সন্ধ্যা হয়ে এলো রোহান খাটে এখনো হেলা দিয়ে শুয়ে আছে। রোহান ধীরে ধীরে কুহুকে দেখে। তার ঘুমন্ত মুখে এক অদ্ভুত শান্তি। কিন্তু এই শান্তি রোহানের মনকে আরো অস্থির করে তুলছে। আজকের পর কুহু জানবে তার জীবনের এক ভয়ানক সত্য, আর এই সত্য তার মনের মধ্যে এক দুর্বিষহ চাপ সৃষ্টি করছে। সে জানে, কুহুকে যদি সত্যটা জানানো না যায়, তাহলে সম্পর্কের মধ্যে এক অগাধ দূরত্ব চলে আসবে।
রোহান নিঃশব্দে বিছানার পাশ থেকে উঠে পড়ল। কুহুর শরীরের তাপ তার পিঠে অনুভূত হচ্ছিল, কিন্তু সে কোনো শব্দ করল না। এক টুকরো শান্তির জন্য সে আরও একটু সময় চেয়েছিল, কিন্তু সময় তো আর থেমে থাকে না।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রোহান দেখল, সাতটা বাজে। মাত্র এক ঘন্টা সময় আছে। তার হাতে এখন সময় খুবই কম। তার কাজ, তার দায়িত্ব, আজকের দিনের অপরাধীদের ধরতে হবে। কিন্তু তার হৃদয় তার নিজের সমস্যায় ডুবে গেছে। রোহান জানে, তার জীবনে একটা নতুন দিক আসবে—এটা কুহুর জন্য ওর কর্তব্য, কিন্তু ওর জন্যও এক নতুন পৃথিবী হবে।
রোহান হালকা একটা শ্বাস নিল। কুহুর মুখে শান্তির ভাব। সে জানে না, তার পাশে বসে থাকা এই মানুষটার জীবনে কত বড় ঝুঁকি আছে। আজ রাতের পর, হয়তো কিছুই আগের মতো থাকবে না। তবে তার মনে একটাই প্রশ্ন, কুহুকে সত্যটা জানানো কি সত্যিই উপকারী হবে? তার কাছে কি এই সত্যটা নিতে প্রস্তুত? রোহান ঘরের ভেতরে হাঁটতে শুরু করল। একাধিক চিন্তা ভিড় করে আসছিল মাথায়।
“এটা আমার দায়িত্ব,” রোহান নিজেকে বলল। “কিন্তু আমি যদি ওকে হারাই, তাহলে…?”
এমন সময় কুহু হালকা ঘুমের মধ্যে একটা শব্দ করল,
তার বুকটা ধক করে উঠল। কুহুর শরীরের কোন জায়গায় ব্যাথা তো হয়নি, সেটা নিশ্চিত করতে সে অস্থির হয়ে উঠল। কাল তার হাতে গুলি লেগেছিল, আর তারপর অপারেশন হয়েছিল। কালকের যন্ত্রণার স্মৃতি এখনো তার মনে উজ্জ্বল। আজ যদি সেই জায়গায় কোনো ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে তার উদ্বেগ আরও বাড়বে।
অগত্যা, সে তাড়াতাড়ি কুহুর কাছে ছোটে গিয়ে তার শরীরের দিকে নজর দিল। কুহু কিছুটা অবাক হয়ে তাকাল, তবে তার চোখে কোনো শঙ্কা ছিল না, বরং একটু শিষ্টতার হাসি ছিল। রোহান তার হাত ধীরে ধীরে কুহুর শরীরে স্পর্শ করল, যেন বুঝতে পারে কোথাও ব্যথা হচ্ছে কি না। কুহু তৎক্ষণাৎ তার হাতটা ধরল এবং হালকা করে বলল, “আমি ঠিক আছি, রোহান। কিছু হয়নি।”
আমার প্রাণ টা বের হয়ে যাচ্ছিলো মনে হচ্ছিলো তুমি বুঝি ব্যাথা পেয়েছো।
না পাইনি।
আপনি এইভাবে হাটছিলেন কেনো?
আমাকে বের হতে হবে কুহু। আমি ফ্রেশ হয়ে হাল্কা কিছু খেয়ে বের হবো।
ছলছল চোখে রাহানের পানে তাকালো কুহু।
রোহান বুঝলো তার প্রেমময়ী স্ত্রীর ব্যাথা টা সে ধীরে পায়ে কুহুর হাত টা ধরে বললো,, তুমি চিন্তা করো না আমাকে আল্লহ্ ভরসায় ছেড়ে দেও। আমি ঠিক সহিসালামতে ফিরবো তোমার কাছে। কুহু হুট করে রোহান কে জড়িয়ে ধরে বললো,, আমার প্রিয় মানুষ বা ভালোবাসার মানুষ বলুন একদম কম। আমি আপনাতে সীমাবদ্ধ হয়েগেছি রোহান।
রোহান স্মিত হেসে কুহুর কপালে চুম্বন করে বললো,, দূর পা”গ”লী আমি তোমার কাছে ফিরবো,,
“আমি ফিরে আসবো, শপথে গাঁথা,
যেখানে ছিলাম, সেখানে নেই আর ভাটা।
সময়ের পৃষ্ঠা উল্টাবো আবার,
মোর খোঁজ পাবে, আমি যেখানে হারিয়ে ছিলাম, সেখানেই বারবার।
প্রতিটি রাস্তায় তবুও খুঁজে যাব,
যত দূরত্বই হোক, একদিন ঠিক ফিরব, আর বাঁধা পাবে না আমি।”
আমি এখন ফ্রেশ হয়ে আসছি তুমি এইখানে বসে থাকবে আমি ফ্রেশ হয়ে আসলে তুমিও ফ্রেশ হবে একদম পাকামো করবে না।
রোহান ফ্রেশ হতে গেলো। কুহু রোহানের যাওয়ার পানে তাকালো। বুকটা কেমন যেনো মুচড়ে উঠছে।
আধাঘন্টা পর রোহান বের হলো রোহান বের হয়ে আসতে কুহু ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে ফ্রেশ হয়ে আসার পর রোহান কুহুর কোমল হাত টা তার হাতের ভাঁজে নিয়ে নিচে গেলো নিচে তার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।
রোহান তার মা,,ভাই,,বোন ভাবীমার সাথে গল্প করছে। আর টুকটাক নাস্তা করছে নাস্তা করার শেষ করে রোহান সবার কাছ থেকে বিদায় নিলো। দরজার কাছ অব্দি রোহানকে এগিয়ে দিতে যেতেই রোহান তার কপালে কপাল ঠেকিয়ে ঠোঁটে চুম্বন করলো তারপর বললো,,, টেনশন করো না আল্লাহ্ রহমতে সহিসালামতে ফিরবো টাইম তো মেডিসিন নিয়ো ঠিক মতো খেয়ো যদি আমায় মিস করো বা আমায় খুঁজতে চাও তাহলে নিজের অন্তর দিয়ে খুঁজো সেইখানে আমি বিরাজমান। “ডোন্ট ক্রাই ” মেরি বিবিজান। আমি আছিতো তোমার সাথে তোমার শরীরে শিরায় উপশিরায় তোমার র”ক্তে মিশে আছি আসছি আমি আল্লাহ্ হাফেজ বলে সে বিদায় নিলো। দরজা টা লক করে দিয়ে উপরে চলে আসলো। প্রতিটা মেয়ের জীবনে স্বামী হচ্ছে অলঙ্কার আর সেই স্বামী যখন বিপদে থাকে তখন কি আর সেই স্ত্রী মনের শান্তি নিয়ে বসে থাকতে পারে। রোহান চলে যাওয়ার পর পর সেও তার রুমে চলে আসলো না খাওয়া ভুলে আল্লাহ্ দরবারে ভিক্ষার দুটো হাত তুলে দিলো স্বামী যেনো সহিসালামতে ফিরতে পারে।
—
রাত ১০ টা রোহান যানযট পেড়িয়ে ডির্পামেন্টের গোপন রুমে আসলো যেইখানে অগ্নি,,পূজা,, সোহেল,,আর বাকিটিম মেম্বাররা ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
অগ্নি বললো ঠিক আছো তুমি?
হুম ঠিক আছি কাজ কত দূর ও কী কী হলো?
সব ঠিক আছে আমি বারবার চ্যাক করেছি ওরা চারজন ফ্যাক্টরির ভিতরেই আছে কেউ বের হয়নি রাত তিনটে তারা মানব পা”চা”র থেকে শুরু করে অ”স্ত্র পাচার এবং কি মা”দ”ক পাচার করবে।
রোহান বললো,, ওকে গাইস তোমরা তো জানোই কে কোথায় থাকবে নাকি আবার বলে দিতে হবে?
পূজা বললো বলে দিলে ভালো হয়।
অকে নো প্রবলেম বলে দিচ্ছি।”অগ্নি, পূজা এবং সোহেল এখানে প্রবেশ করবে গেট থেকে, তবে অত্যন্ত সাবধানে। আমি আর সানি ফ্যাক্টরির পিছন দিক দিয়ে প্রবেশ করব। রিমন, তুমি সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে, আর সরাসরি পুলিশকে প্রস্তুত রাখবে।”বুঝেছো।
জ্বী স্যার।
ঠিক সেই সময় প্রবেশ করলো শিহাব চৌধুরী। শিহাব চৌধুরী রোহানে কাঁধে চাপর দিয়ে বললো ঠিক আছো তুমি?
জ্বী স্যার আই”ম ফাইন।
তাহলে কখন বের হচ্ছো?
এইতো স্যার এখনি সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছি।
শুনো মিশন শেষ এ প্রেসরা আসবে তখন তোমাকে আরো শক্ত হতে হবে।
আমি সর্বদা প্রস্তুতি।
শিহাব চৌধুরী থেকে সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেলো। ড্রাইভার গাড়ি চালাছে আর ওরা সবাই ওদের কাজ করছে। কিন্তু রোহানে অবচেতন মনটা যে কুহু কুহু করছে। উপরের দিকে তাকিয়ে একটা দ্বীর্ঘ শ্বাঃস নিলো। রাস্তার পর রাস্তা চলছে। যত তারা এগোছে তত তাদের চিন্তা বাড়ছে। রোহান কখনো ভাবতেই পারেনি ওকে আজ এই দিনটা দেখতে হবে যার দ্বারা জন্ম হলো তাকেই হাতকড়া পড়াতে হবে। সবার সামনে অপরাধী বলতে হবে। রোহান মাথা থেকে সব ভাবনা চিন্তা দূর করে দিলো। তার ফোকাস এখন মিশনে। ফ্যাক্টরির কাছাকাছি পৌঁছাতে তখন রাত প্রায় ১২টা। ওরা গাড়ি ফেলে কিছুটা পায়ে হেঁটে নিরাপদ দূরত্বে নিজেদের অবস্থান নিল। রোহান গলার স্বর নিচু করে বললো,
“শুনো, আমাদের আগে দলে বিভক্ত হয়ে লুকাতে হবে। সঠিক সময় এলে আক্রমণ করব।”
সবাই একযোগে সম্মতি জানালো। এরপর রোহান বললো,
“পূজা, ক্যামেরা আনো।”
পূজা ছোট্ট একটি বাক্স খুলে একটি ড্রোন সদৃশ ছোট্ট ক্যামেরা বের করলো। এটি দেখতে মৌমাছির মতো, একদম ক্ষুদ্র এবং শব্দহীন। রিমোটের মাধ্যমে এটি চালানো যায়।
রোহান ক্যামেরাটি চালু করে বললো,
“এই ড্রোন ভেতরের পরিস্থিতি জানাবে। ওরা কী বলছে, কী করছে—সবই আমরা জানতে পারব।”
পূজা ড্রোনটি চালু করে ফ্যাক্টরির ভেতরে পাঠালো। ড্রোনটি জানালার ছোট ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করলো। তার ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে, চারজন অপরাধী একটি টেবিলের চারপাশে বসে কিছু আলোচনা করছে। তাদের সামনে একটি মানচিত্র এবং কয়েকটি বড় বাক্স।
রোহান ওয়াকিটকিতে বললো,
“অগ্নি, এই কথাগুলো শোনার ব্যবস্থা করো।”
অগ্নি দ্রুত তার ল্যাপটপে কানেকশন দিয়ে ড্রোনের মাইক্রোফোন অন করলো। অপরাধীদের কথা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। একজন বলছে,
“বড় চালানটা কাল রাতের মধ্যে পৌঁছাতে হবে। পুলিশ যেন কোনোভাবেই সন্দেহ না করে।”
আরেকজন বললো,
“সাবধানে কাজ কর। সামান্য ভুল হলে পুরো প্ল্যান ভেস্তে যাবে।”
ফ্যাক্টরির বাইরে রোহানের টিম নিজেদের অবস্থানে। পূজা ড্রোনটি ভেতরে পাঠিয়ে দিয়েছে। ড্রোনটি শব্দহীনভাবে ফ্যাক্টরির ভিতরের পরিস্থিতি সরাসরি দেখাচ্ছে। স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে, চারজন অপরাধী একটি টেবিল ঘিরে বসে আছে। তাদের সামনে বড় বড় বাক্সে কিছু রয়েছে। রোহান মনোযোগ দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
ড্রোনটি টেবিলের চারপাশ ঘুরে দেখালো। রোহানের চাচা রাকিব আহমেদ, ফুফু রাজিয়া হাওলাদার, এবং শরীফ আহম্মেদ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এদের সঙ্গে আরও একজন অপরাধী। কিন্তু রোহানের চোখ খুঁজছে অন্য একজনকে—কুহুর মা, সুলতানা সিকদার।
পূজা বললো,
“স্যার, মিসেস সুলতানা কোথায় তিনি? থাকার তো কথা ছিল, তাই না?”
রোহান ঠান্ডা গলায় বললো,
“তিনি এখানে নেই।
ওরা বললো না।
স্যার আপনি কি আগে থেকে জানতেন? অগ্নি বললো
রোহান হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“আমি অনেক দিন ধরেই জানি, আমার বাবা, চাচা, ফুফু—এরা সবাই এই পাপের জগতে যুক্ত। আর কুহুর মা… তিনি এদের সঙ্গে আছেন, কিন্তু সরাসরি যুক্ত নন। তিনি আড়ালে থেকে তাদের সাহায্য করেন। আমি সুলতানা সিকদারকে আজকাল এই কাজে সরাসরি জড়াতে দেখিনি।”
পূজা অবাক হয়ে বললো,
“তাহলে আপনি এতদিন চুপ ছিলেন কেন?”
রোহান চোখ নামিয়ে বললো,
“কারণ সত্যকে সামনে আনতে সময়ের প্রয়োজন। তারা একত্রে এমন একটি মিশনে নামবে, যা তাদের মুখোশ খুলে দেবে। এই মিশন সেই সুযোগ। আজ আর কেউ আড়াল থাকবে না।”
ড্রোনটি ফ্যাক্টরির ভেতরে ঢুকে তাদের কথোপকথন শোনা শুরু করল। তারা ঠিক কী পরিকল্পনা করছে, সেটা জানা খুব জরুরি ছিল। রোহান মনোযোগ দিয়ে স্ক্রিনে তাকিয়ে ছিল। ড্রোনের মাধ্যমে শোনা গেল,
“দুই দিন আগে কুহুকে যে গু”লি করেছে, সেই ব্যক্তি আর কেউ নয়, স্বয়ং কুহুর মা—মিসেস সুলতানা সিকদার।”
এই কথাটা শোনার পর রোহান শোকে স্তব্ধ হয়ে গেল। তার মধ্যে এক ভয়ানক ক্ষোভ ঢেউয়ের মতো ভেসে উঠলো। চোখে তীব্র রাগ ছিল, গায়ের রক্ত জ্বলে উঠেছিল। সে অবশেষে নিজেকে সামলে না রাখতে পেরে, কঠিন ভাষায় বললো, ওয়াট দ্য হেল, ম্যান!
এটা যেন পুরো পরিবেশে এক আতঙ্কের সৃষ্টিকারী শব্দ হয়ে উঠলো। রোহানের মুখে যে অশ্লীল ভাষা ছিল, তা পুরো টিম শুনতে পেলো, কিন্তু কিছু বলার সাহস করলো না। সোলিড যন্ত্রণার সঙ্গে ক্ষোভে ভরা শব্দগুলো তার মুখ থেকে বের হয়ে এল,, গডড্যাম ইট! হাউ কুড শি?
রোহান নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুত বলে উঠলো,
“আমাদের কোনও সময় নষ্ট করা যাবে না। প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে হবে, এখন!”
রোহান দ্রুত পূজার দিকে তাকিয়ে বললো,
“পূজা, কয়টা বাজে, দেখো তো!”
পূজা তার ঘড়ি দেখে উত্তর দিলো,
“দেড়টা বাজে স্যার।”
রোহান তার চোখে এক অদ্ভুত তীব্রতা নিয়ে বললো,
“ঠিক আছে, আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।”
সবাই সাবধানে তাদের লক্ষ্যস্থলে এগোচ্ছে, কিন্তু তখন অগ্নি এক মুহূর্তের জন্য থেমে গিয়ে বললো,
“আচ্ছা, মিসেস সুলতানা সিকদার তো নেই। মিসিং, ওনি কোথায়? কী প্ল্যান করছে সে?”
রোহান চোখে রাগ ও উদ্বেগ নিয়ে জবাব দিলো,
“আমি জানি না, অগ্নি। তবে এতদিন ধরে সে যে গোপনে কাজ চালিয়ে এসেছে, এখন তাকে খুঁজে বের করা আমাদের কাজ। যদি সুলতানা এখানে না থাকে, তবে সে অন্য কোথাও গোপন অবস্থানে থাকতে পারে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, এক মিনিটের জন্যও হালকা হতে পারি না।”
অগ্নি একটু থেমে বললো,
“ঠিক বলছেন স্যার। তবে সে কোথায় থাকতে পারে, এটা জানি না। কিন্তু আমরা যদি সঠিক সময় ও জায়গায় পৌঁছাতে পারি, তাহলে তার চক্রান্তের পেছনের কারণ বের করা কঠিন হবে না।”
রোহান শ্বাস নিলো এবং তার সিদ্ধান্ত নিলো,
“তবে এখন আমাদের কাজ হলো, আমাদের টিমকে বিভক্ত করে, একে একে পুরো ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করতে হবে। আমাদের পরিকল্পনা ঠিকভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে। সুলতানা কোথায় আছে, আমরা জানবো, কিন্তু এখনই আমাদের ফোকাস রাখতে হবে বর্তমান মিশনে।”
এভাবে, রোহান এবং তার টিম দ্রুত ও সতর্কভাবে ফ্যাক্টরির ভেতর প্রবেশ করতে শুরু করলো, এবং সুলতানার অবস্থান সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করলো।
—-
সময় তখন ২:১০, পুরো এলাকা ছিল সুনশান এবং নিস্তব্ধ। কেবল আশপাশ থেকে কিছু বন্য কুকুরের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল, যেন রাতের গভীরতা আরও ভীতি ছড়াচ্ছিল। ফ্যাক্টরি এলাকায় কোনো শব্দ ছিল না, শুধু ঝিঁঝি পোকার আর বাতাসের মৃদু গুঞ্জন।
রোহান তার টিমকে সংকেত দিয়ে বললো,
“শোনো, সবাই সাবধানে কাজ শুরু করো। যতটা সম্ভব নিঃশব্দে থাকতে হবে। তোমরা তোমাদের পজিশনে যাও, একে একে এগোতে হবে। ভুল করলে পুরো অভিযান শেষ হয়ে যেতে পারে।”
অগ্নি, সোহেল, পূজা এবং অন্যান্য সদস্যরা চুপচাপ তাদের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে শুরু করলো। রোহান তাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছিল।
“পূজা, তুমি সোজা গেটের কাছে চলে যাও, সোহেল তুমি আর অগ্নি, ফ্যাক্টরির পেছন দিকে সাবধানে এগোতে থাকবে। আমি এবং সানি ফ্যাক্টরির ভিতরে প্রবেশ করব। যদি কিছু ঘটে, দ্রুত সিগন্যাল দিও।” রোহান তার নির্দেশনা দিলো।
প্রতিটি সদস্য তাদের পজিশনে পৌঁছালো এবং নিঃশব্দে অবস্থান নিলো। ফ্যাক্টরির মধ্যে এখন চুপচাপ অন্ধকার বিরাজমান, এমন এক পরিস্থিতিতে, যেখানে কোনো ভুল হলে সবার জন্য বড় বিপদ হতে পারে।
রোহান আবার একবার টিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এটা সহজ কাজ নয়। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার—এই অভিযানে আমরা সফল হবো। মনে রাখো, সুলতানার ষড়যন্ত্র এবং অপরাধী চক্রকে থামানোই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।”
রাতের অন্ধকারে, রোহান এবং তার টিম আরও গভীরে প্রবেশ করতে শুরু করলো, তাদের চোখে একমাত্র লক্ষ্য ছিল—অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া।
টিমের সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো, রোহান তাদের দিকে ইশারা করলো। তারা খেয়াল করলো—কিছু মেয়েকে মুখ বাঁধা অবস্থায় ট্রাকে উঠতে দেখা যাচ্ছে। মেয়েগুলো অত্যন্ত ভীত এবং আতঙ্কিত, তাদের চোখে আশঙ্কা এবং অজ্ঞাত ভয় স্পষ্ট। ট্রাকটি খুবই দ্রুত চলে যাচ্ছিল এবং সুরক্ষিতভাবে তাদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল মনে হচ্ছে।
রোহান চোখে এক কঠিন লক্ষ্য নিয়ে বললো,
“এটা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। ওরা আমাদের কাছে বড় একটি চক্রান্তের অংশ হতে পারে।”
অগ্নি, পূজা, সোহেল এবং বাকিরা একটু এগিয়ে গিয়ে রোহানকে অনুসরণ করতে লাগলো। তারা ট্রাকের কাছে পৌঁছানোর আগেই সাবধানে থেমে গিয়েছিল। রোহান দ্রুত কথা বললো,
“এই মেয়েগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, তবে আমাদের এখন দ্রুত কাজ করতে হবে। কোনও ধরনের তাড়াহুড়া না করেই এগিয়ে চলতে হবে।”
টিমের সবাই একে অপরকে ইশারা দিয়ে তাদের কৌশল অনুযায়ী এগোতে শুরু করলো। ফ্যাক্টরির এক কোণে মেয়েগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা এবং অপরাধীদের জালে তাদের ফাঁসানোর কৌশল অব্যাহত রাখলো।
“এটা আমাদের কাছে বড় একটি সুযোগ হতে পারে,” রোহান নিজেকে বললো, “এই মেয়েগুলো যদি সঠিক সময়ে উদ্ধার করা না হয়, তাহলে তারা আরও বিপদে পড়তে পারে। তবে, আমাদের ফোকাস করতে হবে তাদের অবস্থান ও যাদের সঙ্গে তারা যাচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করতে।”
রোহান দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলো, ট্রাকটিকে থামাতে হবে, না হলে তারা হয়তো অনেক দূরে চলে যাবে এবং এই অপারেশন একেবারে ব্যর্থ হয়ে যাবে।
তার হাতের সাইলেন্স রিভলভারটি সঠিকভাবে ধরে, রোহান ট্রাকটির পিছনের চাকাতে লক্ষ্য রেখে শ্যুট করলো। সাইলেন্স রিভলভার থেকে বের হওয়া গুলি কোনো শব্দ ছাড়াই ট্রাকের চাকায় এসে লাগলো। ট্রাকটির চাকাটি পাংচার হয়ে গেল এবং গাড়িটি ধীরে ধীরে থেমে যেতে লাগলো।
ট্রাকটি থেমে গেলে, রোহান দ্রুত তার টিমকে নির্দেশ দিলো,
“এখন! দ্রুত! ওদের বের করে আনতে হবে!”
অগ্নি, সোহেল, এবং পূজা দ্রুত এগিয়ে এসে ট্রাকের দিকে ছুটে গেল। মেয়েগুলোর মুখ বাঁধা ছিল, তারা কিছুই বুঝতে পারছিল না। রোহান দ্রুত এগিয়ে এসে একে একে মেয়েগুলোর মুখের বেঁধে দেয়া কাপড় খুলে দিলো এবং তাদের নিরাপদে নামিয়ে আনলো।
“আমরা এখানে আছি, তোমরা নিরাপদ। ভয় পাওয়ার কিছু নেই,” রোহান তাদের আশ্বস্ত করলো।
টিমের অন্য সদস্যরা তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দিলো, একে একে আরো মেয়েকে উদ্ধার করতে লাগলো।
রোহান দলের সবাইকে একটি নির্দিষ্ট দিক দেখিয়ে বললো,
“এখন প্রত্যেকে সাবধানে কাজ করবে। সানি, অগ্নি, তুমি আমার সঙ্গে আসবে, আমরা এই দিকে এগোবো। পূজা, তুমি সোহেল আর রিমনের সঙ্গে অন্য দিকে যাবে। বাকিরা—রাহুল, সোহেল এবং সুমিত, তোমরা আলাদা হয়ে আরেকটি দিক থেকে অভিযান শুরু করবে।”
রোহান তার নির্দেশনায় আরো কিছু পরিবর্তন করলো,
“এটা একেবারে চারটি দল নয়, এবার আমরা চারটি দল তৈরি করবো। প্রতিটি দল নিজ নিজ দায়িত্বে কাজ করবে। গেটের আশপাশে নজর রাখতে হবে, আর বাকি সদস্যরা ফ্যাক্টরি এলাকার ভেতরে যতটা সম্ভব ঢুকে পড়বে।”
পূজা, সোহেল, এবং রিমন তাদের অংশে বিভক্ত হয়ে দ্রুত তাদের লক্ষ্য পূরণের দিকে চলে গেল। রোহান, সানি এবং অগ্নি তাদের নির্দিষ্ট স্থানে চলে গিয়ে অভিযান শুরু করলো। বাকি দুটো দল—রাহুল এবং সোহেলকে সাহায্য করতে আসা দুটি সদস্য ফ্যাক্টরি রক্ষা করার জন্য কাজ করছিল।
“মনে রাখো, দ্রুত এগোতে হবে, কিন্তু সাবধানে। সুলতানা কোথায় রয়েছে, এটা আমরা জানি না, তবে তাকে খুঁজে বের করতে হবে,” রোহান বললো, আর তার চোখে ছিল কড়া নজর।
চারটি নয়, এবার চারটি দল একযোগে কাজ করতে শুরু করলো, তাদের উদ্দেশ্য ছিল একটাই—ফ্যাক্টরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অপরাধীদের ধরতে গিয়ে সুলতানার ষড়যন্ত্রকে খণ্ডন করা।
রোহান, অগ্নি, আর সানি খুবই সাবধানে পা টিপে টিপে ফ্যাক্টরির ভেতরে ঢুকে পড়লো। তাদের চোখ এবং কান সজাগ ছিল, কারণ যেকোনো সময় কিছু ঘটতে পারে।
একসময় তারা একটি রুম থেকে মৃদু গুঞ্জন আর ধাতব জিনিসের আওয়াজ শুনতে পেল। রোহান হাত তুলে সবাইকে থামার ইঙ্গিত দিলো। শব্দ অনুসরণ করে তারা ধীরে ধীরে রুমটির দরজার কাছে গেল। ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখে, রোহানের চাচা রাকিব আহম্মেদ আর কিছু অপরাধী লোকজন ফলের কার্টুনের ভেতর অ”স্ত্র ভরে তার ওপর ফল ঢাকছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, এই অস্ত্রগুলো পাচার করা, যেন কেউ সন্দেহ না করে।
রোহানের চোখে ক্রোধ জ্বলে উঠলো, কিন্তু সে নিজেকে সংযত করলো।
সানি ফিসফিস করে বললো,
“এগুলো এখান থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওরা?”
রোহান শান্তভাবে বললো,
“আমাদের আগে জানতে হবে এগুলো কোথায় যাচ্ছে এবং কী পরিকল্পনা করছে। আমরা এখনই আক্রমণ করতে পারি না।”
অগ্নি জিজ্ঞাসা করলো,
“তাহলে এখন কী করব?”
রোহান বললো,
“অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ করো। পূজাদের গ্রুপকে বলো এই জায়গাটার চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করতে। আর রিমনকে জানাও, যেন পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়। আমরা প্রমাণ জোগাড় করব।”
অগ্নি দ্রুত রিমনকে সংকেত পাঠিয়ে দিলো। রোহান তখন মোবাইল দিয়ে ছোট ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করে পুরো কার্যক্রম রেকর্ড করতে লাগলো।
তাদের পরিকল্পনার সময়, রাকিব আহম্মেদ একটি ফোন কলে কথা বলতে শুরু করলো। ফোনে সে বলছিল,
“সব প্রস্তুত। এই চালান মাঝরাতেই রওনা হবে। আগের লোকেশনে সবাই অপেক্ষা করছে। কোনো সমস্যা হবে না।”
এই কথা শুনে রোহান কপালের ঘাম মুছে বললো,
“এটাই প্রমাণ আমাদের দরকার ছিল। এবার তাদের থামানোর সময় এসেছে।”
রোহান সবার দিকে তাকিয়ে বললো,
“সবাই প্রস্তুত থাকো। আমরা একসঙ্গে আঘাত হানবো। এদের বের হতে দেওয়া যাবে না।”
সবাই সজাগ ছিল। পূজা এবং তার দল ফ্যাক্টরির চারপাশে পজিশন নিয়ে নিয়েছিল। সোহেল ও সুমিত অন্য দিক থেকে ভেতরে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত। রোহান সংকেতের জন্য অপেক্ষা করছিল।
ঠিক তখনই, রুমের ভেতরে আরেকটি দরজা খোলা হলো। সেখানে রোহানের বাবা শরীফ আহম্মেদ ঢুকলেন। তার হাতে ছিল একটি ফাইল। তিনি রাকিবকে বললেন,
“চালান ঠিকমতো বের করতে হবে। যদি কোনো সমস্যা হয়, আমরা সবাই ধরা পড়ে যাব।”
রোহানের মুষ্টি শক্ত হয়ে গেল। সে তার দলের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিত করলো যেন সবাই নিজের অবস্থান ধরে রাখে।
ভেতরে রাকিব বললো,
“আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। এখন শুধু ঠিক সময় মতো এই কাজ শেষ করতে হবে।”
শরীফ তখন রুমের অন্য প্রান্তে রাখা একটা সিন্দুক খোলার চেষ্টা করছিল। রোহান ইয়ারপিসের মাধ্যমে বললো,
“সবার প্রস্তুতি আছে? এবার আমরা আঘাত হানব।”
অগ্নি দ্রুত তার অস্ত্র প্রস্তুত করলো। সানি মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো। পূজা তার দিক থেকে সংকেত পাঠালো,
“আমাদের দলও প্রস্তুত। তোমার নির্দেশের অপেক্ষায়।”
রোহান একদম শান্ত এবং স্থিরভাবে বললো,
“ওকে। ৩… ২… ১… অ্যাটাক!”
এক মুহূর্তের মধ্যেই চারপাশে হইচই শুরু হয়ে গেল। রোহান আর সানি দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকল। অগ্নি তাদের কভার দিচ্ছিল। রাকিব এবং শরীফ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। তারা বুঝতে পারলো তাদের ধরা পড়া এখন সময়ের ব্যাপার।
পাশের দিক থেকে পূজা এবং সোহেলের দল ভেতরে ঢুকে অপরাধীদের দমাতে শুরু করলো। রোহান সোজা তার বাবার দিকে এগিয়ে গেল।
রোহান তার বাবার দিকে তাকিয়ে রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললো,
“আপনি জঘন্য বাপ হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। ছি ছি মিস্টার আহমেদ!”
এই কথা বলেই একদলা থুথু ছিটিয়ে দিলো রোহান। তার চোখে ছিল গভীর ঘৃণা আর মুখে কঠিন চেহারা।
রোহানের এই ব্যবহারে শরীফের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটলো। সে ঠান্ডা গলায় বললো,
“তুমি যা করছো, সেটা ঠিক মনে করছো, রোহান? একদিন তুমি বুঝবে।”
রোহান কোনো উত্তর দিলো না। তার চোখে তখন একটাই লক্ষ্য—অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই শেষ করা।
রোহানের ফুফু রোহানের দিকে তাকিয়ে বললো,,
সুলতানা কিন্তু নেই। শেষ আঘাত টা সেই আনবে। পাড়বে তো কুহুকে বাঁচাতে।
রোহানের ফুফুর কথাগুলো রোহানের কানে বিষের মতো লাগছিল। রাগে তার শরীর কাঁপছিল। সে নিজের ভাষা সংযত রাখতে পারেনি। ফুফুর দিকে তাকিয়ে বললো,
ইউ ফিল্থি উম্যান! ইউআর ওর্স্ দ্যান আই কুড এভার ইম্যাজিন!
তারপর এক দমে বলে উঠলো,
“সুলতানা নেই? শেষ আঘাত সেই আনবে? ভাবছো আমি কুহুকে বাঁচাতে পারব না? ভুল করছো। যা করতে হবে, করব। আমার জীবন দিয়ে হলেও কুহুকে রক্ষা করব!”
রোহান দ্রুত ইয়ারপিসে বললো,
“অগ্নি, সানি, পূজা, শোনো! আমাদের নতুন চ্যালেঞ্জ এসেছে। সুলতানাকে খুঁজে বের করতে হবে। এটা সময়ের ব্যাপার, এবং আমরা কোনো সুযোগ মিস করতে পারি না।”
অগ্নি ফিডব্যাক দিলো,
“ওকে রোহান। আমরা দ্রুত নতুন পজিশন নেব। সবাই সজাগ থাকো।”
পূজা একটু ইতস্তত করে বললো,
“রোহান, আমরা জানি সুলতানা কুহুর জন্য হুমকি হতে পারে। কিন্তু ওর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটা বের করা খুব জরুরি।”
রোহান গম্ভীর গলায় বললো,
“কোনো দ্বিধা করো না। সবাইকে সতর্ক করো এবং পুলিশকে এক মুহূর্তের দেরি না করে স্ট্যান্ডবাইতে রাখো। আমরা এই রাতেই সব শেষ করব!”
রোহান তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিলো, এই লড়াই শুধু অপরাধীদের বিরুদ্ধে নয়, এই লড়াই তার নিজের পরিবার, নিজের রক্তের বিরুদ্ধে। কুহুর জন্য, সঠিক ন্যায়ের জন্য, রোহান আজ নিজের সব কিছু বাজি রাখবে।
চলবে,,,
একই_বন্ধনে_বাঁধা_দুজনে
পর্বঃ-১৩ (দ্বিতীয় খন্ড)
নীলাশা_চৌধুরী
রোহান, অগ্নি, সোহেল, পূজা এবং বাকি সব টিম সদস্যরা দ্রুত অপরাধীদের পুলিশদের কাছে তুলে দিচ্ছিল। রোহান অপরাধীদের হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে পুলিশ অফিসারদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এরা আপনার দায়িত্ব, সাবধানে নিয়ে যান। তাদের ছাড় দেওয়া চলবে না।”
অগ্নি, সোহেল, এবং পূজা পুলিশদের সাহায্য করতে থাকলো, অপরাধীদের নিরাপত্তার মধ্যে নিয়ে যেতে। পুলিশ অফিসাররা সবাই প্রস্তুত ছিল, এবং দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করে একে একে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল।
পূজা পুলিশদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এরা সব পরিকল্পনা করেছিল, আর আপনাদের সাহায্য ছাড়া আমরা সফল হতে পারতাম না।”
পুলিশ প্রধান মাথা নেড়ে বললো,
“এবার আমরা নিশ্চিত করতে পারবো, এদের আর কোন দিন ছাড় পাওয়া যাবে না।”
সবাই একসঙ্গে বাহিনীর কাজ শেষ করে নিরাপত্তার দিকে নজর রাখছিল। রোহান ও তার টিম জানতো, অপরাধী যে ধরা পড়েছে, তা শুধু এক পর্যায়। তবে তাদের জন্য যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।
পুলিশরা চলে যাওয়ার পর, রোহান এবং তার টিম নিজেদের মধ্যে সুলতানা সিকদার সম্পর্কে কথা বলছিলো। সবাই খুব সতর্ক ছিল, কারণ তারা জানতো সুলতানার পরিকল্পনা কিছুটা রহস্যময় এবং বিপজ্জনক হতে পারে।
রোহান বললো,
“সুলতানা সিকদার এখন কোথায়? সে নিখোঁজ কীভাবে হলো? একটা কিছু রহস্য আছে, যা আমরা এখনও বুঝতে পারিনি।”
অগ্নি মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,
“সে যে কোনো সময় ফিরে আসতে পারে। তার পরিকল্পনা আমাদের বুঝতে হবে, তাহলে তার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
সোহেল একটু চিন্তা করে বললো,
“সে শুধু কুহুর মা নয়, তার মধ্যে কিছু গোপন ব্যাপার আছে, যা এখন আমাদের সামনে আসছে। আমাদের আরও গভীরভাবে তদন্ত করতে হবে।”
পূজা জানালো,
“তবে আমরা যে পথে যাচ্ছি, তাতে সুলতানাকে থামানোর জন্য আরও প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। এটা শুধু তার হাতে কোনো অ”স্ত্র থাকলেই শেষ নয়, তার মানসিকতা আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।”
রোহান ঘনিষ্ঠভাবে বললো,
“এটা ঠিক, তবে আমরা একে একে সব কিছু সামনে আনব। সুলতানা কোনোভাবেই ছাড়া পাবে না।”
ঠিক সেই সময়, রোহানের ফোনে কল আসলো একটি অচেনা নাম্বার থেকে। রোহান ফোনটি হাতে নিয়ে কল রিসিভ করলো।
“হ্যালো?” রোহান কিছুটা সন্দেহভরে বললো।
অপর প্রান্ত থেকে একটি ঠাণ্ডা, মোলায়েম কণ্ঠ শোনা গেলো,
“রোহান, তোমরা কি আমায় খুঁজচ্ছো?”
রোহান এক মুহূর্ত চুপ থেকে বললো,
“আপনি কে? কী চাচ্ছেন?”
নারী একটুখানি হাসলো এবং বললো,
“আমি তোমার শ্বাশুড়ি মা। সুলতানা সিকদার।”
রোহান তৎক্ষণাৎ ফোনটি শক্ত করে ধরে বললো হেসেনিন হেসেনিন এর পর থেকে আপনার ঠিকানা হবে জেলখানা। তা কোথায় আপনি?
মিসেস সিকদারের কণ্ঠে এক ঠাণ্ডা হাসি ছিল,
“আমি কোথায় আছি, তা তোমার জানার দরকার নেই। তবে আমি জানি, তুমি কি করতে চাচ্ছো। তুমি ভাবছো যে কুহুকে বাঁচাবে, কিন্তু আমি বলি, তুমি কি সেই বাঁচানোর ক্ষমতা রাখো?”
রোহান ভয়ানক রেগে গেলো, তার হাত শক্ত হয়ে গেলো। অপর প্রান্ত থেকে মিসেস সিকদারের ভয়ঙ্কর অট্টহাসি যেন রোহানের স্নায়ুতে আগুন ধরিয়ে দিলো।
“আপনি কোথায় পেলেন কুহুকে, ওতো বাসায়?” রোহান তীব্র উত্তেজনায় প্রশ্ন করলো।
ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে, মিসেস সিকদারের ভয়ঙ্কর হাসি ভেসে এল,
“বেহুলা লখীন্দরের কাহিনী মনে আছে? লোহার ঘরের একটু ক্ষুদ্র ছিদ্র দিয়ে সাপ ঢুকেছিলো। আর সেই ক্ষেত্রে দেখো, তোমার বাড়ি তো ইট, বালু আর সিমেন্ট দিয়ে তৈরি। কিন্তু আমি ঠিক তখনই সাপ হয়ে ঢুকে তোমার কুহুরানীকে… হা হা হা!”
মিসেস সিকদার বলেন,
“কি, বিশ্বাস হচ্ছে না? খুঁজে নেও যাও, দেখো তোমার কুহুরানী কোথায় আছে!”
রোহান দুঃখিতভাবে হাসলো, তার চোখে তীব্র রাগ এবং হতাশা ছিল। সে ফোনে গর্জে উঠলো,
“ইউ ব্লাডি বিচ, বার্স্টাড!”
তারপর, রোহান ইশারায় পূজাকে লোকেশন ট্র্যাক করার নির্দেশ দিলো। পূজা দ্রুত তার টুলস প্রস্তুত করে, স্ক্রীনে চোখ রাখলো এবং মুহূর্তের মধ্যে কুহুর অবস্থান শনাক্ত করতে শুরু করলো।
রোহান ফোন টা রেখে বাসায় কল দিলো?
দুইতিন বার রিং হতে রোহানের মা ফোনটা ধরলো।ফোনটা রিসিভ করে বললো,,, মা কুহু কোথায়?
ওতো রুমে আছে দাঁড়া আমি দেখছি তারপর কুহুর রুমে গিয়ে দেখলো কুহু রুমের কোথাও নেও?
রোহান যেনো তার হৃদপিন্ড হারিয়ে ফেলেছে। বুকের ভিতর কেমন ব্যাথা ব্যাথা করছে। ফোনটা পকেটে রেখে দিলো।
তারপর পূজার দিকে তাকিয়ে বললো,, কিছু পেলে?
পূজা দ্রুত স্ক্রীনটি লক্ষ্য করলো এবং হতভম্ব হয়ে বললো,
“আরে এইটা তো ইন্ডিয়ার বর্ডারের কাছাকাছি, যেই জায়গায় আজকে মেয়েদের পাচার হওয়ার কথা ছিলো! তাহলে কি ওনি কুহুকে…?”
এই কথা শুনে রোহানের বুকটা কম্পিত হয়ে উঠলো। তার চোখে ভয় এবং হতাশা মিশে গেলো। শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করলো। তার মনের মধ্যে হাজারও প্রশ্ন এবং চিন্তা ছুটে চলছিলো— কুহু কি সত্যিই সেখানে থাকবে? মিসেস সিকদার তার পরিকল্পনা এত সহজে সফল হতে দেবে না।
“Faster! পূজা, শিওর হও তোমার লোকেশন ঠিক আছে?” রোহান তীব্রভাবে বললো, তার চোখে কোনো সংশয় ছিল না।
পূজা মাথা নেড়ে বললো,
“হ্যাঁ, স্যার! নিশ্চিত, তবে এখনই সাবধানে চলতে হবে। এক ভুলও সহ্য হবে না।”
রোহান তার দৃষ্টি শক্ত রেখে টিমের দিকে তাকালো। তার মধ্যে একটাই চিন্তা— কুহুকে যে কোনো মূল্যে উদ্ধার করতে হবে, যতই ঝুঁকি থাকুক না কেন।
তারপর রোহান সোজা এগিয়ে গিয়ে বললো,
“আমরা আর এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করতে পারবো না। আমরা কুহুকে বাঁচাবো, সেটা আমি নিশ্চিত।”
তাদের চলার পথ ছিল এখন সরাসরি, কিন্তু মিসেস সিকদারের চ্যালেঞ্জ তাদের জন্য এক ভয়ঙ্কর রুদ্ধদ্বার হতে যাচ্ছিলো।
রোহান নড়াচাড়া না করে, তার চোখে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে বললো, “কুহু তুই একা নস, আমি তোকে ঠিকই বাঁচিয়ে নিয়ে আসবো।”
সানি এবং অগ্নি প্রস্তুত হয়ে গেলো, আর রোহান তার টিমের সদস্যদের চোখের দিকে একপলক তাকিয়ে বললো, “আমরা কোনোক্রমে ব্যর্থ হতে পারি না।”
তারপর পুরো টিম একত্র হয়ে দ্রুত গন্তব্যের দিকে রওনা দিলো। সময় খুবই মূল্যবান ছিল, এবং মিসেস সিকদারের ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা তাদের পথে বাধা হতে যাচ্ছিল। তবে, রোহানের মধ্যে ছিল এক অদম্য শক্তি— কুহুকে উদ্ধার করতে হবে, এবং সে জানতো, তার জন্য কোনোক্রমেই পিছু হাটা সম্ভব নয়।
পূজা বললো”তবে স্যার, এই কাজ করা ওনার পক্ষে একা করা সম্ভব না। হয়তো কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। নাহলে এত হাই সিকিউরিটি থাকার পরেও এমন হতে পারে না।”
রোহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, “তুমি ঠিক বলেছো, পূজা। এইসব পরিকল্পনা এত দ্রুত সফল হয়নি। তবে এখন আমাদের সেই বিশ্বাসঘাতক কে খুঁজে বের করতে হবে।”
তারপর রোহান টিমের সবাইকে একত্রিত করে বললো, “আমরা যা জানি, সেটা আমাদের মতো করেই চলছে। বিশ্বাসঘাতকতা হতে পারে, কিন্তু এখন আমাদের কেবল একটাই লক্ষ্য— কুহুকে উদ্ধার করা।”
অগ্নি, সানি, এবং বাকিরা সবাই সুনশান হয়ে রোহানের কথা শুনছিল। রোহান বললো, “তবে এখন এক মুহূর্তও নষ্ট না করে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হুমকিগুলো মোকাবেলা করতে হবে।”
রোহান গভীর চিন্তা করতে লাগলো, তার মাথায় দ্রুত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে শুরু করলো। পূজার কথায় সঠিকতা ছিল— কানাইঘাট (বাংলাদেশ) –
এটি একটি সীমান্তবর্তী উপজেলা, যা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত। এই এলাকার সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পাথর ও কয়লার আমদানি-রপ্তানি হয়। এলাকায় যাওয়ার পথে অনেক সময় নষ্ট হতে পারে এবং যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে কুহুকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে।
সে সবার দিকে তাকিয়ে বললো, “তবে স্যার, কানাইঘাট (বাংলাদেশ)ওনিতো এখন ওখানে যেতে সময় লাগবে, ততক্ষনে যদি কিছু হয়…”
রোহান তৎক্ষণাৎ চিন্তা করে বললো, “আমরা সময় নষ্ট করতে পারি না, পূজা! কানাইঘাট (বাংলাদেশ)পৌঁছানোর আগে কিভাবে দ্রুত তথ্য জানব এবং কুহুর অবস্থান নির্ধারণ করতে পারব, তা আমাদের বের করতে হবে।”
সানি তৎক্ষণাৎ সাড়াও দিলো, “আমরা যদি আরেকটি উপায় খুঁজে বের করি, তাহলে হয়তো আরও দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হবে।”
রোহান কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো, “এক কাজ করতে পারি, হেলিকপ্টার নিতে পারি।”
পূজা দ্রুত বললো, “হ্যাঁ, স্যার! হেলিকপ্টার খুব উপকারে আসবে, তবে এটা ম্যানেজ করা একটু কঠিন হবে।”
রোহান জানতো, হেলিকপ্টার ম্যানেজ করা সহজ কাজ নয়, বিশেষ করে এমন সংকটময় মুহূর্তে। “ঠিক আছে,” রোহান বললো, “এটা কঠিন হবে, কিন্তু আমরা চেষ্টা করবো।”
পূজা আর সানি দ্রুত কাজ শুরু করলো, যোগাযোগ করলো হেলিকপ্টার সেবা প্রতিষ্ঠানের সাথে। কিছু সময় পর, অনেক কষ্টে তারা একটি হেলিকপ্টার ম্যানেজ করতে সক্ষম হলো।
পূজা বললো, “স্যার, হেলিকপ্টার আসতে দেরি হবে, সম্ভবত কিছু সময় লাগবে।”
রোহান চিৎকার করে বললো, “আমরা এই সময়টা নষ্ট করতে পারি না। কোনোভাবে কুহুর কাছে পৌঁছাতে হবে।”
তাদের মাথায় অনেকটা চাপ এসে পড়েছিলো, কিন্তু রোহান কোনোভাবেই হাল ছাড়তে চাচ্ছিলো না।
রোহান তীব্র কণ্ঠে বললো, “বর্ডার সীমান্তে রাক্ষীদের সাথে দ্রুত গতিতে যোগাযোগ করো, কুইক!”
পূজা আর সানি একে অপরের দিকে দ্রুত তাকিয়ে, তাদের স্মার্টফোন বের করে সীমান্তে অবস্থান করা রাক্ষী বাহিনীর সাথে যোগাযোগ শুরু করলো।
পূজা ফোনে রাক্ষী বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করে বললো, “হ্যালো, আমি CID অফিসার পূজা বলছি। আমাদের সাহায্য প্রয়োজন।”
রাক্ষী বাহিনীর একজন সদস্য সাড়া দিয়ে বললো, “হ্যাঁ, ম্যাম। কী সাহায্য করতে পারি?”
পূজা বললো, “স্যার, আমাদের স্যারের স্ত্রী কুহুকে অপহরণ করেছে। এখন খবর পেয়েছি, তারা তাকে সীমান্ত দিয়ে প্রাচার করতে পারে। আমরা চাই, যদি কোনো সন্দেহজনক কিছু ঘটে, তাৎক্ষণিকভাবে জানাবেন।”
রাক্ষী বাহিনীর সদস্য বললো, “হ্যাঁ, ম্যাম। আমরা প্রস্তুত আছি এবং যদি কিছু সন্দেহজনক ঘটে, আমরা তা দ্রুত জানিয়ে দেবো।”
পূজা কিছুটা শান্ত হয়ে বললো, “ধন্যবাদ। আমাদের কাছে সময় খুব কম। সাবধান থাকবেন।”
“নিশ্চয়ই, ম্যাম। আমরা সতর্ক আছি।” রাক্ষী সদস্যের কণ্ঠে দৃঢ়তা ছিলো।
পূজা ফোন রেখে রোহানকে জানালো, “স্যার, রাক্ষী বাহিনী প্রস্তুত আছে এবং তারা সীমান্তে নজরদারি চালাচ্ছে।”
রোহান দ্রুত নির্দেশ দিলো, “ভালো, সবাই প্রস্তুত থাকো। আমরা শিগগিরই পৌঁছাবো।”
ঘণ্টাখানিক পর, হেলিকপ্টার নির্দিষ্ট লোকেশন অনুযায়ী এসে পৌঁছালো। হেলিকপ্টারের আওয়াজ শুনে সবাই দ্রুত প্রস্তুত হতে শুরু করলো। রোহান, পূজা, সানি, অগ্নি, সোহেল এবং অন্যান্য সদস্যরা একে একে হেলিকপ্টারে উঠে সিট বেল্ট বাঁধলো।
রোহান জানালো, “আমরা দ্রুত সেখানে পৌঁছাবো। চেষ্টা করো, যেন সময়মতো পৌঁছাতে পারি।”
হেলিকপ্টার চালক দ্রুত সাড়া দিলো, “স্যার, আমরা গতি বাড়াচ্ছি। হ্যাঁ, আমরা খুব দ্রুত সেখানে পৌঁছাবো।”
—–
রোহান মনোযোগ সহকারে বাইরের দৃশ্য দেখতে থাকলো, কেমন করে কুহুকে উদ্ধার করা যায়, তার পরিকল্পনাগুলি মনে মনে সাজিয়ে নিচ্ছিলো। সানির দিকে তাকিয়ে বললো, “সব কিছু ঠিকঠাক যেন চলে, সাবধানে এগোতে হবে।”
পূজা আশ্বস্তভাবে বললো, “নিশ্চয়ই, স্যার। আমাদের সব দিক পরিষ্কার, আমরা প্রস্তুত।
হেলিকপ্টার দ্রুত গতিতে এগোচ্ছিল, নিচে বিস্তীর্ণ মাঠ এবং পাহাড়ী এলাকা পেরিয়ে তারা ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে যাচ্ছিল। রোহান বারবার তার টিমের সদস্যদের নিশ্চিত করছিলেন, “সবাই সাবধান থাকো, একে একে কর্ম শুরু করতে হবে।”
পূজা, সানি, অগ্নি এবং সোহেলও নিজেদের প্রস্তুত করছিল, তাদের কাজ এবং দায়িত্ব স্পষ্ট ছিল। হেলিকপ্টারের পাইলট অবশেষে বলে উঠলো, “স্যার, আমরা সীমানার কাছে পৌঁছেছি। কিছুটা দেরি হতে পারে, তবে এখনি নামার চেষ্টা করছি।”
হেলিকপ্টারটি সীমানার কাছে কিছুটা উচ্চতায় থাকলেও শীঘ্রই নেমে আসতে শুরু করলো। রোহান তার দলের সদস্যদের চোখে চোখ রেখে বললো, “এই মুহূর্তে আমাদের কাউকে হারানোর সুযোগ নেই। কুহুকে উদ্ধার করে সেখান থেকে দ্রুত বের হয়ে আসতে হবে।”
রোহান, পূজা, সানি, অগ্নি, সোহেল এবং বাকিরা সবাই প্রস্তুত হয়ে গেলো, অল্প সময়ের মধ্যে নামার পর পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের কাজ শুরু হবে।
হেলিকপ্টারটি সীমানার কাছে নামতে শুরু করল। নিচে দেখা গেলো সীমান্তের নির্জন এলাকা, কিছু দূরে সশস্ত্র পাহারাদারদের অবস্থান ছিল। রোহান পাইলটের সাথে কথা বলে নেমে যাওয়ার জন্য সঠিক স্থান নির্বাচন করলো। হেলিকপ্টারটি একটু সতর্কতার সাথে ধীরে ধীরে অবতরণ করল।
নামার পর, রোহান তার দলকে নির্দেশ দিলো, “সবাই প্রস্তুত থাকো। তারপর পূজা কে বললো,, “পূজা, লোকেশনটা চেক করো। একদম ইকজ্যাক্ট পয়েন্ট বের করো। কুইক, সময় নষ্ট কোরো না।”
পূজা দ্রুত তার ট্র্যাকিং ডিভাইস খুলে লোকেশন চেক করতে শুরু করল। স্ক্রিনে একটি সংকেত জ্বলজ্বল করছিল। সে বলল”স্যার, টার্গেট একদম আমাদের কাছাকাছি। উত্তর-পূর্ব দিকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে।”। আমরা দ্রুত এগোচ্ছি, কোনও ধরনের বিপত্তি যেন না হয়।”
রোহান তাৎক্ষণিকভাবে তার দলকে নির্দেশ দিল, “সবাই, সেই দিকে রওনা দাও। সতর্ক থাকো।
রোহান, পূজা, সানি, অগ্নি, সোহেল এবং অন্যান্য সদস্যরা দ্রুত হেলিকপ্টার থেকে বেরিয়ে এল। তাদের গন্তব্য ছিল একটি নির্দিষ্ট স্থান, যেখানে কুহুকে প্রাচারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তারা সতর্কভাবে চলতে থাকলো, প্রতিটি পদক্ষেপে সচেতন।
রোহান ফোনে তার দলের সদস্যদের নির্দেশ দিচ্ছিলো, “লোকেশন অনুযায়ী এগোবো। যদি কিছু সন্দেহজনক কিছু ঘটে, তাৎক্ষণিকভাবে জানাবো।”
অগ্নি ও সোহেল প্রথমে আক্রমণ পরিকল্পনা করার। তাদের লোকেশন অনুযায়ী একটা নদী পড়লো রোহান ব্যাগ থেকে দূর্বিন দিয়ে দেখলো। একটা ঝং ধরা শিপ। শিপের এক প্রান্তে মিসেস সুলতানা সিকদার দাঁড়িয়ে ছিলেন, তার চারপাশে কিছু অপরাধী লোক ছিল যারা অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত।
তাদের গন্তব্য ছিল একটি নির্দিষ্ট স্থান, যেখানে কুহুকে প্রাচারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তারা সতর্কভাবে চলতে থাকলো, প্রতিটি পদক্ষেপে সচেতন।রোহান ফোনে তার দলের সদস্যদের নির্দেশ দিচ্ছিলো, ” যদি কিছু সন্দেহজনক কিছু ঘটে, তাৎক্ষণিকভাবে জানাবে।”
অগ্নি ও সোহেল প্রথমে আক্রমণ পরিকল্পনা করার। জন্য সীমানার দিকে এগিয়ে গেলো। অন্যদিকে, রোহান এবং পূজা স্থানটি ঘিরে রাখলো। সময় দ্রুত চলে যাচ্ছিল, এবং সবাই জানতো যে, কুহুকে উদ্ধার করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব, কারণ তাদের কাছে আর বেশি সময় ছিল না।
রোহান এবং তার টিম শিপের কাছাকাছি পৌঁছানোর সাথে সাথে, হঠাৎ করেই তাদের সামনে বিশাল এক বাধা সৃষ্টি হলো — কয়েকজন সশস্ত্র সন্দেহজনক লোক তাদের পথ আটকানোর জন্য দাঁড়িয়ে পড়লো। এদের মধ্যে একজন পিস্তল হাতে নিয়ে কটমট করে বললো, “এখান থেকে আর এক কদম এগোনো যাবে না।”
রোহান তার হাতে মুঠো শক্ত করে বললো, “তোরা জানস না, এটা তোদের শেষ ভুল হবে।” তারপরই রোহান ইশারা দিলো তার দলের সদস্যদের। তৎক্ষণাৎ, অগ্নি দ্রুত একে একে তিনজন লোকের দিকে তেড়ে গেল। তার শরীরের গতিবিধি এত দ্রুত ছিল, যে তারা বুঝতে পারেনি। অগ্নি একে একে তাদের শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় করে ফেললো।
এদিকে, সোহেল ও পূজা একসঙ্গে অন্যদের দিকে এগিয়ে গিয়ে, চমৎকার কৌশলে তাদের গুলি চালানোর আগে নিরস্ত্র করে ফেললো। সোহেল নিজের শরীরের পেছনে দুটি গুলি ছুড়ে দ্রুত দুজনের কাছাকাছি চলে এল, তখন তাদের হাতের অস্ত্র সরিয়ে নিয়ে নিজের পিস্তলে গুলি ছুঁড়লো, যেন এদের অস্ত্র হাতে নেয়ার সুযোগ না পায়।
রোহান তখন পিছনে থেকে তাঁর টিমের নির্দেশ দিচ্ছিলো। “এদের কোনো সময় দিতে হবে না! দ্রুত কুহুকে উদ্ধার করো!”
সবাই এক হয়ে এক সেকেন্ডও নষ্ট না করে দ্রুত এগিয়ে গেল। আবার, সন্দেহজনক লোকদের মধ্যে একজন পালানোর চেষ্টা করলো। রোহান তাকে লক্ষ্য করে বললো, “ওকে পেছন থেকে ধরো!” তখন সানি দ্রুত তার দিকে ছুটে এসে পি”স্ত”লটা বের করে, এক অসাধারণ কৌশলে পা বরাবর গু”লি করে। মূহুর্তে লোকটি মাটিতে পড়ে যায়। রোহান বললো থাকুক ও এইখানে পরে আমাদের এখন শিপের ভিতরে যেতে হবে।
শিপের ভিতরে যেতে মুখোমুখি হয় মিসেস সুলতানা সিকদার এর। তিনি বিশ্রী হাসি দিয়ে বললো,, তাহলে চলেই আসলে এইখানে বউ এর টানে।
কি করবো বলেন,,, বউটা যে আমার প্রাণ। কই আমার প্রাণ প্রিয়া কই?
তুমি কি আমার সাথে ফাজলামো করছো?
রোহান ভ্রুঁ কুঁচকে মিসেস সুলতানা সিকদার এর দিকে তাকিয়ে বললো আপনার কেনো মনে হলো আমি ফাজলামো করছি আপনি কি আমার বিয়াইন লাগেন। ভালো ই ভালো বলছি কুহু কোথায়?
খুঁজে দেখো?
বেশ খুঁজবো। যদি ওর গা একটা ফোঁটা আঁচড় লাগে আমি ছাড় খাঁড় করে দিবো সব। আপনাকে মে”রে ফেলতে আমার হাত কাঁপবে না।
রোহান মিসেস সুলতানা সিকদার এর দিকে ব”ন্দু”ক টা তাক করে বললো,,, আপনি বলবেন নাকি আমি শ্যুট করবো।
তুমি মে”রে ফেলেও আপসোস নেই তুমি আসার আগে দেখেছো একটা বস্তা ফেলেছি সেইটা আর কেউ না তোমার কুহু পাড়লে বাঁচাও। রাগে রগ ফুলে ফেঁপে উঠেছে রোহান একটা বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে বললো মা”দা”র চো”দে”র বাচ্চা তোর বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। বলেই কপাল বরাবর গু”লি করে দিলো। মূহুর্তে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়ে গেলো। রোহান দেরি না করে শিপের কিনারা এসে দেখলো শিপের রেলিং এর সাথে বাঁধা একটা বস্তা যেইটা একদম পানির নিচে রোহান পানি তে ঝাঁপ দিয়ে বস্তার দড়ি টা কেটে তারপর বস্তাটা খুলে দেখতে পেলো কুহুকে কিন্তু কোন জ্ঞান নেই। নাক মু”খ দিয়ে র”ক্ত। শরীরটা কেমন ফ্যাকাসে দেখা যাচ্ছে।
চারোদিকে আজানের ধ্বনি শুনা যাচ্ছে। অশুভ শক্তিকে হারিয়ে শুভ শক্তির জয় হলো। রোহান কুহুকে কোলে তুলে নিয়ে এলো। রোহান কুহুকে শিপে নিরাপদ জায়গায় শুইয়ে দেয়। কুহুর নিস্তেজ শরীর দেখে তার মন কেঁপে উঠলেও সে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়।
এইদিকে সোহেল, অগ্নি, এবং সানি শিপের ভেতর থেকে ড্রা”গ”সে”র বিশাল চালান খুঁজে পায়। তারা অবাক হয়ে দেখে, এটি চোরাকারবারিদের একটি বড় কাজের অংশ। তারা দ্রুত এই তথ্য রোহানকে জানায়।
রোহান তাদের শোনার পর দৃঢ় গলায় বলে, “এই শিপটা শুধু কুহুর জীবন নিয়ে খেলা করেনি, বরং অনেক নিরীহ মানুষের জীবন নষ্ট করার জন্য চোরাকারবারিদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। সোহেল, তুমি স্থানীয় পুলিশকে খবর দাও। অগ্নি আর সানি, তোমরা ড্রাগসগুলো সুরক্ষিত রাখো। ওদের পালানোর সুযোগ দেওয়া যাবে না।”
রোহান পূজাকে বলে, “পূজা, আশপাশে কোনো হাসপাতাল আছে কিনা খুঁজে বের করো। কুহুর অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে চাই।”
পূজা সাথে আনা ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর মাধ্যমে জানতে পারলো,, “এখান থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে একটি ছোট ক্লিনিক আছে। ওখানে কুহুর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।”
রোহান বললো অগ্নি দ্রুত এইখান কার পুলিশের সাথে যোগাযোগ করো।
অগ্নি ফোনে কানাইঘাট পুলিশ স্টেশনের সাথে যোগাযোগ করে। ফোন ধরার পর সে দ্রুত বলে,
“হ্যালো, আমি অগ্নি চৌধুরী, CID অফিসার। জরুরি ভিত্তিতে আপনাদের সাহায্য লাগবে। আমরা একটি পরিত্যক্ত শিপে আছি, এবং এখানে বিপুল পরিমাণ চোরাচালান ড্রাগস পাওয়া গেছে। শত্রুদের আমরা আটক করেছি, তবে আমাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন।”
পুলিশ অফিসার চমকে গিয়ে উত্তর দেয়,
“আপনি কোথায় আছেন? আমাদের তৎপরতার জন্য আপনার সঠিক অবস্থান জানা প্রয়োজন।”
অগ্নি দ্রুত জানায়,
“আমরা কানাইঘাটের উপকূলে, ১৫ কিলোমিটার দূরে একটি পুরনো শিপে আছি। শত্রুদের আটক করা হয়েছে এবং আমরা নিরাপদ আছি, তবে ড্রাগসের ব্যাপারে প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে এবং পুলিশ টিমের সাহায্য প্রয়োজন।”
পুলিশ অফিসার দ্রুত ব্যবস্থা নেন,
“অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে, রেসকিউ টিম এখনই পাঠাচ্ছি। আপনারা সুরক্ষিত থাকুন এবং সর্বশেষ তথ্য জানাতে থাকুন।”
“শুনো, আমি হেলিকপ্টার নিয়ে রওনা হচ্ছি হসপিটালের উদ্দেশ্যে। কুহুর অবস্থা ভালো না, ওকে ইমেডিয়েটলি ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস প্রায় চলছে না, হাত-পা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। আমি যত দ্রুত সম্ভব হসপিটালে পৌঁছাবো। তোমরা এই দিকটা সামলাও, ড্রাগস এবং শত্রুদের প্রমাণগুলো ঠিকভাবে পুলিশকে হস্তান্তর করো।”
পূজা, সোহেল, অগ্নি, এবং সানি একযোগে প্রস্তুত হয়। সোহেল বলে, “রোহান, তুমি চিন্তা করোনা। আমরা প্রমাণগুলো পুলিশকে হস্তান্তর করছি এবং শিপের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তুমি কুহুকে বাঁচানোর জন্য দ্রুত হসপিটালে পৌঁছাও।”
রোহান কুহুকে পাঁজাকোল নিয়ে শিপ থেকে বের হয়ে হেলিকপ্টারের দিকে হাঁটতে থাকে। কুহুর শরীর নিস্তেজ, শ্বাস-প্রশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসছে, এবং হাত-পা একদম ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। রোহান তার পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দ্রুত হেলিকপ্টারের দিকে এগিয়ে যায়, মনোযোগ একমাত্র কুহুর জীবনের দিকে।
শিপের রেলিং ধরে যতটা সম্ভব দ্রুত হেলিকপ্টারের কাছে পৌঁছায় কর। হেলিকপ্টার প্রস্তুত ছিল, কুহুকে নিয়ে উঠে। হেলিকপ্টারে ওঠার পর রোহান কুহুকে তার কোলে নিয়ে নিরাপদে বসে। পাইলট ইঞ্জিন চালু করে এবং দ্রুত আকাশে উড়ে যায়, কুহুর চিকিৎসার জন্য একমাত্র সম্ভাব্য স্থান, হসপিটালের দিকে।
রোহান জানে, তার টিম শিপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে, তবে তার মনোযোগ এখন কেবল কুহুর সুস্থতার দিকে।
হেলিকপ্টার দ্রুত আকাশে উড়ে যাওয়ার পর রোহান কুহুর পাশে বসে থাকে, তার হাতটি কুহুর শরীরে রাখা। কুহুর শ্বাস-প্রশ্বাস অতি সাবলীলভাবে চলছিল না, আর তার শরীরের রং একেবারে সাদা হয়ে গেছে। রোহান অস্থিরভাবে কুহুর অবস্থা দেখে মনেই সান্ত্বনা পায় না। তার কাছে এই মুহূর্তে কুহুকে বাঁচানোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
হেলিকপ্টারটি দ্রুত হসপিটালের হেলিপ্যাডে পৌঁছায়, এবং রোহান কুহুকে কোলে তুলে নিয়ে। “দ্রুত! হসপিটালের ভিতরে যায়। কুহুকে ওদের রোহানের কোলে দেখে কুহুকে দেখে নার্সেরা কুহুকে স্ট্রেচারে তুলে নিয়ে ইমারজেন্সি রুমের দিকে নিয়ে যায়।
ডাক্তাররা কুহুকে পরীক্ষা করে দেখে, এবং এক মুহূর্তের মধ্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করে। রোহানের ক্লান্ত শরীর তার মাথা ঘুরছে, তবে মনোযোগ একমাত্র কুহুর সুস্থতার দিকে।
একটু পর ডাক্তার রোহানকে এসে জানায়, “আমরা তার শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক করতে পেরেছি, তবে তাকে আরও কিছু সময় নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হবে।”
রোহান হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে, ফোনটি হাতে নিয়ে রোহানের মাকে কল করে। ফোন ধরার পর, রোহান দ্রুত বলল, “মা, কুহু পেয়েছি।”
রোহানের মা, অবাক হয়ে ফোনের অপর প্রান্তে বলেন, “কিভাবে পেলি? কুহু তো রুমে ছিলো। ওখানে গেলোই বা কি করে?”
রোহান কিছুটা অস্থিরভাবে, কিন্তু শান্ত কণ্ঠে উত্তর দেয়, “মা, আমি পরে সব বলবো। এখন শুধু জানাতে চাই যে কুহু আমার কাছে আছে।
—–
পুলিশের নৌকা এবং গাড়ি শিপের কাছে এসে থামে, এবং পুলিশের সদস্যরা তৎক্ষণাৎ শিপের চারপাশ ঘিরে ফেলে।
অগ্নি তাদের কাছে চলে গিয়ে জানায়, “আমরা এখানে সমস্ত প্রমাণ এবং অপরাধীদের আটক করেছি। সব কিছু এখন আপনার হাতে।”
সোহেল, পূজা, সানি একে একে ড্রাগসের ব্যাগগুলো এবং অপরাধীদের পুলিশকে হস্তান্তর করতে থাকে। পূজা সব ড্রাগসের প্রমাণপত্র এবং ব্যাগগুলো পুলিশের হাতে তুলে দেয়, সানি অপরাধীদের আটক করে পুলিশকে সঁপে দেয়।
পুলিশের অফিসার ধন্যবাদ জানিয়ে বলে, “সব কিছু নিরাপদে হস্তান্তর হয়েছে। আপনাদের সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ।”
টিম মেম্বাররা কিছুটা স্বস্তি পায়, তাদের কাজ সফলভাবে শেষ হয়েছে। পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে এবং শিপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
অগ্নি পুলিশের কাছে গিয়ে বলে, “আমরা সব কিছু নিরাপদে হস্তান্তর করেছি, কিন্তু এখন আমাদের কিছুটা সাহায্য দরকার। আমাদের হসপিটালের দিকে যেতে হবে, কুহুর অবস্থা গুরুতর। আমরা সেখানে পৌঁছাতে চাই।”
পুলিশের এক অফিসার তৎক্ষণাৎ বিষয়টি বুঝতে পারে এবং বলল, “আপনারা চিন্তা করবেন না, আমরা আপনাদের নিরাপদে হসপিটালে পৌঁছে দেব।”
এরপর পুলিশ তাদেরকে নিরাপত্তার সাথে হসপিটালের দিকে যেতে শুরু করে। সোহেল, পূজা, সানি এবং অন্যান্য টিম সদস্যরা পুলিশের সাথে হসপিটালের দিকে রওনা হয়ে, তাদের মনটা এখন কুহুর সুস্থতার আশায় উদ্বিগ্ন হয়ে থাকে।
প্রায় ৩০ মিনিট পর তার পৌঁছায়। হসপিটাল টা ভিতরে ঢুকে সবার আগে চোখে পড়ে রোহান কে হসপিটালের দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বুঝাই যাচ্ছে ক্লান্ত। ক্লান্ত হবে নাই বা কেন। গতকাল হসপিটালের এট্যাক তারপর আজকের মিশন আবার কুহুর অসুস্থতা। এরপর আবার প্রেসমিট যতই হোক নিজের রক্তের সাথে লড়াই আপজনের সাথে লড়াই করার ক্ষমতা কেউর থাকে না ও পেরেছে।
ওরা সবাই ওর কাছে গেলো নিজের বিশ্বাসযোগ্য টিম মেম্বার দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। সোহেল তো ওর ফ্রেন্ড ছোট থেকে। ওর সাথে থাকা চলা। সোহেল বুঝতে পারলো। কি আর করবে? সবই তো নিয় তো।
রোহানের কাঁধে হাত রাখতে রোহানে কি হলো জানা নেই রোহান হঠাৎ ই অজ্ঞান হয়ে গেলো। ওরা দ্রুত নার্স ডেকে একটা কেবিন ঠিক করলো। ডাক্তার ওকে চ্যাকআপ করে বললো,, প্রেশার লো হয়ে গেছে। অতিরিক্ত টেনশনের কারনে। আর আমি স্যালাইন দিয়ে দিচ্ছি সাথে একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি।
পূজা কুহুর কেবিনে দাঁড়িয়ে আছে। এখনো ডাক্তার বের হচ্ছে না। অবশেষে ডাক্তার বের হয়ে বললো,, ও এখন ভালো আছে ওর হাতে যেই জায়গাটাতে গুলি লেগেছিলো সেটিতে আবার ব্যাথার পেয়েছে। আর ওনাকে বন্ধ করে মেবি রাখা হয়েছিলো। ওনি মনে হয় অন্ধকার সহ্য করতে পারেনা যার ফলে ওনার শ্বাঃস কষ্ট হয়ে এমন হয় সমস্যা নেই এখন ঠিক আছে। হাতের জন্য কিছু মেডিসিন দিয়ে দিবো নিয়ে যাবেন। রোগী এখন ঘুমাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠার পর আবার চ্যাক আপ করবো তখন যদি দেখি ওনি ঠিক আছে তখন রিলিজ করবো কথা টা বলে ওনি চলে যান।
—
২ ঘন্টার পর রোহানের ঘুম ভাঙ্গে নিজেকে আবিষ্কার করলো একটা কেবিনে। রোহান হাত টা নাড়াতেই টান পড়লো হাতে। রোহান দেখলো ওর হাতে স্যালাইন লাগানো। রোহান কে উঠতে দেখে সোহেল বলে ওই তুই উঠিস না। তুই দুর্বল তোর রেষ্ট এর দরকার।
রোহান অবলীলায় বলে উঠলো,, আমাকে কুহুর কাছে যেতে দে আমি ঠিক হয়ে যাবো। কুহু আমার ভালো থাকার মেডিসিন কথাটা বলে হাত থেকে স্যালাইন টা খুলে কেবিন থেকে বের হয়ে সোজা চলে যায় কুহুর রুমে। কুহুর মুখে তখন অক্সিজেন এর মাস্ক। পূজা কিছু বলতে চাইলে অগ্নি থামিয়ে দেয়। রোহান কুহুর হাত টা ধরে বললো,, আজকের পর থেকে তোকে আর কষ্ট পেতে দিবো না কুহুপাখি। তোর চোখের এক-একটা পানি আমি আমার মাথায় ধারণ করে নিবো। কুহু তুই একবার ঠিক হয়ে যায়৷ তোকে এইভাবে দেখতে পারছি না দেখছিস না তোকে এইভাবে দেখতে আমার বামপাশে থাকা লাল রক্তে রঞ্জিত হৃদপিণ্ড টা কেমন ব্যাথা করছে। আমি অপেক্ষায় আছি তোর সুস্থ হয়ে উঠার বলে কপালে অধর ছুঁয়ে দিলো। ওর কাছে মনে হলো কত যুগ পর যেনো তাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে।
“””অপেক্ষার নদী, বয়ে চলে চুপচাপ,
প্রেমের হাওয়া বাঁচিয়ে রাখে পাপ
তোমার প্রতীক্ষায়, হৃদয় উজাড়,
জীবনের মোরে, আশা হয়ে কাঁদে পার
ভালোবাসার দীপ, নিভে না একদিন,
অপেক্ষার আলো, ঝলমলে চাঁদদিন
তোমার আগমনে, সব কিছু সার্থক,
এই হৃদয়ের ধ্বনি, শুনবে তোমার ঝঙ্কার “”
একই_বান্ধনে_বাঁধা_দুজনে
পর্বঃ ১৩ (তৃতীয় খন্ড)
নীলাশা_চৌধুরী
প্রায় ১১ টা বাজে কুহুর ঘুম টা ভাঙ্গে। চোখ টা খুলে রোহান কে নিজের মাথার সিউরে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়। কুহুর হাত টা ধরে চেয়ারে মাথা হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। কুহুর বেশ মায়া হয়। তারপর সে মনে করার চেষ্টা করে কি হয়েছে তার? পরে আস্তে আস্তে মনে পড়ে কুহু নামাজ পড়ছিলো। নামাজা পড়া শেষ হতে যখন জায়নামাজ টা গুঁছিয়ে রাখতে। নিজ থেকে ডিনারে জন্য ডাকে অইচ্ছে শর্তেও ওকে নিজে নেমে গিয়ে খেতে হয়। খাওয়া শেষ করে রুমে চলে যায়। তারপর কাজের একটা মহিলা তার রুমে আসে। তার রুমে এসে বলে খালাম্মা আপনাকে কইছে এই দুধটুকু খেয়ে নিতে। কুহু অর্ধেক দুধ টা খেয়ে গ্লাস টা কাজের মহিলার হাতে ধরিয়ে দেয়। তারপর তবজী হাতে নিয়ে সেইটা পড়তে থাকে পড়তে পড়তে বোধয় ঘুমিয়ে পড়ে। যখন ঘুম টা ভাঙ্গে তখন চারদিকে অন্ধকার বাঁচার কোন আশা নেই। রুমে বোধয় জানালা টা ও ছিলো। আস্তে আস্তে শ্বাঃসকষ্ট হয় তারপর নিস্তেজ হয়ে পড়ে যায় আর মনে নেই। কুহু কেমন ছটফট করতে থাকে। কুহুর ছটফটানি তে কুহুর হাত টা নেড়ে উঠে। কুহুর হাতের নাড়াতে রোহান সজাগ হয়। যখন দেখে কুহু ছটফট করছে রোহান কুহুকে নিজের বাহুডোর নিয়ে বললো,,, কুহু জাস্ট রিল্যাক্স আমি আছি। কিছু হয়নি “এভরিথিং ইজ ফাইন” “আই অ্যাম উইথ ইউ”। শখের মানুষের ঘ্রাণ শখের মানুষের স্পর্শে ধীরে ধীরে শান্ত হলো কুহু। কুহু শান্ত হলে রোহান ডাকে সোহেল বলে। বাহিরে থেকে সোহেল তার ডাকটা শুনে ভিতরে আসে। রোহান বলে উঠলো ডাক্তার কে ডেকে নিয়ে আয়। রোহানের কথা মতো ডাক্তার নিয়ে আসে তারা। ডাক্তার কুহুর মুখ থেকে অক্সিজেন মাক্স টা খুলে দিলো। তারপর ভালো করে চ্যাকআপ করে দেখলো কুহু ঠিক আছে।
ডাক্তার বললো,,, “শি ইজ ফাইন” আপনারা কি ওকে নিয়ে যেতে চান?
রোহান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।
তবে খেয়াল রাখবেন ওনি যেনো কখনো অন্ধকার রুমে না থাকেন। আর ওনা সাথে সাথে কিছু দিন থাকবেন ওনি একটু ট্রমাটাইজ হয়ে আছেন।
ঠিক আছে ডাক্তার।
রিসিপশনে আসুন পেপারে সাইন করে নিয়ে যান। রোহান সোহেল কে চোখের ইশারায় করতে সোহেল চলে গেলো রিসিপশনে। রোহান কুহুর চুলে আলতো ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বললো,, কি হয়েছে কুহুরানী মুখটা এমন করে রেখেছো কেন?
কুহু অবুঝের ন্যায় রোহানের দিকে তাকিয়ে বললো,, কি থেকে যে কি হলো বুঝতে পারছি না?
আচ্ছা একটা কথা বলো তো তুমি এইখানে এলে কি করে?
আমি জানিনা। মালা নামে কাজের মহিলাটি আমাকে এক গ্লাস দুধ দেয়। আমি অর্ধেক খেয়ে আর খায়নি। তারপর তাবজী পড়তে থাকি কিন্তু পড়ে বোধহয় ঘুমিয়ে যায়। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখি সব অন্ধকার চোখের সামনে এক ফোঁটাও আলো নেই। আমি শুধু আলোর জন্য ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম তারপর শ্বাঃস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো তারপর নিস্তেজ হয়ে পড়ি। আর কিছু জানি না।
ওকে “ডোন্ট প্যানিক আই হ্যান্ডল ইট”
সোহেল এসে বললো রিলিজ করে দিছে আর এই যে কিছু মেডিসিন লিখে দিয়েছে আয় তবে বের হয়ে যাই। আমাদের আবার প্রেসমিট আছে।
কুহু তুমি ওয়াশরুমে যাবে।
কুহু মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো।
রোহান কুহুকে সুন্দর করে কোলে তুলে নিয়ে যেতে যেতে বললো আয় হেলিকপ্টার এ উঠে রওনা দেই। সবার তো আটবে যারা থেকে যাবে তাদরের কে বললো বাসে করে চলে আসতে আস্তে ধীরে। প্রেসমিট এতো “ইমপোর্ট্যান্ট” না।
সোহেল মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। রোহান আগে কুহুকে কোলে তুলে উঠে বসলো,, তারপর সোহেল,,পূজা,,অগ্নি আর সানি উঠলো। বাকি আরো দুইজন রইলো তারা একটা বাইক ভাড়া করে উঠে আসলো।
হেলিকপ্টারটি কানাইঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়, এবং প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর ঢাকায় পৌঁছায়। এরপর, রোহান কুহুকে গাড়িতে তুলে নিয়ে ঢাকার রাস্তায় রওনা দেয়। ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় ৩০-৪৫ মিনিট সময় লাগে, তবে রোহান যত দ্রুত সম্ভব তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়।
———-
অবশেষে গাড়িটা এসে থামলো বাড়িতে। রোহান কুহুকে আস্তে ধীরে নামিয়ে তারপর টাকা টা মিটিয়ে দিয়ে কুহুকে কোলে তুলে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায় কুহুকে দেখে স্মৃতি দৌড়ে আসে রোহান কুহুকে সোফার উপর বসিয়ে দিলো তারপর রোহানের মা ভাবীমা,, রওনক আসলো। রোহান জোড়ে জোড়ে মালা কে নামে মেয়েটিকে ডাকছে। অনেক ডাকার পর মেয়েটি আসলো মেয়েটিকে দেখে বললো,, বল কাল ওর দুধে কি মিশেয়েছিলি।
আমি…
কি আমি? সত্যি পরিচয় দিবি না কি মেরে ছাল-চামড়া তুলে নিবো কথাটা বলে রোহান তার প্যান্টের বেল্টটা খুলে ঠাস করে একটা আঘাত করতে,, মেয়েটি চেঁচিয়ে বলে উঠলো আমি বলছি আমি বলছি,, আসলে আমি মালা নই মুন। আমাকে এইখানে পাঠানো হয়েছে তাই আমি এসেছি কাজের মেয়ে সেজে তোমাদের থেকে বদলা নিতে।
রোহান বলে উঠলো বাহ্ ভালো তো চেহারাতে কালো মেকআপ করে এইখানে এসে কাহিনী চো””দা””স। তোর সাথে কে ছিলো এতো সিকিউরিটি মাঝে তুই একা এইটা করতে পারবি না বল কে করেছে এইসব বলে আবার মারতে লাগলো। তুই জানোস না তুই কার কলিজাতে আঘাত করছোত। ওই খা”ন”কি”র বাচ্চা ইতিহাস ভুলে গেলি এই আগে তোর কি হাল করে ছিলাম তোর ভাই দুটো এখনো কোমাতে তোর মামা,, মা জেলে তোকে জেলে দিবো বল কে করেছে এইসব।
বলছি বলছি তোমাদের এই সিকিউরিটি মধ্যে আমাদের দুইজন লোক আছে তাদের সাহায্য হয়েছে।
রোহান পুলিশকে ফোন করে বলে ওর বাড়িতে আসতে।
ঘন্টার মধ্যে পুলিশ আসে লোক দুটো কে আর মুনকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর সবার সাথে টুকটাক কথা বলে কুহুকে নিয়ে উপরে আসে। কুহু কে বিছানায় বসাতে কুহু বললো আমি ওয়াশরুমে যাবো।
রোহান কোমরে হাত দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো,, এতোক্ষণ তোমার ওয়াশরুমে যাওয়া লাগে নাই যেই আমি তোমাকে রুমে নিয়ে আসছি ওমনি তোমার ওয়াশরুম পেয়ে গেলো।
আমি কি করবো?
কিছু করতে হবে না একেবারে ড্রেস নিয়ে যাও তারপর ফ্রশ হয়ে এসো।
কুহু ড্রেস নিয়ে গেলো।
রোহান মনে মনে ঠিক করলো ওর মা এর কুৎসিত রূপটা ওর সামনে তুলে ধরবে না। কিছু সত্যি না জানাই ভালো। থাক যেইভাবে আছে। কুহুকে আগলে রাখার জন্য আমি আছি। কুহু ফ্রেশ হয়ে আসতেই রোহানও ফ্রেশ হতে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ পর রোহান ফ্রেশ হয়ে আসতেই কুহুকে নিয়ে নিচে গেলো কিছু খাওয়ার জন্য। অল্প কিছু খেয়ে ওরা উপরে চলে আসলো রেস্ট করতে।
কুহু শুতেই রোহান দরজাটা লক করে দিয়ে কুহুর পাশে শুয়ে পড়ে। কুহুকে কাছে টেনে নিয়ে গভীর আলিঙ্গন করে কপালে চুম্বন দেয়।
রোহান এবং কুহু একে অপরকে দেখতে শুরু করেছিল, তাদের চোখের মধ্যে এক অপরের প্রতি অপ্রকাশিত ভালোবাসা স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। কুহু তার হাতের কনুইয়ে ভর দিয়ে রোহানের দিকে তাকাল, যেন কিছু বলার জন্য প্রস্তুত ছিল। রোহান ধীরে ধীরে কুহুর দিকে এগিয়ে গিয়ে তার হাত ধরে বলল, “কুহু, তুমি জানো না, আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। তোমার হাসি, তোমার চোখের দীপ্তি, সব কিছুই আমাকে মোহিত করে রাখে।”
কুহু একটু শ্বাস নিয়ে তার হাতটা রোহানের হাতে রাখল এবং তার চোখে অশ্রু জমে গেল। “রোহান, আপনি আমার পাশে ছিলেন যখন আমি সবচেয়ে দুর্বল ছিলাম। আপনি ছাড়া আমি কিছুই না।” কুহু গলার স্বরে কাঁপা শোনা যাচ্ছিল, কিন্তু তার মনের ভিতর এক অদৃশ্য শক্তি তাকে শান্ত রাখছিল।
রোহান তাকে একে অপরের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্কের মধ্যে রেখেছিল, এবং তাদের হৃদয়ের অমল ভালোবাসা যেন সময়ের সাথে আরো দৃঢ় হয়।
রোহান কুহুর ঘাড়ে নিজের নাক টা ঘষে বললো ঘুমাও। “ইউ নিড রেস্ট” কুহু রোহান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিলো। একটা সময় দুজন গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।
——
ওরা ঘুম থেকে উঠতে উঠতে চারটা বেজে গেছে। বাড়ির সবাই তখন ঘুমে কিন্তু এই দুজন কপোত-কপোতী তারা এখন দুপুরের খাবার খেতে ব্যস্ত। রোহান সুন্দর করে কুহুকে খাইয়ে দিচ্ছে। কুহু ও রোহান কে খাইয়ে দিচ্ছে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রোহান আর কুহু রুমে আসলো। কুহু গিয়ে বিছানায় উপর বসলো রোহান দরজাটা লক করে এসে কুহুর পাশে বসে কুহুর কোমর ধরে টেনে নিয়ে এসে তার কোলে বসিয়ে দিলো। রোহান নিজের নাক টা কুহু নাকের সাথে ঘষছে আর নেশাক্ত কন্ঠে বললো,,
“””তুমাকি বাঁধিবো গভীর আলিঙ্গনে,
স্বপ্নে তোমারি ছবি আঁকবো আমি সনে
অন্তরে মধুর সুর, চোখে ভালোবাসার ঝিলিক,
পৃথিবী হারিয়ে যাবে, এক হৃৎপিণ্ডে এক সঙ্গীত
হাতের রেখায় একাকার হবে ভালোবাসার লেখা,
অন্তিম শ্বাসে আমি শুধু তোমাকেই চাহিবা।
শুধু তুমিই হবে, আমার দেহ-প্রাণের বাস,
এই নীরব ভালোবাসার, চিরন্তন এক অবিরাম রাস””
আস্তে করে কুহুর ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দিয়ে কিস করতে লাগলো। আস্তে করে কুহুর জামার চেইনা টা খুলে কুহুর উন্মুক্ত পিঠে নিজের হাত টা রাখলো কুহু প্রায় দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। রোহান এক ঝটকায় কুহু নিচে ফেলে রোহান তার উপরে উঠে বিছানার সাথে হাত দুটো চেপে ধরে আবার অধরের সাথে নিচে অধর মিশিয়ে দিচ্ছে। আস্তে রোহানে স্পর্শ গুলো বেসামাল হতে লাগলো। কুহু ছুটার জন্য ছটফট করছিলো। রোহান আরো গভীরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
—-
সন্ধ্যায় রোহান, অগ্নি, পূজা, সোহেল এবং সানি প্রেস কনফারেন্সের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যেখানে তাদের টিম সম্প্রতি যে সফল অভিযানের জন্য কাজ করেছে, তার ফলস্বরূপ জনগণের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছাতে হবে।
রোহান, তার সাদা শার্টে বেশ গম্ভীরভাবে দাঁড়িয়ে, টিমের দিকে তাকিয়ে বলল, “আজকের এই প্রেস কনফারেন্সে আমাদের কাজের ব্যাপারে সবাইকে জানাতে হবে। সবাই জানুক, এই অভিযানটি শুধু আমাদের জন্য নয়, দেশের নিরাপত্তার জন্যও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
অগ্নি পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “আমরা সফল। আইন এবং ন্যায়ের পথে বড় একটা পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা।”
পূজা গম্ভীরভাবে মাথা নেড়ে বলল, “এটা অনেক বড় দায়িত্ব। আমাদের যে সফলতা এসেছে, সেটা দলের একে অপরের প্রতি আস্থা এবং সমর্থনের কারণে। সবাই কাজ করেছে একে অপরের জন্য।”
সোহেল হাসি চাপতে চেষ্টা করে বলল, “এটা শুধু আমাদের কাজ নয়, আমাদের দেশের নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সকলকে জানাতে চাই, অপরাধীরা আর পালাতে পারবে না।”
সানি একটু ঝুঁকে বলল, “এটা শেষ নয়, আমাদের আরো অনেক কাজ বাকি। আমাদের জনগণের জন্য আরও কাজ করতে হবে।”
প্রেস কনফারেন্সে পৌঁছানোর সময়, রোহান নিজের কথা আরেকটু দৃঢ়ভাবে বলল, “আমরা সবাই একসাথে কাজ করেছি, আর আগামী দিনে আমরা আরও কঠোর পদক্ষেপ নেব। আমাদের কাজের সঠিক ফলাফল পেতে সময় লাগবে, কিন্তু আমরা কখনো হাল ছাড়ব না।”
সবাই একে অপরকে সমর্থন জানিয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। সাংবাদিকরা এসে পৌঁছাচ্ছিল, আর রোহান, অগ্নি, পূজা, সোহেল এবং সানি সবাই প্রস্তুত হয়ে দাঁড়াল। অবশেষে, রোহান প্রথমে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে ঘোষণা করল, “এটি আমাদের একটি বড় জয়।”
যাদেরকে আপনারা ধরেছে তারা তো আপনার আপনজন ছিলো। আপনার রক্ত ছিলো,, আপনার বাবা,, চাচা,, ফুফু ছিলো তাদের বিষয়ে কি বলবেনযখন সাংবাদিকের প্রশ্নটি উঠল, পুরো পরিবেশে এক দম চুপচাপ নেমে গেল। রোহান একটু সময় নিয়ে বিষয়টি ভাবলেন, তার চোখে এক ধরনের হতাশা এবং ক্ষোভ স্পষ্ট হয়ে উঠল। তবে তিনি দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে মাইক্রোফোনে উত্তর দিলেন।
রোহান: “আপনার প্রশ্নটি খুবই কঠিন। যারা আমাদের কাছে আপনজন ছিল, যারা আমাদের রক্তের সম্পর্কের মানুষ ছিল, তাদের সম্পর্কে কথা বলাটা কখনও সহজ নয়। কিন্তু আমি এখানে আছি, আমার পেশার প্রতি নিষ্ঠা বজায় রেখে, কারণ আমি জানি—আমার দায়িত্ব কেবল আমার পরিবারের নিরাপত্তা নয়, বরং দেশ এবং জনগণের নিরাপত্তাও।”
তিনি কিছু সময় থামলেন, এবং তারপর বললেন, “এরা আমার বাবা, চাচা, ফুফু—যারা এতদিন আমাদের পাশে ছিল, তাদের ব্যাপারে কিছু বলাটা খুবই বেদনাদায়ক। তবে আইন যে কোন সম্পর্কের ঊর্ধ্বে, সেটা আমাদের বিশ্বাস। তারা অপরাধ করেছে, এবং তাদের শাস্তি প্রাপ্য। আমার দায়িত্ব ছিল সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।”
রোহানের চোখে এক ঝলক কষ্ট ফুটে উঠেছিল, তবে তার কণ্ঠ ছিল দৃঢ়। তিনি আরও বললেন, “আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি একপাশে রেখে, আমি যে কাজ করেছি, তা আমার পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা এবং ন্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধার অংশ। আমি আশা করি, আমাদের দেশের আইন এবং বিচার ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করবে।”
সবাই রোহানকে সম্মান জানিয়ে হাততালি দিতে শুরু করল। রোহান একটু এগিয়ে এসে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বললেন, “ধন্যবাদ। তবে এই সাফল্য এককভাবে আমার নয়, এটি আমার পুরো টিমের। আমাদের প্রত্যেকের কঠোর পরিশ্রম এবং অঙ্গীকারের ফলস্বরূপ আজ আমরা এই জায়গায় পৌঁছেছি।”
রোহান আবার সবাইকে একত্রিত করে বললেন, “অগ্নি, পূজা, সোহেল, সানি—আপনারা প্রত্যেকে এই অভিযানে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা জানি যে আমাদের কাজ এখানেই শেষ হয়নি। এখনও অনেক কিছু করার বাকি। তবে, আমাদের কাজের সফলতা জাতির জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।”
অগ্নি একটু এগিয়ে এসে বললেন, “এই অভিযানে আমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, দেশের মানুষের জন্য এক নতুন সূচনা করেছি। কিন্তু এর জন্য যে ত্যাগ হয়েছে, তা ভুলে গেলে চলবে না।”
পূজাঃ দেশের স্বার্থে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতে আমরা পিছু পা হবো না।
সোহেলঃ দেশের কাছে সর্বদাই আমরা প্রস্তুত।
সানিঃ দেশ মায়ের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিছি। যত দিন বেঁচে থাকবো ততদিন দেশ মায়ের সেবার করে যাবো ই-ন-শা-আল্লাহ্।
আবার একজন প্রেসের লোক বলে উঠলো,, সুলতানা সিকদার ওনি কিভাবে মা”রা গেছে আমরা যতটুকু জানি ওনি আপনার শ্বাশুড়ি?
প্রেসের লোকটির প্রশ্নে রোহানের মুখে এক ধরনের দৃঢ়তা দেখা গেল, আর তাঁর চোখে কোনো দুঃখের চিহ্ন ছিল না। তিনি মাইক্রোফোনে কণ্ঠ তুলে বললেন,
রোহান: “হ্যাঁ, মিসেস সুলতানা সিকদার আমার শ্বাশুড়ি ছিলেন, তবে আমি আপনাদের জানাতে চাই, তিনি ও একজন ক্রিমিনাল ছিলেন। আমার পরিবারে, যাদের আমি ভালোবাসি, তাদের মধ্যে একজনও অপরাধী হলে আমি তাকে কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারি না। তাঁর কার্যকলাপ আমাদের জন্যও অত্যন্ত অস্বস্তিকর ছিল।”
রোহান কিছু সময় থামলেন, যেন তাঁর নিজের অনুভূতিগুলো একত্রিত করতে পারছেন। তারপর বললেন, “তাঁর অপরাধের জন্যই তিনি যে পরিণতি পেয়েছেন, তা আমাদের পরিবারের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কিন্তু এই ঘটনাগুলি কখনোই আমাদের নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করবে না। আইনের চোখে সকলেই সমান, এবং তাঁর অপরাধের জন্য যা প্রাপ্য ছিল, সেটাই হয়েছে।”
রোহান আরো বললেন, “অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম কখনোই ব্যক্তিগত সম্পর্কের ঊর্ধ্বে নয়। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি, এবং আইনের প্রতি আমার অঙ্গীকার আজও অটুট।”
তাঁর কণ্ঠে কোনো পরিবর্তন ছিল না, কোনো ধরনের অশ্রু ছিল না—এটা ছিল এক পেশাদার, নিষ্ঠাবান আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তার কথা। সবকিছুই যেন এক কঠিন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং রোহান বুঝিয়ে দিলেন যে তিনি কোনোভাবেই ব্যক্তিগত সম্পর্কের জন্য আইনকে নমনীয় করবেন না।
রোহান তার কথা শেষ করে মাইক্রোফোনে তাকালেন, তারপর সাংবাদিকদের দিকে একবার চুপচাপ তাকিয়ে বললেন, “এখানেই আমরা আমাদের প্রেস কনফারেন্স শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।”
এরপর রোহান এবং তার টিম মেম্বাররা একে একে স্টেজ থেকে নেমে গেলেন, এবং সাংবাদিকরা তাদের কাজে।
রোহান সোহেলের দিকে তাকিয়ে বললো আমি চাইনি ওনার নাম টা আসুক তবুও আসলো।
ওটা আসবেই কারন ওনি ওতো অপরাধী।
রোহান একটা দীর্ঘ শ্বাঃস ফেললো। বাসায় গিয়ে কুহুকে সামলাতে হবে। তাই সে ওদের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় দিকে রওনা দিলো।
—-
রোহান বাসায় ফিরে এসে আগে ফ্রেশ হয়ে নিলো তারপর কুহুর কাছে গেলো কুহু চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে কুহু কান্না করেছে। কুহু রোহান কে দেখে বললো,,, আপনি আমাকে ঘৃণা করেন? আমার মা পাপ কাজের সাথে যুক্ত ছিলো।
ওরে আমার বোকা কুহু রানীরে আমার বাবা চাচা ফুফু ও পাপ কাজের সাথে যুক্ত তাই বলে কি তুই ঘৃনা করিস?
কুহু মাথা নাড়িয়ে না বললো।
রোহান মুচকি হেসে বললো তাহলে তোর কেন মনে হয় আমি তোকে ঘৃনা করবো। তুই সবসময় আমার
কাছে মায়াবতী ই ছিলি আছিস আর থাকবি।
“”মায়াবতী মায়ার ছোঁয়া,
চোখে লুকায় রাতের জোড়া
তার হাসিতে চাঁদের রূপ,
মন চায় পেতে তার ধূপ
চোখের পাতায় রহস্যের ছায়া,
মনের মাঝে জাগায় মায়া
নিঃশব্দে সে বয়ে যায়,
স্বপ্নের ডালে আলো ছড়ায়
মায়াবতীর কথা মনে,
শত রঙের ছবি আঁকে
তাকে ঘিরে হৃদয় ভাসে,
মায়ায় মোড়া এক ভালোবাসে””
টপ করে চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গাড়িয়ে পড়তেই রোহান তার ঠোঁটা চোখের কোনে চেপে ধরে পানি চুষে নিয়ে বললো তুই কি জানিস না তোর চোখ পানি আমার হৃদপিণ্ডে আঘাত করে।
“”তোর চোখের পানি হৃদয়ে বাজে,
চুপচাপ হয়ে সব কথা সাজে
অশ্রুর স্রোতে ভাঙে সব দেওয়াল,
মনের কোণে লাগে দুঃখের ঝড়কাল
তোর কান্নার শব্দ হৃদয়ে ধরা,
কেমন করে বলি তুই ভুল করিস না
প্রাণের গভীরে তোর নাম লেখা,
তোর কষ্টে আমার বুক হয় শূন্য দেখা
তুই হাসলে যেন সব দুঃখ ফুরায়,
তোর অশ্রু মুছে ভালোবাসা ঘুরায়
তোর চোখের পানি যে প্রাণ জ্বালায়,
সে অশ্রু আমার হৃদয় পুড়িয়ে যায় “”
নে এইবার হাসতো।
কুহু মিষ্টি একটা হাসি দিলো।
রোহান বুকে হাত দিয়ে বললো,,
“””হায় মেরে রাব, আমি মরে যাবো,
তেরি ইয়াদোঁ মে খো যাবো
দিল মে দারদ, আখোঁ মে পানি,
তেরি বিনা, ইয়ে জীবন সুনী
মেরে রাব, কেয়া করু,
তেরি বিনা সব কিছু লাগ রাহা হ্যায় ভ্রম
তেরি ইয়াদোঁ মে সায়ে মে জী রাহা হুঁ,
হায়, আমি তো তু ঝসে দূর খো রাহা হুঁ “” রোহান ছন্দটি শেষ করে কুহুর কপালে অধর জোড়া ছুঁয়ে দিয়ে বললো চল আজ একটু বাহির থেকে ঘুরে আসি। বাহির থেকে ঘুরে আসলে মন টাও হাল্কা লাগবে। দাঁড়া গিটার টা নিয়ে নেই। আর তুই চটজলদি রেডি হয়ে নে। সুন্দর একটা নীল শাড়ী পড়ে রেডি হয়ে নে। কুহু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে বসা থেকে উঠে আলমারি খুলে সুন্দর নীল জামদানীর শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ পর কুহু সুন্দর করে শাড়ি পড়ে নিয়ে হাল্কা সেজে হাতে এক মুঠো কাঁচের চুড়ি নিয়ে পড়ে নিলো।
রোহান কুহুর হাত দুটো ধরে হাতে উল্টো পিঠে চুম্বন করে বললো,, মাশা-আল্লাহ। মে মার হি জায়ঙ্গী।
কুহু নিয়ে রোহান বাইক চালিয়ে চললো দূরে। সামনে ফুলের দোকান দেখে দুটো ফুলের গাজরা কিনলো একটা কুহুর চুলে পড়িয়ে দিলো আরেকটা কুহুর হাতে পড়িয়ে দিয়ে বললো এইবার একেবারে পারফেক্ট।
রোহান বাইক চালাতে চালাতে দূরে নির্জন একটা নদীর তীরে আসলো। তারপর ভাঙ্গা একটি নৌকাতে বসলো। কুহু জুতা খুলে পানিতে পা ডুবিয়ে দিলো। চন্দ্রের আলোয় চারোদিকে আলোকিত হলো চন্দ্রের আলো পানিতে পড়তে পানি চিকচিক করছে। চন্দ্রের আলো কুহুর শরীরি পড়তে কুহু চেহারা জ্বলজ্বল করে উঠলো।
রোহান কুহুর বাম গালে তিলটাতে অধর জোড়া ছুঁয়ে দিয়ে বললো,,,
“তু মেরা থা,
মেরা হ্যায়,
অউর সির্ফ মেরা হি রহেগা “। রোহান আরো বললো জানিস কুহু,,,
“তুই আমার হৃদয়ের সুক্ষ্ম অনুভূতি,
যেমন মধুর সুরে বেজে ওঠে রাগিনী।
চোখের পাতা যেন গল্প বলে,
মনে মনে একে অপরকে জড়িয়ে চলে।
তোর হাসি ছড়িয়ে যায় এই পৃথিবীজুড়ে,
আনন্দে ভরে যায় আমার মনের কূলে।
তোর প্রতিটি স্পর্শে হৃদয় নাচে,
তুই আছিস, তাই পৃথিবী সুন্দর লাগে।
তোর শব্দগুলো হৃদয়ে বেজে ওঠে,
এ যেন সুরের নতুন সৃষ্টির মতো।
তুই যে আমার অনুভূতি, অগাধ গভীর,
তোর মাঝে আমার প্রেমের সব রং ফিরে””
রোহান গিটার টা কাঁধ থেকে নামিয়ে তারপর গিটার টা টুংটাং করে গিটার টা বাজিয়ে গান গাইছে,,
“””Kaise Kahoon Ishq Mein Tere
Kitna Hoon Betaab Main
Aankhon Se Aankhen Mila Ke
Chura Loon Tere Khwab Main
Tere Dil Ke Taqiye Tale
Meri Mohabbat Likhi
Tere Saath Meri Wafa
Aur Mere Saath Likhi
Wajah Tum Ho, Wajah Tum Ho
Din Mere, Raatein Meri
Wajah Tum Ho
Tere Liye Hi Jiya Main
Khud Ko Jo Yun De Diya Hai
Teri Wafa Ne Mujhko Sambhala
Saare Ghamon Ko Dil Se Nikala
Tere Saath Mera Hai Naseeb Juda
Tujhe Paake Adhoora Na Raha
Wajah Tum Ho, Wajah Tum Ho
Din Mere, Raatein Meri
Wajah Tum Ho “””
একই_বন্ধনে_বাঁধা_দুজনে
পর্বঃ-১৪ (শেষ পর্ব)
নীলাশা_চৌধুরী
রাতে তারা বাহিরে থেকে ডিনার করে বাড়ি ফিরলো। কুহুর মায়া মাখা মুখটা ধরে বললো,,
“তোর এই মায়া মাখা,
মুখের কাছে তুচ্ছ সবই,
তোর হাসির ঝলক যেন
জোছনার চেয়ে মধুর কবই।
তোর চোখে জ্বলে চাঁদের আলো,
সেখানে হারায় আমার প্রাণ
তোর ছোঁয়ায় মিশে যায় যেন
সমস্ত হৃদয়ভরা গান
তোর ছায়া ছুঁয়ে হৃদয় ভরে,
জীবন পায় এক নতুন রূপ
তুই-ই আমার অন্তহীন প্রেম,
তোরে ছাড়া পৃথিবী সুদূররূপ”
কুহুও রোহানের গালে হাত দিয়ে বললো,,
“” আমি ভালোবাসা মানে শুধু
রোহানকে বুঝি আমার হৃদয়ে কেবল
আপনারই বাস আপনাতে শুরু
আপনাতেই খতম আমার হৃদয়
নামাক দলিল টা আপনার নামে করে দিলাম”” কথাটা বলে কুহু তার নরম ওষ্ঠ দিয়ে রোহানের সিগারেট খাওয়া অর্ধ ডার্ক গোলাপি ওষ্ঠ টা তার দখলে নিলো। আজ প্রথম কুহু রোহানকে চুম্বন করছে। অর্থাত আজ গভীর আলিঙ্গন এর কুহু আহ্বান করছে রোহান কে। রোহান কে আর পায় কে এই শীতে নারী নামক উষ্ণতা কে না চায় আর সেই নারীটি যদি হয় ব্যক্তিগত তাহলে তো কথায় নেই। রোহান কুহুর আহ্বানে সাড়া দিলো। কুহুর শরীরের প্রতিটা ভাঁজে ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দিচ্ছে। সব বিষন্নতা ভুলে সব অতীত ভুলে তারা ভালোবাসার সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে। ভালোবাসা সুন্দর পবিত্র যদি সেই ভালোবাসা টা হালাল হয় তাহলে তো আল্লাহ্ রহমতে ভরে যাবে জীবনটা।
পরেরদিন সকালে যখন রোহান রেডি হচ্ছিল বের হওয়ার জন্য তখন কুহু বলে এই শুনোন,,
হুম বলেন শুনতেছি,,,
আমার হাতের ব্যাথার জন্য তো এইবছর এক্সাম টা দিতে পারছি না।
হুম তো
তাহলে আমরা একটা বেবি প্ল্যান করি?
বেবি কিভাবে হয় আমি জানিনা।
কুহু ছোট ছোট চোখ করে বললো,, আমি জানি আপনি একটু mb দিবেন আর আমি বাচ্চা ডাউনলোড দিবো।
কুহুর মুখে এমন কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকায় রোহান তারপর দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বললো,, এইসব অ”স”ভ্য কথা কই থেইকা শিখছোত। তুই নিজেও একটা বাচ্চা আগে নিজেকে সামলাতে শিখ তারপর বাচ্চা নিবো বলে কুহুর কপালে কিস করে কুহু রাগে গাল ফুলিয়ে রাখে রোহান গাল টিপে দিয়ে বলে আমার কুহুপাখি আমার বাচ্চা বউ টা টা সাবধানে থেকো আল্লাহ্ হাফেজ বলে চলে যায়।
—–
দেখতে ১ টা মাস কেটে গেলো। কুহু জানতে পারলো সে মা হতে চলেছে আরো একটা কথা কঁহুর সাথে সাথে ভাবীমা ও মা হতে চলেছে। সন্ধ্যায় কুহু পা চারি করছে কিভাবে রোহান কে জানাবে যে ও প্যাগন্টে রোহান ই বা কিভাবে নিবে যে কুহু প্যাগন্টে। রোহানের গাড়িটা কেবল মাত্র বাসায় ঢুকলো। গাড়ির শব্দ পেয়ে কুহুর হৃদ স্পন্দন টা কেমন যেনো বেড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনি বুঝি হৃদটা হাতে এসে বের হয়ে যাবে। হাত পা কেমন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। রোহান মেইন ডোরে কাছে এসে কলিং বেল টা চাপতে কাজেরে মেয়ে টা দরজা খুলে দিলো। মা আর ভাবীমার সাথে কথা বলে উপরে গেলো কুহু পিছনে দাঁড়িয়ে মুখে আঙুল দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেনো কিছু ভাবছে রোহান এসেছে শুনতেও পায়নি। রোহান কুহুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,, আমার কুহুপাখি টা কি নিয়ে এতো ভাবছে আমি আমি এসেছি সে শুনতেও পায়নি। কি এতো ভাবছেন মিসেস আহম্মেদ?
কুহু নিজেকে গুঁছিয়ে নিয়ে রোহানের দিকে ফিরে রোহানের শার্টের বোতাম টা আস্তে আস্তে করে খুলতে খুলতে বললো,,একটা কথা বলবো,?
হুম শুনছি?,
রাগ করবেন না তো?
কখনো করেছি?
কুহু মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো।
তাহলো বলো।
কুহুর ঠোঁট কাঁপছে বুকটাও কাঁপছে। বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করছে কন্ঠনালী শুকিয়ে আসছে,, কুহু নিজে ধাতস্থ করে বললো,,, আমরা দুই থেকে তিন হতে যাচ্ছি,?
রোহান বললো বুঝলাম না বুঝিয়ে বলো।
কুহু রোহানের হাতটা কুহুর পেটে ধরে বললো ,, এই পেটে একটা প্রাণ আসতে চলেছে। আমাদের ভালোবাসার ফল আপনি বাবা আর আমি মা হতে চলেছি আরো একটা খবর আছে ভাবীমাও প্যাগন্টে। মানে এক সাথে দুটো বেবি হবে। অবিশ্বাস্য চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। তারও শরীরে কেমন যেনো অনুভূতি হতে লাগলো। তারপর আলহামদুলিল্লাহ বলে মুখে এক বিশাল হাসি দিয়ে সে হঠাৎ কুহুকে জড়িয়ে ধরে বললো, “তুই জানিস, এটা আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত।” “কুহু, আমি কথা দিচ্ছি, তোকে আর আমাদের সন্তানকে কোনো কিছুর অভাব করতে দেবো না। এই পরিবারটা সুখ আর ভালোবাসায় ভরে রাখবো।”
আমি জানি আপনি আপনার দায়িত্ব টা পালন করবেন। রোহান কুহুকে কোলে তুলে নিয়ে বললো আমার ছোট কুহুপাখি টা কতটা বড় হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না। এখন তার পেটে আমাদের বেবি। কুহুকে খাটে শুইয়ে পর পর কিস করতে লাগলো পেটে তারপর বেবির সাথে বকবক করতে লাগলো। কুহু গালে হাত দিয়ে দেখলো তার CID অফিসারের পাগলামো গুলো। তারপর কুহুর পেট টা কে ছেড়ে দিয়ে মুখের কাছে আসতেই কুহু চোখ বন্ধ করে নিলো। রোহান কুহুর ঠোঁটে ডিপলি কিস করলো। কিস করা শেষে কুহুকে ছেড়ে দিয়ে বললো আমি মিষ্টি খেয়ে নিলাম তুই তো আর খাওয়াবি না।
শয়তান ব্যাডা।
—–
দেখতে দেখতে ৬ টা মাস হলো। কুহুর ভাবীমা নেই ওনাকে ওনার বাবা এসে নিয়ে গেছে। কুহুর মা – বাবা থাকলে তো কুহুর ও এমন ভাগ্য হতো। কুহু তার পেটে হাত দিয়ে বললো তোর কপাল টা খারাপরে তুই তোর নানা-নানীর আদর পাবিনা। রোহান চুপ করে এসে কুহুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর উঁচু পেটেতে ঠোঁট টা ছুঁয়ে দিয়ে বললো,, কুহু তোর মন খারাপ বলে আমার বেবির ও মন খারাপ। আমার বেবি জানে তাদের জন্য তাদের বাবাই যথেষ্ট আর কাউকে লাগবে না। বসা থেকে উঠে কুহুর সামনে গিয়ে ওর কপালে চুম্বন করে বললো আমি আছি তো আমার ভালোবাসা কি যথেষ্ট নয়?
আপনার ভালোবাসার কারনেই তো আজ আমি বেঁচে আছি পূর্ণতা পেয়েছি শূন্যতা থেকে। রোহান কুহুকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর ছেড়ে দিয়ে বললো বোন কোথায়?
ভাইয়া স্কুলে নিয়ে গেছে।
আর মা?
মামনি তো রুমে নাস্তা করে শুয়ে আছে মনে শরীর টা ভালো না। শুনোন আসার সময় মামনির জন্য ফল আর প্রেশারের ওষুধ নিয়ে আসবেন ওগুলো শেষ হয়ে গেছে। ঠিক আছে মেরি বিবিজান আপনি সাবধানে থাকবেন। আর আস্তে ধীরে চলাচল করবেন।
আসছি আমি বলে চলে গেলো। কুহু রান্নাঘরে গেলো কাজের মেয়েদের দেখিয়ে দিচ্ছে কি কি রান্না করতে হবে। তারপর সে নিজের রুমে গিয়ে বেলকনিতে পাতা চেয়ারে বসে পড়লো। নিজের পেটের উপর হাত রাখলো আর বললো ভারি দুষ্টু হচ্ছো তুমি। রাতে আম্মুকে কিক মারো আম্মু তো ব্যাথা পায়।
এই পাঁচটা মাস রোহান কে প্রচুর জ্বালিয়েছে কুহু। রাত দুটো নাই তিনটে নাই এই খাবো সেই খাবো বলে আবদার করতো আর রোহান হাসি মুখে সেই টা করতো। কুহু সার্থক এমন একজন জীবনসঙ্গী পেয়ে।
—
দেখতে দেখতে আরো একটা মাস কেটে গেলো। কুহুর এখন সাত মাস চলে। আজ কাল মেজাজ টা কেমন খিটখিটে থাকে তার। সন্ধ্যার আলো ম্লান হতে শুরু করেছে। কুহু ডাইনিং টেবিলে বসে ফল কাটার চেষ্টা করছে। রোহান ডির্পামেন্ট থেকে ফিরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখে, কুহুর কপালে ঘামের ছোট ছোট ফোঁটা জমেছে। সে তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে বললো,
“তুই এটা কি করছিস? আমি তো আছি। তোর এসব কিছু করতে হবে না । তুই শুধু বিশ্রাম নিবি।
কুহু মৃদু হেসে বললো, “আপনি এত বেশি চিন্তা করেন কেন? আমি তো ঠিক আছি।”
রোহান ফলের ছুরি নিজের হাতে নিয়ে কুহুকে বসতে বললো।
“কুহু, এটা শুধু তোর ব্যাপার নয়। তোর ভেতরে থাকা আরেকটা প্রাণ আছে, যার ওপর আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তুই যতটা আরামদায়ক থাকবি, ও ততটাই ভালো থাকবে। এবার চুপচাপ বস।”
কুহু রোহানের এমন যত্নশীলতায় মুগ্ধ হয়ে মৃদু হেসে বললো,
“আপনি জানেন, আপনি আমাকে আরও বেশি ভালোবাসতে শিখিয়ে দিচ্ছেন।”
রোহান হেসে বললো, “তোর ভালো থাকা মানেই আমার ভালো থাকা।” এই দুনিয়াতে তুই যে আমার জান্নাত।
আমি তো এখন মোটা হয়ে যাচ্ছি আপনার আর ভালো লাগবে না?
রোহান কুহুর হাত দু’টো ধরে বললো কে বলেছে এইসব বাজে কথা তুই জানিস তুই এখন কতটা কিউট হইছো আল্লাহ্ না করুক কারও নজর না লেগে যায় আমার কাছে তুই আর বাচ্চা গোটা পৃথিবী। এর ব্যাখ্যা ও হয় না। নে তাড়াতাড়ি ফল টা খেয়ে নে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি বলে রোহান চলে গেলো ফ্রেশ হতে। আর কুহু কিছু ফল খাচ্ছে। কিছু ফল খেয়ে কুহু উঠে সোফায় গিয়ে বসলো। দেখতে দেখতে রাত ঘনিয়ে এলো।
রাতে সবাই মিলে ডিনার করে একটু আড্ডা দিয়ে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রোহান কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো। হঠাৎ রাতে পেটে ব্যাথা একটু চিৎকার করে উঠলো কুহুর চিৎকার টা পেতে রোহান ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠে দেখে কুহু পেটে হাত দিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বসে আছে। রোহান বুঝে ফেললো বেবি কিক মারছে। কুহু রোহানের দিকে তাকিয়ে বললো আপনার বেবি আমার পেটের ভিতরে ডিজে পার্টি চালু করে দিছে। যেমন বাপ তার তেমন আণ্ডাবাচ্চা। রোহান কুহুর মাথায় হাত দিয়ে বললো আয় আমার বুকে আয় আমি ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি তাহলে দেখবি বেবি আর এমন করবে না। রোহান পেটে হাত দিয়ে বললো আমার সোনা বাবাই এমন করে না তোমার আম্মুর তো কষ্ট হয়ে আগে দুনিয়াতে আসো তারপর আমরা দুইজন মিলে জ্বালাবো। কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কুহু ঘুমিয়ে গেলো কুহু ঘুমিয়ে যেতেই রোহান ও ঘুমিয়ে গেলো।
—–
দেখতে দেখতে মাহেন্দ্রক্ষণ এসে গেলো বাড়ি দু’টো বউকে একই হসপিটালে ভর্তি করানো হলো সকাল থেকে বলছিলো পেটে ব্যাথা তাই আর দেরি না করে নিয়ে আসলো। আর কাকতালীয় ব্যাপার ভাবীমার ও একই ঘটনা হয়। কিন্তু ভাবীমা তার বাপের ছিলো ও বাড়ি থেকে ফোন করলে বলে এই হসপিটাল এ নিয়ে আসতে। তারপর হসপিটাল এ নিয়ে আসে বাড়ির সকলে উপস্থিত। কুহু যখন কিছুটা নার্ভাস হয়ে ওঠে, তখন রোহান তার হাতে হাত রেখে বললো,
“কুহু, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের বাচ্চা তোর ভালোবাসার মধ্যে নিরাপদ থাকবে। আমি তোর পাশে আছি, তুই ভয় পাস না।”
কুহু চোখ বন্ধ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়।রোহান তার শক্তি, তার আশ্রয়।
কুহু রোহানের দিকে তাকিয়ে, ধীরে ধীরে বললো,
“এটা একটা নতুন জীবন শুরু হবে, রোহান। আমি জানি,আপনি সবকিছু ঠিকঠাক করতে পারবেন। আমাদের ছোট্ট প্রিয় মানুষ আসতে চলেছে, তাই না?”
রোহান চোখের কোণে জল জমে গেলেও, হাসিমুখে উত্তর দিল,
“হ্যাঁ, কুহু। তোর ভালোবাসায় আমাদের সবকিছু সুন্দর হবে।”
কুহুকে আর ভাবীমা কে একসাথে চ্যাক আপ করে নিলো ডাক্তাররা তারপর বললো বেবির তো নাড়াচাড়া করছে না সিজার করতে হবে আপনাদের দুজনের। কুহু ভয় পেয়ে যায়। রোহান কুহুর হাতটা ধরে বললো আল্লাহ্ আছে ওনি আমাদের সহায়। আর আমি আছি তো ভয় কিসের ডাক্তারদের বললো অ.টি রেডি করতে। আর হসপিটালের সব ফর্মফিলাপ করে টাকা জমা দিলো অ.টি রেডি করলো কেবিন থেকে ওদের অ.টি তে ঢুকানো হলো। সবাই টেনশনে আছে আর রোহান রোহানের তো পাগল প্রায় অবস্থা।
কুহু এবং ভাবীমাকে অ.টি তে নিয়ে যাওয়ার পর, ডাক্তাররা তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করলো। রোহান বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল, তার চোখে তীব্র উদ্বেগ ছিল, কিন্তু সে নিজেকে সামলে নিয়ে অপেক্ষা করছিল।
রোহান কষ্টে হলেও, নিজেকে স্থির রাখার চেষ্টা করছিল সে তার নিজের ভিতর থেকে সাহস খুঁজে বের করতে চেয়েছিল।
“কুহু, আমি তোকে একা কখনোই ছাড়বো না। আমাদের সন্তান নিরাপদে আসবে। আল্লাহ্র ইচ্ছায় সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।” রোহান মনে মনে নিজেকে বলছিল।
কুহু ও ভাবীকে অ্যানেস্থেশিয়া দিয়ে অজ্ঞান করা হলো। ডাক্তাররা দ্রুত কাজ শুরু করলেন। ডাক্তারদের একজন বললেন,
“মায়ের এবং সন্তানের সুরক্ষা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। সবাই প্রস্তুত থাকুন। আমরা কাজ শুরু করছি।”
প্রথমে কুহুর দিকে মনোযোগ দিলেন ডাক্তাররা। তাদের দক্ষ হাতে সিজারিয়ান শুরু হলো। অপারেশন থিয়েটারের আলো কুহুর নিস্তেজ মুখে পড়ে তার দৃঢ়তাকে যেন ফুটিয়ে তুলছিল।
ডাক্তার ধীরে ধীরে শিশুকে বের করার প্রক্রিয়া শুরু করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই এক শিশুর প্রথম আর্তনাদ ভেসে এলো।
“এটা একটি কন্যাসন্তান,” ডাক্তার ঘোষণা করলেন। শিশুটিকে পরিষ্কার করে নার্সদের হাতে তুলে দেওয়া হলো।
কুহুর পরে ডাক্তাররা দ্রুত ভাবীমা দিকে মনোযোগ দিলেন। একইভাবে সিজারিয়ান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরেকটি শিশু পৃথিবীর আলো দেখলো।
“এটি একটি পুত্রসন্তান,” ডাক্তার আবার ঘোষণা করলেন।
অপারেশন থিয়েটারের দরজার বাইরে:অপারেশন শেষ হওয়ার পর, কিছুক্ষণ চুপচাপ কেটে যায়। সবাই অপারেশন থিয়েটারের বাইরে দাঁড়িয়ে উদ্বেগ আর অপেক্ষার মুহূর্ত পার করছিল। রোহানের মনে তখনো উত্তেজনা আর অজানা ভয় ঘুরপাক খাচ্ছিল।
হঠাৎ, অপারেশন থিয়েটারের দরজা খুলে গেল। নার্সেরা দুই নবজাতক শিশু হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো। সবার চোখ সেই মুহূর্তে সেই ছোট্ট শিশুদের দিকে আটকে গেল।
নার্সের গলায় এক প্রশান্তি ফুটে উঠলো।
“অপারেশন সফল হয়েছে। মা এবং দুই নবজাতক সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। এটি একটি কন্যাসন্তান এবং এটি একটি পুত্রসন্তান।”
রওনক এসে তার সন্তান কে কোলে তুলে নিয়ে কানে কানে আযান দিলো।
রোহান সন্তানের দিকে তাকিয়ে যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিল না। সে কন্যাসন্তানটিকে প্রথমে কোলে নিলো। ছোট্ট, নরম শিশুটির দিকে তাকিয়ে তার হৃদয় আনন্দে ভরে উঠলো। কানে কানে আযান দিলো তারপর বললো
“তুমি আমার মেয়ে… আমার ছোট্ট রাজকন্যা। আমি তোমার জন্য সব করতে পারি,” রোহান ফিসফিস করে বললো।
পরিবারের সবাই সামনে এগিয়ে এলো। রোহানের মা চোখের পানি মুছে বললেন,
“আলহামদুলিল্লাহ্, এত সুন্দর দুটি বাচ্চা আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন।”
সবাই নবজাতকদের দেখে আনন্দে অভিভূত হয়ে গেল। রোহান এক পাশে দাঁড়িয়ে মনে মনে বললো,
“এটাই আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত। আল্লাহ্, আপনাকে ধন্যবাদ।”
কিছুক্ষণ পর কুহু ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে পেল। রোহান তার পাশে এসে মেয়েটিকে কুহুর কোলে তুলে দিয়ে বললো,
“দেখো, আমাদের রাজকন্যা। আমি তাকে আজান শুনিয়েছি। এখন সে তোমার কোলে।”
কুহু ক্লান্ত হলেও মেয়েটিকে দেখে এক মৃদু হাসি দিলো। বললো,
“আপনি সত্যিই একজন অসাধারণ মানুষ, রোহান। আমাদের সন্তানদের জন্য আমি এতটা সুখী যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।”
পরিবারের সবাই এই বিশেষ মুহূর্ত উদযাপন করলো। কুহু ও ভাবী উভয়েই তাদের সন্তানদের কোলে নিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসলেন।
রোহান প্রতিজ্ঞা করলো,
“তোমরা তিনজন আমার পরিবারে। আমি সব সময় তোমাদের পাশে থাকবো।”
—-
পরদিন সকালে, কুহু ও ভাবী কিছুটা সুস্থ বোধ করছিলেন। পুরো পরিবার হসপিটালের কেবিনে একত্রিত হয়ে ছিল। রোহান দুই শিশুর যত্নে ব্যস্ত। সে নার্সদের কাছ থেকে কীভাবে নবজাতকদের খাওয়ানো ও গোসল করানো হয়, তা শিখছিল।
কুহু বললো,
“রোহান, তুমি তো বাবার ভূমিকা নিতে শুরু করেছো!”
রোহান হেসে বললো,
“তোমাদের সবার দায়িত্ব আমার।”
ডাক্তার কুহু ও ভাবীকে হসপিটাল থেকে ছাড়ার অনুমতি দিলেন। দুই মায়ের মুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলেও, তাদের চোখে ছিল গভীর তৃপ্তি। রোহান নিজের কন্যা সন্তানকে সাবধানে কোলে তুলে নিলো, আর রওনক নিজের পুত্রসন্তানকে কোলে নিয়ে স্নেহভরে তাকিয়ে রইলো।
গাড়ি রেডি ছিল। রোহান গাড়ির দরজা খুলে প্রথমে কুহুকে বসতে সাহায্য করলো। এরপর কন্যাসন্তানকে সাবধানে পাশে রাখলো। অন্যদিকে রওনক তার স্ত্রী এবং পুত্রসন্তানকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। পরিবারের সবাই খুশিতে আত্মহারা।
বাড়িতে পৌঁছানো:
বাড়িতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সবাই দুই নবজাতককে বরণ করে নিল। ঘরের ভেতর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল। রোহানের মা দুই শিশুকে কোলে নিতে চাইলে রোহান মৃদু হেসে বললো,
“আমার রাজকন্যাকে আর ছাড়ছি না।”
মা বললেন,
“আরে বাবা, তুই তো আগেই ওর সবচেয়ে বড় অভিভাবক হয়ে গেছিস!”
রওনক তার পুত্রসন্তানকে নিয়ে সবার কাছে এসে বললো,
“দেখ, আমার ছেলে একেবারে আমার মতো হয়েছে। এই কথাটা শুনে সবাই হেসে উঠলো
কুহুর অনুভূতি:
কুহু রোহানের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। বললো,
“এটা যেন স্বপ্নের মতো লাগছে, রোহান। আমাদের সন্তান, আমাদের ভালোবাসা আর পুরো পরিবার একসঙ্গে।”
রোহান মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুমি আমাদের আশীর্বাদ। আর এই মেয়ে, আমার রাজকন্যা, আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার।”
রোহান কুহুর হাতটা ধরে বললো,,,
“”একই বন্ধনে বাঁধা দু’জনে,
প্রেমের বাণী গায়, চিরকাল সনে
হৃদয়ে হৃদয়ে ঢলে একতা সুর,
মিলনের রেশে পূর্ণ হয়ে সুর।
সুখের পথে ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে,
দুঃখেরা ক্ষণে ক্ষণে ভেসে যায় দূরে
সময়ের বাঁকে একে অপরের হাত,
জীবনের আঙিনায় চলে নতুন রাত
তাদের প্রেমের চিরন্তন আলো,
ভেঙে দেয় মেঘ, তৈরি করে ভালোলাগার জোড়
একই বন্ধনে বাঁধা দুই প্রিয় মাটি
তাদের ভালোবাসা—অস্তিত্বের সত্যি”” ভালোবাসি প্রাণ প্রিয় স্ত্রী তোমাকে।
আমিও আপনাকে ভালোবাসি প্রান প্রিয় স্বামী। রোহান কুহুর কপালে চুম্বন এঁকে দিলো আর কুহুও রোহানের কপালে চুম্বন এঁকে দিলো।
বেঁচে থাকুক ওদের ভালোবাসা। ভালোবাসা যে সুন্দর এইটা রোহান আর কুহুকে না দেখলে বুঝা যেতো না।
[সমাপ্ত]