অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার 17,18,19

অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 17
সবাই মিলে কলেজ মাঠের একপাশে বসলাম,
রিপন : এখন বলতো তোর বিয়েটা কিভাবে হলো?
(রিপনের কথা শুনে সবাই অবাক)
মশিউর, বেলাল, নেহা ওরা সবাই বলে উঠলো কিসের বিয়ে কার বিয়ে,আর কার সাথে বিয়ে?
রিপন : অর্ণব বিয়ে করেছে দুই মাস আগে। আমাকে সেদিন ভুল করে সত্যি কথাটা বলে দিছিলো। কিন্তু কিভাবে কি হয়েছে কিছুই বলেনি। এই ঘটনাটা বলার জন্যই আজকে সবাইকে ডাকছে।
নেগলা :-তুই সত্যি কি বিয়া করছিস?
অর্ণব : হুম আমার বিয়ে হয়েছে দুই মাস আগে।
নেহা : ইস। আমি চাইছিলাম তোর বিয়েতে কত মজা করবো। আর গাধাটা না জানায় বিয়ে করে ফেললো। লাথ মারতে ইচ্ছা করতেছে।
অর্ণব : হাহা। আমি এখানে বিয়ে করলেও সেই সুযোগটা পাইতি না। কারণ আমি বিয়েতে কাউকে দাওয়াত দিতাম। কেননা,
হাদিসে আছে,
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,”সর্বাধিক বরকতপূর্ণ বিয়ে হচ্ছে, যার খরচ যত সহজ ও স্বাভাবিক হয়।”
-(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৪৫২৯)💕
পরে দাওয়াত করতাম। মানে করবো। বুঝলি?
নেহা : হুম। সব কিপ্টামি।
মশিউর : কিপ্টামি না এটা নবীজির সুন্নত।
বেলাল : যাক হাদিসটা জানে ভালোই হইছে আমার বাপের অনেক টাকা বাঁচবে।
নেহা : এইতো আরেকটা কিপ্টা।
(সবাই হেসে উঠলো)
নেগলা:- এই তোদের কথাবার্তা থামাবি? ঘটনাটা তো শুনতে দে।
রিপন : অর্ণব তুই কিভাবে কি হলো ঘটনাটা শুরু কর।
নেহা : রিপন আপনি কিভাবে বিয়েটা করবেন তা একটু শুনি। আগেই বলে রাখলাম কিপ্টামি কথাবার্তা বললে কিন্তু😡
(কোন চিপায় ফেলায় দিলো? নেহাকে যদি বলি আমিও ঐভাবেই বিয়ে করবো ওকে। তাহলে নির্ঘাত রাগে আগুন হয়ে যাবে)
রিপন : বি…য়ে তো অর্ণ..বে..র মতোই হবে..
নেহা : কিইইইই?😡
তাড়াতাড়ি করে এক নিশ্বাসে বললাম
রিপন : কিন্তু পরের দিন সবার জন্য বড় করে অনুষ্ঠান দিবো!
নেহা : তাহলে ঠিক আছে।😑
মনে মনে,
রিপন : যাক বাবা বাঁচা গেলো।
বেলাল : অর্ণব ঘটনাটা বলতে শুরু কর।
অর্ণব : থাম তোরা। তোদের কি মনে আছে আমি দুই মাস আগে রাজশাহী গেছিলাম?
একলাস : হুম মনে আছে।
(গল্পটি শুরু…)
রাজশাহীতে আমি সাত দিনের জন্য আছি। এখানে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রাজীবের বাড়িতে উঠছি। রাজিবের সাথে ঘুরতে ঘুরতে পাঁচ দিন কিভাবে যে চলে গেলো বুঝতেও পারলাম না।
খুব সকালবেলা পদ্মা নদীর পাড়ে একা ঘুরতে গেলাম। উফফ! সে কি দৃশ্য। নদীটা বিশাল। যত দূর চোখ যাচ্ছে তত দূর পানি। নদীটা আসলেই অনেক বড় তাই ওপাড় দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে দূর দিগন্তে নদী আর আকাশ একসাথে মিলিত হয়েছে। নদীর পাড়টা দেখতে আরো সুন্দর। পাশেই নদীর পাশে সান বাধানো ছিলো। সানটা বড় হলেও নদীর বিশালতার কাছে ছোট লাগতেছে। সেখানে একজন বয়স্ক লোক বসে আকাশ দেখতেছেন। ইনার আকাশ দেখা দেখে নবীজি (সা) এর কথা মনে পড়ে গেলো। আগে নবীজি (সা) বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতেন। এতে ইহুদীরা খুবই খুশি হত। নবীজি (সা) মনের একান্ত ইচ্ছা ছিলো ইব্রাহীম (আঃ) এর কিবলাহ তথা কা‘বা ঘরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করা। এ জন্য তিনি মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকাতেন এবং মহান আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করতেন। তখন
মহান আল্লাহ নাযিল করেন,
“নিশ্চয়ই আমি আকাশের দিকে তোমার মুখমণ্ডল উত্তোলন অবলোকন করেছি।”
-(২ নং সূরা বাকারাহ, আয়াত নং ১৪৪)💕
দেখলাম সামনেই পাহাড়ের মতো উঁচু ঢিবি। সেখানে উঠলাম। এখান থেকে নদীটাকে দেখতে আরো সুন্দর লাগতেছে। দেখলাম পাশেই সারি সারি কাঁশবন। কাঁশফুল বাতাসে যখন দুলতেছিলো তখন সত্যিই অসাধারণ লাগতেছিলো।
ঢিবি থেকে নেমে হাঁটতাছি হঠাৎ কিসের যেন শব্দ পেলাম আর কিছু মেয়ের কন্ঠ। পিছনে ঘুরে দেখলাম চারটা মেয়ে আসতেছে। তার মধ্যে তিনজন বোরখা পড়া ও আরেকজন সিম্পল জামা-পায়জামা আর ওড়না দিয়ে মাথা ঢাকা। বোরখা পড়া দুই জন শুধু হিজাব পড়লেও বাকি একজন সম্পুর্নভাবে পর্দা করেছে। বাকি তিনজনকে না দেখলেও ইনাকে খুব ভালোভাবেই দেখলাম। আমি রাস্তার যে দিকে ছিলাম সেদিক থেকে প্রথম মেয়েটা ছিলো উনি।
সম্পুর্ন কালো বোরখা, মাথায় কালো হিজাব, মুখে কালো নিকাব, হাতে কালো মুজা আর পায়ে মুজাসহ জুতা। শুধু চোখগুলাই শুধু দেখতে পেলাম। কি মায়াবি সে চোখ জোড়া।
আমি কখনো কোন মেয়েকে এভাবে লক্ষ্য করিনি। এই প্রথম। আমি নিজেও বুঝতে পারিনি যে আমি একটা মেয়েকে দেখিতিছি। যখন হুস হলো তখন চোখ নিচে নামায় পিছনে ঘুরে দাঁড়ায় থাকলাম। আল্লাহ মাফ করুক। তাও ভালো মেয়েটা সম্পুর্ন পর্দা করে ছিলো। আসলেই পর্দা শুধু মেয়েদের পাপ থেকেই রক্ষা করে না ছেলেদেরকেও চোখের যেনা থেকেও রক্ষা করে।
মেয়ে চারজন পাশ দিয়ে গেলো। আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সম্পূর্ণ পর্দা করা মেয়েটা বোরখা না পড়া মেয়েটাকে অনেক কিছুই বললো। আমার পাশ দিয়েই উনি গেছিলেন তাই ভালোভাবেই শুনতে পাইলাম উনি কি বললেন।
অপরিচিতা মেয়ে : এই তোকে বললাম না যে তুই পর্দা করে আসবি। পর্দা করা ফরয। তোকে এটা করতেই হবে। কেননা
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।”
-(সূরা নুর 31)💕
বুঝলি?
এতটুকুই শুনতে পেলাম। আমি মেয়েটার কথা গুলা শুনে বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না। এই যুগেও এরকম মেয়ে আছে যে কুরআনের রেফারেন্স বা দলিল টেনে কথা বলে। বাব্বাহ! এবার বোধহয় আমার আম্মুর স্বপ্ন পূরণ হবে।
আমি মেয়েটার যাওয়ার দৃশ্য অপলক দৃষ্টিতে দেখতেছি। দেখলাম শুধু এক পায়ে নূপুর। বাম পায়ে। নূপুরের আওয়াজটা খুব মৃদু কিন্তু আমার কানে সুরের মূর্ছনা সৃষ্টি করতেছিলো। আমি এই আওয়াজ কখনো ভুলবোনা।
আমি ঘোরের মধ্যে ছিলাম। যাওয়ার দৃশ্য, নুপুরের আওয়াজ আর আমার মনের উথাল-পাতাল অবস্থা আমাকে এক অন্য জগতে নিয়ে গেছিলো। যা এই জগৎ থেকে সম্পুর্ন ভিন্ন। অনেক্ষণ পর আমি বাস্তবে ফিরে আসলাম। দেখলাম ওদের টিকিটাও দেখা যাচ্ছে না। ধুর মিস করলাম অন্ততপক্ষে পিছু নিয়ে বাড়িটাতো দেখতে হইতো। যদিও কখনো এই কাজ করিনি। আর পাওয়া যায় এই মেয়েকে?! নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছিলো।
আমি একা একা হাঁটছি আর মেয়েটার কথা ভাবতেছি। নুপুরের আর মেয়েটার কথার আওয়াজের মৃদু মৃদু রেশ এখনো আমার কানে বাজতেছে। আশেপাশে অনেক খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। জানতাম পাবো না।
আমার বারবার মনে হচ্ছে এই মেয়ের জন্যই আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমি মনে মনে এটাই দোয়া করতেছিলাম,
“হে আল্লাহ! এই মেয়ে যদি আমার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণময় হয় তাহলে আমাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দেও।”
কেননা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা বা দোয়া চাওয়া নিয়ে,
হাদিসে এসেছে,
রাসুল (সা) বলেছেন, “আল্লাহ তোমার দুয়ার জবাব দেবেন এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে আল্লাহ’কে ডাকো। তবে সেই সাথে এটাও জেনে রাখো যে, গাফেল অন্তরের দুয়ার জবাব দেওয়া হয় না।”
-[তিরমিযী, ৩৪৭৯]💕
আমার চাওয়াটা পবিত্র। কেননা আমি তাকে বিয়ের জন্য চাচ্ছি। আর আল্লাহর উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। কেননা আল্লাহ তায়ালা তো শয়তানের দোয়াও কবুল করেছেন।
পবিত্র কুরআনে আছে,
“শয়তান বলেছিলোঃ ‘আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন।’ আর আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ ‘অবকাশ দেওয়া হলো।”
-(সূরাহ আল আরাফ, আয়াত : ১৪-১৫)💕
আমি তো শয়তানের থেকে নিকৃষ্ট নই।
তারপর সারাদিনের বাকি নামাজগুলাতে দোয়া করলাম। বিশেষভাবে আজান ও ইকামতের মাঝখানে একাগ্রচিত্তে দোয়া করলাম। কেননা
হাদিসে এসেছে,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু’আ ফিরিয়ে দেয়া হয়না।”
-(আবু দাউদ ৫২১, তিরমিজি ২১২)💕
পুরো দিন রাজিবকে নিয়ে তন্ন তন্ন করে খুজছি। কিন্তু সেদিন আর পরের দিন মানে সপ্তম দিনেও ” উনা” -র কোন খোঁজ পেলাম না।
Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 18
পুরো দিন রাজিবকে নিয়ে তন্ন তন্ন করে মেয়েটাকে খুজছি। কিন্তু সেদিন আর পরের দিন মানে সপ্তম দিনেও ” উনা” -র কোন খোঁজ পেলাম না।
তবুও ধৈর্য ধরে আল্লাহর উপর ভরসা রাখছি। কেননা
হাদিসে এসেছে,
“তোমাদের কেউ দুয়া করলে তার জবাব ততক্ষণ পর্যন্ত দেওয়া হতে থাকে যতক্ষণ না সে অধৈর্য হয়ে বলে, আমি দুয়া করেছি কিন্তু কবুল হয় না।”
-(সহীহ বুখারী, ৬৩৪০ ও সহীহ মুসলিম, ৭১১০)💕
অন্যদিকে আব্বু জোর দিচ্ছে তাড়াতাড়ি বাড়িতে যাওয়ার জন্য। কোনমতে উল্টা-পাল্টা বুঝায় আরো একদিন সময় নিলাম।
শেষ দিন আমি একটু ভোরেই বেড় হলাম। পদ্মার পাড়ে হাঁটতেছি। বাতাসটাও দারুণ করতেছে। অনেকে বুজুর্গই সকালের স্বাস্থ্যকর বাতাস খেতে বেড় হয়েছেন।
আজকে একটু খারাপ লাগতেছে। কারণ আজকেই শেষ দিন। কালকেই আমি চলে যাবো। পদ্মার পাড়ের এই দৃশ্যকে খুব মিস করবো। বিশেষ করে সকালের পরিবেশটা। ভাবতেছি আর কয়েক দিনে আমার প্রিয় হয়ে যাওয়া পাহাড়ের মতো উঁচু ঢিবিটাতে উঠতেছি।
ঢিবিটাতে উঠেই চারদিকে দেখলাম। এখান থেকে তো চারপাশের দৃশ্য আরো সুন্দর লাগে। মনে হচ্ছে কোন শিল্পীর আঁকা শ্রেষ্ঠ চিত্রকর্ম। হ্যাঁ এটা শিল্পীরই তৈরী করা শিল্পকর্ম। আর সেই মহান কারিগর হলেন হলেন সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ। এখানে ঘুরতে না আসলে আল্লাহর এই সুন্দর সৃষ্টি অদেখাই থেকে যাইতো। এজন্যই তো,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“(হে রাসূল) আপনি বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।”
-(সুরা আনকাবুত : আয়াত ২০)💕
আমি সকালের বাতাসটাকে উপভোগ করতেছিলাম আর চারপাশটা দেখতেছিলাম। হঠাৎ থমকে গেলাম। আমার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে গেলো। আমার ভয় করতে শুরু করলো। কিসের যে ভয় ছিলো সেটা, তা আজও বুঝতে পারলাম না।
একটু দূরে চারটা মেয়ে কাঁশবনের পাশে বসে গল্প করতেছে।
আমি তাড়াতাড়ি ওখান থেকে নেমে কাঁশবনের কাছে গেলাম। আজকে চার জনেই বোরখা পড়ে আছে। তবে মুখ না দেখেই দুই জনকে চিনছি।ওরা আজকেও শুধু হিজাব পড়ছে। যদিও সেদিনও মুখ দেখিনি কিন্তু এরাই তারা। অন্যজনও মুখ খোলা রাখছে। এটাই বোধহয় সেদিন যে বোরখা পড়ে আসে নি। কিন্তু চতুর্থ জন! হ্যাঁ সেই একই রকম পোষাক। সম্পুর্ণ শরীর ঢাকা। এক পায়ে নুপুর। হ্যাঁ বাম পায়ে। আর সেই মায়বী দুই চোখ, যা আমি কখনো ভুলবো না। এটাই তো “উনি”। যাক আল্লাহ তাহলে আমার দোয়া কবুল করছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। কেননা,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যে হালাল রিযিক দিয়েছি তা থেকে আহার করো এবং আল্লাহ্‌র জন্য শোকর করো যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত করো।”
-[সূরা বাকারা; ২ : ১৭২]💕
আমি রাজিবকে কল দিলাম। যাতে ও তাড়াতাড়ি চলে আসে। আজকে “উনা”-র বাড়ি দেখতেই হবে। মানে ঠিকানা নিতে হবে। তারপর আবার উঁচু ঢিবিটার উপর উঠলাম। সেখান থেকে তাদের উপর ভালো মতো নজরও রাখা যাবে আর ওরা সন্দেহও করবে না।
নদীটার দিকে তাকায় অনেক কিছুই ভাবলাম। তারপর সবকিছু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম যদি ভাগ্য ভালো হয় তাহলে ইনিই হবেন আমার বউ। কয়েকদিনের মধ্যেই আব্বুকে নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব ইনশাল্লাহ।আমি সবসময় চেয়েছিলাম উনার মতো প্রকৃত দ্বীনদার আর পর্দাশীল। শুধু সমস্যা উনার পরিবার মানবে কি না। একটা দুঃচিন্তা থাকেই গেলো।
ওদের দিকে লক্ষ্য রাখতেছিলাম আর নদীতে জেলেদের মাছ ধরা দেখতেছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনলাম। আমি নিশ্চিত এটা “উনা”-র চিৎকার ছিলো। ঢিবিটা কাঁশবন থেকে একটু দূরে। তাই আমি ওদের দেখতে পেলেও পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম না।
আমি সাথে সাথে কাঁশবন দিকে মুখ করে খুব জোড়ে দৌড় দিলাম। আমার খেয়ালই ছিলোনা আমি ঢিবি থেকে নামতেছি। যা বিপদজনক হতে পারে। কিন্তু আমি কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে ওদের দিকে দৌড়াচ্ছি আর ভাবতেছি চিৎকারটা কি জন্য দিতে পারে! নিরাপদে ঢিবি থেকে নামলেও সামনে একটা গর্তে উস্টা খেলাম। কিন্তু আবার সোজা হয়ে দাঁড়ায় আবার দৌড়।
আমার মাথায় তখন একটা জিনিসই কাজ করতেছিলো কোন বড় বিপদ না তো! নাকি সাপ বা সেরকম কিছু। নদী এলাকা তাই সাপের সম্ভাবনা বেশি। তাই মনে মনে দোয়া করতেছি যাতে উনার কিছু না হয় আর প্রাণপণে দৌড়াচ্ছি।
কিন্তু যখন উনাদের কাছে গেলাম তখন যা দেখলাম তাতে আমার চক্ষু চড়ক গাছ। এটা দেখার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না।
“কি হয়েছে আপনাদের? কোন সমস্যা?” হাঁপাতে হাঁপাতে এটা বলতেই “উনি” আমার দিকে ঘুরলো।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে আর উনি আমার দিকে। আর উনার নিকাব গায়েব!
আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। কেউ এতটা সুন্দর হতে পারে এটা আমার কল্পনারও বাইরে। আমি তো চোখ বড় বড় করে দেখতেছিলাম আর হাঁপাচ্ছিলাম।
আর উনি আমার থেকেও বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকায় আছেন, মনে হচ্ছে আমাকে পাইলে আস্ত চুলায় ঢুকায় দিবেন। আমি হাসবো না কাদবো বুঝতে পারতেছিলাম না।
আসলে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা ছিলো এরকম। উনার একটা বান্ধবী দুষ্টামি করে উনার নিকাব টান মারে খুলে দৌড়ে পালাইছে। আর উনি সাথে সাথে চিৎকার করে উঠছিলেন। আর সেই চিৎকার শুনে আমি প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ঢিবিটা দৌড়ায় নামলাম তাও আবার ফুল স্পিডে! আর একবার উস্টা খাইলাম, শরীরের সম্পুর্ণ ক্যালরি শেষ করে, উলটা পালটা চিন্তাভাবনা করে ঝড়ের বেগে আসলাম। তাও আবার এমন সময় যখন উনি নিকাব নিতে ব্যস্ত।
উনাকে দেখে আমি ঘোরের মধ্যে চলে গেছিলাম। আমি হাঁপাচ্ছিলাম কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য আমার ক্লান্তি দূর হয়ে গেছিলো। উনার বান্ধবী কাকে যেন ডাকলো “তাসনিয়া” বলে কিন্তু আমি এতোটাই ঘোরের মধ্যে ছিলাম যে কাকে ডাকলো আর কে উত্তর দিলো আমি বুঝতেই পারিনি।
(হ্যাঁ এটাই আমার তাসনিয়া ইসলাম তানহা!)
ঘোর কাটলো “উনা”-র কথায়।
তানহা : এই যে মিস্টার। আপনি এখানে কেনো?
বাস্তবে ফিরতেই দেখলাম তানহা নিকাব পড়ে নিছে। কখন যে পড়লো বুঝতে পারলাম না।
অর্ণব : জি ম্যাডাম। আপনি চিৎকার করে উঠলেন তাই বাঁচাতে আসলাম। মানে কোন বিপদে পড়ছেন নাকি তার জন্য।
তানহা : বৃদ্ধ মানুষ বা কোন লোক সাহায্য চাইলেও তো আপনারা আসেন না। আর মেয়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে আসছেন।
কথাগুলা শুনে তো মাথাটাই খারাপ হয়ে গেলো। আমি কি জন্য আসছিলাম আর ইনি কি ভাবতেছেন। এতো বড় অপমান! আমাকে কি ভাবছে? আমার কাজকর্ম নাই যে মেয়ের পিছনে ঘুরবো? আমার তো উনার সাথে কথা বলার ইচ্ছাটাও মরে গেছিলো। তবুও অপমানটা সহ্য করে শান্ত হয়ে বললাম,
অর্ণব : জি আপনার অসুবিধার জন্য আমি দুঃখিত। পারলে ক্ষমা করে দিয়েন। আসসালাম অলাইকুম।
বলে চলে আসলাম। কেননা,
পবিত্র কুরআনে আছে,
“লোকদের সাথে ধীরস্থির হয়ে শান্তভাবে কথা বলুন।”
-(২০ঃ ৪৪)💕
দোষ না করেও ক্ষমা চাইলাম। এতোটাই মাথা গরম ছিলো যে সালামের উত্তর দিছে নাকি তাও শুনিনি।
রাজিবকে কল দেওয়ার জন্য ফোনটা বেড় করলাম। বেড় করে দেখলাম রাজিবের নয়টা মিস কল।এই ঝামেলার মধ্যে পকেটে ফোন বাজতেছিলো বুঝতেই পারলাম। তাড়াতাড়ি রাজিবকে কল দিয়ে নদী পাড়ের সানটার ওখানে ডাকলাম।
রাজিব : কি রে ভাবী কই? চল আজকে তৈরী হয়ে আসছি। ভাবীর বাড়ি দেখেই আজকে নিজেদের বাড়ি যাব।
অর্ণব : ধুর তোর ভাবী। বাদ দে।
তারপর সবকিছু খুলে বললাম।
রাজিব : তুই ভাবীকে বিনা নিকাবে দেখছিস তে রাগতো হবেই। তা এখন কি করবি?
অর্ণব : আচ্ছা বাদ দে। চল আজকে তো আমি চলে যাবো দুজনে নৌকায় উঠি।
তারপর নৌকা ভাড়া করে আমরা প্রচুর গল্প করলাম। যদিও মেয়েটা মুডটা নষ্ট করে দিলো তবুও রাজিবের জন্য ওগুলা ভুলে যায়ে মনটাকে ফ্রেশ করলাম। অহেতুক মানুষের জন্য নিজের দিনটা কেনো খারাপ করবো। তার উপর রাজিবকেও সময় দিতে হবে৷ রাজিব আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই সময় যে কিভাবে চলে গেলো বুঝতেও পারলাম না। আর রাজিব একজন খুব ভালো পার্টনার, আমাকে বুঝে তাই আমার মন ভালো করার জন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি।
“উনা”-র ব্যবহারটা আমার আত্মসম্মানে লাগছে। আর উনি অনেক সুন্দর। নিশ্চিতভাবে আমার থেকে ভালো কাউকে পাওয়ার দাবী রাখেন। আর সুন্দরী মেয়েরা সচরাচর সিঙ্গেল হয় না। তাদের পিছনে তো ছেলেদের লাইন থাকে। আমি যদি এখন প্রস্তাব নিয়ে যাই উনি ভাববেন আমি উনার চেহারার সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষিত হয়ে প্রস্তাব নিয়ে গেছি। আসলে তো তা কখনোই না। কিন্তু উনাকে কে বুঝাবে। উনার কাছে আরেকবার অপমানিত হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
সেদিনই বাসের টিকেট কাটলাম। দুপুরে বাস ছাঁড়বে। দুপুরের কিছুক্ষণ আগে রাজিবের পরিবারকে বিদায় দিয়ে বেড় হলাম। রাজিব আমাকে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত আগায় দিলো।
রাজিব : তাই বলে এত ভালো মেয়েটাকে হাতছাড়া করবি?
অর্ণব : ওর মতো কত মেয়ে পাওয়া যাবে। আমার আমার কোন ইচ্ছা নাই ওর মতো অহংকারী মেয়েকে বিয়ে করার।
রাজিব : এখানে অহংকারের কি দেখলি? মেয়েটার চেহারা দেখছিস তার মানে জানিস? মেয়েটার ব্যাপারে যা শুনছি তার থেকে এটাই বুঝলাম মেয়েটা কঠোরভাবে পর্দা করে। ওর কাছে এটা কোনভাবেই একটা সাধারণ ব্যাপার না। তাই বাধ্য হয়ে তোকে অপমান করছে। আর এখানে অপমানের কি হলো। শুধু তো তিনটা মেয়ে ছিলো। যারা তোকে চিনেও না।
অর্ণব : “তিনটা মেয়ে” তোর কাছে শুধু? তিনটা মেয়ে মানে একটা না দুইটা না তিন তিনটা মেয়ে। আর ওদের সামনে অপমান। তোকে করলে বুঝতি।
রাজিব : তুই তো মেয়েটাকে পছন্দ করতি। মাফ করে দেনা। আর তুইও তো পাপ করছিস মেয়েটাকে দেখে। আর তোকে অতক্ষণ ধরে দেখে থাকতে কে বলছিলো?
অর্ণব : আচ্ছা তুই কার পক্ষে?
রাজিব : আমি তোদের বিয়ের পক্ষে😁
অর্ণব : ঐ সুন্দরী তার উপর আবার অহংকারী মেয়েকে জীবনেও বিয়ে করবো না। Never ever!
রাজিব : ঠিক আছে বাবা ঠিক আছে। কি করবি করিস। যদিও চলেই তো যাচ্ছিস, আর সম্ভবও না। আর হ্যাঁ আল্লাহর কাছে মাফ চায় নিস। বাস স্ট্যান্ড চলে আসছে।
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম। ভালো থাকিস। মেয়েটার কথা মনে করায় মেজাজ খারাপ করে দিলি। পরে ফোনে তোর সাথে কথা বলবো।
রাজিব : হাহা। বাড়িতে পৌছায় ফোন দিস। অলাওকুম আসসালাম।
আমি বাসে উঠলাম।…
Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 19
আমি বাসে উঠলাম। বাসে দুইটা সারি। একটা সারিতে তিনটা করে সিট আর আরেকটা সারিতে দুইটা করে সিট। আমার সিট পড়ছে দুইটা করে সিট আছে ঐ সারিতে!
যাক বাবা বাঁচা গেল আমার সিট জানালার ধারেই পড়ছে। এক কথায় পুরো সফরটা অসাধারণ যাবে। আমি আমার ব্যাগ গুছায় রাখে নিচে নামলাম। বাস ছাড়তে এখনো অনেক বাকি।
বাস থেকে নামতেই একটা দৃশ্য দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। দেখলাম তানহার মতো একটা মেয়ে আসতেছে। তানহার মতো না, এটা তানহাই। সম্পুর্ণ শরীর ঢাকা। শুধু চোখ দুইটা খোলা। এই চোখ জোড়া তো আমি কখনোই ভুলবো না। বাম পায়ে নুপুর। এখন ওকে দেখে মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো। একটু টেনশনও শুরু হয়ে গেলো, যদি আবার এই বাসে উঠে। তাহলে মেজাজটা আরো বিগড়ে যাবে। ওকে আর সহ্য করতে পারবো না। যে অপমানটা ও করছে আমাকে। কিন্তু দেখে ভালো লাগলো যে ও পাশের বাসটাতে উঠলো।
আবার মনটা ভালো হয়ে গেলো। ফুরফুরে মেজাজে পাশের দোকান থেকে নাস্তা কিনলাম, রাস্তায় খিদা লাগবে। রাজিবরা একদম পেট ভর্তি করে খাওয়ায় তারপর আসতে দিছে। উফফ!
লাইব্রেরিতে ঢুকলাম বই কিনার জন্য। আমি আবার সফর করার সময় বই পড়ি। একটা বই কিনলাম, বইয়ের নাম “Christ in Islam” । আহমেদ দীদাতের লেখা একটা অসাধারণ বই। যাক আজকে সফরটা বইটা পড়তে পড়তে ভালোই কাটবে।
বইটা কিনে লাইব্রেরি থেকে বেড় হলাম। এখনই বাস ছেঁড়ে দিবে। আমি বাসের হ্যান্ডেল ধরে কোনমতে উঠলাম তাতেই বাসটা একটু একটু করে আগাতে শুরু করলো। হেল্পার এখনো নিচে যাত্রী জোগাড় করতে ব্যস্ত। এমন সময় দেখলাম তানহা এই বাসটার দিকে দৌড়ে দৌড়ে আসতেছে। বুঝলাম বোকাটা ভুল বাসে উঠছিলো। বাসটা ছাড়েও দিছিলো। ভালোই হইতো, ওর একটা শিক্ষা হইতো। কিভাবে বুঝতে পারলো যে ও ভুল বাসে উঠছে? যদি মাঝ রাস্তায় যায়ে বুঝতে পারতো? তাহলে আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হতো না। কিন্তু ভাগ্য খারাপ এখানেই বুঝতে পারছে বা কারো কাছ থেকে জানতে পারছে। মেয়েটার বর যে কি পাপ করছিলো যে এই হ্যান্ডেলকে(বোকা) জীবন সঙ্গিনী হিসেবে পাবে আল্লাহ জানে! কি ব্যাপার আবার ও এই বাসের উদ্দেশ্যে দৌড়াচ্ছে না তো? আমি এক দৃষ্টিতে দেখে আছি।
হেল্পার তখনো ওকে দেখতে পায়নি। আমি তানহাকে দেখে আছি কিন্তু কাউকে কিছু বলি নি। আমি মনে মনে চাচ্ছিলাম অন্ততপক্ষে এই বাসে যেন তানহা না উঠে। নইলে মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে যাবে। তাই হেল্পারকে তানহার কথা বলে তানহাকে সাহায্য করার কোন প্রশ্নই উঠে না। আমি মুখে বিরক্তির রেখা নিয়ে তাকায় আছি। তানহা যত কাছাকাছি আসতেছে তত মনে হচ্ছে ও এই বাসটার দিকেই দৌড়াচ্ছে। আর মেজাজ তত গরম হচ্ছে। ওর হাতে শুধু একটা ছোট ব্যাগ।
এতক্ষণে হেল্পারও তানহাকে দেখতে পাইছে। তানহা আসেই আমার উপর রাগ ঝাড়লো।
তানহা : Excuse me আপনি কি কোনদিন মেয়ে দেখেন নি?😡
অর্ণব : জি আমায় বলছেন?
তানহা : হুম আপনাকেই বলছি।
অর্ণব : হুম দেখেছি তো কালকেই তো আপনাকে দেখলাম, কিন্তু এসব আমায় কেন বলছেন?
তানহা : আপনি আমার দিকে ডেব ডেব করে তাকিয়ে ছিলেন, একটু হেল্পারকে বা ড্রাইভারকে বলতে পারেন নি আমার কথা?
আমি তো চাচ্ছিলাম আপনি যেনো না উঠেন এই গাড়িতে। কিন্তু কি আর বলবো আমার ভাগ্যটাই খারাপ।
তানহা : কি ভাবছেন,নাকি বোবা হয়ে গেলেন?
অর্ণব : কো…ই..না..তো! কালকে সাহায্য করার চেষ্টা করছিলাম তাতে আমার উপর যে চটছিলেন। তাই আজকে আর সাহস হয় নি।
তানহা : ফাযলামি করেন?😡.. Do u hv any idea how fast i ran whole way?
যদিও বুঝলাম তাও বললাম,
অর্ণব : ইংরেজি বুঝি না। বাংলায় বলেন। ১৯৫২ সালে সালামরা ইংরেজিতে কথা বলার জন্য জীবন দিয়েছিলো?
তানহা : You are really a headache.
অর্ণব : বাংলায় বলেন না হলে এখান থেকে যান। আমার কাছে আসিয়েন বাংলা পড়াবো। খুব ভালো বাংলা পড়াইতে পারি।
(যদিও বাংলা ব্যাকরণের “ব” টাও জানি না)
বিরবির করে,
তানহা : আসছে একটা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। আমাকে পড়াবে। শখ কতো।
অর্ণব : কি বিরবির করতেছেন? গালি দিচ্ছেন নাকি আবার?
তানহা : আপনার সাথে কথা বলাই আমার ভুল হয়েছে। দয়া করে মাপ করেন! নিজের সিটে গিয়ে বসুন আর গেটটা ছাড়ুন,আমাকে আমার সিটে যেতে দিন, অনেক পড়া আছে,ফালতু কথা বলার সময় নাই।
ইচ্ছাতো করতেছিলো না যে গেট ছেঁড়ে দিয়ে উনাকে ভিতরে ঢুকতে দিই। কিন্তু বাসটাতো আমার না। আমার বাপের হইলে টিকিটের টাকা ফেরত দিয়ে বাড়ি পাঠায় দিতাম। বাধ্য হয়ে গেট ছেঁড়ে দিয়ে বাস থেকে নামলাম। হেল্পার এখনো লোক জোগাড় করতে ব্যস্ত।
অর্ণব : কি ভাই আর কতক্ষণ?
হেল্পার : এই তো ভাই হয়ে গেছে। ভিতরে বসেন এখনি ছাড়ে দিবে।
আমি ভিতরে ঢুকে নিজের সিটের দিকে গেলাম। আমার সিটে চোখ পড়তেই আমার মেজাজ সপ্তম আসমানে উঠে গেলো। তানহা আমার সিটে বসে আছে।
আমি রাগে গজগজ করতে করতে,
অর্ণব : এই যে Miss Whatever শুনছেন?
তানহা : আপনি কি লুচ্চা নাকি, তখন ঝগড়া করে হয়নি আবার করতে আসছেন?
আল্লাহ! আমি যে উনাকে সবার সামনে অপমান করে বা চিল্লায় কিছু বলিনি এটাই উনার ভাগ্য। কেননা,
পবিত্র কুরআনে আছে,
“উচ্চস্বরে কথা বলবেন না।”
-(৩১ঃ ১৯)💕
আরো এক
আয়াতে আছে,
“কথাবার্তায় কর্কশ হবেন না।”
-(০৩ঃ১৫৯)💕
তাই যথা সম্ভব নিজেকে সংযত রেখে বললাম,
অর্ণব : দেখুন ম্যাডাম আমি ঝগড়া করতে আসিনি। আমি আমার সিটে বসতে এসেছি। প্লিজ এখান থেকে উঠুন।
তানহা : What nonsense! এটা আমার সিট।
অর্ণব : আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? এতক্ষণ ধরে আপনার সাথে যতটা পারি ভালো ব্যবহার করে আসতেছি। কিন্তু আর না। শুনেন টিকিটে আপনার সিট নাম্বারটা একটু দেখে নেন। এটা আমার সিট তেইশ নাম্বার। আমার সিট ছাড়েন আর এখান থেকে যান আমি বসবো। মাথা মোটা একটা। আপনার স্বামীর প্রতি আসলেই আমার আফসোস হচ্ছে। লোকটা মনে হয় প্রতিদিন আফসোস করে কি জন্য যে বিয়েটা করলাম।
টিকিট দেখে,
তানহা : আমি দুঃখিত। আপনার পাশেরটা আমার সিট। দেখুন আমাকে একটু আপনার সিটে বসতে দিন। আমি বাসে Journey করতে পারিনা। জানালার ধারে না বসলে আমার বমি আসে।
আমি আর কি বলবো। আমারো একই কাহিনী। বাসে সফর করতে পারিনা। জানালার ধারে না বসলে বমি হয়। কিন্তু উনাকে বললে তো উনার কাছে আমার মান-সম্মান যাবে। কি ভেজালে পড়লাম। যদিও এখন বাসে সফর অনেকটা সয়ে গেছে তাই বললাম,
অর্ণব : ঠিক আছে আপনি বসেন।
তানহা : ধন্যবাদ। আর হ্যাঁ আমার এখনো বিয়ে হয় নি বুঝলেন। আর আমার স্বামী অনেক ভাগ্যবান হবে। আপনাকে উনার জন্য আফসোস করতে হবে না।
আমি আর কথা বাড়াইলাম না। আশেপাশে কোথাও সিট ফাঁকা আছে নাকি তা দেখার জন্য গেলাম। এই মেয়ের পাশে বসা যাবে না। নইলে আমার পুরা সফরটা মাটি। ইসস! কি আনন্দে ছিলাম যে জানালার পাশে বসে পুরো রাস্তা আরামে যাব! আর কি হইলো! ধুর কি জন্য যে এর সাথে পরিচয় হলো।
তানহা : কোথায় যাচ্ছেন?
অর্ণব : সিট খুঁজতে আপনার সাথে বসতে পারবো না। দরকার হলে পুরা রাস্তা দাঁড়ায় যাবো।
কিন্তু ভাগ্য খারাপ সিট ফাঁকা নাই। অনেককেই বললাম সিট বদলাবে নাকি। ভুল করেও কোন ছেলেকে জিজ্ঞাসা করিনি। আমি এতটাও খারাপ না যে একজন যুবতী মেয়ের পাশে কোন পুরুষকে পাঠাবো। কারণ কার মনের ভিতর কি আছে তা তো বলা যায় না। খারাপরাও তো মানুষের মতোই দেখতে। কিন্তু কেউ রাজী হলো না।
বাধ্য হয়ে আমার সিটে ফিরে আসলাম। শেষে সামনের একটা লোককে জিজ্ঞাসা করলাম সিট বদলাবে নাকি। এখান থেকে তো আমি নিজে অন্তত মেয়েটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবো, সমস্যা হবে না। লোকটাকে বলতেই লোকটা এক পায়ে রাজী। বুঝলাম কি জন্য।
কিন্তু তানহার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখ থেকে আগুন বেড় হচ্ছে। আমি ভয়ে লোকটাকে বললাম,
অর্ণব : না ভাই ঠিক আছে দরকার নাই। অসুবিধার জন্য দুঃখিত।
তানহা : এই আপনি আপনার সিটে বসেন। আমি আমার সিটে বসতেছি।
অর্ণব : না ওখানেই থাকেন, আমি আপনার পাশে বসতেছি।
সিটে বসলাম।
তানহা : আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো? অচেনা একটা লোককে আমার পাশে বসাচ্ছেন।
অর্ণব : Oh hello Mam! আমি চাইলে ঐদিকে কোন ছেলের সাথে সিট চেঞ্জ করতে পারতাম। কিন্তু আমি সামনের জনকেই বললাম যাতে লক্ষ্য রাখতে পারি। আমাকে এতটাও খারাপ ভাববেন না। আর আমিও একজন অচেনা। উনার আর আমার মধ্যে পার্থক্য কি?
তানহা : আপনাকে তাও তো চিনি।
(লক্ষ্য রাখতো মানে? যাক উনার মধ্যে দায়িত্ববোধ আছে। জানি আপনি ভালো মানুষ। এখন পর্যন্ত সবগুলা কথাই উনি অন্য দিকে তাকায় বলতেছেন,আমার দিকে একবারো তাকায় নি। আসলে সেদিন আমি বাধ্য হয়ে আপনাকে অপমান করছিলাম।)
আমি চুপ করে থাকলাম।
তানহা : দেখুন আমার সাথে ঘেষে বসবেন না। আমার সাথে যেন একটুও Touch না লাগে।
অর্ণব : দেখুন! সব ছেলে কে এক রকম মনে করবেন না। আমার আপনার সাথে বসতে বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই। আমি শুধু ভালো ব্যবহার করতেছি কারণ
পবিত্র কুরআনে আছে,
“অন্যের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।”
-(০৪ঃ ৩৬)💕
আর এতো যদি সমস্যা হয় তাহলে পাবলিক বাসে উঠছেন কেনো? বাপের একটা গাড়ি নিয়ে একা বের হবেন তাহলে কেউ গা ঘেসে বসবে না।
(তানহা চুপ হয়ে গেলো!)
মনে মনে,
তানহা : বাব্বাহ! কুরআনের রেফারেন্স টানে কথা বলতেছে। ইনার তাহলে দ্বীনি জ্ঞানও আছে। তবে শেষের কথাটা খারাপ লাগলো। কারণ আমার অনেক ছোটবেলায় বাবা-মা মারা গেছে। একটা এতিমখানায় বড় হয়েছি। অনেক কষ্টে লেখাপড়া করছি। স্বপ্ন সেরকমভাবে কিছু দেখা না হলেও নিজের পায়ে দাঁড়ানো জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে গেছে। মেধার মূল্যায়নের থেকে এখন টাকাকে বেশি মূল্যায়ন করা হয়। বর্তমানে টাকা না ছাড়া চাকরি পাওয়া খুব দুঃসাধ্য।
দুজনেই চুপ করে থাকলাম কিছুক্ষণ। এভাবেই শুরু হলো আমাদের টম এন্ড জেরীর মতো একটা সম্পর্ক। টক-ঝাল সম্পর্কটার কথা মনে পড়লে এখনো বেশ মজাই লাগে।
(চলবে…)
মূল গল্পের লেখক – নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣
গল্পটির মূল নাম – “English Teacher যখন বউ”💝
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *