“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”
Islamic গল্প

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”

Part : 20
দুজনেই চুপ করে থাকলাম কিছুক্ষণ। এভাবেই শুরু হলো আমাদের টম এন্ড জেরীর মতো একটা সম্পর্ক। টক-ঝাল সম্পর্কটার কথা মনে পড়লে এখনো বেশ মজাই লাগে।
তানহা পড়তেছিলো,আমিও বসে বসে বইটা পড়তেছিলাম। এমন সময় আম্মু কল দিলো। কলটা রিসিভ করে,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম আম্মু।
রাদিয়া বেগম:- অলাইকুম আসসালাম বাবা কোথায় তুমি?
অর্ণব : আম্মু আমি বাসে যাচ্ছি কাল সকালের ভিতর পৌঁছে যাব ইনশাল্লাহ।
রাদিয়া বেগম : বাবা তুমি এখন সফরে আছো। তাই অনেক মানুষের সাথে তোমার দেখা-সাক্ষাৎ হবে। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করবা। কাউকে ছোট করে দেখবা না। মানুষকে তুচ্ছ ভাবা বা ঘৃনা করা থেকে বিরত থাকবা। কোন মানুষ তোমার সাথে কথা বললে তার থেকে বিমুখ বা কথোপকথনের সময় নিজ মুখকে অন্য দিকে ফিরিয়ে রাখবা না। এটা খুব খারাপ।
পবিত্র কুরআনে আছে,
“মানুষের জন্য নিজের গাল ফুলায়ো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না; কারণ আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে ভালবাসেন না।”
-[সূরা লোকমান: আয়াত: ৩১:১৮]

আর মনে রাখবা এমনভাবে বিচরণ ও চালচলন করবা না যাতে ধন-সম্পদ, পদ বা বংশ মর্যাদা অথবা শক্তিমত্তা, ক্ষমতার বড়াই ও অহংকার ফুটে ওঠে,কারন তা আল্লাহ তায়ালা কখনো এগুলা পছন্দ করেন না। আল্লাহ তাআলা এটাই পছন্দ করেন যে, সে নিজের মান ও অবস্থা অনুযায়ী বিনয় ও নম্রতা বজায় রাখবে এবং তা অতিক্রম করে অহংকার প্রদর্শন করবে না। কারণ মানুষ একজন আল্লাহর বান্দা মাত্র। এ ব্যাপারে
হাদিসে এসেছে,
“আল্লাহ তায়ালা বলেন, গৌরব ও গর্ব খাস আমার গুণ। সুতরাং যে তাতে আমার অংশী হতে চাইবে, আমি তাকে শাস্তি দেব।’’
-(মুসলিম ২৬২০)

বুঝলা?
অর্ণব : জি আম্মু।
রাদিয়া বেগম : উচ্চস্বরে কথা বলবে না। এতে পাশের জনার অসুবিধা হতে পারে। আর চালচলন ও আচার-ব্যবহারে শালীনতা প্রদর্শন করবে। খারাপ ব্যবহার করবে না। এ ব্যাপারে,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
‘‘(আল্লাহর বান্দাগণ) পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে।’’
-(সূরা ফুরকান ৬৩ আয়াত)

অর্ণব : জি আম্মু আমি বুঝতে পারছি।
রাদিয়া বেগম:- ঠিক আছে বাবা সাবধানে আসিস একটু,আজ আটটা দিন হলো তুই নাই, বাসাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে তোকে ছাড়া।
অর্ণব : হুম আম্মু আমি খুব তারাতাড়ি আসছি। মুরগির মাংস রান্না করিও। কালকে নিশ্চিত খুব খিদা লাগবে।
রাদিয়া বেগম : আগে তুই ভালোমতো আয়।
অর্ণব : ঠিক আছে আসসালাম অলাইকুম।
রাদিয়া বেগম:- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
কথা বলা শেষ করতেই তানহা বলে উঠল..
তানহা :- আস্তে কথা বলতে পারেন না?
অর্ণব :- আপনার সমস্যা কি?
(এবার উনার একটা দূর্বল দিক পাইছি সব বদলা সুদে-আসলে নিবো)
তানহা : Please! Don’t Bother me.I need to study.
Bother বললো কেনো? Disturb বললেই তো পারতো। বুঝলাম ভালোই ইংরেজী পারে। ট্যালেন্টেড হ্যান্ডেল(বোকা) একটা।
না বুঝার ভান করে,
অর্ণব : কি যে বললেন আপনি কিছুই বুঝলাম না। শুধু বুঝলাম ইংরেজিতে গালি দিলেন। শুনেন গালি দেওয়া পাপ কাজ।
পবিত্র কুরআনে আছে,
“কাউকে গালাগালি করবেন না।”
-(০২ঃ ৬০)

বুঝলেন?
(আল্লাহ! এ কি বলে। অনেক কষ্টে হাসি চাপে রাখলাম। নিকাবের কারণে উনি বুঝতে পারেন নি। তবে উনি ভালো কথাই বলছে। গালি দেওয়া মন্দ কাজ। তার মানে কি উনি শুধু আমার উপর রাগের কারণেই আমাকে জ্বালাচ্ছে। কথাবার্তা আর ব্যবহার তো অনেক ভালো। তাহলে?)
তানহা : জি না আপনাকে গালি দেই নি। আপনাকে ডিস্টার্ব করতে মানা করলাম।
অর্ণব : ঠিক আছে আপু।
(বুঝলাম না ওর আপু ডাক শুনে কেমন জানি লাগলো এরকম কেনো হলো। তারমানে কি? আল্লাহ মাফ করুক)
তানহা : হুম।
মনে মনে,
অর্ণব : ইসস! এতো সহজে ছাড়বো?! কেবল তো শুধু শুরু।
একলাসকে কল দিলাম,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম বড় ভাই।
একলাস : অলাইকুম আসসালাম। কি খবর? শুনলাম তুই নাকি বাড়ি আসতেছিস?
অর্ণব : হুম। ইনশাল্লাহ কালকে সকালেই যাবো।
একলাস : ট্রিট দিবি না?
অর্ণব : হুম দিবো। তুই তো একদিনও দিলিনা।
একলাস : হাহা। দিবো দিবো।
একলাসের সাথে কথা বলতে বলতে লক্ষ্য করতেছিলাম তানহা আমার দিকে চোখ বড় বড় করে দেখতেছে আর রাগে ফুসতেছে। এটা দেখে আমি আরো জোরে কথা বলতেছিলাম। আমার সাথে পাঙ্গা? এবার বুঝো ঠেলা।
একলাসের সাথে কথা বলা শেষ করে ফোনটা কাটতেই,
তানহা : অভদ্রের মতো ব্যবহার করছেন কেন?
অর্ণব : আমি অভদ্র না। আমি ভদ্র ঘরের ভদ্র সন্তান বুঝলেন?
তানহা : হুম জানি। ভদ্র ঘরের অভদ্র শয়তান।
অর্ণব : কি বললেন? আপনার সাহস তো কম না! শুনুন আমি এতটাই ভদ্র ছিলাম যে আজ পর্যন্ত কোন প্রেম করিনি। আজকালকার ছেলেরা-মেয়েরা তো আবার প্রেম ছাড়া নাই।
(একটু বাজিয়ে দেখতে চাইলাম ইনারও আবার কেউ আসে নাকি!)
তানহা : মেয়ে পটানোর ধান্ধা তাই না। সবাই এগুলাই বলে। কিন্তু তলে তলে ট্রাক চালায়।
অর্ণব : হাহা। আমার কাজ নাই তো আপনাকে পটাইতে যাবো। আর হারাম কাজ আমি করিনা। কেননা,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর তাদেরকে স্ত্রী করার জন্যে, কামবাসনা চরিতার্থ করার জন্যে কিংবা গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্যে নয়।”
-[ সূরা মায়িদা : ৫ ]

তানহা : হুম এগুলা হারাম। আল্লাহ যেন সবাইকে এটা বুঝার তৌফিক দেন।
বুঝলাম ইনি প্রেম থেকে দূরেই থাকেন। কি ব্যাপার রাগটা হঠাৎ করে গায়েব হয়ে গেলো কিভাবে? আমি তো ইনার প্রতি প্রচুর রাগে ছিলাম। এখন দেখতেছি কখন যে রাগ পানি হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। রাগ করার পরিবর্তে উনার সঙ্গ ভালোই লাগতেছে।
আসলে জীবনে প্রথমবার কোন মেয়েকে এত কাছ থেকে জানার সুযোগ হয়েছে। আর সেদিনই প্রথমবার কাউকে ভালো লাগছে। আর সেই “কেউ” -টা হচ্ছে তানহা। প্রথম যেদিন তানহাকে দেখছিলাম সেদিনই আমার পুরা সত্তা অন্যরকম এক অনূভুতির সাক্ষী হয়েছিলো। যা ছিলো আমার জীবনে একদম নতুন। এমনকি আল্লাহর কাছে বউ হিসেবে পাওয়ার জন্য দোয়াও করেছিলাম। আর বাকিটা তো ইতিহাস! বুঝলাম আবার সেই ভালো লাগাটা কাজ করতেছে।
তানহা : কি ভাবতেছেন?
অর্ণব : না কিছুনা। তোমার না পড়া আছে তুমি পড়ো।
(আল্লাহ! ঘোরের মধ্যে নিজের অজান্তেই তুমি বলে ফেললাম। নিশ্চিত রাগে ভূত হয়ে যাবে।)
তানহা : কি বললেন আপনি?

অর্ণব : পড়তে বললাম।
তানহা : তার আগে কি বললেন?
অর্ণব : কিছু না তো।
তানহা : তুমি করে বললেন কেনো? আপনি তো আমার নামটাও জানেন না।
এমন সময় আমার ফোন বাজলো। কলটা রিসিভ করতে যাবো,
তানহা : আমার কথার উত্তর না দিয়ে কল ধরতে পারবেন না। আর আপনার এতো কল আসে কেনো? শান্তিতে আমি পড়তেও পারতেছি না।
কথার উত্তর না দিয়ে কলটা রিসিভ করলাম। নেগলা কল দিছে। তাই তানহাকে রাগানোর জন্য নেগলার সাথে জোরে জোরে কথা বলতে শুরু করলাম। তানহা আগের মতোই চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকায় রাগে ফুঁসছে।
হঠাৎ ফোনটা বন্ধ হয়ে গেলো।
অর্ণব : ধুর চার্জটাই শেষ হয়ে গেলো।
বুঝলাম তানহা প্রচুর খুশি হইছে। কিন্ত নেগলার সাথে কথা বলাটা জরুরি। ওর বিয়ে নিয়ে কিছু কথা ছিলো। মেয়েটাকে চিন্তিত শুনাচ্ছিলো। মোবাইলের চার্জটাকেও এখনই যাইতে হবে? ভাগ্যটাই খারাপ।
হঠাৎ চোখে পড়লো তানহার হাতে মোবাইল। বাধ্য হয়ে তানহাকে বললাম,
অর্ণব : আপনার ফোনটা একটু দেওয়া যাবে। কথা বলেই দিয়ে দিবো। একটু জরুরি কথা ছিলো।
তানহা : বাব্বাহ! কিছুক্ষণ আগের বাঘ এখন ভেজা বিড়াল কিভাবে হয়ে গেলো?
অর্ণব : আগের ব্যবহারের জন্য দুঃখিত। খুব দরকারি কথা ছিলো তাই বলছি। আর হবে না এটা আপনাকে কথা দিচ্ছি।
তানহা : আমার মোবাইল দেওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। আমি চাই আপনি কথা না বলেন, আপনি কথা না বললে আমি মন দিয়ে পড়তে পারবো। তাই আমার মোবাইল দিবো না।
চিন্তাভাবনা করলাম যেহেতু পরিচয়টা অনেক গভীর হয়ে গেছে তাই কাজটা করাই যায়। আর যেহেতু খুব প্রয়োজনের কথা বলছি সেহেতু তানহা কিছু মনে করবে না। এইটা ভেবে,
তানহার হাত থেকে মোবাইলটা কেরে নিলাম।
Islamic গল্প

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”

Part : 21
চিন্তাভাবনা করলাম যেহেতু পরিচয়টা অনেক গভীর হয়ে গেছে তাই কাজটা করাই যায়। আর যেহেতু খুব প্রয়োজনের কথা বলছি সেহেতু তানহা কিছু মনে করবে না। এইটা ভেবে,
তানহার হাত থেকে মোবাইলটা কেরে নিলাম।
আমি একটা চিৎকার শুনবো এটা ভেবে কানে হাত দিছিলাম। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরও চিৎকার শুনতে না পেয়ে কান থেকে হাত সরায় তানহার দিকে তাকালাম। এমনভাবে তাকায় আছে যে মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই আমাকে গিলে খাবে।
তানহা : আমার মোবাইল দেন বলছি

তাও ভালো তানহা বিষয়টাকে একটু স্বাভাবিকভাবেই নিছে। তানহার হাতে আমার মোবাইলটা দিয়ে,
অর্ণব : এই যে ধরেন আমার ফোন। আপনার থেকে দামী। আর এই যুগে কেউ বাটন ফোন ব্যবহার করে? আমাকে শুধু কথাটা বলতে দেন।
মনে মনে,
তানহা : ইচ্ছা তো করতেছে মোবাইলটা জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেই।
কল দিয়ে দেখলাম ফোনে টাকা নাই।
অর্ণব : আপনি মানুষ না আর কিছু। মোবাইলে টাকা নাই কেনো?
তানহা : না নেই,আমি কারো সাথে কথা বলিনা। তাই রাখি না। আর বাটন ফোনে কোন কাজ নাই তাই অতটা ব্যবহারও করিনা আর মনেও থাকে না টাকা ঢুকানোর। ভালো হইছে আপনি কথাও বলতে পারবেন না।
(আসলে আমার ফোনটা হারায় গেছে তাই নতুন ফোন না কিনা পর্যন্ত এটাই চালাচ্ছি।)
আমি কোন কথা বললাম না। রিপনকে রিকোয়েস্ট কল দিলাম। রিপনকে রিকোয়েস্ট কল দিতেই কল ব্যাক করলো।
অর্ণব : রিপন এই নম্বরে ১০০ টাকা ঢুকায় দে। আর নাম্বারটা ডিলিট করে দিস। একটা অপরিচিত মেয়ের নাম্বার তো।
মনে মনে,
তানহা : বাব্বাহ! উনার দায়িত্ববোধ আছে দেখছি। যতই রাগ থাকুক তাও মানবিকতার দিকটা ঠিকই লক্ষ্য রাখতেছে। যা বুঝলাম উনার মনটা ভালো।
প্রায় পনেরো মিনিট পর রিপন রিচার্জ করে দিলে নেগলাকে কল দিলাম।
তানহা : এই আমার মোবাইলেও কিন্তু চার্জ নাই। তাড়াতাড়ি করেন। আর দয়া করে একটু আস্তে কথা বলুন প্লিজ। আমার পড়ার ক্ষতি হচ্ছে।
অর্ণব : জি এবার আর খারাপ কিছু করবো না। আপনি যে আমাকে কথা বলতে দিছেন এইজন্য আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। আপনি পড়েন।
তানহা : ধন্যবাদ।
এমন সময় নেগলা ফোন ধরলো,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম।
নেগলা : অলাইকুম আসসালাম। কে অর্ণব?
অর্ণব : হুম। কি বলতেছিলি জানি বিয়ের বিষয়ে?
নেগলা : আমার জন্য পাত্র দেখতেছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করছিলো যে কি ধরনের ছেলে আমার পছন্দ। আমি কোন উত্তর দেই নি। তুই বলতো কেমন পাত্র হলে ভালো হয়।
অর্ণব : দেখ বিয়ে জীবনের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে প্রভাব বিস্তার করে। জীবনের মাঝখান থেকে তোকে একজনের সাথে বাকি জীবন কাটানো শুরু করতে হবে। একজনের সাথে পুরোটা জীবন কাটাতে হবে তার মানে বুঝছিস?
নেগলা : হুম বুঝছি। বিষয়টার উপর আমার ভবিষ্যত নির্ভর করতেছে।
অর্ণব : এইতো সুন্দর বুঝছিস। বিয়ের জন্য দ্বীনদার ছেলে ভালো হবে এটা আমার অভিমত।
নেগলা : কেনো?
অর্ণব : একজন দ্বীনদার ছেলে সবসময় আল্লাহকে ভয় করে, জাহান্নামের ভয়ে ভীত হয়ে খারাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখে। আর একজন মানুষের ভিতর যদি আল্লাহর ভয় না থাকে, যদি কবর, জাহান্নাম, সর্বোপরি আখিরাতের ভয় না থাকে তাহলে সে যেকোন গুনাহই অনায়াসে করতে পারে। আর বড় কথা যে আল্লাহ দেওয়া অর্পিত দায়িত্ব পালন করে না সে তোর সারাজীবনের দায়িত্ব কিভাবে নিবে?
নেগলা : হুম।
অর্ণব : আর স্বামী হিসেবে একটি দ্বীনদারিত্ব সম্পন্ন ছেলেকে নির্বাচন করা মানে জান্নাতের সাথী নির্বাচন করা। আমাদের তো এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াতে সুখী থাকা লক্ষ্য নয়, আমাদের লক্ষ্য তো হচ্ছে জান্নাতের বাসিন্দা হওয়া। আর একজন প্রকৃত দ্বীনদার ছেলে তোকে জান্নাতে যেতে সাহায্য করবে। এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে?
নেগলা : হুম বুঝছি। তো এখন কি করবো?
অর্ণব : তুই পরিবারকে বল যে তোর জন্য একটা দ্বীনদার পাত্র খুজতে। ছেলের চরিত্রে যেন দ্বীনদারিত্বটা প্রথমে ফুটে উঠে। আর হ্যাঁ অন্যদের মতো দ্বীনদার বিল গেটস খুঁজতে যাইস না।
এমন সময় পাশ থেকে তানহার হাসির আওয়াজ পেলাম।
নেগলা : 
.. দ্বীনদার বিলগেটস? মজা পাইলাম। আচ্ছা ঠিক আছে বলবো। আর হ্যাঁ ছেলেকে আমার চেহারা দেখানো যাবে?


অর্ণব : হুম। এটা জায়েয আছে! কেননা
হাদিসে এসেছে,
হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জনৈক মেয়েকে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব দেই এবং বিষয়টা রাসূল (সাঃ) কে বলি।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি তাকে দেখেছো?
আমি বললাম, না। তিঁনি বললেন, তুমি তাকে দেখে এসো।
কারণ-এ দেখাটা তোমাদের মাঝে সৌহার্দ্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে বেশ উপযোগী হবে।
ফলে আমি মেয়েটিকে দেখার জন্য যাই।তখন তার বাবা-মা সেখানে ছিল এবং মেয়েটি পর্দার আড়ালে লুকিয়ে ছিল।
তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মেয়েটিকে দেখার জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমার এ-কথায় তার বাবা-মা নীরব রইলেন।
অন্য বর্ণনায় আছে, যেন তারা আমারএ কথাকে অপছন্দ করলেন।
(তারা বিবাহের আগে পাত্রীকে দেখানোর পক্ষে ছিলেন না।)
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মেয়েটি বললো,
যদি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে দেখার জন্য আপনাকে আদেশ করে থাকেন, তাহলে আপনার দেখার সুবিধার্থে আমি আপনার সামনে আসছি।
আর যদি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে দেখার জন্য আপনাকে নির্দেশ না দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি আমার দিকে দৃষ্টি দিবেন না।
হযরত মুগীরা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি তাকে দেখি এবং তাকে বিবাহ করি।
-{সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৪২৪ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১৮৬৬}

তবে তোকে শুধু পাত্র দেখতে পারবে।পাত্র ছাড়া পাত্রের ভাই, পিতা, চাচা বা কোন মুরব্বী (পুরুষ) কিংবা অন্য কোন পুরুষ তোকে দেখতে পারবে না।
তা কিছুতেই জায়েয নাই।
নেগলা : পাত্রের সামনে কেমন পর্দা করতে হবে?
অর্ণব : তোকে শরয়ী পর্দা করতে হবে। শরয়ী পর্দা হলো,
* নিজ চেহারা ও হাতের পাঞ্জা ছাড়া অন্য কোন অঙ্গ তার সামনে উন্মুক্ত না করা।
* পাত্র ছাড়া অন্যকোন গাইরে মাহরামের উপস্থিতিতে পাত্রের সামনে না যাওয়া।
* পাত্রের সঙ্গে নির্জনে একত্রিত না হওয়া।বরং সেখানে নিজের কোন মাহরামের উপস্থিতিতে যাওয়া।
* অহেতুক আলাপচারিতা ও অনর্থক গল্প-গুজবে লিপ্ত না হওয়া।
-{সূত্রঃ সহীহুল বুখারী, ২য় খন্ড, ২৫১ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ৩০০৬/ফাতাওয়া শামী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৭০ পৃষ্ঠা}

আর হ্যাঁ তোকে যখন দেখতে আসবে সে সুযোগে তোকেও পাত্রকে দেখে নিতে হবে। বুঝলি?
নেগলা : হুম। পাত্রকে ষ্পর্শ করা যাবে?
অর্ণব : একদম না।
এমনকি পাত্রী দেখার পর পাত্রীকে সম্পুর্ন পর্দা করতে হবে। তখন আবার পাত্রের কাছে পাত্রী বেগানা নারী হয়ে যাবে।
আর বিবাহ-ইচ্ছুক ব্যক্তি বা পাত্রের দেখা ছাড়া আর কিছুর অনুমতি দেওয়া হয় নি।সুতরাং তাকে স্পর্শ করা কিংবা এ জাতীয় কিছু কোনক্রমেই বৈধ নয়। এমন কি তার হাত ধরা বা হাতে আংটি পরিয়ে দেয়াও জায়েয হবে না।
-{সূত্রঃ ফাতাওয়া শামী, ৬: ৩৭০}

বুঝলি?
নেগলা : হুম। বুঝছি ধন্যবাদ তোকে।
অর্ণব : এটা আমার দায়িত্ব ছিলো। আল্লাহ যেন তোকে একজন প্রকৃত দ্বীনদার ছেলে জীবনসঙ্গী হিসেবে দেয় – আমিন।
নেগলা : তোকেও যেনো আল্লাহ একটা দ্বীনদার মেয়ে দেয়। আচ্ছা পরে কথা হবে অনেক কাজ আছে। আসসালাম অলাইকুম।
অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।
কলটা কেটে তানহাকে মোবাইলটা দিলাম।
অর্ণব : ধন্যবাদ আপনাকে। আসলে কলটা করা জরুরি ছিলো। তাই আপনার কাছ থেকে মোবাইলটা কারে নিতে বাধ্য হইছিলাম। আশা করি মাফ করে দিবেন।
আমার মোবাইলটা ফেরত দিয়ে,
তানহা : আরে কি বলতেছেন। মাফ তো আমাকে চাওয়া উচিৎ। তখন থেকে আপনাকে ভুল বুঝতিছিলাম। আর আপনার কাছ থেকে অনেক কিছুই জানতে পারলাম।
(তখনই তানহার মোবাইলে কত টাকা বাকি আছে তার মেসেজ আসলো)
আরে প্রায় সব টাকাই তো পড়ে আছে। নেন শেষ করে তারপর আমাকে মোবাইল ফেরত দেন।
অর্ণব : আরেহ না। আমার আর দরকার নাই। আর বেকার টাকাটা অপচয় করে লাভ আছে? তার চেয়ে আপনার কাজে আসবে। আর পবিত্র কোরআনে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
“আর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখো, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই।”
-(বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬-২৭)

তানহা : হুম তাও ঠিক।
(ইনাকে যত জানতেছি তত ইনার প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছি। আমি কোন ছেলের সাথে এতটা ঘনিষ্ঠ হয়ে কথা বলিনা। কিন্তু প্রথম বার কারো সাথে এতটা কথা বলতেছি। সবচেয়ে অবাক লাগছে আমার, আমার সাথে কথা বলার সময় অন্যদিকে তাকায় থাকে। রাগে গেলে নিচের দিকে তাকায় চেহারাটা পেঁচার মতো করে কথা বলবে। শুধু ফোনে কথা বলার সময় চোখের কোন দিয়ে দেখে নিবে আমি দেখে বা রাগে আছি কিনা। একবারও আমার দিকে ভালোভাবে তাকায় নি। উনার ব্যবহার থেকে শুরু করে সব কিছু আমাকে ভালো লাগতেছে। বিশেষ করে উনার দ্বীনি জ্ঞান। আল্লাহ আমাকে সকল পাপ থেকে হেফাযত করো! ইয়া আল্লাহ! এমন কারো প্রতি আমাকে দূর্বল করিও না যার সাথে তুমি আমার বিবাহ সম্পর্ক ঠিক করে রাখনি।)
হঠাৎ আমার মনে পড়লো যে আমাকে মশিউরকে কল দিতে হবে। মশিউরকে বলছিলাম যে আমি সপ্তম দিনে মানে গতকাল যাবো আর আজকে রাতে আড্ডা দিবো একসাথে। কিন্তু আমি তো আজকে যাচ্ছি। আর এটা তো ওকে বলাই হয়নি। তাই তানহাকে বললাম,
অর্ণব : আরেকটা শুধু কল দিবো একটু দেওয়া যাবে?
Islamic গল্প

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”

Part : 22
মনে পড়লো যে মশিউরকে কল দিতে হবে। তানহাকে বললাম,
অর্ণব : অসুবিধা না হলে আরেকটা কল দিতে হইতো। একটু দেওয়া যাবে?
তানহা : হুম নিতে পারেন। চার্জ কিন্তু একদম শেষের পর্যায়ে। আমার প্রয়োজন নাই বলেই দিচ্ছি।
তানহাকে ধন্যনাদ দিয়ে নেগলাকে বললাম এই নাম্বারটা ডিলেট করে দিতে আর এই নাম্বারে মশিউরের নাম্বারটা মেসেজ করে দিতে। কিছুক্ষণ পর নেগলা মশিউরের নাম্বারটা তানহার মোবাইলে মেসেজ করে দিলো। তারপর মশিউরকে কল দিলাম,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম।
মশিউর : অলাইকুম আসসালাম। কি রে তুই বেলে আজকে আসতেছিলি?
অর্ণব : না কালকে যাবো ইনশাল্লাহ। একটা কারণে একদিন পিছিয়ে দিছিলাম।
মশিউর : তুই আয় আমি এবার তোদের ট্রিট দিবো।
অর্ণব : বাব্বাহ। মশিউর ট্রিট দিবে ব্যাপার কি!
মশিউর : একটা প্রাইভেট পাইছি। সামনে মাস থেকে আমারও একটা ইনকাম হবে। এই খুশিতে।
অর্ণব : আলহামদুলিল্লাহ।
মশিউর : আচ্ছা বাদ দে। আজকে তাড়াতাড়ি ঘুমাইতে হবে কালকে সকালেই প্রাইভেটটা পড়াইতে যাইতে হবে।
অর্ণব : আচ্ছা আর শুন রাতে ওযু করে ঘুমাইস।
হাদিসে আছে,
“কেউ ওজু করে ঘুম গেলে সারারাত তার পাশে থেকে একজন ফেরেশতা ঘুমন্ত ব্যক্তির ক্ষমার জন্য আল্লাহর দরবারে দুয়া করতে থাকে।”
-(আত তারগিব ৫৯৭)

ছোট একটা কাজ কিন্তু বিশাল ফযিলত।বুঝলি?
মশিউর : সুবহানআল্লাহ। ঠিক আছে। আসসালাম অলাইকুম।
অর্ণব : নাম্বারটা ডিলেট করে দিস কারনটা পরে বলবো এখন ঘুমা। ওলাইকুম আসসালাম।
কলটা রাখতেই তানহা বলে উঠলো,
তানহা : আচ্ছা আপনি কি মানুষ নাকি রাক্ষস?
কথাটা শুনে একটু ভড়কে গেলাম,
অর্ণব : মানে? দেখতেই তো পাচ্ছেন! আমাকে কি রাক্ষস মনে হয়?
তানহা : আম্মুকে বললেন একটা রান্না করতে, একজনকে বললেন আপনি পার্টি দিবেন আর আরেকজনকে বললেন যে উনি বেলে পার্টি দিবে। একটা মানুষ এতো খাই খাই করে কিভাবে? রাক্ষস একটা। তাও তো একটুও মোটা হন নি। খাবার গুলা কোথায় যায়? হাহ?
অর্ণব : তো কি আপনার মতো হবো? আর শরীরটা তো আমার থেকে শুকনা। ফু দিলেই তো উঠে যাবেন। কাঠি একটা।
রাগে,
তানহা : কি বললেন? আর আমার মতো মানে?
অর্ণব : না কিছু দেখতেছিলাম।
তানহা : কি দেখতেছিলেন?
অর্ণব : দুপুর থেকে একটা বিস্কিটের প্যাকেট শেষ করতে পারেন নি। আর কথা বলতে আসছেন।
তানহা : তার মানে, আপনি চুপি চুপি আমার খাওয়া দেখছিলেন!
অর্ণব :- পাশে যেহেতু বসে আছেন দেখা তো যাবেই,তাইনা।
তানহা :- তাও ঠিক।
অর্ণব : আর আমি আম্মুকে সকালের খাবারের কথা বলছি। আর ওদের আলাদা আলাদা সময়ে। বুঝলেন!
এই সময় মনে পড়লো মাগরিবের নামাজ পড়তে হবে। আছরেরটাও মিস গেছে। আর মাগরিবের নামাজের সময়ও অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। বাস যে দ্রুত যাচ্ছে আর তানহার সাথে গল্প করতে করতে ভুলেই গেছিলাম। হেল্পারকে ডাকলাম,
অর্ণব : রাতের খাবারের জন্য বাস থামবে না?
হেল্পার : হুম। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই। ১৫ মিনিটের জন্য।
১৫ মিনিট যথেষ্ট সময়।তাই বললাম,
অর্ণব : দয়া করে একটু পাশেই মসজিদ আছে এরকম জায়গায় থামাবেন।
হেল্পার : জি আমরা যেখানে থামাই তার পাশেই মসজিদ আছে। শুধু সাবধান করে রাখলাম তাড়াতাড়ি করিয়েন। ১৫ মিনিটের এক মিনিটও বেশি সময় দেওয়া হবে না।
অর্ণব : ঠিক আছে।
হেল্পার চলে গেলো।
তানহা : আচ্ছা আমিও নামাজ পড়বো। আছর আর মাগরিব দুইটাই পড়া হইনি। আমার জন্য একটা ব্যবস্থা করতে পারবেন?
অর্ণব : জি কেনো নয়। আপনি মসজিদেই নামাজ পড়তে পারেন। প্রথমের দিকে তো নারীরা মসজিদেই নামাজ পড়তো।
হাদিসে এসেছে,
“উম্মু সালমাহ রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাঃ যখন সালাম ফিরাতেন তখন মহিলারা তার সালাম শেষ করার পর উঠে যেতেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ না দাঁড়িয়ে বরং কিছুক্ষণ বসে থাকতেন যাতে পুরুষদের যাওয়ার পূর্বেই নারীরা চলে যেতে পারে।”
-(বুখারী -হাদিস নং-৮৭০)

তারপর
অন্য এক হাদিসে এসেছে,
“ইবনু উমার রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন উমর রাঃ এর স্ত্রী (আতিকা বিনতে যায়দ) শুধুমাত্র ফজর ও এশার সালাতে মসজিদে হাজির হতেন।”
-(বুখারী -হাদিস নং-৯০০)

কিন্তু পরবর্তীতে মহিলাদের জন্য বাড়িতে নামাজ পড়াকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শুধু রাতের বেলা স্বামীর অনুমতির সাপেক্ষে যাওয়া যেত।
হাদিসে এসেছে,
“ইবনু উমার রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন নারীদেরকে রাতের বেলা যেতে বাধা দিওনা।”
-(মুসলিম-হাদিস নং-৮৭৮)

কিন্তু তখনকার মক্কা-মদীনা রাতের বেলা ছিলো ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন। যা এখনকার থেকে সম্পুর্ন আলাদা।
তানহা : হুম।
(আমি তো আপনার সাথে যাচ্ছি!
হাহ? আপনার সাথে?
আল্লাহ! আমি কি জন্য উনাকে এতটা আপন ভাবতে শুরু করছি?! কি জন্য উনার সাথে নিজেকে এতটা নিরাপদ ভাবতেছি?!
জানি না। কিন্তু নিজের মধ্যে এক অন্যরকম ভালো লাগা অনুভব করলাম।)
অর্ণব : শুধু একটু তাড়াতাড়ি করিয়েন। আর প্রথমে আমি যাব। যদি কেউ না থাকে তাহলে আপনাকে নিয়ে যাবো। আমার মনে হয় না এখন কেউ মসজিদে থাকবে। তাও দেখাটা দরকার।
(আল্লাহ! যদি সত্যি উনি আমার ভাগ্যে থাকে তাহলে আমাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দেও! আমি আর পারতেছিনা। কিছু একটা তো আছে উনার মধ্যে। যা আমাকে এতটা আকর্ষিত করতেছে।)
একটু বাজিয়ে দেখার জন্য,
তানহা : হুম ভাইয়া।
মুচকি হাসি দিয়ে,
অর্ণব : বদলা নিলেন?
তানহা : হ্যাঁ কিছুক্ষণ আগে যে আমাকে আপু বলছিলেন।
অর্ণব : প্রেমে পড়লেন নাকি আবার!
তানহা : নাউজুবিল্লাহ। একদম না।
যদিও আমি ভালোমতো দেখিনি কিন্তু উনি লজ্জা পেলো এটাতো নিশ্চিত।
অর্ণব : হুম বুঝি বুঝি।
তানহা : দেখুন আমি সত্যি আপনার প্রেমে পড়িনি।
অর্ণব : আমি কখন বললাম আপনি আমারই প্রেমে পড়ছেন? আপনি তো নিজেই বললেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
: ঘরে কে?
আপনি জবাব দিলেন,
: আমি কলা খাইনি।



তানহা দুই হাত দিয়ে মুখ ঢাকে নিচে ঝুকলো।
আল্লাহ! আসলেই তো। আমিও হই একটা বিশাল বড় মানের একটা বোকা। কি দরকার ছিলো জবাব দেওয়ার। নিজেকে সংযত করে,
তানহা : আমি আসলে প্রেম করবো না কারো সাথে। যাকে বিয়ে করব তার সাথেই প্রেম করবো। বিয়ে করার পর।
(আমিও তোমার প্রেমে পড়ছি প্রথম দিনই। বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছিলাম। কিন্তু কোথা থেকে কি হয়ে গেলো। আমিও বিয়ের জন্যই অপেক্ষা করতেছি মিস তানহা)
অর্ণব : বিষয়টা পরোক্ষভাবে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব হয়ে গেলো না?

আল্লাহ! উনি তো দেখতেছি শয়তানের চাচাতো ভাই, ফাজিলের হাড্ডি। ঠিকই ধরছে কিন্তু লজ্জা বলে কিছু নাই। এভাবে সরাসরি বলতে হবে? বললাম,
তানহা : Are you made?
অর্ণব : আমাকে কি পাগল মনে হয় আপনার?
তানহা : Excuse me! আপনি নাকি ইংলিশ বোঝেন না! তাহলে এটা বুঝলেন কিভাবে?
অর্ণব : ই….ইয়ে মানে এ…টা আগে থেকে জানি। অনেক বার শুনেছি

বাবারে বাবাহ! কি মাল্টি ট্যালেন্টেড রে বাবাহ! আর কথা বলা যাবে না। নাহলে ফাঁসে যাবো।
এমন সময় গাড়ি থামলো।
আমরা মসজিদে যাওয়ার জন্য তৈরি হলাম।তানহা ব্যাগ থেকে একটা উড়না বের করে হাতে নিলো। আমরা একসাথে বাস থেকে নামলাম। বাসটা একটা মার্কেট প্লেসে থামাইছে। পাশের একটা রেস্টুরেন্টে সবাই ঢুকলো। আমি তো খাবার আগে থেকেই নিয়ে রাখছি তাই আমার প্রয়োজন নাই। আর তানহা তো কবুতরের মতো খায় তাই ওরও প্রয়োজন নাই। তাই আমরা তাড়াতাড়ি মসজিদটা খুঁজে বেড় করলাম হাতে সময় নেই। মসজিদটা একটু ভিতরে। যদিও চাইছিলাম আমি আগে যায়ে ভিতরটা দেখে আসবো। কিন্তু তা করিনি। বাজার এলাকা আবার অচেনা জায়গা তাই তানহাকে একা কোথাও দাঁড়িয়ে রাখাটা নিরাপদ না। একসাথেই মসজিদে ঢুকলাম।
(চলবে….)