“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”
Part : 26
নিস্তব্ধ রাস্তা। হালকা চাঁদের আলোয় পরিবেশটা আরো মনমুগ্ধকর করে তুলছে। চারদিকে শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোঁকার শব্দ। আর তানহার হাসির গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে। আমি আর তানহা হাটতেছি আর গল্প করতেছি।
হঠাৎ আমার খেয়াল হলো আমরা ভুল পথে যাচ্ছি!
অর্ণব : এই আমরা কোথায় যাচ্ছি?
তানহা : আমি তো জানি না। আপনি জানেন।
অর্ণব : আমি জানি মানে? আজব আমি ভুল করে উল্টো দিকে যাচ্ছি আর আপনিও আমাকে বলেন নি?
তানহা : আমি তো বলতে চাইছিলাম। কিন্তু মনে পড়লো আপনি কিছুক্ষণ আগে বের হইছিলেন, তাই মনে করলাম এইদিকেই আসছিলেন বোধহয়। তাই আর কিছু বলিনি।
অর্ণব : আবার এতোটা পথ ফেরত যাইতে হবে! চলেন।
তানহা : আমার তো হাটতে ভালোই লাগতেছে। ইস! সারাজীবন যদি এভাবে কাটাইতে পারতাম!
অর্ণব : আমার সারাজীবন হাটার শখ জাগেনি। বুঝলেন!
তানহা : হাহা। গল্প করতে করতে সময় পার হয়ে যাবে চিন্তা করিয়েন না। আপনার সমবয়সী গল্পটা শুনে আমার একটা বান্ধবীর ঘটনা মনে পড়ে গেলো।
অর্ণব : কি ঘটনা?
তানহা : ঘটনাটা ছিলো আমার বান্ধবী ফারিয়াকে নিয়ে,
“ছেলেটার নাম ছিলো কাওসার। ও আমার বান্ধবীকে প্রোপজ করতে আসছিলো,
কাওসার : আমার সাথে প্রেম করবা ফারিয়া?
ফারিয়া : না কাওসার,তুমি ব্যাচমেট। আর ব্যাচমেটদের সাথে বিয়ের স্বপ্ন দেখা মানে রেলস্টেশনে বসে বাসের জন্য অপেক্ষা করা।
কাওসার : তবুও আমার সাথে প্রেম করো,লাভ আছে!
ফারিয়া : কি লাভ?
কাওসার : আমার সাথে যেসব ব্যাচমেট মেয়ে প্রেম করছে,তাদের সবারই ভালো জায়গায় বিয়ে হইছে!🙂”
আমি হাসতে হাসতে শেষ।
অর্ণব : আল্লাহ! মাফ করুক। তা আপনি ট্রায় করেন নি?😁 ভালো জায়গায় বিয়ে হইতো আপনার।
তানহা : আমার হারাম কাজ করার শখ জাগে নি। আর আমার দরকার নাই ওতো ভালো জায়গায় বিয়ে হওয়ার।
অর্ণব : তোমরা মেয়েরা আসলেই আজব প্রাণী। সিংগেল সিংগেল বলে চিল্লাও। আবার বলো কেউ নাই।😏
তানহা : তো? কাবিন নামায় সই করার আগ পর্যন্ত সব মেয়েই single😁
অর্ণব : ওরে বাবা তাই নাকি! আর যখন কোনো ছেলে প্রপোজ করে সুন্দরমত বলে দাও “Sorry,I Have a boyfriend”
আবার সান্ত্বনা দিয়ে বলো “আমরা বন্ধু হিসেবে থাকতে পারি।”
মানে কি? এগুলা আবার কেমন ধরনের নাশকতা?😒
তানহা : অন্যদের তো জানিনা আমি বন্ধু হিসেবেও থাকতে দেই না😎
অর্ণব : তার মানে প্রোপজ প্রায়ই পান?😏
তানহা : মেয়ে হয়ে জন্ম নিছি তো পাবোই তাই না😎
অর্ণব : ওহহো! মেয়েকে বুঝা আসলেই কঠিন বিষয়। কোথায় জানি পাইছিলাম,
মেয়েদের নিয়ে ৭টি কমপ্লিকেটেড ফ্যাক্ট-
১. মেয়েরা সঞ্চয়ে বিশ্বাসী। 🙂
২. সঞ্চয়ে বিশ্বাসী কিন্তু দামি কাপড় কেনে। 😕
৩. দামি কাপড় কেনে কিন্তু পরার জন্য কিছু নাই। 😮
৪. পরার জন্য কিছু নাই কিন্তু সাঁজে খুব সুন্দরভাবে। 😊
৫. সুন্দরভাবে সাঁজে কিন্তু নিজেকে নিয়ে স্যাটিসফাইড না। 😆
৬. নিজেকে নিয়ে স্যাটিসফাইড না কিন্তু ছেলেদের কমপ্লিমেন্ট চায়। 😨
৭.ছেলেদের কমপ্লিমেন্ট চায় কিন্তু করলে বিশ্বাস করে না। 😑
তানহা : 😆😆😆… আল্লাহ এতো বড় সত্যি কথা😁
অর্ণব : হাহাহা হুম। ছেলেরা আবার মেয়েদের থেকে একটু আলাদা।
তানহা : কিভাবে?
অর্ণব : যেমন ধরেন,
ক্লাসের কোনো মেয়ের ড্রেসের প্রশংসা করলে, সে আপনাকে Thanks জানাবে এবং পরের দিন অন্য একটা ড্রেস পরে আসবে।
কিন্তু কোনো ছেলে বন্ধুকে আপনি তার টি-শার্টের প্রশংসা করেন,সে বেটা আগামী একমাস ঐ টি-শার্টই পরে আসবে😐
তানহা : 😆😆😆… আমি তো কনকনে শীতেও গোসল না করে থাকতে পারি না। এক মাস ইয়ুউ!!!! Never ever!
অর্ণব : ওহহো! কথায় জানি পড়ছিলাম,
“শীতকালে প্রতিদিন চুল ভিজিয়ে গোসল করা মেয়ে গুলা সুপার বউ ম্যাটারিয়ালস!”
তানহা : একদম ঠিক। আমার উনি তাহলে অনেক লাকী।😁
অর্ণব : বাবারে বাবাহ। আমি তো শীতের দিনে এক সপ্তাহ গোসলই করি না।
[সত্য🤐]
তানহা : একদম না। বিছানায় উঠতেই দিবো না। এমনকি তিনদিন হয়ে গেলে রুমে ঢুকতে দিবো না।
অর্ণব : আহ-হা😜
তানহা : হুম। একদম দিবো না।
অর্ণব : আরে মনে পড়লো লাস্ট শীতকালের ঘটনা। আমার একটা বন্ধু জয় একদম গোসল করে না,
পরিচিত একটা বান্ধবী আসে বললো,
: ঐ শোননা, তোর জয় নামের একটা বন্ধু আছেনা?
ছেলেটা কেমন?
উত্তরের অপেক্ষায় বান্ধবী আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম,
: হ্যা ভালোই। তবে বিশ দিনেও গোসল করেনা আরকি।
-এটা কোনো প্রব্লেম নাহ। আমি তাকে ভালোবাসা দিয়ে গোসল করিয়ে দিব।🥰
আমি তো শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলাম। কোনমতে বললাম,
-আইচ্চা🤐
তানহা : 😆😆😆… সত্যি বিশ দিন গোসল করে না?
অর্ণব : মানে অনেক দিন পর পর গোসল করে। আমার চেয়ে আরো বড় আলসিয়া।
তানহা : হায় আল্লাহ। উনার ভবিষ্যৎ বউটার প্রতি আফসোস হচ্ছে😁… তবে আমার একটা ঘটনা মনে পড়লো,
“একজন বড় ভাইকে দেখতাম ক্যাম্পাস এ আসা একটা সদ্য জুনিয়র আপুর পিছনে ঘুরাঘুরি করতো,
তার জন্য কত কিছুই না করেছে,
হাত পা পর্যন্ত কেটেছে,
আপুকে ছাড়া সে বাঁচবেইনা।
এরপর সেই বড় ভাই যখন গ্রাজুয়েশন Complete করলো,
ঠিক তার কবছর পর বিবাহ করলো এক মেয়েকে,আর ফেইসবুকে কাপল ছবি আপলোড দিয়ে ক্যাপসন এ লিখল,
তোমাকে খুজেছি সবসময়,
তোমাকে পেয়ে ধন্য আমি।”😵
অর্ণব : ভাবা যায় এগুলা!😂
তানহা : আচ্ছা আপনি কি করেন?
অর্ণব : আপনার নামের মতো এটাও গোপনই থাক। একদম বিয়ের পর জানে নিয়েন। মানে নিজের চোখে দেখিয়েন। হাহা। আপনি যেহেতু এসিস্ট্যান্ট ইংরেজি শিক্ষিকার পদে পরিক্ষা দিবেন তার মানে আপনি ইংরেজি লিটরেচার নিয়ে পড়ছিলেন তাই না?
তানহা : হুম। কেনো?
অর্ণব : শুনছিলাম,
“ইংলিশ লিটারেচারের স্টুডেন্টদের প্রত্যেকটা বর্ষের প্রথম ছয় মাস কাটে কবিদের প্রেম আর ছ্যাকা খাওয়ার কাহিনী পড়তে পড়তে আর বাকি ছয় মাস কাটে Vocabulary & Synonyms পড়তে পড়তে।”
তানহা : হাহা দুঃখজনক হলেও সত্য। But কবিদের ছ্যাঁকা খাওয়া কাহিনী পড়তে ভালোই লাগে।😜
অর্ণব : তাই নাকি! পড়তে হবে তাহলে। আমি তো ইংরেজি পারি না কিন্তু একবার একটা কান্ড করছিলাম। আমার একটা বন্ধু আমাদের শহর থেকে দূরে একটা কোচিং সেন্টারে পড়াতো। একদিন জরুরি কাজে ওকে ডাকতে গেলাম সেখানে। ভুলবশত একটা রুমে ঢুকতেই সব মেয়েরা উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো । তাজ্জব কান্ড! সালাম দিচ্ছে কেনো এরা আমাকে? মনে করলাম বোধহয় আজকে নতুন টিচার আসার কথা, তাই ভূলবশত মেয়েরা ভেবেছে আমিই সেই নতুন টিচার। আমি যেই বলতে যাবো এখানে আমি একজনকে খুঁজতে আসছি তখনই,
একজন দাঁড়িয়ে বললো, আপনি কি আমাদের নতুন ইংলিশ টিচার?
এই চান্স আর ছাড়া যায়। মাথায় শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেলো। আমি বুকের ছাতি সাড়ে তিন ফুট উঁচু করে বললাম, হ্যাঁ আমিই নতুন ইংলিশ টিচার ।
(আসলে সেদিন কথায় কথায় ইংলিশে লেকচার ঝাড়তেছিলাম। যা তানহাকে বললাম না😁)
ভরকে দেয়ার সুযোগ মিস করা যাবে না তাই ইংলিশ বইটা হাতে নিয়ে বললাম :
- আগের স্যার কি কি পড়া দিয়েছিল গতকাল, কে কে শিখোনি উঠে দাঁড়াও ।
প্রায় এক তৃতীয়াংশ মেয়ে উঠে দাঁড়ালো । আমি বললাম : - পড়া না শিখলে হবে বাচ্চারা? পরিক্ষায় ফেইল করলে তো বিয়ে দিয়ে দেবে । যাইহোক, এভাবে হবেনা । হাই বেঞ্চের উপর কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকো । আমি আসতেছি ৫ মিনিটের মধ্যে
মেয়েগুলো হাই বেঞ্চে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে । আমি বিদ্যুতের গতিতে রুম ত্যাগ করলাম। বন্ধু চুলায় যাক। আগে জান বাঁচাতে হবে তাই সোজা রাস্তা ধরছি। রাস্তায় হাঁটছি আর ভাবছি, মেয়েগুলো যদি আমাকে নেক্সট টাইম রাস্তায় কোথাও দেখে, তাহলে কি কপালের কাছে হাত নিয়ে বিনয়ের ভঙ্গিতে বলবে আসসালাম অলাইকুম স্যার’?
নাকি ইট- পাটকেল- গোবর ছুঁড়ে মারবে মুখ বরাবর । ঝামেলা পাকিয়ে ফেললাম দেখছি।
তানহা : 😆😆😆.. আল্লাহ। এজন্যই কবি বলেছেন, ভাবিয়া করিও কার্য করিয়া ভাবিও না।
অর্ণব : যে বন্ধুটাকে খুঁজতে গেছিলাম ও একবার বলছিলো,
“টিউটর দেখতে ভালো না হলে ছাত্রী অখুশি হয় অন্যদিকে গার্ডিয়ান খুশি এবং চিন্তামুক্ত থাকে!”
তানহা : 😆😆😆.. তা আপনার বন্ধুটা কি দেখতে খারাপ?
অর্ণব : হাহাহা। দেখতে ভালো হলে এটা বলতো না।
তানহা : শয়তান একটা৷ নিজের বন্ধুকে কেউ এভাবে বলে!
অর্ণব : আপনিই তো জানতে চাইলেন।
তানহা : আচ্ছা বাদ দেন। তবে,
“প্রকৃত রাজনীতিবিদ তো তারাই,,
যারা টিউশন মাস্টার হয়ে ঢোকে আর জামাই হয়ে বেরিয়ে আসে।”😁
অর্ণব : 😂😂😂… আজ প্রাইভেট পড়াইনা বলে।
তানহা : আমার জন্য ভালো হইছে😁…তাহলে ভবিষ্যতে মেয়ে হলে তার প্রাইভেট টিউটর এমন রাখতে হবে যারা দেখতে খারাপ। দায়িত্বটা কিন্তু উনার।😏
এটা শুনে আমি হাসতে হাসতে শেষ।
তানহা : এখানে হাসির কি হইলো?
অর্ণব : একটা বড় ভাইয়ের পোস্ট পড়ছিলাম যার সাথে আপনার কথার একটু মিল পেলাম😁… পোস্টটা ছিলো,
“বড় ছেলেকে মেডিকেলে নাকি বুয়েটে পড়াবে এ নিয়ে আমার ভার্সিটি পড়ুয়া রুমমেট ও গফের মধ্যে ২ ঘন্টার তুমুল ঝগড়া।
ঝগড়া শেষে গফের ডায়ালগ – সামনে আমার জেএসসি পরীক্ষা বলে বেশি কিছু বললাম না।”
ভাবা যায় এগুলা?
তানহা : 😆😆😆…কেমন করে কি? এগুলা এখন একটু বেশিই চলতেছে। আমার বন্ধুর কাছে শুনছিলাম ও বলছিলো,
: আমার একটা BCS দেওয়া বন্ধুর মোবাইল চেক করতেছিলাম হঠাৎ মেসেজ আসলো। মেসেজটা ছিলো এরকম,
“বাবু ভালো করে মাথা ঠান্ডা রেখে সবগুলার Answer করবা, মাথা গরম করাতে আমি Psc তে A+ মিস করছি। Bcs প্রশ্ন কিন্তু আরো কঠিন হয়।”
আমি তো পুরা অবাক। আমার বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম ওর গার্লফ্রেন্ড কিসে পড়ে, উত্তর দিলো,
: ক্লাস সিক্সে।”
এটাই দেখার বাকি ছিলো জীবনে।😅
আমি হাসতে হাসতে শেষ।
অর্ণব : আল্লাহ😁…আর আমার একটা বন্ধুর দুইটা গার্লফ্রেন্ড ছিলো। একটা মেডিকেলে আর একটা ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পাইছিলো। ও খুব টেনশনে ছিলো কোনটা বাদ দিবে আর কোনটা রাখবে।
কয়েকদিন পর শুনি ওর দুইটা গার্লফ্রেন্ডই ওরেই বাদ দিয়ে ওরে একদম টেনশন ফ্রি করে দিছে।
তানহা : 😆😆😆.. একদম ঠিক হইছে। আল্লাহ এদেরকে হেদায়েত দান করুক।
অর্ণব : আমিন😁.. জানেন একবার হয়ছিলো কি ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, পেছনে এক ভদ্র লোক একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি একটু ইতস্তত হয়ে পাশ ফিরতেই যাচ্ছিলাম
উনি আমাকে ডেকে বললেন : জানেন ভাই আমি কেন হাসছি?
স্বভাবতই বললাম, “আমি কিভাবে জানব, ভাই ?”
সে আবারো সেই ঐচ্ছিক হাসিটা রেখে হাত উচিয়ে বললো : “ঐ দেখতেছেন না ক্যাশ কাঊন্টারের মেয়েটা, উনি আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড”
আমি বললাম: “তাহলেতো কষ্ট পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আপনিতো খুশি দেখতেছি?”
সে বলে: “আমার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করে চলে গেছিলো, বছর খানেক আগে, পরে শুনি এই খানে চাকুরী নিছে, তার পর থেকে প্রতি মাসে ওর কাছে এসেই আমার বউ এর নামের একাউন্টে টাকা জমা দিয়ে যাই”
বলে আবারো সেই হাসি..😂😂
তানহা : 😆😆😆.. আল্লাহ এরকম একটা স্বামী পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার😁
অর্ণব : তাই?😡
তানহা : আরে রাগতেছেন কেনো। এমনি মজা করলাম। আজকে আমি হাসতে হাসতে শেষ। মানুষ দেখলে পাগল বলবে।
অর্ণব : আমারো একই অবস্থা। যাক এই সুযোগে আমাদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা আরো ভালো হইছে।
তানহা : হাহাহা। তাও ঠিক। এখন অন্তত আমার লজ্জা ভাবটা কাটে গেছে😁
অর্ণব : হাহাহা। আমার জন্য ভালোই।
আমি আর তানহা এভাবে গল্প করতেছি, হাসতেছি আর হাটতেছি। চারপাশে নিস্তব্ধতা আর তার মাঝে আমাদের খুনসুটি চলতেছে।
তানহা : জোরে হাসিয়েন না কোথা থেকে ডাকু চলে আসবে নইলে😁

Part : 27
চারপাশে বিস্তর নিরবতা। রাস্তা সম্পুর্ন ফাঁকা। রাস্তার ধারের ল্যাম্পপোস্টের আলোয় দুজন পথিক পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে। আমি আর তানহা। দুজনেই গল্প করতেছি আর হাটতেছি।
আমি আর তানহা প্রায় গভীর রাতে ফাঁকা রাস্তায় হাটতেছি। সত্যিই খুব ভালো লাগতেছে, যেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। চারপাশের রোমান্টিক পরিবেশ মুহুর্তগুলাকে আরো মাধুর্যপূর্ণ করতেছে। এই সফর সারাজীবন মনে থাকবে। বিশেষ করে মূহুর্ত গুলা।
কিন্তু আমি ভুলে যায় নি আমরা একদম অজানা-অচেনা শহরে এখন। তার উপর আবার গভীর রাত। চারিদিকে বিপদের হাতছানি। যেকোনো সময় যেকোনো দিক দিয়ে বিপদ আসতে পারে। তার উপর আমার সাথে তানহা আছে। যেটা আমার সবচেয়ে বড় ভয়। যেখানে আমি একা থাকলেও ভয়ে ভয়ে থাকতাম সেখানে একটা যুবতী মেয়েকে নিয়ে গভীর রাতে এভাবে হেটে যাওয়া কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি একা থাকলে কোনমতে নিজেকে যেকোনো বিপদ থেকে বাঁচাইতে পারতাম, কিন্তু তানহার সাথে তা সম্ভব না। তাই দুঃচিন্তাটা একটু বেশিই কাজ করতেছে। আমি চোখ কান খোলা রাখে হাটতেছি। চারপাশ খুব তীক্ষ্ণভাবে দেখতেছি। জানি তানহা আমার সাথে নিজেকে নিরাপদ মনে করতেছে। তাই দায়িত্বটা আরো বেড়ে গেছে। আর বাজারের সেই ছেলেগুলা তো সবচেয়ে বড় ভয়।
গল্প করতে করতে আমরা বাস ও বাজার পার হলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম অনেক দূরে কিছু ছেলে আড্ডা দিচ্ছে।
অর্ণব : তানহা! যায়ে রাস্তার পাশে গাছের সোজাসুজি দাঁড়াও। যদিও এত দূর থেকে দেখতে পাবে না তাও সাবধানের মার নাই।
তানহা : তুমি?
অর্ণব : আমি একটু আসতেছি।
(তানহা “তুমি” বললো। বিষয়টা লক্ষ্য করলেও পরিস্থিতির জন্য কিছু বললাম না। এখন মজা করার সময় না।)
তানহা : একদম না। চলো আমরা যেদিক দিয়ে আসছি সেদিকে যাই।
অর্ণব : আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। শুধু দোয়া করিও।
তানহা : সাবধানে যেও।
আমি রাস্তা থেকে নেমে পাশের অন্ধকার জমিন বাড়ি দিয়ে এগিয়ে ওদের দেখার জন্য গেলাম।
আসলে কেউ ঠিকই বলছিলো,
“যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়”
সামনের ছেলেগুলা আর কেউ নয় ঐ বাজারের ছেলেগুলাই। আমি তাড়াতাড়ি তানহার কাছে আসলাম।
অর্ণব : চলো যেদিক থেকে আসছি সেদিকে যাইতে হবে।
তানহা : আমি আগেই বলছিলাম। এখন চলো।
অর্ণব : আর শুনেন কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে আমাদের দুইজনের সম্পর্ক কি? বলবেন আমরা স্বামী-স্ত্রী! নাহলে বিপদে পড়তে পারি।
তানহা : ইস! শখ কতো। আমি পারবো না মিথ্যা বলতে।
অর্ণব : ঠিক আছে আপনাকে বলতে হবে না। আমিই বলবো। আপনি শুধু চুপ করে থাকিয়েন। এখন চলেন।
আমরা আবার পিছনে হাটা দিলাম। ঘড়িতে দেখলাম সাড়ে বারোটা বাজে। শুনছিলাম এরকম রোমান্টিক সময় গুলা তাড়াতাড়ি চলে যায়। সময় কখন যে চলে যায় বুঝায় যায় না। কিন্তু আজকে আমাদের সাথে উল্টা হচ্ছে। সময় শামুকের গতিতে যাচ্ছে।
আমরা আবার যেদিক থেকে আসছি সেদিকে যাচ্ছি। এমন সময় একটা পিকআপ আসতে দেখলাম। যাক একটা আশার আলো দেখতে পেলাম। আমি হাত দেখাইতেই পিকআপটা থামলো। যদিও একটু দ্বিধায় ছিলাম এই রাতে কারো উপর ভরসা করা ঠিক হবে কি না।
পিকআপের পিছনে আসবাবপত্র। বুঝলাম কোন পরিবার বাসা পাল্টাচ্ছে। সালাম দিয়ে কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞাসা করতেই বললো,
ড্রাইভার : গাড়ি তো বেশি দূর যাবে না।
অর্ণব : আমাদেরকে শুধু সামনের মোড়টা পার করে দেন। তাহলেই অনেক বড় উপকার হবে। আপনার ভাবীকে নিয়ে কিছু ছেলেদের সামনে দিয়ে পার হতে সাহস পাচ্ছি না। বুঝতেই তো পারছেন রাতের বেলা।
ড্রাইভার : থামেন আমি একটু জিজ্ঞাসা করে নিই।
আমি বুঝতে পারিনি পিছনে লোক আছে। মানে যে পরিবারটার আসবাবপত্র পিছনে আছে তারাও মালপত্রের সাথেও আছে। একটু আস্বস্ত হলাম যে একটা লোকের কথার সাথে সাথে একজন বয়স্ক মহিলার গলার আওয়াজও পেলাম। শেষ পর্যন্ত মহিলার কথায় আমাদের সাহায্য করতে রাজী হলো। আল্লাহকে হাজার হাজার শুকরিয়া।
ড্রাইভার : আসেন। ওরা পারমিশন দিছে।
সাথে সাথে প্রথমে আমি ড্রাইভারের পাশে বসলাম তারপর তানহা উঠলো। পিকআপের দরজাটা ভালো মতো লাগায় গাড়ি স্টার্ট দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলেগুলাকে অতিক্রম করলাম। আরো কিছুদূর যেতেই একটু ঘনবসতি দেখলাম। এটা একটা পাড়া বা মহল্লা। তাই ড্রাইভারকে বললাম এখানেই নামায় দেন।
ড্রাইভারকে ধন্যবাদ দিয়ে আমরা একটা গলিতে ঢুকলাম।
তানহা : এদিকে কেনো ঢুকতেছো?
অর্ণব : দেখি কারো বাড়িতে উঠা যায় কি না। অথবা এক রাতের জন্য ভাড়া নিয়ে থাকা যায় কি না। আর মনে রাখবেন স্বামী-স্ত্রী না ছাড়া কেউ আমাদের বাসায় উঠাবে না। তাই মুখটা একটু বন্ধ রাখিয়েন।
তানহা : হুম😡
চারপাশে বাড়িঘর। কিন্তু রাস্তা ফাঁকা। আমি আর তানহা হাটতেছি। মাঝে মাঝে কিছু কুকুর আমাদের দেখে ডেকে উঠতেছে। আমি চারপাশে সজাগ দৃষ্টি দিচ্ছি।
মনে মনে,
তানহা : একটা ছেলে এতটা দায়িত্বশীল, এতটা যত্নশীল আর এতটা দূরদর্শী কেমন করে হতে পারে! অর্ণবকে না দেখলে জানতেই পারতাম না। আমি আসলেই ভাগ্যবতী। আল্লাহকে শুকরিয়া উনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে দেওয়ার জন্য।
অর্ণব : একটা মুভিতে দেখছিলাম এরকম একটা পরিস্থিতিতে হিরো একটা সাইকেল জোগাড় করে আনে নায়িকাকে নিয়ে যায়। এখন আমি সাইকেল কোথায় পাই!
যদিও উনার বুদ্ধিটা খুব ভালো লাগলো। আর খুব রোমান্টিক। বললাম,
তানহা : ইস! সাইকেল কেনো? সাইকেলে কতদিনে পৌছাবো? বাইক লাগতো।
অর্ণব : হুম ঠিক বলছেন। আমি সফর করার সময় বাইক কিনার টাকা নিয়ে ঘুরবো। আপনার মাথা তো বুদ্ধি দিয়ে ভর্তি!😒
(আমি হাসতে হাসতে শেষ!)
তানহা : হাহাহা। এটাতো আমি ভেবে দেখিনি।
অর্ণব : আমার কপালে যে কি আছে। কেবল তো কয়েকঘন্টা হলো সারাজীবন তো পড়েই আছে।
তানহা : উনি অনেক বুদ্ধিমান। তাই আমার বুদ্ধি না হলেও চলবে। বুঝলেন😜
অর্ণব : পাম মারা বন্ধ করেন।
তানহা : 😆😆.. সফরটা কিন্তু এখন পর্যন্ত অসাধারণ হইছে। শুধু বৃষ্টিটা হলে একদম পরিপূর্ণ হয়ে যাইতো।
অর্ণব : বাবারে বাবাহ! এই বসন্তকালে বৃষ্টি আশা করতেছেন? আপনি পারেনও বটে!
তানহা : হাহা। কারণ বৃষ্টি আমার খুব ভালো লাগে। আর উনাকে এই বর্ষায় আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে হবে এইটা Fixed😍
অর্ণব : আমার দাঁড়ায় হবে না। আমি তো বৃষ্টির দিনে কাঁথা মুড়িয়ে আরামের ঘুম দেই। আহা কি শান্তি আকাশে বাতাসে!
তানহা : ঐটা “কি শান্তি” না “কি আনন্দ আকাশে বাতাসে”। আর আমি থাকতে এরকম কখনো হবে না। আপনি জানেন বৃষ্টির কত ফযিলত! বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা হয়ে নামে রহমতের ধারা। তাই সুন্নত হলো বৃষ্টির ছোঁয়া পেতে বস্ত্রাংশ মেলে ধরা। কেননা
হাদিসে এসেছে,
আনাস [রাঃ] বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ [সাঃ] এর সঙ্গে থাকাকালে একবার বৃষ্টি নামল। রাসুলুল্লাহ [সাঃ] তখন তাঁর পরিধেয় প্রসারিত করলেন, যাতে পানি তাকে স্পর্শ করতে পারে। আমরা বললাম, আপনি কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, কারণ তা তার রবের কাছ থেকে মাত্রই এসেছে।’
-[মুসলিম : ৮৯৮]💕
বুঝলেন?
অর্ণব : হুম। আর বৃষ্টি চলমান সময়ে দোয়াও কবুল হয়। তাই এ সময় দোয়ার জন্য লুফে নেয়া সুন্নত।
হাদিসে এসেছে,
সাহল বিন সাদ [রাঃ] বলেন, ‘দুই সময়ের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না কিংবা [তিনি বলেছেন], খুব কমই ফেরত দেয়া হয়- আজানের সময় দোয়া এবং রণাঙ্গণে শত্রুর মুখোমুখি হওয়াকালের দোয়া। অন্য বর্ণনা মতে, বৃষ্টির সময়ের দোয়া।
-[আবু দাউদ : ২৫৪০]💕
তানহা : হুম আর রহমতের বৃষ্টি দেখে দোয়া পড়া সুন্নত।
হাদিসে এসেছে,
আয়েশা [রাঃ] বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃ] বৃষ্টি হতে দেখলে বলতেন,
اللَّهُمَّ صَيِّباً نَافِعاً
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছাইয়িবান নাফিয়া’।
[অর্থাৎ হে আল্লাহ, এমন বৃষ্টি আমাদের ওপর বর্ষণ করুন যাতে ঢল, ধস বা আজাবের মতো কোনো অমঙ্গল নিহিত নেই।]
-[বোখারি : ১০৩২]💕
এমন সময় দেখতে পেলাম সামনে দিয়ে একজন বয়স্ক মানুষ হেটে আসতেছেন। তাড়াতাড়ি কাছে গিয়ে,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম।
বয়স্ক লোক : অলাইকুম আসসালাম। বাবা তোমরা কারা? এত রাতে এখানে কি করো?
তারপর আমি পুরা ঘটনাটা বললাম। তারপর,
অর্ণব : এখানে কি আজকে রাতটা থাকার জন্য কোন ব্যবস্থা হবে?
বয়স্ক লোক : তোমরা তাহলে বিপদে পড়ছো। আমার সাথে এসো।
আল্লাহকে শুকরিয়া জানায়,
অর্ণব : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা খুব দুঃচিন্তায় ছিলাম। এতো রাতে কাউকে ডাকারও সাহস পাচ্ছিলাম না।
বয়স্ক লোক : এতে ধন্যবাদের কি আছে। বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব। আর
পবিত্র কুরআনে আছে,
“আশ্রয়প্রার্থীকে সুরক্ষা দিন, সহযোগিতা করুন।”
-(০৯ঃ ০৬)💕
তাই এটা ঈমানী দায়িত্বও বটে।
অর্ণব : জি। তা আপনি এতো রাতে কোথা থেকে আসতেছেন?
(আমরা উনার সাথে হাটতেছিলাম)
বয়স্ক লোক : আমি মসজিদ থেকে আসতেছি। নফল এবাদত করতে করতে কখন যে এত রাত হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি। আসলে নামাজ পড়ার মধ্যে যে শান্তি আছে তা প্রকৃত নামাজি ছাড়া কেউ বুঝবেনা। তবে আজকে একটু বেশি রাত হয়ে গেছে।
অর্ণব : ওহ!
বয়স্ক লোক : তা তোমরা কি স্বামী-স্ত্রী?
আমি উত্তর দেওয়ার আগেই তানহা বলে উঠলো,
তানহা : জি আমাদের বিয়ে ঠিক হইছে। আমরা বিয়ের জন্যই যাচ্ছিলাম। কালকে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তারমধ্যে এই ঝামেলা।
বয়স্ক লোক : ওহ এই ব্যাপার! তা মা তোমার বাবা কি করে?
তানহা : আমার বাবা-মা ছোট বেলায় মারা গেছে।
বয়স্ক লোক : ওহ! তোমার ভরনপোষণ কে দেয়?
তানহা : জি আমি একটা এতিমখানায় মানুষ হয়েছি।
বয়স্ক লোক : তার মানে অনেক কষ্টে বড় হয়েছো। কোথায় যাচ্ছিলা বিয়ে করতে?
তানহা : এখনো ঠিক করিনি। আমার কালকে পরিক্ষা আছে। তারপর ঠিক করতাম।
বয়স্ক লোক : তাহলে তো তোমাদের ভাগ্যটা ভালো। আমার ভাই কাজী। বিয়ে পড়ায়। আমার পাশের বাড়িতেই থাকে। যেহেতু তোমার অভিভাবক নাই। তাই এই পুন্যের কাজটা করার সুযোগ দাও। দিবা না মা?
মনে মনে,
অর্ণব : আল্লাহ! আমি নিশ্চিত তানহা এখন আফসোসের উপর আফসোস করতেছে। ও তো এর ঠেলায় কিছু বলার মতো অবস্থায় নাই। একেই বলে “অতি চালাকের গলায় দঁড়ি”! আমি যে কত কষ্ট করে হাসি চাপে রাখছি আমি জানি। যদিও আমি চাচ্ছি বিয়েটা হয়ে যাক। কিন্তু বুঝলাম এই মূহুর্তে বিয়ে করতে তানহার আপত্তি আছে। তাই বললাম,
অর্ণব : না চাচা আপনাকে অযথা কষ্ট করার দরকার নাই। তাও আবার এত রাতে।
বয়স্ক লোক : আরে এটাতে আবার কষ্টের কি হলো। এটা তো আরো পুন্যের কাজ। কারো বিয়ে দেওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার। আর আল্লাহ তায়ালা নিজেই এর আদেশ দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“তোমাদের মধ্য হতে যারা বিবাহহীন তাদের বিবাহ দিয়ে দাও; এবং দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরকেও। তারা যদি নিঃস্ব হয়ে থাকে, তবে স্বয়ং আল্লাহ্ তাদেরকে ধনী বানিয়ে দেবেন।”
-(সূরা নুর – আয়াতঃ ৩২)💕
আর উসমানী খেলাফতের সময়ে একটি আইন ছিলো, ছেলে-মেয়েদেকে অবশ্যই পচিশ বছরের পূর্বে বাধ্যতামূলকভাবে বিয়ে দিতে হবে। বিয়ে না দিলে প্রয়োজনে মা-বাবাকে বাধ্য করানো হতো। টাকা পয়সার সমস্যা হলে, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে সাহায্য করা হতো। আহা! বিয়ের জন্য রাষ্ট্র কতৃক নিয়ম ছিল। এবার বুঝলা এর ফযিলত।
অর্ণব : হা বুঝছি চাচা।
আমি তানহাকে আস্তে আস্তে বললাম,
: এখন তো বিয়ে হয়েই ছাড়বে।
তানহা রাগী চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকায় আছে। আমি মনে মনে তো উড়াধুরা নাচতেছিলাম😁..আহা! কি আনন্দ আকাশে বাতাসে😁
দেখতে দেখতে চাচার বাড়ি চলে আসলাম। তিন তালা বাড়ি। জিজ্ঞাসা করলাম,
অর্ণব : চাচা এটা কিআপনার নিজের বাড়ি?
চাচা : হুম বাবা।
ওহহো। তাই উনি বললো, “কষ্ট কিসের?”। আল্লাহ তায়ালা ইনাকে যথেষ্ট দিছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“তোমাদেরকে নিশ্চয়ই ধন সম্পদ ও জীবন সম্পর্কে পরীক্ষা করা হবে এবং যাদেরকে তোমাদের আগে কিতাব দেয়া হয়েছে ও যারা শিরক করেছে তাদের কাছ থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে। যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং সংযমী হও, তবে তা সুদৃঢ় কাজের অন্তর্ভুক্ত হবে।”
-(সূরা আলে ইমরান, আয়াত:১৮৬)💕
আল্লাহ ইনাকে পরিক্ষা করতেছেন ধনসম্পদ দিয়ে। সৎ ও ভালো কাজে সম্পদ ব্যয় করা উনার ঈমানী দায়িত্ব। যার হিসাব তাকে হাশরের মাঠে দিতে হবে।
উনি গেটে কলিংবেল চাপতে গেলে, আস্তে আস্তে,
তানহা : এই যে মিস্টার এটা কি হচ্ছে?
অর্ণব : দেখতেই তো পাচ্ছেন। আমিও তো আপনার মতো কিছুই বুঝতেছিনা যে কি হতে যাচ্ছে।
তানহা : আপনাকে এখন পর্যন্ত সেভাবে চিনিনা জানিনা, আর কয়েক ঘন্টার পরিচয়ে বিয়ে? Impossible!
(আসলে আমি চাচ্ছিলাম না আমার চাকরি হওয়ার আগে বিয়েটা হোক। আমি চাচ্ছিলাম কালকে ইন্টারভিউটা দিয়ে বিয়ে করতে। আশা ছিলো এখানে নিশ্চিত চাকরিটা হবে। কিন্তু আমি তো কালকে ইন্টারভিউটাই দিতে পারবো না। আমাকে দুই মাস পরে আবার আসতে হবে। তাই তার আগে বিয়েটা না করার পরিকল্পনাই করতেছিলাম।)
অর্ণব : আপনাকে কে মাতব্বরি করতে বলছিলো? নিজের ফাঁদে নিজে আটকে গেছেন। আমার দোষ?
তখনই চাচা ডাকলো। তানহা রাগে গেছে। চাচার ফ্লাট দুই তালায়। উনার ফ্লাটে ঢুকেই চাচার পরিবারের সাথে পরিচিত হলাম। তার পাঁচ সন্তান, তিনটা ছেলে আর দুইটা মেয়ে। ছেলে দুইটার বিয়ে হয়েছে আর একটা মেয়ের। মেয়েটা তার জামাইয়ের সাথে আজকে বিকালেই আসছে। তাই বাড়িতে একটা আনন্দের আমেজ বিরাজ করতেছিলো। এজন্য সবাই এত রাত পর্যন্ত জাগে আছে। আমরা ডাইনিং স্পেসে যায়ে সোফায় বসলাম। তারপর চাচা সবাইকে আমাদের ঘটনাটা খুলে বললো।
আমি তো বুঝতে পারতেছিনা এখন আমার কি করা উচিৎ। এই চাচা আমার বিয়ে দিয়েই ছাড়বে, অচেনা জায়গা, তানহা এই সময় বিয়েতে রাজী না, আর আমি এক পায়ে রাজী এই নিয়ে গজাখিচুড়ি অবস্থা। আমি কোন মতে মুখে হাসির রেখা ফুটায় তুলে সৌজন্য বজায় রাখলাম। সবাই আমার মতো এক পায়ে রাজী যে বিয়ে দিতেই হবে। আসলে এরকম ঘটনা তো আর বারবার হয় না। তারপর অনেক কথা হইলো ওদের সাথে। তানহা চুপ করে ছিলো পুরোটা সময়। কথা শেষ করে দুইটা মেয়ে তানহাকে নিয়ে চলে গেলো। আর চাচা গেলো উনার ভাইকে ডাকতে, যিনি কাজী।

Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 28
আমাকে চাচার ছেলেরা নিয়ে গেলো অন্য রুমে। রুমে যায় আমি পড়ে গেলাম বিপদে। তানহার তো অসুবিধা হবে না। কারণ অন্য জনার শাড়ি ও পরতেই পারে। আর মেয়েদের তো শাড়ির গোডাউন থাকে। উনার মেয়েদের গোডাউনে দুএকটা একদম নতুন শাড়ি পাওয়াও যাবে। কিন্তু আমি তো আর মানুষের ব্যবহার করা জিনিস পড়তে পারবো না। এখন উপায়! পরে শুনলাম বড় মেয়েটা ও তার জামাই আসার সময় সবার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসছে। তার মধ্যে শাড়ি ও পাঞ্জাবীও ছিলো। কিন্তু আমার বিয়ে আর আমি ধার করা পোষাক পড়বো? এটা আত্মসম্মানের ব্যাপার।
আমি যায়ে মোবাইলটা চার্জে দিয়ে চার্জ অবস্থায় আব্বুকে বললাম যেভাবে পারো আধা ঘন্টার মধ্যে আমার বিকাশে বিশ হাজার টাকা দিতে।
আব্বু : তুই ঠিক আছিস তো বাবা?
অর্ণব : জি আব্বু। কিন্তু টাকাটা খুব দরকার।
আব্বু : ঠিক আছে আমি এখনই যাচ্ছি। আসসালাম অলাইকুম।
অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।
আমি একটু চিন্তায় ছিলাম এতো রাতে বিকাশের দোকান খুলা থাকবে কি না। কিন্তু পনেরো মিনিটের মধ্যেই আব্বু টাকা পাঠাইলো। তাও আবার ত্রিশ হাজার টাকা। যাক ভালোই হলো কাজে আসবে। এজন্য আব্বুকে এতোটা ভালো লাগে।
[হ্যাঁ😍]
আরেকটা চিন্তা ছিলো এদের কারো বিকাশ আছে কি না। স্বস্তি পাইলাম শুনে যে এদের অনেকেরই বিকাশ আছে। তাই সব মিলায় বারো হাজার টাকা ওদের বিকাশ করে দিলাম। ওরা মানা করতেছিলো কিন্তু আমি তো দিবোই। জোর করে দিলাম। উফফ! এখন শান্তি পাচ্ছি। নইলে সারাজীবনের জন্য কেলেংকারী হয়ে থাকতো। বিয়ে করছি মানুষের জিনিস দিয়ে। ভাবা যায় এগুলা।
পাঞ্জাবি এবং পায়জামা পরলাম। একটু পর অন্য রুমে যায়ে দেখি তানহা বসে আছে। আমি সামনে যায়ে বসলাম। শাড়িটা কালো, বিয়ের শাড়ি না। আসলে ওরাতো আর বিয়ের শাড়ি কিনবে না পড়ার জন্য। তানহা ঘোমটা দিয়ে রাখছে যতটা পারে।
কাজি সাহেব মানে চাচার ভাই আসছেন। আমাদের বিয়ের কাজ শুরু করার আগে,
কাজিব সাহেব : কত টাকা দেনমোহর ধার্য করবো?
তানহা চুপ করে আছে। আমি জানি ও বলবে না বললেও কম বলবে। তাই আমি একটা Amount বললাম। বাকিগুলাও আমিই বললাম।
তারপর থেকে আমি সম্পুর্নভাবে ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আমি তানহার দিকে দেখে বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না উনার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আর তোমরা যা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকে তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন এবং যদি তোমরা আল্লাহ্র নেয়ামতের গণনা করো, তবে তার সংখ্যা নিরূপণ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অতিমাত্রায় যালিম, ও অকৃতজ্ঞ।”
-[সূরা ইবরাহীম; ১৪ : ৩৪]💕
তাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে কৃতজ্ঞতা জানাইলাম। এই সেই তানহা যার দ্বীনি জ্ঞান দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছিলাম। যার প্রতি আমি প্রতিটা মুহুর্তে আরো বেশি পরিমানে দূর্বল হচ্ছিলাম। আজ তার সাথে আমার বিয়ে। কিছুক্ষণ পর তা সম্পন্ন হয়েও যাবে। পুরো ঘটনা ভাবতে আমাকে অবাক লাগতেছে। কিভাবে কি হলো! রাগ,অভিমান,ঝগড়া,প্রোপজ,ভালোবাসা, স্মরণীয় মূহুর্ত ইত্যাদি কি ছিলনা এই শেষ কয়েক ঘন্টায়। এটা সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত বিয়ে। সাতটায় বিয়ের প্রস্তাব আর দুইটায় বিয়ে। আমাকে এখনো সবকিছু স্বপ্নই মনে হচ্ছে।
তারপর কাজী সাহেব বিয়ের কাজ শুরু করলেন। বিয়ে পড়ানো শেষ হলে কবুল বলতে বললেন, আমি বললাম। তানহাও বললো। এভাবে আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো। পুরোটা সময় তানহার দিকে তাকায়ে ঘোরের মধ্যেই বিয়ে সম্পন্ন করছি।
আমি ছাদের উপর একা দাঁড়িয়ে আছি। ঘড়িতে আড়াইটা বাজে। তানহাকে ওরা আমাদের জন্য বরাদ্দ করা রুমে নিয়ে গেছে। আমি ওদের কাছ থেকে একটু সময় চায়ে নিয়ে ছাদে আসলাম। ছাদে দাঁড়িয়ে ভাবতেছি কি হলো এটা!
মনে পড়লো রাজিবকে কল দিতে হবে। আমি ওকে আমার সব কথা বলি। আর এটাতো ঐতিহাসিক ঘটনা। রাজিবকে কল দিতেই ও রিসিভ করলো,
রাজিব : আসসালাম অলাইকুম। কিরে এতো রাতে?
অর্ণব : হুম। আর শুন ঐ মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
রাজীব : কোন মেয়েটা?
অর্ণব : আরে যেই মেয়েটার উপর রাগে ছিলাম আর যার বাড়ি খুঁজতে যাচ্ছিলাম।
রাজিব : হুদাই! এখন তোর মজা করার সময়? এতো রাতে?
অর্ণব : হ্যাঁ রে সত্যি কথা!
রাজিব : কি? কখন? কিভাবে? কোথায় তুই?
অর্ণব : পুরা ঘটনা পরে বলবো। রোমাঞ্চকর কাহিনী। এখন শুধু বিয়ের ঘটনাটা শুন।
তারপর শুধু বিয়ে কিভাবে হইলো তা বললাম।
রাজিব : যাক আমি প্রচুর খুশি হইছি। আমি চাচ্ছিলাম যে ওর সাথেই যেনো তোর বিয়েটা হয়।
অর্ণব : হুম তোর দোয়া কবুল হইছে। হাহা।
রাজিব : আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে তুই ঐ মেয়েকেই বিয়ে করছিস।
অর্ণব : আমারো😆… আচ্ছা শুন। বিয়ের বিবাহের শর্ত তো চারটি।
১. পরস্পর বিবাহ বৈধ এমন পাত্র-পাত্রী নির্বাচন।
২.উভয়ের সম্মতি।
-(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৬)💕
৩. মেয়ের ওলী থাকা
-(আহমাদ, তিরমিযী; মিশকাত হা/৩১৩০)💕
৪. দুজন ন্যায়নিষ্ঠ সাক্ষী থাকা (ত্বাবারাণী, ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৫৮)💕
তাই না?
রাজীব : হুম। আর বিয়ের রুকন দুটি।
১.ইজাব বা প্রস্তাবনা ও
২. কবুল বা গ্রহন
-(সূরা নিসা ১৯)💕
অর্ণব : হুম! আর
হাদিস অনুসারে,
উক্ত শর্তাবলীর কোন একটি পূরণ না হলে বিবাহ শুদ্ধ হবে না। উল্লেখ্য যে, যে মেয়ের ওলী নেই, তার ওলী হবেন সরকার।
-(আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১৩১)💕
আর অন্য বর্ণনায়,
পাত্রীর জন্য তার অলী বা অভিভাবক জরুরী। বিনা অলীতে বিবাহ বাতিল।
-(আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, ইরঃ ১৮৩৯,১৮৪০নং)💕
রাজীব : ওলী না ছাড়া বিয়ে বাতিল এই বিষয়টাতে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে মতোবিরোধ আছে। এ ব্যাপারে পরে আসতেছি। তবে সাক্ষী না ছাড়া বিয়ে বাতিল। তার আগে শুন,
এই ওলী হবে সাবালক, সুস্থমস্তিষ্ক ও সুবোধসম্পন্ন সচেতন মুসলিম পুরুষ। যেমন পাত্রীর পিতা, তা না হলে দাদু, না হলে ছেলে বা পোতা, না হলে সহোদর ভাই, না হলে বৈমাত্রেয় ভাই, না হলে আপন চাচা, নচেৎ পিতার বৈমাত্রেয় ভাই, না হলে চাচাতো ভাই অনুরূপ নিকটাত্মীয়।
সুতরাং বৈপিত্রেয় ভাই, ভাইপো, নানা, মামা অলী হতে পারে না। অনুরূপ মা বা অন্য কোন মহিলার অভিভাবকত্বে বা আদেশক্রমে বিবাহ হবে না।
(আয-যিওয়াজ, ইবনে উসাইমীন ১৬ পৃঃ)💕
যেমন, নিকটের ওলী থাকতে দূরের ওলীর; যেমন বাপ থাকতে দাদুর বা দাদু থাকতে ভাইয়ের অভিভাবকত্বে নারীর বিবাহ হয় না।
অনুরূপ পালিতা বাপ কোন ওলীই নয়। যার কোন অলী নেই তার অলী হবে কাজী।
-(মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৫৫)💕
বুঝলি?
অর্ণব : হুম এবার বুঝছি। এজন্যই তোর ভাবীর ওলী হয়েছিলো কাজী সাহেব নিজে।
রাজীব : হ্যাঁ। আরেকটা বিষয়,
বাপ নাস্তিক বা কবরপূজারী হলে মেয়ের ওলী হতে পারে না।
-(মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৫৫)💕
অর্ণব : ওহ!
রাজীব : আর,
অভিভাবক ছাড়া নারীর বিয়ে হয় না। যেহেতু পুরুষের ব্যাপারে তার মোটেই অভিজ্ঞতা থাকে না। আবেগ ও বিহ্বলতায় স্বামী গ্রহণে ভুল করাটাই তার স্বাভাবিক, তাই পুরুষ অভিভাবক জরুরী। তবে অবৈধ অভিভাবকত্ব কারো চলবে না।
-(সুলূকুল মারআতিল মুসলিমাহ, সাইয়িদী মুহাম্মদ শানক্বীত্বী ৭০পৃঃ)💕
আবার ওলী বা অভিভাবদেরও দায়িত্ব আছে। তারা সাধ্যমত সুপাত্র ও যোগ্য স্বামী নির্বাচন ছাড়া খেয়াল-খুশী মত যার-তার সাথে মেয়ের বিবাহ দিতে পারে না। যেহেতু অভিভাবকত্ব একটি বড় আমানত। যা নিজের স্বার্থে যেখানে খুশী সেখানে প্রয়োগ করতে বা নিজের কাছে ভরে রাখতে পারে না। যথাস্থানে তা পৌঁছে দেওয়া ফরয।
মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা জেনে-শুনে আল্লাহ ও রসূলের খেয়ানত করো না এবং তোমাদের (গচ্ছিত) আমানতেরও নয়।’’
-(সূরা আল-আনফাল ৮ : ২৭)💕
অপর এক আয়াতে
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা আমানত তার যথার্থ মালিককে প্রত্যর্পণ কর।”
-(সূরা অন-নিসা ৪ : ৫৮)💕
সুতরাং যেমন অপাত্রে কন্যাদান হারাম। অনুরূপ সুপাত্র পাওয়া সত্ত্বেও কন্যাদান না করাও হারাম। কন্যার সম্মতি সত্ত্বেও নিজস্ব স্বার্থে বিবাহ না দেওয়া অভিভাবকের অবৈধ কর্তৃত্ব। ওলী এমন বিবাহে বাধা দিলে পরবর্তী ওলী বিবাহ দেবে। নচেৎ বিচার-বিবেচনার পর কাজী তার বিবাহের ভার নেবেন।
-(সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭০৯নং)💕
অর্ণব : হুম। হাদিসে এসেছে ওলী ছাড়া বিবাহ হবে না,
হাদিসে আছে,
আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, রসূল (সাঃ) বলেছেন : ”অভিভাবক ছাড়া কোন বিয়েই হবে না”।
-[হাদীসটি আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ্, আহমাদ (১৯০২৪, ১৯২৪৭) বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটিও সহীহ্, দেখুন ”সহীহ্ আবী দাঊদ (২০৮৫), ”সহীহ্ তিরমিযী” (১১০১), ”সহীহ্ ইবনু মাজাহ্” (১৮৮১), ”ইরউয়াউল গালীল” (১৮৩৯), ”সহীহ্ জামে’ইস সাগীর” (৭৫৫৫), ”মিশকাত” তাহকীক্ব আলবানী (৩১৩০)। হাদীসটিকে ইবনু হিব্বান এবং হাকিমও সহীহ্ আখ্যা দিয়েছেন]💕
অন্য হাদিসে এসেছে,
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ), ইমরান ইবনু হুসায়েন (রাঃ) ও আনাস (রাঃ)ও বর্ণনা করেছেন,
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন : রসূল (সাঃ) বলেছেন : ”কোন নারী কোন নারীর বিয়ে দিবে না এবং নারী নিজে নিজের বিয়ে দিবে না। কারণ, ব্যভিচারী নারী নিজেই নিজের বিয়ে দেয়।
-[হাদীসটি ইবনু মাজাহ্ (১৮৮২) ও দারাকুতনী বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির দাগ দেয়া শেষাংশ বাদে বাকী অংশ সহীহ্। দেখুন ”সহীহ্ ইবনে মাজাহ্” (১৮৮২), ”ইরউয়াউল গালীল” (১৮৪১), ”সহীহ্ জামে’ইস সাগীর” (৭২৯৮)]💕
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে তার সে বিয়ে বাতিল। তিনি একথাটি তিনবার বলেছেন। আর সে যদি তার সাথে সহবাস করে, তাহলে এজন্য তাকে মোহর দিবে। যদি উভয় পক্ষের (অভিভাবকদের) মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়, তাহলে শাসক হবেন তার অভিভাবক। কারণ যাদের অভিভাবক নাই তার অভিভাবক শাসক।
-(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২০৮৩)💕
রাজীব : এখন কথা হচ্ছে শেষের হাদিসটি যেটা বললি তা হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রা) এর। অথচ
হাদিসে এসেছে,
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন,
আয়শা রাঃ তার ভাই আব্দুর রহমানের মেয়ে হাফসাকে তার অভিভাবক আব্দুর রহমানকে ছাড়াই নিজে বিয়ে দিয়েছিলেন মুনজির বিন যুবায়েরের সাথে। আবদুর রহমান তখন শাম দেশে ছিলেন।
-{মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-২০৪০ ও তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৪২৫৫}💕
সুতরাং বুঝা গেল যে, উক্ত শেষ হাদিস দ্বারা খোদ বর্ণনাকারী হযরত আয়শা (রা) নিজেই “বিবাহ শুদ্ধ হয় না” একথা বুঝান নি।
বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, অভিভাবক ছাড়া বিয়ে অসম্পূর্ণ হয়, সম্পূর্ণ বাতিল নয়৷ কারণ, যে অভিভাবক মেয়েকে লালন পালন করল, তাকে না জানিয়ে বিয়ে করাটাতো অসম্পূর্ণই। তাই বলা হয়েছে তা বাতিল। বাতিল মানে অসম্পূর্ণ। বিয়ে সহীহ হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই৷
অর্ণব : হুম।
রাজীব : আর কোরআনের আলোকে অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়া বিয়ের বৈধতার কিছু দলিল,
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“মহিলারা নিজেদের ব্যাপারে সৎ ভাবে যা করবে (বিয়ের ক্ষেত্রে) সে বিষয়ে তোমাদের কোন দোষ নেই।”
-(সূরা বাকারাহ-২৩৪)💕
কিন্তু বলা হয়েছে সৎভাবে এটা তোকে মাথায় রাখতে হবে। অন্য এক আয়াতে,
আল্লাহর বাণী,
“তোমরা মেয়েদেরকে তাদের স্বামীদেরকে বিবাহ করা থেকে বাধা দিবে না।”
-(সূরা বাকারাহ-২৩২)💕
বুঝলি?
অর্ণব : কিন্তু কুরআনের আয়তের ব্যাখ্যা কিন্তু সহজ বিষয় না।
রাজীব : হুম জানি তাই একটা হাদিস উল্লেখ করতেছি,
হাদিসে এসেছে,
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেন-
ﺍﻷﻳﻢ ﺃﺣﻖ ﺑﻨﻔﺴﻬﺎ ﻣﻦ ﻭﻟﻴﻬﺎ
সাবালিকা মেয়ের নিজ বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত
নেওয়ার
অধিকার অভিভাবক অপেক্ষা তার নিজেরই বেশি।
-(সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪২১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২০৯৮; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২০৯৮)💕
কিন্তু তাকে পূর্ণ বয়স্ক হতে হবে।
বুঝলি?
অর্ণব : হুম বুঝছি। এজন্যই স্কলারদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইমামদের এক অংশের মতে, বিয়েতে মেয়েদের জন্যে অভিভাবকের অনুমতি অত্যাবশ্যক। অভিভাবক অনুমতি না দিলে বা অবিভাবকের অজ্ঞাতসারে বিয়ে করলে মেয়ের বিয়ে সহীহ হবে না। এ মতের পক্ষে রয়েছেন ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ রহ. প্রমুখ। উভয়ের মতের সপক্ষে বিস্তর দলীলও রয়েছে।
রাজীব : হুম। আর অন্য একাংশের মতে, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া যদি কোন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে বিয়ে করে তাহলে তার বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে শর্ত হলো, উক্ত মেয়েকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে এবং কুফু (সমতা) রক্ষা করে বিয়ে করতে হবে। যদি কুফু না মিলে তাহলেও বিয়ে হয়ে যাবে। কিন্তু মেয়ের পিতা চাইলে উক্ত বিয়ে ভেংগে দিতে পারবেন। তবে পিতা যদি বিয়ে না ভেংগে বলবৎ রাখেন তাহলে বিয়ে ঠিক থাকবে। এ মতটি দিয়েছেন বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম জুহরী, ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম শা’বী প্রমুখ।
তাই যারা হানাফী মাজহাবের বা ইমাম আবু হানীফা এর হাদিসের ব্যাখ্যার ও মতামতের উপর নির্ভর করেন তারা অভিভাবক ছাড়া বিবাহকে বৈধ মনে করেন এবং এভাবে তাদের বিয়ে হলে সে বিবাহের স্বীকৃতি দেয়া হয় । এই বিয়ে আপন অবস্থার উপর স্থির থাকে এবং বিয়ে ভেংগে ফেলতে বলা হয় না।
অর্ণব : তবে ইসলামে বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য অভিভাবক থাকা খুবই জরুরী বিষয়। যদিও বুঝলাম যে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া মেয়ে বিবাহ করলে সেই বিবাহ হয়ে যাবে। তারপরেও অভিভাবকের অনুমতি নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণভাবে যৌবনের শুরুতে যুবক-যুবতী সহজেই বয়সের উন্মাদনায় বিভ্রান্ত হয়, সঙ্গি নির্বাচনের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং নিজের চোখের ভাল লাগার উপর নির্ভর করেই সঙ্গী পছন্দ করে। অথচ বিবাহের ক্ষেত্রে চোখের পছন্দ একটা সাইড মাত্র। তার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ জীবন ও আগত প্রজন্মের কল্যাণের কথাও চিন্তা করতে হবে। এজন্য ইসলামে বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর মতামতের সাথে অভিভাবকের মতামতেরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সুতরাং ছেলেমেয়েদের জন্য উচিত হলো অবিভাবকের অনুমতি ও দোয়া নিয়ে বিবাহ করা। এতে আল্লাহ চাহেন তো সংসারও সুখী হবে। পারিবারিক অশান্তি ও ফেতনার পথও বন্ধ হবে। স্বামী-স্ত্রীর মাজে প্রেম, মোহাব্বত, ভালবাসা, আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পাবে।
রাজীব : একদম ঠিক বলছিস। অবিভাবকের মতামতের তায় তোয়াক্কা না করলে সমাজে বিচ্ছৃংখলা দেখা দিবে। পরিবারে অশান্তির বীজ বপন হবে। ছেলে মেয়েরা বিয়ের নিয়তে প্রেম শুরু করবে। নারীধর্ষণ ও নির্যাতন বেড়ে যাবে। অসমাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হবে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েদের ইজ্জত সভ্রমকে আত্মসাৎ করবে। প্রেমের শুরুটা হবে নেক সুরতে, শেষ হবে শয়তানের ধোকার মাধ্যমে। তাছাড়া বাবা মা যখন দেখবে, মেয়ে ইসলামিক হওয়ার প্রধান সমস্যা হচ্ছে মেয়ে বাবা মায়ের আবেগের মূল্য দিচ্ছে না, বাবা মায়ের অনুমতি ছাড়াই বিয়ের বৈধতার ফাতাওয়া ব্যবহার করে নিজে নিজে পছন্দমত পাত্র খুঁজে বিয়ে করে ফেলছে তখন বাবা মায়েরা মনে কষ্ট পাবে ও নীকটস্থ প্রতিবেশীরা তাকে নিয়ে কানা গোসা করবে, তাঁর চরিত্রে কালিমা লেপন করবে। এই নানাবিধ বাস্তবতাকেও অস্বীকার করা যায় না। তাই বিতর্কিত না হতে চাইলে অবিভাবকের পছন্দমত ছেলেকে বিবাহ করা উচিৎ হবে।
অর্ণব : হুম। বুঝলাম। তবে ইসলাম অনুযায়ী শুধু বাবা-মার একচেটিয়া মত হলেই হবে না। মেয়ের দিকটাও দেখতে হবে। কেননা,
হাদিসে এসেছে,
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন,
হযরত বুরাইদা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক মহিলা নবীজী সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার কাছে বিয়ে দিয়েছে, যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাবী বলেন, তখন রাসূল সাঃ বিষয়টি মেয়ের ইখতিয়ারের উপর ন্যস্ত করেন, [অর্থাৎ ইচ্ছে করলে বিয়ে রাখতেও পারবে, ইচ্ছে করলে ভেঙ্গেও দিতে পারবে] তখন মহিলাটি বললেন, আমার পিতা যা করেছেন, তা আমি মেনে নিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েরা যেন জেনে নেয় যে, বিয়ের ব্যাপারে পিতাদের [চূড়ান্ত] মতের অধিকার নেই্।
-(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৪)💕
রাজীব : হ্যাঁ ঠিক বলছিস। আর মেয়ের অনুমতি না ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না। কেননা,
হাদিসে আছে,
“রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন,
বিধবার বিয়ে তার পরামর্শ ছাড়া এবং কুমারী মেয়ের বিয়ে তার অনুমতি ছাড়া করানো যাবে না।”
-(বুখারী ৫১৩৬)💕
অর্ণব : এই জায়গায় তো আমার খটকা লাগতেছে। তোর ভাবী বিয়ের আগে কিন্তু আমাকে বলতেছিলো যে বিয়ে করবে না। শুনলি তো তুই ঘটনাটা।
রাজীব : ভাবী বোধহয় চাচ্ছিলো বিয়েটা পরে করতে। ভাবী কি চুপ ছিলো?
অর্ণব : হুম। আমি বলতেই চুপ হয়ে গেছিলো। আর তেমন বিরোধিতা করে নি।
রাজীব : চুপ থাকাই সম্মতির লক্ষণ। কেননা,
হাদিসে এসেছে,
“আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয়ই কুমারী মেয়েরা লজ্জা করে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তার চুপ থাকাটাই হচ্ছে তার সম্মতি।”
-(সুত্রঃ সহীহবুখারী,অধ্যায় ৬৭, হাদিস নম্বর ৫১৩৭;)💕
বুঝলি?
অর্ণব : হ্যাঁ বাবা বুঝলাম। তুই বুঝাবি আর আমি বুঝবো না এরকম কখনো হয়েছে? এইজন্যই তো তোর সাথে সব কিছু শেয়ার করি।
রাজীব : হাহা। তুই জানিস তুই কতটা ভাগ্যবান? ভাবীর মতো একটা মেয়ে পাইছিস। আর ভাবীও প্রচুর ভাগ্যবান। আমি পড়ছিলাম,
“সেই স্বামী ভাগ্যবান-
যার স্ত্রী প্রতিটি নামাজের পর,
তার স্বামীর জন্য দয়া করে।”
আর Believe me, She is that kind of Girl Dude! যে মেয়ে তার স্বামীর জন্য নিজের সৌন্দর্যকে এভাবে হেফাযত করে সে মেয়ে তোর জন্য আরো কি কি জমা রাখছে একবার ভাব। এটাই প্রকৃত দ্বীনদার স্ত্রী পাওয়ার লাভ। যার জন্য তোকে জোর করতেছিলাম ওকে বিয়ে করতে।
আর,
“সেই স্ত্রী ভাগ্যবান-
যার স্বামী প্রতিটা মুহুর্তে তার
স্ত্রীকে মনে করে ভালোবাসে।”
আর তোকে তো আমি ভালো মতই চিনি।
অর্ণব : হাহা। ওকে বাদ দে। রাত হয়ে গেছে আর তোর ভাবী একা বসে আছে। কালকে কথা হবে। পুরা ঘটনাটা বলবো নি।
রাজীব : আসসালাম অলাইকুম
অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।
কলটা কেটে ছাদ থেকে রুমে আসলাম….

Islamic গল্প😊
“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖
Part : 29
ছাদ থেকে রুমে আসলাম। হঠাৎ বিয়ে তাই সেরকম কিছু সাজানো নাই। তবে রুমের সব কিছু সুন্দরভাবে সাজানো। রুমের আসবাবপত্র আর সেগুলা সাজানোর ধাঁচ জানান দিচ্ছে ইনারা কতটা ধনী। রুমের সাথে বেলকনি। বেলকনিতে তানহা দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকায় আছে। আমি উনার মনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অনিশ্চিত। তাই দরজা লাগিয়ে বিছানার এক সাইডে বসলাম। তানহা বুঝতে পারলো আমি আসছি তাই বেলকনি থেকে রুমে আসলো। আসার সময় দরজাটা লাগিয়ে দিলো।
তানহা : আসসালাম অলাইকুম। কোথায় গেছিলেন?
অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।একটু ছাদে গেছিলাম। হঠাৎ সালাম দিলেন যে?
(কারণ তুমি এখন আমার স্বামী, বুঝলেন মিস্টার অর্ণব।)
তানহা : না এমনি।
অর্ণব : বেলকনিতে কি করতেছিলেন?
তানহা : চাঁদ দেখতেছিলাম। আপনি ছাদে কি করতেছিলেন?
(যাক বাবা আমার বৌটা রোমান্টিক আছে দেখছি)
অর্ণব : আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতেছিলাম। জানাইতে তো হবে যে বিয়ে করছি তাই না?
তানহা : হাহা। তবে প্লিজ এখন থেকেই স্বামীর অধিকার চাইয়েন না। এটা আমার অনুরোধ!
অর্ণব : জি আমি বুঝতে পারছি। আমাদের পরিচয় শুধু কয়েক ঘন্টার আর এভাবে হঠাৎ করে বিয়ে হবে এটা আমিও ভাবতে পারিনি। আপনারও ধাতস্থ হওয়ার জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।
(জি আমি জানতাম তুমি বুঝবা বিষয়টা। এজন্যই তো তোমাকে এতটা ভালো লাগে।)
তানহা : ধন্যবাদ মিস্টার অর্ণব আহমেদ… Son of Mr. Rofik Ahmed And Misses Radia Begam😜
অর্ণব : বাবারে বাবাহ! আপনি কাবিন নামায় দেখে মনে রাখছেন! তাও আবার সম্পুর্ণটা?
তানহা : জি।
অর্ণব : Oh shit! আমি একদম ভুলে গেছিলাম। ঘোরের মধ্যে আপনার নামটা পর্যন্ত দেখিনি।
তানহা : 😁😁
অর্ণব : দয়া করে এখন বলেন না প্লিজ।
তানহা : না বলবো না। সময় হলে বলবো।
অর্ণব : আপনার নাম মনে হয় তাসনিয়া তাই না? আপনার বান্ধবী সেদিন আপনাকেই ডাকতেছিলো। আর বিয়ে পড়ানোর সময়ও এরকমই কিছু একটা শুনছিলাম।
তানহা : সময় হলে জানতে পারবেন।
অর্ণব : ঠিক আছে আমিও বলবো না যে আমি কি করি।
তানহা : হাহাহা। ঠিক আছে কিন্তু তাও বলবো না আমার নাম। আর আপনি কি করেন তা জানার দরকারও নেই।
অর্ণব : হাহা। আচ্ছা আপনি কি এই বিয়েতে খুশি? না মানে মেয়েদের তো বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে। আমাদের বিয়ে তো খুব সাদামাটাভাবে হয়ে গেলো তাই বলতেছি।
তানহা : বিয়ের দিন নিয়ে আমার কোন স্বপ্ন ছিলো না। আর প্রচলিত বিয়েতে পর্দার খেলাপ হয় বলে আমি বরং একটু এটা নিয়ে চিন্তায়ই ছিলাম বলতে পারেন। তাই সাদামাটাভাবে বিয়ে করাই আমার ইচ্ছা ছিলো। আর
হাদিসে এসেছে,
মাসনূন বিবাহ সাদা সিধে ও অনাড়ম্বর হবে, যা অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি মুক্ত হবে এবং তাতে যৌতুকের শর্ত বা সামর্থের অধিক মহরানার শর্ত থাকবেনা।
-(তাবারানী আউসাত, হাদিস
নং- ৩৬১২)💕
কিন্তু যৌতুক না নেওয়ার জন্য আপনার বাবা কিছু বলবে না?
অর্ণব : আমার বাবা এধরণের হারাম কাজ কখনো করার চিন্তাও করবে না। এটা নিয়ে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। কেননা
কোন পক্ষ যেওরের শর্ত করা নিষেধ এবং ছেলের পক্ষ থেকে যৌতুক চাওয়া হারাম।
-(আহসানুল ফাতাওয়া ৫/১৩)💕
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
“শর্ত আরোপ করে বর যাত্রীর নামে বরের সাথে অধিক সংখ্যাক লোকজন নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়ীতে মেহমান হয়ে কনের পিতার উপর বোঝা সৃষ্টি করা আজকের সমাজের একটি জঘন্য কু-প্রথা, যা সম্পূর্ন রুপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক।”
-(মুসনাদে আহমাদ:২০৭২২, বুখারী: ২৬৯৭)💕
আর আমার আব্বু তো আমাকে বিয়ের জন্য নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন। তাই উনি বরং আরো খুশি হবেন। বুঝলেন?😉
(এই প্রথম আমরা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে কথা বলতেছি। আর তানহার চেহারাও খোলা। তানহা আগে আমার সাথে খুব সংযত হয়ে কথা বলতো। আর এখন সেই ভাবটা নেই বরং নরম ও মধুরতা মিশানো গলায় কথা বলতেছে।)
তানহা : হুম বুঝছি। জানেন আমাদের বিয়েটা উত্তম দিনে হয়েছে। কেননা,
হাদিসে আছে,
“শাউয়াল মাসে এবং জুমুয়ার দিনে মসজিদে বিবাহ সম্পাদন করা। উল্লেখ্য, সকল মাসের যে কোন দিন বিবাহ করা যায়িজ আছে।”
-(মুসলিম ১৪২৩, বায়হাকী ১৪৬৯৯)💕
এটা শাওয়াল মাস চলতেছে ও আমাদের বিয়ে রাত দুইটার দিক হয়েছে আর আজকে কিন্তু শুক্রবার।
অর্ণব : তাই নাকি? এটা আমি জানতাম না। আমার বউ তো অনেক ট্যালেন্টেড।
তানহা : দেখতে হবে না কার বউ😜
অর্ণব : হাহা। জানো বাসের কোন জানি একটা ঘটনার জন্য তোমাকে “ট্যালেন্টেড হ্যান্ডেল” বলছিলাম। তবে মনে করতে পারতেছি না।
তানহা : “হ্যান্ডেল” কি?
অর্ণব : আমি গালি দেই না বা কাউকে হেনস্থা করিনা। যখন রাগ উঠে তখন সামনের ব্যক্তিকে “হ্যান্ডেল” বলি। মূলত বোকা বুঝানোর জন্য।😁
তানহা : মজা পাইলাম😁
অর্ণব : আচ্ছা তোমার মোবাইলে বিকাশ আছে?
তানহা : হুম কেনো?
তারপর তানহার মোবাইলে আব্বুর দেওয়া বাকি টাকা আর আমার কাছে যা ছিলো শুধু যাওয়ার খরচটা বাদে পুরোটাই তানহাকে বিকাশ করে দিলাম।
অর্ণব : এটা তোমার দেনমোহর। আমার কাছে সম্পুর্ন টাকা এখন নেই। তাই যা আছে তাই দিলাম বাকিটা পরে দিবো।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“তোমরা নারীগণকে তাদের মোহরানা বা একটা নির্দিষ্ট উপহার দিবে। যদি তারা সন্তুষ্টচিত্তে মোহরানার কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তোমরা তা স্বাচ্ছন্দে ভোগ করবে।”
-[সূরা নিসা – ৪]💕
আর মোহরানা আদায় না করা পর্যন্ত পুরুষের জন্য তার স্ত্রী হারাম।
হাদিসে এসেছে,
“মহানবী (সা:) বলেছেন, যে কোনও ব্যক্তি কোন মহিলাকে কম- বেশী “ মোহরের “ বিনিময়ে বিবাহ করছে, মনে মনে তার হক আদায় দেয়ার নিয়ত রাখেনি, তাকে ধোঁকা দিয়েছে, অতঃপর তার হক আদায় না করেই মারা গিয়েছে, সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন ব্যাভিচারী বা যেনাকারী হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।”
-(ত্বাবারানী সঃ তারগীব ১৮০৭ )💕
তবে মেয়েরা অনুমতি দিলে তাকে ষ্পর্শ করা জায়েয আছে। আর মেয়েরা চাইলে দেনমোহর মাফ করে দিতে পারে, কিন্তু এটা ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী কেননা এটা আদায় ফরয। আর আমি যেহেতু কিছুটা আদায় করেছি তাই ভবিষ্যতে দিবো বা এরকম কিছু পারস্পরিক পরামর্শ সাপেক্ষে তুমি অনুমতি দিলে ষ্পর্শ করতে পারবো। বুঝলা?
তানহা : জি আমি জানি। আর দেন মোহর আমার অধিকার। কিন্তু আপনাকে এতো টাকা দেনমোহর কে বলতে বলেছে? হুম? শরিয়ত অনুসারে মোহরের সর্ব নিম্ন পরিমাণ হচ্ছে আড়াই ভরি রুপার দাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা ।
যা দিছেন দিছেন বাকিটা….
আমি সাথে সাথে তানহার মুখ চাপে ধরলাম।
অর্ণব : Oh hello Mam! আর একটা কথাও বলবেন না। আমি পুরোটাই আদায় করবো।
হাদিসে আছে,
“সামর্থানুযায়ী মোহর ধার্য করা।”
-(আবু দাউদ: ২১০৬)💕
আর আমার সামর্থ অনুযায়ী মোহরানা ধার্য করছি। বুঝলেন?
তানহা নিজে হাতটা সরায় দিয়ে,
তানহা : হাহাহা। নাহ আমার বরের আত্মসম্মান আছে বলতে হবে। ঠিক আছে করিয়েন। যেখানে মোহরানা না আদায় করে ষ্পর্শ পর্যন্ত করা যায় না, সেখানে মানুষ প্রেম কিভাবে করে বুঝিনা।
অর্ণব : আল্লাহ হেদায়েত দিক সবাইকে। একটু কাছে আসো।
তানহা কোন প্রশ্ন না করে কাছে আসলো। আমি তানহার মাথা থেকে শাড়ির অংশটা সরাইলাম। তারপর কপালের উপরের চুল হাতে নিলাম।
তানহা : কি করতেছেন?
অর্ণব : দোয়া পড়তেছি। কেননা,
হাদিসে এসেছে,
বাসর রাতে স্ত্রীর কপালের উপরের চুল হাতে নিয়ে এই দোয়া পড়া,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَمِنْ شَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা খয়রাহা ওয়া খয়রা মা জাবালতুহা আলাইহি ওয়াওযুবিকা মিন শার্রিহা মিন শার্রিমা জাবালতাহা আলাইহি”
-(আবু দাউদ: ২১৬০)💕
তারপর তানহা আবার আগের জায়গায় চলে গেলো আর শাড়ি ঠিক করলো।
অর্ণব : এই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ো কালকে অনেক কাজ আছে।
তানহা : কেনো?
অর্ণব : বিয়ের পরবর্তী আক্বদের অনুষ্ঠান তো করা গেলো না। সুন্নতটাও পালন করতে পারলাম না।
হাদিসে এসেছে,
“বিবাহের খবর ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিবাহ করা এবং বিবাহের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের মাঝে খেজুর বন্টন করা।”
-(বুখারী: ৫১৪৭)💕
কিন্তু ওলীমা বা বৌভাতের অনুষ্ঠান তো করতে হবে। কেননা
হাদিসে এসেছে,
“বাসর রাতের পর স্বীয় আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাংখী এবং গরীব মিসকীনদের তাউফীক অনুযায়ী ওলীমা খাওয়ানোর আয়োজন করা।”
-(মুসলিম: ১৪২৭)💕
বুঝলেন?
তানহা : ওহ! ভুলেই গেছিলাম। আর শুনেন ওলিমাতে অবশ্যই গরীব মিসকিনদের খাওয়াবেন। কেননা,
#হাদিসে এসেছে,
“ওলীমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উচু মানের খানার ব্যবস্থা করা জরুরী নয়। বরং সামর্থানুযায়ী খরচ করাই সুন্নত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। যে ওলীমায় শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত দেওয়া হয়, দ্বীনদার ও গরীব গরীব-মিসকিনদের দাওয়াত দেওয়া হয়না, সে ওলীমাকে হাদিসে নিকৃষ্টতম ওলীমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের ওলীমা আয়োজন থেকে বিরত থাকা উচিত।”
-(আবু দাউদ: ৩৭৫৪)💕
বুঝলেন?
অর্ণব : জি ম্যাডাম। এখন চলেন ঘুমাতে যাই। আপনি অনেক ক্লান্ত, একটা কাজ করি মাঝখানে বালিশ দিয়ে রাখি তাহলে কারো সমস্যা হবে না।
যদিও মাঝে বালিশের দরকার ছিলো না। এখন আমার অনেকটাই জড়তা কাটে গেছে। তাও বললাম,
তানহা : ধন্যবাদ আমার মনের কথা বুঝার জন্য।
(আমি ছাড়া তোমায় কে বুঝবে বলো। আমি তো তোমার সুখ-দুঃখের ভাগিদার হতে চাই।)
অর্ণব : হাহা।
তারপর আমি মাঝে দুইটা বালিশ দিয়ে দিলাম। তানহা ওপাশে শুলো আমি এপাশে।
তানহা : আমি আপনাকে বিশ্বাস করে শুয়ে পড়লাম, কাছে আসলে কিন্তু খারাপ হবে।
অর্ণব : কেনো? আমি আমার বউয়ের কাছে যাইতেই পারি!
তানহা : এজন্যই পাশে ঘুমাচ্ছি। অন্য কেউ হলে ঘরেও ঢুকতে দিতাম না😊
অর্ণব : হাহা। ঘুমান। চিন্তা করিয়েন না। লাইটা অফ করলে সমস্যা আছে?
(জানি আপনি কিছু করবেন না।)
তানহা : না, অফ করে দেন আমারো লাইট থাকলে ঘুম আসে না।
লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম।
অনেক্ষণ পার হয়ে গেলো কিন্তু আমার ঘুম আসতেছে না। তানহা মনে হয় ঘুমাচ্ছে। তাই ফেসবুকে ঢুকলাম।
কিছুক্ষণ পর,
তানহা : ঘুমাবেন না?
অর্ণব : আমার ঘুম আসতেছে না। আপনি ঘুমান নি?
তানহা : আমারও ঘুম আসতেছে না।
অর্ণব : চলেন বেলকনিতে যায়ে গল্প করি।
তানহা : চলেন।
তারপর আমরা দুজনে বেলকনিতে গেলাম।
বেলকনিতে টবে করে নানা ধরনের গাছ সুন্দরভাবে সাজানো আছে। গ্রিলের ভিতর দিয়ে চাঁদটা খুব সুন্দর লাগতেছে। আমরা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি। হালকা বাতাস হচ্ছিলো। তানহা চুল খোলা রাখছে। এই প্রথম আমি তানহার চুল দেখলাম। মেয়েদের চুল এতো সুন্দর হয় জানতাম না। চুল খোলা রাখা অবস্থায় তানহাকে আরো বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। আর শাড়িতে তো তানহাকে দারুণ লাগতেছে। এক জায়গায় পড়ছিলাম যে, শাড়ি আর নারী নাকি Awesome combination… আজকে স্বচক্ষে দেখতেছি। চুল ছেড়ে দেওয়া আর সাথে শাড়ি, তানহাকে যে কত সুন্দর লাগতেছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। হালকা বাতাসে চুলগুলা উড়তেছিলো আর তানহার গালে আসে পড়তেছিলো। আমার মনে হচ্ছে সামনে এক অপ্সরা দাঁড়িয়ে আছে। আমি এক দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকিয়ে আছি।
তানহার কথায় আমার ঘোর ভাঙ্গলো,
তানহা : কি দেখতেছেন?
অর্ণব : প্রথম কোন মেয়ের দিকে নজর দিলাম আর প্রথম কারো উপর ক্রাশ খাইলাম। তাকেই দেখতেছিলাম।
তানহা : ক্রাশ খাওয়া হারাম😜
অর্ণব : কিন্তু আমারটা হালাল😜
এভাবেই আমরা গল্প-গুজবের মাধ্যমে সারা রাত কাটায় দিলাম।
সকালে খাওয়া দাওয়া করে চাচার পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা বাস স্ট্যান্ড এর জন্য রওনা হলাম। খুব ইচ্ছা করতেছিলো ওর হাতটা ধরে হাঁটতে কিন্তু এখন দিনের বেলা। তাই চেষ্টাও করিনি।
অর্ণব : আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো।
তানহা : হাহা আমারো।
অর্ণব : আজকে আব্বু-আম্মু অবাক হয়ে যাবে। ওদের জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করতেছে।
তানহা : জি না আজকে না।
অর্ণব : আজকে না মানে?
তানহা : এখন আমি রাজশাহী যাবো আর আপনি দিনাজপুর যাবেন।
অর্ণব : হাহ? আজকে আমাদের “বউভাত”। আর বউভাতের দাওয়াতে বউই গায়েব। এটা কেমন কথা। শুধু ভাতের দাওয়াত দিবো?
তানহা : হাহাহা। বউভাতে আমাকে উপস্থিত থাকতে হবে এরকম কথা নাই। আপনি করে নিয়েন।
অর্ণব : তাহলে নাম্বারটা দেন।
তানহা : একদম না। দুই মাস পর দিনাজপুরে আবার পরিক্ষা দিতে আসবো তখন আপনার সাথে দেখা হবে। আর এই নাম্বারটা বন্ধ রাখবো। কারণ আপনার বন্ধুর কাছে নাম্বার থাকতেও পারে।
(আমি চাই না আমার নিজস্ব একটা পরিচয় না হওয়া পর্যন্ত তোমার বাড়িতে যাইতে। জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে, আমারো হচ্ছে কিন্তু এটা আমাকে করতেই হবে। কেননা তোমার পরিবারকে তো আমি চিনিনা। কোন কিছু হয়ে গেলে আমার একটা অবলম্বন দরকার। সেই অবলম্বনটা তৈরী করার পারমিশন তোমার পরিবার আমাকে না দিতেও পারে। তাই আমি বাধ্য!)
অর্ণব : আপনার দেখছি বুদ্ধি আছে। আচ্ছা ঠিক আছে।
(আসলে রাজশাহীতে উনি বড় হয়েছেন। এতিম হলেও অনেক আপনজন এতোদিনে তৈরী হয়ে গেছে। তাদের থেকে বিদায় নেওয়া প্রয়োজন। আর বিষয়টা এতটা সোজা না। এতদিনের সম্পর্ককে রাখে নতুন শহরে নতুনভাবে সব কিছু তৈরী করা এটা একটা কঠিন কাজ। দুই মাস সময় তাই দেওয়াই যায়। ততদিনে তানহাও অনেকটা ধাতস্থ হবে আর এর মধ্যে সবকিছুর জন্য নিজেকে তৈরীও করবে। তাই মানা করলাম না।)
তানহা : ধন্যবাদ পারমিশন দেওয়ার জন্য। ইনশাল্লাহ দুই মাস পর দেখা হবে।
[এজন্যই আমি দুই মাস অপেক্ষা করতেছিলাম]
তারপর তানহাকে রাজশাহীর বাসে উঠায় দিয়ে আমি বাসে দিনাজপুর আসলাম।
এভাবে আমার আর তানহার বিয়ে হয়েছিলো এবং তানহা আর আমি আলাদা হয়ে গেছিলাম।
এখন বর্তমানে,
অর্ণব : এই ছিলো ঘটনা। বুঝলি।
ওরা সবাই অবাক হয়ে তাকায় আছে।
(চলবে….)

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”
carnation e book