The Wedding Dreamer

অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖Part : 32,33,34

By নাহাজুল ইসলাম লাইফ❣

🌙 Romance 🧠 Self-help 💛 Islamic 📘 Story

সম্পূর্ণ গল্প পড়তে চান?

Click here to read the full story.

Islamic গল্প😊

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖

Part : 32

ফেসবুকে ঢুকতেই দেখি তানহা মেসেজ দিয়েছে।

তানহা : আসসালাম অলাইকুম।

অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম। কেমন আছেন?

তানহা : আলহামদুলিল্লাহ! অনেক ভালো আছি😊

অর্ণব : তাই নাকি, মনে হয় চাকরি টা পেয়েছেন?

তানহা : হুম কাল থেকে জয়েনিং এবং কালকে থেকেই ক্লাস নিবো।
(জি মিস্টার অর্ণব। এখন তো নিশ্চিত এটা আপনিই। আর চাকরিটা হইতে আপনি সাহায্য করছেন এটা বুঝতে পারছি।)

অর্ণব : বলেছিলাম না আপনার চাকরি টা হবেই।

এমন সময় বুঝতে পারলাম আব্বু আমার রুমের দিকে আসতেছে। খুব তাড়াতাড়ি আমার মোবাইলটা বালিশের নিচে রাখলাম এবং পাশেই রাখা একটা বই নিয়ে পড়তে শুরু করলাম।

রফিক সাহেব:- এটা কি করতেছিস? আমি তো জানি তুই একদম পড়াশোনা করিস না। একটা বিয়ে করতে বললাম সেটাও তোর দ্বারা হচ্ছে না। এতোদিন লাগে একটা মেয়েকে বিয়ে করে আনতে? তোর কোনো পছন্দের মেয়ে আছে নাকি তাও তো বলিস না। এতোগুলা টাকা বউ আনার নাম করে উধাও করে দিলি। আমরা কি বেঁচে থাকতে তোর বউ দেখতে পারবো না?

অর্ণব :- এটা কি করতেছি মানে? আমি বুঝলাম না, দয়া করে একটু বুঝায় বলো।

রফিক সাহেব :- মনে হচ্ছে একেবারে ছোট বাচ্চা, যেনো কিছুই বোঝে না। মোবাইলটা যে বালিশের নিচে তা আমি দূর থেকেই দেখলাম। আমাকে আসা দেখে মোবাইলটা বালিশের তলে রেখে বই পড়া শুরু করলো। থাপ্পড় লাগাবো একটা।

মনে মনে,
অর্ণব :- এইরে! তার মানে বাবা আগে থেকেই সব দেখে ফেলেছে। কি আর করা, দেখে যখন ফেলেছে দু চারটে বকা খায়েই নেই। রোজ তো এক দুই কেজি শুধু বকাই খাই। এখন কিছু খাইলে সমস্যা কি!

রফিক সাহেব:- কি ভাবছিস বলতো? আচ্ছা তুই কি চাস না যে তোর আম্মু একটু শান্তিতে থাকুক? তোর মা একা একা সব কাজ করে। আমি রান্নার জন্য কাজের বুয়া রাখতে চাইলে সেটাও রাখতে দেয় না। তোর মায়ের অনেক ইচ্ছা যে তর বউয়ের হাতের রান্না খাবে। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে সেটা কখনো বাস্তবে পরিণত হবে না। মনে রাখিস,

পবিত্র কুরআনে আছে,

“পিতামাতার প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করুন।”
-(১৭ঃ ২৩)💕

কি আর বলবো আব্বু। তুমি তো জানো না যে, তোমার ছেলে অনেক আগেই বিয়ে করেছে। দুই মাস আগে। কিন্তু তোমার বউমা তো আসতেই চাচ্ছে না। এখন কি ধরে বানঁধে নিয়ে আসবো? তোমাদের বৌমা তো আমাকে বোঝে না, সে চায় না যে আমি তার পাশে থাকি। ওর মাথায় যে কোন ভূত চাপছে আল্লাহ জানে। এখন দেখি কি করা যায়।

রফিক সাহেব :- কিরে বাবা কি ভাবিস?

অর্ণব :- কই কি? কিছু না তো বাদ দাও, দেখবা সঠিক টাইমে তোমাদের বৌমাকে আমি ঘরে নিয়ে আসব। এখন ঘুমাতে যাও আমিও ঘুমাবো।

রফিক সাহেব : শুধু এতটুকুই বলতে চাই কথা যেনো ঠিক থাকে। নাহলে খুব খারাপ হবে। কেননা

মহান আল্লাহ বলেন,

“ঈমানদারগণ! তোমাদের অংগীকারগুলো পূর্ণ করো।”
-(সূরা মায়েদাহঃ ১)💕

এখন ঘুমা।

আব্বু লাইটটা অফ করে দিয়ে চলে গেল। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে কারণ কালকে আমাদের কলেজে নতুন ইংলিশ টিচার আসবে। মানে আমার বউ আসবে।

মোবাইলে এলার্ম দিতে যেয়ে তানহার নাম্বারের কথা মনে পড়লো। কল দিব না দিবনা করে দিয়েই দিলাম কল। কিছুক্ষণ পর কল ধরে চুপ করে আছে।

অর্ণব :- আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ!

তানহা তাও চুপ করে আছে।

অর্ণব :হ্যালো

তানহা এখনো চুপ করে আছে।

অর্ণব : কি ব্যাপার বয়রা নাকি? এতবার হ্যালো হ্যালো করতেছি কিন্তু কথা বলতেছো না কেন? এই তানহা কি হলো?

তানহা :-জ্বি ওলাইকুম আসসালাম। কে?
(জানি এটা মিস্টার অর্ণব!)

অর্ণব :- কে মানে আমার কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারছো না যে আমি কে?

তানহা :- বুঝতে পারছি?

অর্ণব :- তাহলে কে বললা কেনো? আর আমি এতবার হ্যালো হ্যালো করলাম কথা বললা না কেন?

তানহা :- প্রথমত আমি অচেনা কারো কল ধরিনা। আবার ভাবলাম আমি যে চাকরি পেয়েছি এখান থেকে কল দিল নাকি! সব ভেবে চিন্তে কল ধরলাম।

অর্ণব :- এই জন্যই তো তোমাকে অনেক ভালো লাগে আমার। অনেক খুশি হয়েছি! এইরকম অচেনা নাম্বার থেকে কেউ কল দিলে ধরবে না। আর এখন বুঝতে পারছি যে চুপ করে ছিলা কেনো।

তানহা :- আপনি তো আমার সবকিছু এমনিতেই বুঝেন। তো এটা বলেন যে এত রাতে কল দিলেন কেন? আর আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?

অর্ণব :- এমনি কল দিলাম। কেন বউকে কি কল দিতে পারিনা?

তানহা :- কে বউ? কার বউ? আমি আপনার বউ না। আমার নাম্বার কোথায় পেয়েছেন?
(আসলে একটু আগে আমারো প্রচন্ড ইচ্ছা হচ্ছিলো ওর সাথে কথা বলার। যাক আমার স্বামীটা নিজেই দায়িত্বটা পালন করেছে।)

অর্ণব :- এই তো আজ। মানে ছোট ভাইকে যখন নিয়ে আসতে গিয়েছিলাম তখনই নিয়েছি। আচ্ছা তুমি কি পাগলি নাকি বলতো, একটা ফোনে তো পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখতে পারো তাই না?

তানহা :- আমার ফোনে কখনো পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হয় না। কারণ আমি ছাড়া আমার ফোন আর কেউ ইউজ করে না। বুঝলেন?

অর্ণব :- হুম অনেক ভালো, তাহলে কালকে কলেজে আসবা তাইনা।

তানহা :- হুম কালকে থেকে যাবো। আর একটা রিকোয়েস্ট করি, সেটা হলো যে দয়া করে কলেজের ভিতরে তুমি করে বলবেন না এতে সবাই অন্য কিছু ভাববে।

অর্ণব :- কে কি ভাবলো ওটা তো আমার দেখার বিষয় না। আমার বউকে আমি তুমি করেই বলবো। দেখি কে কি করে।

তানহা :- প্লিজ প্লিজ প্লিজ! দয়া করে একটু আমার কথাটা চিন্তা করেন না। একটু আমার জন্য কষ্ট করে আপনি করে বলেন। ওই বলবেন কি?
(গাধা কোথাকার! আমি কলেজের শিক্ষিকা। আমার একটা সম্মান আছে না। তোমার বউ এটা ঠিক আছে কিন্তু সেখানে তো কিন্তু ওখানে তো বিষয়টা আলাদা। আল্লাহ! এ যেনো বুঝে বিষয়টা। যদিও জানি উনি অনেক বুঝেন আর এই বিষয়টাও বুঝবেন।)

অর্ণব :- এতো আদর করতেছেন কেন?

তানহা : দয়া করে বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করেন।

অর্ণব : ঠিক আছে। তুমি যখন এত করে বলতেছো আর তোমার তো সব ইচ্ছে আমি পূরণ করতে চাই। যদিও তোমাকে আপনি বলতে ভালো লাগেনা তাও বলবো কারণ প্রথম একটা আবদার করলা।

তানহা :- Thank you!
(অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে বুঝার জন্য। তোমাকে পেয়ে আমি আসলেই ভাগ্যবতী)

অর্ণব : ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়ছো?

তানহা : হুম। আপনি?

অর্ণব : আমি এখনি শুইলাম।

……

তানহা : কি বললেন আপনি। আপনার মাথা ঠিক আছে তো।

অর্ণব : মাথা ঠিক থাকবে না কেন? আমি তো আমার বউয়ের এর কাছ থেকেই চেয়েছি।

তানহা : আপনাকে আমি কতবার বলবো এক কথা। আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না। তাহলে কেন দিবো?

অর্ণব : দিবা নাকি বলো? না হলে দরকার নাই।

মনে মনে,
তানহা : বুঝলাম রাগ করেছে। কি আর করার এখন যদি দেই তাহলে বুঝতে পারবে আমিও তাকে ভালবাসি। আমি তো সত্যি তাকে ভালোবাসি। কিন্তু এখন জানানো যাবে না। বললাম,
: এটা করার কোন মানেই হয় না।

অর্ণব : কি বললা! তুমি জানো এর ফযিলত? এটা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। আর এটা একটি সুন্নাহ। আল্লাহর রাসুল রাসূল (সা) প্রায় সময় স্ত্রীদের চুমু খেতেন। এমনকি,

হাদিসে এসেছে,

“রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোযা অবস্থায় চুমু খেতেন।”
-(সহিহ মুসলিম)💕

তানহা : আচ্ছা বাদ দেন। রাতের খাবার খেয়েছেন?

অর্ণব : হুম সাথে কিছু বোকাও খাইছি।

তানহা : কেনো?

অর্ণব : বিয়ের চাপ দিচ্ছে। কিন্তু আমি করতেছি না, এইজন্য গালি দিছে। আমি বলছি পনেরো দিনের মধ্যে বউ আনবো। কিন্তু দেখতেই তো পাচ্ছেন আমার বউ আমাকেই মানে না।

তানহা : আহারে বেচারা। তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নেন তাহলে।

অর্ণব : এমনিতে মেজাজ খারাপ হয়ে ছিলো। তার উপর তুমি আরো খারাপ করে দিলা। ধুর কলটা কাটো।

তানহা : আমি কেনো কাটবো? আপনি কল করছেন আপনি কাটবেন।

অর্ণব : বাব্বাহ। আজকে আমার প্রতি এতো প্রেম জাগছে? এত কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে তে যাবো নাকি তোমার বাসায়?

তানহা : জি না।
বলই কলটা কেটে দিলো। আমিও তাড়াতাড়ি ঘুমায় গেলাম।

পরের দিন,
তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠছি। আজকে দুইটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। প্রথমটা হচ্ছে তাড়াতাড়ি কলেজ যাওয়া।

মিস রাদিয়া:- কি ব্যাপার আজ নবাবজাদা এতো তারাতারি উঠেছে! আর কলেজ যাবার জন্যে এত তারাহুরা কি? কলেজ যাবে নাকি অন্য ধান্ধা?

অর্ণব :- আম্মু তুমিও না। তাড়াতাড়ি একটু খেতে দেও। কলেজ যাবার আগে কিছু কাজ আছে তারপর কলেজের ভিতর যাব।

মিস রাদিয়া :-ওকে দিচ্ছি কলেজের গিয়ে যেন আবার মারামারি করিস না।

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,

“নিরর্থক কাজ থেকে দূরে থাকুন।”
-(২৩ঃ ০৩)💕

বুঝলি?

অর্ণব :- আরে না আম্মু কিছু করবো না।

তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে কলেজ গেলাম।

সবার সাথে দেখা করে সবাই মিলে ক্লাশে গেলাম। আজকে প্রথম ক্লাশটাই তানহার।

প্রধান শিক্ষক আসলো এবং সবার সাথে নতুন মেডামকে মানে তানহাকে পরিচিত করে দিল। তানহা নিকাব পড়ে আছে। তার মানে স্যার তার কথা রাখছে। অবাক হলাম কারণ তানহা সবার চোখের আড়াল দিয়ে আমার দিকেই দেখতেছে। প্রধান শিক্ষক তানহার পরিচয় দিয়ে এবং ক্লাস নিতে বলে চলে গেলেন।

তানহা :। want Attention of all my lovely Students. I m your new English Teacher. Tasniya Islam Tanhaa! Hopefully you guys will enjoy my class. I will try my best Inshallah!

আমার বউটা দেখতেছি ভালোই ইংরেজী পারে।

রিপন : কিরে অর্ণব ইংলিশ টিচার তোর দিকে তাকিয়ে কি কি সব ইংরেজী বলে, কিছুই তো বুঝতাছি না!

অর্ণব :- আরে দুর বেটা আমার দিকে তাকেবে কেন? তোর দিকে মনে হয় তাকাইছে।

রিপন:- আমার দিকে কেন তাকেবে? যাই বলিস কথা বার্তা শুনে মনে হচ্ছে মেডাম অনেক শিক্ষিত। আর কঠোর পর্দাশীল।

মনে মনে,
অর্ণব : দেখতে হবে না কার বউ😁

গালে হাত দিয়ে তানহার দুই চোখের দিকে আমি তাকিয়ে আছি। কি সুন্দর করে পড়াচ্ছে।

কাছে এসে,
তানহা : আজকে কি তুমি রাতে একটু আমার বাসায় থাকবা?

অর্ণব : না পারবো না। কিন্তু কেনো?

তানহা : এমনি, তুমি যাবানা কেন?

অর্ণব : পার্সোনাল সমস্যার কারণে যেতে পারবোনা।

তানহা : ওহ!

অর্ণব : মন খারাপ করতেছো কেনো?
.
তানহা : তুমি না গেলে আমার খালি খালি লাগে, একা একা লাগে, তাই মন খারাপ করতেছি।
.
অর্ণব : তোমার “তুমি তুমি” বলাতে একটা আলাদা মায়া আছে।
.
তানহা : তুমি দিনদিন খুব দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো…রাতে আসো মজা দেখাচ্ছি।
.
.
ক্লাশে জেগে জেগে তানহাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেছি🤐

স্বপ্ন ভাঙ্গলো তানহার কথায়,
তানহা : বাপরে কি মনোযোগ দিচ্ছেন! এমন করে প্রতিটা ক্লাস করলে তো আপনি নোবেল পুরুষ্কার পাবেন।

হকচকিয়ে,
অর্ণব : ক..ই কই না তো

তানহা : অনেক মনোযোগ দিয়েছিলেন আমার ক্লাসে তাইনা?

অর্ণব : নাতো। কেনো?

তানহা : তো কি করছিলেন যে সবাই চলে গেছে বুঝতেই পারেন নি?

চারপাশে তাকায় দেখলাম আসলেই ক্লাশ ফাঁকা। কোন ফাঁকে যে তানহাকে দেখতে দেখতে ক্লাস টাইম শেষ হয়ে সবাই বাইরে গেছে বুঝতেই পারি নি। বললাম,
: তোমাকে দেখতেছিলাম আর তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেছিলাম।

তানহা : পাগল একটা।
একটু হেসে ক্লাস থেকে চলে গেলো।

আমি তো তানহাকে নিয়ে গোলক ধাঁধায় পড়ে গেছি। এই মেয়ে আসলে কি চায়!

আমিও বেড় হয়ে মশিউরদের কাছে গেলাম,
অর্ণব : কি রে তোরা আমাকে রাখে চলে আসলি কেনো?

রিপন : ক্লাস থেকে বের হবার সময় তোকে ডাকলাম যে বাইরে চল। কিন্তু তুই শুনলি না।

নেহা : আমরা মনে করলাম তুই বোধহয় বেড় হবি না তাই চলে আসলাম।

অর্ণব : আচ্ছা বাদ দে।

বেলাল : কি রে একলাস তুই বেলে ভালো হয়ে গেছিস। কিন্তু তোর মধ্যে তো তেমন পরিবর্তন দেখতেছি না।

একলাস : তে আমি কি সবাইকে দেখায় বেড়াবো?

মশিউর : একলাস ঠিক বলছে। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে বা অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বা দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কোন ইবাদত করা হলে তাকে ‘রিয়া’ বলা হয়।

নেহা : আর রিয়া ছোট শিরকের পর্যায়ভুক্ত। কেননা

হাদিসে এসেছে,

রসুল (সা) বলেন,
“আমি তোমাদের উপর সর্বাপেক্ষা ভয় করছি ছোট শিরক সম্পর্কে।”
অতঃপর এ সম্পর্কে সাহাবীগণ রাসূল (সা)-কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসুল, ছোট শিরক কী?
তিনি বলেন, “তা হল রিয়া তথা লোক দেখানো কর্ম বা ইবাদত।”
অতঃপর রসুল (সা) তার ব্যাখ্যা করে বলেন, “কোন মানুষ সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়াল, যখন দেখল লোকজন তাকে দেখছে তখন সালাতকে আরও সুন্দরভাবে আদায় করল।”
-(ইবনে মাজাহ্‌, হাকেম-সহীহুল জামে হা/১৫৫৫)💕

বেলাল : হুম বুঝছি।

অর্ণব : আর একলাস শুন তুই এখনো প্রাকটিসিং মুসলিমাহ। তুই হয়তো তোর মাঝে বড় কোন পরিবর্তন এখনো করে উঠতে পারিস নি। কিন্তু একটু ভেবে দেখ, তুই আগে হ্যালো, ওয়াও, জোস, থ্যাংক্স, ওহ মাই গড ছাড়া যেখানে কথাই বলতে পারতি না সেখানে এখন তুই খুব সহজেই সালাম, মাশা-আল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, ইনশাআল্লাহ, ইন্নালিল্লাহ বলে ফেলতেছিস তাই না?

একলাস : হুম। এগুলা এমনিতেই মুখে চলে আসতেছে।

অর্ণব : এটাই তোর উন্নতি।

(একলাস প্রশান্তির হাসি দিলো)

অর্ণব : ইসলামের ভিতর তুই নিজেকে ধরে রাখ দেখবি কত সহজে দ্বীনের দিকে চলে আসছিস। ইসলামকে কঠিন করে একদমই ভাববি না, ইসলাম খুবই সহজ।

একলাস : ঠিক আছে।

নেহা : ইয়া আল্লাহ, তুমি আমাদের সকলের অন্তরকে দ্বীনের উপর সুদৃঢ় করে দাও, আমাদেরকে দ্বীনের জন্য কবুল করে নাও।

সবাই একসাথে : আমিন।

তারপর আরো কিছুক্ষণ ওরা গল্পগুজব করলো। কিন্তু আমি ওদের থেকে বিদায় নিয়ে সোজা আব্বুর অফিসের দিকে হাটা দিলাম। আজকের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজটার জন্য।

যাচ্ছি আর ভাবতেছি,

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖

Part : 33

আব্বুর অফিসের দিকে হাটতেছি আর ভাবতেছি এখনকার যে সামাজিক পরিস্থিতি, তাতে মেয়েরা রাস্তাঘাটে নিরাপদে নেই। আর তানহা এই শহরে একেবারে নতুন। তাই ওর নিরাপত্তার বিষয়টা আগে মাথায় রাখতে হবে। আল্লাহ না করুক কিছু একটা যদি হয়ে যায় তাহলে? আমি ভরসা পাচ্ছি না। তার চেয়ে তানহা কে বাড়িতেই আনতে হবে। তাই তানহাকে কল দিলাম। কয়েকবার দেওয়ার পরও ধরে নি। মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছিলো। তারপর শেষ একবার চেষ্টা করলাম। এবার ধরলো,
তানহা : আসসালাম অলাইকুম।

অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।

তানহা : কি জন্য কল দিলেন?

অর্ণব : আগে বলো কল ধরো না কেনো? এত দেরী লাগে?

(স্বাভাবিক কথা বলা যাবে না। নইলে বুঝতে পারবে আমিও ওকে ভালোবাসি।)
তানহা : ক্লাশে ছিলাম। যা বলার তাড়াতাড়ি বলো। আর আপনি কল দিলেই যে ধরতে হবে এমনতো কোন কথা নেই।

অর্ণব : মানে কি?

তানহা : মানে আমার মাথা আপনার মুন্ডু কল দিছেন কেনো সেটা বলেন!

তারপর আগে যা যা ভাবলাম সেগুলা সব বললাম।
অর্ণব : তাই তোমার নিরাপত্তার সাথে আমি কোন আপোষ করতে পারবো না। এজন্য আমি চাচ্ছি তুমি আমার বাসাতে চলে আসো।

(এতটা দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন স্বামী ভাগ্যবতীদেরকেই মিলে। আমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান। কিন্তু আমি আগে নিজের পায়ে দাঁড়াবো তাদের যোগ্য হয়ে উঠবো তারপর তাদের বাড়িতে গিয়ে উঠবো। এখন না।)
তানহা : আমি দুধ খাওয়া শিশু নই। আমার খেয়াল আমি রাখতে পারবো। আমার চিন্তা আপনাকে করতে হবে না।

বলেই ফোনটা কেটে দিলো। মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। আজকে নাজিমকে আনার সময় এর বদলা সুদে-আসলে নিবো। তারপর আবার আব্বুর অফিসের দিকে হাটা শুরু করলাম।

অফিসে যায়ে সারাদিন ব্যবসার কাজে আব্বুকে সাহায্য করলাম। বিকালবেলা,

অর্ণব : ঠিক আছে আব্বু আমি গেলাম এখন। নাজিমকে আবার সন্ধ্যায় আনতে হবে।

রফিক সাহেব : ঠিক আছে যা। এরকম মাঝে মাঝে ব্যবসার কাজে আমাকে সাহায্য করতে আসিস।

অর্ণব : মাঝে মাঝে না, এখন থেকে প্রতিদিন আসবো।

রফিক সাহেব : তাই নাকি। আজকে সূর্য কোন দিকে উঠছে?

অর্ণব : বাদ দেও তো ওইগুলা। এখন টাকা দেও।

রফিক সাহেব : কিসের টাকা? একদিনের টাকা দিতে হবে তোকে? এই তোর উদ্দেশ্য?

অর্ণব : হুম। আর একদিনের না। এই মাসের আমার বেতনের এডভান্স আমার আজকেই দরকার। আর কিছু টাকা ধার দাও।

রফিক সাহেব : কেনো?

অর্ণব : তুমি দেও না। এতো প্রশ্ন করো কেনো? আমি তো আমার প্রাপ্য চাচ্ছি। আর ধারের টাকাটা লিখে রাখো। সামনে মাসের বেতন থেকে কেটে দিও। কেননা,

পবিত্র কুরআনে আছে,

“ঋণ গ্রহণ করলে তা লিখে রাখুন।”
-(০২ঃ ২৮২)💕

তারপর আব্বু আমাকে কিছু টাকা দিলো। সালাম দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম।

হ্যাঁ। এভাবেই আব্বুর ব্যবসায় সাহায্য করে যা পাবো তা দিয়ে ধার দেনা শোধ করতে হবে। আজকের টাকাটা নিলাম তানহার ভাড়া দেওয়ার জন্য।

বাসার ভিতর ঢুকতেই আম্মু জিজ্ঞাসা করলো,
মিস রাদিয়া : আসসালাম অলাইকুম। তা নবাবজাদা কি বিয়ে করবে না?

অর্ণব : হ্যাঁ করবে।

মিস রাদিয়া : আমি আমার বউমাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছি আর তোর কি আমার প্রতি একটুও দয়া মায়া নাই?

অর্ণব : সময় হলে পাবা বললাম তো।

মিস রাদিয়া : তা সময়টা কখন হবে?

অর্ণব : হবে তাড়াতাড়িই হবে। কথা যেহেতু দিছি আনবো ইনশাল্লাহ।

মিস রাদিয়া : মনে যেনো থাকে বিষয়টা। তুই নিজে কথা দিয়ে একটা দায়িত্ব নিছিস। আর এটা একটা আমানত। যার বরখেলাপ হলে এর পরিনাম ভালো হবে না। কেননা,

হাদিসে এসেছে,

“আবু যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে কোন দায়িত্বে নিয়োগ করবেন না? তখন তিনি আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন, হে আবু যার! তুমি দুর্বল মানুষ। আর এটা হচ্ছে এক আমানত। আর এ নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব ক্বিয়ামতের দিন লাঞ্ছনা-গঞ্জনার কারণ হবে। অবশ্য যে হক সহকারে এটাকে গ্রহণ করে এবং এ দায়িত্ব গ্রহণের ফলে তার উপর অর্পিত দায়-দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে তার কথা আলাদা’।”
-(মুসলিম হা/১৮২৫; মিশকাত হা/৩৬৮২)💕

তাই সাবধান। বুঝলি?

অর্ণব : হুম বুঝছি।

বলেই রুমে চলে গেলাম।

তানহার উপর খুব রাগ হচ্ছে। আজকে ওর জন্য কি অপেক্ষা করতেছে তা সে নিজেও জানে না। ভাবতে একটু লজ্জাই লাগতেছে। কিন্তু সময় কাটতেছেনা আর সন্ধ্যাও হচ্ছে না।

অপেক্ষার পালা শেষ হয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। আজকে একটু ভালোভাবে তৈরী হলাম। সুগন্ধি লাগালাম। নবীজি (সা) সুগন্ধি অনেক পছন্দ করতেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ!

হাদিসে এসেছে,

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চারটি বস্তু সব নবীর সুন্নত। আতর, বিয়ে, মেসওয়াক ও লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা।
-(মুসনাদে আহমাদ)💕

তারপর রওনা দিলাম তানহার বাসার উদ্দেশ্যে। এই প্রথম ওর বাসায় যাইতে আমার মনের ভিতর ভয় কাজ করতেছে।

তানহার বাসার সামনে যাইতেই দেখি বাড়িওয়ালা আসতেছেন।
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম চাচা।

বাড়িওয়ালা : অলাইকুম আসসালাম। তানহার সাথে দেখা করতে যাচ্ছো?

অর্ণব : হুম চাচা। কালকের ব্যবহারের জন্য দুঃখিত। তানহার ব্যাপারে খারাপ কথা বলছিলেন তো তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি।

বাড়িওয়ালা : আরে না বাবা। আমার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। আমিই না জানে শুনে খারাপ মন্তব্য করছি।

অর্ণব : চাচা এই নেন টাকাটা। আমি জানতাম না যে তানহার কাছে টাকা নেই। তাই এমনটা হলো। আর

হাদিসে এসেছে,

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, সচ্ছল ব্যক্তির (ঋণ পরিশোধে) টালবাহানা করা অন্যায়।
-(সহিহ বোখারি: ২৪০০)

বাড়িওয়ালা : ধন্যবাদ তোমাকে। আর আমার টাকাটা খুব প্রয়োজন ছিলো। তাই চাচ্ছিলাম।

অর্ণব : হুম চাচা বুঝছি।

বাড়িওয়ালা : আর বাবা! তানহা মেয়েটা অনেক ভালো। ওকে যত্ন করে রাখিও। এতিম মেয়েটাকে যেন কষ্ট দিওনা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তুমি এতিমের প্রতি কঠোর হয়ো না।”
-(সুরা : দুহা, আয়াত : ৯)💕

অর্ণব : জি চাচা। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো যাতে তানহা সুখী থাকে।

বাড়িওয়ালা : আসসালাম অলাইকুম। আজ তাহলে আসি।

অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।

বাড়িওয়ালা চলে গেল। আমি বাসার ভিতরে ঢুকলাম। এই প্রথম আমার বুকের বাম পাশে ধুকধুনাকি শুরু হয়েছে। নিজেকে নার্ভাস লাগছে। নাজিম আসে দরজা খুলে দিলো। ভয়ে ভয়ে বাসার ভিতরে ঢুকলাম।

তানহা আমার ছোট ভাইকে তার পাশে নিয়ে অংঙ্ক করাচ্ছে। আমি বললাম তানহা এদিকে আসো তোমার সাথে কথা আছে।

মনে মনে,
তানহা : কি বেপার আজ একেবারে তামিল সিনেমার নায়কের মতো তৈরি হয়ে আসছে। আল্লাহ! পুরা ক্রাশ খায়ে গেলাম। ইয়া আল্লাহ আমার স্বামিকে সব মেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখিও।

অর্ণব :- কি হলো কথা কানে যায়না তোমার?

তানহা :-জ্বি যাচ্ছি…

অর্ণব :- হুম তারাতারি তোমার রুমের ভিতর আসো।
বলেই রুমের ভিতর গেলাম।

তানহা :- নাজিম তুমি অংঙ্ক গুলা দেখ,আমি তোমার ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলেই আসতাছি।

নাজিম:- একটু না ফুলটাই বলে আসেন।

(আমি তো শুনে অবাক! কি আর বলবো। ভাইটার মতো পিচ্চিটাও মহা শয়তান।)
তানহা : থাপ্পড় খাবা৷ পড়াতে মন দেও।

বলেই রুমের দিকে গেলাম। আমার স্বামিটা অনেক্ষণ থেকে বসে আছে।

অর্ণব :- এতোক্ষণে আসার টাইম হলো?

তানহা :- আপনার ছোট ভাই যে শয়তান, তাকে মেনেজ করে তারপর আসলাম।

অর্ণব :-ভালো করছো এখন আমার পাশে এসে বসো।

তানহা :- আপনার পাশে বসবো কেনো? আর বাইরে থেকে সব দেখা যায় আপনার ছোট ভাই দেখে ফেলবে।

তাড়াতাড়ি যায়ে দরজাটা লাগায় দিলাম।

তানহা : এই দরজা লাগাইলেন কেনো?
বলে দরজা খুলতে যাবো…

……

আমি অর্ণবকে গায়ের সব শক্তি ধাক্কা দিয়ে সরায়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে, দিলাম দৌড় আর দৌড়াইতে দৌড়াইতে বললাম,
: কলেজ লাইফ শেষ করতে পারে নাই, আবার স্বামীর অধিকার নিয়ে আসছে।

তাড়াতাড়ি দরজা খুলে,
: নাজিম অং.. অংঙ্ক গুলা কি দেখা হয়েছে..?

নাজিম : জি ভাবি সব গুলা অংঙ্ক করা শেষ। আর এক এক করে সব গুলা পৃষ্টার অংক গুলা দেখলাম।

(কি একটা পিচ্চি শয়তানরে বাবা। এদের দুই ভাইয়ের কি লজ্জা নাই? আমি শিক্ষিকা হই। আর আমার সাথে এগুলা কি শুরু করছে। উনি ঐ দিকে স্বামীর অধিকার নিয়ে নবীজি (সা) এর সুন্নত পালন করতে আসতেছেন আর ইনি ভাবী ডাকার অধিকার।)
তানহা :- ভাবি মানে? তোমার মাথা কি ঠিক আছে নাকি?

নাজিম:- না, আপনি এখনো ভাবি হননি তবে আমার ভাইয়ার বৌ হবেন জানি।

(রাগের সাথে সাথে হাসিও পেলো। পিচ্চু শয়তান! তুমি তো জানেনা যে আমাদের বিয়ে আগেই হয়েছে😁)
তানহা : তোমার ভাইয়ের বৌ হবো মানে কি? মার খাবা?😡

নাজিম:- মানে হলো আমার ভাইয়ার সাথে রুমে গিয়ে দরজা লাগালেন যে।

(ইশ! এটার কথাতো ভুলেই গেছিলাম। অর্ণব ফাযিলটার জন্য এগুলা হচ্ছে😡)
তানহা :- কোই…ই কি, আমি তো খালি কথা বলছিলাম তোমার পড়া সম্পর্কে।

নাজিম:- ওহহ তাই, তো আপনার হিজাব কই? চুলগুলা এরকম হয়ে আছে কেনো?

(লজ্জায় আমি শেষ। আমি ভুলেই গেছিলাম আমার হিজাব খুলে গেছিলো। অর্ণবের উপর মেজাজটা যে কি পরিমানে খারাপ হচ্ছে তা বলতে পারবো না। কালকে থেকে বাড়িতে ঢুকতে দিবো না😡)
তানহা : এই ছেলে মুখ সামলে কথা বলো ভুলে যেয়না আমি তোমার টিচার।

আমি রুম থেকে বেড় হয়ে,
অর্ণব : কি ব্যাপার বাইরে হইচই কেনো। মাছের বাজার পাইছো নাকি?

তানহা : দেখেন না আপনার ছোট ভাই কি সব বলতেছে। আমি নাকি তার ভাবি!

অর্ণব :- ঠিকি তো বলেছে।

রাগে,
তানহা :-কিহ😡😡

অর্ণব :- থুক্কু🤐… নাহ..দুঃখিত। কি না কি বলতে কি বলে ফেলতেছি।
নাজিমের দিকে তাকায় একটু রাগী কন্ঠে,
: কিরে কি বলছিস এই সব😡… থাপ্পড় মারে গাল লাল করে দিবো। উনি তোমার টিচার হন না? এগুলা বেয়াদবি কখনো করবা না।

নাজিম:- Sorry ভাইয়া!

অর্ণব :- ব্যাগের ভিতর বই গুলা ঢুকায় নিয়ে সোজা বাড়ি যাবার জন্য রাস্তা ধর নাইলে খবর আছে।

নাজিম সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে গেটের বাইরে যেতেই তানহা আমার কাছে এসে রাগে,
তানহা :- এই আপনি কি বলুন তো?

অর্ণব :- আমি তো মানুষ।

তানহা :- নাজিমের সামনে কি করতে ধরছিলেন ওসব? আর একটু হলেই ও বুঝতে পারতো আমি তার সত্যি সত্যি ভাবি হই😡😡

(যাক তানহা তাহলে স্বীকার করলো সে আমার বউ। কিন্তু এখন এটা নিয়ে কথা বলা যাবে না। নইলে মূহুর্তে সুর পাল্টাবে।)
অর্ণব :- কিহ? ওয় এখনো যানে নাই, যে তুমি তার ভাবি? দাঁড়াও ডাকছি। নাজিম ইনি তোর ভ…

কথা বলা শেষ নাই হইতেই তানহা আমার মুখ চেপে ধরছে। আমি এই চান্স আর ছাড়ি।

…..

হাতটা তাড়াতাড়ি সরিয়ে নিয়ে।

মনে মনে,
তানহা : কি কান্ড! আমি করতে চাই আর সে কি করে ফেলি🙈.. আর ওরও লজ্জা বলে কিছু নাই😡

অর্ণব :- তানহা?

তানহা অন্যদিকে তাকায় চুপ করে আছে।

অর্ণব :- শুনোনা।

(ইসসস! মুহুর্তটা যে কত রোমান্টিক তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আর উনার মুখে “তানহা” ডাকটা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।)
তানহা :- কি?

অর্ণব : দারুণ মজা লাগছিলো আর মিস্টি। জীবনে প্রথমবার এরকম অভিজ্ঞতা।

তানহা :- হাহা। ঐটা মিষ্টি হয় এই প্রথম শুনলাম। আর আমারো প্রথমবার ছিলো। শুনেন আপনি আজ যেটা করলেন দ্বিতীয়বার যদি এমনটা করার চেষ্টা করেন তাহলে কিন্তু অনেক খারাপ হবে বলে দিলাম। আর দরজা লাগানোর জন্য নাজিম সন্দেহ করছে।

অর্ণব :- ও করুক সমস্যা নাই আর তুমি তো আমার বউ। আর আজকে থেকে প্রতিদিন একটা করে বরাদ্দ। তুমি না করতে পারবে না।

তানহা :- হুম! মামার বাড়ির আবদার, উনি চাইল আর আমি দিয়ে দিলাম। কালকে থেকে বাড়িতে ঢুকতে দিবো না। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবেন। এখন যান নইলে নাজিম আবার উল্টাপাল্টা ভাববে।

অর্ণব : ইসস! দেখা যাবে৷ আমি গেলাম। নাজিমকে সামলাইতে হবে। আসসালাম অলাইকুম।

তানহা :- অলাইকুম আসসালাম।
(আজ থেকে অর্ণবের সাথে এভাবে মেলামেশা করা যাবে না। এভাবে মেলামেশা করলে বুঝতে পারবে আমিও তাকে ভালবাসি। তবে আজকের মুহুর্তগুলা আমার জীবনের বেস্ট ছিলো। এজন্য আমি নিজেকে সংযত রাখতে পারিনি। ইয়া আল্লাহ শিঘ্রই যেনো আমি আর অর্ণব এক সাথে থাকতে পারি তার ব্যবস্থা করে দেও। আর তোমাকে শুকরিয়া এমন স্বামী দেওয়ার জন্য।)

বাইরে আসে নাজিমকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
অর্ণব : নাজিম শুন।

নাজিম : হুম ভাইয়া বল।

অর্ণব : তোর তানহা মেডাম আসলেই তোর ভাবী হয়।
তারপর ওকে পুরো ঘটনার সার সংক্ষেপ বললাম।

নাজিম : কি বলিস ভাইয়া। তাহলে বাড়িতে বলিস নি কেনো?

অর্ণব : কারণ আছে পরে বলবো৷ আর তোকে এজন্য বলতেছি কারণ তুই আমাদের দরজা লাগানো আবার আগের দিনগুলাতে রুমের ভিতর তানহা আর আমার একসাথে যাওয়াটাকে অন্য কিছু ভাবতে পারিস। যার ফলে তোর মনে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। তুই ভুল ধারনা পোষণ করে ভবিষ্যতে না জেনে পাপ কাজে জড়াইতে পারিস। মনে রাখবি,

হাদিসে এসেছে,

অন্যের ঘরে উকি-ঝুকি না মারা, অন্যের ঘরে থাকাবস্থায় অন্যের রুমে দূর থেকে না তাকানো, বেগানা নারী/পুরুষের সাথে ঘরে একাকী অবস্থান না করা।
-(মুসলিম ২১৫৬)💕

রক্তসম্পর্কহীন-নন মাহরাম কারো সাথে কোথাও, কোনো ঘর বা রুমে পর্যন্ত, একাকী অবস্থান করা হারাম। আমরা স্বামী-স্ত্রী তাই একসাথে ছিলাম। বুঝলি?

নাজিম : হুম ভাইয়া বুঝছি।

অর্ণব : আর শুন এই কথাটা গোপন রাখিস। সময় হলে সবাইকে জানাবো। কারো কথা গোপন রাখা ভালো। আর অন্য কারো দোষত্রুটি গোপন রাখা সুন্নত। কেননা,

হাদিসে এসেছে,

যে অন্যকারো দোষত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ অবশ্যি কেয়ামতের দিন তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন।
-(সহিহ মুসলিম)💕

বুঝলি?

নাজিম : ঠিক আছে ভাইয়া আমি কাউকে বলবো না।

অর্ণব : তোর তানহা ম্যাডামকেও বলবি না যে তুই জানিস।

নাজিম : ঠিক আছে।

তারপর নাজিমকে বাড়িতে দিয়ে আসে আমি একটা কাজে বাড়ি থেকে বেড় হলাম। রাস্তায় হাটতেছি আর ভাবতেছি…

Islamic গল্প😊

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”💖

Part : 34

রাস্তায় হাটতেছি আর ভাবতেছি, কি হলো আজকে! যাক মুহুর্তগুলা অসাধারণ কাটছে। হঠাৎ একটা কথা মনে পড়লো। মনে পড়তেই আমি রাস্তায় দাঁড়ায় গেলাম। তাহলে কি এইজন্য তানহা এগুলা করতেছে?

আমি কলেজে পড়ি এজন্য?
ও কি ভাবতেছে আমি ওর থেকে ছোট? একসাথে অনেকগুলা প্রশ্ন আমার মাথায় আসলো।

হায় আল্লাহ! এই বোকা মেয়েটা একবারের জন্য আমার সাথে কথা বলবে না? আমার সাথে কথা না বলে উল্টাপাল্টা ভাবতেছে। হ্যান্ডেল একটা। তানহার উপর মেজাজটা খুব খারাপ হচ্ছিলো।

কিন্তু এখন এগুলা ভাবার সময় নাই। ওর সাথে বসে এটা নিয়ে কথা বলতে হবে, মানে সত্যিটা বলতে হবে। রাগে গজগজ করতে করতে আবার হাটা দিলাম। এখন তানহার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। মানে তানহার জন্য একটা রিকশা খুজতে হবে যে রোজ রোজ তানহাকে কলেজ নিয়ে যাবে আবার কলেজ থেকে নিয়ে আসবে। আর ভাড়াটা একবারের মতো দিয়ে দিবো। কিন্তু এখন রিকশা খুজাটাই ব্যাপার। আমি একটা রিকশা ওয়ালাকে চিনি তাই উনার কাছেই যাচ্ছি যদি উনি রাজী হন।

দেখতে দেখতে রিকশাচালকের বাসায় পৌছালাম তারপর,
অর্ণব : চাচা বাড়িতে আছেন?

বাড়ি থেকে বের হয়ে,
চাচা : ওহ বাবা তুমি, আসো ভিতরে আসো।
(ইনিই রিকশা চালান)

অর্ণব :- আসসালাম অলাইকুম। না চাচা আজ না অন্য একদিন ভিতরে আসবো।

চাচা :- তো বাবা কি মনে করে এসেছ।

অর্ণব :-আপনার একটু সাহায্য লাগতো।

তারপর সব বললাম কখন কখন আনতে হবে নিয়ে যেতে হবে তানহাকে।

চাচা : ঠিক আছে আমি রাজি।

অর্ণব : আর চাচা মাসের প্রথমেই আমি মাসিক ভাড়া একসাথে মিটিয়ে দিব। এই মাসে একটু সমস্যার কারনে এডভান্স দিতে পারতেছি না। সামনে মাস থেকে ইনশাল্লাহ দিবো।

চাচা :- আরে বাবা কি বলছো তুমি যে উপকার করেছো সে ঋন আমি কখনো শোধ করতে পারবো না। তোমাকে টাকা দিতে হবে না। আমি মামনিকে সঠিক টাইমে কলেজে পৌঁছে দিব এবং সঠিক টাইমে তোমার বাসায় নিয়ে যাব।

অর্ণব :- এটা আপনার পারিশ্রমিক। এটা দিতে আমি বাধ্য। কেননা,

হাদিসে এসেছে,

আল্লাহ তায়ালা বলেন, কিয়ামতের ময়দানে আমি তিন ধরনের ব্যক্তির প্রতিপক্ষ হব
এক) যে ব্যক্তি আমার নামে কথা দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করলো।
দুই) যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে তার মূল্য আহার করলো।
তিন) যে ব্যক্তি কোন শ্রমিক নিয়োগ করে তার কাছ থেকে পূর্ণ কাজ আদায় করে নিলো কিন্তু তাকে তার পারিশ্রমিক দিল না।
-{সহীহ বুখারী,হা. ২২৭০}💕

আর আপনার বউ মা আমার বাসায় থাকেনা।

তারপর উনাকে নিয়ে যায়ে বাসাটা দেখায় আনলাম।

তারপর উনি বললেন,
চাচা :- ওকে বাবা আমি কালকে বউমার জন্যে সাড়ে আটটা থেকে দাঁড়িয়ে থাকবো। যেহেতু কালকে প্রথম দিন।

অর্ণব :-হুম চাচা ধন্যবাদ আপনাকে। তানহা পনেরো বিশ মিনিট আগেই কলেজ যাবার জন্যে বের হয়। কালকের পর থেকে তানহাই আপনাকে সব বলবে ইনশাল্লাহ। আর কলেজ মোড় তো চিনেনই ওই খানে নিয়ে যাবেন। আর কলেজ ছুটি হয় দুপুর একটায়।

চাচা :- ইনশাল্লাহ। আমি চেষ্টা করবো সব সময় সঠিক টাইমে পৌঁছানোর।

অর্ণব :- আর চাচা আপনার কাছে কি ফোন আছে?

চাচা : হুম। আছে কেনো?

অর্ণব : আমার নাম্বারটা সেভ করে নেন।

সেভ করে দিয়ে বললাম,
: যেকোনো ধরনের বিপদ হলে তাড়াতাড়ি আমাকে কল দিবেন।

চাচা : ঠিক আছে বাবা।

অর্ণব : তাহলে আজকে আসি। আসসালাম অলাইকুম।

চাচা : অলাইকুম আসসালাম।

বাড়ির পথে হাটতেছি আর ভাবতেছি, সাহায্য করার কত ফযিলত। উনার অপারেশন করার টাকা ছিলো না। তাই আমি আব্বুকে বলে উনার টাকার ব্যবস্থা করে দিছিলাম। যার ফলে আজকে উনি আমার বিপদে কাজে আসছেন। কিন্তু আজকাল মানুষ স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। আমরা মুসলিম ঠিকিই কিন্তু কাজ কর্মে কখনোই মুসলিম না, ইসলামের কোন আদর্শ বহন করিনা। মানুষ তো মানুষকে সাহায্য করবে একমাত্র আল্লাহর জন্য, যেখানে কোন বিনিময় থাকবেনা। আর আমাদের দোষ হলো কাউকে সাহায্য করলে তার থেকে সাহায্য আশা করা । তার থেকে সাহায্য না পেলে তাকে খোটা দেয়া। এটা একদমই করা যাবে না। সহযোগিতা এমন জিনিস যে, কোন মানুষকে সহযোগিতা করতে ধন লাগে না, সুন্দর একটা মন ও সাহাবীদের আদর্শ থাকা লাগে। আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুক।

বাড়িতে যায়ে এশার নামাজ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর হন্য গেলান।

ঘুমানোর আগে ফেসবুকে ঢুকলাম। দেখলাম তানহা মেসেজ দিয়েছে,
তানহা : আসসালাম অলাইকুম। কেমন আছেন?

অর্ণব :- অলাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনি?

তানহা :- আপনাকে মেসেজ দিয়েছি এক দিন আগে আর আপনি এখন রিপ্লাই দিচ্ছেন। এটাই বুঝি লেখকদের স্বভাব?

অর্ণব :- আরে না। ইদানিং একটু ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। পড়াশুনা, তারপর মাঝে মাঝে অফিসে যাওয়া।

তানহা :- আপনি জব করেন নাকি?

অর্ণব :-জি না। শুধু বাবার ব্যবসাতে মাঝে মাঝে সাহায্য করি আর সবাইকে চেহারাটা দেখায় আসি। ইদানিং প্রতিদিন যেতে হচ্ছে।

তানহা :- হাহাহা। তা আপনার মুখটা আমায় দেখাবেন না?
(যদিও জানি এটা আমার অর্ণব।)

অর্ণব :-একদিন চমকে দিব, বলেছিলাম না।

(হাহা। তুমিই একদিন চমকে যাবা)
তানহা :- আমার তো মনে হয়না, যে সে সময় আসবে।

অর্ণব :-আরে একদিন ঠিকি আসবে। আচ্ছা আপনাকে আমি তুমি করে বলতে পারি।

তানহা :- মতলব টা কি? প্রেম করার ধান্ধা নাকি।

অর্ণব : আপনি তো আগের বার রাগে গেছিলেন এগুলা কথার জন্য। এবার আবার নিজে থেকে বলতেছেন, ব্যাপারটা কি? এত পরিবর্তন?

(কারণ এখন জানি যে আপনিই আমার অর্ণব। বুঝলেন মিস্টার)
তানহা:- আপনার মতো লেখকের সাথে প্রেম বা বিয়ে হলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম তাই😜

(ব্যাপার কি? তানহা এরকম সরল হয়ে গেলো কেনো? আরো একটু বাজিয়ে দেখি)
অর্ণব :-তাই নাকি,দোয়া করি আল্লাহ যেন ঠিক আমাকেই তোমার কাছে পাঠাইয়া দেয়😜

তানহা :- সেটা আর সম্ভব না।জানেন আমার না খুব ইচ্ছা ছিল, আমার স্বামি সবদিকেই পারদর্শী হবে। সে অনেক ভালো ভালো ইসলামিক গল্পও লিখবে, তার আইডির সাথে আমি ওপেন রিলেশনশিপ বা মেরিড দিতাম।
(যদিও আমার স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে। আল্লাহকে অনেক অনেক শুকরিয়া।)

(যাক তার মানে তানহা মজা করতেছিলো)
অর্ণব :- কেন নিজেকে ফেমাস করতে চাও নাকি?😏

তানহা :- হাহাহা। আরে না।

অর্ণব : আপনার স্বামী কি গল্প লিখতে জানেনা?

তানহা : আপনাকে বলবো না।

অর্ণব :-বললেই কি আর না বললেই কি। আমি তো আর আপনার সাথে প্রেম করব না, কারণ আমার স্ত্রী আছে! বুঝলেন?😏

তানহা : আমি জানি। কারণ ঐদিন বলছিলেন আপনার কেউ একজন আছে। তাকে নিয়েই গল্পগুলা। আসলেই উনি অনেক ভাগ্যবতী।
(আমি জানি যে “উনি” -টা হচ্ছি আমি😎)

অর্ণব : মোটেও না। আমার বৌ আমার সাথে থাকেনা এবং আমাকে ভালোও বাসেনা।

(আপনার বউ আপনাকে অনেক ভালোবাসে। শুধু একটু সময় দিন নিজেকে গুছায় নেওয়ার মিস্টার অর্ণব)
তানহা :- আপনার মতো মানুষকে স্বামী হিসেবে পেয়েছে তার তো নিজেকে ধন্য মনে করা উচিত😜.. আমার স্বামী এমন হলে নিজে তার সব কথা শুনতাম সে যা যা বলতো তাই করতাম😁

(আমার বউ মনে হয় লেখকদের অনেক পছন্দ করে। একদিন হঠাৎ করে চমকে দিয়ে বলবো যে আমিই সেই “ক্ষণিকের মুসাফির” পেজ এর লেখক।

কি সব ভাবছি একা একা? তানহা তো আমাকে ভালোই বাসে না। তবে আমি তো তাকে ভালোবাসি। আর আমি তো এতটা খারাপ না যে সে আমাকে ভালোবাসবে না। দেখি কি আছে কপালে! জীবনটাই তেজপাতা।)
অর্ণব : ওহ! ভালো কথা।

তানহা :- ওকে তাহলে শুভরাত্রি। ভালো থাকিয়েন। এখন আমি ঘুমাবো। কাল সকালে আবার কলেজ যেতে হবে।

অর্ণব :- ওকে আল্লাহ হাফেজ। তবে একটা কথা সত্য যে আপনার স্বামীও আপনাকে অনেক ভালোবাসে। আর সে আপনার জন্য সবকিছু করতে পারে আপনার কষ্ট কখনো সহ্য করতে পারে না, আপনাকে নিয়ে অনেক কিছু ভাবে অনেক স্বপ্ন দেখে আপনার হাত ধরে অনেকটা পথ যাইতে চায়।

(মেসেজটা সেন্ড করার পর আফসোস করতেছিলাম। ধুর আবেগের ঠেলায় কি পাঠায় দিলাম। তানহা নিশ্চই বুঝতে পারবে এটা আমি। আর নইলে সন্দেহ করবে।)

(আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো মিস্টার অর্ণব। যার প্রমাণ তুমি বাসে থাকতে দিয়েছো।)
তানহা :- কে আপনি বলুন তো? আপনি এত কথা কিভাবে জানলেন? এসব বিষয় কে জানালো আপনাকে? কাউকে না জেনে শুনে তার ব্যাপারে এরকম কথা কেউ বলবে না। সত্যি করে বলুন আপনি কে না হলে কিন্তু অনেক খারাপ হবে বলে দিলাম😡

অর্ণব :- আরে আমি তো এমনিতেই বললাম। আপনার মনের খবর বের করে নেওয়ার জন্য। তাহলে সত্যিই উনি আপনাকে অনেক ভালোবাসে😜

(কথা ঘুরাইতে ওস্তাদ!)
তানহা :- কিন্তু আমার তো তা মনে হচ্ছে না। আমার তো মনে হচ্ছে আপনি যেই হোন না কেন আমাদের সব বিষয়ে জানেন।

অর্ণব :- আরে না এমনি কথা বের করে নেওয়ার জন্য বললাম। আগে মানুষের কাছে শুনতাম যে, মেয়েদের হাটুর নিচে বুদ্ধি। আর আজ সেটা দেখলাম😁… সত্যিই তাই। আমি আন্দাজে কি দুই চারটা কথা বলছি, আমি জানতামও না সেগুলা ঠিক হয়েছে কি না, আর আপনিও কিনা নিজেই প্রমান করে দিলেন আমি যা বলছি তা ঠিক। আচ্ছা আপনার স্বামীর পিক দেন তো। আমি একটু দেখতে চাই যে আপনার স্বামী দেখতে কেমন।

(ইস শখ কতো! নিজের ছবি নিজেই দেখতে চায়। তবে ওর কথা ঘুরানোর জন্য অযুহাতগুলা শুনে আমার অনেক হাসি পাচ্ছিলো। বেচারা কি কি বলতেছে আমাকে বুঝানোর জন্য যেন আমি বিশ্বাস করি ও আমাকে চিনেনা😁)
তানহা :- না দিবো না। ও অনেক সুন্দর না হলেও অনেক হ্যান্ডসাম। একদম তামিল সিনেমার নায়কের মত। তবে হয়তো আপনার মত এত পারদর্শী না। এসব কথা বাদ দেন। এখন বলেন যে আপনার নাম কি আর সাথে একটা পিক দেন আপনার। আমার আপনাকে দেখার অনেক ইচ্ছা। একটা পিকচার দেন। প্লিজ।

অর্ণব :- দিব তো সময় হলে আপনাকে সব দিবো। আর এখন শুভরাত্রি অনেক রাত হয়েছে ঘুমাবো।

তানহা : আসসালাম অলাইকুম
(জানি কেনো দিবেন না)

অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।

পরেরদিন,

তানহা বাড়ি থেকে বেড় হয়েই দেখতে পায় যে একটা রিকশা।

মনে মনে,
তানহা : এ সময় তো কোন রিকশা পাওয়া যায় না। অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হয় রিকশার জন্য। আজ দেখি রিকশাচালক এসে দাঁড়িয়ে আছে ব্যাপারটা কি! যাইহোক বললাম,
: এইখালি যাবেন?

রিকশাচালক :- জি মামুনি আপনার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।

তানহা :- মানে কি? কিছুই তো বুঝলাম না!

রিকশাচালক :-মানে হল যে আমাকে অর্ণব বাবা পাঠিয়েছে।
আপনাকে কলেজে পৌঁছে দেয়ার জন্য। আর এখন থেকে আপনাকে কলেজে নিয়ে যাওয়া এবং আসার জন্য কোন রিকশা খুঁজতে হবে না। আমি রোজ রোজ আপনাকে কলেজে নিয়ে যাব এবং সেখান থেকে নিয়ে আসবো।

তানহা :- তার মানে কি?😡….আমি কি তাকে বলছি আমার জন্য এসব ব্যবস্থা করতে? আপনি একটু দাঁড়ান আমি তাকে এখনই ফোন করছি।

রিকশাচালক :- জ্বী মামুনি…

তানহা অর্ণবকে কল দিতেই অর্ণব কলটা ধরলো,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম। কি ব্যাপার আজ সূর্য দক্ষিণ দিকে উঠল নাকি?

তানহা : ওয়ালাইকুম আসসালাম। এই আমি কি আপনাকে বলছি যে আমার যাইতে সমস্যা হয়? আমার জন্যে রিকশা ভাড়া করে দেন?

অর্ণব :- আমার বৌ রিকশার জন্যে দাড়িয়ে থাকবে, কেমন দেখায় না।

তানহা :- এতোই যখন জানেন, তাহলে আপনি এসে কলেজে পৌঁছে দিলেই পারেন।
(এই রে আবেগে মনের কথা বলে ফেলছি)

অর্ণব : তুমি সত্যি বলছো! এখনি বাইক নিয়ে আসতেছি।

তানহা : নিতে আসতেছি মানে….

অর্ণব :-তুমি তো বললে যে আমি তোমাকে নিতে যাই।

তানহা : আমি তো আপনাকে ওই সব রাগের মাথায় বলছি। আমি না আপনাকে বলেছিলাম আমার জন্যে ভাবতে হবেনা। তাহলে এসব কি হুম?😡

অর্ণব : তুমি এখন ওই রিকশাতে উঠবে এবং সোজা কলেজে আসবে।

তানহা :-বললাম না যাবনা।

রাগের মাথায় খুব জোরে বললাম,
নাহাজুল:- যা বলছি তাই করো😡😡

(তানহা চুপ)

অর্ণব :- কি হলো কথা বলছো না কেন?

তানহা :- এতো জোরে কেউ চিৎকার করে? ভয় পাইছি। আর একটু হলেই তো আমার ফোনটা বোমার মতো ফুটে উঠতো।

(মাঝে মাঝে করা এর বাচ্চামি গুলা আমাকে সত্যি খুব ভালো লাগে।)
অর্ণব :- যা বলছি তাই করো।

তানহা :- করেছি তো,আপনার চিৎকার শুনেই আমি সোজা রিকশা তে উঠছি। আর রিকশাচালক আমায় নিয়ে কলেজের দিকে যাচ্ছে। আর এভাবে ঝগড়া করা ভালো না।

হাদিসে এসেছে,

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, স্বামী স্ত্রীর মাঝে শয়তানে ঝগডা লাগিয়ে দেয়,যাতে তারা একজন থেকে আরেক জন পৃথক হয়ে যায়।
-(সহীহ মুসলিম ৫০৩৯)💕

বুঝলেন?

অর্ণব :- গুড গার্ল। আর এখনই বা তোমার সাথে একসাথে আছি কোথায়? যে শয়তান আলাদা করে দিবে।

তানহা :- তাও এমন ভাবে কেও রাগ দেখায়?

অর্ণব :- তুমি যদি তোমার ভালোটা না বুঝো তাহলে কি করবো?

হাদিসে এসেছে,

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “হে পুরুষেরা! তোমরা নারীদেরকে সর্বদা ভাল উপদেশ দাও। কেননা তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে আদম (আঃ) এর বাম পাঁজরের বাঁকা হাড় দিয়ে। তুমি যদি তাকে সোজা করতে চাও, তাহলে সে ভেঙ্গে যাবে। আর যদি একেবারে ছেড়ে দাও তাহলে সে বাঁকা হতেই থাকবে”।
-(সহীহ বুখারি ৫১৮৬)💕

মানে স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে বাম পাঁজরের বাঁকা হাড় দিয়ে। তোমাদের আচরণের মাঝে কিছুটা বক্রতা থাকবেই।

স্ত্রীর বক্রতাকে মেনে নিয়েই হিকমত ও কৌশলের সাথে ঠান্ডা মস্তিস্কে বুঝিয়ে তাদেরকে মানিয়ে নিয়ে ঘর সংসার চালিয়ে যাওয়াই স্বামীর প্রধান কর্তব্য।

কিন্তু তুমি শুনতেছিলা না। একেবারে ছাড়ে দেওয়ার কথাও বলা হয় নি। তাই একটু রাগ দেখলাম। আচ্ছা শুনো শোন সাবধানে থেকো। কোন বিপদ হলেই আমায় ফোন করবে। আসসালাম অলাইকুম।

(আমি জানি আপনি থাকতে আমার কোন বিপদ হবেনা)
তানহা : আচ্ছা। অলাইকুম আসসালাম।

অফিস শেষ করে সন্ধ্যায় খুশি মনে নাজিমকে আনতে গেলাম। চিন্তা করলাম আজকে আমার কলেজে পড়ার কারনটা ওকে জানাবো। কিন্তু ভাগ্য খারাপ তানহা আজকে আমাকে ভিতরেই ঢুকতেই দেয় নি। কথা বলাতো দূরে থাক। তিন চার দিন হয়ে গেলো একই অবস্থা। না ঢুকতে দিচ্ছে বাসায় না দেখা করতেছে৷ তাই কথাও বলা হচ্ছে না আর জানানোও হচ্ছে না। আমি পড়ে গেলাম দারুণ ফ্যাসাদে।

(চলবে….)

সম্পূর্ণ গল্প পড়তে চান?

Click here to read the full story.

📚 You may also read..

🌄Search for peace

By Hassab Bin Ahmed

Read
Story 2

🕊️ Sweet Wife

A heartwarming tale of a newlywed Muslim couple, Sajib and Humaira, navigating the sweet and humorous moments.

Read

💫 একই বন্ধনে বাঁধা দুজনে

৭ বছর পর দেশে ফিরলো রোহান। কিন্তু বাড়ির কাউকে জানায়নি..।

Read

💬 Give Your Review

We value your thoughts. Share your experience with us!

SUBMIT REVIEW