“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”
Islamic গল্প

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”

Part : 14
(সমস্যা আছে মানে? ভাইয়া ডাকলে আবার কি সমস্যা? ইসলামে একমাত্র স্বামীকে ভাইয়া ডাকা যায় না। তাহলে কি এটা অর্ণব?! আল্লাহ! যদি এটা অর্ণব হয় তাহলে তো…! আল্লাহ মাফ করুক।)
তানহা : আপনি কে? সত্যি কথা বলবেন না হলে খুব খারাপ হবে কিন্তু

(মারছে রে। নিশ্চই তানহা সন্দেহ করতেছে এটা আমি। আমার বউটা এতো ট্যালেন্টেড বাবারে বাবাহ! ধুর ওর ট্যালেন্টের জন্য আমি ফাঁসে গেলাম!)
অর্ণব : I told you before that i can’t tell you my name or any kind of information through that you can recognise me.It’s for security reason.But still you are asking over and over.Please try to understand!
(অর্ণব তো এত ইংরেজি পারে না। এটা অর্ণব না। যে ছেলে ইংরেজির মানেই বুঝেনা সে ছেলে ইংরেজিতে এভাবে কথা বলবে এটা হাস্যকর!কিন্তু ইনি হঠাৎ ইংরেজিতে কথা বলতেছে কেনো? কিছু তো ঝামেলা আছে!)
তবুও বিষয়টা গোপন রাখে বললাম,
তানহা : দুঃখিত। আমি মনে করছিলাম আপনি অন্য কেউ। তাই একটু উত্তেজিত হয়ে গেছিলাম।
অর্ণব : কাকে মনে করছিলেন?
(উফফ! বাঁচা গেলো। জানতাম আমি এতোটা ভালো ইংরেজি পারি এটা তানহা বিশ্বাস করবে না। যতই হোক আমার বউতো। এতটুকু ধারনাতো আমার বিষয়ে ওর থাকবেই!যদিও ওর ধারনাটা ভুল
)

তানহা : এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। আপনার না জানলেও হবে।
অর্ণব : তাও ঠিক। আপনার প্রোফাইল কালকে ঘুরে দেখলাম। মাশআল্লাহ আপনি ফেসবুককে অনেক সুন্দরভাবে অন্যদের ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতেছেন। বিষয়টা সত্যিই অসাধারণ!
তানহা : 
.. ধন্যবাদ। একজন মুসলিম হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব। কেননা,


#হাদিসে এসেছে,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমার কাছ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছিয়ে দাও।”
-[সহিহ বুখারী ৩৪৬১]

আর হ্যাঁ মানুষের সামনে তার প্রশংসা করতে নেই।কেননা,
#হাদিসে এসেছে,
আবু বকর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন
তিনি বলেন, নবী (সাঃ)-এর সামনে এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির প্রশংসা করল। তখন রসূল (সাঃ)বললেন,
“তোমার জন্য আফসোস! তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে, তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে। তিনি এ কথা কয়েকবার বললেন, অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের কেউ যদি তার ভাইয়ের প্রশংসা করতেই চায় তাহলে তার বলা উচিত, অমুককে আমি এরূপ মনে করি, তবে আল্লাহই তার সম্পর্কে অধিক জানেন। আর আল্লাহর প্রতি সোর্পদ না করে আমি কারো সাফাই পেশ করি না। তার সম্পর্কে ভালো কিছু জানা থাকলে বলবে, আমি তাকে এরূপ এরূপ মনে করি।”
-(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৬৬২)

বুঝলেন?
অর্ণব : জি বুঝছি। আমাকে এখন ঘুমাতে হবে। শুভরাত্রি!
তানহা : হুম লেখক সাহেব, মাঝে মাঝে আমার সাথেও একটু কথা বলবেন!
(উফফ! নিজের বউয়ের কাছে “লেখক সাহেব” শুনা যে কতটা আনন্দের বিষয় তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। মিসেস তানহা! আমি আপনার সাথে সারা জীবন কথা বলতে চাই।)
অর্ণব : যদিও আমি মেয়েদের সাথে বেশি কথা বলিনা। ঠিক আছে আপনার সাথে বলবো। আসসালাম অলাইকুম!
তানহা : ধন্যবাদ। অলাইকুম আসসালাম।
(আমার মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে এটাই অর্ণব। কিছুই বুঝতেছিনা।)
ফেসবুক থেকে লগ আউট করে শুয়ে শুয়ে ভাবতেছি,
এক দিক থেকে তানহার আইডিটা পেয়ে ভালোই হয়েছে। অন্ততপক্ষে এটা জানা গেলো তানহা আমাকে স্বামী হিসেবে স্বীকার করে। আর “ক্ষণিকের মুসাফির” এর লেখককে মানে আমাকে ওর ভালো লাগে। কিন্তু বোকাটা আমাকে “ভাইয়া” বানাইতে চায়। কি পরিমানে হ্যান্ডেল(বোকা) ও! এইদিক থেকে তানহার প্রতি আমার বিশ্বাস আরো বেড়ে গেলো। কারণ তানহা অন্য কাউকে নিয়ে উল্টা-পাল্টা চিন্তাভাবনা কখনো করবে না। যেটার প্রমান আমাকে নিজে দিলো। ধুর বিষয়টা আরো জটিল হয়ে গেলো। কালকে কলেজে যে কি হয় এটা আরো একটা বড় দুঃচিন্তা।
এগুলা ভাবতে ভাবতে ঘুমায় গেলাম।
সকালে আমি মশিউর আর রিপন একসাথে কলেজ গেলাম। গেটে ঢুকতেই দারোয়ান বললো,
দারোয়ান : হেডস্যার আপনাদেরকে ইংরেজী ম্যাডামের সাথে দেখা করতে বলছে।
রিপন : শুধু আমাদের তিনজনকে?
দারোয়ান : ওটাতো জানি না।
অর্ণব : ঠিক আছে। আসসালাম অলাইকুম।
দারোয়ান : অলাইকুম আসসালাম।
কলেজে ঢুকতেই দেখলাম এখলাস আর বাকি সবাই আগেই চলে আসছে। নেগলা একটু বকাঝকা করতেছিলো যে আমি এটা কেনো করলাম ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর নেহা আর নেগলাকে রেখে আমরা ইংরেজি ম্যাডামের রুমে উনার সাথে দেখা করতে চলে গেলাম।ম্যাডাম আজকে তাড়াতাড়ি চলে আসছে।
রুমে ঢুকেই আমরা সবাই মাথা নিচু করে ছিলাম।
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম ম্যাডাম।
ম্যাডাম : অলাইকুম আসসালাম।
অর্ণব : ম্যাডাম দোষ তো শুধু আমি করছি। তাহলে এদের ডাকলেন কেনো?
ম্যাডাম : দোষ যে তোমাদের মধ্যে কেউ করে নি তা আমি জানি।
(আমরা এক সেকেন্ডের জন্য বিশ্বাস করতে পারিনি এটা ম্যাডাম বলতেছে। যিনি আমাদের দেখতে পর্যন্ত পারেন না সহ্য করা তো দূরে থাক।)
মশিউর : মানে?!
ম্যাডাম : কালকে তিতুমির আসে আমাকে সব বলছে। শুধু কালকের ঘটনা না দুই মাস আগের ঘটনাও। কালকে অর্ণবের যে কোন দোষ ছিলো না তা তিতুমির বললো এবং দুই মাস আগে অর্ণব আর তোমরা যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য এগুলা করছিলা এটা আমি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারি নি। দোষটা আমার। আমি না জেনেশুনেই তোমাদের উপর খারাপ ধারণা রাখছি। ক্ষমাটা আমার চাওয়া উচিৎ। আশা করি তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিবা। কেননা,
হাদিসে এসেছে,
রাসূল (সা:) বলেছেন,
প্রতিটি মানুষই ভুলকারী আর ভুলকারীদের মধ্যে তারাই উওম যারা তওবাকারী”।
-(তিরমিযী ২৪২৩)

অর্ণব : না ম্যাডাম। আপনি কি বলতেছেন। আমরা আপনার ছাত্র। এটা ভালো দেখায় না। আর আপনার প্রতি আমাদের ভালোবাসা এটাতে একটুও কমে নি। কারন আমরাই বিষয়টাকে গোপন রাখছিলাম। তাই আপনিও জানতে পারেন নি। এখানে ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।
ম্যাডাম : ধন্যবাদ তোমাদেরকে। আর অর্ণব নেগলার জন্য তুমি যে ঝুঁকিটা নিয়েছিলা তাতে আমি সত্যিই ইম্প্রেশ।
অর্ণব : ধন্যবাদ ম্যাডাম। তাহলে তো আপনি যাচ্ছেন না তাই না?
ম্যাডাম : না, যেহুতু কথা দিয়েছি যেতেই হবে। যদিও ভুল বোঝাবুঝির মধ্যে বিষয়টা ঘটে গেছে তাও আমি আমার কথা রাখবো। কেননা,
আর ইতিমধ্যে আমি নতুন কলেজে জয়েনিং করে ফেলছি। আর সেটা আমার বাসার সাথেই। আমি অনেক দিন ধরে চেষ্টায় ছিলাম কিন্তু হচ্ছিলা। এবার হেড স্যার নিজে আমাকে সাহায্য করছে। তাই দ্রুত হয়ে গেছে। একদিক থেকে তোমরা আমাকে সাহায্যই করলা বলা চলে। হাহা!
অর্ণব : আমরা আপনাকে মিস করবো।
ম্যাডাম : আমিও। শুনো তোমরা অনেক ভালো। পড়াশুনাতেও মোটামুটি ভালো শুধু দুষ্টামিটা একটু কম করো আর পড়ায় মন দেও দেখবা তোমরা অনেক ভালো রেজাল্ট করবে। কি আমার কথা রাখবে তো?
বেলাল : ইনশাল্লাহ ম্যাডাম। এবার আপনার জন্য আমিই টপার হবো।
(সবাই হেসে উঠলো)
ম্যাডাম : দোয়া করি।
একলাস : আপনার নতুন কলেজে যাব একদিন আমরা সবাই বেরাতে যাবো ইনশাল্লাহ।
ম্যাডাম : ওকে অপেক্ষা করব তোমাদের জন্য!
অর্ণব : ম্যাডাম আপনার দেরী হচ্ছে আমরা গেলাম।আসসালাম অলাইকুম।
ম্যাডাম : ভালো থাকিও সবাই। অলাইকুম আসসালাম।
ম্যাডামের রুম থেকে বেড় হয়ে আমরা নেহা আর নেগলার কাছে গেলাম। ওদেরকে সব ঘটনা খুলে বললাম।
নেগলা : নেহা চল ম্যাডামের সাথে দেখা করে আসি। তোরা থাক।
ওরা ম্যাডামের সাথে দেখা করতে চলে গেলো।
এখলাস : যাক বাবা এবারের মতো বাঁচে গেলাম। সবাই শুকরিয়া আদায় কর। কেননা,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“অতএব, তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর আমার শোকর আদায় করো, আমার সাথে কুফরী করো না।”
-[আল-বাকারা; ২ : ১৫২]

বেলাল : তিতুমির আবার কবে থেকে এতটা ভালো হলো বুঝলাম না!
অর্ণব : আল্লাহ কখন কাকে হেদায়েত দিবে এটা বলা যায় না। এটা শুধু স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা জানেন। কেননা,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“তাঁহাদের হেদায়েতের
দায়িত্ব আপনার উপর নয়
বরং আল্লাহ-ই একমাত্র
যিনি যাঁকে ইচ্ছা হেদায়েত
দান করেন…।”
-[সূরা বাক্কারাহ: আয়াত ২৭২]

রিপন : হুম ঠিক বলছিস।
এমন সময় তিতুমির এসে আমাকে ডাকলো।
তিতুমির : অর্ণব একটু এদিকে শুন।
এখলাস : কেন কি জন্য?
তিতুমির : অর্ণবের সাথে কিছু কথা আছে।
মশিউর : যা বলার এখানে বল। ও যাবে না।
অর্ণব : আচ্ছা বাদ দে না। দরকারি কথা থাকতেই পারে। তিতুমির চল। তোরা কিছুক্ষণ থাক।
তিতুমিরকে নিয়ে আমি একটু সাইডে গেলাম…..
Islamic গল্প

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”

Part : 15
তিতুমিরকে নিয়ে আমি একটু সাইডে গেলাম…..
অর্ণব : কি বলতে ডাকলেন?
তিতুমির আমার হাতটা ধরে,
তিতুমির : ধন্যবাদ তোকে।
অর্ণব : আরে এইটা কি করতেছেন বড় ভাই। আমাকে তো আপনাকে ধন্যবাদ দিতে হবে। আপনি ম্যাডামকে আসল ঘটনা না বললে আজকে আমাকে সম্ভবত কলেজ থেকেই বেড় করে দেওয়া হত।
তিতুমির : আর তুই যদি আসল ঘটনাটা বলে দিতি তাহলে আজকে আমি কলেজ ছাড়া হয়ে যেতাম।
অর্ণব : মানে?!
(হুম। আমার পরিকল্পনা কাজে আসছে। আমি পুরো ঘটনাটাতে সম্পূর্ণ দোষ নিজের ঘাড়ে নিছিলাম। একবারের জন্যও তিতুমিরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি বা আমার কোন দোষ নাই এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করিনি। সবাই বিষয়টা নজরে না আনলেও তিতুমির বিষয়টা খেয়াল করছে। আমি এইটাই চাচ্ছিলাম। আমি চাইলেই ম্যাডামকে বলতে পারতাম সম্পূর্ণ ঘটনা আর প্রমাণও করতে পারতাম এখানে আমার কোন দোষ ছিলো না। কিন্তু আমি তা করেনি। আমি তিতুমিরের আবেগটাকে ব্যবহার করতে চাচ্ছিলাম। অনেক সময় যে কাজ শক্তি দিয়ে হয়ে উঠে না তা আবেগকে ব্যবহার করে হয়ে যায়। ইংরেজিতে ইমোশনালি ব্লাকমেইল যাকে বলে। তিতুমিরের ক্ষেত্রে তা হয়েছে।)
তিতুমির : ম্যাডামকে আসল ঘটনাটা বলে দিলে তোর সাক্ষীরও অভাব হইতো না। ওখানে অনেকেই প্রথম থেকে পুরো ঘটনাটা দেখেছিলো। তাও তুই কিছু বলিস নি।
(আমি মুচকি হাসলাম)
তিতুমির : আমাদেরকে দুই মাস আগে কড়া নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো। তুই বলে দিলে নির্ঘাত আমাদের বহিষ্কার করে দিতো। আর নেগলাকে উত্যক্ত করছি এটা জানতে পারলে ম্যাডাম যে কি করতো এটা ধারণার বাইরে। তোকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারতেছিনা।
হাতটা ছাঁড়িয়ে বললাম,
অর্ণব : ধন্যবাদ দিতে হবে না। আমি সবকিছু নেগলার জন্য করছি। ও আমার বোনের মতো। আর আমার জন্য কারো ক্ষতি হোক এটা আমি কখনোই চাই না। আপনার ক্যারিয়ার আছে, আপনাদের কলেজ থেকে বহিষ্কার করে দিলে আপনাদের ভবিষ্যৎ জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। আপনাদের বাবা-মায়ের এতো বছরের কষ্ট, ত্যাগ, আশা সব মাটি হয়ে যাবে। শুধু আপনাদের ভুলের জন্য ওদেরকে কষ্ট দিতে পারি না।
তিতুমির চুপ করে আছে। কিছুক্ষণ পর বললো,
তিতুমির : তাই বলে নিজের ভবিষ্যতের ঝুঁকি নিয়ে?
অর্ণব : হাহা। আমার কোন ধরনের ঝুঁকিই ছিলো না। অন্য একদিন এটা নিয়ে অনেক গল্প করবো। অনেক কথাও জানতে পারবেন। কিন্তু এখন না। তাহলে কি নেগলা এখন থেকে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে?
তিতুমির আবার আমার হাতটা ধরে,
তিতুমির : আজ থেকে তোর কাছে আমি ঋণী। আর নেগলার চিন্তা করতে হবে না। আমরা কেনো, এই শহরে ওকে কেউ উত্যক্ত করবে না এটা আমি কথা দিচ্ছি।
আর যেকোন সাহায্য লাগলে আমাকে বলিস। আমি আমার বেস্ট দিয়ে সাহায্য করবো ইনশাল্লাহ।
যদিও শেষের কথাটা শুনে হাসি পেলো তাই বললাম,
অর্ণব : ধন্যবাদ। ইনশাল্লাহ যদি লাগে তাহলে বলবো।
হাতটা ছেঁড়ে দিয়ে,
তিতুমির : আর হ্যাঁ সেদিনের অপেক্ষায় থাকলাম।
অর্ণব : আচ্ছা ম্যাডাম কিছু বলেনি আপনাকে।
তিতুমির : হুম বোকা দিছে। কিন্তু নিজে যায়ে সত্যিটা স্বীকার করছি তাই শেষ বারের মতো মাফ করে দিছে। আর হেড স্যারের সাথে আমার হয়ে কথা বলবে বলছে।
অর্ণব : ওহ! আর নামাজ পড়িয়েন ঠিক মতো। নামাজে আমার আর ম্যাডামের জন্য দোয়া করিয়েন। কেননা,
আল্লাহ তায়ালা বলেম,
“এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ হতে বিরত রাখে।”
-(সুরা আনকাবুত -৪৫)

এ দুনিয়ায় ক্ষমতার দম্ভে খারাপ কাজ করে বেড়াতে পারবেন কারণ আল্লাহ আপনাকে ছেঁড়ে দিছেন। কিন্তু মৃত্যুর পরে এর জন্য আফসোস করবেন। আর
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“মৃত ব্যক্তিরা এই বলে আর্তনাদ করবে আমাদের আরেকবার পৃথিবীতে পাঠান, আমি ভালো করে ইবাদত করে আসি।”
-(সূরা মুমিন-৯৯)

কিন্তু তখন আর কোন পথ থাকবে না। বুঝলেন?
তিতুমির : হুম। ইনশাল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করবো। ওহ যেটার জন্য আসছিলাম সেটাই তো ভুলে গেলাম।
অর্ণব : কি কাজ?
চেহারাটা মলিন করে,
তিতুমির : সুজার থাপ্পরের জন্য দুঃখিত। ওর হয়ে আমি তোর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আর পুরো ঘটনার জন্য। তোকে আর কেউ ডিস্টার্ব করবে না এটা আমি কথা দিচ্ছি। পারলে আমাদের মাফ করে দিস। সত্যিই আমি অনুতপ্ত। এরকমটা আর হবে না।
অর্ণব : আরে কি বলেন। আমি তো ঐটা ভুলেই গেছি। আর আমি ঐদিনই আপনাদের সবাইকে মাফ করে দিছিলাম। কেননা,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোলো, সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ ও জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাক।”
(সূরা আল আরাফ – ১৯৯)

আবার,
হাদিসে এসেছে,
“ক্ষমা করলে আল্লাহ তা’আলা বান্দার ইজ্জত সম্মান আরো বৃদ্ধি করে দেন।”
-(মুসলিম)

আমি রাগ বা তোমাদের ব্যাপারে খারাপ মানসিকতা কোনটাই পুষে রাখিনি। কেননা,
পবিত্র কুরআনে আছে,
“অন্তরে পরশ্রীকাতরতা পুষে রাখবেন না।”
-(০৪ঃ ৫৪)

সাথে সাথে তিতুমির আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
তিতুমির : আমি আজকে প্রথম কারো জন্য চোখের পানি ঝরাচ্ছি।
আসলেই ও কাঁদতেছিলো।
অর্ণব : আমার জন্য কাঁদে লাভ নেই। ইসলামের সুশীতল ছাঁয়ায় আপনি আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন যা আপনাকে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় ক্ষেত্রে সফলতা দিবে।
আমাকে ছেঁড়ে দিয়ে,
তিতুমির : হুম।
(হ্যাঁ আমি জানবো। যে ইসলামের ছাঁয়ায় অর্ণব এতো ভালো চরিত্রের অধিকারী হয়েছে, এতোটা সংযত, এতটা উদার হৃদয়ের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছে, যে ইসলামের বাণী সমূহ এতোটা বাস্তবধর্মী সে ইসলামে আরো কত কিছু না লুকায় আছে। আমাকে জানতে হবে, আমাকেও হতে হবে অর্ণবের মতো একজন প্রকৃত মুসলিম। আল্লাহকে শুকরিয়া যে অর্ণবের মতো একজনকে আমার জীবনে পাঠায় দেওয়ার জন্য। যার উছিলায় আমি আজ সঠিক পথের হদিস পেলাম।)
অর্ণব : ঠিক আছে তাহলে আমি গেলাম। ওরা দাঁড়ায় আছে। আসসালাম অলাইকুম।
তিতুমির : অলাইকুম আসসালাম।
তারপর আমি ওখান থেকে চলে আসলাম। সেদিন নেগলাকে উত্যক্ত না করার জন্য বুঝানোর ফলে তিতুমিরের মনটা নরম হয়েছিলো। কিন্তু ওর বন্ধুগুলা আসে সব ভেস্তে দিছিলো। কিন্তু রেশটা ছিলো, যা এবারের ঘটনাটাতে ওর মানে গভীরভাবে প্রভাব ফেলতে সাহায্য করেছে। যার কারণে ছেলেটা বদলে গেছে। যাক পরিকল্পনাটা কাজে আসছে।
হাদিসে এসেছে,
“আল্লাহ যখন কোনো পরিবারের কল্যাণ চান, তিনি তাদের মধ্যে কোমলতার প্রবেশ ঘটান।”
-[মুসনাদে আহমদ]

যেটা ঘটেছে তিতুমিরের ক্ষেত্রে। আল্লাহ সকলকে হেদায়েত দান করুক।
দেখলাম মশিউররা দাঁড়ায় আছে। যায়ে ওদের সব কিছু বললাম।
বেলাল : হ্যাঁ আমারো বিষয়টা মাথায় আসছিলো যে তুই ম্যাডামকে সত্যি কথা বলিস নি কেন! এক বার চেষ্টাও করিস নি। এবার বুঝলাম কেনো।
রিপন : তাই বলে সুজাকে মাফ করে দিলি কেনো? ও সবার সামনে তোকে থাপ্পড় মারছে। এটা হবে না। এত সহজে ছাড়বো না।
অর্ণব : দেখ মাফ করে দে। রাগ করতে তোকে আগেও মানা করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে আছে,
“রাগকে নিয়ন্ত্রণ করুন।”
-(০৩ঃ১৩৪)

আর কাউকে মাফ করে দিলে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেও মাফ করে দিবেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“তাদের মাফ করে দেওয়া উচিৎ এবং তাদের দোষ না ধরা উচিৎ। তোমরা কি চাও না, আল্লাহ তোমাদের মাফ করুক। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।”
-(সুরা : আন-নূর, আয়াত : ২২)

বুঝলি?
রিপন : হুম বুঝলাম।
নেহা : এটাতো আব্দুর কাদের জিলানীর ছোট বেলার ঘটনার মতো!
বেলাল : ইনি আবার কে হন?
নেহা : আব্দুল কাদের জিলানী ইসলামের অন্যতম প্রচারক ও বিজ্ঞ পন্ডিত ছিলেন।
মশিউর : হুম মনে পড়ছে। আব্দুল কাদের জিলানী ছোটবেলায় যখন বাগদাদে যাচ্ছিলেন তখন একদল ডাকাত ওদের আক্রমণ করে। উনার মা স্বর্ণমুদ্রা ফতুয়ার নিচে সেলাই করে দেওয়ায় ডাকাত দল তা পাই নি। ডাকাত সর্দার উনাকে সাথে কিছু আছে কি না তা জিজ্ঞাসা করলে উনি সত্যিটা বলে দেয়। স্বর্ণমুদ্রাগুলা হাতে পেয়ে ডাকাত সর্দার অবাক হয়ে উনাকে জিজ্ঞাসা করে কেনো সত্য বললো, চাইলে তো মিথ্যা বলে স্বর্ণমুদ্রাগুলো বাঁচাতে পারতো। তখন আব্দুর কাদের জিলানী বলে,
“আমার মা যত বড় বিপদই আসুক তাও মিথ্যা কথা বলতে মানা করেছিলেন।”
নেহা : হুম। তারপর আব্দুর কাদের জিলানীর সত্যবাদিতায় মুগ্ধ হয়ে পুরো ডাকাত দল ভালো হয়ে যায়।
এখলাস : হ্যাঁ। প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও ব্যাপারটা একই ঘটছে।
অর্ণব : হুম। আমি একটু শুধু চেষ্টা করেছি। বাকিটা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিছিলাম। আমার কাজ চেষ্টা করা বাকিটা আল্লাহর উপর। এজন্যই তো আমাদের দয়ার নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে উদ্দেশ্য করে
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“(হে মুহাম্মদ), তোমার কাজ শুধু আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়া, আর বাকি হিসাবনিকাশ তো আমার কাজ।”
-[সূরা জ্বাছিয়াহ : আয়াত ১৪]

মশিউর : হুম ঠিক বলছিস। এখন সবাই ক্লাশে চল। আমরা যে একটা ক্লাশ মিস করলাম এটা তোদের খেয়াল আছে?
আমরা সবাই অবাক। আসলেই তো! এসবের মধ্যে আমরা ভুলেই গেছিলাম ক্লাস করার কথা। সবাই একসাথে দৌড় দিলাম।
সন্ধ্যার নামাজ পড়ার পর হৃদয় আমার খুব ভালো বন্ধু কল দিলো। কল ধরতেই,
হৃদয় : তাড়াতাড়ি “জিলা স্কুল” -এর পিছনে আয়।
Islamic গল্প

“অপেক্ষাটা অব্যক্ত ভালোবাসার”

Part : 16
সন্ধ্যার নামাজ পড়ার পর হৃদয় আমার খুব ভালো বন্ধু কল দিলো। কল ধরতেই,
হৃদয় : তাড়াতাড়ি “জিলা স্কুল” -এর পিছনে আয়।
অর্ণব : আসসালাম ওলাইকুম। এই তুই সালাম দিলিনা কেন? জানিস না সালামের কত ফযিলত।
হাদিসে এসেছে,
“আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে না, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বাতলেয়ে দেব যা করলে, তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালো বাসবে? তারপর তিনি বললেন, তোমারা বেশি বেশি করে সালামকে প্রসার কর।”
-[মুসলিম]

বুঝলি?
হৃদয় : অলাইকুম আসসলাম। মাফ করে দে ভাই। ভুল হয়ে গেছে।
অর্ণব : বেটা ভালো হয়ে যা। এখনো সময় আছে। হাহা।
হৃদয় : তুই তো দেখতেছি এখনো কথায় কথায় জ্ঞান ঝাড়িস। এখনো শুধরাইলি না।
অর্ণব : তোদের কাছে তো এগুলা ভালো লাগবে না এইটা জানি। তোরা এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বেড় করে দিস। তাও যদি আল্লাহ তোদের হেদায়াত দেয়।
হৃদয় : আচ্ছা কথা বাড়াইস না জলদি আয়।
কি জন্য এটা জানতে চাওয়ার আগেই কল কাটে দিলো। আজকে নাজিম তানহার কাছে পড়তে যায় নি। এজন্য খারাপ লাগতেছিলো আর নাজিমের প্রতি মেজাজটাও গরম হচ্ছিলো। তানহা তো বোধহয় আমাকে একা ঢুকতেই দিবে না। এগুলা ভাবতে ভাবতে জিলা স্কুলের দিকে যাচ্ছি।
জিলা স্কুলের পিছনে যায়ে আমি অবাক! আমার পুরোনো বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে আর সেদিন যারা কলেজে আমাকে মারার জন্য তিতুমিরের সাথে ছিলো, সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়ায় আছে।
বন্ধুদেরকে উদ্দেশ্য করে,
অর্ণব : আসসালাম অলাইকুম। কিরে তোরা এখানে? কেমন আছিস সবাই?
জুবায়ের : অলাইকুম আসসালাম। কি রে তোর তো কোন খবরই পাওয়া যায় না। আমাদেরকে তো ভুলেই গেছিস!
অর্ণব : পাগল হইছিস। তোদেরকে ভুলা যায়? তোরাই তো ব্যস্ত মানুষ। একেক জন বউ,ব্যবসা,চাকরি, কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকিস। আর আমাকে বলতেছিস আমি ব্যস্ত?
সবাই হেসে উঠলো। জীবন তারপর সবার খোঁজ-খবর,ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করার পর,
অর্ণব : এদেরকে কেন ধরে আনছিস?
প্রবাল : এরা বেলে তোকে মারার চেষ্টা করছিলো? থাপ্পড়ও বেলে মারছে।
অর্ণব : তোরা কিভাবে জানলি?
জুবায়ের : আমাদের শহরে তোকে মারবে আর আমরা খবর পাবো না? আমার তো শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো। এখন পর্যন্ত এদের কিছু করেনি এটাই যা। তোর অপেক্ষা করতেছিলাম।
তিতুমিররা কলেজের বড় ভাই হতে পারে, কিন্তু জুবায়ের আর প্রবালরা আমাদের এই শহরের বড় ভাই। রাজনীতির সাথে জড়িত বলে ক্ষমতাও অনেক। আর বড় কথা আমার অনেক ভালো বন্ধু। তিতুমিরদের দিকে তাকায় দেখলাম ভয়ে চুপসে গেছে সবগুলা।
অর্ণব : আরে বাচ্চা মানুষ ভুল করছে। না জানেশুনে করছে মাফ করে দে।
পবিত্র কুরআনে আছে,
“অন্যকে তার ভুলের জন্য ক্ষমা করুন।”
-(০৭ঃ ১৯৯)

অন্য এক আয়াতে,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“‘আমি আসমান ও জমিনকে এবং এ দুটির মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছুই হক ছাড়া আর কোনো ভিত্তিতে সৃষ্টি করিনি ফয়সালার সময় অবশ্যই আসবে, তাই (হে নবী!) আপনি তাদের ভদ্রভাবে মাফ করে দিন।”
-(সুরা : আল-হিজর, আয়াত : ৮৫)

তাই যাইতে ওদেরকে।
কাওসার : না। তুই এখনো বদলাইলি না। আর নিজে যে দুই মাস আগে এদের মারছিলি ঐটা কি ছিলো?
অর্ণব : ঐ খবরও পাইছিলি। আরে ঐটাতো এরা একটা ভালো ছেলেকে র্যাগ দিছিলো।
অন্য এক হাদিসে এসেছে,
“হজরত আয়শা (রা.) নবীজি (সা.)-এর ক্ষমাগুণের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, তিনি কখনো নিজের ব্যাপারে কারো থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি । তবে আল্লাহর দ্বীন ও তাঁর বিধিবিধানের অবমাননা করা হলে তিনি সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন।”
-(সহিহুল বুখারি)

তাও তো আমি বুঝানোর জন্য গেছিলাম। ওরাই মারাপিট শুরু করছিলো। এ বিষয়ে
পবিত্র কুরআনে আছে,
“কেবল তাদের সাথেই লড়াই করুন, যারা আপনার সাথে লড়াই করে।”
-(০২ঃ ১৯০)

বুঝলি?
জুবায়ের : হুম। আমি তো এদেরকে তখনই শিক্ষা দিতে চাইছিলাম। তুই নিজেই মিটমাট করে নিছিলি বলে আমি আর গুরুত্ব দেয় নি।
প্রবাল : এই তোরা যা। আর হ্যাঁ পরের বার যদি এরকম হয় তাহলে তো বুঝতেই পারতেছিস। হাড্ডি একটাও আস্ত থাকবে না।
সুজা : ভাই আমরা একদম জানতাম না অর্ণব ভাইয়া আপনাদের বন্ধু। যদি একবার বলতো তাহলে আমরা উনার সামনেও আসতাম না। এরকমটা আর কোনদিনও ভুল করেও হবে না।
এদের মুখে “ভাইয়া” কথাটা শুনে আমার হাসি পাইলো। বললাম,
অর্ণব : এর পর থেকে কাউকে র্যাগ দিবি না আর তোরা থাকতে কলেজ ক্যম্পাসে কোন মেয়ে যেন উত্যক্ত না হয় এটা কথা দে! আর আজকে থেকে ভালো হয়ে যাবি। তোদের ব্যাপারে কোন ধরনের নালিশ বা খারাপ কিছু যেন না শুনি।
রিফাত : জি ভাই। কথা দিলাম। আর আজকে থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো। ইনশাল্লাহ।
অর্ণব : যা। আর এখানকার কথা যেনো কোনভাবে বাইরে না যায়। বিশেষ করে আমার কথা। গেলে তোদের ধরবো। আমার সাথে কলেজে আমি জুনিয়র হিসেবেই কথা বলবি।
তিতুমির : ঠিক আছে ভাই। আসসালাম অলাইকুম
অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।
ওরা চলে যাওয়ার পর আমার বন্ধুদের সাথে অনেক্ষণ আড্ডা দিলাম। পুরানা বন্ধুরা অনেকদিন পর একসাথে হলে যা হয় আরকি। কথায় কথায় তানহার কথা উঠলো।
অর্ণব : হুম। “আজম আবাস” -এ ভাড়া থাকে। তোদের ভাবীকে একটু দেখেশুনে রাখিস। মানে লক্ষ্য রাখিস। একাই থাকে তো। কেউ যেন উত্যক্ত না করে।
প্রবাল : বলছিস মানে হয়ে গেছে। ভাবী আজকে থেকে ঐ বাড়িতে নিরাপদ। তবে আজকে ট্রিট দিতে হবে।
সবাইকে ট্রিট দিয়ে বাড়ি ফিরার সময় দেখি তিতুমিররা রাস্তায় দাঁড়ায় আছে।
ওদের কাছে যাওয়ার সাথে সাথে সুজা আসে বললো,
সুজা : ভাই আমি জানতাম না জুবায়ের ভাইদের বন্ধু তুমি। থাপ্পড় মারার জন্য দুঃখিত। প্লিজ মাফ করে দেন। এরকমটা আর কখনো হবে না। কথা দিলাম। আপনি শুধু একবার বলতেন যে আপনি ওদের বন্ধু তাহলেই আমরা নিজে আসে নেগলার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতাম।
আমি মুচকি হাসলাম,
অর্ণব : আরে আমি তো তখনই মাফ করে দিছিলাম। আমি যদি তখনই বলে দিতাম তাহলে তোমাদের নৈতিক শিক্ষাটা হইতো না। এজন্যই
পবিত্র কুরআনে আছে,
“মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করুন হিকমা ও উত্তমভাবে।”
-(১৬ঃ ১২৫)

আমি চাইলে মারামারি করে বা জুবায়েরদের দ্বারা তোমাদের শিক্ষা দিতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করে নি। আমি চাচ্ছিলাম আল্লাহর রহমতে তোমরা নিজে থেকে ভালো হও। এজন্যই তো নবীজিকে উদ্দেশ্য করে,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন।”
-(সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৯)

আল্লাহর উপর ভরসা করে উনার উপর বাকিটা ছেড়ে দিছিলাম। দেখো আজকে তোমরা আল্লাহর রহমতে কতটা হেদায়েতপ্রাপ্ত! বুঝলা?
রিফাত : হুম বুঝছি। একটা জিনিস খটকা লাগতেছে। আপনার সাথে জুবায়ের ভাইদের বন্ধুত্ব কিভাবে? নাকি আমি যেটা ভাবতেছি সেটা ঠিক!
আমি মুচকি হাসলাম,
অর্ণব : তিতুমিরকে বলছি যে একদিন অনেক গল্প করবো। তোমরাও আসিও। সেদিন অনেক কিছুই বলবো। যা শুনে অবাক হয়ে যাবা। তবে এখন না। পরে দেখা হবে। এখান যাই।
সবাই বলল,”ঠিক আছে। সেদিনের অপেক্ষায় থাকলাম।”
তিতুমির : আসসালাম অলাইকুম।
অর্ণব : অলাইকুম আসসালাম।সবাই ভালো থেকো আর হ্যাঁ গোপন রাখিও কিন্তু। কেউ যেন না জানতে পারে।
বাড়ির দিকে হাটা দিলাম এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বেড় করে দেখলাম হেড স্যার ফোন দিছে। ম্যাডাম চলে যাওয়ার জন্য গালি দিবে নাকি আবার?
স্যার : অলাইকুম আসসালাম। তোমার ম্যাডাম আমাকে সব কিছু বলছে। তুমি যে মারামারি করোনি তাই তোমার কাজে আমি সত্যিই খুশি হয়েছি। নেগলার উচিৎ ছিলো বিষয়টা আমাকে জানানো।
অর্ণব : যেহেতু তিতুমির কলেজের বড় ভাই হয় তাই আপনাকে বললে কোন কাজ হবে নাকি তা নিয়ে ওর সন্দেহ ছিলো। প্রমাণ না ছাড়া তো আপনারা কিছু করতে পারতেন না।
স্যার : হুম তাও ঠিক। তিতুমিরকে কি শেষ বারের মতো মাফ করবো?
অর্ণব : জি স্যার। ওরা এখন থেকে আর খারাপ কাজ করবে না। ওরা ভালো হয়ে গেছে।
স্যার : হুম। তোমার আর ম্যাডামের কথায় আমি ওদের শেষ বারের মতো মাফ করলাম।কলেজের সেদিনের ঘটনাটার জন্য আমি দুঃখিত। আমার কলেজে তোমার সাথে এরকমটা ঘটে গেছে এটা আমি জানতেও পারিনি। তাই তোমার হয়ে ম্যাডামের ট্রান্সফারের জন্য আমি সুপারিশ করছিলাম এজন্যই উনার ট্রান্সফারটা তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে। এখন সবাই খুশি।
অর্ণব : জি স্যার। আর স্যার আব্বু যেন ঘটনাটা না জানতে পারে৷ আসসালাম অলাইকুম।
স্যার : ঠিক আছে। অলাইকুম আসসালাম।
কলটা কাটে রিপনকে কল করে বলে দিলাম কালকে কলেজে দুই মাস আগের ঘটনাটা বলবো আর বাকি সবাইকে বললাম কালকে রিপনের জানা সেই গোপন কথা বলবো সবাই যেন আসে, নেগলাকে বললাম কালকে একটা রোমাঞ্চকর ঘটনা বলবো।তারপর বাড়ির দিকে হাটা দিলাম।
পরের দিন,
সবাই মিলে কলেজ মাঠের একপাশে বসলাম….