ে গেছে, তার থেকে ফুটেজে কিছু অদ্ভুত তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে স্পষ্টভাবে দেখে মনে হচ্ছে, সে কোনো পরিচিত লোক।”
রোহান এক পা এগিয়ে গিয়ে হাসপাতালের করিডোরে দাঁড়িয়ে বললো, “বিস্তারিত বল, সোহেল।”
“ছবিটা পাঠাচ্ছি, দেখো,” সোহেল দ্রুত ফোনের স্ক্রীনে ফুটেজের স্ক্রীনশট পাঠালো। সোহেল জানালো, বাইক আরোহীর পরনে বিশেষ ধরনের একটি জ্যাকেট ছিল, যা রোহান আগে দেখেছিলো।
রোহান তার মুখে এক চিন্তিত ভাব নিয়ে ফুটেজটি দেখলো। “এটা তো আশ্চর্যজনক… সোহেল, ওই জ্যাকেটটা যে পরেছে, সে আমার পরিচিত কেউ।”
“মানে?” সোহেল অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।
“এটা এক ধরনের জ্যাকেট, আমি জানি, গত মাসে এক লোককে সেটা পরতে দেখেছিলাম। কে হতে পারে সে?” রোহান ভাবতে লাগলো, আর তার চোখে উদ্বেগ স্পষ্ট হয়ে উঠলো।
“ঠিক আছে, আমি তদন্ত করবো,” সোহেল বললো এবং তৎক্ষণাৎ কাজ শুরু করে দিলো।
এদিকে রোহান হাসপাতালের লবি থেকে বেরিয়ে গিয়ে দ্রুত কুহুর কেবিনের দিকে এগিয়ে গেল। তার মনে উদ্ভূত সমস্ত চিন্তা একে একে সারি সারি চলে আসছিলো। কুহু, তার জীবন, তার ভালোবাসা—এখন তাকে রক্ষা করতে হবে, কিন্তু কে তাকে শিকার করতে চাইছে, এই প্রশ্ন আরও বেশি জটিল হয়ে উঠলো।
কেবিনে একটু উঁকি দিয়ে দেখলো কুহু ঘুমাছে। বাহিরে বসে আছে ওর মা ভাই,, বোন,, আর ভাবীমা।
ও সবার কাছে গিয়ে বললো তোমরা বসো আমার দরকারি কল আছে সেড়েই আসছি বলে
রোহান হাসপাতালের কেবিনের বাইরের করিডোরে দাঁড়িয়ে রিভারস ফোন বের করলো। তার মন একেবারে অস্থির ছিল, কুহু এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছিলো। সে সিদ্ধান্ত নিল, কোনোভাবেই এই মুহূর্তে কুহু আর তার পরিবারকে একা ছেড়ে দেয়া যাবে না।
ফোনে ডায়াল করলো CID-এর এক সিনিয়র অফিসার, রাহুল শর্মাকে। ফোনটা রিসিভ করতেই রোহান বললো, “রাহুল ভাই, জরুরি একটা ব্যাপার ছিলো। কুহু, তার মা, ভাই, বোন, ভাবীকে হাসপাতালে থাকতে হবে, কিন্তু এখন তারা নিরাপদ নয়। কিছু একটা চলতে পারে, তাই আমি চাইছি আপনারা সিভিল পোশাকে কিছু অফিসার পাঠান, যেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।”
রাহুল শর্মা কণ্ঠে চিন্তা এবং সমঝোতার ছাপ রেখে বললো, “আমি বুঝতে পারছি, রোহান। তুমি চিন্তা করো না, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। একদল অফিসার পাঠাচ্ছি, তারা সিভিল পোশাকে থাকবে, যাতে কেউ কিছু সন্দেহ না করতে পারে।”
“ধন্যবাদ, রাহুল। আমি জানি তুমি সবসময় পাশে আছো। আমি কুহুর কাছে যাচ্ছি, তুমি তাদের নিরাপত্তা নিয়ে খেয়াল রাখো।” রোহান উত্তর দিলো।
ফোন রেখে রোহান হাসপাতালের পেছনে এক মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে ভাবলো। তার চোখে একটিই চিন্তা—কুহু আর তার পরিবার যেন নিরাপদ থাকে, আর এই অশুভ পরিস্থিতি থেকে তাদের রক্ষা করতে হবে।
কিছু সময় পরেই, হাসপাতালের গেটের কাছে সিভিল পোশাকে কয়েকজন CID অফিসার এসে উপস্থিত হলো। তাদের মধ্যে একজন, যিনি কিছুটা বড় অফিসার ছিলেন, দ্রুত রোহানকে দেখে বললেন, “সব ঠিক আছে, স্যার। আমরা লোক পাঠিয়ে দিয়েছি, সবাই নিরাপদ থাকবে।”
রোহান কিছুটা শান্ত হলো, তবে তার মন এখনও উৎকণ্ঠিত ছিল। “তোমরা যতটা পারো, খেয়াল রেখো।
“চিন্তা করবেন না, স্যার। আমরা সব কিছু দেখছি।” অফিসারটি আশ্বস্ত করে বললো।
রোহান হাসপাতালে ফিরে গেলো, তার মাথায় কেবল একটাই চিন্তা—কুহু, তার জীবন, তার ভবিষ্যত—এসবকে রক্ষা করার জন্য তাকে যতটা সম্ভব শক্তিশালী হতে হবে। কিন্তু কুহুর এই অবস্থার জন্য যারা দায়ী তাদের আমি এক সেকেন্ড ও ছাড়বো না আই প্রমিস।
এদিকে, সোহেল সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে নতুন কিছু তথ্য পেয়েছে, কিন্তু সে বুঝতে পারছিলো, এই পরিস্থিতি শুধু আরেকটি সাধারণ আক্রমণ নয়, বরং এক গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। সোহেল রোহানকে আবার ফোন দিয়ে বললো, “রোহান, আমি কিছু পেয়েছি। ওই বাইক আরোহী যে ব্যক্তিটি, সে আমাদের কোনো পরিচিতের কাছাকাছি হতে পারে। তবে এখনো কিছু নিশ্চিত করতে পারছি না।”
রোহান এক মুহূর্তের জন্য চুপ ছিল। তারপর সে উত্তর দিলো, “জানি, সোহেল। সব কিছু ঠিক মতো করো। কোনো ঝুঁকি নিও না। আমি কুহুকে সুস্থ করতে হলে এবং সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে আগে। তারপর আমি পুরোপুরি তদন্ত করবো, আর কোনোভাবেই ছাড় দেবো না।”
এই অবস্থায়, রোহান হাসপাতালের বাইরে কিছু CID অফিসারের সাথে দেখা করতে বেরিয়ে যায়। তার মনে একটাই চিন্তা ছিল—কুহুর জন্য প্রতিশোধ, এবং যারা এই আক্রমণ ঘটিয়েছে তাদের কাউকে বাঁচতে দিবে না।
—
রোহান হাসপাতাল থেকে বের হয়ে CID অফিসারদের সাথে গোপন বৈঠক করলো। সে পুরো ঘটনা তাদের জানালো এবং এই বিপদগ্রস্ত পরিস্থিতির পেছনে যে কোনও ষড়যন্ত্র থাকতে পারে, তাও বুঝতে পারছিলো। রোহান জানতো, কুহুর শারীরিক অবস্থা সঠিক হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।
“তুমি চিন্তা করো না, স্যার,” অফিসার রাহুল শর্মা বললেন, “আমরা সবকিছু ট্র্যাক করছি। সোহেলের দেওয়া তথ্য অনুসারে আমরা আরও নজরদারি চালাচ্ছি। যত দ্রুত সম্ভব দোষীদের খুঁজে বের করা হবে।”
রোহান তার বুকের ভেতর একটা অদ্ভুত কষ্ট অনুভব করছিলো। একদিকে কুহুর শরীরের অবস্থা, অন্যদিকে তার পরিবারকে নিরাপদ রাখতে হবে। কিন্তু তার মনে একটাই প্রতিজ্ঞা ছিল—এই পরিস্থিতি থেকে সবার মুক্তি পাওয়ার পর, যারা কুহুকে আঘাত করেছে, তাদের একে একে শাস্তি দিতে হবে।
হাসপাতালের কেবিনে ফিরে গিয়ে, রোহান কুহুর পাশে বসলো। কুহুর চোখ কিছুটা খুলে, তাকে দেখে মৃদু হাসলো। কিন্তু রোহানের চোখে তখনও সেই দুঃখ, অসহায়ত্ব আর প্রতিশোধের আগুন জ্বলছিল।
“কুহু, তোর জন্য আমি সব কিছু করতে প্রস্তুত,” রোহান বললো, তার গলায় এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিল।
কুহু এক ফোঁটা হাসি দিয়ে বললো, “রোহান, আমি ভালো আছি। আপনি চিন্তা করবেন না।
রোহান কিছুটা শান্ত হল, কিন্তু তার মনে সিদ্ধান্ত ছিল—এই ঘটনাটা শুধু কুহুর নয়, তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। সে কাউকে ছাড়বে না, যতদিন না সঠিকভাবে প্রতিটি সত্য বের হয়ে আসে।
এদিকে সোহেল আর CID দলের অন্যান্য সদস্যরা আরো গভীর তদন্ত শুরু করলো, কিছু নতুন তথ্য হাতে পেল। সোহেল জানালো, “রোহান, আমাদের কাছে কিছু নতুন ক্লু এসেছে। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব কিছু শেষ করবো।”
কুহুর হাতটি রোহান আলতো করে নিজের হাতে নিলো,
“শরীরের তীব্র উত্তেজনা যেন হাওয়ায় মিশে গেলো।
তারপর ধীরে ধীরে, কুহুর শীতল কপালে,
রোহান রেখেছে এক নরম চুম্বন, যে চুম্বনে পাথরও গলে যায়।
“এই অমূল্য রত্ন, তুমি কি জানো?”
বললো রোহান, মনের গহীনে গভীর প্ত্রের ঝঙ্কার।
“তুমি আমার অস্তিত্বের প্রাণ,
তোমায় হারালে পৃথিবী হারাবে তার স্নেহধারা।”
কুহু অবাক চোখে তাকিয়ে, হৃদয় স্পর্শিত,
অবিশ্বাসের সঙ্গে, ভালোবাসার সুরে মগ্ন।
“আপনি কি জানেন, রোহান, আপনি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সুর,
যে সুর বেজে ওঠে পৃথিবীর প্রতিটি কোণে, আমার হৃদয়ের নিকুঞ্জে?”
—
গভীর রাত, অনুমানিক ২টা বাজে। হাসপাতালটি সুনসান, ভেতরে শুধু কিছু ডাক্তার-নার্সের পদচারণা এবং মাঝে মাঝে গ্যারেজের নিচু আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। কুহু ঘুমাচ্ছিল, তবে রোহান ছিল সজাগ। সে হাসপাতালের করিডোরে হাঁটছিল, চিন্তাগ্রস্ত মন নিয়ে।
হঠাৎ, একটুখানি আওয়াজ শুনতে পেল। কোথাও কেউ অস্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে, এবং তার সুরক্ষিত কেবিনের আশপাশে কিছু সন্দেহজনক ঘটনা ঘটছে।
রোহান সোজা কুহুর কেবিনের দিকে এগিয়ে গেল, দরজায় মৃদু নক করল। কিন্তু কোনো উত্তর আসলো না। তার হাতের তালু ঘামে ভিজে গেছে, মনে হচ্ছিল কিছু অস্বাভাবিক ঘটতে যাচ্ছে।
সে দ্রুত কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো, কিন্তু কুহু তখনও গভীর ঘুমে ছিল। তবে তার মনে কিছু একটা সংকেত ঘটেছিল—তবে সে কিছু জানল না।
তখনই, হাসপাতালের ভিতরে কিছু দৌড়ানোর আওয়াজ শোনা গেল। একদম অন্ধকারে, করিডোরে এক অদ্ভুত উপস্থিতি অনুভূত হচ্ছিল। সিকিউরিটি গার্ডরা তাদের নিয়মিত কাজ করছিল, তবে কিছু অদ্ভুত ব্যক্তি হাসপাতালের ভেতরে ঢুকতে সক্ষম হয়েছে, যেন তারা খুব সুশৃঙ্খল এবং দ্রুত।
রোহান তৎক্ষণাৎ তার ফোনে সিকিউরিটি সিস্টেমের সাথে যোগাযোগ করল, বলল,
“তাড়াতাড়ি সমস্ত প্রবেশপথ লক করুন, এবং সকল সিকিউরিটি গার্ডদের কাছে সাবধানতা বাড়ান। কিছু অস্বাভাবিক হচ্ছে।”
এরপর, রোহান কুহুকে একটু shake করে জাগিয়ে দেয়,
“কুহু, উঠো। কিছু সমস্যা হতে পারে, তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হও।”
কুহু কিছুটা ঘোরানো চোখে উঠে বসে।
“রোহান, আবার কী ঘটলো?”
রোহান তার দিকে তাকিয়ে বললো,
“এখন বাইরে একটা কিছু ঘটছে, যেটা আমি ঝুঁকি হিসেবে নিতে চাই না। তুই নিরাপদে থাক।”
সিকিউরিটি গার্ডরা এবং হাসপাতালের নিরাপত্তা দল একত্রে গেট এবং ভেতরের প্রবেশপথ চেক করতে লাগল। তবে এক পলকেই, কোনো একটি গোপন সিগন্যালের মাধ্যমে, তাদের বুঝতে পারলো—অসাধারণ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। শত্রু তাদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে, কৌশলে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে এড়িয়ে গেছে।
রোহান তখন দ্রুত একটি নিরাপদ কেবিনের দিকে নিয়ে কুহুকে নিয়ে চলতে লাগল। তবে বাইরে থেকে আসা গাড়ির আওয়াজ আরো কাছে চলে আসছিল। কে জানে, শত্রুর পরিকল্পনা কী হতে পারে!
মুহূর্তে রোহান কুহুকে একটি সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু শত্রু তাদের একদম কাছে চলে এসেছিল—এমন সময় এক অজানা গু”লি”র আওয়াজ শুনতে পেলো।